লিখেছেন: অনুসন্ধানী আবাহন
১)
আমার বড়মামী আর মামা কাজিন। ফ্যামিলির সম্পত্তি ফ্যামিলিতে থাকবে, তাই বিয়ে। মামীর বয়স তখন ১৫ অথবা ১৬। সেটা সম্ভবত ৮৪ সাল, আমার শুধু মনে আছে পালকিতে মামার সাথে ছিলাম, একেবারেই পিচ্চি। মেজোমামী বউ হয়ে আসে বছর দুই পরে ১৬ বা ১৭ বছর বয়সে। তার দুবছর পরে সেজোমামী, বয়স ১৮ বা তারও কম। আমার বয়স যখন ১৮, ছোটমামী এলো, আমার থেকে বয়স কম। আমি যখন ক্লাস সিক্সে, মামাবাড়ির পাশের বাড়ির একটা মেয়ের বিয়ে হয় যার বয়েস ১৫ হয় নি। আমার বড় মামার ছেলে, ২০০৬ এর পরে বিয়ে করেছে, মেয়েটার বয়স কিছুতেই ১৬ কিংবা ১৭’র বেশি ছিলো না। দিন তিনেক আগে মামাবাড়ি গেছিলাম। আমার একটা কাজিন, নাইনে পড়ে, ১৫ এখনো হয় নি, আমাকে দেখালো, ওর থেকে একটু বয়সে বড় তার ক্লাসমেটের বিয়ে হয়েছে, এই রোজার ঈদের পরে। মেয়েটাকে দেখলাম খেয়াল করে। শাড়ি পরা ছিলো, তাতেই দেখে মনে এক্কেবারে বাচ্চা, ১৫ ভাবাই চাপ।
বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটা গ্রামে, এমন ঘটছে, চলছেই, ৮৪ থেকে দেখছি আমি…. আজ ৩২ বছর…. পৃথিবী এগিয়েছে……তবুও চলছেই। ইউনিসেফের তথ্যমতে বাংলাদেশে ৫২% মেয়ের বিয়ে হয় ১৮ বয়স হওয়ার আগে, ১৮% বিয়ে হয় ১৫’র আগে [*]। বাল্যবিবাহ হারের তালিকায় বাংলাদেশ ৮ম। সরকার নাকি নিয়ম করতে যাচ্ছে,, ১৮ তো প্রাপ্তবয়স্কতা , কিন্তু ১৬ হচ্ছে বিয়েতে মত দেয়ার জন্যে উপযুক্ত বয়স মেয়েদের। ১৬ বছরের মেয়ে বিয়ের কি বোঝে, সে বিয়ে নিয়ে কি মত দেবে? আপনাদের মনে আছে, সরকারী বাল্য-বিবাহ সচেতনতা প্রকল্প? ৯০ দশকে, সেই কুদ্দুস বয়াতির গান ছিলো:
“আম খাইও জাম খাইও তেঁতুল খাইও না
অল্প বয়সে বিয়া করলে প্রাণে বাচতা না,
ও মাইয়া তুই বিয়া বইস না,
কাঞ্চা বাঁশে ধরলে ঘুনে, তুমি বাচতা না”
দুই যুগেরও বেশি সময় পরে এখনো, ১৪,১৫,১৬ বছরে মেয়ে বিয়ে হচ্ছেই। আমাদের সবার কমবেশি গ্রামের বাড়ি আছে, আমাদের সবাই দেখি। বাংলাদেশের প্রতিটা প্রান্তে, যেখানে শুধুই সোলার বিদ্যুতের ভরসা সেখান পর্যন্ত জানে, কেন বাচ্চা মেয়েকে বিয়ে দেয়া উচিৎ না, কেন উচিৎ না, কত হাই মিসক্যারেজ হার এই বাচ্চা মেয়েদের। তবুও শত হাজার অজুহাতে এই অপরাধ [**] ঘটিয়েই যাচ্ছে, বিশেষ করে মেয়ের বাবা-মা। মাঝে মাঝে পেপারে নিউজ হয়।, প্রশাসন খবর পেয়ে গিয়ে বিয়ে ভেঙে দিলো, কয়টা বিয়ে ভাঙে? কটা? কবার? আগে মুখে মুখে বললেই ১৮ লিখে দিতো। আজকাল সার্টিফিকেট বানিয়ে ১৮, এখন তো নাকি ১৬ তেই সম্মতি, আর কি চাই?
– এটা তো সমস্যা, গোড়া কোথায়?
২)
বিয়েগুলো কি কি ধরণের অযুহাতে হচ্ছে, সেগুলোর দিকে ফিরে তাকানো যাক:
বর্তমানে গ্রামের ১ নম্বর কারণটা হচ্ছে, প্রবাসী ছেলের সাথে বিয়ে। ২০/২২ বছরের ছেলেরা কামলা খাটতে দেশে দেশে যাচ্ছে, একটু বেশি বয়সে গেলে বিয়ে করে, নাহলে একবার চট করে এসে বিয়ে করে রেখে যাচ্ছে। এধরণের বিয়ের কায়দাটা হচ্ছে এমন, কচি দেখে একটা মেয়ে বিয়ে করে, কনজিউম করে রেখে গেলো। মেয়েটা ৬ মাস বাপের বাড়ি, ৬ মাস শশুরবাড়ি, শশুরবাড়িও গড়ে পিটে নিচ্ছে। প্রবাসী তো, ফিউচার সিকিওরড, তাই বিয়ে। ছেলেপক্ষও কচি চায়, আর কনেপক্ষও ভাবে উফফ বাইরে থাকে, অর্গাজম হয়ে যায় মেয়ের বাবা-মা’র। এটা গ্রামের নিম্ম এবং নিম্নমধ্যবিত্ত তো বটেই মধ্যবিত্ত এবং উচ্চবিত্ত ক্লাস, ২-৩ খানা সন্তান, অভাবের বা খাওয়ানোর চাপ না হলেও এমন করে।
নিম্নবিত্ত আর বসে খাওয়া অংশ, এরা হয় গ্রামে থাকে, নাহলে ঢাকায় চলে আসে, বা অন্য বড় শহরে, ৬-৭+ বাচ্চা হওয়ায়, তাদেরকে সাত আট বছর বয়সেই কাজে নামিয়ে দেয়। মেয়েগুলোকে ১৫/১৫’র মধ্যেই বিয়ে টিয়ে দিয়ে পার করে দেয়ার চেষ্টা করে। এসবের মধ্যেই আগে পরে কামাই রোজগার চলে সবাই মিলে। হয়তোবা বাপ তিন চারটা ক্ষেতে কামলা দিতে থাকে। ধরুন বাপটা মরে গেলো, এখন কি হবে? বাচ্চা মেয়ে বিদায় আরো দ্রুততর হয়ে যায়।
আমার এই মামার বাড়িতেই দেখেছি, একটা ফ্যামিলি ছিলো, লোকটা কামলা খাটতো আর ওর বউ বাড়ি বাড়ি কাজ করতো। ওদের গোটা দশেক বাচ্চা ছিলো। বড়টার বয়স কুড়ি আর ছোটটা দুই বা তিন। মাঝখানের মেয়েগুলোকে শুনেছি বারো তেরোতেই পার করেছে। বোঝেন এইবার।
দা মুমিনস। মেয়ের বাপ মুমিন দুই রকমের,
ক) ছেলে প্রত্যাশী মুমিন। মুসলিম ঘরে ছেলে না হলে সম্পত্তি বেহাত, হিন্দু ঘরে ছেলে না থাকলে নরক। মুমিন কোথায় যাবে? একটা ছেলে চাইই চাই, জোর চেষ্টা, ইতিমধ্যে হয়ে গেলো আরো আরো ৫/৭’টা মেয়ে সন্তান।
খ) ভগবানেশ্বরাল্লার লম্বা রহমতের হাতওলা মুমিন, আলহামদুলিল্লাহ তারা ৬ টা থেকে ১১ টা জন্ম দেন। মুরগী পালার মত করে বাচ্চা পালেন, হালকা সামর্থ্যও আছে, তাছাড়া আল্লাহ বলেছেন, পয়দা করো ইত্যাদি। আমাদের কলোনির মসজিদের ইমাম সাহেবের ১০ টা বাচ্চা ছিলো। একে তো এতগুলো, আবার কটা করে মেয়ে, বয়সে বিয়ে দিয়ে যাওয়ার আগেই তো পটল, তাই বিয়ে। বা, ইত্যাদি ইত্যাদি ……….. … .
আরো একটা নেগলেক্টেড কারণ আছে,
প্রচুর ১৪, ১৫, ১৬ বছরের মেয়েরা প্রেম করে নিজে বিয়ে করে ফেলছে। পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করছে, বা আরো অন্য কোনভাবে বিয়ের ডিসিশন নিয়ে ফেলছে। গ্রামে এমনও হয়, ওই বয়সী মেয়ে দুবার পালিয়েছে, বিয়ে করতে। দুম করে পালিয়ে বিয়ে করে ফেললো। এইসব দেখে অন্য মেয়ের বাপ ভয়ের চোটে নিজের সুন্দর কচি কচি মেয়েদেরও কয়েকটার বিয়ে দিয়ে দিলো। মফস্বলে ফোনে ফোনে প্রেম করে পালিয়ে বিয়ে করে ফেলছে ১৫/১৬ বছরের মেয়ে একটা অল্পবয়সী ছেলেকে। গার্মেন্টসে কাজে ঢুকছে, দুজনে মিলে তুলনামূলক স্বচ্ছলতা চাইছে, সুন্দর জীবন চাইছে।
এমন অজস্র অজস্র কারণ, অযুহাত যাই বলেন না কেন, একের পরে এক তৈরী করে যাওয়া হচ্ছে। আপনি একটা ভালো উদ্দেশ্য নিয়ে জনমত গড়বেন, কাজ করবেন, কদিনের মধ্যে আরেকটা বেরোবে, হাইড়্রার মত, এক মাথা কাটলে আরো মাথা গজায়। তাহলে কি করার থাকে আসলে?
৩)
জনসংখ্যা তো কারণ বটেই। এটাকে এখন আর কন্ট্রোলের মধ্যে রাখা, আর কি’ই বা কন্ট্রোল করবে এখন। এইটুকু ভুখন্ডে ১৮+ কোটি লোক। সব ফ্যামিলির দু পিস করে হলেও ১৮ থেকে কমবে না। দুটোর বেশি হলে কারাদন্ড, এই নিয়ম চাওয়াটা ইউটোপিয়া, বাস্তবতা নয়, কারণ মুমিনকে এত চটানোর মত সরকার ব্যবস্থাপনা নেই। ৯০ দশকে পরিবার পরিকল্পনাকর্মীকে গ্রাম থেকে ধাওয়া খেয়ে আসতে হতো, তাদের দিয়ে যাওয়া কন্ডোম বাচ্চাদের বেলুন ফুলাতে দিয়ে দিতো। আরেহ আল্লাহ বলেছেন উম্মত বাড়াও, আসমান জমীন ছেয়ে দাও আল্লহু আকবরে। নবী বিয়ে করেছে ৬ এর বাচ্চা, মুমিন শুনবে কেন? গৌরীদান করা হয়েছিলো শিবের কাছে ৯ বছরের অরজস্বলা মেয়ে, কেন তারা দেবে না? সরকার এদের সাথে অনেক আগেই হেরে বসে আছে।
প্রবাসী-অল্প বয়সী কানেকশনটা নিয়ে একটা জোরদার সচেতনতা কার্যক্রমের সুযোগ আছে পুরোদমে। বরাহের পালেদের কচি চাই, মেয়ের বাপও বিয়েতে নামাচ্ছে। ধর্মও তো আশির্বাদ দেয় এমন বিয়েতে। কেন দেবে না বিয়ে? আপনার বাড়ির পাশেই হচ্ছে, সাথে সাথে না জানলেও আপনি জানছেন। করার কিন্তু আসলেই আছে। আপনার নিজের একটা ছোট হলেও সার্কেল তো আছে, তাদের নিয়ে শুরু করুন না, ৪/৫ জন থেকে ৮/১০ জন? এতজনে মিলে পঞ্চায়েতকে এসব স্ট্রিক্ট করার ব্যাপারে বোঝাতে পারবেন না? গ্রামের শালিসি পঞ্চায়েত চাইলে সব সম্ভব। অন্তত ২০% চাইল্ড ম্যারেজ ঠেকানো সম্ভব শুধু এতেই। প্রচুর জনসচেতনতা, প্রচুর প্রচার চাই, ফেসবুক তাও সবার ফাটিয়ে দেয়া যায়, ছোট ছোট স্কিড এ, কার্টুনে। আয়েশা এবং মুহাম্মদ দেখেছে ৫০ দিয়ে শুরু হয়ে, লাখ লাখ ফেবু ইউজার, ২০১৬’র দেশী আয়েশাদেরকে তারা দেখবে না? সবার স্মার্টফোন আছে। ফেসবুকে ছড়িয়ে দিন, লিখুন, আঁকুন, প্রচার করুন। আপনারা পারেন আমি জানি। একটা একটা করে এঙ্গেল ধরলেই, পরেরটা নিয়ে আরো কাজ করা যায়, হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট’ই তো। একটা সমস্যা আছে, আমাদের চিন্তাশীলেরা প্রায় শতভাগ শহরকেন্দ্রীক, তাঁদের অবস্থান গ্রামে না। অন্তত ২০%ও যদি গ্রামকেন্দ্রীক হতো, হয়তো অনেককিছুই অন্যরকম হতেও পারতো। আমরা আরবান প্রব্লেমস নিয়ে ডিল করি, কিন্তু গ্রামের, দেশের এখনো অন্তত ৬০ শতাংশ মানুষকে নিয়ে ডিল করতে পারি না। আমরা সমাজের সংস্কার, সমাজকে আধুনিক ও উন্নত করতে গিয়ে আল্লাহ থেকে ত্রিপিটক পর্যন্ত সবার সাথে যুদ্ধ করছি, অমুক তমুক বাদ নিয়ে লড়ছি, এই ১৪, ১৫, ১৬ বছরের বাচ্চাদের জন্যেও কেন নয়?
বড় লেখা, জানি এত বড় লেখা দিয়ে কিস্যু হয় না আসলে, হয়তো বাগাড়ম্বর। কিন্তু আপনারা? আপনারা তো মুহুর্তে একটা স্কিড নামিয়ে দেন, আপনারা পারেন না? আমাদের গ্রামগুলো এখনো কত সুন্দর আছে, অতুলনীয় সুন্দর। এমন বাংলায় আমরা এই অসচেতনতার ক্যান্সার রাখতে পারি?
তথ্যসূত্রঃ
[*]http://www.girlsnotbrides.org/child-marriage/bangladesh/
[**]http://data.unicef.org/topic/child-protection/child-marriage/
সহায়ক লিঙ্ক:
বাল্য-বিবাহ প্রতিরোধ আইন, ১৯২৯
:yes:
খুব দরকারি একটা বিষয় তুলে ধরেছেন, ধন্যবাদ। আজকের সচেতন নতুন প্রজন্ম এই বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে সক্রিয়ভাবে জনমত সৃষ্টি করতে না পারলে বড্ড ভাবনার কথা।
আইন ফাইন করে খুব একটা কিছু হবে বলে তো মনে হচ্ছে না। আপনার দেওয়া লিঙ্কে দেখে মনে হলো বাল্যবিবাহের্ শাস্তি ১ দিন জেল বা ১ টাকা জরিমানা বা দুটোই, অথবা সর্বোচ্চ ১মাস জেল বা এক হাজার টাকা জরিমানা; বা দুটোই। সবই ম্যাজিস্ট্রেটের ইচ্ছে। কথাটা ঠিক কি? খুবই হাস্যকর শাস্তি। প্রহসন বটে। সামাজিক প্রতিরোধ আর সচেতনতা ছাড়া কিস্যু হবার নয়। নতুনরাই ভরসা।
কিন্তু কই নতুন প্রজন্মের সচেতনতা দাদা? এতে গ্ল্যামার কম, ওয়েস্টার্নাইজেশন হয় না, বা সমাজের এতটাই বাইরে সবাই, এগুলো ইগনোরই করে যাওয়া হচ্ছে। আমাদের করণীয় কি? শুধু পত্রিকার রিপোর্ট বা ব্লগে এমন লেখা এতেই তো শেষ হলো না। এরপরে প্ল্যান অফ একশন কিছু তো থাকা উচিৎ। কিন্তু শুরু করবে কে? হু উইল ব্লো দা হুইসল?
আমাদের সমাজে বাল্য বিবাহ বিশেষ করে মেয়েদের দ্রুত বিয়ে দেওয়ার কয়েকটি কারণ রয়েছে। এই কারণগুলোর দিকে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া সমীচীন বলে বোধ করছি। আইনের পাশাপাশি সামাজিক সমস্যা বা জঞ্জালগুলো পরিষ্কার না করতে পারলে কোন ভাবেই বাল্য বিবাহ রোধ করা সম্ভব হবে না। প্রধানত দুই-তিনটি কারণে আমাদের সমাজে মেয়েদের দ্রুত বিয়ে দেওয়া হয়।
সামাজিক নিরাপত্তার অভাব- গ্রামের গরীব পরিবারের অভিভাবক মেয়ে বড় ( ১৫ বছর হলেই) হওয়ার সাথে সাথে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। এর প্রধান কারণ সামাজিক নিরাপত্তা অভাব। মেয়েদের সম্মানের সাথে পরিবারের সম্মান জড়িত থাকে। এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিহিংসার শিকারও হয় অসহায় মেয়েরা।
সমাজে কোন মেয়ে ইভটিজিং বা শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েও দুটর্ঘনা বা ঐ অপরাধের জন্য প্রধান অপরাধী হয় ভিকটিম মেয়েটিকেই। এসব সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি ও নিরাপত্তার অনিশ্চিয়তার কারণেই পরিবার দ্রুত মেয়েদের বিয়ে দিতে চায়।
অর্থনৈতিক কারণ- পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা দূর্বল হলে; কেউ ভাল কোন পরিবার প্রস্তাব নিয়ে আসলেই মেয়েদের দিয়ে দেয়। পরিবারের অভিভাবক মেয়ের ভরণপোষণ চালাতে হিমশিম খেলে বিয়েই হয় মুক্তির একমাত্র পথ।
সামাজিক সমস্যাগুলোর কারণে অনেক পরিবার শুধু আইনকে নয়, অনেক মেয়ের উচ্চ শিক্ষার স্বপ্নকেও বিবেচনায় আনে না। তাই সামাজিক নিরাপত্তা আর অর্থনৈতিক মুক্তি ছাড়া শুধু আইন করে বাল্য বিবাহ বন্ধ করা যাবে না, যেমনটি যায়নি শিশুশ্রমকেও।
দাদা, আইন করে বন্ধ করা আমি এমনকি স্বপ্নেও ভাবি না, বাস্তবতা ওভাবে ভাবতে দেয় না, ওসব ইউটোপিয়া আমাদের প্রেক্ষিতে। কিন্তু গনসচেতনতা? সরকার তো ব্যার্থ, এত রেডিও টিভি পোস্টারিং এর পরেও, তাহলে হাল ছেড়ে দিতে হবে? পৃথিবী ধর্মমুক্ত আদৌ হবে কিনা ঠিক নেই, হলেও কত শত বছর লেগে যাবে, আমরা হাল ছেড়ে দিয়েছি?
আমাদের তরুণেরা, অনলাইনবাসী তরুণেরা কতটা সচেতন? লাখ লাখ অনলাইন ইউজার আমাদের দেশে। অন্তত লাখ পাঁচেক ইউজার মুক্তচিন্তা এবং নাস্তিকতা নিয়েই কানেক্টিভিটির মধ্যে আছে। জরীপ করে দেখা যেতে পারে , দেখবেন, খুব বেশি হলে ২৫ শতাংশ আগে কখনো বাল্য বিবাহ নিয়ে ভেবেছে, বা আদতে সচেতন। যৌন শিক্ষা না থাকার কারণে, তারা অনেকে সামান্য পিরিয়ড নিয়েই inhibition এ ভোগে, যৌনস্বাস্থ্য নিয়ে কি সচেতন হবে? আমরা আমাদের লেখা আঁকা দিয়ে তাদের মধ্যে অনেককিছুই কমিউনিকেট করতে পারি, এটা পারা যাবে না? ছড়িয়ে দেয়া যাবে না? প্রচারের নতুন নতুন পথ বের করা যাবে না?
আর্থসামাজিক পরিস্থিতির সাথে যুদ্ধ করা তো সম্ভব না। কিন্তু সামহাউ উই মাস্ট ট্রাই, আমাদের নিজেদের ইমিডিয়েট সমস্যা না বলে হাত গুটিয়ে রাখা যায়?
ছেলে বা মেয়ে কারুরই অল্প বয়েসে বিয়ে হওয়া উচিত নয়। বিয়ে মানেই দায়-দায়িত্ব এবং আরো অনেক কিছু। স্বাবলম্বী না হওয়ার আগে বিয়ে করা তাই অনুচিত। এজন্য সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে মানুষের মাঝে।
কম বয়সে তো বিয়ে করা উচিৎ নয়ই। কিন্তু, ছেলে আর মেয়ের কম বয়সে বিয়ের টেকনিকাল পার্থক্য আছে তো। মোটামুটি ৮০% ক্ষেত্রে ছেলেদের অল্প বয়স মানে ২১-২৫, যার অধিকাংশই প্রবাসে কর্মরত বা দেশের ওয়ার্কিং ক্লাস, এক দল কোন দায়িত্বই নিচ্ছে না, আরেকদল বিয়ে করছে দায়িত্ব শেয়ারিং এর জন্যে। আর মেয়েদের অল্প বয়স মানে ১৪-১৭ বছর, এক কথায় একদম বাচ্চাই বলা চলে। বিয়ের রাত থেকে প্রথম বাচ্চা হওয়া এই সময়টার চাপেই অধিকাংশ ক্ষেত্রে শরীর ভেঙে যাচ্ছে, একটা না একটা সমস্যা বাসা বাঁধছে।
এবং হ্যাঁ দিদি, গনসচেতনতার কোন বিকল্প আসলে নেই। এনফোর্সমেন্ট আমাদের দেশে সম্ভব না, যদি কখনো সম্ভব হয়, তখনকারটা ভাবা যাবে। কিন্তু, পখি পড়ার মত করে সার্বক্ষনিক জপ করা যদি সম্ভব হয়। হাটে-মাঠে-চায়ের স্টলে প্রচার, ক্রিয়েটিভ ইনোভেটিভ প্রচার, একঘেয়ে সরকারী বা এনজিও স্টাইলে নয়, স্ট্রাইক যেন করে। আমরা কত রকমের আইডিয়া তৈরী, কত ক্রিয়েটিভ লেখা, স্কিড, কার্টুন। গ্যালারিতে পাকিস্তান এর পতাকা বর্জন নিয়ে একটা অনলাইন অফলাইন ক্যাম্পেইন হয়েছিলো ২০১৩ তে, ওদের প্রচার এবং জনসংযোগ স্ট্রাটেজিটা চমৎকার ছিলো। আমি যেই সমস্যা নিয়ে বলছি, সবাই জানেন এ নিয়ে খুঁটিনাটি। কিন্তু আমরা সবাই হাল ছেড়ে দিয়েছি
কি আর বলব ?
কখন ও মেয়েদের উপর চাপান হয় কুপ্রথা , আবার কখন ও তারা নিজেরাই মূর্খের মত মেনে নেয় কুপ্রথা। স্বামি বিবেকানন্দ সেই জুগেই বলেছিলেন “বালিকাদের জারা বর জোটায় তাদের আমি খুন করিতে রাজি”। তাও চলছে এই কুপ্রথা। বন্ধ হোক না হলে মেয়েদের উপর অমানুষিক নির্যাতনের সাথে সাথে জনসংখ্যা বৃদ্ধির বাজে বোঝা বইতে হবে দেশকে।
আর কিশোরি পাচার ব্যাপার টা আনা হোক , সামনে এবং এর প্রতিবাদ হোক মুক্ত মনা তে।
কিশোরী পাচার নিয়ে শুধু থিসিস ঘাঁটা লেখার বদলে প্রতিবেদন জাতীয় লেখা কেউ দিলে আলোচনা এবং পরবর্তিতে প্রচার প্রচারণায় সুবিধা হয়। আলোচনা থেকে কর্মপরিকল্পনা পর্যন্ত করা যায়, প্রচারের। কিন্তু থিসিস ঘাঁটা লেখা হলে, সেটা রিলেট করতে সমস্যা হয়, নিজের পারিপার্শ্বিকের সাথে, তখন আলোচনা থমকে যায়।
আমি লিখলে অমন থিসিস রিপোর্ট থেকে চোথা করার বেশি কিছু হবে না।