লিখেছেনঃ Razel Ahmed

সালমান রুশদী, নি:সন্দেহে অনেকের কাছে প্রিয় একজন লেখক এবং উনি আমার ও একজন প্রিয় লেখক। দু:খের বিষয় সালমান রুশদী আর কখনো এক চোখে দেখবেন না। একটিবার ভাবুন কত বড় বর্বরতা ঘটে গেছে উনার সাথে। ভাগ্য ভালো হয়ত উনি বেঁচে গেছেন। উনার এক হাতের সব নার্ভ কেটে দেয়ার জন্য যতটুকু আঘাত করা প্রয়োজন ততটুকু আঘাত করা হয়েছে। লিভারের একপাশে চাকুর কোপ ও লেগেছে।আপনি কী জানেন কোন ধর্মের অনুসারী এই ঘটনা ঘটিয়েছে? আপনাদের কাছে প্রশ্ন রেখে গেলাম।

এত বড় বর্বর হিংস্র ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরও সালমান বেঁচে গেছেন আর সেই বর্বরটা ধরা পড়েছে কারন সেই দেশটা বাংলাদেশ নয় আমেরিকা ছিলও। এইটা আপনাদের সোনার বাংলাদেশ হলে অভিজিৎ রায়ের মতো সালমান মরতেন, প্রশাসনের লোক দেখানো শুধু কিছু প্রেস ব্রিফ ই থাকত।

আপনার সোনার বাংলাদেশে সালমানকে কাফের বলে পাপের শাস্তি পেয়েছে বলে ভৎসর্না করতও আর বর্বর জংগীটাকে বীর বলে আখ্যায়িত করা হত। আমাদের অভিজিৎ রায় বেঁচে নেই কিন্তু সালমান সাহেব মরতে মরতে বেঁচে গেছেন। দুই চোখে মন ভরে উনি হয়ত পৃথিবী আর দেখবেন কিন্তু এক চোখে সুন্দর এই পৃথিবীর শান্তির ধর্মের অশান্তি উনি দেখেই যাবেন।

“মিডনাইট’স চিলড্রেন” সালমান রুশদীর একটা অসাধারন বই যেটা ভারতের স্বাধীনতা নিয়ে লেখা।বিংশ শতাব্দীর সেরা একটা বই ছিলও এটা। ১৯৮১ সালে এটি বুকার এওয়ার্ড পায়। এই বইটির লেখনী এতও প্রখর যে পড়ার সাথে সাথে আমি নিজেকে সেই বইয়ের মধ্যে খুঁজে পেতাম।কী নিখুঁত লেখনী।উনার “দ্যা স্যাটানিক ভার্সেস” বই নিয়ে শান্তির ধর্মের মানুষের প্রচন্ড জ্বালা ছিলও।হ্যা শান্তি প্রিয় মানুষ আপনাকে আগে জানতে হবে উনি একজন লেখক উনি কোনো মেশিনগান হাতে নেওয়া জংগি না। উনার কথার জবাব দিন আপনারা লেখার মাধ্যমে, বর্বর ভাবে হত্যা করে নয়। আর আপনি আপনার মুসলমানিত্ব জাহির করতে গিয়ে “সালমান রুশদীর উপর আক্রমন” নামের নিউজ পোর্টালের কমেন্টে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ ‘নবীরে গালি দিলে মারা উচিত’ বলে কমেন্ট করেন তাহলে আপনি একজন বর্বর মুসলমান লোক এবং নিশ্চিত একজন খুনি। আপনি রক্ত মাংসের শরীরের মানুষ এবং বিবেকহীন ও বটে।

হত্যার মধ্য দিয়ে কোনো কিছুকে যেমনি বেশিদিন টিকিয়ে রাখা যায় না, তদ্রুপ ধর্মকেও না। বহু শতক ধরে টিকে থাকা এই ধর্ম আর হয়ত বেশি দশকও টিকে থাকবে না আর সেটার জন্য দায়ী থাকবেন আপনাদের মতো তথাকথিত মুসলমানেরা যারা মনগড়া ফতোয়া দিয়ে মানুষ হত্যার বৈধতা দেন, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানার দায়ে লেখক হত্যার বৈধতা দেন।

আর কত রক্ত লাগবে এদের। আর কত সালমান রুশদীর রক্ত লাগবে এদের। আর কত অভিজিৎ,দ্বীপন,ওয়াশিকুর,রাজীব, অনন্তদের লাশ লাগবে এদের। আর কতবার এরা মত প্রকাশের মুখ খামচে ধরবে? আর কতবার এরা ধর্মানুভূতি আঘাতের মিথ্যা অভিযোগে মধ্যযুগীয় বর্বরতা চালাবে?