লিখেছেনঃ কাহ্ন জাতিস্মর

শিল্প সংস্কৃতির চর্চাকেন্দ্র হিসেবে মসজিদ আর ধর্মীয় সেন্টার করে দিচ্ছেন সরকার জনগণের টাকায়। দেশের সংবিধান তো শুধু একটি ধর্মের মানুষের জন্যই, নয়? এই জন্যই তো আমরা কাতারে কাতারে দাঁড়িয়ে অকাতরে প্রাণ দিয়েছিলাম বুলেটে বেয়োনেটে , নয়? হয় হয় হয় ! সেটারই বাস্তবায়ন চলছে বঙ্গবন্ধু ও লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত ধর্মনিরিপেক্ষ বাংলাদেশে। জয় বাংলা !

সেদিন দেখলাম এক হুজুর পরীমনির লুঙ্গিড্যান্স আর তার নানাকে নিয়ে অশ্লীল সব বয়ান করে যাচ্ছে। আমার প্রশ্ন, শালা হুজুর, তুমি পরীমনির ওই অশ্লীল ভিডিওটি দেখলে কেন? তাও এতো গভীর মনোযোগ দিয়ে যে  তার সব গোপন অঙ্গ পর্যন্ত দেখতে পারলে? তোমার ধর্ম এখানে কি তোমার চোখ বন্ধ রাখতে বলেনি? বদমাইশ কোনহান্‌কার !

বাংলাদেশে সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড থেমে যাবার কারণেই এখন মঞ্চ দখলে চলে গেছে জ্বালাময়ী, সাম্প্রদায়িক ঘৃণা ছড়ানো তথাকথিত অজ্ঞ, শয়তান, ভণ্ড, অমানুষ কিছু হুজুরদের কাছে। এখন সবচেয়ে বড় বিনোদনের জায়গা হয়েছে হুজুরদের ওয়াজ মাহফিল। দেশের অজ্ঞ, মূর্খ, কম শিক্ষিত ধর্মপ্রাণ মানুষ এখন মোবাইল ফোনে  নিয়মিত তাদের বয়ান শোনেন নেকির আশায়। এই দায় বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে যেমন নিতে হবে তেমনি নিতে হবে সরকারকেও।

ওদের কথায় ধরে ধরে জেলে পাঠিয়েছেন নিরীহ বাউলদের। যারা ক্ষমতায় তাদের কেউ লজ্জাও পান নি এই কাজে? কী করে পারলেন?

টিভি নাটকে এখন প্রিয় নায়ক জাহিদ হাসানকে দেখা যায় বান্না নামের চরিত্র নিয়ে হাসান আল্‌ বান্নার গুণগান করতে যে কি না হিটলারের মানসসঙ্গী শুধু নয় তার একটি বইও ‘আমার জেহাদ’ নামে আরবিতে অনুবাদ করেছিল । আমাদের সকল অর্জনই ওদের দখলে চলে যাচ্ছে।

কথা বললেই তো বলবেন বেশি কথা বলি ! বলিহারি ম্যাও ! এই পর্যন্ত ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানোর কারণে কোন একটা হুজুরকে তথ্য প্রযুক্তি আইনে ধরে সাজা দেয়া কি হয়েছে? একটিও না। ফলে এরা এখনো প্রকাশে আঙ্গুল তুলে মুখ ভেংচি দিয়ে বলছে

‘ আমরা সেই মুসলমান, আমাদের নবী কাবাগৃহের মূর্তি ভেঙেছেন।  মূর্তি ভাঙ্গার জন্যই আমাদের জন্ম হয়েছে।’

সরকার এই আইনটিতে সফল প্রয়োগ দেখিয়েছে ঝুমন দাস সহ বেশ ক’জন সংখ্যালঘু মানুষ আর কিছু মুক্তমনা মানুষের উপর। ফলে ওরা আরো আস্কারা পেয়ে পেয়ে এখন দানবীয় উল্লাসে মাঠে রয়েছে। লাগাতার সহিংসতা করছে। প্রশাসন ক’দিন নির্জীবের মতো ঘুমিয়েছে। কোন একটা বদ মওলানাকে ধরেছেন এসব বিদ্বেষ ছড়ানোর জন্য? যে দু একজনকে ধরেছেন সেগুলো রাজনৈতিক বিবেচনায়। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের জন্য একজনকেও ধরেছেন দেখান?

বৃটিশ পার্লামেন্ট মিজানুর রহমান আজহারীকে বৃটেনে যাবার প্লেনে উঠতেই দেয় নি ধর্মীয় বিদ্বেষ ছড়ানোর কারণে আর আমরা তাকে হেলিকপ্টারে চড়িয়ে নিয়ে গেছি মাঠে ময়দানে। দুঃখ রাখার জায়গা নেই।

বন্ধুরা মনে কষ্ট নেবেন না। আমার পিতৃকুল, মাতৃকুল দুই কুলেই মুক্তিযোদ্ধারা আছেন। যুদ্ধের সময় আমাদের ঘর বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছিলো, লুটপাট করে সব কিছু নিয়ে গিয়েছিলো। প্রচুর ক্ষতি সয়েছি আমরা।

দুঃখ শুধু একটাই , স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছরে এসে মুক্তিযুদ্ধের আগের সেই পাকিস্তানি পূর্ব বাংলার সাম্প্রদায়িক রাজনীতি চর্চার নগ্ন রূপটি দেখতে হল। দেশের দিকে তাকালে যে কোন পরিসংখ্যানেই একটি সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের চেহারা ভেসে ওঠে। যেন আমরা সেই আইয়ামে জাহেলিয়াতের যুগের প্রবেশ মুখে দাঁড়িয়ে আছি।

সংবিধান থেকে ধর্মীয় ছাপ্পর সরাতে হবে নইলে শহীদের রক্তের সাথে বেঈমানি করবেন সবাই। আমাদের স্বাধীনতায় সবচে বেশি ত্যাগ রয়েছে হিন্দুদের–এই কথাটা ভুলে গেলেন কি করে মিথ্যুক সেই মওলানা ?

মিথ্যুক মোল্লা সরাসরি অস্বীকার কি করে করে? স্বর চড়িয়ে বলে এই দেশ স্বাধীন করতে কোন হিন্দু রক্ত দেয় নাই । এখনো তাকে ধরলেন না কেন? ওকে তো শূলে চড়ানোর কথা ! এর’চে বড় অসত্য, ইতিহাস বিকৃতি আছে আর? দেশদ্রোহীতা আর আছে?

কোথায় আপনাদের সেই মহান তথ্য প্রযুক্তি আইন? ওটা বোধ হয় এর পর আমাদের দিকেই ধেয়ে আসবে। কে জানে ! বড় ভয়ে ভয়ে লিখি আজকাল ! শহীদের রক্ত কিন্তু অভিসম্পাত দেবে। আমার  এক প্রিয় কবি  প্রচণ্ড কষ্ট নিয়ে অভিশাপ দিয়ে ফেলেছেন যারা এই অবস্থার জন্য দায়ী তাদের সবাইকে।