কক্সবাজারের চকোরিয়া থেকে আরেকটু ভেতরে এক চিলতে এক পাহাড়ি নদীর দেখা মেলে, রাখাইন ভাষায় নদীর নাম হারবাং। এই হারবাং এর নামেই সেখানে গড়ে উঠেছে নদীর পাড় ঘেঁসে ছবির চেয়েও সুন্দর, আর বেশ পুরনো একটি রাখাইন গ্রাম। সেখানে চোখে পড়ে সুশৃঙ্খল সারিবদ্ধ দোতলা কাঠের বাড়ি। কোন কোনটির বয়স আবার ৫০ ছাড়িয়ে গেছে।…
একবার রাখাইন স্টুডেন্টস অর্গানাইজেশন অব বাংলাদেশ (আরএসওবি)-এর সভানেত্রি ক’চিন ঠে ডলির আমন্ত্রণে রাখাইনেদর বর্ষ বরণ উৎসব সাংগ্রাং-এ বেড়াতে যাওয়া হয় ওই গ্রামে। বলাভাল, এই লেখকের কক্সবাজার, বাঁশখালি, চৌফলদণ্ডি ও টেকনাফের সমস্ত রাখাইন পাড়া ঘোরার পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিল। কিন্তু হারবাং-এর অভিজ্ঞতা আগের সব অতীতকে ছাপিয়ে যায়।
হারবাং গ্রামে ঢোকার মুখেই একটি ঝুপড়ি চায়ের দোকানে লক্ষ্য করা যায়, এক আমুদে বাঙালি বুড়োর সঙ্গে ডলির অনর্গল রাখাইন ভাষায় সংলাপ।
পরে ডলি জানান, অনেক বছর ধরে হারবাং-এ থাকতে থাকতে অনেক বাঙালি সহজেই রাখাইন ভাষা রপ্ত করেছেন। হারবাং-এর আশেপাশের অনেক বাঙালিই নাকি কাজ চালানোর মতো রাখাইন ভাষা জানেন। তবে দুই জাতির মধ্যে সাধারণ কথাবার্তা হয় চট্টগ্রামের আঞ্চলিক বাংলাতেই।
ডলির বাবা রোগে ভুগে গত হয়েছেন মাত্র। ওর মা ছোট ছোট ছেলেমেয়ে নিয়ে পড়েছেন এক অনিশ্চিত জীবনের মুখে। তিনি দুঃখ করে বলতে থাকেন বছরের পর বছর তাদের শাল – সেগুনের বাগান ও জায়গা-জমি নানান মোকদ্দমা এবং ফন্দি-ফিকিরে স্থানীয় সংখ্যাগুরু বাঙালিদের হাতিয়ে নেওয়ার ইতিকথা।…
ডলিদের বাড়িটি বেশ সুন্দর শক্তপোক্ত কাঠের। মোটা মোটা গাছের গুড়ির ওপর মাচাং করে বিশাল বাড়িটি বসানো। সেখানে যাওয়া-আসার জন্য রয়েছে একাধিক কাঠের সিঁড়ি। বাড়ির উত্তর ও পূর্ব দিকে রয়েছে বেশ চওড়া দুটি ঝুল বারান্দা। সেখানে রাখা ছোট মাপের কয়েকটি বর্মি আরাম কেদারায় গা এলিয়ে বসলে গ্রামের নিত্যদিনের আটপৌরে নানা দৃশ্যপট চোখে পড়ে।
ওই ভ্রমন বেলার এক বিকেলে ডলি তাদের পুরো গ্রামটি ঘুরে দেখান। নিয়ে যান আরএসওবি’র কর্মী, তার আত্নীয়-স্বজন, বন্ধু বান্ধবের বাসায়। জানা গেল, পড়াশুনা, চাকরি-বাকরি ও ব্যবসা-বাণিজ্যে ছেলেদের চেয়ে রাখাইন মেয়েরাই অনেক বেশী এগিয়ে। তাই অধিকাংশ মেয়েদের কথাবার্তায় তেমন কোন জড়তা নেই।
এ বাসা সে বাসা ঘুরে এক সময়ের ঐতিহ্যবাহী রাখাইন তাঁতের অতীত সম্পর্কে জানা যায়। অন্যসব দুর্দশার মত একই পরিনতি হয়েছে রাখাইন তাঁত শিল্পের। প্রায় সব রাখাইন মেয়েই এক সময় কিছু না কিছু তাঁতের কাজ জানতেন। তবে সুতা আর ক্রেতার অভাবে এই শিল্পটি এসে পৌঁছেছে একেবারে বিলুপ্তির শেষ প্রান্তে। তাছাড়া মিলের সস্তা দরের কাপড়ের সঙ্গে রাখাইন তাঁতের কাপড়ও প্রতিযোগিতায় ক্রমেই মার খাচ্ছে।
তবে প্রযুক্তিগতভাবে রাখাইন তাঁত বেশ উন্নত। পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসী পাহাড়িদের সরল প্রযুক্তির কোমড়-তাঁতের চেয়ে এর গঠনশৈলি ও বৈশিষ্টে বিস্তর তফাৎ রয়েছে। তাই রাখাইন তাঁতের বয়নে নানা রকম কাপড়ে ফুঁটিয়ে তোলা যায় বাহারি অনেক নকশা; এ সব শিল্প-নৈপুন্যে যেন প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত মেলে হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী এক জনজাতির রাজ্য হারানোর বেদনার্ত অতীত।
একজন রাখাইন মেয়ে এমনই সব তথ্য দিয়ে মাচাং ঘরের নীচের এক খুপড়ির অন্যসব ভাঙাচোরা আসবাবপত্র ও বাতিল মালামালের ভেতর থেকে বের করে দেখান, ব্যবহারের অভাবে তার নিজস্ব দুটি তাঁতের মধ্যে একটিতে এরই মধ্যে ঘুঁনে ধরেছে!
পরে সাংগ্রাং উৎসবে বুদ্ধ পূজা, আনন্দ-হাসি-গান, ছেলেমেয়েদের ঐতিহ্যবাহি পানি খেলা, অবিরাম বরাহ-শামুক-ঝিনুক-কাঁকড়ার মাংস সহযোগে ‘দারা’ নামক কড়া চোলাই খেতে খেতে পৌঁছে যাওয়া হয় অন্য এক অলৌকিক জগতে। রাখাইন এক প্রবাদে নাকি বলা হয়েছে:
যদি তুমি মদ খাও, তোমার ভেতরে প্রবেশ করবে একজন ছোট মানুষ।
তো ওই সব হট্টোগোলের ভেতর রাখাইন নেত্রীর জনৈক প্রেমপ্রার্থী যুবক ওয়াই মং-এর মদো-প্রলাপও ক্রমেই অস্পষ্ট হয়ে আসে। …
ওই গোধূলি বেলায় আবারো ডলিদের বাসার বারান্দার আরাম কেদারায় হারবাং নদীর দিকে মুখ করে দারা’র বোতল আর ছোট মাপের কাঁচের গ্লাস নিয়ে বসা গেল। পড়ন্ত সূর্যের লাল আভায় নদীর ওপাড়ের রাখাইন গ্রামগুলোতে আগুন লেগেছে বলে ভ্রম হয়।
একটি ছিমছাম ছোট্ট দোতলা বাসা দেখিয়ে ডলির কাছেই জানতে চাওয়া হয়, ওটা কার ঘর? ডলি বলেন, ওটা আমাদেরই এক আত্নীয়র ঘর ছিল। কিন্তু জীবন-যুদ্ধে টিকতে না পেরে সেই আত্নীয় এখন পরিবার-পরিজন নিয়ে পাড়ি জমিয়েছেন বার্মায়। হারবাং ছেড়ে এ রকম অনেকেই বাড়িঘর বিক্রি করে ওপারে চলে যাচ্ছেন। হারবাং-এর অনেক ঘরই এখন প্রায় পরিত্যাক্ত হয়ে পড়েছে। আবার কোন কোন বাড়ি বাঙালিরা কিনে নিয়ে রাখাইন গ্রামের ভেতরেই নিজস্ব বসতি গড়ে তুলেছেন।
শেষ বিকেলের আলোয় ডলির ফর্সা কচিপানা মুখ যেন লাল হয়ে ওঠে। ক্লান্ত গলায় তিনি বলেন, আচ্ছা বিপ্লব দা, আপনি তো অনেক টাকার চাকরি করেন। এ রকম একটা ছোট্ট বাড়ি সস্তায় কিনতে পারেন না? আপনাদের মত অনুভূতিশীল শিক্ষিত মানুষেরা এসব ঘর-বাড়ি কিনলে দেশান্তর হওয়া রাখাইন পরিবারটি অন্তত এই ভেবে নিশ্চিত থাকবে যে, তাদের পূর্ব পুরুষের ভিটেমাটির চিহ্নটুকু অন্তত অবিকল টিকে আছে!
ক্রমেই ডলির কণ্ঠস্বর বিষন্ন হতে থাকে।…
আর কি আশ্চর্য! ওই মদোমাতাল অবস্থাতেই মাথার ভেতর ঝলসে ওঠে তথ্য-বাণিজ্যের অনিবার্য এক চিন্তন। এ যেন অস্তিত্ব রক্ষারই এক বিবর্তনীয় রিফ্লেকশন।
সাংগ্রাং-এর পরে গ্রামটিতে আরো সরেজমিন অনুসন্ধান চালিয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া হয়, রাখাইনদের ধীর দেশান্তরের আঁতিপাতি। পরে ঢাকায় ফিরে তখনকার কর্মস্থল দৈনিক ভোরের কাগজের সাপ্তাহিক প্রকাশনা ‘অবসর’ এ করা হয় একটি সচিত্র প্রচ্ছদ প্রতিবেদন: ‘রাখাইনরা কেন দেশ ছেড়ে যান?’
সেটি ২০০০ সালের এপ্রিল-মে মাসের কথা। এতে জানান হয়, প্রায় চারশ বছর আগে বার্মার রাখাইন রাজ্যহারা রাখাইন জাতি, যারা এক সময়ে ব্যবসা-বাণিজ্যে কক্সবাজারের বিস্তৃর্ণ এলাকায় ছিল সবচেয়ে অগ্রসর, তারাই এখন বৃহত্তর বাঙালি জনগোষ্ঠির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে অতি ধীরে সপরিবারে একে একে দেশান্তরী হচ্ছেন বার্মায়। আবার কোন কোন পরিবারের একাংশ এপারে রয়ে গেলেও আরেকাংশ ভাগ্যান্বেষনে যাচ্ছেন ওপারে। প্রতিবেদনটিতে নিজস্ব পরিসংখ্যান এবং একাধিক সাক্ষাৎকার তুলে ধরে জানান হয়, এই নিরব দেশত্যাগের নিষ্ঠুর বাস্তব সব তথ্য।
জানা মতে, সে সময় কোন গণমাধ্যমে এ বিষয়ে প্রকাশিত সেটিই ছিল প্রথম প্রতিবেদন। তাই তখন এর ধাক্কাও ছিল ব্যপক।
প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর পরই রাখাইনদের মধ্যেই এর ব্যপক মিশ্র প্রতিক্রিয়া ঘটে। কক্সবাজারের সাংবাদিক বন্ধুরাও পক্ষে-বিপক্ষে নিজ নিজ মতামত ব্যক্ত করেন। এই নিয়ে ‘অবসর’ এর পরবর্তী সংখ্যাতেও চলে তীব্র বাদানুবাদ।
তখনকার একমাত্র বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল একুশে টেলিভিশনের একজন বিশেষ প্রতিনিধি টেলিফোনে এই প্রতিবেদককে বলেন, রাখাইনদের নিয়ে নাকি একটি আজগুবি প্রতিবেদন ফাঁদা হয়েছে! তিনি নিজেই এক সপ্তাহ আগে কক্সবাজার সদরে বেড়াতে গিয়ে একটি রাখাইন পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জেনেছেন, ওই প্রতিবেদনটি নাকি আদৌ সত্য নয়। পুরোটিই নাকি আগাগোড়া কাল্পনিক, ভিত্তিহীন ও সত্য বিবর্জিত।
চিন্তন যেখানে উগ্র জাত্যাভিমান জনিত অহং, ফর্মূলা সর্বস্ব কেতাবী বিদ্যা, আর দৃষ্টিসুখের মোহে বৃত্তাবদ্ধ, যুক্তি সেখানে নিস্ফল; সত্য সেখানে দূরাগত মাত্র। …পেশাগত কাজে বহুবছর ভাষাগত সংখ্যালঘু আদিবাসী অধ্যুষিত অঞ্চলে ঘোরার দীর্ঘ বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে বলা যেত অনেক কথাই। কিন্তু এর জবাবে বলা হয়নি কিছুই ।…
—
ফুটনোট: ২০০৭ সালে একই শিরোনামে লেখাটি অন্য একটি ব্লগে প্রকাশিত হয়েছিল। এখন শিরোনাম বাদে পুরো লেখাটি পুনর্লিখন করা হয়েছে।
—
সংযুক্ত: খসড়া লেখায় ক’চিন ঠে ডলির প্রাসঙ্গিক মন্তব্য:
kyaw Sein Thay Dolly: …I would like to emphasize is that we are the son of this land and we have right to live in this land as many others. peacefully… we will alwyas voice out to raise public awareness to have the right as a country men.. this will always go on….
—
ছবি: সাংগ্রাং, কক্সবাজার, এম. ইউসুফ তুষার।
বিপ্লব দা, আপনার লেখাগুলোতে পাহাড়ী মাটির বুনো গন্ধ লেগে থাকে। পড়তে পড়তে সচিত্র প্রতিবেদন যেন দেখতে পাই… আর আপনার লেখায় এসব জনগোষ্ঠীর সংস্কৃতি থেকে শুরু করে বর্তমান অবস্থা পর্যন্ত জানতে পারছি বলে কৃতজ্ঞতা জানাই আমি। (F)
@নীল রোদ্দুর, (Y) (Y)
বড় মাছ ছোট মাছগুলোকে গিলে গিলে খায়, খাচ্ছে, খাবে। ধর্ম-ভাষা-রাজনীতি-অর্থনীতি সবকিছুতে জয়জয়কার বড় মাছদের। তো?
মাটি মরে যাচ্ছে, নদী মরে যাচ্ছে, সমুদ্র মরে যাচ্ছে, বাতাস সেও মরে যাচ্ছে। মৃত্যু-র এসব উৎসবকে আড়াল করতে গিয়ে আমরা বানিয়েছি নানারকম সুগন্দ্ধি।
চারদিকে শুধু উন্নয়নের জোয়ার, জোয়ারে ভেসে যাচ্ছে ….
@স্বপন দা,
🙁
দেশত্যাগের নিষ্ঠুরতা যেন আমাদের কারো জীবনে বয়ে না আসুক।:-Y
কক্সবাজারে গেলে হারবাং-এ যাওয়ার আশা করছি।
রাখাইনদের নিয়ে আমাদের সামনে তাদের জীবনের করুনচিত্র জানানোর জন্য অনেক ধন্যবাদ।
(F)
@মাহবুব সাঈদ মামুন,
আমরা আশা করছি, ১০ বছর পরের হারবাং চিত্র খানিকটা হলেও মুক্তমনার পাঠকদের কাছে তুলে ধরবেন। সফরটি সংক্ষিপ্ত হলেও যেনো অন্তত একটি ফটো-ব্লগ পাই। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। (Y)
বিপ্লব রহমান,
হারবাং-এর রাখাইনদের নিয়ে তথ্যসমৃদ্ধ লেখাটার জন্য ধন্যবাদ। আমার বাড়ি হারবাং-এ। আমি হারবাং প্রাইমারি স্কুলে পরেছি সেই ষাটের দশকএর প্রথম দিকে। রাখাইনদের অবস্থা তখন এতো খারাপ ছিল না। আমার বন্ধুদের মধ্যে অনেকেই এই সম্প্রদায়ের। কয়েকজন আমার সাথে স্কুলে পড়তো।
আমার মনে হয়, রাখাইন-এর থেকে আরাকান শব্দটার একটা সংযোগ আছে। একটা আরেকটা থেকে উদ্ভুত হতে পারে। আপনার কি মনে হয়?
এদের বৌদ্ধবিহার বা কেয়াংগুলো ছিল দেখার মতো। আমরা প্রায়ই দলবেঁধে দেখতে যেতাম। বিহুর উৎসব ছিল প্রাণ মাতানো। আরেকটা কারণে এদের কথা মনে আছে। বৌদ্ধ পূর্ণিমার সময় রাতে এরা ফানুস ওড়াতো। অবাক বিস্ময়ে আকাশপানে চেয়ে দেখতাম ফানুসগুলো উড়ে যাচ্ছে।
এরা ঘরবাড়ি ছেড়ে বা বিক্রি করে বার্মা চলে যাচ্ছে শুনে খুব খারাপ লাগলো।
@ইরতিশাদ,
আপনার হারবাং-এর স্মৃতিকথা জানতে ইচ্ছে করছে। আশাকরি, সময়-সুযোগ করে মুক্তমনার পাঠকদের জন্য সে সব লেখা খুব শিগগিরই লিখে ফেলবেন।
পাঠ প্রতিক্রিয়ার জন্য ধন্যবাদ। (Y)
বাংলাদেশের আদিবাসীদের জীবন যাত্রা সম্মন্ধে অনেকের মত আমারও কোন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ধারণা ছিলোনা। আপনার লেখনির মাধ্যমে একটু একটু করে জানতে পারছি।ভাল লেগেছে যথারীতি।
@তামান্না ঝুমু, (Y)
পূর্বের মতই আপনার এই প্রবন্ধটি খুব তথ্য বহুল।
প্রবন্ধটি পড়ে অনেক কিছু জানতে পারলাম। আমাদের দেশেও যে নীরব গণহত্যা এবং সংস্কৃতি হত্যা চলছে তা যেন বিশ্বাসই হয় না।
@আবুল কাশেম,
যথার্থ মন্তব্য করেছেন। আমি ভিন্ন ভাবে এ ব্যপারে মতামত ব্যক্ত করতে চাই। আমি জানি এ মতামতের জন্য আমাকে ইসলাম বিদ্বেষী বলা হবে। তার পরেও আমি সেটা বলতে চাই। বাংলাদেশে যবে থেকে ইসলাম নিয়ে বেশী বাড়াবাড়ি মাতামাতি শুরু হয়েছে শুধু রাখাইন নয় সকল সংখ্যালঘুই এদেশে আর নিজেদেরকে নিরাপদ মনে করে না। মনে করার কথাও নয়। যে কারনে রাখাইনরা সুযোগ পেলে বার্মা চলে যাচ্ছে, হিন্দুরা চলে যাচ্ছে ভারতে। বাংলাদেশে তাই হিন্দুদের সংখ্যা বৃদ্ধি না পেয়ে কমতির পথে।
@ভবঘুরে,
আপনার মতটি ঠিকই আছে। এটি হচ্ছে একটি বৃহত্তর জাতির অপরাপর সংখ্যালঘু জাতির ওপর জাতিগত+ভাষাগত+সংস্কৃতিগত+ধর্মীয়+আরো অনেক নিপীড়ন। ধরণভেদে কোথাও কোথাও এর রূপ ভিন্ন। আর রাষ্ট্র স্বয়ং এর নেতৃত্বে রয়েছে।…
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। (Y)
* সংশোধনী: বৃহত্তর জাতির অপরাপর সংখ্যালঘু জাতির > বৃহত্তর জাতির অপরাপর সংখ্যালঘু জাতির/গোষ্ঠির …
@ভবঘুরে,
সহমত।
@আবুল কাশেম,
যথার্থই বলেছেন। তবে এই ছোট্ট লেখাটিকে কোনোভাবেই প্রবন্ধ বলা যাবে না; আপনি একে সংবাদ নেপথ্য-কথা বা রিপোর্টারের ডায়েরি বলতে পারেন।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। (Y)
—
অ/ট: মুক্তমনায় সব লেখাকেই কেন যেন ”প্রবন্ধ” বলা হয়! 😛
পুনশ্চ: অনেক খুঁজে একটা লিংক পেলাম। সেটা এখানে… 🙂
আরেকটা লিংক এখানে… 🙂
তবে সর্বশেষ লেখাটি কালের কণ্ঠের ‘রাজকূট’ এ প্রচ্ছদ কাহিনী হিসেবে ছাপা হয়েছিল। সেটা এ লিংক মুহূর্তে কাজ করছে না। 🙁
@বিপ্লব রহমান,
ধন্যবাদ। এগুলো বাংলায় থাকা দরকার। বেচারাদের আরাকানে স্বাধীনতা দরকার। কিন্তু তাদের এই সংগ্রামে পাবেন খালি ইসলামি টেররিস্টদের। ওদের বাজেভাবে ব্যবহার করা হয়েছে বিগত সরকার আমলে। স্বাধীনতা সংগ্রামীরা এখন টেররিস্ট!
@রূপম (ধ্রুব),
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এ ওই সংবাদগুলো বাংলাতেই লিখেছিলাম। কিন্তু তাদের বাংলার জন্য সার্চ ইঞ্জিন না থাকায় সেগুলো খুঁজে পাইনি। অনেক খুঁজে এখানে যে লিংকগুলো দিয়েছি, তা ওই সংবাদগুলোর অনুবাদিত ইংরেজী রূপ।
আবারো আপনাকে ধন্যবাদ। (Y)
আপনার তথ্য বহুল লেখার জন্য অনেক ধন্যবাদ ।
এটা কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয় । আমাদের দেশের সব অঞ্চল থেকেই সংখ্যা লঘুরা অন্যদেশে চলে যাচ্ছে । মূলত সামাজিক এবং অর্থনৈতিক বৈষম্যের জন্যই এমনটা হচ্ছে । সাথে আছে কতিপয় সুযোগ সন্ধানী প্রভাবশালীদের সার্থসিদ্ধী। রাস্ট্রব্যবস্থা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উদাসিনতার ভূমিকাতে দেখা যায় । এটা খুবই দুঃখজনক ।
@অরণ্য, (Y)
আপনার কাছ থেকে এমন অনেক গোষ্ঠির জীবন সংগ্রামের কথা জানা যায়। রোহিঙ্গাদের নিয়ে লিখবেন/লিখেছেন?
@রূপম (ধ্রুব),
রোহিঙ্গাদের নিয়ে বহুবার লিখেছি, লিখছি। সাবেক কর্মস্থল bdnews24.com এ একাধিক সরেজমিন প্রতিবেদন করেছি। কিন্তু অনেক খুঁজেও সে সব নিউজ লিংক পেলাম না। এদের সার্চ ইঞ্জিন খুব দুর্বল।
বর্তমান কর্মস্থল কালেকর কণ্ঠর জন্য গত ডিসেম্বরে রোহিঙ্গা ইস্যুতে একটি বিস্তারিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করেছি। ইচ্ছে আছে এ নিয়ে মুক্তমনায় কিছু সংবাদ নেপথ্য কথা লেখার।
আপনার আগ্রহকে সাধুবাদ জানাই। অনেক ধন্যবাদ। (Y)
* কালেকর কণ্ঠর > দৈনিক কালের কণ্ঠ
@রূপম (ধ্রুব), মানবতার দৃষ্টিকোণ থেকে রোহিঙ্গাদের কথা চিন্তা করতে হবে, কিন্তু রোহিঙ্গাদের দুর্দশার জন্য তো আমরা দায়ী নই, বরং নব্বুই এর দশক থেকে আমরা যা পেরেছি করেছি, যা পারছিনা তার জন্য আমাদের অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতা দায়ী। মিয়ানমারের মিডিয়া এ ব্যাপারে কী ভূমিকা রেখেছে সে প্রশ্ন তোলা যায়, পশ্চিমা বিশ্ব এবং ও আই সি সামরিক জান্তার কতখানি সমালোচনা করেছে সে বিষয়ে কিছু লেখা উচিৎ।
বিপ্লব,
বরাবরের মতোই নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর জন্য সোচ্চার উচ্চারণ। কক্সবাজারের রাখাইনদের সম্পর্কে জানালেন। পটুয়াখালির রাখাইনদের সম্পর্কে কেউ বা আপনি জানালে জানতে পারতাম।
তবে আমি এর অন্য প্রসঙ্গে একটি বিষয় জানতে চাই। ২০০১ সালের জুলাই মাসে নারীপক্ষ থেকে বান্দরবানে গিয়েছিলাম বিভিন্ন ছোট ছোট নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর নারীদের সাথে কর্মশালা করে তাদের অবস্থা ও অবস্থান জানার জন্য। জানলাম, রাখাইন পুরুষরা নাকি ভাল লোক এবং স্বামী হয় না। এজন্য বান্দরবানে অন্যান্য নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর মধ্যে ধারণা প্রচলিত —- রাখাইন কোন পুরষের সাথে দেখা হওয়ার চেয়ে গোখরা সাপের সাথে দেখা হওয়া বাঞ্ছনীয়।
পরে আর তা জানার সুযোগ হয়নি।
তাছাড়া, তখন জেনেছিলাম যে কয়েকটি ছোট ছোট নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর সংখ্যা বাংলাদেশে এত কম যে বিয়ের ব্যাপারে তাদেরকে ভারতে বসবাসরত নিজ নিজ ছোট ছোট নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর সাথে বৈবাহিক সম্পর্ক করতে হয়।
এ বিষয়ে আপনি বিস্তারিত লিখলে জানতে পারতাম।
@গীতা দি,
মন্তব্য ও পাঠ প্রতিক্রিয়ার জন্য ধন্যবাদ।
কিন্তু আপনার একাংশের সঙ্গে প্রচণ্ড দ্বি ম ত।
বান্দরবানে রাখাইন নয়, মারমা জনজাতির বাস; যারা নৃত্বাত্ত্বিক ও উৎপাদনগত বৈশিষ্ট পাহাড়ি, কিন্তু রাখাইনরা তা নয়। দুই জনজাতির মধ্যে ভাষা ও সংস্কৃতিগত বেশকিছু মিল থাকলেও অমিলও বিস্তর। তাছাড়া প্রত্যেকেরই ইতিহাস, রীতিনীতি, কৃষ্টি ও প্রথা ভিন্ন।
কিন্তু আমার পার্বত্যাঞ্চল এবং বৃহত্তর কক্সবাজার সফরের দীর্ঘ জীবনে এমন অদ্ভুদ কথা কখনো শুনিনি! সত্যি কথা বলতে এ সম্পর্কে কোন ধারণাই আমার নেই। :-Y
বিনয় করে বলি, আমার মনে হয়, কোনো আদিবাসী জনজাতির বৈশিষ্ট খুব নিবিড়ভাবে দীর্ঘ পর্যবেক্ষণ ছাড়া বোঝা একেবারেই সম্ভব নয়। দু-একটি কর্মশালার তথ্য বা ভাসাভাসা জ্ঞান বা পর্যটনসুলভ দৃষ্টিভঙ্গি এক্ষেত্রে একেবারেই অ চ ল। 😛
@বিপ্লব রহমান,
মেনে নিচ্ছি। তবে,একটা কর্মশালার অভিজ্ঞতা হলেও কর্মশালার অংশগ্রহণকারীদের মতামত আমি শুধু বলেছি। মোদ্দা কথা, অন্যান্য জনগোষ্ঠীর নারীদের রাখাইন পুরুষ নিয়ে তাদের ধারণার কথা জানিয়েছিলেন। অন্যান্য জনগোষ্ঠীর নারীরা বিচ্ছিন্নভাবে রাখাইন পুরুষকে হয়তো পাহাড়ে পেয়েছিলেন।
জানি। তবে,মারমা ছাড়াও আরও কিছু জনগোষ্ঠীর নারীরা অংশগ্রহণ করেছিল। প্রায় সাত রকম জনগোষ্ঠীর নারীরা ছিল। খাগরাছড়িসহ প্রত্যন্ত গ্রাম থেকেও কেউ কেউ এসেছিলেন। ডলি প্রু নামে একজন মারমা নারী নেত্রী আমাদের কর্মশালাটি সমন্বয় করেছিলেন।
উল্লেখ্য যে, আমাদের কর্মশালাটি দাতা সংস্থা কর্তৃক কোন প্রকল্পের আওতাধীন ছিল না। আমার তত্ত্বাবধানে দিনাজপুর, সিলেট বান্দরবান, জেনেভাক্যাম্পের নারীসহ এমন অনেকের সাথে নারীপক্ষ থেকে তাদের যাপিত জীবনের অভিজ্ঞতা জানাই ছিল উদ্দেশ্য। নারী আন্দোলনের এজেন্ডা শুধু বাঙালী নারী নিয়ে করা উচিত নয় বলে আমাদের বিশ্বাস।
যাহোক,বাংলাদেশের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী নিয়ে আপনার লেখা অব্যাহত থাকুক।
@গীতা দি,
অ্যাঁ!! 😕
আপনার ওই লেখাটির সাথে পরিচয় ছিলো না, তবে রাখাইনদের সাথে পরিচয় আছে। কারণ আমি কক্সবাজারের মানুষ, বেড়ে উঠা কক্সবাজারেই। আমি আগেও ভেবেছি তাদের নিয়ে কিছু লিখব, কিন্তু কেন যেন হয়ে উঠছিল না। আপনি লেখাতে অনেক ভালো হলো;আদিবাসীদের নিয়ে কিছু লেখার জন্য আপনার চেয়ে ভালো আর কে হতে পারে মুক্তমনায়?আপনাকে ধন্যবাদ এমন একটি লেখার জন্য।
আপনার বক্তব্যের সাথে একমত আমি;রাখাইনরা দিন দিন ক্ষয়িষ্ণু গোষ্ঠিতে পরিণত হচ্ছে। তাদের বসতভিটা কেড়ে নিয়ে,তাদের সংস্কৃতির উপর আঘাত হেনে,নানা অপপ্রচার চালিয়ে ধীরে ধীরে তাদের পায়ের নিচের জমিটুকু যেন সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। সবার মাথায় ঢুকিয়ে দেয়া হচ্ছে রাখাইনরা খারাপ,তাদের খাদ্যাভাস খারাপ,তাদের চরিত্র খারাপ,তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নেই ইত্যাদি ইত্যাদি।
রাখাইনদেরকে কক্সবাজারে ডাকা হয় ‘মগ’। স্পষ্টতই,এটা তাদেরকে ছোট করে রাখার একটি সচেতন প্রয়াস।এমন হীন সম্বোধনে তাদেরকে ডাকার অন্য কোনো অর্থই নেই। আপনি যদি এখানকার কোনো বাঙ্গালীকে ‘মগ’ বলে ডাকেন তাহলে সে ধরে নেবে আপনি তাকে গালি দিয়েছেন!
আবার বর্তমানে শুরু হয়েছে আরেক ধরনের অপপ্রচার। রাখাইনদেরকে মিলিয়ে ফেলা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের সাথে। বলা হয়-তারা বার্মা থেকে এদেশে এসে সব দখল করে নিচ্ছে,তাই ওদের তাড়াতে হবে! রাখাইনদের সামাজিক অবস্থা এখন এমনই খারাপ। খুবই ছোট্ট একটি বাড়িতে গাদাগাদি করে থাকে তারা;সব সময় আশংকায় থাকে মাথার উপরর ছাদটুকু কবে না হারিয়ে যায়। অন্যান্য জায়গার কথা তেমন জানিনা,তবে কক্সবাজার শহরে তাদের অবস্থাটুকু জানাতে পারি। খুবই অস্বাস্থ্যকর পরিবশে বাস করছে তারা আজকাল।
আর তাদের তাঁত তো কবেই মরে গেছে। যেসব পর্যটক কক্সবাজারে এসে শখ করে রাখাইনদের তাঁতের কাপড় কেনে তারা জানেই না যে এসব এসেছে বার্মা থেকে। মায়ানমার থেকে অবৈধ পথে আসা পণ্যে পুরো শহর ছেয়ে গেছে। রাখাইনদের গর্বের একটা জিনিশ ছিল- বার্মিজ মার্কেট। এখানেও তারা এখন বাঙ্গালীর লালসার শিকার হচ্ছে। কয়েক বছর আগেও দেখা যেত বার্মিজ মার্কেটগুলোর সব দোকানের মালিকই ছিল রাখাইনরা।এখন বাঙ্গালীরা ধীরে ধীরে দোকানগুলো দখল করে নিচ্ছে। তাদের অনেকেরই জীবনধারণের প্রধান উপায় ছিল এই মার্কেটগুলো। সব হারিয়ে তারা এখন দেশান্তরী হতে বাধ্য হয়।
@নিটোল,
চমৎকার পর্যবেক্ষণ আপনার। কিন্তু কক্সবাজারে অবস্থান করলেও এমন মানবিক দৃষ্টিভঙ্গী সেখানে বাসিন্দা অনেক বাঙালিদেরই দেখিনি। আপনাকে অনুরোধ জানাই, এ নিয়ে আলাদা করা লেখার জন্য।
আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন থাকাকালে ১৯৯৭-৯৮ সালের দিকে জেলা সদরের এক আওয়ামী পাণ্ডা আমাকে গর্ব করে বলেছিলেন: রাখাইনদের জন্য আমরাই প্রতিবছর কক্সবাজারে সাংগ্রাং – এর আয়োজন করে দেই। সাংগ্রাং উদযাপন কমিটিতে সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক হই আমরাই (আ’লীগ নেতারা)। …
তখন তাকে বলা হয়েছিল, তাহলে কক্সবাজারের রাখাইনরা তো ভালোই আছে!
জবাবে তিনি খানিকটা গলা নামিয়ে বললেন: বার্মায় সোনার দাম খুব কম। আর রাখাইনরা তো অধিকাংশই সোনা চোরাচালানী! এরা এক পা এ দেশে, আরেক পা ওদেশে দিয়ে রেখেছে; বুঝলেন না? 😕
আমি আর কথা বাড়াইনি। …