রুয়ান্ডাতে সংঘটিত গণহত্যার ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রামঃ গণহত্যা মামলার প্রসিকিউটর চার্লস এদোগান ফিলিপস এর সাক্ষাৎকার।
১৯৯৪ সালে রুয়ান্ডার গণহত্যার অনেক পরে বিশ্ববাসীর নজরে আসে ১০ লাখ মানুষ হত্যার ইতিহাস। ভাগ্যহত তুতসি সম্প্রদায়ের মানুষদের জন্য ন্যায়বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত করার মহান গুরুদায়িত্ব অর্পিত হয় প্রসিকিউটর চার্লস এদোগান ফিলিপসের উপর। প্রসিকিউটর চার্লস এদোগান ফিলিপস তার নেতৃত্বে ‘রুয়ান্ডার গণহত্যার বিচারের জন্য গঠিত জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত’ ১২ বছর ধরে চলমান শুনানী ও বিচার প্রক্রিয়ায় গণহত্যার সময়ের এত এত অমানবিক নৃশংসতা কীভাবে সহ্য করলেন এবং কী মানবিক শিক্ষা পেলেন সে বিষয়ে তিনি এই সাক্ষাৎকারে বিস্তারিত তুলে ধরেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন ওয়ারউইক ল স্কুলে পিএইচডি গবেষক মহম্মদ সঞ্জীব হোসাইন।
সঞ্জীব হোসাইনঃ ২০০১ সালে ৩৫ বছর বয়সে আপনি ‘রুয়ান্ডার গণহত্যার বিচারের জন্য গঠিত জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিটিআর)’ এর সিনিয়র এটর্নি হিসেবে নিয়োগ পান। আন্তর্জাতিক আদালত আপনার উপর বিশ্বাস করেই এই গুরু দ্বায়িত্ব অর্পণ করে যাতে আপনি ভুক্তভোগীদের ন্যায়বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে পারেন। কিন্তু গণহত্যা চলাকালীন নৃশংসতার প্রমাণ আর আলামত দেখে আপনি কি কখনো আবেগাক্রান্ত হয়ে প্রসিকিউটরের দায়িত্ব ত্যাগ করতে চেয়েছিলেন?
প্রসিকিউটর চার্লস এদোগান ফিলিপসঃ হ্যাঁ, আমি কখনো কখনো প্রসিকিউটরের দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমি প্রসিকিউটর হিসেবে সচেতন থেকে ভুক্তভোগীদের সাথে মিশেছি, প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে কথা বলে নিজেই নিজেকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি যারা বাস্তবিক অর্থেই সর্বহারা, গণহত্যায় নিহত হয়েছে পরিবারের সব সদস্য তখন তাদের পাশে আমার থাকাটা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। আমার মানবিকবোধ আমাকে এই কাজের ইস্তফা দেয়ার জন্য তাগিদ দিয়েছিল। পাহাড়সম কাজের চাপ আমার উপর চাপিয়ে দিয়েছিল ক্লান্তির ভার, কিন্তু গণহত্যায় নিহতদের উপর অমানবিক অপরাধ আমাকে কাজ চালিয়ে যেতে সাহায্য করেছিল। প্রতিবার আমি যখন ফিরে যেতাম রুয়ান্ডার নৈসর্গিক প্রকৃতির কাছে আর তখন আমি গণহত্যার প্রত্যক্ষদর্শীদের সাথে দেখা করতাম এবং তারা তথ্যপ্রমাণ দিয়ে আদালতে গণহত্যার মামলার বিচার কাজে আমাকে সাহায্য করত। ভুক্তভোগী মানুষদের স্বতঃস্ফুর্ত সাহায্যের মনোভাব আমাকে বিচারের কাজে অনুপ্রাণিত করেছিল। আপনি হয়ত জানেন, ‘রুয়ান্ডার গণহত্যার বিচারের জন্য গঠিত জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিটিআর)’ এর সীমাবদ্ধতা হলো, যেখানে অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল সেখান থেকে অনেক দূরে বিচারকার্য সমাধা হচ্ছে। মামলার অনেক সাক্ষীকে সুদূর তানজানিয়া থেকে বিমানে করে উড়ে এসে আদালতে সাক্ষ্য দিতে হয়েছে। তারা আবার রুয়ান্ডাতে ফিরে গেছে এবং তাদেরকে পুনরায় জিজ্ঞাসাবাদের সুযোগ ছিল না। দৈবাৎ যদি কখনো সাক্ষীদের সাথে আমার দেখা হয়ে যেত তখন তারা আমাকে জিজ্ঞেস করতো, অভিযুক্তদের কী অবস্থা? তাদের কি সাজা হয়েছে? দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর তারা কয় বছরের সাজা পেল? ২৫ বছরের জেল? ওহহ, তাহলে তো ভালোই। তাদের এরকম অভুতপূর্ব সাড়া দেখে কাজে আগ্রহ এবং এগিয়ে যাওয়ার শক্তি পেতাম।
সঞ্জীব হোসাইনঃ রুয়ান্ডার নৃশংস গণহত্যার ঘটনা মানুষের মানবিক স্বভাব সম্পর্কে কী বার্তা দেয়? এমন জঘন্য হত্যাযজ্ঞের কাহিনীর আদ্যপান্ত জেনে কীভাবে নিজেকে সামলে নিলেন এবং মানসিক বৈকল্য থেকে রক্ষা পেলেন?
প্রসিকিউটর চার্লস এদোগান ফিলিপসঃ মানসিক ক্ষতি থেকে রক্ষা পেয়ে গেছি একথা আমি এখনি নিশ্চিতভাবে বলতে পারছি না। রুয়ান্ডার ঘটনা পরিষ্কারভাবেই মানব ইতিহাসের এক কলঙ্কজনক অমানবিক উদাহরণ। ১২ বছরে আমি ১২টা মামলার বিচারের কার্য সম্পন্ন করেছি এবং প্রতিটি শুনানির শুরুতে আমাকে উদ্বোধনী বক্তব্য উপস্থাপন করতে হতো। আমার মনে আছে, ২০০১ সালে রুয়ান্ডার কিবুয়ে এলাকার এক চার্চের পালক এলিজাফান এনটাকিরুটিমানার বিরুদ্ধে গঠিত যৌথ বিচারাদালতে শুনানির শুরুতে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে আমি বলেছিলাম, “একটা মানুষের পক্ষে এত ক্ষোভ কীভাবে পুষে রাখা সম্ভব? একটা মানুষ চাপাতি হাতে সকালে ঘুম থেকে উঠল, নাস্তা করেই মানুষ কোপাতে থাকল সন্ধ্যা পর্যন্ত এবং এভাবে সে কোন বিরতি ছাড়াই ১০০ দিন ধরে মানুষ হত্যা করতে লাগল। তার মনে কি কখনো প্রশ্ন জাগে না, সে কী করছে?” আমার অবাক লাগে, মানুষ কী কারণে দীর্ঘদিন ক্ষোভ জিইয়ে রাখে? এর পিছনে কারণ কী? এটা কি ঘৃণা? এটা কারো উস্কানিতে ঘটে? আমাদের জানতে হবে কী কারণে মানুষ মানুষকে হত্যা করতে দ্বিধাবোধ করে না। অনেকের কাছ থেকে অনেক উত্তর পেয়েছিলাম এবং যাদের অনেকেই বিবেকের তাড়নায় দগ্ধ হয়ে অনুশোচনা করে দোষ স্বীকার করেছিল এবং ঘটনার সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িতরা সাক্ষ্য দিতে এসেছিল। দোষীরা বলেছিল, জাতিগত সংখ্যাগুরুদের প্রচারনায় তারা এতটাই মন্ত্রমুগ্ধ ছিল যে তাদের কাছে তখন মানুষ হত্যাকেই মনে হয়েছিল সঠিক কাজ। কীভাবে মানুষ তার প্রতিবেশীকে খুন করতে পারে যার সাথে এতদিন বাস করছিল এবং মনে করেছিল সে সঠিক কাজটিই করেছে? রুয়ান্ডার নাগরিকদেরকে সরাসরি গণহত্যায় অংশ নিতে কিসের প্ররোচনা কাজ করেছিল?
সঞ্জীব হোসাইনঃ গণহত্যার তথ্য, বিচার প্রক্রিয়া আপনার ব্যক্তিত্বের উপর কেমন প্রভাব ফেলেছিল?
প্রসিকিউটর চার্লস এদোগান ফিলিপসঃ যেকেউ যদি রুয়ান্ডার চার্চে যায় যেখানে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে এবং দেখতে পায় যেখানে সেখানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পুরুষ, নারী এবং শিশুদের মৃতদেহ তবে সে বেদনার আর্তিতে আঁতকে উঠবে। গির্জার বেদীতে কেউ যদি শত শত মৃতদেহের স্তুপ ছড়িয়ে থাকতে দেখে তবে যে কোন মানুষ সেই দৃশ্য কোনদিন ভুলতে পারবে না। রুয়ান্ডাতে ঘটে যাওয়া মানুষের সৃষ্ট এই ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞে মানুষের প্রতি মানুষের বিশ্বাস ভেঙে পড়েছিল। বাবা-মা তাদের সন্তানের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে, চিকিৎসক রোগীকে হত্যা করেছে, গির্জার পিতা ও পালক গির্জার ভিতরেই গির্জার সদস্য ঈশ্বর অন্ত প্রাণকে হত্যা করেছে। এখানে অবাক হওয়ার কিছু নেই অন্য যেকোন স্থানের থেকে গির্জার মধ্যেই রুয়ান্ডার মানুষ অধিক গণহত্যার শিকার হয়েছে। গির্জা সবসময় ধর্মের বাণী গলার সবচেয়ে উঁচু পর্দায় প্রচার করেছে সেতুবন্ধের গান অথচ গণহত্যা থেকে রক্ষা পাওয়া অনেকে সাক্ষ্য দিতে এসে বলেছে গণহত্যা সংঘটিত হয়েছে গির্জার প্রত্যক্ষ নির্দেশে। গির্জার পালকেরা সেই আদেশ পালন করেছে নির্দ্বিধায় এবং একবার চিন্তাও করে দেখেনি কারা হত্যার আদেশ দিয়েছে এবং তারা কতটা খারাপ এবং কেন হত্যা করছে। যিশু খ্রিস্টের অহিংসার বাণী প্রচারক গির্জার বিশাল সংখ্যক পুরোহিত এবং পালক গণহত্যায় প্রত্যক্ষভাবে মদদ দিয়েছে। তারা বিশ্বাসঘাতকতা করে হামলাকারীদের কাছে বলে দিয়েছে কোথায় লুকিয়ে আছে তাদের তুতসি সহকর্মী এবং উদ্বাস্তু। যারা মৃত্যুর ভয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছিল তাদেরকে নিরাপদ আশ্রয় দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। গির্জার অনেক সদস্যই তুতসি সম্প্রদায়ের গণহত্যায় সরাসরি জড়িত ছিল এবং গির্জায় ভাঙচুর করে। গণহত্যার সময়ে আহত এবং বেঁচে যাওয়া মানুষেরা সাক্ষ্য দেয়ার সময় তাদের গভীর মর্মবেদনা এবং হতবুদ্ধি নিয়ে আদালতকে জানায় যাদেরকে তারা ‘ভালো খ্রিস্টান’ হিসেবে জানত এবং বিশ্বাস করত তারাই নিরীহ মানুষেদের হত্যা করেছে।
সমবেত হয়ে গণহত্যার বিপরীতে অবস্থান নিয়ে গণহত্যা প্রতিরোধ করতে না পারা রুয়ান্ডার গির্জার বড় ব্যর্থতা এবং গির্জার ধর্ম প্রচারকদের বিরাট একটা অংশ গণহত্যায় সরাসরি অংশগ্রহণ এবং ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালানো সবচেয়ে বিরক্তিকর ব্যাপার। আমি স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছি গির্জার পাদ্রীদের এহেন দুষ্কর্মে জড়িয়ে পড়ার কারণে আমার খ্রিস্টীয় ধর্মবিশ্বাস প্রশ্নের সম্মুখীন। বিচার প্রক্রিয়ার কিছু বছর পরে আমি বুঝতে পারছিলাম আমি হয়ত মানসিক বা আবেগের জায়গায় বিপর্যস্ত হয়ে গেছি। কিন্তু তখন আমার এসব বিষয় নিয়ে মাথা ঘামানোর মত সময় ছিল না। আমি শুধু দৃঢ় পদক্ষেপে একের পর এক বিচার প্রক্রিয়ার কাজ করে যাচ্ছিলাম। কিন্তু কিছু মামলার ক্ষেত্রে আশঙ্কা দেখা দিয়েছিল কারণ হুতু সম্প্রদায়ের কিছু অপরাধী কয়েকবছর পর নির্বাসন থেকে রুয়ান্ডায় ফেরত এসেছে। দেশে ফিরেই তারা জোরালোভাবে ঘোষণা দিতে লাগল, “যদি আমি দেশে ফিরে নাও যেতে পারি, তবুও আমার সন্তান ফিরে যাবে এবং রুয়ান্ডা দখল করে নেবে। নির্বাসন থেকে ফিরে হুতুদের তর্জন গর্জন শুনে আমি আতংকিত ছিলাম কারণ, আমি ভাবছিলাম এতবছর পরেও যদি এরকম সহিংস হুমকি চলতে থাকে তাহলে কীভাবে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে? মানুষের স্নায়ু এখনো কেন এত বিক্ষুব্ধ?” হুতু সম্প্রদায়ের মানুষ যখন মুখ ফুটে প্রথম বাক্যটা উচ্চারন করছে, “তারা সেইদিনের জন্য অপেক্ষা করতে পারছে না, কবে তারা দেশে ফিরবে এবং প্রতিশোধ নিবে তখন ভয়াবহ আতংক আমাকে গ্রাস করেছিল।
সঞ্জীব হোসাইনঃ আপনাকে গণহত্যায় বেঁচে যাওয়া মানুষদের সাথে কথা বলে তাদের উপর ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক কাহিনী শুনতে হয়েছিল। কীভাবে ব্যক্তি মানুষ এবং পেশাগত দায়িত্বের মধ্যে দূরত্ব রক্ষা করতে পারলেন?
প্রসিকিউটর চার্লস এদোগান ফিলিপসঃ হুম, এরকম একটা সমস্যার মুখে আমি একবার পড়েছিলাম। একবার এক নারী আদালতের কাছে সাক্ষ্য দেয় যে, তিনি ছয়জন নারীকে ধর্ষিত হতে দেখেছেন, গণহত্যার সময় যাদের সাথে তিনি নিজেও লুকিয়ে ছিলেন। নারীরা ধর্ষিত হলে বা যৌন হয়রানির শিকার হলে সাধারণত ‘নীরবতার সংস্কৃতি’ গ্রহণ করে। গণহত্যার প্রসিকিউটর হিসেবে নীরবতা ভেঙে নারীদের কাছ থেকে তাদের যৌন হয়রানির সাক্ষ্যগ্রহণ করা আমার জন্য অন্যতম চ্যালেঞ্জ ছিল। সাংস্কৃতিকভাবেই আফ্রিকার নারীরা ধর্ষণ বা অন্য কোন ধরণের যৌন হয়রানির কথা আলোচনা করতে অনীহা প্রকাশ করে। ধর্ষণের স্বীকার হয়েও ভুক্তভোগী যখন নিজের মুখে ধর্ষণের কথা অস্বীকার করে এবং এটাই সমাজের প্রচলিত প্রথা তখন সেটা গভীর বেদনার। এরকম অনেক নারীর সাথে আমার কথা হয়েছে যারা গণহত্যার হাত থেকে কোনক্রমে বেঁচে গেলেও ধর্ষণের স্বীকার হয়েছে কিন্তু আদালতের কাছে স্বীকারোক্তি দিতে অস্বীকৃতি জানায়। কারণ ধর্ষণের শিকার হয়েছে এই কথা জানাজানি হয়ে গেলে তারা সামাজিকভাবে নিগৃহীত হবে, সমাজের চোখে তারা নিন্দনীয় হয়ে পড়বে এবং তাদের স্বামী বা পরিবার তাদের উপর যৌন হয়রানির কথা যদি জানতে পারে তাহলে তারা পরিবার থেকে পরিত্যক্তও হয়ে যেতে পারেন।
২০০৪ সালে আমার পরিচালনায় রুয়ান্ডার গণহত্যার বিচারের জন্য প্রতিষ্ঠিত জাতিসংঘের আদালতের সামনে ক্রমিক ধর্ষক মিকাইলি মুহিমানার এক দৃষ্টান্তমূলক বিচারের শুনানিতে এক নারী প্রত্যক্ষদর্শী ধারাবাহিকভাবে পুঙ্খানুপুঙ্খ সাক্ষ্য দেন। তিনি বর্ণনা করেন, কীভাবে কিছু তুতসি নারী হাসপাতালের ভিতরে নিরাপদ আশ্রয় চেয়ে আর্তনাদ করছিলেন। কিন্তু তারা নিরাপত্তার বদলে নির্মম ধর্ষণের শিকার হন। ধর্ষণের পরে তাদেরকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শী এই নারী বেঁচে গেছিলেন সৌভাগ্যক্রমে কারণ তিনি রক্তে ভেজা অনেকগুলো মৃতদেহের মধ্যে মরার ভান করে পড়েছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীদের সংক্ষিপ্ত তালিকা তৈরি করার আগে আমি তার সাথে ব্যক্তিগতভাবে দেখা করতে চাইলাম এবং আমার কাছে খটকা লাগছিল এমনকিছু অস্পষ্ট বিষয়ে কথা বলতে চেয়েছিলাম। সেই তুতসি নারীকে আইনি সহায়তাদানকারী ছিলেন আমার কিনিয়ারুয়ান্ডা ভাষার দোভাষী। তুতসি নারীর ধর্ষণ থেকে রক্ষা পাওয়া নিয়ে তিনিও আমার মত কিছুটা দোলাচলে ছিলেন। আমি দোভাষীর মাধ্যমে তুতসি নারীকে জিজ্ঞেস করলাম, “বুঝলাম আপনি মরার ভান করে পড়ে থেকে প্রাণে বেঁচে গেলেন কিন্তু মিকাইলি মুহিমানার মত ধর্ষক এবং তাদের সহযোগীদের হাত থেকে কীভাবে ধর্ষণ থেকে রেহাই পেলেন?” আমার প্রশ্নের উত্তরে তিনি যা বললেন, তাতে আমরা বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। তিনি বললেন, “আমি নিজেও ধর্ষণের শিকার কিন্তু আমার সাক্ষ্য বিবৃতিতে সেটা উল্লেখ করিনি। কারণ, যারা আমার তদন্তের সাক্ষ্য নিয়েছিলেন তারা সবাই ছিলেন পুরুষ কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টা তিনি এড়িয়ে গিয়েছিলেন সেটা হলো, যে তাকে ধর্ষণ করেছে তাকেই তিনি পরে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছেন এবং গণহত্যায় তার নিজের পুরো পরিবার নিহত হয়েছে।
আমি তাকে নিশ্চয়তা দিলাম, আদালতের কাছে তার দেয়া জবানবন্দী তার স্বামী বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন, আগে বা পরে কোনদিন জানতে পারবে না। তুতসি নারীটি তখন আদালতের কাছে তার জবানবন্দী সংশোধন করতে রাজি হন। তার জবানবন্দী বিচারপ্রক্রিয়ার জন্য খুব দরকার ছিল কিন্তু তাকে দেয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে আমি অপারগতা প্রকাশ করলাম। তাকে দেয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করার মানে হলো ভবিষ্যতে আফ্রিকান কোন নারী সামাজিক কলংকের ভয়ে ধর্ষণের মত ক্ষমার অযোগ্য অপরাধ ভুলে ধর্ষকের সাথে জোড়াতালি দিয়ে পুনরায় জীবন সাজানোর স্বপ্ন দেখবে। এরকম দায়ভার আমি আমার কাঁধে নিতে অপারগ এবং তখনই আমি বুঝতে পারলাম আমারই চোখের সামনে দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়ে গেছে প্রসিকিউটরের দায়িত্ব থেকেও মানবিকতা অনেক উর্ধে।
সঞ্জীব হোসাইনঃ জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিটিআর) প্রসিকিউটরের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে কীভাবে ব্যক্তিগত জীবন আর পেশাগত জীবনের মাঝে সমন্বয় করলেন?
প্রসিকিউটর চার্লস এদোগান ফিলিপসঃ অনেক কষ্টসাধ্য কাজ, বিশেষত কেউ যদি সবে তার নিজের পারিবারিক জীবন শুরু করে। এটা জানা খুব দরকার কখন বিচারিক কাজে বিরতি দিয়ে নিজের পছন্দের কোন কাজের দিকে একটু নজর দেয়া যায়। সামনের বাঁধা বিপত্তিকে সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকা এবং সঠিক সময়ে সঠিক কাজকরা। কারণ যেকোন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের কাজ অত্যন্ত দীর্ঘমেয়াদী এবং ক্ষেত্রবিশেষে কয়েক বছরে লেগে যেতে পারে। প্রত্যক্ষদর্শীর সংখ্যা অনেক, গড়ে প্রতিটি মামলার জন্য ২০ থেকে ২৫ জন এবং সর্বোচ্চ ৯০ জন সাক্ষী আছে কিছু মামলার ক্ষেত্রে। একই সাথে একজন প্রসিকিউটরকে বিশাল পরিমাণ তথ্য প্রমাণের পাহাড় নিয়ে কাজ করতে হয়। সুতরাং একজন প্রসিকিউটর যখন মামলার শুনানি করছেন না তখনও কিন্তু তিনি হয়ত মামলার আদ্যপান্ত পড়ে দেখছেন অথবা তথ্য প্রমাণের জন্য আদালতে উপস্থাপিত ছবি দেখছেন। যখন প্রসিকিউটর প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীর জবানবন্দী শোনেন তখন তিনিও নিজেও ঘটনা প্রত্যক্ষ করেন সুতরাং ক্ষতটা তখনো দগদগে ঘা। তিনি দেখতে পান কারো কপালের উপর চাপাতির কোপ নেমে আসছে, কেটে ফালি ফালি হয়ে যাচ্ছে, সেখান থেকে ফিনকি দিয়ে বেরোচ্ছে রক্ত। তিনি দেখতে পান কেউ হারিয়েছে অঙ্গপ্রত্যঙ্গ এবং এগুলো নিয়েই তাকে কাজ করতে হয়। একজন প্রসিকিউটর শুধু মামুলি হত্যার গল্প শুনছেন না, তিনি বাস্তবিক ক্ষত দেখতে পাচ্ছেন এবং দিনশেষে তিনি বাস্তবিক বোধশূন্য হয়ে পড়েন।
আমি ৩১ বছর বয়সে আন্তর্জাতিক আদালতের প্রসিকিউটর হই এবং তার মাত্র ১৮ মাস আগে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হই এবং তখন আমার স্ত্রী অল্প বয়সী তরুণী। আমার কাজের ব্যস্ততার মধ্যেই বেড়ে উঠতে লাগল আমার ছেলেমেয়েরা। আন্তর্জাতিক বিচারাদালতের কাজ যখন শুরু করি তখন আমার প্রথম পুত্র সন্তানের বয়স সবে ছয় মাস এবং বিচার চলাকালীন সময়ের মধ্যেই আমার আরও দুইটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। কাজের শেষে সময়মত আপনাকে বাড়ি ফিরতে হবে এবং আপনাকে মনে রাখতে হবে, বাড়িতে আপনার আদরের ছেলেমেয়েরা আছে। অন্যদিকে আপনি হয়ত অপরাধবোধে ভুগতে পারেন যে, আপনি এত সুন্দর পরিচ্ছন্ন পোশাকে পরিপাটি হয়ে আছেন, আপনার সন্তানদের চারিদিকে নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার বলয় কিন্তু আপনি এই মাত্র যে নারীর সাথে কথা বলে এলেন, সে হয়ত তার নিজের সন্তানদের রক্ষা করতে পারে নি। এমনকি তার নিজের কোন দোষও ছিল না। ভুক্তভোগী সেই নারীর আবেগ আপনার মধ্যে সঞ্চারিত হয়ে যেতে পারে এবং সেখানে অপরাধবোধ, কখনো রাগ বা ক্ষোভ আপনাকে আলোড়িত করতে পারে কিন্তু আপনাকে লক্ষ্যে অবিচল থাকতে হবে এবং বিচার কাজ সমাধা করতে হবে।
সঞ্জীব হোসাইনঃ বিচার প্রক্রিয়ার শেষে আপনাকে রুয়ান্ডান প্যাট্রিয়টিক ফ্রন্টের (আরপিএফ) মুখোমুখি হতে হবে। আপনার কী মনে করেন, হিউম্যান রাইট ওয়াচের একটা প্রতিবেদনে দেখা যায় তারা গণযুদ্ধ চলাকালীন অপরাধ এবং মানবতার বিরুদ্ধে সংঘটিত অপরাধকে বিচারের আনতে অনীহা প্রকাশ করেছে? আর এখানে কি আরপিএফ ‘রুয়ান্ডার গণহত্যার বিচারের জন্য গঠিত জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিটিআর)’ অন্যতম দুর্বলতা?
প্রসিকিউটর চার্লস এদোগান ফিলিপসঃ অবশ্যই আরপিএফ’এর বিরুদ্ধে নৃশংসতার অভিযোগ আছে। আমি আন্তর্জাতিক আদালতের ‘বিশেষ তদন্ত বিভাগের প্রধান’ হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত ছিলাম এবং তদন্ত করে দেখছিলাম ঘটনার অন্তরালে ঠিক কী ঘটেছিল। তদন্তে বেরিয়ে এসেছিল আরপিএফ কোনভাবেই রুয়ান্ডার গণহত্যার সময়ে ব্যর্থতা এবং কৃতকর্মের দায় এড়াতে পারে না। কিন্তু আমি এই সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পেরেছিলাম যে, বাস্তবিক বিবেচনায়, আপনি স্বীকার করেন আর না করেন শান্তি বজায় রাখা এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার মধ্যে দ্বন্দ্ব আছে। শান্তি এবং ন্যায়বিচার কখনো একত্রে কাজ করে না যদিও মানুষ শান্তি এবং ন্যায়বিচারের সহাবস্থান আছে বলে ভান করে। বাস্তবতা হলো শান্তি বা ন্যায়বিচার যেকোন একটিকে ত্যাগের বিনিময়ে আপনি অন্যটা অর্জন করতে পারবেন।
আমরা লাইবেরিয়ার ক্ষেত্রে এই অভিজ্ঞতা অর্জন করেছিলাম এবং এখন রুয়ান্ডাতে যেকোন বিচার ব্যবস্থায় একই ফলাফল দেখতে পাচ্ছি। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অংশ হিসেবে আমি আমার বোধ দিয়ে বুঝতে পারি শান্তি এবং ন্যায়বিচারকে আপনি একত্রিত করতে পারবেন না। রুয়ান্ডা ইতিমধ্যে অর্থনৈতিক এবং সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিশাল উদ্যোগ নিয়েছে এবং আমি মনে করি না এখন কেউ উন্নয়নের অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্থ করতে চাইবে। গণহত্যায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণ আমাদের হাতে থাকার পরেও যখন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যাচ্ছিল না তখন আমি ব্যক্তিগতভাবে খুব বিমর্ষ হয়ে পড়েছিলাম। মনে হয় দুই তিনটা মামলার ক্ষেত্রে সৎ ও নিরপেক্ষ থেকে বিচার করতে পেরেছিলাম কারণ এই ক্ষেত্রে অভিযুক্তরা দুইপক্ষ থেকেই দোষী সাব্যস্থ হয়েছিল।
সঞ্জীব হোসাইনঃ যেকোন অপরাধের বিচারের সময় অভিযুক্ত অপরাধী, যে মামলা পরিচালনা করে এবং যে ভুক্তভোগী সবারই কিছু অধিকার আছে। আন্তর্জাতিক আদালত কীভাবে এই পক্ষের মাঝে সমন্বয় সাধন করে?
প্রসিকিউটর চার্লস এদোগান ফিলিপসঃ সত্যিই এটা বিশাল চ্যালেঞ্জ। এই বিচার ব্যবস্থা অন্য প্রচলিত আদালতের মত নয়। এখানে ভুক্তভোগীর কোন ভূমিকা নেই, বাস্তবিক অর্থে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে ভুক্তভোগীর শুধুই কণ্ঠস্বর আছে এবং এটাই সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু আমি মনে করি, গণহত্যার জন্য প্রতিষ্ঠিত আদালতের বিচারব্যবস্থা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে এবং বিবাদীর অধিকার নিশ্চিত করার জন্য দীর্ঘ সময় লাগিয়ে ফেলে। অনেক সময় বিচার চলাকালীন সময়ে বিবাদীকে নিজেরদের পক্ষের লোকেরাই খুন করে ফেলে যাতে সে বিচারের সময় দলের কথা ফাঁস করে দিতে না পারে। আমি মনে করি আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত বিবাদীর জন্য যথাসম্ভব স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ বিচারের সবচেয়ে ভালো উদাহরণ। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের বিচার ব্যবস্থা একটু ধীর গতির। কারণ, এই ধরণের অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া অনেক জটিল। মানুষ বিচার প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রিতা এবং বিচারের আগেই অপরাধীর হাজতবাস নিয়ে যুক্তিতর্ক করে কিন্তু তারা আসলে বিবাদীর ন্যায়বিচার প্রাপ্তির অধিকারকেই ক্ষতিগ্রস্থ করে। যদি আপনি বুঝতে পারেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের জটিল বিচার কার্য সম্পাদন হচ্ছে যেখানে গণহত্যা বা অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল সেখান থেকে অনেক দূরের অন্য কোন স্থানে এমনকি অন্য দেশে। এমন জটিল এবং প্রমাণ সাপেক্ষ বিচারপ্রক্রিয়ায় অভিযুক্তকে এক-দেড় বছর হাজতে আটকে রাখা অযৌক্তিক নয়। মনে রাখতে এই ধরণের অপরাধের বিচার প্রক্রিয়া অনেক জটিল।
সঞ্জীব হোসাইনঃ অভিযুক্ত যুদ্ধ অপরাধীরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সমাজের ধনী শ্রেণির হয় এবং তারা তাদের পক্ষে প্রচারণার জন্য বিশাল পরিমাণ অর্থ খরচ করে লবিস্ট নিয়োগ করে। অনেক সময় এই সব প্রভাবশালী লবিস্টদের প্রচারণার কারণে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে গণহত্যার মত অপরাধীরাও নির্দোষ হিসেবে পরিচিতি পায় এবং অপরাধীকে ভুল বিচারের শিকার বলে উপস্থাপন করা হয়। লবিস্টরা যে ভূমিকা পালন করে তাদের বিষয়ে আপনার অভিমত কী?
প্রসিকিউটর চার্লস এদোগান ফিলিপসঃ সত্য হলো এই যে, এই ধরণের গণহত্যার অপরাধীরা সাধারণত সমাজের অভিজাত শ্রেণির এবং তাদের রয়েছে অঢেল সম্পদ আর সামাজিক প্রভাব। অন্যদিক দিয়ে যদি আপনি বিবেচনা করেন তাহলে দেখবেন, রাজনৈতিক কলহ এবং মতাদর্শগত ভিন্নতার কারণে অপরাধী গণহত্যার মত অপরাধ করেও নিজেকে অপরাধী মনে করছে না। আমরা দেখেছি ‘রুয়ান্ডার গণহত্যার বিচারের জন্য গঠিত জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিটিআর)’ সামনে অনেক অভিযুক্ত অপরাধী গণহত্যাকে বৈধতা দেয়ার জন্য তাদের সর্বাত্মক যুক্তি উপস্থাপন করে গেছে। তারা এটাকে গণহত্যা মনে করছে না বরং তারা বলছে রাজনৈতিক পরিস্থিতি তাদেরকে তুতসি সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে এবং সেখানে তাদের কোন হাত ছিল না।
যখন অপরাধের প্রধান হোতা হওয়ার কারণে সমাজের উঁচুস্তরের একজনকে টেনে হিঁচড়ে নিচে নামিয়ে আনা হয় তখন লবিস্ট তার পক্ষে কাজ করা শুরু করে। আমরা দক্ষিণ আফ্রিকার ক্ষেত্রে যেটা দেখেছিলাম, দেশটির প্রেসিডেন্ট জ্যাকব জুমার পরিবার এবং তার সরকারের সাথে ভারতীয় বংশোদ্ভূত গুপ্তা পরিবারের ঘনিষ্ট সম্পর্কের কারণে গুপ্তা পরিবার দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যবসা বাণিজ্য হাতিয়ে নেয় এবং জুমা সরকারের পতনের পর গুপ্তা পরিবারের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতি এবং সরকারি কাজে হস্তক্ষেপের অভিযোগ ওঠে। তখন গুপ্তা পরিবার উদ্ভূত বাজে পরিস্থিতি সামাল দিতে লন্ডন ভিত্তিক ‘বেল পটিনজার’ পাবলিক রিলেশন কোম্পানিকে নিয়োগ দেয়। যদি কোন মামলার ক্ষেত্রে সন্দেহ থাকে তবেই লবিস্ট নিয়োগ করে কাজ হতে পারে। কিন্তু যেখানে অপরাধ খুব জঘন্য হিংস্র সেখানে লবিং করে অপরাধ ধামাচাপ দেয়া যায় না। সুদানের দিকে তাকান, দেখুন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় হিংস্র অপরাধের বিচারের ক্ষেত্রে সেখানে অপরাধীদের জন্য শুধুই মৌখিক সমবেদনা জানিয়েছিল কিন্তু বিচারকে প্রভাবিত করতে চায়নি। সুদানের নিরাপত্তা পরিষদের কাছে কোন চাপ আসেনি। গদবাধা একটা লিখিত বাক্য এসেছিল শুধু, “সুদানের মন্ত্রীসভার সদস্যদেরকে এই মর্মে বলা হচ্ছে যে, তারা যেন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতকে সহযোগিতা করেন।” সুদানের বিচারকে প্রভাবিত করতে চাওয়া সেই লবিংয়ের এখানেই সমাপ্তি। এই ধরণের আদালতের দুর্বলতা হলো তাদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নেই এবং বাস্তবিক অর্থে বিচার সম্পন্ন করার জন্য আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থা, সম্প্রদায়ের আন্তরিক সহযোগিতার উপর নির্ভর করতে হয়। এমনকি যেখানে অপরাধ, গণহত্যা ঘটেছে সেখানে যেতে হলেও সেই দেশের অনুমতি লাগে। এক্ষেত্রে আমি মনে করি যেটা আমাকে অবশ্যই বলতে হবে সেটা হলো, যে দেশে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে সে দেশকেই নিজেদের আইন মোতাবেক বিচার করতে হবে।
সঞ্জীব হোসাইনঃ যে সমাজ সর্বস্তরে গুরুতর অপরাধের শিকার হয়েছে তাদের জন্য সমাধান কী? বিচার? নাকি ক্ষতিপূরণের মাধ্যমে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করে দেয়া? এবং আপনি কি মনে করেন, রাষ্ট্র প্রধান যেমন প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার মত নৈতিক আধিকার রাখেন?
প্রসিকিউটর চার্লস এদোগান ফিলিপসঃ গণহত্যায় অংশ নেয়া বিপুল সংখ্যক অপরাধীর বিচার করার জন্য রুয়ান্ডার পুরনো বিচার পদ্ধতি ‘গাকাকা’ (আমাদের দেশীয় পঞ্চায়েতের মত বিচার বা সালিশ ব্যবস্থা) চালু করে। গণহত্যায় জড়িতদের বিচারে দেশের অভ্যন্তরীণ প্রশ্নের জবাব এবং ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক অপরাধের বিপরীতে গাকাকা নিরীক্ষাধর্মী প্রভাববিস্তারী উদাহরণ হয়ে রইল। আমি মনে করি না সর্বত্র এই বিচার পদ্ধতির প্রচলন করার দরকার আছে। তবে আফ্রিকাতে গাকাকা চালু করা একটা ইতিবাচক পদক্ষেপ। অন্য আরেকটা পদক্ষেপ ছিল দক্ষিণ আফ্রিকাতে নেলসন ম্যান্ডেলার নেতৃত্বে ‘Truth and Reconciliation Commission’ গঠন করা। মাদিবা সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি প্রচলিত বিচারের পথে গেলেন না বরং ‘Truth and Reconciliation Commission’ এর মাধ্যমে ভুক্তভোগীদের খুঁজে বের করে তাদের বর্তমান অবস্থা জেনে, কী ধরণের ক্ষতির শিকার হয়েছেন বিবেচনা করে তাদেরকে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করলেন। আর দোষীদেরকে মানসিক সংশোধনের সুযোগ দিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকার উত্তাল পরিবেশে দেশের ঐক্য প্রতিষ্ঠায় নেলসন ম্যান্ডেলার এই কৌশল খুবই সফলতা পায়। দেশে দেশে এরকম পরিস্থিতিতে বিভিন্নরকম পরীক্ষামূলক বিচারব্যবস্থা প্রয়োগ করে দেখা হয় যেমন সিয়েরা লিয়নে আন্তর্জাতিক আর স্থানীয় এবং উচ্চ আদালতের বিচারকদের সমন্বয়ে হাইব্রিড আদালত গঠন করা হয়। পূর্ব তিমুর এবং কম্বোডিয়াতেও স্থায়ী আন্তর্জাতিক আদালত স্থাপন করা হয়েছিল। ভবিষ্যতের আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন কতটা শক্তিশালী আর কার্যকর হবে সেটা নির্ভর করছে অভ্যন্তরীণ বিচার ব্যবস্থা এই মামলাগুলো কীভাবে পরিচালনা করবে। এতে স্থানীয় বিচার ব্যবস্থার কার্যকারিতা আরও বাড়বে। গণহত্যার বিচার আন্তর্জাতিক আদালতের মাধ্যমে করার কিছু সমস্যাও আছে। যেমন এই বিচার আন্তর্জাতিক অঙ্গন হেগ বা লন্ডনের বিচারিক কার্যকারিতা বাড়বে কিন্তু যেদেশে অপরাধ সংঘটিতে হয়েছে দেশের বিচার ব্যবস্থার কোন উন্নতি হবে না। কিন্তু এটাই সবচেয়ে বেশি দরকার। আপনাকে আপনার নিজের দেশের বিচারক, আইনজীবী, নিরাপত্তা পরামর্শদাতা, ভুক্তভোগীদেরকে সহায়তা ইত্যাদি সুযোগ সুবিধা বাড়াতে হবে। এই কারণেই আমি আন্তর্জাতিক অপরাধের ক্ষেত্রেও যেদেশে অপরাধ সংঘটিত হয়েছে সেদেশে গিয়ে বিচার করার পক্ষে। ভুক্তভোগীদেরকে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। কারণ, বিচার শুধু করলেই হবে না বিচারের রায় বাস্তবায়ন করতে হবে। রুয়ান্ডার ক্ষেত্রে সমস্যা হলো, আমরা রুয়ান্ডা থেকে শত শত মাইল দূরে বসে রুয়ান্ডার গণহত্যার বিচার করছি এবং ভুক্তভোগীরাও জানেও না তাদের বিচারের কী হচ্ছে। কিন্তু এই বিচার যদি রুয়ান্ডাতে করা সম্ভব হতো তাহলে যারা গণহত্যার শিকার হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্থ তারা নিজের চোখে দেখতে পারত। তাদেরকে ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করা যেত। সর্বোপরি রুয়ান্ডার স্থানীয় বিচার ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটত। প্রত্যাশা করি ভবিষ্যতের আন্তর্জাতিক অপরাধের বিচার অভ্যন্তরীণভাবেই সম্পন্ন করা যাবে।
সঞ্জীব হোসাইনঃ প্রথমে ওয়ারউইক বিশ্ববিদ্যালয় তারপরে লন্ডনের এসওএএস পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা শেষ করে কীভাবে আপনি ‘রুয়ান্ডার গণহত্যার বিচারের জন্য গঠিত জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে (আইসিটিআর)’ গণহত্যা নিয়ে কাজ করার প্রশিক্ষণ পেলেন?
প্রসিকিউটর চার্লস এদোগান ফিলিপসঃ এই কাজের যে জিনিসটা আমাকে বেশি আকর্ষণ করেছিল সেটা হলো তখন পর্যন্ত গণহত্যার বিচারের কোন উদাহরণ আমার কাছে ছিল। আসলে কারো কাছেই ছিল না। সুতরাং আমরা আক্ষরিক অর্থেই ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন’ নতুন আইনগত সংস্থা সৃষ্টি করলাম। যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য গঠিত সর্বশেষ আদালত ছিল নুরেমবার্গ এবং নুরেমবার্গ বিচারের অনুকরণে আমরা প্রাথমিকভাবে ২৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করলাম। খুব দ্রুতই আমাদের বোধোদয় হলো এই কাজ সফল করা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। ২৮ জন অভিযুক্তকে আদালতের কোথায় সংকুলান করব? তাদের স্বপক্ষের আইনজীবী বা আইনজীবীর সহযোগীর কথা না হয় বাদই দিলাম। রুয়ান্ডার গণহত্যায় অভিযুক্তদের অপরাধ এবং অপরাধকর্মে অংশগ্রহণের সাথে নুরেমবার্গের মামলার কোন মিল নেই। যদিও নুরেমবার্গ বিচারের অপরাধীদের অপরাধ ছিল একই রকম এবং তারও একযোগে অপরাধকর্মে লিপ্ত ছিল।
আমাদেরকে বাস্তবে প্রয়োগ করা সম্ভব এবং কৌশলী আইন পাস করতে হয়েছিল। যৌন হয়রানি বা ধর্ষণের ক্ষেত্রে সাজা কমানোর সুযোগ রাখিনি। যখন কোন নারী সাধের আশ্রয় ছেড়ে উদ্বাস্তু হয়ে প্রাণের ভয়ে একটু আশ্রয়ের খোঁজে হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে তখন তার সম্মতিতে যৌন সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। সেই নারী তার বন্দীদশা মুক্ত হয়ে আশ্রয় চেয়েছে। যে পুরুষ নারীটিকে আশ্রয় দিয়েছে সে তাকে দিনের পর দিন ধর্ষণ করেছে। সাক্ষীদের নিরাপত্তা বিধান করার জন্য তাদের ছদ্মনাম ব্যবহার করা হয়েছে। সুতরাং আইন প্রণয়নের একটা অংশ হতে পারা আমার কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিল।
সঞ্জীব হোসাইনঃ এরকম পরিস্থিতির কথা বলতে পারবেন যখন আবেগঘন মুহুর্তের অবতারণা হয়েছে এবং আদালতের পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে পড়েছে? এরকম পরিস্থিতি আপনি কীভাবে সামাল দিয়েছিলেন?
প্রসিকিউটর চার্লস এদোগান ফিলিপসঃ মিকাইলি মুহিমানার বিরুদ্ধে মামলার বিচারের সময় আদালতের কাছে আমি একজন ধর্ষিতার প্রমাণ উপস্থাপন করছিলাম। সেখানে তিনজন বিচারকের সমন্বয়ে আদালত পরিচালিত হচ্ছিল। তারা হলে পাকিস্থান থেকে আসা বিচারক রাশিদ খান, কেনিয়া থেকে আসা বিচারক লী মুথোগা এবং ঘানা থেকে আসা বিচারক এমিলি শর্ট। আমি যখন সাক্ষ্যগ্রহণ পর্ব পরিচালনা করছিলাম তখন ধর্ষিতা নারী বর্ণনা করছিলেন কীভাবে তিনি ধর্ষণের শিকার হলেন, তখন রুয়ান্ডার অবস্থা কেমন ছিল এবং তিনি আদালকে বোঝানোর চেষ্টা করছিলেন তার সাথে ঠিক কী ঘটেছিল। সেই সময় সন্দেহভাজন, অভিযুক্ত অপরাধী আদালতেই বসেছিল এবং তাদের সামনেই ধর্ষিতাকে নিজের ধর্ষণের কথা বলতে হচ্ছিল। আমি অত্যন্ত বিনয়ের সাথে তাকে জেরা করছিলাম। হয়ত দীর্ঘ শুনানির কারণে একজন পুরুষ বিচারক অধৈর্য হয়ে পড়লেন। তিনি তার মাইক্রোফোন চালু করে বললেন, “দেখুন স্বাক্ষী, প্রসিকিউটর আপনার কাছে জানতে চাচ্ছেন ঘটনাটা কোথায় ঘটেছিল?”
আমি খুব শান্তভাবে বিচারকের সামনে দাঁড়ালাম, তার কথা শেষ হওয়া এবং মাইক্রোফোন বন্ধ করা পর্যন্ত অপেক্ষা করলাম। তখন আমি বললাম, “যথাযথ সম্মান প্রদর্শন পূর্বক বলছি, বিজ্ঞ আদালত, আমি মানছি আপনি সাহায্য করতে চান কিন্তু আমি নিশ্চিত জানি ধর্ষণের কোন বৈধতা নাই এবং আমি চাই না এই সাক্ষীর সাথে কী ঘটেছিল তার বর্ণনা নিছক ঘটনা হিসেবে শুনতে। সুতরাং আপনি যদি একটু ধৈর্য ধরেন আর আমাকে অনুমতি দেন, এই প্রত্যক্ষদর্শীর জবানবন্দী শেষ করবো। কিন্তু কতখানি গ্লানিকর যে লোকটি এই নারীকে ধর্ষণ করেছে তার সামনেই তাকে জবানবন্দী দিতে হচ্ছে। আমি ইচ্ছাকৃতভাবে ধীরে ধীরে প্রশ্নোত্তর পর্বে আগাচ্ছি কারণ আলাপচারিতার মাধ্যমে তাকে কিছুটা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছি। কিন্তু আপনি একটু শান্ত হোন।” অবশ্যই সেই বিচারকও অনেক সাহায্য করেছিলেন এবং তিনি হয়ত ভেবেছিলেন সাক্ষী যতদ্রুত সম্ভব তার যন্ত্রণার সাক্ষ্য দিয়ে যেতে পারেন ততই তার জন্য ভালো। কিন্তু সেই নারীর প্রতি বিচারক যে শব্দের ব্যবহার করে কথা বলেছিলেন সেটা ধর্ষণের শিকার একজন নারীর জন্য অবমাননাকর।
সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো সর্বত্র বিস্তৃত এবং ঘৃণ্য অপরাধের বিচার করার জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করা। তখন আপনি সাক্ষী বা ভুক্তভোগীর সাথে কয়েক বছর আগে ঘটে যাওয়া যন্ত্রণাকে পুনরায় জাগিয়ে তুলছেন যে অভিজ্ঞতাগুলোকে তার ভুলে থাকার কথা ছিল। সুতরাং আদালতে বসে থাকা একজন নারী যিনি ক্রমাগত ধর্ষনের শিকার হয়েছিলেন জিজ্ঞাসাবাদের সময় তার যন্ত্রণা বাড়িয়ে দিলেন।
সঞ্জীব হোসাইনঃ ‘রুয়ান্ডার গণহত্যার বিচারের জন্য গঠিত জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের (আইসিটিআর)’ বিচারের পর আপনি একটা বাণিজ্যিক মামলা পরিচালনার কাজ নিয়েছিলেন। আইনগত দিক দিয়ে দুইটা সম্পূর্ণ দুই মেরুর পরিবেশ। এই উত্তরণ কীভাবে সম্ভব করলেন? একজন আইনজীবী হিসেবে কীভাবে এই কাজের জন্য প্রস্তুতি নিলেন?
প্রসিকিউটর চার্লস এদোগান ফিলিপসঃ যুদ্ধাপরাধ এত স্বতন্ত্র যে আইনজীবী হিসেবে আপনি বেশিদিন এটা দিয়ে বেশিদিন জীবিকা নির্বাহ করতে পারবেন না। যুদ্ধাপরাধ মানবজাতির সবচেয়ে জঘন্য অপরাধ। বাণিজ্যিক মামলাতে আমার আগ্রহ জন্মেছে সম্পূর্ণ আকস্মিকভাবে। সরকারের তরফ থেকে আমার কাছে অনুরোধ আসে কিছু ব্যর্থ ব্যাংক এবং কুঋণ উদ্ধার করে দেয়ার জন্য। কিন্তু মজার বিষয় হলো বাণিজ্যিক মামলাতেও কিছু অপরাধ জড়িত ছিল। কারণ যে সময়ে ঋণ দেয়া হয় তখন থেকেই ঋণগ্রহীতাদের কারো কারো মনোভাব ছিল তারা ঋণ পরিশোধ করবে না। সুতরাং আমরা সরকারকে ব্যাংক এবং ব্যাংকের সেবা গ্রহীতাদের মধ্যে কেমন সম্পর্ক সেটা খতিয়ে দেখার পরামর্শ দিলাম। সাপ খুঁড়তে কেঁচো বেরিয়ে আসার মত সেখানে অপরাধ দেখা দিলো। আন্তর্জাতিক অপরাধ আইনের উপর অতীত অভিজ্ঞতার কারণে সমাজের উঁচুস্তরের অপরাধীদের শনাক্ত করতে আমার বেশী সময় লাগেনি। অন্যথায় সাধারণভাবে মনে হতে পারে ব্যাংকের লেনদেন ছিল আর পাঁচটা বাণিজ্যিক লেনদেনের মতই স্বাভাবিক ঘটনা। আন্তর্জাতিক আদালতে কাজ করার সুবাদে আমাকে বিবিধ কাজ করতে হয়েছে এবং বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের আইনজীবীদের সাথে কাজ করার অভিজ্ঞতা হয়েছে যার ফলে বিভিন্ন সম্পর্কের সূত্রধরে আমি বুঝতে পেরেছিলাম কোথায় আর্থিক দুর্ণীতি হয়েছে এবং আত্মসাৎ হয়ে যাওয়া সরকারের সম্পদকে পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হই।
[ সাক্ষাৎকার গ্রহীতা মহম্মদ সঞ্জীব হোসাইন ওয়ারউইক ল স্কুল থেকে তার পিএইচডি গবেষণা সম্পন্ন করেছেন। তার গবেষণার মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল বাংলাদেশের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আদালতের বৈধতা এবং আইনগত ভিত্তি। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনের কর্মী হিসেবে সঞ্জীব হোসাইন গণহত্যার দায়মুক্তি, বিচার বহির্ভুত খুন, প্রহসনের বিচারের মাধ্যমে খুন ইত্যাদি বিষয়কে উপজীব্য করে নিয়মিত লেখালেখি করে যাচ্ছেন। সঞ্জীব হোসাইন মহান মুক্তিযুদ্ধের ১১ নম্বর সেক্টর কমান্ডার বীর উত্তম কর্নেল আবু তাহেরের ছেলে। ]
Leave A Comment