“প্রত্যেক সময় যখন ভাইরাসের মতো কোনো জিনিস মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে, তখন সেখানে বিভিন্ন জিনিসের চাহিদা বেড়ে যায়। বিভিন্ন কোম্পানি তখন চেষ্টা করে তা পূরণ করতে। তবে প্রথমেই এটা বলা মুশকিল, কার উদ্দেশ্য সৎ আর কার অসৎ!”
[Cody Zhang, একটি স্টার্ট-আপের মালিক, যিনি কোভিড-১৯ এর জন্য জীবাণুনাশক রোবট তৈরি করেছেন এবং প্রতিষ্ঠানের জন্য লাইসেন্স খুঁজছেন।]

২০০৩ সাল। টুইন টাওয়ারে জঙ্গি বিমান হামলার দায়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইরাক আক্রমন করে। এ যুদ্ধে প্রাণ হারায় প্রায় পাঁচ লক্ষ বেসামরিক ইরাকি। নিহত হয় কয়েক হাজার মার্কিন সৈন্য। যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে এই হতাহতের পরিমাণ আরো বাড়ে। ধারণা করা হয়, এই যুদ্ধের পর মার্কিন সৈন্যদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পায় প্রায় ৩১%। কিন্তু এত এত আহত আর মৃত মানুষের লাশের ছায়ার নিচে সেসময় আমেরিকার একটা তেলবাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান ‘হলিবার্টন’ এর শেয়ারের দাম বাড়ে প্রায় ৫০০% ! ২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতায় আসা জর্জ ডব্লিও. বুশের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছিলেন ‘হলিবার্টন’ এর প্রধান ডিক চেনি। আল-কায়েদা, ওসামা বিন লাদেন আর ইরাকের গণবিধ্বংসী অস্ত্র থেকে বিশ্বকে রক্ষা করা নিয়ে প্রপাগাণ্ডা চালিয়ে শুরু করা এই যুদ্ধের পেছনে আসল কারণ ছিল তেলবাণিজ্য, তথা পেট্রোডলারের হিসাব নিকাশ। যদিও বর্তমানে ‘করোনা ভাইরাস’ দ্বারা আক্রান্ত হওয়া সারাবিশ্বের দুঃসময়ে এই ঘটনাটা নিতান্ত অপ্রাসঙ্গিক, তবে শত শত বছর ধরে ঘটা অসংখ্য নৃশংস মানবইতিহাসের মধ্যে ছোট্ট এই ঘটনাটি আমাদেরকে ইঙ্গিত করে- চরম অস্থিতিশীল বিশ্বমুহূর্তের আড়ালে চলা এরকম কোনো দেশ, প্রতিষ্ঠান বা একক ব্যক্তির শিল্পবাণিজ্যে আধিপত্যের হিসাবনিকাশ!

করোনা ভাইরাস, যার বর্তমান রূপ কোভিড-১৯; মধ্য চীনের উহান শহর থেকে এই রোগের সূচনা। গতবছরের ৩১ ডিসেম্বর এই শহরে নিউমোনিয়ার মতো একটি রোগ ছড়াতে দেখে প্রথম চীনের কর্তৃপক্ষ বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থাকে সতর্ক করে। এরপর ১১ জানুয়ারি প্রথম একজনের মৃত্যু হয়। মাত্র তিনমাসের ব্যবধানে বর্তমানে বিশ্বের প্রায় ১৭০ টি দেশের তেরো লক্ষ মানুষ এই ভাইরাসে আক্রান্ত। মৃতের সংখ্যা আশি হাজার ছাড়িয়েছে। আরো কতদিন এই ভাইরাস মানবমৃত্যুর কারণ হবে, তার সঠিক সময় কারোরই জানা নেই। বিশ্বের উন্নত, উন্নয়নশীল, অনুন্নত- সবখানেই মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাসের কারণে বিশ্বের তাবৎ মানুষকে এখন এমন একটা সময়ের মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে, যার অভিজ্ঞতা বোধহয় বিগত কোনো সময়ে মানুষের সম্মুখে আসেনি। বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল ব্যস্ত শহরগুলো লকডাউন, ধর্মীয় উপাসনালয়গুলোতে মানুষ যেতে পারছেনা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে প্রায় সকল ধরণের সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বন্ধ। কোয়ারেন্টাইন অথবা স্যোসাল ডিস্টেন্সে থাকতে বলা হচ্ছে সবাইকে। পুরো পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার সংখ্যার এক পঞ্চমাংশ এখন ঘরে আবদ্ধ। যেন কয়েকটা মাস স্থিরভাবে ঘরে বসে থাকতে পারাটাই এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে আমাদের সবচেয়ে বড় যুদ্ধ। কিন্তু কতদিনই বা এভাবে চুপচাপ বসে থাকা যায়! কর্মজীবি মানুষের জন্যে ছুটি বা কর্মবিরতী সবসময় প্রত্যাশিত হলেও ঠিক এই সময়টাতে,- যখন ঘরে বসে থাকার উপর আমাদের বাঁচা-মরা নির্ভর করছে, তখন তা উপভোগ্য তো নয়ই বরং প্রচন্ড মানসিক হতাশা কিংবা অবসাদের কারণ হতে পারে। তবে ঠিক এই সময়ের চিত্রটা আমাদের আসন্ন ভবিষ্যত-বাস্তবতার একটা দিকের সূচনা সৃষ্টি করতে পারে। সেটা হলো- এতদিন যে কাজগুলো বাড়ির বাইরে গিয়ে করতে হতো, সেগুলো ঘরে বসে কতোটা করা সম্ভব, সেই নিরীক্ষাটুকু করে ফেলা। যেমন: কিছুক্ষেত্রে অফিসের ডকুমেন্ট রেডি কিংবা মিটিং করা, পড়ালেখা বা ই-লার্নিং এবং বিনোদনের অন্য অসংখ্য মাধ্যম এখন ঘরে বসে পাওয়া সম্ভব। গত ২২ জানুয়ারি করোনা ভাইরাস প্রসঙ্গে প্রখ্যাত স্লোভেনীয় দার্শনিক স্লাভো জিজেক তার ‘My Dream of Wuhan’ লেখাটিতে বলেন, “ইতোমধ্যেই অনেকগুলো ডিস্টোপিয়াই আছে একই ধাঁচের একটা ভবিষ্যতের ইঙ্গিত দেয়: যেখানে আমাদের সবাইকে বাসায় বসে থাকতে হবে, কম্পিউটারে বসে বসে কাজ করবো, ভিডিও কনফারেন্সে যোগাযোগ করবো আর বাসায় বানানো অফিস রুমের কোণায় পড়ে থাকা মেশিনে ফিটনেস মাপাবো, মাঝে মাঝে স্ক্রিনে হার্ডকোর সেক্সের ভিডিও দেখে দেখে মাস্টারবেট করে নিবো আর তারপর ডেলিভারীতে খাবারের অর্ডার করবো…।” এখানে খেয়াল করে দেখার বিষয় হলো, ঘরে বসে থেকে বাইরের এসব কাজ করার জন্য, অর্থাৎ বাইরের বিশ্বের সাথে যোগাযোগ করার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে অনুসঙ্গটি মানুষের দরকার হবে, তা হল- ইন্টারনেট। এবং খুব সস্তামানের কম গতিসম্পন্ন ইন্টারনেট দিয়ে এখনকার চাহিদা অনুযায়ী সবরকম প্রযুক্তিকে ব্যবহার করা সম্ভব হবেনা। এক্ষেত্রে প্রয়োজন আরো দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা। চীনের অন্যতম স্মার্টফোন উৎপাদনকারী ‘হুয়াওয়ে’ এর প্রতিষ্ঠাতা রেন ঝেংফেই এ নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “মহামারী যত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বব্যাপী, তাতে ইন্টারনেটের প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে। করোনা প্রতিরোধে টেলি-হেলথ, অনলাইন-লার্নিং এবং বাড়িতে থেকে অফিসের কাজ করার উপযোগিতার ব্যাপারে দুনিয়ার মানুষ বুঝতে শুরু করেছে। পাশাপাশি তারা অনুধাবন করতে পারছে ইন্টারনেটের গুরুত্ব। এমনকি পশ্চিমাবিশ্ব যখন এই মহামারীর তীব্রতা অনুভব করছে, তখনও আমাদের প্রজেক্টগুলো তাদের সক্ষমতাকে বাড়িতে তুলতে পারে। ইন্টারনেটের এই গুরুত্ব এবং চাহিদাকে আমাদের পূরণ করতে হবে। আমি আশা করি এই মহামারী শেষ হলে মানুষ হুয়াওয়ের প্রডাক্টগুলোর গুরুত্ব আরো ভালোভাবে বুঝতে পারবে। তবে নেটওয়ার্কিং এর তুমুল চাহিদা আমাদের জন্যে কিছুটা উদ্বেগজনক বটে, কারণ পর্যাপ্ত পরিমাণে তা সরবরাহ করার ক্ষমতা আমাদের নাও থাকতে পারে। যেহেতু চীনের বাইরে অন্য দেশগুলোতে আমরা এর উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ দেখছিনা, তাই সে ব্যাপারে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি।” [South China Morning Post, 26 March, 2020]

উপরের IEEE Spectrum এর এই প্রতিবেদনটিতে দেখা যাচ্ছে, বিশ্ব করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর অধিকাংশ টেক জায়ন্টগুলোর কর্মীরা বাড়িতে থেকে কাজ করার ব্যাপারে একমত পোষণ করছেন। ফলে নেটওয়ার্কিং এবং টেলিকমিউনিকেশন উপকরন প্রস্তুত ও সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলা প্রতিযোগিতামূলক বাজারে এখন একটা আন্তঃযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে যে- আগামী দশকগুলোতে সর্বোচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা, অর্থাৎ 5G (5th Generation) ইন্টারনেট সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে কে সবার আগে যাবে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন দিক বিবেচনা করলে এটা স্পষ্ট হয়, ‘হুয়াওয়ে’ পুরো বিশ্বের টেলিকম সেক্টরে সবচেয়ে এগিয়ে আছে।
১৯৮৭ সালে পিপলস লিবারেশন আর্মির (PLA) সাবেক ইঞ্জিনিয়ার রেন ঝেংফেই ‘হুয়াওয়ে’ প্রতিষ্ঠা করেন। শুরুর দিকে ‘হুয়াওয়ে’ শুধু ফোন সুইচ প্রস্তুত করতো, কিন্তু ব্যবসা বাড়ার সাথে সাথে টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক তৈরী, অপারেশনাল ও কনসাল্টিং সেবা প্রদান এবং চীনের ভেতর ও বাইরে সামগ্রী সরবরাহ শুরু করে। ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হুয়াওয়ে’তে ১,৯৪,০০০ জনবল কাজ করে যাদের মধ্য প্রায় ৮০,০০০ জন রিসার্চ এবং ডেভলপমেন্ট বিভাগে কাজ করে, যা মোট জনবলের প্রায় ৪৫ ভাগ। বর্তমানে চীন, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, যুক্তরাজ্য, পাকিস্তান, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, জার্মানি, কলাম্বিয়া, সুইডেন, আয়ারল্যান্ড, ভারত, বাংলাদেশ, রাশিয়া এবং তুরস্কসহ বিশ্বের প্রায় ১৭০ টি দেশে হুয়াওয়ের নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম সরবরাহ চালু আছে। এ বছরের ৩১ মার্চ চীনের শেনঝেনে ২০১৯ সালের নিজস্ব ব্যবসায়িক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে হুয়াওয়ে। গতবছর এর গ্রাহক ব্যবসা থেকে বিক্রয় আয় প্রায় ৬৬ দশমিক ৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে, অন্যান্য বছরের চেয়ে যা প্রায় ৩৪ শতাংশ বেশি। আয়ের পাশাপাশি কোম্পানিটি গত বছর মোট মুনাফা করেছে ৮ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ও গবেষণার লক্ষ্যে চলমান কর্মকান্ডের দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০১৯ সালে অর্জিত রাজস্বের প্রায় ১৫ দশমিক ৩ শতাংশ হুয়াওয়ে বিনিয়োগ করেছে গবেষণা ও উন্নয়নখাতে, টাকার অঙ্কে যা প্রায় ১৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের সমান। এই নিয়ে গত এক দশকে গবেষণা ও উন্নয়নখাতে প্রতিষ্ঠানটির ব্যয় করা মোট অর্থের পরিমাণ প্রায় ৮৪ দশমিক ৫৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।

হুয়াওয়ের এই অভাবনীয় সাফল্যের পেছনে কারণ আসলে কী- তা নিয়ে তার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বীমূলক প্রতিষ্ঠানের দেশগুলো অনেক তথ্য বের করার চেষ্টা করেছে। এরমধ্যে গত কয়েক বছর বেশ কয়েকটি ঘটনা ব্যাপকভাবে আলোচিত সমালোচিত হয়েছে। ২০১৮ এর ডিসেম্বরের ১ তারিখ কানাডা থেকে গ্রেফতার করা হয় হুয়াওয়ের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (CFO) মেং ওয়ানঝু’কে। যিনি হুয়াওয়ের প্রতিষ্ঠাতা রেন ঝেংফেইর মেয়ে। যুক্তরাষ্ট্র তাকে প্রত্যর্পণের দাবি জানায় এবং তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে যে- তার প্রতিষ্ঠান ইরানের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে 5G প্রযুক্তির যন্ত্রাংশ বিক্রি করছে। আর এতে সত্যিকারভাবে দোষী প্রমাণিত হলে তার ত্রিশ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। “আটকের পরিণতি যাই হোক না কেন। এটি এই বার্তা দিচ্ছে- চীনারা বুঝতে পারছে যে তাদের বিরুদ্ধে নতুন স্নায়ুযুদ্ধের সূচনা হয়েছে,”– মন্তব্যটি করে হার্ভার্ড কেনেডি স্কুলের প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান বেলফার সেন্টার ফর সায়েন্স অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক গ্রাহাম আলিসন। এদিকে মেংকে আটকের পাল্টা জবাবে চীন দু’জন কানাডীয় নাগরিককে আটক করে তাদের বিরুদ্ধে জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত করার চেষ্টার অভিযোগ আনে। বিশ্লেষকদের মতে হুয়াওয়েকে নিয়ে যা হচ্ছে সেটি যুক্তরাষ্ট্র করছে চীনকে শাস্তি দেয়ার জন্য। কারণ হুয়াওয়ে চীনকে শক্তভাবেই বিশ্বে উপস্থাপন করছিলো। এরপর ২০১৯ এর এপ্রিলের ৪ তারিখে আন্তর্জাতিক গনমাধ্যম রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে জানানো হয় “হুয়াওয়ে যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তথ্য হাতিয়ে নিচ্ছে নিচ্ছে এ ব্যাপারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছে পর্যাপ্ত তথ্য এবং প্রমান আছে”। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৬ মে ২০১৯ যুক্তরাষ্ট্র অফিসিয়ালি হুওয়াওয়ে কে ব্লাকলিস্ট করে। এবং তার ঠিক ৩ দিনের মাথায় গুগল (Google) ঘোষনা করে যে তারা হুয়াওয়কে আর এন্ড্রয়েড সেবা প্রদান করবে না। এছাড়া ঐ বছরেরই ২২ নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল কমিউনিকেশনস কমিশনের (FCC) একটি আদেশে আমেরিকার গ্রামীণ অঞ্চলে ক্যারিয়ার নেটওয়ার্ক সরবরাহকারীদের প্রতি হুয়াওয়ে ত্থেকে সরঞ্জাম ক্রয়ে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এফসিসি’র এই আদেশটি যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য এবং গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর কতটা ক্ষতি করবে, সে বিষয়ে ২১ বার বিস্তারিত মন্তব্য জমা দিয়েছে হুয়াওয়ে। কিন্তু সবগুলোই উপেক্ষা করে গেছে এফসিসি- এমনটা জানিয়েছেন হুয়াওয়ের চিফ লিগাল অফিসার ড. সং লিউপিং। তিনি আরো বলেন, “গোটা আমেরিকার গ্রামাঞ্চল এমনকি- মন্টানা, কেন্টাকির মতো ছোট শহরের ক্যারিয়ার নেটওয়ার্ক সরবরাহকারী এবং হুয়াওয়ের ফার্মগুলোও হুয়াওয়ের সাথে কাজ করে, কারণ তারা হুয়াওয়ের যন্ত্রপাতির গুণমানের ব্যাপারে নিশ্চিন্ত। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গ্রামীণ জনগোষ্ঠীকে সংযুক্ত করার এই যৌথ প্রচেষ্টা বন্ধ করা এফসিসি’র উচিত হবে না।” যদিও হুয়াওয়ে চীনের কোনো সরকারি প্রতিষ্ঠান নয়, কিন্তু হুয়াওয়ের কারণে বিশ্বে চীনের এই আধিপত্যের পেছনে রাষ্ট্রীয় কোনো যোগসূত্র আছে কিনা, তা নিয়েও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নজরদারি করে। ডিসেম্বরে মার্কিন সংবাদ মাধ্যম ‘দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’ এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, চীন সরকার গত দুই দশকে হুয়াওয়েকে ধাপে ধাপে ৭৫ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে। এই অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে হুয়াওয়ে এক টুইট পোস্টে বলেছে, মিথ্যা তথ্যের ভিত্তিতে ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’ অসত্য খবর প্রকাশ করেছে। এ খবরের মাধ্যমে রিসার্চ ও ডেভেলপমেন্টে আমাদের ৩০ বছরের বিনিয়োগকে উপেক্ষা করা হয়েছে। শর্ত মেনে চললে সব চীনা কোম্পানিই সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি পায়। গত কয়েক দশকে হুয়াওয়ে মোট আয়ের ০.৩ শতাংশ ভর্তুকি পেয়েছে। তবে দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের দাবি, চীন সরকার তাদেরকে ৪৬ বিলিয়ন ডলার দিয়েছে ক্রেডিট লাইন, লোন ও অন্যান্য সহায়তার নামে। এছাড়াও সরকারি প্রকল্পে যুক্ত হওয়ায় ২০০৮ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত হুয়াওয়েকে ট্যাক্স দিতে হয়নি। এই ট্যাক্সের পরিমাণ ২৫ বিলিয়ন ডলার। আরও দুটি খাতে ৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলারের সুবিধা পেয়েছে হুয়াওয়ে। সংবাদ মাধ্যমটি আরও জানিয়েছে, এসব সুবিধা পাওয়ার ফলে হুয়াওয়ে গ্লোবাল টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানি হিসেবে শীর্ষে পৌঁছাতে পেরেছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে চায়নার ‘হুয়াওয়ে’ কোম্পানির এই দ্বন্দ্ব আসলে সাম্প্রতিক সময়ে দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধের একটা গুরুত্বপূর্ণ দিক ইঙ্গিত করে। এ যুদ্ধকে অনেকেই ৩য় বিশ্বযুদ্ধ হিসেবে অভিহিত করছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডেনাল্ড ট্রাম্প মনে করেন “যুক্তরাষ্ট্রের বাজার চীনের কাছে খুলে দেয়াটা ছিলো মারাত্বক ভুল”। এর পিছনে তিনি যুক্তি দেখিয়েছেন ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের বাণিজ্য ঘাটতি ছিলো ৮০০ বিলিয়ন ডলার। এই বাণিজ্য বৈষম্য দূর করতে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প রাতারাতি চীনা পণ্যে ২০০ বিলিয়ন ডলার ট্যাক্স আরোপ করেন। চায়নাও পাল্টা ৬০ বিলিয়ন ডলার ট্যাক্স আরোপ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে। এর ফলে বছরখানেক ধরে চলতে থাকা কূটনৈতিক যুদ্ধ বাণিজ্য যুদ্ধে রূপ নেয়। শুধু ইস্পাত ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর শুল্ক আরোপ নিয়ে নয়, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে প্রযুক্তিযুদ্ধও শুরু হয়ে যায়, যার চাক্ষুষ প্রমাণ আগেই দেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প রয়টার্সের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বলেন, “হুয়াওয়ে আমাদের মিলিটারি এবং নিরাপত্তা সংস্থার জন্য একটা বড় হুমকি। হুয়াওয়ের সাথে তাই ব্যবসায়িক সম্পর্কে আমরা জড়াতে চাচ্ছিনা। যদিও চীনের দিক থেকে আমরা বিবেচনা করতে পারি, কিন্তু হুয়াওয়ে আলোচনা করার মতো কোনো প্রতিষ্ঠান নয়।” তিনি আরো ইঙ্গিত করেন, চীনের ওপর বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদসংক্রান্ত বড় ধরনের জরিমানা আরোপ করা হতে পারে। এমনকি তাঁর স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন বক্তৃতায় আইপি ঠিকানা (IP Address) চুরির প্রসঙ্গটি এসেছে। যদিও হুয়াওয়ের ব্যাপারে এরকম তথ্য পাচারের অভিযোগ নতুন নয়। ২০১৮’তে North Atlantic Treaty Organization (NATO) এর এক রিপোর্টে বলা হয়- “5G প্রযুক্তির শীর্ষ সরবরাহকারী হিসেবে হুয়াওয়ের ক্রমবর্ধমান প্রভাবকে চীনের সামরিক বাহিনী তাদের গুপ্তচরবৃত্তি, বৈদেশিক সরকার ও কর্পোরেশনগুলোর প্রতি নজরদারিতে কাজে লাগাতে পারে। বিশ্বব্যাপী হুয়াওয়ের এই একচেটিয়া বাণিজ্যের মাধ্যমে আসন্ন সাইবার হুমকির বিরুদ্ধে লড়াই করতে এই প্রতিবেদনে সুপারিশ করা হয়েছে- 5G এর উন্নয়ন ও গবেষণা খাতে বিনোয়গের ব্যাপারে মার্কিং যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য যেন চীনের বাইরের কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রতি পুনর্বিবেচনা করে।” এ আশঙ্কাকাকে কেন্দ্র করে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত কী হতে পারে- সেক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিসের বাণিজ্য বিশেষজ্ঞ উইলিয়াম রাইনস বলেছেন, ‘সব প্রশাসনের হাতেই বিভিন্ন সুযোগ থাকে, চরম থেকে মাঝারি— যেকোনো পদক্ষেপই সে নিতে পারে। পার্থক্য হচ্ছে, এই প্রেসিডেন্ট চূড়ান্ত পদক্ষেপ নিতেই বেশি আগ্রহী।’ ব্যাপারটা হলো, মার্কিন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে চীনের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ চুরি অনেক দিন ধরেই দেশটির মাথাব্যথার কারণ। এর যেমন নিরাপত্তাজনিত কারণ আছে, তেমনি অর্থনৈতিক কারণও আছে। আইপি চুরির মধ্যে আছে নকল পণ্য ও পাইরেটেড সফটওয়্যার বিক্রি— এই বাবদ মার্কিন কোম্পানিগুলোর বছরে ২২ হাজার ৫০০ কোটি থেকে ৬০ হাজার কোটি ডলার ক্ষতি হচ্ছে। মার্কিন বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ চুরিবিষয়ক কমিশনের ২০১৭ সালের প্রতিবেদনে এই তথ্য পাওয়া গেছে। চীন যখন নিম্ন প্রযুক্তি থেকে উচ্চ প্রযুক্তির যুগে অর্থনীতিকে নিয়ে যেতে চাইছে এবং অর্থনীতিকে পুনর্গঠিত করতে চাইছে, তখন এ নিয়ে বিতর্ক শুরু হলো। শিকাগো কাউন্সিল অন গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্সের ফেলো এবং সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ. বুশের বাণিজ্য উপদেষ্টা ফিল লেভি বলেছেন,“চীন এ ব্যাপারে ক্রমেই সচেতন হয়ে উঠছে যে তার পক্ষে কম দামের পণ্য বানিয়ে আর টিকে থাকা সম্ভব হবে না।” ২০১৫ সালে চীন রাষ্ট্রীয় শিল্প পরিকল্পনা ‘মেড ইন চায়না ২০২৫’-এ প্রযুক্তি খাতে নেতৃত্ব দেওয়ার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করে।

তারা যেসব বিষয়ে অগ্রাধিকার দিয়েছিল সেগুলো হচ্ছে ইলেকট্রিক গাড়ি উৎপাদন ও পঞ্চম প্রজন্মের (5G) প্রথম মোবাইল নেটওয়ার্ক তৈরি করা। এ ছাড়া ২০৩০ সালের মধ্যে তারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence), ইন্টারনেট অব থিংস (IoT) জগতে প্রভাব বিস্তার করতে চায়। একই সঙ্গে তারা কম্পিউটার চিপ তৈরির সক্ষমতাও বাড়াচ্ছে। এই লক্ষ্য অর্জনে চীনকে শিল্প ও প্রযুক্তিগত জ্ঞান বাড়াতে হবে। আর সে কারণেই তারা অন্য দেশের বুদ্ধিবৃত্তিক সম্পদ আহরণের ব্যাপারে আগ্রহী। ২০১৫ সালে চীনা প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং যখন তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে আশ্বস্ত করলেন যে চীন আর করপোরেট গোপনীয় তথ্য চুরি করবে না, তখন এটি এত বড় সমস্যা ছিল না। কিন্তু বর্তমানে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীনে ব্যবসা করার জন্য কোম্পানিগুলোকে এখন সেখানে প্রযুক্তি হস্তান্তর করতে বাধ্য করা হচ্ছে। আসলে চীনে যারা ব্যবসা করতে চায়, তাদের স্থানীয় কোম্পানির সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে কাজ করতে হয়। এই অংশীদারির কারণে চীনা কোম্পানিগুলো বিদেশি কোম্পানির এমন অনেক তথ্য পেয়ে যাচ্ছে, যা গোপন রাখা হতো। এ ব্যাপারে ২০১৭ সালে চীন নতুন এক আইন করে পাস করে- National Intelligence Law of the People’s Republic (Adopted at the 28th meeting of the Standing Committee of the 12th National People’s Congress on June 27, 2017) এর ৭ নাম্বার আর্টিকেলে বলা হয়-
“Any organization or citizen shall support, assist and cooperate with the state intelligence work in accordance with the law, and keep the secrets of the national intelligence work known to the public.”

ফলে এই নতুন আইন আর গুপ্তচরবৃত্তির ইতিহাসের কারণে জাতীয় অবকাঠামোয় চীনের দুই টেলিকম হুয়াওয়ে আর জেডটিই (ZTE) কোম্পানির প্রযু্ক্তি ব্যবহার অনেক দেশের জন্য বিপদজনক হয়ে উঠতে পারে। বিশেষত এই আইনের পর শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্র নয়, অস্ট্রেলিয়াও তাদের দেশের স্থানীয় কোম্পানিগুলোর 5G নেটওয়ার্কে হুয়াওয়ের যন্ত্রপাতি ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। অস্ট্রেলিয়ার স্ট্র্যাটেজিক পলিসি ইন্সটিটিউটের ইন্টারন্যাশনাল সাইবার পলিসি সেন্টারের গবেষক টম উরেন বলছেন, “তথ্য চুরির ব্যাপারে চীনের সরকারের চেষ্টার ব্যাপারটি অনেকদিন ধরেই পরিষ্কার হয়ে গেছে। অনেক সাইবার বা বুদ্ধিবৃত্তিক তথ্য চুরির ঘটনার সঙ্গে চীনের রাষ্ট্রযন্ত্র জড়িয়েছিল।” উরেন আরো বলছেন, “চীনের সরকার আর দেশটির অনেক কোম্পানির মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের কারণে এই সন্দেহ আরো বেড়েছে যে, তাদের গুপ্তচরবৃত্তিতে সরকার সমর্থিত এসব কোম্পানি সহায়তা করে থাকতে পারে।” কানাডাও হুয়াওয়ের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক পর্যালোচনা করে দেখছে। জাতীয় নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে নিউজিল্যান্ড হুয়াওয়ে থেকে সরঞ্জাম কেনার প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছে। 5G নেটওয়ার্কে ব্যবহারের জন্য নিউজিল্যান্ডের একটি কোম্পানি হুয়াওয়ে থেকে সরঞ্জাম কেনার প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু দেশটির সরকার বলছে, এই চুক্তির ফলে বড় ধরণের ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। অন্যদিকে ব্রিটেন এখনো পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি। কিন্তু যু্ক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে ব্রিটেনের ওপর চাপ রয়েছে হুয়াওয়ের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য। হুয়াওয়ের সাথে চুক্তিবদ্ধ হলে ব্রিটেনের সাথে নিরাপত্তা সহযোগিতা তুলে নেওয়া হবে বলে হুমকি দেয় ট্রাম্প সরকার। এ বছর ফেব্রুয়ারিতে অর্ক্সফোর্ড ইউনিয়নের এক বক্তৃতায় হোয়াইট হাউজ কর্মীদের ভারপ্রাপ্ত প্রধান মিক মালভেনে বলেন, “আমরা প্রচন্ডরকম উদ্বিগ্ন যে- আমাদের (যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য) তথ্যসমূহের অখণ্ডতা, তথা নিরাপত্তা আমাদের কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার আর সিস্টেমগুলো সাথে জড়িত থাকে। আপনারা যদি এর মধ্যে হুয়াওয়ে’কে জড়াতে চান, তাহলে ভবিষ্যতে আপনাদের সাথে আমাদের তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ এবং নাটকীয় প্রভাব পড়বে। এবং এটাই শেষ কথা।” ব্রিটিশ সরকার স্বীকার করেছে যে হুয়াওয়ের সঙ্গে তাদের সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে। ব্রিটেনের ন্যাশনাল সাইবার সিকিউরিটি সেন্টার সম্প্রতি হুয়াওয়েকে অনুরোধ করেছে ব্রিটেনের টেলিকম নেটওয়ার্কে যেসব সমস্যা ঝুঁকি তৈরি করছে সেগুলো ঠিক করতে। ব্রিটিশ ইন্টেলিজেন্স সংস্থা এমআই-সিক্সের প্রধান আলেক্স ইয়াংগার সামনে অনেক সিদ্ধান্ত নিবে হবে বলে জানিয়েছেন। কারণ যে 5G নেটওয়ার্ক তৈরি করা হচ্ছে, সেখানে নিরাপত্তার বিষয়গুলো মনিটর করা অনেক কঠিন হবে। কিন্তু সর্বশেষ তারা যুক্তরাষ্ট্রের চাপকে উপেক্ষা করে দেশের অভ্যন্তরে ‘কোর নেটওয়ার্কিং’ এর অংশগুলো ব্যক্তিরেকে ‘নন-কোর নেটওয়ার্কিং’ এর জন্য ৩৫% হুয়াওয়ে কিটের সরবরাহকে স্বীকৃতি দেবে বলে জানিয়েছে। এতে যুক্তরাষ্ট্রের অনেক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়। মার্কিন সিনেটর টম কটন টুইটার বার্তায় একে স্নায়ুযুদ্ধের সময় কেজিবি’র (সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা) কাছে টেলিফোন নেটওয়ার্ক তৈরির সাথে তুলনা করেন! এছাড়া জার্মানি, পোল্যান্ড এবং নেদারল্যান্ডস হুয়াওয়েকে ভবিষ্যতের টেলিকম নেটওয়ার্কগুলিতে ভূমিকা রাখার দিকে ঝুঁকছে। ফরাসী সরকার গত নভেম্বরে নিশ্চিত করেছে যে তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান অনুসরণ করছে না এবং হুয়াওয়েকে তার 5G নেটওয়ার্কের জন্য চুক্তি থেকে বাদ দিতে অস্বীকার করেছে। ইউরোপভুক্ত দেশগুলোর এই অবস্থানের পেছনে ট্রাম্প সরকারের প্রভাবহীনতাকে আমেরিকার অনেক রাজনীতিবিদ চরম ব্যর্থতার দৃষ্টিতে দেখছেন। আমেরিকার হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভের সাবেক স্পিকার নিউট গিংরিচ একে বলেছেন, “দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জন্য এটাই সবচেয়ে বড় কৌশলগত পরাজয়।”

হুয়াওয়ের উপর যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশের এই নিষেধাজ্ঞা তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে যেমন একটা সংকটের সৃষ্টি করেছে, তেমনিভাবে করোনা ভাইরাসের কারণে গোটা বিশ্বের শিল্পবাণিজ্যে পড়ছে বহুবিধ প্রভাব। সামগ্রিকভাবে বহির্বিশ্বের প্রভাব আর করোনার চাপ সামলাতে হুয়াওয়ে কতটুকু প্রস্তুত এই মুহূর্তে, তা নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রতিষ্ঠাতা রেন ঝেংফেই এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব আইটি পণ্যগুলোর চাহিদা বাড়িয়ে তুলতে পারে। এক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা বা মহামারী কোনোটাই আমাদের উপর বড় কোনো প্রভাব ফেলতে পারে নি। আমরা বিশ্বাস করি, যেটুকু প্রভাব পড়েছে- সেটাই সর্বনিম্ন এবং এটুকু আমরা উতরে যেতে পারব। এই প্রতিষ্ঠানে প্রায় বিশ হাজারের অধিক বিজ্ঞানী, বিশেষজ্ঞ এবং ইঞ্জিনিয়াররা তাদের নবর্ষের ছুটিতে অতিরিক্ত সময় কাজ করেছে। কারণ আমরা নতুন এমনকিছু প্রযুক্তি তৈরি করছি, যা ভবিষ্যতে প্রযুক্তিবিশ্বে আমাদেরকে আগিয়ে রাখবে। একটি প্রতিষ্ঠান হিসেবে টিকে থাকা আসলে কোনো চ্যালেঞ্জ নয়, চ্যালেঞ্জ হলো শীর্ষ অবস্থানটিকে ধরে রাখতে পারা। যদি আমরা সম্পূর্ণ নতুন ধরণের প্রযুক্তি তৈরি করতে ব্যর্থ হই, তাহলে আগামী তিন কিংবা পাঁচ বছর পর আমরা বিশ্বকে নেতৃত্ব দিতে পারব না।” রেন ঝেংফেই-এর বক্তব্য থেকে এটা স্পষ্ট যে, হুয়াওয়ে অবকাঠামোগত এবং কৌশলগতভাবে প্রস্তুত এই মহামারি এবং বাণিজ্যযুদ্ধে তাদের সংকট মোকাবেলা করতে। এক্ষেত্রে মোবাইল ফোন ও নেটওয়ার্কিং-এ প্রতিষ্ঠানটির দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনাগুলা সর্বাধিক গুরুত্ব পায়। যেমন: গতবছর মে মাসে গুগল যখন হুয়াওয়ের এন্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, তার তিনমাস পরেই হুয়াওয়ে ‘হারমনি’ নামে নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম উন্মুক্ত করে। এ থেকে বোঝা যায়, অনেক আগে থেকে হুয়াওয়ে তাদের নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম তৈরির কাজ শুরু করে দিয়েছিল। ২০১৮ সালে প্রকাশিত উইয়ার্ড ডট কমের এক আর্টিকেল থেকে জানা যায়, হুয়াওয়ে সে সময়ই আশঙ্কা করেছিল ভবিষ্যতে আমেরিকা তাদের সাথে দ্বন্দ্বে জড়াবে। এবং সেক্ষেত্রে তাদের প্রথম প্রস্তুতি ছিল একটা নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম তৈরি করা। যা গুগলের এন্ড্রয়েড, এমনকি অ্যাপলের আইওএসের সালে প্রতিযোগিতা করতে পারবে। এছাড়াও তারা ইঙ্গিত দেয় নিজস্ব চিপ ইন্ড্রাস্ট্রি তৈরির। এই সাক্ষাৎকারে প্রতিষ্ঠানটির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “They [U.S] have awoken a dragon, this is a big-boy game! আমরা এমনকিছু চিপসেট (কম্পিউটারের হার্ডওয়্যার) তৈরি করব, যা এর আগে তৈরি করা আমাদের উদ্দেশ্য ছিল না। কিন্তু বর্তমানে চীন এই ইন্ডাস্ট্রি এত দ্রুততর সময়ে তৈরি করবে, যা কেউ চিন্তাও করতে পারবে না।” সুতরাং ভূ-রাজনৈতিক চাপ কিংবা করোনার মতো বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়া মহামারীর কারণে হুয়াওয়ের বাণিজ্যকৌশল পুরোপুরি স্থবির হয়ে যাবে, এমন ভাবাটা বোকামি। ইতিমধ্যে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব স্মার্টফোন শিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। অ্যাপল সতর্ক করে দিয়েছে যে কারখানার শাটডাউন ও স্টোর বন্ধ হওয়ার কারণে এটির আয় উপার্জন ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে। বিশ্বের বৃহত্তম ফোন প্রস্তুতকারক সংস্থা স্যামসাং বর্তমানে প্রায় অর্ধেক উত্পাদন ভিয়েতনামে স্থানান্তরিত করেছে, যার ফলে এখন পর্যন্ত এর ক্ষতির পরিমাণ কিছুটা কম। তবে চীনের বৃহত্তম ফোন প্রস্তুতকারক আশ্চর্যজনকভাবে- কেউ কেউ অবিশ্বাস্যরূপে বলেছেন- করোনাভাইরাস প্রভাব সম্পর্কে তারা আশাবাদী। হুয়াওয়ের একজন রিসার্চ পার্টনার নেইল শাহ বলেন, “চীনে লকডাউন শুরু হওয়ার কারণে হুয়াওয়ে জানুয়ারির শেষ ১০ দিন উৎপাদন বাড়িয়ে দিয়েছিল। এবং এর অনলাইন কৌশলও বাড়ানো হয়েছে। মার্চে টিকে থাকার জন্য হুয়াওয়ের পর্যাপ্ত স্টক রয়েছে এবং ইতিমধ্যে চীনে স্মার্টফোনের বাজার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে এসেছে।” আবার বিজনেস ইনসাইডারে দেওয়া এক বিবৃতিতে হুয়াওয়ের ক্যারিয়ার বিজনেসের প্রেসিডেন্ট রায়ান ডিং বলেন, “আমরা এখনো প্রতিদিন লাভ-ক্ষতির হিসাব নিকাশ করছি। কিন্তু এটুকু বলতে পারি, আগামী তিন কিংবা ছয়মাসে গ্লোবাল সাপ্লাই চেইনের ক্ষেত্রে আমাদের তেমন কোনো প্রভাব পড়বে না।” বর্তমানে চীনে করোনার প্রভাব অনেকটা কমে যাওয়ায় হুয়াওয়ে তার উত্পাদন ক্ষমতার ৯০ ভাগ আবার চালু করতে পেরেছে। করোনার মূল প্রাদুর্ভাবের কেন্দ্রস্থল হুবেইয়ের বাইরে হুয়াওয়ের কোন কর্মচারী ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির মালিক। তারা এ মুহূর্তে করোনা আক্রান্ত দেশে এবং এর পার্টনারদের কাছে বিভিন্ন প্রতিরক্ষামূলক গিয়ার, তথা মাস্ক, টেস্ট কিট, পিপিই ইত্যাদি সরবরাহের দিকে বেশি জোর দিচ্ছে। এতে বহির্বিশ্বে হুয়াওয়ে তথা চীনের উপর রাষ্ট্রগুলোর আস্থা বাড়ছে। তাছাড়া এখন অধিকাংশ মানুষ লকডাউনে থাকায় স্যোসাল মিডিয়ার অ্যাপগুলোতে মানুষের যাতায়াত বেড়েছে। করোনায় লকডাউনের ফলে ফেসবুকে আগের তুলনায় ৭০% বেশি সময় ব্যয় করছে ইতালির মানুষ। ফলে সেসব এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট চালু রাখতে কাজ করতে হচ্ছে নেটওয়ার্ক সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর। হুয়াওয়ের মালিক এটিকে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করেছেন, “এই চাহিদা আমাদেরকে পূরণ করতে হবে।”
করোনা প্রতিরোধ এবং চিকিৎসার ক্ষেত্রে চীনের সবচেয়ে বড় হাতিয়ার ছিল তথ্যপ্রযুক্তি। প্রায় ১ দশমিক ৩৮ বিলিয়ন জনগোষ্ঠীর বৃহৎ এই দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৮০ হাজার এবং মৃত্যুর সংখ্যা ৩ হাজারের অধিক; যা ইতালি, স্পেন, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় বেশ কম। প্রথম করোনা সনাক্তকরণের পরপরই চীন সরকার এই প্রাদুর্ভাবকে তথ্য-প্রযুক্তির সাহায্যে মোকাবেলা করার জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

5G প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে অসংখ্য পর্যবেক্ষণীয় ক্যামেরা, রোবট এবং মোবাইল অ্যাপ থেকে ডাটা সংগ্রহ করে তা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের সাহায্যে এনালাইসিস করে চীন খুব দ্রুত করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের আলাদা করতে পেরেছে। করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহায়তার জন্য চীন জনবহুল স্থানগুলোতে মানুষের মাস্ক পরা এবং শরীরের তাপমাত্রা পর্যবেক্ষণ করতে 5G দ্বারা চালিত টহল রোবট ব্যবহার করছে। এতে টহল পুলিশ কর্মকর্তাদের ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেকটা হ্রাস পেয়েছে। ইন্টারনেট অফ থিংস (IoT) হার্ডওয়্যার এবং সফটওয়্যার বিশেষজ্ঞ অ্যাভানটেকের (Advantech) প্রযুক্তি ব্যবহার করে গুয়াংজু গোসুনক রোবট সংস্থা (Guangzhou Gosuncn Robot Company) এই রোবটগুলি তৈরি করেছে। যেহেতু ম্যানুয়ালি শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ করতে গেলে তা অনেকক্ষেত্রে নিরাপত্তা কর্মীদের স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দেয়, তাই এই রোবটগুলোতে ব্যবহার করা হয়েছে হাই-রেজুল্যুশনের ক্যামেরা এবং ইনফ্রারেড থার্মোমিটার। যা পাঁচ মিটার ব্যাসার্ধের মধ্যে একই সাথে দশ জন ব্যক্তির শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপ করতে পারে। কোনো ব্যক্তির শরীরে উচ্চ তাপমাত্রা বা মাস্কের অনুপস্থিতি পাওয়া গেলে রোবটগুলি সংশিষ্ট কর্তৃপক্ষকে একটি সংকেত বার্তা প্রেরণ করে। এছাড়া প্রতি মুহূর্তে ধারণকৃত ডাটা পরবর্তীতে এনালাইসিস করার জন্যে একটি সার্ভারে জমা হয়। যদিও এই রোবটগুলো পুরোপুরি স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাজ করতে পারে, কিন্তু চাইলে এগুলোকে দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এতে টহল সংক্রান্ত জটিলতা হ্রাস পায় এবং ক্রস-ইনফেকশন প্রতিরোধ করা যায়। এখন অবধি এই রোবটগুলো গুয়াংজু, সাংহাই, শি’য়ান এবং গুইয়াংয়ের মতো শহরগুলির বিমানবন্দর এবং শপিংমলে মোতায়েন করা হয়েছে।

সিমেন্স এবং অউকমা প্রতিষ্ঠান দু’টি গত ফেব্রুয়ারিতে বুদ্ধিমান জীবাণুনাশক রোবট তৈরি করা শুরু করে। চীনের কিংদাওতে অবস্থিত সিমেন্সের গবেষণা গ্রুপের প্রধান ইউ কিউ এই প্রজেক্টটি শুরু করেন। চীনের কিছু হাসপাতালে জীবাণুনাশক রোবটগুলির জরুরি প্রয়োজন পড়ছে- এমন একটি সংবাদের ভিত্তিতে তিনি এই উদ্যোগ শুরু করেন। একটি নতুন ধরণের বুদ্ধিমান জীবাণুমুক্ত রোবট তৈরি করতে তিনি দ্রুততর সময়ে ব্যবস্থাপনা এবং সহকর্মীদের কাছ থেকে সমর্থন পেয়েছেন। যদিও আগে থেকেই চীনের বাজারে সহজলভ্য এ ধরণের কিছু রোবট পাওয়া যায়, কিন্তু সেগুলো বেশিরভাগ পেট্রোলচালিত হওয়ায় বেশ ব্যয়বহুল এবং ঝামেলাপূর্ণ। তাই সিমেন্সের এই দলটি এসব হসপিটালের জন্য বিদ্যুৎ চালিত রোবট তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়। এই রোবট তৈরির ক্ষেত্রে তারা প্রধান যে চ্যালেঞ্জগুলোর মুখোমুখি হয়েছে, তা হল- যন্ত্রের মধ্যে জীবাণুনাশক লিকুইড দেওয়ার সাথে সাথে প্রায় শতভাগ জীবাণুমুক্তকরণের চেষ্টা এবং খুব ছোট এরিয়ার মধ্যে ৩৬০ ডিগ্রি কভারেজ তা ছড়িয়ে দেওয়া। লিথিয়াম ব্যাটারি দ্বারা চালিত একটি রোবট এক ঘন্টায় ২০,০০০ থেকে ৩৬,০০০ বর্গমিটার এলাকা জীবাণুমুক্ত করতে পারে। রোবটের উপরে থাকা একটি ক্যামেরা এর চারপাশের রিয়েল-টাইম ভিডিও এবং তথ্য একটি ডাটাবেজে পাঠিয়ে দেয়। যা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের সাহায্যে এনালাইসিস করে কোন জায়গাগুলো বেশি ঝুঁকির মধ্যে আছে তা সনাক্ত করতে সাহায্য করে। এ ধরণের রোবট হাসপাতালের বাইরেও বিভিন্ন স্কুল, অফিস, ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি এবং অন্যান্য পাবলিক জায়গায় স্থাপনের জন্য চীন সরকার উদ্যোগ নিয়েছে। এছাড়া চীনের সবচেয়ে বড় ই-কর্মাস প্লাটফর্ম আলীবাবা জানুয়ারিতে দু’টি অ্যাপ চালু করে। যার মাধ্যমে হুবেই অঞ্চলে করোনায় লকডাউনে থাকা মানুষজন অনলাইনে ডাক্তারদের সাথে মেডিকেল কনস্যালটেন্সির সুযোগ পাচ্ছে এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। অন্যদিকে আলীবাবার রিসার্চ ইউনিট একটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এলগোরিদম তৈরি করেছে, যার মাধ্যমে সিটি স্ক্যান (Computerized Tomography) থেকে প্রাপ্ত ইমেজকে বিশ্লেষণ করে মাত্র কুড়ি সেকেন্ডে বলা সম্ভব কোন ব্যক্তি করোনায় আক্রান্ত। এখন পর্যন্ত এই এলগোরিদমের একুরেসি রেট ৯৬%। চীনের ১৬টি অঞ্চলের প্রায় ২৬টি হসপিটালে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। এবং আর কিছুদিনের মধ্যে করোনা সনাক্তকরণের জন্য আরো ১০০ হসপিটালে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। বাইডু (Baidu) চীনে সর্বাধিক ব্যবহৃত নিজস্ব সার্চ ইঞ্জিন। এর মাধ্যমে তারা প্রায় ১৫ মিলিয়ন মানুষের কাছ থেকে করোনা সংক্রান্ত জিজ্ঞাসা নিয়েছে এবং প্রায় ১ লক্ষ চিকিৎসকের সাহায্যে সেসবের উত্তর দিয়েছে। এছাড়া তারা জিন টেস্টিং এজেন্সি, মহামারী নিয়ন্ত্রণ সেন্টার এবং রিসার্চ ইন্সটিটিউটগুলোর জন্য ‘লিনিয়ারফোল্ড’ (LinerFold) নামে একটা এলগোরিদম তৈরি করেছে। যা তাদেরকে এই ভাইরাসের জীনগত বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জানতে সাহায্য করবে এবং এর ভ্যাক্সিন তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। প্রতিষ্ঠানটির হেলথ কেয়ার ইউনিটের জেনারেল ম্যানেজার ইয়ং মিংলু বলেন, “এই মহামারীটির জরুরি অবস্থা অনলাইন চিকিৎসাসেবা বা মেডিকেল স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে একটি বড় চাহিদা তৈরি করছে। বর্তমানে মহামারী রোধে প্রয়োজনীয় তথ্য এবং তাৎক্ষনিক পেষাদার স্বাস্থ্যসেবা পেতে সাধারণ মানুষজন ব্যাপকহারে ইন্টারনেট ব্যবহার করছে।” চীনে করোনার মত মহামারীর বিস্তার রোধে ব্যবহৃত এসব প্রযুক্তির পেছনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে উচ্চমানের ইন্টারনেট ব্যবস্থা। চায়নার সবচেয়ে উন্নত বেইজিং এবং সাংহাইসহ প্রায় পঞ্চাশটি শহরে ২০১৯ সালের শেষে ১ লক্ষ ৩০ হাজার 5G বেস স্টেশন চালু করা হয়। যেটি পুরো বিশ্বের মধ্যে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ। এই বেস স্টেশনে যেসব নেটওয়ার্ক ইকুয়েপমেন্ট ব্যবহার করা হয়েছে তার অধিকাংশ হুয়াওয়ের। ফলে এটা বলার অপেক্ষা রাখেনা, চীনে করোনা প্রতিরোধে যেসব প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন অ্যাপ, ক্লাউড সিস্টেম, রোবট ইত্যাদি তৈরি করছে তাদের প্রত্যেকের পেছনে হুয়াওয়ের ভূমিকা রয়েছে। করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ আরও সঠিকভাবে এবং দ্রুত নির্ণয়ের জন্য চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন গত ৪ ফেব্রুয়ারি কম্পিউটার টমোগ্রাফিকে (CT) তাদের ক্লিনিকাল ডায়াগোনসিস স্ট্যান্ডার্ডে অন্তর্ভূক্ত করে। সিটি স্ক্যান একধরণের মেডিকেল ইমেজিং পদ্ধতি, যা কম্পিউটারের সাহায্যে বিভিন্ন এঙ্গেল থেকে নেওয়া এক্স-রে রিপোর্টকে একসাথে করে একটা নির্দিষ্ট ইমেজ তৈরি করে। এটি মূলত স্ক্যান করা বস্তুর একটি ক্রস সেকশনাল ইমেজ, যার ফলে কোন বস্তুকে বাস্তবে কাটা বা বিভক্ত করা ছাড়াই এর ভেতরের অংশগুলোর ইমেজ তৈরি করা যায়। কোভিড-১৯ এর ডায়গোনসিস এবং চিকিৎসার জন্য সিটি স্ক্যান খুবই কার্যকর এবং দ্রুত পদ্ধতি। কিন্তু ফুসফুসে প্রচুর পরিমাণে ক্ষত এবং ভাইরাসটির দ্রুত পরিবর্তনের কারণে খুব অল্প সময়ের মধ্যে একাধিকবার পুনঃপরীক্ষা করা এবং ইমেজগুলোর রিভিউ করা ডাক্তারদের কাজের চাপ প্রচন্ডরকম বাড়িয়ে দেয়। অন্যদিকে এরকম ডাক্তারের সংখ্যাও খুব বেশি নয়, যারা সঠিকভাবে এই ইমেজ বিশ্লেষণ করে দেখতে পারেন। ফলে কোভিড-১৯ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতিতে একটি উভয় সংকট তৈরি হয়। এই সমস্যার সমাধানের জন্য হুয়াওয়ে ক্লাউড টিম, হুয়াজন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (Huazhong University of Science & Technology) এবং ল্যানওন টেকনোলজি (Lanwon Technology) আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের সাহায্যে একটি নতুন ধরণের মেডিকেল ইমেজিং এনালাইসিস পদ্ধতি তৈরি করে। এ পদ্ধতিতে কম্পিউটার ভিশন এবং মেডিকেল ইমেজিং পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে, যার ফলে খুব দ্রুত এবং নির্ভুলভাবে ডাক্তাররা সিটি স্ক্যানের রেজাল্ট পেতে পারে। হুয়াওয়ের অ্যাসেন্ড সিরিজের আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স চিপ ব্যবহৃত এ প্রযুক্তি পূর্বের ম্যানুয়াল সিস্টেমের চাইতে প্রায় ১২ গুণ বেশি দ্রুত এবং নির্ভুল। ফলে এটা সিটি স্ক্যানের নির্ভুল ফলাফলের জন্য ডাক্তার স্বল্পতা এবং তাদের কাজের চাপ অনেকাংশে কমিয়ে দিয়েছে। নিচের ছবিতে দেখা যাচ্ছে- প্রথম সারিতে সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে সংগ্রহকৃত ডাটা এবং দ্বিতীয় সারিতে তা এনালাইসিস করে প্রাপ্ত ইমেজ, যার সাহায্যে সহজে কোভিড-১৯ সনাক্ত করা যায়।

বিশ্বজুড়ে করোন ভাইরাস প্রতিরোধে শুধুমাত্র চীন তথ্য-প্রযুক্তি ব্যবহার করছে, তা নয়। দক্ষিণ কোরিয়া এবং সিঙ্গাপুর সম্ভাব্য সংক্রমণ সনাক্ত করতে মোবাইল ফোনের সাহায্যে লোকেশন ট্রাক করছে। করোনায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের আলাদা করার জন্য রাশিয়া ফেসিয়াল রেকগনিশন টেকনোলজি ব্যবহার করছে। ইসরায়েল তাদের পূর্বে ধারণকৃত লোকেশনের ডাটাবেজ থেকে ডাটা নিয়ে সংক্রমিত ব্যক্তিদের গতিপথ এনালাইসিস করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র করোনা প্রতিরোধে তাদের নীতিনির্ধারকদের সহায়তা করার জন্য জনসাধারণের বক্তিগত তথ্য ব্যবহার বিষয়ে বিবেচনা করা শুরু করেছে। এছাড়া জনস্বাস্থ্যের সহায়তায় কী ধরণের ডেটা (Data) এবং সরঞ্জাম ব্যবহার করা যেতে পারে তা নির্ধারণের জন্য গুগল, ফেসবুক, ক্লিয়ারভিউ এআই, প্যালান্টিরসহ বিভিন্ন প্রযুক্তি সংস্থাগুলোর সাথে কাজ করছে। অন্যদিকে এ সংকটময় পরিস্থতিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশসহ যুক্তরাষ্ট্রও তার অন্যতম বাণিজ্য প্রতিপক্ষ চীন থেকে তাদের উদ্ভাবিত প্রযুক্তিগত সহায়তা নেওয়ার ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েছে। গত ২৭ মার্চ এক টুইটার বিবৃতিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, “এইমাত্র চীনের প্রেসিডেন্ট শি’র (Xi Jinping) সাথে আশাব্যঞ্জক কথোপকথন শেষ হলো। আমাদের বর্তমান বিশ্বের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি করোনা ভাইরাসের ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। এই ভাইরাসের ব্যাপারে চীনের জানা-শোনা এবং গবেষণা ব্যাপক। তাই একসাথে কাজ করতে আমরা সম্মত হয়েছি। তাদের প্রতি অশেষ সম্মান!” এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণীয় ব্যাপারটি হলো- করোনা প্রতিরোধে বিভিন্ন দেশে ব্যবহৃত প্রযুক্তিগুলোর সবগুলোই আসলে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের (4th Industrial Revolution) অংশ। যদিও বিশ্বে এখনো অনেকের কাছে এই ‘চতুর্থ শিল্পবিপ্লব’ একটি নতুন শব্দ। প্রথম শিল্প বিপ্লব শুরু হয় সতেরো শতকের মাঝামাঝি সময়ে এবং তা আঠারো শতকের মধ্যভাগ পর্যন্ত চলে। বৃহত্তর ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে ঘটা এ বিপ্লবে পণ্য উৎপাদন প্রক্রিয়া হাত থেকে যন্ত্রের ভিত্তিতে রূপান্তরিত হয়েছিল। বাষ্প ও জলশক্তির ব্যবহার, রাসায়নিক পণ্য ও লোহা উৎপাদন এবং যন্ত্রচালিত কারখানার উন্নয়ন ইত্যাদি ছিল এই সময়ের মূল উপাদান। এরপর দ্বিতীয় শিল্প বিপ্লবের যাত্রা শুরু করে ঊনিশ শতকের শেষে। এবং স্থায়ী হয় বিশ শতকের প্রথম দিক পর্যন্ত। মূলত এটি ছিল জোরালো শিল্পায়নের পর্যায়। টেলিগ্রাফ ও রেল নেটওয়ার্কের ধরনে বড় মাত্রায় রূপান্তর, সরকারি উপযোগগুলোর (যেমন: গ্যাস, পানি ও পয়ঃপ্রণালি ব্যবস্থা প্রভৃতি) ব্যাপকতর ব্যবহার বৃদ্ধি এবং কারখানার বিদ্যুতায়ন এ শিল্প বিপ্লবকে এগিয়ে নিচে যায়। তারপর তৃতীয় বিপ্লবের যাত্রা ঘটেছিল মধ্য বিশ শতক থেকে। আর এটি সূচিত হয়েছিল পারমাণবিক জ্বালানি, ইলেকট্রনিক্স ভিত্তিক ট্রানজিস্টর, মাইক্রোপ্রসেসর, কম্পিউটার, টেলিযোগাযোগ, জৈবপ্রযুক্তির উত্থান এবং উৎপাদন প্রক্রিয়ায় মোটামুটি মাত্রায় স্বয়ংক্রিয়তার মধ্য দিয়ে। এবং ঠিক এই সময়টায় চলছে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের শুরুর পর্যায়। বিশ শতকের শেষের দিক থেকে রূপ নেয়া এ বিপ্লব প্রধানত তৃতীয় শিল্প বিপ্লব ও দ্রুত বিবর্তনশীল ডিজিটাল উদ্ভাবনের ওপর দাঁড়িয়ে আছে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, বিগ ডাটা, ইন্টারনেট অব থিংস, ক্লাউড কম্পিউটিং, অটোনোমাস রোবট, জেনোম এডিটিং, কোয়ান্টাম কম্পিউটিং, ব্লকচেইন, অগমেন্টেড রিয়েলিটি ও থ্রিডি প্রিন্টিং সহ অসংখ্য প্রযুক্তির সমন্বয় হলো চতুর্থ শিল্প বিপ্লব। আর বর্তমানে করোনা মোকাবেলায় ব্যবহৃত জেনেটিক সিমুলেশন, অগমেন্টেড রিয়ালিটি, টেলি হেলথ ইত্যাদি সবকিছু চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের অংশ এবং ভবিষ্যতে এগুলো চিকিৎসেবাকে আরো বহুগুণে ত্বরান্বিত করবে।


[image source: careerki-infographic]

এ মুহূর্তে এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে,- আমরা ইতিমধ্যে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের একদম দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছি। আর এক দশক পরেই হয়তো সম্পূর্ণভাবে বিশ্বের উন্নত দেশগুলো চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের অংশীদার হবে। কিন্তু প্রযুক্তির এই অভাবনীয় উৎকর্ষতা কি মানবজাতিকে শুধুমাত্র উন্নত থেকে উন্নততর দিকে নিয়ে যাবে, নাকি এর মাধ্যমে আমরা মূল্যবান কোনোকিছু হারিয়ে ফেলছি? গত শতাব্দীতে শিল্পকারখানার অভাবনীয় উন্নতির ফলে বিশ্ব যেমন এগিয়েছে অনেকদূর, তেমনিভাবে তা এই পরিবেশ বান্ধব পৃথিবীকে ফেলেছে হুমকির মুখে। সারাবিশ্বের জলবায়ু এখন পরিবর্তনের মুখে, প্রতিদিন বাড়ছে বৈশ্বিক উষ্ণতার হার। নবায়নযোগ্য অসংখ্য শক্তির উৎস থাকা সত্ত্বেও বিশ্বের শক্তিধর দেশগুলো এখনো জীবাশ্ম জ্বালানিকে দেশের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে ব্যবহার করছে। শুধুমাত্র ব্যক্তিবিশেষের আর্থিক লাভের দায় পড়ছে পুরো পৃথিবীর উপর, পৃথিবীর অন্যান্য সকল মানুষের উপর। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে এর অবসান হলেও হতে পারে। কারণ এখন অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠান সৌরবিদুৎকে কাজে লাগিয়ে আধুনিক শহর, বিদুৎ চালিত স্বনিয়ন্ত্রিত গাড়ি, সোলার অটোমেটেড কারখানার দিকে ঝুঁকছে। তবে এসবকিছুর বাইরে ভবিষ্যৎ সময়ে মানুষের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষা করা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। বর্তমানে বিশ্বে ৭ দশমিক ৮ বিলিয়ন মানুষের মধ্যে প্রায় ৪ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন মানুষ ইন্টারনেট ব্যবহার করে, অর্থাৎ বিশ্বের ৫৯% মানুষ এখন নিয়মিত ইন্টারনেটের বিভিন্ন মাধ্যমের সাথে যুক্ত। প্রতিবছর এর হার বৃদ্ধি পাচ্ছে তুমুল গতিতে। উন্নত বিশ্ব থেকে শুরু করে স্বল্পোন্নত দেশগুলোতেও ইন্টারনেট এখন অনেকটাই মানুষের মৌলিক অধিকারের মধ্যে পড়ে গেছে। আর চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যতো নিকটবর্তী হবে বিশ্ব, ততো মানুষের তুলনায় বিভিন্ন যন্ত্রপাতির ইন্টারনেট ব্যবহারের হার বাড়তে থাকবে। বর্তমানে ব্যবহৃত প্রতিটা মোবাইল প্রতি মুহূর্তে আমাদের লোকেশন জানিয়ে দেয় নেটওয়ার্ক কোম্পানিগুলোকে। মোবাইলকে চালু রাখতে হলে, অর্থাৎ নিকটবর্তী নেটওয়ার্ক টাওয়ারের সাথে কানেক্টেড থাকতে হলে এর কোনো বিকল্প নেই আসলে। এর বাইরেও এখন অনেক প্রযুক্তি আছে যেগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রা এবং চলাফেরাকে আমাদের অজান্তে রেকর্ড করে রাখে। যাতায়াতের ক্ষেত্রে স্মার্টফোনে ব্যবহার করা ম্যাপের লোকেশন, বিভিন্ন শপিংমল কিংবা প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত ক্লোজ সার্কিট বা সারভাইলেন্স ক্যামেরা, বায়োমেট্রিক পদ্ধতির ব্যবহার ইত্যাদি অনেক প্রযুক্তি আমাদের গতিবিধিকে আড়াল থেকে পর্যবেক্ষণের সুযোগ করে দেয়। এছাড়া স্যোসাল নেটওয়ার্কগুলোতে আমাদের বন্ধু-বান্ধব বাছাই, বিভিন্ন বস্তু-সামগ্রী কেনাবেচা, তথ্য বা নিজের অনুভূতি প্রকাশ করা ইত্যাদি নানা বিষয় থেকে আমাদের আচরণগত বৈশিষ্ট্য ধরা পড়ে। স্মার্টফোনে ব্যবহার করা বিভিন্ন অ্যাপ এসব তথ্য এর মূল ডেটাবেসে সংরক্ষণ করে রাখে ভবিষ্যতে এনালাইসিস করার জন্য। এবং সেই অনুযায়ী তারা আমাদের পরিবর্তী চাহিদা, পছন্দ-অপছন্দ কী হতে পারে- তা অনুমান করে সেই অনুযায়ী আমাদের চাহিদা পূরণের চেষ্টা করে। বর্তমান সময়ে ফেসবুক, অ্যামাজন, ইউটিউবের মতো বিশ্বের বড় বড় টেক জায়ান্টগুলোর এটাই বিজনেস পলিসি। যদিও এসব অ্যাপ আমরা ফ্রি-ই নিচ্ছি বলে মনে হয়, কিন্তু মূলত আমরা বিনা অর্থে তাদের কাছে বেঁচে দিই আমাদের মহামূল্যবান সময়কে, আমাদের আচরণগত বৈশিষ্ট্যগুলোকে; যা তাদেরকে সুযোগ করে দেয় আমাদের মত সাধারণ মানুষের কাজকর্ম, চিন্তাধারা নিয়ন্ত্রণ করতে। আগামীদিনে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যেসব উপাদান আমাদের সামনে আসবে, এবং ইতিমধ্যে চলে এসেছে, তাতে মানুষের এসব ব্যক্তিগত আচার-ব্যবহার আর গতিবিধি আদৌ নিরাপদ থাকবে কিনা, সেটা এখন অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। গত ২৪ মার্চ দৈনিক প্রথম আলো’তে অনূদিত বর্তমান সময়ের জনপ্রিয় ইতিহাসবিদ ইউভাল নোয়াহ হারারির প্রবন্ধ ‘করোনা পরবর্তী পৃথিবী’র অংশবিশেষ এখানে দেওয়া হলো। যা আমাদেরকে করোনা ভাইরাসের প্রেক্ষাপটে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে মানুষের নিরাপত্তার বিষয়টি বুঝতে সাহায্য করবে-
“করোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধের এই যুদ্ধে বেশ কয়েকটি দেশের সরকার ইতিমধ্যেই নতুন সব সারভেইল্যান্স টুল ব্যবহার করেছে এবং করছে। সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয়েছে চীনে। আমজনতার স্মার্টফোন খুব নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করে, কয়েকশো মিলিয়ন ফেস-রিকগনাইজিং ক্যামেরা ব্যবহার করে, জনগনকে নিজেদের শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা এবং অবস্থা রিপোর্টে বাধ্য করে চাইনিজ সরকার শুধু দ্রুত ভাইরাস বাহক শনাক্তকরণই নয়, সেই বাহকের চলাফেরা ট্র্যাক থেকে শুরু করে কাদের সংস্পর্শে ভাইরাস বাহক ছিলো তাও বের করে ফেলেছে অসম্ভব দ্রুত গতিতে। এর সাথে আবার মোবাইলের বেশ কিছু অ্যাপ সাধারণ জনগনকে আশপাশের সংক্রমিত রোগী সম্পর্কে সাবধান করে দেয়ার কাজও করেছে।

চীন যে ধরনের প্রযুক্তি ব্যবহার করেছে সে ধরনের প্রযুক্তি যে শুধু পূর্ব এশিয়াতেই আছে, তা কিন্তু নয়। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু, ইসরাইল সিকিউরিটি এজেন্সি সন্ত্রাসী হামলা ঠেকাতে যে সার্ভেইল্যান্স প্রযুক্তি ব্যবহার করে, সেই সার্ভেইল্যান্স প্রযুক্তি ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন শুধুমাত্র করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী ট্র্যাক করার জন্য। তাতে সংসদীয় উপকমিটি বাগড়া দিলেও নেতানিয়াহু ‘ইমার্জেন্সি ডিক্রি’ বলে দুই শব্দে সমস্ত আপত্তি উড়িয়ে কাজটি শুরু করে দিয়েছেন।

আমার বক্তব্যের এই পর্যায়ে এসে আপনি বলতেই পারেন, এইসব তো নতুন কিছু না। সম্প্রতি বিভিন্ন সরকার এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো জনগনকে ট্র্যাক, মনিটরিং এবং নানাভাবে ব্যবহার করার জন্য খুবই উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। তারপরেও আমরা যদি সাবধান না হই, এই ধরনের মহামারী বা অতিমারীগুলো সার্ভেইল্যান্সের ইতিহাসে দাগ রেখে যাবে। বন্যার জল নেমে যাবার পর দেয়ালের গায়ে যেরকম দাগ থেকে যায় অনেকটা ওরকম দাগ। এর কারণ হচ্ছে, যে দেশগুলো নিজেদের জনগনের উপর নজরদারীতে বিশ্বাস করে না, তারাও কঠিন নজরদারীর জন্যে প্রয়োজনীয় সমস্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এতদিন যে নজরদারী ছিল আংশিক বা অনেকটা বাইরে থেকে, নজরদারী হবে এখন ঘরের ভেতরে, একদম আপনার হাঁড়ির ভেতর। সার্ভেইল্যান্স ‘ওভার-দ্য স্কিন’ থেকে হয়ে যাবে ‘আন্ডার-দ্য-স্কিন’।

এখন পর্যন্ত আপনার স্মার্টফোনের স্ক্রিনে কোন লিঙ্কে আপনি যখনই আঙ্গুল দিয়ে ক্লিক করেছেন, সরকার শুধু জানতে চেয়েছে, কিসের লিঙ্কে আপনি ক্লিক করেছেন। কিন্তু এই করোনা ভাইরাসের কারণে সরকারের ফোকাসটা সরে গেছে অন্যদিকে। এখন সরকার জানতে চায় আপনার আঙ্গুলের তাপমাত্রা কতো, ত্বকের নীচে আপনার রক্তের চাপ কতো।

এর খারাপ দিক অবশ্যই আছে। এর ফলে ভীতিকর একটি সার্ভেইল্যান্স ব্যবস্থা আইনগতভাবে বৈধতা পেয়ে যাবে। উদাহরণ হিসেবে বলি, যদি আপনি জানেন যে আমি সিএনএন এর লিংকের বদলে ফক্স নিউজ চ্যানেলের একটি লিঙ্ক ক্লিক করেছি, এই ডেটা থেকে আপনি জেনে যেতে পারেন আমার রাজনৈতিক দর্শন কি। এমনকি আমার ব্যক্তিত্বের কোন একটা বিশেষ দিকও হয়তো এখান থেকেই বেরিয়ে আসবে আপনার হাতের মুঠোতে। কিন্তু একটা ভিডিও ক্লিপ দেখতে দেখতে আমার শরীরের তাপমাত্রা, রক্তচাপ এবং হৃৎপিণ্ডের গতির পরিবর্তন- এইসব তথ্য যদি আপনার হাতে চলে যায় আপনি তখন জেনে যাবেন কোন বিষয়টা আমাকে হাসায়, কিসে আমার কান্না পায় এবং কোন জিনিসটায় আমার প্রচণ্ড ক্রোধের সৃষ্টি হয়। আমার খুব রাগ হয়!

একটা জরুরি কথা আমাদের মনে রাখতে হবে, আনন্দ, বিষাদ, ক্রোধ, বিষন্নতা, ভালোবাসা, শরীরে জ্বর কিংবা সর্দির মতোই একটি জৈবিক বিষয়। যে প্রযুক্তির মাধ্যমে আপনার শরীরের কাশি শনাক্ত করা যাচ্ছে, সেই একই প্রযুক্তি দিয়ে আপনার হাসিও শনাক্ত করা যাবে। যদি সরকার বা বেসরকারী প্রতিষ্ঠানগুলো আমাদের এইসব বায়োমেট্রিক ডেটা বা তথ্য জমা করা শুরু করে, তাহলে আমরা আমাদের নিজেকে নিজে যতোটুকু চিনি তার চাইতে বেশি আমাদের চিনবে সরকার বা সেই বেসরকারী প্রতিষ্ঠান। তখন তারা আমাদের অনুভূতিই যে আগে থেকে বলে দিতে পারবে ব্যাপারটা শুধু তা না, তারা আমাদের আবেগ নিয়ে খেলতে পারবে, আমাদের কাছে বিক্রি করতে পারবে যে কোন কিছু। তা সে ভোটের জন্য একজন রাজনীতিবিদই হোক কিংবা একটা ভৌত পণ্য। বায়োমেট্রিক এই মনিটরিংয়ের কাছে ক্যামব্রিজ অ্যানালাইটিকার ডেটা হ্যাকিং ট্যাকটিকস হচ্ছে প্রস্তর যুগের একটা জিনিস। কল্পনা করুন ২০৩০ সালে উত্তর কোরিয়াতে প্রতিটি নাগরিককে এরকম একটি করে বায়োমেট্রিক ব্রেসলেট পরিয়ে দেয়া হয়েছে, সেই ব্রেসলেট আবার মাসের ত্রিশ দিন চব্বিশ ঘণ্টা হাতে রাখতে হয়। তখন উত্তর কোরিয়ার মহান নেতার ভাষণ শুনে আপনার ব্রেসলেট যদি শনাক্ত করে যে আপনি ভাষণ শুনে রেগে গিয়েছেন, আপনি শেষ।

যখন করোনা ভাইরাসের প্রকোপ কমতে কমতে শূন্যে এসে দাঁড়াবে, কিছু ডেটা-হাভাতে সরকার তর্ক করতেই পারে এই বলে যে বায়োমেট্রিক সার্ভেইল্যান্স রাখতে হবে, কারণ করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয়বার আক্রমণের আশংকা আছে কিংবা সেন্ট্রাল আফ্রিকায় ইবোলা ভাইরাসের নতুন কোন স্ট্রেইন হয়েছে। এতোক্ষণে বুঝে গেছেন নিশ্চয়ই, ঘটনাটা আসলে কি। গেলো কয়েক বছর ধরেই আমাদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তার বিষয় নিয়ে বেশ একটা শীতল যুদ্ধ চলছে। এই যুদ্ধে করোনা ভাইরাস একটা টিপিং পয়েন্ট হতে পারে। ব্যক্তিগত গোপনীয়তা এবং বেঁচে থাকা, এই দুটি বিষয়ের মধ্যে যেকোন একটি বিষয় যখন কাউকে বেছে নিতে বলা হবে, নিশ্চিতভাবেই বলা যায় সে বেঁচে থাকতে চাইবে, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা একজন মানুষের ‘ফার্স্ট প্রায়োরিটি’ নয়।”

হারারির এই বক্তব্য থেকে যেটা স্পষ্ট হয়, তা হল- ভবিষ্যৎ পৃথিবী আসলে নিয়ন্ত্রিত হতে যাচ্ছে তথ্য বা ডেটা দ্বারা। যার কাছে যত বেশি পরিমাণ তথ্য আছে, তা সে ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান হোক, আর রাষ্ট্র হোক- সে ততো বেশি ক্ষমতাবান হবে। ক্ষমতাবান হবে এই অর্থে,- সে সাধারণ মানুষের উপর ততো বেশি নিজের প্রভাব বিস্তার করার সুযোগ লাভ করবে; সেটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হতে পারে, অর্থনৈতিক উদ্দেশ্যেও হতে পারে। ফলে চতুর্থ শিল্পবিপ্লব আসলে যে ভিত্তিপ্রস্তরের উপর দাঁড়িয়ে আছে, সেটা হলো ডেটা। এই ডেটা শুধুমাত্র মানুষের সাথে সম্পর্কিত এমন নয়। মানুষের ডেটার সাথে সাথে আসবে আমাদের দৈনন্দিন ব্যবহৃত জিনিসপত্রের ডেটা। সেটা হতে পারে একটা স্মার্ট হোম, স্মার্ট কার, স্মার্ট টিভি, ফ্রিজ, লাইট, ফ্যান ইত্যাদি থেকে শুরু করে অটোমেটেড ফ্যাক্টরির ডেটা এবং হতে পারে একটা পারমাণবিক শক্তি উৎপাদন কেন্দ্রের সকল ডেটা। প্রতি সেকেন্ডে সেকেন্ডে এই ডেটা বিভিন্ন সার্ভারে জমা হতে থাকবে পরবর্তী এনালাইসিসের জন্যে। এবং তা থেকে বেরিয়ে আসবে গোপনীয় তথ্য, ইনফরমেশন। ফলে যে ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্র ব্যবস্থা ডেটাকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে, তারাই আগামীদিনে অন্য সকল প্রতিষ্ঠান বা রাষ্ট্রের উপর উপর ছড়ি ঘুরাতে পারবে। আর এই ডেটাকে নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখার যে কাঠামোগত কৌশল তা নিহিত আছে আগামীদিনের ইন্টারনেট ব্যবস্থা তথা 5G, 6G এবং আরো পরবর্তী ইন্টারনেট জেনারেশনের উপর। ঠিক একারণেই বর্তমান বিশ্বের তাবৎ শক্তিশালী দেশগুলোর মধ্যে রেষারেষির অন্যতম কারণ হলো ইন্টারনেট ইকুয়েপমেন্টে তাদের নিজেদের প্রভাববিস্তার করা। এতদিন ধরে যেসব শক্তিশালী দেশ অন্যান্য দেশের উপর তাদের প্রভাব বিস্তার করে এসেছে, তারা কোনোভাবেই এই সুযোগটি হাতছাড়া করতে চাইছে না। ১২ এপ্রিল ২০১৯ এ হোয়াইট হাউজের Remarks by President Trump on United States 5G Deployment-এর বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, “5G বর্তমান 4G নেটওয়ার্কগুলো থেকে ১০০ গুণ বেশি দ্রুতগতির হবে। এটি আমাদের দেশের নাগরিকদের কর্ম, শিক্ষা, যোগাযোগ এবং ভ্রমণে আমূল পরিবর্তন আনবে। এটি আমেরিকার ফার্মগুলোকে আরো উৎপাদনশীল, ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানিগুলোকে আরো প্রতিযোগিতামূলক এবং স্বাস্থ্যখাতকে আরো উন্নত করে তুলবে। মূলত, এটি প্রায় সবকিছুকে নিয়ন্ত্রণ করবে, যখন আপনারা এর আওতায় চলে আসবেন। এটা খুবই চমকপ্রদ! আমরা ভবিষ্যতের এই শক্তিশালী শিল্পে অন্য কোনো দেশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে প্রতিযোগিতায় নামতে দিতে পারি না। আমরা বিভিন্ন ধরণের শিল্পে এতদিন নেতৃত্ব দিয়েছি, তাই এক্ষেত্রে অন্য কেউ হস্তক্ষেপ করবে, এমনটা আমরা হতে দিতে পারি না। 5G এর প্রতিযোগিতায় আমেরিকাকে অবশ্যই জিততে হবে, স্পষ্টতই আমাদের দেশের সবচেয়ে শক্তিশালী টেক জায়ান্টগুলো এর সাথে জড়িত। আমরা তাদেরকে যতসম্ভব প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিচ্ছি। 5G এর এই দৌড়ে আমেরিকাই বিজয়ী হবে!” ট্রাম্পের এ বক্তব্য থেকে স্পষ্ট হয়, এক্ষেত্রে শুধুমাত্র তথ্যনিয়ন্ত্রণ দিয়ে নয়, উন্নততর ইন্টারনেট ব্যবস্থা সার্বিকভাবে একটা দেশের শিল্পবাণিজ্য তথা অর্থনীতিকে বহুগুণে তরান্বিত করবে। পাশাপাশি আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা, গবেষণা, যোগাযোগ মাধ্যম, কর্মসংস্থান, কৃষিব্যবস্থা, চিকিৎসা, স্বাস্থ্যসেবা সবকিছুতে প্রভাব ফেলবে ইন্টারনেটের গতি।

২০১৯ সালের নভেম্বরে IHS Markit কর্তৃক প্রকাশিত ‘The 5G Economy: How 5G will contribute to the global economy’ এর প্রতিবেদনে ২০৩৫ সালে বিশ্বে 5G এর ভ্যালু চেইন আউটপুট এবং কর্মসংস্থান কী ধরণের হতে পারে তা দেখানো হয়েছে। যেখানে পর্যায়ক্রমে চীন, যুক্তরাষ্ট্র, জাপান, জার্মানি, সাউথ কোরিয়া, ফ্রান্স এবং যুক্তরাজ্য নের্তৃত্বস্থানীয়। যদিও সবশেষে এটা বলা ছাড়া উপায় থাকেনা যে- ভবিষ্যতে ভূ-রাজনৈতিক বোঝাপড়া কোন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, আর কোন দেশকে পিছিয়ে দেবে, তা একমাত্র সৃষ্টিকর্তাই বলতে পারে। এবং আসন্ন চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রাক্বালে সমগ্র বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করার দৌড়ে ক্ষমতাধর দেশগুলোর গোপন আন্তঃশক্তিযুদ্ধে কত উলুখাগড়ার প্রাণ যাবে, সেটাও আসলে সৃষ্টিকর্তারই হাতে! এসবকিছুর সাথে সমগ্র বিশ্বব্যাপী মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া এই করোনা ভাইরাস মানবজাতির জন্যে সত্যিকার অর্থে একটা বড় চ্যালেঞ্জ। অসংখ্য আন্তঃদেশীয় রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক হিসাব নিকাশ, দ্বন্দ্ব-রেষারেষির মধ্যে একদম সাধারণ গৃহবন্ধী মানুষ অথবা একজন চিকিৎসক, একজন স্বেচ্ছাসেবক, একজন শিল্পী কিংবা গবেষক কতটুকু মানবিক হতে পারে আরেকজন মানুষের প্রতি, সেখানেই বোধহয় নির্ভর করছে সেই দিনের হিসাব; ভবিষ্যতে আর কতগুলো দিন পৃথিবীর বুকে মানুষ হিসেবে টিকে থাকতে পারব আমরা, তার উত্তর!

[বিশেষ দ্রষ্টব্য: উক্ত লেখাটি কোনো নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি বা রাষ্ট্রকে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে কিংবা কোনোরকম অভিযোগ প্রকাশের জন্য লিখিত নয়। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে করোনা ভাইরাস প্রেক্ষাপটে একটি বৈশ্বিক পর্যালোচনামাত্র। এছাড়া বর্তমানে ইউরোপ ও আমেরিকায় ছড়িয়ে পড়া একটি নিন্দনীয় এবং পুরোপুরি ভ্রান্ত গুজব, যেটি- ৫জি এর মাধ্যমে ‘কোভিড-১৯ ভাইরাস’ এর স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়িয়ে দেয় বলা প্রচারিত হচ্ছে, তার সাথে উক্ত আর্টিকেলটির কোনো সম্পর্ক নেই।]

তথ্যসূত্র:
১। https://www.wired.com/story/us-feds-battle-against-huawei/?itm_campaign=BottomRelatedStories_Sections_4
২। https://www.nytimes.com/2020/03/27/business/china-coronavirus-masks-tests.html
৩। https://spectrum.ieee.org/view-from-the-valley/at-work/tech-careers/coronavirus-is-triggering-fear-of-going-to-work
৪। https://www.energyupdate.com.pk/2020/03/27/the-coronavirus-outbreak-could-lead-to-rising-demand-for-it-products-huawei-ceo-ren-zhengfei/
৫। https://www.scmp.com/tech/tech-leaders-and-founders/article/3076939/founder-ren-says-huawei-working-round-clock-amid/
৬। https://www.theregister.co.uk/2020/03/26/huawei_back_at_90_percent_capacity/
৭। https://www.lightreading.com/asia/even-covid-19-cant-stop-huawei-says-founder/a/d-id/758501
৮। SLAVOJ ŽIŽEK: My Dream of Wuhan, অনুবাদ: কাজী তাফসিন
৯। https://www.prothomalo.com/economy/article/1437696/

লেখক: মুহম্মদ মাজ্‌হারুল ইসলাম।
প্রভাষক, কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগ,
রবীন্দ্র মৈত্রী বিশ্ববিদ্যালয়।