পৃথিবীর সবচেয়ে সম্মানজনক এবং শক্তিশালী পুরষ্কারের নাম জিজ্ঞেস করলে বেশিরভাগ মানুষ নোবেল পুরষ্কারের কথাই বলেন। ১৯০১ সাল থেকে শুরু হয়ে প্রতিবছর পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, চিকিৎসাবিজ্ঞান, সাহিত্য ও শান্তিতে অবদানের জন্য নোবেল পুরষ্কার দেয়া হয়। চিকিৎসাবিজ্ঞান, পদার্থবিজ্ঞান, ও রসায়নের গবেষণায় সাফল্যের সর্বোচ্চ স্বীকৃতি নোবেল পুরষ্কার। সাহিত্যে যিনি নোবেল পুরষ্কার পান – তাঁর পাঠকপ্রিয়তা এই সময় হঠাৎ করেই বেড়ে যায়। বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠার কাজে সহায়তার জন্য নোবেল শান্তি পুরষ্কার পান যে ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান – নোবেল পুরষ্কার পাবার সাথে সাথে সেই ব্যক্তির বা প্রতিষ্ঠানের গুরুত্ব ও মর্যাদা বেড়ে যায় অনেকগুণ; অনেক ক্ষেত্রে তাঁদের রাজনৈতিক ক্ষমতাও বেড়ে যায়। অবশ্য সাহিত্য ও শান্তিতে নোবেল পুরষ্কার যাঁরা পান তাঁদের নিয়ে অনেক সময় নানারকম বিতর্কও তৈরি হয়। তবে সেই বিতর্কে নোবেল পুরষ্কারের মর্যাদা একটুও কমে না, বরং বেড়ে যায়। এমন মর্যাদাকর পুরষ্কার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যাঁর সারাজীবনের সঞ্চিত অর্থ ও সম্পদে – তিনি আলফ্রেড নোবেল। ১৯৬৮ সাল থেকে আলফ্রেড নোবেলের সম্মানে অর্থনীতিতেও পুরষ্কার দেয়া হচ্ছে। কিন্তু অর্থনীতির পুরষ্কার মূল নোবেল পুরষ্কার নয়। নোবেলের উইলে অর্থনীতিতে পুরষ্কার দেয়ার কোন কথা ছিল না এবং নোবেলের সঞ্চিত অর্থ-সম্পদ থেকেও অর্থনীতির পুরষ্কারের অর্থ দেয়া হয় না।
১৮৯৫ সালের ২৭ নভেম্বর তারিখে আলফ্রেড বার্নহার্ড নোবেল তাঁর উইলে স্বাক্ষর করেছিলেন। সুইডিশ ভাষায় হাতে লেখা চার পৃষ্ঠার উইলে নোবেলের সারাজীবনের সঞ্চিত ধন-সম্পদের বিলিবন্টনের ব্যাপারে সুনির্দিষ্ট নির্দেশ আছে। দেখা যাক আলফ্রেড নোবেলের উইলে ঠিক কী কী লেখা আছে। মূল সুইডিশ থেকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছে নোবেল কমিটি। আমি ইংরেজি থেকে বাংলায় অনুবাদ করলাম।
উইলের পূর্ণ-বিবরণ:
আমি, নিম্নস্বাক্ষরকারী, আলফ্রেড বার্নহার্ড নোবেল, এই মর্মে সজ্ঞানে স্বেচ্ছায় ঘোষণা করছি যে আমার মৃত্যুর পর আমার অর্জিত সম্পদের বিলি-বন্টন সম্পর্কে এখানে বর্ণিত বিবরণই হবে আমার অন্তিম ইচ্ছা। আমার মৃত্যুর পর:
আমার ভাই রবার্ট নোবেলের দুই ছেলে হালমার নোবেল ও লুডভিগ নোবেল – তাদের প্রত্যেককে আমি দুই লক্ষ ক্রাউন করে দিয়ে যাচ্ছি।
আমার ভাইপো ইমানুয়েল নোবেলকে দেয়া হবে তিন লক্ষ ক্রাউন, এবং আমার ভাইঝি মিনা নোবেলকে দেয়া হবে এক লক্ষ ক্রাউন।
আমার ভাই রবার্ট নোবেলের মেয়ে – ইনগিবোর্গ ও টায়রা – দুজনের প্রত্যেককে এক লক্ষ ক্রাউন করে দেয়া হবে।
বর্তমানে প্যারিসের সেন্ট ফ্লোরেন্টিন রোডের ১০ নম্বর বাড়িতে মিসেস ব্র্যান্ডের সাথে অবস্থানরত মিসেস ওলগা বোয়েতগারকে দেয়া হবে এক লক্ষ ফ্রাংক।
মিসেস সোফি ক্যাপি ভন ক্যাপিভার যতদিন বেঁচে থাকবেন ততদিন তাঁকে বছরে ছয় হাজার হাঙ্গেরিয়ান ফ্লোরিন দেয়া হবে। তাঁর ঠিকানা ভিয়েনার অ্যাংলো-ওয়েস্টেরেইসিসে ব্যাংকে দেয়া আছে। ঐ ব্যাংকই তাঁর কাছে তাঁর বাৎসরিক বরাদ্দ পাঠিয়ে দেবেন। সেজন্য আমি হাঙ্গেরিয়ান স্টেট বন্ডের মাধ্যমে ঐ ব্যাংকে দেড় লক্ষ ফ্লোরিন জমা রেখেছি।
বর্তমান স্টকহোমের ২৬ নম্বর স্টুরগ্যাটেন নিবাসী মিস্টার আলারিক লিয়েদবেককে দেয়া হবে এক লক্ষ ক্রাউন।
বর্তমানে প্যারিসের দ্য লুবেক রোডের ৩২ নম্বর বাড়িতে অবস্থানরত মিস এলিস অ্যান্টুন যতদিন বেঁচে থাকবেন বছরে আড়াই হাজার ফ্রাংক করে পাবেন। তাছাড়া তাঁর নিজের যে আটচল্লিশ হাজার ফ্রাংক বর্তমানে আমার কাছে জমা আছে তাও তাঁকে ফেরত দেয়া হবে।
আমেরিকার টেক্সাসের ওয়াটারফোর্ড নিবাসী মিস্টার আলফ্রেড হ্যামন্ডকে দেয়া হবে দশ হাজার আমেরিকান ডলার।
মিস এমি উইংকেলমান ও মিস মেরি উইংকেলমান, ঠিকানা: ৫১ পটসড্যামারেস্ট্রেসে, বার্লিন। এই দুজনকে পঞ্চাশ হাজার ফ্রাংক করে দেয়া হবে।
মিসেস গাউসের, ঠিকানা: ২ বিস বুলেভার্ড দু ভিয়াদুক, নিমস, ফ্রান্স; পাবেন এক লক্ষ ফ্রাংক।
আমার স্যান রেমোর ল্যাবোরেটরিতে কর্মরত আমার কর্মচারী অগাস্তে অসওয়ার্ল্ড ও তার স্ত্রী আলফন্সে টুরন্যান্ড – দুজনের প্রত্যেকে আজীবন বছরে এক হাজার ফ্রাংক করে পাবেন।
আমার প্রাক্তন কর্মচারী জোসেফ গিরারডট, ঠিকানা: ৫ প্লেস স্ট্রিট, লরেন্ট, সালোন্স স্যু সাওন যতদিন বেঁচে থাকবে বছরে পাঁচ শত ফ্রাংক করে পাবে।
আমার প্রাক্তন মালী জাঁ লেকফ, বর্তমান ঠিকানা: মিসেস ডেসোট্টার, রিসেভ্যুর কুরালিস্তে, মেসনিল, অউব্রি পাওর ইকোওয়েন, এস এন্ড ও, ফ্রান্স; যতদিন বেঁচে থাকবে বছরে তিন শত ফ্রাংক করে পাবে।
মিস্টার জর্জেস ফারেনবাখ, ঠিকানা: ২, রু কম্পিয়েঁজ, প্যারিস; ১লা জানুয়ারি ১৮৯৬ থেকে ১লা জানুয়ারি ১৮৯৯ পর্যন্ত বছরে পাঁচ হাজার ফ্রাঙ্ক করে অবসরভাতা পাবেন।
আমার ভাইয়ের ছেলেমেয়ে হালমার, লুডভিগ, ইনগিবার্গ ও টায়রা – তাদের প্রত্যেকের জন্য বিশ হাজার ক্রাউন করে আমার কাছে জমা আছে। তাদের প্রত্যেককে এই অর্থ ফেরত দেয়া হবে।
আমার বাকি সব সম্পদের বিলিবন্টন করা হবে এভাবে:
আমার মূলধন যা আমার নির্বাহী কর্মকর্তারা নিরাপদে বিনিয়োগ করেছেন তা দিয়ে একটা তহবিল গঠন করা হবে। এই তহবিল থেকে বার্ষিক যে সুদ পাওয়া যাবে তা প্রতি বছর পুরষ্কার হিসেবে ভাগ করে দেয়া হবে তাদেরকে যাঁরা আগের বছর মানুষের কল্যাণে সর্বোচ্চ অবদান রেখেছেন। বার্ষিক অর্জিত মোট সুদকে সমান পাঁচ ভাগে ভাগ করে: এক ভাগ দেয়া হবে সেই ব্যক্তিকে যিনি পদার্থবিজ্ঞানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার বা উদ্ভাবন করবেন; এক ভাগ দেয়া হবে সেই ব্যক্তিকে যিনি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাসায়নিক আবিষ্কার বা উন্নয়ন করবেন; এক ভাগ দেয়া হবে সেই ব্যক্তিকে যিনি শরীরতত্ত্ব কিংবা চিকিৎসাবিজ্ঞানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার করবেন; এক ভাগ দেয়া হবে সেই ব্যক্তিকে যিনি কোন আদর্শ স্থাপনের লক্ষ্যে সাহিত্যে সবচেয়ে ভালো কাজ করবেন; এবং এক ভাগ দেয়া হবে সেই ব্যক্তিকে যিনি দুটি দেশের মধ্যে বন্ধুত্ব সৃষ্টির লক্ষ্যে, সেনাবাহিনীর বিলুপ্তি বা সৈন্যসংখ্যা কমানোর লক্ষ্যে, শান্তি সম্মেলনের আয়োজন ও প্রচারের লক্ষ্যে সবচেয়ে বেশি কিংবা সবচেয়ে ভালো কাজ করবেন।
পদার্থবিজ্ঞান ও রসায়নের পুরষ্কার দেবে সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেস; শরীরতত্ত্ব কিংবা চিকিৎসাবিজ্ঞানের পুরষ্কার দেবে স্টকহোমের ক্যারোলিন ইন্সটিটিউট; সাহিত্যের পুরষ্কার দেবে অ্যাকাডেমি ইন স্টকহোম; এবং শান্তি পুরষ্কার দেবে নরওয়ের পার্লামেন্ট (স্টরটিং) কর্তৃক নিয়োজিত পাঁচ সদস্যের এক কমিটি।
এই পুরষ্কার দেয়ার জন্য মনোনয়নের ক্ষেত্রে কোন ধরনের জাতীয়তার প্রতিবন্ধকতা থাকবে না; স্ক্যানডিন্যাভিয়ান হোক বা না হোক, যোগ্যতম ব্যক্তিই এই পুরষ্কার পাবে এটাই আমার ইচ্ছা।
আমার উইল কার্যকর করার জন্য আমি দু’জন নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ করছি: মিস্টার র্যা গনার শোলম্যান, ঠিকানা: বফর্স, ভার্মল্যান্ড; এবং মিস্টার রুডল্ফ লিজেকুইস্ট, ঠিকানা: ৩১ মাল্মস্কিলন্যাডসগ্যাটান, স্টকহোম ও বেংগটস্ফোরে উড্ডেভেলার কাছে। এই কাজের জন্য তাঁরা যে কষ্ট করবেন তার ক্ষতিপূরণ হিসেবে মিস্টার র্যা গনার শোলম্যানকে এক লক্ষ ক্রাউন দিচ্ছি কারণ তাঁকেই এই কাজে বেশি সময় দিতে হবে; এবং মিস্টার রুডল্ফ লিজেকুইস্টকে পঞ্চাশ হাজার ক্রাউন দিচ্ছি।
বর্তমানে আমার সম্পদের মধ্যে আছে কিছু অংশ আছে প্যারিস এবং সেন্ট রেমোতে রিয়েল এস্টেট হিসেবে; আর আমানত হিসেবে জমা আছে: ইউনিয়ন ব্যাংক অব স্টকল্যান্ডের গ্লাসগো এবং লন্ডন শাখায়; প্যারিসের কম্পটয়ের ন্যাশনাল ডি-স্কম্পটি, এবং আলফেন মেসিন অ্যান্ড কোম্পানিতে; প্যারিসের স্টকব্রোকার এম ভি পিটার অব ব্যাংক ট্রান্স-আটলান্টিকে; বার্লিনের ডিরেকশান ডার ডিসকনটো গেশেলস্ক্রাফ্ট এবং জোসেফ গোল্ডস্মিডট অ্যান্ড কোম্পানিতে; রাশিয়ান সেন্ট্রাল ব্যাংকে এবং পিটারসবুর্গে মিস্টার ইমানুয়েল নোবেলের কাছে; গুটেনবার্গ ও স্টকহোমে স্ক্যানডিনাভিস্কা ক্রেডিট আক্টিয়েবোলাগেটে; এবং প্যারিসের ৫৯ নম্বর মালাকফ অ্যাভিনিউতে রক্ষিত আমার স্ট্রং-বক্সে। এগুলো ছাড়াও আছে প্যাটেন্ট, প্যাটেন্ট ফি বা রয়্যালটি থেকে আয়। আমার নির্বাহীরা এই হিসেবের পূর্ণ বিবরণ আমার দলিলপত্র থেকে খুঁজে বের করবেন।
আমার এই উইলটিই হলো একমাত্র বৈধ উইল। আমার মৃত্যুর পর যদি এর আগে করা কোন উইল খুঁজে পাওয়া যায় তাহলে সেগুলো বৈধ বলে গণ্য হবে না।
সবশেষে আমার বিশেষ ইচ্ছা এই যে আমার মৃত্যুর পর কোন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার আমার শিরা কেটে দেখবেন এবং আমার মৃত্যুর ব্যাপারে নিশ্চিত হবেন। তারপর আমার দেহ কোন শ্মশানে নিয়ে গিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হবে।
স্বাক্ষর
প্যারিস, ২৭ নভেম্বর, ১৮৯৫
আলফ্রেড বার্নহার্ড নোবেল
_____________
আমরা নিম্নস্বাক্ষরকারীগণ এই মর্মে ঘোষণা করছি যে মিস্টার আলফ্রেড বার্নহার্ড নোবেল সুস্থ মস্তিষ্কে, স্বেচ্ছায় ঘোষণা করেছেন যে উপরে বর্ণিত উইলটি তাঁর শেষ উইল। তিনি আমাদের সবার সামনে উইলে স্বাক্ষর করেছেন, এবং আমরাও সবাই সবার সামনে উইলে স্বাক্ষর করলাম।
সিগার্ড এরেনবোর্গ
অবসরপ্রাপ্ত ল্যাফটেন্যান্ট
প্যারিস: ৮৪ বুলেভার্ড হাউসম্যান
আর ডাব্লিউ স্ট্রেলেনার্ট
সিভিল ইঞ্জিনিয়ার
৪, প্যাসেজ ক্যারোলিন
থস নরডেনফেল্ট
কনস্ট্রাক্টর
৮, রু অবার, প্যারিস
লিওনার্ড হাওয়াস
সিভিল ইঞ্জিনিয়ার
৪, প্যাসেজ ক্যারোলিন
ভালো লিখেছেন
চমৎকার।
১। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের চ্যুতিয়াদের শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তি দেখে প্রিন্সিপ্যল ইব্রাহীম খাঁর “সোনার হরফে লেখা নাম” ছোটগল্পটির কথা মনে পড়ে গেল। যে গল্পে দেখা যায় পৃথিবীতে কিছু মানুষ আছে যারা পুরস্কারের আশায় ভালো কাজ করে না। কোন কিছুর আশা না করেই, তারা মানুষের কল্যানে কাজ করে যান।
২। কক্সবাজারের রামু চট্টগ্রামের হাটহাজারী থেকে বেশি দূরে নয়। সেটা নিয়ে বলার আগে নিচের কবিতাখানা পড়ুন-
নন্দলাল
দ্বিজেন্দ্রলাল রায়
নন্দলাল তো একদা একটা করিল ভীষণ পণ –
স্বদেশের তরে, যা করেই হোক, রাখিবেই সে জীবন।
সকলে বলিল, ‘আ-হা-হা কর কি, কর কি, নন্দলাল?’
নন্দ বলিল, ‘বসিয়া বসিয়া রহিব কি চিরকাল?
আমি না করিলে কে করিবে আর উদ্ধার এই দেশ?’
তখন সকলে বলিল- ‘বাহবা বাহবা বাহবা বেশ।’
নন্দর ভাই কলেরায় মরে, দেখিবে তারে কেবা!
সকলে বলিল, ‘যাও না নন্দ, করো না ভায়ের সেবা’
নন্দ বলিল, ভায়ের জন্য জীবনটা যদি দিই-
না হয় দিলাম, -কিন্তু অভাগা দেশের হইবে কি?
বাঁচাটা আমার অতি দরকার, ভেবে দেখি চারিদিক’
তখন সকলে বলিল- ‘হাঁ হাঁ হাঁ, তা বটে, তা বটে, ঠিক।’
নন্দ একদা হঠাৎ একটা কাগজ করিল বাহির,
গালি দিয়া সবে গদ্যে, পদ্যে বিদ্যা করিল জাহির;
পড়িল ধন্য দেশের জন্য নন্দ খাটিয়া খুন;
লেখে যত তার দ্বিগুণ ঘুমায়, খায় তার দশ গুণ;
খাইতে ধরিল লুচি ও ছোকা ও সন্দেশ থাল থাল,
তখন সকলে বলিল- ‘বাহবা বাহবা, বাহবা নন্দলাল।’
নন্দ একদা কাগজেতে এক সাহেবকে দেয় গালি;
সাহেব আসিয়া গলাটি তাহার টিপিয়া ধরিল খালি;
নন্দ বলিল, ‘আ-হা-হা! কর কি, কর কি! ছাড় না ছাই,
কি হবে দেশের, গলাটিপুনিতে আমি যদি মারা যাই?
বলো কি’ বিঘৎ নাকে দিব খত যা বলো করিব তাহা।’
তখন সকলে বলিল – ‘বাহবা বাহবা বাহবা বাহা!’
নন্দ বাড়ির হ’ত না বাহির, কোথা কি ঘটে কি জানি;
চড়িত না গাড়ি, কি জানি কখন উল্টায় গাড়িখানি,
নৌকা ফি-সন ডুবিছে ভীষণ, রেলে ‘কলিসন’ হয়;
হাঁটতে সর্প, কুকুর আর গাড়ি-চাপা পড়া ভয়,
তাই শুয়ে শুয়ে, কষ্টে বাঁচিয়ে রহিল নন্দলাল
সকলে বলিল- ‘ভ্যালা রে নন্দ, বেঁচে থাক্ চিরকাল।’
তখন সকলে বলিল- ‘বাহবা বাহবা বাহবা বেশ।’
আমাদের নন্দের সেদিন কোন বক্তৃতা বিবৃতি পাওয়া যায়নি। তিনি তখন বাইরে বক্তৃতা নিয়ে ব্যস্ত।
৩। দুই দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপুর্ন সম্পর্ক রাখার জন্য আমাদের প্রধানমন্ত্রী আগের সরকারের সময় যুদ্ধের ময়দানে মুখোমুখি ভারত-পাকিস্তান উভয়দেশ সফর করেছিলেন। পার্বত্য শান্তি চুক্তি করে শান্তিবাহিনীর গেরিলাদের আত্নসমর্পন করে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করেন। কিন্তু কিছু পত্রিকার ব্যংগ বিদ্রুপাত্মক খবর , কিছু ছিদ্রান্বেষী বুদ্ধিজীবীর নেতিবাচক ততপরতায় পুরো বিষয়টা হালকা হয়ে যায়। নরওয়ের একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানকে ব্যবসা করার অনুমতিও তারাই দেয়। সে সময়ের টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী নাসিম সাহেব বলেন, এজন্য আমরা এক-কাপ চাও খাইনি। এখানেই হিসাবের একটা বড় ভুল হয়ে যায়। নরওয়ের প্রতিষ্টানকে ব্যবসা করার জন্য অনুমতি দেয়ার পাশাপাশি তাদেরকে দিয়েই নোবেল কমিটিতে লবিং করার দরকার ছিল যা সরকার বুঝতে পারেনি। যিনি বুঝতে পেরেছিলেন তিনি পেয়ে গেছেন।
অসাধারণ লেখনী, লেখককে অনেক ধন্যবাদ।
মুক্তমনা পাঠককেও অনেক ধন্যবাদ।
চমৎকার পোস্ট। অজানা অনেক কিছু জানতে পারলাম।
সবকিছু জানার পরে মনের মধ্যে কিছু প্রশ্নেরও উদ্রেক হয়েছে। যেমন- ড. মুহাম্মদ ইউনূস কীভাবে নোবেল পুরষ্কার পান?
সাহিত্য ও শান্তি’র নোবেল পুরষ্কার এখন রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত।
কিন্তু উইকিপিডিয়া অনুসারে উনাকে কবর দেওয়া হয়েছিল।
অথচ আপনার অনুবাদ অনুসারে উইলে উনাকে শ্মশানে পোড়ানোর ইচ্ছের কথা লেখা ছিল।
নোবেলের উইলে লেখা আছে: Finally, it is my express wish that following my death my veins shall be opened, and when this has been done and competent Doctors have confirmed clear signs of death, my remains shall be cremated in a so-called crematorium.
হেনরি কিসিঞ্জার, মাদার তেরেসা ও প্রফেসর ইউনূসও শান্তিতে নোবেল পেয়েছিলেন। এঁদের মধ্যে মাদার তেরেসা মূলত খ্রিস্টান ধর্ম প্রচার করতেন দরিদ্রদের মধ্যে। দারিদ্র বিমোচনের চেষ্টা তিনি করেননি কখনও। বরং তিনি বলতেন, দারিদ্র ঈশ্বরের আশীর্বাদ। এছাড়া অসুস্থ মানুষদের তিনি রাখতেন দারুণ অস্বাস্থকর নোংরা পরিবেশে। তবুও তিনি নোবেল পেলেন এবং তা শান্তিতে। শান্তি প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ইউনূসের কী অবদান তাও বুঝলাম না। হেনরি কিসিঞ্জারের কথা কী আর বলবো? নোবেল কমিটিতে যাঁরা কাজ করেন, যাঁদের সিদ্ধানে বিশ্বের সবচেয়ে সম্মানের পরস্কার মানুষের অবদানের জন্য দেওয়া হয় তাঁরা কি ভালোভাবে তদন্ত করেন না পুরস্কার দেওয়ার আগে?
উইলে আলফ্রেড নোবেন লিখে গেছেন, ভাইপোকে তিন লক্ষ ক্রাউন দিতে এবং ভাইঝিদের এক লক্ষ ক্রাউন করে দিতে। ভাইঝিদেরকে ভাইপোর তিনভাগের একভাগ!
তবে তাঁর উদ্দেশ্য এবং উদযোগ অনেক মহৎ ছিল। নিজের কষ্টোপার্জিত অর্থ তিনি আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে ভাগ করে দিয়ে বাকি টাকায় ট্রাস্ট গঠন করেছেন এবং তা থেকে উপার্জিত অর্থ পুরস্কার হিসেবে দিতে বলেছেন কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে মানুষের সর্বচ্চ অবদানের জন্য।
আসলেই ইউনুস কেমনে নোবেল পেলেন এটা একটা বিস্ময়। এ নিয়ে গবেষণা হতে পারে। ২-৪ টা থিসিস পেপার হতে পারে। কেন অমুক অমুক কে নোবেল দেয়া হলনা এত লবিং তদ্বির সত্ত্বেও সেটা নিয়ে মানব বন্ধন হতে পারে। ইউনুস এদং আবেদ সাহেব সূদের ব্যবসা করেন — তাই তাদের জাহান্নামে যেতে হবে — তেঁতুল হুজুরকে দিয়ে একটা ফতোয়া দেয়া যেতে পারে। কোন বাংলাদেশি যেন আর নোবেল না পায় এ জন্য নোবেল কমিটিতে আবেদন করা যেতে পারে আর যারা পেয়ে গিয়েছেন বাই চান্সে তাদের টা কিভাবে বাতিল করা যায় সে ব্যাপারে একটা সর্বদলীয় চাটুকার কমিটি গঠন করা যেতে পারে।
এই লেখাটা পড়ে মন্তব্য করার অনুরোধ করছি আপনাকে।
নোবেল তাঁর উইলে পুরষ্কার দেয়ার যে মূলনীতি লিখে গিয়েছিলেন গত একশ’ বছরে তার অনেক বিবর্তন হয়েছে। শান্তি-পুরষ্কার দেয়ার মূল বিবেচ্য হওয়ার কথা ছিল সেনাবাহিনীর বিলুপ্তি বা সৈন্যসংখ্যা কমানো, অন্তঃদেশীয় বন্ধুত্ব বাড়ানো ইত্যাদি। সেই নীতিমালা কদাচিৎ মানা হয়েছে। তাছাড়া নোবেল একাধিক ব্যক্তিকে পুরষ্কার দেয়ার ব্যাপারে কিংবা কোন সংগঠনকে পুরষ্কার দেয়ার ব্যাপারে কিছু বলে যাননি।
চমৎকার পোস্ট। :good:
ধন্যবাদ সুব্রত শুভ