লিখেছেনঃ মিলন আহমেদ
পৃথিবীর সব মানুষ যদি কানাডায় গিয়ে বাস করে তবে কানাডায় প্রতি বর্গমাইলে বসতি হবে ১৪৭২ জন। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে বাস করছে প্রতি বর্গমাইলে ২৯৫৭ জন। ক্ষুধা, দারিদ্র, পুষ্টিহীনতা, রোগ-শোক, আবাসনের অভাব ইত্যাদির মূলে জনসংখ্যা সমস্যার প্রখরতা সেকথা আমরা সবাই জানি। দ্রুত জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রন করতে না পারলে বাংলাদেশের ভবিষ্যত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তাও আমরা অনুমান করতে পারি। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলেও সত্য যে সম্প্রতি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রন কার্যক্রমে গতিহীনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিভিন্ন কারণে এই স্থবিরতা দেখা দিচ্ছে, তবে নারীর অধিকারহীনতা অন্যতম প্রধান কারণ। কাজেই একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তে, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার আশাব্যঞ্জক পর্যায়ে আনতে পুরুষের সাথে সমহারে নারীর ক্ষমতায়ন জরুরী হয়ে দেখা দিয়েছে।
গাণিতিক হিসাব অনুযায়ী জনসংখ্যা সমস্যা কতটুকু তীব্র এবং পৃথিবীর অন্যান্য দেশের সাথে তুলনামূলক অবস্থা কেমন সে সম্পর্কে আমরা অনেকেই গভীরভাবে হয়তো ভাবি না। বাংলাদেশে প্রতিদিন ৯৬৮৭ জন শিশু জন্মগ্রহন করছে এবং প্রতিদিন ৬০২৭ জন মানুষ বৃদ্ধি পাচ্ছে । বাংলাদেশের তুলনায় আয়তনে ভারত বাইশগুন বড়, লোকসংখ্যা একশ একুশ কোটি, প্রতি বর্গমাইলে বাস করে নয়শত বাইশ জন; চীন সাতষট্টি গুণ বড়, লোকসংখ্যা একশ পঁয়ত্রিশ কোটি, প্রতি বর্গমাইলে বাস করে তিনশ চৌষট্টি জন; ফ্রান্স চার গুণ বড়, লোকসংখ্যা ছয় কোটি, প্রতি বর্গমাইলে বাস করে দুইশ সত্তর জন; স্পেন সাড়ে তিন গুণ বড়, লোকসংখ্যা চার কোটি, প্রতি বর্গমাইলে বাস করে দুইশ পাঁচ জন; যুক্তরাষ্ট্র পয়ঁষট্টি গুণ বড়, লোকসংখ্যা বত্রিশ কোটি, প্রতি বর্গমাইলে বাস করে আটাশি জন; ব্রাজিল ষাট গুণ বড় লোকসংখ্যা ঊনিশ কোটি, প্রতি বর্গমাইলে বাস করে সাতান্ন জন; রাশিয়া একশ আঠার গুণ বড়, লোকসংখ্যা আঠারো কোটি, প্রতি বর্গমাইলে বাস করে আটাশ জন; সৌদি আরব পনের গুণ বড়, লোকসংখ্যা দুই কোটি, প্রতি বর্গমাইলে বাস করে পঁচিশ জন: সুদান সাড়ে সতের গুণ বড়, লোকসংখ্যা তিন কোটি, প্রতি বর্গমাইলে বাস করে ছাব্বিশ জন; কানাডা সত্তর গুণ বড়, লোকসংখ্যা তিন কোটি, প্রতি বর্গমাইলে বাস করে আট জন, অস্ট্রেলিয়া চুয়ান্ন গুণ বড়, লোকসংখ্যা দুই কোটি, প্রতি বর্গমাইলে বাস করে সাত জন। ঘনত্ব বিবেচনায় বাংলাদেশে প্রতি বর্গমাইলে অস্ট্রেলিয়ার তুলনায় প্রায় চার’শ গুণ এবং কানাডার তুলনায় প্রায় সাড়ে তিন’শ গুণ বেশি মানুষ বাস করে। পৃথিবীর সব মানুষ যদি যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে বাস করে তবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি বর্গমাইলে বসতি হবে ১৫৮২ জন। পৃথিবীর সব মানুষ যদি অস্ট্রেলিয়ায় গিয়ে বাস করে তবে অস্ট্রেলিয়ার প্রতি বর্গমাইলে বসতি হবে ১৮৫৩ জন। পৃথিবীর সব মানুষ যদি বাংলাদেশে এসে বাস করে তবে বাংলাদেশে প্রতি বর্গমাইলে বসতি হবে ১ লক্ষ ২২ হাজার ৩১২ জন।
কৃষি নির্ভর বাংলাদেশের মানুষের মাথাপিছু জমির পরিমাণ আধা বিঘারও কম। প্রতিবছর ২% করে কৃষি জমি নষ্ট করে বাড়ি-ঘর, দোকান-পাট, রাস্তা-ঘাট তৈরী হচ্ছে। এভাবে এক অনিশ্চিত গন্তব্যের দিকে অগ্রসর হচ্ছে বাংলাদেশ। প্রতি বিঘা জমিতে এখন যে ধান হয় তার চাইতে বেশি ধান ফলালেও কিছুদিন পর বাংলাদেশের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা রূপকথার গল্পের মত মনে হবে। ১ কোটি ৩০ লক্ষ লোক ঢাকায় বাস করে তার মধ্যে সত্তর-আশি লক্ষ মানুষ বস্তিতে অথবা সেমি-বস্তিতে বাস করে। দুঃখ-দুর্দশা, ক্ষুধা-দারিদ্র, শোষণ-বঞ্চনা আমাদের পূর্ব পুরুষেরা অকাতরে সহ্য করেছেন এবং আমরাও করছি। আরও কিছুদিন সহ্য করা লাগলেও হয়তো করবো, কিন্তু আমরা আশার আলো দেখতে চাই। সত্যি সত্যি আশার আলো দেখতে চাই, মিথ্যে আশ্বাস শুনতে চাই না। এখন থেকে, এই মুুহুর্তে থেকে প্রকৃত সমাধানের পথ দেখতে চাই। যে যেভাবেই সমাধানের কথা বলুক জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রনের কথা সবাই এক বাক্যে বলবেন নিশ্চয়ই। কিন্তু এখনও জনসংখ্যা প্রতিবছর বাড়ছে ১ দশমিক ৪ শতাংশ হারে। এভাবে বাড়তে থাকলে আগামী পঞ্চাশ বছর পর জনসংখ্যা হবে ৩৩ কোটি। জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিলের তথ্য মতে বর্তমানে দেশে মোট প্রজননের হার ২ দশমিক ২৫ শতাংশ। এই প্রজনন হার মিয়ানমারে ০দশমিক৯ থাইল্যান্ডে ০ দশমিক ৭, চীনে ০ দশমিক ৬, শ্রীলংকায় ০ দশমিক ৫, জাপানে ০। বিদেশী অর্থায়নেই মূলতঃ আমাদের পরিবার-পরিকল্পনা কার্যক্রম পরিচালিত হয়, কিছুদিন আগে এক অনুষ্ঠানে জাতিসংঘের মহাসচিবের বিশেষ দূত নাসিফ সাদিক নিজস্ব অর্থায়নে বাংলাদেশে পরিবার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের তাগিদ দিয়েছিলেন। এমনিতেই পরিবার-পরিকল্পনা কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে তারপর বিদেশি সাহায্য যদি কমে যায় বা বন্ধ হয়ে যায় তবে অবস্থা কি দাঁড়াবে তা হয়তো অনুমান করে আমাদের আরও আগেই সতর্ক হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু আমরা এখনো সতর্ক হইনি। ফলে যা হওয়ার তাই হতে যাচ্ছে। ভয়ঙ্করভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে জনসংখ্যা।
বাংলাদেশে প্রতিবছর যে পরিমাণ শিশু জন্মগ্রহণ করে তা কুয়েত, কাতার, আবুধাবী, দুবাই ইত্যাদি দেশের প্রকৃত জনসংখ্যার সমান। এখানে প্রতি মিনিটে ৭ জন, প্রতি ঘন্টায় ৪২০ জন, প্রতিদিনে ১০০৮০ জন, প্রতি মাসে ৩০২৪০০জন, প্রতি বছর ৩৬২৮০০জন শিশু ভুমিষ্ট হচ্ছে। জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) দেওয়া তথ্যমতে ২০০১ সালে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ছিল ১২কোটি ৯০ লক্ষ। বর্তমানে তা দাঁড়িয়েছে ১৬ কোটি ৪৪ লক্ষে। অর্থাৎ গত ৯ বছরে জনসংখ্যা বেড়েছে ৩ কোটি ৫৪ লক্ষ। জননিয়ন্ত্রয়নের বর্তমানে যে হালহকিত তাতে আগামী ৯ বছরে বৃদ্ধি পাবে সাড়ে চার কোটির মত। এভাবে বাংলাদেশ এক গভীর অন্ধকারে তলীয়ে যাবে। অনেকেই জনসংখ্যা বৃদ্ধির জন্য অনেকগুলো কারণকে দায়ী করেছেন তবে মুল কারণের কাছে কেহ যেতে চাচ্ছেন না। মানুষ হিসাবে নারীর কোন অধিকার না থাকায় বিবাহে কন্যার মতামতের কোনো গুরুত্ব দেওয়া হয় না। সে কারণে বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটছে ব্যাপকভাবে। এদেশে কিশোরী মাতৃত্বের হার ৩৩ শতাংশ।
সম্প্রতি খাদ্যমন্ত্রী ডঃ আব্দুর রাজ্জাক জনসংখ্যা বৃদ্ধির এই হারকে আশংকাজনক বলে উল্লেখ করেছেন। এখনই ব্যবস্থা নেয়া জরুরী সেকথাও তিনি বলেছেন। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রন কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সহায়তা কমে যাওয়াকেই তিনি দায়ী করেছেন। আমার কথা দেশটাতো আর দাতাদের নয়। নিশ্চিত বিপদ থেকে দেশকে বাঁচানোর এবং জাতিকে রক্ষা করার দ্বায়িত্ব মন্ত্রীর, আমার, সকলের। বিশিষ্ট গবেষক স্মৃতি চক্রবর্তী তাঁর গবেষণায় পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমের ধীরগতির জন্য পুরুষদের (বিভিন্ন পদ্ধতি গ্রহণে) অনীহাকে অন্যতম প্রধান কারণ হিসাবে উল্লেখ করেছেন। গত ৮ই মার্চে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন আট-নয়টি কন্যা সন্তান জন্ম দেওয়ার পরও একটি পুত্রের আশায় মানুষ সন্তান নিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী যথার্থ কথাটিই ঐ দিন বলেছেন। কাজেই নারীর অধিকারহীনতা জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রনে অন্যতম একটি অন্তরায় সেকথা স্পষ্ট। সুতরাং আমাদের এখনই সিদ্ধান্ত নিতে হবে পুরুষতন্ত্রকে সার-পানি দিয়ে মোটা-তাজা করব না-কি নারীদের সম অধিকার প্রতিষ্ঠা করব। অনেকেই অবশ্য নারীদের অধিকারহীনতা দেখতে পান না। তাদেরকে বলব কোন হাসপাতাল বা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান। গিয়ে খোঁজ নিন গত একমাসে কতজন মহিলা ‘লাইগেশন’ করেছেন আর কতজন পুরুষ ‘ভ্যাকেসটমি’ করেছেন। দেখবেন লাইগেশন ২০০ জন মহিলা করলেও ‘ভ্যাকেসটমি’ করা ২ জন পুরুষ খুঁজে পাবেন কিনা সন্দেহ। অথচ লাইগেশন করানোই ভ্যাকেসটমির চাইতে ঝুঁকিপূর্ন। অবশ্য দেশপ্রেমহীন কিছু মানুষ কোনদিনই নারীদের অধিকারহীনতা দেখতে পায়না, সতীদাহ প্রথা যখন চালু ছিল তখনও তাদের পূর্বসুরিরা নারীর অধিকারহীনতা দেখতে পেত না। তারা সর্বশক্তি দিয়ে পুরুষতন্ত্রকে আঁকড়ে ধরে রাখতে চাইবে এবং গোটা জাতিকে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিবে। পরিবার-পরিকল্পনা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার জন্য বিচ্ছিন্নভাবে পুরুষদের দোষ দিয়ে লাভ নেই, দায়ী পুরুষতন্ত্র । পুরুষতন্ত্র চলে আসছে হাজার হাজার বছর ধরে যা পুরুষেরই সৃষ্টি। পুরুষতান্ত্রিক সমস্ত আইন নারীকে পীড়নের জন্যই তৈরী করা হয়েছিল। ওগুলোর লক্ষ্য ছিল নারীকে মানুষের স্তরে উঠতে না দেয়া। ওই আইনের শিকলে নারীর প্রতিদিনের জীবন এখনও শৃংখলিত। কিছু প্রথা হিসাবে চালু করেছে, কিছূ আইন হিসাবে বিধিবদ্ধ করেছে। এগুলো সবই নারীর জীবনকে পরিণত করেছে নরকে। অতি সম্প্রতি ব্যাপকভাবে যৌন হয়রানি বৃদ্ধিও একই কারণে ঘটছে। নাটোরের কলেজ শিক্ষক মিজানুর রহমান এবং ফরিদপুরের চাঁপা রানীকে জীবন দিতে হলো। পুুরুষতন্ত্র যতদিন অসূরের মত টিকে থেকে পিতার সম্পত্তিতে পুত্র-কন্যার অধিকারে বৈষম্য জিঁইয়ে রাখবে ততদিন জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কাংখিত লক্ষ্যে পৌঁছাবে না একথা দিবালোকের মত স্পষ্ট। পুত্র সন্তান না থাকায় কোন ব্যক্তির সম্পদ নিজের ঔরসজাত সন্তানেরা পাবেনা একথা কেউ মানবে? মানবে না বিধায় ডজন খানেক কন্যা সন্তানের পরও একটি পূত্রের আশায় সন্তান নিতেই থাকবে। জনসংখ্যা বাড়তেই থাকবে। এভাবেই পুরুষতন্ত্রের জালে আটকে যাচ্ছে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রন।
ত্রিশ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে এবং দুই লক্ষ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত এই দেশটাকে একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্রে পরিণত করার কাজে আর একটুও দেরি করা ঠিক হবে না। আমরা যদি একটি সুখি, সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গঠন করতে চাই এবং একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে চাই তবে এখনই পুরুষতন্ত্রের কবর রচনা করতে হবে এবং নারীকে দিতে হবে পূর্ণ অধিকার। কারণ পুরুষতান্ত্রিক ওই কূৎসিত আইনগুলো অধিষ্ঠিত থাকায় আজকে শুধু নারীরাই আক্রান্ত হচ্ছে তা কিন্তু নয়, গোটা জাতি অন্ধকারের দিকে ধাবিত হচ্ছে। সুতরাং দেশ বাঁচাতে, জাতিকে পথ দেখাতে নারীর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের কোন বিকল্প নাই।
___________________________
লেখকঃ নারীবাদী কলামিস্ট, ঈশ্বরদী, পাবনা, বাংলাদেশ।
অশিক্ষা জনসংখ্যা রোধে একটা বড় সমস্যা। তাছাড়াও কুসংস্কার ও একটা বড় কারণ। আবার ধর্মীয় ও সামাজিক একটা ব্যাপারও থেকে যায়। যেমন আমি ব্যাক্তিগত ভাবে দেখেছি ভারতে হিন্দু ছেলেদের তুলনায় মুসলিম ছেলেরা পরিবার পরিকল্পনার ব্যাপারে অনেক উদাসীন। পাকিস্থান সরকারের প্রতিবছর কোটী কোটী টাকা মাঠে মারা যায় পরিবার পরিকল্পনার পেছনে, কিন্তু নিট ফল জিরো। কারণ কি? কারণ মানুষ যত বিজ্ঞান মনস্কো তার চেয়ে ধর্ম মনস্কো বেশী। মোল্লারা যা বলে তাই বিশ্বাস করে বেশী। কিছুদিন আগে কোন একটা সাইটে দেখলাম কয়েকজন ইসলামিষ্ট গবেষক কোরান ঘাঁটিয়ে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন জন্মনিয়ন্ত্রন মুসলিমদের জন্য গোনা এবং মুসলিমদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন জন্ম নিয়ন্ত্রন না করার জন্য। আসলে অনেক উচ্চ শিক্ষিত মানুষও অনেক সময় এদের দিকে ঝোকে যায়। আজ মুসলিমদের সবচেয়ে বড় কুসংস্কার বোধ হয় জনসংখ্যা বাড়িয়ে পৃথিবী দখল।এই মানসিকতার উপর প্রথম আঘাত আনতে হবে। না হলে মানসিক ভাইরাসের আকারে এই ধারা ছড়াতেই থাকবে। তাছাড়া আছে গর্ভ সঞ্চার নিয়ে নারী-পুরুষ সকলের মধ্যেই একটা অস্পষ্ট ধোঁয়াশা ভাব। অনেক শিক্ষিত মানুষও মনে করে। জন্ম পুরাপুরি ভগবান বা আল্লার উপর নির্ভরশীল। তাতে বাঁধা দেওয়া মানে মহা পাপ বা গোনা। মানুষকে কিভাবে সচেতন করা যায় তার উপরই নির্ভর করবে ভবিষ্যত প্রজন্মের কাছে আমরা কি চিন্তাধারা রেখে যেতে পারছি। আর যদি ভিতরে ক্ষত রেখে বাইরে প্রলেপ দেই তা হলে ক্ষত আবার বেরিয়ে আসবে। ধন্যবাদ
@সুমিত দেবনাথ,
যে যাই বলুক এটাই আমার কাছে যুক্তি যু্ক্ত মনে হয় বেশী। সে কারনেই ইসলামিস্টদের মুখে সব সময় খৈ ফোটে – islam is the fastest growing relegion. কিভাবে সেটা fastest সবাই তা এখন জানে। এরা পণ করেছে মানব সভ্যতাটাকে ছার খার করে দেবেই।
নারী অধিকার, এইসব প্যচাল মনে হয়, দরকার সবার জন্য সুশিক্ষা, যেমন পুরুষকেও ঠিক করা চাই, তেমন নারীদেরও ঠিক হওয়া চাই। এই অধিকারের ভাঙ্গা বাদ্য আর ভাল লাগেনা। কিছু হইলেই নারী অধিকার একটা বীন বাজানো শুরু হয়। বারবার কত জন আছে “নারী অধিকার;নারী অধিকার” চিৎকার করে, মনে হয় যেন ফুটপাতে বসে ভিক্ষা চাইছে থালা পাইতে। কিন্তু নিজেরা কোনদিন মনে হয় ঠিক হবেনা। এরা ঘরে বসে থাকবে আর এদের জন্য সকাল বিকাল নারী অধিকার নারী অধিকার প্লেটে সাজায় আইনে দিবে।এক আজব শ্লোগান। কিছু হইলেই মিছিল। অধিকার ক্ষুন্ন হচ্ছে। মিছিলে নামল, সেই মিছিলে চারপাশে গার্ড পুরুষ। নারীরা মিছিল করবে তাদের সিকিউরিটি হল পুরুষ। মাঝে তারা ফকিরের মত ভ্যা ভ্যা করছে। ঢাকার গুলিস্তানে দেখা যায়-“আমার আল্লা রসুলের নাম, দিয়া যান ভাইজান—” উচ্চসরে ফকিররা যেইভাবে ভিক্ষা চায় সেইরকম। অথচ এক নারী আর এক নারীকে উঠতে দেয়না। সুশিক্ষা, সু ধর্ম চাই। কাউরে খুজে পাওয়া যাবেনা এই ব্যপারে। কিছু কইলেই কইব এইডাও ঐ পুরুষরা আটকায় রাখছে, করতে দেয়না। তাইলে তোরা ঐ লিপিস্টিক, আর পাওডার লাগায় বইসেই থাক।
আমাদের দেশের মানুষেরই সমস্যা। এইসব কইরে দিন রাত কাটায়। স্বাধীনতা, ফটকা বাজি, রাজাকার এইসব কথা শুনলেও গা গিজগিজ করে। দেশের প্রধান্মন্ত্রী নারী, সে কিছু করেনা কেন? এই দেশের মানুষ অধিকাংশ হল লোভি, কামুক-কারন এরা ধর্ম ভিরু। আবার সাথে অশিক্ষিত। কিসের ভিতর কি বলছি। যাইহোক এইসব শ্লোগানী কথা বাদ দিয়ে বলেন আপনে কি করেন, আপনে কি ভাবেন নারীদের বিষয়, তাই বলেন। আপনার কোন প্লান আছে কিনা, যা আপনে করতে চান, বা করেন। সেইডা লেখেন। নয়ত সবই মনে হয় ধাপ্পাবাজি।
প্রতিটা চ্যনেলের একটা অনুষ্ঠান হয়, কোন না কোন এক বিষয় নিয়ে একটা গোল ট্যাবিল কই থেকে না কই থেকে জোগাড় কইরে আইনেই শুরু হয়ে যায় লেকচার। কত কিছু ভাল কথা শুনা যায়…যাইহোক নারীদের অধিকার না বলে বলুন মানুষের অধিকার চাই। পুরুষ নারী নির্বিশেষে সকল সাধারন জনগনের অধিকার চাই। আমরা সাধারন জনগন-না খেয়ে বেচে থাকা মানুষ অন্ন চাই, বস্ত্র চাই, একটু চিকিৎসা চাই, বাসস্থান চাই।
সবকিছুতে পুরুষ টাইনে আনাটা আমার কাছে মনে হয় সে মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ।
ধন্যবাদ। ভাল থাকবেন
খুবই সত্যি কথা। সমাজে পুরুষতন্ত্রকে জিইয়ে রেখে আপাতদৃষ্টিতে পুরুষমানুষ এটাকে লাভজনক মনে করছে। কিন্তু তার পরিবারের অর্ধেকেরও বেশী অংশ মানে তার স্ত্রী ও কন্যারা তার লাভের অংশ থেকে যে বঞ্চিত হচ্ছে সে সম্পর্কে কোন হুশ নেই। গোটা জাতির ৫০% নারী, সেই নারীজাতিকে তার প্রাপ্য অধীকার থেকে বঞ্চিত করার মানসিকতা থাকা মানে নিজের পায়ে নিজের কুড়াল মারার সমান এটা সমাজের নারী-পুরুষ প্রতিটা লোকের বোধগম্য হওয়া দরকার।
জনসংখ্যা সমস্যা বর্তমানে বাংলাদেশের প্রথম এবং প্রধান সমস্যা হিসেবে বিবেচিত হওয়া উচিৎ। বাংলাদেশের যে কোন ধরনের উন্নতি ও প্রবৃধ্বির জন্য জনসংখ্যা সমস্যাটাকে প্রধান অন্তরায় বলে আমার মনে হয়।
একমত, কারন,
কঠিন মাইর ছাড়া বাংগালির জন্ম নিয়ন্ত্রন সম্ভব নয়।
@মুরতাদ,
১৯৭৫ সালে ভারতে সঞ্জয় গান্ধী (ইন্দিরা গান্ধীর ছোট ছেলে। বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হন।) এই কাজটাই (মাইর) শুরু করেছিলেন, কিন্তু সফল হন নি। তবে চীন সফল হয়েছে।
যত দোষ নন্দ ঘোষ। সব সমস্যার দায় পুরুষদের বা পুরুষতন্ত্রের। চীনে বা পশ্চিমী দুনিয়ায় পুরুষতন্ত্রের অবসান ঘটেছে বলে কোন নিদান কোন নারীবাদী সংগঠন দিয়েছেন বলে শুনিনি। অথচ সেখানে জন্মনিয়ন্ত্রণ হয়েছে এবং চীনে এখনো পুরুষ সন্তানের কদর নারীর চাইতে অনেকগুণ বেশি। তৃতীয় দুনিয়ায় জন্মনিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে বড় শ্ত্রু ধর্ম ও অশিক্ষা। সস্তা নারীবাদী স্লোগানে জটিল সমস্যার সমাধান অসম্ভব।
@মিয়া সাহেব,
নিচের দুটি কথোপকথন থেকেই তা বুঝা যায়।*
জন্ম নিয়ন্ত্রণের পক্ষে: যদি লোকসংখ্যা বাড়িতে থাকে তবে আগামী কয়েক দশকের মধ্যে দেশের অবস্থা কিরূপ ভয়াবহ হইবে তাহা চিন্তা করিলে আমার দেহের রক্ত হিম হইয়া যায়। লোক সংখ্যা বৃদ্ধি হইলে শুধু যে খাদ্য ঘাটতি হইবে তাই নয়। সঙ্গে সঙ্গে আরো হাজারো সমস্যা ভীড় করিবে। এই সব নতুন মুখের জন্য বিদ্যালয় স্থাপন করিতে হইবে। বাসস্থান স্থাপন করিতে হইবে। তাহাদের চিকিৎসার জন্য নতুন নতুন হাসপাতাল স্থাপন করিতে হইবে। আমাদের খাদ্য উৎপাদনের জন্য যে সীমিত পরিমাণ জমি আছে তাহাও বন্ধ হইয়া যাইবে। তাহাদের জন্য নতুন নতুন বাসস্থানের প্রয়োজন হইবে। যানবাহনের প্রয়োজন হইবে। পোষাক পরিচ্ছদের প্রয়োজন হইবে। এইগুলি ছাড়াও আরো বহুবিধ সমস্যা আছে এবং আরো নতুন নতুন সমস্যার উদ্ভব হইবে। সুতরাং এই সমস্ত সমস্যার হাত হইতে উদ্ধার পাওয়ার জন্য পরিবার পরিকল্পনা একান্ত জরুরী। একারণে আমি পরিবার পরিকল্পনা সর্বান্তঃকরণে সমর্থন করি, নচেৎ আগামী ৩০ বৎসর পর দেশের মানুষের দাঁড়াইবার স্থান থাকিবে না।
জন্মনিয়ন্ত্রণের বিপক্ষে এক হুজুরের বক্তব্য (ধর্মীয়): আপনার অকাট্য যুক্তি খণ্ডন করিবার মত আমার বিদ্যা নাই। কিন্তু একটি কথা, আমরা মুসলমান। আমাদের ইমান আল্লাহর উপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখা। কিন্তু আপনার কথায় ইহাই প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহর ক্ষমতা নাই আমাদের পর্যাপ্ত পরিমাণে আহার প্রদান করার। আপনি কি দয়া করিয়া সুরা বনি ইসরাইলের ২৪-৩১ আয়াতে এবং সুরা আনয়ামের ১৫১ আয়াতে, আল্লাহ কি বলিয়াছেন তাহা পাঠ করিয়া দেখিবেন। এসব আয়াতে আল্লাহ তো স্পষ্ট করিয়া বলিয়াছেন, “তোমরা আহার জোগাইতে পারিবে না ভাবিয়া সন্তান হত্যা করিও না। কারণ সমস্ত জীবের রেজেকের একমাত্র মালিক আমি আল্লাহ। পৃথিবীতে এমন প্রাণী নেই, যাহার রেজেকের দায়িত্ব আমার উপর নয়।” সুরা ফাতেহার প্রথমেই তো আল্লাহ জলদ গম্ভীর স্বরে ঘোষণা করিয়াছেন, ‘রাব্বুল আলামিন’ সমগ্র বিশ্ব জগতের প্রতিপালক আল্লাহ। সুতরাং আল্লাহই সমস্ত প্রাণীর রেজেকদাতা, একথা স্বীকার করে পরমূহুর্তে বলিব, আল্লাহর ক্ষমতা নাই, মানুষকে খাইতে দিতে পারেন না। তাহা হইলে বিচার করিয়া দেখেন আপনি মোনাফেক কি-না।
——–
* মোকছেদ আলীর “জন্মনিয়ন্ত্রণ” পাণ্ডুলিপি থেকে সংগৃহীত।
@মাহফুজ,
বলুন সোবহান আল্লাহ।
@ভবঘুরে,
কুল হামদুলিল্লাহ!!!!
@মিয়া সাহেব,
পুরুষতন্ত্রের দোষ মানে কিন্তু শুধু পুরুষদের দৃষ্টিভঙ্গির দোষ নয়, নারীদের দৃষ্টিভঙ্গিরও দোষ।
@মিয়া সাহেব,
খুবই ভাল লাগছে আপনার কথা, নারী অধিকার নয় বরং আমার মতে হওয়া উচিত মানুষের অধিকার। যেখানে এক পুরুষও বঞ্চিত।
ধর্ম ও অশিক্ষার বাধন থেকে মুক্তি হওয়া চিয়া জাতির, শুধু নারী নয়। নারী অধিকার নারী অধিকার এই শব্দটা শুনলেই গা গিজগিজ করে অনেক সময়। মানুষ অধিকার মানুষ অধিকার হওয়া উচিৎ।
@মিয়া সাহেব, তথাকথিত নারী-পুরুষ ইত্যাদি কেন্দ্রিক মতাদর্শ নয় বরং পশ্চিমাবিশ্ব ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যের উত্কৃষ্ট উদাহরণ । নারীর ক্ষমতায়ন শব্দার্থে প্রশাসন কিংবা কর্পোরেট সেক্টরে লিঙ্গ অনুপাত খুঁজতে যাওয়া ভুল বরং লিঙ্গপরিচয়-নির্বিশেষে ‘ব্যক্তি’-র ক্ষমতায়ন সত্যিকার ক্ষমতায়ন । পশ্চিমা বিশ্ব বিশেষত পশ্চিম ইওরোপ বর্তমানে এর সবচেযে় ভালো উদাহরণ । লেট টীনএজ বয়স থেকে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য সেখানে বাস্তবতা । নির্দিষ্ট লিঙ্গবাদী দৃষ্টিভঙ্গী সত্যিকারভাবে প্রযে়াগ কখনো সম্ভব নয়, ভারতীয় উপমহাদেশের তথাকথিত ‘পুরুষবাদী সমাজ’ সত্যিকার ভালোপুরুষের নয়, ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য ছাড়া শুধু ‘পুরুষ’কিংবা ‘নারী’কেন্দ্রিক মতবাদ শুধু কুপুরুষ ও কুনারীর ক্ষমতায়নের পথ সৃষ্টি করে । যেমন নিজ জাতির লোকের ক্ষমতায়ন মানুষের সত্যিকার ক্ষমতায়ন নয়, ব্যক্তি মানুষের নিজের স্বাধিনতা ও নিজের ওপর স্বার্ভভৌমত্ব এবং অর্থনৈতিক স্বনির্ভরশীলতা সত্যিকার স্বাধিনতা ও ক্ষমতায়ন । এ’ অবদানটি পশ্চিমা সভ্যতার ।
পরিসংখ্যান সমৃদ্ধ লেখা। ভাল লেগেছে। তবে আমার শুধু আপত্তি সর্বশেষ প্যারায়।
কথা কয়টিতে আপত্তি। দুই লক্ষ মা-বোন শরীর দিয়ে যুদ্ধ করেছিল। দুই লক্ষ মা-বোনের ইজ্জত যায়নি। ইজ্জত গেলে পাকিস্তানীদের গেছে। আমাদের মেয়েদের ও মায়েদের নয়। আমরা স্বাধীন দেশে তাদের প্রাপ্য সম্মান ও ইজ্জত দিতে পারিনি। নারীর প্রতি শব্দগত এ দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের পাল্টাতে হবে। আশা করি মিলন সাহেবও এ ব্যাপারে আমার সাথে এঅকমত হবেন।
@গীতা দাস,
এভাবেতো কোনোদিন চিন্তা করিনি! সত্যিইতো,ইজ্জত গেলে গিয়েছে ওসব কাপুরুষদের যারা অস্ত্রহীনের উপর ঝাপিয়ে পড়েছে। ভালো লাগল আপনার চিন্তাধারাটি।
@গীতা দাস, এখন থেকে এভাবেই দেখব। আসলেই তো…
:guru:
@গীতা দাস,
সত্যি ভাল লাগল। :yes:
@গীতা দাস,
বাক্যগুলো মুখস্ত ঠোটস্থ করতে হবে।