আমি কালকের আনন্দবাজার থেকে জানলাম বাংলাদেশের গার্মেন্ট সেক্টরে বিরাট শ্রমিক বিক্ষোভ শুরু হয়েছে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে। হাজারে হাজারে শ্রমিক আন্দোলনে নেমেছেন। এবং তিনজন পুলিশের গুলিতে নিহত। ১৫০ জন আহত।
খবর দেখে বাংলাদেশের পেপার গুলো পড়ার চেষ্টা করলাম আজকে। প্রথম আলোতে খবরই নেই। সম্ভবত বিজ্ঞাপন হারাবার ভয়ে সংবাদ মালিক পক্ষ চেপে গেছেন। জনকন্ঠে সংবাদ টি দিয়েছে। এবং তারা জানাচ্ছে-এটি নাকি বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্প ধ্বংশ করার জন্যে বিদেশী চক্রান্ত! এই ছক নতুন কিছু না। শ্রমিক আন্দোলন শুরু হলে গত ১৫০ বছর ধরেই সেই আন্দোলনকে দমন করার জন্যে জাতিয়তাবাদ থেকে ধর্ম সব কিছুই ব্যাবহার করা হয়েছে। আমি তার লম্বা ইতিহাস লিখে, এই ব্লগ ভারাক্রান্ত করলাম না।
এরকম একটা বিশাল শ্রমিক আন্দোলন হচ্ছে অথচ সমগ্র বাংলাদেশ মিডিয়া চুপ বা মালিক পক্ষের হয়ে জাতিয়তাবাদি চুকলি করতে নেমেছে [যা শ্রমিকদের বিরুদ্ধে ইতিহাসে চেনা ছক] -এই নিয়ে ফেসবুকে কোন বাংলাদেশীর ব্লগ আশা করেছিলাম। আমার ফেসবুক বন্ধু লিস্টে প্রায় ১০০০ জনের বেশী বাংলাদেশী আছেন, যাদের অনেকেই লেখক, তাদের কারুর এই নিয়ে লেখা দেখলাম না।
পুরো ঘটনা আমাকে ভীষন ভাবে ব্যাথিত করেছে
[১] আমি আন্তর্জাতিকতায় বিশ্বাসী-তাই পৃথিবীর সকল দেশের শ্রমিক এবং ছাত্র আন্দোলন আমার কাছে চেতনা বৃদ্ধির আন্দোলন। যদিও, প্রযুক্তিই আসল পরিবর্তন আনে-গণ আন্দোলন আজও গনতন্ত্রের ভিত্তি। এই ব্যাপারে বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবিরা নীরব কেন?
[২] আমার মনে হচ্ছে বাংলাদেশীদের মধ্যে থেকে বামপন্থী চেতনা আস্তে আস্তে ফিকে হচ্ছে। আমাদের অনেক কিছু নেই-কিন্ত এই ধরনের ঘটনা হলে সব ফোরামগুলি রাগে ফেটে পরে। যদিও সেই জন্যে পশ্চিম বাংলা ভারতের সব থেকে পিছিয়ে পড়া রাজ্য, আমার ধারনা মানুষের প্রতি এই ভালোবাসা খুব খারাপ কিছুও নয়।
হয়ত আমি ভুল। বাংলাদেশী ব্লগার রা শ্রমিকদের পাশে দ্রুত দাঁড়াবেন এই আশা করি। কারন মিডিয়া তাদের ভিলেন বানাচ্ছে, নইলে নীরব।
আপনারা এই ব্লগে এই আন্দোলন নিয়ে কিছু লিখুন। কাগজ পড়ে কিছু জানতে পারলাম না। আপনাদের মন্তব্যই ভরসা।
আন্তর্জাতিকতায় বিশ্বাস করেন কিংবা মহল্লাজাতিকতায় বিশ্বাস করেন, সেটির সাথে আপনার ধারণার গভীরতার মিল নেই।
বিদেশী চংক্রান্তের যে বিষয়টি, সেটিকে কোনভাবেই অবহেলা করা যায় না। কারণ বিশ্বব্যাংক বাংলাদেশের আদমজী পাটকল বন্ধ করার জন্য আলটিমেটাম দিয়েছিলো, আর ভারতে পাটকল স্থাপনের জন্য আর্থিক সহায়তা দেয়। এভাবে করে বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচে সমৃদ্ধ শিল্প ধ্বংস হয়েছে। বিশ্বব্যাংকের ওই আলটিমেটাম আর সহায়তা নাটকের আগে কিন্তু পাটকলগুলোতে ধারাবাহিক অস্থিরতা ছিলো।
এখন আমরা বলছি তৈরি পোশাক এর কথা। একের পর এক সহিংসতা দিয়ে গার্মেন্টস শিল্পকে অলাভজনক খাতে পরিণত করা গেলেই আমরা আবার বিশ্বব্যাংকের আলটিমেটাম পাবো এবং দেখবো ভারতের বেকারত্ব দূরীকরণে গার্মেন্টস শিল্প স্থাপনের পরামর্শ দিচ্ছে বিশ্ব ব্যাংক।
আর বাদবাকি যে পুঁজিবাদ বিষ, তাতো আছেই। বাংলাদেশ কেন গ্রহের নিম্ন আয়ের মানুষগুলো সব ধরনের তন্ত্রমন্ত্র দ্বারাই শোষিত। রাজতন্ত্র, গনতন্ত্র, ধনতন্ত্র, সমাজতন্ত্র সবতন্ত্রই সমানভাবে চুষে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে উন্নয়নশীল দেশ সমূহেতো জগাখিচুড়ি অবস্থা। সবাই কমবেশি সক্রিয়। একজন নাগরিককে দিনের মধ্যে কয়েক যায়গায় হাজিরা দিয়ে অস্তিত্ব বিক্রি করতে হয়।
এইতো দেখছি নিত্যকার সিনেমার রিলে।
@সবাক,
তথ্যগত ভাবে ভুল। পশ্চিম বঙ্গের পাট শিল্পও সম্পূর্ন উচ্ছন্নে গেছে।
।
আসলে বাংলাদেশে এই ক্ষেত্রগুলোতে প্রতিবাদ হচ্ছে কিনা এটা কি মিডিয়ার মাধ্যমে জানা সম্ভব?
টাকা থাকলেই যখন যথেচ্ছা মিডিয়া ব্যবসায় হাত দেওয়া যায়, তখন সেখানে স্বেচ্ছায় স্ব-স্বারথের বিরুদ্ধে কিছু লেখাকে কেনো বরদাস্ত করবে মিডিয়ার মালিকপক্ষ?
তাদের চরিত্র কী ওই সব গার্মেন্টস মালিকদের চরিত্র থেকে ভিন্ন? তাদের স্বার্থ কী ভিন্ন? তাদের মধ্যে কী কোনোই যোগসূত্র নেই? যদি সবগুলোর উত্তরি হ্যাঁ হয়ে থাকে, তাহলে এই মিডিয়ার কাছ থেকে এই সকল খবর সঠিকভাবে প্রত্যাশা করাটা কী দুরাশা নয়?
তবে এই রকমটি সকল মিডিয়ার জন্য যে সত্য, তা নয়। হাতে গোনা দু’ইয়েক্টি ব্যতিক্রমও রয়েছে। একটির লিঙ্ক দিচ্ছি আজ-
http://www.bangladeshnews24x7.com/editorial-page/editorial.html
http://www.bangladeshnews24x7.com/srombajar.html
অবশ্য মঙ্গলধ্বনির মত ই-পত্রিকা সরকারপক্ষ বন্ধ করে দিয়েছিলো উস্কানীমূলক সংবাদ পরিবেশনের মিথ্যা অভিযোগে।
এইটা পড়তে পড়তেই প্রশ্ন জাগলো, বাংলাদেশে বামপন্থী (কমিউনিস্ট বা অন্যধরণের সমাজবাদী) রাজনীতির অবস্থা কি এখন?
আর, আপনারা বাংলাদেশের রিয়েলিটি অনেক ভাল জানেন, মৌলবাদের ভয় আছে কি নেই সে নিয়ে যথেষ্ট অবহিত আশা করি। কিন্তু, সারা পৃথিবীতে ইতিহাস দেখিয়েছে খেটে খাওয়া মানুষের সমস্যা নিয়ে আন্দোলনের নেতৃত্ব বামপন্থীরা না দিলে তা মৌলবাদীদের হাতে চলে যায়। এমন কি আজকের ইউরোপেও দক্ষিণপন্থী প্রো-খ্রিশ্চিয়ান গ্রুপগুলির রমরমার কারণ এটাই।
দারুণ লিখেছেন। যত দোষ ঐ কারখানার মালিকদের। তারা কেন পৃথিবীর এত জায়গা থাকতে এই বাংলাদেশে কারখানা স্থাপন করতে গেছে? শ্রমিক নির্যাতন থেকে মুক্তি পেতে কারখানা ভাংচুর করে জালিয়ে পুড়িয়ে কারখানা উচ্ছেদ করতে হবে।
@মুরতাদ,
১। সস্তার জায়গাতে উৎপাদন যাবেই। তাই বাংলাদেশে কারখানা হবে। পরিকাঠামো সরকার করে দিলেই হবে। সুতরাং শ্রমিকদের রক্ত শুষে এমন জাতীয়তাবাদি নাকি কান্না না কাঁদলেও হবে।
আরো শুনতে চান? বাংলাদেশে পে প্যাল চলে না। চললে, বাংলাদেশে শুধু এক বছরেই ৫ লাখ অতিরিক্ত চাকরি সৃষ্টি হতে পারে ইন্টারনেট ব্যাবসাতে-যা এখন ভারতে বা পূর্ব ইউরোপে হচ্ছে। বাংলাদেশের লোকেরা মেধাবী এবং পরিশ্রমী। এখানে ব্যাবসা না আসার কারন নেই যদি সরকার ঠিক ঠাক কাঠামো তৈরী করে। কিন্ত এর সাথে শ্রমিকদের বঞ্চনা কেন হবে?
২| সমাজে বঞ্চনা, অসাম্য এবং দারিদ্র টিকিয়ে রেখে কোন দেশই উন্নতি করতে পারে না। দেশের অস্তিত্বই থাকে না।
@বিপ্লব পাল,
– কঠিনভাবে সহমত। শ্রেনী বৈষম্য খুব প্রকট হলে সমাজে অস্থিরতা বাড়ে। বঞ্চিতদের ক্ষোভ জমতে থাকে,এবং তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে নানান ভাবে। এর একটি উদাহরন হল যে কোন কারনেই আমাদের দেশে ছূতা বেছূতায় সাধারন মানুষ রাস্তায় গাড়ি ঘোড়া ভাংচুর শুরু করা।
আমার মনে হয় যে, আমাদের দেশে মধ্যবিত্ত শ্রেনীটি অতি দ্রুত ব্যাপক আকার ধারন করছে এবং তার চেয়ে দ্রুত মধ্যবিত্তের দোষগুলি আয়ত্ব করছে।দেশের সংবাদমাধ্যম ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলোতে বুর্জোয়া ধ্যান ধারনার প্রচার চলছে কারন আমাদের ব্যাপক আকৃতির মধ্যবিত্ত শ্রেনী।
মধ্যবিত্তরা বেসরকারি কর্পোরেট দুনিয়া থেকে রুটি রুজি জোগাড় করে চলছে এবং তাদের প্রতি নিষ্ঠাবান।
দেশের সংবাদপত্র, বেসরকারী কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়,এন জি ও,গার্মেন্টস,তথ্য প্রযুক্তি খাত এবং বেসরকারী আর্থিক প্রতিষ্ঠান গুলোতে মধ্যবিত্ত শ্রেনীর কর্মসংস্থান এবং এসবই তো বড় বড় কর্পোরেশনের মালিকানায়। সুতরাং এই বলয়ের মাঝে থেকে শ্রমিক শ্রেনীর জন্য চিন্তা করার লোকজন কোথায়?
মধ্যবিত্তরা যদি বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা থেকে বেড়িয়ে এসে কর্পোরেট দুনিয়ার বাসিন্দা হবার সপ্নে ছোট থেকে বড় হয় তবে শ্রেনী বৈষম্য ও অবিচারের প্রতিবাদ মানুষ শুনবে কিভাবে আর না শুনলে সচেতন হবে কি করে?
আর আমাদেরই(মধ্যবিত্ত) বা কি দোষ দেশের যত জায়গা থেকে প্রতিবাদ-প্রতিরোধ হয় তার সবই অসুস্থ রাজনীতির ছকে বাধা।সুতরাং “ক্লিন ম্যান/ও্যমান” হতে হলে আপনাকে সকল রকমের রাজনীতি থেকে দুরে থাকতে হবে।
তাহলে,মধ্যবিত্তদের সংঘবদ্ধ বুদ্ধিবৃত্তিক চর্চা করার পরিবেশ নাই (সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রসংগঠন মুলক) ওতে জড়ালে জীবন দিয়ে বা নিয়ে সমাধানে পৌছুতে হবে আর তার বাইরে থাকলে, কর্পোরেশন নিয়ন্ত্রিত সংবাদমাধ্যম ও মিডিয়ার বিক্রী করা জীবনপদ্ধতির আদর্শ নাগরিক হয়ে থাকতে হবে যে নাগরিক যাবতীয় বিষয়ের উপসংহারে আসে নিজের লাভ ও ক্ষতি হিসাব করে। এবং অবশ্যই শ্রমিকদের দাবী আদায়ে সহায়তা করে মধ্যবিত্তের লাভ তো হবেই না বরং নিজের রোজগার বন্ধ হবার ভয় আছে।
মধ্যবিত্তের নেতৃত্ব ছাড়া দেশে কোন সঠিক সংস্কার সম্ভব নয়।আর লাখ লাখ শ্রমিক অত্যাচারিত হয়ে ভুল পথে দিগ্বিদিক ছুটছে, ভাংচুর ও অসন্তোষ তো কমই এরা যে ঢাকা শহরে আগুন দিচ্ছেনা তাই তো অনেক।
সুতরাং হয়তো আমাদের সামনে অপেক্ষা করা ছাড়া কোন উপায় নেই যে কখন মধ্যবিত্ত নিজেদের অসীম ভোগবাদী স্বত্তাকে তৃপ্ত করে দেশ ও দশের ভালর চিন্তায় আকৃষ্ট হবে।
বেশী দেরী হয়নি, এবার আরো মারাত্মক ঘটনা।
আশুলিয়ায় পোশাক কারখানায় আগুন, নিহত ২২
@আদিল মাহমুদ,
আমি বিবিসি নিউজ দেখলাম। ফায়ার এক্সিট বন্ধ ছিল-বোধ হয় তাতে দুটি মেশিন বেশী বসিয়েছেন মালিক সাহেব। ফলে শ্রমিকরা আগুনের মধ্যে লাফ মারতে বাধ্য হয়েছে। এত ক্রিমিনাল মালিক। তাকে কি গ্রেফতার করা হয়েছে?
আরো অবাক হলাম বাংলাদেশীদের ব্লগ আজও নীরব [ দু একজন ব্যাতিক্রম]। তারা ব্যাস্ত মুক্তি যুদ্ধের চেতনা নিয়ে।
আচ্ছা সেই চেতনায় কি এই গরীব বাংলাদেশীদের স্থান নেই?
না এই ব্লগার শ্রেনীটি মালিক পক্ষের সেবাদাসে পরিণত? সংবাদ পত্রে এসবের অসুবিধা থাকতে পারে-তাদের বিজ্ঞাপনের টাকায় চলতে হয়-কিন্ত ব্লগারদের তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা উচিত শ্রমিকদের অধিকারের পক্ষে।
@বিপ্লব পাল,
আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, এই অবিশ্বাস্য ঘটনাটিও বাংলাদেশে নতুন কিছু না। এর আগেও এরকম দরজা-জানালা বন্ধ করে পুড়িয়ে গার্মেন্ট-শ্রমিক মারা হয়েছে। শ্রমজীবির জীবনের মূল্য অনেক দিন ধরেই প্রায় শূণ্য। তবে শুধু শ্রমজীবি নয়, স্রেফ সাধারণ ভাবেই জীবনের মূল্য খুব কম।
@বিপ্লব পাল,
ঠিক, আমি তীব্রভাবে এর সমর্থন জানাচ্ছি।
@বিপ্লব পাল,
কাকে কি বলব বলেন? এটা আমাদের কালচারগত সমস্যা।
গার্মেন্টসগুলিতে এ ধরনের দূর্ঘটনায় প্রায়ই মশা মাছির মত মানুষ মারা যায় দূর্ঘটনা ঘটার কারনেই শুধু নয়। আমাদের দেশে সেফটি ষ্ট্যান্ডার্ডের মান খুবই নিম্ন, আরো নিম্ন তার প্রয়োযগে। সে কথা সবার ক্ষেত্রেই খাটে।
তবে এই গার্মেন্টস মালিকদের কিছু অত্যন্ত অমানবিক নিয়ম নীতির কারনে এই মানবিক বিপর্যয় বেড়ে যায় আরো বহুগুন।
প্রায় প্রতিটা গার্মেন্টসেই সকালে কাজে লোকজন ঢোকার মত নীচে লোহার কলাপসিবল গেটে বিশাল তালা ঝুলিয়ে মুশকো দারোয়ান বসিয়ে রাখা হয়। ফলে এ ধরনের দূর্ঘটনা ঘটলে পালাবার সুযোগ খুবই কম। মানুষ হুড়াহুড়িতে কিংবা ওপরের তালা থেকে লাফিয়ে নামতে গিয়ে মারা পড়ে বেশী। অন্তত এসব মৃত্যু অবশ্যই ঠেকানো যেত।
আমি ঢাকায় যে পাড়ায় থাকতাম সেখানে আমার বাসা থেকেই কয়েকটা গার্মেন্টস দেখা যেত। এই তালা চাবি দেবার ব্যাবস্থা নিজেই প্রতিদিন দেখতাম। শুধু লাঞ্চের সময় কিছুক্ষন খোলা হয়, তারপর আবার কার্যত জেলখানা।
একই ঘটনা যে কত শুনলাম বলে শেষ করতে পারব না। কিন্তু কোন প্রতিকার নেই। কে কাকে বলবে? বড় বড় গার্মেন্টস মালিক হয় সব রাজনীতিক দলে সরাসরি জড়িত আর নয়ত তাদের পোষে। আমরা আম জনতা কেবল কাগজে পড়ি আর আহা উহু করি। যে দেশে নিহতদের পরিবারকে ছাগল দিয়ে সান্তনা দেওয়া হয় সে দেশেরই নাগরিক তো আমরা/
Garment Workers Leader Moshrefa Mishu arrested at midnight
Officers of the Detective Branch of police picked up labour leader Moshrefa Mishu, president of Garments Workers Unity Forum, from her home in Dhaka a little after midnight.
According to news reports, her sister Jebunnesa Jebu who lives with Mishu, said she was was taken away to the Detective Branch Headquarters for interrogation around 12:45am, 14 December 2010.
About a dozen police officers, in plain clothes except one, carried out the raid on the labour leader’s Bhuter Gali home in Kalabagan. The officers did not show any arrest warrant, said Jebunnesa, nor did they explain why she was being led away. After having initially denied her arrest, she has now been charged by the police with having instigated garment workers to go `berserk’ at Kuril.
@বিপ্লব পাল,
পোশাকশিল্প
ডলারের মজুদের নিচে চাপা পড়া মানুষ
আনু মুহাম্মদ | তারিখ: ২১-১২-২০১০ প্রথম আলো
১৯ ডিসেম্বর আমরা যখন ঢাকার সিএমএম কোর্টের সামনে, ততক্ষণে মোশরেফা মিশুকে এজলাসে নিয়ে আসা হয়েছে। পুলিশ ও আইনজীবী ছাড়া সেখানে আর কারও প্রবেশের অনুমতি নেই। কিন্তু বাইরে থেকেই আমরা বুঝতে পারছিলাম, মিশু দাঁড়াতে পারছেন না। প্রচণ্ড শ্বাসকষ্টে তাকানোর বা কথা বলারও কোনো শক্তি নেই ওঁর তখন। ব্যারিস্টার সাদিয়া আরমান আমাদের সঙ্গেই ছিলেন। তিনি ভেতরে গিয়ে কথা বলতে চেষ্টা করলেন।
ব্যারিস্টার সাদিয়া আরমান বের হয়ে বলেন, ‘প্রচুর হাঁপাচ্ছেন উনি। চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। হাত ধরলাম, বললাম, কেমন আছেন? কোনোরকমে মিশু বললেন, “আমি আর রিমান্ড সহ্য করতে পারব না। ঘটনা সম্পর্কে আমি কিছুই জানি না।” হাঁপাতে হাঁপাতে বললেন, “আমি নরসিংদীতে ছিলাম। ১২ তারিখ রাতে ঢাকায় ফিরেছি। ১৩ ডিসেম্বর জাতীয় কমিটির কর্মসূচিতে অংশ নিতে পারিনি। ১৩ তারিখ রাত সোয়া একটায় বোনের বারণ অমান্য করে ১২ জন পুলিশ আমার বেডরুমে ঢুকে গেল। পুলিশকে বোঝালাম, আপনাদের অভিযোগের কোনো কিছুই আমার জানা নেই। আমি অসুস্থ। কিন্তু ওষুধ পর্যন্ত নিতে পারি নাই।” দেখলাম ওঁর বুকেও প্রচণ্ড ব্যথা।’ মিশুর অ্যাজমা আছে। গত কয়েক দিনে ঠান্ডা মেঝেতে রাখার কারণে অ্যাজমা মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। আর মেরুদণ্ডের ব্যথা অনেক পুরোনো—এগুলোর উৎস এরশাদ স্বৈরতন্ত্রবিরোধী আন্দোলন, বিএনপির আমলের নির্যাতনবিরোধী লড়াইয়ে পুলিশের আঘাত। সেগুলো নিয়ে মিশুকে সব সময় সতর্ক থাকতে হয়। তার পরও জনস্বার্থে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে তিনি সদা সচেষ্ট। কদিন আগেই অনেক কষ্ট স্বীকার করে লংমার্চেও অংশগ্রহণ করেছেন। গত কদিনের রিমান্ডে এই ব্যথাও গুরুতর আকার ধারণ করেছে। কোর্টে দাঁড়াতে পারলেন না।
শুনানি হলো খুব সংক্ষিপ্ত। ১০ মিনিট। আদালতে মিশুর পক্ষের আইনজীবীরা পুরো মামলার আইনগত দুর্বলতা, মিশুর বিরুদ্ধে অভিযোগের অপ্রাসঙ্গিকতা, অসুস্থতা ইত্যাদি বিষয়ে অনেক প্রশ্ন তুলতে চেষ্টা করলেন। কিন্তু এর জন্য সময় নেই। ১০ দিনের রিমান্ড চেয়েছিল পুলিশ, আদালত দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করলেন। ফিরতি পথে হাঁটার অবস্থা না থাকায় তাঁকে প্রায় টেনেহিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছিল পুলিশ। একজন পুলিশের মন্তব্য শুনলাম, ‘কিছুই হয় নাই।’ এই কথা যে কতটা ভুল, তা ওই পুলিশও নিশ্চয়ই কয়েক মিনিটের মধ্যেই টের পেল।
আমরা যখন কোর্ট থেকে ফিরছি, রাস্তায় তখনই শুনলাম মিশুকে আবার রিমান্ডে নিয়ে যাওয়ার জন্য গাড়িতে তোলা হয়েছিল, কিন্তু অচেতন হয়ে পড়ায় শেষ পর্যন্ত তাঁকে ন্যাশনাল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। ওঁর বোন জেবুকে অনুমতি দেওয়া হয়েছিল হাসপাতালে দেখা করার। আমি যখন জেবুকে ফোন করলাম ও তখন মিশুকে নেবুলাইজার দিচ্ছে। মিশুর ভয়ংকর গোঙানির শব্দ টেলিফোনে শুনেছি। এর কিছুক্ষণ পরই ফোন পেলাম, মিশুকে স্থানান্তরিত করা হচ্ছে পিজি বা বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে। দুই ঘণ্টা পর আবার শুনলাম, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ওকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
গত ১০ বছরে বিভিন্ন সরকারের আমলে মাঝেমধ্যেই আমরা দেখেছি শ্রমিকেরা রাস্তায়। পুলিশের সঙ্গে সংঘাত। কিন্তু শ্রমিকেরা বারবার আন্দোলন বা বিক্ষোভ করছেন কেন? তাঁদের কি খুব আনন্দ হয় পুলিশের মার খেতে, চাকরি হারাতে, হাজতে পচতে কিংবা মাস্তানদের চোরাই হামলা আর নির্যাতনের শিকার হতে? ১৯৯৪, ২০০৬ কিংবা ২০১০—কোনোবারই এ রকম রাস্তায় নেমে আসার আগে মজুরি নিয়ে কোনো ফয়সালা হয়নি। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় ন্যূনতম মজুরি ছিল ৯০০ টাকা। বাঁচার মতো মজুরি আর বকেয়া পরিশোধ, নিয়োগপত্র, সাপ্তাহিক ছুটিসহ নানা দাবিতে ২০০৬ সালে ঢাকা শহর অচল হয়েছিল। এর কোনো দাবি অন্যায্য ছিল?
সরকার আর মালিকদের তখনো বক্তব্য ছিল, মজুরি বাড়ালে এই শিল্প ধ্বংস হয়ে যা্বে; এবং এই আন্দোলন একটি চক্রান্ত। তখন আঙুল তোলা ছিল আওয়ামী লীগের দিকে। সে সময়ও একপর্যায়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় মিশুকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। পরে আন্দোলনের চাপেই মজুরি কিছুটা বাড়ল (১৬৬০ টাকা), কিন্তু শিল্প ধ্বংস হলো না, বরং আরও প্রসারিত হলো। ২০১০ সালে যখন প্রকৃত মজুরি ২০০৬ সালের চেয়ে নিচে নেমে গেল, তখনই আবার দাবি শুরু হয়। এই বছরের প্রথম দিকে কয়েক মাস ন্যূনতম মজুরি নিয়ে শ্রমিকেরা আন্দোলন করেছেন। মালিকদের অবস্থান একই—শিল্প ধ্বংস হয়ে যাবে, আর চক্রান্তের ইঙ্গিত।
এ বছরের ২১ জুলাই প্রধানমন্ত্রী নিজেই সংসদে বললেন, ‘তৈরি পোশাকশ্রমিকদের যে বেতন দেওয়া হয়, তা শুধু অপ্রতুলই নয়, অমানবিক।’ (প্রথম আলো, ২২ জুলাই, ২০১০)
মজুরি অমানবিক এবং তার বিরোধিতা করার কথা বলা, ন্যায়সংগত বাঁচার মতো মজুরির বিচারের দাবি করার জন্য মোশরেফা মিশুর বিরুদ্ধে ভাঙচুরে উসকানি, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে মদদদানের অভিযোগ এনেছে সরকার। সরকার কি তবে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ আনবে?
একই বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী ২৮ জুলাইয়ের মধ্যে ‘অমানবিক অবস্থা’ নিরসনে নতুন মজুরি কমিশন রোয়েদাদ ঘোষণা করার কথা বললেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত মালিকদের কথা মেনে অমানবিক পর্যায়েই মজুরি নির্ধারিত হলো, মূল ও অন্যান্য সুবিধা মিলিয়ে তিন হাজার টাকা। টাকার অঙ্কে বৃদ্ধি ৭০ বা ৮০ শতাংশ দেখা গেলেও দাম-স্তর বিবেচনায় এই বৃদ্ধির হার ১০ শতাংশের বেশি নয়। এর মধ্যে দুই ঈদ গেল। শ্রমিকেরা তার পরও মেনেই নিলেন একরকম। কিন্তু মালিকদেরই ঠিক করা ন্যূনতম মজুরি বাস্তবায়ন নিয়েও দীর্ঘসূত্রতা, টালবাহানা ও নানা জটিলতা দেখা গেল। এই টালবাহানার একটি ব্যাখ্যা এক বন্ধুকে বলা একজন মালিকের কথা থেকে পাওয়া যায়, ‘নতুন হিসাবে বোনাস দিতে গেলে আমার লাগবে আট লাখ টাকা। এই টাকা দিয়ে আমি পরিবারসুদ্ধ সুইজারল্যান্ডে বেড়িয়ে আসতে পারি!’
শ্রমিকদের মজুরি বাকি, নতুন হিসাবে নানা অসংগতি। তার সমাধানের দাবি করার পর কারখানার তালা বন্ধ। সে সময় শ্রমিকেরা বিক্ষুব্ধ হবেন না? অন্যায় হলে, জীবন বিপন্ন হলে তার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানো যাবে না? সংবিধান শ্রমিককে এই অধিকার দিয়েছে, আইএলও কনভেনশন তাঁকে এই অধিকার দিয়েছে। শ্রমিকেরা তাঁদের জীবন-মরণ নিয়ে কথা বলতেই রাস্তায় নামেন। তারপর কারা কোথা থেকে ভাঙচুর শুরু করে। শ্রমিকদের আন্দোলনের মধ্যে বিভিন্ন মালিকের নিজেদের দ্বন্দ্ব, ঝুট ব্যবসায়ীদের আধিপত্যের লড়াই, আর নানা রকম চক্রান্ত ঢুকে যায়। শ্রমিকদের মূল দাবির চেয়ে মিডিয়ার মনোযোগ এ ভাঙচুরেই আটকে যায়।
যদি সংগঠনের অধিকার থাকত, তাহলে এই আন্দোলন নিশ্চয়ই অনেক সংগঠিত হতো। এখন তা থাকে না, তার দায়িত্ব কার? সব দায় শ্রমিকদের ওপরই পড়ে। ১১ তারিখে পুলিশের গুলিতে তাই নিহত হলেন চার শ্রমিক, আহত হলেন অগুনতি। ২০০৬ সালে বিএনপি-জামায়াত সরকার অজ্ঞাত ৩০ হাজার শ্রমিকের নামে মামলা করেছিল, একইভাবে এবারও দুই দিনের মাথায় অজ্ঞাত হাজার হাজার শ্রমিকের নামে মামলা হলো। তত্ত্বাবধায়ক সরকারও এ রকম অজ্ঞাত হাজার হাজার ছাত্রের নামে মামলা করেছিল। এ রকম মামলা খুব সুবিধাজনক। যাকে-তাকে ধরা যায়, হয়রানি করা যায়। এর সঙ্গে গ্রেপ্তার ও রিমান্ড-বাণিজ্যের অভিযোগও বহুল প্রচারিত।
শ্রমিকদের গুলি করে হত্যার পর পাইকারি ধরপাকড় চলতে চলতেই ১৩ তারিখে গেট তালা দিয়ে আটকে রাখা এবং আগুন নেভানোর যথাযথ ব্যবস্থা না থাকায় আরেক কারখানায় আগুনে পুড়ে মরলেন, সংবাদ ভাষ্যমতে, ৩১ জন; আধপোড়া, জখম শত শত। লাশ খুঁজতে থাকলেন স্বজনেরা, কর্তৃপক্ষ লাশ শনাক্ত করার অভিযান সমাপ্ত করল। আমরা জানি না আসলে সংখ্যা কত। লাশের হিসাব সব সময়ই এ রকম হয়েছে। ভবন ধসে আর আগুনে পুড়ে যত ঘটনা ঘটেছে, এখনো সব লাশের সন্ধান পাওয়া যায়নি।
২০ বছরে পুড়ে ও চাপা পড়ে অফিশিয়াল হিসাবেই নিহত প্রায় এক হাজার শ্রমিক। এসবের জন্য যেসব মালিক দায়ী, কিংবা যেসব মালিকের কারণে গত এক দশকে কয়েক হাজার কোটি টাকা বকেয়া আর উশুল হয়নি, যেসব কারখানায় ছাদ থেকে শ্রমিকের লাশ রাস্তায় পড়ল, যৌন নিপীড়নের অভিযোগ উঠল, মাস্তান দিয়ে নির্যাতনের খবর বের হলো, সেই মালিকদের বিচারের কোনো খবর কখনো কেউ পায়নি। কিন্তু এসবের প্রতিবাদ করায় শ্রমিকেরা নির্যাতিত, নিহত; শ্রমিক সংগঠক মন্টু ঘোষ, মোশরেফা মিশু, বাহরানে সুলতান বন্দী, রিমান্ডে নির্যাতিত।
বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ে প্রধান দুটো ধারা প্রকৃতপক্ষে দেশের শ্রমিকদেরই দেশে ও বিদেশে কাজের ফল। বছরে পোশাক রপ্তানি করে আসে প্রায় ৬৫ হাজার কোটি টাকা আর প্রবাসী শ্রমিকেরা পাঠান প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা। এই দুই প্রাপ্তি বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ নিরাপদ রেখে বড় ধরনের সংকট থেকে সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা রক্ষা করেছে। কিন্তু এই বিশাল ডলারের স্বাস্থ্যকর মজুদের গায়ে আছে নির্মমতা আর রক্তের দাগ।
২০০৯ সালে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার হিসাবে গড় মজুরি বাংলাদেশে সবচেয়ে কম, মুনাফার হার এখানে সবচেয়ে বেশি। কয়েকটি দেশের হিসাব তারা দিয়েছে। যেমন, (পিপিপি ডলারে) তাইওয়ান ৯৫৫, চীন ২০৪, কম্বোডিয়া ১৫৬, ইন্দোনেশিয়া ১৪২, ভিয়েতনাম ১২০, পাকিস্তান ১১৮, ভারত ১১৩ এবং বাংলাদেশ ৬৯। অন্যদিকে কম্বোডিয়ান ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ ২০০৯ সালেরই আরেকটি গবেষণায় বিভিন্ন দেশের গার্মেন্টসের মুনাফার হার (উৎপাদনমূল্য অনুপাতে মুনাফা) তুলনা করে দেখিয়েছিল—বাংলাদেশ ৪৩.১০ শতাংশ, কম্বোডিয়া ৩১.০০ শতাংশ, ভারত ১১.৮ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়া ১০.০ শতাংশ, ভিয়েতনাম ৬.৫ শতাংশ, নেপাল ৪.৪ শতাংশ এবং চীন ৩.২ শতাংশ।
বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্প শুধু এই দেশের নয়, বৈশ্বিক শিল্পেরও অংশ। ১০০ মার্কিন ডলারে যে বাংলাদেশি পোশাক নিউইয়র্ক বা স্টকহোমে বিক্রি হয়, তার সর্বোচ্চ ২০ ডলার এই দেশে আসে, বাকিটা সেসব রাষ্ট্র ও বায়িং হাউস, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর ভাগ করে। স্তরে স্তরে বিভক্ত মুনাফার এক বিশাল সৌধের নিচে শুধু যে লাখ লাখ শ্রমিক চাপা পড়েন তা-ই নয়, জমে তাঁদের রক্তাক্ত পিষ্ট লাশ বা তাড়া খেতে থাকা অপুষ্ট অর্ধমৃত শরীর। আর তাঁদের কথা বলতে গিয়ে গুলি, রিমান্ড, গুপ্ত হামলা, হুমকিসহ পুষ্ট রাষ্ট্রের মুখোমুখি হতে হয় মানুষকে।
আনু মুহাম্মদ: অর্থনীতিবিদ ও অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
@আব্দুল হক,
গার্মেন্ট শ্রমিকরা কিভাবে নির্যাতিত এবং শোষিত এটা আমরা সবাই জানি। যেটা আমার কাছে বেদনাদায়ক লেগেছিল সেটা হচ্ছে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত শ্রেনীর এদের প্রতি উদাসীনতা।
এত লাভ করার পরেও শ্রমিক শোষন চালিয়ে গেলে-ক্ষতি হবে বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্পের। শ্রমিক অসন্তোষ চলতেই থাকবে।
@বিপ্লব পাল,
প্রিয় বিপ্লব পাল,
হ্যাঁ ঠিকই বলেছেন, বাইরে থেকে আপনাদের খটকা লাগবারই কথা। মধ্যবিত্ত শ্রেনীর যে ক্ষুদ্র অংশ টিভিতে খবর দেখে, পত্রিকা পড়ে তার বড় অংশটাই প্রতিক্রিয়াশীল রাজনীতির সাথে যুক্ত। যে ক্ষুদ্র অংশটি প্রগতিশীল রাজনীতিতে যুক্ত, এমন দাবীদার, তাদের মধ্যে এত ভাগ যে বাইরের কারোর দৃষ্টি আকর্ষিত হতে পারে এমন উল্লেখযোগ্য কাজ এদের দ্বারা সম্ভব হয় না। ভোটে বিশ্বাসী নয় এমন কিছু গ্রুপ ও এখানে সক্রিয় যাদের কিলিং এর খবর পত্রিকার পাতায় প্রয়শঃই পাওয়া যায়।
অন্যদিকে বাংলাদেশের শাসক শ্রেনীর দুই অংশ আওয়ামী জোট ও জাতীয়তাবাদী জোট উভয়েই ফ্যাসিষ্ট চরিত্রের।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কাজ করছে তেল-গ্যাস, বিদ্যুৎ, বন্দর ও খনিজ-সম্পদ রক্ষা জাতীয় কমিটি। যেখানে মোটামুটি সকল (২/১টি ব্যাতীত) কথিত প্রগতিশীল দলই সমন্বিত। কথিত বললাম একারণে যে এদের কিছু কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আমার ১বার বসার সুযেগ হয়েছিল ২০০৬এ রাজশাহীর কানসাটে জাতীয়তাবাদী জোট সরকারের কৃষক হত্যার সময়ে। সেখানে বিচারপতি রব্বানী ও ব্যারিস্টার রিজওয়ানা হাসান ব্যাতীত অন্যদের প্রতি আমার ধারণা তেমন সুখকর নয়।
তারপরেও বিশ্বব্যাপী এই ভাটার সময়ে একজন জুলিয়ান অ্যাসেন্জ দাঁড়ায়, এই প্রান্তেও দক্ষিন আমেরিকার ঢেউ লাগে, ক্রসফায়ার-গুমখুনের বিরুদ্ধে, মিথ্যা অজুহাতে বন্দি ও নির্যাতনের প্রতিবাদ হয়। অধ্যাপক আনু মুহাম্মদের মতো মানুষদেরও প্রকাশ্য দিবালোকে মিছিলের মধ্যে পুলিশ পিটিয়ে পা ভেঙ্গে দেয়। নচিকেতার গানের (অ্যাম্বিশন) সেই বোকারা আজও অন্যায়ের প্রতিবাদে, মানুষের জন্য জীবন দিতে ও নিতে লড়াই করে। সেটা সিঙ্গুরে, নন্দীগ্রামে, কানসাটে বা আশুলিয়ায়।
[img]http://www.facebook.com/photo.php?fbid=10150105341656079&set=a.469250006078.263893.689336078[/img]
:-Y
শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ে দেশের ইলেকট্রনিকস মিডিয়াগুলি ভালোয়ই কভারেজ দিয়েছে, ডেইলি ইস্টার থেকে আরম্ভ করে মূল ধারার পত্রিকাগুলিতেও বিষয়গুলা ভালো করেই উঠে এসেছে মূল হেড লাইন না হলেও তবে দেশের অর্থের পিছনে ছুটতে থাকা মধ্যবিত্ত শ্রেণীর কাছে এই শ্রমিক অসন্তোষ থেকে শেয়ার বাজারের দরপতন , ক্রিকেট ম্যাচ অথবা কিং খানের শো নিয়ে মাতামাতিই বেশী পছন্দ, ভারতের মতোই এদেশের মধ্যবিত্ত শ্রেণীও ক্রমশ প্রান্তিক পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর অপেক্ষা নিজের আখের গুছাতেই বেশী তৎপর এ ব্যাপারে আপনার পর্যবেক্ষণ সঠিক তবে এর ফলে যে ইসলামী দলগুলা ভাত পাবে বলে যে আশংকা করছেন পাকিস্থানের মতো সে আশংকা একদম অমূলক একারনে এদেশের মূল ইসলামী দল ত ইসলামী মিশরের মুসলিম ব্রাদার হুডের মতো একটিভিস্ট রোলে কখনও বিশ্বাসি না এরপর গত পাঁচ বছরের ক্ষমতায় থাকার সুবাদে এদের নেতারা ব্যাংক রিয়াল এসেষ্ট সব ধরনের ব্যবসা করে এতো বিপুল অর্থ সম্পদের মালিক হওয়াতে এদের অবস্থা এমন হয়ে গেছে যে নিজেদের বড় নেতাদের সবগগুলাকে কেই জেলে ভরার পরেও দলের কর্মিরা সরকারের
বিরুদ্ধে বড় কোন আন্দোলনে যেতে নারাজ।
বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রাম এখন অমিয়ভূষণ মজুমদারের “দুখিয়ার কুঠি”। আর শ্রমিকদের আন্দোলনগুলোকে দেখা হয়, দেশী-বিদেশী চক্রান্ত হিসাবে।
বিদেশী চক্রান্তঃ
দৈনিক ই্নকিলাব http://www.dailyinqilab.com/
স্বাধীনতা বিরোধীদের চক্রান্তঃ দৈনিক যুগান্তর
http://www.dailyinqilab.com/
এবং
দৈনিক সমকাল, সম্পাদকীয়ঃ পোশাক শিল্প>>অনাকাঙ্ক্ষিত সহিংসতা
http://www.shamokal.com/
দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্রকেই দায়ী করে এ পত্রিকা’
http://www.dailynayadiganta.com/fullnews.asp?News_ID=250192&sec=1
দৈনিক আমাদের সময়ঃ http://www.amadershomoy1.com/content/2010/12/14/news0182.htm
দৈনিক জনকন্ঠের খবরঃ
http://www.dailyjanakantha.com/news_view.php?nc=15&dd=2010-12-14&ni=42283
এসব সংবাদ পড়ে আমারও মনে হচ্ছে, এসব আন্দোলনের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর ব্যবস্থা নিক। তা না হ’লে দেশ-প্রেম, দেশের ভাবমূর্তি সবই গোল্লায় যাবে। এত কষ্ঠ করে স্বাধীনতা এনে ক’য়েকটা শ্রমিকের কাছে হার মানবো?
তা হয় না। প্রয়োজনের এ বাংলাকে রক্ষা করার জন্য “তাসের ঘর” বানাবো।
@স্বপন মাঝি,
:-X :-Y :-Y
@স্বপন মাঝি, একেবারে সঠিক কথাটা বলেছেন। দেশে এখন শ্রমিক আন্দোলন মানেই ‘বিদেশী চক্রান্ত’। শ্রমিকদের ন্যায্য আন্দোলনগুলোকে এভাবে চিত্রিত করতে পারলে খুব সহজেই তা শক্তি প্রয়োগ করে দমন করা যায়। কিছুদিন আগেও তো গার্মেন্টস শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরীর জন্য করা আন্দোলনগুলোকে গলা টিপে হত্যা করা হয়েছিল।
http://www.somewhereinblog.net/blog/dinmojurblog/29288589
এটাই আমার দেখা এ সংক্রান্ত একমাত্র বাংলা ব্লগ।
বাংলাদেশে মধ্যবিত্ত শ্রেণির সাথে শ্রমিক কৃষকদের দূড়ত্বটা টে্র পাচ্ছি। প্রগতিশীল বাংলাদেশের জন্য এটি অশনি সংকেত। শ্রমিক কৃষকদের অশোন্তোষ যদি ইসলামিস্ট পার্টি গুলি দ্বীনের নামে কব্জা করার চেষ্টা করে-মধ্যবিত্তদের প্রগতিশীল বাংলাদেশ পাকিস্তানে পরিণত হবে। পাকিস্তানে মধ্যবিত্ত প্রগতীশীল শ্রে্নীটি আজ ক্ষমতা শুন্য কারন তাদেরকে ইসলামের শত্রু হিসাবে দেখে সে দেশের গরীব শ্রেনী-আর দেখবেই বা না কেন। তাদের দারিদ্রের সুযোগ নিয়ে, শ্রম অশোন্তোষের সুযোগ নিয়ে, মধ্যবিত্ত শ্রে্নীকে পাকিস্তানি সরকার খুব সুপরিকল্পিত ভাবে শ্রমিক শ্রেনীর সাথে বিচ্ছিন্ন করেছে। আজ যা দেখলাম, এই রকম চলতে থাকলে বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত শ্রেনীও শ্রমি্ক কৃষক বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। এতে লাভ হবে শাসক শ্রেনীর এবং প্রতিক্রিয়াশীল শক্তির যার মধ্যে ধর্মীয় মৌলবাদ প্রথম।
@বিপ্লব পাল,
আপনার অভিযোগ সত্য। এটা আমিও সমসময়ই মনে করি। মানুষে মানুষে শ্রেনীভেদ এত প্রকট বলেই আমার দেশের পরিবেশ তেমন নিরাপদ মনে হয় না। এই শ্রেনীভেদ কিভাবে ঘোচানো যাবে আমি জানি না।
তবে এই সমস্যা কি ভারতেও নেই? সেখানেও কি শ্রেনীভেদ খুব কম? আপনাদের মধ্যবিত্ত শ্রেনী কি এসব ব্যাপারে দলমত নির্বিশেষে ফুসে ওঠে? আমাদের ওদিকে কিছু মানবাধিকার সংস্থা আছে তারা মাঝে মাঝে কিছু করার চেষ্টা করে। তবে এই জাতীয় শ্রমিক অসন্তোষ গত কয়েক বছর ধরেই নিয়মিত হয়ে আসছে, বছরের অন্তত ২/৩ বার ইপিজেড এলাকাগুলিতে এমন শ্রমিক অসন্তোষ নিয়মিত বিরতিতেই হয়ে আসছে। আম জনতা সেভাবে এ ইস্যু নিয়ে চিন্তা করে না।
@আদিল মাহমুদ,
ভারতে নক্সাল পন্থী এবং গান্ধী পন্থী অনেকেই আছে-যারা জন বিচ্ছিন্ন না। শ্রমিকদের গুলি করে মারলে এখানে আগুন জ্বলত। হরিয়ানাতে সব থেকে বড় শ্রমিক বিক্ষোভে যেখানে সব বিদেশী কারখান, সরকার এটা বলে নি যে এটা চক্রান্ত।
তবে এখানেও মধ্যবিত্ত শ্রেনী্র অধিকাংশই উদাসীন। কিন্ত একটা বিরাট ব্যাতিক্রান্ত অংশও আছে কারন ভারতে কমিনিউস্ট আন্দোলন এবং জয় প্রকাশ নারায়নের সমাজবাদি আন্দোলন মৃত না।
@বিপ্লব পাল,
আমাদের এদিকে সেই ব্যাতিক্রমী অংশ খুবই কম। আমাদের মানসিকতায় আত্নকেন্দ্রিক ছাপ সাধারনভাবে খুবই প্রকট। একদ্ম নিজের ঘাড়ে এসে কিছু না পড়লে সাধারনত মানুষের টনক নড়ে না। পত্রিকায় মিডিয়ায় খবর দেখে, বড়জোর হা হুতাশ করে।
তবে আমারও কালো ওঝার মনে হয় না যে এইসব ঘটনার ফলে কোন উগ্রপন্থী গ্রুপের সুযোগ নেবার অবকাশ পাকিস্তানের মত আমাদের দেশে রয়েছে।
তবে সামগ্রিকভাবে যে সমাজে শ্রেনীভেদ এত প্রকট সে সমাজের নিরাপত্তা নিয়ে আশংকা সবসময়ই থেকে যায়। অল্প কিছু লোকে যাবতীয় সুবিধে ভোগ করবে আর বৃহত্তর অংশ সারা জীবন নীরবে দেখে যাবে তেমন হয় না।
@আদিল মাহমুদ,
বিপ্লব মনে হয় শ্রমিকদের উপর পুলিশি হামলার ব্যাপারে উদাসীনতার কথা বলছেন, শ্রমিকদের দুঃখ দারিদ্রের ব্যাপারে নয়। দ্বিতীয় ক্ষেত্রে মানুষ (মধ্যবিত্ত) উদাসীন নয়, প্রথমোক্ত ব্যাপারে উদাসীন ঠিকই। পুলিশের সহিংসতার ব্যাপারে উদাসীনতার কারণ (যা ভারতের বেলায় প্রযোজ্য নয়) হল বাংলাদেশের সহিংসতার কালচার। এখানে কথায় কথায় গাড়ি ভাংচুর, ফ্যাক্টরী ধ্বংস করা, রাস্তা অবরোধ করা, তাছাড়া সমাজে প্রতিনিয়ত চাপাতি রামদা দিয়ে মেরে টুকরা টুকরা করা, রগ কর্তন করা, গণধর্ষণ করা, এসব দেখে দেখে শুনে শুনে পুলিশের হামলাকে আর তেমন রক্ত গরম করা কোন সহিংসতা মনে হয় না। শ্রমিকদের মাত্রাতিরিক্ত ধ্বংসযজ্ঞের কারণে তাদের প্রতি ঔদাসীন্য সৃষ্টি হচ্ছে। আরে একটা ব্যাপারে আমার দ্বিমত আছে সেটা হল এই ঔদাসীন্যকে উগ্রপন্থীরা কাজে লাগাতে পারবে কি না। মোটেই অসম্ভব নয়। শুধু যে এই ঔদাসীন্যই মানুষকে মৌল্বাদীদের দিকে ঠেল দিতে পারে তাই নয়, এর চেয়ে বড় কারন হল প্রধান দুই দলের উভয়ের কার্যকলাপে মানুষের বিতৃষ্ণা। দুর্নীতিতে উভয়ের যা রেকর্ড, আর তাদের মধ্যে কুকুরের মত যে কামড়াকামড়ি তাতে একটা পর্যায় মানুষ ধর্মীয় দলের দিকে ঝুঁকে যেতেই পারে। তার উপরে এই দুই দলের আবার মৌলবাদীদের তোষন করা মৌলবাদীদের একটা বাড়তি বৈধতা দিচ্ছে। সব মিলে বিপ্লবের সঙ্গে সহমত যে একটা অশনি সংকের দেখা যাচ্ছে। এটা রুখতে একটাই পথ, সেটা হল প্রধান দুই দলের “জামাত ক্ষমতায় যাক, কিন্তু আমার বিপক্ষ দল যেন ক্ষমতায় না যাক” (দেশের নাক কেটে অন্যের যাত্রা ভংগ করা) এই মনোভাব ত্যাগ করতে হবে। দ্বিতীয়ত আ.লী. আর বিএনপির মধ্যে একটা আপোষের মনোভাবের জন্য (বিশেষ করে জামাত/মৌলবাদী দলদের দূরে রাখতে) আন্তরিক চেষ্টা শুরু করতে হবে। এরকম দু একটা ক্যামিও মুহূর্ত এসেছিল বাংলাদেশের রাজনৈতুক ইতিহাসে।
@বিপ্লব পাল,
আপনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি এই কারনে যে আপনি একটা নিদারুণ সত্য কথা অপ্রিয় হলেও বলেছেন। বাংলাদেশের মানুষ এই ব্যাপারে উদাসিন।ভারত বর্ষকে যতই না গালিগালাজ দেয় সবাই কিন্তু এ কথা অস্বীকার করার উপাই নেই যে তারা প্রত্যেকটা মানুষ,সব জনগন আলাদা ভাবে হলেও তাদের মাঝে যে জাতীয়তাবোধ আছে তার ছিঁটে ফোঁটাও যদি বাংলাদেশের মানুষের মাঝে থাকত তাহলে সত্যি আজ বাংলার মাটী সোনার মাটীতে রুপান্তরিত হত।
গার্মেন্টস শ্রমিকদের মোটামুটি সাধারন মানুষের কাছে যেন একটা বিচ্ছিন্ন ব্যাপার হয়ে গিয়েছে।
গত কালকের পত্রিকায় দেখুন কি নিদারুণ ভাবে শ্রমিক অবশ্যই গার্মেন্টস শ্রমিক। আগুন লেগে মারা গিয়েছে। কদিন এই খবর নিয়ে নাড়াচাড়া হবে। আবার যথারিতি কাগজের নীচে ধামা চাপা পড়ে যাবে।
আইন আছে প্রয়োগে অনীহা এই দেশেই সম্ভব। লজ্জা লাগে এই দেশ নাকি স্বাধীনতা সংগ্রাম করেছিল।
যদি বলা হয় ভারতের সাহায্যের কথা এখন অন্যায়াসে এরাই আমাদের মতন মানুষদের ভারতের দালাল বলে।দুঃক্ষ লাগে তখন। এখন আর দু;ক্ষ করিনা। এইটা এই দেশের মাটীর দোষ নাকী আমাদের নিজেদের দোষ জানিনা। তবে আপনাকে :guru: যে এমন একটা গুরুত্ত্বপুর্ণ খবর অসেচেতন জনগনের ভিত্তি নড়িয়ে দেবার জন্য যথেষ্ট। :rose2:
@আফরোজা আলম,
বাংলাদেশের লোকেদের জাতিয়তাবোধ ভারতের থেকে বেশীই আছে-কিন্ত এটা সম্পূর্ন ভূল পথে। আজকেও ফেসবুকে বাংলাদেশী বন্ধুরা ভরিয়ে দিল ১৬ই ডিসেম্বর দিয়ে-ভাল কথা। মুক্তির দিন। কিন্ত পেলাম না সেই ২৩ জন শ্রমিকের আত্মা। কেও প্রতিবাদ জানাল না শ্রমিক নেত্রী মিশার গ্রেফতারের বিরুদ্ধে বা মালিকদের গ্রেফতার করার জন্যে। চূড়ান্ত অসংবেদনশীল মননের পরিচয়। দেশ মানে কি মানচিত্র? এই হতভাগা লোক্গুলো নয়?
২৩ জন শ্রমিককে তালা বন্ধ করে পুড়িয়ে মারা হল!! মালিককে গ্রেফতার করার জন্যেও কেও কিছু লিখল না!
দেশের উন্নতি করতে গেলে দেশের বিমূর্ত ধারনা ছারতে হবে।
প্রথম আলো খবর দিয়েছিল। তবে তেমন গুরুত্ব দিয়ে নয়, বন্যা যেমন বলেছেন হাসিনা আপার ষড়যন্ত্র তত্ত্বকেই বড় করে হাইলাইট করেছে। তবে বন্যার দেওয়া লিংকে দেখুন সম্পাদকীয় লিখেছে, তাতে কিন্তু মালিক পক্ষকেই দায়ী করেছে পরিষ্কারভাবে, কোন কাল্পনিক ষড়যন্ত্র তত্ত্ব পয়দা করেনি।
আপনি আসলে আমাদের কালচারের সাথে সেভাবে পরিচিত নন। দূঃখের সাথে জানাচ্ছি যে এ ধরনের খবর আজকাল আর আমাদের মাঝে তেমন কোন আলোড়ন তৈরী করে না। আমি নিজেও পত্রিকার দেখেছিলাম, আর দশটি খবররে মতই চোখ হেডিং এ চোখ বুলিয়েই ছেড়ে দিয়েছিলাম, ভেতরের খবরও পড়ার তেমন আগ্রহ বোধ করিনি। আজ একজন ভারতীয়ের কথায় আসলেই এমন আচরনের জন্য লজ্জা পেলাম।
আমার ব্লগে নিয়মিত অংশ নিলে খবরের কাগজ আর পড়ার দরকার হয় না। বিস্ময়করভাবে সেখানেও গত কদিন এ নিয়ে কোন উত্তাপ তো দুরের কথা, কোন পোষ্টিংও মনে হয় হয়নি। হয়েছে শাহরুখের অনুষ্ঠান নিয়ে পক্ষে, বিপক্ষে, নিরপেক্ষ গরম আলোচনা। আমরা পুরো জাতিই মনে হয় অতি মাত্রায় আত্মকেন্দ্রিক ও উদাস হয়ে যাচ্ছি।
তবে আমাদের ব্লগে আলোচনা হলেও তাতে খুব খুশী হবার তেমন কিছু নেই। যথারীতি সেই আলোচনা রূপান্তরিত হবে বিএনপি বনাম আওয়ামী গালিগালাজে।
আমরা জাতিগতভাবেই ষড়যন্ত্র তত্ত্ব খুব পছন্দ করি। মনে হয় নিজেরা আজন্ম নানান ষড়যন্ত্রের সাথে প্রত্যক্ষ/পরোক্ষাভাবে জড়িত থাকি বলেই এই আজব মানসিকতা গড়ে উঠেছে। ধর্ম নিয়ে অপরের কথা পছন্দ না হলেই তাই কাফের নাসারার ষড়যন্ত্র, রাজনীতি নিয়ে ভিন্নমত হলে বিদেশী ষড়যন্ত্র…সরকারের কোন সমালোচনা হলে বিদেশী শত্রুর মদদে দেশকে অচল করার ষড়যন্ত্র…নেতা নেত্রীদের চোর বাটপাড় সন্তানদের প্রকাশ্য দূর্নীতির সমালোচনা হলে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র…
@আদিল মাহমুদ,
চমৎকার বলেছেন :yes:
বিপ্লব, তুমি মনে হয় প্রথমে ইপিজেড এবং পরে ঢাকায় এই সংঘর্ষের কথা বলছো। কই সমকালে তো কালকে বেশ বড় করেই ছাপিয়েছে খবরটা, আজকেও আপডেট দিয়েছে। তারা তাদের মত করেই ছাপিয়েছে খবরটা, ‘এক্কেবারে চেপে গেছে’ বলাটা কিন্তু ঠিক হবে না। প্রথম আলোও ছোট্ট করে দায়সারাভাবে খবরটা দিয়েছে তবে যথারীতি প্রধান খবর হিসেবে ছেপেছে হাসিনা ম্যডামের আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে দেওয়া শাসানীর সংগবাদটা।