১৯৭৯ সালের ২০ নভেম্বর মক্কা নগরীর পবিত্র কাবা শরীফে ঘটে যায় এক অভূতপূর্ব ও অশ্রুতপূর্ব ঘটনা। ১৪০০তম হিজরি নববর্ষকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত গোটা দুনিয়ার মুসলিম। আর ঠিক ঐ সময়টিতেই এক কলঙ্কজনক ইতিহাস রচিত হয় পবিত্র কাবার অভ্যন্তরে। দশ হাজার হাজিকে মসজিদের অভ্যন্তরে প্রায় দু’সপ্তাহ ধরে জিম্মি করে রাখা হয়। ঘটনার হোতা ৩০০ জেহাদি গেরিলা। গেরিলাদের মধ্যে সৌদি, পাকিস্তানি, মিশরিয় এবং অনেক আমেরিকান নওমুসলিমও অন্তর্ভুক্ত ছিল। গেরিলাদের প্রধান এজেন্ডা ছিল সৌদি সরকারকে উৎখাত করার মাধ্যমে সারা বিশ্বে ইসলামি হুকুমত ও খেলাফতের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। যদিও মুসলিম জেহাদিদের কীর্তি ছিল এটি, ইরানের আয়াতুল্লাহ খোমায়নি আমেরিকা-ইসরাইলকে সরাসরি দায়ী করে বিবৃতি প্রদান করেন। পাকিস্তানের একটি পত্রিকা গুজব ছড়িয়ে দেয় যে, আমেরিকার প্যারাট্রুপার বাহিনী বিমান থেকে পবিত্র কাবার অভ্যন্তরে লাফিয়ে পড়েছে। আর যায় কোথায়? সঙ্গে সঙ্গে দাবানলের মত জ্বলে উঠল পাকিস্তান, ইসলামাবাদে আমেরিকান দূতাবাস জ্বালিয়ে দেয়া হল, একজন আমেরিকান কর্মকর্তাকে গুলি করা হল, রাওয়ালপিন্ডির খ্রিস্টিয়ান কনভেন্ট পুড়িয়ে দেয়া হল। এদিকে সৌদি সরকারের নিজস্ব বাহিনী গেরিলাদের দমনে ব্যর্থ হলে বন্ধু ফ্রান্স সরকারকে অনুরোধ জানানো হয় কমান্ডো বাহিনী প্রেরণের জন্য। অবশেষে ফ্রেঞ্চ কমান্ডের কাছে মুসলিম গেরিলারা হার মানতে বাধ্য হলে ভয়াবহ এই জিম্মি নাটকের অবসান ঘটে।
উপরের ঘটনাটিতে যা লক্ষণীয় তা হল, পবিত্র কাবা শরীফ কালিমালিপ্ত হয় প্রধানত মুসলিম গেরিলা ও সৌদি সরকারের নিজস্ব বাহিনীর মধ্যকার আভ্যন্তরিন দ্বন্দ্বের কারণে, তবু অঙ্গুলি হেলানো হয় আমেরিকা-ইসরাইলের দিকে। আমেরিকা-ইসরাইল যে সতি-সাধু বা ভাজা মাছটিও উল্টে খেতে জানে না, তা কিন্তু নয়। তারা অহর্নিশি ভয়ানক সাম্রাজ্যবাদী চক্রান্তে লিপ্ত থাকে, এটা সকলেরই জানা। কিন্তু কথা হচ্ছে, তাদেরকে যে অনেক সময়ই আহবান করা হয়, এ কথাটি আমরা মাঝে মাঝে বিস্মৃত হই। যেমন, উপরের ঘটনাটির ক্ষেত্রে সৌদি সরকার ফ্রান্সকে ডেকে এনেছিল। কারোরই ভুলে যাওয়ার কথা নয়, সৌদি সরকার কিভাবে নিজেকে বাঁচাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট সিনিয়র বুশের শরণাপন্ন হয়েছিল প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধের সময়। আমাদের মুক্তিযুদ্ধেও পাকিস্তান শেষ রক্ষা করতে মার্কিন নৌবহরের পথ চেয়ে বসে ছিল।
কথিত আছে, গাদ্দাফি তার ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে আমেরিকাকে ২.৫০ বিলিয়ন ডলার এবং ব্রিটেনকে ১.৫০ বিলিয়ন ডলার ঘুষ দিয়েছিলেন। আমেরিকান ইন্টেলিজেন্সের সাথে গাদ্দাফির ছিল গভীর মাখামাখি, গাদ্দাফি উত্তর আফ্রিকার জাতীয়তাবাদী ও বামঘেঁষা শক্তিগুলোতে লিবিয়ার তেলের টাকা ডোনেট করে তাদের সাথে সখ্যতা করতেন শুধু তথ্য পেতে, যা পরে সরবারহ করতেন বন্ধু আমেরিকান ইন্টেলিজেন্সকে। এমনকি শেষ সময়েও গদি রক্ষা করতে চেয়েছিলেন প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলারের ঘুষ দিয়ে, কিন্তু ওবামা সরকারও গাদ্দাফির প্রাইভেট আর্মির মত মুখ ফিরিয়ে নিতে বাধ্য হয় আরব বসন্তের জোয়ারে। ফলে গাদ্দাফি আর শেষ রক্ষা করতে পারেননি।
দিন কয়েক আগে কয়েকজন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ভাইয়ের সঙ্গে ‘নাফিস’ প্রসঙ্গে আলাপ হচ্ছিল। তারা ক্ষোভে, উত্তেজনায় থরথর করে কাঁপছিল। তাদের সকলেরই ধারণা, নাফিসকে বলির পাঁঠা বানানো হয়েছে আমেরিকার নিজস্ব এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে। সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকার মুন্ডুপাত করে যাচ্ছিল তারা সমানে, কেউ কেউ শাপশাপান্ত করছিল। আশ্চর্যের বিষয় হল, এদের একটা বড় অংশই আবার আমেরিকায় পাড়ি জমানোর আশৈশব পরিকল্পনা করে রেখেছে। কারো কারো বন্দোবস্তও প্রায় পাকা। উড়াল দেয়ার দিনক্ষণ গুনছে। এবং আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদ বা হালের নাফিস ফ্যাক্টর তাদের আমেরিকা প্রজেক্ট কলুষিত করছে না মোটেই। কিন্তু কেন? বিষয়টা খুব ভালভাবে ব্যাখ্যা করেছিলেন কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বনামধন্য অধ্যাপক এবং বিশ্বখ্যাত চিন্তাবিদ এডওয়ার্ড সাঈদঃ
ইসলামিক বিশ্বে আমেরিকাকে(ইউএস) দেখার জন্য রয়েছে দুটি আলাদা দৃষ্টিভঙ্গি। প্রথমটি হল, ‘কি অসাধারণ একটি দেশ আমেরিকা’ টাইপের ! আমার চেনা-জানা প্রতিটি আরব বা মুসলিমেরই বিপুল আগ্রহ রয়েছে আমেরিকাকে ঘিরে। এদের অনেকেই নিজেদের বাচ্চাদেরকে শিক্ষার জন্য আমেরিকায় পাঠান। অনেকে ছুটি কাটাতে এখানেই চলে আসেন। কেউ কেউ ব্যবসায় জড়িত হয়ে পড়েন, কেউবা প্রশিক্ষণ লাভ করেন। আর দ্বিতীয় দৃষ্টিভঙ্গিটি দাপ্তরিক আমেরিকার (মানে, সামরিক এবং হস্তক্ষেপকারী আমেরিকা) সাথে সংশ্লিষ্ট, যে আমেরিকা ১৯৫৩ সালে মোসাদ্দেগের জাতীয়তাবাদী সরকারকে হটিয়ে শাহকে ফিরিয়ে এনেছিল। যে আমেরিকা উপসাগরীয় যুদ্ধে সর্বপ্রথম জড়িত হয়েছিল এবং বেসামরিক ইরাকি জনগণের উপর ভয়াবহ ক্ষতিকারক অবরোধ আরোপ করেছিল।
সাঈদের উপরের উদ্ধৃতি থেকে এটা স্পষ্ট যে, মুসলিম বিশ্বের ক্ষোভ আমেরিকা, তার জনগণ বা জাতীয়তার উপর নয়, বরং তার সরকার ব্যবস্থার উপর, যে কিনা বিশ্বময় দাপিয়ে বেড়ায় নিজের সাম্রাজ্যবাদী ক্ষুধাকে নিবৃত্ত করার জন্য। কিন্তু এর সঙ্গে যে অবধারিত প্রশ্নটা উঠে আসে তা হল, সারা বিশ্ব চড়ে (নাকি চষে?) বেড়াবার জন্য যে বিপুল এনার্জি দরকার, তা পায় কোথা থেকে আমেরিকা? আশ্চর্য শোনাতে পারে, তবু এটাই সত্য যে, এই বিপুল পরিমাণ শক্তির মূল যোগানদাতা কিন্তু মুসলিমরাই। আমেরিকাকে অন্য কোথাও হাতড়াতে হয় না, মুসলিম বিশ্বেই তারা পেয়ে যায় কাতারে কাতারে জেহাদি, যারা আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থে অকাতরে প্রাণ বিলিয়ে দিতে থাকে সদা প্রস্তুত। একটি উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা পরিষ্কার হবে।
১৯৮০ সালের কথা। আমেরিকান প্রেসিডেন্ট জিম্মি কার্টারের নিরাপত্তা উপদেষ্টা Zbigniew Brzezinski খাইবার পাসে অবস্থিত পাকিস্তানের একটি মিলিটারি বেজ থেকে রাইফেল তাক করে আফগানিস্তানকে পর্যবেক্ষণ করছিলেন আর বলছিলেন: “আমরা তাদের গভীর ঈশ্বর-বিশ্বাসের কথা জানি এবং আমরা আত্মবিশ্বাসী যে তাদের সংগ্রাম সফল হবে। তোমদের যুদ্ধে জয় অবশ্যম্ভাবী কারণ তোমাদের নীতি সঠিক এবং ঈশ্বর তোমাদের পক্ষে রয়েছেন।“ ব্রেজেজিন্সকির সাথে ছিল পাকিস্তানি মিলিটারি কর্মকর্তাবৃন্দ, সিআইএ এজেন্ট এবং পরম-প্রিয় মুজাহেদিনগন। আমেরিকান প্রেসিডেন্ট কার্টারের নিরাপত্তা উপদেষ্টা সেদিন ঐ মুজাহেদিন গেরিলাদের জিহাদে ঝাঁপিয়ে পড়ার জোরাল আহবান জানান। আসার পথে আফগান গোত্র প্রধানরা যখন ব্রেজেজিন্সকিকে ফুলের মালা পরিয়ে দিচ্ছিল, তখন তিনি একটা মজার মন্তব্য করে বসেন:
Friendship is a heavy burden especially around the neck.
ব্রেজেজিন্সকির উপরের মন্তব্য হতে তার রসবোধকে ছাপিয়ে একটি কঠিন সত্য বেরিয়ে আসে। আর তা হল, আমেরিকা ও তার মুসলিম বন্ধুদেশগুলোর পাতানো মিতালির প্রকৃত চেহারা। মুসলিমরা প্রায় সময়ই মালা পরিয়ে বরন করে নেয় মার্কিনীদের, আর মার্কিনীরাও সাময়িকভাবে সে মালা গলে আটকে রাখে শুধুই স্বার্থ হাসিলের তালে। আসলে বেশ কয়েক দশক ধরেই ‘গ্লোবাল ওয়ার অন কমুনিজম-’এ আমেরিকার মূল সহযোগী ছিল মুসলিমরা। এমনকি এখনো আমেরিকার ‘গ্লোবাল ওয়ার অন টেররের’ মূল সহযোগী পাকিস্তান। শুধু তাই নয়, মুসলিম বিশ্বের জাতীয়তাবাদী নেতাদের বিনাশ করতেও আমেরিকা-জেহাদি জয়েন্ট ভেঞ্জার চলেছে ব্যাপক সাফল্যের সাথে। বিশেষ করে, ৭০ এর দশকের শেষভাগে আমেরিকার জেহাদি মদদ প্রকাশ্যেই শুরু হয়ে যায়। আফগানিস্তানে সোভিয়েত রাশিয়ার বিরুদ্ধে শুরু হয় সিআইএর স্পন্সর করা প্রায় এক দশকের জেহাদি লড়াই । অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আসতে থাকে জেহাদিদের প্রশিক্ষন পুস্তক। ভাবা যায়?
তাহলে দেখা যাচ্ছে, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী স্বার্থের অন্যতম সহযোগী শক্তি খোদ মুসলিমরাই, মুসলিম জেহাদিরা। কিন্তু প্রশ্ন উঠে, আমেরিকা না থাকলে এই জেহাদিদের অস্তিত্ব থাকত কি? অথবা, প্রশ্নটা ঘুরিয়ে করলে, জেহাদি তৈরিতে আমেরিকার কোন ভূমিকা আছে? নাকি আমেরিকা শুধুই মদদ দিয়েছে বা ব্যবহার করেছে একটা ব্রেইনওয়াশড শক্তিকে নিজেদের স্বার্থের অনুকূলে? ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যায়, জেহাদি জোশ রয়েছে সব ধর্মেই। আর তা আপনা আপনিই গড়ে উঠে। মুসলিম বিশ্বের জেহাদিরা যে মার্কিন প্রভাবক ছাড়াই গড়ে উঠার ক্ষমতা রাখে তার প্রমাণ পাওয়া যায় পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এবং দেউবন্দ সুন্নি মতবাদের অন্যতম প্রবক্তা, বিশ্ব-পণ্ডিত মোহাম্মদ তাকি ওসমানির ২০০৭ সালে লন্ডন টাইমসকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে,
মুসলিমদের ব্রিটেনের মত দেশে শান্তিতে বসবাস করা উচিত, যেহেতু এখানে ইসলাম চর্চার স্বাধীনতা আছে, তবে শুধু সে সময় পর্যন্ত যতক্ষণ না তারা যুদ্ধে নামার মত যথেষ্ট শক্তি অর্জন করে।/প্রশ্ন উঠতে পারে, আগ্রাসী যুদ্ধ একটা প্রশংসনীয় আমল কিনা (ধর্মমতে)? তবে এটা যদি প্রশংসনীয় আমল হয়ে থাকে, তাহলে মুসলিমদের এই কাজ হতে শুধু এই যুক্তিতে কি নিবৃত্ত থাকা উচিত যে, ভৌগলিক ভূ-সম্প্রসারণ আজকের দিনে খারাপ চোখে দেখা হয়? আর এটা যদি প্রশংসিত নাই হবে, তাহলে ইসলাম কেন অতীতে এই অগ্রহণযোগ্য কাজটি বন্ধ করেনি? এমনকি ঐ দিনগুলোতে (ইসলামের প্রাথমিক দিনগুলোতে) আগ্রাসী জিহাদ সংঘটিত হত, কারণ ধর্মের বিশালত্ব আর মাহাত্ম্য বর্ধনের জন্য এটা সত্যিকারভাবেই এক প্রশংসনীয় কাজ ছিল।
উপরের উদ্ধৃতিতে জেহাদিদের বিনা উস্কানিতে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ার অফুরন্ত প্রেরনাশক্তির ইঙ্গিত মেলে। সুতরাং, যারা মনে করেন, আমেরিকা দৃশ্যপট থেকে বিদায় নিলেই বা সাম্রাজ্যবাদী ষড়যন্ত্র বন্ধ করলেই মুসলিম বিশ্বে শান্তির সুবাতাস বইবে তারা হয়ত বোকার স্বর্গে বাস করছেন।
আফগানিস্তানের বাদশাহ আমানুল্লাহ ১৯১৯ সালে ৪র্থ অ্যাংলো-আফগান যুদ্ধের মাধ্যমে আফগানিস্তানকে ব্রিটিশ দখলমুক্ত করেন এবং সূচনা করেন অনেক যুগান্তকারী সংস্কারের। তিনি মহিলাদের জন্য শতাব্দিব্যাপি প্রচলিত ড্রেসকোডের পরিবর্তন ঘটান । ছেলে-মেয়ে উভয়ের জন্যই প্রতিষ্ঠা করেন আন্তর্জাতিক মানের স্কুল। এমন একটি আধুনিক সংবিধান প্রণয়ন করেন যাতে সমানাধিকার এবং ব্যক্তিস্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়। তিনি এমনকি বাহাই সম্প্রদায়ের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করেন, যেখানে সর্ব ধর্মের প্রবক্তাদের স্বীকৃতি দেয়া হয়। কিন্তু এইসব সংস্কার কাল হল আমানুল্লাহর জন্য। ১৯২৯ সালে আমানুল্লাহকে পশ্চিম-পন্থী আখ্যা দিয়ে উৎখাত করা হয়। অথচ এই পশ্চিমা-শক্তিকেই যে হটিয়েছিলেন আমানুলাহ, বিদ্রোহীরা সে কথা একবারও ভেবে দেখেনি। পশ্চিমী শয়তান বিহীন (মানে ব্রিটিশ বিহীন, তখন আমেরিকা দৃশ্যপটে ছিল না) আফগানিস্তান কিন্তু শান্তিতে থাকতে পারে নি, মৌলবাদের বিষ-বাষ্প শুধু আমানুল্লাহকে টেনে নামায়নি, একই সঙ্গে আফগানিস্তানের সৌভাগ্যকেও টেনে নামিয়েছে, চাপিয়ে দিয়েছে সীমাহীন দুর্ভোগের বোঝা, যা দেশটিকে আজও বয়ে বেড়াতে হচ্ছে।
১৯৫৩ সালে ইরানের জাতীয়তাবাদী প্রধানমন্ত্রী মোসাদ্দেগকে ব্রিটিশ মদদে অপসারণ করেন শাহ। শুধু তাই নয়, তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগও আনা হয়। ১৯ ডিসেম্বর, ১৯৫৩ সালে মোসাদ্দেগ কোর্টে বলেন:হ্যাঁ, আমার পাপ- আমার বৃহত্তর অপরাধ এবং এমনকি সবচেয়ে বড় অপরাধ ছিল যে, আমি ইরানের তেল শিল্পকে জাতীয়করণ করেছিলাম এবং বিশ্বের সর্ববৃহৎ সাম্রাজ্যবাদী শক্তি কর্তৃক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক শোষণের সিস্টেমটি পালটে দিতে চেয়েছিলাম। এই ঘটনা আমার জীবন এবং আমার পরিবারের জন্য খুব ব্যয়বহুল হয়েছে এবং আমার জীবন, সন্মান এবং সম্পদ হানির ঝুঁকি তৈরি করেছে। কথা হচ্ছে, মোসাদ্দেকের এই অপসারণ কিন্তু স্বয়ং একজন মুসলিমই ঘটিয়েছিলেন। আমেরিকার পুডল হওয়ার জন্য দুপায়ে খাড়া লোকের অভাব মুসলিম দেশগুলোতে কখনোই ছিল না, তবু আমাদের শতভাগ নিন্দা শুধু আমেরিকাকেই, একভাগও বরাদ্দ নেই নিজ জাতির শাসকদের উদ্দেশ্যে।
আজকের মুসলিম বিশ্বের অনেক বিদগ্ধজন মনে করেন, মুসলিমরা যদি দেড় হাজার বছর আগের জীবন ব্যবস্থায় থাকতে চায়, আমেরিকা বাঁধা দেয়ার কে? বিশেষ করে, মুসলিমরা যদি তালেবান শাসনেই সন্তুষ্ট থাকে, তাহলে তাদের জোর করে লিবারেইট করার কোন মানে হয় না। কিন্তু প্রশ্ন তোলা যায় যে, আফগানরা যে তালেবান শাসনে সন্তুষ্ট তার কোন পরিপূর্ণ প্রমাণ মিলেছে আজ অবধি? আর যদি তারা সন্তুষ্ট থাকেও, তারপরও কি তালেবান কোপের মুখে তাদের অব্যাহত ও নিরবচ্ছিন্ন চলতে দেয়া উচিত? তাহলে আর আমরা গ্লোবাল ভিলেজের কথা বলি কেন? বিশ্বের এক কোনে কোন নৃশংসতা হলে, তাকে সেখানকার স্থানীয় ঘটনা হিসেবেই দেখা উচিত নয়কি? তাতে বিশ্বের অন্য দেশগুলোর কিইবা এসে যায়?
১৯৭৯ সালে আমেরিকা প্রবাসী ইরানি লেখিকা ও অধ্যাপিকা আজার নাফিসি স্বৈরতান্ত্রিক শাহের পতনের পর দেশে ফিরে আসেন গণতান্ত্রিক ইরান গঠনে তার ক্ষুদ্র ভূমিকা রাখার উদ্দেশ্যে। কিন্তু অচিরেই আয়াতুল্লাহ খোমায়নির কোপের মুখে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকতার চাকরিটি খোয়াতে হয়। মুক্তমনার শ্রদ্ধেয় লেখক মীজান রহমান থেকে উদ্ধৃতি দেয়া যাকঃ
এটা কারুরই অজানা নয় যে দেশের প্রগতিশীল যুবসমাজের বড় আখড়া হল তেহরাণ বিশ্ববিদ্যালয়। /সেখানে জ্ঞানবিজ্ঞানের মুক্ত পরিবেশে পাশ্চাত্য চিন্তাভাবনায় প্রভাবিত ছাত্রসমাজ কোনরকম বিধিনিষেধ বিনা প্রতিবাদে গ্রহণ করবে না—মেনে নেবে না তাদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ওপর কোনরকম গণ্ডীবদ্ধতা। তাই গোড়া থেকেই খোমায়নি সরকার সিদ্ধান্ত নেয় যে এই শয়তানকে বশ মানাতে হবে, তার ত্যাড়া ঘাড় সোজা করতে হবে। সেই উদ্দেশ্যে প্রথমেই যে উদ্যোগটি তাঁরা নিলেন সেটা হল জুম্মার নামাজ তেহরাণের অন্য কোথাও অনুষ্ঠিত না করে বিশ্ববিদ্যালয় ময়দানে করা। একই সাথে এলোপাথারি ছাঁটাই শুরু হল অধ্যাপকদের, কারো কারো মুণ্ডচ্ছেদ।
আজ বাংলাদেশি তরুণ নাফিসের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে সে নিউইয়র্কের ফেড বোমা মেরে উড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করছিল। তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি এখনো, কিন্তু প্রায় একই ধরনের অভিযোগে অভিযুক্ত আরও কয়েকজন বাংলাদেশি ইতিমধ্যে সাজা ভোগ করছেন। মধ্যপ্রাচ্যে বা ফিলিস্তিনে তীব্র বৈষম্য ও নিপীড়নের শিকার মানুষদের আত্মঘাতী বোমারুতে পরিণত হওয়ার পেছনে কিছু যুক্তি আবিষ্কার করা গেলেও বাংলাদেশের ছেলেদের আত্মঘাতী হওয়ার পেছনে তেমন যুক্তি আবিষ্কার করা একটি কঠিন কাজই বটে। আর, দেশের বাইরে নাফিসদের বিরুদ্ধে উথাপিত অভিযোগকে আমরা কি করে এক ফুঁকে উড়িয়ে দিতে পারি, যখন আমাদের দেশেই ১৭ ই আগস্টের দেশব্যাপী বোমা হামলার নজির আছে? নাকি এগুলোও আমেরিকার কীর্তি? মজার বিষয় হল, ‘সব কিছুর পেছনেই আমেরিকা’-এই তত্ত্বকে বৈধ করতে এমনকি হাজির করা হয় যুগান্তকারী চিন্তাবিদ এডওয়ার্ড সাঈদকে। অথচ এডওয়ার্ড সাইদের ভাষায়:
যেসব মানুষ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টার ও পেন্টাগনে হামলার পরিকল্পনা করেছিল তারা ঐসব লোকের (ফিলিস্তিনের আত্মঘাতী হামলাকারী) থেকে পৃথক, যেহেতু তার বিপদগ্রস্ত বা দরিদ্র শরণার্থী ছিল না। তারা বরং ছিল মধ্যবিত্ত শ্রেণীর, ইংরেজি বলার মত যথেষ্ট শিক্ষা-জ্ঞানসম্পন্ন, বিমান চালনার স্কুলে ভর্তি হতে সক্ষম, আমেরিকা আসতে সক্ষম এবং ফ্লোরিডায় বসবাস করতে সক্ষম।
এডওয়ার্ড সাইদ একজন নেতৃস্থানীয় অপেরা ক্রিটিক এবং পিয়ানো বাদক চিলেন। তিনি আফগানিস্তানের তালেবান শাসনকে বৈধতা দেবেন এটা ভাবাই যায় না। আসলে খ্রিস্টান হিসবে জন্ম নিলেও, সাইদ ছিলেন একজন সেক্যুলার মানুষ এবং ১৯৬৭ সালেই ইসরাইলের অধিকারকে স্বীকৃত দিয়েছিলেন, যখন বেশিরভাগ আরব বুদ্ধিজীবীর এ বিষয়ে ঘোর আপত্তি ছিল। সাঈদ ‘ওরিয়েন্টালে’ প্রধানত উপনিবেশবাদ ও যুক্তির মধ্যে প্রতিষ্ঠিত অপবিত্র ও অস্বাস্থ্যকর বন্ধনকেই তুলে ধরেছেন। কিন্তু এই কারণে তাকে মৌলবাদী চোখ দিয়ে দেখাটা বোকামি হবে। ‘ওরিয়েন্টালের’ ১৯৯৫ সংযোজনায় সাঈদ বলেন,
কোশ্চেন অব প্যালেস্টাইন-এ বর্ণিত প্যালেস্টাইন সম্পর্কিত আমার মতামত এখনো ঐরকমই রয়ে গেছে; বেপরোয়া স্থানিকতা এবং জাতীয়তাবাদী গণচিন্তার জঙ্গী সামরিক প্রবণতার বিরুদ্ধে সব রকম সংরক্ষণশীল মনোভাব প্রকাশ করেছি আমি।
সাইদ আক্ষেপ করেছিলেন যে, তার গ্রন্থটির হিব্রু অনুবাদ প্রকাশ হলেও আরবি অনুবাদ হয়নি, যেহেতু উনি গ্রন্থটির অন্তর্ভুক্ত আরব শাসন বা পিএলও সমালোচনার অংশগুলি কাটছাঁট সংক্রান্ত আরবী প্রকাশকদের প্রস্তাবে রাজি হতে পারেননি।
মুসলিম বিশ্বের অনেকের চোখে, আমেরিকা একটি ধর্ষক রাষ্ট্র, যে উপুর্যপুরি ধর্ষণ করে যাচ্ছে অসহায়া মুসলিম জাতির দেহ, খুবলে খুবলে নিচ্ছে মাংস, আর দুর্বল মুসলিমরা না পারছে কিছু বলতে, না পারছে সইতে। অনেক সময় কিছু মুসলিম জাতীয়তাবাদী ধৈর্য্য হারিয়ে বোমা-টোমা ফাটিয়ে ফেলে বটে, কিন্তু আমেরিকার ব্যাপক ও ক্লান্তিহীন ধর্ষণ কি এইটুকু প্রতিক্রিয়া আশা করতে পারে না? প্রশ্ন হচ্ছে, মুসলিম দেশের সাধারণ জনগণকে যদি আমরা ধর্ষিতা হিসেব কল্পনা করি, তাহলে ধর্ষণের সব দায় আমেরিকাকে দিয়ে দিলে মুসলিম দেশের শাসকদের প্রতি ঘোরতর অবিচার করা হবে না? আমেরিকান শাসকদের সাথে মুসলিম দেশের শাসকেরাও যে ধর্ষণের সমান ও সক্রিয় অংশীদার! আর জনগণের পরিবর্তে মুসলিম দেশগুলোকেই যদি ধর্ষিতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়, তাহলে বলতে হবে, ধর্ষক আমেরিকাকে প্রায়ই প্রেমের জোয়ারে ডেকে আনে ধর্ষিতা, কিন্তু সে যে শুধু ধর্ষিত হচ্ছে, ভালবাসিত হচ্ছে না, সে বোধ বা অনুভূতিই তার নেই।
তথ্যসূত্রঃ
১.Chasing A Mirage, Tarek Fatah
2.Orientalism, Edward Said
3.অন্যান্য ইন্টারনেট উৎস
প্রবন্ধটি পড়ে খুব ভাল লাগলো ।তাছাড়া , প্রবন্ধ টি পড়ে অনেক নুতন তথ্য ও জানতে পেরেছি ,সে জন্য লেখক কে অসংখ ধন্যবাদ।
@সুজিত কুমার,
পাঠ ও উৎসাহদানের জন্য অনেক ধন্যবাদ।
ভাল তথ্য বহুল ও যুক্তি ভিত্তিক বিশ্লেষন।
– প্রথম বাক্য সত্য, যদিও সব ধর্মে নিশ্চয়ই সমান ভাবে নেই। আপনা আপনি গড়ে উঠে কিভাবে ঠিক বুঝলাম না।
মুসলমান দেশগুলিতে এই প্রবনতা দিনে দিনে বেড়ে ওঠার কারন দুটো বলে আমার মনে হয়। প্রথমতঃ, সম্পূর্ন আভ্যন্তরীন কারন। তারা ধর্মীয় ভাবে যে সমাজ গড়ার কথা শিক্ষা পায় বাস্তবে দেখে তেমন সমাজ নিজের দেশেই নেই, আসলে ১৪০০ বছর আগের আদলের আদর্শ সমাজ হওয়া সম্ভব নয়। এ কারনে যারা বেশী ধর্ম নিয়ে ভাবে, পূর্নাংগ জীবন বিধান হিশেবে কায়েম করতে চায় তাদের মনে দানা বাধতে থাকে নিজেদের সমাজ ব্যাবস্থার ওপরেই তীব্র ক্ষোভ। মুসলমান প্রধান যেসব দেশে রাজনীতি চলে প্রায় সব দেশেই মনে হয় জামাত শিবির, ব্রাদারহুড, হিতা, আল শাবাব টাইপের দল থাকে যারা জেহাদি কায়দায় ইসলামী সমাজ কায়েম করার তালে থাকে। তাদের ভোট ব্যাংক কাগজে কলমে সব সময় বড় না হলেও তাদের যারা ভোট দেয় না তাদের অনেকেরও সহানুভূতি এদের প্রতি থেকেই যায়। যেমন বাংলাদেশে জামাতের ভোট ব্যাংক ৫/৬% হলেও মনে করার কারন নেই যে এদের দেশের মোটে ৫/৬% লোকেই চায়।
দ্বিতীয় কারন মূলত আন্তর্জাতিক রাজনীতি। মুসলমানদের ভেতর ধর্মীয় জাতীয়তাবোধের ভাব অনেক বেশী। প্যালেষ্টাইনীদের ওপর হামলা হলে বাংলাদেশ বা পাকিস্তানের মুসলমান মনে করে আমেরিকা ইসরাঈলের দ্বারা সেও আক্রান্ত। যদিও তার নিজের দেশ হয়ত আমেরিকার ভাল রকম অর্থ সহায়তা পাচ্ছে। পাকিস্তান ‘৪৭ সালে মৌলবাদ ফাদ চাংগা হবার আগেই আমেরিকার থেকে বিপুল পরিমান সাহায্য পেয়েছে, নওয়াজ শরিফ যখন ব্যাংক রাপ্ট করে দেশকে চুষে ফেলে যায় তখনো আমেরিকার টাকাতেই জাম্প ষ্টার্ট দিয়ে পারভেজ মোশারফ অর্থনীতি শক্তিশালী করে। এর মাঝে অবশ্য জেহাদী ধরে নগদ টাকায় বিক্রি করার মত নোংরামীও আছে। মিশরকেও আমেরিকা বিপুল সাহায্য দিয়েছে। অন্য আরো কিছু দেশকেও দিয়েছে। তবুও এসব দেশে মার্কিন বিরোধী সেন্টিমেন্ট প্রবল তার মূল কারন সেই ধর্মীয় জাতীয়তাবোধ। আমেরিকা নিজ দেশের সরাসরি উপকার করলেও তা ধর্তব্যে পড়ে না,সেগুলি মতলববাজি, সাম্রাজ্যবাদী চাল। ইসরাঈল প্যালেষ্টাইনের ব্যাপারে আমেরিকার ভূমিকা কি সেটাই বড়। এই মনোভাব জিইয়ে রাখতে অবশ্যই ধর্মীয় মূল সূত্রের নানান নির্দেশনার ভূমিকা প্রবল, সাথে যোগ হয়েছে শ্রেষ্ঠ জীবন ব্যাবস্থা জাতিরসত্ত্বার দাবী করে যাওয়া সত্ত্বেও বিধর্মীদের সাথে প্রতিযোগিতায় চরম ভাবে পিছিয়ে পড়ার কারনে হীনমন্যতা, এটা হল শেষ আইসিং অন দ্যা কেক। আধুনিক বিশ্বে ধর্মীয় ভ্রাতৃত্ববোধের এমন মাত্রা মনে হয় না আর কারো মধ্যে আছে বলে। বাংলাদেশ/পাকিস্তানের হিন্দু নির্যাতনের খবরেও ভারতে তেমন আলোড়ন ফেলে বলে শুনিনি।
প্রশ্ন উঠে, আমেরিকা না থাকলে এই জেহাদিদের অস্তিত্ব থাকত কি?
যারা মনে করেন, আমেরিকা দৃশ্যপট থেকে বিদায় নিলেই বা সাম্রাজ্যবাদী ষড়যন্ত্র বন্ধ করলেই মুসলিম বিশ্বে শান্তির সুবাতাস বইবে তারা হয়ত বোকার স্বর্গে বাস করছেন।
– কথা খুবই সত্য। জেহাদী নির্দেশনা বিষয়ক যেসব তাফসির, ইসলামী আইন কানুনের বই পত্র আছে সেগুলির অনেকগুলিই আমেরিকার জন্মেরও বহু আগে লিখিত। বামদের মত অনেকে যেমন মনে করেন যে মুসলমানরা আক্রান্ত হবার পরেই জেহাদ রোগ বেরিয়েছে এমন ধারনা মোটেও ঠিক নয়। মুসলিম বিশ্বে অশান্তি সৃষ্টি করতে আমেরিকার কোন দরকার নেই। নিজেদের ভেতরেই অশান্তি সৃষ্টি করার এলিমেন্ট যথেষ্টই আছে। যতদিন না কুসংস্কাররের ডিপো, তীব্র সাম্প্রদায়িক শিক্ষাগুলিকে কেয়ামত পর্যন্ত পূর্নাংগ জীবন বিধান হিশেবে বিবেচনা করার প্রবনতা থাকবে ততদিনই সমস্যার বীজ থাকবেই। আমেরিকার যায়গায় হয়ত অন্য কেউ থাকবে। আমেরিকা থাকাতে হয়ত নিজেদের দেশেই ঝামেলা কম হচ্ছে, আমেরিকা না থাকলে তখন পুরো মনোযোগ পড়বে নিজ দেশে প্রকৃত ইসলামী সমাজ কায়েম করার প্রজেক্ট। ফলাফল কি হতে পারে বলাই বাহুল্য।
ধর্মীয় উগ্রবাদী দল ভারতেও আছে। আমেরিকা সে মৌলবাদীদের উষ্কিয়ে কেন ভারতে ঝামেলা বাধায় না? ভারতে কিন্তু গনতন্ত্র শক্ত হলেও আভ্যন্তরীন সমস্যা, বিচ্ছিন্নতাবাদী সমস্যা এসব ভালই আছে। আমেরিকা কেন এসবের সুযোগ নিয়ে ভারতকে পানিতে ফেলতে পারে না? পাকিস্তানেই আমেরিকা গোলমাল করে কি কারনে? অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী হিশেবে ভারতের তুলনায় পাকিস্তান আমেরিকার কোন ম্যাচ? আরব দেশ যে জেহাদ রফতানী করে তাতে তাদের স্বার্থটা কি? বাংলাদেশ পাকিস্তানে জেহাদী ফিন্যান্স তাদের কি আর্থিক বেনেফিট দিচ্ছে?
আমেরিকা পৃথিবীর নানান দেশে মৌলবাদীদের ব্যাকিং দিয়েছে সত্য, এমনকি ‘৭১ সালের ডিসেম্বরের বুদ্ধিজীবি হত্যার পেছনেও সিআইএর প্রত্যক্ষ মদদের কড়া অভিযোগ আছে। তেমনি সত্য হল যেসব দেশে আমেরিকা নানান কুকর্ম করেছে তাদের সবারই মূল সমস্যা আভ্যন্তরীন, ইল গভর্ননেস, তীব্র আভ্যন্তরীন বিরোধ ছিল সবারই দীর্ঘদিনের সমস্যা। এজন্যই উপরে ভারতের উদাহরন দিয়েছি। আমেরিকা যার বন্ধু তার শত্রুর দরকার নেই এসব চটকদার কথা তাদের জন্যই সাজে যাদের নিজেদের মধেই বড় ধরনের সমস্যা আছে। আমেরিকা মালয়েশিয়ায় কেন মুসলমান বিদ্বেষ দেখাতে যায় না? মোহাথির মোহাম্মদ কড়া আমেরিকান সমালোচক হওয়া সত্ত্বেও তার সময় আমেরিকার বানিজ্যিক সম্পর্ক ছিল খুবই ভাল, তাতে মালয়েশিয়ার উন্নতি ছাড়া অবনতি হয়নি। মহাথিরকে কেন আমেরিকা সহ্য করেছিল? আমেরিকা হল মালয়েশিয়ার সবচেয়ে বড় বানিজ্যিক মিত্র। আমেরিকার বন্ধুর শত্রুর দরকার নেই এই চটকদার ফরমুলা ভারত মালয়েশিয়ার বেলায় কেন খাটে না? মালেয়শিয়ার লোকে কি ইসলাম বাদ ছেড়ে দিয়েছে?
আমেরিকার সাথে মিত্রতা করেও বহুদেশ উন্নতি করেছে। দক্ষিন কোরিয়ার কথাও বলা যায়। আমেরিকার সাথে দোস্তি করে ভারত অর্থনৈতিকভাবে আমেরিকাকে হুমকিতে ফেলেছে আর আমেরিকা যাবতীয় শয়তানি ষড়যন্ত্র করে চলেছে বাংলাদেশ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে? আমেরিকানদের মগজ খুলে দেখা দরকার সে যায়গায় কি আছে। আফগানিস্তানে তালেবান সৃষ্টিতে আমেরিকার ভূমিকা অবশ্যই আছে। তবে আমেরিকা কি তখন বলপূর্বক সেখানে গেছিল নাকি রুশদের বিরুদ্ধে তাদের সহায়তা দরকার ছিল বলেই তাদের আগমন স্বাগত জানানো হয়েছিল সেটাও মনে রাখতে হবে। সে সময় ব্যাপারটা ছিল মিউচ্যুয়াল। আমেরিকা কি তালেবান তৈরী করেছিল বিশ্বব্যাপী বোমাবাজি করার জন্য?
উইকিলিক্সের খবরে দেখা গেছে যে সৌদী আরব সহ আরো দুটি মধ্যপ্রাচ্যীয় দেশ আমেরিকাকে ইরানে হামলা চালাতে দাওয়াত দিয়েছিল। এর পেছনে কি মূলতঃ ধর্মীয় উন্মাদনা একেবারেই নেই?
ওপরে যা বলেছি সেসব আমার ধারনা বেশীরভাগ লোকেই ভালই বোঝেন। তাই আমেরিকা যতই খারাপ, মৌলবাদীদের গডফাদার, সাম্রাজ্যবাদী এসব হোক, আমেরিকার মায়াও আবার কিছুতেই এড়ানো যায় না। আমেরিকা বিশ্ব থেকে মুছে গেলে তাতে মুসলমান প্রধান দেশগুলির বিপদ বড়বে বই কমবে না বলেই আমার বিশ্বাস।
@আদিল ভাই,
আপন শক্তিতে গড়ে উঠে। মানে, ইনহেরেন্ট এলিমেন্টের কথা বলতে চেয়েছি, যা সব রিলিজনেই ঢোকানো আছে, পরোক্ষ বা প্রত্যক্ষ, বিল্ট অর ইম্পোর্টেড।
শতভাগ সহমত। বিএনপি জামাতকে সঙ্গে রেখে তার ভোটব্যাংকের বড় একটি অংশকে সন্মানই জানায় বলে মনে হয় আমার। অন্তত জামাতকে সঙ্গে না রাখলে ঐ ভোটারদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা হয় কিন্তু! আর আপনি যদি ‘জামাত’ শব্দটির বদলে ‘ইসলামি দল বা খেলাফত প্রতিষ্ঠার দল’ বলেন, তবে আ’লীগেও ভূরি ভূরি সহানুভূতিশীল ভোটার পাবেন। আমি অনেক আ’লীগ ভোটার দেখেছি, যারা যুদ্ধাপরাধির বিচার চায় না।
সব রিলিজনেই জাতীয়তাবোধ ছিল এবং আছে। তবে পাশ্চাত্যে তার প্রভাব হ্রাস পেয়েছে মাত্র। ইউরোপের ইতিহাস বাইবেল ও বিজ্ঞানের লড়াইয়ের ইতিহাস, উনবিংশ শতাব্দিতে এসে বাইবেলের বড় পরাজয় ঘটেছে যেখানে। এখন বাইবেল একটা ঐতিহ্যের স্মারক হয়ে টিকে আছে। হিন্দু ধর্মের প্রভাব কিছুটা কমেছে, তবে বাইবেলের স্তরে যেতে বহু পথ পাড়ি দিতে হবে। বাংলাদেশের হিন্দু নির্যাতন ওখানে ভালই আলোড়ন ফেলে বলে জানি। শুধু এই ইস্যুতেই তারা আ’লীগকে ফেভার করতে রাজী থাকে।
মুসলিম জাতীয়তা বিকাশে বড় ভূমিকা আছে সৌদিসহ মধ্যপ্রাচ্যের তেলফান্ডের। সৌদি যদি বাংলাদেশে একটি এমআইটি গড়ে দিত, তাহলে বাংলাদেশের মত মুসলিম দেশগুলো আমেরিকান বা অন্যদেশীয় সাম্রাজ্যবাদ মোকাবেলায় স্বাবলম্বী ও আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠত। কিন্তু সৌদি সরকার স্বীয় ক্ষমতার স্বার্থে এবং ওহাবি কাল্টের বিস্তার ঘটাতে বিশ্বব্যাপি মৌলবাদের আবাদ সাফল্যের সাথে চালিয়ে যাচ্ছে।
দীর্ঘ বিশ্লেষনী মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ, আদিল ভাই। আপনার মন্তব্য লেখাটিতে আলাদা মাত্রা যুগিয়েছে।
@কাজি মামুন,
– সব ধর্মগ্রন্থে কম বেশী আছে ঠিক, কারন সব ধর্মই যতই উদারতার কথা বলুক এক পর্যায়ে শ্রেষ্ঠত্ববাদ কোন না কোন ভাবে টেনে আনে, তখন অন্য ধর্ম ভূয়া এসব সুর এসেই যায়। কথা হল যে ধর্মের সে অংশকে কারা এবং কি কারনে সমসাময়িক বিশ্বে গুরুত্বপূর্ন মনে করে? বোরখা হিজাবের ধারনা বাইবেলেও আছে বলে জানি, সে নিয়ে খৃষ্ট ধর্মের লোকেরা মাতামাতি করে না। বটম লাইন হল শুধু ধর্মগ্রন্থে থাকলেই সেটার ব্যাবহার বা অপব্যাবহার হবেই এমন নয়।
যুদ্ধপরাধী, রাজাকার বদর প্রতিরোধ বিষয়ে যারা প্রতিরোধে সক্রিয় তারাও মোটের ওপর মোটা দাগে ভুল করে চলেছেন ব্যাপারটাকে কেবল “জামাত শিবির” লেবেলের সীমাবদ্ধ রেখে। এই ভুলের মাশুল দিতে হবে খুব বড় ভাবে। মূল কারন আরো অনেক বৃহত্তর যেটা সরাসরি লোকে স্বীকার করতে চায় না। যুদ্ধপরাধীদের বিচারের বিরোধীতা করা এক খালেদার একক সিদ্ধান্ত কিংবা সাকা চৌ এর মত দুয়েকজন নেতার প্রভাব এমন মনে করার কোন কারন নেই। বিএনপির এমন অবস্থানের বিরুদ্ধে দলীয়ভাবে আভ্যন্তরীন কোন প্রতিবাদ বা বাদানুবাদ হয়নি। বিএনপি ধারার বুদ্ধিজীবিরাও কেউ এই অবস্থানের বিরুদ্ধে টু শব্দটিও করে না। আওয়ামী লীগ দূর্নীতি ডাকাতি যাইই করুক এমন অবস্থান সরাসরি নিলে দলই ভেঙ্গে যেত। দলীয় বুদ্ধিজীবিও বেশীরভাগই প্রতিবাদে ফেটে পড়ত যা ২০০৬ সালে মৌলবাদী গোষ্ঠীর সাথে নির্বাচনী জোট বাধার সময় দেখা গেছে।
বিএনপির এক বড় সংখ্যক সমর্থকই আসলে এই দলের। এরা আপাতত বিএনপি সমর্থক সরাসরি জামাত সমর্থন দৃষ্টিকটূ কিংবা ভোটের রাজনীতিতে জামাতের একক অস্তিত্ব নেই বলে। আদর্শগত ভাবে এরা জামাতের সাথে একাত্ম্যতা বোধ করে। এই দলের আবির্ভাগ যে শুধু ‘৭৫ এর পর থেকে হয়েছে তা নয়, মুক্তিযুদ্ধের ঘোর কেটে যাবার পর থেকেই সেই ধর্ম ভিত্তিক সমাজ গঠন করার ভুত পেয়ে বসেছে। আদর্শগত ভাবে আওয়ামী রাজনীতির সাথে তাই দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। জিয়ার উত্থানে এরা প্রান ফিরে পেয়েছে, আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি, পেয়ে গেছে রাষ্ট্রীয় মদদে ঐক্যবদ্ধ ফ্রন্ট। দূঃখজনক হলেও সত্য যে এই দলে কিছু জেনুইন হাই প্রোফাইল মুক্তিযোদ্ধা্রাও আছেন। এরা জামাত নেই হয়ে যাক কোন মতেই চায় না। সরাসরি যুদ্ধপরাধীদের বিচার মানি না বলতে পারে না তবে বিচারের নামে রাজনীতি করা যাবে না, ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে হবে এসব নানান শর্ত জুড়ে চেঁচায়। যুদ্ধপরাধের সাথে জড়িত যারা তারা প্রায় সকলেই রাজনীতির সাথে জড়িত। কাজেই এদের বিচার মানেই রাজনীতির কথা এসেই যাবে, অর্থাৎ মূল কথা দাঁড়ায় যে এদের বিচার করা যাবে না। আমার নিজের ধারনা দেশের অন্তত ৩০% লোকে আদর্শগত ভাবে জামাতি ধ্যান ধারনার, এমনকি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লোক হলেও। তবে এদের নানান মাত্রা আছে, কিছু লোকে চায় জামাত থেকে যুদ্ধপরাধের সাথে জড়িতরা সরে গিয়ে দলকে বিশুদ্ধ করুক।
এই দলকে ইগনোর করে শুধু শিবির পেটাও, ছাগু পোঁদাও এভাবে চুড়ান্তভাবে কাজের কাজ কিছুই হবে না। মূল যায়গা অর্থাৎ জামাতি হিজু এসব কেন লোকে সমর্থন করে সে যায়গায় হাত না দিলে রেহাই নেই। এক জামাতকে টার্গেট করা শুরু হলে এরা শুধু দলের সাইনবোর্ড বদল করবে, যেমন এখন সব বিশ্ববিদ্যালয়ে হিতার উত্থান দেখা যাচ্ছে। শিবির বর্তমানে যে জংগী মনোভাব নিয়ে রাস্তায় নামছে তাতে তাদের সরাসরি প্রতিরোধ ছাড়া উপায় নেই, বোঝাই যায় যে তারা চায় সরকার তাদের পাতা ফাঁদে পা দিক যাতে তারা আরো বড় অনর্থ বাধাতে পারে।
তবে স্বাধীনতা বিরোধী মানেই কেবল জামাতি এই ধারনা থেকে মুক্তি না পেলে রেহাই নেই, ক্লিয়ার এন্ড সিম্পল।
@আদিল মাহমুদ,
খৃষ্ট ধর্ম মাতামাতি করত, খুব বেশি মাত্রায় করত। সম্রাট দ্বিতীয় ফ্রেডরিক জার্মান ও ইতালিতে আইন করেছিলেন যে, সকল বিরুদ্ধধর্মীকে (অর্থাৎ যারা খ্রীস্টান নয়) আইন বহির্ভূত বলে ঘোষনা করতে হবে। যারা তাদের ধর্মমত প্রত্যাহার করবে না তাদেরকে পুড়িয়ে মারতে হবে। তবে বাইবেল ও চার্চের বিরুদ্ধে মুক্তবুদ্ধির মানুষদের লড়াই চলেছে কয়েকশ বছর ধরে। ভলতেয়ার, রুশো, হবস, জন লক, পেইন সহ আরো অনেকে যুক্তি ও সহিষ্ণুতার আন্দোলন চালিয়ে গিয়েছিলেন। অবশেষে কয়েক শতাব্দীর আন্দোলন ও বিজ্ঞানের বিষ্ময়কর উথানে ঊনবিংশ শতকে বাইবেলের ব্যাপক ও বড় ধরনের পরাজয় ঘটে।
সত্য।
সত্য।
সত্য।
দারূন কথা বলেছেন। আসল জায়গায় হাত দিয়েছেন।
@কাজি মামুন,
– এসব জানি। কে অতীতে কি করত তা ইতিহাসের পাতায় আছে। অন্যান্য ধর্মগুলির নামে এমন বেশ কিছু আচার কুসংস্কার অমানবিক কাজ কারবার করা হত সেগুলির কাছে বর্তমানে ইসলামের যেসব দিক আমরা সমালোচনা করি, এমনকি জেহাদি বোমাও কিছু না। আমাদের দেশে হাজারো মহিলা বিদ্যালয় মোল্লা চক্র বন্ধ করে দিয়েছে। এসব আলোচনা করতে গেলে ইসলামে মহিলাদের অবস্থানের সমালোচনা চলে আসবেই। তখন কি আমরা হিন্দু ধর্ম ওয়ালারা পুড়িয়ে মহিলা মারত এসব টেনে আনব স্রেফ পলিটিক্যাল কারেক্টনেস বজায় রাখতে? এতটা কারেক্টনেসের মনে হয় দরকার নেই।
কেউ নিজের ভুল সংশোধন করলে সে নিয়ে কার দায় পড়ে টানা হ্যাঁচড়া করার?
কোরানের পাতায় আছে চুরি করলে হাত কেটে দাও। আমরা ইসলাম বিদ্বেষীরাও কিন্তু এই আয়াত নিয়ে তেমন মাতামাতি করি না। কেন করি না? কারন এই আইন এখনো আমরা আমাদের দেশে কায়েম করার থ্রেট লক্ষ্য করছি না। আজকে দেশে এই আইন কায়েমের দাবী উঠলে আমরা এই আয়াত নিয়েও অবশ্যই মাঠে নেমে যাব। আমাদের দেশেও এক কালে চুরি করলে হাত পা নাক কান কাটা হয়েছে সেসব ইতিহাসের পাতাতেই থাকুক। জেহাদী আয়াতের সমালোচনা অবশ্যই আমরা করি সংগত কারনেই, করতেই হবে নিজেদের নিরাপত্তার স্বার্থেই। ইসলাম বিষয়ক যত আলোচনা সমালোচনা হয় তার শতকরা ৯০% হয় ইসলামকে পূর্নাংগ জীবন বিধানের একমাত্র ও অভ্রান্ত এই ফিলোসপির কারনে। প্রাচীনপন্থী, অমানবিক রীতিনীতি জীবন বিধানের নামে অন্ধভাবে চাপিয়ে দেবার চেষ্টা করা হলে তার বিরুদ্ধে কথা হবেই, সে কোরান ওয়ালারা বলুক আর বাইবেল ওয়ালারা বলুক।
আর ১০% সমালোচনা হয় সম্ভবত বিশুদ্ধ ধর্ম বিদ্বেষের কারনে।
কিছু মুক্তিযোদ্ধাদের ভেতরেও কিভাবে রাজাকারি চেতনা প্রবেশ করেছে তা আমার সিরিজের সামনের পর্বে থাকবে, সাথে হিতা জাতীয় দলের উত্থান বিষয়ক কথা। সেখান থেকে হয়ত বোঝা যেতে পারে কেন দেশের বড় সংখ্যক মানুষ যুদ্ধপরাধীদের বিচার চায় না কিংবা অন্তত হওয়াটা তেমন গুরুত্বপূর্ন মনে করে না।
@কাজি মামুন,দ্বিতীয় ফ্রেডেরিক অখ্রীষ্টানদের প্রতি এধরনের আইন করেছিলেন কখন এব্যাপারে রেফারেন্স দেয়া যাবে কি? আমার জানা মতে তো জার্মান সম্রাট দ্বিতীয় ফ্রেডেরিক তার পরমতসহিষ্নুতা, ধর্মে অবিশ্বাস এবং উদার শাসনের জন্যে বিখ্যাত ছিলেন। তিনি সরাসরই তার অধীনে ইহুদী, মুসলিমদের পৃষ্ঠপোষকতা করতেন। তার একটা বিখ্যাত উক্তি হলো মোজেস, যিশাস, মোহাম্মদ সবাই ছিলেন মিথ্যুক আর প্রতারক। তাকে ইউরোপের প্রথম এনলাইটেন্ড রাজা ও বলা হয়।
@সফিক ভাই,
সম্রাট দ্বিতীয় ফ্রেডরিক ১২২০-৩৫ সালের মধ্যে তার শাসনাধীন রাজ্যগুলোতে এই আইন করেন পোপের কাছে নতি স্বীকার করে। তিনি মুক্তচিন্তা চর্চাকারী হলেও তার প্রণীত আইনটি বিরুদ্ধ ধর্মাবলম্বনকারীদের (ক্রিস্টানদের চোখে বিধর্মীদের) আগুনে পুড়িয়ে মারাকে বৈধ শাস্তির সিল মেরে দেয়।
নীচের অংশটুকু লক্ষ্যনীয়ঃ
Problems with sects like the Albigenses (Cathari) and Waldenses in the 12th century first led to the episcopal Inquisition. Often at the instigation of secular rulers, bishops were urged to investigate and deal locally with heretics, since they were seen as a threat to both the ecclesiastical and the social order. Papal documents as well as the Second, Third, and Fourth Lateran Councils (1139, 1179, 1215) prescribed imprisonment and confiscation of property as punishment for heresy and threatened to excommunicate princes who failed to punish heretics.
The papal Inquisition was formally instituted by Pope Gregory IX in 1231. Following a law of Holy Roman Emperor Frederick II, enacted for Lombardy in 1224 and extended to the entire empire in 1232, Gregory ordered convicted heretics to be seized by the secular authorities and burned. Like Frederick, Gregory also mandated that heretics be sought out and tried before a church court. For this purpose, he first appointed special inquisitors (for example, Conrad of Marburg in Germany and Robert le Bougre in Burgundy) and later entrusted the task to members of the newly established Dominican and Franciscan Orders of friars. The independent authority of the inquisitors was a frequent cause of friction with the local clergy and bishops.
আর লিংক এখানে।
@কাজি মামুন,হ্যা এটা ঠিকই আছে। তবে এই আইনের লক্ষ্য এর লক্ষ্য ছিলো খ্রীস্টানদের মধ্যেই যারা heretic তদের প্রতি। এই আইন ফ্রডেরিকের জন্যে একটা বড়ো কলংক সন্দেহ নেই।
@সফিক ভাই,
‘খ্রীস্টানদের মধ্যেই যারা heretic’ বলতে কি বোঝাচ্ছে? আমিও স্টাডি করে দেখলাম, আসলে এই অর্থই নির্দেশ করছে। কিন্তু ‘কিন্তু’ আছে, সফিক ভাই!
সেরভেতুসকে ষোড়শ শতকে আগুনে পুড়িয়ে মারা হয়েছিল, কারণ বাইবেলে যেখানে জুডাহকে দুধ ও মধুবাহী দেশ হিসাবে আখ্যায়িত করা হয়, সেখানে সেরভেতুস একে অনুর্বর ও অনুন্তত দেশ হিসেবে ব্যাখ্যা করেন। এখন প্রশ্ন হল, সেরভুস কি খ্রিস্টান ছিল? বা সেরভুস খ্রিস্টান না হয়ে ইহুদি বা মুসলিম হলে কি রক্ষা পেয়ে যেতেন? বিষয়টি পরিষ্কার করবেন, সফিক ভাই?
@আদিল মাহমুদ,
ঘুরে ফিরে এই সেই জায়গা যেদিকে অঙ্গুলিনির্দেশ করার কারণে ঘরে বাইরে আমরা দোষী, আমরা ইসলাম ব্যাশার আমরা মুসলিম বিদ্বেষী। একজন জিহাদী কোন সময়েই অস্বীকার করেনা যে তার জিহাদের অনুপ্রেরণা তার ধর্ম গ্রন্থ, গ্রন্থের তাফসির, ইসলামী আইন, জিহাদি বইপত্র। ফাঁসির কাষ্ঠে ঝুলে মৃত্যুর শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত সে বলে গেছে – বিশ্বজুড়ে আল্লাহর আইন কায়েম করার জন্যে জীবন দেয়া তার ঈমানী দায়ীত্ব। এ কথা স্বীকার করেনা শুধু ইসলামী মৌলবাদ জঙ্গিবাদের সমর্থক বামপন্থি কম্যুনিষ্টরা। মনে পড়ে কীভাবে মহিউদ্দীন উরফে সেতারা বেগম কার্টুনিষ্ট আরিফ ও তাসলিমার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে মৌলবাদীদের সমর্থন দিয়েছিলেন। খুঁজে পেলে একবার দেখে নিবেন, সাতক্ষীরা আর রামু নিয়ে বদরুদ্দীন ওমর ও ফারহাদ মাজহারের লেখাগুলো।
শিশুকালে মায়ের কোলে, বাল্যকালে মাদ্রাসা-স্কুল বইয়ে, মক্তবে মসজিদে, প্রকাশ্য খোলা মাঠে, তাফসির- ওয়াজ মাহফিলে সাম্প্রদায়ীকতা শিক্ষা দেয়া হয়, ক্ষণে ক্ষণে কুৎসিত শরিয়া আইন বাস্তবায়নের শ্লোগানে কেঁপে উঠে রাজপথ। এ সবের বিরুদ্ধে কথা না বলে কথায় কথায় শুধু আমেরিকাকে দোষারোপ করে মুসলমানের কোন লাভ হবেনা।
@আকাশ মালিক,
এই মহিউদ্দিনই কি বর্তমানে সদালাপের মহিউদ্দিন সাহেব নাকি? সেতারা হাশেমের পুরনো কিছু লেখা পড়েছিলাম ব্লগ জীবনের প্রথম দিকে। মনে পড়ে মুক্তমনাতেও একজন মহিউদ্দিন বছর দুয়েক আগে কিছুদিন ছিলেন, যাকে কেউ কেউ সেতারা হাশেম বলে চিহ্নিত করেছিলেন।
বাম আর ডান হল পৃথিবী গোলের সূত্রে এক যায়গায় মিলে যাওয়ার উদাহরন। ফরহাদ মাজহার সাহেব তো মনে পড়ে বাংলা বাহিনীদের মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে তূলনা বা এ জাতীয় কিছু দিয়েছিলেন। আমাকে অবশ্যই কোন না কোন পন্থী হতে হবে এই ধারনার মাঝেই বড় ধরনের সীমাবদ্ধতা আছে, ডান বাম দুই দলেরই এই এক যায়গাতে সমস্যা।
@আদিল মাহমুদ,
না।
ঠিকই ধরেছেন।
@আকাশ মালিক ভাই,
ধর্ম ব্যাশিং আমিও পছন্দ করি না। আমার পরম শ্রদ্ধেয় বাবা-মায়ের ধর্মকে নিয়ে অহেতুক টানাটানি আমার কাছেও অরুচিকর মনে হয়। আমার মতে, মুক্তবুদ্ধি ও বিজ্ঞানের ক্রমবিকাশে ধর্মের ক্ষতগুলো আপনাআপনি বিলীন হবে। ধর্ম ব্যাশিং (বা ধর্মকে গালাগাল) না করে ওদিকে জোর দেয়াই উচিত হবে।
তবে অধুনা ধর্মব্যাশিং প্রতিরোধের নামে মুক্তকণ্ঠকে চেপে ধরার প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দেখুন, রাজেশদা বা আমরা পেশাদার সাংবাদিক নই যে, অনুসন্ধান করে আসল তথ্য খুঁজে বের করার মত পর্যাপ্ত সময় বা সুযোগ পাব। আমরা যখন মিডিয়াতে নাফিস বা মালালা কেস দেখি, তখন আমরা ধরে নেই, ঘটনাগুলো সত্য। মিডিয়া যে কেচ্ছা বানিয়ে তা প্রচার করতে পারে না, তা নয়। তাই সর্বদাই মিডিয়ার নিউজের উপর নির্ভর করাতে কিছুটা ঝুঁকি তো আছেই। তবু জেনারেল পারসেপশান বলে একটা কথা আছে। আমরা যখন নাফিসের স্টোরি মিডিয়াতে দেখি, তখন তা অবিশ্বাস্য বলে উড়িয়ে দিতে পারি না এই কারণে যে, বাংলাদেশে আমরা রমনার বটমূলে বোমা হামলা দেখেছি, দেখেছি ১৭ আগস্টের বোমা হামলা। বাংলাদেশেও যে আত্মঘাতী বোমারু থাকতে পারে, তা কি আমরা প্রত্যক্ষ করিনি? আর কিছু নয়া সংগঠন যে, নাফিসের মত মেধাবী তরুণদের দলে ভেড়াচ্ছে, তাও কি অস্বীকার করা যায়? একইভাবে, তালেবানদের হাতে মালালার নিগৃহীত হওয়ার ঘটনা জেনারেল পারসেপশান অনুযায়ী আমাদের বিশ্বাস হয়, যদিও রিস্ক থেকেই যায় যে, ঘটনাগুলো মিডিয়া কনককড করেছে।
রাজেশদা বা আমরা আমদের মনে যে বিষয়গুলো আলোড়ন তুলে, তাই লিখি। মালালার বিষয়টি জেনারেল পারসেপশন অনুযায়ী রাজেশদার মনে প্রতিঘাত তৈরি করেছে, তাই উনি এই বিষয়টি নিয়ে লিখেছেন। এখন উনাকে এই বলে অপরাধী সাব্যস্ত করা হয় যদি, উনি মার্কিন ড্রোন হামলা নিয়ে না লিখে মালালাকে নিয়ে লিখে ঘোরতর অপরাধ করেছেন, তাহলে লেখকের স্বাধীনতা বলে কিছু থাকল? সবাই এক বিষয় নিয়ে লিখবেন না। মার্কিন ড্রোন হামলা যাদেরকে খুব বেশী দগ্ধ করে, তারা তা নিয়ে যুক্তি দিয়ে লিখুন না, আমরা সবাই একযোগে তাকে সমর্থন করব।
রাজেশদা বা আমরা অনেক সময় কোন সংবাদে ক্ষুদ্ধ হয়ে সংবাদ ভাষ্য টাইপের লেখা লিখি। আমরা কোন অনুসন্ধানী রিপোর্ট লিখি না, যা পেশাদার সাংবাদিকদের কাজ। আমরা যে সেকেন্ডারি ইনফরমেশন নিয়ে লিখি, তা যদি পুঙ্খানুপুঙ্খ বিশ্লেষণ করতে হয় সত্যতা নির্ধারণের জন্য, তাহলে আমাদের আর লেখাই হবে না। যেমন ধরুন, আজ শিবির হামলা করছে পুলিশের উপর, এখন জেনারেল পারসেপশন থেকে মনে হয়, এটা সত্য। কিন্তু কি প্রমাণ আছে আমাদের হাতে যে নিশ্চিত করব, এটা আ’লীগ সরকারের সাজানো নয়? কি প্রমাণ আছে যে নিশ্চিত করব, লাদেন কেসও সাজানো নয়? কি প্রমাণ আছে নিশ্চিত করতে যে, এমনকি মার্কিন ড্রোন হামলাও সাজানো নয়? আমরা তো আর ড্রোন হামলা দেখিনি, শুধু মিডিয়াতেই পেয়েছি, এবং সেও ঐ পশ্চিমা মিডিয়াতে, যারা মালালার কাহিনীও ফেঁদে বসে আছে।
@কাজি মামুন,
এর পর দ্বীর্ঘ মন্তব্যটি পড়লাম। কী বলবো বুঝতে পারছিনা, শুধু সংক্ষেপে বলি আপনার অনুভুতি ফিলিংস এর সাথে ১০০% সহমত জানাই।
দারুণ লেগেছে। বিশ্লেষণ মূলক চমৎকার লেখা।
(Y)
@অসীম,
ধন্যবাদ ভাইয়া। (F)
বেশি কিছু বললাম না শুধু এই টুকুই বলি খুব চমৎকার ভাবে- “বন্ধু তুমি শত্রু তুমি, তুমি আমার সাধনা” রূপটি টেনে এনেছেন।
@রাজেশ তালুকদার,
(Y)
@রাজেশদা,
আপনিও খুব চমৎকারভাবে লেখাটির মূল নির্যাস তুলে এনেছেন।মুসলিম বিশ্বে আজকের সমস্যাগুলোর একক মালিকানা আমেরিকার নয়, এগুলো মুসলিম বিশ্বের ক্ষমতালোভী শাসক ও আমেরিকান ইমপেরিয়াল এস্টাবলিস্টমেন্টের জয়েন্ট ভেঞ্চার, যা পরিচালিত হয় পারস্পরিক বিশ্বাস ও আস্থার ভিত্তিতে, মুনাফা ও মালিকানা সমভাবে বন্টিত যেখানে। আর এই প্রকল্পগুলোর ফলাফলঃ মুসলিম একনায়করা গদিনশীন থাকে বহাল তবিয়তে, আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদও দৃপ্তপায়ে এগিয়ে চলে সম্মুখপানে, শুধু পিছিয়ে যেতে থাকে মুসলিম বিশ্বের দুর্ভাগা মানুষগুলো, এমনকি দেয়ালেও পিঠ ঠেকাবার সুযোগ থাকে না তাদের, ভয়াল মৃত্যুত করাল গ্রাস যেন থামতেই চায় না তাদের জীবনে! এই লোকগুলোই আসল ধর্ষিতা, যা তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করে মুসলিম শাসক ও আমেরিকার এস্টাবলিস্টমেন্ট। আমরা যেন ধর্ষক ও ধর্ষিতাকে চিনতে ভুল না করি।
(Y)
চমৎকার বিশ্লেষণ!
@সৈকত ভাই,
সম্ভবত এই প্রথম আমার কোন লেখায় আপনার মন্তব্য পেলাম। আমি আপ্লুত। গরীবের ব্লগে পদধূলি রাখার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ।
ভাল থাকবেন, সৈকতদা!
[img]http://blog.mukto-mona.com/wp-content/uploads/2012/11/World-Oil-Import.png[/img]
[img]World Oil Import.png (file://SHAFIQ-PC/Users/shafiq/Pictures/World%20Oil%20Import.png)[/img]
খুব ভালো লেখা হয়েছে। আলোচনায় খুত ধরার কোন স্কোপ নেই। আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদ নিয়ে চিল্লাচিল্লি করনে ওয়ালাদের শুধু একটি কথাই বলতে ইচ্ছা করে, আর বছর তিরিশেক অপেক্ষা করুন। আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদ দেখেছেন, চৈনিক সাম্রাজ্যবাদ দেখেন নি।
এসপ্তাহে বের হওয়া একটি গুরুত্বপূর্ন নিউজ শেয়ার করার দরকার।
প্রথমত U.S. to become biggest oil producer – IEA
http://money.cnn.com/2012/11/12/news/economy/us-oil-production-energy/
আমেরিকার নিজস্ব তেল গ্যাস দ্রুত বাড়ছে। ২০২০ সালের মধ্যে আমেরিকা তেল উৎপাদনে সৌদী আরবক ছাড়িয়ে যেতে পারে। আর এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যের তেলের উপরে আমেরিকার নির্ভরতা কমে যাবে দ্রুত।
১২ ই নভেম্বরে IEA (International Energy Agency) তাদের World Energy Outlook 2012 প্রকাশ করেছে। এখানকার একটা গ্রাফ দেখাচ্ছে আগামীতে মধ্যপ্রাচ্যের তেল রপ্তানীর সম্ভাব্য চিত্র।
[img]http://World Oil Import.png (file://SHAFIQ-PC/Users/shafiq/Pictures/World%20Oil%20Import.png)[/img]
@সফিক ভাই,
আজ আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদের পদাঘাতে পিষ্ট অনেক বাংলাদেশিকে চীনের ব্যাপারে খুব সংবেদনশীল দেখা যায়, তারা প্রায়শই চীনের উদাহরণ টেনে বলে, কই চীন তো বাংলাদেশে এত্ত এত্ত উন্নয়ন সহযোগিতা দিয়েছে, কিন্ত কখনো আমেরিকার মত আভ্যন্তরীন ব্যাপারে নাক গলায়নি। মহাচীনের মোহে থাকা এই লোকগুলো এই সত্য বিস্মৃত হয় যে, চৈনিক জনগনের এমন অনেক গণতান্ত্রিক অধিকার নেই, যা আমাদের আছে। আর তাছাড়া, আমরাই তো আমেরিকাকে সবকিছু উজাড় করে দেই পুরো নাকটা গলানোর জন্য। আপনার নিশ্চয়ই আ’লীগের সাবেক জেনারেল সেক্রেটারি আব্দুল জলিলের কথা মনে আছে। বিগত বিএনপি সরকারের যখন দু’দলের সংলাপের প্রস্তাব উঠল, তখন জলিল গো ধরেছিলেন, সংলাপ মার্কিন দুতাবাসে হতে হবে। তাহলে বুঝুন!
ইতিহাসের পরিক্রমায় সাম্রাজ্যবাদ কখনো ভর করেছে যুক্তরাজ্যের উপর, কখনো রাশিয়া, কখনো মুসলিম শক্তির উপর, আর এখন আমেরিকার উপর, যা প্রৌঢ়ত্ব পার করছে মনে হয়। তবে চৈনিক সাম্রাজ্যের ব্যাপারে আমি অতটা নিশ্চিত নই এখনো।
খেয়াল কইরা শফিক ভাই, আমেরিকান প্রেসিডেন্ট যখন জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষনে গর্বভরে বলেন, আমেরিকা উইল লিড দ্যা ওয়ার্ল্ড, তখন আমেরিকানবাসি কিন্তু অখুশি হয় না। আজ বাংলাদেশ যদি এমন স্থানে থাকত, আমরা কি অখুশী হতাম? অন্তত জাতীয়তাবাদিরা কখনোই অখুশী হতো না, এটা নিশ্চিত করে বলা যায়।
মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ, শফিক ভাই।
এঙ্গেলটি ব্যাখ্যা করবেন দয়া করে?
সৌদি আরব বলতে কাকে বোঝাচ্ছেন? সউদ শাসকদের না সৌদির জনগনকে? আর সৌদিয়ারব ধর্মকে টিকিয়ে রাখতে জঙ্গি অর্থায়ন করে, তাই বা কোথায় পেলেন? কেন আপনার এমনটা মনে হল?
সৌদি সরকার মুসলিম বিশ্বে উদারহস্তে মৌলবাদী ফান্ড যোগান দেয় তার মসনদ টিকিয়ে রাখতে, ওহাবি কাল্টের বিস্তার ঘটাতে।
জঙ্গিপনার সাথে ধর্মের কোন সম্পর্ক নেই, সম্পর্ক আছে ক্ষমতার। মুসলিম জমানার ১৪০০ বছরের ইতিহাস রক্তাক্ত হয়েছে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে। আর এই লেখা জুড়ে মনে হয়, সেই ইঙ্গিতই দেয়া হয়েছে। আর এটা মনে করার কারন নেই যে, শুধু মুসলিমদের ইতিহাসেই জঙ্গিপনা রয়েছে। অন্য অনেক ধর্মের ইতিহাসও কমবেশি রক্তে রঞ্চিত, আর কারণটাও ক্ষমতার সাথে যুক্ত।
আপনিও ভাল থাকবেন।
@কাজি মামুন,
আপনার লেখাতেই যেমনটা বললেন গাদ্দাফি তার ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে আমেরিকাকে ২.৫০ বিলিয়ন ডলার এবং ব্রিটেনকে ১.৫০ বিলিয়ন ডলার ঘুষ দিয়েছিলেন। ভাই আমারে একটু বুঝিয়ে বলবেন, সৌদিয়ারব কি ভাবে জঙ্গি দের অর্থায়ন দিয়ে ক্ষমতার দ্বন্দ্বে লিপ্ত হচ্ছে? তারা কি তাদের দেশের ভিতরে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য জঙ্গিদের অর্থায়ন দেয়, নাকি ………?
ভাল থাকবেন।
@(নির্জলা নির্লজ্জ),
ভাই, কিছু মনে করবেন না, আপনার ভাষা কেমন যেন চেনা চেনা লাগছে, বিশেষ করে, আপনার ‘ভাই আমারে একটু বুঝিয়ে বলবেন’ এই বাক্যাংশটুকু। আসুন, মন খুলে, আবরণ খুলে, প্রাণ খুলে কথা বলি।
আমার প্রশ্নটি ছিল সৌদিয়ারব ধর্মকে টিকিয়ে রাখতে জঙ্গি অর্থায়ন করে, এটা আপনি কোথায় পেলেন। আর আপনি উত্তরে বললেন, গাদ্দাফি পশ্চিমা সরকারগুলোকে ঘুষ দিয়েছিল, তাতেই আপনার এমনটা মনে হল। ভাই, আমি কিছুটা বিস্মিত। আমি কি কোথাও বলেছি, গাদ্দাফি ধর্মকে টিকিয়ে রাখতে ঘুষ দিয়েছিল? গাদ্দাফি ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে ঘুষ দিয়েছিল, ঠিক একইভাবে, ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে সৌদিয়ারবও জঙ্গি অর্থায়ন করে, তা আমার মন্তব্যতেই ছিল, একেবারে বোল্ড করা, তবু আপনার চোখ এড়িয়ে গেল?
ভাল প্রশ্ন করেছেন। নিজ দেশের ক্ষমতা টিকিয়ে রাখতে সত্যি তো বিদেশে জঙ্গি ফান্ডিং প্রয়োজন নেই। কিন্তু সৌদি কিন্তু আর দশটা দেশ থেকে পৃথক। সৌদি দুনিয়াব্যাপি মুসলিমদের কাছে দুনিয়ার সবচেয়ে পবিত্র ভূমি, সৌদি বাদশাহ প্রধান দুটি মসজিদের নিয়ন্ত্রক; ইসলামের জন্মভূমি হওয়ার সুবাদে সৌদির একটা স্থানিক সুবিধা রয়েছে মুসলিম বিশ্বের মোড়লের। সৌদির ক্ষমতার সাথে সাথে মুসলিম বিশ্বের মোড়লের ক্ষমতা অটুট রাখাও সৌদি রেজিমের লক্ষ্য, যে কারণে তারা দুনিয়াব্যাপি জঙ্গি ফান্ডিং করে যাচ্ছে, আর মুসলিম দুনিয়ায় যাতে সৌদি রেজিমের সমালোচনাকে ইসলামের সমালোচনা এবং ইসলামের উপর আঘাত হিসাবে দেখা হয়, তাও নিশ্চিত করে সৌদি ফান্ডেড অর্গানাইজেশনগুলো দুনিয়াব্যাপি।
একটা উদাহরণ দিচ্ছি। সৌদিতে মহানবী (সাঃ) এর ১৪০০ বছরের পুরনো বাড়ি, যেখানে উনি আল্লাহ্র নির্দেশনামা পেতেন বলে দুনিয়াব্যাপি মুসলিমগন বিশ্বাস করেন, সৌদি রেজিম তা ধ্বংস করে সেখানে হোটেল টাওয়ার এবং এপার্টমেন্ট টাওয়ার বানাচ্ছে। বাংলাদেশসহ অন্য কোন দেশের মুসলিমদের এ নিয়ে উচ্চবাচ্য করতে দেখেছেন? সৌদি ফান্ডের যাদু এবার বুঝতে পারছেন তো? সৌদি রেজিম যাই করবে, সৌদি ফান্ডেড অর্গানাইজেশনগুলো মুসলিম দুনিয়ার তার সম্মতি নিশ্চিত করবে। সৌদি রেজিম টিকিয়ে রাখতে হলে শুধু সৌদির জনগনকে মুঠোবন্দী করলেই হয় না, সঙ্গে মুসলিম দুনিয়াকেও কব্জা করার প্রয়োজন হয়।
@কাজি মামুন,
আমার উপরের মন্তব্য করার উদ্দেশ্য ছিল, গাদ্দাফি পশ্চিমা সরকারগুলোকে ঘুষ দিয়েছিল তার ক্ষমতা ঠিক রাখার জন্য, তাহলে সৌদি সরকার পশ্চিমা সরকারগুলোকে ঘুষ দিলেই পারত, তাই না।(কেন আপনার এমনটা মনে হল?) তবে ভাই আমার উদ্ধৃতি টুকু কপি করতে ভুল হয়ে গেছে। আমি তার জন্য দুঃখিত। তবে আপানার
এই প্রশ্নের উত্তর টুকু দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ।
ভাই কি রকম চেনা চেনা লাগছে? যদি একটু বুঝিয়ে বলতেন।
ভাল থাকবেন।
ভাই আপনার লেখাটা , আমাকে অনেক ভাবিয়ে তুলেছে। আমি আর আমার বন্ধু আপনার মতই চিন্তা করতাম, তবে ভিন্ন এঙ্গেলে। জানি না আমাদের চিন্তাটা কত খানি সঠিক? সৌদিয়ারব জঙ্গি অর্থায়ন করছে ধর্মকে টিকিয়ে রাখার জন্য যাতে মানুষ প্রতি বছর হজ্জ করতে তাদের দেশে যায় যাতে সৌদিয়ারব অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হয়। আপানার কি মতামত?
ভাল থাকবেন।
@(নির্জলা নির্লজ্জ),আসলে তেল তো সারাজীবন থাকবে না,তাই মনে হয় এই হজ ব্যবসা।আরবের আর কি আছে শুধু তেল ছাড়া। আর তেল বেচা টাকাও তো অস্ত্র আর মেয়েমানুষ কিনে শেষ করছে।
যাক ভাই একটা ব্যক্তিগত প্রশ্ন করি কিছু মনে করবেন না।আপনার নিকটা এমন অদ্ভুত কেন? আমি কনফিউজড!
লেখাটা পড়ে একটা দৃশ্যপট মনে এলো। এ যেনো এক মধ্যযুগীয় সাম্রাজ্যবাদী যোদ্ধা আর অধুনা গ্লোবাল অর্থনৈতিক সাম্রায্যবাদের মোড়ল ধূর্তবেনিয়ার পরষ্পরকে দেখে নেয়ার বাতাবরনে পারষ্পরিক স্বার্থের সফল বিনিময়!
@কেশব অধিকারী,
ওয়াও! দারূন বলেছেন, কেশবদা। লেখাটার এক বাক্যের সারমর্ম বলা যেতে পারে আপনার লাইনটিকে। অসাধারণ এই মন্তব্যটির জন্য আপনাকে অনেক অনেক (F)
ভাল থাকবেন।
হুম, পড়লাম আর চা-মুড়ি নিয়ে আপাতত গ্যালারিতে-
@আকাশ মালিক ভাই,
অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য। ভাল থাকবেন।
@কাজি মামুন,
প্রশ্ন গুলো খুবই কমন পুরাতন। বন্ধু মহলে বৈঠকে আড্ডায় প্রায়ই তোলা হয়, উত্তরও হয় এ রকম-
জেহাদ অর্থ যদি সন্ত্রাস হয় সেই অর্থে অন্যান্য সকল ধর্মে থাকলেও ইসলামের ধর্মগ্রন্থে এমন কোন ভার্স বা নির্দেশ নেই। ইসলামে জেহাদ মা’নে আত্মরক্ষা বা সেলফ ডিফেন্স।
না।
আমেরিকা বিশ্ব রাজনীতির দৃশ্যপটে আসার আগ পর্যন্ত মৌলবাদ জঙ্গিবাদ বলতে কোন শব্দই ছিলনা। বিশ্বের সর্বত্র ছিল সকল ধর্মের শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান।
আমার প্রশ্নটা হলো, দুনিয়ায় এতো জাতি এতো ধর্ম থাকতে মুসলমান, শুধু মুসলমান আমেরিকার পোন হিসেবে ব্যবহার হবে কেন? বরং তেলের জোরে মুসলমানদেরই আমেরিকার উপর ছড়ি ঘুরানোর কথা। এই যে বললেন-
ব্রেইনওয়াশড হলো কবে, কী ভাবে? কোথায় এর উৎস? ডাকাত তার সাহায্যকারী একটি লোক খুঁজবে যে আগে থেকেই চোর, এটাই তো স্বাভাবিক। আমেরিকার মাতুব্বরির মুখের উপর আমাদের মন্ত্রী বলে দিয়েছেন- জামাতের সাথে কিসের আলোচনা? তো আমাদের কী ছিড়াটা গেল? মাতুব্বরির সুযোগ দেই বলেই তো একজন মাতুব্বরি করে। ছোট্ট এই বাংলাদেশে মৌলবাদ জঙ্গিবাদ নিশ্চিন্ন করতে আমেরিকার সাহায্য লাগে, না কি আমেরিকা বাঁধা দেয়? আমেরিকা জানে শত ধারায় বিভক্ত মুসলমানদের দূর্বলতা কোথায়। মুসলমানদেরকেই বেছে নিতে হবে তারা কোন যুগে বাস করতে চায়।
চমৎকার প্রবন্ধ, মামুন।
আমেরিকার সাথে সৌদীদের মিত্রতার সম্পর্ক বহুদিনের। দুই অপশক্তি মুখে যতই নিজেদের বিরোধী বলে জাহির করুক না কেন,আড়ালে দু’জনই দুজনের পিঠ চাপড়িয়ে চলতে অভ্যস্ত। ইসলামে যেমন রক্ষণশীলতা আছে, আছে বিধর্মীদের প্রতি বিতৃষ্ণা, ঠিক তেমনি আমেরিকার বহু পলিসিও একটা সময় মৌলবাদিতার বিস্তারে সহায়তা করেছে, এটাও সত্য। যেমন – ইন্দোনেশিয়ায় সুকর্নের বিরুদ্ধে সারেকাত-ই ইসলামকে সমর্থন দান, পাকিস্থানে ভুটটোর বিরুদ্ধে জামাতে ইসলামীকে সমর্থন দান, বাংলাদেশে শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে ক্যু তে ধর্মান্ধ খন্দকার মোস্তাককে সমর্থন দান, মৌলবাদী জিয়াউল হককে সমর্থন দিয়ে পাকিস্তানকে র্যাডিকাল ইসলামী দেশে পরিণত করা, আফগানিস্থানে নজিবুল্লার বিরুদ্ধে বিন লাদেন আর আল কায়েদাকে লেলিয়ে দেওয়া সহ বহু কিছুর কথাই বলা যায়। মাইকেল মুর তার চলচিত্রে বুশ লাদেনের পরিবারের সাথে একটা ব্যবসায়িক সম্পর্ক থাকার ব্যাপারটা তুলে এনেছিলেন, এমনকি ৯/১১ এর ঘটনা ঘটার পর পরই, একতা সিক্রেট বিমানে করে সৌদী রয়াল ফ্যামিলি এবং লাদের অনুচরদের নাকি আমেরিকা থেকে সৌদী আরবে পৌঁছিয়ে দেবার ব্যবস্থা করা হয়েছিল।
যাক প্রবন্ধটির জন্য ধন্যবাদ।
@অভিজিৎদা,
আপনার মন্তব্যে প্রচণ্ড উৎসাহ বোধ করছি।
এক বর্ণ মিথ্যে নেই। Zbigniew Brzezinski এর কেসটি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় আমেরিকা আর মৌলবাদীদের মাখামাখির ব্যাপারটা। আমেরিকার জন্মলগ্ন থেকেই রিলিজন স্টেট থেকে পৃথক। তবু আমেরিকা বিভিন্ন মুসলিম দেশে ধর্মান্ধ মৌলবাদী গোষ্ঠীর সাথে পিরীতির সম্পর্ক স্থাপন করেছিল, তার আসল কারণ হল, তখনকার ‘Global War on Communism’ -এ মুসলিম জঙ্গিদের খুব সহজেই রিক্রট করা যেত নাস্তিক কমিউনিস্ট সোভিয়েতের বিরুদ্ধে। শুধু সোভিয়েত নয়, জাতীয়তাবাদী মুসলিম রাষ্টনায়ক, যারা আমেরিকার নিয়ন্ত্রণমুক্ত হয়ে স্বাধীন জাতিসত্তা ও পরিকাঠামো গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন, তাদের উৎখাত করতেও হাতে পাওয়া যায় অসংখ্য মৌলবাদী, মুড়ি-মুড়কির মতই সহজলভ্য ছিল তারা আমেরিকার কাছে।
আজ অনেকেই মুসলিম বিশ্বের সমস্যার জন্য আমেরিকার দিকে একক অঙ্গুলি হেলন করেন। কিন্তু তারেক ফাতাহ মনে করেন, আমেরিকা নয়, মুসলিম বিশ্বের দুর্দশা ঘোচাতে পরিবর্তিত হতে হবে সৌদি পলিসি। সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই, কিন্তু সৌদি যদি মুসলিম বিশ্বে মৌলবাদী ফান্ড সরবারহ বন্ধ করে, তাহলে মুসলিম বিশ্ব স্কোপ পাবে জ্ঞান-বিজ্ঞানের দিকে তার মনোযোগ ঘোরাতে, এক সময় সে হয়ে উঠবে সাম্রাজ্যবাদ আমেরিকাকে মোকাবেলায় স্বাবলম্বী, আত্মবিশ্বাসী ও শক্তিশালী।
উৎসাহদানের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ, অভিজিৎদা।
@অভিজিৎদা,
আপনার মন্তব্যে প্রচণ্ড উৎসাহ বোধ করছি।
এক বর্ণ মিথ্যে নেই। Zbigniew Brzezinski এর কেসটি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় আমেরিকা আর মৌলবাদীদের মাখামাখির ব্যাপারটা। আমেরিকার জন্মলগ্ন থেকেই রিলিজন স্টেট থেকে পৃথক। তবু আমেরিকা বিভিন্ন মুসলিম দেশে ধর্মান্ধ মৌলবাদী গোষ্ঠীর সাথে পিরীতির সম্পর্ক স্থাপন করেছিল, তার আসল কারণ হল, তখনকার ‘Global War on Communism’ -এ মুসলিম জঙ্গিদের খুব সহজেই রিক্রট করা যেত নাস্তিক কমিউনিস্ট সোভিয়েতের বিরুদ্ধে। শুধু সোভিয়েত নয়, জাতীয়তাবাদী মুসলিম রাষ্টনায়ক, যারা আমেরিকার নিয়ন্ত্রণমুক্ত হয়ে স্বাধীন জাতিসত্তা ও পরিকাঠামো গড়ে তুলতে চেয়েছিলেন, তাদের উৎখাত করতেও হাতে পাওয়া যায় অসংখ্য মৌলবাদী, মুড়ি-মুড়কির মতই সহজলভ্য ছিল তারা আমেরিকার কাছে।
আজ অনেকেই মুসলিম বিশ্বের সমস্যার জন্য আমেরিকার দিকে একক অঙ্গুলি হেলন করেন। কিন্তু তারেক ফাতাহ মনে করেন, আমেরিকা নয়, মুসলিম বিশ্বের দুর্দশা ঘোচাতে পরিবর্তিত হতে হবে সৌদি পলিসি। সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকা আমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই, কিন্তু সৌদি যদি মুসলিম বিশ্বে মৌলবাদী ফান্ড সরবারহ বন্ধ করে, তাহলে মুসলিম বিশ্ব স্কোপ পাবে জ্ঞান-বিজ্ঞানের দিকে তার মনোযোগ ঘোরাতে, এক সময় সে হয়ে উঠবে সাম্রাজ্যবাদ আমেরিকাকে মোকাবেলায় স্বাবলম্বী, আত্মবিশ্বাসী ও শক্তিশালী।
উৎসাহদানের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ, অভিজিৎদা।