বৈবাহিক জীবনের একঘেঁয়েমি-মনোগ্যামিশ সম্পর্ক
(১)
ধরুন আপনি জানলেন, প্লেন ক্র্যাশের সম্ভাবনা ৫০%। তাহলে কি আপনি প্লেনে চড়বেন?
কিন্ত আপনি বিয়ে করবেন-এটা জেনেও বর্তমানে যেকোন বিবাহে সাফল্যের চেয়ে ব্যর্থতার সম্ভাবনাই বেশী। আর সব ব্যর্থতাই যে ডীভোর্সে গড়াচ্ছে- তাও না। অধিকাংশ ব্যর্থ বিবাহই রিফিউজি নিচ্ছে সেক্সলেস ম্যারেজ-অথবা ম্যারেজ অব কনভেনিয়েন্সে। শুধু ছেলেমেয়েকে মানুষ করার কারনে স্বামী স্ত্রী হিসাবে অভিনয় করে টিকে আছে অসংখ্য দম্পতি।
এই অসুখ নতুন না। নেনা ওনিল এবং জর্জ ওনিল ১৯৭২ সালে তাদের বেস্ট সেলার “ওপেন ম্যারেজ” বইতে, বিবাহ নামক অসুখের ব্যবচ্ছেদ করেন আদ্যপান্ত। তারা সিদ্ধান্তে আসেন-বিয়েটা সমস্যা না। মূল সমস্যা এই মনোগ্যামাস ম্যারেজের মনোটনাস কমিটমেন্টে। উনাদের উপস্থাপনা ছিল এই যে বিবাহ বহির্ভুত যৌন জীবন মোটেও বৈবাহিক জীবনের অন্তরায় না। বরং স্বামী স্ত্রী উভয়েই যদি সজ্ঞানে তাদের পার্টনারদের নিজস্ব স্পেস দেন-তাহলে বরং অনেক বিয়ে বেঁচে যায়। এই স্পেস দেওয়া মানে, মেনে নেওয়া যে বৈবাহিক একঘেঁয়েমি কাটাতে তাদের পার্টনাররা “লিমিটেড” পরকিয়াতে লিপ্ত হবেন-কিন্ত সেটা তারা করবেন সংসারের প্রতি কোন অবহেলা না করেই!
তবে ওনিল দম্পতির ওপেন ম্যারেজের ধারনা ধোপে টেকে নি-অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভুল বুঝে ওপেন ম্যারেজ বলতে লোকেরা বুঝতে থাকে, এর মানে স্বামী স্ত্রী একজন থাকবে বটে-কিন্ত সেটা নেহাত সামাজিক কমিটমেন্ট। সেক্সের ক্ষেত্রে সম্পূর্ন নন-কমিটেড লাইফ স্টাইল। খুল্লাম খুল্লা পরকীয়া।
ওপেন ম্যারেজেরও অনেক শ্রেনীবিভাগ সম্ভব। যেমন সুইঙ্গার লাইফ স্টাইল। যেক্ষেত্রে স্বামী এবং স্ত্রী দুজনেই সম্মতি ক্রমে পার্টনার পাল্টায় যৌন উত্তেজনার খোঁজে। আরেক ধরনের ওপেন ম্যারেজে, স্বামী এবং স্ত্রী দুজনেই জানেন, তাদের পার্টনারের একাধিক যৌন সঙ্গী বা সঙ্গীনী আছেন-কিন্ত তারা সেই নিয়ে মাথা ঘামান না। দুজনেই দুজনকে স্পেস দিতে পছন্দ করেন।
প্রশ্ন উঠবে যৌন উত্তেজনা বা যৌনতার মাধ্যমেই যখন সুখ খোঁজা হচ্ছে -তাহলে একসাথেই বা থাকা কেন? এর মূল কারন অবশ্যই সন্তান পালন। ছেলেমেয়ে মানুষ করার জন্য-কমিটেড পার্টনারশিপ দরকার। কিন্ত তার মানে কি যৌনতার ক্ষেত্রেও কমিটটেড পার্টনার হয়ে থাকতে হবে? ইমোশোনাল কমিটমেন্ট এবং সেক্সুয়াল কমিটমেন্ট কি একই সূত্রে বাঁধা?
(২)
ওপেন ম্যারেজের ধারনা আমেরিকাতে গত অর্ধ দশক ধরে চললেও, তা মোটেও ব্যর্থ ক্লান্ত বৈবাহিক জীবনের সমাধান হয়ে উঠতে পারে নি। আমেরিকাতে খুব বেশী হলে ১-৫% নরনারী কোন না কোন সময়ে ওপেন ম্যারেজে ছিলেন। ওপেন ম্যারজে তাদের যৌন জীবন অনেক বেশী সুখী ছিল-তাই নিয়ে দ্বিমত নেই। কিন্ত সমস্যা এই যে -জেলাসি বা ঈর্ষার চক্করে প্রচুর পারিবারিক সমস্যা তৈরী হয়েছে-যার পরিণতি ডিভোর্স।
এর সমাধানে সেক্সোলজিস্ট ড্যান স্যাভেজ মনোগ্যামিশ ম্যারেজ বলে একটি নতুন ধারনা দেন ২০১০ সালে। উনি একজন সেক্সোলজিস্ট এবং সেই সূত্রে দেখেন যে অনেক ক্ষেত্রেই সাইক্রিয়াটিস্টরা একটু আধটু ম্যারিটাল ইনফিডালিটি বা পরকিয়া তার পেশেন্টদের জন্য রেকোমেন্ড করেন । ক্লিনিক্যাল সাইক্রিয়াটিস্ট মহলে, বহুদিন থেকেই কনসেনসাস এই যে আসল সমস্যাটা মনে। দেহে অতটা না। অর্থাৎ একজন নারীর যে একাধিক যৌনসঙ্গী দরকার-সেই চাহিদাটা নেহাৎ ই মানসিক। অতটা দৈহিক না। সুতরাং বিবাহ বর্হিভুত একটু আধটু ফ্লার্টিং, প্রেমালাপ-বিয়ে টিকিয়ে রাখার জন্যই দরকার। কিন্ত দৈহিক সম্পর্কে জড়ালে, তা অবশ্যই সুখী যৌন জীবন দেবে -কিন্ত ডিভোর্সের চান্স ও বাড়বে যা ওপেন ম্যারেজের ক্ষেত্রে প্রমানিত।
মনোগ্যামিশ ব্যপারটা এখন অনেক ম্যারেজ কাউন্সিলর রেকোমেন্ড করছেন দম্পতিদের। যারা সেক্সলেস ম্যারেজ ওই টাইপের ঝুলে থাকা সংসার ধর্মের বলদ হয়ে টিকে আছেন কোন রকমে।
(৩)
এবার আসল সমস্যাতে আসা যাক। বিয়ে করাটা কি প্রাসঙ্গিক ? রাষ্ট্রের দরকার সন্তান। তার জন্যে দরকার বিবাহের। সেই কারনেই সন্তান মানুষের জন্য বাবা-মাকে একসাথে থাকতে বাধ্য করে সমাজ। সেটাকে বলে বিবাহ। ফ্রান্স বা আমেরিকাতেও একসাথে থাকা যেকোন দম্পতিকে বৈবাহিক সূত্রে আবদ্ধ দম্পতির সমান বলেই গণ্য করা হয়। সন্তান মানুষ করা ছাড়া, দুজন নারী পুরুষের একসাথে থাকার কোন দরকার নেই। সিঙ্গল থাকলেই বরং তাদের যৌন জীবন অনেক বেশী সুখের হবে।
কিন্ত সন্তান মানুষ করার জন্য-এই বাবা-মায়ের কনসেপ্টটাই বা এলো কোত্থেকে? রাষ্ট্র, বা সমাজ বা পেশাদার সংস্থার মাধ্যমে কেন সন্তানের পালন পোষন সম্ভব না?
ইনফ্যাক্ট এই চেষ্টা প্রথম হয় সোভিয়েত ইউনিউয়ানে-যার প্রথম আইডিয়া ছিল লেনিনের। লেনিন মনে করতেন, আইডিয়াল কমিউনিস্ট স্টেট এবং নারীর সমানাধিকারের জন্য “কমিউনিটি পেরেন্টহুড” জরুরী। ১৯১৭-২২ এর মধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়ানে অনাধ ছেলে মেয়ের সংখ্যা ছিল ৭০ লক্ষ। এর একটা কারন অবশ্যই গৃহযুদ্ধ -অন্যকারন এই যে নভেম্বর বিপ্লবের আগুনে বিবাহ নামক পুরুষতান্ত্রিক প্রথাকেও পোড়ানো হয়। এখন বিয়েকে উড়িয়ে দেওয়া সহজ-কিন্ত যৌন কামনাকে ত আর ওই ভাবে রিভোলোউশনারী হ্যান্ডল মেরে হস্তমৈথুনে সীমাবদ্ধ রাখা যায় না। ফলে ওই পিরিয়ডে প্রায় কুড়ি লক্ষ পরিতক্ত্য সন্তানের জন্ম হয়েছে কুমারী মায়ের গর্ভে-কারন নতুন বিপ্লবী রাষ্ট্র বিয়েটাই তুলে দিতে চাইছিল। এই সকল অনাথ সন্তানদের বলা হত Besprizornye বা বাস্টার্ড শব্দটির রাশিয়ান।
লেনিন এদের দ্বায়িত্ব নিতে চাইলেন-ফলে তৈরী হয় পৃথিবীর প্রথম কমিউনিটি অরফানেজ। কিন্ত প্রতিটা কমিউনিস্ট দেশে যা হয়-এখানেও তাই হল। প্রায় ৫ লাখ শিশু সন্তান এইসব অর্ফানেজে প্রথম দু বছরে মারা যায়। কারন না ছিল রিসোর্স-না ছিল কর্মীদের সদিচ্ছা। এর মধ্যে স্টালিন ক্ষমতায় এসেছেন। উনি লেনিনের মত তাত্ত্বিক নেতা ছিলেন না । উনার পা ছিল মাটিতে। ফলে এইসব কমিউনিটি অরফানেজ বাতিল করে এই সব সন্তানদের দত্তক নিতে বাধ্য করেন স্টালিন। শুধু তাই না-১৯৩৭ সালের মধ্যে সোভিয়েত ইউনিয়ানে বিবাহ রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক হয়-আবর্শন করতে গেলে স্পেশাল পারমিশন লাগত-এবং ডিভোর্স আইন ও কঠোর করা হয়। মোদ্দা কথা লেনিনের কমিউনিটি ভিত্তিক বিবাহ এবং সন্তান পালনের বৈপ্লবিক কর্মসূচীকে কবরে পাঠান স্টালিন যেহেতু তা অসংখ্য শিশু মৃত্যুর কারনে, রাষ্ট্রের ভিত টলিয়ে দিচ্ছিল।
এর পরে আর কোন রাষ্ট্র কমিউনিটি পারেন্টিং নিয়ে পরীক্ষা চালায় নি। শুধু চালিয়েছিলেন গুরু রজনীশ-তার ওরেগাঁও আশ্রমে। যেখানে প্রায় ৭০০ শিশু, ওশো কমিউনিটিতে মানুষ হত। যাতে তাদের বাবা-মারা মুক্ত যৌন জীবন জাপন করতে পারে। কিন্ত সেখানেও ঈর্ষার কারনে, না তাদের ওপেন ম্যারেজ সিস্টেম সফল, না সফল হয়েছে কমিউনিটি পারেন্টিং।
ফলে আমরা যে তিমিরে -সেখানেই। মনোগ্যামিশ ম্যারেজই একমাত্র ভরসা!
যার জন্য যেটা কাজে দেবে তার সেটাই ফলো করা উচিৎ। সবারইকে একই মেথড ফলো করতে হবে এমন কোন কথা নেই।
কোন একটি নিয়ম ভেঙে সেই নিয়মের থেকে ভলো কিছু প্রবর্তন করতে না পারলে পুরনোটিই ভালো। সুতরাং কোন নিয়ম ভাঙার আগে সাধারণ নিয়ম হচ্ছে, আগের নিয়মের চেয়ে ভালো কিছু প্রস্তুত করা এবং শুধু ভালো মনে হলেই হবে না সেটি একটি নির্দ্দিষ্ট সমাজে ওয়ার্কেবল সে বিষয়টিও নিশ্চিত হওয়া।
নারী-পুরুষের সম্পর্ক কেমন হবে- এ নিয়ে বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে। প্লেটোর আদর্শ রাষ্ট্রের ’নারী-পুরুষ সম্পর্কের’ রুপরেখা থেকে জর্জ ও’নিলের ’ওপেন ম্যারিজ’, ’লিভ টুগেদার’ বা সাম্প্রতিক কালে আধুনিক চিকিৎসায় ’সরোগেটেড পার্টনার প্রেসক্রিপশন’- বহু কিছু।
টিএস ইলিয়টের দৃষ্টিতে ধর্ম থেকে সংস্কৃতির উদ্ভব। আমরা জানি ধর্মও নারী-পুরুষের সম্পর্কেও রূপরেখা দিয়েছে। প্রধান তিনটি ধর্ম- ইহুদি, খৃষ্টান ও ইসলামের দৃষ্টিতে, সৃষ্টির শুরুতেই সৃষ্টিকর্তা মানুষকে তার নিয়ম-নীতি সম্পর্কে অবহিত করেছেন। মানুষ যখনই সেসব নিয়ম-নীতি ভুলে বা বিকৃত করে ব্যপকভাবে অন্যকিছু চর্চ্চা করেছে সৃষ্টিকর্তা পরবর্তীতে তার প্রতিনিধিদের মাধ্যমে সে নিয়মনীতি- আবার নতুন করে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। সেখানে নারী পুরুষের সম্পর্কের রীতি-নীতি সম্পর্কেও বলা হয়েছে। সৃষ্টির শুরু থেকে এখন পর্যন্ত নারী-পুরুষ সম্পর্কেও ক্ষেত্রে ’বহু-রীতি’ চর্চ্চার চেষ্টা হলেও- ধর্মীয় সেই রীতিই এখন নারী-পুরুষের সম্পর্কেও ক্ষেত্রে ফ্রধান ধারা হিসাবে বহাল এবং এই রীতিকে শক্তভাবে চ্যালেঞ্জ করার মতো কোন রীতি মানুষ এ পর্যন্ত উদ্ভব করতে পারে নি।
তবে বেশীরভাগ মানুষের একটি স্বাভাবিক ’প্রবৃত্তি’ হচ্ছে তার আশেপাশের সবার থেকে যে কোনভাবে নিজেকে শ্রেষ্ঠ জ্ঞান করা। পার্টনারের ক্ষেত্রে তো বটেই। এটি যেমন ব্যবসায়ীক পার্টনারের ক্ষেত্রে তেমন বৈবাহিক বা সাংসারিক পার্টনারের ক্ষেত্রেও। ফলে আমরা যেমন ব্যবসায়ীক সমতার খুব ব্যলান্সড চুক্তি থাকা সত্বেও কোন কোন পার্টনারকে দেখি চুক্তির বিভিন্ন অপব্যাখ্যা কওে বা যে কোন উপায়েই হোক একজনকে আরেকজনের ওপর আধিপত্য করার কোশেশ করতে সাংসারিক বা সামাজিক জীবনেও তেমনটি সৃষ্টির আদিকাল থেকেই ঘটছে। আর এক্ষত্রে নারী যেহেতু এককভাবে ’নারী-পুরুষের শারিরিক সম্পর্কেও ’ফলাফল’ ’শারিরিকভাবে’ বহন করে ফলে এরই সুযোগ নিয়ে পুরুষ জাতিগতভাবে হাজার বছর ধরে ধর্মের এ সংক্রান্ত বিধিগুলোর অপব্যাখ্যা, ভুলব্যাখ্যা দিয়ে নারীর ওপর একধরনের শ্রেষ্ঠত্ব স্থাপন করেছে।
তবে গত এক শতাব্দিধরে বিজ্ঞানের অগ্রগতি ফলে ’নারী-পুরুষের শারিরিক সম্পর্কের ’ফলাফল’ সমাস্যা নিয়ন্ত্রনযোগ্য এবং নারীর শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের ব্যপক প্রসার হওয়ায় নারী এখন দ্রুত তার পশ্চাৎপদতা কাটিয়ে উঠছে।
আমার ব্যাক্তিগত পর্যবেক্ষন, নারীর বর্তমান এই ’ক্ষমতায়নকাল’ ’নারী-পুরুষের সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি ’ট্রানজিশনাল’ কাল। ফলে ’নারী-পুরুষ’ সম্পর্কে বর্তমানে নানা ধরণের সামাজিক সমস্যার উদ্ভব হচ্ছে। সমস্যাগুলো এই পরিবর্তন থেকে উদ্ভুত নারী ও পুরুষের জন্য মানষিক সমস্যা। কিন্তু এই পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে নারী ও পুরুষের সমতা যখন পরির্র্পূর্ণতা লাভ করবে- মানষিক দিক থেকে উভয়ে পরিপূর্ণভাবে বাস্তবতা মেনে নেবে তখন স্বাভাবিকভাবেই এই নারী-পুরুষ সম্পর্কে ধর্মীয় নীতির গন্ডি বা আমাদের চিরচেনা এই ট্রাডিশনাল রীতিই আরো কার্যকর ও গ্রহণযোগ্য হিসাবে সবার কাছেই প্রতিভাত হবে।
মনোগ্যামিশ আনলেন বিপ দা, কিন্তু এলাবরেশন কই? হাইপোথিসিসটা কি? শিরোনামে বলছেন “মনোগ্যামিশ?”, সমস্যা দেখালেন, মনোগ্যামিশ টার্মটা টুক করে আনলেন, চলে গেলেন আসল কথায়, যে যেহেতু সন্তান তাই বিয়ে টিকিয়ে রাখতে হবে, শেষেও টুক করে একটু। শুধু তিনটে সমস্যা কেন-কিভাবে এর ফাঁক গলে ৫/৬ লাইন মনোগ্যামিশ কোথায় হারিয়ে গেল!!!
শিরোনাম দেখে ভাবলাম আপনি পেশা পরিবর্তন করেছেন! এবার মুক্তমনার পাঠকদের কিছু একটা উপায় বাতলে দেবেন 🙂
স্বাভাবিক যুক্তিতে মনে হয় যতবেশী বংশবৃদ্ধি হবে, যতবেশী জীনগত বৈচিত্র আসবে, প্রজাতির টিকে থাকতে তা ততই সাহায্য করবে। সেই হিসাবে একাধিক যৌনসঙ্গী থাকাটা সুবিধাজনক। এমনকি হতে পারে যে বিবর্তনের পথ ধরে আমরা একাধিক সঙ্গীর সাথে সন্তান উৎপাদনের সুপ্ত নির্দেশনা বয়ে চলেছি, কিন্তু সামাজিক প্রয়োজনে আমাদের দাঁড় করানো মনোগ্যামিশ বিবাহ সে পথে কৃত্রিম বাঁধা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে? অন্য প্রাইমেটদের যৌন ব্যবহার থেকে কি কিছু ধারনা করা যায়?
আপনার লেখাটা পড়ে দুটি প্রশ্ন মাথায় এলো।
১) শুধু সন্তানদের কথা বিবেচনায় নিয়ে যদি নারী পুরুষ একত্রে থাকে তবে নিঃসন্তান বিবাহিত দম্পতিরা কী কারনে সারা জীবন একত্রে থাকেন?
২) একটি নির্দিষ্ট বয়সে যখন যৌন চাহিদার অবসান হবে তখন নারী পুরুষ কি একাকী জীবন যাপন করবেন? এ ক্ষেত্রে আপনি কি তাদের বৃদ্ধাশ্রমকেই একমাত্র সমাধান মনে করেন?
যদিও আপনার লেখাটি বড় পরিসর নিয়ে। আমি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে উত্তর আশা করছি।
লেখাটার জন্য ধন্যবাদ। মজার বিষয় হচ্ছে এই চিন্তাগুলো আমার মাথাতেও অনেকদিন ধরেই ঘুরপাক খাচ্ছে।
আসলে প্রাথমিক প্রেম ও দেহের মোহ কেটে যাবার পর বেশীরভাগ একগামী সম্পর্কই এক প্রলম্বিত বৈচিত্র্যহীন, নীরস ও নিছক সামাজিক সম্পর্কে পর্যবসিত হয়। তখন শুধু থাকে দায়িত্ব ও কর্তব্যের ভার বয়ে চলা।
অবশ্য সামাজিক ও ব্যক্তি সম্পর্কে তুলনামূলক আধুনিক ধারণা বহন করা দেশগুলোতেই যখন এসংক্রান্ত পরীক্ষানিরীক্ষা সহজে সফল হচ্ছে না সেখানে আমাদের দেশের মত ভীষণ রক্ষণশীল ও চিন্তাচেতনায় পশ্চাৎপদ সমাজে এ সম্বন্ধে কোন কিছু আশা করাও পন্ডশ্রম। যেখানে যেকোনো বিবাহবহির্ভূত শারীরিক সম্পর্কই সমাজ ও রাষ্ট্রের চোখে ভয়ংকর অপরাধ।
পুরুষের ব্যাপারটা এড়িয়ে যাওয়া হলো কেনো ?