লিখেছেন: সাইফুল্লাহ মাহমুদ দুলাল
সম্প্রতি নিউজিল্যান্ডে দুটি মসজিদে হামলায় অর্ধ শতাধিক মানুষ নিহত হবার পর সে দেশের প্রধানমন্ত্রি জাসিন্ডা আরডার্ন যে ভূমিকা নেন; সে জন্য তাঁকে শান্তিতে নোবেল পুরস্কার দেয়ার প্রস্তাব এসেছে। তখন আমার মনে হলো- তাহলে কানাডার প্রধানমন্ত্রি জাস্টিনও এই পুরস্কারের জন্য অনেক বেশি যোগ্য ব্যক্তি।
জাস্টিন একজন অসাধারণ মানুষ। তাঁর আচার-ব্যবহার, তাঁর আন্তরিকতা, তাঁর বিনয় ভদ্রতা, তাঁর ব্যক্তিত্ব, তাঁর মানবতাবোধ সকলেই দৃষ্টি কাড়তে সক্ষম হয়েছে। তিনি যা করেন, তা লোক দেখানোর জন্য বা ভোট পাবার প্রত্যাশ্যায় করেন না। এটা তাঁর চারিত্রিক বৈশিষ্টের গুণাবলি। তিনি খুব সহজেই মিশে যান সাধারণ মানুষের সাথে। এই অসাধারণ গুণ পৃথিবীর আর কোন নেতা বা রাষ্ট্র প্রধানের আছে কিনা সন্দেহ।
বঙ্গবন্ধুর পর আমার প্রিয় নেতা জাস্টিন ট্রুডো। আমি ব্যক্তিগত ভাবে কোন রাজনীতি দল বা সংগঠনের সাথে যুক্ত নই। তবে কানাডায় অভিবাসী হবার পর জাস্টিনের গুণাবলি এবং কিছু বৈশিষ্ট দেখার পর তাঁর দলের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে লিবারেল পার্টির সদস্য হলাম। নেতা হিসেবে তিনি যতটা জনপ্রিয়, তার চেয়ে মানুষ হিসেবে অনেক অনেক বেশি প্রিয়। শুধু কানাডায় নয়; বর্তমান বিশ্বে তিনি এখন একজন ভালো মানুষের প্রতীক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে ফিদেল কাস্ত্রো বলেছিলেন,‘আই হ্যাভ নট সিন দ্য হিমালয়াস। বাট আই হ্যাভ সিন শেখ মুজিব’। সেই উক্তির সূত্র ধরে আমার ভাষ্য, আমি শেখ মুজিবকে দেখি নাই। কিন্তু জাস্টিন ট্রুডোকে দেখেছি।
লক্ষ করে দেখেছি, যখনই শেখ হাসিনার সাথে জাস্টিনের দেখা হয়েছে, তখনই তিনি মাথা নত করে, পা নামিয়ে, বুকে হাত দিয়ে অত্যন্ত সন্মানের সাথে কথা বলেন। শেখ হাসিনা না হয়; একটি দেশের প্রধানমন্ত্রি, কিন্তু দেশের সাধারণ নাগরিকদের সাথেও জাস্টিনের আচরণ এবং আন্তরিকতা অতুলনীয়। গাড়ি থামিয়ে রাস্তার বসে থাকা বুড়ির খোঁজ খবর নেয়া, শিক্ষার্থীদের বই-বস্তা ভার্সিটির হলে তুলে দেয়া, সাধারণ নাগরিকদের কাছের বসে কুশল জানা, শিশুদের সাথে শিশুর মতো মিশে যাওয়া, মঞ্চ ছাড়াই পার্কের কোনো বেঞ্চে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা দেয়া, প্লাস্টিকের চেয়ারের বসে প্রধান অতিথির আসন গ্রহন থেকে শুরু করে অনেক ঘটনা মানুষের মনে দাগ কেটে আছে।
উল্টো চিত্রও অনেক। একবার ওটোয়ায় তরুণদের এক সম্মেলনে গেলে কোন এক কারণে তারা অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি জাস্টিনের দিকে পিঠ দেখিয়ে অর্থাৎ পেছন ফিরে বসে প্রতিবাদ করে, সেখানে তিনি তরুণদের সাথে বিনয়ের ভাষায় বুঝাতে ব্যর্থ হয়ে আসেন এবং বলেন, তোমরা কথা না বললে আমি তোমাদের সমস্যা বুঝবো কি করে? তোমার ভুল ভাংলে আবার আসবো।
একবার অটোয়ার কোন কারণে আদিবাসীরা ক্ষুব্ধ হয়ে পার্লাম্যান ভবনে প্রতিবাদ করলে তিনি তাদের তাবুকে গিয়ে কথার জাদুতে তাদের মুগ্ধ করেন। কিছু দিন আগে আদিবাসী শিশুদের জোর করে বোর্ডিং স্কুলে নিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি আদিবাসীদের কাছে ক্ষমা চান।
সম্প্রতি ওটোয়া-মন্ট্রিয়লের বন্যায় দূর্গত এলাকা সেনা বাহিনী এবং স্বেচ্ছাসেবীকর্মীরা বন্যা নিয়ন্ত্রণের কাজ করেছে। সেখানেও প্রধান মন্ত্রি জাস্টিন ট্রুডোও সন্তানসহ যোগ দেন। তাঁর সাথে আরো ছিলেন ক’জন নিরাপত্তাকর্মী, মিডিয়াকর্মী। সেজন্য স্বেচ্ছাসেবীদের কিছুটা অসুবিধা হচ্ছিলো। তখন এক লোক জাস্টিনের উপর ক্ষুব্ধ হয়ে চিৎকার করে তর্কে জড়ান। তখন জাস্টিন তাকে তাঁর স্বভাবশোলভ বিনয়ে সুন্দর করে বুঝানোর চেষ্টা করেন।
বিশ্বের কোনো রাষ্ট্রপতি বা প্রধান মন্ত্রি সাথে এই ধরণের আচরণ করলে, তা আমেরিকাই হোক কিংবা বাংলাদেশেই হোক- সেই ব্যক্তিকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হতো। জাস্টিনের ক্ষেত্রে তা ব্যতিক্রম।
১] এবার যদি তাঁর সরকারের দিকে যৎ সামান্য দৃষ্টি দেয়া যায়, তাহলে দেখবো- তাঁর মন্ত্রি সভায় ৫০% নারীকে মন্ত্রিত্ব দিয়েছেন। এছাড়াও ২ জন প্রতিবন্দী মন্ত্রি সভায় স্থান পেয়েছেন। সেখানে কোনো বৈষম্য রাখেননি। নারী-পুরুষ প্রতিবন্দী সবাইকে সমান অধিকার দিয়েছেন।
২] জাস্টিন এতো উদার নীতির মানুষ এবং অসাম্প্রদায়িক যে, বহু জাতিক কানাডার সকল সম্প্রদায়ের অনুষ্ঠানে গিয়ে মানুষের সাথে মিশে যান। ফলে রোজা-রমজানে-ঈদে, পুজো থেকে শুরু করে সকল ধর্মের অনুষ্ঠানে হাজির হন।
আন্তর্জাতিক ঘটনার দিকে তাকালেও একাধিক মানবিকতার দৃষ্টান্ত পাওয়া যাবে।
৩] প্রতিবেশি আমেরিকায় ট্রাম্প ক্ষমতায় এসে যখন অভিবাসীদের তাড়িয়ে দেয়ার হুমকি দিলেন; তখন কানাডার জাস্টিন হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললেন- আমরা তাদের স্বাগত জানাবো।
৪] সৌদি-আমেরিকান নারী অধিকার আন্দোলনকারী সামার বাদাওয়িকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে এবং সাংবাদিক জামাল খাসোগজি হত্যার প্রতিবাদেও কানাডা বিরল ভূমিকা পালন করে। ফলে সৌদির সাথে কানাডার সম্পর্কে চরম আকার ধারণ করে। নিজদের ক্ষতি স্বীকার করেও কানাডা মানবাধিরের ক্ষেত্রে অটল।
৫] সৌদি থেকে পালিয়ে আসা তরুণী রাহাফ মোহাম্মদ আল-কুনুনকে কানাডায় সন্মানের সাথে আশ্রয় দেন। এরকম ঘটনা প্রচুর।
৬] বার্মা থেকে তাড়িত রোহিঙ্গাদের প্রতি কানাডার ভূমিকা আরেক বিরল দৃষ্টান্ত। সেজন্য জাস্টিন একাধিক উদ্যোগ নিয়েছেন, সাহায্য দিয়েছেন, বব রে কে দূত বানিয়েছেন, কানাডার বার্মার সেনা প্রধানকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং অং সান সুকিকে দেয়া কানাডার সন্মানসূচক নাগরিকত্ব বাতিল করে প্রমাণ করেছেন, কানাডা সব সময় মানুষের পক্ষে, মানবতার পক্ষে।
৭] সব চেয়ে আলোচিত ঘটনা হচ্ছে- নির্যাতিত মিশরীয়দের কানাডায় ডেকে এনে রাজনৈতিক আশ্রয় দিয়েছেন। আর তা এক জন বা দুই জন নয়; হাজার হাজার- চল্লিশ হাজার।
৮] বিগত পল মার্টিন সরকার বিতর্কিত বিল সি-২৪ এর মাধ্যমের অভিবাসীদের জন্য দ্বিতীয় শ্রেনীর নাগরিক করার বিধান বাতিল করেন জাস্টিন সরকার। কারণ এই সরকার মনে করেন, আইনের দৃষ্টিতে কানাডার সকল নাগরিকের অধিকার সমান। প্রথম নাগরিক নাকি দ্বৈত নাগরিক, এবিষয়টি একেবারে অবান্তর! কে কানাডায় জন্মগ্রহনকারী অথবা ভিন্ন কোনো দেশ থেকে এসে নাগরিকত্ব পেয়েছেন, তা গুরুত্বপূর্ণ নয়। কানাডার নীতি বহির্ভূত আইন বাতিল করে জাস্টিন মানুষের সন্মান এবং ভালোবাসা পেয়েছে।
৯] কুইবেক প্রাদেশিক সংসদ বিল ২১ পাশ করেছে। জাস্টিন এই বিলের প্রতিবাদ করে বলেছেন, রাষ্ট্র কখনো জনগণের পোশাক পরিধান নির্ধারণ বা নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনা। এটা রাষ্ট্রের দায়িত্বের মধ্যে পড়েনা। আইন দিয়ে পোশাক বা ধর্মীয় প্রতীকবহন নিয়ন্ত্রণ গ্রহনযোগ্য নয়। এদেশে মানুষের মুক্তচিন্তার অধিকার, কথা বলার স্বাধীনতা এবং ধর্ম পালনের অধিকার রয়েছে।
আমরা অবশ্যই আমাদের রাজনৈতিক দর্শনে অটল থাকবো এবং কানাডার সাংবিধানিক অধিকারকে সমুন্নত রাখবো। গণতান্ত্রিক কানাডায় কেন্দ্রীয় সরকার কখনোই প্রাদেশিক সরকারের উপর খরদারি করে না। কিন্তু অনেক সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করে। ফলে জাস্টিনের মানবিক চিন্তা এবং মানবিক চেতনার বহিঃপ্রকাশ ঘটে।
১০] কানাডা ব্যক্তি স্বাধীনতার দেশ। এদেশে সমকামীতা বৈধ। আর সেই সমকামীদের র্যা লীতে জাস্টিন নিজে প্রতিবার অংশ নেন। এখানে তাঁর মানবতার বিরল দৃষ্টান্তের প্রমাণ মেলে।
১১] শুধু মানুষই নয়; পশু-প্রাণীদের জন্য জাস্টিনের দরদীয় ভাবনার তুলনা হয়না। তিনি সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছেন যে, আগামী বার তাঁর দল সরকার গঠণ করলে কানাডায় দুই মিলিয়ন অর্থাৎ দুইশ কোটি গাছ লাগাবেন। এছাড়াও ২০২১ সালের মধ্যে কানাডায় প্লাস্টিকের বোতল, স্ট্র ইত্যাদি তুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে বলেছেন, সামুদ্রিক প্রাণী এবং অন্যান্য জীবজন্তুও এতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে। আমরা যদি এই প্রতিকার না করতে পারি, তাহলে আমাদের সন্তানদের কাছে কি কৈফিয়ৎ দেবো!
তিনি প্রধানমন্ত্রি হবার আগেও নানা ভাবে মানবতার কাজে দৃষ্টান্ত রেখেছেন, সেই ছাত্র জীবন থেকেই। যারা জাস্টিনের ‘Common Ground’ বইটি পড়েছেন; তারা তা জানেন। তারও দু’একটি উদাহরণ দিচ্ছি। যেমনঃ
ক] ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় তিনি সেক্সচুয়াল এসল্ট সেন্টারের সদস্য হয়েছিলেন। ছাত্রীরা মূলত এটা চালাতো। যৌন হয়রানি প্রতিরোধের এই সংগঠনটির ছাত্র সদস্যদের প্রথম দলে ছিলেন জাস্টিন ট্রুডো। (তথ্যসূত্রঃ Common Ground by Justin Trudeau. Harper Collins Publishers Ltd, 2014 পৃষ্ঠা/ ৮৩।)
খ] রাজনীতিতে পা রাখার আগে তিনি যুবকদের দায়িত্বশীল নাগরিক হিসাবে গড়ে তোলার জন্য জড়িত ছিলেন, জাস্টিন ট্রুডো ২০০৬ সালে কাতিমাভিকের চেয়ারম্যান ছিলেন এবং গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তরুণদের দায়বদ্ধ নাগরিক ও সুস্বাস্থ্যবান মানুষ করার জন্য তাঁর আবেগ নিঃসন্দেহে অত্যন্ত প্রশংসনীয়। এটি আমাদের সমাজের জন্য তাঁর পরোপকারী এবং আশাবাদী মনোভাব সম্পর্কে ধারণা দেয়। (তথ্যসূত্রঃ Common Ground by Justin Trudeau. Harper Collins Publishers Ltd, 2014 পৃষ্ঠা/ ১৫৮।)
গ] জাস্টিন ট্রুডো’র জন্মদিন ২৫ শে ডিসেম্বর, বড়দিনে। অর্থাৎ খ্রীস্টানদের সবচেয়ে পবিত্র ও শান্তির দিনে। মনে হয় সেজন্যই তিনিও শান্তি ও সম্প্রীতির বাণী বহন করে এসেছেন।
ঘ] তাঁর জন্মের সাথে সাথে কানাডার এক ঘুণে ধরা নিয়ম বা আইনের অবসান ঘটে। কানাডার হাসপাতালগুলোয় তখন একটা নিয়ম ছিল, সন্তানের জন্ম দেবার সময়, হাসপাতালের প্রসুতি কক্ষে অর্থাৎ শিশু জন্মদানের কক্ষে মায়ের সাথে বাবা উপস্থিত থাকতে পারবে না। কিন্তু অটোয়ার সিভিক হাসপাতালে জাস্টিনকে জন্ম দেবার সময় তাঁর মা বেঁকে বসেছিলেন। তিনি হাসপাতান কর্তপক্ষকে সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছিলে, সন্তানের জন্ম দেবার সময় যদি তাঁর স্বামীকে তাঁর পাশে থাকতে দেয়া না হয়, তাহলে তিনি হাসপাতালে সন্তান জন্ম দিবেন না। তাঁর এই প্রতিবাদে হাসপাতালের পরিচালকরা তড়িঘরি করে সভা ডেকে বহু বছর ধরে চলে আসা নিয়মটি বাতিল করে দেন। ধীরে ধীরে কানাডার অন্যান্য হাসপাতালগুলো থেকে এই নিয়মের অবসান ঘটে। আধুনিক কানাডার হাসপাতালে জন্ম নেয়া জাস্টিন’ই প্রথম শিশু যার প্রথম কান্না এক সাথে আনন্দধ্বনী হয়ে বেজেছিল তাঁর পিতা ও মাতার কানে। (তথ্যসূত্রঃ Common Ground by Justin Trudeau. Harper Collins Publishers Ltd, 2014 পৃষ্ঠা/ ১১।)
ঙ] জাস্টিন ট্রুডোর পিতা পিঁয়েরে ইলিয়ট ট্রুডো পনের বছর কানাডার প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। এমন একজন প্রভাবশালী প্রধানমন্ত্রীর সন্তান হবার পরও তিনি ছোটবেলা থেকে কখনও উচ্চাভিলাষী মানসিকতার মানুষ ছিলেন না। ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজী সাহিত্যে স্নাতক পর্যায়ে পড়াশুনা শেষ করে তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন একবছরের জন্য পৃথিবীর তিনটি মহাদেশ ঘুরতে বের হবেন। কয়েকজন বন্ধু মিলে পিঠে একটা ব্যাগ চাপিয়ে তিনি সেই সময় ভ্রমণ করেন আফ্রিকা, ইউরোপ ও এশিয়া মহাদেশের বেশ কয়েকটি দেশ। সেই সময় একবারে কাছ থেকে তিনি দেখেন বিভিন্ন জাতি ও ভাষার মানুষের সংস্কৃতি ও জীবনচলার রীতি নীতি। সেজন্য, তিনি সব সময় গভীর সম্মানের সাথে স্মরণ করেন এই সব মানুষের সংস্কৃতি আর ঐতিহ্যকে।
সাধারণ মানুষদের একেবারে কাছ থেকে দেখার ফলে তিনি নিজেকে এমন এক পেশায় নিয়োজিত করতে চেয়েছিলেন যেখানের তিনি পারেন পরম আনন্দ ও সুখ। তাঁর সেই বিশ্বভ্রমণের সময় এক ছায়া ঘনিয়ে আসা বিকেলে ফ্রান্সের নরম্যান্ডির এক পাহাড়ে বসে তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন স্কুলের শিক্ষক হবেন। ফলে ভ্রমণ শেষে এক বছর শিক্ষা বিষয়ে পড়াশুনা করেন তিনি ব্রিটিশ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস শুরুর আগে নিজের খরচ চালানোর জন্য তিনি ছোট ছেলেমেয়েদের দিনে ‘স্নো বোর্ডিং’ প্রশিক্ষকের কাজ এবং রাতে এক নাইট ক্লাবে সিকিউরিটির কাজ নেন।
ব্রিটিশ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা শেষ করে তিনি প্রায় আড়াই বছর ‘গ্রে পয়েন্ট’ নামে নতুন প্রতিষ্ঠিত হওয়া এক বেসরকারী স্কুলে গণিত ও ফরাসী ভাষার শিক্ষক হিসেবে কাজ করেন। তিনি তাঁর আত্মজীবনী ‘কমন গ্রাউন্ড’ এ উল্লেখ করেছেন স্কুলের ছেলেমেয়েদের পড়ানো তিনি হৃদয় দিয়ে উপভোগ করতেন। ‘গ্রে পয়েন্ট’ এ পড়ানো ছাড়াও তিনি প্রায় এক বছর ব্রিটিশ কলম্বিয়ার এক সরকারী স্কুলে পড়িয়েছেন।
কাজেই এই সব অসাম্প্রদায়িকতা, মানবতা, উদারতা, আদর্শ অর্থাৎ সার্বিক বিবেচনায় বিশ্ব শান্তির জন্য জাস্টিন নোবেল পুরস্কারে যোগ্য বলে আমার বিশ্বাস!
কানাডার প্রধান মন্ত্রী ভালো তাই মিডিয়াতেও ভালো খবর এসেছে। আর আমাদের মধ্যে তো সব কিছুর ভেতরে দোষ খোঁজার সব্ভাব আছেই। কিন্তু আমি চাই আমরা যার যার স্থানে থেকে পরিবর্তন হই জাস্টিন এর দেখা বাংলাদেশেও পাওয়া যাবে। তখন পৃথিবীর কোন ব্লগে এমই মন্তব্য করবে কেউ তর্ক করবে কেউ।
আসলেএ ব্যাপারগুলো তো সবই মিডিয়ার মাধ্যমে জানা তাই তার সম্পর্কে আমার উচ্চ ধারণা জন্মেছে।
তার বিনয় তার মহানুভবতা ও আদর্শ তাকে প্রশংসিত করেছে।
নোবেল প্রাইজ এখন নৈতিকতা হারিয়েছ। এটা পাওয়া না পাওয়ায় ট্রুডোর মহান নেতা হওয়া আটকাবে না।
এগারো পয়েন্টে ট্রুডোর মহানুভবতা পরিস্কার। যদিও নোবেল প্রাপ্তি তার কাছে নিশ্চয় মুখ্য নয়। তাছাড়া নোবেলের শুদ্ধতা অনেক আগেই প্রশ্নবিদ্ধ, বিশেষ করে সুচির নোবেল বাতিল না করায়।
” বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সম্পর্কে ফিদেল কাস্ত্রো বলেছিলেন,‘আই হ্যাভ নট সিন দ্য হিমালয়াস। বাট আই হ্যাভ সিন শেখ মুজিব’। সেই উক্তির সূত্র ধরে আমার ভাষ্য, আমি শেখ মুজিবকে দেখি নাই। কিন্তু জাস্টিন ট্রুডোকে দেখেছি।”
অসম্ভব জনপ্রিয়, মুক্তিযুদ্ধের মহান নেতা থেকে পরে চরম ব্যর্থ শাসক ও একনায়কতন্ত্রের পথে হাঁটা মুজিব সম্পর্কে ক্যাস্ট্রের পরবর্তী উক্তিসমূহও (যদি থাকে) জানার আগ্রহ রইল।
লেখকের নেতার প্রতি আস্থাকেকে শ্রদ্ধা জানিয়ে সবিনয়ের সাথে বলছি, চরম ভক্তিবাদ আসলে অন্ধত্বকে স্বাগত জানায়, এও এক বিশ্বাসের ভাইরাস। তাই আংশিক নয় পুরো বলুন।
মুক্তমনায় স্বাগতম।
সহজ কথা তাই না বিপ্লব ভায়া? কাউকে ভক্তি করবার ব্যাপারটা থাকলে ভক্তের চোখে সেই তার কোন দোষ ত্রুটি দেখা অসম্ভব। ভক্তি তাই যুক্তি মানে না এবং তা পরিত্যজ্য 🙂
কাজী দা, স হ ম ত।
আসলে যে কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে নির্মোহ দৃষ্টিতে দেখা ভাল, ভক্তিবাদে অহেতুক দেবত্ব আরোপের সুযোগ থাকে। এটি একপেশে দৃষ্টিভঙ্গি তৈরির সুযোগ সৃষ্টি করে। চলতি লেখায় যেমন কিছুট হয়েছে।
কানাডা বরাবরই শান্তিপ্রিয় ☮️ দেশ।
আর এই শান্তি বিরাজে তাদের নেতানেত্রীরা যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এটাই তার প্রমাণ।