জামাল নজরুল ইসলাম
(১৯৩৯ সাল ২৪ ফেব্রুয়ারি -২০১৩ সালে ১৬ মার্চ)

১৯৮৮ সালের কথা। কৃষ্ণবিবর বা ব্লাকহোল নিয়ে ভীষণ আগ্রহ। এ সম্পর্কে টুকরো টুকরো লেখা পড়েছি। দ্রুত কোনো কিছু পাওয়ার জন্য ইন্টারনেট ব্যবস্থা ছিল না তখন। ব্রিটিশ কাউন্সিল, জার্মান সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও ভারতীয় হাইকমিশন এবং ব্যান্সডকের মতো গ্রন্থাগারগুলো একমাত্র সহায়। এ রকম একটি সময় ব্রিটিশ কাউন্সিলে কৃষ্ণবিবর নিয়ে লেখা একটা বই পেয়ে যাই। এর ওপর এত বড় একটি বই পাব ভাবতেই পারছিলাম না। নাম ব্লাকহোল, দ্য মেমব্রেন প্যারাডাইম’, ইয়োলো ইউনিভার্সিটি প্রেস’ লেখক কিপ থর্ন, রিচার্ড প্রাইস, ডগল্যাস ম্যাকডোনাল্ডস। ৩৭০ পৃষ্ঠার বইতে কৃষ্ণবিবরের বিভিন্ন দিক নিয়ে লেখা। যাদের আপেক্ষিক তত্ত্ব নিয়ে তেমন ধারণা নেই কিন্তু চিরায়ত পদার্থবিদ্যা নিয়ে পোক্ত অবস্থান, তাদের জন্যই বইটি লেখা। এ বইয়ের রেফারেন্সগুলো দেখতে গিয়ে এক জায়গায় চোখ আটকে গেল। একটি বইয়ের নাম ‘দ্য আলটিমেট ফেট অব দ্য ইউনিভার্স’, কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস, কেমব্রিজ। লেখক প্রফেসর জামাল নজরুল ইসলাম। খবর নিয়ে জানলাম আমাদের দেশের মানুষ। হকিং, পেনরোজ, ডাইসনরা তাঁর বন্ধু। তিনি একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন গাণিতিক পদার্থবিদ ও জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং বিশ্ববিখ্যাত কসমোলজিস্ট (বিশ্ব সৃষ্টিতাত্ত্বিক)। আন্তর্জাতিক মহলে জে. এন. ইসলাম হিসেবে পরিচিত।

সাংস্কৃতিক জাগরণের অগ্রপথিক ওয়াহিদুল হক তার কথা প্রায় বলতেন; বোস-আইনস্টাইন ঘনীভবন নিয়ে তাদের মধ্যে অদ্ভুত মজার সব আলোচনা হত নাকি। আধুনিক প্রযুক্তির কোন কিছুই তিনি ব্যবহার করতেন না। এই মানুষটির লেখা দ্য আলটিমেট ফেট অব দ্য ইউনিভার্স (১৯৮৩) বইটি আট-নয়টি ভাষায় অনুদিত হয়েছে। এটি বিশ্বের জ্ঞানভান্ডারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান হিসেবে থাকবে। বইটি ফরাসি, ইতালীয়, জার্মান, পর্তুগিজ, সার্বোক্রোয়েটসহ পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় অনুদিত হয়েছে। পৃথিবীর সব বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে, বিশেষ করে যুক্তরাস্ট্রে বইটি পাঠ্যবই হিসেবে পড়ানো হয়। বইটির পেপারব্যাকও বেরিয়েছে ২০০৯ সালে। দ্য আলটিমেট ফেট অব দ্য ইউনিভার্স বইটির ভূমিকাটি পড়লে আমরা দেখতে পাব – ফ্রিম্যান জন ডাইসন, এস. জে. আরসেথ, স্টিফেন উইলিয়াম হকিং (১৯৪২), এস মিটন, জে.ভি. নারলিকার, মার্টিন.জে.রিজ, এবং জে.সি.টেইলর এর মতো লব্ধ-প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞানীদের নাম, যাদের কাছে বইটি লেখার জন্য তিনি ঋণস্বীকার করেছেন। কৃষ্ণ বিবর (বাংলায় ১৯৮৫) – বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত বইটি দেশে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে। ১৯৯৪ সালে তিনি জাতীয় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি পদক লাভ করেন। ১৯৯৮ সালে তিনি ইতালীর আব্দুস সালাম সেন্টার ফর থিওরেটিক্যাল ফিজিক্সের থার্ড ওয়ার্ল্ড একাডেমীর লেকচার পদক লাভ করেন। বাংলাদেশ সরকার তাকে ২০০১ সালে একুশে পদকে ভুষিত করেন। ২০১৩ সালে ১৬ মার্চ তিনি মৃত্যুবরণ করেন। ফুসফুসের সংক্রমণ ও হৃদরোগেই ৭৪ বছর বয়সে তার মৃত্যু ঘটে।

জামাল নজরুল ইসলাম তার কৃষ্ণ বিবর গ্রন্থে বলেছেন, ‘মহাবিস্ফোরণে যে প্রাণহীন ও জড় পদার্থ চতুর্দিকে নিক্ষিপ্ত হয়েছিল, তারমধ্যে একদিন প্রাণী এবং চেতনার আবির্ভাব ঘটেছিল। এই চেতনায় শ্রদ্ধা জাগে প্রকৃতির বিশালতার প্রতি।’

ভারতের পুনায়, The Inter-University Centre for Astronomy and Astrophysics গড়ে তোলেন জয়ন্ত নারলিকর (১৯৩৮সাল)। জামালের এই সহপাঠী কার্ল সাগানের এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন। আমার জানতে ইচ্ছে হয় আলটিমেট ফেট অব ইউনিভার্সের লেখক জামালের সঙ্গে সাগানের কি দেখা হয়েছিল! ছবি সৌজন্য: জামাল নজরুল এর পরিবার।

তিনিই একমাত্র বাঙালি বিজ্ঞানী যাঁর এ পর্যন্ত সাতটি বই প্রকাশ করেছে ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় প্রেস, ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। জানা গেছে জামাল নজরুল ইসলামের রচিত পঞ্চাশটিরও বেশি গবেষণাপত্র রয়েছে। গবেষণাপত্রগুলো অধিকাংশই প্রকাশিত হয়েছে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের প্রতিষ্ঠিত বিজ্ঞান জার্নালে। পিএইচডি শেষে তিনি দু’বছরের জন্য যুক্তরাস্ট্রে ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ডে চলে যান। ১৯৭৪ সালে ইংল্যান্ডে ফিরে এসে ইউনিভার্সিটি অব কার্ডিফে আবার আইনস্টাইনের জেনারেল থিওরি অব রিলেটিভিটি নিয়ে কাজ শুরু করেছেন। ৪০ বছরের মতো এত দীর্ঘ সময় ধরে আর কেউ আইনস্টাইন উত্থাপিত সমস্যার সমাধানের লক্ষে কাজ করেন নাই বলে তার কাছ থেকে জানা যায়। তিনি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘আমার গবেষণার ক্ষেত্র অনেক বিস্তৃত হয়েছে। কিন্তু আমি মনে করি, ওয়াইডার, বাট নট নেসেসারিলি ডিপার।’ কথিত রয়েছে ষাটের দশকে কেমব্রিজে স্বয়ং পল ডিরাক তাকে কোয়ান্টাম বলবিদ্যার ক্লাস নিতে দেন, জন পলকিংহর্নের কাছে কোয়ান্টাম ক্ষেত্র তত্ত্ব (ফিল্ড থিওরি) পড়েছেন। তার অবদানকে চারটি ভাগে ভাগ করা যায়। যথাক্রমে তাত্ত্বিক কণা পদার্থবিদ্যা, কনফর্মাল মহাকর্ষ তত্ত্ব, মহাবিশ্বের ভবিষ্যত, মহাজাগতিক ধ্রুবক লামডা –

পৃথিবীতে বৌদ্ধিকভাবে যার অবস্থান এরকম, সে হঠাৎ করেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিলেন দেশে ফিরে আসার। জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে নেওয়ার জন্য এক ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছিল। কিন্তু তিনি সাফ জানিয়ে দিয়েছিলেন ঢাকা নয় চট্টগ্রামেই থাকবেন। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তাকে নেওয়ার জন্য কিছু করলে ভালো হয়। এদেশের অদ্ভুত সব জটিলতার কারণে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে তাকে নেওয়া সম্ভব হয়নি। গণিতে একটা অধ্যাপক পদ সৃষ্টি করে তাকে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। সময়টা ছিল ১৯৮৪ সাল। ৩৫ বছরের বিদেশ বসবাসের ইতি টেনে ১৯৮৪ সালে স্ত্রী এবং দুই মেয়েকে নিয়ে স্থায়ীভাবে ফিরে আসেন। বাড়িগাড়ী সব সম্পত্তি বেঁচে দিয়ে লাখ টাকা বেতনের প্রাপ্তি রেখে, কেমব্রিজ ছেড়ে তাও ঢাকায় নয়, একেবারে চট্টগ্রামে আসেন। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপনাকে পেছনে ফেলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে গণিত বিভাগে মাত্র ২৮শ’ টাকার চাকুরি নেন।
কিন্তু কেন তিনি হঠাৎ এভাবে চলে আসলেন?

দেশের প্রতি, ভাষার প্রতি প্রবল ভালবাসা? কিন্তু বিদেশে থাকাকালীন সময়ে দেশের সবরকমের বিপর্যয় ও দূর্ঘটনায় তিনি এগিয়ে গেছেন। এটা আসলেই এক অমিমাংসিত রহস্য! কখনো কখনো বাস্তবতা গল্পের চেয়েও অদ্ভুত মনে হয়। তা জামাল নজরুল ইসলামের জীবনের দিকে তাকালে বোঝা যায়। যেমন তিনি বলেছেন –
“স্থায়ীভাবে বিদেশে থাকার চিন্তা আমার কখনোই ছিল না। দেশে ফিরে আসার চিন্তাটা প্রথম থেকেই আমার মধ্যে ছিল, এটার ভিন্নতা ঘটেনি কখনোই। আরেকটা দিক হলো, বিদেশে আপনি যতই ভালো থাকুন না কেন, নিজের দেশে নিজের মানুষের মধ্যে আপনার যে গ্রহণযোগ্যতা এবং অবস্থান সেটা বিদেশে কখনোই সম্ভব না।”

বলা ভালো ১৯৬৪ সালের পিএইচডির বিষয়বস্তু এই ধরণের তাত্ত্বিক কণা পদার্থবিদ্যা বা কোয়ান্টাম ক্ষেত্রতত্ত্বের ওপরই কাজ করতেন যদি না বিখ্যাত জ্যোতির্বিজ্ঞানী ফ্রেড হোয়েল ও তাঁর ছাত্র জয়ন্ত নারলিকরের সান্নিধ্যে না আসতেন। তিনি ১৯৬৭ থেকে ১৯৭১ কেম্ব্রিজের ইনস্টিটিউট অফ এস্ট্রোনমি প্রতিষ্ঠানে কাজ করে গেছেন যার পরিচালক ছিলেন ফ্রেড হোয়েল। মজার ব্যাপার হচ্ছে জ্যোতির্বিদ ফ্রেড হয়েলের সঙ্গে স্টিফেন হকিং কাজ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তাকে সুপারভাইজার হিসেবে পাওয়া যায়নি; তবে, শাপে বর হয়েছিল কেননা তার বদলে সুপারভাইজার হিসেবে পেয়েছিলেন ডেনিস সিয়ামা, আধুনিক মহাবিশ্বতত্ত্বের জনকদের একজনকে। কিন্তু স্টিডি স্টেট তত্ত্বটি পরিত্যাক্ত হলে ফ্রেড হয়েল ও জয়ন্তু নারলিকর চাপে ছিলেন। আমার মনে হয়, সেই চাপ থেকে স্টিফেন হকিং বেঁচে গেলেও কাজ করার কারণে জামাল নজরুল ইসলামের গায়ে সেই আচঁ এসে লেগেছিল। ফ্রেড হয়েলের সঙ্গে ঘনিষ্টতার সুবাদেই তা ঘটেছিল, হয়তো হয়েলের সহচার্যের কারণেই ড.ইসলামের মূল্যায়ন পশ্চিমে যতটা হওয়ার কথা ততটা হয়নি।

কিন্তু এটাও সত্যি তাঁর রচনা ও গবেষণাপত্র পড়ে ওই সময়ের বিজ্ঞানী, দার্শনিক ও বিজ্ঞান কল্পকাহিনী লেখকেরা খুবই প্রভাবিত হয়েছিলেন। স্টিফেন ওয়াইনবার্গের বিশ্বকে নৈরাশ্যজনক বলে মতামত ব্যাক্ত করলেও ফ্রিম্যান ডাইসন জামালের রচনায় অনুপ্রাণিত হয়ে আশাবাদী বিশ্বের কথা বলেছিলেন। জামাল ইসলামের লেখায় অনুপ্রাণিত হয়ে ডাইসন একটা প্রবন্ধ লিখেছিলেন, টাইম উইথ আউট এন্ড; ফিজিক্স এন্ড বায়োলজি ইন অ্যান ইউনিভার্স।

এ প্রসঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে ফ্রিম্যান ডাইসন বলেছেন, জামাল ইসলামের একটা গবেষণা প্রবন্ধ পড়েই আমি মহাবিশ্বের অন্তিম পরিণতির নিয়ে কৌতুহলী হয়েছিলাম। এটা ১৯৭৭ সালের কথা। প্রবন্ধটা ছাপা হয়েছিল কোয়ার্টারলি জার্নাল অফ দ্য রয়াল অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটিতে। ওই প্রবন্ধটাই প্রথম। আমি শুধু পরে ওই সমস্যাটা নিয়ে একাকি গবেষণা করি। আমি জামালকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম, ইন্সটিটিউট ফর অ্যাডভান্সড স্টাডিতে একটা বছর কাটানোর জন্য। এরই সুবাদে আমি তাকে ও তার পরিবারকে জানাশোনার সুযোগ পাই। ওই সময় আমরা একে অপরের চিন্তাভাবনা বিনিময় করি। এবং আমাদের বন্ধুত্বের ফসলই হচ্ছে ইসলামের ১৯৮৩র বইটা: দ্য আল্টিমেট অব ইউনিভার্স। তবে দরকারি সব আইডিয়া জামালের ১৯৭৭ সালের প্রবন্ধেই ছিল।

তাঁর মতো এমন বিজ্ঞানী কেন সবকিছু ছেড়ে দিয়ে দেশে ফিরে এসেছিলেন? যেখানে অর্থনৈতিকভাবে শুধু নয় বৌদ্ধিকভাবেও তিনি ছিলেন সেরা অবস্থানে।

দেশপ্রেম?
আমার মনে হয় না তা তার কম ছিল। বাংলাদেশের মানুষের বিপদ-আপদে সবসময় তিনি তাঁর মতো করে এগিয়ে এসেছেন। সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে কাজ করেছেন। গণিত এবং পদার্থবিজ্ঞানের গবেষণায় তিনি কখনও সমাজ ও মানুষবিচ্ছিন্ন হননি। অত্যন্ত সমাজসচেতন এই বিজ্ঞানী মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোতে গবেষণা ও জ্ঞানার্জনের পাশাপাশি মাতৃভূমির প্রতি তার দায়িত্ব ও কর্তব্য সুচারুভাবে পালন করেছিলেন।

নিজের দেশ থেকে কাজ করার সুবিধা?
আলটিমেট ফেট অফ দ্য ইউনিভার্স গ্রন্থে তাঁর উক্তি বা তাঁর বক্তৃতা থেকে থেকে বোঝা যায় আঞ্চলিকভাবে খন্ডিত অংশের সমগ্র হিসেবে পৃথিবীকে তিনি দেখেননি। দেখেছেন একটি অখন্ড ব্যবস্থা হিসেবে। একটি অংশের সমস্যার সাথে আরেকটি অংশের সমস্যা নিগুঢ়ভাবে জড়িত। পৃথিবীর মৌলিক সমস্যাগুলো থেকে বের না হয়ে এলে আঞ্চলিক সমস্যাগুলোও কাটবে না। কার্ল সাগানের ভাষায় পৃথিবী না বাঁচলে দেশও বাঁচবে না। দেখতে জানলে এই পৃথিবীর সব জায়গাই মহাজাগতিক সাগরের বেলাভূমি।
তাহলে কেন তিনি ফিরে এসেছিলেন এই শ্যামল বাংলায়?

হয়তো বৌদ্ধিকভাবে এমন এক স্তরে দাড়িয়ে ছিলেন যেখান থেকে তিনি সম্ভবত অনুভব করতেন, কর্মস্থলে ট্রেনে যেতে যেতে আপন মনে ভাবতেনও। উপলব্ধি করতেন জন্মভূমির মাটিকে আত্তীকরণ করে যদি মহাবিশ্বকে দেখা না-যায়, আকাশের দিকে তাকানো না হয় তাহলে শুধু নিজের ভিতরের অসম্পূর্ণতাই থাকে না, নিজের অবস্থানকেও অনুধাবন করা কঠিন হয়ে পড়ে।
এটা তো কোনো চাকরি বা টেকনোক্রাট হিসেবে অবস্থান নয়, এটা হলো নিজের জন্মভূমির পলিমাটি বাহিত বাংলার সঙ্গে বিশ্বকে সম্পর্কিত করা। সেই মন নিয়ে, যে-মনের জোরে আমাদের পূর্বপুরুষেরা নদী থেকে নদীতে, গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ঘুরে বেড়িয়েছে, পলিমাটির অঞ্চলে গড়ে তুলেছে তাদের আবাসভূমি। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে জীবন নিঃশেষিত করে ফসল ফলিয়েছে আর তৈরি করেছে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য অপেক্ষাকৃত মসৃন পথ। ক্ষয়িষ্ণু, কষ্টকর আর সর্পিল পথে জীবনকে প্রবাহিত করেছে পদ্মা মেঘনা আর মধুমতির স্রোতধারায়। পলি হয়ে জমেছে নদীর বাঁকে বাঁকে।
অনিশ্চয়তার মধ্যদিয়ে সময় পেলেই তারা প্রশ্ন করেছে জীবনের উৎস, পরিণতি আর ওই নক্ষত্রগুলোর সঙ্গে তাদের সম্পর্ক নিয়ে। তারা নিশ্চয়ই ভেবেছে রেখে যাওয়া প্রজন্ম সেই মাঝি আর কৃষকের মন নিয়ে মহাকাশ আর মাটির সঙ্গে জীবনের সম্পর্ককে উদঘাটিত করবে।

এটাইতো শিকড়ের অনুসন্ধান। আমার মাঝে মাঝে মনে হয় প্রবল ভিড়ে চলন্ত ট্রেনের পাহাড়ী পথে একাকী ধ্রুপদী সংগীতের মগ্নতায় অথবা কখনো কর্ণফুলির স্রোতধারায় ভাসতে ভাসতে তিনি সেই শিকড়ের খোঁজ করবেন বলেই ফিরে এসেছিলেন এই বাংলায়।

রচনাকাল: ২০১৮