আমদের এবং আমাদের পূর্বপুরুষদের বলা হয় এইপ বা হোমিনয়েড যারা গাছে গাছে ঘুরে বেড়াতো। হোমিনয়েডরা উদ্ভুত হয় পুরাতন পৃথিবীর বানর বা ক্যাটারিনদের থেকে। হোমিনয়েডদের থেকে উদ্ভুত হয় হোমিনিডদের যাদের মধ্যে আছে আধুনিক মানুষ, অস্ট্রালোপিথেসিন, শিম্পাঞ্জী এবং গরিলা। আমরা সবাই একটি বর্গ প্রাইমেটের অন্তর্গত। আস্ট্রালোপিথেসিনরা আমাদের সরাসরি পূর্বপুরুষ যাদের সাথে আমাদের লাইন অফ ডিসেন্ট বিভক্ত হয়েই জন্ম হয় হোমো জেনাসের এবং অস্ট্রালোপিথেসিনরা বিবর্তনের ধারায় বিলুপ্ত হয়ে যায়।। ফসিল রেকর্ড পরীক্ষণের মাধ্যমে তিনটি অনুমিত তত্ত্বের (হাইপোথিসিস) মাধ্যমে বিবর্তন এই ধাপ ব্যাখ্যা করেছেন বিজ্ঞানীরা। যেগুলো হলো, ক) সাভানা হাইপোথিসিস, খ) দ্য উডল্যান্ড হাইপোথিসিস, গ) ভ্যারিয়াবিলিটি হাইপোথিসিস। এর মধ্যে সাভানা হাইপোথিসিসটি সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা হিসেবে বৈজ্ঞানিক মহলে সমাদৃত।

সাভানা হাইপোথিসিসঃ

পাঁচ থেকে আট মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীর আবহাওয়া হঠাৎ করেই ঠান্ডা ও শুষ্ক হতে শুরু করে। আবহাওয়ার এই পরিবর্তনে কারণে আফ্রিকার ঘন জঙ্গলের পরিধি কমে আসে। পূর্বদিকে সৃষ্টি হয় গাছবিহীন শুষ্ক তৃনভূমির, পশ্চিমে ঘন জঙ্গল। প্রাকৃতিক এই পরিবর্তনে পূর্বের এইপরা বিপদে পড়ে যায়। কারণ এতোদিন তারা গাছে গাছে থাকতো, তাদের খাবার দাবারের সংস্থান হতো গাছে গাছেই। এখন সেই গাছই নেই। প্রচুর সংখ্যক এইপরা প্রকৃতির এই পরিবর্তনে বিলুপ্ত হয়ে যেতে থাকে। আর কিছু বৈশিষ্ট্যপূর্ণ এইপ পরিবর্তিত প্রকৃতির সাথে খাপ খাওয়াতে সমর্থ হয়, তারা তৃনভুমিতে জীবন যাপন শুরু করে। এই বৈশিষ্ট্যপূর্ণ এইপ দের খটমটে বৈজ্ঞানিক নাম, Australopith।

শুষ্ক তৃনভুমিতে খাবারের অভাব, পানির অভাব। জীবন সংগ্রামে টিকে থাকার জন্য এখন তাহলে কী কী বৈশিষ্ট্য প্রয়োজন। ১) দলবদ্ধ হওয়া ২) খাবার সংগ্রহে দূর-দূরান্তে ভ্রমণ শুরু করা ৩) যোগাযোগ ব্যাবস্থার উন্নতি। ৪) শিকারের জন্য অস্ত্র সস্ত্র তৈরী করা ও প্রয়োগ জানা। এ কাজগুলো মস্তিষ্কের সহায়তা ছাড়া হবে না, অর্থাৎ বুদ্ধিমান প্রানীরাই একমাত্র উপযুক্ত। কিন্তু তখনও মস্তিষ্কের বিকাশ শুরু হয়নি ফলে বেশিরভাগ Australopith রাই জীবন সংগ্রামে পরাজিত হয়ে হারিয়ে গেল। বৈশিষ্ট্যপূর্ণ কিছু কিছু প্রজাতি টিকে যেতে সমর্থ হলো। সেখান থেকেই ধীরে ধীরে মস্তিষ্কের বিবর্তনের সূচনা। সময়ের সাথে সাথে মস্তিষ্ক বড় হতে থাকলো। এখানে একটা জিনিস উল্লেখ্য “মস্তিষ্ক বড়” বলতে কার মস্তিষ্ক কত বড় সেটা নয়, বরঞ্চ প্রানীর দেহের সাথে মস্তিষ্কের অনুপাত বোঝায়। Australopith দের মস্তিষ্ক ছিল প্রায় (৩০০- ৪০০) সিসি। অন্যদিকে আধুনিক মানুষের মস্তিষ্ক ১৩০০ সিসি। লক্ষ বছর ধরে প্রকৃতিক সাথে টিকে থাকার যুদ্ধের কারণেই মস্তিষ্কের এই বিবর্তন হয়েছে।

“বিবর্তনের মাধ্যমে আমরা এসেছি” প্রমান কী?

বিবর্তনের প্রমান হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে ফসিল রেকর্ডকেই ব্যবহার করা হয়েছে। কিন্তু আনবিক জীববিদ্যা এবং কোষবংশগতিবিদ্যা উদ্ভাবনের পর এখন আর ফসিল রেকর্ডের কোন দরকার নেই। জীনতত্ত্ব দিয়েই চমৎকারভাবে বলে দেওয়া যায় আমাদের বংশগতিধারা। জীববিজ্ঞানের এই শাখাগুলোর মাধ্যমে, আমাদের পূর্বপুরুষ কারা ছিল, তাদের বৈশিষ্ট্য কেমন ছিল, দেখতে কেমন ছিল তারা সব নির্ণয় করা হয়েছে। দেখা গেছে ফসিল রেকর্ডের সাথে অক্ষরে অক্ষরে মিলে গিয়েছে সেটা।
জীববিজ্ঞানীরা আমাদের পূর্বপুরুষের যেই ধারাটা দিয়েছেন সেটা হলোঃ

মানুষ –> নরবানর –>পুরোন পৃথিবীর বানর –> লেমুর

প্রমান ১:

রক্তকে জমাট বাঁধতে দিলে একধরণের তরল পদার্থ পৃথক হয়ে আসে, যার নাম সিরাম। এতে থাকে এন্টিজেন। এই সিরাম যখন অন্য প্রাণীর শরীরে প্রবেশ করানো হয় তখন উৎপন্ন হয় এন্টিবডি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, মানুষের সিরাম যদি আমরা খরগোশের শরীরে প্রবেশ করাই তাহলে উৎপন্ন হবে এন্টি হিউমান সিরাম। যাতে থাকবে এন্টিবডি। এই এন্টি হিউমান সিরাম অন্য মানুষের শরীরে প্রবেশ করালে এন্টিজেন এবং এন্টিবডি বিক্রিয়া করে অধঃক্ষেপ বা তলানি উৎপন্ন হবে। যদি একটি এন্টি হিউমান সিরাম আমরা যথাক্রমে নরবানর, পুরোন পৃথিবীর বানর, লেমুর প্রভৃতির সিরামের সাথে মেশাই তাহলেও অধঃক্ষেপ তৈরী হবে। মানুষের সাথে যে প্রানীগুলোর সম্পর্কের নৈকট্য সবচেয়ে বেশি বিদ্যমান সেই প্রানীগুলোর ক্ষেত্রে তলানির পরিমান বেশি হবে, যত দূরের তত তলানীর পরিমান কম হবে। তলানীর পরিমান হিসেব করে আমরা দেখি, মানুষের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি তলানী পাওয়া যাচ্ছে, নরবানরের ক্ষেত্রে আরেকটু কম, পুরানো পৃথিবীর বানরের ক্ষেত্রে আরেকটু। অর্থাৎ অনুক্রমটা হয়-

মানুষ- নরবানর- পুরোন পৃথিবীর বানর- লেমুর।

অঙ্গসংস্থানবিদদের মতে উল্লিখিত প্রাণীদের মধ্যে সর্বাধিক আদিম হচ্ছে লেমুর, আর সবচেয়ে নতুন প্রজাতি হচ্ছে মানুষ। তাই মানুষের ক্ষেত্রে তলানির পরিমাণ পাওয়া যায় সবচেয়ে বেশি আর লেমুরের ক্ষেত্রে সবচেয়ে কম। দেখা যাচ্ছে বিবর্তন যে অনুক্রমে ঘটেছে বলে ধারণা করা হয়েছে রক্তরস বিজ্ঞানের ‘অ্যান্টিজেন এন্টিবডি’ বিক্রিয়াও সে ধারাবাহিকতাকেই সমর্থন করে।

প্রমান দুইঃ

চোখ মেলে তাকিয়ে দেখুনঃ

১। প্রকৃতিতে মাঝে মাঝেই লেজ বিশিষ্ট মানব শিশু জন্ম নিতে দেখা যায়। এছাড়াও পেছনে পা বিশিষ্ট তিমি মাছ, ঘোড়ার পায়ে অতিরিক্ত আঙ্গুল কিংবা পেছনের ফিন যুক্ত ডলফিন সহ শরীরে অসংগতি নিয়ে প্রাণীর জন্মের প্রচুর উদাহরণ পাওয়া যায়। [[লেজ বিশিষ্ট মানব শিশুর কিছু সচিত্র বাস্তব উদাহরণ পাওয়া যাবে এখান]]। এমনটা কেন হয়। এর উত্তর দিতে পারে কেবল বিবর্তন তত্ত্বই।
বিবর্তনের কোন এক ধাপে অংগ লুপ্ত হয়ে গেলেও জনপুঞ্জের জীনে ফেনোটাইপ বৈশিষ্ট্য হিসেবে ডিএনএ সেই তথ্য রেখে দেয়। যার ফলে বিরল কিছু ক্ষেত্রে তার পূনঃপ্রকাশ ঘটে।

২। বিবর্তন তত্ত্ব অনুযায়ী পুর্ব বিকশিত অংগ-প্রত্যঙ্গ থেকেই নতুন অঙ্গের কাঠামো তৈরির হয়। বিভিন্ন মেরুদন্ডী প্রাণীর সামনের হাত বা অগ্রপদের মধ্যে তাই লক্ষ্যনীয় মিল দেখা যায়! ব্যাঙ, কুমীর, পাখি, বাদুর, ঘোড়া, গরু, তিমি মাছ এবং মানুষের অগ্রপদের গঠন প্রায় একই রকম।

৩। পৃথিবীতে অগুনিত প্রজাতি থাকলেও সবচে মজার ব্যাপার হলো, ভেতরে আমরা সবাই প্রায় একই। আমরা সবাই “কমন জিন” শেয়ার করে থাকি। পূর্বপুরুষের সাথে যত বেশি নৈকট্য বিদ্যমান, শেয়ারের পরিমানও তত বেশি। যেমন, শিল্পাঞ্জি আর আধুনিক মানুষের ডিএনএ** শতকরা ৯৬% একই, কুকুর আর মানুষের ক্ষেত্রে সেটা ৭৫% আর ড্যাফোডিল ফুলের সাথে ৩৩%।

ডিএনএ

মানুষের দেহ অসংখ্য কোষ দিয়ে গঠিত। প্রতিটি কোষের একটি কেন্দ্র থাকে যার নাম নিউক্লিয়াস। নিউক্লিয়াস এর ভেতরে থাকে ক্রোমোজোম, জোড়ায় জোড়ায়। একেক প্রজাতির নিউক্লিয়াসে ক্রোমোজোম সংখ্যা একেক রকম। যেমন মানব কোষের নিউক্লিয়াসে ২৩ জোড়া ক্রোমোজোম থাকে। প্রতিটি ক্রোমোজোম এর ভেতরে থাকে ডিএনএ এবং প্রোটিন। ডিএনএ এক ধরণের এসিড যা দেহের সকল কাজকর্ম নিয়ন্ত্রণ করে। প্রকৃতপক্ষে ক্রোমোজোম এর ভেতরে কি ধরণের প্রোটিন তৈরি হবে তা ডিএনএ নির্ধারণ করে। এসব প্রোটিনের মাধ্যমেই সকল শারীরবৃত্তীয় কাজ সংঘটিত হয়। ডিএন-র আরেকটি কাজ হচ্ছে রেপ্লিকেশন তথা সংখ্যাবৃদ্ধি। ডিএনএ নিজের হুবহু প্রতিলিপি তৈরি করতে পারে, ডিএনএ ই যেহেতু জীবনের মূল তাই আরেকটি প্রতিলিপি তৈরি হওয়ার অর্থই আরেকটি জীবন তৈরি হওয়া, এভাবেই জীবের বংশবৃদ্ধি ঘটে। মোটকথা ডিএনএ জীবনের মৌলিক একক এবং কার্যকরি শক্তি, সেই জীবের সকল কাজকর্ম পরিচালনা করে এবং তার থেকে আরেকটি জীবের উৎপত্তি ঘটায়। ডিএনএ-র মধ্যে তাই জীবের সকল বৈশিষ্ট্য ও বংশবৃদ্ধির তথ্য জমা করা থাকে। ডিএনএ-র মধ্যে থাকে জিন, জিনের সিকোয়েন্সই জীবদেহের সকল তথ্যের ভাণ্ডার।

৪। চারপাশ দেখা হলো। এবার আসুন একবার নিজেদের দিকে তাকাই।

ক) ত্রয়োদশ হাড়ঃ বাংলাদেশ মিলিটারি একাডেমিতে ভর্তি হবার সুযোগ পেলো আমার এক বন্ধু। বাক্স পেটরা বন্দী করে সে চলে গেল ট্রেনিং এ চট্রগ্রামের ভাটিয়ারিতে। ছয় সপ্তাহ ডলা খাবার পর মিলিটারি একাডেমির নিয়ম অনুযায়ী একটি ফাইনাল মেডিক্যাল পরীক্ষা হয়। সেই পরীক্ষায় আমার বন্ধুর দেহ পরীক্ষা করে দেখা গেলো, তার পাঁজরে এক সেট হাড় বেশি। আধুনিক মানুষের যেখানে বারো সেট হাড় থাকার কথা আমার বন্ধুর আছে তেরোটি। ফলস্বরূপ তাকে মিলিটারি একাডেমির প্রশিক্ষণ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হলো।
পরিসংখ্যান থেকে পাওয়া যায়, পৃথিবীর আটভাগ মানুষের শরীরে এই ত্রয়োদশ হাড়ের অস্তিত্ব পাওয়া যায়। যেটি কিনা গরিলা ও শিল্পাঞ্জির শারিরিক বৈশিষ্ট্য। মানুষ যে, এক সময় প্রাইমেট থেকে বিবর্তিত হয়েছে এই আলামতের মাধ্যমে সেটিই বোঝা যায়।

খ) লেজের হাড়ঃ মানুষের আদি পূর্বপুরুষ প্রাইমেটরা গাছে ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য লেজ ব্যবহার করতো। গাছ থেকে নীচে নেমে আসার পর এই লেজের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়েছে। কিন্তু আমাদের শরীরে মেরুদন্ডের একদম নীচে সেই লেজের হাড়ের অস্তিত্ব পাওয়া যায়।

লেজের হাড়
মানুষের লেজের হাড়

গ) আক্কেল দাঁতঃ পাথুরে অস্ত্রপাতি আর আগুনের ব্যবহার জানার আগে মানুষ মূলতঃ নিরামিশাষী ছিলো। তখন তাদের আক্কেল দাঁতের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও আমাদের তা নেই, যদিও আক্কেল দাঁতের অস্তিত্ব এখনও রয়ে গেছে।

ঘ) অ্যাপেন্ডিক্সঃ আমাদের পূর্বপুরুষ প্রাইমেটরা ছিল তৃনভোজি। তৃণজাতীয় খাবারে সেলুলোজ থাকে। এই সেলুলোজ হজম করার জন্য তাদের দেহে এপেনডিক্সে বেশ বড় ছিল। ফলে সিকামে প্রচুর পরিমান ব্যাকটেরিয়ার থাকতে পারতো যাদের মূল কাজ ছিল সেলুলোজ হজমে সহায়তা করা। সময়ের সাথে আমাদের পূর্বপুরুষদের তৃনজাতীয় খাবারের উপর নির্ভরশীলতা কমতে থাকে, তারা মাংসাশী হতে শুরু হলে। আর মাংসাশী প্রাণীদের অ্যাপেন্ডিক্সের কোন প্রয়োজন নেই, প্রয়োজন বৃহৎ পাকস্থলীর। ফলে অপেক্ষাকৃত ছোট অ্যাপেন্ডিক্স এবং বড় পাকস্থলীর প্রাণীরা সংগ্রামে টিকে থাকার সামর্থ লাভ করে, হারিয়ে যেতে থাকে বাকিরা। পূর্বপুরুষের স্মৃতিচিহ্ন হিসেবে সেই অ্যাপেন্ডিক্স আমরা এখনও বহন করে চলছি।

ঙ) গায়ের লোম: মানুষকে অনেক সময় ‘নগ্ন বাঁদর’ বা ‘নেকেড এপ’ নামে সম্বোধন করা হয়। আমাদের অনেক বন্ধুবান্ধবদের মধ্যেই লোমশ শরীরের অস্তিত্ব দেখা যায় এখনো। আমরা লোমশ প্রাইমেটদের থেকে বিবর্তিত হয়েছি বলেই এই আলামত এখনো রয়ে গেছে।

এই তো গেলো মানুষের পূর্বপুরুষদের কথা। আচ্ছা এমন কী হতে পারে না, আফ্রিকা বাদে অন্য কোথাও অন্য কোনভাবে মানুষের ভিন্ন একটি প্রজাতির উদ্ভব হয়েছে?

মানুষেরও কী আরও প্রজাতি আছেঃ

প্রকৃতির দিকে তাকিয়ে থাকলে দেখা যায়, হরেক রকমের ফিঙ্গে পাখি, বিভিন্ন রকমের বাঘ, ভালুক। প্রায় সব প্রাণীরই বিভিন্ন প্রজাতি আমাদের চোখে পড়ে। “ট্রি অফ লাইফ” এর শাখা প্রশাখায় তারা একে অপরের থেকে আলাদা হয়েছে।

এ আলোচনার আগে জেনে নেই প্রজাতি বলতে আসলে কী বোঝানো হয়। প্রজাতি হলো এমন কিছু জীবের সমষ্টি যারা শুধু নিজেদের মধ্যে প্রজননে সক্ষম। যেমন ধরুন আমরা অর্থাৎ আধুনিক মানুষ বা homo sapiens একটি প্রজাতি যারা আর কোন প্রজাতির জীবের সাথে প্রজননে অক্ষম।

পৃথিবীজুড়ে এখন শুধু আধুনিক মানুষ চোখে পড়লেই ভেবে নিবেন না, মানুষের একটিই প্রজাতি। ২০০৩ সালের অক্টোবরে বিজ্ঞানীরা ইন্দোনেশিয়ার ফ্লোরস দ্বীপে মাটি খুঁড়ে পান এক মিটার লম্বা এক মানুষের ফসিল- কঙ্কাল। কার্বন ডেটিং এর মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা গণনা করে দেখেন, নব্য আবিষ্কৃত এই মানুষটি মাত্র ১২,০০০- ১৪,০০০ হাজার বছর আগেই এই দ্বীপটিতে বাস করতো। বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে দেখা গেছে, তারা আমাদের হোমিনিড (মানুষ এবং বনমানুষ বা ape দেরকে hominid গ্রুপের অন্তর্ভুক্ত ধরা হয়) গ্রুপের অন্তর্গত হলেও তাদের চোয়াল এবং মস্তিষ্কের মাপ আধুনিক মানুষের মতো নয়। উচ্চতায় মাত্র ১ মিটার। অপেক্ষাকৃত লম্বাটে হাত। আধুনিক মানুষের মস্তিষ্ক যেখানে প্রায় ১৩৩০ সিসি সেখানে তাদের মস্তিষ্ক মাত্র ৩৮০ সিসি। তাহলে কী তারা আধুনিক মানুষের মতো অস্ত্র বানিয়ে শিকার করার মতো বুদ্ধিহীন, গাছে গাছেই যাদের সময় কাটানো বানর কিংবা শিল্পাঞ্জি ছিল? এই প্রশ্নের জবাব পাওয়া যায়, তাদের ফসিলের পাশে রাখা ১২,০০০- ৯৫,০০০ হাজার পুরানো পাথুরে অস্ত্র দেখে- যা কিনা শুধুমাত্র বুদ্ধিহীন প্রাণীদের পক্ষেই তৈরি করা সম্ভব। বিজ্ঞানীদের ধারণা, অনেক আগেই বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া homo erectus এর একটি দল এই দ্বীপে এসে বসবাস শুরু করে। হাজার হাজার বছর ধরে এই দ্বীপে বিচ্ছিন্নভাবে বাস করার ফলে তারা বিবর্তিত হতে হতে এক সময় ভিন্ন একটি প্রজাতিতে রূপান্তরিত হয়। আধুনিক মানুষের আরেকটি প্রজাতি! কিন্তু ১২,০০০ বছর আগে দ্বীপটিতে একটি ভয়াবহ অগ্ন্যুতপাতের ফলে অনান্য প্রাণীর সাথে তারাও বিলুপ্ত হয়ে যায়। পরবর্তীতে আরও অনেক গবেষণার মাধ্যমে দেখা যায়, এই বামন মানুষদের মতো আরও অনেক প্রজাতির সাথে একসময় আমরা এই পৃথিবী ভাগ করে নিয়েছি- যারা পরবর্তীরে বিভিন্ন কারণে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। টিকে রয়েছে শুধু আধুনিক মানুষ বা homo sapiens।

মানুষের বিবর্তনের আলচনার শেষ পর্যায়ে এসে আরেকটা জিনিস পাঠকের মনে হতে পারে, আচ্ছা বিবর্তনের মাধ্যমে আমরা (আধুনিক মানুষরা) এক উন্নত প্রজাতি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছি। আমাদের পরবর্তী গন্তব্য কোথায়? উন্নতির পরবর্তী ধাপ কী?

এমন প্রশ্ন আসাটাই স্বাভাবিক। তাই বিবর্তন তত্ত্বের একটা ব্যাপার এখানে পরিষ্কার করে বলে দেওয়া দরকার। বিবর্তন কিন্তু মই বেয়ে বেয়ে উন্নতির শিখরে আরোহন করা নয়। এটা অনেকটা ট্রেডমিলে দৌড়ানোর মতো, যেখানে মূল ব্যাপার হচ্ছে টিকে থাকা। প্রকৃতিতে তেলাপোকার মতো প্রানী দীর্ঘদিন উন্নতি না করেই টিকে আছে, আর ডায়নোসার এর মতো অতিকায় প্রানী বিলুপ্ত হয়ে গেছে। সুতরাং উন্নতি হতেই হবে এমন কিছু বিবর্তন দিব্যি দিয়ে বলে না।

তথ্যসূত্রঃ
১। মাইক্রোসফট এনকার্টা> হিউম্যান এভোলিউশন
২। বিবর্তনের পথ ধরে- বন্যা আহমেদ