পরিকল্পনাধীন পদ্মা সেতুর দূর্নীতি নিয়ে নানান বিচিত্র নাটক চলছে, এর জের মনে হয় দীর্ঘদিন চলবে। দূর্নীতি/পাল্টা দুর্নীতি আসলেই হয়েছে নাকি হয়নি আমার বিষয় সেটা নয়, কারন সেটা আলোচনা করার মত প্রামান্য কিছু আমার কাছে নেই। অন্য কোন দেশ হলে হয়ত দূর্নীতি নিয়েই আলোচনা করা যেত, আমাদের সেই সৌভাগ্যও কপালে নেই। দূর্ণীতি সমস্যায় চরমভাবে জর্জরিত দেশের সরকার কতটা সফল ভাবে এই ইস্যু সামলাচ্ছে? দেশ এ নিয়ে এক সংকটের ভেতর আছে, দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়াই উচিত। দূঃখজনক ভাবে এই লেখা পড়ে আমার নিজেরই নিজেকে পশ্চীমা বিশ্ব/বিশ্বব্যাংকের দালাল তাবেদার মনে হচ্ছে। যে সরকার বিডিআর বিদ্রোহের মত বিপদজনক পরিস্থিতি ঝানু রাজনৈতিক সরকারের মত ঠান্ডা মাথায় নিয়ন্ত্রনে এনেছিল সেই একই সরকারের পদ্মা সেতুর দূর্নীতি ইস্যুতে পারফর্ম্যান্স আমার কাছে চরম হতাশাজনক এবং অপমানকর। মন্ত্রীদের দায়িত্বজ্ঞানহীন অসংলগ্ন কথাবার্তা, সমন্বয়ের চরম অভাব, সর্বোপরি সরকার প্রধানের কথাবার্তা শুনলে মোটেও মনে হয় না যে উনি দলীয় কর্মী সভায় গরম গরম বক্তব্য দেওয়া এবং স্বাধীনতা পরবর্তি দেশের উন্নয়নের সবচেয়ে বড় সহযোগি আন্তর্জাতিক অর্থলগ্নি সংস্থা যাদের থেকে তিনি ঋণ প্রত্যাশী তাদের উদ্দেশ্যে কথা বলায় কোন তফাত দেখেন বলে। সরকারের এমন অপরিপক্ক, অসংলগ্ন, ও দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরন অনেকদিন দেখিনি। এতসব গুনাবলীর ফলাফল কেমন হবে তা বুঝতে তেমন কষ্ট হয় না।
সরকারের মন্ত্রী বাহাদুররা একদিকে বলে চলেন যে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নের দরকার নেই, মালয়েশিয়ার উচ্চ সূদের অর্থায়ন (যদিও তাদের দাবী মালয়েশিয়ার অর্থায়নে খরচ কম হবে), এমনকি দরকার হলে নিজেদের টাকাতেই পদ্মা সেতু করে অনন্য নজির তারা দেখিয়ে দেবেন, বিশ্বব্যাংককে তারা নানান ভাষায় গালাগাল করে চলেছেন আবার তারাই বিশ্বব্যাংকের পূণঃবিবেচনার অপেক্ষায় চাতক পাখির মত অপেক্ষা করে আছেন, প্রকাশ্যে এবং তলে তলে নানান আবেদন নিবেদন জানিয়ে যাচ্ছেন। সংসদীয় উপনেত্রী তো এক বেলা বাজার খরচ বাঁচিয়েই পদ্মা সেতু করে ফেলবেন ঘোষনা দিয়েছেন। কারন ’৭১ সাল থেকেই বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকা মার্কিন ছায়ার বিশ্বব্যাংকের সব শয়তানি তিনি বুঝে ফেলেছেন, তার সাথে অবশ্য আরো বহু জ্ঞানী গুনী জনেই একমত। মার্কিন ষড়যন্ত্র ধরা পড়লে আর কি উপায় আছে, জাতীয় ঐক্য গঠনেও মার্কিন ষড়যন্ত্র খুবই দরকার। মালয়েশিয়ার অর্থায়ন আর্থিকভাবে লাভজনক বলে যোগাযোগমন্ত্রী সারপ্রাইজ দিতে চাইলেও অর্থমন্ত্রী আবার তাদের শর্ত স্বচ্ছ নয় বলেন। সোজা কথায় সরকারের অবস্থা পুরোই ত্রিভংগ, নেই কোন কথার ঠিক, নীতিমালা, একজনের সাথে আরেক জনের কথার সামঞ্জস্য।
বিশ্ব ব্যাংককে সন্তুষ্ট করার আশায় অবশেষে একটি উদ্ভুত পরিস্থিতিকে জটিলতার চরমে নিয়ে প্রাক্তন যোগাযোগ মন্ত্রী মূলত যাকে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাংকের অভিযোগ প্রথম থেকেই ছিল তাকে অতি সম্প্রতি মন্ত্রী সভা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে বাক্যবাগীশ অর্থমন্ত্রীর সরল মন্তব্য হল বিশ্বব্যাংকের শর্ত পূরণে ‘আবুল ইজ ডাউন’। এসব ভাঁড়ামির মানে কি? সরকার কেন এক মুখে সম্পূর্ন ভিন্ন ভিন্ন কথা বলছে? একদিকে বিশ্বব্যাংকের ‘অপমানকার’ শর্তে অর্থ তাদের দরকার নেই, তারাই বিরাট দূর্নীতিবাজ, বিশ্বব্যাংকের বিচারও দাবী করেন, আরো লাভজনক বিকল্প অর্থায়নের ব্যাবস্থা করে তারা সারপ্রাইজ দেবেন দাবী করেন, আবার অন্যদিকে সেই দূর্নীতিবাজ বিশ্বব্যাংককেই খুশী করতে ‘অপমানকার’ যে শর্ত এক বছর আগেই মেনে নিলে পানি হয়ত এতদুর গড়াতো না তা সুড় সুড় করে মেনে পূণঃবিবেচনায় আশায় বুক বাঁধার মানেটা কি? সরকারের নীতিটা কি তা কি তারা নিজেরাই আদৌ জানে? যেই আবুল মন্ত্রীকে মূলত কেন্দ্র করে এত ঘটনা তাকে যখন ‘ডাউন’ করানোই হল সেটা সময় থাকতে অপেক্ষাকৃত সম্মানজনক উপায়ে কেন করানো হল না? বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশকে অপমান করেছে বলে যে জনগনকে সরকার সফল ভাবে উত্তপ্ত করছে সেই অপমানের দায় আসলেই কার কতটা?
প্রধানমন্ত্রী্ অবশ্য এদিক থেকে অনেক উন্নত, উনি অন্তত এক একদিন এক এক অবস্থান নিচ্ছেন না। উনি দূর্নীতির কথিত অভিযোগ কোন ভাবেই সত্য হতে পারে না তা প্রথম থেকেই বুঝে ফেলে মাঠ পর্যায়ের দলীয় সভায় যেভাবে কথা বলা হয় সে সুরে চেঁচাচ্ছেন। ওনার কথাবার্তাতে মনে হওয়া খুবই স্বাভাবিক যে বাংলাদেশে দূর্নীতি হতেই পারে না (সম্ভবত ওনার কথা এমন যে দূর্নীতি যা করে তা বিরোধী দলে করে, ওনার সরকারের কেউ করতে পারে না)। ওনার আমলে দূর্নীতির অভিযোগ আনাও রীতিমত ব্লাসফেমি অপরাধ। জানা কথা যে আমাদের দেশে তদন্ত পরিচালিত হয় সরকারের গ্রীন সিগন্যালের ভিত্তিতে, সরকার যেভাবে চায় সেভাবে। সরকারী কোন তদন্ত সংস্থার ঘাড়ে কটা মাথা আছে যে প্রধানমন্ত্রী যা গলা ফাটিয়ে চেঁচিয়ে বেড়াচ্ছেন তার বিরুদ্ধে রিপোর্ট দেয়? সরকারের কোন মন্ত্রী তো দূরে থাক, গত জোট সরকারের দূর্নীতিতে জড়িত যাদের নামে সিরিজ কাহিনী বের হত তাদের বিরুদ্ধেই বা দূদকের সাফল্যের রেকর্ড কেমন? একটি চরম দূর্নীতি পরায়ন দেশের সরকার প্রধান হিসেবে এমন অবস্থান নেওয়া কি তার উচিত হয়েছিল? তিনি কি পারতেন না প্রথম থেকেই কোন পক্ষাবলম্বন ছাড়া সুষ্ঠু তদন্ত করার অন্তত মৌখিক আশ্বাসটুকু দেবার? সেটা না করে প্রথম থেকেই সুদৃঢ়ভাবে অভিযুক্ত পক্ষ সমর্থনের মানে কি হতে পারে? শুধু তাই নয়, উনি এমনকি স্কুল বালিকার মত গাল ফুলিয়ে দূর্নীতি প্রমান না হলে বিশ্বব্যাংকের টাকাই নেবেন না এমন ঘোষনাও চটজলদি দিয়েছিলেন (ওনার অর্থমন্ত্রী/যোগাযোগমন্ত্রী কেন ওনার নির্দেশনা আমলে নিচ্ছেন না তা ওনারাই ভাল বলতে পারেন)। উনি এক কথার মানুষ এটা প্রমানে মালয়েশিয়া থেকে বিকল্প অর্থায়নে সমঝোতা স্মারকও সই করে ফেলেছিলেন (যা দূষ্ট লোকদের মতে বিশ্বব্যাংকের তূলনায় অনেক বেশী সূদে)। ওনার এসব পদক্ষেপে বিশ্বব্যাংক, এমনকি নিরপেক্ষ কোন পর্যবেক্ষকও কি ধরে নিতে পারে? দূর্ণীতির অভিযোগ তিনি বিশ্বাস তো করেনই না, এমনকি বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নেরও কোন প্রয়োযন তার সরকারের নেই এই মেসেজ কি উনি ষ্পষ্টভাবে দেননি? বিশ্বব্যাংক ঋণচুক্তি বাতিল করলে তাতে তো তার সরকারের কোনই সমস্যা হবার কথা নয়, উনি তো নিজেই ঘোষনা করেছিলেন যে বিশ্বব্যাংকের টাকা তিনি নেবেন না।
ভাবলে নিজেদের চরম দূর্ভাগাই লাগে যে কোন স্বৈরাচার নয়, গনতান্ত্রিক ভাবে ফেয়ার ইলেকশনের মাধ্যমেই আমরা এসব নেতা নেত্রীদের ক্ষমতায় বসাই। মন্ত্রী সভা থেকে আবুলের চুড়ান্ত পদত্যাগ প্রসংগে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যে এটা পরিষ্কার যে পদ্মা সেতুর দূর্নীতির অভিযোগে বিশ্বব্যাংকের শর্ত মানার অংশ হিসেবেই আবুলকে ‘ডাউন’ করানো হয়েছে, অর্থাৎ আবুলের পদত্যাগ নৈতিকতার দায়ে স্বেচ্ছায় স্বাভাবিক পদত্যাগ নয়, আসলে পদচ্যূতি। এরপর কারো মনে ন্যুনতম সন্দেহ থাকার কথা কেন এবং কিভাবে আবুল ‘পদত্যাগ’ করেছেন? অথচ আমাদের প্রধানমন্ত্রী পদচ্যূত আবুল হোসেনকে ‘দেশপ্রেমিক’ সার্টিফিকেট দিয়ে ধারনা দেবার চেষ্টা করেছেন যে উনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে আমাদের বাধিত করেছেন। এটা তো প্রতারনার সামিল। এমনকি বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে পালটা দূর্নীতির অভিযোগ প্রমানে সাংবাদিকদের আহবান জানিয়ে বসেছেন। প্রধানমন্ত্রী কি দেশ বিদেশের আপামর সব লোককেই ভেড়া মনে করেন? সামনের বার হয়ত আবুল মন্ত্রীকে দেশপ্রেমের কারনে একুশে পদকও দেওয়া হতে পারে। বিশিষ্ট কলামিষ্ট গাফফার চৌধূরী অবশ্য যথারীতি নেত্রীর বক্তব্য সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন। উদাহরনসহ প্রমান করে দিয়েছেন যে দূর্নীতিবাজ হলেও দেশপ্রেমিক হওয়া যায়। উনি ষড়যন্ত্র তত্ত্ব রচনায় ঘাগু লোক, সহজ সরল বংগবন্ধু কন্যাকে বিপাকে ফেলার জন্য অর্থমন্ত্রী মুহিতের সন্দেহজনক গতিবিধি খুব সতর্ক ভাবে পর্যবেক্ষন করছেন, আবুলের মত নিরীহ দেশপ্রেমিককে সরানো উনি মোটেও সহজভাবে নেননি, সহসাই ষড়যন্ত্রের বিস্তারিত আমাদের জানাবেন আশা করা যায়।
সরকারের ডিগবাজি নীতি এমনকি দলের ভেতরেও সমালোচিত হচ্ছে এমন আলামতও আছে। সংসদীয় দলের সভায় এমনকি বর্তমান যোগাযোগ মন্ত্রী নাকি অভিযোগ করেছেন যে অর্থমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের ব্যাপারে কি হচ্ছে তাকে জানাচ্ছেন না। এই সভায় পদ্মা সেতুর বিষয় আলোচিত হয়েছে এটা কেউ কেউ অস্বীকার করলেও অন্তত দলীয় সাংসদদের ক্ষোভ কিন্তু প্রকাশ পেয়েছে সেটা পরিষ্কার। । সোজা কথায় সরকারের অদক্ষতা, সমন্বয়হীনতা, দ্বি-চারিতা, কানজ্ঞানহীন আচরন নিয়ে বিতর্কের তেমন অবকাশ নেই। ষড়যন্ত্র হয়ে থাকলেও সেটা সঠিক ও কূটনৈতিকভাবে ভাবে মোকাবেলা করা দক্ষ ও যোগ্য সরকারেরই দায়িত্ব, কেবল ষড়যন্ত্র ষড়যন্ত্র চেঁচিয়ে মাঠ ঘাট কাঁপিয়ে ষড়যন্ত্র নস্যাত করা যায় না।
১২ বছর আগে সারা দেশের মিডিয়া ততকালীন সরকার দলীয় ভিআইপি সন্ত্রাসের সমালোচনায় মুখর, এমনকি হাসিনাকন্ঠ বলে প্রচলিত জনকণ্ঠও এতে ছিল। প্রধানমন্ত্রী হাসিনা সেদিনও প্রকাশ্যে তার দলীয় ভিআইপি সন্ত্রাসীদের পক্ষালম্বন করেছিলেন। সাংবাদিকদের তিরষ্কার করেছিলেন তার অতি স্নেহভাজন জয়নাল হাজারির সন্ত্রাস নিয়ে সিরিজ রচনায়, জয়নাল হাজারির মত উচ্চ মানের নেতা আর কয়েকজন তার আশেপাশে নেই বলে আক্ষেপও করেছিলেন। সেসবের ফল কি হয়েছিল তা পাঁড় আওয়ামী সমর্থকরা মানতে না চাইলেও সকলেই দেখেছি। বহু ঘাটের ঘোলা জল খেয়ে জয়নাল হাজারিকে দল থেকে বের করতেই হয়েছে (অবশ্য সম্প্রতি তিনি প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত করেছেন দলে ফেরার প্রক্রিয়া হিসেবে)। আবুলের ব্যাপারেও তার সার্টিফিকেটে কতটা আস্থা রাখা যায় এ প্রশ্ন যুক্তিসংগত ভাবেই মনে আসা স্বাভাবিক। দলের নেতা পাতি নেতাদের পৃষ্ঠ রক্ষার জন্য তিনি কতটা যেতে পারেন তার প্রমান তিনি নিজেই অতীতে রেখেছেন। সামনের বার নির্বাচনে হারলেও নিঃসন্দেহে উনি এবং ওনাদের ভক্তকূল ‘নিঃসন্দেহে আমরা তো আগেই জানতাম…আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রে মাথা নোয়াইনি বলেই…’ গোছের বানী দেবেন এটাও পরিষ্কার।
আবুল মন্ত্রী কোন অজানা কারনে ব্যাক্তিগতভাবে ওনার প্রিয়পাত্র হতে পারেন, তাই বলে তার জন্য দেশের ভাগ্য, মান অপমানের প্রশ্নে এমন ছেলেমানুষি খেলা খেলতে হবে? একই বিশ্বব্যাংকের অর্থের প্রয়োযন নেই বলে প্রকাশ্যে বুক ফুলিয়ে দৃপ্ত ঘোষনা, ষড়যন্ত্র/দুর্নীতির নীল নকশা আবিষ্কার করা, এমনকি বিচার দাবী করে যাওয়া এবং একই সাথে অর্থায়নের আশায় তাদের পেছনেই অব্যাহত গতিতে দৌড়ঝাপ বেশ বিরল উদাহরন সৃষ্টি করেছে। বিদেশী সংস্থার বিরুদ্ধে গলা উচিয়ে কিছু গরম গরম কথা বললে কিছু লোকে দেশপ্রেমের টানে কিছু সময় হয়ত ব্যাপক বাহবা দিচ্ছে, সেই বাহবা ছাড়া কাজ তেমন কিছু কি হচ্ছে? নিজেদের সাধু দাবী করে অন্যকে চোর/দূর্নীতিবাজ আখ্যায়িত করে আবার তার কাছেই অর্থায়নের জন্য কান্নাকাট্টি করার মাঝে কতটা মান সম্মান আছে? নাকি প্রধানমন্ত্রী আসলেই জানেন না তার অর্থমন্ত্রী/যোগাযোগমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের পেছনে কতটা দৌড়ঝাপ করছেন ‘আবুল ইজ ডাউন’ ঘোষনা দিয়ে?
সরকারের কথা বাদই থাক। আমাকে যা আরো বিস্মিত এবং চরম হতাশ করেছে তা হল এ ব্যাপারে আম জনতার প্রতিক্রিয়া। উদারমনা, জ্ঞানী গুনী লোকেরাও যখন সরকারের অদক্ষতার কোন সমালোচনায় না গিয়ে সরকারের সাথে সুর মিলিয়ে নানান ষড়যন্ত্রের কল্প জালে বিভোর হয়ে উলটো সরকারকে আরো উষ্কান তাতে হতাশ হতেই হয়। এই দলের মূল আলোচনায় বিস্ময়কর ভাবে দায়িত্বশীল নাগরিকের প্রথমেই যা দাবী করা উচিত ছিল, অর্থাৎ কথিত দূর্নীতির ব্যাপারে নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ তদন্ত সেই দাবী মোটামুটিভাবে মোটা দাগে অনুপস্থিত, সরকারের উদ্ভট স্ববিরোধী অবস্থানের ব্যাপারেও প্রশ্ন অনুপস্থিত। এই দলের মূল বক্তব্য সরকার প্রধানের মতই, বিশ্বব্যাংক এবং নাটের গুরু আমেরিকা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ভয়াবহ ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, ডঃ ইউনুস সাহেবও ষড়যন্ত্রে আছেন।
দূর্ণীতির অভিযোগ আমাদের মত দেশের তো বটেই, এমনকি পশ্চীমা দেশেরও বহু গুরুত্বপূর্ন লোকের বিরুদ্ধেই নিত্য ওঠে যাদের অনেকেই আবুল মন্ত্রীর তুলনায় অনেক বেশী মান মর্যাদা সম্পন্ন। ব্যাক্তি বিশেষের নামে অভিযোগ উঠলেই তাতে সব গেল রে, দেশকে অপমান করা হয়েছে এমন রণহুংকার তোলার মানে কি? বিশ্বব্যাংক তুলেছে বলে? বিশ্বব্যাংক কি আর কোন দেশের আর কোন প্রকল্প নিয়ে এমন অভিযোগ অতীতে তোলেনি, শুধু আওয়ামী সরকার বা বাংলাদেশের পেছনেই লেগেছে? সেসব দেশের লোকের মান মর্যাদা কি আমাদের থেকে কম? বিশ্বব্যাংক আমেরিকার নয়নের মনি প্রতিবেশী ভারতের বিরুদ্ধে একাধিকবার নানান ক্ষেত্রে দূর্নীতির সুনির্দিষ্টও নয় ঢালাও অভিযোগ করে আসছে। এমনকি ২০০৮ সালে সুনির্দিষ্টভাবে ৫টি প্রজেক্টে দূর্নীতির ব্যাপারে একইভাবেই ভারত সরকারের কাছে অভিযোগ করেছে, ভারত সরকার দায়িত্বজ্ঞানের পরিচয় দিয়ে অভিযোগ গুরুত্বের সাথে আমলে নিয়েছে, বিশ্বব্যাংকের সহায়তাতেই দূর্নীতি দূরীকরনে ব্যাপক সংস্কারে মনোযোগী হয়েছে। এই মে মাসেও ভারতের সড়ক নির্মানে পুকুর চুরির অভিযোগের তথ্য প্রমান তারা দিয়েছে। দেশ জাতির বিরুদ্ধে ভয়াবহ আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র আবিষ্কার করে ভারত সরকার বা তাদের সুশীল সমাজ রে রে করে তেড়ে উঠেছে? দায়িত্বশীল সরকারের প্রতিক্রিয়া কি এমনই হওয়া উচিত নয়? কেবল বিদেশীরা অভিযোগ করেছে বলে নাগরিকদের উগ্র জাতীয়তাবাদ দেখাতে হবে? ভারতে দূর্নীতির আমাদের থেকে কম নাকি বেশী? আমাদের দেশের কয়জন মন্ত্রী এ পর্যন্ত দূর্নীতির দায় নিয়ে পদত্যাগ করেছেন/শাস্তি পেয়েছেন আর তাদের কয়জনে্র তেমন রেকর্ড আছে? আমাদের দেশেও গত জোট সরকারের আমলে তিনটি মহাসড়ক প্রকল্পে দূর্নীতির অভিযোগে তারা বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসা পর্যন্ত যোগাযোগ খাতে বিনিয়োগই বন্ধ রেখেছিল। একই রকমের উদাহরন অন্যান্য দেশেও আছে। বিশ্বব্যাংক সব দেশের বিরুদ্ধেই ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছে? হয়তবা বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বর্তমানে চালিত বিশেষ ষড়যন্ত্রের ডিকয় হিসেবে দীর্ঘদিন ব্যাপী এসব অভিযোগের ভেক ধরেছে, মূল পরিকল্পনায় ডঃ ইউনুস?
বাস্তবতা বলে যে বিশ্বব্যাংক দিন দিনই দূর্নীতিময় প্রকল্পে অর্থায়নের ব্যাপারে কঠোর থেকে কঠোরতর ব্যাবস্থা নিচ্ছে। তবে বাংলাদেশের মত দেশের ক্ষেত্রে যতটা কঠোরতা তারা দেখাতে পারে চীনের মত বৃহত কাষ্টোমারের বিরুদ্ধে সেভাবে পারে না। ’০৭ সালে চীন বিশ্বব্যাংকের তাদের ভাষায় অতি কঠোর দূর্নীতি বিরোধী অবস্থান নমনীয় না করলে আর কোন ঋণ নেবে না হুমকি দেয়। আমাদের সরকার কি দেশকে উন্নতি করতে করতে চীনের কাতারে নিয়ে গেছেন চিন্তা করেন? তারপরেও বিশ্বব্যাংক চীনকেও ছেড়ে দিচ্ছে এমন নয়। ’০৯ সালে ফিলিপাইনে তারা একটি ৩৩ মিলিয়ন ডলারের সড়ক প্রকল্পে চারটি রাষ্ট্রায়ত্ব চীনা কোম্পানীর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। এমন আরো উদাহরন আছে। সোজা কথায় দূর্ণীতির ব্যাপারে তারা বেশ কঠোর ভূমিকাই সাধারন ভাবে নিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাতিক্রম হতে যাবে কেন? আর ব্যাতিক্রম হলে আমাদের লাভ নাকি ক্ষতি?
অনেকে আবার বিশ্বব্যাংক নিজেরা কত বড় দূর্নীতিবাজ, সাম্রাজ্যবাদী আমেরিকার তল্পিবাহক এসব প্রমান করে ব্যাপক বাহবা পাচ্ছেন। কেউবা আবার সংসদীয় উপনেত্রীর কায়দায় ’৭১ সালের মার্কিন সরকারের বাংলাদেশ বিরোধী নীতি পর্যন্ত চলে যাচ্ছেন, মার্কিনী মদদে ’৭৪ এর দূর্ভিক্ষের সাথে পদ্মা সেতু ষড়যন্ত্রের পরিষ্কার মিল দেখছেন, দেশে ’৭৫ এর ট্র্যাজেডি পূণঃ সংঘটনের আলামত বুঝিয়ে তবেই স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলছেন। এতসব বায়বীয় বিষয় আলোচনায় প্রবল আগ্রহ থাকলেও কেবল দূর্নীতি আসলেই হয়েছে কিনা তা স্বচ্ছভাবে তদন্ত করার দাবী, সরকারের ক্ষ্যাপাটে আচরনের ব্যাখ্যা দাবী তোলায় এই দলের পরম অনীহা। যেই আবুল আবুল করে কিছুদিন আগেও ব্লগ জগত কেঁপেছে, দল থেকেই পদত্যাগের জোর দাবী উঠেছিল তিনি আজ শুধু প্রধানমন্ত্রী্র কাছেই নয়, মোটামুটি সুশীল জনতার কাছেও পরোক্ষভাবে হলেও দেশপ্রেমের অনন্য প্রতীক হয়ে উঠেছেন। মজা হল আমেরিকা টেনে যারা ব্যাপক বাহবা পাচ্ছেন তাদের অনেকে নিঃসন্দেহে ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে মার্কিন সরকারের জাষ্টিস ডিপার্টমেন্টের রিপোর্ট তারেক কোকোর দূর্নীতির অকাট্য প্রমান হিসেবে পেশ করে গভীর তৃপ্তি পেয়েছেন। তখন সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন সরকারের ‘৭১ এর নীতি, ‘৭৫ এর ট্র্যাজেডি ঘটানোর চক্রান্ত, কোন বিশেষ দলকে সামনের নির্বাচনে হারাতে ষড়যন্ত্র এসব এনারা চিন্তা করেননি, তবে করেছিল বিএনপি সমর্থকবৃন্দ। আজ মার্কিন সরকার সরাসরি চিত্রে না থাকলেও তাদের ষড়যন্ত্র চলে আসছে। অপছন্দের দলের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসলেই উদ্বাহু নৃত্য আর নিজ দলের কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ আসলে নানান ষড়যন্ত্র তত্ত্ব দাঁড়া করানোর এই মানসিকতা মনে হয় বেশীরভাগ লোকেরই আছে। নাগরিকদের এই রকম মানসিকতা থাকলে কিভাবে আশা করা যায় যে আদৌ কোনদিন আমাদের রাজনৈতিক সংস্কার হবে, দূর্নীতি কমে আসবে?
আমাদের দেশের মানুষে দূর্নীতি, মানবাধিকার লংঘন এসব দেশের ভয়াবহ সমস্যা সেটা দলমত নির্বিশেষে সকলেই জানে ও মানে। তবে বিদেশী কোন সংস্থা (বিশেষ করে পশ্চীমা) এসব নিয়ে কোন রিপোর্ট বা অভিযোগ পেশ করলে আবার অনেকের সেন্টিমেন্টে তীব্র ভাবে আঘাত লাগে, দেশাত্মবোধ জাগ্রত হয়ে ওঠে, এখন যেমন উঠেছে। তখন সেসব দেশ বা প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িতদের দেশ এসব অভিযোগে নিজেরাই কিভাবে দুষ্ট সে হিসেব কষে আমরা মানসিক তৃপ্তি পেতে পছন্দ করি। বিশ্বব্যাংককে বিশ্ববেনিয়া, দূর্নীতিবাজ, চোর ডাকাত এসব গালিগালাজ দিয়ে ঝাল ঝাড়া অতি সহজ হলেও বাংলাদেশ সৃষ্টির পর থেকে এই দূর্নীতিবাজ চোরা প্রতিষ্ঠানই দেশের উন্নয়নের সহযোগী সবচেয়ে বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠান। স্বাধীনতার পর থেকে তারা এ পর্যন্ত ১৭ বিলিয়ন ডলারের ওপর অর্থায়ন করেছে (এর বেশীরভাগই এখনো অপরিশোধিত), এমনকি আইডিএর মাধ্যমে আসা তাদের লোন প্রায় সুদমুক্ত (0.৭৫% সার্ভিস চার্জ অবশ্য নেয়)। বর্তমানে দেশে ৩০টি প্রকল্পে তাদের ৪.৪ বিলিয়ন ডলারের ওপর বিনিয়োগ আছে। তাদের সাথে কূটনৈতিক খেলায় সরকারের যুদ্ধংদেহী ও পরস্পর বিরোধী অবস্থান, বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রীর ভাষা কতটা সমর্থনযোগ্য বা গ্রহীতা হিসেবে বাংলাদেশের ইমেজ কতটা বাড়াচ্ছে? এখনো তারা পদ্মা সেতুর ঘটনা অন্য কোন ক্ষেত্রে পড়বে না বলে আশ্বাস দিয়ে আসলেও অহেতুক তাদের বিরুদ্ধে প্রলাপ আউড়ে যাওয়া কোন সূস্থ যুক্তিবোধের মধ্যে পড়ে? কূটনৈতিক ভাষা বলেও তো কিছু আছে। এইসব পাগলামির প্রভাবে ভবিষ্যতে আমাদের বার্গেইন পাওয়ার দাতারা কতটা সিরিয়াসলি নেবে তাও চিন্তা করার আছে। প্রধানমন্ত্রী হয়ত বাংলাদেশকে চীনের উচ্চতায় নিয়ে গেছেন ভাবতে পারেন কিন্তু বাস্তব তো তা না। বিদেশী দাতা সংস্থাগুলিকে গালিগালাজ করে পরম মানসিক শান্তি পাওয়া গেলেও এখনো আমরা তাদের ওপর নির্ভরশীল, ভারত বা চীনের পর্যায়ে যাইনি যে তাদের সরাসরি এখনই পুরোপুরি অস্বীকার করতে পারি (এমনকি ভারত চীনও এখনো পারে না)। অর্থনীতির তেমন কিছু বুঝি না, তবে এইটুকু বিদগ্ধ জনদের লেখায় পড়ি যে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আভ্যন্তরীন পূঁজি সংকট এক অন্যতম বড় বাধা। সাম্প্রতিক বছর গুলিতে ভারতও এই সমস্যা কাটিয়ে বিদেশী সাহায্য দিনে দিনেই কমাচ্ছে, আমাদেরও তূলনামূলক ভাবে সাহায্য নির্ভরতা কমেছে তবে এখনো দাতা সংস্থাগুলিকে পুরো এড়াবার দিন বহু দূরে। এক বেলা বাজারের পয়সা জমিয়ে, টিফিনের পয়সা জমা করে হয়ত পদ্মা সেতু করে ফেলা যাবে, তবে অন্যান্য আরো বহু ক্ষেত্র আছে।
বিশ্বব্যাংক বা এ জাতীয় কোন সংস্থাই দানছত্র খুলে বসা সাধু সন্ন্যাসী নয় সকলেই জানি। তাদের অভ্যন্তরেও দূর্নীতির প্রচুর ঘটনা আছে। এসব অভিযোগ এখন টেনে খুব লাভ আছে? প্রথমেই কি প্রশ্ন আসবে না যে এত অসাধু প্রতিষ্ঠানের কাছে কেন আমরা সাধু বাবারা ধর্না দিতে গেলাম (এবং এখনো দিয়ে যাচ্ছি)? আমরা নিজেরা বেজায় ভালমানুষ তবে চোর ডাকাতদের কাছে হাত পেতে অর্থ নিতে আপত্তি করি না? অর্থমন্ত্রী মুহিত নিজেই বিশ্বব্যাংকের চাকুরি করেছেন, তার সরকার এসব জানত না? নাকি আমরা আশা করি যে ডাকাত সে সিঁধেল চোর যাতে চুরি করতে পারে সেজন্য নিজের ঘরের দরজা খোলা রাখবে? বৃহত বা ক্ষুদ্র যে প্রজেক্টই হোক, কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠান নিজেরা যতই দূর্নীতিবাজ হোক যে প্রজেক্টে দূর্নীতি হবে বলে তারা বিশ্বাস করে সেখানে তারা অর্থায়ন করবে? বিশ্বব্যাংক কবে কোথায় দূর্নীতি হয়েছে জেনেও চুপ থেকেছে তাই আমাদেরও দূর্নীতি করার নৈতিক অধিকার জন্মে যায়, সে অধিকার বলে দূর্নীতির অভিযোগ উত্থাপিত হলেই তেলে বেগুনে জ্বলে উঠবো? এ মনোভাব দূর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার কাজে কতটা সহায়ক? দূর্নীতিবাজরা সরকার প্রধানের কথাবার্তায় কি মেসেজ পাবে?
কেউ অভিযোগ করলেই সরকার কাউকে সাজা দেবে সেটা তো হতে পারে না। এখানে সম্ভবত সরকার প্রধান থেকে শুরু করে অনেকেই মোটা দাগে একটি ভুল করছেন। তারা চেঁচিয়ে যাচ্ছেন যে বিশ্ব ব্যাংক দূর্নীতি প্রমান করতে পারেনি, কাজেই বিশ্বব্যাংক যে ছূতায় ঋনচুক্তি বাতিল করল সেটা সম্পূর্ন মিথ্যা এবং মহা অন্যায়। মজার ব্যাপার হল যে বিশ্বব্যাংক দাবী করেনি যে তাদের হাতে থাকা অকাট্য তথ্য প্রমানের ভিত্তিতে কাউকে জেলে পুরে দাও। তারা সরকারকে দুই দফায় তাদের কাছে প্রাপ্ত কিছু তথ্য পাঠিয়েছিল যার ভিত্তিতে তারা মনে করে যে দূর্নীতির পাঁয়তারা হচ্ছে। বাংলাদেশে বা কোন দেশেই সেই অভিযোগ নিজেরা তদন্তের কোন এখতিয়ার তাদের নেই, এমনকি তারা প্রাইভেসির স্বার্থে সরকারকে কি তথ্য প্রমান পাঠিয়েছিল সেটাও প্রকাশ করবে না। সেটা প্রকাশ করতে পারে আমাদের সরকার, তাতে বিশ্বব্যাংক আপত্তি করবে না। তারা সরকারকে অনুরোধ জানিয়েছিল তদন্তের, এবং তদন্ত নিরপেক্ষ হবার স্বার্থে চারটি শর্ত যোগ করেছিল। এই চারটি শর্তের দুটি শর্ত সরকার বিশ্বব্যাংকের সাথে বহু চিঠি চালাচালি, উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের পরেও ‘অপমানকর’ অজুহাতে মানতে চায়নি। বিশ্বব্যাংক কোন মন্ত্রীর ওপর আস্থা হারিয়ে তাকে না সরালে টাকা দেবে না এমন শর্ত জুড়লে সেটাকে কি অন্যায় বা অপমানকর দাবী বলা যেতে পারে? মানা না মানা তো সরকারের ইচ্ছে, যেকোন চুক্তি দুই পক্ষের সমঝোতাতেই হয়।
মান অপমানে লেগে থাকলে তাদের অর্থের প্রয়োযন নেই সেটা সাফ বলে দিলেই হয়, তারা তো টাকা নিতে সাধাসাধি করছে না, নিতে হলে তাদের শর্ত মেনেই তো নিতে হবে। এতে জটিলতা কোথায়? আবুল মন্ত্রীকে সেপ্টেম্বর মাসে অপেক্ষাকৃত সম্মানজনক ভাবে সরিয়ে দিলে দেশের চরম অপমান হত কিন্তু এখন ‘আবুল ইজ ডাউন’ বলে বিশ্বব্যাংকের কৃপা লাভের আশায় ঢাক ঢোল পিটিয়ে সরিয়ে দেশের বিরাট সম্মান বৃদ্ধি হয়ে গেছে? সরকার এবং তাদের সমর্থকরা এমন ভাব দেখাচ্ছেন যে বিশ্বব্যাংক নিজেরাই কোমর বেঁধে নেমেছিল দূর্নীতি প্রমান করতে, কিন্তু প্রমানে ব্যার্থ হয়ে গায়ের ঝাল ঝাড়ার জন্য ঋনচুক্তিই বাতিল করে ফেলেছে। অবস্থাদৃষ্টে তো মনে হয় তারা চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দূর্নীতির নিরপেক্ষ তদন্তে সরকারের অনীহা দেখে। নিরপেক্ষ তদন্তের পূর্বশর্ত হিসেবে তাদের দেওয়া অন্যতম শর্ত অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীকে মন্ত্রীসভা থেকে সরকার সময় থাকতে সরায়নি। সেপ্টেম্বর মাসে তাদের বিশেষ দল দেশে এসে বৈঠক করেও আবুল বিষয়ে সরকারের গোঁ ভাংগাতে পারেনি, ডিসেম্বর মাসে আবুল হোসেনকে যোগাযোগ মন্ত্রনালয় থেকে সরালেও অতি চালাকি দেখিয়ে মন্ত্রীসভায় ঠিকই রেখে দেওয়া হয়। এপ্রিল মাসে বিশ্বব্যাংক আরেকবার ইয়েলো সিগনাল দিলেও সরকার গা করেনি, এরপর জুন মাসের ২৭ তারিখেও সরকার অভিযুক্ত অন্যান্য আমলাদের সরাতে রাজী হলেও আবুল হোসেনকে মন্ত্রীসভা থেকে সরাবে না তা বিশ্বব্যাংককে জানায় । এরপর পরই যা ঘটার ঘটেছে, তিন দিন পরেই চুক্তি বাতিল ঘোষনা। দূঃখজনক ভাবে বিশ্বব্যাংকের কথা ও কাজের ভেতর তেমন অমিল আমি তো অন্তত দেখি না। তারা তাদের অর্থ বা আবুল মন্ত্রী যে কোন একটি বেছে নিতে বলেছিল, সরকার চরম মেধা, দেশপ্রেমের পরিচয় দিয়ে আবুলকেই বেছে নিয়েছিল।
ষড়যন্ত্র তত্ত্বের পালে সরকার প্রধান থেকে শুরু করে দেশের কিছু নামী বুদ্ধিজীবি, আম জনতা, এবং অনলাইন ব্লগাররা বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে পালটা দূর্নীতির অভিযোগ বেশ হাওয়া লাগিয়েছে। এই পালটা অভিযোগ এবং তার আলামত অনেকের কাছেই অকাট্য প্রমানের মত প্রতীয়মান হচ্ছে। প্রাক-যোগ্যতা যাচাই কালে বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে একটি চীনা কোম্পানীকে কাজ পাইয়ে দেবার ব্যাপারে অন্যায় চাপ দেওয়ার জোর অভিযোগ এসেছে। কারিগরী মূল্যায়ন কমিটি সেই চীনা কোম্পানীকে ভূয়া সনদ প্রদানের কারনে বাদ দেয়, ফলে কাজ পাবার পথে এগিয়ে যায় কানাডার এসএনসি লাভালিন যাদের ব্যাপারে বিশ্বব্যাংকের সেই দূর্ণীতির অভিযোগ এত কান্ড ঘটায়। সাদা চোখে ব্যাপারটা দুই এ দুই এ চারের মত মনে হলেও (বিশ্বব্যাংক নিজেদের পছন্দের চীনা কোম্পানীকে সরকারের দৃঢ়তায় কাজ পাইয়ে দিতে ব্যার্থ হয়ে আবুল মন্ত্রীর নামে মিথ্যা অভিযোগ দিচ্ছে) ব্যাপারটা আদতে ততটা সরল নাও হতে পারে। এটা ঠিক যে এসব প্রকল্পে অনেক সময় দাতা গোষ্ঠির নানান রকম চাপ থাকে, এমনকি তাদের পছন্দের দেশ/কোম্পানী থেকে অনেক বেশী মূল্যে বিশেষজ্ঞ আনতে হবে এই জাতের লিখিত শর্তাবলীও অনেক সময় থাকে। এ নিয়ে নেগোসিয়েশন চলে। নেগোসিয়েশনের শর্ত বেশী আপত্তিকর হলে মাঝে মাঝে গরীব দেশগুলিও ঋন প্রত্যাখান করে, এই জাতীয় উদাহরন এই সরকারের আমলেই আছে । এসব কারনে অনেকেই বিদেশী অর্থ সাহায্যকে এক হাতে দেওয়া ও দশ হাতে তুলে নেওয়া হিসেবে দেখে থাকেন।
এটাও সত্য যে কাজ পাবার জন্য নানান দেশের কোম্পানীগুলির মধ্যে তীব্র প্রতিযোগীতা চলে, চলে প্রকাশ্যে গোপনে নানান পর্যায়ের লবিংও। কেউ কাজ না পেলে তারা আবার মাঝে মাঝে তুমুল শোরগোল তোলে, ব্যাখ্যা দাবী করে কেন আমরা পেলাম না অন্যে পেল। বিশ্বব্যাংকের ভাষ্য অনুযায়ী তারা সরকারের কাছে সেই চীনা কোম্পানীকে বাদ দেওয়ার কারন জানতে চেয়েছিল, কারন কারিগরী কমিটি বাদ দেবার সময় তাদের কারনটা জানায়নি, সরকার সেটা যথাযথ ভাবে ব্যাখ্যা করার পর তারা সেই ব্যাখ্যা মেনেও নেয়, এ বিষয়ে আর দ্বি-মত করেনি। এর মাঝে দূর্নীতির আলামত আছে কি নেই তার নিশ্চয়তা আমি দিতে পারি না, তবে এমন ঘটে থাকা খুবই স্বাভাবিক। বিশ্বব্যাংক বা যে কোন দাতা প্রতিষ্ঠানই শুধু টাকা ঢেলে বসে থাকে না, কারা টেন্ডারে বিড করতে পারবে, কিভাবে করতে হবে, বাদ পড়া বা গ্রহন করার কারন সবই তারা কঠোরভাবে মনিটর করে, যেটা চুক্তিতেই থাকে। কাজ পাওয়া না পাওয়া নিয়ে বহু চিঠি চালাচালিই চলতে পারে। সেই চিঠি চালাচালি বা পূণঃমুল্যায়নের অনুরোধ জানানো দূর্নীতির প্রমান নয়। আমাদের দূদক প্রধান গোলাম রহমান সাহেবও সেটা স্বীকার করেছেন, তিনিও বলেছেন যে বিশ্বব্যাংক প্রাক-যোগ্যতা পূনঃমূল্যায়নের অনুরোধ জানালেও কোম্পানীকে কাজ দেবার জন্য কোন চাপ সৃষ্টি করেনি। যদিও দূদকও মাঝে মাঝে গতবাঁধা কিছু ষড়যন্ত্র তত্ত্ব মাঝে মাঝে বলে এসেছে। বাস্তবতার বিচারে আমার কাছে বিশ্বব্যাংকের বিরুদ্ধে দূর্নীতির পালটা অভিযোগ আবুল মন্ত্রীর বিরুদ্ধে দূর্নীতির চেয়েও এখনো দূর্বল বলেই মনে হচ্ছে। এমন বায়বীয় অভিযোগে ব্লগ জগতে ঝড় ওঠা স্বাভাবিক হলেও রাষ্ট্রপ্রধানের মত দায়িত্বশীল ব্যাক্তিত্বের কাছ থেকে এর ভিত্তিতে আবোল তাবোল বকে যাওয়া প্রত্যাশীত নয়।
দূর্নীতির অভিযোগ উঠলে নিরপেক্ষ তদন্তের স্বার্থে স্বেচ্ছায় পদ ছেড়ে দেওয়া, কিংবা অপসারন কোন শাস্তি জাতীয় মান অপমানের ব্যাপার নয়। এখানেও তাইই হওয়া উচিত ছিল, যা সময় থাকতে করা হয়নি। উলটো সরকার প্রধান নিজে প্রথম থেকেই চরম পক্ষপাতিত্ব দেখিয়ে আবোল তাবোল কথা বলে এমন আবহ তৈরী করেছেন যাতে নিরপেক্ষ তদন্ত করে দূর্নীতি প্রমান না হলেও সে তদন্ত নিয়ে তীব্র সংশয় থেকে যায়। সরকারের এই শিশুসূলভ গোয়ার্তূমি আদতে ব্যাক্তি আবুল হোসেনের জন্যও খারাপ হয়েছে যদি তিনি আসলেই নির্দোষ হন। সরকারের আবুল হোসেন সাহেবের প্রতি এমন অটূট আস্থার কারন কি ছিল? মন্ত্রী আবুল হোসেন কি এমন রসগোল্লা ছিলেন যাকে ছাড়া দেশ কিংবা মন্ত্রী সভা চলছিল না? ওনার ইমেজ মতিয়া চৌধূরী, নুরুল ইসলাম নাহিদ কিংবা বর্তমান যোগাযোগমন্ত্রীর মত সত সজ্জন দায়িত্বশীল হলেও না হয় বোঝার চেষ্টা করতাম পদ্মা সেতুর বিনিময়ে ওনার পদ রক্ষার যৌক্তিকতা।
সদ্য দেশপ্রেমিক সার্টিফিকেট পাওয়া আবুল মন্ত্রীর অযোগ্যতার কারনে পদত্যাগ দাবী করে বিরোধী দল নয়, তার নিজ দল ও জোটের বাঘা বাঘা নেতারা মাত্র কিছুদিন আগেই সংসদে মাতম তুলেছিলেন। এই দাবীদারদের মধ্যে ছিলেন রাশেদ খান মেনন, হাসানুল হক ইনু, তোফায়েল আহমেদ প্রমূখ। ওনার অযোগ্যতার প্রতিবাদে শহীদ মিনারের সামনে বিশিষ্ট জনদের সভাও হয়েছে। গত আওয়ামী সরকারের প্রতিমন্ত্রী থাকা অবস্থায় ডবল পাসপোর্ট ব্যাবহারের দায়ে ওনার মন্ত্রীত্ব গেছিল (দেশপ্রেমিক খেতাব অবশ্য দূঃখজনক ভাবে পাননি, সম্ভবত এখনকার মত ব্যাপক সমালোচিত হলে পেতেন)। উনি কিভাবে এবার মন্ত্রীত্ব লাভ করেছিলেন সে নিয়ে আওয়ামী লীগ দলীয় এক সাংসদই রীতিমত হাস্য কৌতূক সৃষ্টিকারি এক তত্ত্ব দিয়েছিলেন, সোজা কথায় আবুল সাহেবের ইমেজ পৌছেছিল আক্ষরিক অর্থেই ভাঁড়ের পর্যায়ে। অথচ পদ্মা সেতুর মত অতি ষ্পর্ষকাতর ইস্যুতেও তার নামে অভিযোগ ওঠার পরেও তিনি প্রধানমন্ত্রীর গুডবুক থেকে বাদ পড়েননি, কেন তা তারাই ভাল জানেন। অযোগ্য হলেই দুর্নীতিবাজ হবেন এমন নয়, তবে আভ্যন্তরীন কিছু বিষয়ে দূর্নীতির অভিযোগ ও মিডিয়ায় এসেছে, উকিলিক্স এও মার্কিন রাষ্ট্রদূতের বরাতে উনি ‘লেস দ্যান অনেষ্ট’ খবর এসেছে।
সোজা কথায়, প্রধানমন্ত্রী তার দলের মধ্যেই অযোগ্যতার দায়ে চরম ভাবে অভিযুক্ত একজন ব্যাক্তির মন্ত্রীত্ব রক্ষায় বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন হারানোর ঝুকি জেনে শুনে নিয়েছিলেন এতে কোন সন্দেহ নেই। সামান্য বুঝ বুদ্ধি ও ন্যূনতম কূটনৈতিক প্রজ্ঞার পরিচয় দিলে পদ্মা সেতুর দূর্নীতি নয়, আভ্যন্তরীন নানান অযোগ্যতা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতেই তাকে সরানো হয়েছে এভাবেও সরকার বিষয়টি সময় থাকতে সুষ্ঠুভাবে নিয়ন্ত্রনে রাখতে পারত, গনমানুষের আস্থাও অর্জন করতে পারত। যে সিদ্ধান্ত এই জুলাই মাসের শেষে নেওয়া হল তা গত সেপ্টেম্বর মাসেই নেওয়া হলে জল হয়ত এতদুর গড়াতো না এর মাঝে কি খুব বেশী জটিলতা আছে? এই তিক্ত অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতের জন্যও এক শিক্ষনীয় নজির হিসেবে থাকা উচিত। অযোগ্য, দলের ভেতরেই তীব্র সমালোচনায় থাকা ব্যাক্তিকে গুরুত্বপূর্ন মন্ত্রীর পদে বসিয়ে রাখা বিপদজনক। এতে কোন সন্দেহ নেই যে আবুল সাহেবের ব্যাক্তি ইমেজ বিশ্বব্যাংকের কঠোর অবস্থানের পেছনের একটি বড় কারন। ষড়যন্ত্র তত্ত্ব মানলেও পরীক্ষিত সত, দায়িত্বশীল মন্ত্রী থাকলে এভাবে ষড়যন্ত্র পাকানো এত সহজ হত না এটা পরিষ্কার।
নিজের ক্ষুদ্র জ্ঞানে যেটা বুঝি যে বিকল্প হিসেবে মালয়েশিয়া, চীন, কুয়েত না কাতার যাদের কথা ভাবা হচ্ছে তারা কেউই বিশ্বব্যাংকের মত এত অল্প সুদে টাকা দেবে না, সেটা সরকারও ভালই জানে মুখে যতই বড় বড় কথা বলুক। অনেক দেরীতে হলেও আবুল মন্ত্রীকে সরিয়ে কিছুটা শুভবুদ্ধির পরিচয় সরকার দিয়েছে, তাতে এখন কতটা কাজ হয় তা সংশয়মুক্ত নয়, আশা করতে দোষ নেই যে বিশ্বব্যাংকের গ্রীন সিগন্যাল সরকার পেয়েছিল। আর দেশীয় ফান্ডে করার মত টাকা রিজার্ভে থাকলেও সেটার কুপ্রভাব অন্যান্য আভ্যন্তরীন ক্ষেত্রে দেখা দিতে বাধ্য, বিশ্বব্যাপী বিরুপ অর্থনৈতিক অবস্থায় সেটা হতে পারে আরেক বুমেরাং। সরকার গোঁ বজায় রাখতে আশা করি আর হঠকারী কিছু করবে না আপাতত এই আশাবাদ ব্যাক্ত করা ছাড়া তেমন কোন উপায় দেখছি না। তবে ফল যাইই হোক, এই উদাহরন দেশের জন্য খুব খারাপ একটি নজির হল।
তথ্যসমৃদ্ধ এই লেখাটার জন্য আদিলকে ধন্যবাদ। এটা আওয়ামী লীগ বনাম বিএনপি-র ব্যাপার না। সামগ্রিকভাবে আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির দেউলিয়াপনার আলেখ্য।
চাঁদার টাকা দিয়ে মুজিবের মেজবানি হতে পারে, কিন্তু পদ্মা সেতু বানানো সম্ভব না। আর যদি হাসিনা তা বানায়ও তবে তা ছয় মাসের আগেই ভেঙ্গে পড়বে। সম্ভবত বানাতে বানাতেই ভেঙ্গে পড়বে! আমি বরং বলবো বাঁশের সাঁকো বানাতে পদ্মা উপর, কেননা আমি বাজি ধরে বলতে পারি যে বাঁশের সাঁকোটি টিকবে বেশিদিন।
@আদনান,
এই অবস্থা? জ্বালা রে জ্বালা! আচ্ছা আপনার তিনটা ভবিষ্যতবাণী না হয় মেনেই নিলাম। নিজের দেশের অর্থায়নে পদ্মা সেতু বানানো সম্ভব না, সম্ভব হলেও তা ছয় মাসের আগেই ভেঙ্গে পড়বে, আর বাজি ধরে বলতে পারেন সেই সেতুর চেয়ে বাঁশের সাঁকো বেশিদিন টিকবে। অর্থনীতিবিদ আবুল বারকাত আপনার কাছে ফেইল্ড। মানলাম পীর সাব আপনাকে। তো মুজিবকে এখানে টেনে আনলেন কেন? আনলেনই যখন, এই বইটা পড়ে ভেবে দেখবেন, তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলে সম্মোধন করা যায় কি না?
httpv://www.youtube.com/watch?v=uzqmoDcTt-8
@আকাশ মালিক,
বইটা এখনো আমার পড়া হয়নি। তবে অবশ্যই পড়বো আগামী ২/৬ মাসের মধ্যে। আমার বেশ কিছু বন্ধু বইটা পড়েছে, আর আমাকে জানিয়েছে যে এটা একটা ভাঁওতা বলে মনে হয়েছে তাদের কাছে। তারা মনে করেছে যে এটা মুজিবের লেখা না। তবে এই ব্যাপারটা মুজিব গবেষকেরা ভালো বলতে পারবেন। তাঁরা হাসিনার কাল পার হলেই বলতে শুরু করবেন। এখন তাঁরা সাহস পাচ্ছেননা হয়তো!
আর শুধু মুজিবই কেনো বন্ধু? তিনি বাদে বাঙলার কি আর কোনো বন্ধু নেই? না ভাই, ফালতু পূজা বা আলগা পিরিত দেখানো আমার দ্বারা হবেনা। আমার কোনো ঈশ্বর বা দেবতা নেই, থাকবেনা কোনোদিন। যে বাকশাল সৃষ্টি করেছে তাকে মানসিকভাবে সুস্থ মানুষ বলাই কঠিন, আর বন্ধু তো ভাই অনেক দূরের ব্যাপার। অবশ্য ১৯৭১ এর আগে তাঁর অনেক কাজ ছিলো। তবে তিনিই একমাত্র কাজ করনেওয়ালা ছিলেননা। এটা ভেবে দেখবেন!
বাঙলাদেশের ধ্বংসের শুরু তার হাতেই! আমরা যতোদিন এটা মেনে নিতে না পারছি, আমাদের মুক্তি নেই। এটাও ভেবে দেখবেন!
ধন্যবাদ।
@আদনান,
মুক্তমনায় আমার দেয়া এত মিথ্যাচারেও নত নন জাতির পিতা লেখাটা একবার পড়ে কিছু মন্তব্য করুন, যদিও লেখাটা আমার নয়।
তাই? এক কাজ করা যায়? বাকশালের উপর একটা লেখা আপনার কাছ থেকে আমরা কি আশা করতে পারি না? ১৫ আগষ্টের আগেই দিয়ে দিন। কসম আল্লাহর গ্যারান্টি দিতে পারি আলোচনা জমবে ভাল।
@আকাশ মালিক,
ওখানে দুই বছর আগে হুমায়ুন আজাদকে উদ্ধৃত করে করা আদনানেরই কয়েকটা মন্তব্য আছে। ওগুলোও পড়ুন।
@আকাশ মালিক,
মুজিবকে নিয়ে আপাতত সময় নষ্ট করার ইচ্ছে নেই। আর তাছাড়া হুমায়ুন আজাদ তাকে যে বাড়িটা দিয়ে গেছেন, তাতে করে মুজিব আর কোনদিন মাজা সোজা করে দাড়াতে পারবেননা। রুপম কে ধন্যবাদ আগের আলোচনার ব্যাপারটা মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য!
তখন লিখেছিলামঃ- “শেখ মুজিবুর রহমান তো দেখছি একজন ছোটোখাটো হযরত হয়ে উঠেছেন। হযরতকে নিয়ে কিছু বললেই কাঁপে দুনিয়া, আর শেখ মুজিবুর রহমানকে কিছু বললে কাঁপে ৫৬০০০ বর্গমাইল।”
আর এসব জাতির পিতা-টিতা মাথার থেকে দূর করেন তো ভাই। আপনি একদিন কঁড়া করে একটা ঘুম দেন, দেখবেন যে এসব মাতলামো ছুটে গেছে। অবশ্য মন্ত্রী হওয়ার ইচ্ছে থাকলে তেল ঢালতে থাকুন, কাজ হবে।
@আদনান,
ভাই, এখানে বংগবন্ধুর মেজবানি বিষয়ক আলাপে আমরা যাচ্ছি না, উনি এই সিনে আপাতত নেই। তবে ওনার কথা যখন আনলেনই তখন শুধু এইটুকু বলতে হয় যে ওনার কন্যা পিতার দৃঢ়তাপূর্ন কূটনৈতিক স্কিলের কথা হয় কিছুই জানেন না আর নইলে কিছুই শেখেননি। বংগবন্ধুর বহু দূর্বলতা দেশ পরিচালনা নিয়ে চিন্তা করা যেতে পারে, তবে বিদেশীদের সামনে আবোল তাবোল মেঠো ভাষায় প্রলাপ বকার রেকর্ড নেই। বংগবন্ধু সৌদী বাদশাহর মত পরাক্রমশালী লোককেও বলতে পেরেছিলেন আমি আপনার কাছে ভিক্ষার জন্য আসিনি। দৃঢ়তা, আত্মসম্মান দেখানে প্রলাপ বকার দরকার নেই।
আভ্যন্তরীন খাত থেকে, চাঁদা তুলে তত্ত্বীয়ভাবে সম্ভব হলেও আমি আপাতত সেভাবে আশাবাদী নই। আমাদের মানসিকতা অনেকটাই হুজুগে, প্রথম প্রথম সকলেই সাথে আছি বলে দৃপ্তকন্ঠে শপথ নেবে। লং টার্ম কমিটমেন্ট বজায় রাখার মত দৃঢ়তা কতদিন বজায় থাকে তাতে আমার সংশয় আছে। আর চাঁদাবাজির মত উটকো ঝামেলা হুজ্জতে এক পর্যায়ে উলটো ফলও হতে পারে, ইতোমধ্যে সরকারী দলের এক ছাত্রকর্মী চাঁদাবাজি নিয়ে খুনাখুনীতে মারা গেছে।
@আদিল মাহমুদ,
এই লেখাটা পড়েন, বা হয়তো আগেই পড়েছেন। লেখক, আবুল আল মুহিতের আপন খালাতো ভাই, বহু বছর আগে আ স ম আব্দুর রবের——- আর আমার —–নাহ থাক। আপনার লেখার সাথে প্রচুর মিল তাই না?। তার লেখা আপনারটার আগেই পড়েছিলাম।
উপরে অপ্রাসঙ্গীক মন্তব্যের জন্যে দুঃখ প্রকাশ করছি।
@আকাশ মালিক,
এ বিষয়ে অন্য কিছু লেখা পড়লেও এটা পড়িনি। মিল থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়। মুহিত সাহেব আমার কিছু হন না এটা নিশ্চিত,তবে রব সাহেব দূঃসম্পর্কের আত্মীয় হন।
@আদিল মাহমুদ,
শুধু গলাবাজি করে তো আর বেশিদূর যাওয়া যায়না রে ভাই। বাকশালী মুজিব আর যাই হোক না কেনো আমাদের কারোর বন্ধু ছিলেননা।
@আদনান,
– আপনার এই কথাটি অবশ্যই সত্য। সরকারের পদ্মা সেতু বিষয়ে বর্তমানের ভাঁড়ামি রকমের আচরনে আমি নিজেই হতাশ।
বাকশালী মুজিব বা বংগবন্ধু যে নামেই ডাকা হোক না কেন ওনার সব পদক্ষেপই সমর্থন করার মত না,আবার সবই নিন্দা করার মত না। সব মিলিয়ে উনি কার চোখে বন্ধু কার চোখে শত্রু তা ব্যাক্তি বিশেষের বিবেচনার ওপর নির্ভর করে। আমাদের এখানের আলোচনার ক্ষেত্র সেটা নয়। প্রাসংগিক হিসেবে বংগবন্ধুর একটি উদাহরন এখানে এনেছি আপনার কথার পরিপ্রেক্ষিতে।
@আদিল মাহমুদ,
প্রশ্ন একঃ
পদ্মা সেতু বানানো কি আমাদের খুবই প্রয়োজন?
প্রশ্ন দুইঃ
১৯৭১ এর পরে মুজিবের একটি সমর্থনযোগ্য দিক কোনটি?
@আদনান,
উত্তর একঃ
বানানো প্রয়োযন বলেই তো মনে হয়। দক্ষিন পশ্চীমাঞ্চলের কি কি কিভাবে উপকৃত হবে তার তালিকা আমার দেবার দরকার নেই। তবে বিশ্বব্যাংক, আইডিবি, জাইকা যারাই হোক যে কোন প্রকল্পেরই কষ্ট/বেনেফিট এনালাইসিস করে একটি গ্রহনযোগ্য লাভের হিসেব না পেলে অর্থায়ন করবে না।
উত্তর দুইঃ
এটি এখানকার আলোচনার সাথে সম্পর্কিত নয়। শুধু এইটুকুই বলি যে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল এক বিধ্বস্ত ধ্বংসস্তুপ থেকে, শূন্যও নয় বলতে গেলে নেগেটিভ অবস্থান থেকে, সেখানে প্রাথমিক অবস্থায় আরো বড় বিপর্যয় দেখা দেবার সমূহ সম্ভাবনা ছিল, তেমন ভবিষ্যতবানীও ছিল কারন খাদ্য ঘাটতি ছিল মারাত্মক রকমের। সে বিপর্যয় এড়ানো কৃতিত্ব হিসেবে স্বীকার না করাটা অন্যায়। বংগন্ধুর শাসনামলের দূর্বল বা নিন্দনীয় দিকগুলি আসলে অনেকটা আমাদের জাতীয় সংস্কৃতির সাথেই জড়িত, দূঃখজনক হলেও সত্য। তবে সেটা বংগবন্ধুর কাছ থেকেও প্রত্যাশীত ছিল না। স্বজনপ্রীতি, দলপ্রীতি, চাটুকারদের প্রভাব বলয়ে থেকে চোখে কালো চশমা লাগিয়ে স্বৈরাচারী হয়ে ওঠা এবং যত্রতত্র ষড়যন্ত্র দেখা এসবই পরবর্তিকালের শাসকচক্রদের মাঝেও প্রবল মাত্রায় দেখা গেছে।
সরকার আসলে দুটি ভিন্ন অডিয়েন্সের প্রতি লক্ষ্য করে দুটি ভিন্ন পথে এগুচ্ছে। একদিকে তৃতীয় বিশ্বের মহান নেত্রী হাসিনার নেতৃত্বে পশ্চিমা অর্থনোৈতিক সাম্রাজ্যবাদের মূলে আঘাত হানতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে মুহিতকে পাঠানো হচ্ছে সাম্রাজ্যবাদীদের পায়ে পড়ে চোখের জলে ভিজিয়ে মন গলানোর মিশনে। দেশে’র যেকোনো হুশজ্ঞান সম্পন্ন নাগরিক দেশের জন্যে চরম ট্র্যাজিক এই কমেডী দেখে বিব্রত হচ্ছে, কিন্তু আবার অনেকের কাছে ‘আওয়ামী লীগ খতরে মে হ্যায়’, এসময়ে বুদ্ধি-বিবেক কে একটু তালা দিয়ে রাখতে হবে।
@সফিক,
অডিয়েন্স ভিন্ন হল কেন সেটা খুব গুরুতর প্রশ্ন, আমাদের বড় মৌলিক সমস্যাই এখানে। নানান রকম তেজোদ্দীপক কথাবার্তা শুনতে ভাল লাগে, তবে বাস্তব হল আমাদের এখনো আরো বহুদিনই দাতা গোষ্ঠীর ওপর নির্ভরশীল থাকতে হবে, সরকার যেমন বাজে উদাহরন তৈরী করে রাখল এর ফল ভবিষ্যতে প্রত্যক্ষ না হোক পরোক্ষ ভাবেও পড়বে। বিরোধী দল ভবিষ্যতে সরকারে গেলে এই উদাহরন বারে বারে টানবে।
আওয়ামী লীগ খতরে মে পড়তে পারে, তবে সেটা উলটা পালটা প্রলাপ বকা, ফ্লিপ ফপ নীতি অনুসরন করে মোকাবেলার পদ্ধুতি পরিস্থিতি আরো জটিলই করছে। দেখে শুনে আবারো সেই পুরোনো কথাই মনে হচ্ছে যে আওয়ামী লীগের বড় শত্রু আওয়ামী লীগই।
বিশ্ব বিশ্ব জানে বাংলাদেশের সব প্রকল্পেই দুর্নীতি হয়। আর বিশ্ব ব্যাংক ও কোনো প্রকপ্লে ঋণ দিতে এতো পানি ঘোলা করে নি। এখানে বিশ্ব ব্যাংকের স্বার্থ রক্ষিত হয় নি বিধায়ই এতো কাহিনী। বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে স্বাস্থ্যখাতে একটি প্রকল্প ছিল এন এন পি ( ন্যাশনাল নিউট্রিশান প্রোগ্রাম)। এই প্রকল্পে বিশ্ব ব্যাংক টানা প্রায় ১০ বছর অর্থায়ন করেছে। অথচ এই প্রকল্প ছিল স্বাস্থ্যখাতের সবচেয়ে বড় লুটপাটের প্রকল্প। বেশ কিছু আমলা, মন্ত্রী, কয়েকটি এনজিও’র প্রধান নির্বাহীকে রাতারাতি কোটিপতি বানিয়ে দিয়েছে। বিশ্ব ব্যাংক একবারও প্রকাশ্যে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে নি। আবার ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল গ্লোবালী দুর্নীতির ধারণা সূচক তৈরি করে তার অন্যতম ডাটা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান বিশ্ব ব্যাংক বিশেষ করে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে। দুর্নীতির ধারণা সূচকের একটি নিম্ন পয়েন্টধারি রাষ্ট্রকে বিশ্ব ব্যাংক বিগত দিনগুলোতে নির্বিঘ্নেই ঋণ বিতরণ করে গেছে।
পদ্মা সেতু নিয়ে আজকে যে ধুম্রজাল তা সরকারের একক সৃষ্ট নয়। বিশ্ব ব্যাংক ও কী এমন কোনো সুস্পষ্ট প্রমাণ হাজির করতে পেরেছে আমার জানা নেই। তবে আবুল যে একজন দুর্নীতিবাজ নয় তার কোনো প্রমানও সরকার হাজির করে নি। একটি নখ দন্ত হীন দুর্নীতি দমন কমিশন কে দিয়ে সার্টিফিকেট দিয়ে দিল পদ্মাসেতুতে দুর্নীতি হয় নি। দুদক এমনিতেই একটি হাস্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে ঢাল তলোয়ার নেই বিধায়। কিন্তু বিরোধী দলের ব্যাপারে দুদকের অবস্থান সুস্পষ্ট আপোষহীন।
নিজস্ব উৎস থেকে অর্থায়নের মাধ্যমে পদ্মাসেতু তৈরির জন্য অর্থনীতি সমিতির সভাপতি আবুল বারাকাত একটি রূপরেখা দিয়েছেন যেটা ২৯ জুলাই প্রথম আলোতে ক্রোড়পত্র আকারে প্রকাশ পেয়েছে। তিনি প্রায় ১২ টি উৎসের কথা তার রূপরেখাতে প্রকাশ করেছেন। তার রূপরেখার বাস্তবায়ন কঠিন কিন্তু অসম্ভব নয়। এই রূপরেখা নিয়ে আলোচনা চলে সংেযাজনের বিয়োজনের মাধ্যমে একটি সিদ্ধান্তে আসা জেতে পারে হয়তো। একটি সার্বভৌম দেশের বিশ্ব ব্যাংকের মতো প্রতিষ্ঠানের কথায় উঠবস করা খুব বেশিদিন উচিত না। একবার নিজেরা পেরে গেলে বিশ্ব ব্যাংক আই এম এফ আর কোনোদিন খবরদারি করতে আসবে না।
@জটিল বাক্য,
দূর্নীতি কেবল বাংলাদেশেই নয়, দুনিয়ার বহু দেশেই হয়। চীন এত বড় অর্থনৈতিক বাঘ সেখানেও উচ্চ পর্যায়ের সরকারী কর্মকর্তারা পুকুর চুরি করে। ভারতেও হচ্ছে, বিশ্বব্যাংক সেসব নিয়েও আপত্তি তোলে। এসবের কিছু উদাহরন দিয়েছি, বিশ্বব্যাংক হঠাত আজ বাংলাদেশের পিছু লেগেছে এমন মোটেও প্রতীয়মান হয় না।
আমার প্রথম কথা হল যে আমার আলোচনার মূল বিষয় সরকার কিভাবে এই সমস্যা হ্যান্ডেল করছে সেটা, বিশ্বব্যাংকের মূল উদ্দেশ্য কিংবা দূর্নীতি আদৌ হয়েছে কি হয়নি সেসব নয়, সেসব সুপারফিশিয়াল বিষয়, নানান ষড়যন্ত্র তত্ত্ব আলোচনার সময় আমার নেই। তত্ত্ব হিসেবে চিন্তা করা যায় তবে ১০০ মেইল দূরের কোন বস্তু দেখার প্রচেষ্টার আগে ১০ হাত দূরের বস্তু দেখাই শ্রেয়।
বিশ্বব্যাংক আগে সব দুর্নীতির ব্যাপারে সেভাবে হস্তক্ষেপ করেনি অবশ্যই হতে পারে, তার কারন আমি আন্দাজে বলতে পারি না। হতে পারে তাদের ইন্টেগ্রিটি ডিপার্টমেন্ট অভিযোগ করার মত তাদের ষ্ট্যান্ডার্ডের তথ্য প্রমান পায়নি, আমি এখনই বলতে পারি না। কারন যাইই হোক তার মানে এই দাঁড়ায় না যে তারা কোনদিন কিছু বলেনি। গত জোট সরকারের আমলে সড়ক খাতের অর্থায়ন বন্ধ করেনি? চীন ভারত ফিলিপাইনের উদাহরন দিয়েছি। যমুনা সেতু প্রকল্পেও তারা ‘৯১ সালে অর্থায়ন বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, অবশ্য দূর্নীতির কারনে নয়, দূর্বল ইন্টার্ণাল রেট অফ রিটার্নের কারনে।
আগে হয়েছে কিছু বলেনি আজ বলছে এ যুক্তি মোটেও ভাল নয়। বর্তমান সরকার বা দলের নেতা পাতি নেতা অনেকেই নানান অকাজ কুকাজের সাথে জড়িত আছে এমন নজির ভুরি ভুরি যে কোন পত্রিকা খুললেই পাওয়া যায়। এখন পরের কোন সরকার যদি বলে আগের সরকারের অনেকে এসব করেছে কোন শাস্তি পায়নি, এখন আমরাও করতে পারি?
– বিশ্বব্যাংক আদালত গ্রাহ্য কোন তথ্য প্রমান যা দিয়ে কাউকে সাজা দেওয়া যায় এমন কিছু উপস্থাপন করতে পেরেছে বলে আমারো জানা নেই। তবে তারা কি তেমন কিছু দাবী করেছে? তারা এফবিআই বা ইন্টারপোল নয়, আর কোন দেশে পূর্ন তদন্ত চালানোর মত আইনী ক্ষমতা তাদের নেই। ব্যাপারটা আমি পরিষ্কার কতে চেয়েছিলাম লেখায়, মনে হয় পারিনি। তারা মূলত দুর্নীতি দমনে সরকারের নিরপেক্ষতা রক্ষার এটিচিউডে আস্থা হারিয়েছে, অন্তত নানান ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রথমেই বিবেচনায় না আনলে তেমনই মনে হয়। আপনার কথাতেও তার কিছুটা এসেছে। এই আস্থা হারানোতে অত্যন্ত সফল ভাবে সরকার প্রধান লিড দিয়েছেন। কারো বিরুদ্ধে, বিশেষ করে আবুল মন্ত্রী গোছের কেউ যার বিরুদ্ধে নিজ দল থেকেই ব্যার্থতার ব্যাপক অভিযোগ ছিল তাকে স্বছ তদন্তের স্বার্থে সময় থাকতে সরিয়ে দিলে কি এমন অপমান দেশের হত? এখন জল ঘোলা করে সরিয়ে দিয়ে দেশের বিরাট সম্মান বেড়েছে, আর তখন তলে তলে সরালে সম্মান হানি হত? আবুলকে সরানো যদি দেশের সম্মান হানি হয় তবে বলতে হয় যে সেটা সরকারই করেছে, এখন অবস্থা এমনই যে এতেও বিশ্বব্যাংকের কৃপা হবে কিনা সেটা নিয়ে দিন গুনতে হচ্ছে।
সরকার আগেই সময় থাকতে আবুল মন্ত্রীকে মন্ত্রীসভা থেকে বাদ দেবার পরেও বিশ্বব্যাংক ঝামেলা করলে আমিও কোন কথা বাড়ানো ছাড়াই স্বীকার করতে বাধ্য হতাম যে পরিস্থিতি সরকারের একক সৃষ্ট হয়। এখন সেটা বলার মত উপযুক্ত বড় কারন দেখছি না।
নিজস্ব অর্থায়ানে স্বনির্ভরতার প্রস্তাব খুবই ভাল পরামর্শ, এতে দ্বি-মত করে কে? কোন দেশই কেবল ফরেন এইড দিয়ে উন্নতি করতে পারেনি, ভারত চীন সকলেই বিদেশী অর্থায়নে উন্নতি করেছে, এরপর ধীরে ধীরে সাহায্য নির্ভরতা কমিয়ে যাছে, বাংলাদেশেও এই ধারা দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশেও দেখা যাচ্ছে যে বিদেশী সাহায্য কমে আসার সাথে সাথে অর্থনীতি শক্তিশালী হচ্ছে। আবুল বারাকাত সাহেবের প্রস্তাব আমি জানি না, আমি অর্থনীতির তেমন কিছু বুঝি না,
করা গেলে খুবই ভাল কথা। তবে অন্য অর্থনীতিবিদ যেমন দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের মতে দেখেছি যে নিজস্ব অর্থায়নে করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন না।
ইন এনি কেস, সরকার যে ছেলেমানুষের মত এই ব্যাপার সামলাচ্ছে সেটা কোন ভাবেই সমর্থনীয় নয়।
আপনাকে ধন্যবাদ।
বাসার কাজের লোক এবং ড্রাইভার বাড়ির মালিক মালিকিন দের অনেক গোপন কথা জানে।এসব গোমোর ফাঁস হয়ে যাবার ভয়ে মালিকেরা সাধারণত এদের কোন বকাঝকা করে না। এত কুকীর্তি করার পরও এরা কেন পার পেয়ে যাচ্ছে সেটা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন।
@পলাশ,
সংশপ্তককে কিছুটা বলেছি।
সরকারের লোকজনই যখন পরস্পর বিরোধী বক্তব্য প্রচার করছে , ফ্লিপ ফ্লপ করে সকালে আদেশ বলবৎ করে সন্ধ্যায় প্রত্যাহার করছে, এই প্রশ্নের কি কখনও উদয় হয় না যে , সরকার আসলে ‘কারা’ চালাচ্ছে ?
@সংশপ্তক,
সরকার আসলে আমাদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাই চালাচ্ছে। দেশে প্রতিবার নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার পরিবর্তনের সামগ্রিক ফলাফলে মনে হতে পারে যে দেশের লোকে খুবই সচেতন, আসলে ব্যাপারটা ঠিক তেমন না। এই দেশে মার্কা দেখে ভোটই বেশীরভাগ লোকে দেয়, সরকার পরিবর্তন হয় এখনো ফ্লোটিং কিছু ভোটের হিসেবে, মোটাদাগে বড় ৩/৪ দলের ফিক্সড ভোটারের সংখ্যাই বেশী। গত নির্বাচন অবশ্য এই ধারার কিছুটা ব্যাতিক্রম, এর কারন মনে হয় বিপুল সংখ্যক তরুন ভোটারের অন্তর্ভুক্তি। এই ধারার কারন হল অন্ধ দল/ব্যাক্তি পূজার খাতিরে নিজের বিবেক বন্ধ রাখা। নইলে সরকারের এই রকম দিনের পর দিন এক দল ক্লাউনের মত আচার আচরনের আলোচনা পাব্লিকের গুরুত্বপূর্ন মনে হয় না, গুরুত্বপূর্ন মনে হয় নানান ষড়যন্ত্র তত্ত্ব।
রাজনৈতিক দলগুলিও এটা জানে, তাদের হাতে ব্ল্যাঙ্ক চেক জনগনই দিয়ে রেখেছে জানে বলেই রাজনৈতিক সংস্কারের আশা বাস্তবে শূন্য। নইলে আবুল ইজ ডাউন নিয়ে কেঊ সেই আবুলকে বুক ফুলিয়ে দেশপ্রেমিক সার্টিফিকেট দেয়?
বাঙলাদেশে বিশ্ব ব্যাংক মুনাফা লুটতে আরো অনেক জায়গায় টাকা ছড়াইছে, কিন্তু পদ্মা সেতুর সময় তাগোর সুনীতির ঝান্ডা কেন জাইগা উঠল এই ব্যাপারে আপনার কি কোন থিওরি আছে?
আর আপনার কি মনে হয় শেষ পর্যন্ত বাঙলাদেশরে বিশ্বব্যাংক ঋণ দিবো নাকি সুনীতির মূলনীতি রক্ষা করব?
এক জায়গায় উল্লেখ করছেন বাঙলাদেশে বিশ্ব ব্যাংক স্বাধীনতার পরে বহু বিলিয়ন ডলার অর্থলগ্নী করছে কিন্তু যার বেশিরভাগই নাকি এখন পর্যন্ত অপরিশোধিত! তার উপ্রে আবারও বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার দিয়াই যাইতেছে। আচ্ছা আদিল ভাই, বিশ্ব ব্যাংক এতো ভালো কেন বলেন তো? কেন তারা এইরকম নিস্বার্থভাবে বাঙলাদেশরে খালি দিয়াই যাইতাছে? আমার বুঝে আসে না। 🙁
@সাইফুল ইসলাম,
বিশ্বব্যাংক দাতব্য প্রতিষ্ঠান নয় আগেই বলেছি। তারা কি রক্তচোষা শাইলক? হতে পারে, তবে এটাও মনে হয় সত্য যে স্বাধীন বাংলাদেশে সবচেয়ে কম সূদে টাকা ধার তারাই দেয়, এ কারনেই স্বাধীনতার পর থেকে দেশে তারাই একক ভাবে সবচেয়ে বড় অর্থলগ্নি প্রতিষ্ঠান। অন্যরা তাদের চেয়েও বড় শাইলক।
পদ্মা সেতুর ব্যাপারেই কি শুধু তাদের নীতির প্রশ্ন প্রথম দেখা গেছে? অন্য কোথাও নীতির প্রশ্ন দেখা যায়নি? অন্য উদাহরনগুলির ব্যাপারে কি বলেন? বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোথাও এমন কিছু করেনি এমন হলে বুঝতাম যে শুধু বাংলাদেশেই সুনীতি দেখাছে। বাংলাদেশেও আগের সরকারের আমলে ফান্ডিং বাতিল করেছে। পাবলিকের হাবভাবে মনে হয় যে দূর্নীতির ব্যাপারে বিশ্বব্যাংকের এমন পদক্ষেপ এইই প্রথম, এমন নজির আর নেই, দুনিয়াময় আর সবখানে রক্তচোষা বিশ্বব্যাংকের টাকা নিয়ে যার যেভাবে খুশী নয়ছয় করছে তারা অন্য কাউকে কিছুই বলে না, যত নীতির চোখ গরম দেখায় বেচারা বাংলাদেশকে (এখানে দেশ বললাম, তবে আসলে দেশ নয়, সরকারকে)।
বিশ্বব্যাংক সুনীতির ব্যাপারে কতটা সিরিয়াস আমি বলতে পারব না, তবে এইটা খুব সাধারন চোখে বুঝি যে তারা নিজেরা চোর ডাকাত হইলেও অন্য চোরে তাদের টাকা হজম করুক সেইটাও তাদের না চাওয়ারই কথা, এর মাঝে তেমন জটিলতা নাই। আপনে নিজে চোর ডাকাত যাইই হন, আপনি জেনে শুনে যারে চোর সন্দেহ করেন তারে ব্যাবসা করতে টাকা ধার দিবেন?
– তথ্যগুলা আমার নিজের না। মুশকিল হইল বর্তমান পরিস্থিতিতে এইসব সত্য কথা বলা লাইফ রিস্কের সামিল। বিশ্বব্যাংকের বর্তমান লগ্লিকৃত অর্থের পরিমান এইখানে আছে।
তারা পুরোপুরি নিঃস্বার্থভাবে জনসেবা করতে এসেছে এমন দাবী আমি করিনি বা গুনগান করতে চাইনি। শুধু বোঝাতে চেয়েছি যে তাদের কাছে আমাদের স্বার্থ এখনো আছেই, তাদের মত কম সূদে এত বিপুল পরিমান টাকা পাওয়া যায় না, আমি অন্তত এটাই বুঝি। এখন আপনি সেটার ইন্টারপ্রেটেশন যেভাবে খুশী করতে পারেন। The World Bank is the coordinator of aid donors to Bangladesh. It is also the largest lender to Bangladesh (with a cumulative lending of around $12.5 billion in 2007), as well as the most influential, since its independence. It has helped shape the country‘s institutions and policies more than any other agency. বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের সরকারী খাতে নানান অযোগ্য/দূর্নীতির কারনে আজ হঠাত নয়, ‘৯০ থেকেই কঠোর ব্যাবস্থা নিচ্ছে, তাদের কঠোর দৃষ্টিভংগীতে একেবারে আসমান থেকে পড়ার মত কিছু নেই। To address the governance issues, the World Bank imposed more stringent policy conditions in the 1990s, but yet again, according to the World Bank, the government did not fully implement these reforms. এই সূত্রের ২নং টেবিলে দাতা হিসেবে বিভিন্ন সংস্থার কন্ট্রিবিউশনের তূলনামূলক চিত্র পাবেন।
আমার সাধারন কথা হল গুরুত্বপূর্ন দাতার সাথে যেভাবে সরকার ছেলেমানুষের মত খেলছে তা মোটেও দেশপ্রেমের নামে সমর্থন করে যাওয়া যায় না।
সাড়ে ১৭ বিলিয়নের হিসেব পাবেন এখানে, বাংলাদেশের কোন কোন পত্রিকা অবশ্য ৩০ বিলিয়ন দাবী করছে।
– বাংলাদেশরে একা দিয়া যায় নাই। তাদের টাকা আরো বহু দেশ খায়, দরিদ্র দেশগুলিরে সহায়তা করতে তারা কম সূদে আইডিএর মাধ্যমে টাকা দেয়, এইটার ভিতরেও আসলে বিশাল নীল নকশা থাকতে পারে আমি নিশ্চিত। কম সুদে টাকা কেমনে এবং ক্যান দেয় এইটাই তো আসলে সন্দেহজনক, অপরাধের সামিল।
আমার মনেও এইসব বাঁকা প্রশ্ন এতদিন মনে আসেনি, নিজেরা গ্যাঁড়াকলে পড়ার পরেই মনে আসতেছে 😀 । তাদের বহু টাকা বছরের পর বছর নিয়ে যাওয়ার পর মনে নানান কূটপ্রশ্ন আসছে। প্রশ্ন আসতে দোষ নেই, আগেই বলেছি তারা দাতা হাতেম তাই নয়। সে প্রশ্ন মনে হয় এখন গুরুত্বপূর্ন না। বিদেশী টাকায় লাথি মারি বলা খুব সহজ, করতে পারলে আমার স্যালুট, কিন্তু সরকারও জানে সেটা অনেকটা অসম্ভব। জানে বলেই যার বিরুদ্ধে দূর্নীতির অভিযোগ দিয়ে যাচ্ছে আবার তাকে খুশী করতেই নানান দৌঁড়ঝাপ করার বিরল রেকর্ড দেখাইতেছে।