সহজ সত্যটা বুঝতে হবে। এটা বুঝার জন্য রকেট বিজ্ঞানী হওয়ার দরকার নেই। বুঝতে চাইলেই বুঝা যায়। “ধর্ম”, “অন্ধ বিশ্বাস”, “কুসংস্কার”, এবং “CULT” একই জিনিষের ভিন্ন ভিন্ন নাম। অন্ধ ধর্ম বিশ্বাস থেকে বেরিয়ে আলোকে আসার সাহস থাকতে হবে। কাগজে লেখা থাকলেই এবং পছন্দের কেউ একটা কিছু বললেই ধ্রুব সত্য না ভেবে নিজস্ব বুদ্ধিমত্তা এবং যুক্তিবোধ দিয়ে যাচাই-বাছাই করার আগ্রহ থাকলেই CULT মুক্ত হওয়া সহজ।
The 16th-century Italian philosopher (and former Catholic priest) Giordano Bruno was burned at the stake for a stubborn adherence to his then unorthodox beliefs—including the ideas that the universe is infinite and that other solar systems exist.
ফেব্রুয়ারী ১৭, ১৬০০ খ্রিষ্টাব্দ। ঘটনাটি ৩০০ বছর আগের। তখন আমাদের ছোট্ট পৃথিবীটা সমন্ধেই মানুষ তেমন কিছু জানতো না। সমতল পৃথিবী, চন্দ্র, সূর্য আর মাথার উপর খালি চোখে দৃশ্যমান সামান্য কিছু তারকামন্ডলী নিয়ে অতি ক্ষুদ্র ছিলো আমাদের এই মহাবিশ্ব। Brunuর সত্য উদ্ঘাটন অজ্ঞ মানুষের অন্ধ ধর্মানুভূতি আঘাত লাগলো। Bruno কে জীবন্ত পুড়িয়ে মারলো। Brunoই ধর্মের শেষ বলি। এর পর থেকে ওদের বোধোদয় হলো; CULT এর বন্ধন শিথিল হলো পশ্চিমা বিশ্বে। ধর্ম টিকিয়ে রাখতে ওরা আর কাউকে খুন করেনি। রাষ্ট্র শাসন যন্ত্র ধর্মমুক্ত হয়েছে। David Hume (1711 – 1776), a famous Scottish philosopher rallied against blind faith and priesthood throughout his entire life, yet could claim a natural death. কিন্তু আরব বিশ্ব এবং পাকভারত উপমহাদেশ একেবারে আলাদা। ধর্মের বাড়াবাড়ি এখনও চলছে দাপটে। কোন মতবাদ ধর্মের বাইরে গেলেই আর রক্ষা নাই। ছুড়ি দিয়ে শরীর থেকে মাথা আলাদা করে বিভৎস কায়দায় খুন। খুনের বিনিময়ে পৈশাচিক আনন্দ। ধর্মীয় বিধানে চলে রাষ্ট্র যন্ত্র। মানুষের চেয়ে গরুর স্থান উপরে।
সুস্থ বিবেক সম্পন্ন কেউ এরকম নৃসংশতা সহ্য করতে পারে না। কিন্তু প্রতিবাদ করার উপায় নাই। শাস্তি একটাি। ছুড়ি দিয়ে ধর থেকে মাথা আলাদা।
অলীক ঈশ্বর সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী! আমরা কি একটু ভেবে দেখতে পারি না তথাকথিত এই ঈশ্বর কোথায় থাকেন? কী করেন?
মহাবিশ্বটার বিশালতাটা অনুভব করা দরকার। একবার চোখ বন্ধ করে মহাবিশ্বের বিশালতা এবং এর কালের (সময়) পরিধিটা অনুভব করতে পারলে ঈশ্বরের অস্তিত্ব নিশ্চিন্ন হয়ে যাবেই যাবে।
অতীতে শুধু দৃশ্যমান এলাকাটাকেই পৃথিবী ভাবা হতো। বলা হয় খ্রিষ্টপূর্ব ৬০০৪ বছর আগে আদমই পৃথিবীর প্রথম মানুষ। তার উচ্চতা ছিলো ৯০ ফুট। বেঁচেছিলো ৯৩০ বছর। এর চেয়ে বড় আষাঢ়ে গল্প আর নাই। ৩০০ মিলিয়ন বছর আগের মানুষের জীবাশ্ম পাওয়া গেছে। তাহলে আদম কোন যুক্তিতে পৃথিবীর প্রথম মানুষ হয়? যেসব পুস্তকে আদমের কথা লেখা আছে সেই পুস্তকের সব কথাও মিথ্যা, সেই পুস্তক ভ্রান্ত পথ পরিদর্শক, সেই পুস্তক প্রতারকের রচনা।
আমাদের ছোট্ট পৃথিবীটা সূর্যের চতুর্দিকে অনবরত ঘুরছে, প্রতিটি দৃশ্যমান এবং অদৃশ্যমান তারকাই এক একটি সূর্য। সব তারা মিলিয়ে এক একটি লহর। এরকম কোটি কোটি লহর মিলে হয় মহাবিশ্বের এক ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশ, বলা হয় গ্যালাক্সি। অনেকগুলো গ্যালাক্সি নিয়ে হয় গ্যালাক্সিমণ্ডল। মহাবিশ্বে আছে কোটি কোটি গ্যালাক্সি মণ্ডল। মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়েছিলো ১৩.৭ বিলিয়ন বছর আগে। মহাবিশ্ব ক্রমাগত প্রসারণ হয়ে এর ব্যাপ্তি বেড়েই চলছে। আমাদের এই মহাবিশ্বই শেষ কথা নয়। অনবরত নতুন মহাবিশ্ব সৃষ্টি হয়ে চলছে। অনেকে ধারণা করেন ইতিমধ্যে ১০^৫০০ মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের মনে প্রশ্ন হওয়া উচিৎ এত বিশাল ব্যাপ্তির কোন জায়গায় তথাকথিত ঈশ্বর বসবাস করে? কোথায় স্বর্গ, কোথায় নরক?
আরজ আলী মাতুব্বর প্রশ্ন করে গেছেন। প্রশ্ন করে বিপদে পড়েছিলেন। তাঁকে পালাতে হয়েছে। ডঃ হুমায়ূন আজাদকে কোপানো হয়েছে। সুফিয়া কামালকে সাবধানে কথা বলতে হয়েছে। তসলিম নাসরিণের মাথার মূল্য ঘোষনা হয়েছে। ফলে দেশ থেকে পালিয়ে বেঁচে আছেন। ডঃ অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে মেরে ফেললো CULT এ বিশ্বাসী মানসিক প্রতিবন্দীরা। চাপাতিওয়ালাদের কাছে মিথ্যাই সত্য, আর সত্যই মিথ্যা।
ধর্মীয় অন্ধকারাচ্ছন্ন মানুষ অন্ধকারেই থাকতে চায়। মিথ্যার দরজা ভেঙ্গে এদেরকে আলোতে নিয়ে আসতে জীবন বিসর্জন দিয়েছেন মনিষীরা। ডঃ অভিজিৎ রায় অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। মূলতঃ মহাবিশ্বের Physics নিয়েই লেখালেখি করেছেন। একবার মহাবিশ্বের বিশালতাটা অনুভব করতে পারলে কেউ নিজেকে আর কুসংস্কারের অন্ধকূপে বন্দী করে রাখতে পারবে না।
ডঃ অভিজিৎ রায় মুক্তমনাদের জন্য প্রথম প্ল্যাটফরম তৈরী করেছেন। অভিজিৎ একটি ব্যতিক্রমের নাম। নিজস্ব মেধা দিয়ে সব যাচাই-বাছাই করেছেন। প্রতিটি CULT এক একটি কুসংস্কার প্রতিষ্ঠান। তিনি সেটা অনেক আগেই জেনে গেছেন। কিন্তু ধর্মীয় কুসংস্কারবাদীদের কুসংস্কারে আঘাত লাগতে পারে এমনটি সরাসরি তুলে ধরা থেকে বিরত থেকেছেন। তিনি মহাবিশ্বের প্রান্তিক আবিষ্কারকে সুললিত ভাষায় বাংলা ভাষাভাষিদের কাছে তুলে ধরেছেন। তাঁর লেখার স্টাইলে বিশেষত্ব আছে, কবিত্বের মাধুর্য আছে। একটা বইয়ের নাম ছিলো, “আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী।”, পিটার হিগসএর “হিগস পার্টিকল” এর প্রমান প্রকাশ পেলো আগষ্ট ৪, ২০১২ তারিখে। ৯ তারিখে ত্বরিৎ গতিতে দূর্দান্ত এক আর্টিকল বের করলেন। কবিত্বপূর্ণ নাম দিলেন, “সার্ন থেকে হিগস বোসন – প্রলয় নাচন নাচলে যখন আপন ভুলে!” সমগ্র মহাবিশ্বে মাত্র দুই ধরণের পার্টিকল আছেঃ বোসন এবং ফার্মিয়ং। জেনেভার সন্নিকটে ফ্রান্স-সুইজারল্যান্ড বর্ডারে অবস্থিত CERN Supercollider নিজে দেখে এসেছেন। আগষ্টের ৪ তারিখে Higgs Boson এর অস্তিত্ব প্রমাণিত হলো। এই প্রমাণ নিজে দেখে যেতে পারবেন Higgs আশা করেননি। তাই আনন্দে তাঁর চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। আভিজিৎ রাত জেগে লিখলেন বিরাট আর্টিকল। এত সহজ এই আর্টিকলের ভাষা এবং বক্তব্য যে আমার মত সাধারণ লোকও বুঝতে পারে আবার যারা Astro-physicist দের জন্যও তথ্য এবং বিশ্লেষন সমৃদ্ধ এই আর্টিকল। এই আর্টিকলে আছে প্রচুর রেফারেন্স। অভিজিতের কোন এক প্রবন্ধে ৭২টা রেফারেন্স দেখেছি। তথ্যে সমৃদ্ধ এই লেখাটি দেখলে মনে হয় এটি একটি PhD Dissertation. অভিজিৎ রায়ের লেখা থেকে বুঝা যায় তিনি অত্যন্ত বিনয়ী, মার্জিত, নিরহংকারী ভদ্র ব্যক্তি ছিলেন। উনার দ্বিগুন বয়সের প্রফেসররাও তাঁর সাহচার্য পেয়ে ধন্য হয়েছেন। তিনি একজন বিরল প্রতিভাধারী ছিলেন।
ভাঙ্গা দালানের ইট, খোয়া ধ্বসে পড়তে শুরু করেছে। নিশ্চিহ্ন হয়ে যাওয়াটা সময়ের ব্যাপার। অভিজিৎ একটা নক্ষত্রেরও নাম। আমাদের সৌরজগতের নক্ষত্রটাকে আমরা বলি সূর্য। সূর্য আলো প্রদান করে। নিকট ভবিষয়তে এর মৃত্যু নাই, অমর। অভিজিৎ যে আলো জ্বেলে দিয়ে গেছেন তার শেষ নেই। ভুলে থাকা চলবে না যে এটা ইন্টারনেটের যুগ। Avijit নামটা লিখে Google করলেই অভিজিতের সমস্ত লেখা বেরিয়ে আসে। অভিজিতকে নিয়ে যত ব্যাঙ্গ-বিদ্রুপ এবং ভুল তথ্য দেওয়া হবে বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্ম Google করে সঠিক অভিজিতকেই জানবে। অভিজিৎ আসবে Avalanche এর মত। পৃথিবীতে এমন কোন শক্তি নেই অভিজিতকে ঠেকিয়ে রাখে। অভিজিতকে খুন করে খুনির দল চরম ভুল করে ফেলেছে। ধর্মমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার কাজে সহায়তা করেছে।
অভিজিতকে শারিরীক ভাবে নিশ্চিহ্ন করে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। কিন্তু যে আলো তিনি জ্বেলে দিয়ে গেছেন, তা কোন দিন নেভানো সম্ভব নয়। বাংলাদেশে এখন চুপি চুপি সহস্র নিরীশ্বরবাদী মানুষের বাস। কিছু মাওলানা-মুফতি পর্যন্ত অন্ধকুপ থেকে বেরিয়ে এসেছেন। চাপাতির ভয় দেখিয়ে আর কতদিন দমিয়ে রাখা যাবে? সত্যের জয় হবেই। আমি দেখে যেতে পারবো না। কিন্তু অভিজিৎ রায়ের নামে বাংলাদেশের মাটিতে ফ্রি থিংকারদের ইনস্টিটিউশন গড়ে উঠবেই। বিশ্ববিদ্যালয় হবে। অভিজিৎ সরনী হবে ঢাকাসহ বিভিন্ন শহরে। বাঙ্গালীরা এটা করবে গর্বের সাথে। অভিজিৎ রায় শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালীদের একজন হিসেবে অভিষিক্ত হবেন।
মন্দির-মসজিদের অস্তিত্ব ইতিহাস হবে। রাজীব হায়দার, নিলয়, ওয়াশিকুর রহমান, অনন্ত, দীপন, ডঃ হুমায়ুন আজাদ, ডঃ আহমদ শরীফ, আরজ আলী মাতুব্বর, তসলিমা নাসরীন, ডঃ অভিজিৎ রায়দের ভাষ্কর্যে দেশ ভরে উঠবে।
The southeastern face of Mount Rushmore in South Dakota’s Black Hills National Forest is the site of four gigantic carved sculptures depicting the faces of U.S. Presidents George Washington, Thomas Jefferson, Abraham Lincoln and Theodore Roosevelt.
বাংলাদেশে Mount Rushmore এর মত এত বড় পর্বত নাই। ঢাকার কেন্দ্রে এক সাম্প্রদায়িক নেতার নামে একটি বিরাট পার্ক আছে। নিকট ভবিষ্যতে এই পার্কের নাম পরিবর্তন হবে। এখানেই হবে U.S. President দের মত রাজীব হায়দার, নিলয়, ওয়াশিকুর রহমান, অনন্ত, দীপন, ডঃ হুমায়ুন আজাদ, ডঃ আহমদ শরীফ, আরজ আলী মাতুব্বর, তসলিমা নাসরীন, ডঃ অভিজিৎ রায়দের একক ভাষ্কর্য।
আজ যে সামনে আছে, কাল সে পিছনে চলে যাবে। আজকের লোক সামনে আসবে, আবার আগামী কাল ইনি পিছনে যাবেন, সামনে আসবে পরের দিনের লোক। এটাই পৃথিবীর ইতিহাস। বর্তমান কে নিয়ে লোক নাচে, অতীতকে ভুলতে বসে। আর ভবিষৎ কে স্বাগত জানায়।
ধন্যবাদ নৃপেন দা। আপনার লেখা চাই নিয়মিত