আজ মুক্তমনার বন্যা আহমেদ এক আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দেন। এই বিবৃতিটি প্রকাশিত হয়েছে সেন্টার ফর ইনকুইরি (সিএফআই)-তে। সেই বিবৃতিতে তিনি তাঁর স্বামী অভিজিৎ রায়ের হত্যার বিচার দাবি করেছেন। বিবৃতিটি ইংরেজিতে দেওয়া। সেটির অনুবাদ এখানে প্রকাশ করা হলো। সাথে সাথে মূল ইংরেজি বিবৃতিটিও। আমার স্বামী অভিজিৎ রায় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদ নিয়ে লেখালেখি করতেন, তিনি ধর্মীয় কুসংস্কারের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনামূখর ছিলেন। শুধুমাত্র এই কারণেই তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। গত ছাব্বিশে ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জনাকীর্ণ ক্যাম্পাসে আমরা দুজনে হামলার শিকার হই। অভিজিৎকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। আমি কোনোক্রমে বেঁচে যাই। তাঁর স্ত্রী, একই ধারার লেখক এবং একজন মুক্তচিন্তক হিসাবে, আমি এই পৈশাচিক সন্ত্রাসের তীব্র নিন্দা করি। ঐতিহাসিকভাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস হচ্ছে সকল প্রগতিশীল আন্দোলনের কেন্দ্রভূমি। অভিজিৎ নিজেও এই ক্যাম্পাসেই বেড়ে উঠেছে। মৃত্যুর হুমকি থাকা সত্ত্বেও আমরা কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে পারি নি যে, এরকম একটা জঘন্য অপরাধ এখানে সংঘটিত হতে পারে। এই অপরাধ শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে ছিলো না, ছিলো বাক স্বাধীনতা এবং মানবতার বিরুদ্ধে। আমি আর অভিজিৎ যখন নৃশংসভাবে আক্রান্ত হচ্ছি, স্থানীয় পুলিশ খুব কাছেই নিষ্ক্রিয়ভাবে দাঁড়িয়ে ছিলো। এখন আমাদের দাবি, যে করেই হোক খুনিদের বিচারের আওতায় আনতে বাংলাদেশ সরকার তার সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ করুক। আমি মনে করি না যে, শুধুমাত্র খুনিদের ধরাটাই যথেষ্ট। আমি সরকারের প্রতি সন্ত্রাস নির্মূলের জন্য আবেদন জানাই, সেই সাথে লেখক-হত্যাকারীদের বিচারের আওতায় না আনার যে আইনী সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তা বন্ধ করার দাবি জানাই। আমি যে নৃশংস ঘটনা ঘটেছে তার প্রতি সারা বিশ্বের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এবং আমাদের সাথে এক হয়ে সুবিচার দাবি করার আহবান জানাচ্ছি। – রাফিদা আহমেদ বন্যা
My husband, Avijit Roy, wrote about science and rationalism and critiqued religious fundamentalism. Because of this, he was murdered. On February 26, 2015, he and I were attacked in a crowded area on the Dhaka University campus. Avijit was hacked to death by a machete; I survived. As his wife, fellow writer, and a freethinker, I strongly condemn this gruesome act of terror. The Dhaka University campus has historically been a space for progressive movements. It is also where Avijit grew up. Despite the death threat, we could not fathom that such a heinous crime could take place in such an area—a crime not only against a person, but against freedom of speech and humanity. While Avijit and I were being ruthlessly attacked, the local police stood close by and did not act. Now, we demand that the Bangladeshi government do everything in its power to bring the murderers to justice. I do not believe that simply catching the killers will be enough. I urge the government to address terrorism and stop a legal culture of impunity, where writers can be killed without the killers being brought to trial. I urge the world to recognize what has happened and join us in this demand for justice. – Rafida Bonya Ahmed
আজ বিবিসিও বন্যা আহমেদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করে। সেই সাক্ষাৎকার রয়েছে এখানে। সাক্ষাৎকারের অডিওটা পাবেন এখানে। বিবিসিকে দেওয়া বন্যা আহমেদের বাংলা সাক্ষাৎকারের অডিও পাবেন এখানে। এছাড়া অডিওগুলো নিচে এমবেড করে দেয়া হলো।
ইংরেজী সাক্ষাৎকার:
বাংলা সাক্ষাৎকার:
#পুনশ্চ: অফটপিক
মুক্তমনার টেকিদের বলছি, অভি দা খুন হওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশ ও পশ্চিম বঙ্গসহ আরো দু-একটি অঞ্চল থেকে মুক্তমনা দেখা যাচ্ছে না। যতো দ্রুত সম্ভব এই যান্ত্রিক ত্রুটি কাটিয়ে ওঠা দরকার। এই দুর্দিনে মুক্তমনা সচল থাকাই মৌলবাদ গোষ্ঠির পশ্চাদে এক বিরাট পদাঘাত। দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন, বিনীত অনুরোধ রইলো।
ব্যক্তিগতভাবে আমি টর ব্রাউজার ব্যবহার করে অনেক কষ্টে মুক্তমনায় পড়ালেখা করছি। এটি আবার নেট লাইন স্লো করে দেয়। এছাড়া মুক্তমনা এখন লো গ্রাফিক্স ভার্সন দেখাচ্ছে।
সবাইকে ধন্যবাদ।
জীবিত অভিজিতের চেয়ে মৃত অভিজিৎ অনেক বেশী বিপদজনক। জয় অনিবার্য!
এই লড়াই, আগেও কঠিন ছিল। সামনে আরো কঠিন হবে। কারন বাংলাদেশের রাজনৈতিক শক্তি, ধর্মান্ধদের সপক্ষে। এই মুহুর্তে একতাই বল। উগ্র নাস্তিকতা, মডারেট নাস্তিকতা ইত্যাদি বর্জন করে সাধারন সমস্যা গুলির দিকে ফোকাস রাখলেই সাফল্য আসবে
(১) জঙ্গী, উগ্র ইসলামিস্টদের ফেসবুক টুইটার থেকে সনাক্তকরন-তাদের আইনের হাতে তুলে দেওয়া। কারা কারা নাস্তিক বা অন্য ধর্মের বিরুদ্ধে ঘৃণা প্রচার করছে, তা বার করতে হবে। এরা সবাই জঙ্গি বা জঙ্গি গোষ্ঠির সাথে যোগাযোগ রেখে চলে
(২) ধর্মে বিজ্ঞান আছে বলে অপবিজ্ঞান, মিথ্যার প্রচার।
(৩) রাজনীতিবিদরা কিভাবে ধর্মকে কাজে লাগিয়ে স্বার্থসিদ্ধি করছে
(৪) ধর্মের নেগেটিভ দিকগুলো কেস স্টাডির সাহায্যে তুলে ধরা
ইঞ্জিনিয়ার্স এন্ড আর্কিটেক্টস ফর এনভায়রনমেন্ট এন্ড ডেভেলপমেন্ট (EAED)-এর সকল প্রকৌশলী এবং স্থপতিদের পক্ষ থেকে – বাকস্বাধীনতা ও মুক্তচিন্তার উপর মৌলবাদীদের আক্রমনের প্রতিবাদ জানাই এবং এইসকল আক্রমনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানাই। সাথে সাথে প্রকৌশলী ও মুক্তচিন্তার লেখক অভিজিৎ রায়-এর হত্যা এবং তার স্ত্রী রাফেদা আহমেদ বন্যা’র হত্যা চেষ্টার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের দাবী জানাই।
আবু এম ইউসুফ
সভাপতি, ইএইডি
#JusticeforAvijit
হ্যা … হাস্যকর লাগছে কিন্তু তবুও সত্য যে এখানে হত্যা বা কোপানো একটা সংস্কৃতি । তবে এর জন্য দায়ী শুধু সরকার না । দায়ী আমরাও । রাস্তায় এতো মানুষ থাকা সত্ত্বেও তাৎক্ষনিক কেউ সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসে নি । এটা কি নিছকই ভয় ছিলো নাকি একটা পশ্চাদপদ সমাজের ব্যক্তিকেন্দ্রিক চিন্তা। আরো হাস্যকর হলো একজন মানুষ খুন হয়েছে আর তার হত্যার বিচারের দাবি আমাদের চাইতে হচ্ছে । এই বিচার কি আমাদের চাওয়ার কথা ছিলো ? এখানে আসলে আমাদের দাবি জানানো ছাড়া আর কোন পথ নেই । আমরা সর্বোচ্চ ওটাই করতে পারি; আর বিচার না হলে হতাশ হতে পারি ।
@সীমান্ত মল্লিক,
আমিও ভাবি, এটা কি কেবল আমাদের জাতিগত সমস্যা নাকি সাধারণভাবে বিপর্যয়ের সময় মানুষের মনই এভাবে কাজ করে। দুনিয়ার বিভিন্ন জায়গার আরো অনেক ঘটনায় দেখা গেছে যে, জনবহুল এলাকায় হটাৎ কেউ বিপদে পড়লে অনেকক্ষেত্রেই কেউ তাৎক্ষণিকভাবে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে না, সাহায্যের প্রক্রিয়াটি শুরু হতে একটু সময় লাগে। এলাকায় লোকের সংখ্যা যত বেশী হয়, তাৎক্ষণিক সাহায্য পাওয়ার হার ততোই কমে যেতে থাকে। এই প্রবণতাকে ‘bystander effect’ বা ‘bystander apathy’ বলে। যারা এ নিয়ে কাজ করেন তারাই ভাল বলতে পারবেন এখানে এমনটা ঘটেছে কিনা। তবে অস্ত্রধারী পুলিশের কাঠপুতুল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকার বিষয়ে কোন ব্যাখ্যা দেয়া যায় না। এধরনের পরিস্থিতিতে কি করতে হবে তার প্রশিক্ষণ তাদের আছে বলেই ধরে নিচ্ছি। খুনীদের একজন গ্রেফতার আহত বা নিহত হলেও হয়তো কারা এই ঘটনার পেছনের শক্তি তা আমরা নিশ্চিতভাবে জানতে পারতাম।
বিবিসিকে দেওয়া বন্যা আহমেদের বাংলা সাক্ষাৎকারের অডিও লিংক মূল প্রবন্ধে যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।
আকাশ মালিক- আপনার লেখা ধার করছি,” অন্তর থেকে বলছি এমন মনোবলের মানুষ, এমন সাহসী, মেধাবী নারী বাঙ্গালী সমাজে আমরা খুব কমই পেয়েছি।”সত্যি ই তাই।ঘটনার দিনের যে ছবিগুলো আমি দেখেছি ,আমার মনে হয়েছে যে ঊনার চোখে আগুন জ্বলছে-কোন অসহায় সাধারণ নারীর চোখ আমার মনে হয়নি।আমার কামনা সেই আগুনের শক্তি ছাই করে দিক ঐ নিষ্ঠুর অসভ্য হত্যাকারীদের,আর সেই সাথে অনুপ্রেরণা হোক অসংখ্য সাধারণ নারীর।
বন্যা আপুর ধৈর্য্য ও মনোবল দেখে আমি মুগ্ধ । সত্যিই মুগ্ধ । আপুর সুস্থতা কামনা করছি । আমরা আছি পাশে; থাকবো …
বন্যার বাংলায় সাক্ষাৎকারের অডিও আছে এখানে–
@আকাশ মালিক,
ধন্যবাদ লিঙ্কটির জন্য!
সম্ভব হলে সবাইকে বাংলা, ইংরেজী দুটো সাক্ষাৎকারই শোনার অনুরোধ করছি। ওনার জীবনে সবকিছু ওলট-পালট হয়ে গেছে; কি প্রবল ঝড় বয়ে গেছে; অথচ ওনার কণ্ঠস্বর শান্ত, দৃঢ়; বাক্যবিন্যাস সুচিন্তিত; বোঝা যায় অনেক শক্ত মনের মানুষ তিনি। দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠুন, এই কামনা করি।
@মনজুর মুরশেদ,
কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করবো বন্যার বাংলা সাক্ষাৎকারটি (পারলে রেকর্ড করে সরাসরি) মূল লেখায় যোগ করে দিতে।
হ্যাঁ ভাই, অভিজিতকে নিয়ে লিখতে চোখটা বারবার ঝাপসা হয়ে আসছিল, আজ বন্যার কণ্ঠ শুনে নয়্নের কোণে আর অশ্রু ধরে রাখা গেলনা। প্যাট্রনাইজিং করার কিছু নেই, অন্তর থেকে বলছি এমন মনোবলের মানুষ, এমন সাহসী, মেধাবী নারী বাঙ্গালী সমাজে আমরা খুব কমই পেয়েছি। কামনা করি, বন্যা আপনি শীঘ্র সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে উঠুন।
[img]http://www.bluesuedeheaven.com/files/get-well/get-well-soon.jpg[/img]
পুরো অডিওটা শুনলাম। উনি যে মানসিক আঘাত পেয়েছেন, সেটা সারাজীবনে কাটিয়ে ওঠা অসম্ভব কারণ তিনি উনার ভালবাসার মানুষটাকে হারিয়েছেন। তবে তিনি দ্রুত সুস্থ হয়ে, লড়াইতে ফেরে আসবেন সেই কামনা করি।
বন্যা দ্রুত শক্তি ফিরে পাচ্ছে জেনে আস্বস্ত হলাম।
সন্ত্রাসী হত্যাকারীদের উপযুক্ত শাস্তি দেয়া হোক।
অডিও লিংক কাজ করছে না
@রানা ফারুক,
এখানে চেষ্টা করে দেখুন।