দিন দুয়েক ধরে বেহেশত শব্দটি বেশ আলোচিত হচ্ছে। বাংলাদেশের মন্ত্রীরাযে সব পারেন এমনকি পুরো দেশকেই এক জ্যান্ত বেহেশত বানিয়ে ফেলতে পারেন তার নজীর আমরা নিজ চোখে দেখতে পাচ্ছি। মন্ত্রীর অমৃত বচন নিয়ে নানা রকম ট্রল হচ্ছে আর এইসব ট্রলে যে প্রসঙ্গটি সবচে বেশি উল্লেখিত হয়েছে তা হল হুর প্রসঙ্গ। অনেকেই এই হুর নিয়ে তাদের আক্ষেপের কথা জানিয়েছেন। লিখেছেন বেহেশত নাহয় পেলাম তাহলে আমার অংশের হুর গেল কোথায়?
প্রশ্নটি অবশ্যই বিবেচনার দাবী রাখে। বেহেশত বানালেন বেহেশতের অন্যতম অনুসঙ্গটিকে সাথে দেবেন না তা কি করে হয়? বিশেষত হুর, যার জন্য বেশিরভাগ মুসলমান পুরুষ এক অতিজৈবিক ঘোরের মাঝে দিন কাটায়। হুরের কথা বলতে গিয়ে হুজুরদের মুখ দিয়ে লালা ঝরে। চোখ নেশাগ্রস্ত মানুষের মত চক চক করে। কদিন আগে এক জঙ্গির ভাইরাল হওয়া ছবি চোখে পড়েছে যে তার সমস্ত শরীর উন্মুক্ত রেখে কেবল নিম্নাঙ্গে প্রতিরক্ষা শিল্ড লাগিয়েছে, কারণ সেই ঘোর। শরীর মাথা মগজ অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ছাতু হয়ে যাক শুধু এই জিনিষটি যেন ঠিক থাকে। বাহাত্তরটি হুর সামাল দিতে হবে না ? জঙ্গিটির এই মনোবৃত্তি সকল ধর্মান্ধ মুসলমান পুরুষের মনেই কিন্তু সুপ্ত থাকে।
সে যাকগে, হুরের কথায় ফিরি। হুর দেখতে কেমন হবে ? এদের শরীর নাকি গ্লাসের মত ট্রান্সপারেন্ট। হুজুর মুখে ফেনা তুলে রসালো গলায় ওয়াজ করেন হুর যখন আঙ্গুরের রস পান করে তখন নাকি তা কীভাবে গলা দিয়ে নেমে নিচে যায় তা স্পষ্ট দেখা যায়। অর্থাৎ কোনো খাবার খেলেও সেই খাদ্যের প্যাচালো পথযাত্রা এবং তার গন্তব্য স্পষ্ট দৃশ্যমান হয়ে ওঠে। এবার আপনি ছবির মাছটির দিকে খেয়াল করুন। এটি এক ধরণের সামুদ্রিক মাছ যাদের শরীর এ রকম ট্রান্সপারেন্ট। শরীরের শিরা এবং ভেতরের কংকালটি স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। আমরা মনে করতে পারি হুর হবে এ রকমই। শিরা উপশিরা অস্থি কংকাল দেখা যাবে মগর তাদের আকর্ষণীয় শরীর মোবারক দেখা যাবেনা কারণ এটিযে কাঁচের মত স্বচ্ছ। এবার আপনি একটু ভাবুন। আপনি আমলদার মানুষ আপনার বেহেশত নিশ্চিত। আপনি মনের ফূর্তিতে গান গাইতে গাইতে ঢুকলেন সেই মনোরম বেহেশতে। আপনার মনে আদিম আগুন। বাহাত্তর শরীরের নেশাধরা উন্মাদনা। আপনার ফ্ল্যাটের দরজা খুলা মাত্রই দেখলেন একদল জীবন্ত কংকাল আপনাকে স্বাগত জানাতে এগিয়ে আসছে। তাদের শরীরের রক্তবাহী শিরা উপশিরা পাকস্থলি মূত্রনালী স্পষ্ট দৃশ্যমান। দৃশ্যটি আপনার কাছে অকল্পনীয় এবং ভয়ংকর দর্শন।  যে ফুরফুরা মেজাজ নিয়ে আপনি বেহেশতে ঢুকেছিলেন আপনার সেই ফুরফুরানি তখন শিকেয় উঠতে চলেছে। আপনার কামভাব উজান উঠে পাকস্থলীতে সেদ্ধ হয়ে গেছে। ভয়ে আতঙ্কে আপনি চিৎকার করে বলবেন- হে আল্লাহ, এই কংকাল আমি চাই না এদের আপনি ফিরিয়ে নিন।
আপনি বেহেশতি মানুষ, আপনার মনোবাসনা তাৎক্ষণিক পূর্ণ হল। বাহাত্তরটি জীবন্ত কংকাল আপনার সামনে থেকে অদৃশ্য হয়ে গেল। আপনি তখন মানসিকভাবে ভীষণ বিপর্যস্ত। ভাববেন কীসের নেশায় জীবনের অমূল্য সময়গুলিকে আপনি কাটিয়ে আসলেন। ভাবলেন এই মানসিক অবসাদ কাটানোর জন্য এবার একটু মদ্যপান করা প্রয়োজন। মদ খেয়েইতো মানুষ মনের কষ্ট ভুলতে চায়। আপনি চাওয়া মাত্রই সোনার গ্লাস ভরে উৎকৃষ্ট মদ্য শরাবন তহুরা নিয়ে এক সুবেশধারী গোলমান এসে হাজির হল। আপনি মনের দুঃখে ঢক ঢক করে কয়েক গ্লাশ মেরে দিলেন। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হলনা। একটুও নেশা হলনা আপনার। আপনার মানসিক অবস্থা তখন এতটাই বিপর্যস্ত যে আপনি গোলমানের গালে কষে এক চড় বসিয়ে দিলেন।
হারামজাদা, চাইলাম শরাব দিলে তুই শরবত।
গোলমান চড় খেয়ে মুখ কালো করে বলল- ওহে বেহেশতবাসী, আপনাকে উৎকৃষ্ট শরাবই দেয়া হয়েছে। শরাবন তহুরা। একেবারে ব্রান্ডেড জিনিষ।
আপনি আরও রেগে গেলেন। বললেন- এটা কেমন মদ যে  কয়েক গ্লাশ পেঠে ঢেলেও একফুটা নেশা হলনা ?
গোলমান বলল- স্যার, বেহেশতের মদে নেশা হয়না। এটা আপনার জানার কথা।
আপনার রাগ আরেক মাত্রা বাড়ল। চিৎকার করে বললেন- নেশাই যদি না হবে তবে এর নাম শরাব কেন দিল ? শরবতে রুয়াবজা দিল না কেন ? মানুষ মদ খায়ইতো নেশার জন্য।
গোলমান বলল- স্যার, এর ভেদ আমার জানার কথা নয় কেবল তিনিই জানেন।
আপনি মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়লেন। বেহেশতে একা একা কীভাবে আপনার অনন্ত সময় কাটবে সেই ভাবনায় আপনার পাগল হবার দশা। আপনার এই মানসিক সংকটকালে কিম্ভুত এলিয়েনের মত দেখতে একজন ফেরেশতা আপনার সামনে এসে দাঁড়াল। তার এই বিভৎস চেহারা দেখে আপনি আবারও ভয়ে চিৎকার করে উঠলেন। ফেরেশতা আপনাকে অভয় দিয়ে বলল- ভয় পাবেন না স্যার, আমি আপনার সাহায্যের জন্য এসেছি। বুঝতে পারছি হুর, শরাবন তহুরা এইসব কিছুই আপনাকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। আপনার মানসিক শান্তির জন্য আপনি বলুন এই মুহুর্তে আপনি কী কামনা করেন ?
ফেরেশতার অভয়বাণীতে আপনার ভয় কিছুটা দূর হয়েছে। আপনি বললেন- আপাতত  ভাল ব্র্যান্ডের একটু মদ দাও মনের অশান্তি দূর করি। কেরোর ড্রাই-জিন হলেও চলবে। আর ফার্মানেন্টলি আমার সঙ্গী হিসেবে ফিরিয়ে দাও আমার গেদীর মাকেই যাকে নিয়ে সুখে দুঃখে পৃথিবীতে জীবনের দিনগুলি কাটিয়েছি। বেহেশতের সুন্দরী হুরের গল্প শুনে শুনে পৃথিবীতে যাকে আমি প্রতিমুহুর্তে চরমভাবে অবজ্ঞা আর অপমানিতই করেছি।
ফেরেশতা কাচুমাচু করে বলল- এই দুটির কোনোটাই সাপ্লাই দেয়া সম্ভব নয় স্যার। এর কারণ দুনিয়ার কোনো ব্রান্ডের মদই এই বেহেশতে আমদানি করা হয় না। আর আপনার গেদির মা মাথায় হিজাব না লাগিয়ে মুক্তকেশে ঘুরে বেড়ানোর অপরাধে জাহান্নামের আগুনে জ্বলছেন।
আপনি হাউমাউ করে কেঁদে উঠলেন। যে গেদির মাকে দুনিয়াতে আপনি এক মুহুর্তের জন্যও শান্তি দেননি, পৃথিবীতেই যাকে দোজখের শাস্তি ভোগ করতে হয়েছে মৃত্যুর পরেও তাকে সেই দোজখেই জ্বলতে হচ্ছে। আপনি উদ্ভ্রান্তের মত চিৎকার চ্যাঁচামেচি শুরু করে দিলেন। এতে বেহেশতে শান্তির পরিবেশ বিঘ্নিত হল। ফেরেশতা বাধ্য হয়ে আপনার হাত পা বেঁধে মুখে স্কচ-টেপ লাগিয়ে নির্জন কক্ষে সোফার উপর শুইয়ে রেখে চলে গেল। আপনি তখন পৃথিবীর ফেলে আসা সেই সোনালী দিনগুলির ভেতর ডুবে গেলেন।
শেষকথা- যা ভাবার এখনই ভাবা উচিৎ। আসুন গেদির মাকেই হুর মনে করে ভালবাসতে থাকি। ক্ষুদ্র এ জীবনের দিনগুলিকেই আনন্দে উৎসবে রাঙিয়ে তুলি। ভাল কিছু করি যাতে মানুষের মাঝে বেঁচে থাকতে পারি। মরনোত্তর বেঁচে থাকার অনেক উপায় আছে। প্রয়োজন শুধু নির্বাচন এবং ইচ্ছার।
               বেহেশতের হুর যেমন হবে।