ডায়েরীর মূল কপি এখানে দেখা যাবে।
ইচ্ছা ছিল ফেব্রুয়ারী মাসের মধ্যেই এ লেখাটি নামাবো। তবে, অনিবার্য কারন বশতঃ সেটা সম্ভব হল না। আশা করি তাতে মূল আকর্ষন ক্ষুন্ন হবে না।
১৯৫২ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে আমার বাবা ছিলেন বুয়েটের পূর্বপুরুষ ততকালীন আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রথম বর্ষে ভর্তি হওয়া উনিশ বছরের সদ্য তরুন। তার সে বয়সেই ডায়েরী লেখার অভ্যাস ছিল। তার বেশ কটি ডায়েরী আছে অনেক বিচিত্র বিষয়ের উপর লেখা। ভাষা আন্দোলনের সেই সময়টায় বেশ কিছু ঘটনা তিনি নিজের চোখ দেখেছেন ও প্রতিদিন তার ডায়েরীতে লিপিবদ্ধ করেছেন। এ মাসের শুরু থেকেই মনে হচ্ছিল এই লেখাগুলি সবার সাথে শেয়ার করি। তার লেখায় হয়ত কোন জটিল রাজনৈতিক বিশ্লেষন থাকবে না, তবে একজন সাধারন বাংগালীর সে সময়কার অনুভূতি ও পরিস্থিতি হয়ত খানিকটা বোঝা যাবে।
রক্তঝরা দিনের ডায়েরী
চোখে যা দেখেছি
১৯৫২
অদ্য ২০শে ফেব্রুয়ারী। ষোল তারিখ থেকে কলেজে exhibition চলছে পূর্নোদ্যমে। Exhibition এর কাজে, বিশেষ ব্যাস্ত। হঠাত শুনতে পেলুম রাস্তায় সরকারী Publicity Van থেকে ঘোষনা করা হচ্ছেঃ আগামী কল্য ২১শে ফেব্রুয়ারী হতে ঢাকা শহরের সর্বত্র একমাসের জন্য ১৪৪ ধারা জারি করা হইল। চারজনের অধিক লোকের সমাবেশ অথবা জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটের অনুমতি ব্যাতিত শহরে কোনরকম শোভাযাত্রা বা সভা সমিতি করা যাইবে না।
মনে হঠাৎ খটকা লাগল। এ সময় ১৪৪ ধারার দরকার ছিল কি? মনে পড়ে গেল – রাষ্ট্র ভাষা আন্দোলনের জন্য ২১ শে ফেব্রুয়ারী প্রদেশের সর্বত্র ধর্মঘট আহবান করা হয়েছে। ছাত্ররা না হয় শান্তিপূর্ণ উপায়ে শোভাযাত্রা বের করে বাংলা ভাষার সমর্থনে দু’একটি শোভাযাত্রা বা সভাসমিতি করবে, এজন্য ১৪৪ ধারার প্রয়ো্যনটা ছিল কি? এর আগেও তো চার তারিখে শান্তিপূর্ণ উপায়ে হরতাল ও শোভাযাত্রা হয়েছিল – তাতে তো শহরের কোথাও অতটুকু শান্তিভংগ হয়েছে বলে জানা যায়নি। আগামী কালই বা শান্তির ব্যাঘাত ঘটার সম্ভাবনা সরকার কোথা থেকে আবিষ্কার করলেন? যাকগে দেখা যাবে।
*** *** *** ***
২১শে ফেব্রুয়ারী। সকাল দশটা পর্যন্ত মনেই ছিল না যে অদ্য প্রদেশব্যাপী ধর্মঘট। মনে না থাকার কারনও ছিল। আমাদের Programme ছিল ধর্মঘট চললেও আমরা আমাদের Exhibition এর কাজ নিয়মিত চালিয়ে যাব। All Student’s Committee of action হতে ছাত্রদের ওপর নির্দেশ ছিল যে- বেলা দশটার সময় যেন সকলে University Compound এ কর্তব্য নির্ধারনের জন্য জমায়েত হয়। আমার বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে অনেকে গিয়েছেন ও। আমার যাওয়া সমিচীন মনে করিনি কারন দুটো থেকে College Exhibition এ duty. আজকের Exhibition শুধুমাত্র মহিলাদের জন্য যেমন ছিল ১৮ তারিখ। একটার সময় সেজে গুজে কলেজে রওনা দিচ্ছিলাম। পথে দেখা জনৈক ছাত্র বন্ধুর সংগে। ভীষন উত্তেজিত হয়ে সে আবোল তাবোল বকে যাচ্ছিল। তার কাছ থেকে যা জানা গেল তার অর্থ মোটামুটি এরকম – সে আসছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসভা হতে। পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয় প্রাংগনে ঢুকে নিরস্ত্র ছাত্রদের ওপর কাদুনে গ্যাস আর লাঠি চার্জ করে ছাত্র জনতাকে ছত্রভংগ করে দিয়েছে, ইত্যাদী।…বিশ্বাস হল না। পূর্ব পাকিস্তানের সর্ববৃহৎ শিক্ষায়তনের অমর্যাদা করে পুলিশ হামলা চালাবে এটা যেন কোনমতেই প্রানে স্থান দিতে পারলাম না। একটু পরেই সত্য ঘটনা কর্ণগোচর হল।…..University Arts buildings এর প্রাংগনে ছাত্র জনসমুদ্র সমবেত হয়েছেন; বিভিন্ন বক্তা জ্বালাময়ী ভাষায় বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবী জোরাল করে তুলছেন। সমবেত ছাত্রসমাজের মধ্যেও বেশ সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। সাড়ে চার কোটি লোকের মুখের ভাষাকে কেড়ে নিতে তারা দেবে না। বক্তারা বলছেন – উর্দুর সংগে আমাদের কোন বিরোধ নাই। উর্দুকে আমরা মুছে ফেলতে চাই না। আমাদের দাবী বাংলাকেও উর্দুর সমমর্যাদা দিতে হবে। ভাইস চ্যান্সেলর কতিপয় অধ্যাপক সমভিব্যাহারে এসে ছাত্রদের শান্তভাবে প্রস্থান করতে উপদেশ দিলেন। ছাত্ররাও এ সিদ্ধান্ত গ্রহন করে। সকলে এক সংগে রাস্তায় বেরুলে ১৪৪ ধারা অমান্য করার অজুহাতে পুলিশের কোপ দৃষ্টিতে পড়তে পারে সেজন্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলে বিভক্ত হয়ে ছাত্ররা যার যার আবাসস্থানে প্রস্থান করতে সিদ্ধান্ত গ্রহন করল। কিন্তু এতে দুকুল রক্ষা পেল না। প্রথম ক্ষুদ্র দল কটিকে পুলিশ গ্রেফতার করল। এতে ছাত্ররা প্রমাদ গুনল। সত্যি বলতে কি এহেন পাইকারী গ্রেফতার দেখে ছাত্ররা একটু উত্তেজিত হল। ভেতরে বাইরে এ নিয়ে ছাত্র ও পুলিশের মধ্যে বচসা চলতে লাগল। বেরুলেও গ্রেফতার করবে, ভেতরে জটলা পাকিয়ে থাকলেও পুলিশ শাসাবে, এ পরিস্থিতিতে পড়ে ছাত্ররা দিশেহারা হয়ে পড়ে। পুলিশ এর মধ্যে ছাত্রদের চালাকি আবিষ্কার করল। তাই রাস্তায় দাঁড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে তারা ছাত্রজনতার প্রতি কাদুনে গ্যাস নিক্ষেপ করতে থাকে। ছেলেরা এতে আরো ক্ষুব্ধ হল – তাই চপলতা বশতঃ পুলিশের প্রতি ছিটেফোটা ইটপাটকেল ছুড়তে লাগল। এতে পুলিশের পুলিশত্বে আঘাত লাগল। তাই তারা নিয়ম কানুন শৃংখলা সব কিছু পায়ে মাড়িয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাংগনে ঢুকে পড়ল এবং বেপরোয়া কাদুনে গ্যাস ও লাঠি চার্জ করে ছাত্রদের ছত্রভংগ করে দিল। অগনিত ছাত্র আহত হয়ে Medical College Hospital এ নীত হল। বিক্ষুব্ধ ছাত্রসমাজ তখন মেডিকেল কলেজের হোষ্টেল কম্পাউন্ডে সমবেত হতে লাগল।
গতকাল থেকে প্রাদেশিক সরকারের পরিষদে বাজেট সেশন চলছে। মেডিকেল কলেজের হোষ্টেল হতে পরিষদ ভবন একেবারে কাছাকাছি – রাস্তার এ পার আর ওপার। তাই ছাত্রদের ইচ্ছা ছিল Medical হোষ্টেল হতে স্লোগান দিয়ে তাদের ন্যায্য দাবী পরিষদ ভবনের বড় কর্তাদের কর্ণগোচর করা। আমাদের হোষ্টের পূর্বদিকে খেলার মাঠ। তারপর বক্সীবাজার রোড এবং রাস্তার পরেই মেডিকেল হোষ্টেল; দুমিনিটের পথ।…..
মেডিক্যাল কলেজ হোষ্টেলে ছাত্ররা শান্তিপূর্ণ উপায়ে পুলিশি হামলার তীব্র নিন্দা করছিল। পুলিশ দ্বারা বিশ্ববিদ্যালয়ের পবিত্রতা ক্ষুন্ন হয়েছে – শান্তিপূর্ণ নিরীহ ছাত্রদের ওপর জুলুম করা হয়েছে এজন্য ছাত্ররা বিশেষভাবে ক্ষুব্ধ। মেডিকেল হোষ্টেলের উত্তর-পশ্চীম কোনে যেখানটা প্রায় এসেম্বলী হলের গা ঘেষে আছে সেখানে ছাত্ররা লাঊড স্পীকার ফিট করেছে। পরিষদে অবস্থানরত দেশ কর্তাদের কানের ভেতর প্রবেশ করছিল ছাত্রদের দাবী – “রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই” – “পুলিশের জুলুম বন্ধ কর”- “মুসলিম লীগ ধ্বংস হোক” ইত্যাদী। ছাত্রদের মুহুর্মুহু শ্লোগানে আকাশ বাতাস মুখরিত হয়ে ঊঠল। ছাত্রদের এহেন আচরনে পুলিশদের মস্তিষ্কে আগুন ধরিয়ে দিল তাই বাইরে থেকে পুলিশ অবিরত কাদুনে বোমা ছুড়তে লাগল হোষ্টেল কম্পাঊন্ডে। কাদুনে গ্যাসে বাতাস বিষাক্ত হয়ে উঠল। এতে করে নিরীহ ছাত্ররা আরো উত্তেজিত হয়ে উঠল। তারা তো কোন জোর জবরদস্তিমূলক কাজ করছে না- নিজের ভাষার দাবী ও অন্যায়ের প্রতিকার চাইছে মুখে। এতে করে ছাত্রদের একদল এত উত্তেজিত হল যে – ইটপাটকেল ছুড়তে লাগল পুলিশদের প্রতি। ফলে ক্ষনিকের জন্য পুলিশ হঠে যেতে বাধ্য হল। কিন্তু ছাত্ররা যখন আবার তাদের দাবী পেশ করতে শুরু করেছে, ঠিক সে মুহুর্তে বহুসংখ্যক পুলিশ হোষ্টেলে ঢুকে পড়ল এবং বেপরোয়া দিগ্বিদিগ গুলিবর্ষন করতে লাগল। অপ্রত্যাশিতভাবে গুলিবর্ষনের ফলে ছাত্ররা ইতস্ততঃ ছত্রভঙ্গ হয়ে ছড়িয়ে পড়ে যে যার প্রাণ বাচাতে তত্পর হল। স্বাধীন দেশে এরকম বর্বরতা থাকতে পারে এ কেউ ধারনা করতে পারে না। অনুমতি ভিন্ন ছাত্র প্রতিস্থানে ঢুকে বেপরোয়া গুলিবর্ষন ছাত্ররা কেন স্বাধীন দেশের কোন লোক কল্পনা করতে পারে না। পুলিশের বর্বর ক্ষুধা মিটবার পর তারা বেরিয়ে পড়ল। ভীত সন্ত্রস্ত ছাত্রগন হোষ্টেলের অভ্যন্তরে আশ্রয় নিয়েছিল। জানালা দিয়ে দেখা গেল প্রাংগনে দন্ডায়মান কোন প্রানী নেই। হোষ্টেলের প্রাংগনে ও বারান্দায় আহত ও নিহত ছাত্রগন ইতস্ততঃ পড়ে আছে। যে ছাত্রগন একদিন দেশকে স্বাধীন করার জন্য ইংরেজের বুলেটের সামনে পেতে দিয়েছিল নিজেদের কচি বুক। যাদের একনিষ্ঠ ত্যাগ ও আত্মহুতির বদলে হাসিল হয়েছে স্বপ্ন সাধের পাকিস্তান আজ তাদেরই তাজা উত্তপ্ত খুনে রাংগা হল পাকভূমি। যেদিন ব্রিটিশ এর বেয়োনেটের সামনে রুখে দাড়িয়েছিল ছাত্রসমাজ সেদিন কোথায় ছিল এই নাজিমুদ্দিন-নুরুল আমিন-আজিজুদ্দিন-কোরেশী-ফারুকীর দল? পাকিস্তান অর্জনের পিছে তাদের দান কতটুকু? অথচ বিরাট ট্র্যাজেডি হল এই যে তথাকথিত নাজিমুদ্দিন-নুরুল আমিনের জাতীয় সরকারই পাকিস্তানের তরুন মোজাহিদ দলকে এমনিভাবে রক্তাক্ত করে দিচ্ছে। অদৃষ্টের এমনি পরিহাস! ধন্য বাবা নাজিমুদ্দিন আর নুরুল আমিন! তোমাদের বেয়োনেট আর বুলেট দীর্ঘজীবি হোক!
উঃ মেডিকেল কলেজ হোষ্টেলের অবস্থা এত হৃদয় বিদারক যে পাষানের ও চোখ ফেটে জল পড়বে। আহতদের আর্ত চিত্কারে আকাশ বাতাস মুখরিত হয়ে উঠল। হোষ্টেল প্রাংগনের অবস্থা তখন যুদ্ধশেষে যুদ্ধক্ষেত্রের অবস্থার সাথে তূলনীয়।
নিহতদের মধ্যে সর্বপ্রথম মনে পড়ে শহীদ সালাহউদ্দিনের কথা। বেচারা এমএ ক্লাশের মেধাবী ছাত্র। ২০ নং শেডের বারান্দায় ইজি চেয়ারে বসেছিল সে। পুলিশের নির্মম বুলেট তার খুলি উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছে। সংগে সংগেই তার প্রানবায়ু নির্গত হয়।
২০ নং শেডের সামনে দাঁড়িয়ে ছিল বিশ্ববিদ্যালয়েরই এমএসএসি ক্লাশের ছাত্র আব্দুল জব্বার। পুলিশের গুলি তার পাজর ভেদ করে নিয়েছে। হাসপাতালে নেওয়ার সংগে সংগেই বেচারা পঞ্চত্ব প্রাপ্ত হয়।
শহীদ বরকত আলী। বিএ অনার্স ক্লাসের কৃতিছাত্র বরকত। রাজনীতির সে ধার ধারত না। তার এক বন্ধুর সংগে মেডিকেল কলেক হোষ্টেলে দেখা করতে এসে আটকা পড়ে যায়। মাত্র কদিন আগে সে বিয়ে করেছে; অর্থকষ্ট লাঘব করার জন্য। ১২ নং শেডের একটা রুমের দরজা খুলে প্রান বাচানোর তাগিদে প্রায় ঢুকে পড়েছিল। মাথাটা কোনরকমে ঢুকিয়েছিল রুমের ভেতরে, কিন্তু ঠিক সে মুহুর্তে বর্বর পুলিশের অগ্নিমাখা বুলেট তার ডান পাজর ভেদ করে যায়। বারান্দাতেই সে ঢলে পড়ে। হাসপাতালে নেয়ার একটু পরেই বেচারা শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে।
আহতদের মধ্যে ২২ জনের অবস্থা একেবারে গুরুতর। সকলকে হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়।
দেখলা ছাত্ররা তবুও দমেনি। পরিষদ ভবনের দিকে মুখ করে মাইক বসিয়ে তারা খুনি জালেম বিশ্বাসঘাতক নুরুল আমিনের কানে আকুল ফরিয়াদ জানাতে লাগল।…..১২ নং ফুলার হোষ্টেলের কাছে দাঁড়িয়ে শুনছিলাম বন্ধুদের কাছে সে রক্ত ঝরা দিনের বিভিন্ন ইতিহাস। মেডিকেল কলেজের মাইক হতে আকুল ফরিয়াদ কানে এসে বাজছে। সমস্ত পৃথিবী চোখের সামনে লাটিমের মত ঘুরতে লাগল।
হাদিসে উল্লেখ আছে – যদি কোন জাতিকে ধ্বংস করতে চাও তবে তার ভাষাকে ধ্বংস কর। আজকে এ ভাষার লড়াইতে যারা প্রান দিল এ জাতিকে বাচিয়ে রাখতে তারা জাতির নিকট শহীদ বলেই পরিগনিত হবে। মনে একেবারে খারাপ হয়ে গেল। College Exhibition আর হল না। কলেজের গেটই খোলা হয়নি। সামনের রাস্তার দিকে চেয়ে দেখলুম – পরিষদ ভবনের সামনের রাস্তায় পুলিশ ও মিলিটারী গিজ গিজ করছে। হাবভাব দেখে মনে হচ্ছে, রক্ততৃষ্মা তাদের এখনো মেটেনি।
আমাদের ফুলার হোষ্টেলের গেট হতে পরিষদ ভবনের গেট তীর্যকভাবে হাত পঞ্চাশেকের বেশী হবে না। আমার কলেজ বন্ধুরা টিনের চোংগ মুখে দিয়ে “রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই” “রক্তের বদলে রক্ত চাই” “লীগ মিনিষ্ট্রি ধ্বংস হোক” “খুনী-জালেম-শয়তান-বেঈমান-বিশ্বাসঘাতক নুরুল আমিনের পদত্যাগ চাই” “হারামজাদা নুরুল আমিনের ফাসী চাই” ইত্যাদী ধ্বণি করতে লাগল। Assembly হলের গেটের দিকে তাকিয়ে দেখলাম এমএলএ গন অনেকেই গেটে দাঁড়িয়ে এ করুন দৃশ্য দেখছে। মিসেস আনোয়ারা খাতুনকে হলের বাইরে অপেক্ষা করতে দেখা যায়।
আমাদের প্রিন্সিপালের বাড়ির গেট আর পরিষদ ভবনের গেট সামনাসামনি অবস্থিত। দুরত্ব গজ দশেকের বেশী হবে না। ছাত্রগন সেখানে দাড়িয়েই সরকার বিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন। পুলিশ মিলিটারি কটমট দৃষ্টিতে চাইছে, যেন চিবিয়ে ফেলবে। S.P. নিজে এসে আমাদেরকে সাবধান করে দিয়ে গেলেন – যদি আমরা কোনরকম বিশৃংখলার সৃষ্টি করি বা ইট পাটকেল ছুড়ি তবে তারা গুলি চালাতে বাধ্য হবেন।… এদিকে হাসপাতাল হতে আহত দেশপ্রেমিকদের মৃত্যু সংবাদ আসতে লাগল। ছেলেরা এতে আরো উত্তেজিত হয়ে উঠল। মেডিকেলের হোষ্টেলের যে দিকটা Assembly হলের একেবারে কাছে সেখানে ছাত্রদের বিরাট জটলা। আকুল ফরিয়াদে তারা খোদার আরশ কাপিয়ে দিচ্ছে। মাইকের শব্দে আর কান্না যেন ফূটে বেরুচ্ছে। ইতোমধ্যে শহীদদের রক্ত মাখা জামা কাপড় আমাদের কাছে এসে পৌছালো। সে রক্ত মাখা জামাকাপড় লগির আগায় বেধে আমরা Assembly হলের দিকে বাড়িয়ে তাদের কীর্তি তাদেরকেই দেখাচ্ছিলাম। আর সংগে সংগে সরকার বিরোধী যতরকম ধ্বণি হতে পারে – যতরকম গালিগালাজ হতে পারে সবই চলল।
ইতোমধ্যে মেডিকেল হোষ্টেলের কোনটায় চার পাচ বা কাদুনে বোমা ছেড়ে ছাত্রদের ছত্রভংগ করে দেওয়া হয় কিন্তু পরমুহুর্তেই আবার সকলে জড়ো হয়। আমরা আমাদের মাঠের যে কোনটায় জড়ো হয়েছিলাম সেখানেও তিন চার বার কাদুনে বোমা ছোড়া হয়।…. Principal এর গেট থেকে আমরা শ্লোগান দিয়েই চলেছি। Assemblyর কাজে ব্যাঘাত ঘটতে লাগল। অবশেষে বেলা পাচটায় ভীষন tear gas নিক্ষেপ করে ছাত্রদের ছত্রভংগ করে দেওয়া হয়।
মাইক চলছে। মেডিকেল কলেজের মাইক আকুল ফরিয়াদ করে চলছে। Tear gas ছাত্র জনতাকে হঠাতে পারছে না- আবার এসে সকলে জটলা পাকায়। রাত আটটা নাগাদ মোট ১০ জন শহীদ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করল।
এমনি করে রক্তমাখা ২১ শে ফেব্রুয়ারী শেষ হয়ে গেল। আগামী দিনের প্রোগ্রাম বীর শহীদানদের পারলৌকিক কল্যানের জন্য মেডিকেল হোষ্টেলের প্রাংগনে জানাজা সমাপন করা এবং সেখান হতে শহীদ ভাইদের মৃতদেহ নিয়ে মিছিল সহকারে শহরের সর্বত্র পরিক্রম করা।
যে রক্তমাখা দিন আজ শেষ হয়ে গেল – যে শহীদ মাতৃভাষার জন্য রক্তলেখার স্বাক্ষর রেখে গেল, তাদের সে তারা রক্তে আমরা নতুন করে শপথ গ্রহন করলাম।
(চলবে)
অনেক দেরীতে বলছি। প্রথম পর্ব দিয়েই পাঠ শুরু করলাম। লেখককে সবিশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই, এমন একটি দুর্লভ খণ্ডচিত্রের দলিল উপস্থাপনের জন্য। …ছোট ছোট স্লাইডে যেনো মুহূর্তেই ধরা পড়লো — সেই সব আগুন ঝরা দিন!
খুব ভালো হয়, যদি লেখার প্রতিটি পর্বের মস্তকটিকায় লেখকের বাবার একটি সংক্ষিপ্ত পরিচিতি (সম্ভব হলে সেই সময়ের কোনো ছবিসহ) যোগ করা হয়। তাকে সেল্যুট জানাই, ডায়েরিতে আমাদের মুক্তি সংগ্রামের একটি ঐতিহাসিক দলিল লিপিবদ্ধ করে রাখার জন্য।
এ কু শ মা নে মা থা ন ত না ক রা :rose:
শহীদ বরকত আলীর মত বিখ্যাত একজন শহীদ আন্দোলনে জড়িত ছিলেন না জেনে অবাক হলাম। হ্যাঁ গণ্ডগোলে অনেক নিরীহ লোকই মারা যায়। তবে আন্দোলনের সাথে সম্পর্কহীন মৃতদেরকে শহীদ বলাতে আমার যথেষ্ট দ্বিধা আছে। এই ধরুন না প্রেসিডেন্ট জিয়া কোন অর্থে শহীদ? জাতীয় চার নেতাকে জেলখানায় উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে হত্যা করা হয়। ঠিক আছে তাঁরা অনেকেই যেহেতু শ্রেয়ের জন্য কাজ করতেন তাই তাদের মৃত্যুকে শাহাদাত বলা যেতেই পারে। কিন্তু সামরিক জান্তা জিয়াকে শহীদ বলা হাস্যকর। বিডি,আর হত্যাযজ্ঞে সাধারণ মানুষও তো মারা পড়ল। কই তারা তো ‘শহীদ’ খেতাব পাননি!
@আগন্তুক,
জিয়ার শহীদ হওয়াটা বিএনপির অনেক ছেলেমানুষী সূলভ ইতিহাস বিকৃতির একটি অংগ। জিয়া নিজে বেচে থাকলে এমন কাজ (নিজেকে শহীদ উপাধি দেওয়া কোনমতেই সম্ভব নয় যদিও) করতেন বলে মনে হয় না।
তবে ভাষা আন্দোলনের বেশ কিছু শহীদই আসলে নিতান্তই নিরীহ লোক, মিছিলের ধারে কাছেও ছিলেন না। পুলিশের আচমকা বর্বর গুলি চালনায় নিহত হন। তবে এখানে আমার কথা হল যে পুলিশ বেছে বেছে কাউকে সেদিন গুলি করেনি। গুলি করেছিল আন্দোলনকারী ছাত্রদের উদ্দেশ্যেই; নিরীহ মানুষ মারা যাওয়া আসলেই এক্সিডেন্ট। কে মারা যাবে কে যাবে না এ হিসেব কেউই করতে পারেনি। বরকতের যায়গায় সে গুলি ভেদ করতে পারত অন্য কোন সক্রিয় নেতা কর্মীর বুক।
অতি আবেগ প্রসূত জাতি হিসেবে আমাদের সুনাম আছে। তবে কখনো কখনো তা নৈতিক অপরাধের পর্যায়ে চলে যায়।
ছাত্র আন্দোলনের সমর্থনে কাল বললেন। স্বঘোষিত শহীদের একটি উদাহরন দেই। মধ্য ৮০র দশকে ঢাঃবিঃ ক্যাম্পাসে ছাত্রদলের নীরু-বাবলু নামের দুই ভাই কিংবদন্তির মত আবির্ভূত হন। তাদের দাপটে এরশাদের নতুন বাংলা ছাত্র সমাজ বহু চেষ্টা করেও ক্যাম্পাসে ঢুকতে পারেনি। এই দুই ভাই এর বাবলু ৮৭ সালে বোমা বানাবার সময় মহসীন হলে দূর্ঘটনায় নিহত হন। তারপর তাকেও শহীদ বানিয়ে বহু রাজনীতি সে সময় হয়েছে।
@আদিল মাহমুদ,
ছাত্র্ররাজনীতির সমর্থন আমি করছি যৌক্তিক কারণেই। এখনো সংস্কার সম্ভব। সব ভালো বিপ্লবী ছেলেমেয়েরা মরে যায় নি। মনে রাখবেন রেনেসাঁ আসে অন্ধকারের চূড়ান্ত পর্যায়ে। পায়ের আঙ্গুলে গ্যাংগ্রিন হলে আঙ্গুল কেটে ফেলা যায়। কিন্তু হার্টের মাসল পচে গেলে হার্ট কেটে বাদ দেয়া যায় না। ট্রান্সপ্লান্টেশন করতে হয়। ছাত্রদের মধ্য থেকে জনপ্রতিনিধি না থাকলে ছাত্রদের কোন অধিকারই সংরক্ষিত হয় না। বহু উদাহরণ দিতে পারি। কিন্তু সেগুলো ব্যক্তিগত। ছাত্রসংগঠনগুলো ছাত্রদের অধিকার আদায়ের মূল কাজে ফিরে যাক। চেষ্টা তো করতে হবে। দেশে আসুন – দেখবেন কেউ কেউ চেষ্টা করছে। 🙂
@আগন্তুক,
এখানে ছাত্র রাজনীতির সুফল কুফল টানার কোন উদ্দেশ্য আমার ছিল না।
বাবলুর উদাহরন দিয়েছিলাম শুধু শহীদ শব্দটার ব্যাবহার কত কদর্যভাবে ব্যাবহার হতে পারে সেটা দেখাতে। ছাত্র রাজনীতি বিষয়ক বক্তব্য যথাস্থানে দিচ্ছি।
ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র হিসেবে আপনার বাবা
ঘটনাগুলো নিখুঁতভাবে বর্ণনা করেছেন।
এরকম নষ্টালজিক লেখা পড়তে ভাল লাগে!
ধন্যবাদ আদিল মাহমুদ!
@লাইজু নাহার,
পড়ার জন্য ধণ্যবাদ।
আমারো মনে হয়েছে যে ১৯ বছররে একজন ছেলের পক্ষে এত গোছানো বর্ণনা মনে হয় বেশ বিরল। তবে এই বর্ননার সবই সেদিনগুলির লেখা নয়, কিছু অংশ তিনি পরে এডিট করেছিলেন। তার বর্ননা করার ক্ষমতা খুব ভাল ছিল, তার ১৪ বছর বয়সের কিছু লেখাও আছে যা মনেই হবে না কোন কিশোরের লেখা।
@আদিল মাহমুদ, বন্যার ঝাড়ি খাওয়ার পরও আপনি কোন সাহসে
দিয়েই যাচ্ছেন ! :laugh:
@নন্দিনী,
কথায় আছে ন্যাড়া বেলতলায় একবারই যায়, আমি যেহেতু এখনো ন্যাড়া হইনি তাই মনে হয় বারে বারে যাচ্ছি। আশা করি উনি আলোচ্য কমেন্ট দেখেননি, নয়ত উলুবনে মুক্তো ছড়িয়েছেন ভেবে দূঃখিত হবেন।
আপনাকে খাটি ধন্যবাদ, কোনরকম ভেজাল ছাড়াই।
@আদিল মাহমুদ,
খাটি নয়, খাঁটি!
আগে চোখে না পড়লেও এখন চোখে পড়ানোর ব্যবস্থা করছি। এবারে কোন মাপ নাই – ন্যাড়া মনে হয় হয়েই যাবেন।
@অভিজিৎ,
অভ্রতে এই চন্দ্রবিন্দুরও সহজ সমাধান করতে পারিনি। আজ পর্যন্ত বাংলায় যত লিখেছি কোনদিনই সজ্ঞানে চন্দ্রবিন্দু দেইনি।
@আদিল মাহমুদ,
চন্দ্রবিন্দু দিতে হইলে ^ (SHIFT + 6) চাপতে হইবেক।
@অভিজিৎ,
অনিচ্ছাকৃত ভুল বা কী-বৌর্ডের ভুতের কারণে যদি হয়, তাহলে মাপ না করতে পারলে ক্ষমা করে দিবেন?
নিজের ভাষাটা ভালভাবে শিখতে না পারার দুঃখ লজ্জা চিরদিন বয়ে চলেছি। আসলে ভাগ্যে তেমন সুযোগটাও আসেনি তাই এখনও শিখতে আগ্রহী, মুক্তমনার কল্যাণে শিখছিও। মাঝে মাঝে যখন কোন কোন পত্রিকায় একই প্রবন্ধে একই শব্দ দুই ভাবে লেখা দেখি তখন বিভ্রান্ত হই।
দাদা, ধ্বণি বানানটা বোধ হয় ধ্বনি হবে।
@আকাশ মালিক,
আসলে বাংলা ভাষা মোটেও সহজ নয়। আমরা কাজ চালিয়ে দেই খুব সহজে তবে ১০০% নিখুত হতে হলে খুবই মুশকিল।
ধ্বণির বানান আমি বেশীরভাগ যায়গাতেই “ণ” ই দেখি।
যাক দেরীতে হলেও আদিলের একুশে ফেব্রুয়ারি নিয়ে লেখাটা এলো। আপনার বাবার ডায়েরি নিঃসন্দেহে একুশে ফেব্রুয়ারির ঘটনাপ্রবাহ বুঝতে নতুন মাত্রা দিলো। উনার প্রতি শ্রদ্ধা থাকলো। এ ধরণের লেখা আরও চাই।
@আদিল মাহমুদ,
আপনার এই লেখাটি তত্তকালীন সময়ের একটি Authentic দলিল।
:rose2: :rose2: :rose2:
তখনকার মানুষ কি পরিস্থিতির ভিতর দিয়ে গিয়েছে, এবং
সেই, সেই সময়ে কিছু সংখক মানুষের প্রতিক্রিয়া।
“আমরা এইসব মানুষের চেতনার ফষল”
এটা আমার বিশ্বাষ
আপনাকেও বুঝি আমার বানান রোগে পেয়ে বসলো? লেখাটি যেহেতু চলবে, পরবর্তি পর্ব প্রকাশের আগে নীচের বানানগুলো একবার দেখে এডিট করে নিন।
হঠাত
ফেব্রুরায়ী
ডায়েরী
প্রয়ো্যনটা
কারন
কলেযে
সর্ববৃহত
প্রানে
শাষাবে
উত্তর-পশ্চীম কোনে
আচরনে
প্রান বাচাতে
হ্রিদয়
ইতোধ্যে
মাঠের যে কোনটায় জড়ো হয়েছিলাম
ফেব্রুয়ারী শেষ য়ে গেল।
অভিজিৎ দা’র দেয়া ( ূ ) আর ( ী ) ব্যবহারের নিয়মটা আসলেই ভাল লেগেছে, তবে আওয়ামী লীগ এভাবে আওয়ামি লিগ কেউ লিখবে কি না সন্দেহ আছে।
হাদীস নাম্বারটা দিলে ভাল হতো।
@আকাশ মালিক,
ধণ্যবাদ।
আমি বাংলা সাহিত্যে বড়ই কাচা, মেট্রিক ইন্টার এ বলা যায় কানের পাশ দিয়ে গুলি গেছিল (একবার প্রথম পত্রে ৩ এর ঘরে, আরেকবার কোনমতে ৪ পার!); ব্যাকরন ছিল দুই চোখের বিষ। সেই লোকের থেকে আর কি আশা করা যায় বলুন?
তবে যেগুলি ধরলেন সেগুলি ঠিক করে দেব নিশ্চয়ই। যদিও কিছু টেকনিক্যাল সমস্যা আছে। খণ্ড ত এর সহজ সমাধান আজো বের করতে পারিনি, তাই ত দিয়েই কাজ চালিয়ে নেই। অভিজিত একবার সমাধান দিয়েছিল তবে খুব সহজ নয়। একই সমস্যা “হ্রদয়” লেখার ব্যাপারেও। তবে এডিটে আরেকটু মনোযোগ দেব।
হাদীসটার নম্বর মূল ডায়েরীতে নেই (ডায়েরী বাবা দীর্ঘিকার দিয়েই লিখেছেন)। হতে পারে তিনি কারো থেকে শুনেছিলেন, কিন্তু নিজে কোনদিন যাচাই করেননি। আমরাও যেমন ছেলেবেলা থেকে অমন হাজার হাদীস শুনে আসছি, কে গেছি তাদের ঠিকুজী ধাওয়া করতে?
@আদিল মাহমুদ,
কী বৌর্ডে কোন অক্ষর পাওয়া না গেলে, অভ্র টুল বারে Use Avro Mouse For Typing ব্যবহার করুন, সব পেয়ে যাবেন।
আমার নিজের বানানের অবস্থা এত খারাপ যে অন্যদের এ নিয়ে কিছু বলতে খারাপ লাগে। তবে মুক্তমনায় বানান নিয়ে একটা শুদ্ধি অভিযান চালানো খুব দরকার। এখানে প্রায়ই এমন সব বানান দেখা যায় যে, বাংলা না জানা মানুষেরও মনে হয় তা তে কান্না পাবে। আমার অনেক বন্ধুই মুক্তমনায় বানানের অবস্থা নিয়ে প্রায়ই আপত্তি জানান, স্নিগ্ধা তো প্রায়ই ক্ষেপে ওঠে এ নিয়ে :-)। আসলে মুক্তমনার মত একটা সিরিয়াস ব্লগে এরকম বানান ভুল দেখলে তার গুরুত্ব নষ্ট হয়। আমি এখন একটা ডিকশেনরী নিয়ে বসি লেখার সময়, তারপরও ভুল হয়ে জানি, কিন্তু অন্ততপক্ষে ভুলের পরিমাণ কিছু হলেও হয়তো কমানো যায়।
@আদিল মাহমুদ, লেখাটা পরে ভালো লাগলো। আশা করি চালিয়ে যাবেন লেখাটা। কিছু মনে করবেন না, আপনার কয়েকটা বানান ভুলের কথা বলি। আপনি প্রায়ই ‘ন’ এর জায়গায় ‘ণ’ লেখেন। ‘মুক্তমণা’ লিখে ফেলেন মাঝে মাঝেই, আর ‘ধণ্যবাদ’ নয়, ‘ধন্যবাদ’ হবে। ।
@বন্যা আহমেদ,
আপনাকে ‘ধন্যবাদ’।
আসলে অন্যান্য ব্লগে বানানের করুন অবস্থা দেখলে মুক্তমনায় যে বানান কোন ইস্যু হতে পারে তা বিশ্বাস হতে চায় না। মুক্তমনায় বানান ভুল থাকলে বলতে হবে যে অন্যান্য যায়গা বাংলাই জানে না।
তবে বানান নিয়ে নিত্য নুতন (নুতন নাকি নতুন, আরেক দ্বন্দ্ব) নিয়ম শুনি। আজ দেখলাম একজন আরেক ব্লগে টেক্সট বুক বোর্ডের নিয়ম দেখাচ্ছেন যে আমরা যে কি ব্যাবহার করি (কি হয়েছে, কি করেছ) সেটা নাকি ‘কী” হবে। বুঝুন।
তবে আমার ন/ণ, উ/ঊ ই/ঈ এসব গোলমাল ভালই হয়, নিজেও নিশ্চিত না হয়েই অনেক সময়ই খুশীমত একটা চালিয়ে দেই।
@আদিল মাহমুদ,
কি আর কী এর মধ্যে আসলেই পার্থক্য আছে। দুটি বাক্য খেয়াল করুন –
আপনি কি খাচ্ছেন?
আপনি কী খাচ্ছেন?
প্রথমটার ইংরেজী – Are you eating?
আর দ্বিতীয়টার – what are you eating?
অর্থাৎ, সাদামাঠাভাবে যদি কোন প্রশ্নের উত্তর হ্যা-না এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে তাহলে কি ব্যবহার করতে হবে।
আর যদি কোন প্রশ্নের উত্তরে আপনাকে কোন নির্দিষ্ট তথ্য দিতে হয়, তবে কী ব্যবহার করতে হবে।
আরো একটি ব্যাপার যেটা আগেই বলেছি, বিদেশি শব্দে দীর্ঘ-ই (ঈ) বা দীর্ঘ-উ (ঊ) বর্জনীয়। সে হিসেবে ফেব্রুয়ারী কিংবা ডায়েরীর বানানগুলো ফেব্রুয়ারি কিংবা ডায়েরি লিখলেই বরং সঠিক, অন্ততঃ আমার তাই মত। প্রথম আলো এবং সমকাল দেখলাম – তারিখের জায়গায় ফেব্রুয়ারি লিখছে। কাজেই আমার যুক্তির জোর পাচ্ছি। 🙂
তারপরেও আপনি হয়তো ঠিকই বলেছেন – অন্য ব্লগে বানানের অবস্থা আরো খারাপ। তারপরেও বানানের প্রতি যত্নবান হওয়াটা দোষের কিছু নয়। এই ব্যাপারটা আমাদের ব্লগ থেকেই আমরা শুরু করতে পারি। আমাদের চেষ্টায় মুক্তমনাকে আমরা ভিন্নমাত্রায় নিতে পারব বলে আমাদের বিশ্বাস।
@অভিজিৎ,
আমার বাংগালীত্ব নিয়ে তো নিজেরই সন্দেহ হচ্ছে।
কারক বিভক্তি সন্ধি সমাসের ভয়ে ব্যাকরনের উপরই বীতশ্রদ্ধ ছিলাম সারা জীবন, যদিও বই পড়ি অঢেল।
@বন্যা আহমেদ,
কোন কিছু লিখার সময় বানান অনেক ভাবায়। আপনার কাছে ভালো ডিকশনারী সফটওয়্যার আছে? অনলাইনে ভালো ওয়েব সাইটের নাম জানা থাকলে দিয়ে সাহায্য করতে পারেন।
@আদিল মাহমুদ
আপনি ২০ তারিখ থেকে শুরু করলেন যে? আরো আগের লিখা কি নাই?
@আনাস,
এই এপিসোড বাবা লেখাই করেছেন ২০ তারিখ থেকে। তার আগের কিছু নেই। শেষ হবে ২৫ তারিখে।
আসলে তখন কেউই মনে হয় ভাবতে পারেনি যে ছাত্রদের সাধারন একটি প্রতিবাদ সভাকে কেন্দ্র করে এত তুলকালাম হবে। বাবাও ২০ তারিখেও কিছুই আচ পাননি।
@আনাস,
ইন্টারনেটে অনেক ডিকশেনারি আছে। যেমন – http://ovidhan.org/ । তবে এটা ইউনিকোড ভিত্তিক নয়। তারপরেও ইংরেজীর সঠিক বাংলা জানতে এটার দ্বারস্থ হই। তবে ইউনোকোডভিত্তিক ইংরেজী-বাংলা অভিধানের জন্য Samsad Bengali-English Dictionary দেখতে পারেন। ওখানে বাংলা বানান টাইপ করে যদি দেখেন সার্চের ফলাফলে কিছু আসছে না – তা হলে বুঝে নিতে পারেন যে শব্দের বানানটি ভুল। তবে কিছু কিছু শব্দ অভিধানে অন্তর্ভুক্ত না থাকায়ও সার্চ করে কিছু নাও পেতে পারেন। তখন আপনাকে অন্য অভিধানের খোঁজ করতে হতে পারে।
@আদিল মাহমুদ,
আপনার গুরুত্বপূর্ণ লেখাটি পড়ে খুশি হলাম। ভালোই লেখছিলেন, হঠাৎ করে কেন যেন ছেড়ে দিলেন। এবার চালিয়ে যাবেন আশা করি।
বানান নিয়ে মুক্তমনায় আলোচনা হয় দেখে বড্ড ভালো লাগে। বানান নিয়ে নিজে সমস্যায় থাকায় অন্য কাউকে একই বিপদে দেখলে মনটা আনচান করে উঠে। 🙂
খণ্ড ‘ত’ লেখার জন্য caps lock অফ থাকা অবস্থায় t“ দিলে চলে আসবে। মাঝে মাঝে ৎ লেখার পর বাকী লেখা বড় আকারের হয়ে যায়। এ সমস্যা নিরসনের জন্য ৎ এর পরবর্তী বর্ণ লেখার পর আগে চলে এসে ওটা লেখেন। আর ৃ এর জন্য caps lock অফ থাকা অবস্থায় rri চাপুন। আর সমস্যা হলে অভ্র মাউস তো আছে।
t“ নয় t“ । t“ লেখলে t“ কেন দেখায় বুঝতে পারছি না। দেখি এবার।
@সৈকত চৌধুরী,
কি মুশকিল। ৎ লেখার জন্য t লেখে কী বোর্ডের Esc এর নিচের কী তে দুইবার চাপুন। যদি আপনার কী বোর্ড আমারটির মত হয় তাবে চমৎকার সমাধান। আমার মন্তব্যগুলো অপ্রাসঙ্গিক হওয়ায় ইচ্ছে করলে ডিলিট করে দিতে পারেন।
@সৈকত চৌধুরী,
ধণ্যবাদ। শেষ তো সহসাই হচ্ছে না। আজ রাতেই ২২ তারিখ পোষ্ট করব।
বাবা ২০-২৫ ফেব্রুয়ারী, ১৯৫২ এই ঘটনাগুলি লিখেছিলেন। আমিও ২৫ তারিখ পর্যন্তই চালিয়ে যাব। মূল ডায়েরীও স্ক্যান করে দেব।
অভ্রের নিয়মে খন্ড ত লিখতে গেলে বিরাট আকারে টাইপ হয়। দেখতে খুবই বিটকেল দেখায়। অভিজিত বলেছিল ওটা ফন্টের কারনে হয়, একটি নির্দিষ্ট ফন্টেই কেবল ঠিকভাবে আসে (ঠিক মনে নেই এখন কোন ফন্ট)।
মালিক ভাই এক বুদ্ধি দিয়েছেন, দেখি প্রয়োগ করে। আপনিও দেখেন বের করতে পারেন কিনা।
very informative
@ashiqur rahman,
আপনাকে মুক্তমনা বাংলা ব্লগে বাংলায় মন্তব্য করতে অনুরোধ করা হচ্ছে। বাংলায় মন্তব্য করার জন্য অভ্র কিবোর্ড ডাউনলোড করে নিতে অনুরোধ করা হচ্ছে। ডাউনলোড করার লিঙ্ক আছে এখানে।
ভবিষ্যতে ইংরেজীতে মন্তব্য করলে কিংবা রোমান হরফে বাংলা লিখলে মন্তব্য প্রকাশের ব্যাপারে গ্যারান্টি দেয়া যাচ্ছে না।