“তুমি আমাকে চেনো না, কিন্তু তুমি আমার শরীরের ভিতরে ঢুকেছ, এবং সে-কারণেই আজ আমরা এখানে জড়ো হয়েছি। ২০১৫ সালের ১৭ জানুয়ারি আমাদের বাড়িতে বেশ চুপচাপ একটা শনিবারের রাত। বাবা ডিনার বানাল, আমি এবং আমার ছোট বোন টেবিলে বসেছিলাম; ও এই উইকেন্ডে বাসায় বেড়াতে এসেছে। আমি তখন ফুল টাইম কাজ করি, ঘুমোনোর সময় হয়ে আসছে। আমার বোন তার বন্ধুদের সাথে একটা পার্টিতে যাওয়ার পরিকল্পনা করছিল, আর আমি বাসায় বসে কিছুক্ষণ টিভি দেখে বই পড়ব ভাবছিলাম। তারপর হঠাৎ কেন যেন মনে হলো আমার তো আর কিছু করার নেই, এটাই তো আমার শেষ রাত ওর সাথে, একটা হাবাদের পার্টিই তো হবে, গেলেই তো হয় ওর সাথে, বাসা থেকে তো মোটে মিনিট দশেকের রাস্তা। আমি সেখানে বোকার মতো নেচে আমার ছোট বোনকে বিব্রতই না হয় করলাম।
পার্টিতে যাওয়ার পথে ওর সাথে ফাজলামি করে এও বলেছিলাম যে এইসব আন্ডারগ্র্যাড ছেলেদের দাঁতে নিশ্চয়ই এখনো ব্রেস থাকবে। আমার বোন আমাকে উল্টো টিটকারি মেরে বলেছিল আমি একজন লাইব্রেরিয়ানের মতো হাল্কা হলদে-বাদামি কার্ডিগ্যান পরে একটা ফ্র্যাট (ফ্রাটার্নিটি) পার্টিতে যাচ্ছি। উত্তরে নিজেকে আমি বলছিলাম, ‘বিগ মামা’, জানতাম ওখানে সবচেয়ে বয়স্ক মহিলা হব আমিই। মুখ ভেঙচাচ্ছিলাম, সে রাতে খুব হাল্কা মনে বেশ দ্রুতই ড্রিংক করা শুরু করে দিয়েছিলাম আমি। হিসেবেই আনিনি যে কলেজ ছাড়ার পর আমার সহন ক্ষমতা অনেক কমে গেছে।
এর পরের যে ঘটনাটা মনে পড়ে সেটা হলো আমি স্ট্রেচারে চাদর মুড়ি দিয়ে পড়ে আছি একটা হলওয়েতে। আমার হাতের পেছনে আর কনুইতে শুকনো রক্ত আর ব্যান্ডেজ। ভাবলাম পড়েটড়ে গেছি হবে, আর ক্যাম্পাসের প্রশাসনিক কোনো অফিসে আনা হয়েছে আমাকে। খুব শান্ত ছিলাম আর ভাবছিলাম আমার বোন কোথায় গেল? একজন ডেপুটি এসে জানাল আমি যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছি। তখনো আমি চুপচাপ আছি, নিশ্চিত যে লোকটা ভুল মানুষের সাথে কথা বলছে। এই পার্টির কাউকে আমি চিনিই না। যখন শেষমেষ আমাকে বাথরুমে যেতে দেয়া হলো, আমি হাসপাতালের দেয়া প্যান্টটা নামিয়ে নিজের অন্তর্বাস টেনে নামাতে চাইলাম, হাতে কিছুই ঠেকল না। মনে পড়ে আমার হাত আমার ত্বক ছুঁলো, কিন্তু কিছুই ধরতে পারল না। আমার শরীরের নিচের দিকে তাকিয়ে দেখি কিছু নেই। আমার যোনি আর বাকি পৃথিবীর মাঝখানের পাতলা কাপড়ের ফালিটা হারিয়ে গেছে, আর আমার ভেতরের সবটুকু যেন নিঃশব্দ করে দেয়া হয়েছে। ওই অনুভূতিটা প্রকাশ করার কোনো শব্দ আমার জানা নেই এখনো। শ্বাসটা চালু রাখার জন্য ভেবে নিলাম আলামত হিসেবে পুলিশ হয়ত কাঁচি দিয়ে ওটা কেটে নিয়েছে।
ঘাড়ে সুঁই এর মত ধারালো পাইন পাতাগুলো ঠেকছিল, আমি চুল থেকে সেসব টেনে টেনে তুলতে শুরু করলাম। ভাবলাম, হয়ত পাইন গাছ থেকে পাতাগুলো আমার মাথার উপর ঝরে পড়েছে। আমার পেট বলছিল বাঁচাও, বাঁচাও আর আমার মাথাটা পেটকে যেন বলছিল না না ভেঙ্গে পড়ো না।
গায়ে কম্বল মুড়িয়ে এলোমেলোভাবে এ ঘর থেকে ও-ঘরে ঘুরছিলাম, পায়ে পায়ে পিছু নিচ্ছিল সেই সুঁচালো পাইন পাতারা, যে ঘরেই বসছিলাম সে ঘরেই ফেলে আসছিলাম গাদাখানেক পাতা। আমাকে ‘রেইপ ভিক্টিম’ নামের একটা কাগজে সই করতে বলা হলো, এবং তখনই প্রথম ভাবলাম তবে আসলেই বুঝি কিছু ঘটেছে। আমার জামাকাপড় খুলে নেয়া হলো, নার্সদের সামনে আমি পুরো নগ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম, তারা আমার শরীরের জখমগুলো রুলার দিয়ে মেপে মেপে ছবি তুলল। চুল থেকে পাইন পাতাগুলোকে চিরুনি দিয়ে উঠিয়ে নিতে শুরু করল তিন জন, তাদের ছয় হাতে মিলে সেই পাতাগুলোকে একটা কাগজের ঠোঙায় ভরছে। আমাকে শান্ত করার জন্য ওরা বারবার বলছিল আরে এসব কিছুনা গাছপালা, ডালপালা। আমার যোনি আর পায়ুতে বেশ কিছু সোয়াব (দেহরস সংগ্রহের শোষক প্যাড) ঢুকানো হয়েছে, আছে ইনজেকশনের সুঁই, ওষুধ। আমার ছড়ানো দুপায়ের মাঝে তাক করা ছিল একটা নাইকন ক্যামেরা। আমার আমার যোনির ভেতরের ক্ষত মাপার জন্য নীল রং এর ঠাণ্ডা এক ধরণের পেইন্টের সাথে ঢুকান ছিল লম্বা, বাঁকানো এক চঞ্চু।
এসবের ঘন্টাখানেক পর আমাকে স্নান করতে বলা হলো। ঝর্ণার নিচে শরীরটা পরখ করে বুঝলাম, আমার এই শরীরটা আমি আর চাই না। ভয় পাইয়ে দিচ্ছে এটা আমায়, জানি না এর ভেতরে কী ঢুকেছিল, ওটা কী দূষিত হয়ে উঠেছে, কে ছুঁয়েছে ওটা? জ্যাকেটের মতো খুলে ছুঁড়ে ফেলে দিতে ইচ্ছা করছিল শরীরটা আর বাকি সব কিছুর মতন ওটাও ফেলে আসতে চাইছিলাম আমি হাসপাতালে।
সেই সকালে আমাকে ওরা শুধু বলেছিল যে, ময়লার একটা আস্তাকুঁড়ের পাশে পাওয়া গেছে আমাকে, সম্ভবত অচেনা কেউ আমাকে ধর্ষণ করেছে। আর এইচআইভি’র জন্য আমাকে আবারো পরীক্ষা করাতে হবে কারণ এর ফলাফলটা ঠিক চট করে পাওয়া যায়না। ওরা বলল এখন না কি বাসায় গিয়ে আমার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়া উচিত। স্রেফ এই তথ্যটা নিয়ে পৃথিবীর কাছে আমাকে ফিরে যেতে হবে, শুধু ভাবুন একটি বার! বিদায়ের সময় ওরা আমাকে দীর্ঘ, গাঢ় আলিঙ্গনে জড়িয়ে ধরল, এবং আমার নেকলেস আর জুতোজোড়া ফিরিয়ে দিল। তাদের দেয়া নতুন শার্ট আর প্যান্ট পরে আমি হেঁটে গেলাম পার্কিং লটের দিকে…… ।” (১) (চিঠির বাকি অংশটি একজন অনুবাদ করে দিবেন বলেছেন, দেখা যাক।)
এটা সেই ২৩ বছরের মেয়েটার লেখা হৃদয়বিদারক চিঠির প্রথম অংশ – সে তার ধর্ষকের উদ্দেশে আদালতে এটা পড়ে শুনিয়েছিল (আমার মতে সব সমাজের সব পুরুষের এই চিঠিটা পড়া উচিত, ১২-১৪ বছরের বেশি বয়সের প্রতিটি ছেলের বাবা-মায়ের উচিত তাদেরকে সামনে বসিয়ে এই চিঠিটা পড়ে শোনানো।) তার ধর্ষক ছিল আমেরিকার সুবিধাভোগী অংশ থেকে আসা সাদা, স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে পড়ুয়া একজন সেলিব্রিটি সাঁতারু, ২০ বছর বয়সের ব্রক টার্নার। সেই রাতে ফোনে মেয়েটার স্তনের ছবি তুলে বন্ধুদের পাঠিয়ে গর্ব করতে করতে মহাফূর্তিতে সে মেয়েটিকে ধর্ষণ করেছিল।
আইন অনুযায়ী তার ১৪ বছরের জেল হওয়ার কথা, কিন্তু সমাজের একই শ্রেণীর অধিবাসী আরেকজন সাদা পুরুষ জজ সাহেব তার জন্য কাতর হয়ে পড়লেন। জুরিরাও সঠিক সাজার পক্ষেই রায় দিয়েছিলেন, সাক্ষী প্রমাণেরও কোনো অভাবও ছিল না। দু’জন ছাত্র তাকে হাতেনাতে ধরে ফেলেছিল আস্তাকুঁড়ের পাশে অচেতন অবস্থায় পড়ে থাকা মেয়েটিকে ধর্ষণরত অবস্থায় । টার্নার দৌঁড়ে পালানোরও চেষ্টা করেছিল, তখন এই দু’জন প্রত্যক্ষদর্শী ছুটে গিয়ে তাকে ধরে নিয়ে এসে পুলিশে হাতে তুলে দেয়। কিন্তু তারপরও তাকে শুধু ৬ মাসের জেল আর তিন বছরের প্রবেশন দেওয়া হয়েছিল! শুনেছি ‘ভালো’ কয়েদি হওয়ার কারণে ৩ মাসের মাথায়ই সে জেল থেকে ছাড়া পেয়ে গিয়েছিল।
তার সাজা কমিয়ে দেওয়ার পিছনে যুক্তি? — না, জেলে গেলে না-কি টার্নারের এই সম্ভাবনাময় জীবনে বড্ড খারাপ প্রভাব পড়বে। তার বিত্তবান বাবাও জজ সাহেবের কাছে ছেলের সাফাই গেয়ে বলেছিল: ২০ মিনিটের একটা ‘কাজের’ জন্য তার ছেলের এই উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নষ্ট করা ঠিক হবে না। তার ছেলে না-কি খুব হাসিখুশি ছিল, রাঁধতে পছন্দ করত, রিব-আই স্টেক খেতে পছন্দ করত, এখন সে আর কিছুই খেতে চায় না, তার চোখে মুখে বিষাদের ছায়া। সে এই মামলার কারণে অনেক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে গেছে, জজ সাহেবের কোনভাবেই উচিত হবে না মরার উপর খাঁড়ার ঘা দিয়ে লম্বা সময়ের কোন সাজা দেওয়া!
তা তো বটেই — গতস্য শোচনা নাস্তি — তবে আমরা এও জানি যে এই নিয়ম শুধুই পুরুষের জন্য প্রযোজ্য; আর পিতৃতন্ত্রের ভারে ন্যুব্জ সমাজে আজও নারীদেরকেই, সিসিফাসের মতো, আজীবন বয়ে বেড়াতে হয় সেই যন্ত্রণার দায়ভার। ধর্ষিত মেয়েটাকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাও বলে ছেড়ে দেওয়া সহজ, কিন্তু আসলেই কী সম্ভব মেয়েটার পক্ষে সেই ‘স্বাভাবিকত্ব’ ফিরে পাওয়া? তার উপরে সেটা যদি হয় আমাদের মত সমাজ ব্যবস্থা যেখানে ধর্ষিতাকেই সারাজীবন ‘খারাপ মেয়ের’ গ্লানি নিয়ে বেঁচে থাকতে হয়!
আমরা আজকাল, ইন্টারনেট এবং মিডিয়ার কল্যাণে, বাংলাদেশ বা ভারতে অনেক ধর্ষণের ঘটনা দেখছি, চোখ বন্ধ করে থাকলেও শুনতে বাধ্য হচ্ছি। এইটাকে আমরা এখন ‘ভালো’ বলে গণ্য করছি – কারণ আজকের দিনে অন্তত কিছু নারী এগিয়ে এসে ধর্ষণ নিয়ে মামলা করার সাহস পাচ্ছে, এ-নিয়ে কথা বলার সুযোগ পাচ্ছে। এতদিন তো সেটা করারও উপায় ছিল না। তনুরা না পারলেও বা জ্যোতি সিংরা যুদ্ধে লড়তে লড়তে অতলে তলিয়ে গেলেও রথি এবং সাদিয়ারা চেষ্টা চালিয়ে যচ্ছে, রুদ্ধ দ্বার মাথা ঠুকে যতটুকু পারে ততটুকুই খোলার চেষ্টা করছে।
আমাদের প্রজাতির দুই লক্ষ বছরের বিবর্তনের শেষে, বিজ্ঞান-প্রযুক্তির অকল্পনীয় উন্নতির যুগে বসে ইলন মাস্ক যখন মঙ্গল গ্রহে বসতি স্থাপনের কথা বলছেন তখন এটুকু অর্জনকেই অগ্রগতি ভেবে নিয়ে আমরা সান্ত্বনা পাওয়ার চেষ্টা করছি। একজন নারী হিসেবে একে ভালো বলব না-কি খারাপ বলব সেটা আমার জানা নেই। পাঠকের উপরেই ছেড়ে দিলাম এই বিচারের ভার — আমাদের তথাকথিত ‘আলোকিত মানব সভ্যতার’ গ্লাসটা অর্ধেক ভর্তি নাকি অর্ধেক খালি সেটা আপনারাই ঠিক করে নিন।
স্ট্যানফোর্ডের ধর্ষণের শিকার এই মেয়েটিকে অন্তত পুলিশের হাতে হেনস্থা হতে হয়নি, তাকে কেস করার জন্য বারবার থানায় ধর্না দিতে হয়নি, পুলিশ তাকে ইজ্জতের দোহাই দিয়ে ফিরিয়ে দেয়নি — তারপরও অবস্থাটা এখনো খুব একটা ভাল নয় আমেরিকা বা ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও – বিংশ শতাব্দীর তাল মাতাল করা নারী আন্দোলনের কেন্দ্রবিন্দুর দেশগুলোতেও। এখানো বহুদূরের পথ হাঁটতে হবে আমাদের, যদিও মাঝে মাঝে মনে হয় মুক্তির পথটা যেন সীমাহীন, এর কোন শেষ নেই।
বাংলাদশে যৌন নির্যাতন এবং ধর্ষণের কোন সার্বিক তথ্য আমার জানা নেই। আইন ও সালিশ কেন্দ্র মিডিয়া থেকে জরিপ করে (সম্ভবত পত্রিকার রিপোর্ট থেকে) জানাচ্ছে, এ বছর জানুয়ারি থেকে অগাস্ট পর্যন্ত ৪৬৪ জন নারী ধর্ষিত হয়েছেন, ৫৬ জনের উপর ধর্ষণের চেষ্টা চালানো হয়েছে (২)। ধর্ষণের পরে ২৭ জন মারা গেছেন, এবং ৮ জন্য আত্মহত্যা করেছেন। বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের পরিসংখ্যান বলছে ২০১৬ সালে ধর্ষণের শিকার হয়েছিল ৪৪৬ জন শিশু (২)। কিন্তু এই পরিসংখ্যান থেকে দেশের যৌন নির্যাতনের সার্বিক চিত্রটি আঁকা বোধ হয় কোনভাবেই সম্ভব নয়। আমরা জানি না শতকরা কতজন নারী বা তাদের পরিবার আসলে পুলিশের কাছে রিপোর্ট করার সাহস পান (যার সংখ্যা খুব বেশী হওয়ার কোন কারণ নেই), আর তার মধ্যেও ক’টাই বা শেষ পর্যন্ত পত্রিকার খবরে পরিণত হয়?
তাই আমি প্রথমে আমেরিকার কিছু তথ্য দিচ্ছি। এদেশের মেয়েরা এখন আমাদের দেশের চেয়ে অনেক সহজে যৌন নির্যাতন এবং ধর্ষণের বিচারের দাবি করতে পারে এবং করেও। তারপরও পশ্চিমেও এটা সর্বজনবিদিত যে, সব অপরাধের মধ্যে ধর্ষণ নিয়ে সবচেয়ে কম রিপোর্ট করা হয়। এখানে কিছু পরিসংখ্যান তুলে ধরছি; হয়ত এর প্রেক্ষিতে আমাদের দেশে, যেখানে এখনো অনেক ক্ষেত্রেই ধর্ষণের শিকার মেয়েটিকেই দোষী ভাবা হয় পারিবারিক এবং সামাজিকভাবে, পুলিশের কাছে গেলেও সে মামলা নিতে অস্বীকার করে, আর মামলা হলেও তার উপর হুমকি, ঝক্কি, ঝামেলার শেষ থাকে না, ধর্ষণের চিত্রটা কেমন হতে পারে তা সম্পর্কে একটা অস্পষ্ট ধারণা পাওয়া যেতে পারে।
আমেরিকার ডিপার্টমেন্ট অফ জাস্টিসের রিপোর্ট(৩) অনুযায়ী প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৩ লাখ নারী ধর্ষিত হয়; তবে সেন্টার ফর ডিজিস কন্ট্রোল(CDC) মনে করে এই সংখ্যা ১৩ লাখে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারী তথ্য মতে, ১৯৯৫ সাল থেকে ২০০৫ সালের মধ্যে যৌন নির্যাতনের সংখ্যা কমেছে ৬৪% — নির্যাতিতের সংখ্যা প্রতি ১,০০০-এ ৫ থেকে ১.৮-এ নেমে এসেছে। ২০১০ সালে ২৭০,০০ নারী, অর্থাৎ ১২ বছরের বেশি বয়সের মেয়েদের মধ্যে প্রতি ১,০০০-এ ২ জন যৌন নির্যাতন ও ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। ১৯৯৫ সালে ২৮% যৌন নির্যাতনের কেসের রিপোর্ট করা হয়েছে পুলিশের কাছে; এবং এর সংখ্যা ২০০৩ সালে বেড়ে ৫৯% এ দাঁড়িয়েছিল, কিন্তু ২০০২ সালে তা আবার ৩২% এ নেমে গেছে। রিপোর্ট করা এবং না করা কেসগুলোকে যোগ করে হিসেব করলে ২০০৫-২০১০ সালের মধ্যে মাত্র ১২% কেসের আসামীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
হাফিংটন পোস্টের এক রিপোর্টে(৪) বলা হচ্ছে, এখনো ৫৪% ধর্ষণের কেসই রিপোর্ট করা হয় না এবং প্রতি ৫ জনের মধ্যে ১ জন মেয়ের এ দেশে ধর্ষিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
আন্তর্জাতিক পরিসংখ্যান ঘেঁটে দেখলে দেখা যায় যে সুইডেনে সর্বোচ্চ ধর্ষণের কেস রিপোর্ট করা হয়। তবে সে দেশের কর্তৃপক্ষের মতে সুইডেনের মতো প্রগতিশীল সমাজে ধর্ষণের রিপোর্ট করার ক্ষেত্রে এখন নারীরা আগের চেয়ে অনেক বেশী সাহসী হয়ে উঠেছেন । তার উপরে আবার সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে যৌন নির্যাতনের কেসগুলোকে ইচ্ছা করেই কিছুটা ভিন্ন ভাবে রিপোর্ট করা হয়। যেমন ধরুন, কোনো বিবাহিত নারী যদি বলেন যে তার স্বামী তাকে এক বছর ধরে ধর্ষণ করে আসছে তাহলে তার বিরুদ্ধে ৩৬৫ টি ধর্ষণের মামলা করা হবে। সে কারণেই সে দেশে ধর্ষণের সংখ্যা অন্যান্য দেশের তুলনায় এত বেশী বলে মনে হয় ।
আপনারা যদি ভাবেন ‘ওহ, আমেরিকা, সুইডেন বলে এরকম হয়, আমাদের দেশে তা হবে না’ তাহলে চলুন ভারতের কিছু হিসেব দেখি যেখানকার সমাজ সংস্কৃতির সাথে আমাদের প্রচুর মিল থাকার কথা।
ভারতের খবর পড়লে মনে হয় সেখানে যেন ধর্ষণ এবং গ্যাং রেপের মহামারী চলছে। যত বেশী কথা হচ্ছে, আলোচনা হচ্ছে, শাস্তি হচ্ছে, ততই যেন আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে এই অমানুষত্ব। যৌন হয়রানি এবং নির্যাতন প্রধানত একটি জেন্ডারড অপরাধ। এই যৌন অপরাধীদের ৯৯% পুরুষ, আর এই অপরাধের বলি-দের মধ্যে ৯১% ই নারী(৫)। পুরুষ, বিশেষ করে ছোট ছেলেরাও, এর শিকার হন, কিন্তু সেক্ষেত্রেও নির্যাতক প্রধানত থাকেন পুরুষই। সংখ্যায় তুলনামূলকভাবে অনেক কম হলেও পুরুষেরাও পুরুষের হাতে যৌন নির্যাতনের শিকার হন, এ প্রসঙ্গে পরে অন্য কোন পর্বে লেখার ইচ্ছা রইল।
ভারতের জাতীয় ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর (NCRB) ২০১৫ সালের রিপোর্টে প্রকাশিত হয়েছে যে, ভারতে ২০১০ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত গড়ে প্রতি বছর ২৮,৩৪৯ টি টি ধর্ষণের মামলা করা হয়েছে। ২০১৫ সালে ৩৪,৬৫১ টি ধর্ষণ এবং ৪৪৩৭টি ধর্ষণের চেষ্টার রিপোর্ট করা হয়েছে (৬)।
জনসংখ্যা প্রতি হিসেব করলে দিল্লীতে সর্বোচ্চ ধর্ষণের কেস রিপোর্ট করা হয়েছেঃ দিল্লীতে ২২৫১টি, মধ্যপ্রদেশে ৪৩৯১টি, মহারাষ্ট্রে ৪১৪৪টি, রাজস্থানে ৩৬৪৪টি, উত্তর প্রদেশে ৩০২৫টি, কেরালায় ১২৫৬, বিহারে ১০৪১ টি…। এই রিপোর্টেও আবারো সাবধান করে দেওয়া হয়েছে এই বলে যে, কোন রাজ্যে বা শহরে কম ধর্ষণ রিপোর্টেড হওয়া মানে এই নয় যে সেখানে আসলেই কম মেয়ে ধর্ষিত হয়। ধর্ষণের হার আসলে নির্ভর করে, রাজ্যের নারী শিক্ষা এবং স্বাধীনতার হার, মেয়েদের কর্মক্ষেত্রে প্রবেশাধিকার,নারী ও পুরুষের অনুপাত ইত্যাদির উপর। যেমন কেরালার মতো শিক্ষিত একটি রাজ্যে মেয়েরা অনেক বেশী সাহসী হবে এ ধরনের নির্যাতন নিয়ে কথা বলতে যেখানে হয়ত বিহারে তার সংখ্যা হবে অনেক কম, যদিও বিহারের জনসংখ্যা কেরালার চেয়ে তিনগুণ।
একই কথা খাটে ইউরোপ, সুইডেন বা আমেরিকার পরিসংখ্যানের ব্যাপারেও। আমেরিকায় ৩ লক্ষের বিপরীতে ভারতে মাত্র ৩০ হাজারের মতো ধর্ষণ আর বাংলাদেশে মাত্র কয়েকশ’ – এই সংখ্যাগুলো দেখে খুশী হয়ে যাওয়ার মত কিছু নেই। এখানে এই ভেবে স্বস্তি পাওয়ার কোন অবকাশ নেই যে, ‘দেখ পশ্চিমের দেশগুলোতে কত বেশী ধর্ষণের ঘটনা ঘটে, ভারত বা বাংলাদেশের অবস্থা সেই তুলনায় কতই না ভাল” । এই দেশগুলোতে নারীরা গত একশ’ দেড়শ’ বছরে যতটুকু স্বাধীনতা অর্জন করতে পেরেছে (যদিও সম্পুর্ণ নারী মুক্তি এখনও অধরাই রয়ে গেছে) তার ফলশ্রুতিতেই তারা আজকে এগুলো নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলার সাহস এবং সুযোগ পাচ্ছে। সেজন্যই সংখ্যাটা আপাত চোখে এত বেশী দেখাচ্ছে। আমাদের মত দেশগুলোতে বেশীরভাগ কেসই গোপন করা হয় – পরিবার এবং মেয়েটির সম্মান ও সতীত্বের কথা ভেবে, সমাজে তাদের আর জায়গা হবেনা ভেবে, বিচার পাবেনা ভেবে, উল্টো হুমকির শিকার হবে ভেবে। এখানে একইভাবে ধর্ষণের কেসগুলো রিপোর্ট করার সুযোগ তৈরি হলে সেগুলোর সংখ্যাও এর চেয়ে বেশী বই কম হবেনা।
ধর্ষণ সম্পর্কে আমাদের সমাজে একটা বড় ভুল ধারণা হচ্ছে যে, দানবীয় ধরনের কিছু ‘খুব খারাপ’ ছেলে ধর্ষণ করার ক্ষমতা রাখে আর ‘খুব খারাপ’ ধরনের মেয়েরা ধর্ষিত হয়। কথাটা আসলে বড্ড ভুল — সব সমাজেই অধিকাংশ যৌন নির্যাতন ঘটে চারপাশের পরিচিত পুরুষদের দ্বারাই।
আমেরিকার সমাজের তথ্য থেকে দেখা যাচ্ছে, ৩৮% নারী ধর্ষিত হন বন্ধু বা পরিচিত কোন ছেলের দ্বারা, ৩৪% স্বামী বা বয়ফ্রেন্ড দ্বারা (খুব অল্প সংখ্যক ক্ষেত্রে মেয়েদের দ্বারাও), এবং ৬% আত্মীয় বা পরিবারের কোন সদস্য দ্বারা ধর্ষিত হন। ২২% ধর্ষণের ঘটনা সংঘটিত হয় অপরিচিতদের দ্বারা। আমাদের দেশের সাম্প্রতিক ধর্ষণের ঘটনাগুলো থেকেও চিত্রটা সেরকমই দেখা যাচ্ছে বলেই মনে হয়।
মধুমিতা পাণ্ডে নামক একজন পিএইচডি ছাত্রী তার গবেষণার জন্য ৩ বছর ধরে দিল্লির কারাগারে আটক ১০০ জন ধর্ষককে ইন্টারভিউ করেছেন (৭)। তার এই গবেষণা থেকে বেশ কৌতূহলোদ্দীপক কিছু তথ্য উঠে এসেছে। উনি বুঝতে চেয়েছিলেন এরা কিভাবে চিন্তা করে, কী ধরনের পুরুষেরা আসলে ধর্ষণ করে, কী থেকে এ ধরনের মানুষের জন্ম হয় সমাজে।
উনার গবেষণার বেশীর ভাগ পুরুষই সমাজের নিম্নশ্রেণীর মানুষ, কয়েকজন হাই স্কুল পাশ করলেও বেশীর ভাগই প্রাইমারি স্কুলও পাশ করেননি। এরা কেউই কোন ভিনগ্রহের বাসিন্দা নন, দানবও নন। এরা আমাদের আশপাশের খুব সাধারণ মানুষ, তাদের কাজ কর্ম চিন্তা ভাবনাগুলো আমাদের পিতৃতান্ত্রিক সমাজের অচলায়তনেরই বহিঃপ্রকাশ। পুরুষেরা পুরুষোচিত তেজ এবং কর্তৃত্বকে স্বাভাবিক এবং ‘প্রাকৃতিক’ বলে বিশ্বাস করে আর মেয়েরা তাদের বশ্যতা স্বীকার করে নেওয়াটাকেই স্বাভাবিক বলে মেনে নিয়ে বড় হয় আমাদের সমাজে।
এই সাজাপ্রাপ্ত আসামীদের অনেকেই এখনো মনে করে না যে তারা ধর্ষণ করেছে; তারা যৌন সম্পর্কের ক্ষেত্রে নারীর অনুমতি কী জিনিস সেটাই এখনো বোঝে না। তাদের বেশীর ভাগেরই কোন অনুশোচনাও নেই এ নিয়ে। আর যারা বোঝেন যে এটা অপরাধ তাদের বোঝার নমুনাটা দেখলে রাগে দুঃখে হতাশায় কাঁদতে ইচ্ছে করে।
৪৯ বছর বয়সের এক মন্দির-পরিষ্কারকের সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলেন পাণ্ডে। ২০১০ সালে ৫ বছরের এক শিশু ভিক্ষুককে ধর্ষণ করার দায়ে জেলে গিয়েছিল সে। তেমন কোন লেখাপড়াও নেই তার। দোষটা নাকি ওই ছোট্ট মেয়েটিরই – খুব খারাপভাবে বারবার তার গায়ে স্পর্শ করে সে ওই লোকটিকে ধর্ষণ করতে প্ররোচিত করেছিল! মেয়েটিকে শুধু একটু শিক্ষা দেওয়ার জন্য ধর্ষণটা করে থাকলেও তার এখন এ-নিয়ে বেশ অনুশোচনা হয়। কিন্তু সেই অনুশোচনাটা কিসের জন্য জানেন? তার পাপের বা অপরাধের জন্য নয়, এত্ত ছোট্ট একটি শিশুর উপর অত্যাচার করার জন্যও নয়, বরং তার কারণেই যে মেয়েটি আর কুমারী থাকলো না, এখন তাকে কে বিয়ে করবে? — সেই জন্যে। এই ‘মহান’ ব্যক্তিটি জেল খাটা শেষ হলে মেয়েটিকে বিয়ে করে উদ্ধার করারও ইচ্ছে পোষণ করে।
আপনি হয়ত ভাবছেন যাক বাঁচা গেল, আমার মতো কম্পিউটারের সামনে বসে এই লেখাটি পড়ার মত শিক্ষিত পুরুষেরা হয়ত এভাবে ধর্ষণ করে না। কিন্তু সেটা যে সত্যি নয় সেটা আপনিও খুব ভালো করে জানেন। বেশী দূর যেতে হবে না, এ বছরই যতগুলো ধর্ষণের কেস মিডিয়াতে প্রকাশ পেয়েছে তার মধ্যেই প্রচুর পয়সাওয়ালা ব্যবসায়ীর ‘শিক্ষিত’ ছেলে থেকে শুরু করে সরকারি দলের প্রভাবশালী ছাত্রনেতা, শ্রমিক নেতা পর্যন্ত কেউই বাদ নেই।
আমেরিকায় সাম্প্রতিককালে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প, বিল ও’রাইলি থেকে শুরু করে বিল কসবি’র মতো অত্যন্ত সুপিরিচিত বিখ্যাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একাধিক যৌন হয়রানি এবং ধর্ষণের অভিযোগ আনা হয়েছে (৮)। ‘দ্যা কসবি শো’-র বিখ্যাত অভিনেতা বিল কসবির মতো অত্যন্ত সম্মানিত একজন ব্যক্তিত্ব নাকি নিয়মিতভাবে, গত ৫০ দশক ধরে, অভিনয় জগতের বিভিন্ন নারীকে পানীয়ের সাথে ওষুধ খাইয়ে অচেতন করে ধর্ষণ করেছে। ৩০ জনেরও বেশী নারী তার বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছেন। তার প্রভাব প্রতিপত্তির কারণে এবং আগে ধর্ষণ নিয়ে সমাজে এত সচেতনতা না থাকায় এই নারীরা এতদিন এগিয়ে এসে অভিযোগ করার সাহস পাননি।
গত ক’দিন ধরে হলিউডের বিখ্যাত প্রডিউসার, মিরা ম্যাক্সের প্রতিষ্ঠাতা, “Sex, Lies, and Videotape,” “The English Patient,” “Pulp Fiction,” “Shakespeare in Love,” এবং “The King’s Speech” এর মত সিনেমার প্রযোজক হারভি ওয়াইনস্টিনকে নিয়ে তোলপাড় চলছে। গুয়েনেট প্যালট্রো থেকে শুরু করে এঞ্জেলিনা জোলি পর্যন্ত এক ডজনেরও বেশী নারী তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানি এবং ধর্ষণের অভিযোগ করেছেন কয়েকদিন আগে নিউ ইয়র্ক টাইমসে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পরে (৯)। অনেকেই বলছেন যে, ওয়াইনস্টিনের এই স্বভাবের কথা অনেকেই জানত, কিন্তু তার প্রভাব প্রতিপত্তির কারণে এতদিন কেউ কিছু বলতে সাহস পায়নি।
ওয়াইনস্টিনের হাতে যৌন হয়রানির শিকার লরেন সিভান নামের একজন সংবাদ প্রতিবেদক এক টুইটে একটা ভাল কথা বলেছেন। ধর্ষণের খবরটি তিনি এতদিন প্রকাশ না করে গোপন রেখেছিলেন কেন জানতে চেয়েছেন যারা তাদের উদ্দেশ্য করে লরেন বলেন, ১০ বছর আগেও এই খবর এভাবে প্রকাশ করা সম্ভব ছিল না। সম্প্রতি এটা সম্ভব হয়ে উঠেছে কারণ তার চেয়ে বড় বড় নারীরা এখন অনেক সাহসী হয়ে এগুলো প্রকাশ করতে এগিয়ে আসছেন। হলিউড নিয়ে অনেক গুঞ্জন থাকলেও সেখানে এই হারে এ লিস্টার নায়িকারা যে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন সেটা হয়তো আমাদের ধারণা বাইরে ছিল এতদিন। বৃটিশ অভিনেত্রী এমা থম্পসন বিবিসির সাথে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ওয়াইনস্টিনের খবরটি শুনে উনি একটুও অবাক হচ্ছেন না; মুভি ইন্ড্রাস্ট্রিতে ওনার নিজের কমবয়সী সময়টা কেটেছেই ‘বহু পুরুষের জোর করে ঢুকিয়ে দেওয়া জিবগুলো মুখ থেকে টেনে বের করতে করতে…। এরা শুধু যৌনতায় আসক্ত বললে ভুল হবে, এরা আসলে যৌন শিকারি’।
এখানে আরও উল্লেখযোগ্য খবর হচ্ছে যে ডনা ক্যারেনের মত একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নারী ফ্যাশন ডিজাইনার পিতৃতান্ত্রিক সমাজের সেই বস্তাপঁচা ধারণাগুলোকে তুলে ধরে হারভি ওয়াইনস্টিনকে সমর্থন করার চেষ্টা করে তোপের মুখে পড়েছেন। উনি সেই অতি পরিচিত সুরে গান ধরেছেন, ওয়াইনস্টিন খুব ভালো মানুষ, আমেরিকার মতো সমাজে মেয়েদের না-কি আগে নিজেদের দিকে তাকাতে হবে। মেয়েরা যৌনতা আর সেন্সুয়ালিটি দিয়ে পুরুষের এ ধরনের ব্যবহারকে উস্কে দিচ্ছে কিনা সেটা আগে দেখতে হবে। কে জানে, মেয়েরা নিজেরাই হয়ত এগুলো চাচ্ছে! ভিক্টিম ব্লেমিং এর কথা শুনলে আজকাল আর আমরা অবাক হই না। এগুলোই তো শুনে এসেছি সেই কবে থেকে, এ আর নতুন কী? কিন্তু তথাকথিত নারী উন্নয়ন করে বেড়ানো, খ্যাতিসম্পন্ন ডনা ক্যারেনরাও যখন এরকম করে বলেন তখন বুঝি মুক্তির পথটা হয়ত এখনো বহুদূর।
আমাদের দেশেও এ ধরনের ঘটনা ঘটছে অহরহ। কিন্তু সেখানে বিত্তবান এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা কতটুকু অসম্ভব সেটা বোধ হয় আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আসলে শ্রেণীবিভক্ত সমাজে এই যৌন নির্যাতনের ব্যাপারটি নির্দিষ্ট কোনো শ্রেণীর সমস্যা নয়, এটি তার চেয়েও এক ধাপ উপরের স্তরের সমস্যা। একজন রিকশাচালক আমাদের সমাজে তার চেয়ে উঁচু শ্রেণীর মানুষের হাতে সারাক্ষণ নিগৃহীত হন, তিনিই হয়ত আবার বাড়ি গিয়ে বউ পেটাতে দ্বিধাবোধ করেন না। তাই আজকের সমাজের নারীরা একই সাথে যেমন শ্রেণী সংগ্রাম করছেন ঠিক তেমনি আবার পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধেও যুদ্ধে নেমেছেন।
এখানে কয়েকটি প্রসঙ্গ পরিষ্কার করা দরকার। আমরা নারীরা অনেক সময়েই সমগ্র পুরুষ জাতিকে শত্রু বানিয়ে ফেলি, কিন্তু আমাদের মনে রাখা দরকার যে আমাদের যুদ্ধটা পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে, সেখানে পুরুষেরাও যেমন আমাদের সহযোদ্ধা হতে পারেন (এবং সেটা না হওয়া পর্যন্ত আসলে যৌন নির্যাতন বন্ধ করা সম্ভব নয়) ঠিক তেমনি নারীরাও পুরুষতন্ত্রের পক্ষে সাফাই গাইতে পারেন। তাই এ বিষয়ে শত্রুমিত্র নিরূপণের কাজটা শুধু আবেগের বসে না করে মাথা দিয়ে চিন্তা করেই করা উচিত। আবার সব অপরাধের মত ধর্ষণেরও বিভিন্ন মাত্রা আছে, রকম ফের আছে। একজন নারী হিসেবে আমার প্রায়ই মনে হয় যে ধর্ষণ মানেই ধর্ষণ, এর জন্য চরমতম শাস্তিটিই হওয়া উচিত। কিন্তু সেটা আবেগের কথা, যুক্তির কথা নয়, আইন সেভাবে কাজ করেনা। দুটো সাবালকের মধ্যে ডেট রেপ আর ৫ বছরের একটি শিশুকে ধর্ষণ কিংবা ধরুন তনু হত্যা বা জ্যোতি সিং এর উপর দিল্লীতে যে হিংসাত্মক গ্যং রেপ হয়েছে সেগুলোর প্রত্যেকটির অপরাধের মাত্রা ভিন্ন এবং তাদের শাস্তিও ভিন্ন হবে সেটাই স্বাভাবিক।
ধর্ষণ মানব সমাজের আদি থেকে থাকলেও এর সংজ্ঞা কিন্তু পাল্টেছে যুগে যুগে। সমাজে নারীর অধিকারের সাথে সমান্তরালভাবে এগিয়েছে এর ধারণাও। আমাদের লিখিত ইতিহাস জুড়ে দেখতে পাই যে নারীকে সবসময় পুরুষের সম্পত্তি হিসেবে গণ্য করা হয়েছে এবং তাদের মূল্য নির্ধারিত হইয়েছে যৌন বিশুদ্ধতা বা সতীত্বের মাপকাঠিতে। তাই কোন নারী ধর্ষিত হলে সেটা সেই মেয়েটির বিরুদ্ধে করা অপরাধ হিসেবে গণ্য না করে সেটাকে তার বাবা, ভাই বা স্বামীর সম্পত্তির ক্ষতি হিসেবে দেখা হতো এবং সেই হিসেবে তাদের ক্ষতিপূরণ নির্ধারিত হতো। অথবা খুব বেশী হলে মেয়েটিকে ধর্ষকের সাথেই বিয়ে দিয়ে দেওয়া হতো। এখনো কোন কোন সমাজে পরিবারের সম্মানহানির ক্ষতিপূরণ হিসেবে ক্ষতিকারকের পরিবারের নারীদের ধর্ষণ করার রেওয়াজ আছে (১০)। ২০০৭ সালে সৌদি আরবে এক গ্যাং রেপের মামলায় আদালত ধর্ষকদের জেল দেওয়ার সাথে সাথে ২১ বছরের ধর্ষিতা মেয়েটিকেও ২০০ চাবুকের বাড়ি দেওয়ার রায় দিয়েছিল।
আর যুদ্ধের সময় গণধর্ষণ তো সব সময়েই সব সমাজে বৈধতা পেয়ে এসেছে। ‘৭১ এর পাকিস্তানী সেনাবাহিনী কর্তৃক বাঙালি নারীদের পৈশাচিক ধর্ষণ, নির্যাতন এবং যুদ্ধ পরবর্তীকালের বাংলাদেশে তাদের পুনর্বাসনের চেষ্টায় চরম অবহেলার উদাহরণ তো আমাদের চোখের সামনেই রয়েছে। পরবর্তী পর্বে বিশ্ব-ইতিহাসে প্রাচীন আমলে বা সাম্প্রতিককালের বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, রুয়ান্ডা বা বসনিয়ায় যুদ্ধকালীন গণধর্ষণ বা দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময়ে ‘কম্ফোর্ট ওইমেনদের’ উপর যে অকল্পনীয় যৌন নির্যাতন করা হয়েছিল তা নিয়ে লেখার ইচ্ছা রইল।
আমেরিকায় (এবং অন্যান্য সব দেশেই যেখানে দাস ব্যবস্থা ছিল) কালো দাস মেয়েদের বা আদিবাসী মেয়েদের ধর্ষণ করাটা কোন অপরাধ বলে গণ্য হতোনা। স্বামীর স্ত্রীকে ধর্ষণ করা বা কোন পতিতাকে ধর্ষণ করা যে একটা অপরাধ এমন কোন ধারণাই আমাদের ছিলনা কিছুদিন আগেও- এদের উপর যে কোন যৌন নির্যতন করা জায়েজ ছিল, এরা তো ‘ধর্ষণযোগ্য’ই নয়!
আধুনিক নারী আন্দোলনের যদি কোন বৈপ্লবিক অর্জন থেকে থাকে সেটা হচ্ছে এই যে তারা গত শতাব্দীতে ধর্ষণের সংজ্ঞাকে পালটাতে সক্ষম হয়েছে – এটা যে একজন মানুষের বিরুদ্ধে, একজন নারীর বিরুদ্ধে কৃত অপরাধ সেটা অন্তত খাতা কলমে সার্বজনীনভাবে প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছে (১১)।
ধর্ষণ এবং অন্যান্য যৌন নির্যাতন যে মানব প্রজাতিতে সেই আদি থেকেই ছিল সেটা অনুমান করে নিলে বোধ হয় খুব একটা ভুল হবেনা। আমাদের কয়েক হাজার বছরের লিখিত ইতিহাসে এর ভুড়িভুড়ি প্রমাণ মেলে – তার আগে মানব সমাজে ধর্ষণ ছিল না সেটা ধরে নেওয়া চরম বোকামিই হবে। এমনকি প্রাণী জগতেও ধর্ষণ ঘটতে দেখা যায়। এটা আমাদের আদিমতম সমস্যাগুলোর মধ্যে একটি। তবে আজকে আমরা ধর্ষণকে যে অপরাধের লেন্সের নীচে ফেলে দেখতে শিখেছি সেটা আগে কখনো ছিল কিনা তা আমার জানা নেই; এখন আর আমাদের সেখান থেকে পেছাবার কোন উপায় নেই। সামনে এগিয়ে খুন যেমনভাবে আমাদের সমাজে অগ্রহণযোগ্য সব ধরনের ধর্ষণকেও ঠিক সে চোখেই দেখতে শুরু করতে হবে।
আমি এই সিরিজটিতে ধারাবাহিকভাবে ধর্ষণসহ যৌন নির্যাতনের ইতিহাস, সামাজিক এবং বৈজ্ঞানিক কারণ, এ নিয়ে নারীবাদী এবং বিজ্ঞানীদের মধ্যে বিতর্ক, আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় স্তরে নারী আন্দোলনের ইতিহাস এবং কার্যকারিতা, নারী পুরুষের মনস্তত্ত্ব, ধর্ষিতদের শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক অবস্থা, আইনি, সামাজিক এবং শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা, ইত্যাদি বিষয়ের উপর তথ্য এবং গবেষণারভিত্তিক কয়েকটি পর্ব লেখার আশা রাখি।
আজকাল ধর্ষণ নিয়ে অনেক কথাবার্তা এবং বিতর্ক হলেও অনলাইনে বাংলায় ধর্ষণের ওপর তেমন কোন নির্ভরযোগ্য রিসোর্স চোখে পড়লনা। এ বিষয়ে জানা, বোঝা এবং সচেতনতা তৈরি করা শুধু নারীর জন্যই নয়, সমাজের প্রতিটি পুরুষের জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সর্বস্তরে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা এবং বহুমুখী পদক্ষেপ ছাড়া সমাজে যৌন নির্যাতন বন্ধ করা সম্ভব নয়। আমাদের আজকের এই পুঁজিবাদী পিতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় নারীদের সাথে সাথে পুরুষেরাও যতদিন না এ বিষয়ে সচেতন হবেন এবং সমাজের প্রতিটি মানুষ এর বিরুদ্ধে সক্রিয় না হবেন ততদিন পর্যন্ত এই সর্বত্র-বিরাজমান ঘৃণ্য অপরাধটি রোধ করা বা অন্তত পক্ষে এর সংখ্যা কমিয়ে আনা কখনই সম্ভব হবেনা।
চলবে…… দ্বিতীয় পর্ব পড়ুন
তথ্যসূত্র:
১। https://www.theatlantic.com/news/archive/2016/06/stanford-sexual-assault-letters/485837/
http://www.cnn.com/2016/06/07/opinions/stanford-rape-case-letter-robbins/index.html
২। http://www.askbd.org/ask/2017/09/14/violence-women-rape-january-august-2017/
http://www.dw.com/a-39738875
৩।US News: https://www.usnews.com/news/best-countries/articles/2016-10-20/violence-against-women-in-5-charts
৪। Huffington Post: http://www.huffingtonpost.com/soraya-chemaly/50-facts-rape_b_2019338.html
৫। https://bjs.gov/content/pub/pdf/SOO.PDF
৬। http://ncrb.nic.in/StatPublications/CII/CII2015/FILES/Statistics-2015_rev1_1.pdf
৭।https://www.washingtonpost.com/news/worldviews/wp/2017/09/11/a-woman-interviewed-100-convicted-rapists-in-india-this-is-what-she-learned/
http://www.hindustantimes.com/india-news/ordinary-men-not-monsters-says-woman-who-interviewed-more-than-100-rape-convicts/story-3JrnhECpN1aLOoNLvCPEhM.html
৮। https://www.nytimes.com/2017/04/19/business/media/bill-oreilly-fox-news-allegations.html
http://www.latimes.com/entertainment/la-et-bill-cosby-timeline-htmlstory.html
৯।http://www.foxnews.com/entertainment/2017/10/10/harvey-weinstein-sex-scandal-detailing-allegations.html
http://www.cnn.com/2017/10/10/entertainment/gwyneth-paltrow-angelina-jolie-weinstein/index.html
১০। https://www.nytimes.com/2017/07/27/world/asia/pakistan-girl-rape-council-arrest.html
১১। https://plato.stanford.edu/entries/feminism-rape/
খুব গুরুত্বপূর্ণ লেখা। আমার যে এই বিষয়ে খুব অন্তরদৃষ্টি আছে এমন নয়। তবু লেখাটি পড়ে দুটি মন্তব্য করার লোভ সামলাতে পারলাম না।
আমাদের সমাজে নারীকে সমাজের স্বাভাবিক অংশ হিসাবে দেখতে কখনই শিক্ষা দেয়া হয় না। হিন্দী ছবিতে কোনো স্বল্পবসনা নারীর একক নৃত্য ও তাকে ঘিরে পুরুষের লালসাময় চাহনী বারে বারে আমাদের পুরুষের জৈবিক চরিত্রকে দৃঢ় করেছে। ছোট বয়স থেকে নারী-পুরুষ শিক্ষা ব্যবস্থার পৃথকীকরণের মাধ্যমে পুরুষরা নারীকে কাছ থেকে চিনতে শেখে নি, তাদের কাছে নারী পর্যবসিত হয়েছে সিনেমা পর্দার স্বল্পবসনা চরিত্রে। এখানে বিদ্যালয়ে যৌন শিক্ষার কথাটা উঠেছে, সেটা দরকারি, কিন্তু আমার কাছে তার থেকেও বড় বিষয় হচ্ছে কিশোর মনকে সমাজে নারীদের স্থান সম্পর্কে সচেতন করা। সেখানে পাঠ্যপুস্তকে নারী চরিত্র ও মানসকে নানাভাবে নিয়ে আসা যেতে পারে। শিক্ষক ও ছাত্রর অভিভাবকরা যৌথভাবে ছাত্রকে এই বিষয়ে সংবেদী করতে পারে। সমাজে সব নারীই কম-বেশী যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে, হচ্ছে – সেখানে সামাজিক কর্মীরা এক ধরণের শিক্ষা ব্যবস্থার কথা ভাবতে পারেন যা কিনা কিশোর তরুণদের মনে নারীদের সম্পর্কে তাদের সার্বিক ধারণাকে একটা উচ্চতর পর্যায়ে নিয়ে যাবে।
দ্বিতীয় মন্তব্যটি নির্যাতনের শিকার হওয়া নারীদের অধিকার সংক্রান্ত। বন্যা আহমেদ যদি ধর্ষিতা বা যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়া নারীর পরবর্তী পদক্ষেপগুলো কী হতে পারে সে সম্পর্কে আলোকপাত করতে পারেন তো ভাল হয়। যেমন হাসপাতালে গেলে চিকিৎসককে তার কী বলা উচিত, পুলিশ যদি তার অভিযোগ নিতে অস্বীকার করে সে কী করতে পারে, গণ বা সামাজিক মাধ্যমের সঙ্গে তার ব্যবহার কী হওয়া উচিত, আইনগতভাবে সে কী পদক্ষেপ নিতে পারে, পরিবার থেকে সে কী ধরণের সাহায্য আশা করতে পারে, ইত্যাদি।
বন্যা আহমেদকে সাবলীল ভাষায় এরকম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের অবতারণার জন্য ধন্যবাদ।
দীপেনদা, কেন যেন মনে হয়েছিল আপনাকে অনেক আগেই উত্তরটা দিয়েছি। কিন্তু যাই হোক, খুব গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটা ব্যাপার উল্লেখ করেছেন আপনি। কয়েকদিন আগে ব্লেড রানার ২০৪৯ দেখে হতভম্ভ হয়ে গেলাম। এত বছর পরেও, বিভিন্ন সাইজের নগ্ন হলোগ্রামের মেয়েগুলোকেও রাস্তায়, বিল বোর্ডে ফিচার করাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখানো হল। আমাদের দেশে মেয়েদেরকে যেভাবে ‘সাব-মানুষ’ হিসেবে ভাবা হয় সেই মানসিকতা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য অনেক কাজ করা দরকার। আমিও ভাবছি এটা নিয়ে কিছুদিন ধরেই। আমার তো মনে হচ্ছিল, এ ধরনের লেখাগুলো মেয়েদের চেয়ে ছেলেদেরই বেশী পড়া দরকার। ছোটবেলা থেকে এই শিক্ষাগুলো না দেওয়া হলে কিছুতেই এটার পরিবর্তন সম্ভব নয়।
আপনি নির্যাতনের শিকার হওয়া নারীদের অধিকার নিয়ে বলেছেন। আমি নেটে অনেক ঘেঁটে দেখলাম যে তেমন কোন রিসোর্সই নেই কোথাও এ নিয়ে অথবা যৌন নিপীড়ন সংক্রান্ত অন্যান্য বিষয়ে। আবেগের অনেক কথাবার্তা আছে কিন্তু কাজের কথা তেমন কিছুই নেই। এটা নিয়ে আরও সিরিয়াসলি চিন্তা করা দরকার আমাদের সবার।
ধর্ষণ নিয়ে লেখাটা সময়োপযোগী এবং প্রয়োজনীয়। আমাদের অনেকের মধ্যেই এ নিয়ে ভুল ধারণা আছে। এই তো সেদিন ধর্ষণের শাস্তি নিয়ে বিতর্ক হলো মুক্তমনাতেও।g ধর্ষণ আমার মতে মোটাদাগে সমাজব্যাবস্থায় পুরুষতান্ত্রিকতার একটা অতি নিকৃষ্ট নিদর্শন। সব প্রধান ধর্মও পুরুষতান্ত্রিক। তাই দেখা যায়, ধর্ষণকে ধর্মগুলি প্রকারান্তরে বৈধতা দেয়। এইতো সেদিন তুরস্কে ধর্ষককে ধর্ষিতাকে বিয়ে করার আইনি অধিকার দেয়ার প্রচেষ্টা নেয়া হলো (শেষ খবরটা জানা নেই)।
আরেকটা কথা, প্রায়ই দেখা যায়, ধর্ষণকে একটা মানসিক রোগ হিসেবে চালিয়ে দেয়ার প্রয়াস। অপরাধকে রোগ প্রমাণ করতে পারলে শাস্তির হাত থেকে বাঁচা যায় তাই? এই বদমাস ওইন্সটিন বেটাকেও নাকি রিহ্যাবে পাঠানো হয়েছে! যেন ধর্ষণ একধরনের ড্রাগ আসক্তি। বন্যাকে অনুরোধ জানাচ্ছি এদিকটাতে একটু আলোকপাত করতে।
(বন্যার এই লেখাটা মুক্তমনার স্বর্ণযুগের কথা মনে করিয়ে দিল। একসময়ে মুক্তমনায় দারুণ দারুণ সব লেখকদের দারুণ সব লেখা প্রকাশিত হতো। আবার সেই দিন ফিরে আসুক কামনা করছি। )
হ্যাঁ ইরতিশাদ ভাই, ঠিক এ কারণেই কোন পত্রিকায় না দিয়ে মুক্তমনায় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি লেখাটা। আমার মনে আছে বিবর্তনের পথ ধরে বইটা লেখার সময় এখানে এমন বিতর্ক হতো যে মাঝে মাঝে আমি তার পরিপ্রেক্ষিতে বইয়ের কন্টেন্ট বদলাতে বাধ্য হতাম। অভির সব বইও তো এখান থেকেই শুরু হতো । আমরা তো কোনদিনও সুখ দুঃখের আলাপের জন্য ব্লগ লিখিনি :)। এ লেখাতেই এখন পর্যন্ত যে সব গঠনমূলক মন্তব্য এসেছে সেগুলো অন্য কোথাও পাওয়া অসম্ভব। আপনারা এই আলোচনাগুলো চালিয়ে গেলে আমারও লিখতে সুবিধা হবে। দেশের থেকে বিশেষ করে নারীরা এবং যারা এ নিয়ে কাজ করেন তারা অংশগ্রহণ করলে আরও ভাল হতো। হয়তো হবে সেটা ভবিষ্যতে। এ ব্যাপারে আমি নিজেকে এক্সপার্ট মনে করিনা – এ নিয়ে আমার জানার আগ্রহটা ব্যক্তিগত কারণেই, পড়ছিও এ নিয়ে অনেক দিন ধরে। তবে বুঝতে পারছি ধর্ষণ নিয়ে তথ্য সমৃদ্ধ এবং কার্যকরি একটা সিরিজ লিখতে হলে আরও অনেক জানতে এবং পড়তে হবে। অনেক কিছুই আর শেষ করা হয়না কিন্তু আশা করছি, এই সিরিজটা সম্পূর্ণ করতে পারব।
ওয়াইন্সটিনের ব্যাপারটা নিয়ে আসলে একটা সম্পূর্ণ ব্লগ লেখা দরকার। মেয়েদের কেন অর্থনৈতিক শ্রেণী এবং পিতৃতন্ত্র দু’টোর সাথেই যুদ্ধ করতে হয় সেটা নিয়ে অনেকে প্রশ্ন করেছেন, এটাকে হাইলাইট করার ইচ্ছে রইল পরবর্তী পর্বে।
চমৎকার হয়েছে লেখাটা। শুরুতেই পড়ে ফেলেছিলাম কিন্তু মন্তব্য করতে দেরি হয়ে গেল।
খুব সামান্য যেসব ব্যাপার আমাকে বিমর্ষ করে তোলে অতি সহজেই তার মধ্যে একটা ধর্ষণের সংবাদ। শিশু থেকে বৃদ্ধা কেউ এখানে নিরাপদ নন।
গণধর্ষণ নামক ব্যাপারটা কিভাবে সম্ভব হয় জানিনা। অনেকগুলো মানুষ বা জানোয়ার একসাথে ধর্ষণ করে, কারো মধ্যে মানবতা, নৈতিকতা একটুও কাজ করেনা – এটা কিভাবে সম্ভব? আবার ধর্ষণ করে উল্লাস করে, ধর্ষণের সেঞ্চুরি উদযাপন করে – এসব খবরও আমরা পাই।
আমাদের সমাজে ধর্ষণের খবর চেপে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়, যে মেয়ে এর শিকার তার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়। এমনকি মুক্তিযুদ্ধে যেসব মেয়েদের ধর্ষণ করা হয়েছে, এদের যারা কোনোভাবে বেচে গিয়েছিল তাদেরও অনেকে দোষারোপ করে – এগুলোর পেছনে কী যুক্তি তা কোনোকালেও বুঝি নাই।
মূল সমস্যা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায়। স্কুলে যৌনতা সম্পর্কে একদম কোনো সঠিক ধারণা দেয়া হয়না শৈশবে বা কৈশোরে। এখানে যৌন শিক্ষা বা এ সম্পর্কিত কোনো নৈতিক শিক্ষা ছোটবেলায় হয় না এবং নৈতিকতার নামে ধর্মশক্ষা দেয়া হয় যা আদিম নৈতিকতাকে ধারণ করে শুধু।
ধর্ষণ কেন হয় এর মনোবৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ হয়ত নিয়ে আসবেন পরের পর্বগুলোতে। শুধু মানুষ নয়, অন্যান্য প্রাণিতেও ধর্ষণের প্রাদুর্ভাব আছে। তবে প্রকৃতিকে কোনোকিছু থাকার মানে এই নয় যে সেটা গ্রহণযোগ্য। খুনাখুনিও অন্যান্য প্রাণিদের মধ্যে আছে।
অনেকে দেখেছি অনলাইনে ব্রথেলের বৈধতা ও সহজলভ্যতার দাবি জানান কারণ এটা নাকি ধর্ষণের পরিমাণ কমাবে। এ ধরণের বিপদজনক ভুল ধারণা এরা কোত্থেকে পেলেন?
ভারতীয় উপমহাদেশে ধর্ষণের পেছনে যেসব কারণ দায়ি হতে পারে বলে মনে হয়
১। শিক্ষা ব্যবস্থায় যৌন শিক্ষা না থাকা, মানুষের যৌনতা সম্পর্কে সঠিক ধারণার অভাব।
২। আইনের দুর্বলতা। আমাদের দেশে এখনো two finger test নামক আজগুবি test এখনো আছে।
৩। দেহে ও মগজে পুরুষতান্ত্রিকতার প্রভাব। মেয়েদেরও পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব ধারণ করা । মেয়েরাই যেহেতু ভিকটিম তাই তাদের মধ্যে এই ইস্যুতে সচেতনতা ও একতা খুবই দরকার ছিল।
৪। মেয়েদের সমানাধিকার না দেয়া। অত্যন্ত আশ্চর্যের ব্যাপার হচ্ছে আমাদের দেশে মেয়েরা সম্পত্তিতে ছেলেদের অর্ধেক পায়, এগুলো নিয়ে ঠিকমত হৈচৈ করলে মেয়েরা সহজেই ছেলেদের সমানাধিকার পেতে পারত। মেয়েদের মধ্যে শিক্ষার হার বেশ বেড়েছে, অথচ এগুলো নিয়ে কারো কোনো মাথা ব্যথাই নাই। সম্পত্তিতে মেয়েরা যদি অর্ধেক পায়, এবং তারা যদি স্বামীর সংসারে জীবনযাপন করতে বাধ্য হয় তবে মেয়েদের অবস্থা দাসিদের চেয়ে উন্নত হয়েছে বলে বিশ্বাস করা কঠিন।
৫। ধর্মান্ধতা।
৬। মেয়েদের আক্রমণহীনতা। তারা হাইহিল জুতা, শাড়ি, ঢিলেডালা কাপড় পরে যেভাবে চলাফেরা করে তাতে তাদের উপর আক্রমণ হলে আত্মরক্ষার সুযোগ খুব কমে যায়। মেয়েদেরকে আক্রান্ত হলে জুৎসই জবাব দেয়া শেখতে হবে। কেউ যৌন হয়রানি করতে এলে সেটা যে মোটেও পিকনিক হবেনা তা হাতে কলমে জানিয়ে দিতে হবে।
৭। কৈশোর থেকেই ছেলে-মেয়েদের আলাদা করে রাখা, স্কুলসহ সকল প্রতিষ্ঠানে। এতে তারা অপর লিঙ্গ সম্পর্কে সঠিক ধারণা পায় না।
এটা শুনেছিলাম উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেউ কি জানেন এখনো আছে কিনা?
মেয়েদের সম্পত্তিতে অর্ধেক পাওয়ার ব্যাপারটা কোরান থেকে এসেছে সরাসরি, এটাকে উঠানো আর কোনভাবেই সম্ভব নয় এখনকার দেশের অবস্থায়। ইন্ডিয়াতে হিন্দু আইন বদলে ছেলে এবং মেয়েদের সমান সম্পত্তির অধিকার দেওয়া হয়েছে অনেক আগেই, কিন্তু আমাদের দেশে এখনো হিন্দু মেয়েরা বাবার বা স্বামীর সম্পত্তি পায়না। এটা উঠানোর কথা উঠলে নাকি ‘হিন্দু মোল্লারা’ ছুটে আসে।
প্রথমে আপনাকে ধন্যবাদ এই দারুন প্রয়োজনীয় লেখাটির জন্যে। আপনার লেখাটিতে নারী হিসাবে, মানুষ হিসাবে পাঠককে ছুঁয়ে যাবার মতো আবেগ আছে। বিশ্লেষণ আছে, প্রশ্ন আছে এমন কি কিছু প্রস্তাবনাও আছে। “আনফোকাসড অ্যাঙ্গার” বা লক্ষ্যহীন ক্রোধে আক্রান্ত হয়নি বলেই লেখাটি নিয়ে প্রায় দুদিন ধরে ভেবেছি। লেখাটি তিন বার পড়েছি। এই লেখাটিকে ধরে আমারও অনেক কিছু বলার আছে, কিন্তু কমেন্ট যেনো লেখা থেকে বড় না হয়ে যায় তাই কিছু নির্বাচিত প্রসঙ্গ উল্লেখ করি।
এই কথাটি ছোট বাক্য এবং খানিকটা সাদামাটা কিন্তু এটাই আজকের আধুনিক দুনিয়ার নারীবাদী আন্দোলনের একটা প্রধান যুদ্ধ। এবং এই যুদ্ধটার বয়স খুব বেশী নয়। মাত্র বছর তিরিশেক আগে তৃতীয় তরঙ্গের নারীদের হাতে শুরু হয়েছিলো নারীর শরীরের মালিকানা দাবী করা। অর্থাৎ নারীর শরীর একান্তই তাঁর নিজের। অন্য পুরুষের নয়, স্বামীর নয়, পিতার নয়, বন্ধুর নয়, কাজিনের নয়, সমাজের নয়, শুধু নারীর নিজের।
সুইডেনের ডে কেয়ার গুলোতে শিশুর চার বছর বয়স থেকে শেখানো হয় তোমার শরীর তোমার, তোমার শরীরের সিদ্ধান্তও তোমার। যে বয়সে শিশু “সিদ্ধান্ত” শব্দটি কেবল শিখছে তখনই তাকে শিখিয়ে দেয়া হয়, মানুষের শরীর তাঁর নিজের। অন্যের নয়। এমন কি বাবা-মা’ও তোমার শরীর নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না। তাঁরা কেবল তোমাকে সাহায্য করতে পারেন, যদি তুমি চাও। মানুষের শরীরের স্বাধীনতার বিষয়টি নিয়ে এতো অল্প বিষয়ে এই রকমের শিক্ষা দেয়া নিয়ে হয়তো অনেকেই আপাতভাবে রুঢ়তা খুঁজে পাবেন, তাহলে কি মানুষ ছোট শিশুদের আদর করবেনা, কোলে নেবেনা? আদর করবে, কোলে নেবেন যদি শিশুটি চায়, যদি আপনাকে এলাউ করে। একটা শিশু যখন জানে তাঁর শরীর কেবলই তাঁর, সে এর মধ্যদিয়ে এটাও শেখে অন্যের শরীরও কেবলই অন্যের। তাঁর শরীর নিয়ে যেমন অন্য কেউ অনাকাংখিত কিছু করতে পারেনা, তেমনি অন্যের শরীরের উপরে অযাচিত করার অধিকার তাঁর নেই। এটা পুরুষতন্ত্রের সংস্কৃতির বিরুদ্ধে দাঁড়ানো। আমরা কি বাংলাদেশে এই সংস্কৃতির বিরুদ্ধে দাঁড়াই? দাঁড়াইনা।নিজের ও অন্যের শরীরের মালিনা বিষয়ে এই শিক্ষাটি আমাদের শিশুদের নেই। নেই বলেই সে যখন তরুন হয়ে ওঠে, তখন বাসের ভীড়ে, চাপাচাপিতে অন্য নারীর শরীরে অবলীয়ায় তাঁর হাত চলে যায়। এটা তাঁর কাছে অনৈতিক মনে হয়না।
এই শরীরের “সিদ্ধান্ত” বিষয়ে আইনী বিধানও আছে, কিন্তু সাংস্কৃতিক বোঝাপড়াটা জরুরী। পুরুষতন্ত্রের সংস্কৃতি ও প্রতিষ্ঠান গুলো আমাদের শিখিয়েছে, নারীর শরীর পুরুষের সিদ্ধান্তের অধীন। নারীর শরীর নারীর নিজের নয়। অবচেতন ভাবে আমরা এটাই জানি। বিবাহ নামের প্রতিষ্ঠানটি আমাদের মস্তিষ্কে এই শিক্ষাটি গেঁথে দিয়েছে হাজার বছর ধরে। বিবাহ নামের প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আমরা কিভাবে দাঁড়াবো? কিভাবে বলবো যে বিবাহ নামের চুক্তির সাথে নারীর শরীরের মালিকানার কোনও সম্পর্ক নেই, থাকা উচিৎ নয়।
দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে নারীর শরীর বিষয়ে পুরুষতন্ত্রের সংস্কৃতির বিরুদ্ধে যতটা সংগ্রাম জারী হয়েছে বিগত দশকগুলোতে, আমাদের দেশের উচ্চশিক্ষিত মহলেও তাঁর কোনও ছিটে-ফোটা প্রভাব পড়েনি। আমরা দীর্ঘমেয়াদী সাংস্কৃতিক প্রথা প্রতিষ্ঠানগুলোকে চ্যালেঞ্জ করার বদলে সমস্যাটিকে “ব্যক্তির সমস্যা”, কিছু “খারাপ মানুষের” সমস্যা, “পুরুষের সমস্যা” ইত্যাদি বলে চিহ্নিত করি এবং এর অবধারিত ফলাফল হচ্ছে কিছু বিচ্ছিন্ন চটকদার – পপুলার লেখালেখি। কোনও সংগঠিত আন্দোলন বা চিন্তা গড়ে ওঠা নয়। আমাদের দরকার পুরুষতন্ত্রের সংস্কৃতির বিরুদ্ধে সুস্থিত আন্দোলন, যা ব্যাখ্যা করবে, কেনো শুধু নারীই নয়, সকল মানবিক মানুষের এই “পুরুষতন্ত্রের সংস্কৃতি” নামের জগদ্দল পাথর থেকে মুক্তি পাওয়া দরকার।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে – বাংলাদেশে আমরা এটা কিভাবে করবো? পুরুষের চরিত্র কে, তাঁর যৌনেচ্ছাকে, তাঁর হরমোনকে, তাঁর প্রবৃত্তি কে গালিগালাজ করে?
কিন্তু কেনো? এই পুলিশও তো পুরুষতন্ত্রেরই অধীন তাই না? কেনো স্ট্যানফোর্ডের মেয়েটিকে পুলিশের হাতে হেনস্থা হতে হয়নি এই প্রশ্নটিও একটা বিরাট উত্তর দিতে পারে। আমেরিকার মতো একটি প্রবল পরাক্রমশালী পুরুষতান্ত্রিক দেশেও নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিচার চাইবার, অধিকার দাখিল করবার। পুলিশ এখানে কেবলই নির্মোহ ভাবে তথ্য সংগ্রাহক এবং সাহায্যকারী। পুলিশ এখানে পুরুষতন্ত্রের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ক্ষমতা প্রভাব থেকে মুক্ত। রেইপ কেইস গ্রহনের সময় পুলিশকে ভাবতে হয়না, আক্রমনকারী কার ছেলে, কার ব্যবসায়িক পার্টনার, কতটা ধনী বা কতটা ক্ষমতাবান ইত্যাদি ইত্যাদি। আমাদের দেশের ক্ষেত্রে? শুধু কি রেইপ কেইস? সকল অপরাধের অভিযোগ গ্রহনের ক্ষেত্রে পুলিশের পা’টা বাঁধা থাকে কোথায়? আমরা জানি, হয় আওয়ামীলীগের স্থানীয় অফিসে নয়তো বিভিন্ন মন্ত্রীর দফতরে। সাম্প্রতিক সময়ের ধর্ষণের ঘটনাগুলোতে চোখ রাখলেই দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি ধর্ষণের ঘটনার সাথে কোনও না কোনও ভাবে অর্থনৈতিক অথবা রাজনৈতিক শক্তির যোগাযোগ আছে। সেটা কোটিপতি ব্যবসায়ীর সন্তানদের বেলাতেও দেখা গেছে আবার শ্রমিক লীগের নেতার বেলাতেও দেখা গেছে।
বাংলাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনা গুলোর সাথে রাজনৈতিক ক্ষমতার এই যে সংশ্রব, এ বিষয়ে আমাদের কি কোনও সংগ্রাম আছে? কোনও নারীবাদী সংগঠন কি আওয়ামীলীগের সদর দফতর ঘেরাও করার কথা ভেবেছেন? কেউ কি ভেবেছেন কি করে একটি উপজেলা যুবলীগের সম্পাদক এতোটা ক্ষমতা পায় যে তাকে থানা – পুলিশ – আদালত নিয়ে না ভাবলেও চলে?
নারীর প্রতি সহিংসতায় রাজনৈতিক শক্তির দায় নিয়ে কি আমরা কিছু বলবো? আন্দোলন করবো? প্রধান দলগুলোকে এক যায়গায় এনে প্রতিশ্রুতি আদায় করবো?
ইজ্জতের কথাও উল্লেখ করেছেন উপরে। ইজ্জত হচ্ছে হাজার বছরের পুরোনো পুরুষতান্ত্রিক সংস্কার যার সবচাইতে বড় ধারক হচ্ছেন আমাদের নারীরাই। “ইজ্জত”কে মহীয়ান করে তোলার সকল আয়োজন করেছে পুরুষতন্ত্র, কিন্তু কেউ তাকে চ্যালেঞ্জ করেনি, কেউ বলেনি, এটা পৃথিবীর সবচাইতে বড় মিথ্যা গুলোর একটা। সেজন্যেই একজন রেইপ – ভিক্টিম সারাজীবন তাঁর আগের “ইজ্জত” ফিরে পান না। সেজন্যেই একজন রেইপ “ভিক্টিম” কে মনে করিয়ে দেয়া হয়, এই শারীরিক নির্যাতনের কারণে তিনি তাঁর সবচাইতে “মূল্যবান” কিছু হারিয়েছেন।
আমরা কি এই ইজ্জত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করবো? আমরা কি প্রমোট করবো যে নারীর প্রতি সহিংসতায় নারীর “ইজ্জতের” হানি ঘটেনা, যদি ইজ্জত হানি ঘটে থাকে তা ঘটে আক্রামনকারীর, পুরুষের।
আপনি বেশ কিছু পরিসংখ্যান দিয়েছেন। সুইডেনের উদাহরণ দিয়েছেন। এটাতে দ্বিমতের কোনও কারণ নেই উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের সর্বত্রই এই পরিসংখ্যানগুলো আন্ডার রিপোরটেড। কিন্তু একটি বিষয় খুব জরুরী তা হলো, সারা দুনিয়াতেই ধর্ষণের অপরাধগুলোর একটা বড় অংশ ঘটেছে পরিচিত পুরুষের দ্বারা। নরডিক দেশগুলোতে ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের একটি রিপোর্ট বলছে, খুব কাছের মানুষ কিম্বা সাধারণ ভাবে পরিচিত মানুষ মিলিয়ে, মোট ধর্ষণের অপরাধ গুলোর প্রায় ৭০,৮% ঘটনা ঘটেছে কোনও না কোনও ভাবে পরিচিত মানুষের দ্বারা। অর্থাৎ ধর্ষণের ঘটনা কেবল ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে থাকা ধর্ষকের হাতেই ঘটেনা, বরং তা ঘটে আমাদের চারপাশের পরিচিত মানুষের হাতেই। সেই তালিকায় স্বামী আছেন, প্রেমিক, কাজিন, পাড়ার বড় ভাই, পাড়ার মাস্তান, বন্ধুর ভাই … সকলেই। কিন্তু পরিচিত মানুষেরা কেনো ধর্ষণ করেন? কি কারণ? এঁরা কেউই দানব নন, দানবীয় নন। তবু কেনো এঁরা ধর্ষণ করেন?
আশা করছি, আপনার আগামী পর্বগুলোতে এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোকপাত থাকবে।
বাঙলায় ধর্ষণ বিষয়ে কোনও রিসোর্স না পাওয়ার একটি প্রধান কারণ হচ্ছে, এ বিষয়ে যারা লেখালেখি করেন, তাঁদের একটা বিরাট অংশ বিষয়টিকে নিতান্তই ব্যক্তিগত ক্রোধ থেকে দেখে থাকেন। এই ভয়াবহ অপরাধটিকে পুরুষের দুই উরুর মাঝের ছোট মাংশপিন্ডটির সমস্যা হিসাবে দেখেন। ফলে এই সকল লেখা গুলো থেকে ব্যক্তি ক্রোধের বাইরে আর কিছুই পাইনা আমরা।
আপনার লেখাটি খুবই জরুরী এইজন্যে যে, আমার ধারণা, এই গভীরতা ও বিস্তৃতি নিয়ে এখনও কেউ ধর্ষণের সমস্যাটি নিয়ে লেখেন নি। বিশেষত আমাদের দেশের নারীবাদীরা তো নয়ই।
দুঃখিত অনেক দীর্ঘ মন্তব্যের জন্যে।পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকবো।
ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। আমি এ বিষয়ে এক্সপার্ট নই, তবে বেশ কিছুদিন ধরে এ নিয়ে পড়ার/জানার/বোঝার চেষ্টা করে আসছি। আমার সাধ্যে যা কুলাবে ততটুকু অবশ্যই লেখার চেষ্টা করব।
এরকম ঢালাওভাবে বলাটা বোধ হয় ঠিক নয়। সেভাবে চিন্তা করলে আসলে এখানে আমরা সবাই দোষী, কেই বা কী করতে পেরেছি আমরা? দেশে কী অবস্থায় কাজ করতে হয় সেটাতো আমরা সবাই জানি – তার মধ্যেও অনেকেই অনেক কিছু করছেন, করার চেষ্টা করছেন । আর এরকম একটা বড় দীর্ঘমেয়াদী আন্দোলনে অনেকেই অনেকভাবে কাজ করবেন, তার মধ্যে ভুল ঠিক সবই থাকবে, সেটাই স্বাভাবিক।
প্রসঙ্গটি আমি লিখেছি আপনার লেখার পরিকল্পনার উপরে ভিত্তি করে। কেউ লেখেন নি এটা বলাটা হয়তো খানিকটা ঢালাও, কিন্তু সেটাই যদি বাস্তবতা হয়, তাকে অস্বীকার করাও ঢালাও, তাই না? আমাদের দেশের প্রায় প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে এখন সমাজ বিজ্ঞানের প্রায় সকল শাখা রয়েছে। এন্থ্রপোলজির মানুষেরা এই বিষয়ের উপরে হয়তো একাডেমিক গবেষণা করেছেন তাঁদের প্রাতিষ্ঠানিক প্রয়োজনে, কিন্তু বাঙলায় সমাজতাত্ত্বিক পদ্ধতিগত লেখালেখি আমার নজরে পড়েনি। খোঁজ খবর রাখেন এমন বন্ধুদের কাছে জিজ্ঞাসা করেও যোগাড় করতে পারিনি। ধর্ষণ এখনও আমাদের দেশে ব্যক্তি পুরুষের দ্বারা সঙ্ঘঠিত একটি অপরাধ, দৃষ্টিভঙ্গিটা যেখানে ব্যক্তির চারপাশেই … সেখানে এর সমাজতত্ত্ব নিয়ে ভাবার সময় কোথায় আমাদের। তবে বাঙলায় এরকমের কিছু পেলে আমিও উপকৃত হবো।
“……… ইতিহাস, সামাজিক এবং বৈজ্ঞানিক কারণ, এ নিয়ে নারীবাদী এবং বিজ্ঞানীদের মধ্যে বিতর্ক, আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় স্তরে নারী আন্দোলনের ইতিহাস এবং কার্যকারিতা, নারী পুরুষের মনস্তত্ত্ব, ধর্ষিতদের শারীরিক, মানসিক এবং সামাজিক অবস্থা, আইনি, সামাজিক এবং শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা …”
এসব নিয়ে যদি সত্যিই লিখে উঠতে পারেন, তাহলে কাজের কাজ হবে।
দুধর্ষ এক সিরিজের সূচনা দেখতে পাচ্ছি। ধন্যবাদ বন্যা। আলোচনা চলুক পুরোদমে। রাষ্ট্র যতক্ষণ না পর্যন্ত ধর্ষণ যৌন নির্যাতন থামাতে বা শাসন করতে তাদের সদিচ্ছা দেখাবে না ততক্ষন পর্যন্ত এসব থামানো যে দুরূহ তাতে সন্দেহ নেই। ব্লগ ফেসবুকে এবং আধুনিক ফোরামের আলোচনা বা জনমত তৈরির প্রচেষ্টাগুলো আধুনিক মানুষদের সাহায্য করবে সন্দেহ নেই। তবে সাধারণভাবে প্রতিনিয়ত যারা এইসব কষ্টের শিকার হচ্ছে তাদের কাছে আধুনিক সুবিধাগুলো হয়তো অপ্রতুল। যাহোক, এক সময় তো একটি মেয়ের কাছে কোনমতে যদি একটি ছেলের সাদাকালো ছবিও পাওয়া যেত তা হলে মেয়েটির বিয়ে পর্যন্ত ভেঙে যেতে পারতো। এখন তো মেয়েরা অনেক অনেক শক্তিশালী, সময় পাল্টেছে, কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় কতখানি? পর্যবেক্ষন বলে, বাঙালির মান-অপমানবোধ কিন্তু প্রখর। সাধু শয়তান যারা তাদের মান সম্মানকে যদি ব্যাঙ্কে পোৱা যায় কিছুটা কাজ হলে হতেও পারে। সেজন্য কয়েকটা প্রস্তাবনা থাকলো:
১. ধর্ষক বা যৌননিপীড়ক হিসেবে যারা চিহ্নিত হবে, তাদের নাম ঠিকানা ছবি ইত্যাদি বৃত্তান্ত চাইলেই পাওয়া যাবে এমন ‘ধর্ষক/যৌন নিপীড়ক তথ্যভাণ্ডার’ বা ডাটাবেজ থাকতে হবে। এখন বাংলাদেশের নাগরিকদেরকে তাদের ভোটার আইডি দিয়ে সনাক্ত করা সম্ভব।
২. কারো নামে কেউ যদি ধর্ষণ অথবা যৌন হয়রানির অভিযোগ করতে চান তাহলে সেটা নির্ভয়ে স্থানীয় থানায় অথবা অনলাইনে পুলিশের কাছে রিপোর্ট করতে পারবেন।
৩. ‘ধর্ষক/যৌন নিপীড়ক তথ্যভাণ্ডার’ এমন ষ্ট্যাটাস দেখাতে পারে, যেমন:
ক. এই নাগরিকের বিরুদ্ধে ধর্ষণ/যৌন হয়রানির অভিযোগ রয়েছে,
খ. এই নাগরিকের বিরুদ্ধে ধর্ষণ/যৌন হয়রানির বিচার চলছে,
গ. এই নাগরিকের বিরুদ্ধে ধর্ষণ/যৌন হয়রানির অভিযোগ প্রমান হয়েছে।
৪. রাষ্ট্র যদি এমন তথ্যভাণ্ডার তৈরী ও রক্ষনাবেক্ষন করতে না চায় তাহলে যে কোন নাগরিক গোষ্ঠীও দলগত উদ্যোগে তা তৈরী করতে পারেন, ঠিক যেভাবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের জন্য ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি তৈরী হয়েছিল।
৫. যারা নাগরিকদের চাকুরী দেন, যারা ঘরভাড়া দেন, যারা ব্যবসায়িক লেনদেন করেন; তারা যাদেরকে দেন, তাদের সম্মন্ধে ‘ধর্ষক/যৌন নিপীড়ক তথ্যভাণ্ডার’ এর রিপোর্ট চেক করে নিতে পারেন।
পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় থাকছি।
কেমন যেন মাসুদ রানা মাসুদ রানা টাইপ শুনাইলো কাজিদা 🙂
ধর্ষক বা যৌননিপীড়ক হিসেবে চিহ্নিত করার সাজেশনটা ভাল, কিন্তু দেশে কি এটা করা সম্ভব – ক্যান জানি ভরসা হয়না (:
ভরসা করো, ভরসা করো; কাজ হইব 🙂 বদের বদ খারাপগুলারে টাইট দিতে মাসুদ রানা টাইপের কাজকর্মই করতে হইব।
এইসব ধর্ষক টাইপ বদমাইশগুলার কিন্তু আবার সম্মান জ্ঞান খুবই তীক্ষ্ণ। একদিকে অপরাধ করবে আবার আরেক দিকে আদর্শ মানুষ হিসেবে থাকতে চাইবে। এদের সম্মান ফুটো হয়ে যাবে যদি কোন ডাটাব্যাঙ্কে এদের নাম বৃত্তান্ত জমা করা যায়। এখন এইটা কিভাবে করা যায় সেইটা নিয়ে ভাবা যেতে পারে।
যৌন নিপীড়নের প্রতিবাদে সোশ্যাল এক্টিভিষ্ট ও সংগঠক তারানা বুর্কে, ‘মি টু’ নামের আন্দোলনের যেই অঙ্কুরোদ্গম ঘটায় ২০০৬ সালে সেই আন্দোলন এখন একখানা প্রবল ঝড়ের শক্তি পেয়েছে। এই সপ্তাহেই হলিউড অভিনেত্রী এলিসা মিলানো ‘মি টু’ হ্যাশট্যাগ দিয়ে বিশ্বব্যাপী মনোযোগ কেড়েছেন। যারা যৌন নির্যাতন, ধর্ষণ বা যৌন হয়রানির শিকার তাদের পাশে দাঁড়াতেই এই আন্দোলন যা সহমর্মিতাকে শক্তিতে রূপান্তরিত করছে।
‘মি টু’ লিখে অনেকেই ধর্ষক বা নিপীড়কের নাম বলে দিচ্ছে। কারো কারো বিচার শাস্তিও হচ্ছে। এই বলে দেওয়াটাই সামাজিক ভাবে প্রতিরোধের সাফল্য। বাঙালি মেয়েরাও বলুক। যে ভাবেই বলে, বলুক। নিপীড়কদের ডাটাবেজ তৈরী হোক, হোক প্রতিবাদ প্রতিরোধ। সুনামির শক্তি পেয়ে যাক এইসব প্রতিরোধ।
পরিসংখ্যান দিয়ে বাংলাদেশে ধর্ষণের চিত্র বুঝতে পারা যাবে না। ইদানিং মানুষের কিছুটা সাহস বেড়েছে। বিশেষত ঢাকার বনানীতে হোটেলে ধর্ষণের ঘটনায় তা প্রমাণিত। নির্যাতিত মেয়েরা এবং তাদের পরিবার মামলা করার মত সাহস অর্জন করছে।
গ্রামে এই সাহস নেই। বরং কমে যাচ্ছে। ধর্ষণের ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর মাতবররা সালিশে বসতে বাধ্য করে। তারপর শুরু হয় প্রহসন। সালিশ ডিঙিয়ে মামলা করতে গেলে নির্যাতিতের পরিবারকে তীব্র অসহযোগিতার মুখে পড়তে হয়। বলা ভালো, একঘরে হয়ে যেতে হয়।
কয়েক বছর আগেও কিছু এনজিও নারী নির্যাতন বিষয়ে আইনী অধিকার নিয়ে গ্রামের মানুষদের মাঝে কাজ করতো। মদীনা সনদ আর হেফাজতের উত্থানের পর মাইক্রো ক্রেডিট নির্ভর এনজিও ছাড়া অন্য এনজিওগুলোর কাজ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে।
একদিকে শহরের মানুষদের সাহস বাড়ছে, অন্যদিকে গ্রামের মানুষদের সাহস কমছে। বিষয়টা একটু জটিল মনে হলেও বাস্তবতা এরকমই।
বিশেষত গ্রামে ধর্ষণের সাথে সাথে বেশ কিছু বাড়তি অপরাধ যুক্ত আছে। ধর্ষণের পর মারাত্মকভাবে জখম, হত্যা, ধর্ষণের ভিডিও প্রকাশের ভয় দেখিয়ে বার বার ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, ধর্ষিতার বোন বা নারী স্বজনকে ধর্ষণ; ধর্ষিতার বাড়ি ঘরে হামলা, স্বজনদের উপর নির্যাতন, স্বজনদের হত্যা এসব। এবং এই ধরনের সম্পূরক অপরাধের সংখ্যা বেড়েই চলছে।
মানুষ আইনের কাছে যেতে পারছে না, আইনও মানুষের কাছে আসছে না। কাগজের বইয়ে বন্দী। হয় আইনকে মানুষের কাছে আসতে হবে, না হয় মানুষকে আইনের কাছে নিয়ে যেতে হবে। তাহলে সত্যিকারের চিত্রটি পাওয়া যাবে এবং নিয়ন্ত্রণের পথও খুঁজে পাওয়া যাবে।
আশা করি আগামী পর্বগুলোতে এসব নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা পড়তে পারবো।
শহর এবং গ্রামের এই পার্থক্যটা কৌতুহলদ্দীপক। এটা নিয়ে কি আপনার কাছে বিস্তারিত কোন তথ্য আছে? কেউ কি কোন কাজ করেছে এটা নিয়ে? যারা এখনো গ্রামে কাজ করেন তাদেরকে জিজ্ঞেস করে দেখা যায়।
শুধু পত্রিকায় প্রকাশিত হয় এমন খবরের ভিত্তিতে-
১) এই দেশে গড়ে প্রতি তিন দিনে একজন নারীকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়।
২) এই দেশে প্রতি আট ঘন্টায় একজন নারীকে ধর্ষণ করা হয়।
পত্রিকার যেসব ঘটনা আসে না তার সংখ্যা কত সেটা নিয়ে কোন ধারণা নেই আমার। পরিবারের ভেতরে যেসব ধর্ষণের ঘটনা ঘটে সেসবের সংখ্যাও আমার জানা নাই। যেসব খবরকে পত্রিকা পর্যন্ত আসতে দেয়া হয় না সেসবও বাদ। শুধু পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্যমতে- গত দশ বছরে এই দেশে দশ হাজারের অধিক ধর্ষণ হয়েছে। গত দশ বছরে দুই থেকে আড়াই হাজার শুধু গণ-ধর্ষণ হয়েছে। গত দশ বছরে এক-হাজারের অধিক নারীকে ধর্ষণের পর নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়েছে। এবং এই তথ্য গুলো কেবল পত্রিকায় প্রকাশিত সংখ্যা থেকে বলা।
তার বিপরীতে- এই গত দশ বছরে ঘটে যাওয়া দশ হাজারের অধিক ধর্ষণের ভেতরে যে কিয়দাংশের বিচার আদালত পর্যন্ত পৌঁছিয়েছে (এক তৃতীয়াংশেরও অনেক কম) তার মাঝে রায় ঘোষণার হার কেবল এবং কেবল মাত্র ৩ দশমিক ৬৬ ভাগ (3.66%) এবং সাজার হার শূন্য দশমিক ৪৫ ভাগ (0.45%)। সেই সাজা মৃত্যুদণ্ড পর্যন্ত গড়িয়েছে গত পনেরো বছরে এমন হয়েছে ১০টিরও কম ক্ষেত্রে (মুক্তিযুদ্ধকালীন ধর্ষণের অপরাধ সহ)।
আমার মতে এসবের জন্য সবচেয়ে বেশি দায়ি আমাদের বিচারহীনতা
ধন্যবাদ আরিফ, এই পরিসংখ্যানগুলো কোথায় পাওয়া যাবে জানাবেন একটু কষ্ট করে।
১) http://www.bbc.com/bengali/news-38548834
২) prothom-alo.com/we-are/article/813160/তনুদের-পরিসংখ্যান
৩) banglatribune.com/others/news/232799/তিন-স্তরে-দুর্বল-হয়-ধর্ষণের-মামলা
অনেক ধন্যবাদ