লেখকঃ সুমন চৌকিদার

“ধর্মের ঢাক আপনি বাজে” অথবা “ধর্মের কল বাতাসে নড়ে।” প্রবাদ দুটি পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ মিথ্যা। কারণ যা নিষ্প্রাণ, তা আপনা-আপনি বাজতে/নড়তেই পারে না। শুধু ধর্মের ‘ঢাক’ বা ‘কল’ কেনো এর কোনোকিছুই আপনা-আপনি বাজেও না, নড়েও না। বরং ধার্মিকদেরকেই তা অবিরাম পেটাতে এবং নাড়াতে হয়। যেহেতু ধার্মিকরাই ধর্মের প্রাণ, সেহেতু বাজানো / নাড়ানোই তাদের কাজ; থেমে যাওয়া মানেই ধর্মের মৃত্যু। বাস্তবে ধর্মের সর্বপ্রধান কাজই হলো- চিৎকার করে নিজেকে জাহির করা। তাই যে ধর্ম যতো বেশি বাজানো হয়, সেটাই বেশি বিস্তারলাভ করে। ফলে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময় ছাড়াও, সব কাজে ও কথাবার্তায়ই ধর্মবাণী আওড়াতে হয়। এছাড়াও কে, কোন ধর্মের অনুসারী জানাতেও ধর্মের ব্যবহার স্পষ্ট। অর্থাৎ প্রতিক্ষণেই ধর্মকে বাজাতে হয়। বিজ্ঞান বা অন্য বিষয়গুলোর ন্যায় একবার বাজিয়ে দিলে এর চলে না। অথচ যা সত্য তাকে বাজাতে/নাড়াতে হয় না, মানুষ এমনিই তা বিশ্বাস করে। মিথ্যাই কেবল বিরামহীনভাবে বাজাতে, চালাতে ও বাঁচাতে হয়। শুধু তা-ই নয়, অস্ত্র হাতে পাহারাও দিতে হয়! এ ঢাক শুধু মনে মনে বাজালেই চলে না, একে প্রকাশ্যেই বাজাতে হয়। ফলে ধার্মিকরা সর্বক্ষণ কথায়-বার্তায়, আচার-আচরণে, পোশাকে, শরীরে নানা চি‎‎হ্ন এঁকে, এমনকি শারীরিক ভাষাতেও… বিরামহীন ভাবেই ধর্মের ঢাকা বাজিয়ে চলেছে। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত এ ঢাকা বাজানোই যেন তাদের বিরামহীন ও অলংঘনীয় দায়িত্ব ও কর্তব্য!

তাছাড়া, ধার্মিকদের দৃঢ় বিশ্বাস, ধর্মপুস্তকই পৃথিবীর সব জ্ঞানের মহাসমুদ্র! অর্থাৎ পৃথিবীর জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিন্দু-বিসর্গ পর্যন্ত ওতেই আছে। কারণ এসব পুস্তক সর্বজ্ঞানের অধিকারী (স্ব-স্ব) ঈশ্বর কর্তৃক প্রেরিত। সর্বজ্ঞানীরা গ্রন্থ/বাণী পাঠিয়েছে, তা সর্বজ্ঞানের ভাণ্ডার হবে না! তবে হতাশার বিষয়, এসব কথিত সর্বজ্ঞানের ভাণ্ডারগুলো বেশিরভাগ ধার্মিকই পড়ে না। যদি পড়তো, তাহলে পৃথিবীর বড় বড় আবিষ্কারক এবং শ্রেষ্ঠ বৈজ্ঞানিকদের নামের স্থানে ধর্মজীবিদের নামই লেখা থাকতো! নাকি মিথ্যে বললাম?

তবে জানি না, পৃথিবীতে এমন আজগুবি বিষয় কী, যা আগে বুঝে- পরে পড়তে হয়? পড়ার আগে বোঝা! কীভাবে সম্ভব? হয়তো সেজন্যই, ধর্মপুস্তক পড়েছেন কখনো? এমন প্রশ্নে (সম্ভবত) ৯০% উত্তর আসবে- না! তাহলে, এতো বিপুল সংখ্যক মানুষ কেনো, সর্বজ্ঞানের ভাণ্ডার পড়ছে না? এর জবাবে, শিক্ষিত/অশিক্ষিত প্রায় সকলেরই মুখস্ত ও সরল উত্তর- ধর্ম বুঝে পড়তে হয়, না বুঝে পড়লে পাপ/গুণা হয়, অর্থ বুঝে পড়তে হয় নতুবা পড়া উচিত নয়… ইত্যাদি। কী বুঝলেন? এ যে কতোবড় ধোকাবাজি, সাধারণ মানুষ দূরে থাক, উচ্চশিক্ষিত/পণ্ডিতরাও ধরতে পারেন না (মূলত ধরেন না)। ছোট মুখে বড় কথা বলা ঠিক হবে কিনা জানিনা; তথাপিও বলছি- অন্য অনেক বিষয়ের ন্যায় ধর্মের ব্যাপারেও বহু শিক্ষিত/উচ্চশিক্ষিত/পণ্ডিত/রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত ব্যক্তিদের উগ্রতা তথা মূর্খতা মানবজাতির জন্য ভয়ঙ্করই শুধু নয়, চরম অনিষ্টকর এবং মর্মান্তিকও বটে। সম্ভবত পড়ার আগে বুঝতে হয় বলেই ধর্মের মধ্যে এতো গলদ, খুনাখুনি, রক্তারক্তি, বিভ্রান্তি-বিভক্ত, হিংসা-বিদ্বেষ, বিতর্ক, ছলচাতুরি, গোড়ামি, ভন্ডামি, এতো নৃশংস্যতা, বর্বরতা… থাকা সত্ত্বেও মহান ও সর্বশ্রেষ্ঠ। গ্যারান্টি দিয়ে বলছি, ধর্মগুলোর মধ্যে যে বিপুল সমস্যা, এ সমস্যা পৃথিবীর অন্য কোনো বিষয় নিয়ে (রাজনীতি ও উগ্র জাতিয়তাবাদসহ) আজো হয়নি, ভবিষ্যতেও হবে না। তবে জানি না, কেনো মানুষ ধর্মপুস্তক পড়তে আগ্রহী নয়? হয়তো ধর্ম মানুষের মগজ পচিয়ে মোহাচ্ছন্ন করে রাখে, নয়তো হুমকি-ধামকির তথা নরকের বিদঘুটে যন্ত্রাণার ভয়েই পড়তে আগ্রহী নয়।

তবে ধর্ম না বুঝে পড়াই উত্তম। কারণ পড়ে বুঝতে গেলেই ধার্মিকদের বড্ড বিপদে পড়তে হবে! থলের বেড়াল অবশ্যই বেরিয়ে যাবে! ধর্মের এতোবড় ক্ষতি কোনো ধার্মিকই চাইবে না, হয়তো সেজন্যই ধার্মিকরা ধর্মপুস্তক পড়ে বুঝতে চাইছে না; বুঝে পড়তে চাইছে! কারণ, পড়ে বুঝলে নানা অজানা ও ঈশ্বর কর্তৃক নিষিদ্ধ বহু প্রশ্ন মাথায় ঢুকবেই। যার জন্য স্বর্গে/বেহেশতে রয়েছে কঠিন শাস্তি! অতএব, কাজ কী বাপু! না-ই বা পড়লাম ওসব!!!

অতি অল্প সংখ্যক যারা পড়েছেন, তারা কী বুঝেছেন? এর উত্তরে সমাজে বহুল প্রচলিত কিছু ধর্মীয় বাণী/বাক্য শোনান, যা একটুও নতুন নয়। এর অন্যতম কারণ, প্রায় সকলেরই দৃঢ় বিশ্বাস, কথিত পবিত্র(!) পুস্তকগুলো যেন-তেন লোকে পড়লে কিছু বুঝবে না, এমনকি নিয়ম না মেনে স্পর্শ করলে পাপ/গুণা হয়! জন্ম থেকেই ধর্মপুস্তক ও ধর্ম সম্পর্কে এরূপ বিভিন্ন অজুহাত এবং আতঙ্ক মানুষের হৃদয়ে গেঁথে দেয়া হয়েছে। এ অন্ধত্ব এমন যে, ধর্মজীবিরা ছাড়া সকলেই যেন অপরাধী/পাপী/অপবিত্র… তাই কথিত মহাপবিত্র(!) পুস্তক পড়লে কিছু বুঝবে না; অপবিত্র(!) শরীরে ও মনে স্পর্শ না করলে শাস্তি পাবে ইত্যাদি। অতএব, বেশিরভাগ মানুষই ধর্মপুস্তক পড়া দূরে থাক, স্পর্শ করতেও দ্বিধা করে বা ভয় পায়। তাছাড়া, তারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, যা মহাপবিত্র(!) তা স্পর্শ করার অধিকার ধর্মজীবি ছাড়া অন্যদের নেই। যদি করে, অভিশপ্ত হবে এবং কঠিন শাস্তি পাবে, তাই ইহজীবনেও তা পড়ে না, কেবল শুনেই বিশ্বাস করে। যদিও ধর্মজীবিরাই এ আতঙ্ক সৃষ্টির কারিগর।

আবার ধার্মিকদের দৃঢ় এবং প্রশ্নহীন বিশ্বাস, একমাত্র ধর্মই মানুষকে ভালো বানাতে/রাখতে পারে! ধর্মই সততা, ভদ্রতা, নম্রতা, মনুষ্যত্ব, শান্তি-শংখলা, ভ্রাতৃত্ব, প্রেম-প্রীতি, সাম্য, মায়া-মমতা, সহানভূতি, সহনশীলতা, বিনয়, ধৈর্য, পরমত সহিষ্ণু… ইত্যাদি সবকিছুরই কেন্দ্রবিন্দু। জানি না, কোনোদিনও ধর্ম এসব গুণবিশিষ্ট ছিলো কিনা, তবে (বহুধর্ম সৃষ্টির ফলে) এসব গুণাবলি প্রায় শেষ এবং ক্রমান্বয়ে বহু সমস্যার প্রধান হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে। তবে ধর্ম ‘পরমত সহিষ্ণু’ কথাটি প্রচণ্ডরকমের মিথ্যাচার, কারণ ধর্মের ইতিহাস তা বলে না। প্রকৃতই যদি ধর্ম ‘পরমত সহিষ্ণু’ হতো, তাহলে ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণ ও বিস্তার নিয়ে বিতর্ক-বিতর্ক, খুনাখুনিসহ হত্যাযজ্ঞ একেবারেই শূন্যে থাকারই কথা। ধার্মিকদের অবস্থা হতো, কেউ ধর্মের সমালোচনা করছে- তাতে কী! ওসব গায় মাখবো না, কারো কথায় বা কর্মকাণ্ডে আঘাত পেলে তাৎক্ষণিক জ্বলে উঠবো না, হতাশায় ধর্ম গেলো, খেলো… বলে প্রতিশোধ নেবো না, দলবদ্ধ হয়ে চিৎকার করবো না, প্রয়োজনে বুঝিয়ে বলবো কিংবা আইনের আশ্রয় নিবো… এসবই তো পরমত সহিষ্ণুতা, নাকি অন্য কিছু? অথচ বাস্তবে আমরা কী দেখি? মডারেট কিংবা মৌলবাদি, সম্ভবত ৯০%এর অধিক ধার্মিকই তা করেন না। করতে পারেন না, কারণ কথিত ধর্মানুভূতি এমন সহ্যশক্তি তাদের দেয়নি। হৃদয়ের গভীরে এ অনুভূতি প্রচণ্ড উগ্রতা ধারণ করে সুপ্ত থাকে, সামান্য সমালোচনায় আগ্নেয়গিরির ন্যায় উদ্গীরণ ঘটানোই যেন ওর কাজ। ফলে ধর্ম সম্পর্কে প্রচলিত ধারণার বিরুদ্ধে কেউ কিছু বললেই (যুক্তিপূর্ণ হলেও) ধার্মিকরা তাৎক্ষণিকভাবে আইন হাতে নিতে দ্বিধা করে না। কারণ কথতি এ ধর্মানুভূতির উন্মাদনায় ধার্মিকরা যতোবড়া অন্যায়ই করুক, সমাজ ও রাষ্ট্র এর বিরুদ্ধে গিয়ে প্রায়ই বিচার করে না বা করতে চায় না। কারণ প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে এ মরণ ব্যাধির (নষ্টানুভূতির) কাছে প্রায় সকলেই বন্দি। অতএব ধর্মকে উপরোক্ত গুণাবলীসম্পন্ন জাহির করা হলেও, এর নামে যেসব বিশৃঙ্খলা, আতঙ্ক, অত্যাচার-নিপীড়ন, ও হত্যাকাণ্ড দেখছি, তাতে ধর্মকে প্রশংসার অযোগ্য বলাই শ্রেয় মনে হয়। কারণ ধর্ম এখন মানুষের প্রতি যতোটা না দয়া-মায়া, করুণার বা উপকারী; স্বার্থপরতা ও সহিংসতায় তারচেয়ে মোটেও কম নয়! দেশ-বিদেশের বহু বাস্তব প্রমাণ তো চোখের সামনে। যা কথিত অহিংসার, প্রেমের, শান্তির… তা যদি অস্ত্র হাতে, ভয় ও লোভ দেখিয়ে, শাসিয়ে… বলতেই থাকে- আমি অহিংসার, আমি প্রেমের, আমি শান্তির… ইত্যাদি। অবশ্যই বুঝতে হবে- নিত্য পুঁজার লোভী, মিথ্যাবাদি, অহংকারী, শ্রেষ্ঠত্ববাদি, কর্তৃত্ববাদি… ছাড়া কেউ নিজের ঢোল নিজে পেটায় না! মূলত যা সত্য তা কখনোই ঢাক-ঢোল পিটিয়ে জানান দিতে হয় না।

সম্প্রতি অহিংস ধর্মের (দর্শন) সহিংস কর্মকাণ্ড দেখে প্রচণ্ড হতবাক। বুঝতে পারছি না, অহিংস এবং শান্তির সৈনিকদের মধ্যে পার্থক্য কী? শান্তির সৈনিকরা রাতের অন্ধকারে কিংবা অতর্কিতে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়ে কিছু খুন করেছে (যা হঠকারী বুদ্ধি)। অন্যপক্ষ ‘অহিংসা পরম ধর্ম’ জলাঞ্জলি দিয়ে, বাছবিচারহীনভাবে কচুকাটা করছে! মূলত ধর্ম সৃষ্ট এরূপ সমস্যা পুঁজিবাদি কিংবা ধর্মজীবিদের বিব্রত করে না, কষ্ট দেয় না, কারণ এতে তাদের লাভ প্রচুর। সমস্যা প্রগতিশীল/মানবতাবাদিদের, কারণ তারা যেমন ধর্ম, ঈশ্বর কিংবা দর্শনের ক্ষতি হয়েছে বলে বোমা-বন্দুক নিয়ে ঝাপিয়ে পড়তে পারে না, তেমনি অহিংসা, প্রেমপ্রীতি কিংবা শান্তির দোহাই দিয়ে ভণ্ডামিও করতে পারে না। কিংবা কথিত ঐশ্বী পুরষ্কারের লোভে, উম্মাদ হয়ে কাউকে (অন্যায়কারী হলেও) কচুকাটা দূরে থাক, আঘাত করতেও পারে না। কিন্তু ধার্মিকরা সামান্য আঘাতেই কাতর হয়ে যারপর নাই ক্ষেপে আগুনে পানির পরিবর্তে পেট্রোল ঢালার উদাহরণ ভুরিভুরি। বিশ্বব্যাপী এতো সহিংসতা এবং অশান্তির পরেও প্রত্যেকের কাছেই নিজ নিজ ধর্মগুলো শান্তি, প্রেম, অহিংসা… ইত্যাদির। এসব যদি হয় শান্তি, প্রেম, অহিংসার… নমুনা, তাহলে মানবজাতির মঙ্গলের জন্যই তা ধ্বংস করা জরুরি। কারণ ধর্মের এরূপ দাবি হাস্যষ্করই শুধু নয়, মানবতার জন্য পরিহাস এবং নিদারুণ ভণ্ডামিও বটে। তবে দুঃখের বিষয় যে, ধর্মের নামে/শ্লোগানে ধারাবাহিকভাবে নৃশংস্য হত্যাযজ্ঞের পর হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাওয়া সত্ত্বেও বেশিরভাগ বিশ্বখ্যাত মানবতাবাদি/প্রগ্রতিশীলরা ধর্মকে যথাস্থানে, সমাদরে ও পূর্ণ মর্যাদায় রেখে ধর্মদাঙ্গা/ধর্মযুদ্ধের সমধান করতে চান, ফলে সমাধানের পথ পান না। অন্যদিকে কথিত মডারেট ধার্মিকরা ‘ধরি মাছ না ছুই পানি’ বা ‘ভেজা বেড়াল’ সেজে থাকেন; কারণ এতে ধর্মের নাম জড়িত! তাই জোরালো প্রতিবাদ না করে মিউমিউ করেন। সুতরাং ধর্মীয় নির্যাতনের হাত থেকে কেনো জাতিগোষ্ঠিকে রক্ষা করতে হলে, পৃথিবীকে নিরাপদ ও ধর্মজঙ্গিমুক্ত রাখতে হলে, সর্বপ্রথমেই প্রতিটি ধর্মের গোমড় ফাঁস করতে হবে। অর্থাৎ ধর্মপুস্তকগুলোতে কী কী মানবতাবিরোধি, নোংরা, অরুচিকর, উত্তেজনা/উম্মাদনাকর, সম্মোহনজনক, শক্তি প্রদর্শনমূলক, হুমকি-ধামকি, যুদ্ধ-দাঙ্গায় উৎসাহিত করে… এমন সব বাক্য/বক্তব্যের পূর্ণ ব্যাখ্যা তথা সুরতহাল একান্ত প্রয়োজন। এর জন্য ‘জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশন’সহ সকল মানবতাবাদি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করার বিকল্প নেই। তারা যতো তাড়াতাড়ি এ উদ্যোগ নেবে, মানবজাতির মঙ্গল ততোই ত্বরান্বিত হবে। কারণ পূর্বেও বলেছি, ধর্মকে নিরাপদে ও যথাযথ মর্যাদায় রেখে ধর্মদানব সৃষ্টি বন্ধ করা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। অতএব প্রতিটি ধর্মকেই চ্যালেঞ্জ করতে হবে এবং তা থেকে নোংরা, অরুচিকর, জঘন্য, ঘৃণ্য, উত্তেজক ও দানব সৃষ্টিতে উৎসাহ দেয় এমন বাণী/বক্তব্যগুলো মুছে ফেলতে হবে। আন্তর্জাতিক কঠোর আইন করে (প্রকাশ্য ও পরোক্ষ) উত্তেজনাকর প্রচার-প্রচারণা (দানব সৃষ্টির মন্ত্রণা) সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করতে হবে। নতুবা প্রকৃত ধার্মিকদের (সংখ্যায় কম হলেও) দানবীয় কর্মকাণ্ড চলতেই থাকবে এবং অসহায় সাধারণ মানুষ প্রাণ হারাতেই থাকবে। মনে রাখবেন, মানবতা ধ্বংসে বেশি দানব প্রয়োজন হয় না।

তবে জানি না, ধর্ম তথা ঈশ্বর(!) সত্যিই দরিদ্রদের পছন্দ করে কিনা? কারণ, রাজনৈতিক কিংবা অন্যান্য যুদ্ধ-দাঙ্গা, অত্যাচারের ন্যায় ধর্মযুদ্ধ-দাঙ্গা ও অত্যাচারগুলোতেও প্রায় শতভাগই দুর্বল, নিরপরাধ, নিরীহ তথা সাধারণ মানুষই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। অতএব এসবের দায় ধর্ম কখনোই এড়াতে পারে না। সেহেতু রোহিঙ্গা উৎখাতে পুঁজিবাদিদের সমর্থন থাকলেও, ধর্মের দায় মোটেও কম নয়! ঘটনার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিষয় অন্য। বাস্তব, এ বিপুল মানবিক সমস্যার মূলে আগাগোড়াই দুটি ধর্ম সারাসরি জড়িত। পৃথিবীতে এরূপ উদাহরণ ভুরিভুরি। অর্থাৎ সারাবিশ্বেই ধার্মিকদের (ধর্মভিত্তিক জঙ্গি) অতর্কিত ও ধারাবাহিক হামলার পরেই বহু মানবিক সংকট সৃষ্টি হয় এবং এর প্রায় শতভাগ হতাহত ও ক্ষতিগ্রস্তই দরিদ্র ও অজ্ঞ/মূর্খ মানুষ। অর্থাৎ দরিদ্ররাই ধর্ম এবং পুঁজিবাদ দুটোরই প্রধান টার্গেট। কারণ এর দু’একটা বর্বরতার বিচার হলেও সুবিচার কখনোই হয় না। তাই ধার্মিকরা স্বীকার করুক বা নাই করুক, জঙ্গি সৃষ্টির দায় পুরোটাই ধর্মের। চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, এসব হত্যাযজ্ঞে যারা অংশ নিচ্ছে তাদের হৃদয়ে যতোটা না পুঁজিবাদ কিংবা জাতিয়তাবাদের মন্ত্র দ্বারা ঘৃণার-আগুন জ্বালানো সম্ভব হয়েছে, তারচেয়ে সহস্রগুণ বেশি সম্ভব হয়েছে শুধু ধর্মমন্ত্র বা ধর্মোম্মাদনা তথা ধর্মানুভূতি দ্বারা। তারপরও নাস্তিকরা ধর্মের দোষ না ধরে কেবল গুণগান গাইবে, ধার্মিকরা এসব আশা করেন কীভাবে ও কেনো? হলফ করে বলছি, ধর্মের এরূপ অবান্তর, অসভ্য, নোংরা, অন্যায়… দাবির প্রতি যতোদিন প্রগ্রতিশীল/মানবাধিকার কর্মী ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সমর্থন থাকবে, ততোদিন বিশ্ব থেকে ধর্মীয় জঙ্গিবাদ/ধর্মযুদ্ধ নির্মূল সম্ভব না।

তাছাড়া যতোদিন পর্যন্ত তথাকথিত মডারেট ধার্মিকদের ভয়ঙ্কর উত্তেজক অথচ ভীষণ ঠুনকো ধর্মানুভূতি (আসলে নষ্টানুভূতি) সম্পূর্ণ ধ্বংস করা না যাবে, ততোদিন বিশ্ব শাস্তির মুখ দেখবে না। কারণ, প্রকৃত ধার্মিক (যারা ধর্মপুস্তকের বাণী শুনে ও পড়েই জঙ্গি) দ্বারা মারাত্মক সব আত্মঘাতি হামলার পর উচ্চশিক্ষিত মডারেটাই ধর্মের ব্যাপারে সারাবিশ্বকে ভুল বোঝাচ্ছে। তারা জঙ্গিদেরকে অধার্মিক প্রমাণের জন্য চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করে দেয়, যা দেখে সারাবিশ্বও তাদের সাথে সুর মিলায়, ফলে প্রকৃত সত্য চাপা পড়ে যায়। অর্থাৎ মডারেটরা ধর্মকে সুরক্ষা দিতে মরিয়া। এরা অষ্কার পাওয়ার যোগ্য দুর্দান্ত অভিনেতাও বটে। কারণ যেকোনো ভয়াবহ হত্যাযজ্ঞের সঙ্গে সঙ্গেই এরা সমস্বরে উচ্চকণ্ঠে একই গান গেয়ে বিশ্ব ভুলিয়ে দিতে অতি পারদর্শি (মুখস্ত ও বহুল প্রচারিত গানগুলো সবারই জানা)। তারা যে সর্বদাই চালাকির আশ্রয় নিচ্ছে, তা আন্তর্জাতিক সমাজকর্মী/মানবতাবাদিদের অবশ্যই বুঝতে হবে এবং প্রকাশ্যেই চ্যালেঞ্জ করতে হবে। কারণ পুঁজিবাদিরা যেমন ধর্মকে স্বার্থোদ্ধারের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে, তদ্রূপ মডারেটরাও মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে একে সুরক্ষার চেষ্টা করছে। অর্থাৎ এরা সকলেই ধর্মকে পুঁজিহীন, সহজ ও অত্যন্ত কার্যকর হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। অতএব এতে আঘাত করা প্রতিটি প্রগ্রতিশীল/মানবাধিকার কর্মী এবং আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর একান্ত কর্তব্য বলে এ অধম মনে করে।

সেহেতু আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাসহ সকলেরই উচিত, ধর্মপুস্তকের প্রতিটি বাক্যের প্রকৃত অর্থ প্রকাশ করা এবং এর ভুলভ্রান্তি বিশেষ করে নোংরা বাণীগুলো ব্যাপকভাবে প্রচার করা। কারণ প্রায় সব ধার্মিকই কমবেশি ধর্মের নানা কুসংস্কার দ্বারা চালিত ও নিয়ন্ত্রিত (ভাইরাসের কারণে যা নিজেরা উপলব্ধি করতে পারে না)। তাই ধর্মশিক্ষার ব্যাপারে কড়া নিয়ন্ত্রণ আরোপ না করে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলোর হেলাফেলা মানেই জঙ্গিবাদ জিইয়ে রাখা। অতএব এর কুশিক্ষাগুলোর মুখোশ বিশ্বের সম্মুখে উন্মোচন না করে, বিশ্ব শান্তির আশা বোকামি। সুতারং মানবজাতিকে ধর্মের প্রকৃত গুণাগুণ (মূলত খারাপ গুণ) এবং সমাজে প্রচলিত ধর্মশিক্ষার উগ্র রূপগুলো উন্মোচনের বিকল্প নেই। কারণ ধর্মগুলোতে নানা ছলনাপূর্ণ, বিভ্রান্তিজনক, নোংরা, জঘন্য, ঘৃণ্য ও ভীতিকর বাক্যগুলো বিশ্বাসীদের কিংকর্তব্যবিমূঢ় এবং মোহগ্রস্ত করে রাখে। ফলে ধর্মদাঙ্গা ও মানবতাবিরোধি কর্মকাণ্ড থামছেই না। তবে দুঃখের বিষয়, কেউ ধর্মের কুশিক্ষার সমালোচনা করলেই ধার্মিকরাই শুধু নয়, প্রগতিশীলদের মধ্যও গুঞ্জন উঠে- লোকটা ধর্ম বিদ্বেষী। আরে বাবা! ধর্মকে কুসংস্কারমুক্ত করতে হলে, (যুক্তিপূর্ণ) সমালোচনা ছাড়া কীভাবে সম্ভব? সম্ভব হতো যদি ধর্ম যুক্তি মানতো এবং চুপচাপ থাকতো! তা তো নয়! এর যে আস্ফলন করতেই হবে! এর চরিত্র এমনই- মানবজাতির জন্য ক্ষতিকর কিছু করলেও কেউ মুখ খুলতে পারবে না! অতএব প্রগতিশীলদের অবশ্যই অন্যান্য সংস্কারের সাথে ধর্ম সংস্কারের দাবিও তুলতে হবে। কারণ অন্যান্য সংস্কার ধীরে হলেও হচ্ছে (যদিও প্রায় সব কুসংস্কারই ধর্মের সাথে জড়িত)। কিন্তু ধর্ম উল্টা পথেই হাঁটছে। জানি না, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ধর্মকেই এতো ভয় কেনো? যা বহু দাঙ্গা-যুদ্ধ ও পৃথিবীর সবচাইতে ভয়ঙ্করতম হত্যাযজ্ঞেরও প্রধান হোতা, তার প্রতি ব্যক্তির ভয় থাকতে পারে, আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর ভয় থাকবে কেনো? অতএব, কেউ ধর্ম বিদ্বেষী না হয়ে কীভাবে প্রগতিশীল কিংবা মুক্তমনা হবেন? ধর্ম যদি সামান্য সমালোচনায় কাতর হয়ে পড়ে, হুমকি দেয়, কুপিয়ে মারে… তাহলে প্রগ্রতিশীলরা কেনো এবং কোন্ যুক্তিতে ধর্মকে শ্রদ্ধা করে কথা বলবে? ধর্ম যখন মানবতার জন্য হুমকি (আদিকাল থেকেই), তখন প্রগতিশীল কিংবা মানবাধিকার কর্মীরা একে উলঙ্গ করলে (হাটে হাড়ি ভাঙ্গলে) দোষ হবে- কোন যুক্তিতে এবং কোনো? একে প্রশ্রয় দিতে দিতে এতো উঁচুতে তোলা মানবাধিকার কর্মী এবং সংস্থাগুলোর উচিত হয়েছে কী-না, সেটাও প্রশ্ন। অত্যন্ত দুঃখের যে, যখন প্রগ্রতিশীল, মানবতাবাদি কিংবা মুক্তমনা দাবিদারদের মধ্যেই কেউ কাউকে ধর্মবিদ্বেষী বলেন। বুঝতে হবে, ধর্মের সংস্কার চাওয়াই ধর্ম বিদ্বেষী নয়। যদিও বিশেষ কিছু ধর্মের সমালোচনায় ধর্ম বিদ্বেষী বলা হলেও অনেক ধর্ম আছে, যাদেরকে যা খুশি বলা হলেও ধর্ম বিদ্বেষী তকমা পায় না (যা অহরহ শোনা যায়)। ধর্মের চরম অন্ধত্ব এবং চরম বৈষম্য দূর করতে হলে সব ধর্মকেই এর ভেতরকার গোড়ামি, অন্ধত্ব, মানবতাবিরোধি কর্মকাণ্ডসহ কুসংস্কারগুলোকে ধ্বংস করার বিকল্প নেই। সুতরাং জাতিসংঘের উচিত ধর্মগুলোকে আল্টিমেটাম দেয়া। যদি এগুলো নিজেরাই নিজেদের কুসংস্কার, দাঙ্গা-যুদ্ধ, ঘৃণা, হিংসা, অহমিকা, অহংকার, নিন্দা, কুৎসা, নিজের শ্রেষ্ঠত্ব… প্রচার ও প্রয়োগ (প্রকাশ্যে বা গোপনে) করা থেকে বিরত না থাকে, তাহলে ধর্ম নিষিদ্ধ করার আন্তর্জাতিক আইন করা প্রয়োজন। তা সম্ভব না হলে, অন্তপক্ষে সমস্ত ধর্ম সংশোধনের লক্ষ্যে এর কী কী সংশোধন, পরিমার্জন, পরিবর্ধন… করা প্রয়োজন, কেনো প্রয়োজন, মানবধর্মের কী কী ক্ষতি করছে… ইত্যাদি বিষয়ে খোলখুলি আন্তর্জাতিক বিতর্ক এবং মানবাধিকার কর্মী ও প্রগতিশীলদের যুক্তিতর্ককে আইনী বৈধতা দেয়া উচিত।

রাষ্ট্রের বন্ধু থাকে, শত্রুও থাকে। কিন্তু দেখেশুনে মনে হয় ধর্মগুলোর কেবলই শত্রু আর শত্রু, এদের কোনো বন্ধুই নেই! কারণ, ধর্ম এবং এর অঙ্গসংগঠন/গোষ্ঠিগুলো দাবি করে, ওমুক বা তমুকরা নয়, তারাই একমাত্র ও খাঁটি ধার্মিক। এর অর্থ প্রত্যেক গোষ্ঠিই অন্য গোষ্ঠির কাছে ধার্মিক নয় (অর্থাৎ শত্রু)। যা চিরসত্য, সর্বশ্রেষ্ঠ ইত্যাদি বিশেষণে ভূষিত এর নিজের অনুসারীরাই যখন কেউ কারো কাছে ধার্মিক নয়, বহু ভাগে বিভক্ত, তাহলে অন্যধর্ম কীভাবে- খাঁটি দূরে থাক, সামান্য মর্যাদাও পাবে? তাছাড়া, ধর্মজঙ্গি প্রশ্নে, পথে-ঘাটে সর্বত্রই উচ্চশিক্ষিত থেকে অশিক্ষিত সকলের মুখে একই গান শুন্তি “জঙ্গিদের সাথে ধর্মের সম্পর্ক নেই…।” কিন্তু যখন জঙ্গিরা নৃশংস্যতম হত্যাযজ্ঞ ঘটায় তখন জঙ্গিদের পিতা-মাতা, নিকট-আত্মীয়, বন্ধু-পরিচিতদের… প্রত্যেকের মুখেও একই গান শুনি- “এমন ধার্মিক ছেলেরা কী করে জঙ্গি হলো! এতো নম্র ভদ্র, ধার্মিক… ছেলে আর হয় না!” তাহলে কী অতিধার্মিকতাই এদের সর্বনাশ করেছে! যদি তাই হয়, তাহলে ধর্ম এর দায় এড়াবে কোন যুক্তিতে এবং কেনো? অথচ পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র কেউই এর জন্য ধর্মকে দায়ী করে না। জীবিত থাকতে এদের ধার্মিকতায় পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্র সকলেই মুগ্ধ ও বিভোর ছিলো এবং কখনোই এদের অধার্মিক বলেনি! এটাই সত্য, ধর্মপুস্তক অনুসারে এরাই প্রকৃত ধার্মিক। এটাই ধর্ম, যা সকলকেই সম্মোহিত করে রাখার সর্বশ্রেষ্ঠ যাদুকরও বটে। উপরের অর্থাৎ পোশাকে, আচরণে, আদব-কায়দায়… ভালোমানুষী রূপই ধর্মের প্রকৃত রূপ। অর্থাৎ ধর্ম সব সময়ই বহুরূপী। যার রূপ দেখে সকলেই বিভ্রান্ত ও সম্মোহিত হয়েই চিরকাল এর প্রেমে হাবুডুবু খায় এবং গুণগানে মত্ত থাকে। যদিও কথায় আছে, চকচক করলেই খাঁটি সেনা হয় না। তবে ধর্মের ভেতরে যা-ই থাকুক, যেটাকে যতো চকচক বানানো যায়, মানুষের কাছে সেটাই ততোই ব্যবসাসফল এবং খাঁটি সোনায় পরিণত হয়। ছেলেরা ধার্মিকও ছিলো, জঙ্গিও ছিলো (একই সময়ে দুই রূপ), ধার্মিকতা সমাজ জানতো, জঙ্গিপণা জানতো না… এর কারণ ধর্মের ছলনা ও কৌশল না বোঝা এবং পরিবার ও সমাজের মূর্খতা তথা ধর্মপুস্তক না পড়ার ফল। ধর্মের প্রচণ্ড সম্মোহনের ক্ষমতা, ছলনা ও কৌশলের জালে সব ধার্মিকরাই আবদ্ধ। সুতরাং ধর্মের সাথে জঙ্গিবাদের সম্পর্ক আছে কী নেই, ভাবুন- ঠাণ্ডা মাথায় এবং খুঁজুন প্রকৃত উৎস!

প্রশ্ন- বিশ্ববাসী কোনটা চায়? ধর্মকে কিছু বলা যাবে না, ধরা যাবে না, ছোঁয়া যাবে না, ভুল-ভ্রান্তি, সত্য-মিথ্যা কিংবা হত্যাযজ্ঞ যা-ই ঘটাক, বিপক্ষে যাওয়া যাবে না… নাকি, অন্যায় করলে একচুলও ছাড় দেয়া হবে না? নাকি ধর্মজঙ্গির সাথে ধর্মকেও অবশ্যই কাঠগড়ায় উঠাতে হবে এবং এর মধ্যে যেসব নোংরামি, মানবতাবিরোধি শিক্ষা আছে, তা প্রকাশ করে, যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে! কারণ ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে আক্রমণের পর থেকে আজ পর্যন্ত ছোটবড় সব আক্রমণের পর বিশ্বের নামীদামী, জ্ঞানীগুণি, পণ্ডিতরা… কেবল নিন্দা জানিয়েই ক্ষান্ত। যদিও কিছু রাষ্ট্র জঙ্গিদমনে যুদ্ধ করছে, কিন্তু যুদ্ধ কোনো স্থায়ী সমাধান নয়, যা অকার্যকর এবং সাময়িক। এতে বরং নিরীহ মানুষের বিপুল প্রাণহানী ও ক্ষয়ক্ষতিই হচ্ছে। অতএব, ধর্মকে স্বমহিমায় রেখে জঙ্গি নির্মূলের জন্য চিরকাল যুদ্ধ করলেও কোনো লাভ হবে না (গত ১৭ বছরেও কী তা প্রমাণিত হয়নি)। কারণ জঙ্গিবাদের সূতিকাগার হলো- ধর্মপুস্তক তথা ধর্মশিক্ষা। মূল সমস্যা জিইয়ে রেখে জঙ্গিবাদ দমন শত-সহস্র বছরেও সম্ভব কিনা তাতে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। অতএব সত্যিই চিরতরে জঙ্গি নির্মূল চাইলে, জঙ্গিদের বিরুদ্ধে নয়, ধর্মের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার বিকল্প নেই। একই সঙ্গে বিশ্বব্যাপী সব ধর্মপুস্তকের যতোরকম নোংরা শিক্ষা ও বাণী আছে, এর বিপক্ষে অকপট ও প্রকাশ্য আলোচনা-সমালোচনা, তর্কবিতর্ক আইনসিদ্ধ করাও জরুরি। অর্থাৎ যেসব নোংরা ভাষা/বাণী/বাক্য… ধর্মপুস্তকে আছে, তা কেনো বর্জনীয় কিংবা সংশোধনযোগ্য নয় এবং পুস্তকগুলোর বাইরেও (প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে) যেসব জঘন্য গোড়ামিপূর্ণ ধর্মশিক্ষা দেয়া হচ্ছে, তাও কেনো সমালোচিত হবে না; এসবের সমাধান জরুরি। এতে বিশেষ ব্যক্তিবর্গ কিংবা ধর্ম, ধার্মিক-রাষ্ট্র, সমাজ, রাষ্ট্রপ্রধান, ধর্মজীবিদের… কোনোপ্রকার ওজর-আপত্তি থাকবে না, থাকলেও তা আন্তর্জাতকি সব সংস্থা কর্তৃক আইনগতভাবে বাতিল হতে হবে। তাছাড়া, শুধু ভিন্ন ধর্মেই নয়; একই ধর্মের বিভিন্ন গোষ্ঠিতেও যে অহংবোধ, গর্ববোধ, ঘৃণার শিক্ষা রয়েছে, তাও প্রকাশ্যে সমালোচনার অধিকার দিতে হবে।

তবে যারা বলেন ধর্ম ঘৃণা করতে শেখায় না, সম্প্রীতি শেখায়… তাদেরকে অনুরোধ ধর্মপুস্তকগুলো আগে পড়েন তারপর বলেন! কম বা বেশি, হিংসা ও ঘৃণা যদি না শেখাবে তাহলে- বর্তমান অহিংস ধর্মের অনুসারীদের তাণ্ডবকে কী বলবেন? কী-ই-বা বলবেন শান্তির ধর্মালম্বীদের বিশ্বব্যাপী তাণ্ডবকে (আইএস, আলকায়দা, আলশাবাবসহ দেশি-বিদেশি বহু সংগঠন)? প্রকাশ্যে এমন ঘৃণা কেবল ধর্ম তথা ধার্মিকদের দ্বারাই সম্ভব, যার প্রমাণ বহু। অথচ এসব নিয়ে মানবাধিকার কর্মী এবং ক্ষমতাধর বিশ্বনেতারা মুখ খুলছেন না। যা মানবজাতির জন্য অত্যন্ত লজ্জার, কলঙ্কের এবং ভয়াবহতম। এ মূর্খের দাবি, যেসব ধর্মপুস্তকে/ধর্মে ঘৃণার উল্লেখ আছে (আভাসে-ইঙ্গিতে হলেও), যুদ্ধ-দাঙ্গা লাগাতে যা ব্যবহৃত হচ্ছে কিংবা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, জঙ্গিদের সাথে সাথে সেইসব ধর্মকেও অবশ্যই আইনের আওতায় আনতে হবে। কারণ ওরা (সংখ্যায় কম হলেও) ধারবাহিকভাবে হত্যাযজ্ঞের পর হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে যাবে, তারপরও ধর্মকে কিছু বলা যাবে না, এ অন্যায় আবদার যতোদিন সহ্য করা হবে, ধর্ম ততোদিনই মানবতার জন্য হুমকি হয়েই থাকবে। মানবতার এ অপমান, অত্যাচার আর কতো সহ্য করা? যদিও মানবাধিকার সংস্থা/কর্মীরা মনে করেন, ধর্মকে কটাক্ষ করা যাবে না, ভুল ধরা যাবে না, সংশোধনের কথাও বলা যাবে না… তা যাবেটা কী? করবেনটাই কী? ললিপপ মুখে দিয়ে বসে বসে আর কতো মানবতার মৃত্যু দেখবেন? এটা কী মগের মুল্লুক? এ স্বাধীনতা ধর্মকে কে দিয়েছে? কেনো দিয়েছে? যা খাঁটি সত্য তাকে স্বাধীনতা দেয়া যেতে পারে (যদিও সত্যের তা প্রয়োজন নেই)। কিন্তু যা (ধর্ম) নিয়ে পুরো পৃথিবী টালমাটাল; ভিন্ন ভিন্ন ধর্মেই শুধু নয়, একই ধর্মের মধ্যেও দা-কুমড়া সম্পর্ক, সেগুলোকে এমন স্বাধীনতা দেয়া কী মানবজাতির আত্মঘাতি সিদ্ধান্ত নয়? মানবাধিকারের এমন সুযোগ নিয়েই ধর্ম যা খুশি করবে, বলবে, শোনাবে, আগুন জ্বালাবে, আগুনে পানি না ঢেলে-পেট্রোল ঢালবে, মানবতার উপরে খবরদারি করবে… আর বিশ্বাসী বা অবিশ্বাসী সকলেই তা মেনে নিতে বাধ্য, এমন অন্যায় দাবি কেনো মানবাধিকার লংঘনের আওতায় পড়বে না?

এ মূর্খের মতে, আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আন্তর্জাতকি সমানবাধিকার কর্মী/সংস্থাগুলোকে অবশ্যই স্বরব হতে হবে। ধার্মিকরা কেনো সবকিছুতেই ধর্মের রঙ লাগায়? বিশেষ করে ক্ষমতাধর ধার্মিক-রাষ্ট্রনেতারা। শুধু ভোট প্রাপ্তির জন্যই ধর্মকে ব্যবহার করছে না, অন্য দেশের উপর প্রভাব বিস্তারেও করছে। তাছাড়া ধর্মজীবিরাই শুধু নয় কোনো কোনো রাষ্ট্রের নেতারাও ধর্মরক্ষা ও বিস্তারে বহু বিবাহ এবং বহু সন্তান উৎপাদনে উৎসাহ দেয় (উদাহরণস্বরূপ, দরিদ্র রোহিঙ্গা সমপ্রদায়)। এরা দরিদ্র এবং নিপীড়িত হলেও গড়ে প্রায় ৮/১০টা বাচ্চা। এছাড়া ধর্মের কারণে সৃষ্ট সমস্যাগুলোতেও এসব কথিত ধার্মিক-রাষ্ট্রনায়কদের প্রতিবাদ, সাহায্য-সহযোগিতা, সহমর্মিতা, হুমকি-ধামকি… সর্বক্ষেত্রে সমান নয়। অর্থাৎ এদের মন-মানসিকতাও বৈষম্যমূলক। যেমন, স্বধর্মী দ্বারা স্বধর্মী নির্যাতিত বা খুন হলেও প্রায়ই মুখ খোলে না। স্বধর্মী দ্বারা বিধর্মী নির্যাতিত বা খুন হলে আমতা আমতা করে নিন্দা জানায়, সাথে অবশ্য এটাও বলতে ভুল করে না- ওরা খাঁটি ধার্মিক নয়! তবে বিধর্মীদের হাতে স্বধর্মী (যদিও এরা কেউ কাউকেই ধার্মিক বলে না, শুধু নির্যাতনের ক্ষেত্রে মায়ায়/প্রেমে উথলে ওঠে) নির্যাতিত বা খুন হলে, হুমকি-ধামিকসহ শারীরিক ভাষা দেখে বুঝতে কষ্ট হয় না, তারা মানুষ নয় বরং ধর্মকেই বেশি ভালোবাসে! এছাড়াও নিজ স্বার্থে সাধারণ ধর্মবিশ্বাসী থেকে জঙ্গি, সকলকেই উত্তেজিত করতেও তাদের জুড়ি মেলা ভার। ধর্ম যদি সত্যি সত্যিই প্রেম, অহিংসা, শান্তির, ভ্রাতৃত্বের… হয় এবং ধার্মিকরা যদি সত্যিই খাঁটি ধার্মিক হয়, তাহলে মানবিক বিপর্যয়ের সময়েও কেনো তারা ধর্মকে ব্যবহার করছে? কেউ ধর্মের ক্ষতি করলে, উত্তেজক বক্তব্য না দিয়ে বরং ঠাণ্ডা মাথায় সমাধানের পথ বাতলে দেয়াই কী তাদের উচিত নয়? স্বধর্মী কিংবা বিধর্মী কেউ নির্যাতিত হলে, সর্বক্ষেত্রেই কী সমান বক্তব্য দেয়া উচিত নয়? অথচ তাদের ভাষার ব্যবহার, আচরণ, শারীরিক ভাষা ও বহু কর্মকাণ্ডই বলে দেয়, স্বধর্মীদের প্রতি (বিধর্মী দ্বারা) অন্যায়ে এরা যতোটা উদ্বিগ্ন হয়, বিধর্মীদের বেলায় (স্বধর্মীদের দ্বারা) ততোটা নয় (যদিও কখনো-সখনো মারাত্মক ঘটনায় কিছু বলেন)। স্বধর্মী ও বিধর্মী সকলের সমস্যায় কাতর তথা সম্পূর্ণ বৈষম্যহীন ধার্মিক হয়তো মাইক্রোস্কোপ দিয়ে খুঁজতে হবে। প্রকৃত ধার্মিক খুঁজে পেতে কষ্ট হলেও, নিজ স্বার্থোদ্ধারের জন্য বিধর্মী কিংবা স্বধর্মীদের বিপদে ফেলার মতো ধার্মিকের কিন্তু অভাব নেই। এমনকি অনেক ধার্মিক আছে, নিজেরাই স্বধর্ম অবমাননা করে বিধর্মীদের(দুর্বল/সংখ্যালঘু) বিপদে ফেলে, এর প্রমাণ বহু। অতএব ধর্মের এই অতি ন্যাক্কারজনক ও উত্তেজনাময় শিক্ষা এবং মারাত্মক কিন্তু অতিভঙ্গুর অনুভূতির শিক্ষা (যা মানবজাতির জন্য অত্যন্ত ভয়ঙ্কর) অবশ্যই বন্ধ করা উচিত। অর্থাৎ কেউ ধর্মের নামে অন্যায় করলেও, অন্যায়কারীকে বলা গেলেও ধর্মকে কিছু বলা যাবে না বা দায়ী করা যাবে না… এমন শিক্ষা থেকে মানুষ যতোদিন মুক্তি না পাবে; চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলছি, ততোদিন বিশ্ব শান্তির মুখ দেখবে না।

ধর্মের আরেকটি কাপুরুষতা লক্ষ্যণীয়। যা দরিদ্র-অসহায়দের জন্য ভয়ংকরতম দুর্যোগ এবং মৃত্যুর কারণ। যেমন পূর্ব ঘোষণা ছাড়া, গোপনে, অতর্কিতে, তাৎক্ষণিক উত্তেজিত হয়ে, শত্রুপক্ষের সমশক্তি অর্জন না করা সত্ত্বেও প্রায়ই দাঙ্গা-যুদ্ধ বাঁধায়। তাদের বদ্ধমূল বিশ্বাস, সমশক্তি না হলেও কথিত ঈশ্বরই সহায়তা করবে, কারণ তারা ধর্মযুদ্ধ করছে। কেননা, এরূপ কথিত ধর্মযুদ্ধে ঈশ্বরেরা বহুবার সরাসরি সাহায্য করার উদাহরণ ধর্মে রয়েছে। যেসব কথিত মিথ শুনলো ধার্মিকরা প্রচণ্ডরকমের গর্বিত, মোহগ্রস্ত, অনুপ্রাণিত ও উম্মাদনায় বিভোর হয়ে হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলে, তখন হিমালয়ের উপর দিয়ে নৌকা বেয়ে যেতেও সমস্যা হয় না! আর তখন তাদের দিয়ে যেকোনো দুরূহ (বা আত্মঘাতি) কাজই করানো সম্ভব। যদিও এসব ধর্মীয় যুদ্ধ-দাঙ্গায় যারা ক্ষতিগ্রস্ত (নিহতসহ) হয়, এরা অধিকাংশই দরিদ্র এবং স্বধর্মী। দেখুন ৯/১১-এর থেকে প্রায় ৩২ হাজার ধর্মদাঙ্গা/যুদ্ধে প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ১ হাজার মানুষ নিহত হচ্ছে, আহত ও আজীবন পঙ্গু অগণিত… (যারা জীবন থাকতেও মৃত)। বিবিসি নিউজ, ২০১৪ সালের মাত্র এক মাসেই ৫,০০০ মানুষ খুন করেছে কথিত ধর্মযোদ্ধারা (এরা প্রায় শতভাগই স্বধর্মী)। অথচ এসব হত্যাযজ্ঞ নিয়ে ধার্মিক বিশ্বেরনেতারা যেভাবে প্রতিবাদ করা উচিত তা করে না বললেই চলে। তাছাড়া ওনারা জঙ্গিবাদের প্রকৃত কারণ খোঁজে না। কারণ/উৎস না জেনে যুদ্ধ করে যে লাভ নেই, তা কী এখনো প্রমাণিত হয়নি? তবে তারা আর যাই বলুক, একথা বলতে ভুল করে না- “এতে ধর্মের কোনো দোষ নেই, ওরা ধার্মিক নয়…।” কিন্তু বিধর্মীদের হাতে এমন নৃশংস্য ও ধারবাহিক হত্যাযজ্ঞ ঘটলে (স্বধর্মী খুন হলে) ধার্মিক বিশ্বনেতাদের হুংকারে পৃথিবী ঠিকই কেঁপে ওঠতো। এতোদিনে হয়তো তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধও লেগে যেতো। এসবের কারণ হয়তো ধর্ম এর অনুসারীদের মন বৈষম্যে ভরিয়ে রাখে। মানবতা এখানে বড় কথা নয়, ধর্মই বড়! অথচ ধার্মিক না হয়ে সত্যিকারের মানুষ হলে, তারা সব হত্যা ও অত্যাচারের প্রতিবাদ সমানভাবে করতেন, কিন্তু ধার্মিক নেতারা তা করতে পারেন না, কেননা কথিত ধর্মানুভূতি তা করতে দেয় না। অতএব, ধার্মিক বিশ্বনেতাদের এহেন একপেশে ও ঘৃণিত প্রবৃত্তি/শিক্ষার তীব্র প্রতিবাদ হওয়া উচিত।

তবে কী এই ধর্মানুভূতি? এর রূপ, রঙ, গন্ধই বা কেমন? এ মূর্খের মতে, যা অন্ধবিশ্বাসের প্রচুর বিস্ফোরক ও ভয়ানক দাহ্য পদার্থ দিয়ে তৈরি, তা-ই “ধর্মানুভূতি!” যা তন্দ্রাচ্ছন্ন আগ্নেয়গিরি! যে কোনো সময়, যে কোনো মুহূর্তেই জেগে ওঠা সম্ভব! অতএব, প্রগতিশীল, মুক্তমনা, মানবাধিকার কর্মী, আন্তর্জাতিক সংস্থাসহ সকলকেই এমন বিস্ফোরক অনুভূতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।

কারণ, এক ঈশ্বর শান্তির(!) আগুন জ্বালাবে, আরকে ঈশ্বর অহিংসার(!) পেট্রোল ঢালবে; জানিনা, ধর্মের এমন দানবীয় রূপ মানবজাতি আর কতো সইবে? আর কতো এমন কদাকার, কুৎসিত রূপ, রস ও গন্ধের কথিত ধর্মানুভূতির দাস হয়ে থাকবে এবং এর সমাদর করবে? কথিত ধর্ম এবং ধর্মানুভূতির দোহাই দিয়ে পৃথিবী ব্যাপী নৃশংস্য, নির্মম, ভয়ঙ্করতম… হত্যাকাণ্ড দেখেও কী মানবতা চুপ থাকবে? থাকলে, কেনো ও কোন্ যুক্তিতে?

অতএব ধর্মের ক্ষেত্রে, ধার্মিকদের এই অতি উত্তেজক মানসিকতা (ধর্মানুভূতি) এবং হঠকারি বুদ্ধির অবসান হওয়া বিশ্বের জন্যই জরুরি। কারণ চোখের সামনেই এরূপ উত্তেজনার বহু প্রমাণ ও করুণ ফলাফল। যেমন, সমপ্রতি রোহিঙ্গা ধর্মীয় সংগঠন ‘আরসা’ অতর্কিতে বার্মার সেনাবাহিনী ও পুলিশের ওপর আক্রমণ (এটাই প্রথম নয় বরং যা ধর্মসন্ত্রাসীরা পৃথিবীজুড়েই করছে)। এসব চোরাগুপ্তা হামলার পর, (মূলত ভীমরুলের চাকে খোঁচা) একটি দেশের সেনবাহিনী যে আঙুল মুখে বসে থাকবে না এবং তাদের চৌদ্দগোষ্ঠি ধ্বংস করবে, এসব কথা না বোঝার মতো বোকা ধার্মিক গোষ্ঠি যতোদিন এ পৃথিবীতে থাকবে, ততোদিন মানবতার কান্না থামাবে না। কারণ মারণাস্ত্রের হাত থেকে কাউকে (যতো বড় ধার্মিকই হউন) রক্ষা করতে পারে এমন দয়ালু ঈশ্বর, কোনো ঈশ্বর-সৃষ্টিকারীই আজো জন্ম দিতে পারেনি। প্রবাদ অনুসারে ইট মারলে পাটকেল খেতে হয়। এই সহজ বাক্যটি না বুঝে, ধার্মিকরা বোঝে তাদের ঈশ্বর মঙ্গলময়(!), তাই আশির্বাদ ঢেলে দেবে এবং স্বর্গদূত/ফেরেশতা পাঠিয়ে যুদ্ধ জিততে সহায়তা করবে…! একেই বলে বোকার স্বর্গ। বলছি, নির্যাতিতরা (ধর্মীয় কিংবা অন্য) যদি অত্যাচারি শাসকদের কাছ থেকে ন্যায্য অধিকার আদায়ে ব্যর্থ হয়ে একান্তই যুদ্ধে নামতে চায় (কারণ দাঙ্গা-যুদ্ধ কোনো সমাধান নয়), তাহলে প্রায় সমশক্তি অর্জন করেই যুদ্ধে মানতে হবে। নতুবা কচুকাটার হাত থেকে কথিত সর্বশ্রেষ্ঠ(!) বা সর্বশক্তিমান(!) ঈশ্বরও রক্ষা করতে পারবে না (যা প্রমাণিত সত্য)।

অতএব প্রগ্রতিশীল/মুক্তমনাদের উচিত ধর্মকে ছাড় না দিয়ে বরং চ্যালেঞ্জ করা এবং এর মেরুদণ্ডে আঘাত করা। এজন্য যা প্রয়োজন, সেসব অস্ত্র ধর্মের মধ্যেই রয়েছে। কেবল পড়তে হবে, জানতে হবে, প্রকাশ করতে হবে…। যে দেশে বা সমাজে সম্ভব নয়, সেসব দেশের উচ্চশিক্ষিত ও ক্ষমতাবান প্রগতিশীলদেরকেই ধর্ম চ্যালেঞ্জের আইনী অধিকার আদায়ের জন্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোতে দাবি তুলতে হবে বা লবি করতে হবে।

আর শ্লোগান তুলতে হবে- “সব সাঁচ মিলৈ সো সাঁচ হৈ না, মিলৈ সো ঝুঁঠ। …সাঁচী কহী ভাবই রিঝি ভাবই রূঠ॥” অর্থাৎ “সব সত্যের সঙ্গে যা মেলে তাই সত্য, যা মিলল না তা মিথ্যে। …এই কথাই খাঁটি, এতে তুমি খুশিই হও আর রাগই কর।” (কবিগুরুর লেখা থেকে সংগৃহীত, যা মধ্যযুগীয় কবি রজ্জবের উদ্ধৃতি)।

১ম পর্বের লিঙ্ক এখানে