মাত্র তিনমাস আগেও কেউ জানত না সার্স-কোভি-২ ভাইরাসের অস্তিত্ব। কিন্তু এখন ভাইরাসটি সারাবিশ্বের প্রায় সবকটি দেশে আক্রমণ করেছে, সংক্রমিত হয়েছে কমপক্ষে ৪৪৬,০০০ (এই ফিচার লেখার সময় ২৫ মার্চ, পয়লা এপ্রিল পর্যন্ত এ সংখ্যা ৯ লাখ ছুঁইছুঁই করছে ) মানুষ যাদের তথ্য জানতে পেরেছি এবং অনেক সংক্রমণের খবর রয়ে গেছে অগোচরে। করোনাভাইরাসটি ইতিমধ্যে বিশ্বের অর্থনীতি ধসিয়ে দিয়েছে, এবং আমাদের স্বাস্থ্যসেবা ভেঙে পড়েছে। ভাইরাস আক্রান্ত মানুষে ভরে গেছে হাসপাতালের বিছানা আর নির্জন করে দিয়েছে ব্যস্ত জনপদ। ভাইরাসের কারণে মানুষ তার দৈনন্দিন কাজকর্ম এবং বন্ধুবান্ধব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। এর ফলে আধুনিক জীবনযাপন এতটাই বিপর্যস্থ যে কেউ ইতিপূর্বে কেউ এরকম দেখেনি। অতি শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থা এমন হবে যে প্রত্যেকেই তাদের পরিচিতদের তালিকায় কাউকে না কাউকে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে বলে খুঁজে পাবেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বা ৯/১১ বিমান হামলার মত বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস প্যানডেমিক পুরো জাতির মননে গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছে।
বৈশ্বিক এই ভাইরাস সংক্রমণের ব্যাপকতা ঠেকানো সম্ভব না। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শত শত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক গাদা গাদা বইতে, সরকারী প্রতিবেদনে, পত্রিকার সম্পাদকীয় পাতায় সতর্ক করে লিখেছেন সম্ভাব্য আশংকার কথা। বিল গেটস টেড টকে ১৮ মিলিয়ন দর্শকের সামনে বলেছেন সতর্কতার কথা, আপনিও হয়ত শুনে থাকবেন। ২০১৮ সালে ‘দ্য আটলান্টিকে’ প্রকাশিত একটা নিবন্ধে লিখেছিলাম, সামনে যদি কোন মহামারী আসে তবে আমেরিকা সেটা মোকাবিলার মত যথেষ্ঠ প্রস্তুত নয়।
গত অক্টোবরে ‘জনস হপকিনস সেন্টার ফর হেলথ সিকিউরিটি’ একটি ভাইরাস অ্যাটাকজনিত সিমুলেশন করে (যেখানে দেখানো হয়েছিল ব্রাজিলের একটি শূয়োরের ফার্ম থেকে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে) যাতে কীভাবে বিশ্ব উজাড় হয়ে যাবে তা দেখানো হয়েছিল। তারপর সত্যি সত্যিই ঘটনা ঘটে গেল, অনুমান পরিণত হলো বাস্তবে। ‘যদি ঘটে’ এখন ‘এখন কী হবে’ পরিস্থিতি।
তো এখন কী অবস্থা? গত বুধবার (লেখাটি মার্চের ২৫ তারিখের, ফলে ১৮ মার্চের কথা বলা হচ্ছে) সন্ধ্যাবেলাটা আজ মনে হচ্ছে কোন সুদূর অতীত। আমার এক বন্ধুর সাথে বৈশ্বিক মহামারী নিয়ে কথা বলছিলাম, যিনি মা হতে চলেছেন, কয়েকদিন পরেই তার সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার তারিখ। আমরা বুঝতে পেরেছিলাম তার সন্তানই হতে যাচ্ছে করোনাভাইরসা সংক্রমণে তছনছ হয়ে যাওয়ার পরে পরিবর্তিত সমাজের প্রথম প্রজন্ম। আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম এই প্রজন্মের নাম হবে ‘জেনারেশন সি’।
আমরা দেখতে পাচ্ছি, সামনের সপ্তাহগুলোতে আমরা যে সিদ্ধান্ত নিচ্ছি এবং সঠিক বা ভুল সিদ্ধান্তের কারণে যত ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হবো সেগুলো নির্ধারণ করতে যাচ্ছে ‘সি জেনারেশনে’র জীবন। কিন্তু প্রথমেই আমাদের ভবিষ্যৎ অনুমান করে নিতে হবে। বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা সূচকে প্রত্যেক দেশের বৈশ্বিক মহামারী, দুর্যোগ প্রতিরোধে প্রস্তুতির মানদণ্ড বিবেচনা করে শ্রেণি বিন্যাস করা হয়। দুর্যোগ মোকাবিলার সক্ষমতার বিচারে যুক্তরাষ্ট্রের স্কোর ৮৩ দশমিক ৫, পৃথিবীর সব দেশের মধ্যে সর্বোচ্চ। ধরে নেয়া যায়, বৃহৎ অর্থনীতি, শক্তিশালী ও উন্নত আমেরিকা পৃথিবীর সবথেকে প্রস্তুত দেশ। কিন্তু যখন আমেরিকা কোভিড-১৯ এর প্রতিষেধক পরীক্ষা করা হয় তখন শেষ পর্যন্ত ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়।
বোস্টন ইউনিভার্সিটির স্কুল অব মেডিসিনের সহযোগী অধ্যাপক এবং সংক্রামক ব্যধি চিকিৎসক নাহিদ ভাদেলিয়া বলেছেন, যে ভাইরাসই [ সার্স–কোভ-২] হোক না কেন, আমেরিকার সর্বাধুনিক প্রযুক্তির সরঞ্জমাদি এবং চিকিৎসাসেবা ব্যবস্থা মহামারী রোধে কার্যকর কিনা পরীক্ষার মুখে ফেলে দিয়েছে। করোনাভাইরাস খুবই ছোঁয়াচে এবং প্রাণঘাতী, মৌসুমি ইনফ্লুয়েঞ্জার মত সাধারণ সর্দি কাশি নয়। নতুন এই ভাইরাসটি মানুষের শরীরে চোরের মত ঘাপটি মেরে থাকে, এক মানুষ থেকে অন্য মানুষের শরীরে ছড়িয়ে পড়ে এবং সংক্রমণের কয়েকদিন যাওয়ার পর চূড়ান্ত লক্ষ্মণ প্রকাশ করে। এরকম মহামারী জীবাণুকে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে পুরো দেশের সব নাগরিকদের পরীক্ষা করতে হবে এবং আক্রান্তদেরকে চিহ্নিত করে, নির্জনে রাখতে হবে। খুঁজে বের করতে হবে ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি আর কাদের সাথে মিশেছে। ঠিক এই পদ্ধতিই অবলম্বন করেছিল দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর, হংকং এবং তারা খুব আশাব্যঞ্জক ফলাফল পেয়েছে। কিন্তু এই কাজটা যুক্তরাষ্ট্র করতে পারেনি।
আমার সহকর্মী অ্যালেক্সিস ম্যাড্রিগাল এবং রবিনসন মেয়ার রিপোর্ট করেছে ‘সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন’ ফেব্রুয়ারিতে করোনাভাইরাস শনাক্ত করতে যে কিট বানিয়ে বিতরণ করেছে চূড়ান্ত পরীক্ষায় সেগুলো ব্যর্থ হয়েছে। কিছু ল্যাবরেটরিয়া নিজেদের উদ্যোগে বিকল্প কিট বানালেও যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় আটকে রয়েছে। সংকটের মুহূর্তে আমেরিকাতে হাজার হাজার মানুষ করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হচ্ছে তখন মাত্র কয়েকশজনকে পরীক্ষা করা হয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানের চরম শিখরে অবস্থান করা যুক্তরাষ্ট্রের মত দেশের করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করার এমন শোচনীয় ব্যর্থতা আক্ষরিক অর্থেই অবিশ্বাস্য। সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণে আইনি এবং নীতিমালা প্রণয়নে কর্মরত জর্জটাউন ইউনিভার্সিটির মাইক্রোবায়োলজি এবং ইম্যুনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আলেক্সান্দ্রা ফেলান বলেন, “আমি অবগত নই যে করোনা শনাক্ত কিট বারবার পরীক্ষিত হয়েছে কিনা যা থেকে বিবেচনা করতে পারি যে পরীক্ষা ব্যর্থ হয়েছে।”
করোনাভাইরাস টেস্টিং কিটের ব্যর্থতা যুক্তরাষ্ট্রের বৈশ্বিক মহামারী নিরসন ব্যর্থতার প্রধান কারণ। শুধু একটা ত্রুটি যুক্তরাষ্ট্রের করোনা প্রতিরোধ ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। দেশটির উচিৎ ছিল করোনা ভাইরাসের বিস্তার থামাতে আক্রান্ত সবাইকে চিহ্নিত করে আলাদা করা, হাসপাতালগুলো যদি মহামারী প্রতিরোধে তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে পারত, আক্রান্ত রোগীদেরকে যদি আলাদা চিকিৎসা ব্যবস্থা দেয়া যেতো, যদি করোনা পরীক্ষা এবং চিকিৎসা সরঞ্জামের জোগান বাড়িয়ে দেয়া যেত, বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, বিজ্ঞানী এবং বিশেষ সুবিধা দেয়া গেলে, হয়ত করোনাভাইরাসকে সফলভাবে মোকাবিলা করা যেত। কিন্তু এসবের কিছুই করা হয়নি। বরং তার বদলে কী ঘটছে, সামর্থ্যের সবটুকু শক্তি ব্যবহার করে মোটামুটি চলতে থাকা স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা যা ইতিমধ্যেই মৌসুমি ইনফ্লুয়েঞ্জাতে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে দিতে ক্লান্ত। ঠিক এমন সময়েই করোনা ভাইরাসের মুখোমুখি, যে ভাইরাসটি ইতিমধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। আক্রান্তরা দেশটির আনাচে কানাচে কোথায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে তার কোন হদিস নাই। রোগীদের অতিচাপে হাসপাতাল্গুলোর নাভিশ্বাস অবস্থা। এরমধ্যেই ডাক্তারদের সুরক্ষার জন্য অতিপ্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি, মাস্ক, বিশেষ পোশাক, গ্লাভস ফুরিয়ে যেতে শুরু করল। কয়েকদিনের মধ্যেই পূর্ণ হয়ে গেল হাসাপাতালের সব বিছানা, ফুরিয়ে গেলো করোনাক্রান্ত রোগীর ফুসফুসে অক্সিজেন দেয়ার ভেন্টিলেশন যন্ত্র।
যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থায় সাধারণত কোন একটা স্টেট কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ যেমন হারিকেন বা দাবানলে আক্রান্ত হলে অন্য স্টেট সাহায্য করতে এগিয়ে আসে। কিন্ত করোনা ভাইরাস মহামারীর ক্ষেত্রে ৫০টি স্টেটই আক্রান্ত হয়েছে ফলে কেউ কারো সাহায্যে এগিয়ে আসতে পারেনি। পারষ্পারিক সাহায্য পারষ্পারিক প্রতিযোগিতায় পরিণত হলো। কিছু হাসপাতাল আতংকিত হয়ে বিপুল পরিমাণ চিকিৎসা সরঞ্জাম কিনে মজুদ করে ফেলল। একইভাবে দিশেহারা ভোক্তা নিত্যপ্রয়োজনীয় সব জিনিসপত্র এমনকি টয়লেট পেপার কিনে ভান্ডার ফাঁকা করে দিলো।
আংশিক কারণ হ’তে পারে হোয়াইট হাউজ হলো বিজ্ঞানীদের পরিত্যক্ত জায়গা, যেখানে তারা আর যায় না। ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিলের যে অফিস বৈশ্বিক মহামারী মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকার কথা সেই অফিসকেই ২০১৮ সালে বিলুপ্ত করা হয়েছে। ২৮ জানুয়ারি সেই বিলুপ্তির সময়ের বৈশ্বিক মহামারী মোকাবিলা দলের সদস্য লুসিয়ানা বোরজো সরকারের কাছে আর্জি করে বলেন, “মহামারী ঠেকাতে এখনই কাজ করো। প্রাইভেট কোম্পানির সাথে সমন্বয় করে দ্রুত বানিয়ে ফেলো টেস্টিং কিট যা সহজে ব্যবহার করা যায়।” কিন্তু অফিসটি বিলুপ্ত হওয়ার কারণে তাদের আশংকা সরকার আমলে নেয় না। আশংকার বিপরীতে আশু সতর্কতার কথা প্রেসিডেন্টের কানে না দিয়ে তারা বরং ওয়াল স্ট্রিট জার্নালে প্রকাশ করে। মহামারী শুরুতে কাজে ঝাঁপিয়ে না পড়ে আমেরিকা সেই সময়ে কোন পদক্ষেপই গ্রহণ করেনি।
২০১৪ সালে পশ্চিম আফ্রিকার ইবোলা মহামারী মোকাবিলার জন্য যুক্তরাষ্ট্র সাহায্য দলের প্রধান সমন্বয়কারী রন ক্লাইন বলেন, “অনেক খারাপ অবস্থা। দিশাহীন, পক্ষপাতে অন্ধ, সিদ্ধান্ত গ্রহণে দীর্ঘ সময় লাগানো এবং সমন্বয়হীন আমেরিকা কোভিড-১৯ ভাইরাস সংকট নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি, ফলাফল হতে যাচ্ছে ভয়ানক”। জনস হপকিন্স মেডিসিনের দুর্যোগ মোকাবিলা দলে কর্মরত লরেন শাওয়ার বলেন, “আমি যত স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের সাথে করোনা প্রসঙ্গে কথা বলেছি তারা প্রত্যেকেই প্রচণ্ড উদ্বেগ উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন”। ‘গাভি’ ভ্যাকসিন অ্যালায়েন্সের প্রধান শেথ বার্কলি বলেন, “একজন আমেরিকান হিসেবে আমি ভীত, শিল্পায়নের এই যুগে করোনা ভাইরাসের আক্রমণে আমেরিকার শ্রেষ্ঠত্ব হয়ত শেষ হতে চলেছে।”
আগামী মাসগুলো
করোনা-যুদ্ধে বিপর্যয়ের মুখে পড়ে ঘুরে দাঁড়ানো হয়ত কঠিন, কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের জন্য কিছুই অসম্ভব নয়। বলা যায় আমাদের নিকট ভবিষ্যৎ ইতিমধ্যেই নির্ধারিত হয়ে গেছে কারণ করোনার আক্রমণ ধীর গতির এবং অসুস্থতা দীর্ঘদিনের। যে মানুষগুলো কয়েকদিন আগে ভাইরাস আক্রান্ত হলো তাদের উপসর্গ মাত্র প্রকাশ পেতে শুরু করেছে। এমনকি আক্রান্ত মানুষগুলো বাড়িতে নিজেরা বিচ্ছিন্ন থাকলেও তাদের সংক্রমণ ঠেকাতে পারবে না। আক্রান্তদের কেউ কেউ এপ্রিলের শুরুতেই হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণে ভর্তি হয়ে যাবে। গেল সপ্তাহে আমেরিকায় করোনাক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ১৭,০০০ কিন্তু প্রকৃত সংখ্যা হয়ত ৬০,০০০ থেকে ২৪৫,০০০ এর মাঝামাঝি। করোনাক্রান্ত রোগীর সংখ্যা এখন বাড়ছে জ্যামতিক হারে লাফিয়ে লাফিয়ে।
ইতালি স্পেনের অবস্থা ভয়াবহ, ভবিষ্যৎ অন্ধকার। হাসপাতালে তিল ধারণের ঠাই নাই, চিকিৎসা সরঞ্জাম নাই, ডাক্তার নাই, নার্স নাই। তারা সবাইকে চিকিৎসা দিতে পারছে না, বাঁচাতে পারছে না। ডাক্তাররা বাধ্য হয়ে অচিন্ত্যনীয় পরিশ্রম করছে, যেসব রোগীদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা বেশি তাদেরকে চিকিৎসাসেবা বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে, যাদের অবস্থা গুরুতর তাদেরকে মৃত্যুর জন্য ফেলে রাখা হয়েছে। ইতালির থেকে যুক্তরাষ্ট্রের মাথাপিছু হাসপাতালের বিছানা কম। লন্ডনের ইম্পেরিয়াল কলেজের এক গবেষক দল প্রকাশ করেছে, যদি করোনা মহামারী থামানো না যায় তাহলে এপ্রিলের শেষ নাগাদ যুক্তরাষ্ট্রের সব হাসপাতালের বিছানা করো রোগীতে ভরে যাবে। জুনের শেষে প্রতি ১৫ জন কোভিড-১৯ আক্রান্ত গুরুতর রোগীর জন্য একটা করে বিছানা ভাগে পড়বে। গ্রীষ্ম শেষ হতে হতে মহামারীর কারণে সরাসরি মারা যাবে ২ কোটি ২০ লাখ আমেরিকান। করোনাভাইরাস চিকিৎসা দিতে গিয়ে আরেক হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটবে- হার্ট অ্যাটাক, স্ট্রোক, গাড়ি অ্যাক্সিডেন্টে আহত রোগীরা মারা যাবে স্রেফ চিকিৎসা না পেয়ে। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে চাইলে চারটা কাজ করতে হবে এবং যতদ্রুত সম্ভব।
প্রথম এবং প্রধান গুরুত্বপূর্ণ কাজ হলো অতিদ্রুত মাস্ক, গ্লাভস, পারসোনাল প্রোটেক্টিভ ইক্যুপমেন্ট (পিপিই) বানাতে হবে। যদি স্বাস্থ্য কর্মীই সুস্থ্য না থাকে তাহলে পুরো চিকিৎসা ব্যবস্থাটাই ভেঙে পড়বে। কিছু স্থানে চিকিৎসা সামগ্রী ইতিমধ্যেই শেষ পর্যায়ে। ডাক্তাররা একরোগী থেকে অন্যরোগী দেখতে যাওয়ার সময় আগের সামগ্রী ব্যবহার করছেন। ডাক্তাররা জনসাধারণের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করছেন, অনেকে বাড়িতে নিজেদের সুরক্ষা মাস্ক, গ্লাভস সেলাই করে বিকল্প বানিয়ে নিচ্ছেন। সরঞ্জামাদি কমে যাওয়ার কারণ হলো, সরঞ্জামাদি ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই অর্ডার করতে হয়, হঠাৎ করে প্রচুর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় বায়জান্টাইন ইন্টারন্যাশনাল সাপ্লাই চেইন কোম্পানি যোগান দিতে হিমশিম খাচ্ছে। চীনের হুবেই প্রদেশ যেখান থেকে করোনা ভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারীর সূচনা। হুবেই প্রদেশে মেডিকেল মাস্ক তৈরির কারখানাও ছিল।
যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসা সরঞ্জামাদির ভাণ্ডার ‘স্ট্রাটেজিক ন্যাশনাল স্টকপাইল’ ইতিমধ্যে কাজ শুরু করে দেয়, বিশেষ করে সে স্টেটে করোনা সংক্রমণ বেশি পরিমাণে ছড়িয়েছে। রাজার মজুদও শেষ হয়ে যায়, কিন্তু কিছু সময়ের জন্য মহামারী ঠেকিয়ে রাখতে পারে। ডোনাল্ড ট্রাম্প সেই সময়টা কাজে লাগাতে পারতেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ডিফেন্স প্রোডাকশন অ্যাক্ট কার্যকর করে, যুদ্ধাবস্থার মত জরুরী ভিত্তিতে আমেরিকার সকল কারখনাগুলো চিকিৎসা সরঞ্জাম তৈরি করাতে পারতেন। গত বুধবার (১৮ মার্চ) লক ডাউন ঘোষণা করলেও যুক্তরাষ্ট্রের চেম্বার অব কমার্স এবং বিভিন্ন কোম্পানির পরিচালকদের চাপে সুযোগটা পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারলেন না।
কিছু কিছু কলকারখানা ইতিমধ্যেই চিকিৎসা সরঞ্জাম, পিপিই বানানো শুরু করেছে যদিও প্রয়োজনের তুলনায় সেই সংখ্যা নিতান্ত অপ্রতুল এবং সেগুলো ঠিকঠাক বণ্টন হয়নি। নেব্রস্কা ইউনিভার্সিটির মেডিকেল সেন্টারের গণস্বাস্থ্য বিভাগের ডিন আলি খান বলেন, “আমরা একদিন একটা গল্প শুনে জেগে উঠবো, একটা শহরের একজন ডাক্তার কলা দিয়ে চিকিৎসা করতো আর আরেক শহরের আলমারির মধ্যে জমে ছিল মাস্কের স্তুপ”। জনস হপকিন্সের ব্লুমবার্গ গণস্বাস্থ্য স্কুলের পরিচালক থমাস ইংলেসবি বলেন, “আমাদের এখন লজিস্টিক্স এবং সাপ্লাই চেইন ব্যবস্থা দরকার দেশব্যাপী”। হোয়াইট হাউজে হুড়োহুড়ি করা ছোট্ট এবং অদক্ষ দলের লোক দিয়ে লজিস্টক্স এবং সাপ্লাই চেইন কার্যকর করা সম্ভব না। সমাধান হিসেবে বলেন, “করোনা নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রের ডিফেন্স লজিস্টিক্স এজেন্সিকে কাজে লাগাতে হবে, তাদের ২৬০০০ দক্ষ কর্মী বাহিনি আছে যারা সবসময় প্রস্তুত, যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর বিদেশী অপারেশনে এবং গণস্বাস্থ্য সংকট নিরসনে কাজ করে। ২০১৪ সালে ইবোলা মহামারী দেখা দিলে তারা সফলতার সাথে কাজ করেছিল।”
ডিফেন্স লজিস্টিক্স এজেন্সি করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের চাপ সামলাতে পারবে। কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর পরীক্ষার ধীর গতির পিছনে পাঁচটি ঘাটতি দায়ী। যে মানুষ করোনাক্রান্ত রোগী পরীক্ষা করবে তার জন্য পিপিই এবং মাস্কের অপ্রতুলতা, ভাইরাসের নমুনা সংগ্রহের সরঞ্জামের অভাব, ভাইরাসের জেনেটিক পরিচয় জানার জন্য নমুনা পরীক্ষার কিটের অভাব, কিটের আনুষঙ্গিক কেমিক্যালের অভাব এবং সাপ্লাই চেইনের ব্যর্থতা। যুক্তরাষ্ট্র তিনটা কেমিক্যাল প্রস্তুতকারক কোম্পানির উপর নির্ভর করে থাকে, সাপ্লাই দিতে দেরি করলে যাদেরকে বরখাস্ত করার নিয়ম আছে তবুও ক্রমবর্ধমান বৈশ্বিক চাহিদার কারণে তারা সবাই সময় মত কেমিক্যাল সরবরাহ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। এই সময়ে দেখতে হবে, ইতালির লোম্বার্ডি ইউরোপের সবচেয়ে আক্রান্ত, সেখানে ভাইরাসের নমুনা সংগ্রহের সরঞ্জামের কারখানা আছে।
কিছু ঘাটতি ইতিমধ্যে চিহ্নিত করা গেছে। ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন এখন দ্রুত প্রাইভেট ল্যাবে করোনাভাইরাস পরীক্ষার কিট নির্মানের অনুমোদন দিচ্ছে। নিদেনপক্ষে একঘন্টার কম সময়ের মধ্যে যেন পরীক্ষার ফলাফল জানাতে পারে। ডাক্তারদেরকে অনুমোদন দেয়া হয়েছে তাদের আশেপাশে কেউ করোনাক্রান্ত হলে জানার অধিকার তাদের আছে। পাবলিক হেলথ ল্যাবরেটরিজ অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে কেলি রোব্লেস্কি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র এখন তাদের কাছে প্রতিদিনের চাহিদা বাড়িয়ে দিচ্ছে।”
মার্চের ছয় তারিখে ট্রাম্প বলেছিলেন, দেশের যে কেউ টেস্ট করাতে চাইলে করাতে পারবেন”। কিন্তু এটা আসলে সত্যি ছিল না, এখনো নেই, প্রেসিডেন্টের অফিসের কর্মকর্তারাই দ্রুত তাকে ভুল ধরিয়ে দেন। যদিও আতংকিত মানুষের ঢল পড়ে গেল হাসপাতালে, তারা করোনাভাইরাস টেস্ট করাতে চায়, কিন্তু কোন টেস্ট কিট নেই। হাসপাতালকে করোনা মহামারী মোকাবিলা উপযোগী করার বিশেষজ্ঞ দলে কাজ করছেন জর্জ মেসন ইউনিভার্সিটির গবেষক সাসকিয়া পপেসকু। তিনি বলেন, “যার করোনাক্রান্তের কোন লক্ষ্মণ নেই সেও হাসপাতালে এসে বসে আছে করোনা টেস্ট করানোর জন্য, কার পাশে বসে কেউ হয়ত কাশি দিয়েছে সেই মানুষটাও চলে এসেছে করোনা টেস্ট করানোর জন্য”। যাদের সামান্য ঠাণ্ডাসর্দি হয়েছে তাদেরকে দেখার জন্যও ডাক্তারদের মাস্ক ও অন্যান্য সুরক্ষা সামগ্রী লাগছে, যদিও তারা ইতিমধ্যেই ঘাটতিতে আছে। তিনি বলেন, মানুষের এহেন আচরণ দেশের সার্বিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থাকেই চাপের মুখে ফেলে দিয়েছে। এমনকি করোনা শনাক্ত করার যন্ত্রপাতি, পোশাকের সুবিধা বাড়লেও পরীক্ষা করতে খুব সাবধানে, হিসেব করে। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির এপিডেমোলজি বিভাগের অধাপক মার্ক লিপস্টিচ বলেন, “আমাদের প্রথম পরীক্ষা করা দরকার স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের এবং হাসপাতালের প্রতিটি রোগীদের এবং রোগজীবাণু যাতে বাইরে ছড়িয়ে পড়তে না পারে খেয়াল রাখা। এরপরে যখন জরুরী সংকট একটু প্রশমিত হবে তখন, পর্যায়ক্রমে সবাইকে পরীক্ষা করাতে হবে”। ইংলেসবি বলেন, “করোনা মহামারিকে এভাবে চলতে দেয়া যায় না, এর একটা বিহিত করা দরকার।
প্রতিরোধ ব্যবস্থা কার্যকর হতে সময় লাগবে। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হয় আমাদের সামর্থ্যের বাইরে চলে যাবে অথবা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে চলে আসবে। এতেই নিহিত ভবিষ্যৎ… আমাদের জাতির ভাগ্য তৃতীয় অত্যাবশ্যকীয় কাজের উপর, সেটা হলো সামাজিকভাবে পরস্পরের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা। এভাবে চিন্তা করি, আমেরিকাতে এখন দুইটা অংশ। একটা অংশে আছে সবাই স্বাস্থ্যসেবা খাতে রয়েছে, তারা রোগীকে চিকিৎসা দিচ্ছেন, করোনা পরীক্ষা করছেন, কেউবা চিকিৎসা যন্ত্রপাতি তৈরিতে নিয়োজিত। অন্যদলে বাকি সবাই, তাদের কাজ হবে প্রথমদলের কাজের প্রস্তুতির জন্য সময় দেয়া। অন্য দলের সবাইকে করোনাক্রান্ত হওয়ার উর্ধ্বমুখী রেখাকে সমান্তরাল করে ফেলতে হবে। লোকালয় থেকে শারীরিকভাবে নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে করোনা সংক্রমণের দুষ্টচক্র ভেঙে দিতে হবে। কোভিড-১৯ সংক্রমণের হার কমিয়ে আনতে পারলেই স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা ভবিষ্যতে ভেঙে পড়া থেকে রেহাই পাবে। কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়ে ফেলতে হবে এখনি। কোন সিদ্ধান্ত যথাযথ মনে হওয়ার আগ পর্যন্ত, কয়েক সপ্তাহ অবশ্যই চালিয়ে যেতে হবে।
কোন দেশের সব মানুষকে স্বেচ্ছায় ঘরের মধ্যে রাখা এত সহজ নয় এবং হোয়াইট হাউজ, মেয়র, গভর্নর এবং ব্যবসা মালিকেরা বাধ্য হয়েছেন নিজেদের সিদ্ধান্ত নিতে। কিছু স্টেট বড় জনসমাবেশ নিষিদ্ধ করেছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হোটেল রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে দিয়েছে। কমপক্ষে ২১টি স্থানে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিন ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে, মানুষকে বলা হচ্ছে, ওগো আজ তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে। তবুও অনেক মানুষ সতর্কতা অমান্য করে খোলা জায়গায় ভীড় জমাচ্ছে।
এই মুহূর্তে অনেকের ত্যাগের উপরেই নির্ভর করছে ভবিষ্যতে সৌভাগ্যের দুয়ার। চতুর্থ গুরুত্বপূর্ণ হলো পারষ্পারিক স্বচ্ছ সহযোগিতা। সামাজিক দূরত্বের গুরুত্ব মানুষকে বুঝিয়ে বলতে হবে। তাদেরকে অবশ্যই সঠিক তথ্য দিয়ে আশ্বস্ত করতে হবে। এসব না করে ডনাল্ড ট্রাম্প করোনাতংক এড়িয়ে যাওয়ার জন্য আমেরিকাবাসীকে বারংবার বলতে লাগল, “করোনাভাইরাস পুরোপুরি আমাদের নিয়ন্ত্রণে আছে।” কিন্তু করোনাক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়তে লাগল তখনো বলা হচ্ছিল সংক্রমণ শূন্যের কাছাকাছি। কখনো ট্রাম্পের দাবী অনুযায়ী সর্বত্র করোনাভাইরাস পরীক্ষা করা যাবে এবং তার বিভ্রান্তিকর, হঠকারী মন্তব্যে সমস্যা আরও তীব্র হয়। এমনকি সে করোনাভাইরাস চিকিৎসায় কার্যকরী প্রমাণিত নয় এমন ওষুধও বিক্রির চেষ্টা করেছে। (এ সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ক্লোরোকুইন ও হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ব্যবহারের বিষয়ে এই অনুমোদন দেয়, যা ট্রাম্পের পরামর্শ ছিল।)
হোয়াইট হাউজের গণমাধ্যম থেকে দূরে সরে ট্রাম্প আপাতত আমেরিকার ন্যশনাল অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজ ইন্সটিটিউটের পরিচালক অ্যান্থনি ফুচি’র পরামর্শ মেনে চলছেন। ফুচি রোনাল্ড রিগান থেকে শুরু করে ডোনাল্ড ট্রাম্প পর্যন্ত সব প্রেসিডেন্টকে মহামারী সম্পর্কে পরামর্শ দিয়েছেন এবং এখন কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে গঠিত কার্যকরী দলের প্রধান। প্রায় প্রতিদিন ট্রাম্পের সাথে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করছেন। ফুচি বলেন, “প্রেসিডেন্টের নিজস্ব ধরন আছে, সেটা তার মত থাকতে দিন, কিন্তু আমি যেসব এপর্যন্ত যত পরামর্শ দিয়েছি, তিনি সব শুনেছেন।”
কিন্তু ট্রাম্পকে মনে হয় সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগছেন। সাম্প্রতিক দিনগুলোতে ট্রাম্প সামাজিক বিচ্ছিন্নতার নীতি অনুসরণ না করে অর্থনীতি বাঁচানোর জন্য চিন্তিত। অর্থনীতির পণ্ডিত আর ব্যবসায়ী নেতাদেরও একই সুর। তারা যুক্তি দেখাচ্ছে কোন মানুষেরা বেশি ঝুঁকিপূর্ণ; যেমন বয়োবৃদ্ধ। সুতরাং বয়োবৃদ্ধদেরকে ঘরে নিরাপদে রেখে যাদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম তারা কাজে ফিরে আসুক। এরকম চিন্তা চমৎকার, কিন্তু ভুলে ভরা। একজন মানুষের জীবনের ঝুঁকি পরিমাপ করে ফেলাটা অতিঅনুমান এবং বয়স্ক নাগরিকদেরকে ঝুঁকিপূর্ণ বলে চার দেয়ালে বন্দি করে সমাজ বিচ্ছিন্ন করার কৌশল মনে হয়। অপেক্ষাকৃত তরুনদের ‘কম ঝুঁকিপূর্ণ’ করোনা ভাইরাস করবে না এরকম অবমূল্যায়নের ফল ভোগ করছে আমেরিকা। কম ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের স্রোতে ভরে গেছে হাসাপতাল, এমনকি আমেরিকায় কমবয়সীরাই বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।
পেনসিলভেনিয়া ইউনিভার্সিটির সাম্প্রতিক এক বিশ্লেষণে অনুমান করা হয়েছে যদি সামাজিক বিচ্ছিন্নতা নীতি যথাযথ প্রয়োগ করে করোনা ভাইরাস আক্রান্তের পরিমাণ ৯৫ শতাংশ পর্যন্ত কমিয়ে আনা সম্ভব হয় তবুও ৯ লাখ ৬০ হাজার আমেরিকান রোগীর জন্য ইনটেনসিভ কেয়ার বিছানার প্রয়োজন হবে। যুক্তরাষ্ট্রে এখন ১ লাখ ৮০ হাজার রোগীকে কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্রের সুবিধা দিতে পারবে। তদুপরি, যে পরিমাণ ডাক্তার, সংকটাপন্ন রোগীকে সেবা দিতে পারার মত জনবল আছে তা দিয়ে ১ লাখ রোগীকে কৃত্রিম উপায়ে শ্বাসপ্রশ্বাস দিয়ে চিকিৎসা দিতে পারবে। সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্নতার নীতি থেকে সরে আসা হবে চরম বোকামিপূর্ণ। ভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত করার যন্ত্র, পিপিই এবং চিকিৎসা সরঞ্জামের এমন দুষ্প্রাপ্যতার সময়ে সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্নতার নীতি থেকে সরে আসা আত্মহত্যার সামিল।
যদি ট্রাম্প সঠিক কাজ করতে পারে, যদি আমেরিকানরা সামাজিকভাবে নিজেদেরকে বিচ্ছিন্ন রাখতে পারে, যদি করোনাভাইরাস পরীক্ষা চালিয়ে যেতে পারে এবং যথেষ্ঠ পিপিই বানাতে পারে তাহলে কোভিড-১৯ এর যে ভয়াবহতা অনুমান করা হয়েছে সেটা কাটানো সম্ভব, নিদেনপক্ষে মহামারিকে কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। কেউ জানে মহামারী নিয়ন্ত্রণে কত সময় লাগবে, কিন্তু এটা দ্রুত সম্ভব হবে না নিশ্চিত। ফুচি বলেন, “হয়ত এক বা দেড় মাস থেকে তিনমাসের মধ্যে মহামারী নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে। তবে, এই সময়ের মধ্যেই মহামারী নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে এমনটা জোর দিয়ে বলা যায় না।”
শেষ খেলা
এমনকি সবচেয়ে সঠিক সিদ্ধান্তও অনেক সময় মহামারী ঠেকাতে পারে না। যতক্ষণ পর্যন্ত কোথাও একটা ভাইরাস থাকবে ততক্ষণ নতুন করে সংক্রমণের সম্ভাবনা আছে। সংক্রামিত রোগী একস্থান থেকে আরেক স্থানে যাওয়ার সময় জ্বালিয়ে দিতে পারে পুনরায় নেভানো আগুন। এরকমটা এখন চীনে, সিংগাপুরে এবং অন্যান্য আক্রান্ত দেশগুলোতে যারা মনে করেছিল ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে চলে এসেছে। এমতাবস্থায়, সম্ভাব্য তিনটা উপায়ে খেলা শেষ হতে পারে। প্রথমটা ঘটার সম্ভাবনা নাই, দ্বিতীয়টা খুব বিপদজনক এবং তৃতীয়টা খুব দীর্ঘমেয়াদী।
প্রথমত, প্রতিটি দেশ ও জাতি ২০০৩ সালের মূল সার্স ভাইরাসসহ বর্তমান কোভিড-১৯ ভাইরাসকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসবে। করোনাভাইরাস যত বৈশ্বিক মহামারী আকারে ছড়িয়েছে এবং যেভাবে দেশগুলো ভীত হয়ে পড়েছে তাতে মনে হচ্ছে ভাইরাস নিয়ন্ত্রণের বৈশ্বিক ঐক্য প্রচেষ্টা নিতান্ত ক্ষুদ্র।
দ্বিতীয়ত, কোভিড-১৯ ভাইরাসও অতীতের সব মহামারী ফ্লু’র মতই কাজ করে। অতীতের বৈশ্বিক মহামারীও অনেক জ্বালিয়ে পুড়িয়ে খাক করে দিয়ে গেছে, তবুও বেঁচে গেছে অনেকে যাদের শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা যথেষ্ঠ শক্তিশালী, কিন্তু বেঁচে যাওয়া রোগীরাও ঠিকই ভাইরাস ছড়ায়। তাদের দলগতভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠবে যা আশা ব্যঞ্জক। কিন্তু এর জন্য আমাদেরকে চরম মূল্য দিতে হবে কারণ, কোভিড-১৯ অন্যান্য ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস থেকে অনেক বেশি সংক্রামক এবং ভয়ানক। কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে লাখে লাখে মানুষ বেঘোরে প্রাণ হারাবে এবং দেশের স্বাস্থ্য, চিকিৎসা ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেবে। অতীতের বৈশ্বিক মহামারীতে মরে যাওয়ার পর বেঁচে থাকাদের শরীরে দলগত প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠবে এমন নীতিতে অনড় ছিল যুক্তরাজ্য। ফলে তাদের ভয়ানক পরিণতি ঘটেছিল। যুক্তরাষ্ট্রও ঠিক একই পথে হাঁটছে।
তৃতীয় উপায় হতে পারে; পৃথিবী ভাইরাসের সাথে দীর্ঘমেয়াদী সাপ-লুডো খেলে। কোন একটা স্থান উজার হয়ে যাওয়ার পরে হয়ত ভ্যাকসিন আবিষ্কার হলো। এটাও একটা উপায় কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী এবং জটিল। এটা নির্ভর করছে কতদিনের মধ্যে ভ্যাকসিন প্রস্তুত হচ্ছে। এটা যদি ফ্লু মহামারী হ’তো তাহলে নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হ’তো। পৃথিবীর মানুষ ফ্লু ভ্যাকসিনে অভ্যস্ত এবং বছর অনেক মানুষ ফ্লু টিকা নেয়। কিন্তু করোনার কোন প্রতিষেধক এই মুহূর্তে মানুষের হাতে নাই। এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসের সংক্রমণ মৃদু হোক আর বিরল হোক তার কোন হদিস গবেষকদের হাতে নেই। সুতরাং গবেষকদের শুরু করতে হবে শূন্য থেকে। প্রথম পদক্ষেপ সন্তোষজনক দ্রুত গতিতেই এগিয়েছে। মডার্না এবং ন্যাশনাল হেলথ ইন্সটিটিউটের সম্ভাবনা জাগিয়েছে, তারা ভ্যাকসিন উৎপাদনের কাছাকাছি চলে এসেছে, গত সোমবার (২৩ মার্চ) পরীক্ষামূলক প্রয়োগ করে। বিজ্ঞানীরা প্রথমবারের মত ভাইরাসটির জিনের সিক্যুয়েন্স তৈরি থেকে শুরু করে মানুষের শরীরে প্রবেশ করা পর্যন্ত ৬৩ দিনের পর্যবেক্ষণ রেকর্ড করেন। ফুচি উল্লসিত হয়ে বলেন, “নিঃসন্দেহে এটা বিশ্ব রেকর্ড।”
এটা খুব দ্রুত পদক্ষেপ, যদিও কিছু কাজ মন্থর গতিতে চলছে। প্রাথমিক প্রয়োগেই গবেষকরা বুঝতে পারবেন ভ্যাকসিন নিরাপদ কিনা এবং রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার উন্নতি ঘটে কিনা। গবেষকদের তখন নিশ্চিত হতে হবে এই ভ্যাকসিন কার্যকরভাবে কোভিড-১৯ সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে পারে। প্রাণীর উপর বার বার প্রয়োগ করে দেখতে হবে ভ্যাকসিন ব্যবহারের কারণে গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দেয় কিনা। গবেষকদের বের করতে হবে ভ্যাকসিনের উপাদান, মানুষের শরীরে কয়বার প্রয়োগ করতে হবে, বয়স্কদের শরীরে কাজ করে কিনা, কার্যকারিতা বাড়াতে আর কোন রাসায়নিক উপাদান বাড়াতে হবে কিনা।
সেথ বার্কলে বলেন, “এমনকি যদি ভ্যাকসিন সফল হয়, তবুও এখনি বৃহৎ পরিসরে উৎপাদনে যাওয়া সম্ভব না”। কারণ মর্ডানা এখন ভ্যাকসিন তৈরিতে নতুন ধরনের পদ্ধতি শুরু করেছে। বর্তমান ভ্যাকসিনের মাধ্যমে শরীরে সুপ্ত বা অল্প পরিমাণ ভাইরাস মানুষের শরীরে প্রবেশ করানো হয় ফলে শরীর আগেই রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলে। মর্ডানা ভ্যাকসিনে থাকে সার্স কোভিড ভাইরাসের জিন উপাদন আরএনএ। গবেষকরা বলছেন, ভাইরাসের জিন মানুষের শরীরের ভাইরাসের বসতি গড়ে তুলবে ফলে, শরীরে ভাইরাসরোধী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গড়ে উঠবে। এই প্রক্রিয়া ইতিমধ্যে প্রাণীদের উপর প্রয়োগ করে সফলতা পাওয়া গেছে, কিন্তু মানুষের ক্ষেত্রে এখন কার্যকর প্রমাণিত হয়নি। অন্যদিকে ফ্রান্সের গবেষকরা প্রচলিত হামের ভ্যাকসিনের সাথে করোনা ভাইরাসের জীবাণু ব্যবহার করে করোনা ভাইরাসের ভ্যাকসিন বানানোর চেষ্টা করছেন। বার্কলে বলেন, “ফ্রান্সের প্রচেষ্টা সফল হলে অনেক সহজ হয়ে যাবে। যদি আগামী কালের মধ্যেই হাজার হাজার ভ্যাকসিন প্রয়োজন হয় তাহুলে বিশ্বব্যাপী ওষুধ কারখানাগুলোতে অতিসহজেই ভ্যাকসিন বানিয়ে ফেলতে পারত, কারণ তারা সবাই জানে এই ভ্যাকসিন কীভাবে বানাতে হয়”।
কোনও কৌশল বেশি দ্রুত সেটা কোন বিষয় না, বার্কলে এবং অন্যান্য গবেষকরা ধারণা করছে কমপক্ষে ১২ থেকে ১৮ মাস সময় লাগবে পরীক্ষিত ভ্যাকসিন বানাতে। উৎপাদিত ভ্যাকসিন বিপনন হয়ে মানুষের শরীরে প্রয়োগ করতে করতে আরও সময় চলে যাবে।
তখন থেকে করোনাভাইরাস আমেরিকান মানুষের জীবনের সঙ্গী হয়ে যাবে, বছরে কমপক্ষে একবার টিকা নিতে হবে। যদি সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন থেকে করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণ করা যায় তাহলে, মহামারীতে হয়ত কিছুটা ভাটা পড়বে এবং দেখা যাবে স্বাভাবিক অবস্থার আভাস। আগের মতই ভরে উঠবে অফিস কর্মমুখর, বারে ব্যস্ত কোলাহল। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে যাবে, বন্ধুরা আবার আড্ডা দিতে পারবে। কিন্তু যদি মুক্ত চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা না হয় তাহলে ভাইরাস সংক্রমণ ফিরে আসবে আবার। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির ইম্যুনোলজি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজ বিভাগের গবেষক স্টিফেন কিসলার বলেন, “তার মানে এই নয় যে সমাজ ২০২২ সাল পর্যন্ত লকডাউন থাকবে। কিন্তু আমাদেকে কয়েক পর্যায়ে সামাজিকভাবে বিচ্ছিন্ন থাকার প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে”।
আগামী বছরগুলোতে মহামারী বারবার ফিরে আসবে, কিছু সময় স্থায়ী হবে এবং সামাজিক জীবনের অবাধ চলাচল বাধাগ্রস্ত করবে। অবশ্য নির্ভর করছে ভাইরাসের দুইটি বৈশিষ্ট্যের উপর যেটা আমরা এখনো জানি না। প্রথমত মৌসুমি করোনা শীতকালে আক্রমণ করতে পারে এবং গ্রীষ্মকালে চলে যাবে। কিন্তু মৌসুমী করোনাভাইরাসের আক্রমণ হবে মরণকামড় এবং দ্রুত কারণ অনেকেরই শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা নাজুক, সংক্রমণের জন্য আদর্শ শরীর। হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল এবং বোস্টন শিশু হাসপাতালের গবেষক মায়মুনা মজুমদার বলেন, “দুনিয়াশুদ্ধ মানুষ আতংকিত হয়ে অপেক্ষা করছে কী ঘটে দেখার জন্য, যদি গরমে রোগের প্রাদুর্ভাব অন্যত্র সরে যায়।”
দ্বিতীয়: ভ্যাকসিনের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার মেয়াদ। যখন মানুষ করোনা ভাইরাসে মৃদু আক্রান্ত হয়ে ঠাণ্ডা জ্বর সর্দিতে ভুগলেও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ঠিকই অবশিষ্ট থাকবে। অন্যদিকে যারা সার্স ভাইরাসে তীব্রভাবে আক্রান্ত তবুও তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা আগের মতই আছে। ধারণা করা হচ্ছে ‘সার্স কোভ-২ জীবাণু থাকে ভাইরাসের অভ্যন্তরে। যারা করোনা মুক্ত হয়েছে তাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কয়েক বছরের জন্য বেড়ে গেল। নিশ্চিত হওয়ার জন্য বিজ্ঞানীদের প্রত্যেকের শরীরের নমুনা পরীক্ষার নিখুঁত তথ্যের ভাণ্ডার বানাতে হবে, যা দেখেই বোঝা সম্ভব কার শরীরে রোগ প্রতিরোধ সক্ষমতা কতটুকু। বিজ্ঞানীদেরকে আরও নিশ্চিত হতে হবে যে, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা ভাইরাস সংক্রমণ এবং বিস্তার প্রতিরোধ করতে পারে কিনা। যদি কোন নাগরিক রোগ প্রতিরোধে সক্ষম হয় তবে সে কাজে যোগ দিতে পারবে। অসুস্থদের চিকিৎসাসেবা দিতে পারবে এবং সামাজিক বিচ্ছিন্নতার দুর্দিনে অর্থনীতি টিকিয়ে রাখার কাণ্ডারি হতে পারবে।
বিজ্ঞানীরা দুর্দিনের মধ্যেই ভাইরাসরোধী ওষুধ আবিষ্কারের কাজ করবে। যদিও এই ওষুধ সর্বরোগের মহৌষুধ নয়, পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা আছে, প্রতিরোধের আশঙ্কা আছে। হাসপাতালগুলো প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি মজুদ করে ফেলতে পারে। কিন্তু করোনা টেস্ট কিট সর্বত্র পৌঁছে দিতে হবে যাতে করোনা ফিরে আসার সাথে সাথে রোগী শনাক্ত করা যায়। অসচেনতার কারণে সার্স কোভ-২ ভাইরাসকে আবার আমেরিকার মানুষদের আক্রমণ করার সুযোগ দেয়ার কোন কারণ নেই। ভবিষ্যতেও এত কড়াকড়িভাবে সামাজিক বিচ্ছিন্নতার দরকার হবে না। কিন্তু কঠোর হওয়া ছাড়া কোন বিকল্প নেই। ইন্ডিয়ানা ইউনিভার্সিটির মেডিকেল স্কুলের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ অ্যারোন এডওয়ার্ড ক্যারোল এবং হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের অধ্যাপক আশিস ঝা সম্প্রতি লিখেছেন, “আমাদের স্কুল এবং ব্যবসা যতটা সম্ভব খুলে রাখা উচিৎ। যখন আর চাপ নেয়া সম্ভব না তখনই বন্ধ করে দিতে হবে। রোগের প্রকোপ কমে গেলে আবার খুলে দিতে হবে। একজন আক্রান্ত চিহ্নিত হওয়ার সাথে সাথে তাকে আলাদা করে ফেলতে হবে। রক্ষণাত্মক না খেলে আমরা বরং আক্রমণাত্মক খেলতে পারি।”
দেশের সব মানুষের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অর্জন করার জন্য অপেক্ষা করছে এবং ভ্যাকসিনের জন্য চাতক পাখির মত তাকিয়ে আছে এই সময়ে ভাইরাস কিন্তু থেমে নেই। বিস্ফোরণের ন্যায় ছড়িয়ে পরিস্থিতি কঠিনতর করে ফেলেছে। ভাইরাস পুরোপুরি নির্মূল হয়ে যাবে না। ভাইরাসের জেনেটিক কোডে পরিবর্তন হলে ভ্যাকসিনও নতুন করে বানাতে হবে। মানুষকে বছর বছর নতুন ভ্যাকসিন নিতে হতে পারে। যেমনটা এখন ফ্লু নিয়ন্ত্রণে করা হয়ে থাকে। ভাইরাসের আক্রমণের ধরন দেখে মনে হচ্ছে এটি প্রতিবছর আক্রমণ করবে এবং বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়বে। কিসলার বলেন, “কিন্তু আমার আশা এবং প্রত্যাশা হলো ভাইরাসের তীব্রতা কমে যাবে এবং অপেক্ষাকৃত সামাজিক অচলাবস্থা সৃষ্টি হবে।” ভবিষ্যতে কোভিড-১৯ বর্তমানের ফ্লু’র মতো হয়ে যাবে এবং আক্রমণ করবে প্রতি শীতকালে। এমনকি করোনা ভাইরাস এতটাই সাধারণ অসুখ হয়ে যাবে যে, পর্যাপ্ত ভ্যাকসিন বাজারে থাকলেও জেনারেশন সি’র বিশাল অংশ দিব্যি কাটিয়ে দেবে জীবন ভ্যাকসিন না নিয়ে। তারা কোনদিন হয়ত ভাববে না ভ্যাকসিনের অভাবে কী মড়ক না লেগেছিল।
করোনা পরবর্তী ফলাফল
করোনাভাইরাস প্রতিরোধী শারীরিক অবস্থানে পৌঁছাতে পৌঁছাতে মৃত্যুর পাহাড় জমে উঠবে। আমার সহকর্মী অ্যানি লোরে লিখেছেন, “অর্থনীতি একটা বড় ধাক্কা খেতে যাচ্ছে, একেবারে হঠাৎ এবং তীব্র আঘাত আমাদের জীবদ্দশায় কেউ দেখিনি। আমেরিকার প্রতি পাঁচ জনের মধ্যে একজন তার কর্ম ঘণ্টা হারিয়েছেন।” হোটেলগুলো ফাঁকা হয়ে গেছে। এয়ারলাইন্সের বিমানবহর মাটিতে পড়ে আছে। খাবার দোকান আর অন্যান্য ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ। মানুষের মাঝে ধনী গরীবের ব্যবধান আরও বেড়ে যাবে। সামাজিক বিচ্ছিন্নতা নীতির ভয়াবহ দুর্ভোগের শিকার হবে নিম্ন আয়ের মানুষ যাদের নুন আনতে পানতা ফুরায়। তাদের স্বাস্থ্য ক্রমাবনতি ঘটতে থাকবে, ফলে তাদের ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যাবে। ক্যালিফর্নিয়া ইউনিভার্সিটি বার্কলে’র গবেষক এবং ওষুধের ইতিহাস অনুসন্ধানী এলিনা কোনিস বলেন, “দেশে দীর্ঘদিন কোন দুর্ঘটনা ঘটেনি কিন্তু এখন মানুষের মড়ক দেখতে হচ্ছে। আমরা এখন অনেক বেশি শহুরে এবং নাগরিক সুবিধাভোগী। আমাদের বিশাল পরিমাণ জনগোষ্ঠী জীবিকার তাগিদে বহু দূরত্ব পাড়ি দিয়ে পরিবার ছেড়ে থাকতে হয়, কাজের সন্ধান করতে হয়।”
সংক্রমণ কমে গেলেও, মানসিক স্বাস্থ্যের চরম অবনতি ছড়িয়ে পড়বে দেশে দেশে। মৃত্যুর মত ভয়ংকর আর অনিশ্চিয়তার মধ্যে বাস করে, মানুষ তার প্রিয়জনের সাথেও মিশতে পারছে না। জড়িয়ে ধরা, হ্যান্ডশেক, সামাজিক রীতিগুলো এখন মূর্তিমান বিপদের প্রতীক। মানুষের মাঝে দুশ্চিন্তা, অবসন্নতা বৈকল্যে ভুগছে। সমাজের বয়োবৃদ্ধ মানুষ যারা ইতিমধ্যে সমাজের মূল স্রোত থেকে বিযুক্ত, তাদেরকে বলা হচ্ছে দূরে থাকতে। ফলে আরও নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ছে। প্রেসিডেন্ট করোনা ভাইরাসকে ‘চায়নিজ ভাইরাস’ বলার কারণে এশিয়ান মানুষের বর্ণবাদের গ্লানির শিকার হচ্ছে। মানুষ অনিরাপদ বাড়িতে উৎকণ্ঠার মধ্যে বসবাস করতে বাধ্য হচ্ছে, বাড়ছে পারিবারিক সহিংসতা এবং শিশু নির্যাতন। শিশুদের মাধ্যমে ভাইরাস বেশি ছড়ায়, তারা মানসিক আঘাত নিয়ে শৈশব থেকে কৈশোরে পা দেবে।
করোনা মহামারী চলে যাওয়ার পর, কোভিড-১৯ ভাইরাসে আক্রান্তরা রোগ থেকে সুস্থ্য হলেও মানুষ এড়িয়ে চলবে এবং সামাজিকভাবে হেয় করবে। যেমন ইবোলা, সার্স বা এইচআইভি আক্রান্তরা সুস্থ্য হলেও সমাজে একঘরে হয়ে যায়। স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের সুস্থ্য হয়ে উঠতে বেশি সময় লাগবে। এক থেকে দুই বছর পরপর টরোন্টোতে সার্স ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়, কিন্তু যে মানুষগুলো ভাইরাসের সাথে সরাসরি যুদ্ধ করেছিল তারা অপেক্ষাকৃত কম কর্মক্ষম, তাদের দেখলে মনে হয় ঘরপোড়া গরু এবং চাপে বিদ্ধস্ত। যারা দীর্ঘদিন কুয়ারান্টাইনে ছিল তারা একাকিত্বের অভিজ্ঞতার ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছে। ব্রিটিশ কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক “দ্য সাইকোলজি অব প্যানডেমিক” বইতে লিখেছেন, “আমার উহানের এক সহকর্মী উল্লেখ করেছেন, কিছু মানুষ এখন কোয়ারেন্টিন থেকে বেরোতে চাচ্ছে না এবং মানুষের সমাগম দেখলে তারা ভয় পাচ্ছে।”
সেন্টার ফর নিউ আমেরিকা সিকিউরিটি থিংক ট্যাংক রিচার্ড ডানজিগ বলেন, “করোনাভাইরাস আঘাতের পর হয়ত আমরা আরও সম্ভাবনাময় নতুন পৃথিবীর দিকে যাচ্ছি”। ইতিমধ্যেই বাস্তবে দূরে থাকতে হবে বলেই মানুষ ভার্চুয়ালি কাছে আসার উপায় বের করে ফেলেছে, মানুষের স্বাস্থ্য চিন্তায় পরিবর্তন এসেছে। এইচআইভি সংক্রমণ এবং এইডস রোগী বৃদ্ধির কারণে যুবাদের যৌনজীবন আমূল বদলে গেছে, মহামারীর মধ্যেও তারা যৌন সম্পর্ক করছে।”
কোনিস বলেন, “কনডম ব্যবহার এখন স্বাভাবিক এবং যৌনবাহিত রোগের পরীক্ষা এখন নিয়ম হয়ে গেছে। একইভাবে ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়ার অভ্যাস যা ঐতিহাসিকভাবে চলে আসছে মনে হলেও প্রথমে হাসপাতালের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। হয়ত এমন আচরনে আমরা অভ্যস্ত হতে যাচ্ছি মহামারীর প্রাদুর্ভাব না হলে সেগুলোর কথা চিন্তাও করতাম না”।
বৈশ্বিক মহামারী সামাজিক পরিবর্তন ত্বরান্বিত করে দিতে পারে। মানুষ, ব্যবসা এবং প্রতিষ্ঠান দ্রুত পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে মানিয়ে নিচ্ছে যা হয়ত স্বাভাবিক সময়ে গুরুত্ব দেয় নি। যেমন বাড়িতে বসে অফিসের কাজ করা, শারীরিকভাবে অক্ষমদেরকে কনফারেন্স কলিংয়ের মাধ্যমে একত্রে বাসস্থানের ব্যবস্থা করা, অফিস থেকে অসুস্থতার ছুটি, বাচ্চাদের দেখাশুনা করার ব্যবস্থা। নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির নৃবিজ্ঞাননের অধ্যাপক আদিয়া বেন্টন বলেন, “জীবনে এই প্রথমবারের মত শুনলাম কেউ বলছে, ওহহ তুমি অসুস্থ? বাসায় থাক”। সম্ভবত পুরো জাতি জানবে মহামারীর প্রস্তুতি মানে এই নয় যে শুধু মাস্ক, ভ্যাকসিন, করোনা ভাইরাস পরীক্ষা, বরং স্বচ্ছ শ্রম নীতিমালা এবং বৈষম্যহীন স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। এটা খুব প্রশংসনীয় যে, স্বাস্থ্যসেবা কর্মী, এবং গণস্বাস্থ্য গবেষকের সমন্বয়ে সৃষ্টি হচ্ছে আমেরিকার জাতীয় রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা। অথচ এই খাতটি চিরকালীন অবহেলিত।
কোভিড-১৯ প্রশমনের পর আমেরিকার জাতীয় পরিচয় নিয়ে পুনরায় চিন্তা ও বিবেচনা করার দরকার। দেশটির অনেক মূল্যবোধ বৈশ্বিক মহামারীর সময় বিরুদ্ধ আচরণ করেছে। আমেরিকার ব্যক্তি স্বাতন্ত্রবাদ এবং প্রতিরোধ প্রতিবাদের নামে যা খুশি তাই করা, ভালোমন্দ গুলিয়ে ফেলা ইত্যাদি খারাপ দিক। যখন বাড়িতে থেকে জীবন বাঁচানোর প্রশ্ন তখন উন্মত্ত একদল বারে যাচ্ছে, ক্লাবে যাচ্ছে। ৯/১১ হামলার পরে সন্ত্রাসবিরোধী বার্তায় সন্ত্রাসী নির্মুল হয়ে গেছে জানার পর আমেরিকাবাসীর আর কোন ভয় নাই। কিন্তু কোভিড-১৯ ভাইরাসের সন্ত্রাসী নিয়ে কোন আগ্রহ নাই, তার আগ্রহ কেবল মানুষের ফুসফুস।
দীর্ঘদিনের নিঃসঙ্গতার খারাপ ফলাফল আছে। আমেরিকার যে নাগরিক চীনকে দেখে দূরের একটা দেশ, যেখানে বাদুড় খাওয়া যায়, রাষ্ট্রের সর্বময় কর্তৃত্ব স্বীকৃত, কেউ ব্যর্থ হলে সে চলে যাবে দ্বিতীয় সারিতে অপেক্ষমান তালিকায়, বা তাকে প্রস্তুত করা হবে না। (চীন এই সংকট নিয়ন্ত্রণ করেছে নিজেদের সমস্যা বলেই)। নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির আইন ও গণস্বাস্থ্য বিভাগের শিক্ষার্থী ওয়েন্ডি পারমেট বলেন, “মানুষ এখনো আস্থা রেখেছে, স্বেচ্ছায় ঘরে থাকলে এই মহামারী চলে যাবে। অসুস্থদের আলাদা রাখলেই আমরা ভালো হয়ে যাবে। যখন শরীরটা রাজনীতির অংশ হয়, সরকার বিচ্ছিন্নতা আর নৃতাত্ত্বিক জাতীয়তাবাদের আইডিয়া চাষ করে তখন বৈশ্বিক মহামারী দেখা দিলে আপনি হবেন সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ মানুষ।”
অতীতের মহামারী মোকাবিলায় সফল ব্যক্তিরা অনেক আগে থেকেই সতর্ক করছেন, আমেরিকানরা আতঙ্ক আর অবজ্ঞার ফাঁদে বৃত্তাকারে ঘুরছে। অ্যানথ্রাক্স, সার্স, ফ্লু, ইবোলা প্রতিটি সংকটের পরেই খুব মনোযোগ দেয়া হয়, অর্থ বরাদ্দ হয়। কিন্তু সংকট নিরসন হলেই সব ভুলে যায়, অর্থ বরাদ্দ নিয়ে গড়িমসি শুরু হয়। এই প্রবণতা প্রশাসনের মধ্যে চলে এসেছে। যখন সংকট নতুন স্বাভাবিকতায় পরিণত হয় তখন অস্বাভাবিকতা আবার অকল্পনীয়ভাবে ফিরে আসে। কিন্তু কোভিড-১৯ এত ভয়ানক যে আমাদের অনেক দ্রুত আচমকা পরিবর্তনের মধ্যে নিয়ে যাবে।
সাম্প্রতিক কয়েক দশকের কয়েকটি উল্লেখযোগ্য মহামারীতে আমেরিকায় খুব শক্তিশালী আঘাত করতে পারেনি। (সার্স, মার্স, ইবোলা) ছিল আশংকার থেকে কম ক্ষতিকর অথবা কিছু নির্দিষ্ট মানুষকে আক্রান্ত করে (জিকা, এইচআইভি)। কিন্তু কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারী, এটা সবাইকে সরাসরি আক্রমণ করছে, আক্রান্ত দেশের নিত্যনৈমিত্তিক জীবনযাপন বদলে দিয়েছে। অন্যান্য রোগের থেকে করোনার পার্থক্য হলো আমাদের সময় হুমকির সম্মুখীন। যখন কোন প্রশাসন জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাওয়াতে ব্যস্ত তখনও ফলাফলটা হয়ত বোঝা যায় না বছরের পর বছর। কিন্তু যখন একজন রাষ্ট্রপ্রধান বলেন, সবাই করোনা পরীক্ষা করাতে পারবেন এবং পরেরদিন সবাই হুজুগে হাসপাতালে চলে গেল কিন্তু পরীক্ষা করাতে পারল না তখন ভিন্ন আলাপ। বৈশ্বিক মহামারী সবাইকে গণতন্ত্রের স্বাদ দিয়েছে, করোনাভাইরাস পরীক্ষায় আক্রান্ত হলে সামাজিকভাবে সুবিধাপ্রাপ্ত, ক্ষমতা নাগরিককে কোয়ারেন্টিন থেকে রক্ষা করতে পারবে না, দেখা হবে না প্রিয়জনের সাথে। সিনেটরও আক্রান্ত হয়েছেন। ফলে গণস্বাস্থ্য খাতে সংকট নেমে আসছে, দক্ষ জনবল চলে যাচ্ছে, বাড়ছে হাসপাতালে করোনাক্রান্ত রোগীদের উপচে পড়া ভিড়।
৯/১১ এর পরে পৃথিবীর দৃষ্টি নিবন্ধ ছিল সন্ত্রাসদমনে। কোভিড-১৯ মহামারীর পর রাষ্ট্র পরিচালকদের হয়ত নজরে পড়বে গণস্বাস্থ্যের এমন বেহাল দশা। ভাইরাস নিয়ে গবেষণা এবং ভ্যাকসিন আবিষ্কারের জন্য হয়ত বরাদ্দ বাড়বে, গণস্বাস্থ্যে পড়ার জন্য ইনিভার্সিটিতে আবেদনের হিড়িক পড়তে পারে, ত্বরান্বিত হবে জিডিপিতে চিকিৎসা সরঞ্জামের অবদান। যুক্তরাষ্ট্রের সংসদীয় অধিবেশনে করোনাভাইরাস নিয়ে আলোচ্য থাকবে। অ্যান্থনি ফুচির নাম মানুষের মুখে মুখে। জনস হপকিন্স সেন্টার ফর হেলথ সিকিউরিটি’র মেডিকেল নৃবিজ্ঞানী মনিকা স্পানা বলেন, “সাধারণ মানুষ যারা সহজ চিন্তা করে তাদের কাছে মহামারী রোগ বিশেষজ্ঞ যা করেন তার সুফল ভোগ করেন একজন পুলিশ বা ফায়ার ফাইটার।”
বিভিন্ন দক্ষ মানুষের কারণেই পৃথিবী রক্ষা পাচ্ছে একের পর এক মরণঘাতী রোগ থেকে। ইবোলা মোকাবিলায় দক্ষ রন ক্লাইন বলেন, “যে দেশগুলো সার্স ভাইরাস মোকাবিলা করেছে তাদের জনসাধারণের মাঝে সচেতনতা আছে ফলে তারা দ্রুত পদক্ষেপ নিতে পারে”। এই মুহূর্তে আমেরিকার সবথেকে বেশি উচ্চারিত বাক্য হলো- “আমি এরকম আগে কখনো দেখিনি”, কিন্তু হংকং এর কেউ এরকম বলবে না। যুক্তরাষ্ট্র বা সারা বিশ্বের জন্য একেবারে স্বচ্ছ বৈশ্বিক মহামারী কী করতে পারে।
নিউ আমেরিকা সিকিউরিটি থিংক ট্যাংক, পররাষ্ট্রনীতি বিশেষজ্ঞ ইয়ান গোল্ডেনবার্গ বলেন, “ভাইরাস থেকে আমেরিকা যে অভিজ্ঞতা পেয়েছে তা অনুমান করা কঠিন। বিশেষ করে এখন অ্যালগরিদম এবং বিভাজন তত্ত্ব যেভাবে তাদের সংবাদ প্রচার করে। তাদের শ্রোতারাও এমন সংবাদ শোনার জন্যই বসে থাকে। সামনের দিনগুলো যুগসন্ধিক্ষণ”।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ বা ৯/১১ এর পরে বৈশ্বিক পরিবর্তন নতুন কোন বিষয় নয়। অটোমেশনের তর্ক আরও জোরালো হবে, সামনে আর কয়েকটা মাস সময় আছে, আমেরিকানদের পরিস্থিতি বুঝে রাতারাতি পরিবর্তনকে মেনে নিতে হবে।
কেউ সহজাতভাবে মনে করছে, পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশ বিশ্বাস করে আমেরিকা কোভিড-১৯ পরাজিত করতে পারবে। ট্রাম্পের অনেক দোষত্রুটি থাকা সত্ত্বেও ট্রাম্পের অর্থ বরাদ্দ অনুমোদন বেড়েছে। কল্পনা করে নিন, ট্রাম্প ভাইরাসকে চীনের আখ্যা দিয়ে সংকটের জন্য চীনকে দায়ী করে আমেরিকাকে নায়ক সাজাতে পারে। ট্রাম্প যদি দ্বিতীয় মেয়াদে প্রেসিডেন্ট হতে পারে তবে ন্যাটো বা অন্যান্য জোট থেকে বেরিয়ে যেতে পারে, সীমান্ত আরও সুরক্ষিত করবে এবং অন্য দেশে সাহায্য কমিয়ে দেবে। জেনারেশন সি যখন বেড়ে উঠবে তখন বিদেশী প্লেগের স্থান দখল করবে কম্যুনিস্ট এবং সন্ত্রাসবাদ সাধারণ হুমকি।
কেউ ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছেন, আমেরিকা ভিন্ন শিক্ষা পেয়েছে। ঐক্যের সুর নাকি বেজে উঠবে সামাজিক বিচ্ছিন্নতা থেকে। কারণ, মানুষ বাইরে বেরিয়ে পড়বে, প্রতিবেশী, দেশি-বিদেশি সবার সাথে সম্পর্ক গড়বে। ২০২০ সালের নভেম্বরের নির্বাচনে ট্রাম্পের নির্বাচনী স্লোগান ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ তেমন সাড়া জাগাতে পারেনি। দেশ আজ আবার দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী অচলাবস্থার মুখে। আমেরিকা কী বিচ্ছিন্ন থাকবে নাকি বিশ্ব সংহতির সাথে যুক্ত থাকবে? নিয়মিত বিনিয়োগ আর মেধাবীদের সমন্বয়ের ফলে বাড়বে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ব্যবস্থা ও জনবল। জেনারেশন সি শিশুরা স্কুলে রচনা লিখবে ‘রোগ বিশারদ হিসেবে বেড়ে ওঠা’ গণস্বাস্থ্যের নিরাপত্তা হবে রাষ্ট্রের অন্যতম পররাষ্ট্রনীতি। মহামারী বা জলবায়ু পরিবর্তনের মত বৈশ্বিক সমস্যা সমাধান করে যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্ব দেবে বিশ্বের অংশীদারিত্ব এবং অতিক্রম করবে বাধার বিন্ধ্যাচল।
২০৩০ সালেও আবার সার্স-কোভ-০৩ নতুন ধরণের ভাইরাস দেখা দেবে এবং মানুষ ভবিষ্যতেও সেই সমস্যা মাস খানেকের মধ্যে সমাধান করে ফেলবে।
(‘দ্য আটলান্টিক’ পোর্টালে প্রকাশ হওয়া ২৫ মার্চের এ নিবন্ধটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেক্ষাপটে করোনাভাইরাস সংক্রমণ নিয়ে How the pandemic will end শিরোনামে ছিল। দ্য আটলান্টিক এর বিজ্ঞানবিষয়ক প্রতিবেদক লিখেছেন এড ইয়ং।)
প্রাসঙ্গিক প্রবন্ধ
ইউভাল নোয়া হারারিঃ করোনা পরবর্তী পৃথিবী
মহামারী নভেল করোনা ভাইরাস, নতুন এক বিশ্বকে চেনালো। আশাকরি, এই সংকট কাটিয়ে উঠবে সারা বিশ্ব। ধন্যবাদ সুন্দর লেখনীর জন্য।
সবই ঠিক আছে তবে পরিবর্তিত পৃথিবীতে টিকে থাকা অনেক কঠিন হবে।
প্রত্যেকটি দেশ তার অর্থনৈতিক সংকট কীভাবে মোকাবিলা করবে তার এখনো হিসাব নিকাশ হয়নি।
মানুষে মানুষে ভেদাভেদ বাড়বে না কমবে নাকি তারা একত্রিতভাবে সমস্যা মোকাবিলা করবে তার সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় এখনই। প্রকৃতির সাথে টিক থাকতে হলে প্রকৃতিকে চিনতে হবে এবং প্রকৃতির নিয়ম অনুসারে চলতে হবে । প্রকৃতিকেও টিকিয়ে রাখতে হবে তবেই আমরা এই গ্রহে সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে পারব।