মানুষের বিশ্বাস বড়ই কঠিন ঠাঁই। ইসলামিক বিশ্বাস, হিন্দু বিশ্বাস, ক্রিষ্ঠান বিশ্বাস, কমিনিউস্ট বিশ্বাসের সাথে আরেকটা সংযোজন -আমেরিকানদের বন্দুক বিশ্বাস। হ্যা, সেই ১৭৯১ সালে যখন সেকন্ড এমেন্ডমেন্ট লেখা হল, তখন থেকেই আমেরিকানরা বিশ্বাস করে বন্দুকের নলই স্বাধীনতার উৎস। মানে কি না, জনসাধরনের কাছে অস্ত্র থাকাটা আমাদের আমেরিকাতে ফান্ডামেন্টাল রাইট। এর কারন আছে। আমেরিকার ফাউন্ডিং ফাদাররা ছিলেন রাজনৈতিক দিকপাল। ইতিহাস ঘেঁটে উনারা দেখেছিলেন, নির্বাচিত সরকারের মধ্যেই টেন্ডেন্সি থাকে স্বৈরাচারী হয়ে ওঠায়। এর ফলে জনগণ গণতান্ত্রিক অধিকার হারায়। ফলে সেই ১৭৯১ সালে আমেরিকার ফাউন্ডিং ফাদাররা ভাবলেন জনগণের কাছে বন্দুক থাকাটাই একমাত্র রোধ করতে পারে স্বৈরাচারের উত্থান। বা বিদেশী শক্তির আক্রমন। ফলে অস্ত্র রাখা আমেরিকাতে মৌলিক অধিকার।
একটা জিনিস মনে রাখতে হবে, সেই অষ্টাদশ শতাব্দিতে পলাশি থেকে বক্সারের প্রান্তরে যখন ভারতীয় নবাব এবং সেনারা ক্ষুদ্রতর বৃটিশ সৈন্যদের কাছে আত্মসমপর্ন করেছে বা হেরেছে, আমেরিকার স্বাধীনতা যোদ্ধারা বৃটিশ সেনাদের মেরে তাড়িয়েছে। এর পেছনে আমেরিকানদের গান কালচারের ভূমিকা আছে। অস্ত্র সম্ভারে আমেরিকান পেট্রিয়টরা বৃটিশদের থেকে এগিয়েই ছিলেন। ফলে আমেরিকার স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে একটা বিশ্বাস তৈরী হয়– জনগণের বন্দুকই স্বাধীনতার উৎস । এই পরিবেশেই পাশ হয়, সেকন্ড এমেন্ডমেন্ট যেখানে বন্দুক রাখা আমেরিকাতে মৌলিক অধিকার। সেই ইতিহাসটা ভুলে গেলে কিন্ত চলবে না। যে দেশটার জন্মই হয়েছে বন্দুকের জোরে এবং সেই বন্দুক ছিল জনগণের হাতে।
কিন্ত ২০১৭ সাল ত আর ১৭৯১ না। এখন গাদা বন্দুক চলে না- চলে মেশিনগান। স্টিফেন প্যাডক এখন একাই ১০ টা মেশিনগান চালিয়ে ৫৯জনকে খুন এবং ৫৫০জনকে আহত করার ক্ষমতা রাখে। এত আর ১৭৯১ সালের গাদা বন্দুক না। এই নিয়ে আমেরিকাতে বহুবার সুপ্রীম কোর্টে সওয়াল হয়েছে-অন্তত মেশিন গান, অটোমেটিক ওয়েপন রাখা নিশিদ্ধ হৌক। কিন্ত সুপ্রীম কোর্ট মানে নি। কারন সেকন্ড এমেন্ডমেন্টের নোশনই হচ্ছে জনগনের আর্মি যেন সরকারের আর্মির সমতুল্য অস্ত্র রাখতে পারে। নইলে জনগণ স্বৈরাচারী সরকারকে রুখবে কি করে??
সুতরাং কংগ্রেস এবং সেনেট সংবিধানের সেকেন্ড এমেন্ডমেন্টের পরিবর্ধন না করলে, এই গেরো থেকে আমাদের মুক্তি নেই।
আর সেকেন্ড এমেন্ডেমেন্টের বিরুদ্ধে বলার মতন একজন রাজনীতিবিদ ও আমেরিকাতে নেই। যারা বলছেন, তারা বলছেন সেকেন্ড আমেন্ডমেন্ট ঠিক, কিন্ত গান কন্ট্রোল দরকার। অনেকটাই সেই পুরাতন লেবু কচলানো- হিন্দু, ইসলাম ধর্মে সমস্যা নেই- ভক্তবৃন্ধের সমস্যা। আর এদিকে গুচ্ছ গুচ্ছ আমেরিকান আছে যাদের বাড়িতে এক গুচ্ছের বন্দুক। আমার এক প্রতিবেশীর বাড়িতেই আছে চারটে বন্দুক। এগুলো এদের অবশেসন । এদিকে আমাদের পাড়াতে ডাকাত ত দূরের কথা, চুরির কথাও কেউ কোন দিন শোনে নি। অর্থাৎ গান কালচার শ্রেফ একধরনের ধর্ম বিশ্বাস।
এই সব ভাবের ঘরে চুরি কদ্দিন চলে দেখা যাক। মধ্যেখান থেকেই ধরেই নিয়েছি বন্দুকের গুলিতে পরকাল প্রাপ্তির সম্ভাবনা ( নেক্সট ত্রিশ বছরে ) – ১ ইন মিলিয়ান। ক্যান্সারে মৃত্যুর সম্ভাবনা সেখানে ১ ইন ১০০। সেই ভেবেই শান্তনা নিই। যে বন্দুকের গুলিতে মরার আগে, রোগে মরব।
কি আর করা যাবে। এই একবিংশ শতাব্দিতেও হরেক রকমের বিশ্বাসের জিম্মি হয়েই কাটাতে হবে।
সেই সময়ের জনগণ’টা কারা এখানে, নেটিভ না’কি দখলদার? তা দখলদারদের হাতে বন্দুক ছিলো বৈকি 🙂
সম্ভাবনার ব্যাপার তো ঠিকই বুঝলাম; এইসব পরকাল ফরকাল এইটা তো বুঝলাম না বিপ্লব পাল; এইগুলা কি?
পরকাল কই পাইলেন এইখানে?