এক

স্বর্গেতে ঈশ্বরী পাটনি চিন্তা করে মনে

ধরাধামে আছে কেমন আপন সন্তানে।

সন্তান চিন্তাতে গোঁয়ায় বিনীদ্র রজনী

চক্ষু মুদিলেই শুনে ‘পুত্র পুত্র ধ্বণি।

দেবী অন্নপূর্ণায় দেখি হইলেন অবাক

তুইতো আজব পাটনি মুই হতবাক।

নদী পার করছিলে বলে স্বর্গে দিনু ঠাঁই

ঐশ্বরিক ভোজেও শইল্যে বাড়েনি চিকনাই।

পাটনি বলে- মাগো আমি স্বর্গে সুখে আছি

কেবল সন্তানের তরে দুশ্চিন্তায় রয়েছি।

বর দিয়াছিলা সন্তান রবে দুধে-ভাতে

সত্যিই কি দুধ-ভাত পড়ে হেগো পাতে?

দেবী কন ‘ওরে পাটনি সুখী তোর পুতে

দুধ খায় দুধ হাগে দুধ তারা মুতে।

শুনিয়া কৃতার্থ হনু বল পেনু বুকে

তবুওযে সাধ জাগে দেখি নিজ চোখে।

দেবী কন-পাটনি তুই বড়ই নাছাড়

তোর সাধ না ফুরালেও হইবেক অবিচার।

হাতে তালি দিয়া দেবী নাচে ধিন, তাধিন

পূবদিকে খুলে গেল হাজার ইঞ্চির স্ক্রিন।

টিভি অন করিয়া দেবী করিলা প্রস্থান

পর্দায় ফুটিয়া উঠে অপরূপ এক স্থান।

 

 

দুই

মন প্রাণ দিয়া পাটনি দেখে বাংলাদেশ

আনন্দেতে নৃত্য করে আহা বেশ বেশ।

মনের হরষে কৃষাণ পুড়ে নিজ ফসল

রাজপথে দুগ্ধ ঢালি করছে কেউ গোসল।

পথে পথে ডিম ভেঙ্গে করে ছেলেখেলা

এসবই দেবী মায়ের অপরূপ লীলা।

আমার সন্তান ধরায় করছে স্বর্গবাস

মনে লয় ছাড়িয়া যাই এ পোড়া কৈলাশ।

দৃশ্য দেখি পাটনিমনে জাগিছে হরষ

এভাবেই বিগত হয় গোটা কয় বরষ।

সহসাই বিনা মেঘে ঘটে বজ্রপাত

সন্তানের দুগ্ধ পানে ঘটিল পরমাদ।

অতিশয় পন্ডিত এক করে গবেষণা,

‘দুধের নামে বিষ খাচ্ছি’ করিলেক ঘোষণা।

ঘোষণা শুনিয়া তরতর কাঁপে বাংলাদেশ

স্বর্গেতে ঈশ্বরী পাটনি শংকিত অশেষ।

তদন্ত করেন এবার ভোক্তা অধিকার

পন্ডিতের কথাই ঠিক করিলেন প্রচার।

শুনিয়া হাইকোর্ট বলেন- বন্ধ সব দুধ

ভোক্তা আর সাপ্লাইয়ারে জন্মিল বিরোধ।

কর্পোরেট দুধ বাণিজ্যে ঘটে বিপর্যয়

সবাই মিলি মর্ত্যদেবীর লইল আশ্রয়।

হুমড়ি খেয়ে পড়ে সবে দেবীর চরনে

আশ্রয় দাও মা ঘোর বিপদের দিনে।

আপদে বিপদে মোরা তব কাছে ঘুরি

জিডিপির চাকা ঘুরাই ব্যাংক লুট করি

ক্রাইম করে বেঁচে আছি জননী কৃপায়

দুধ নিয়া পড়ছি এবার মাইনকার চিপায়।

মর্ত্যদেবী আশ্বাসিলেন –কুচ পরোয়া নেই

সব রিসার্চ নিভে যাবে এক ফুৎকারেই।

আমি যেমন রাষ্ট্রনায়ক তেমনি বৈজ্ঞানিক

আমি যা বলিব জেনো তাহাই সঠিক।

এই বলে করেন দেবী টেলি-কনফারেন্স

রেগে হেকে বলে দিলেন সবকটি নুইসেন্স।

দুধ নিয়া চলছে এবার বড় কন্সফিরেসি

সুশীলেরা খাপ ধরেছে গিলতে ডেমোক্রেসি।

এক ঘোষণাতে দেশে উল্টাস্রোত বয়

কাল ছিল বিষ আজ খাঁটি অতিশয়।

উজির নাজির যত হাতি ঘোড়া বটি

কোরাসেতে গলা সাধে ‘দুধ অতি খাঁটি।

ঘোষণা করেন এবার চেম্বার আদালত

এ দুধ বড়ই খাঁটি মাতৃদুগ্ধবৎ।

 

 

তিন

এসব দেখিয়া পাটনির মাথা যায় ঘুরে

হাসিতেছেন অন্নপূর্ণা বসিয়া অদূরে।

দেবীর চরনে পাটনি লুটাইয়া পড়ে

কাজ নেই মাগো তোর দুধ-ভাত ‘বরে’

শাখ-ভাত যাই খাক খায় যেন খাঁটি

কুকুর বেড়ালে নিক দুধ ভরা বাটি।

ক্রূর হেসে দেবী বলে-ফিরেনাতো বর

স্বর্গসুখ পাইতে চাইলে টিভি বন্ধ কর।

খাদ্য ভেজালে নাই ঈশ্বরেরও হাত

তোর পুত্রগণ হইল ইতর বজ্জাত।

পাল্টাতে হইবে তোর জাতির চরিত

ভিনদেশে বসে কবি রচে দুগ্ধগীত।

———

(ব্যবহৃত ছবি গোগল ইমেজ থেকে নেয়া)