পূর্ব থেকে পশ্চিম
পরশ পাথর
পর্বঃ ১
ধূলিবালিময় দূষিত শহর হলেও খুব ভোরবেলাতে ঢাকার বাতাস কিন্তু মোটামুটি সতেজ একটা অনুভূতিই এনে দেয়। তাই গাড়ির সাইডগ্লাসটাকে আরো একটু টেনে দিতে একটুও আপত্তি হয়নি আমার। এয়ারপোর্ট রোডের একপাশ ধরে একটানা গাড়ী চলছে। কিছুক্ষণ পরই আমার ফ্লাই করবার কথা। চুপচাপ নিজের মনে নিজেই ভাবলাম, এই ঢাকা শহরটাও দেখি কম ছলনা জানে না। রূপের তাহার কমতি থাকতে পারে, তাই বলে ছলনা করতে বাকী রাখেনি একটুও। তা না হলে, ধূলিবালিময় দূষিত এই শহরটা ছেড়ে যেতেইবা শুধু শুধু আমার কষ্ট হবে কেন?
মায়ের কথা বলি, বাংলার মায়েদের কাজই হচ্ছে ছেলে-মেয়ে দেশের বাইরে যাবার সময় কান্নাকাটি করে ভাসিয়ে ফেলা। আমার বিরক্ত হবার ভয়ে মা-আমার মনের মাধুরী মিশিয়ে কাঁদতে না পারলেও খুব একটা কমও যাননি।অন্যদিকে, অযথাই কিছু সাবধানতার বাণী আর তথাকথিত সুপরামর্শ দিয়ে বাবা যথারীতি তার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন সম্পন্ন করলেন। গতকিছুদিন ধরে আমার ছোটবোনেরা শহর ঘুরে ঘুরে আমার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনেছে আর ইচ্ছেমত চোখের পানি মুছেছে। হয়তো এ-সব কারণেই বাংলায় ‘পরিবার’ আর ‘বন্ধন’ শব্দদুটো একটি আরেকটির পরিপূরক হয়ে উঠেছে। মাঝখানে অনুঘটক হিসেবে কাজ করে ‘মায়া’।
অথচ কি অদ্ভূত! সবকিছু ফেলে রেখে আমার কষ্ট হচ্ছে ঢাকা শহরের জন্য, আমার ফেলে আসা শৈশবের জন্য। এতদিন যেন আমার শৈশবের স্মৃতি বুকে আগলে আমি বেড়ে উঠছিলাম এই-শহরে।আমি নিয়তির কাছে ঋণী, এ-জন্য যে আমার শৈশবটা গ্রামে কেটেছে। কৃষকের সাথে কেটেছে; জেলেদের সাথে কেটেছে, কামারের-কুমোরের সাথে কেটেছে; ডানা-ভাঙ্গা শালিকের সাথে, কলমির কাঁকরোল, বাঁধ-ভাঙ্গা-বৃষ্টির, আচানক-বিজলীর আলোকের সাথে কেটেছে। আমার গ্রীষ্ম-বর্ষা, আমার শরৎ শৈশব, আমার হেমন্ত কৈশোর, আমার শীত-বসন্তের প্রাকৃতিক জীবন, আমি যাপন করেছি সেখানে।আমার সেই জীবনের কথা মনে পড়ছে, আর মনে পড়ছে মহর্ষির মত হেঁটে যাওয়া আমার শৈশবের বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের কথা,দাদী-নানীদেরর মত বয়স্কদের কথা। মনে পড়ছে তাদের চাহনির কথা; তাদের চোখে মুখে যেন থাকতো গত জনমের জমে থাকা অভিজ্ঞতার ছায়া, যেন তারা জানে সব ইতিহাস, আমার ইতিহাস, আমাদের ইতিহাস, পূর্বপুরুষের ইতিহাস,উৎপত্তির ইতিহাস।
গাড়ী থেমে যাওয়ার ধাক্কায় হঠাৎ ঘোর ভাঙ্গে। সবকিছু আরো একবার চেক করে নিলাম। সবকিছু বুঝে নিয়ে এয়ারপোর্টের ভিতরে ঢোকাবার আগ মুহূর্তে মা শেষবারের মত আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। নিজেকে নিজে প্রশ্ন করি, পৃথিবীর সব ‘মা’ কি এই একই কাজ করে? হিটলারের মা’ও কি তার ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতো? কাল-কালচারের বিবর্তনে জাতিতে জাতিতে এসেছে পরিবর্তন, এসেছে বৈচিত্র্য; কিন্তু পৃথিবীর সবচেয়ে আদিম স্নেহ, মাতৃস্নেহের পরিবর্তন ঘটেনি একটুও; এখানে বিবর্তন বলে কিছু নেই,নেই কোন রূপান্তর; যুগে-যুগে, কালে-কালে, দেশে-দেশে, কি জাতিতে, কি প্রজাতিতে, এর একই রূপ।
উপমহাদেশের বাইরে এটাই আমার প্রথম যাওয়া, প্রথম ফ্লাই করা।তাই একটু তাড়াতাড়ি সিকিউরিটি চেক-এর লাইনে চলে গেলাম। তারপর কাতার এয়ারওয়েজের লাইনে দাঁড়ালাম বোর্ডিং পাস নেবার জন্য।এই এয়ারয়েজ সিলেকশান আর এয়ার টিকিট কাটা দেখি রীতিমত নাটকীয় ব্যাপার।এ-ব্যাপারে অভিজ্ঞরা তাদের সব পরামর্শ কি আমাকেই দিয়ে দিল, না কি সবাইকে তারা এ-রকম বিনা পয়সার পরামর্শ দিয়ে যায়, সেটা ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না। অবশ্য এ-দূর্দিনের বাজারে সস্তা পরামর্শ ছাড়া অন্য কিছু আশা করাটাও মুশকিল।কেউ বলে ‘গালফ এয়ার’ ত্রিশ বছর আগের বিমান দিয়ে চালায়; কেউ আবার সংশোধন করে দিয়ে আঙ্গুলে আঙ্গুল চেপে হিসেব করে বলে দিল, না ঠিক ত্রিশ বছর না, ওরা আসলে ঊনত্রিশ বছর আগের বিমান দিয়ে চালায়। কেউ বলল, ‘এমিরেটস; এর উপর কোন বিমান হয় না কি, এটা হল সুপার ক্লাস; কেউ বলে, কাতারের আমীর প্রতি মাসে একটা করে নতুন বিমান ক্রয় করে, কাতারের উপর সার্ভিস দেয়া অসম্ভব; কেউ আবার তামাশা করে বলে,‘জেট এয়ার’-এও যাওয়া যেতে পারে, ওটাতে বিমানে উঠেও টিকিট কাটা যায়, ওরা বিমানের দরজায় দাঁড়িয়ে ঢাকার রাস্তার ৭ নাম্বার গাড়ীর মত যাত্রী ডাকে। মজার ব্যাপার হচ্ছে এরা এমন ভাবে নাম্বার সহ বিমানের চৌদ্দ জেনারেশানের খবর বলে, বোয়িং সেভেন জিরো ধ’রে যে বলতে শুরু করে, মনে হয় এরা গত তিনপুরুষ ধরে বিমান কেনা-বেচা ব্যাবসার সাথে জড়িত। যাই হোক, এয়ারওয়েজের লাইন ছেড়ে ধীরে ধীরে ইমিগ্রেশান কাউন্টারের দিকে যেতে থাকলাম।
যে ‘ভদ্রলোক’ ইমিগ্রেশানের কাগজপত্র দেখে একজন একজন করে ভিতরে প্রবেশ করাচ্ছেন তাকে আসলে শুধু ‘লোক’ বলতে পারলেই খুশি হতাম। একজনের জিনিসপত্র দেখতেই এত সময় নিচ্ছেন, তার ভাব দেখে মনে হচ্ছে এয়ারপোর্টগুলোতে ‘বাহাত্তর ঘন্টায় একদিন’। আরেকটু হলেই হয়ত বলে বসবেন, ‘আপনারা একটু লাইনে দাঁড়ান, আমি একটু ঘুমিয়ে নিই।’ আশার কথা হচ্ছে কারো সাথেই তিনি কোন ঝামেলা করছেন না, সব দেখে-শুনে, এটা-সেটা কি সব বলে ভিতরে যাবার অনুমতি দিয়ে দিচ্ছেন।জিয়া ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট নিয়ে এমনিতেই নানা-রকম গল্প প্রচলিত আছে। এখানকার লোকজন তাজমহলেরও নাকি অসংখ্য খুঁত বের করে ফেলতে পারেন; তারা নাকি দশমিনিটেই সিদ্ধান্তে পৌঁছে যেতে পারেন, সিলেটের শাহজালালের মাজারের কাছে তাজমহল আসলে কিছুই না, তাজমহলতো মুরগীর ডিম রংয়ের একটা দালান মাত্র। অতএব, কোনো ঝামেলা যেহেতু করছেন না, কিছুটা দেরী হলেও লোকাটকে আমার ফেরেশতা টাইপ বলেই মনে হচ্ছে, আমি দূর থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে দেখছি।
কিছুক্ষণ পর আমার পালা এলো। স্বাভাবিকভাবে ভদ্রলোক আমার পাসপোর্ট ভিসা সব কাগজপত্র দেখে নিলেন, সব ঠিক আছে। হঠাৎ করে মনে হলো তিনি কিছু একটা পেয়ে গেলেন, তার অলস ভাব কেটে গেল। তৎপর ভঙ্গিমায় আমাকে বলেন, ‘আপনার জিও কোথায়?’। আমি প্রশ্নবোধক ভঙ্গিতে তাঁর দিকে তাকাতেই বলে,‘জিও,গভর্মেন্ট অর্ডার।’ আমি বললাম,‘জিও-তো নেই’। তিনি বলেন,‘আপনি যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সেহেতু আপানার দেশের বাইরে যেতে হলে অবশ্যই ‘জিও’ লাগবে।অতএব, ‘জিও’ না হ’লে আপনাকে যেতে দেয়া আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।’ এমন বিজয়ীর ভঙ্গিতে লোকটা কথাগুলো বলছিলো মনে হচ্ছে এইমাত্র সে তার সমস্ত চাকুরীজীবনের সবচেয়ে গৌরবজনক কাজটা করার সুযোগ পেয়ে গেলো। অথচ কিছুক্ষণ আগেও তাকে আমার ফেরেশতা ব’লে মনে হচ্ছিলো। লাইনে দাঁড়ানো অন্য লোকগুলো সবাই কৌতুহলী ভঙ্গিতে ধারণা করার চেষ্টা করল, ঠিক কি ব্যাপারে আমার সাথে সমস্যাটা হচ্ছে। তারা তাদের সমস্ত চোখমুখ দিয়ে বুঝাতে চেষ্টা করল আমার জন্য প্রকৃত অর্থেই তাদের খুব কষ্ট হচ্ছে, কিন্তু ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও তারা কিছুই করতে পারছেন না। আর অন্যদিকে আমি চিন্তা করতে চেষ্টা করলাম কী হতে পারে এর সমাধান আর কীই বা হতে পারে পরিণতি।…(চলবে)
পরশপাথর
সেপ্টেম্বার ০৮,২০০৯
Part1 valo legechhe. Jai somoy noshto na kore Part2 pori…
রেটিং কি বন্ধ না আমার পিসি তে লিঙ্ক আসছে না – সেটা বোঝা যাচ্ছে না।
যাই হোক নিটোল একটি লেখা।লেখককে ধন্যবাদ। 🙂
@আগন্তুক,
স্বাগতম আপনাকে।
আর অনেক ধন্যবাদ,মন্তব্যের জন্য।
~পরশ
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিলাম। এখন থাকি ফ্লোরিডায়।
জানি না অপ্রাসঙ্গিক হবে কিনা তবু নিজের কথা বলতে ইচ্ছে করছে। আমি যেবার নেদারল্যান্ড সরকারের একটা বৃত্তি নিয়ে পড়তে যাচ্ছিলাম তখন কিন্তু GO লাগে নি, শুধু বৃত্তির চিঠি আর বিশ্ববিদ্যালয়ের একটা চিঠি সাথে নিয়েছিলাম যাতে বলা ছিলো ফিরে এলে, একি পদে বহাল থাকতে পারবো।
বছর দুয়েক পর যখন ইমিগ্রেশন নিয়ে আমেরিকায় এলাম তখন ছুটি নিয়ে এসেছিলাম, অনেকের মতো আমারো পরিকল্পণা ছিল বাবা মা কে দেখে ফিরে যাবো। ফেরা হয় নি, হয় না।
এয়ারপোর্টে পরশ পাথরের সেই জহুরী চোখের ভদ্রলোক মতোই একজন আমার পাসপোর্টটা ঊল্টে পালটে দেখলেন, বললেন যেতে পারব না GO নেই। ভাবলাম যখন দেখার কথা ছিলো তখন দেখে নি, এখন অন্য ভাবে যাচ্ছি, এখন দেখতে চাইছে। বললাম এখন কেনো লাগবে? ভদ্রলোক কারণ দেখাতে না পেরে বললেন ঠিক আছে যান, যাবার আগে দোয়া করে যান। ততো দিনে আমার ঘুষের টারমিনোলজি শেখা হয়ে গেছে। হেসে এগিয়ে গেলাম, ভদ্রলোক পেছোন থেকে বললেন আচ্ছা ঠিক আছে আপনার চশমাটা দিয়ে যান। এবারে হাসি চেপে রাখতে পারলাম না। কল্পনার চোখে দেখলাম আমার চশমাটা ওনার চোখে, ভাবলাম বিনে পয়সায় পেলে কেউ কেউ আলকাতরাও খায়!
আমার হাসি দেখে ভদ্রলোক বিব্রত বোধ করেছিলেন তাই আর কথা বাড়াননি।
@কেয়া,
আমারও প্রায় আপনার মতই ঘটনা।
আমি অবশ্য যৌক্তিক কারণ দেখাতে না পারলে সহজে ছেড়ে দিতাম না।তবে, এ-রকম একটা সময়ে কেউ আসলে ঝামেলা করতে চায়না। তাই ইমিগ্রেশান অফিসার যা-ই বলে,তা-ই শুনে ঘুষ দিয়ে হলেও সবাই পার পেতে চায়।
আপনি কি ঢাবি’তেই ছিলেন নাকি কিংবা এখন কোথায় সেটা কিন্তু বুঝা গেলো না।
ভালো থাকুন।
গ্রাম-বাংলার মানুষেরা এখনও যেমনি সহজ, সরল ও মানবিক তেমনি আপনার লেখা পড়লে মন একেবারে সরল মানবিকতায় প্রান ছুঁয়ে যায়।অধীর আগ্রহে আছি আপনার অন্যান্য পর্ব পড়ার জন্য।পূর্বের লেখা শেষ হলে পশ্চিমের আপনার হদয়ভরা প্রাণের কথাগুলোও জানাতে ভুল করবেন না আশা করি।পশ্চিমে আপনাকে আন্তরিক স্বাগতম।
ভালো থাকুন।
মামুন।
০৯০৯০৯
@মামুন,
কিচ্ছু লুকোবোনা, সব বলে দেব।আপনারা সবাই মিলে পশ্চিমকে এত যান্ত্রিক আর ব্যস্ত করে রেখেছেন, লেখার সময় বের করাইতো দেখছি মুশকিল।
অনেক ভালো থাকুন।
@পরশ,
এটা মনে হয় ঠিক বললেন না, যদিও শতকরা ৯০ ভাগের বেশী মানুষ পশ্চীম সম্বন্ধে যান্ত্রিক/ব্যস্ত তেমন কথাই বলবেন। এটা অনেকটা দৃষ্টিভংগীর উপর নির্ভর করে। আমার তো দেশে গেলেই বরং মনে হয় মানুষের জীবন এত যান্ত্রিক ও জ়টিল, বলতে গেলে কাউকেই দেখিনি রাত ৮ টার আগে বাড়ি ফিরে। যাই হোক, আমরা কিন্তু এখানের বেশীরভাগ পাঠক/লেখকই পশ্চীমেরই বাসিন্দা।
আপনার সাথে প্রথম বাক্য বিনিময়েই ঝগড়া বাধাতে চাই না, পরবর্তী অংশগুলির অপেক্ষায় থাকলাম।
আমিও যখন প্রথম ষ্টুডেন্ট হিসেবে দেশ ছাড়ি তখন আপনার মতই ইমিগ্রেশন বিড়ম্বনার মুখোমুখী হতে হয়েছিল। ইমিগ্রেশন অফিসার সব দেখে শুনে বললেন যে ছাত্র হিসেবে বিদেশে যেতে নাকি শিক্ষা মন্ত্রনালয়ের কি এক ছাড়পত্র লাগে। আমার তখঙ্কার অবস্থা; এত কাঠখড় পুড়িয়ে আমেরিকা আসার স্বপ্নের না এখানেই শেষ হয়। তবে সমাধানেও তেমন দেরী হয়নি। যস্মিন দেশে যদাচার; আমার সাথে বিমানবন্দরেরই একজন কর্মকর্তা ছিলেন, এক বন্ধুর সহৃদয় বাবা তাকে কেন যেন আমার সাথে গাইড হিসেবে দিয়েছিলেন, তার সদয় হস্তক্ষেপেই সেযাত্রা রেহাই মিলে।
@আদিল মাহমুদ,
আমি আসলে পশ্চিমে একেবারেই নতুন, কিছু মন্তব্য করবার মত সময় আসলে হয়ওনি।তবু প্রথমে দেখে যা মনে হচ্ছে, হয়ত ভুল করেই মনে হচ্ছে, তাই বললাম।
প্রথম বাক্য বিনিময়তো শেষ, এবার নিশ্চিন্তে ঝগড়া করতে পারেন। 🙂
ভাল লেগেছে। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় আছি। ধন্যবাদ।
@সৈকত চৌধুরী,
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। এক সপ্তাহের মধ্যেই পরবর্তী পর্ব দিয়ে দেব।
ভালো থাকুন।
গল্পের আমি কিন্তু এখনো পশ্চিমে আসতে পারি নি, তার আগেই স্বাগতম।আপনাকে নিয়ে আর পারা গেলো না, আমি যে তরুণ শিক্ষক সেটাইবা আমি কখন বললাম?
সহকর্মীরা বিদেশ যাওয়ার সময় দেখি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে NOC (No Objection Certificate) নিয়ে নেয়।কিন্তু সেটা নিয়ে কখনো ইমিগ্রেশানে গেছে বলে শুনিনি।আসলে আমারই ভুল, নিজেই খুঁজে বের করা উচিৎ ছিলো কি লাগবে আর কি লাগবে না।
আর শিক্ষক বলেন আর যাই বলেন, প্রবীণরাতো চরিত্র ঠিক রাখার পরামর্শ দিতে দিতেই শেষ।তারা অন্য কিছু মনে করিয়ে দেয়ার সময় পেল কোথায়?
@পরশ,
গল্পের আপনি যে পশ্চিমে এসে গেছেন সেটা আপনার লেখার শিরোনাম থেকেই বোঝা যায়।
আপনি যে তরুণ শিক্ষক সেটা আপনি বলেননি, এটা ঠিক। কিন্তু ইমিগ্রেশন অফিসারের মুখ দিয়ে তথ্যটা বের হয়েছে যে আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। নবীন শিক্ষক সেটা বোঝার জন্যে খুব একটা কষ্ট করতে হয়নি আমাকে। এর স্বপক্ষে অসংখ্য তথ্য আপনার লেখাতেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। যাবার মুহুর্তে মা মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে, ছোট বোনেরা (স্ত্রী নয়) প্রয়োজনীয় কেনাকাটা করে দিচ্ছে, শুধু এই তথ্যইটুকুতোই যথেষ্ট এটা বোঝার জন্যে।
ইমিগ্রেশনে NOC -র প্রয়োজনীয়তা ছাড়া সহকর্মীরা খামোখা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তা নেবে কেন?
প্রবীণেরা যে পরামর্শ দিয়েছেন সেটা যেন পশ্চিমে ঠিক থাকে। :laugh:
@ফরিদ,
NOC সহকর্মীরা যতটুকু না নেয় ইমিগ্রেশান অফিসার সামলানোর জন্য তার চেয়ে বেশি নেয় নিজ ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান বা ডিরেক্টরকে সামলানোর জন্য? আপনি হয়তো জানেন, ‘আপনি কার পারমিশান নিয়ে এটা করেছেন, সেটা করেছেন’…এগুলো বাংলাদেশে খুব কমন প্রশ্ন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তার উত্তর হচ্ছে এই NOC.
স্ত্রী নেই বলে আপনার পরের ধারণাটা খুব সহজেই উড়িয়ে দেয়া যেত; ‘আমার স্ত্রী ছেলে-মেয়ে নিয়ে দেশের বাইরে থাকে,’ বা ‘ডিভোর্স হয়ে গেছে, এ-জন্য বোনেরা কেনা-কাটা করে দিচ্ছে’- টাইপ কথা বার্তা বলে।কিন্তু বললাম না, কারণ আসলেও একটা স্ত্রীর খোঁজে আছি।শেষে আপনার সাথে বিতর্ক করতে গিয়ে আমার বিয়ে-শাদীই না বন্ধ হয়ে যায়।
মুক্তমনার মোডারেটরের চোখ ফাঁকি দিয়ে দেখেন না এখানে ‘মানিক-জোড়’ বা ‘বর-কনে’ টাইপ কোন একটা সেকশান খোলা যায় কিনা? এতে সামাজিক কার্যক্রমে মুক্তমনার অবদান আরো বৃদ্ধি পেতে পারে আর আমাদেরও একটা গতি হতে পারে। 🙂
প্রবীণদের পরামর্শ এবং তারপর আপনার রেকমেন্ডেশান, অতএব পশ্চিমে সেটা ঠিক থাকবে।কিন্তু পূর্বের ব্যাপারে আপনাদের কোন আপত্তি কিন্তু নেই। সেখানে কিছু হলে আমি দায়ী না, আপনারা সামলাবেন।
পশ্চিমে স্বাগতম। আনন্দময় হোক পশ্চিমের সময়টুকু।
জিও সমস্যার সমাধান কিভাবে হলো সেই কৌতুহলে আছি।
ইমিগ্রেশন অফিসার সঠিক বিষয়টাতেই আপনাকে আটকে ছিল। বেশ অবাকই হচ্ছি আপনার জিও না থাকা বা জিও সম্পর্কে ধারনা না থাকায়। যদিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ আরো কিছু পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় পূর্ণ স্বায়ত্বশাসন ভোগ করে, তারপরও ওই সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদেরকে প্রজাতন্ত্রেরই কর্মচারী বিবেচনা করা হয়। ফলে, তাদের জন্যে জিও বিদেশগমনের অপরিহার্য শর্ত।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে যে, জিও-র জন্য মন্ত্রনালয়ে যেতে হয় না, নিজস্ব প্রশাসনই জিও বরাদ্দ করতে পারে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা হরহামেশাই বিদেশ যাচ্ছেন, ফলে জিও বিষয়টা একটু প্রবীন শিক্ষকদের কাছে অত্যন্ত সুপরিচিত বিষয়। নবীন শিক্ষক হিসাবে আপনার এই বিষয়টাতে ধারনা নাও থাকতে পারে, কিন্তু অন্য সহকর্মীদের মধ্য থেকে কেউ একজন আপনাকে এই বিষয়টা কেন মনে করিয়ে দিল না সেটা ভেবেই আশ্চর্য হচ্ছি।