লেখক: শাহাদাত এইচ হৃদয়

আমি এতোদিন বাঁধিনি সুর। কারণ, আমার বেসুরা কন্ঠ। আমি এতোদিন লিখবো লিখবো বলেও কলম ধরিনি। কারণ, লেখকসম যোগ্যতা আমার আছে বলে কখনো মনে হয় নি। আজ এসে এইটুক মনে বিধঁলো, যোগ্যতার জন্য জীবন থেমে থাকে না। ভিড় থেকে একজন দু’জন করে ছিটকে পড়ছে। আজ ত আর চুপ থাকা চলে না।

কিন্তু কী লিখবো?

আমি তো লিখতে চাইনি, শরৎচন্দ্র আর বঙ্কিমের মত রাধাকৃষ্ণের প্রেম গীতিকা; গোলাম আজম আর মওদুদির মত কাল্পনিক কোন কাহিনী কিঞ্চা। যা পড়ে, কেউ খোদাভিতীতে চোখ ভাসাবে; কেউবা “হরে কৃষ্ণ” বা ‘সুবাহানাল্লাহ” নাম জপবে।

আমি লিখতে চেয়েছিলাম, নজরুলের মত। যে কট্টধর্মান্ধদের সমাজখানেও এক হিন্দুনীকে বিয়ে করেছিলেন। ছেলেদের নাম দিয়েছিলেন কৃষ্ণ মুহাম্মদ, অরিন্দন খালেদ,কাজী সব্যসাচী এবং কাজী অনিরুন্ধ(হিন্দু-মুসলিম মিশ্রণ)। ব্যক্তিক জীবনের পাশাপাশি লেখালেখির জগৎে রেখে গেছেন অসংখ্যা সাম্যবাদ আর মানবত্বের চিহ্ন নকশা।বদৌলতে, বিস্তর অপবাদ জুটেঁছিলো কপালে। বলেছিল, তোমার আমায় কাফের বল আর অমানুষই। আমি হিন্দু মুসলিম এক করবো। আজ যেখানটায় গালাগালি হয়; ঠিক সেখানটায় গলাগলি করাবো। আর হতে চেয়েছি, সমাজ বিরুদ্ধ আরো দু’য়ের মতন। ইশ্বরচন্দ্র আর রামমোহন এর মত।

তবে, এখনকার নজরুল, ইশ্বরচন্দ্র আর রামমোহনের কপালে শুধু অপবাদ নয়, অপঘাত ও জোটে। এতে তার কলিজার দম থাকলো নয়ত বেড়িয়ে পড়লো।তাতে মনুষ্যত্ব একটু কাপঁবে না। কারো মনে, সমাজের কালিনী, মুলিনী ধর্মাত্বে বিরুদ্ধে, অপ্সংস্কৃতি আর কুসংস্কারের বিরুদ্ধে কিঞ্চিত সংস্কারে মানসিকতা জাগলেই; সমাজে কেউ বা কারা তাদের চাপাতির তলে চেলে জান্নাতে যাওয়ার সহজ রাস্তা খোঁজেন।
তা বলে কি? সদা নবায়ানিত প্রথায় পরিবর্তনশীল সমাজের সংস্কারণ এখানে দুমড়ে মুচড়ে যাবে। সেই ত্রিশ লক্ষের স্বপ্নের বাংলা আর কখনো মানব সম্মুখে আসবে না ? যে বাংলা নারীদের কালো ছাউনি দিয়ে জাপ্টে রাখবে না, ধর্মে নামে মানবতা লঙ্ঘিত হবে না, উগ্রতায় অগ্রমত প্রভাব আর কিশোরীর হাড়িঁর কলসিতে পড়বে না?

নজরুল, ইশ্বরচন্দ্র বা রামমোহনদের একসময় যেমন প্রথাবিরোধীতা দোষে তাদের সমাজে ত্যাগ, ধিক্কার ও অপঘাত করেছিল। কিন্তু, আজ সমাজ তাদের উজ্জল নক্ষত্র মেনে প্রণাম দিচ্ছে। ঠিক তেমনি আজ যারা চাপাতির তলে। সময় গড়ালে,

একদিন তারাই ভেসে বেড়াবে এই বাংলার বাসন্তীর ফুলের সৌরভে।

নতুন সূর্যের সকালটা সেইদিন উজ্জলতা পাবে তাদের ত্যাগের গৌরবে।

(কাচাঁ হস্তের লেখা। খেজুরের পাচাঁলি বনে গেছে। ক্ষমার সুন্দরতায় দেখবেন, আশাকামুক)