লিখেছেনঃ রাজেশ পাল
তৌকির আহমেদ এর “অজ্ঞাতনামা” ছবিটি নিয়ে লিখতে বসলাম।সাম্প্রতিক সময়ে অনলাইনে আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছে ছবিটি। আর সেই আগ্রহ থেকেই দেখলাম ছবিটি। একেবারে ক্লাসিক মাস্টারপিস টাইপের কিছু না হলেও ছবিটি আমার ভালো লেগেছে নিঃসন্দেহে। আর সেই ভালোলাগার কিছুটা অংশীদার করার সুপ্ত বাসনা থেকেই এই লেখাটি।
প্রতি বছর এদেশ থেকে হাজার হাজার মানুষ পাড়ি দিচ্ছেন মধ্যপ্রাচ্যে জীবিকার তাগিদে। তাদের পাঠানো রেমিটেন্স পরিণত হয়ে উঠেছে আজ এদেশের বৈদেশিক মূদ্রা অর্জনের অন্যতম উতসে।দেশীয় বাজারে চাকরি নামক সোনার হরিণটি ক্রমশঃ দূষ্প্রাপ্য হয়ে ওঠায় ক্রামশঃ বেড়ে চলেছে এই প্রবাসমূখী কাফেলা। নিজের শেষ সম্বল ভিটেমাটি, হালের বলদটা পর্যন্ত বিক্রি করে দক্ষ ও অদক্ষ বেকার তরুণরা পাড়ি জমাচ্ছেন প্রবাসে , বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে। কিন্তু সবাই কি পাচ্ছে সেই সোনার হরিণের সন্ধান? অবশ্যই না। অন্যান্য ক্ষেত্রের মতো এখানেও এসে জড়ো হয়েছে মধ্যস্বত্বভোগী প্রতারকের দল।যাদের খপ্পড়ে পড়ে সহায়সম্বলহীন নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে প্রান্তিক মানুষেরা। আর সেই মানুষদের গল্প নিয়েই তৈরী তৌকির আহমেদ এর “অজ্ঞাতনামা”
প্রথমে তাকাই একবার চলচ্চিত্রের কাহিনীর দিকে, নিতান্ত সাধারণ গ্রামবাসী কেফায়েত প্রামাণিকের ছেলে আছিরুদ্দিন প্রামাণিক থাকে মধ্যপ্রাচ্যে। গ্রামে রয়েছে তার বৃদ্ধ পিতা মাতা,স্ত্রী আর সন্তান।কিন্তু কিছুদিন ধরে তার খবর পাচ্ছেনা পরিবার। এ নিয়ে দুশিন্তায় সবাই।আর পরিবারের বাইরে দুশ্চিন্তাগ্রস্থ বিউটি নামের একটি মেয়ে।বিউটি অকাল বিধবা। বিয়ের বছর না ঘুরতেই মারা যায় তার স্বামী।রেখে যায় একটি সন্তান। এখন তার জীবন কাটে পরের রক্ষিতা হয়ে। কিন্তু এই জীবন থেকে মুক্তি চায় সে।চায় মধ্যপ্রাচ্যে পাড়ি জমাতে।আর সেই জন্যই তার দুশ্চিন্তা আছিরকে নিয়ে।কারণ আছিরের বউ সাজিয়ে তাকে মধ্যপ্রাচ্য পাঠানোর স্বপ্ন দেখিয়েছে রমজান দালাল।বিনিময়ে রমজানের রক্ষিতা হয়ে জীবন কাটে তার।তবে শুধু রমজান নয়, তার অনুগ্রহপ্রার্থী আছে আরো অনেকেই। স্থানীয় থানার দারোগা ফরহাদ তাদেরই একজন। ফরহাদ যদিও মুখে সবসময়ই বলে বিউটিকে আসলে ভালোবাসে সে,দেখায় ঘর বাধার স্বপ্ন, কিন্তু বিউটি তাতে বিশ্বাস করেনা মোটেই।জীবনে বারেবারে প্রতারণার শিকার হতে হতে পুরুষজাতির উপরে সব আস্থা হারিয়ে ফেলেছে পুরোপুরি।এসব মিস্টি কথায় তার মন তাই আর ভেজেনা এখন।
এমন সময়ে ঢাকা থেকে কল আসে স্থানীয় থানার ওসি সাহেবের কাছে যে আজমান প্রবাসী শেখ আব্দুল হাকিমের ছেলে শেখ আব্দুল ওয়াহাব একটি দূর্ঘটনায় মারা গেছেন। একদিন পরে তার লাশ আসবে ঢাকা বিমান বন্দরে।সেখান থেকে তা রিসিভ করতে হবে পরিবারের সদস্যদের। কাজেই সংবাদ দিতে হবে রাতের মধ্যেই। ঝড় বাদল উপেক্ষা করে ওসি সাহেব যান সেই গ্রামে গভীর রাতেই। স্থানীয় মেম্বারের সহায়তায় খুঁজে নেন শেখ আব্দুল হাকিমের বাড়ী। দেন দুঃসংবাদটি।সন্তানের মৃত্যু সংবাদে প্রচণ্ড ভেঙে পড়েন হাকিম সাহেব। কিন্তু ৩ দিন আগে মৃত্যুর সংবাদ শুনে তিনি প্রতিবাদ করেন সংবাদের। কেননা তার আগের রাতেই তার ছেলে ওহাবের সাথে কথা হয়েছে তার। আর ওহাব আগে আজমান থাকলেও এখন থাকেন ইতালীতে।কাজেই মৃত ব্যক্তি আব্দুল ওহাব হতেই পারেনা।ওসি সাহেব নিজেও পরে যান সংশয়ে। সংশয় কেটে যায় মোবাইলে আব্দুল ওহাবের সাথে কথা বলার পরে। তিনি জানান যে, তার আগের পাসপোর্টটি ইতালী আসার আগে রমজান দালাল নিজের কাছে রেখে দেয়।রমজানকে আনা হলে, প্রথমে সে অস্বীকার করলেও পরে স্বীকার করে যে সে এই পাসপপোর্টটি ত্রিশ হাজার টাকার বিনিময়ে কেয়াফত প্রামাণিকের ছেলে আছিরুদ্দিন প্রামাণিকের কাছে বিক্রি করেছে। এরপর অনেক নাটকীয়তার পরে লাশ রিসিভ করা হয় ঢাকা বিমানবন্দর থেকে। কিন্তু আছিরুদ্দিন নয়, আদুল ওহাব পরিচয়ে। লাশ দাফন করতে গিয়ে ঘটনা মোড় নেয় অন্যদিকে। দেখা যায় লাশটি খতনাবিহীন কোন অমুসলিম ভদ্রলোকের। আবারো লাশ নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকায়। কিন্তু প্রবাসী কল্যাণ, পররাষ্ট্র, স্বররাস্ট্র, স্বাস্থ্য কোন মন্ত্রণালয় রাজী হলোনা লাশটি গ্রহণ করতে।এরই মাঝে খবর আসে সেদিন আজমানে দূর্ঘটনায় মোট ৬ জন নিহত হয়েছিলেন। যাদের প্রতিটি লাশেরই একই অবস্থা। এদিকে লাশ পচে শুরু হয় দূর্গন্ধ।চরম বেকায়দায় পরে সবাই যখন দিশেহারা অবস্থায়, ঠিক তখন আছিরুদ্দিনের পিতা কেফায়েতউদ্দিন প্রামাণিক বলে ওঠেন, এই লাশ তিনিই নিয়ে যাবেন গ্রামের বাড়ীতে, দাফন করবেন আছিরুদ্দিনের পরিচয়ে।হিন্দু,মুসলিম,বৌদ্ধ খ্রিস্টান যাই হউক না কেন, দাফন পাওয়ার অধিকার তো সকলেরই থাকে। ফিরতি পথে যবনিকাপাত হয় ছবিটির।
কাহিনীর দিক থেকে বিচার করলে অজ্ঞাতনামা ছবিটিতে ছায়া পাওয়া যায় মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মিত সেলিম আল দীনের চিত্রনাট্যে মোরশেদুল ইসলামের “ চাকা” ছবিটির। সেই ছবিতেও দেখা গিয়েছিলো একটি অজ্ঞাতনামা লাশ নিয়ে এক গাড়োয়ান, তার সহকারী আর দুইটি ষাড়ের অন্তহীন যাত্রার কাহিনী।সেদিক দিয়ে বিচার করলে এটিকে মৌলিক চিত্রনাট্য বলা যায়না মোটেই।শুধু বদলে গিয়েছে প্রেক্ষাপট। একটি স্বাধীনতা সংগ্রামের আরেকটি প্রান্তিক মানুষের বেঁচে থাকার সংগ্রামের। আর দুটি ক্ষেত্রেই শেষে ঠাই পেয়েছে একটি অজ্ঞাতনামা লাশকে ঘিরে জীবিত মানুষদের মানবিকতার পরিচয়।
অজ্ঞাতনামা চলচ্চিত্রের একটি ক্ষুদ্র বিষয় আমার মনে দাগ কেটেছে ভীষণভাবেই। সেটি হলো সন্তানের প্রতি মমত্ব। ছবিতে একাধিকবার দেখানো হয়েছে বিষয়টি। যেমন একটি দৃশ্যে দেখা যায় ওসি সাহেব বসেছেন আব্দুল হাকিমের বাড়ীতে ভাত খেতে। আব্দুল হাকিম সাহেব একপর্যায়ে ওসি সাহেবকে জিজ্ঞেস করেন তার ছেলেমেয়ে কয়টি? উত্তরে ওসি সাহেব বলেন তিনি নিঃসন্তান।তখন আব্দুল হাকিম সাহেব বলেন, “আপনার সন্তান হারানোর ভয় নেই”। একই রকম আকুলতা ফুটে ওঠে বিউটি যখন তার সন্তানকে কাছে নিয়ে আদর করে পরম মমতায়। আর পুরো ছবি জুড়েই আছিরুদ্দিনের পিতামাতার আহাজারি তাড়া করে ফেরে দর্শককে।
এই ছবির সর্বশেষ দৃশ্যে চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তোলা হয় বাঙালীর আবহমানকালের অসম্প্রদায়িক চেতনাকে। লাশটি যখন পচে দূর্গন্ধ ছড়ান শুরু করছিলো , যখন অন্যেরা বলাবলি করছিলো লাশটি ফেলে পালিয়ে যাওয়ার কথা, তখন কেফায়েত প্রামাণিক বলে উঠেন, লাশটি তিনিই দাফন করবেন আছিরুদ্দিনের পরিচয়ে।লাশটি যে একজন অমুসলিমের লাশ তা জানা ছিলো উপস্থিত সকলেরই। কিন্তু কেফায়েত প্রামাণিকের মানবধর্মের কাছে ভেঙে পড়ে সামাজিক বিধিনিষেধের তাসের ঘর। “সবার উপরে যে মানুষ সত্য” সে জয়গান আবারো গেয়ে ওঠেন নিরক্ষর প্রান্তিক মানুষ কেফায়েত প্রামাণিক।
ছবিটিতে শহীদুজ্জামান সেলিম, ফজলুর রহমান বাবু, শতাব্দী ওয়াদুদের অভিনয় ছিলো অত্যন্ত সাবলীল ও প্রাণবন্ত। সন্তান হারানোর সংবাদ পাওয়ার পরে ফজলুর রহমান বাবুর অভিব্যক্তি রীতিমতো স্তম্ভিত করে দেয় সকলকে। নিঃসন্দেহে বাবুর জীবনের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কাজ এটি। মোশাররফ করিমের অভিনয় ভালো হলেও তিনি তাঁর গতানুগতিক রূপ থেকে বেরিয়ে আসতে পারেননি। ছবিতে একমাত্র অভিনয় দূর্বল মনে হয়েছে নিপুণের।বিউটি চরিত্রটি চাইলে আরো প্রাঞ্জল্ভাবেই হয়তো ফুটিয়ে তোলা সম্ভব হতো।
ছবির কারিগরি দিকও যথেষ্ঠ মানসম্পন্নই মনে হয়েছে।তবে সূচনা সঙ্গীতের মতো সমাপ্তি সংগীত তেমন একটা হৃদয়গ্রাহী মনে হয়নি। আর পোশাক পরিকল্পনাও ছিলো এক কথায় চমৎকার। প্রান্তিক মানুষের দৈনন্দিন জীবনের বেশভূষণ বাস্তবভাবেই উঠে এসেছে পোশাকপরিকল্পনায়।
পরিশেষে শুধু এক কথায় বলি, অজ্ঞাতনামা একটি পরিচ্ছন্ন ছবি, প্রান্তিক জনগণের জীবন নিয়ে ছবি, বাজারচলতি ছবির ভিড়ে একটি ব্যতিক্রমী ভালো ছবি।
এ ক ম ত। দুটি ছবিই দেখা। আমার এক চলচ্চিত্রকার বন্ধুরও একই মত, “অজ্ঞাতনামা” গল্পটি বোধহয় মৌলিক নয়।
তৌকিরের ছবিটির প্রধান চরিত্রের অভিনেতা-অভিনেত্রীরা প্রত্যেকেই তারকা। এরপরেও কোথাও কোথাও খুব চড়া অভিনয় বলে মনে হয়েছে।
কিন্তু বেলা শেষে, তৌকির আহমেদই ব্যবসা সফল। আর “চাকা” অনেক সুনাম কুড়ালেও সে অর্থে ততোটা নয়।
আমি উপড়ে নাস্তিকের ধর্মকথা-র মন্তব্যের সাথে একমত। তবে এটুকু যোগ করতে চাই যে, একেবারে শেষের দিকের শেষ টুকুতে তাড়াহুড়োও হয়েছে ব্যাপক। তবে কাহিনী নির্বাচন এবং এর স্বকীয়তা আকর্ষনীয়, অন্ততঃ চিন্তা মননে অনেক অনেক উঁচুতে।
আমি এখনো নাই পরে মন্তব্য করবো
রিভিউটা পড়ে কোথায় লেখককে চোখ বন্ধ করে বাহ বাহ দেবো, প্রথমেই নিয়ে এলাম একটা অভিযোগ। একজন আইনের মানুষ হয়ে সম্পূর্ণ কাহিনি বলে দেয়াটা কেমন হলো? এমনিতেই যে ছবি সাম্প্রতিক সময়ের সব চেয়ে বানিজ্যিক সাফল্য পাওয়ার কথা তা বোধ হয় পায়নি, এটা দুঃখ জনক। এর মধ্যে ঘটনা বলে দিলে অনেকেই হলে গিয়ে দেখার আগ্রহ হারিয়ে ফেলতে পারে। ‘আয়নাবাজি’ নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠেছিল মিডিয়া ফেইসবুকে ছবি রিলিজ হওয়ার আগে থেকেই। হয়তো ইচ্ছে করেই কিছু স্পর্ষকাতর ইস্যু ছড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। এর মার্কেটিং আর প্রচারটা হয়েছিল ব্যাপকভাবে। “অজ্ঞাতনামা” য় সেটা ঠিক সেভাবে হয়নি, উপরন্তু ইউটিউবে ‘আয়নাবাজি’র মতো শুধু ট্রেইলার নয় সম্পূর্ণ ছবিটাই পাওয়া গেল প্রায় সাথে সাথেই। অনেকেই দুটো ছবির তুলনামূলক বিশ্লেষণ করেছেন। ‘আয়নাবাজি’র ‘মুসলমানদের পরিচালক’ আর নতুন নায়িকার ‘নতুন চুম্বন’ এই প্রচারটা ছবিকে অনেক এগিয়ে দিয়েছিল বলে আমি মনে করি। তুলনা করতে হলে তৌকির আহমেদ এর “অজ্ঞাতনামা”র তুলনা সত্যজিৎ রায়ের ছবির সাথে করা যায়। সত্যি বলছি বিউটি চরিত্রে নিপুণের অভিনয় দেখে আমার ‘অশণী সংকেত’ এর কথা মনে পড়েছিল। এই ছবিতে নিপুণের তেমন একটা রোলও ছিলনা কিন্তু তাতেই আমার কাছে ‘অশণী সংকেত’ এর ববিতা মনে হয়েছে। মোশাররফের কথা যা বলেছেন তাতে আমি একমত তবে ফজলুর রহমান বাবুর বেলা কিছুটা কার্পণ্য করেছেন। শুধু এই ছবিটির অভিনয়ের জন্যে ফজলুর রহমানকে আমি বাংলাদেশের উত্তম কুমার বলতে রাজি। এমন বাস্তব অভিনয় এর আগে কোনোদিন দেখিইনি। ছবিটিতে এয়ারপোর্টের অফিসার আর পুলিশের ঘুষ নেয়ার চিত্র আমার কাছে অবিশ্বাস্য হলেও এটাই যে বাস্তবতা তা দারূণভাবে ফুটিয়ে উঠেছে। সত্যজিৎ রায়ের ছবিতে যেমন শেষের চমকটা আগে থেকেই অনুমান করা মুশকিল এখানে তৌকির আহমেদও সেই কাজটা ভালভাবেই করতে পেরেছেন। এখানেই একজন স্বার্থক পরিচালকের পরিচয় মেলে।
আপনার অতি সুন্দর রিভিউটিকে সমালোচনার পাথরে ঘষে মেজে দিলাম আপনার কাছ থেকে আরো সুন্দর সুলেখা রিভিউ পাওয়ার আশায়। লেখাটি শেয়ার করার জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ।
ভাই, এটা একটু বেশিই হয়ে গেল 😀
মেকিং এর দিক থেকে দেখলে- সত্যজিৎ দূরের কথা, তারেক মাসুদ পর্যায়ে পৌছতেও তৌকিরের আরো মেলা পথ পাড়ি দিতে হবে … অজ্ঞাতনামা তার অসাধারণ টপিকে অসাধারণ আর অদ্ভুত মানবিক একটা গল্প বলেছে- সেটা আমাদের খুব করে টেনেছে … বাংলাদেশে এ যাবতকালে এইরকম সিনেমা- নাটক- টেলিফিল্ম আমিও দেখিনি বলে এর পক্ষে দাড়াই- সবাইকে সিনেমাটা দেখতে বলি … কিন্তু, মেকিং এর দিক দিয়ে দেখলে একে খুবই সাদামাটাই বলতে হবে … একমাত্র বাবু ছাড়া- আর কারো অভিনয়ই সিনেমার অভিনয় হয়নি এখানে- এসবই নাটক-টেলিফিল্মের অভিনয়- পুলিশ- দালাল- ওদের অভিনয় তো নাটকের অভিনয়ও হয়নি- মঞ্চনাটকের অভিনয়ের সাথে যায় … সংলাপও খুবই সাদামাটা … ক্যামেরার কাজ ছন্নছাড়া, কমপ্লিট সিনেমার জন্যে এগুলো খুব জরুরি … একটা টেলিফিল্মের মত কাজ হয়েছে বলা যায় …
তবে এরকম সাদামাটা মেকিং হলেও আমি এই সিনেমাকে ভীষণভাবে আপহোল্ড করতে চাই- এর অসাধারণ- খুব প্রয়োজনীয় কাহিনীটির জন্যেই। এরকম প্রান্তিক মানুষদের নিয়ে সিনেমা করার ইফোর্টটিকে দারুন শ্রদ্ধা করি। সেজন্যেই- মেকিং এর নানা ত্রুটি- দুর্বলতাকে অগ্রাহ্য করেই এর পক্ষে দাড়াই … আপনি সত্যজিতের সাথে তুলনা করলেন দেখে- এইসব নিয়ে কথা বললাম …
আপনার উত্তম কুমারের প্রতি দুর্বলতা আছে মনে হয়। বাবুর অভিনয়ের সাথে উত্তম কুমারের কোন ভাল অভিনয়ের তুলনা আমি করতে পারিনা। বাবুর অভিনয়, তার মুখের অভিব্যক্তি আমি হা করে তাকিয়ে দেখেছি। শেষ দৃশ্যে বাবু নাতি সহ ঘর থেকে দূরে হেটে যাচ্ছে। বয়সের ভারে বাবুর দেহে নুব্জ হয়ে গেছে। নাতির পেছনে হেটে যাচ্ছে। এই দৃশ্যটি খুবই ছোট। বাবুর এই অংশটা কাছে থেকে দেখার ক্ষুধা থেকে গেলো।
বাবুর শেষের সংলাপটার উপর কোন সংলাপ হয়না – সে যেই হউক মানুষ তো! আমার বন্ধক দেওয়া ভিটাতেই মাটি দেবো।
তৌকির ইজ গ্রেট। হি ইস মাই নমস্য।
মুক্তমনায় স্বাগতম।
ইউটিউবে পাইরেটেড কপির কল্যাণে অনেকে দেখতে পাওয়ার পরে অজ্ঞাতনামা চলচ্চিত্রটি নিয়ে ফেসবুক- ব্লগে অনেক কথা হচ্ছে, এটা ইতিবাচক। এরকম একটি মানবিক- রাজনৈতিক গল্পের চলচ্চিত্রটি সিনেমাহলে চলেনি- সেটি দুঃখজনক, আশা করি- এখন যে আলোচনা শুরু হয়েছে- তাতে সিনেমাহলগুলোতে আবার অজ্ঞাতনামা আসবে এবং আগের চাইতে ভালো রকম দর্শক হবে।
আপনার রিভিউ এর ব্যাপারে ছোট করে একটা সমালোচনা করি। সেটা হচ্ছে- আপনার রিভিউ এ আপনি কাহিনীর অনেকখানি বলে দিয়েছেন। কোন চলচ্চিত্র বা গল্প- উপন্যাস এর (বিশেষ করে যেটি বেশ নতুন এবং তখনও বাজার কাটতি আছে) কাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ অংশ, নানা বাক- এসব কোন রিভিউ এ বলে দেয়া হলে- অনেক সময়ে যে দর্শক বা পাঠক সিনেমাটি দেখেন নি বা বইটি পড়েননি- তিনি অনাগ্রহী হতে পারেন কিংবা তার জন্যে ঐ সিনেমা বা বইটি সমান আগ্রহের নাও থাকতে পারে কিংবা মূল কাহিনী জেনে যাবার পরে ঐ সিনেমা বা বই দেখতে বা পড়তে গেলে সেই আনন্দ বা মজা তিনি নাও পেতে পারেন। রিভিউ এর ক্ষেত্রে স্পয়লার এলার্ট কথাটি খুব গুরুত্বপূর্ণ (Spoiler alert means, telling some important part or turning point of the Movies or TV Shows before you actually see them. If you already know the main part, you will lose your interest.) … আপনার এই রিভিউতে আপনি এ ব্যাপারটি কিছুটা এড়িয়ে গিয়েছেন …
আপনার মতামতের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
………………………………………………………………
“যুক্তির আকাশে উড়ুক মুক্তির বারতা”
ভালো লিখেছেন রাজেস দা। গতকাল রাতে দেখলাম “অজ্ঞাতনামা”, আমার কাছেও ভালো লেগেছে সিনেমাটা। ছবিটাতে বাস্তবতা ফুটে উঠেছে খুব প্রাকৃতিক ভাবে। আসলে আয়নাবাজি মনের ভিতর যে প্রত্যাশার জন্ম দিয়েছিল, অজ্ঞাতনামা সেটা অনেকটা পুরন করেছে, এইজন্য হয়তো একটু বেশি ভালো লেগছে।
আপনার মতামতের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
………………………………………………………………
“যুক্তির আকাশে উড়ুক মুক্তির বারতা”
মুক্তমনায় স্বাগতম রাজেশ পাল।
রিভিউ ভালো লেগেছে। আপনার আরো লেখা পেলে আরো ভালো লাগবে। আইন নিয়ে লেখা পেলে তো কথাই নেই 🙂
পরবর্তী পোষ্টের অপেক্ষায় থাকলাম। ভালো থাকুন।
আপনার মতামতের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
………………………………………………………………
“যুক্তির আকাশে উড়ুক মুক্তির বারতা”
অজ্ঞাতনামা ছবিটি তৌকীর আহমেদের নবীনতম পরিবেশনা, যা দুর্ভাগ্যজনকভাবে হলে তেমন চলেনি। আমরা ভাল চলচ্চিত্র চাইলে দর্শকের হলমুখি হওয়ার বিকল্প যেমন নেই, তেমনি সাধারণ জনতার সচেতনতাও জরুরি। একটি মানবিক কাহিনি তুলে ধরার জন্যে অবশ্যই তৌকির আহমেদ ধন্যবাদ পাবেন। এবং, চলচ্চিত্রে তিনি যে মেধা ও অধ্যবসায় নিয়ে এগিয়ে এসেছেন, তার কদর হোক, তিনিও উন্নত করুন এই শিল্প, এই কামনা রইল। রাজেশ পালকে মুক্তমনায় স্বাগত। আশা করি, তিনি মুক্তমনায় লেখালেখির ধারা বজায় রাখবেন নিয়মিতভাবে।
আপনার মতামতের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
………………………………………………………………
“যুক্তির আকাশে উড়ুক মুক্তির বারতা”