আপনাদের সাথে মনোবিজ্ঞানের একটি ইন্টারেস্টিং ব্যাপার শেয়ার করি! কিছুক্ষণের জন্য আমার সাথে থাকুন। 🙂

মনোবিজ্ঞানে একটি টার্ম আছে “ব্যান্ডওয়াগন ইফেক্ট”। উদাহরণস্বরূপ, সমাজে যখন একটি ট্রেন্ড সেট হয় এবং অধিকাংশ মানুষ সেটা সমর্থন করে, তখন আপনিও সেই ট্রেন্ড ফলো করার জন্য পেটে ব্যাথা অনুভব করেন, এটাই ব্যান্ডওয়াগন ইফেক্টের মূল কথা। মেইনস্ট্রিম মিডিয়া এই ইফেক্ট অ্যাপ্লাই করেই, জনসাধারণকে মানসিকভাবে তাদের কোনো একটি উদ্দেশ্যের দাসে পরিণত করে, একদম লো গ্রেডের একটি ফিল্মকে জনপ্রিয় অথবা সাধারণ একজন চিন্তাশীলকে বিশাল বুদ্ধিজীবিতে পরিণত করতে পারে!😀

নিচের চিত্রটি লক্ষ্য করুন। খুব কঠিন কিছু নয়। এই চিত্রে অনেকগুলো সাদা বৃত্তের মাঝখানে দুটি কমলা রঙের বৃত্ত দেখা যাচ্ছে। এ দুটি বৃত্ত আকারে সমান কিন্তু এদের একটি আপনার কাছে বড় ও অন্যটি ছোট মনে হচ্ছে। এটাকে “Ebbinghaus illusion” বলা হয়। ( গুগলে সার্চ দিয়ে দেখে নিন, যদি ছবি প্রদর্শিত না হয় )

ফিগার: দুটি বৃত্ত একই আকারের হওয়ার পরও একটি বৃত্তকে ছোট ও অন্যটি বড় মনে হচ্ছে

প্রশ্ন হলো, কেন দুটি বৃত্ত একই আকারের হওয়ার পরও একটি বৃত্তকে ছোট ও অন্যটি বড় মনে হচ্ছে? উত্তর তার চারপাশের পরিবেশ। ছোট বৃত্তটির চারপাশ বড় বড় বৃত্ত ঘিরে রেখেছে, তাই তাকে ছোট মনে হচ্ছে। আর বড় বৃত্তটির চারপাশ ছোট ছোট বৃত্ত ঘিরে রেখেছে, তাই তাকে বড় মনে হচ্ছে!

আপনার চারপাশের বৃত্তই ডিফাইন করবে আপনি কে! আপনি ইন্টেলেকচুয়ালি যতই স্ম্যার্ট  হোন না কেন, আপনার চারপাশের বৃত্ত যদি আপনাকে ছোট করে দেখায়, সমাজ আপনাকে ছোটই মনে করবে। সমাজ আসলে ব্যক্তিকে দেখে না, দেখে তার চারপাশের বৃত্ত! আপনাকে একটি বড় প্লেটে খাবার দিলে, খাবার কম মনে হবে আর ছোট প্লেটে খাবার দিলে খাবার বেশি মনে হবে ও খুব সহজেই আপনার পেট ভরে যাবে, এটাই সাইকোলজি! 🙃

সমাজিক মনোবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে, সমাজের বিশাল একটি বৃত্ত যেই ধারণা সমর্থন করে, আমরা অবচেতন মনে সেটাকেই বড় মনে করি, যদিও সেটা আদৌ বড় কিছু নয় কিন্তু আমাদের ব্রেন সুস্পষ্টভাবে এই ষড়যন্ত্রে প্রতারিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, অতীতে সমাজ বলেছিল, মোটা ফিগারের নারী সুন্দর, তখন আমরা মোটা নারী পছন্দ করতাম। এখন সমাজ বলছে, চিকন ফিগারের নারী সুন্দর, আমরা এখন চিকন নারী পছন্দ করি। আপনার চারপাশের বৃত্তই নির্ধারণ করবে, কোনটা আপনি পছন্দ করবেন অথবা করবেন না। উদাহরণস্বরূপ, কিছুদিন পূর্বে একটা মেয়ে ওয়েডিং ড্রেস পরে সিগারেট হাতে সমাজকে প্রশ্ন করেছিল, সমাজ কী আমাকে গ্রহণ করতে প্রস্তুত?

হাজার হাজার মানুষ তাকে রেসপন্স করেছিল এবং একটি বিশাল বৃত্ত তৈরি হয়ে গিয়েছিল তার চারপাশে, আর আমরা সবাই এ-ঘটনাটিকে বড় করে দেখেছিলাম। আসলে এটাই ছিল তার প্রধান ইনটেনশন! সে সমাজের মানুষের একটি বিশেষ দুর্বলতা অথবা সংবেদনশীলতার জায়গায় আঘাত করে তার চারপাশে একটি বিশাল বৃত্ত তৈরি করে ফেলেছিল।ধর্মের মূল ক্ষমতা হলো এই বৃত্ত। তারা পলিটিক্যালি একটি বিশাল বৃত্ত পেয়েছে। আর নাস্তিকতার ক্রায়সিস হলো তারা আনকনসাসলি সে বৃত্তকে সমর্থন করছে, তাদের মধ্যে কগনেটিভ বায়াসড তৈরি হয়েছে। তারা ইন্টেলেকচুয়ালি নাস্তিক কিন্তু সাবকনসাসলি আস্তিক। কারণ তাদের চারপাশে পলিটিক্স বিশাল একটি বৃত্ত প্রদর্শন করছে, যেন তাদের মস্তিষ্কের সিস্টেম ১ (Reptile Brain), যেটি শর্ট-কাট সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য বিবর্তিত, সেটি বিভ্রান্ত হয়। পলিটিক্স ভালো করেই জানে, মানুষ সবসময় তার মস্তিষ্কের সিস্টেম ২ ( Homo Brain) ব্যবহার করবে না কারণ ইন্টেলেকচুয়ালি চিন্তা করা খুবই টাপ, এটা ব্যাপক সময়, শক্তি, সমর্থন ও অনুপ্রেরণার ব্যাপার। তার থেকে বরং মস্তিষ্ককে তার অটোপাইলটের ওপর ছেড়ে দেয়া উচিত! আর এভাবে আমরা সামাজিক বৃত্তের কাছে ব্রেনকে ছেড়ে দিয়ে, আমাদের আদর্শের জায়গা থেকে আনকনসাস হয়ে যাই!

অধিকাংশ নাস্তিক এখন জানেও না যে সমাজের মধ্যে কেন মুক্তচিন্তা ও বিজ্ঞানমনস্কতা নিয়ে উচ্চস্বরে কথা বলা প্রয়োজন। কারণ নাস্তিকতা এখন বিজ্ঞান থেকেও দূরে সরে গেছে। তারা আসলে মূর্খ সুখবাদী ও এক্সট্রিমিস্টে পরিণত হয়েছে। আন্দোলন ও বিপ্লব কেন প্রয়োজন? কেন সমাজে গণসচেতনতা প্রয়োজন? কেন হায়ার ইন্টেলেকচুয়ালিটি প্রাক্টিস করা প্রয়োজন? কেন কমন গ্রাউন্ড প্রয়োজন? কেন একসাথে হাত হাত রেখে কাজ করা প্রয়োজন, তারা সেটা ভুলে গেছে। তারা যে নাস্তিক এখন তাদের সেটা মনে করিয়ে দিতে হয় কারণ তাদের চারপাশে এক বিশাল বৃত্ত!