এত জাতপাত, ব্রাহ্মণ-শূদ্র ছুঁৎ-অচ্ছুৎ, কে গরু খায় আর কে শুয়োর, কে ফর্সা, কে কালো, কে পৈতা পরে আর কে টুপি – এ নিয়ে নিরন্তর মারামারি, কাটাকাটি, দাঙ্গাদাঙ্গির পরে দিনশেষে কী জানা গেল? নাহ আমরা নাকি মূলত তিন ঐতিহাসিক গোষ্ঠীর শঙ্কর – যেভাবেই কড়ি গুনি না কেন, আমাদের জিনের ‘ষোল আনা’র বেশীরভাগই ভরেছে এই তিন দলের আনা-আনা অবদানে। কেউ কম, কেউ বেশী; অঞ্চলের উপর ভিত্তি করে কেউ এর সাথে মিশ খেয়েছে বেশী, কেউ বা ওর সাথে।
আমাদের, অর্থাৎ আজকের বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানের মত দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর অধিবাসীদের উদ্ভব ঘটেছে এই তিন জনগোষ্ঠীর মিলনের ফলে – ৫০ থেকে ৭০ হাজার বছর আগে আফ্রিকা থেকে বেরিয়ে এসে ভারতে বসতিস্থাপনকারী প্রাচীন শিকারি-সংগ্রাহক গোষ্ঠী, খ্রিস্টপূর্ব ৫-৭ হাজার বছর আগে পারস্য থেকে আসা ‘চাষাভুষা’ মানুষ আর তারপর খ্রিস্টপূর্ব ১-২ হাজার বছর আগে আফগানিস্তানের উত্তর থেকে আসা ‘পশুপালকদের’ দল।
যাক বাবা, আমার ছোটবেলার পাড়ার খালাম্মাদের একটা প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেল এতদিনে, এত বড় বড় গবেষকদের কাজের ফলে! ওনাদের সেই হাহাকার, ‘আহারে আপা আপনার দুইটা মেয়ে কী সুন্দর ফর্সা, বড়টা কালো হইল ক্যামনে’র উত্তর পাওয়া গেল। বংশগতির মিক্স-আপের খেলায় আমার গায়ের রঙের জিনে নিশ্চয়ই অপেক্ষাকৃত ফর্সা পারস্য ‘চাষী’ এবং তার চেয়ে আরেকটু বেশী ফর্সা স্তেপবাসী ‘মেষপালকদের’ চেয়ে ভারতীয় আদিবাসীদের জিনটাই বেশি পড়ে গেছিল!
ফাজলামি রেখে এবার তাহলে এই গুরুগম্ভীর গবেষণাটা নিয়ে দুটো কথা বলি। বিখ্যাত বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯২ জন গবেষক (জীববিজ্ঞানী, জেনেটিসিস্ট, প্রত্নতত্ত্ববিদ, ইতিহাসবিদসহ বিভিন্ন শাখার গবেষকরা একসাথে হয়েছেন এখানে) বংশগতীয় (genetic) এই গবেষণাটিতে কাজ করে আসছেন অনেক বছর ধরে। সেই গবেষণার একাংশের উপর ভিত্তি করে সম্প্রতি এই রিপোর্টটি প্রকাশ করা হয়। ওনারা ইরান, আফগানিস্তান এবং তার উত্তরের উজবেকিস্তান, তুর্কমেনিস্তান, কাজাকাস্তানের মত দেশগুলো থেকে সংগৃহীত ৬১২ জন প্রাচীন পূর্বসূরীর ডিএনএর সাথে এখনকার দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলের ২৪৬টি গ্রুপের মানুষের ডিএনএর তুলনামূলক বিশ্লেষণ করেন। গবেষণার সারমর্মটা মোটামুটি এরকম:
১) সিন্ধু উপত্যকার সভ্যতার উদ্ভব ঘটেছিল বহু আগে আফ্রিকা থেকে আসা প্রাচীন শিকারি-সংগ্রাহক গোষ্ঠী এবং পরে পারস্য থেকে অভিবাসিত গোষ্ঠীর সমন্বয়ে। এদেরকে সিন্ধু উপত্যকার পূর্বসূরী (Indus Valley ancestors) হিসেবে অভিহিত করা হয়। পারস্য থেকে আসা এই নতুন জনগোষ্ঠীদের আগমনের পূর্বেই সম্ভবত ভারতে কৃষি কাজের সূচনা হয়েছিল, তবে এদের আগমনের পরে সিন্ধু উপত্যকায় কৃষিকার্যের প্রভূত উন্নতি সাধিত হয়। এরাই বোধ হয় পশ্চিম এশিয়া থেকে ধানচাষের অভিজ্ঞতা নিয়ে এসেছিল।
২) এক-দুই হাজার খ্রিস্টপূর্বাব্দে স্তেপ অঞ্চলের প্যাস্টোরাল বা পশুপালক গোষ্ঠীর মানুষেরা উত্তর-পশ্চিমে ইউরোপের বিভিন্ন অঞ্চলে আর এদিকে দক্ষিণ-পূর্বে সিন্ধু উপত্যকায় ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। এদেরকেই আমরা আর্য বলে চিনি।
৩) ধারণা করা হয়, সিন্ধু উপত্যকা অঞ্চলে খ্রিস্টপূর্ব দুই হাজার বছরের দিকে বেশ বড় কিছু পরিবর্তন ঘটেছিল। কিন্তু কেন ঘটেছিল সেটা এখনো একটা রহস্য। অনেক গবেষক মনে করেন সিন্ধু নদের গতিপথের পরিবর্তন এবং বৃষ্টির পরিমাণ কমে যাওয়ায় এ অঞ্চল ক্রমশঃ চাষবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। সম্ভবত এ কারণেই সিন্ধু উপত্যকার প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতাটি ভেঙে পড়তে শুরু করে এবং এর পরপরই শুরু হয় উত্তর থেকে আসা আর্যদের অভিবাসন।
সে-সময়ে সিন্ধু উপত্যকার অধিবাসীদের যে অংশটি উত্তরাঞ্চলে স্থায়ীভাবে থেকে যায় তারা আর্যদের সাথে মিশে জন্ম দেয় উত্তর ভারতীয় পূর্বসূরীদের (Ancesteral North Indians-ANI)। আর ওদিকে সিন্ধু উপত্যকার এই পূর্বসূরীদের আরেক অংশ দক্ষিণের দিকে সরে যেতে শুরু করে। এরা তেমনভাবে আর্যদের সাথে মিশ খায়নি; এরাই দক্ষিণ ভারতীয় পূর্বসূরীদের(Ancesteral South Indians-ASI) জন্ম দেন। এদের উত্তরসূরীরাই পরবর্তীতে আদিম ভারতীয়দের সাথে মিশতে মিশতে আরও পূর্বদিকে বসতি স্থাপন করতে থাকে। পরবর্তীতে আবার ব্যবসা এবং রাজ্য-জয়ের অভিপ্রায়ে আসা বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর এদের সবার মিশ্রণ ঘটতে থাকে।
ব্যাপারটা এমন নয় যে, এখান থেকে ANI এবং ASI রা বংশগতীয়ভাবে সম্পূর্ণ আলাদা হয়ে গিয়েছিল। এদের নিজেদের মধ্যেও অনেক মিশ্রণ ঘটেছিল – তাই আধুনিক ভারতীয় উপমহাদেশীয়দের সবার মধ্যেই কম বেশী ANI এবং ASI এর সংমিশ্রণ খুঁজে পাওয়া যায়। তবে, জাতপ্রথার কারণে, গত দুই হাজার বছরে, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে সম-জাতীয় বিবাহ-প্রথা গেড়ে বসার ফলে এই মিশ্রণ কমতে শুরু করে – এখন উত্তর ভারতে ANI এর প্রভাব আর দক্ষিণে ASI জিনের প্রভাবই বেশি দেখা যায়। মুক্তমনার সদস্য, Sarthak, একটি চমৎকার মন্তব্য করেছেন, ওনার মন্তব্যের কিছু অংশ এখানে হুবহু তুলে দিচ্ছিঃ
‘….ANI এর প্রভাব বেশি আর দক্ষিণে ASI এর প্রভাব বেশি কিন্তু এরা (উত্তর বা দক্ষিণের) কেউই আর জিনগত ভাবে শুধুই ANI বা ASI এর জিন বহন করে না। এক মতে ANI আর ASI তৈরি হওয়ার পর প্রথম হাজার থেকে দুহাজার বছর দুইয়ের মধ্যে অনেক মিশ্রণ হয়। কিন্তু তারপর মানে শেষ দুহাজার বছর জিন গত বৈশিষ্ঠ মোটামুটি একই থেকে গেছে। এর কারণ ব্রাহ্মণ্যবাদী ধর্মে উচ্চবর্ণের মধ্যে সমজাতির মধ্যে বিবাহ-প্রথা গেড়ে বসা।
এছাড়া রিসার্চাররা আরো অনুমান করেছেন, ভারতের যে ভারতীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্তেপ জিন তুলনায় অনেকটাই বেশী পাওয়া গেছে তারা হয়ত ব্রাহ্মণ্যবাদি ধর্ম ও ভাষা মূল জিম্মেদার ছিল। এবং সমজাতির মধ্যে বিয়ে করে এই ধারাটা তারা ধরে রেখেছিল, এমনকি এখনো ধরে রেখেছে। আমার মনে হয় এই শ্রেণীই এবং এই শ্রেণীর প্রতি ভক্তিই উপমহাদেশের মানুষের মনে ফর্সা চামড়ার ফেটিস তৈরি করেছে যুগ যুগ ধরে।’
(আমার মনে হয় শুধু এই শ্রেণীর প্রতি ভক্তিই নয়, পরবর্তীতে পশ্চিম থেকে আসা সব ভারত-বিজেতারাই আমাদের সাধারণ মানুষের চেয়ে অপেক্ষাকৃত ‘ফর্সা’ ছিল। এই সব বিজেতাদের প্রতি লালাঝড়া-ভক্তিও ওই ফর্সা চামড়ার ফেটিসের সাথে যুক্ত হয়েছে। আফ্রিকার বিভিন্ন দেশেও অপেক্ষাকৃত ফর্সা-কালো নিয়ে একই ধরণের সংস্কার কাজ করতে দেখেছি।)
৪) তাহলে ব্যাপারটা এই দাঁড়াচ্ছে যে, আর্যেরা আসার আগে সিন্ধু উপত্যকার এই প্রাচীন মানুষেরাই আমাদের সবার পূর্বসূরী। এরাই পরবর্তীকালে আরও অনেক জাতির সাথে মিশ খেতে খেতে আজকের দক্ষিণ এশিয়ার মূল আধুনিক জনগোষ্ঠীর জন্ম দিয়েছে। পৃথিবীর বেশীরভাগ জনগোষ্ঠীর মতই আমরা সবাইও দিনশেষে একগাদি ‘ভ্যাজালে’ ভরা শঙ্কর বই আর কিছু নই ??। রবীন্দ্রনাথ এতকিছু না জেনেই কিন্তু লিখেছিলেন, হেথায় আর্য, হেথা অনার্য, হেথায় দ্রাবিড় চীন- শক-হুন-দল পাঠান-মোগল এক দেহে হল লীন।
৫) কিছুটা অপ্রাসঙ্গিক হলেও, বাংলাদেশি পাঠকদের কথা মনে করে, প্রফেসর রিচার্ড ইটনের বিখ্যাত গবেষণার কথাটা একটু উল্লেখ না-করে পারছি না। আগে যে ধারণাটা ছিল যে, বাঙালিদের মধ্যে, মূলত পূর্ববঙ্গের, বেশির ভাগ মানুষ নিম্নবর্ণের হিন্দু থেকে ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলমান হয়েছিলেন তিনি তা ভুল বলে প্রমাণ করেন। উনি দেখান, এগার’শ-বার’শ সাল থেকে দিল্লীর মুসলমান শাসকেরা কিছু মুসলমানকে (এবং সেই সাথে কিছু ব্রাহ্মণকে) জায়গির দিয়ে পূর্বের বদ্বীপ অঞ্চলের জঙ্গল কেটে বসতি স্থাপন করার জন্য পাঠাতে শুরু করে। আর তখন থেকেই স্থানীয় অনেক আদি ভারতীয় শিকারি-সংগ্রাহক গোষ্ঠী(এরাই সম্ভবত জায়গিরদারদের জন্য জঙ্গল পরিষ্কার করা এবং কৃষিকাজগুলো করতো) সচেতন-অসচেতনভাবে, শত শত বছরের প্রক্রিয়ায় ধীরে ধীরে মুসলমানদের আচার-ধর্ম গ্রহণ করতে থাকে। ক্রমান্বয়ে দুই গোষ্ঠীর সংমিশ্রণও ঘটতে থাকে এবং এভাবে আমাদের দেশের একটা বড় জনগোষ্ঠি মুসলমান হয়। এজন্যই আমাদের দেশের মুসলমানদের মধ্যে এত আদিম ও লোকজ রীতিনীতির প্রচলন দেখা যায়।
১৮৭০ বা ১৮৭২ সালের আদমশুমারিতে প্রথমবারের মত জানা যায়, পূর্ববঙ্গে হিন্দুর চেয়ে মুসলমানের সংখ্যা অনেক বেশি, এবং সেটা দেখে সবাই খুব অবাকও হয়েছিল। এরপর থেকেই ধারণা করা হত, নিশ্চয়ই নিম্নবর্ণের হিন্দুরাই দলে দলে ধর্মান্তরিত হয়ে মুসলমান হয়েছিল যদিও এর কোন ঐতিহাসিক বা বৈজ্ঞানিক ভিত্তি পাওয়া যায়নি। হয়তো ভবিষ্যতে বংশগতীয় গবেষণা থেকে এ-ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো সম্ভব হবে।
সে যাই হোক এই গবেষণাটিতে ফেরত যাই। এর ফলে কিছু মিথও ভেঙ্গেছে নতুন করে, যেমন ধরুন,
১) আজকাল ভারতের হিন্দু জাতীয়বাদীদের তত্ত্বের কোন শেষ নেই, এর মধ্যে আবার খুব পছন্দের একটি তত্ত্ব হচ্ছে আউট অফ ইন্ডিয়া থিওরি – যেখানে ওরা দাবী করে যে আর্যেরা ভারতের আদিম অধিবাসী এবং ভারত থেকেই এরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে উন্নত সভ্যতা ছড়িয়ে দিয়েছিল। এই গবেষণা প্রমাণ করে, এই নব্য হিন্দু/আর্য জাতীয়তাবাদী তত্ত্বটি সম্পূর্নভাবে ভুল।
২) হিটলার বা ইউরোপের ইদানীংকালে আবার গজিয়ে ওঠা নাজি সাদা জাতীয়তাবাদীদের আর্যপ্রীতিও যে কতটা হাস্যকর সেটাও বোধ হয় এই গবেষণা থেকে আবার বোঝা গেল। যে আর্যদের এরা বিশুদ্ধ রক্তের অধিকারী কোন ‘বিশেষ মানুষ’ বলে ভাবছে তারা আমাদের আরও অন্যান্য পূর্বসূরীদের মতই আরেকটি জাতি মাত্র। ব্যাপারটা খুবই সাধারণ, বিভিন্ন মানবগোষ্ঠী বিভিন্ন সময়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দিকে ছড়িয়ে পড়েছে, আর্যেরাও কয়েক হাজার বছর আগে মধ্য এশিয়া থেকে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। কালের পরিক্রমায় একদিকে ইউরোপে আর অন্যদিকে দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য জাতির সাথে তাদের সংমিশ্রণ ঘটে।
৩) বৃটিশ রাজত্বকালে উনিশ শতাব্দীতে প্রথম ইন্দো-ইউরোপিয়ান ভাষাগুলোর(হিন্দি, বাংলা, স্প্যানিশ, ফ্রেঞ্চ, পর্তুগিজ ইত্যাদি) উৎস আবিষ্কৃত হয়। জানা যায়, মধ্য এশিয়া থেকেই তা একদিকে ভারত এবং অন্যদিকে ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। ঔপনিবেশিক মানসিকতাসম্পন্ন কিছু ইউরোপিয়ান রাজনীতিবিদ এবং গবেষক তখন প্রচার করে যে, ভারতের মূল আদিবাসীদের কোন উন্নত সভ্যতা গড়ার ক্ষমতা ছিল না; শক্তি, বুদ্ধি, জ্ঞানবিজ্ঞানে অনেক উন্নত আর্যেরা এসেই উন্নত প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতাগুলো তৈরি করেছিল। অর্থাৎ সবসময়ে আর্য এবং বৃটিশদের মত বিদেশি কোন উন্নত সব সভ্যতা এসেই যেন ভারতীয়দের উদ্ধার করেছে! তবে ১৯২০ সালে হরপ্পা, মহেঞ্জোদারো, লোথালের উন্নত প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতার অস্তিত্ব আবিষ্কার হওয়ার পরে বোঝা যায়, আর্যেরা এসে প্রাচীন ভারতীয় সভ্যতা তৈরি করেনি বরং এই সভ্যতাগুলো উন্নতির শিখর থেকে পড়ে-যাওয়ার অনেক পরে এখানে আযর্দের আগমন ঘটে। এই গবেষণা থেকে এটি আবারো পরিষ্কারভাবে প্রমাণিত হল যে হরপ্পা, মহেঞ্জোদারো, লোথালের উন্নত সভ্যতার প্রতিষ্ঠায় আযর্দের কোন ভূমিকা ছিল না।
৪) আর্যদের হাত ধরেই বৈদিক সংস্কৃতির আগমন ঘটে ভারতে। হিন্দু ধর্মে আর্যদের ‘দেবত্ব-ব্রাহ্মণত্বের যে মহান’ আসনে বসানো হয় সেটাও হাস্যকরভাবে ভিত্তিহীন। জাতপাতের ব্যাপারটা সম্ভবত আর্য ব্রাহ্মণ-পুরোহিত-ক্ষত্রিয়-রাজারাই শুরু করেছিল। শূদ্রেরা যদি ভারতের সিন্ধু উপত্যকার সেই আদিবাসী হয়ে থাকেন তাহলে তাঁরা শুধু ভারতের মৌলিক আদি অধিবাসী নন, তাঁরাই আমাদের সবার পূর্বসূরী!
সিন্ধু উপত্যকার রাখিগাড়ি অঞ্চলে প্রাচীন ডিএনএর উপর ভিত্তি করে আরও কিছু গবেষণার কাজ চলছে। আশা করা হচ্ছে, এই গবেষণার কাজ সমাপ্ত হলে আমরা এ-বিষয়ে হয়তো আরও অনেক কিছু জানতে পারব।
এটা আমার আরেকটি খুব প্রিয় বিষয়, এ নিয়ে লিখলে অনেক কিছুই লেখা যায় কিন্তু আজকে আর লেখাটা বড় করবো না। লিখতে লিখতে শুধু ভাবছিলাম মানুষের সচেতনতা (consciousness) ব্যাপারটা বড়ই আজব এক জিনিস। একদিকে এর কারণেই যেমন আমরা প্রকৃতিতে শ্রেষ্ঠত্বের দাবি করি আবার আরেকদিকে এর কারণেই যুগ যুগ ধরে বিভিন্ন সত্যি-মিথ্যা, সংস্কার-কুসংস্কার/মিথ তৈরি করি; কত ভুল, হাস্যকর এবং ক্ষতিকর মূল্যবোধই না ধারণ করে বসে থাকি! আমাদের অস্তিত্বটাই দ্বন্দ্বে ভরা, সচেতনতার এই দ্বান্দ্বিক দিকটিও হয়তো তারই অংশ। জ্ঞানের বিকাশের সাথে সাথে আমরা যত এইসব ক্ষতিকর প্রথা এবং সংস্কারগুলো থেকে বেরিয়ে আসতে পারব ততই ‘মানুষ’ হিসেবে হয়তো সামনে এগুতে পারব। হয়তো এর মাধ্যমেই একদিন প্রমাণিত হবে আমাদের সত্যিকারের ‘শ্রেষ্ঠত্ব’!
[মনজুর মুরশেদ এবং Sarthak এর চমৎকার দুটি মন্তব্যের ভিত্তিতে(নীচে দেখুন) লেখাটিতে কিছু সংযোজন/পরিবর্তন করলাম। ওনাদের অনেক ধন্যবাদ আলোচনায় অংশগ্রহণ করে লেখাটিকে সমৃদ্ধ করার জন্য।
এছাড়া, প্রথমে এই লেখাটায় ‘পূর্বপুরুষ’ কথাটা ব্যবহার করেছিলাম কিন্তু শব্দটা এতটাই সেক্সিস্ট যে এটা পরিহার করাই যুক্তিযুক্ত মনে হল। তাই পূর্বপুরুষের বদলে ‘পূর্বসূরী’ করে দিলাম।
বন্যা, ১৬/৫/২০১৮]
তথ্যসূত্রঃ
১। এখান থেকে মূল গবেষণাটি ডাউনলোড করে নিতে পারেনঃ The Genomic Formation of South and Central Asiaঃ https://www.biorxiv.org/content/early/2018/03/31/292581
২। বাংলাদেশী মুসলমানদের ধর্মান্তর প্রসঙ্গে প্রফেসর ইটনের বইঃ Eaton, R, 1993, The Rise of Islam and the Bengal Frontier 1204-1760, University of California Press
৩। Who was here first? A new study explains the origins of ancient Indians
https://qz.com/1243436/aryan-migration-scientists-use-dna-to-explain-origins-of-ancient-indians/etics
৪। How We, The Indians, Came to Be
https://www.thequint.com/voices/opinion/genomic-study-vedic-aryan-migration-dravidian-languages-sanskrit
৫। এখানে এ নিয়ে খুব সংক্ষিপ্ত একটি ইউটিউব ভিডিও দেখতে পারেনঃ https://youtu.be/uBuZ9Kd0yRA
Who was here first? A new study explains the origins of ancient Indians
[youtube https://www.youtube.com/watch?v=uBuZ9Kd0yRA&w=560&h=315]
ভুতের আছর কিন্তু জিনের দোহাইতে ছাড়ে না, বন্যা।
–
এই যে ধরেন ট্রাম্পের জন কেলি বলল, বহু আনডকুমেন্টেড ইমিগ্র্যান্ট অল্প শিক্ষিত, ইংরেজি জানে না, আমেরিকার কালচারের সঙ্গে তারা এসিমিলেইট করতে পারে না। তার জিনিওলজি টেনে দেখা গেলো তার পূর্বসুরী আমেরিকায় তিরিশ বছর আনডকুমেন্টেড ছিল, ইংরজি জানতো না। তো এই কথা শুনে তার উত্তরসুরী কেলি কী বদলে যাবে? টমি লেহরেন কি বদলে যাবে? না তারা বদলায় না। এটা us vs. them এর মামলা। নিউরলোজিস্ট জনাব এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না নাম বলেন, খুব সহজেই এই us vs. them এর দলগঠন বদলে দেয়া যায়, ম্যানিপুলেইট করা যায়, ক্রিকেটের কে কোন দল করে এ নিয়েও গ্রুপিং বদলে যায় নিজের দলের ভেতর। সেই গ্রুপিংয়ের ভেতর আবার কে কোন ব্যাটসম্যানকে পছন্দ করে তা নিয়ে সাবগ্রুপিং হয়। ঐ us vs. them করা আর কি। এতো গেলো নিউরোবায়োলজি, এবার আসুন রাজনীতি- সেখানে মূল খেলাটাই us vs. them এর। একদম খাপের খাপ।
–
সব কিছু বেদে আছে, আউট অব ইন্ডিয়া তত্ত্ব
–
ভাষা একটা us vs. them করার টুল। একটি ভাষিক গোষ্ঠী আদার করে অন্য এক ভাষিক গোষ্ঠীকে, যারে বুঝতে পারি না তারে সন্দেহ করি, যারে সন্দেহ করি তারে ঘৃণাও করি এই সব এক হয়। ভাষিক জাতীয়তাবাদের অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। তৎকালীন পাকিস্তান স্টাব্লিশমেন্ট বাংলাভাষাকে সন্দেহের চোখে দেখল, ঘৃণাও করল। সংস্কৃত স্টাব্লিশমেন্টও বাংলাকে সন্দেহ ঘৃণা করেছে। হিন্দু জাতীয়তাবাদী/ ব্রাহ্মণ্যবাদী স্টাব্লিশমেন্ট একসময় সিন্ধু সভ্যতার বিপরীতে সরস্বতী সভ্যতা আবিষ্কার করল, সেটার জারিজুরি ধরা পড়ার পর, আবার নিয়ে এলো প্রাচীন সিন্ধু সভ্যতাকে একাই আত্মসাৎ করার তত্ত্ব নিয়ে, তারাই গড়েছিল তা এই দাবি জোর পেল আউট অব ইন্ডিয়া তত্ত্বে। ভারতে আর্যরা মাইগ্রেট করেছিল ধাপে ধাপে এই তত্ত্বটির পেছনে যে ভাষাতাত্ত্বিক প্রমানটি আছে, তারা হয় সেটাকে এড়িয়ে যায়, নয় আধ্যাত্মিক এক ভাষাতত্ত্ব দিয়ে খণ্ডন করে। ধর্ম এবং জাতীয়তাবাদ যখন একই অক্ষে থাকে তখন একটি মানবগ্রহে কী পরিমাণ ভাবের উচ্ছ্বাস আসতে পারে একবার ভাবুন। সেই ভাবোচ্ছ্বাসে বিজ্ঞান ফিজ্ঞান জ্ঞান হারিয়ে সব চিত হয়ে যায়। তাই বিজ্ঞানকে তার অক্ষশক্তি খুঁজে হবে। পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে। যথাযথ একটা রাজনীতির সঙ্গে গাঁট বাঁধতে হবে।
ধন্যবাদ বন্যা আহমেদ! আমাদের উপমহাদেশের মানুষের পূর্ব-পুরুষদের ইতিহাস আমারও একটি প্রিয় বিষয়, কিন্তু এবিষয়ে আমি জানি খুব অল্পই।
আপনার লেখা থেকে যা বুঝতে পারছি, সিন্ধু সভ্যতা শুরুর আগে আমাদের নিম্ন-গঙ্গা অববাহিকায় যারা ছিল তারা আমাদের বর্তমান আদিবাসিদের (এবং আমাদেরও) পূর্ব-পুরষ। এই প্রাচীন আদিবাসিরা কি অস্ট্রো-এশিয়াটিক, তিব্বতী-বার্মিজ, নাকি অন্য কোন আদিবাসি গোষ্ঠি? এখনকার উত্তর ভারতের মানুষদের তুলনায় আমরা বাঙ্গালীরা জেনেটিক দিক থেকে কম আর্য একথা বলা যাবে? একইভাবে আমরা কি উত্তর ভারতীয়দের তুলনায় দক্ষিণ ভারতীয়দের বেশী কাছাকাছি?
কোথাও পড়েছিলাম যে সিন্ধু সভ্যতার মানুষেরা কোন অজ্ঞাত কারণে হারিয়ে গেছে। এই গবেষণায় দেখা যাচ্ছে যে ওরা আসলে হারিয়ে যায় নি, আমাদের ভারত উপমহাদেশের মানুষের মধ্যেই মিশে গিয়েছে। সিন্ধু সভ্যতার মানুষদের ডিএনএ থেকে কি নতুন তথ্য পাওয়া যায়, তা জানার জন্য অপেক্ষা করছি।
আবারও অনেক ধন্যবাদ!
এরা ঠিক আমাদের সব আদিবাসীদের পূর্বপুরুষ নয়। আমি যাদের কথা বলছিলাম তারা ৫০-৭০ হাজার বছর আগে আফ্রিকা থেকে আসা শিকারি-সংগ্রাহক গোষ্ঠি। এছাড়াও আমাদের দেশে অন্যান্য আদিবাসী আছেন, যেমন আপনি যাদের কথা উল্লেখ করেছেন -,অস্ট্রো-এশিয়াটিক, তিব্বতী-বার্মিজ, ইত্যাদি। কিন্তু এরা আমাদের দেশের এখন ঠিক কোন আদিবাসীদের অন্তর্ভুক্ত তা ঠিক করে বলতে পারবনা, গবেষণাটিতেও আলাদা করে সেটা বলা হয়নি। তবে সেখানে এটা উল্লেখ করা হয়েছে যে, এই অরিজিনাল আদিবাসীদের অস্তিত্ব এখন আন্দামান দ্বীপপুঞ্জে দেখা যায়। কিছুটা কনফিউশান সৃষ্টি হয়েছে দেখে আমার লেখায় কিছু পরিবর্তন করলাম এবং লেখা থেকে ‘এদেরকে আমরা আদিবাসী বলার চেষ্টা করি’ কথাটাও উঠিয়ে দিলাম। অনেক ধন্যবাদ ব্যাপারটা পরিষ্কার করতে সাহায্য করার জন্য।
হ্যাঁ এটা আমিও আগে শুনেছিলাম। আধুনিক ডিএনএ ভিত্তিক গবেষণাগুলো এ ধরনের অনেক রহস্যই সমাধান করতে পারবে বলে আশা করা যায়।
বন্যাদি একটা তথ্য যোগ করবো। উত্তর ভারতীয় পূর্বপুরুষ (Ancesteral North Indians-ANI) ও দক্ষিণ ভারতীয় পূর্বপুরুষ (Ancesteral South Indians-ASI) সৃষ্টি হওয়ার পর আবার এই দুই গোষ্ঠীর মধ্যে মিশ্রণ হয়েছে। তাই আজকের উপমহাদেশের কথা চিন্তা করলে উত্তরের মানুষ শুধু ANI এর বংশধর নয় আর দক্ষিণের মানুষ শুধু ASI
এর নয়। উত্তর ও দক্ষিণ দুই জায়গাতেই মানুষ এই ANI ও ASI এর অধিকন্তু মিশ্রণের ফলে তৈরি হওয়া আধুনিক উপমহাদেশীয়।
তা সত্ত্বেও এটা ঠিক যে ভারতের উত্তর ভারতের উচ্চবর্ণের মধ্যে অন্য গোষ্ঠীর তুলনায় বেশি মাত্রায় আর্য(স্তেপ) জিন পাওয়া গেছে।সব মিলিয়ে উত্তর ভারতে ANI এর প্রভাব বেশি আর দক্ষিণে ASI এর প্রভাব বেশি কিন্তু এরা (উত্তর বা দক্ষিণের) কেউই আর জিনগত ভাবে শুধুই ANI বা ASI এর জিন বহন করে না।
এক মতে ANI আর ASI তৈরি হওয়ার পর প্রথম হাজার থেকে দুহাজার বছর দুইয়ের মধ্যে অনেক মিশ্রণ হয়। কিন্তু তারপর মানে শেষ দুহাজার বছর জিন গত বৈশিষ্ঠ মোটামুটি একই থেকে গেছে। এর কারণ ব্রাহ্মণ্যবাদী ধর্মে উচ্চবর্ণের মধ্যে সমজাতির মধ্যে বিবাহ-প্রথা গেড়ে বসা।
এছাড়া রিসার্চাররা আরো অনুমান করেছেন ভারতের যে যে ভারতীয় জনগোষ্ঠীর মধ্যে স্তেপ জিন তুলনায় অনেকটাই বেশী পাওয়া গেছে তারা হয়ত ব্রাহ্মণ্যবাদি ধর্ম ও ভাষা মূল জিম্মেদার ছিল। এবং সমজাতির মধ্যে বিয়ে করে এই ধারাটা তারা ধরে রেখেছিল, এমনকি এখনো ধরে রেখেছে। আমার মনে হয় এই শ্রেণীই এবং এই শ্রেণীর প্রতি ভক্তিই উপমহাদেশের মানুষের মনে ফর্সা চামড়ার ফেটিস তৈরি করেছে যুগ যুগ ধরে।
পারফেক্ট! আমি লেখাটা এত সংক্ষিপ্তভাবে লিখেছিলাম যে অনেক কিছুই বাদ গেছে! আমাকে বেশ কয়েকজন বলেছে ANI এবং ASI নিয়ে আরেকটু বিস্তারিত লিখেতে। এছাড়াও পরবর্তীতে গত এক হাজার বছরে আরও অনেক জাতির সাথেই যে মিশ্রণ ঘটেছে সেটাও উল্লেখ করা প্রয়োজন। আপনার দেওয়া তথ্য থেকে একটু যোগ করে দিচ্ছি। অনেক ধন্যবাদ।
মন্তব্য করতেও দুঃসাহস লাগে আজকে তা হাড়ে হাড়ে টের পেলাম। দিদিকে শ্রদ্ধা। সুন্দর একটি উপস্থাপনার জন্য। মূলতঃ দ্বিধাগ্রস্থ হয়ে জিজ্ঞাসা: অধ্যাপক নীহাররঞ্জন রায়-এর বাঙ্গালীল ইতিহাস (আদি পর্ব) বইটি আমার কাছে খুবই অমূল্য রত্ন বলে বিবেচ্য। অধ্যাপক রায়- হিন্দুকুশ পর্বত হয়ে আগত আর্যদেরকে জাতি হিসেবে অস্বীকার করে আর্য ভাষাভাষী জাতি হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এবং তিনি তা প্রমাণের চেষ্টাও করেছেন। আরেকটি বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়, অবিভক্ত ভারতবর্ষ একসময় বৌদ্ধ অধ্যুষিত ছিলো। কিন্তু তাঁদের সংখ্যা আশংকাজনকভাবে হ্রাসের বিষয় নিয়ে কিন্তু তেমন গবেষণা চোখে পড়েনা। মুসলমানদের সংখ্যা বৃদ্ধির পিছণে এ কারণটিও আলোচনায় আসা প্রয়োজন রয়েছে বলে এই অধম মনে করে। অবশ্য আমাকে এই সাহস দিয়েছেন রাহুল সাংকৃত্যায়ন এবং তাঁর কর্তৃক লিখিত “ভারতে বৌদ্ধ ধর্মের উত্থান পতন” নামক ছোট্ট একটি পুস্তিকা। আবারো দিদিকে শ্রদ্ধা।
হ্যাঁ, পড়েছিলাম আমিও। ম্যাক্স মুলার বলেছিলেন না এটা প্রথম? কিন্তু এর স্বপক্ষে আর কোন প্রমাণ দেখিনি।থাকতে পারে, হয়তো পড়িনি আমি। আপনি পড়ে থাকলে জানাবেন। তাই আপাতত অন্যান্য প্রাচীন জাতির মতই আর্যদেরও ‘জাতিই’ বললাম।
ইটন তো অনেক পরের কথা বলছেন, ১৩০০-১৪০০ সালের কথা। আমার ধারণা ছিল বৌদ্ধদের সংখ্যা কমে যাওয়ার ব্যাপারটা তাড় আরও অনেক আগে ঘটেছিল। আমি ভুল হতে পারি কিন্তু আমি জানতাম যে বৌদ্ধদের সংখ্যা হ্রাস পেতে শুরু করে ৪০০-৭০০ খ্রিস্টাব্দের দিকেই এবং সে সময়েই আবার নতুন করে হিন্দু ধর্মের রিভাইভাল ঘটে। শংকরাচার্যকে তো তার ধারাবাহিকতায়ই অন্যান্য হিন্দু দর্শনের এবং বৌদ্ধ দর্শনের মতও খণ্ডন করেন। ঠিক না? আপনি অন্য কিছু জেনে থাকলে প্লিজ জানাবেন।
আসলেও, আধা সচেতন বা সামান্য হলে কিছুটা কৌতূহলী মানুষদের জন্য এই যে কোথা থেকে এলাম, কেমন করে আমরা এইসব ধর্মের মানুষ হয়ে গেলাম ইত্যাদি উত্তরের সূত্র পেতে লেখাটা দারুন সাহায্য করবে। ধন্যবাদ বন্যা।
ধন্যবাদ কাজিদা পড়ার জন্য।
খুব ভাল লাগল দেখে যে আপনি রিচার্ড ইটনের বইটার কথা উল্লেখ করেছেন। স্নাতক স্তরে ইতিহাস পড়বার সময় এই বইটির নির্বাচিত অংশ আমরা পড়েছিলাম। খুবই ভাল, নির্ভরযোগ্য, গবেষণামূলক একটি বই। যাই হোক, সংক্ষেপে সুন্দর বিশ্লেষণ করেছেন আপনি। একটা বিষয় দেখে দুঃখ লাগে। পশ্চিমের দেশে প্রত্নতত্ত্ব, ইতিহাস নিয়ে বৈজ্ঞানিক গবেষণা কতদূর এগিয়ে গেছে, সেখানে আমাদের উপমহাদেশের ইতিহাসচর্চা কতটা পিছিয়ে! ইতিহাস আর পুরাণকে লোকে এক করে ফেলে। রামায়ণ-মহাভারত মহাকাব্য হিসেবে উৎকৃষ্ট হতে পারে কিন্তু সেটা যে ইতিহাস নয় সেটা গলাধঃকরণ করা অনেকের পক্ষে মুশকিল হয়ে ওঠে। ধর্মীয় বিশ্বাসের পাঁকে লোকে আপাদমস্তক ডুবে আছে। পাঁক থেকে বেরোতে না পারলে খুবই মুশকিল।
আজকের ইতিহাস খুব একটা মজার জায়গায় এসে পৌঁছেছে – আধুনিক জেনেটিক গবেষণাগুলো ইতিহাসের আরও অনেক রহস্যের সমাধান করতে সক্ষম হবে বলে আশা করা যায়। ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য।