গীতা দাস তাঁর সংখ্যালঘুর মানচিত্র (১২) তে বাংলাদেশের হিন্দু ধর্মালম্বীদের সাম্প্রদায়িকতার শিকার হয়ে ভারতে চলে যাওয়ার বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছিলেন। । আমি ওই লেখায় একটা মন্তব্য করেছিলাম। নিজের জন্মভূমি ছেড়ে ভারতে যাবার পরে এই সমস্ত লোকেরা নিজেদেরকে কীভাবে খাপ খাওয়ায় সেই বিষয়টা জানার উদ্দেশ্যেই মন্তব্যটা করা হয়েছিল। মন্তব্যটা ছিল এরকমঃ
কোন পরিস্থিতিতে পড়লে মানুষ নিজের দেশ ছাড়তে বাধ্য হয় সেটা বুঝি বলে এ নিয়ে আমার কোনো ছ্যুঁৎমার্গ নেই । সুখে থাকলে নিশ্চয়ই কেউ দেশত্যাগ করে না। তবে, আমার একটা ভিন্ন ধরনের প্রশ্ন আছে। দেশ ছেড়ে হিন্দুরা যখন ইন্ডিয়াতে যান, তখন কি সত্যিই সত্যিই তারা ভাল থাকেন দেশের চেয়ে? এ বিষয়ে কি কারো কোনো অভিজ্ঞতা জানা আছে? বিহারিদের ক্ষেত্রে যেমন একবার পত্রিকায় একটা রিপোর্ট পড়েছিলাম। বাংলাদেশে আটকে পড়া অনেক বিহারি-ই পাকিস্তানকে তাঁদের স্বপ্নের দেশ বলে মনে করেন। অনেকেই চোরাই পথে পাকিস্তানে পাড়িও জমিয়েছেন। কিন্তু পাকিস্তানে যাবার পরে তাঁদের বোধোদয় ঘটেছে যে ওটা আসলে তাঁদের দেশ নয়। এঁদের মধ্যে কেউ কেউ আবার চোরাই পথে ফিরে এসেছেন বাংলাদেশে। এ কারণেই মনে হয় নতুন প্রজন্মের বিহারি-রা বাংলাদেশি বনে যাবার দিকেই বেশি ঝুঁকেছে।
আমার মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে ভজন সরকার, সংশপ্তক এবং সেন্টু টিকাদার ভারতে চলে যাওয়া বাংলাদেশি হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা কী ধরনের সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে বা কোন ধরনের সুবিধা পাচ্ছেন সে বিষয়ে বেশ কিছুটা আলোচনা করেন। এর পরপরই আমি আমার দ্বিতীয় মন্তব্য করি। সেই মন্তব্যটা ছিল এরূপঃ
আমি যখন জানতে চেয়েছিলাম যে, বাংলাদেশের দেশত্যাগী হিন্দুরা ভারতে গিয়ে বাংলাদেশের চেয়ে ভাল থাকেন কি না, তখন যে বিষয়গুলো আমার মাথার মধ্যে ছি্ল, তার দুটো হচ্ছে এঁদের বাঙাল উচ্চারণ এবং ভারতীয় নাগরিকত্ব পাবার বিষয়টি। এ দুটো বিষয়ই আপনার বিশদ এবং ভজনদার সংক্ষিপ্ত আলোচনা থেকে উঠে এসেছে। এর বাইরে অর্থনৈতিক এবং সামাজিক কর্মকাণ্ডে তাঁরা নিজেদেরকে কীভাবে খাপ খাওয়ায় সে বিষয়টাও জানার আগ্রহ রয়েছে আমার। এটা নিশ্চয় খুব সহজ কাজ নয়। আজন্ম পরিচিত পরিবেশ ছেড়ে নতুন একটা দেশে মিথ্যা নাগরিক সেজে সেখানে শিকড় গাড়াটা ভয়ংকর কঠিন কাজই হবার কথা। জান-মাল বা সম্মানের উপর আসন্ন হুমকি এলে ভিন্ন কথা, কিন্তু অনাগত দিনে আক্রমণ হতে পারে, এই আশংকায় যাঁরা দেশ ছাড়েন, তাঁরা কি বিনিময় মূল্যটা একটু বেশি-ই দিয়ে ফেলেন না?
আমার এই মন্তব্যটা আপাত দৃষ্টিতে নিরীহ বলেই মনে হবে। কিন্তু এর শেষ লাইনটা মারাত্মক রকমের অসংবেদনশীল ছিল। যদিও অনিচ্ছাকৃত, কিন্তু অসংবেদনশীল যে সে ব্যাপারে কোনো সন্দেহই নেই। তবে, দুঃখজনক হচ্ছে যে, মুক্তমনার কেউ-ই আমাকে চোখে আঙুল দিয়ে এটি দেখিয়ে দেন নি। কমল নামের একজন ভদ্রলোক চার লাইনের একটা অতি পুরাতন কবিতা পোস্ট করেন মন্তব্য হিসাবে। এই কবিতার চারটা লাইন আমাকে চাবুকের মত আঘাত হানে। আমার উপলব্ধি ঘটে এই ভেবে যে, তাইতো একজন হিন্দু কোন বিনিময় মূল্যের হিসাবে দেশ ছেড়ে ভারতে যাচ্ছেন সেটা বোঝার ক্ষমতাতো আমার থাকার কথা নয়। আমিতো এর মধ্য দিয়ে যাই নি। আমাকে প্রতিনিয়ত মালাউন বলে গালি শুনতে হয় নি। জন্মের পরেই জানতে হয় নি যে এই দেশে আমি দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক। আমার ধর্মের কারণে আমার দেশপ্রেম নিয়ে কটাক্ষ শুনতে হয় নি। যদিও যোগ্যতা ছিল না, তবুও কখনো উপলব্ধি হয় নি যে, এই দেশের রাষ্ট্রীয় উচ্চপর্যায়ে কোনো পদে যেতে গেলে আমার ধর্ম বিশ্বাস বাধা হয়ে দাঁড়াবে। সাম্প্রদায়িক কোনো উত্তেজনাকর মুহুর্তে জান হাতে রেখে দুরুদুরু বুকে আমাকে ঘাতকদের পদধ্বণি শুনতে হয় নি। কিংবা ছোট বোনকে ধর্ষণ করার জন্য বখাটেরা রাতের বেলা সারি বেঁধে এসে দাঁড়ায় নি আমাদের বাড়ির উঠোনে। এর কোনো কিছুই যখন আমাকে সামলাতে হয় নি, তাহলে কোন অধিকারে আমি একজন মানুষের দেশত্যাগের বিনিময় মূল্য কম না বেশি ধার্য্য করি?
আমার জন্ম এবং বেড়ে উঠা পুরোটাই ঢাকা শহরে। এই বিশাল শহরে সাম্প্রদায়িকতা খুব একটা দৃশ্যমান নয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে আমার বন্ধুদের একটা বড় অংশ ছিল হিন্দু। এদের কারণে ক্যাম্পাস জীবনের একটা বিরাট সময় আমাকে কাটাতে হয়েছে জগন্নাথ হলে। এরপর শিক্ষকতার কারণে আমাকে চলে যেতে হয় ময়মনসিংহে। এমনিতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে প্রগতিশীল লোকজনের প্রাচুর্যের কারণে সাম্প্রদায়িকতা থাকে কম, তার উপরে ময়মনসিংহ সবসময় হিন্দু প্রধান শহর ছিল ইতিহাসের এক দীর্ঘ সময় জুড়ে। বর্তমানে সংখ্যার হিসাবে হিন্দুরা তাদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে ঠিকই, কিন্তু প্রভাব প্রতিপত্তি খুব একটা কমেনি এই শহরে এখনো তাদের। হিন্দু প্রধান হবার কারণে হোক বা দীর্ঘদিন হিন্দু-মুসলমান পাশাপাশি থাকার কারণেই হোক, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অত্যন্ত চমৎকার ময়মনসিংহে। ফলে, সাম্প্রদায়িকতার ভয়াল চেহারাটা চাক্ষুস করা হয় নি কখনো আমার। যা কিছু সবই পত্রিকা পড়ে বা এর ওর কাছ থেকে শুনে। এতে করে বিষয়টা জানা যায় হয়তো, কিন্তু এর সঠিক উত্তাপটা গায়ে লাগে না সেরকম করে। উপলব্ধিটা শাণিত হয় না প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার অভাবে।
বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িকতার সূত্রপাত ঘটেছিল পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটির জন্মের সময়ে। এর আগে শতশত বছর ধরে হিন্দু এবং মুসলমানেরা পূর্ববাংলায় বড় ধরনের কোনো ঝামেলা ছাড়াই সহাবস্থান করে এসেছে। দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে হালকা পাতলা ঝগড়াঝাটি এবং মনকষাকষি যে হয় নি তা নয়, তবে দাঙ্গা-ফ্যাসাদের মত রক্তারক্তি কাণ্ডে তা রূপান্তরিতি হয় নি কখনো। এই বিষবৃক্ষের বীজ বপন করেছিল পাকিস্তান রাষ্ট্রটিই। তার জন্মের প্রয়োজনে এবং পরবর্তীতে টিকে থাকার ব্যর্থ প্রচেষ্টায়।
পাকিস্তানের জন্মের সময়ে পূর্ববাংলায় হিন্দুর সংখ্যা ছিল প্রায় তিরিশ শতাংশ। এই তিরিশ শতাংশের হাতেই ছিল অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি। কিন্তু রাষ্ট্রযন্ত্র হিন্দুদের প্রতি বৈরী হবার কারণে এই শক্তিকে তাঁরা কাজে লাগাতে পারেন নি। বরং তাঁদের শক্তিকে খর্ব করার জন্য রাষ্ট্র একে একে নানান ধরনের আইন-কানুন পাশ করতে থাকে। আর এতে করেই বিপন্নবোধ করতে থাকে হিন্দুরা। রাষ্ট্রের এই একপেশে আচরণের কোনো পালটা জবাব তাঁদের হাতে ছিল না। এই বিপন্নতার কারণেই শুরু হয় হিন্দুদের ভারতগামী সমুদ্রসম মিছিল। ১৯৪১ সালের আদমশুমারীতে বর্তমান বাংলাদেশ অঞ্চলে যেখানে হিন্দুর সংখা ছিল ঊনত্রিশ শতাংশ, সেখানে ১৯৯১ সালে সেটা এসে দাঁড়িয়েছে মাত্র ১৩ শতাংশে। ২০০১ সালের আদমশুমারীতে এই সংখ্যা মাত্র ৯ শতাংশ। এই হারে চলতে থাকলে বাংলাদেশ যে একদিন হিন্দুশূন্য মোসলমানের দেশ হয়ে যাবে সে কথা বলাই বাহুল্য।
পাকিস্তান আমলে হিন্দুদের কফিনে শেষ পেরেকটা মারা হয়েছিল ১৯৬৫ সালের ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের পরে শত্রু সম্পত্তি আইন করে। মজার বিষয় হচ্ছে যে, বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পরেও এই আইনটি বাতিল হয় নি। নিজের দেশের লোককে শত্রু বলতে লজ্জা লাগার কারণেই হয়তো এখন এর নতুন নামকরণ করা হয়েছে অর্পিত সম্পত্তি আইন। তবে নাম যাই হক না কেন এর মূল বিষয়বস্তু একই। এবং মূল কাজও একই। ছলে বলে কৌশলে এবং শক্তি প্রয়োগে হিন্দুদের সহায় সম্পত্তি দখল করে নেওয়া।
একটা দেশের রাষ্ট্রযন্ত্র যদি কোনো এক শ্রেণীর নাগরিককে শত্রু দেশের নাগরিকদের মত বিবেচনা করে তবে তাঁদের পক্ষে সেই দেশে থাকাটা একটু অসম্ভবই হয়ে পড়ে। তা সে যত সদিচ্ছাই থাকুক না কেন। পাকিস্তান রাষ্ট্র তার সর্বশক্তি দিয়ে পূর্ববাংলাকে হিন্দুশূন্য করতে চেয়েছে। পাকিস্তান যে রকম সাম্প্রদায়িক দেশ তাতে তারা এটা করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে যে, বাংলাদেশের জন্মের পরে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্র যন্ত্রটিও তার নাগরিকদের বিরুদ্ধে একই ধরনের কাজ করেছে। যে দেশের জন্ম হয়েছিল প্রতিক্রিয়াশীলতা থেকে মুক্তির উদ্দেশ্যে, ধর্মনিরপেক্ষতার স্বপ্ন বুকে নিয়ে, সেই দেশও পাকিস্তানের মত পিছন দিকেই হেঁটেছে। অথচ এর প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ পরিষ্কার ভাষায় বলে দিয়েছিলেন যে বাংলাদেশে সংখ্যাগুরু বা সংখ্যালঘু বলে কিছু থাকবে না। তাজউদ্দীনের দেখানো সেই পথে অন্যেরা বাংলাদেশকে নেন নি।
দেশ স্বাধীনের পরে বাহাত্তর সালেই প্রথম হামলা ঘটে হিন্দুদের উপরে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় ভাঙচুর করা হয় পূজামণ্ডপ। রাষ্ট্র এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়। এর পর পঁচাত্তর সালের পর থেকে পুরোপুরি প্রতিক্রিয়াশীল লোকজনেরা রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করে নেই। বাংলাদেশের কাছ থেকে যে নিরাপত্তা এবং আশ্বাস আশা করেছিল হিন্দুরা, সেই নিরাপত্তা এবং আশ্বাস শূন্যে মিলিয়ে যায়। পাকিস্তান আমলের মতই হিন্দুরা জেনে যায় যে, তাঁদের নিজেদের দেশেও এখন তাঁরা দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক। যত মেধাই থাকুক না কেন তাঁরা কোনোদিনও এই দেশে রাষ্ট্রপ্রধান হতে পারবে না, প্রধানমন্ত্রী হতে পারবে না, সেনাবাহিনীর প্রধান হতে পারবে না, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হতে পারবে না, পারবে না কোনো দেশের রাষ্ট্রদূত হতে। শুধু অধিকার বঞ্চিতই নয়, একই সাথে তাঁদের জীবনকে বিপন্ন করতেও রাষ্ট্র তাঁর উদার হাত বাড়িয়ে দেয় গুন্ডা-বদমায়েশদের দিকে। কোনো হিন্দু লোকের সম্পত্তি দখল করতে হবে। খুব সোজা কাজ। প্রথমে হুমকি দাও প্রাণের। তাতেও যদি কাজ না হয় তবে স্ত্রী বা মেয়ের সম্মানহানির হুমকি দাও। এই হুমকির পরে দেশ ছাড়বে না এমন সাহসী হিন্দু বাংলাদেশে কয়টা আছে?
বৈরী পরিস্থিতির শিকার হয়ে যাঁদেরকে জন্মভূমির শিকড় ছেড়ে ভিন্ন দেশে অবমাননাকর উদ্বাস্তুর জীবন বেছে নিতে হয়, তাঁদের মানসিক অবস্থা বোঝার সাধ্যি হয়তো আমাদের কোনোদিনই হবে না। কলাগাছে ছাওয়া রাস্তা দিয়ে অচেনা দেশ, অজানা ভবিষ্যতের দিকে হেঁটে যেতে যেতে তাঁরা কি বার বার ফিরে তাকান না তাদের অতিপ্রিয় ভিটে মাটির দিকে। যে মাটিতে পোতা রয়েছে সাত পুরুষের নাড়ি, সেই মাটি ছেড়ে যাওয়া কি এতই সহজ? ভিনদেশে যাওয়ার পরেও হয়তো মানুষের নিষ্ঠুর নির্মমতাকে ভুলে গিয়ে দেশের কথাই ভাবেন তাঁরা। মানুষের প্রতি মানুষের রাগ থাকতে পারে, আক্রোশ থাকতে পারে। কিন্তু মমতাময়ী মাটির জন্য যে শুধু ভালবাসাই থাকে মানুষের বুকের ভিতরে। যত দুরেই থাকুক না কে, যত ভিন্ন দেশেই বসত হোক না কেন, ঠিকই কোনো এক নিভৃত সময়ে মনের গহনে উঁকি দিয়ে যায় পুকুর পাড়ে নিজের হাতে লাগানো হিজল গাছটির কথা। বুক উজাড় করে হয়তো বের হয়ে আসে বড়সড় একটা দীর্ঘশ্বাস। সেই হিজল গাছ থেকে টুপটুপ করে জলের উপরে পড়া ফুলগুলোর জন্য একটু হলেও হয়তো চোখের কোণে জমে উঠে একবিন্দু মুক্তোর মত অশ্রুকণা।
|
উদ্বাস্তু
অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত
চল, তাড়াতাড়ি কর,
আর দেরি নয়, বেরিয়ে পড় এক্ষুনি।
ভোররাতের স্বপনভরা আদুরে ঘুমটুকু নিয়ে
আর পাশে ফিরতে হবে না।
উঠে পড় গা ঝাড়া দিয়ে,
সময় নেই-
এমন সুযোগ আর আসবে না কোন দিন।
বাছবাছাই না করে হাতের কাছে যা পাস
তাই দিয়ে পোঁটলাপুঁটলি বেঁধে নে হুট করে।
বেড়িয়ে পড়,
দেরি করলেই পস্তাতে হবে
বেরিয়ে পড়-
ভূষণ পাল গোটা পরিবারটাকে ঝড়ের মতো নাড়া দিলে।
কত দূর দিগন্তের পথ-
এখান থেকে নৌকা করে ষ্টিমার ঘাট
সেখান থেকে রেলষ্টেশন-
কী মজা, আজ প্রথম ট্রেনে চাপবি,
ট্রেনে করে চেকপোষ্ট,
সেখান থেকে পায়ে হেঁটে-পায়ে হেঁটে-পায়ে হেঁটে-
ছোট ছোলেটা ঘুমমোছা চোখে জিজ্ঞেস করলে,
সেখান থেকে কোথায় বাবা?
কোথায় আবার! আমাদের নিজেদের দেশে।
ছায়াঢাকা ডোবার ধারে হিজল গাছে
ঘুমভাঙা পাখিরা চেনা গলায় কিচিরমিচির করে উঠল।
জানালা দিয়ে বাইরে একবার তাকাল সেই ছোট্ট ছেলে,
দেখলো তার কাটা ঘুড়িটা এখনো গাছের মগডালে
লটকে আছে,
হাওয়ায় ঠোক্কর খাচ্ছে তবুও কিছুতেই ছিঁড়ে পড়ছে না।
ঘাটের শান চটে গিয়ে যেখানে শ্যাওলা জমেছে
সেও করুণ চোখে চেয়ে জিজ্ঞেস করছে, কোথায় যাবে?
হিজল গাছের ফুল টুপ টুপ করে এখনো পড়ছে জলের উপর,
বলছে, যাবে কোথায়?
একটু দূরেই মাঠে কালো মেঘের মত ধান হয়েছে-
লক্ষীবিলাস ধান-
তারও এক প্রশ্ন- যাবে কোথায়?
আরো দূরে ছলছলাৎ পাগলী নদীর ঢেউ
তার উপর চলেছে পালতোলা ডিঙি, ময়ূরপঙ্খি
বলছে, আমাদের ফেলে কোথায় যাবে?
আমারা কি তোমার গত জন্মের বন্ধু?
এ জন্মের কেউ নই? স্বজন নই?
আঙিনায় গোবরছড়া দিতে হবে না,
লেপতে হবে না পৈঁঠে-পিঁড়ে,
গরু দুইতে হবে না, খেতে দিতে হবে না,
মাঠে গিয়ে বেঁধে রাখতে হবে না।
দরজা খুলে দাও, যেখানে খুশি চলে যাক আমাদের মত।
আমাদের মত! কিন্তু আমরা যাচ্ছি কোথায়?
তা জানিনা। যেখানে যাচ্ছি সেখানে আছে কী?
সব আছে। অনেক আছে, অঢেল আছে-
কত আশা কত বাসা কত হাসি কত গান
কত জন কত জায়গা কত চেল্লা কত জমক।
সেখানকার নদী কি এমনই মধুমতি?
মাটি কি এমনই মমতামাখানো?
ধান কি এমনই বৈকুন্ঠবিলাস?
সোনার মত ধান আর রুপোর মতো চাল?
বাতাস কি এমনি হিজলফুলের গন্ধভরা
বুনো-বুনো মৃদু মৃদু?
মানুষ কি সেখানে কম নিষ্ঠুর, কম ফন্দিবাজ কম সুবিধাখোর?
তাড়াতাড়ি করো, তাড়াতাড়ি করো-
ভূষণ এবার স্ত্রীর উপর রীতিমত ধমকে উঠল:
কী অত বাছাবাছি বাঁধাবাঁধি করছো,
সব ফেলে ছড়িয়ে টুকরো-টুকরো ক’রে এপাশে-ওপাশে বিলিয়ে দিয়ে
এগিয়ে চলো।
জলা-জংলার দেশ, দেখবার আছেটা কী!
আসল জিনিস দেখবি তো চল ওপারে,
আমাদের নিজেদের দেশে, নতুন দেশে,
নতুন দেশের নতুন জিনিস-মানুষ নয়, জিনিস-
নতুন জিনিসের নতুন নাম-উদ্বাস্তু।
ওরাও উদ্বাস্তু।
কত ওরা জেল খেটেছে তকলি কেটেছে
হত্যে দিয়েছে সত্যের দুয়ারে,
কত ওরা মারের পাহাড় ডিঙিয়েছে
পেরিয়ে গিয়েছে কত কষ্টক্লেশের সমুদ্র,
তারপর পথে-পথে কত ওরা মিছিল করেছে
সকলের সমান হয়ে, কাঁধে কাঁধে মিলিয়ে,
পায়ে-পায়ে রক্ত ঝরিয়ে-
কিন্তু ক্লান্ত যাত্রার শেষ পরিচ্ছেদে এসে
ছেঁড়াখোঁড়া খুবলে-নেওয়া মানচিত্রে
যেই হঠাৎ দেখতে পেল আলো-ঝলমল ইন্দ্রপুরীর ইশারা,
ছুটল দিশেহারা হয়ে
এত দিনের পরিশ্রমের বেতন নিতে
মসনদে গদীয়ান হয়ে বসতে
ঠেস দিতে বিস্ফারিত উপশমের তাকিয়ায়।
কেউ উৎখাত ভিটেমাটি থেকে
কেউ উৎখাত আদর্শ থেকে।
পথের কুশকন্টককে যারা একদিন গ্রাহ্যের মধ্যেও আনেনি
আজ দেখছে সে-পথে লাল শালু পাতা হয়েছে কিনা,
ড্রয়িংরুমে পা রাখবার জন্যে আছে কিনা
বিঘৎ-পুরু ভেলভেটের কার্পেট।
ত্যাগব্রতের যাবজ্জীবন উদাহরণ হয়ে থাকবে বলে
যারা এত দিন ট্রেনের থার্ড ক্লাসে চড়েছে
সাধারণ মানুষের দুঃখদৈন্যে শরিক হয়ে
তারাই চলেছে এখন রকমারি তাকমার চোপদার সাজানো
দশঘোড়ার গাড়ি হাঁকিয়ে
পথচারীদের হটিয়ে দিয়ে, তফাৎ করে দিয়ে
ঐ ইন্দ্রপুরী-ইন্দ্রপ্রস্থ থেকেই বেরিয়ে যাচ্ছে
হিমালয়ের দিকে-
মহাভারতের মহাপ্রস্থানের পঞ্চনায়কও তাদের সঙ্গিনী
স্ব- স্বরূপ- অনুরূপা-
যুদ্ধ জয় করেও যারা সিংহাসনে গিয়ে বসল না
কর্ম উদযাপন করেও যারা লোলুপ হাতে
কর্মফল বন্টন করল না নিজেদের মধ্যে,
ফলত্যাগ করে কর্মের আদর্শকে রেখে গেল উঁচু করে,
দেখিয়ে গেল প্রথমেই পতন হল দ্রৌপদীর-
পক্ষপাতিতার।
তারপর একে একে পড়ল আর সব অহঙ্কার
রূপের বিদ্যার বলের লোভের-আগ্রাসের-
আরো দেখালো, দেখালো–
শুধু যুধিষ্ঠিরই পৌছোয়
যেহেতু সে ঘৃণ্য বলে পশু বলে
পথের সহচর কুকুরকেও ছাড়ে না।
সদ্যকিছুদিন মুক্তমনার লেখা পড়তে শুরু করেছি। ফরিদ-দার বেশ কিছু লেখা পড়ার পর এত ভাল লেগেছে যে ওনার পুরনো লেখাগুলো খুঁজে খুঁজে পড়ছি। বাংলার ইতিহাসের উপর সুন্দর সব লেখা। এই লেখাটি অসাধারণ।
মেদিনীপুরে বড় হওআর কারণে উদ্বাস্তুদের সঙ্গে কোন পরিচিতি ঘটেনি। কলকাতায় মেসে থাকার সময় আমাদের রাঁধুনি দিদির কাছে শুনি নির্যাতনের কথা। যে দিদি আমাদের অত্যন্ত স্নেহ করেন, অসুখে বিশুখে সেবা করেন, সেই দিদিই আমার এক মুসলিম বন্ধুর থেকে দূরত্ব রেখে চলতেন। ব্যাপারটা আমার অত্যন্ত কৌতূহলের উদ্রেক করে। অত্যন্ত কম কথা বলা সেই দিদির কাছে পরে যানতে পারি নির্যাতনের ইতিহাস। বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পর শুধু হিন্দু হওয়ার অপরাধে দিদিকে তিনমাসের ছেলে কোলে ভারতে পালিয়ে আসতে হয়। বাংলাদেশের জমি যায়গা ছেড়ে দিদি এখন এক বস্তীতে থাকেন, মেসে মেসে রান্না করে নিজের আর ছেলেদের খাওয়ার জোটান। ২০১২ সাল অব্দি এক মৃদুভাষী মানুষটির রেশন কার্ডটুকুও জোটেনি।
এর পর যখন দেখি কিছু ধর্মান্ধ হিন্দু কোন মসজিদ ভাঙতে যাচ্ছি, আমার খালি মনে পড়ে দিদির মত মানুষগুলোর কথা। ওরা তো কোন আক্রমণ করেনি। তাহলে কেন বারেবারে কিছু উন্মত্ত মানুষের দোষের ফল ভুগবে দুর্বল নিঃসহায় এই মানুষগুলো?
বেশী কথা বলে ফেললাম।
ফরিদ দাদা, আপনি লিখে যান। বিদেশে আপনাদের লেখাই আমায় দেশের সুবাস বয়ে নিয়ে আসে।
বাংলায় আধুনিক কালে হিন্দু-মুসলমান রক্তক্ষয়ী রায়ট মনে হয় ব্রিটিশ আমলেই প্রথম হয়, ৪৬ সালে। কলকাতার পরে আমাদের নোয়াখালীতেও ভালই খুনাখুনি হয়েছিল।
যে সব দেশে ধর্মকে বা ধর্মীয় পরিচয়কে অতি গুরুত্বপূর্ন বলে বিবেচনা করা হয় সেসব দেশে এমন হবেই এটাই স্বাভাবিক। ব্রিটিশ আমলে পাক আমল থেকে কম হয়েছে, তবে বীজটা ছিল ঠিকই। পাক আমলে এক পক্ষ ক্ষমতায় যাবার পরে মজ্জায় মজ্জায় তার সুবিধে তুলেছে, ব্রিটিশ আমলে যেটা হয়নি। তবে ৪৬ এর দাংগা ব্রিটিশের লাগানো এমন অভিযোগ আছে। পশ্চীমের দেশগুলিতে সব ধর্মের লোক এক সাথে শান্তিতে থাকতে পারে কারন ধর্মীয় পরিচয়ের সেখানে কোন গুরুত্ব নেই। উপমহাদেশে তেমন পরিস্থিতি হতে আমি সহসা কোন আশা দেখি না।
আমার মনে হয় সরকারের থেকেও বেশী দায়ী করা উচিত আসলে ‘আম জনতা’ বলে যাদের জানি তাদের। পাকিস্তান আমলে একের পর এক হিন্দু বিদ্বেষী ব্যাবস্থা নেওয়া হয়েছিল, কাজেই দায় শুধু পাকিস্তানী শাসকদের? আমার জন্ম সেসময় না হলেও মনে তো হয় না যে সমীকরনটা অত সরল। আম জনতা সেসব বৈষম্যমূলক সরকারী সিদ্ধান্তে কি প্রতিক্রিইয়া দেখিয়েছিল? কতটা প্রতিবাদী হয়েছিল? আমার তো ধারনা অনেকেই মুখে লোক দেখানো আহা উহু করলেও মনে মনে বিজয়ের বিজাতীয় আনন্দই বোধ করেছিল। কারন পাকিস্তান আমল না দেখলেও আমি বাংলাদেশ আমল দেখেছি। অতি শিক্ষিত লোককেও অবলীলায় পাবলিকলি অসংখ্যবার বলতে শুনেছি যে মালাউনদের তাদের নিজ দেশ ইন্ডিয়াতেই চলে যাওয়া উচিত।
২০০২ সালে জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর সারা দেশ জুড়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের উপর যে হাবিয়া দোজখ নেমে এসেছিল তাতে ঘটনার তূলনায় প্রতিবাদ কতটা হয়েছিল? তখনো অধিকাংশ শিক্ষিত জনগোষ্ঠিকেই মত দিতে শুনেছি যে এসব হয় বিরোধী দলের ষড়যন্ত্র, আর নয়ত ভারতে দাঙ্গায় আরো অনেক বেশী মুসলমান মরে, তাই এত হাউ কাউ করার প্রয়োযন নেই।
মানুষ নানান কারনেই দেশ ছাড়ে, চূড়ান্ত কথা আসলেই যে ছাড়ে সেই অনুভূতি অন্য কেউ সহজে বুঝতে পারবে না। আমি নিজেও ধর্মের কারনে না হলেও কিছু বিশেষ কারনেই দেশ ছেড়েছি যা কাউকে বোঝাতে পারব না। অনেকের কাছে আমার কারনগুলি কোন কারনই না।
চমৎকার লেখা। তবে লেখককে অনুরোধ করব যে মুসলমানরা হিন্দুস্থান থেকে নিগৃহিত হয়ে পাকিস্তান আশ্রয় নিলেন বা দেশ ভাগে আসতে বাধ্য হলেন এঁরাও কিন্তু পাকিস্থান বলুন বা বাংলাদেশ বলুন এখনও
এখানে নিগৃত হচ্ছেন। নানান বাজে কথা গালাগালি শুনতে হচ্ছে আজ অবদি,এঁদের কি অপরাধ ছিল?
এই বিষয়ে লেখককে কিছু লেখার বা বলবার অনুরোধ রাখলাম। কেবল হিন্দুরা নিগৃহিত হচ্ছে না,হচ্ছেন ঐপার থেকে আসা মানুষ গুলোও। আজো।
@আফরোজা আলম,
ওরা স্বেচ্ছায় এসেছেন।আমাদের মত মার খেয়ে নয়।
পোস্টটা “প্রিয়”তে নিলাম।
অসাধারণ আত্মসমালোচনা। সবাই এভাবে আত্মসমালোচনা করতে পারেনা :guru: ।
@রামগড়ুড়ের ছানা, সবাই এভাবে আত্মসমালোচনা করতে পারেনা ।
হক কথা -আমি ও দেখি মাঝেমাঝে নিজেকে বেশি বুদ্ধিমান ভাবতে যাই; সেজন্য অবশ্যই আমি আমার বন্ধুদের কাছে সব খুলে বলি । মানুষতো -তাই মাঝেমাঝে ইগো নিয়ে কাজ করতে ইচ্ছে জাগে । তবে নিজেকে অনেক সংযত হতে শিখেয়েছি । সবাইকে এই কথাটি স্মরণ রাখা জরুরী । এটির অভাবের কারণে আজ সবধরণের হানাহানি চলছে -সাম্প্রদায়িকতা এর থেকে বাইরে নয় ।
ধন্যবাদ @ ফরিদ ভাইকে এক গুরুত্বপূর্ণ লেখা উপহার দেবার জন্য । যে ক্ষুধার্ত সেই শুধু জানে ক্ষুধার জ্বালা কেমন ? বাকীরা বুঝবে কিভাবে ? যে স্বদেশ ত্যাগের বাধ্য হচ্ছে সেই জানে এর চেয়ে কি বেদনার্ত পীড়ন আর থাকতে পারে ? এক মাকে মা’ডাকার অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়া আর মরে যাওয়ার মাঝে যেমন পার্থক্য খুঁজে পান না এক মনুষ্যত্ববোধসম্পন্ন ব্যক্তি; দেশ ত্যাগের বাধ্য হওয়া এর চেয়ে কম নয় । যদিও অনেকে এর জন্য তীব্র খুশি ।
@শুভাচার,
একদম ঠিক কথা।
১৯৯৯ সালের ৯ জুলাই প্রথম চালু হলো ঢাকা-কলকাতা সরাসরি বাস সার্ভিস। সাংবাদিক হিসেবে ওই রুটের প্রথম যাত্রার বাসযাত্রী ছিলাম আমি।
যশোর রোড ধরে বাস যখন বেনাপোল সীমান্ত অতিক্রম করে ওপার বাংলায় গেলো, তখন পথে পথে দলে দলে নারী-পুরুষ ভীড় করে বাসটিকে বার বার থামান। আমি জানালা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে অবাক বিস্ময়ে দেখি, তারা সবাই একবার হাত দিয়ে লাল রঙা বাসটিকে ছুঁয়ে দেখতে চান। চারিদিকে এক সঙ্গে অনেকগুলো শাঁখ বাজছে, মহিলারা উলুধ্বণী দিচ্ছেন, অনেকে ধূপ-ধূনো দিয়ে, প্রদীপ জালিয়ে বাসটির কল্যাণ কামনা করছেন, অনেকের চোখেই দেখি জল, মহিলাদের কেউ কেউ স্পষ্ট শাড়ির আঁচলে চোখ মোছেন…এরকমই এক অভূতপূর্ব দৃশ্য।…
ভীড় ঠেলে একজন বয়স্ক মতোন লোক লাঠিতে ভর দিয়ে অতি কষ্টে বাসের কাছে এসে বাসটিকে একবার হাত দিয়ে ছুঁয়েই চিৎকার করে উঠলেন: ওরে! আমাগো বাংলাদ্যাশের বাস!
আমি তখনো পুরো বিষয়টি বুঝে উঠতে পারিনি। পাশের আসনের একজন কলকাতার সাংবাদিককে এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি আমাকে বুঝিয়ে বলেন, এসব বাঙালিদের বেশীরভাগই দেশ বিভাগের দাঙ্গার সময় পূর্ব বাংলা ছেড়ে পশ্চিম বাংলায় আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়েছেন। এখন বাংলাদেশের বাস দেখে তাদের মনে পড়ছে, ফেলে আসা সেই দেশের কথা!…
এই প্রথম দেশ বিভাগের উদ্বাস্তুদের মুখোমুখি হয়ে আমি বাকরূদ্ধ হয়ে পড়ি। এর আগে বহু লেখায়, গল্প-কথায় আমি দেশ বিভাগ নিয়ে যা জেনেছি, সেদিনের অভিজ্ঞতা আমার সব উপলব্ধীকে ছাপিয়ে যায়– সেদিনের সে অনুভূতি আসলে ভাষায় প্রকাশ যায় না… 🙁
@বিপ্লব রহমান,
আপনার বাস্তব অভিজ্ঞতার সাথে ফরিদ ভাইয়ের কথাগুলোর কী অপূর্ব মিল। বোল্ড করা বাক্যটি হৃদয়ে ধারণ করার মত।
ড. আহমদ শরীফ বলেছেন- “মানুষের শোনা-জানা থাকে অনেক কিছুই, কিন্তু জ্ঞান প্রজ্ঞায় পরিণতি না পেলে, বোধ-বুদ্ধি হৃদয়গত না হলে তা বিবেক প্রণোদিত কর্মে আচরণে অভিব্যক্ত হয় না। জ্ঞান অনুভবের ও উপলব্ধির জগৎ প্রসারিত করে। অপরের থেকে যা জানা যায়, তাই জ্ঞান, আর ব্যক্তিগত ভাব-চিন্তা-কর্ম-আচরণের মধ্যে দিয়ে যা জানা হয় তার নাম অভিজ্ঞতা। এক হিসেবে অভিজ্ঞতাই পূর্ণ জ্ঞান- যা বোধিতে বা প্রজ্ঞায় পরিণতি পায়।”
@মাহফুজ, :yes:
@বিপ্লব রহমান,
আহা! আমি যদি এই বয়ষ্ক ভদ্রলোককে একটু ছুঁয়ে দেখতে পারতাম।
@ফরিদ আহমেদ, :brokenheart:
ফরিদ ভাইকে :rose2:
সেখানকার নদী কি এমনই মধুমতি?- সেখানকার নদী সত্যই মধুমতি।
মাটি কি এমনই মমতামাখানো?- সত্যই মমতায় ভরা
ধান কি এমনই বৈকুন্ঠবিলাস?- ঠিক তাই
সোনার মত ধান আর রুপোর মতো চাল?- সত্য
বাতাস কি এমনি হিজলফুলের গন্ধভরা- সেই গন্ধে আমার নাক আজও যেন ভরা।
@সেন্টু টিকাদার,
আপনাকেও প্রস্ফুটিত লাল গোলাপ। :rose2:
এলাকার লোকজন বাবাকে ধরেছে- চেয়ারম্যানিতে দাঁড়াতে হবে। বাবা ছোটো ভাইকে ধরেছে- তাহলে আগে গ্রামের বাড়িতে ঘর-দোর ঠিক করতে হবে।
ছোটো ভাই কলেজের সেমিস্টার বাদ দিয়ে ট্যাক্সি চালিয়ে টাকা পাঠাচ্ছে। আমি মাঝখান থেকে তামশা দেখি! মাঝে মাঝে উসকে দেই- জানালাগুলো স্লাইডগ্লাস দিয়ে করলে দেখতে ভালো লাগবে।
কথাটা পুরোপুরি মানা হয় নি। দোতলার জানালায় স্লাইডগ্লাস হবে; নিচে মোটা রড- সিকিউরিটির জন্য!
@শ্রাবণ আকাশ,
:-/
এই টপিকের সাথে বা কোন কমেন্টের সাথে আপনার কমেন্টের কোন সম্পর্ক করতে পারলাম না।
@আসরাফ, দিলেন তো আবার ভাবনায় ফেলে… 🙂
আচ্ছা মনে করুন কোন এক “সংখ্যালঘুদের” গ্রামের বাড়িতে নতুন ঘর তোলা হচ্ছে, আর ইচ্ছে থাকলেও মনের মত প্লান করে ঘর করা যাচ্ছে না বা ভয় হচ্ছে। আর সেই ভয় থেকেই প্লান করা হয়েছে যে দোতলার জানালায় স্লাইডগ্লাস দিলেও নিচের জানালায় সিকিউরিটির জন্য মোটা রড ব্যবহার করা হবে। যদিও জানিনা সেই মোটা রডই বা “প্রলয় কালে” (যদি হয়) কতটুকু “সিকিউরিটি” দিতে পারবে।
@আসরাফ,
@শ্রাবণ আকাশ ,
গ্রামে গিয়ে ইদানিং নতুন ঘর করেছে এমন কয়েকটি হিন্দু বাড়ি পর্যবেক্ষণ করলেই বুঝা যায়। আমি দুই বৎসর আগে আমার শ্বশুর বাড়িতে নতুন ঘরের জানালার এত রডের ব্যবহার দেখে অবাক। সাথে এত পোক্ত দরজা, বারান্দায় গ্রীল। ইত্যাদি ইত্যাদি। আমার হাজব্যান্ডের উত্তর, সাবধানতার মাইর নাই । সাথে আমাকে গাজীপুর জেলার কালিগঞ্জ উপজেলার ( আমার শ্বশুর বাড়ি) অতীত ইতিহাস মনে করিয়ে দিল। ইমদু আর শুক্ক্কুরের কাহিনী। গত বি এন পি এর আমলে হিন্দু বাড়ি থেকে চাঁদা নেওয়া ও দরজা ভাঙ্গার ঘটনাও উল্ল্রখ করল।
বাঙালী হিন্দুর আসলেই কোন অস্তিত্ব নেই। বল্লাল সেনের আগে বাঙালী হিন্দু বলে কিছু ছিল না। পাল আমলে এই বাংলা ছিল বৌদ্ধ শাসিত। নদী মাতৃক এই বাংলার আদ্র আবহে তারা ছিল কুঁড়ে এবং শান্তিপ্রিয় জাতি। কিন্ত এই ধরনের সংস্কৃতি রিপ্রোডাক্টিভ ফিটনেসের জন্যে ছিল অকেজো।
ফলে কর্নাটকের সেনেরা-যারা ছিল উগ্র ক্ষত্রিয় যখন প্রথমে মেদিনীপুর এবং পরে গৌড় আক্রমন করে-বাংলা বাধা দিল না। বল্লাল সেন যখন সব বাঙালীকে শুদ্র বানালেন এবং উত্তর প্রদেশ থেকে ব্রাহ্মণ আমদানী করে হিন্দু ধর্ম প্রতিষ্ঠা করতে চাইলেন এই সব ব্রাহ্মনদের করশুন্য জমি দিয়ে এবং স্থানীয় আদিবাসিদের ওপর কর চাপিয়ে- বর্ধমানে প্রথম বিদ্রোহ হল বল্লাল সেনের আমলে। যার নাম কৈর্তব্য বিদ্রোহ। কিন্ত বাঙালীত লড়তে জানে না। ফলে সেই বিদ্রোহ দমন হল অনায়াসে-কিন্ত বল্লাল সেন ডিভাইড এন্ড রুল পলিসি নিলেন। কিছু কিছু শুদ্রদের জাতে তুলে উচ্চবর্ণের শুদ্র বানালেন।
তবুও শ্রী চৈতন্যের আগমনের আগে পর্যন্ত বাঙালী হিন্দু ছিল না। মুসলমান হচ্ছিল। তবে সেই সেব মুসলমানদের কোরান বা আরবী কি-সেই সব নিয়ে কোন ধারনা ছিল না।তারা শিবের গাজন, তন্ত্রপূজা মহরম সব এক সাথেই করত। গিরিশ ভাই উনবিংশ শতাব্দিতে কোরান অনুবাদ করার আগে বাঙালী মুসলমান কোরান কি সেটাই জানত না। ১০০০-১৪০০ সাল পর্যন্ত বাঙালী মুসলমান হয়েছে শ্রেফ সেন রাজাদের দ্বারা সৃষ্ট জ়াতিভেদ অমান্য করতে।
শ্রী চৈতন্যের ভক্তি আন্দোলনের ফলে মুসলমানে ধর্মান্তকরন বন্ধ হল-বাংলায় হিন্দু ধর্ম প্রথম সলিড পা রাখল। বাঙালী হিন্দুদের আজও সংখ্যাগুরু লোকই বৈষ্ণব। ইসলামের একটা সমস্যা আগেও ছিল-এখনো আছে। তা বিজাতীয় আরবদের ধর্ম বলে-সেই অর্থে বাঙালী মানসের গভীরে ঢুকতে পারে নি।
এমন কি বারো ভুইজ্ঞাদের আমলে যারা বাঙলার হয়ে লড়েছিলেন তাদের অধিকাংশই মুসলমান। প্রতাপাদিত্য বা সব থেকে বড় হিন্দু জমিদারের সেনাপতিও ছিল হয় মুসলমান বা আরাকান।
বৃটিশ আমলেও বাঙালী হিন্দুদের উত্থান বৃটিশদের সহকর্মী হয়ে। তাদের আধুনিক উদার এবং উন্নত রূপ উপনিবেশিক শাসন স্বীকার করে-কোন সার্ব ভৌম জাতি হিসাবে না। আবার এটাও ঠিক পরবর্ত্তীতে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে বাঙালী হিন্দুরাই সব থেকে বেশী বীরত্বের পরিচয় দিয়েছে। বাঙালী হিন্দুদের মিলিটারি ইতিহাস ওইটুকুই।
বাঙালী হিন্দুদের সংস্কৃতি এত বেশী ভীতু এবং আত্মকেন্দ্রিক-এই সংস্কৃতি কেন টিকবে, বা টেকাতে হবে আমার ধারনা নেই। ইস্রায়েলের জন্মের সময়, সংখ্যালঘু জিউসরা নিজেদের প্রানের বাজি রেখে, নিজের ভূখন্ড রক্ষা করেছে-নিজেরাই মিলিটারী তৈরী করেছ। বৃটিশরা করে দেবে এই আশায় বসে থাকে নি। সেখানে বাঙালী হিন্দুরা বরাবর মনে করেছে হয় বৃটিশ, না হলে গান্ধী বা নেহেরু তাদের স্বার্থ দেখবে-এই হাজার বছরের দাসত্বের মনোবৃত্তি, ভীরু দাসসুলভ মনোবৃত্তি দিয়ে কিছ হয় না। নইলে দেশ ভাগের সময় বাংলাদেশে এককোটি হিন্দু ছিল-তার অস্ত্র ধরলে, বাংলার ইতিহাস বদলে যেত। কিন্ত ধরবে কে? তারা ছিল ভীতু, আত্মকেন্দ্রিক জাতি।
স্বাধীনতার পরে পশ্চিম বঙ্গের অবস্থা দেখলেই বোঝা যায় বাঙালী হিন্দু কি পরিমান অপদার্থ জাতি। পশ্চিম বঙ্গ ভারতের তৃতীয় গরীব রাজ্য-বিহার এবং উড়িশ্যার পরেই। গ্রামের পর গ্রাম পুরুষ শুন্য-সবাই কেরালা বা কর্নাটকে কাজ করতে যায়। অথচ ইতিহাস, শিক্ষা এবং স্ট্রাটেজিক পজিশনে পশ্চিম বঙ্গের অনেক সুবিধা অন্য রাজ্যের চেয়ে। তারপরেও এই অবস্থা। এবং এর একটা কারন বাঙালী হিন্দুর আদৌ কোন ইতিহাস নেই। ইতিহাস গড়ে ওঠে একত্রিত হয়ে যুদ্ধ করতে করতে। যার মাধ্যমে একটা জাতির মেরুদন্ড তৈরী হয়।
বানানটা মনে হয় “কৈবর্ত্য বিদ্রোহ”।
বাঙালীদের এই জাতপাতের ইতিহাস আরো বিস্তারিত ভাবে আছে নীহাররঞ্জন রায়ের “বাঙালীর ইতিহাস- আদি পর্ব”তে।
@বিপ্লব পাল,
আমার ধারণা ছিল কৈবর্ত বিদ্রোহ ঘটেছে পালদের আমলে বরেন্দ্রে, বর্ধমানে নয়।
আপনার বক্তব্যের অনেক কথারই সারবত্তা আছে বলে মনে করছি।
@বিপ্লব পাল,
এই সব ইতিহাস কই পাও তুমি? নিজে নিজে বানাও নাকি? 🙂
কৈবর্ত্য বিদ্রোহ হয়েছিল বরেন্দ্র অঞ্চলে। পাল রাজত্বে, একাদশ শতাব্দীতে। দ্বিতীয় মহীপালের বিরুদ্ধে কৈবর্ত্যদের এই বিদ্রোহে নেতৃত্ব দিয়েছিল দিব্যোক এবং রুদক নামের দুই ভাই। এরা স্বল্প সময়ের জন্য কৈবর্ত্যদের স্বাধীন রাজ্যও গঠন করেছিল।
@ফরিদ আহমেদ,
নীহার রায়ের বাঙালীর ইতিহাস পড়ে দেখ।
বইটা নেই আমার কাছে। তুমি পারলে সামান্য কিছু অংশ তুলে দাও যাতে বুঝতে পারি যে, কৈবর্ত্য বিদ্রোহ হয়েছিল বল্লাল সেনের সময়ে বর্ধমানে, দ্বিতীয় মহীপালের সময়ে বরেন্দ্র ভুমিতে নয়।
@বিপ্লব পাল,
“বাঙালী হিন্দুর আসলেই কোন অস্তিত্ব নেই। বল্লাল সেনের আগে বাঙালী হিন্দু বলে কিছু ছিল না।”
বিপ্লব বাবুর ফতোয়া হাস্যকর। পাল রাজ্যের আগে শশাংক নামে বঙ্গীয় রাজা ছিলেন এবং উত্তর ভারতের সম্রাট হর্ষবর্ধনের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলেন। শশাংক-র ধর্ম কি ছিল ? তিনি কি হিন্দু ছিলেন ? বিপ্লব বাবু লিখেছেন “পাল আমলে এই বাংলা ছিল বৌদ্ধ শাসিত।” তার মানে কি বাংলার সব মানুষ বৌদ্ধ হয়ে যায় নাকি। প্রায় এক হাজার বছর ধরে ভারতবর্ষ মুসলমান শাসিত ছিল, তার অর্থ কি ভারতের সব (কিংবা) অধিকাংশ মানুষ হিন্দু। আসলে ‘হিন্দু’ নামক ধর্মের লেবেলটি অতি নবীন এবং এখনো খুব নির্দিষ্ট নয়। যেমন ভারতীয় সংবিধানে শিখ, জৈন এবং বৌদ্ধরাও হিন্দু বলে গণ্য। কেরল বিধান সভায় পাশ করা আঈন অনুযায়ী “যে ব্যক্তির মাতা বা পিতা হিন্দু এবং যদি তিনি অন্য কোন ধর্মীয় মতের সঙ্গে যুক্ত না হন তাহলে তিনি হিন্দু।এবং সেই ব্যক্তি্র ঈশ্বরে অবিশ্বাস বা হিন্দু রীতি নীতি পালন না করার অধিকার আছে।”
আবহমান ধরে ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষ যে রীতি নীতি, উপাসনা, সংস্কার পালন করে আসছেন তারই একটা অতি সাধারণ নাম ‘হিন্দু’। এটি সংস্কৃত বা ভারতীয় শব্দ নয়, সিন্ধু-র ফারসী উচ্চারণ মাত্র। এই শব্দের দ্বারা ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষের সনাতন রীতি নীতি, উপাসনা, সংস্কার ও বহিরাগত (যবন) রীতি নীতি, উপাসনা, সংস্কারের পার্থক্য বোঝান হয় মাত্র।
শুতরাং, বাংলায় বা ভারতে ‘হিন্দু’র অস্তিত্ব কবে থেকে শুরু হল তার দিনক্ষণ খুঁজতে বল্লাল সেন নয়, কয়েক হাজার বছর পিছনে যেতে হবে।
@মিয়া সাহেব,
পাল রাজ্যের আগে শশাংক নামে বঙ্গীয় রাজা ছিলেন এবং উত্তর ভারতের সম্রাট হর্ষবর্ধনের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলেন। শশাংক-র ধর্ম কি ছিল ? তিনি কি হিন্দু ছিলেন ?
>>>
বাঙ্গালা ভাষীদের সাথে দ্রাভিড়িয় সংস্কৃতির মিল ছিল সেই সময়-কিন্ত পাল রাজাদের আমলে বাংলা বৌদ্ধই ছিল-একটি অদ্ভুত ধর্মের সৃষ্টি হয়। যার নাম তান্ত্রিক বুদ্ধিজম। যার নমুনা চর্চাপদ।
শশাঙ্ক ছিলেন শৈব এবং তিনি বোধিবৃক্ষ ধ্বংশ করেছিলেন। কিন্ত তার মৃত্যুর পর বাংলার বুকে সাধারন ধর্ম হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে তান্ত্রিক বৌদ্ধ ধর্ম। যা দ্রভিড়িয় এবং বৌদ্ধ সংস্কৃতির মিশ্রন।
এখন এক অর্থেত পৃথিবীর সব ধর্মকেই হিন্দু ধর্মের অন্তর্ভুক্ত করা যায়। কারন হিন্দু ধর্মে নেই এমন কিছু অন্য ধর্মে নেই। সম্ভব না। হিন্দু ধর্ম অল ইনক্লুসিভ। তা ইসলাম, বৌদ্ধ ত বটেই হাল হামলের সব দর্শনকেই নিজের ধর্মের দর্শন বলে যোগ করে দিতে পারে।
@বিপ্লব পাল,
‘শশাঙ্ক শৈব ছিলেন’। শৈবরা হিন্দু নয় একথা কে বলে? অন্তত শৈবরা নয়। শিবের উপাসনা হিন্দুরাই করে থাকে অহিন্দুরা নয়।(দয়া করে মহেঞ্জদরোর গপ্পো ফাঁদবেন না।) অতএব শশাঙ্ককে হিন্দু বলতে দ্বিধা কেন? । অর্থাত বল্লাল সেনের আগে বাঙ্গালী হিন্দুর অস্তিত্ব ছিল।
“কিন্ত পাল রাজাদের আমলে বাংলা বৌদ্ধই ছিল-” কোন যাদুতে পাল রাজারা বাংলার অতি অল্প সময়ে সব মানুষকে হিন্দু থেকে বৌদ্ধ ধর্মে কনভার্ট করলেন? এত রক্তারক্তি, মন্দির, মঠ, বিদ্যালয় (নালন্দা হিন্দুরা ভাঙ্গে নি) ধ্বংস করেও কয়েক শতকে মুসলমানরা যেটা পারেনি।
অতি সরলীকরণ বর্জন করাই সমীচিন।
@বিপ্লব পাল, বিপ্লব পালতো দেখি অনেক কিছুই জানেন এবং বুঝেন । হিন্দু ধর্মের মতো বর্বর ধর্ম আর দ্বিতীয়টি দেখিনি -বেদ এবং উপানিষদ সেগুলোতে ও গাবলা রয়েছে -দার্শনিক মতবাদ নেই তা নয় । ডঃ আমেডকরের বইগুলো পড়ে দেখুন । তারপর ও আপনি যেটা বললেন –
দেখেতো আমরা অবাক -আপনি রীতিমতো সাবাই গাইতে ও পারেন ।
@নয়নমুনি,
ইসলাম, খ্রীষ্ঠান ধর্ম হিন্দু ধর্মর থেকে কম বর্বর মনে হলে কেন?
বেদের অনেক কিছুই বর্বর পাবেন-কিন্ত উপনিষদে বর্বর কি পেলেন? ওটাত শিক্ষক ছাত্রের ডায়ালোগ!
বর্বরতার ব্যাপারে বৌদ্ধ এবং জৈন ধর্ম বাদ দিলে, বাকীদের আলাদা না করাই শ্রেয়। ইসলাম এবং খ্রীষ্ট ধর্ম নিজেদের ধর্ম প্রচার করতে যে পরিমান হত্যা চালিয়েছে, হিন্দুরা তা করে নি। তারা বর্বরতা দেখিয়েছে নিজেদের লোকেদের প্রতি।
@বিপ্লব পাল, উশাসটি বলেন, “ইহা হতে দাও; আমার অনুমোদিত সন্ন্যাসীদের গাওয়া স্তবকগুলোকে রক্ষা করতে দাও। কিন্তু তোমার আমাকে সমান সম্পত্তি দেয়া উচিত । খুব ভালো বলল বলিদান কর্তা । তারপর উশাসটি সন্ন্যাসীদের বলিদানের কিছু নিয়ম নীতি এবং দেবতার পূজার কিছু জিনিস শেখাল । ( চক্রযান উশাসটি এবং অপট ধর্ম; চ্যাপ্টার ১০ -চানদ্যেগ্যহ উপনিষদ) । সবসময় বলিদানের কথা না বললে আর শিক্ষা গ্রহণ করা যে যায় না । সবসময় শ্রেণীবিভেদ যে বিদ্যমান ।
ইসলাম এবং খ্রীষ্ঠানের উত্থান ছিল কিন্তু কুসংষ্কারাছন্ন বর্বররোচিত সমাজের বিরুদ্ধে তাই বলে যে সেই ধর্মের জয়গান করে হিন্দু ধর্মকে হীয় করলাম তা নয়, তবে আপনার হিন্দু ধর্মের দর্শনগুলো অন্যধর্মে চুরি করা হয়েছে দেখে বলতে বাধ্য হয়েছি ।
ও আরেকটি কথা বলা হলো না –বৌদ্ধদের ভারত বর্ষে পতনের মূল হচ্ছে হিন্দু ধর্মের গৌড়াঁমি এবং বর্বরতা; কত বৌদ্ধ সন্ন্যাসীকে যে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে মন্দিরগুলোকে বেদখল করা হয়েছে; সমাজকে করা হয়েছে দ্বিধাবিভক্ত তারপর ও কি বলবেন শুধু হিন্দুদের হত্যা উপর বর্বরতা করা হয়েছে ? সম্রাট অশোকের শাসনামলের ইতিহাস পড়ুন তারপর না হয় বুঝতে পারবেন কত শতাংশ হিন্দু ছিল ? বকটিয়ার কলজিতো বটেই ।
@নয়নমুনি,
বৌদ্ধ ধর্মের পতনের মূল কারন বৌদ্ধ দর্শন । যদি লোকে দলে দলে অবিবাহিত থেকে ভিক্ষু হয়-সেই ধর্মের আর ভবিষয়ত কি হবে? তাছারা ভারতীয় বৌদ্ধ ধর্ম মিলিটারিজমেও বিশ্বাসী ছিল না-সুতরাং আক্রমন আটকানোর ক্ষমতাও তাদের ছিল না।
একটা রিপ্রোডাক্টিভলি আনফিট ধর্মের পতন ত হবেই। বৌদ্ধ ধর্ম চীন এবং জাপানে টিকে গেছে কারন ওখানে বৌদ্ধ ধর্ম, স্থানীয় যোদ্ধাদের ধর্মর সাথে মিশে শক্তিশালী দর্শন তৈরী করেছিল। আর এখানকার বৌদ্ধরা হয় ভিক্ষু নইলে তান্ত্রিক হত।
@বিপ্লব পাল,
আপনি প্রথমে বলে বসলেন হিন্দু ধর্ম থেকে দর্শন চুরি করা হয়েছে আবার পুণরায় বললেন অন্যযতসবঃ
এগুলো কি লেখক বিপ্লব দাদা ? আর যদি সব ধর্মই এক দর্শন অনুসর করতো আজকে এমন সাম্প্রদায়িক হত্যাযজ্ঞের সম্মুখীন হতে হতো না ।
এতে বুঝা যাচ্ছে আপনি মিলিটারিজমের বিশ্বাসী অর্থাৎ ধর্মের জন্য ও মিলিটারি অবশ্যম্ভাবী । ভালো তো একদম জিহাদীদের মতামতের মতো । এসব কারণে এবং এসব লেখকের জন্য আজ সাম্প্রদায়িক মনোভাব দ্বিগুণভাবে বেড়ে যাচ্ছে । এখন এমন একটি দেশের নাম বলেন যেখানে মিলিটারী না থাকা স্বত্তে ভয়াবহ সহিংসতা অথবা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনস্ত হচ্ছে, তারপর এমন একটি দেশের নাম বলেন মিলিটারী থাকা স্বত্তে শান্তিতে আছে ? আপনার মতামতগুলো আজব লাগে ।
@নয়নমুনি,
ধর্ম কি মঙ্গল গ্রহের প্রাণীদের জন্যে ?
প্রাণী জগতের দিকে তাকালে কি দেখতে পান? প্রতিটি প্রানীর
বিবর্তন হয়েছে কি করে আরো ভাল আত্মরক্ষা করতে পারবে। “আত্মরক্ষা” প্রাণের অন্যতম প্রধান ধর্ম।
মানব সভ্যতার ইতিহাস ও তাই। অস্ত্রএর উন্নতি ছি্ল সভ্যতার অন্যতম চালিকা শক্তি। আর ঐতিহাসিক ভাবে সেটাই সত্য ছিল-আজ ও তা সত্য।
ভাবুন বাংলাদেশের সবাই বৌদ্ধ ধর্ম নিল। কি হবে? মানলাম মৌলবাদি সমাজ রইল না-কিন্ত সবাই দলে দলে ভিক্ষু হলে, আর মিলিটারি ছেরে দিলে, আস্তে আস্তে দেশে মৎসান্যায় শুরু হবে। বৌদ্ধ ধর্ম ব্যাক্তির জন্যে ঠিক হলেও রাষ্ট্রএর চালিকা শক্তি হ তে পারে না। যার জন্যে অশোকের মৃত্যুর ৫০ বছরের মধ্যে মৌর্য্য সম্রাজ্য সম্পূর্ন ধ্বংশ হয়।
আত্মরক্ষা করা সব থেকে বড় জৈবিক ধর্ম। কোরান এবং গীতা এর ওপর জোর দিয়ে থাকে-এবং ঐতিহাসিক দিক দিয়ে এতে ভুল কিছু নেই। বহিরাগতদের আক্রমন থেকে সবাইকেই লড়তে হত। ইসলাম অবশ্য নিজেই বহিরাগত হিসাবেই আক্রমন করেছে। আর গীতার জন্ম ভারতীয় জনপদগুলির আভ্যন্তরীন রাজনীতি থেকে।
@বিপ্লব পাল, তাহলে জিহাদীদের কোন দোষ নেই কেননা ধর্মের জন্যতো যুদ্ধ করে ঠিকে থাকতে চাইছে । আপনি কিন্তু বারবার আমার প্রশ্নগুলো এড়িয়ে গিয়ে নতুনত্ব চিন্তা-চেতনার কথা নিজের মতো করে বলেন, হয়ত এটা আপনার অভ্যাস । যাহোক মুক্তমনায় আপনার আগমন খুব পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে শুধু এই ব্লগের লেখাগুলো পড়ে । ধন্যবাদ ।
@নয়নমুনি,
পারস্য, সিরিয়া বা তৎকালীন কনস্ত্যান্তিনোপল বা ভারতবর্ষ যে অসভ্য কুসংস্কারাচ্ছন্ন বর্বরদের দেশ ছিল এ তথ্য আপনাকে কে দিল? বরং এব্যাপারে অনেক প্রমাণ যে এই দেশগুলিতে ধর্মান্ধ বর্বর আরব দের থেকে অনেক বেশি পরিমানে জ্ঞানচর্চা হয়েছে আর আরব আক্রমণ ঐ সব দেশে শিক্ষাচর্চার কেন্দ্রগুলি নষ্ট করেছে।
@বিপ্লব পাল,
নানা কারনে ব্যস্ত থাকার কারনে দেরী করে ফেল্লাম।
আপ্নার অনেক মন্তব্যের সাথে সহমত না হলেও উপরের আপানার মন্তব্যের সাথে সহমত।
আর বুদ্ধ ধর্ম বিনাশ করতে জিহাদিরা কম ভুমিকা রাখে নাই। এর একটা জলন্ত উদাহারন আফগানিস্তান।
@নয়নমুনি,
”
এটা ডঃ আম্বেদকরের কিছু বই আমিও পড়েছি যেখানে তিনি হিন্দু ধর্মকে আঘাত হেনেছেন। রাম কে নিয়েও টীপন্নি করেছেন। তিনি হিন্দু ধর্ম ত্যাগ ও বুদ্ধ ধর্ম গ্রহন করেছিলেন।
আপ্নি কি তাঁর বই পড়ে উপরের মন্ত্যবটি করেছেন?
@সেন্টু টিকাদার,
শুধু ডঃ আম্বেদকরের বই পড়ে কেনো হতে হবে ? সমসাময়িক সময়ে ও কিরকম সহিংষতা ঘটে চোখ খুললেতো পরিষ্কার করে দেখা যায় । ইসলাম ধর্মে জিহাদকে যেভাবে সমালোচনা করা হয় ঠিক হিন্দু ধর্মের রন্ধ্রেরন্ধ্রে হত্যাযজ্ঞের কথা কমবেশি বিদ্যমান । উপনিষদ, বেদ, মহাভারত -রামায়ন বেশতো পড়লাম ।
@বিপ্লব পাল, ব্রাহ্মণ্যবাদী বর্ণাশ্রম ধর্মকেই আমরা বর্তমানে হিন্দু ধর্ম বলে জানি যা বাংলা অঞ্চলে সুসংহতভাবে প্রতিষ্ঠা করেছেন বল্লাল সেন – যেখানে পূর্ববর্তী শৈব, শাক্ত, বৈষ্ঞব ও মহাযানী উপাসনা পদ্ধতির মানুষ মিশে গেছেন (অন্ত্যজরা মিশেছেন ‘গান্ধীযুগে’!) – (এখানে উপাসনা পদ্ধতি ও বর্ণ দুটি আলাদা বিষয়) । বল্লাল সেন ও লক্ষণ সেন বর্ণ সমীকরণে ক্ষমতা-দ্বন্দ্ব ক্ষমতা-স্বার্থে কিছু ব্যক্তিকে উঁচু বা নিচু বর্ণাশ্রমভুক্ত করেছিলেন অভিযোগ আছে । অন্ত্যজ মানুষের বিদ্রোহ একাধিক হযে়ছিলো । রাঢ়-বর্ধমানে হওয়াও বিচিত্র নয় । তবে বরেন্দ্রের কৈবর্ত্য বিদ্রোহ পাল আমলে হযে়ছিলো (এই সময়কার পাল রাজারা শৈবধর্মের প্রতি আসক্তি দেখিযে়ছিলেন) । মনে হয় বর্ণাশ্রম প্রথা কিছু ক্ষেত্রে প্রাচীন দ্রাবিড়ীয় কৃষিসভ্যতার সময় থেকে ভারতবর্ষে ছিলো, তবে আধুনিক ব্রাহ্মণ্যবাদ আরও পরের। সমাজের উঁচুনিচুপ্রথা বৌদ্ধরা দূরীভূত করতে সফল হননি ।
অন্ত্যজ মানুষের বিদ্রোহ একাধিক হযে়ছিলো । রাঢ়-বর্ধমানে হওয়াও বিচিত্র নয় । তবে বরেন্দ্রের কৈবর্ত্য বিদ্রোহ পাল আমলে হযে়ছিলো (এই সময়কার পাল রাজারা শৈবধর্মের প্রতি আসক্তি দেখিযে়ছিলেন) । মনে হয় বর্ণাশ্রম প্রথা কিছু ক্ষেত্রে প্রাচীন দ্রাবিড়ীয় কৃষিসভ্যতার সময় থেকে ভারতবর্ষে ছিলো, তবে আধুনিক ব্রাহ্মণ্যবাদ আরও পরের । সমাজের উঁচুনিচুপ্রথা বৌদ্ধরা দূরীভূত করতে সফল হননি ।
তবে মুসলিম বিজয় পরবর্তী সমযে় বাঙ্গালী উচ্চবর্ণ হিন্দুদের পুনরুত্থান গৌডে়র সুলতানী যুগে । বারেন্দ্রী ব্রাহ্মণরা স্বাধীন সালতানাতে বাঙ্গালায় (গৌড়) প্রভাবশালী ছিলেন। পাদশাহী যুগে ব্রাহ্মণ ও কায়স্থদের সামাজিক অবস্থান বেশিরভাগ বাঙ্গালী মুসলিমদের চেযে় উঁচুতে ছিলো । পাদশাহী শাসনামলে বাংলায় দেওয়ানী পদসহ বিভিন্নস্তরের ভূমি ও কর ব্যবস্থাপকের পদ একচেটিয়াভাবে বাঙ্গালী উচ্চবর্ণের হিন্দুদের প্রাপ্য ছিলো । পলাশীর যুদ্ধে সেনাপতিদের ভেতর দু’জন মাত্র বাংলাভাষী ছিলেন – মোহনলাল ও রায় দুর্লভ (রায় দুর্লভের পূর্বপরিচিতি সম্পর্কে সন্দিহান) ।
ব্রিটিশ রাজ শাসনের আগে বাঙ্গালী মুসলমানের জাতি/সম্প্রদায়গত আলাদা কোন ইতিহাস নেই (আছে নির্বাক ইতিহাস) । উচ্চ/মধ্যহিন্দুর ইতিহাস আছে, কিছু ব্যক্তি/পরিবার বাঙ্গালী মুসলমানের আছে । তবে পৃথিবীর বিভিন্ন হারেমে ‘খোজা’জনশক্তি রপ্তানী হযে়ছে সবচেযে় বেশি মুসলিম-প্রধান পূর্ববঙ্গ থেকে । সুলতানী ও পাদশাহী যুগে বাংলার মুসলিম শাসক ও মুসলিম বিদ্রোহীরা মূলত উত্তর ভারতীয়, পাঠান ও বহিরাগত বংশোদ্ভূত । আদি বাঙ্গালীরা খুব বেশি হলে ভাড়াটিয়া সৈনিক (বেশিরভাগ সৈন্য থাকতো উত্তর ভারতীয় ক্ষত্রিয়, কিছু ভাড়াটিয়া বহিরাগত মুসলিম)।
@খুরশীদ এ, চৌধুরী,
এই সমীকরণটা বিতর্কাতীত নয়। অন্ত্যজ মানুষের ধর্ম, শ্রীচৈতন্যের আন্দোলন, ব্রাহ্ম ধর্ম হিন্দু ধর্ম নয় কেন, বা হিন্দু ধর্মের একটা aspect নয় কেন? হিন্দু ধর্ম (সে ভাল মন্দ যাই হোক) বৌদ্ধ ধর্ম বা ইসলামের মত পরিচ্ছন্ন সংজ্ঞার অধিকারি নয়।
@রৌরব, সত্যি । তবে যেসব পবিবার হিন্দু হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে সমাজস্বীকৃত তাঁরাই হিন্দু অভিধায় ভূষিত হচ্ছেন । ১৯ শতকের দ্বিতীয়ার্ধের আগে হিন্দু বলে একক জাতিগত ঐক্যের অনুপস্থিতি সুস্পষ্ট যার কারণে উপমহাদেশের মুসলিম শাসনের বিরুদ্ধে বড় রকমের সাম্প্রদাযি়ক বিরোধিতা আসেনি, স্বয়ং শিবাজীও ঐক্যবদ্ধ করতে পারেননি । জাতি বলতে লৌকিক হিন্দু তাঁর নিজ অঞ্চলের নিজ বর্ণের মানুষকেই জেনেছে । ব্রিটিশ রাজ শাসনামলে গণশিক্ষার প্রসার, প্রিণ্ট মিডিয়া-প্রেস এবং গণরাজনীতির প্রচলন হিন্দু বুদ্ধিজীবিদের চিন্তাভাবনাকে গণমানুষের কাছে নিযে় গেছে । হিন্দু ঐক্যের অভাব মুসলিম শাসনকে সহজ করেছিলো । আসলে বিষয়টি নিযে় আমি এখনও কাজ করছি ।
নিচের লিংকগুলো পড়ে আসুন ভালো লাগবে -একজন ভুক্তভোগীর সরলমনা উত্তর -যে জানে সত্যিকার জীবনের মানে -অবহেলার সংজ্ঞা; ব্যক্তি জীবনে লুকিয়ে থাকা হৃদয়স্পর্শী মর্মকথা -পড়লে মন কেঁদে উঠে; ভাষাহীন হয়ে থাকতে হয় ।
শরনার্থী জীবনের এক বাস্তবচিত্র: http://amithill.amarblog.com//posts/123673/
লোগাং হত্যাকান্ডের বর্ণনা দিতে গিয়ে- http://amithill.amarblog.com//posts/123433/
@নয়নমুনি,
অমিত হিল কি আপনি? যদি হন, তবে লিখতে পারেন মুক্তমনায় ইচ্ছা করলে।
@ফরিদ আহমেদ, আমি অমিত নই তবে এক ঘনিষ্ট বন্ধু । বলে দেখি লিখে কিনা ? আমরা তিন বন্ধু তিন ভিন্নজগতের বাসিন্দার হয়ে দিনাতিপাত করি । তাই জবরদস্তি নেই, নেই অবহেলার যে যার মতো করে চলি । তিনজনের সংখ্যালঘুর বাস্তবতা বলতে -লিখতে গেলে শুধু শুধু আবেগের বশে চোখ ভেজে যায় । সব বয়সের দোষ । আপনার ছোট গল্পগুলো আমার পছন্দের ।
@নয়নমুনি,
এই বাস্তবতাগুলোই মুক্তমনার মাধ্যমে আমরা তুলে ধরতে আগ্রহী। এতে করে অন্ততঃ মানুষ সচেতন হবে, অসাম্প্রদায়িক হবে, ভবিষ্যতে এই ধরনের বিষয়গুলো হয়তো কম ঘটবে।
ধন্যবাদ আপনাকে। আমি গল্পকার নই। কিন্তু, কীভাবে কীভাবে যেন কিছু গল্প লেখা হয়ে গেছে।
পাঞ্জাব-হরিয়ানায় (১৯৪৭ সালে হরিয়ানা বলে কিছু ছিল না, সবটাই পাঞ্জাব) বিভাজনের পরে (বর্তমানে নয়) পাঞ্জাবে মুসলমানের সংখ্যা কমে যাওয়ার কারন ‘লোকবিনিময়’। সরকারী উদ্যোগে পাঞ্জাবের মুসলমানরা পাকিস্তানে চলে যান এবং হিন্দুরা আসেন ভারতে। (এর ফলে ভারত বা পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে আর কোন হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা হয়নি) ভারত সরকার আগত হিন্দুদের ‘রিফিউজি’ স্বীকৃতি দেন ও তাদের ফেলে আসা জমি ও ধন-সম্পত্তির ক্ষতিপূরণ দেন। বাংলার ক্ষেত্রে, নেহেরু এবং গান্ধীর বিরোধিতায়, এমনটা হয় নি। পূর্বপাকিস্তান থেকে আগত হিন্দুরা কোন স্বীকৃতি বা ক্ষতিপূরণ পান নি, শুধু কিছু মানবিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল সেই ছিন্নমূল মানুষগুলির জন্য।
পশ্চিম বাংলা থেকে বাঙ্গালী মুসলমানরা খুব একটা পূর্বপাকিস্তানে যান নি। সেজন্য কলকাতা বা পশ্চিম বাংলার সব শহরেই ‘রিফিউজী কলোনি’ গড়ে উঠলেও ঢাকা, চট্টগ্রাম বা ময়মনসিংহে কোন বাঙ্গালী মুসলমানদের জন্য রিফিউজি কলোনি তৈরী হয়নি। বাঙ্গালী হিন্দু উদ্বাস্তু ভারত ও পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) দুই দেশেই ক্ষতিগ্রস্থ, ১৯৪৭ এ এবং এখনো সেই জের চলছে।
আমার কাছে অসংবেদনশীল লেগেছিল। কিন্তু কি বলব যুক্তি খুঁজে পাই নি। আপনি নিজেই পেলেন। 🙂
থ্যাঙ্কস। :yes:
@রূপম (ধ্রুব),
সবাই চুপ করে থাকলেতো চলবে না। কাউকে না কাউকে হুইসলব্লোয়ারের দায়িত্ব পালন করতে হবে। সেই দায়িত্বে ব্যর্থ আপনি। 🙂
খুরশীদ এ. চৌধুরী, ‘উপমহাদেশের মানুষ অতীতে মানসিকভাবে এক জাতিতে কখনোই পরিণত হয়নি’। আমি আপনার সাথে একমত যে তথাকথিত ‘সিউডোসেক্যুলারা’ যেভাবে বলে যে সোনালী অতীতে এইভূমি ছিল অসাম্প্রদায়িকতার লালনক্ষেত্র আর কেবল ইংরেজ-পান্জাবীদের মতো বাইরের উপনিবেশিকেরাই সাম্প্রদায়িকতার বিষাক্ত বীজ রোপন করে গেছে, এটি একটি হাস্যকর কল্পচিত্র।
ট্রাইবাল ইনসটিংক্ট মানুষের একদম মৌলিক একটি প্রবৃত্তি এবং শ্যামল বাংলার মানুষেরা পুরো মানবজাতির বিবর্তিত মানসিকতার বাইরে কিছু নয়। কিন্তু একটি সভ্যরাষ্ট্রের প্রধান শর্তই হলো যে এই ট্রাইবাল ইনসটিংক্ট থেকে সকল নাগরিকদের জানমালস্বার্থের নিরাপত্তা দেবে। এদিক দিয়ে, ভারতের চাইতে বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে।
‘৪৭ এর পরে তদানীন্তন পাঞ্জাব, হরিয়ানা, দিল্লী ও গুজারাত থেকে বিপুল মুসলিম পাকিস্থানে চলে গিয়েছিলো সেকারনে শতকরা কমাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ১৯৬০ থেকে এখন পর্যন্ত এইসব প্রদেশে মুসলিম কতটা কমেছে এটা একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হবে। আমি নীচে লিংক দেয়া সাইটটিতে ১৯৯১ এর সেনসাস সম্পর্কে কিছু পেলাম। এটার ভিত্তিতে এবং ২০০১ সেনসাস অনু্যায়ী পাঞ্জাব, হরিয়ানা, গুজারাত প্রতিটি প্রদেশেই মুসলিম শতকরা হার ১৯৯১ থেকে ২০০১ এ বৃদ্ধি পেয়েছে।
http://www.cs.colostate.edu/~malaiya/india.html#Religion:%20Minorities%20in%20South%20Asia
খুব অল্প পরিমান লেখক কেই চিনি যারা লিখেন না বাঁশি বাজান।
:guru:
@আসরাফ,
কারা তাঁরা? আমরাও চিনতে চাই।
@আসরাফ,
একমত। ফরিদদার উচিত বই লেখা শুরু করা,তার লেখার হাত অসাধারণ বললেও কম হবে :guru: ।
বাংলাদেশীরা হিন্দুরা উদ্বাস্তু হয়ে যে জায়গাটায় যাচ্ছেন সেটাও বঙ্গভূমি হওয়াটা তাঁদের উদ্বাস্তু জীবন কিছুটা হলেও কম বেদনাময় করেছে এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। বিহার বা উড়িষ্যায় উদ্বাস্তু হতে হলে ব্যাপারটা আরো কষ্টকর হত।
উদ্বাস্তু জীবনের ব্যাপারে ঋত্বিক কুমার ঘটকের কতকগুলি মর্মান্তিক চলচ্চিত্র আছে।
@রৌরব,
ওইটুকুই যা রক্ষা।
নিজে ভুক্তভোগী বলেই হয়তো এত মর্মান্তিকভাবে তুলে ধরতে পেরেছেন তিনি বিষয়টাকে। ‘তাঁর মেঘে ঢাকা তারা’, কোমলগান্ধার, ‘সুবর্ণরেখা’ সহ প্রায়ই সব ছবিতেই এই বিষয়টা উঠে এসেছে কোনো না কোনোভাবে।
বাংলাদেশে শত শত বছর ধরে হিন্দু-মুসলিম ঐক্য টিকে ছিলো এবং পাকিস্তান ভাগের সময়ে এই ঐক্য বিনষ্ট হয়েছে এ ধরণের তথ্য ইতিহাসের সরলীকরণ মাত্র । ১৮৫৮ সালে ব্রিটিশ রাজ শাসন কায়েমের পর (এবং কিছুটা পূর্ববর্তী কোম্পানী শাসনামলেও) গণশিক্ষা ও যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়নের কারণে বাঙ্গালী মুসলিম জনগোষ্ঠী ভারতীয় উপমহাদেশের বেশিরভাগ হিন্দু-মুসলিম জনগোষ্ঠীর মতো উন্নতি লাভ করতে শুরু করে । পূর্বযুগে কিছু মুসলিম সম্ভ্রান্ত পরিবার এবং তাদের দোসর উচ্চবর্ণের হিন্দু কিছু পরিবার ব্যতীত বেশিরভাগ মানুষ ছিলো শিক্ষা বঞ্চিত গ্রামাঞ্চলের দরিদ্র কৃষিজীবি । কোম্পানী ও ব্রিটিশ রাজ শাসনামলের প্রথম দিকে ইংরেজি শিক্ষা, নতুন বিচারব্যবস্থা প্রভৃতি হিন্দুরা খুব সহজেই গ্রহণ করার কারণে হিন্দুদের অবস্থান মুসলিমদের তুলনায় ভালো ছিলো । বাংলাদেশের বেশিরভাগ শহরাঞ্চলই হিন্দু মধ্যবিত্ত অধ্যুষিত ছিলো । ১৯ শতকের শেষদিকে এবং বিশেষ করে বিশ শতকের শুরু থেকে বাঙ্গালী মুসলমানরা শহরাঞ্চলে এবং সরকারি প্রশাসন ও বিচারবিভাগ এবং রাজনীতিতে উঠে আসতে শুরু করে (ব্রিটিশ ইণ্ডিয়া সরকারের সহযোগিতায়)। আগে থেকেই তুলনামূলক ভালো অবস্থানে থাকা হিন্দুরা বিষয়টিকে ভালোভাবে নেয়নি । উপমহাদেশে ১৯ শতকের শেষাদিক থেকে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ সৃষ্টির জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ী শিক্ষিত বর্ণহিন্দু জাতীয়তাবাদ যার জন্মদাতা বঙ্কিমচন্দ্র – বীর সাওয়ারকারেরা । ২০ শতকের ৪০-এর দশকেও হিন্দুরা মুসলিমদের সাথে কম মিশতো, আমার পিতা-পিতৃব্যদের শহরাঞ্চলের হিন্দুপ্রধান স্কুলে পড়ার অভিজ্ঞতা মোটেও সুখপ্রদ নয়। তাঁদের এখনও একটি কথা – ‘হিন্দুরা আমাদের সাথে মিশতো না।’
@খুরশীদ এ. চৌধুরী,
ইতিহাসের এই সরলীকরণটা কে করলো? আমার এই লেখায় হিন্দু-মুসলিমের শত শত বছর ধরে ঐক্য ছিল আর পাকিস্তান আসার পরেই সেই ঐক্য ভেঙে গেছে এমন কথা বলি নি। বলেছি দাঙ্গার কথা। বাংলা অঞ্চলে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা কবে শুরু হয়েছিল বলে আপনার জানা আছে?
কমই মিশতো শুধু। আপনাদের সম্পত্তি জোর করে দখল বা আপনার ফুফুদেরকে ধর্ষণ করতেও আসে নি তারা নিশ্চয়ই। কিংবা তাদের অত্যাচারে বঙ্গদেশ ছেড়ে আরব দেশেও যেতে হয় নি আপনাদের, তাই না?
@ফরিদ আহমেদ, (পরিচিতির দিক দিয়ে আমি একজন এথীস্ট এবং শখের ইতিহাসবিদ | সিউডোসেক্যুলারদের ভিড়ে রিয়্যাল সেক্যুলারদের খোঁজ করছি |)
পাঞ্জাব ও বাংলায় মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হলেও ভূমির অধিকার ছিলো প্রধানত যথাক্রমে সিখ (শিখ) ও উচ্চবর্ণ হিন্দুদের হাতে। মধ্যবর্তী ভূম্যাধিকারি ছিলো প্রধানত কিছু মুসলিম পরিবার (‘অভিজাত’ সম্বোধিত)। বেশিরভাগ মুসলিম, হিন্দু, সিখ দরিদ্র কৃষক ছিলো । ভূম্যাধিকারি-কৃষক পরিবার নির্বিশেষে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমরা যখন ক্ষমতায়নের পথে অগ্রসর হয় শহরাঞ্চলের মধ্যবিত্ত অমুসলিমরা মুসলিমদের সাথে এক জাতি গঠনের মানসিকতা দেখাতে পারেননি । ফিউডাল মানসিকতার সমাজে ‘ভূমি’ গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়/জাতিকে বিতাড়ন এর একটি কারণ। বাংলাদেশের পাহাড়ি এলাকাগুলো বর্তমানে এর উদাহরণ । সমস্যা হচ্ছে বর্তমানে ‘নব্য সেক্যুলার’রা যত চমত্কার কথাই বলুক, উপমহাদেশের মানুষ অতীতে মানসিকভাবে এক জাতিতে কখনোই পরিণত হয়নি। রবীন্দ্রনাথ মেজরিটি বাঙ্গালী কৃষকদের নিয়ে লেখেননি, দোষ তাঁর নয়, মুসলিম-অমুসলিম সমাজ পরষ্পরের অজানা ছিলো । ১৯২০-র দশকেও গ্রামের ‘অভিজাত’ ভূম্যাধিকারি মুসলিমদের ভেতর ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের প্রতি সমর্থন ছিলো, তত্পরবর্তী জেনারেশন শহরাঞ্চলে এসে হয়ে যায় ‘লড়কে লেঙ্গে পাকিস্তান’ সমর্থক (তথ্য: পারিবারিক অভিজ্ঞতা)। পাকিস্তানের সৃষ্টিই হয়েছে নাত্সীবাদী মুসলিম দৃষ্টিভঙ্গীতে, তার কাছে সেক্যুলার দৃষ্টিভঙ্গী আশা করা যায় না। কিন্তু মনে রাখতে হবে এই অঞ্চলের ইতিহাস সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশকে বাদ দিয়ে হবে না । সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের ভেতর সেসময়কার ‘আধুনিক’ শিক্ষিত মানুষ মুসলিমদের চেয়ে বেশি ছিলো, কিন্তু এক জাতি গঠনের মানসিকতার বদলে হিন্দু জাতীয়তাবাদ ও অস্পৃশ্যতা তাঁরা বেশি দেখিয়েছেন । অন্যদিকে প্রাদেশিক স্বায়ত্বশাসন অস্বীকার করে ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস মুসলিম জনগোষ্ঠীর বিশ্বস্ততা হারিয়েছিলো। মনে রাখতে হবে ‘৪৭ পরবর্তী ভারতীয় পাঞ্জাব, হরিয়ানা, দিল্লী ও গুজারাতে মুসলিম জনসংখ্যা শতকরা কমেছে বাংলাদেশের হিন্দু জনসংখ্যা হ্রাসের চেয়েও বেশি হারে । ইউপি, পশ্চিম বাংলায় বেড়েছে অমুসলিমদের মতো ‘পরিবার পরিকল্পনা’য় বিশ্বাসী না হওয়ায় (কর্মসন্ধানী বাংলাদেশী মুসলিম অনুপ্রবেশও রয়েছে)।
পুনশ্চ: ভারত-বাংলাদেশ ক্রিকেট ম্যাচে পরিচিত বাংলাদেশী হিন্দুদের বেশিরভাগের ভারতের প্রতি সমর্থন দৃষ্টিকটু লাগে ।
মূল বক্তব্য: ভারতীয় উপমহাদেশ অতীতে একজাতিতে পরিণত কখনো হয়নি, যা চীন কিংবা ইউরোপীয় ইউনিয়ন পারছে ।
@খুরশীদ এ. চৌধুরী,
আপনি বার বার ভুল জায়গাতে যুক্তি সাজাচ্ছেন। এই উপমহাদেশে একজাতি গঠনে হিন্দু না মুসলমান কার দায় বেশি সেটাতো এখানে বিবেচ্য বিষয় নয়। একটা রাষ্ট্র যখন গঠিত হয় তখন সেই রাষ্ট্রের সমস্ত নাগরিকদের ক্ষেত্রেই নিয়ম কানুন এক হওয়াটাই উচিত। রাষ্ট্রের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে তার সকল নাগরিককে সমান মর্যাদা দেওয়া, নিরপেক্ষভাবে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা প্রদান করা। এদের মধ্যে কারা এক জাতি হতে চায় নি সে কারণে তাদেরকে জোর করে দেশ ছাড়া করতে হবে এমন কোনো যুক্তির অবকাশ নেই।
ভূমি বিষয়ে আপনি যেটা বলেছেন, তার সাথে আমি মোটামুটি একমত।
এ ধরনের ঘটনা আমার চোখে পড়ে নি কখনো। অন্য দেশের সাথে খেলায় হিন্দুদের ভারতকে সমর্থন করতে দেখেছি একচেটিয়াভাবে, কিন্তু বাংলাদেশের সাথে খেলায় ভারতকে সমর্থন করতে কখনো দেখি নি। কাজেই, আপনার এই পর্যবেক্ষণের সাথে আমি একমত নই। এই প্রবন্ধেই উল্লেখ করেছি যে আমি ছাত্রজীবনে জগন্নাথ হলে প্রচুরসময় কাটিয়েছি। এরকম কিছু হলে আমার চোখে পড়তো অবশ্যই। তারপরেও কথা হচ্ছে যে, এমন যদি হয়ও, তাহলে কি তাদেরকে মেরে ধরে দেশ ছাড়া করা জায়েজ হয়। আমি বর্তমানে ক্যানাডায় থাকি। ক্যানাডার নাগরিক। বাংলাদেশের সাথে ক্যানাডার ক্রিকেট খেলায় আমি যদি প্রকাশ্যে বাংলাদেশের সমর্থনও করি, তাতে এরা আমার গায়ে বিন্দুমাত্র আঁচড়ও কাটবে না।
এক জাতি হবার কোনো প্রয়োজন নেইতো। এক রাষ্ট্রের অধিবাসীরা একই ধরনের অধিকার পাবেন, একই ধরনের নাগরিক সুযোগ সুবিধা পাবেন, একই ধরনের নিরাপত্তা পাবেন, এটাই সর্বজনস্বীকৃত রাষ্ট্রের ধারণা।
@খুরশীদ এ. চৌধুরী,
ভারতীয় পাঞ্জাবের সাথে বোধকরি পাকিস্তানী পাঞ্জাবের তুলনা করাটাই শ্রেয় হবে, বাংলাদেশের সাথে না করে। সে তুলনাটা কেমন?
@খুরশীদ এ. চৌধুরী,
আপনার কথা মানতে পারলাম না।
আমি জগন্নাথ হলের ছাত্র।বাংলাদেশ বনাম ভারত ম্যাচে জগন্নাথ হলে আসবেন।তাহলে সত্য যাচাই করতে পারবেন। অনুমান নির্ভর কিছু লিখবেন না।
@খুরশীদ এ. চৌধুরী, “হিন্দুরা আমাদের সাথে মিশতো না”। আপনি ঠিকই বলেছেন, কেনো আমাদের সাথে মিশবে না, খেলবে না এই অভিমান মুসলমানদের মধ্যে প্রবল ছিলো। এইজন্যে যখন সু্যোগ এলো, ক্ষমতা এলো তখন বাড়ি ছাড়া, পাড়া ছাড়া, প্রান ছাড়া করে ছাড়লো।
কথা আছে demography is destiny, demography এর উপড়ে বড় সত্য আর কিছু নেই। গত ষাট বছড়ে ভারত, পাকিস্থান, বাংলাদেশের সংখ্যালঘু জনসংখ্যার পরিবর্তন দেখলেই বোঝা যায় এসব দেশে কি হয়েছে। ভারতে এতো বাবরী-মুম্বাই-গোধরা হওয়ার পরও মুসলমান জনগোষ্ঠী অন্য সবার চেয়ে বাড়ন্ত। বাংলাদেশে হিন্দু সংখ্যা কমছেই, পাকিস্থানে নিশ্চিন্হপ্রায়।
@খুরশীদ এ. চৌধুরী,
আপনি ঠিকই বলেছেন। উচ্চবর্নের হিন্দুরা নমশুদ্রদের উঠোনে বসতে দিত। তাহলে মুসলিমদের প্রতি তার কি মনোভাব ছিল, তার কিছু বর্ননা আমি মুসলিম ঐতিহাসিকদের বই এ দেখেছি। হিন্দু সম্প্রদায় কি জিনিস, সেটা জানি বলে, সেই বর্ননা অতিরঞ্জিত মনে হয় নি।
হিন্দু-মুসলিম সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি কেমন ছিল বাংলায়? রবীন্দ্রনাথ শরৎচন্দ্র বা বঙ্কিম চন্দ্র পড়লেই বোঝা যায়। তীতুমীরের উত্থান সম্পূর্ন ভাবেই সাম্প্রদায়িক ছিল। কৃষক প্রজা পার্টি কেন মুসলিম লীগে মিশে গেল, তার কারন ও সাম্প্রদায়িক। শরৎ চন্দ্রের বাঙালী বনাম মুসলমান কথাটার মধ্যে অনেক কিছু লুকিয়ে আছে।
তবে ‘৪৭ এর দেশ ভাগের পরে বাংলাদেশে হিন্দুদের অবস্থা খুব খারাপ হয়েছে এবং তারা সাংঘাতিক বৈষম্যের শিকার সেই ব্যাপারটা নানান আত্মীয়র মুখে শুনেছি। কানাডায় থাকেন এক বৃদ্ধ ডাক্তার বলেছিলেন, শুধু হিন্দু অপরাধে তার চাকরি নট হয়েছিল পাকিস্তানের আমলে জুট মিলে।
হঠাৎ একদিন আমাদের বাড়িতে বাবার এক ছোটোবেলার বন্ধু এসে উপস্থিত। কথায় কথায় উঠে এল সেসব দিনের কথা। আমি জানতাম, আমার বাবার জন্ম ওপারবাংলায়। কিন্তু বিস্তারিত বলেনি বাবা আগে কখনো।
তখন পাকিস্থান শাসন। শিক্ষা-দীক্ষা থেকে চাকরির ক্ষেত্র, সর্বত্র বৈষম্য। বাবারা পাঁচ ভাই। বড়দাদার (যিনি ডাক্তার) তখন কুচবিহারে পোষ্টিং। বাবাদের গ্রামে তখন সাম্প্রদায়িক সমস্যা লেগেই আছে। এমতাবস্থায় আমার ঠাকুরদা ভেবে দেখলেন, ছেলেগুলিকে লিখিয়ে পড়িয়ে মানুষ করতে গেলে, তাদের বড়দার কাছে পাঠানোটাই একমাত্র সমাধান। কিন্তু ভারত বর্ডার তো পার হওয়া তো প্রায় আসম্ভব।
তখন তার সাথে পরিচয় হল এক পুরোন বন্ধুর। তিনি ৫০ টাকার বিনিময় বল্লেন বর্ডার পার করিয়ে দেবেন। বাবা রওয়না হল তারসাথে। মাথায় সুধু একটা কাপড়ের পুঁটুলি। প্রথমে ট্রেন, তারপর গরুর গাড়ি করে সারাদিন চলার পর তারা এসে পৌছালেন এক গ্রামে রাত কাটাবার জন্য। সেখানে, বাবার মনে আছে, এক মুসলিম পরিবারের গৃহবধূ বাবাকে মায়ের মত জত্ন করে খাইয়েছিলো, আর বলেছিল, ‘মনে রাখিস’।
পরদিন খুব ভোরে, আলো ফোটার আগে, তারা আবার রওয়ানা দিলেন বর্ডার এর উদ্দেশ্যে। বাবার মাথায় একটা মস্ত খেঁজুরের ঝুরি, তাতে লুকানো তাঁর পুঁটুলি। একটা পুকুরের এপারে বাঙলাদেশ, ওপারে ভারাতবর্ষ, সেটা পেরোলেই সমস্যা শেষ। সেখান থেকে বাস করে বড়দার বাড়ি, ব্যাস। কিন্তু সেই সঙ্গের লোকটি এবার রাস্তা ফেল্লো গুলিয়ে। বাবারা ক্ষেতের মধ্যে দিয়ে হাঁটছে তো হাঁটছেই। অথচ, বর্ডার পেরোতে হবে আলো ফোটার আগে। নাহলে পুলিশ এর চোখে পড়লে গুলি খেতে হবে। শেষ পর্যন্ত অবশ্য সে খুঁজে পেল রাস্তা। পুকুর পেরিয়ে এপারে এসে বাবা একছুটে বড়রাস্তায়।
১৯৬৮ সালে পাকিস্থানি সৈন্য ভেঙ্গেদেয় বাবাদের পাবনার বাড়ি। বলতে বলতে বাবার চোখ ভিজে ওঠে ছোটবেলার গ্রামের মাঠের কথা, বাড়ির উঠোনের কথা মনে করে, বাবা ভুলতে পারেননা তার ছোটবেলা দেখা বাংলাদেশকে।
@অরিজিত,
এই অনুভূতি শুধু আপনার বাবার একারই নয়। আরো অসংখ্য দেশত্যাগী মানুষেরই এরকম অনুভূতি হয়ে থাকে।
চমৎকার একটি মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
@অরিজিত,
:brokenheart:
ফরিদ,
তোমার পক্ষেই সম্ভব এমন আবেগ জাগানিয়া লেখা প্রকাশ। আমার সংখ্যালঘুর মানচিত্র(১২) তে তোমার প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আমি ইতোমধ্যে কয়েকজনের সাথে কথা বলেছি। যাদের পরিবারের অর্ধেক ভারতে। তাদের পরিবারের ভারতবাসী সদস্যরা কেঊ বৈধভাবে ভিসা নিয়ে কেউ চোরাই পথে প্রায়শই আসে। তাদের অনুভূতি জানার জন্য উদ্যোগ নিচ্ছি। তবে তোমার লেখার শিরোনাম আর অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্তের —-
প্রশ্নের উত্তরে আমার অভিজ্ঞতা আমি আমার তখন ও এখন এর ৯নং পর্ব থেকে উদ্ধৃত করছি —-
@গীতা দাস,
গীতাদি, আমার ব্যক্তিগত উপলব্ধি একটু অন্যরকম |দেশপ্রেমের এই আবেগগুলো শিক্ষিত একটা শ্রেনীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ| স্বাধীন বাংলাদেশ থেকে যারা গেছেন ( অধিকাংশই ৯০-এর দশক থেকে আজ অবধি ) তাদের অধিকাংশই বেশ পরিকল্পনা করেই দেশ ছেড়েছেন | তাই ৭১-এর উদ্দ্বাস্তুদের সাথে এদের এক করে দেখলে চলবে না| আর এদের সামাজিক আর অথনৈতিক অবস্থাও অতটা তথৈবচ বা খারাপ নয়| সারা ঊত্তরবংগের চালচিত্রটাই তো বাংলাদেশ থেকে আসা মানুষেরা বদলে দিয়েছে| এমনকি কোলকাতার আশপাশের অনেক এলাকা্রও যেমন কল্যানী,রানাঘাট,দমদম ইত্যাদি | উত্তরবংগের অনেক এলাকায় আমি দেখেছি বিশেষত অনেক মফস্বল শহরগুলোতে যেখানে বাংলাদেশ থেকে আসা ব্যবসায়ীরাই সবচেয়ে প্রভাবশালী| দীঘশ্বাসের লেশমাত্রটুকুও না দেখে আমি নিজেই বিস্মিত হয়েছি|
এরকম কিছু কাহিনী আমি নিজেও নোট করে এনেছি, সময় সুযোগ পেলে বলা যাবে |কিছু ঘটনা আমার “বিভক্তির সাতকাহন” বইয়ে বলেছি|এদের নিয়ে লিখতে গেলে কাহনে শেষ করা যাবে না| তবে আমার কেন জানি মনে হয়েছে, অভিবাসনের এই ঘটনাগুলো চলে আসছে যুগযুগ ধরেই|সাম্প্রদায়িকতার মত জঘন্য বৈষম্যগুলো অনুঘটকের কাজ করে কখনো কখনো|অনেকে মনোহরদি থেকে নরসিংদী আসে,অনেকে নরসিংদী থেকে ঢাকা আসে,অনেকে ঢাকা থেকে টরন্টো আসে|কেউ যদি মনোহরদি থেকে শিলিগুড়ি যায় জীবন জীবিকার সহজতম প্রবাহমানতার জন্যে,তাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেন কোন যুক্তিতে? এ লজ্জা আমাদের ! বাংলাদেশের স্বাধীনতার এতগুলো বছর পরেও বাংলাদেশ কী করতে পেরেছে এদের নিজ দেশে রাখতে|যে ভোটের লোভে সংখ্যালঘু মানুষের অধিকারগুলো প্রাধান্যের শেষে, ঠিক সেই ভোটের লাভেই বাংলাদেশ থেকে চলে যাওয়া মানুষগুলো ওখানেও স্রোতের অভিযাত্রি| এর পরেও কিছু হয়তো থাকে ? সেটা, শেকড় ছেঁড়ার যন্ত্রনা| এরকম মানুষগুলোর জন্যেই আমাদের যত কথোকতা|
ভাল থাকবেন | Happy new year,2011 |
@ভজন সরকার,
আপনার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার
আমিও। তবে ঐ যে শেষে বলেছেন —
একমত।
@ভজন সরকার,
অভিবাসন দুই ধরনের হয়। একটা স্বেচ্ছায় আরেকটা বাধ্য হয়ে। স্বেচ্ছা অভিবাসনে যে যেখানেই যাক না, কেন কারো তাতে আপত্তি থাকার কথা নয়। এটা মানুষের অধিকারের মধ্যেই পড়ে। তাকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে অন্যটাকে নিয়ে। কাউকে যদি ভয়-ভীতি দেখিয়ে তার জন্মস্থানের শিকড়কে উপড়ে ফেলতে বাধ্য করা হয়, তবে সেটাকে মেনে নেওয়া যায় না। বাংলাদেশের হিন্দুরা যদি স্বেচ্ছায় ভারতে গিয়ে ভাল থাকেন, তবে কোনো কথা নেই। আর যদি স্বেচ্ছায় না গিয়ে থাকেন, তবে ভাল-মন্দ যেটাই থাকুক না কেন, বাংলাদেশের উচিত এ বিষয়টির সুরাহা করা।
এ বিষয়ে আপনার কাছ থেকে একটা লেখা আশা করছি।
@গীতা দাস,
অপেক্ষায় রইলাম জানার জন্য।
এই লাইনগুলো পড়ে সত্যি আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লাম। এরা কতটা হতভাগ্য, নিজের দেশেও থাকার উপায় নেই কারণ এখানে তারা দ্বিতীয় শ্রেনীর নাগরিক, আবার শিকড় ছিড়ে অন্য মাটিতে বসাও সইবে কেন?খুব খারাপ লাগল। মানুষ মানুষকে মানুষ বলে ভাবেনা কেন? কেন জানতে হবে কে হিন্দু কে মুসলিম কে বৌদ্ধ কে খ্রিস্টান?চ
কাজী নজরুল ইসলামের একটা লাইন মনে পড়ল “কান্ডারি হুশিয়ার” কবিতা থেকে-
“হিন্দু না ওরা মুসলিম ওই জিজ্ঞাসে কোন জন
কান্ডারি বলে ডুবিছে মানুষ সন্তান কোন মার”
অথচ দেশ চালানোর কান্ডারিরাই তো আজ “হিন্দু না ওরা মুসলিম”এই প্রশ্ন করছে :-X
কবিতাটাও অসাধারণ।
@লীনা রহমান,
মানুষ মানুষকে মানুষ বলে ভাবতে পারলে আসলেই আর কোনো সমস্যা থাকতো না। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে আমরা আগে ওই রূপগুলোই দেখি।
ধন্যবাদ। আমার খুব পছন্দের কবিতা এটি।