এক.
প্রায়শই নীলিমা ইব্রাহিমের বিখ্যাত গ্রন্থ- “আমি বীরাঙ্গনা বলছি” থেকে কিছু লাইন উদ্ধৃত করি আমি।
“বাংকার থেকে আমাকে যখন মিত্রবাহিনীর এক সদস্য অর্ধ-উলঙ্গ এবং অর্ধ-মৃত অবস্থায় টেনে তোলে, তখন আশেপাশের দেশবাসীর চোখে মুখে যে ঘৃণা ও বঞ্চনা আমি দেখেছিলাম তাতে দ্বিতীয়বার আর চোখ তুলতে পারি নি। জঘন্য ভাষায় যেসব মন্তব্য আমার দিকে তারা ছুড়ে দিচ্ছিলো…. ভাগ্যিস বিদেশীরা আমাদের সহজ বুলি বুঝতে পারে নি…”
মুক্তিযুদ্ধের ঠিক পরের একটি সত্যিকারে বাস্তবতার চিত্র উঠে এসেছে এই গ্রন্থে। এবারে আসেন ধানাই-পানাই বাদ দিয়ে কিছু বাস্তবতা নিয়ে পর্যালোচনা করি।
১৯৭১ সালে আমাদের জনসংখ্যা ছিলো সাড়ে সাত কোটি, তার মাঝে সর্বোচ্চ সক্রিয় মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা দুই লক্ষ। সর্বোচ্চ বলছি কারণ প্রতিবার সরকার পরিবর্তনের সাথে সাথে এই তালিকা বিবর্ধিত হয়। তাই হতে পারে আসল সংখ্যাটা হয়তো এর চেয়ে কিছু কম হবে। এছাড়া একটা বড় অংশ সক্রিয় ভাবে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছে সেটার সংখ্যাও দুই লক্ষের কিছু বেশী হবে; গবেষণা করে এই সংখ্যাটা বের করেছেন ডঃ মুনতাসির মামুন। এবার আসি বাকি জনসংখ্যার দিকে, আমাদের বাকি জনগোষ্ঠীর এক কোটি থেকে এক কোটি বিশ লক্ষ মানুষ ভারতে শরণার্থী হয়েছে। যুদ্ধ শেষে তিরিশ লাখের বেশী শহীদ হয়েছে। ধরলাম শরণার্থীদের সমান সংখ্যক মানুষ কোন না কোন ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। তাহলে মোটমাট যুদ্ধটার সময় মুক্তিযুদ্ধের সাথে সাথে কোন না কোন ভাবে পক্ষে বা বিপক্ষে সক্রিয় ছিল প্রায় দুই থেকে আড়াই কোটি মানুষ।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে বাদবাকি পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ কোটি মানুষ কি করেছিলো…?
জনগোষ্ঠীর লক্ষ লক্ষ সাধারন মানুষ মুক্তিযোদ্ধাদের জীবন দিয়ে সহায়তা করলেও বাদবাকি মানুষজনের বড় অংশই ছিলো নিরপেক্ষ। তারা যুদ্ধেও যায় নাই, আবার পাকিস্তানকে সমর্থনও করে নাই। গণ্ডগোলের সময়টা গ্রামের বাড়িতে বসে বসে প্লেজার ট্রিপ মেরেছে। যুদ্ধের পর শহরে এসে বাঙ্কার থেকে বের করে আনা বীরাঙ্গনাদের- মাগী, বেশ্যা, খাঙ্কি বলে গালি দিয়েছে। বাঙালী এই নিরপেক্ষ অংশটা যে বরাবরই জাত চুতিয়া সেটা উপরের বীরাঙ্গনার বক্তব্যই প্রমাণ করে। মুক্তিযুদ্ধের সময় যেই মানুষগুলো কোন বিশেষ কারণ ছাড়া মুক্তিযুদ্ধে যায় নাই, অথবা অন্তত ন্যুন্যতম সমর্থন পর্যন্ত দেয় নাই- তাদের সংখ্যাই কিন্তু শেষ হিসেবে বেশী।
এরা সবাই যে জামাত করে তা কিন্তু না, এরা হচ্ছেন নিরপেক্ষ। কোন প্রকার ঝামেলার মধ্যে ওনারা নাই। চা’য়ের দোকানে সস্তা রাজনৈতিক বিশ্লেষণ করেই এরা আত্মতৃপ্তিতে ভোগেন। তখনও এমন মানুষ বেশী ছিলো, এখনও বেশীই আছে।
গিনেস বুক অনুসারে পৃথিবীর সবচেয়ে নির্মমতম গণহত্যাটি হয়েছিলো বাংলাদেশে পাকিস্তানিদের হাতে। ওরা পৃথিবীর জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডের প্রথম পুরস্কারটা পাকিস্তানকে দেয়- যদি গিনেস জানতো সেই নিপীড়িত জাতির মানুষরাই এখনো পাকিস্তানের জন্য হেগেমুতে আস্ফালন করে, সেই সব খুনি-রাজাকারদের মৃত্যুতে এখনো কান্নাকাটি করে, যুদ্ধাপরাধীর জানাজায় লক্ষাধিক মানুষের সমাগম ঘটে। তাহলে হয়তো আমাদেরও একটা পুরস্কার দিতো- “শ্রেষ্ঠতম বেহায়া, নির্লজ্জ জাতির পুরস্কার”।
আজকের দিনে একটার পর একটা ব্লগার খুনের ঘটনাকে প্রত্যক্ষ করা এবং সেই খুনের পর খুনগুলো দেখেও না দেখার ভান করা, খুনগুলো কে জাস্টিফাই করা, “খুনি খারাপ… তবে/কিন্তু…”- এমন ধরনের কথা বলা মানুষের সংখ্যাই দিনের শেষে বেশি।
দুই.
আরেকটা গ্রুপের কথাও বলতে হয়। কখনো যাদের ব্লগারদের নিয়ে লিখতে দেখি না- চাপচাপ রক্ত দেখলে এদের রক্তে জোয়ার আসে, মুখে কথার ফুল আসে, দুইটা লাইক কামানোর ন্যুন্যতম ধান্ধাটা কিছুতেই তাদের ছাড়তে ইচ্ছা করে না।
একজন মানুষকে যখন মেরে ফ্যালা হয়- তারপর সেই মানুষ কিংবা তার ঘরনার কাজকে জাস্টিফাই করা, যুক্তি, অযুক্তি, কুযুক্তি বিচার করা- তা সে যাই করুক, যাই লিখুক; এই ধরনের সমর্থনমূলক যে কোন লেখাই সেই খুনটার কাছাকাছি ঘৃণিত অপরাধের সামিল আমার কাছে।
মানুষটা যখন জীবিত ছিলো তখন তার সমালোচনা করা, গালি দেয়া, উত্তর দেয়া… সবকিছুই করা যেতো। কিন্তু একজন মানুষ যখন খুন হয় তখন মৃত্যুর পর তার মৃত লাশের সামনে দাঁড়িয়ে তার ভুল ধরার মত জঘন্য কাপুরুষতা আর কিছুই হতে পারে না।
প্রতি মাসে মাসে এরকম একটা একটা খুন আর খুনের কয়েক ঘন্টা যেতে না যেতেই কিছু মানুষ যখন খুনটা হালালিকরনের প্রক্রিয়া শুরু করেন তখন আমার প্রচণ্ড হাসি পায়- দুলে দুলে হাসতে হাসতে আমি চেয়ার থেকে পড়ে যাই। একটা মানুষ কতটা ভীরু, কতটা দুর্বল, কতটা ঘৃণিত হতে পারলে একটা খুন হওয়া মানুষের মৃতদেহে থুথু ছিটিয়ে বলতে পারে;
-“তোমার খুনের জন্য আসলে তুমি নিজে দায়ী।”
অভিজিৎ রায় কিংবা অনন্ত বিজয় দাশ কিংবা নীলয়… কে আপনাদের সাথে তর্কে আপত্তি করতেন?
আপনারা কি জানেন অভিজিৎ রায় মৃত্যুর এক সাপ্তাহ আগেও পারভেজ আলমের সাথে একটা বিতর্ক করছিলেন? অনেক আগে ২০০৮ সালে আমি যখন সবে কলেজ ছাত্র তখন অভিজিৎ রায় আমার হাস্যকর বাংলিশ প্রশ্নের জবাব দিতেন লম্বা লম্বা মেইল করে।
কেউ কি দাবি করতে পারবেন তিনি অভিজিৎ রায়ের সাথে আর্গুমেন্ট করতে চেয়েছেন কিন্তু দাদা রাজি হন নাই?
খুন যে হয়েছে তার লাশের ভার তার পরিবারকেই বইতে হবে, কিন্ত আপনাদের “চাপাতি=কলম” নীতি এরকম আরেকটা খুনের রাস্তা পরিস্কার করবে। আপনাদের এরকম একটা স্ট্যাটাস নীলয়ের বাসার মেঝেতে ছড়িয়ে থাকা থকথকে রক্তকে ঝাঁটা দিয়ে পরিস্কার করে, আপনার এরকম আরেকটা স্ট্যাটাস নীলয়ের বাসাটা পরিপাটি করে ফুল দিয়ে সাজায় আরেকজনকে খুন করার জন্য তৈরি করে।
শেষে একটা কথা মনে করিয়ে দিতে চাই- আই এস গত রমজানে “রোজা না রাখা” কিংবা “নামাজ না পড়া”র অপরাধে ধরে ধরে বহুত মানুষকে ফাঁসি দিয়েছে। কিছুদিন পর প্রেমিকার সাথে ঘুরতে যাওয়ার অপরাধে যখন আপনার লাশ রাজপথে পড়ে থাকবে- মনে রাখবেন সেদিনও আপনার অপরাধের সাথে আপনার রক্তাক্ত লাশকে জাস্টিফাই করে কেউ একজন স্ট্যটাস দিয়ে সাড়ে ছয়শ লাইক আর আড়াইশ শেয়ার কামিয়ে নেবে। দেখবেন সেখানে কোন সুন্দরী তনয়া কমেন্ট করে বসবে “আপনি এক্কেবারে আমার মনের কথাটা লিখেছেন ভাইয়া…”
আপনার মা তখন বুক চাপড়ে কাঁদবে…
যেমন প্রতিটা মা কাঁদে…
ঐ দিক স্ট্যাটাসে লাইক বাড়তে থাকবে…
আজ নীলয়ের মা কাঁদছে…
স্ট্যাটাসে লাইক বাড়ছে…
তিন.
হুমায়ূন আজাদকে দিয়ে এই দেশে চাপাতিবাদিতার সূচনা।
পিঠে রক্তজবার মত ক্ষত নিয়ে বাংলা ভাষায় চিন্তা করা এই চিন্তার মহানায়ক পৃথিবী ছেড়ে চলে যান। পৃথিবী ছেড়ে তো সবাই চলে যায়; কিন্তু আজাদের চলে যাওয়া ছিলো জোর করে বের করে দেয়া। আসলে তার নিজের ভাষাতেই বলতে হয় তার জন্ম ছিলো ভুল সময়ে; তাঁর সময় তখনো আসে নি। আজও আসেনি
সেই আক্রমণকে একটু লক্ষ করলে বুঝতে পারি কতটুকু বদ্ধ আজকের সমাজের বাসিন্দারা। যেখানে একটু কথা বলা, দুটো কলাম লেখার ভয়াবহ দায়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয় সত্যিকারে মানুষদের। মানুষ কতটুকু হিংস্রতা আর পশুত্বের পর্যায়ে এলে যুক্তির বদলে যুক্তি দিতে না পেরে কাউকে কুপিয়ে হত্যা করতে পারে, এই আক্রমণই ভালো প্রমাণ হয়ে থাকবে অসম্প্রদায়িক বাংলার সাম্প্রদায়িক রূপ। যেই অসাম্প্রদায়িকতার কথা বলে বলে আমরা পাকিস্তান থেকে বাংলা পেয়েছি মাত্র ৪৪ বছরেই সেই অসম্প্রদায়িকতার পালিয়েছে আফগানিস্তান। কিছুদিন আগেও যেই অসম্প্রদায়িকতার খোলস অবশিষ্ট ছিলো আজকাল সেই ভদ্রতার মোড়কটাও নেই। খুন হওয়া লেখকদের প্রোফাইল ঘাঁটলে বিস্ময় জাগে-
এটা সত্যিই বাংলাদেশ?
এই জাতিই অসাম্প্রদায়িকতার জন্য লাখে লাখে মরেছিলো?
মাঝে মাঝে ভাবতে ভাবতে খেই হারাই যখন দেখি আজকের প্রজন্মই নিজ হাতে তাদের মুক্তিপথ প্রদর্শকদের হত্যা করছে একে একে।
হুমায়ূন আজাদের প্রতিটা সৃষ্টিকর্মে মানুষকে তার নিজের মত করে কথা বলার, চলা ফেরা করার, আর নানা ধরণের নষ্ট প্রথা- আর ভ্রান্ত আদর্শ থেকে বের হবার স্বপ্ন দেখায়। সবাই এক বাক্যে মানবেন আজকের এই বাংলায় দ্বিতীয় এক হুমায়ুন আজাদ জন্ম নেওয়া কতটা কষ্টকর, সম্ভবত অসম্ভব।
আত্মঘাতী বাঙালি বারবার মানুষ চিনতে ভুল করেছে, মৃত্যুর পর পাথরের মূর্তি গড়েছে- অথচ এই মানুষটি আজও বেঁচে থেকে আমাদের মাঝে আলো বইতে পারতেন।
আজ দেড় লক্ষ বর্গ কিলোমিটারের দেশে দেড় লক্ষাধিক মানুষ উলঙ্গ চাপাতি হাতে ছুটছে হুমায়ূন আজাদের উত্তরসূরিদের পেছনে, দেড় কোটি মানুষ তীব্র চিৎকারের সাথে তাদের সমর্থন জানাচ্ছে আর পনেরো কোটি মানুষ চুপচাপ থেকে একে একে হজম করছে খুন গুলো। সেধে এসে পরিপাটি করছে রক্তাক্ত রাস্তা, আরেকটা খুনের রাস্তা প্রশস্ত করছে।
যত দ্রুত ঝামেলা দূর হয় ততই ভালো…
মানুষ একদিন বুঝতে পারবে,
কিন্তু সেদিন আসবে তার নিজের পালা…
চার.
আমরা এই দেশে শুয়োর-কুকুরের চেয়েও অধম প্রাণী।
কোন শুকরেরও এমন মৃত্যু কামনা করি না,
বিশ্বাস করেন এমনকি কোন রাজাকারেরও এমন মৃত্যু কামনা করি না…
কয়েকটাদিন ঝিম মেরে বসে আছি। বসে থাকতে থাকতে নিজেকে মাঝে-মধ্যে একটা জড় পদার্থের মত মনে হচ্ছে, মনে হচ্ছে আমি বুঝি একটা চেয়ার। প্রতিবাদের ভাষা হারিয়ে ফেলেছি, কণ্ঠনালী থেকে নতুন কোন শব্দ বের হচ্ছে না। কি লিখবো, কি বলবো। এই দেশে প্রতিদিন মুক্তিযুদ্ধের চেয়ে বর্বর হত্যাকাণ্ড চলে- কারো কিচ্ছু এসে যায় না। যাদের চিনি তাদের অনেকে আত্ম-গোপনে অনেকে পালাচ্ছেন, অনেকে দেশ ছাড়ছেন। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখেছিলাম মুক্তিযুদ্ধের সময় শরণার্থী শিবির থেকে একটা অংশের মানুষ কোনদিন আর স্বাধীন দেশে ফিরে আসে নাই। আমি বুঝতাম না নিজের ঘর-বাড়ি-আপনজন ফেলে মানুষ কি করে অন্য দেশে পশুর জীবন যাপন করে। সবচেয়ে বড় কথা এই মাটিটা ছেড়ে কি থাকা যায়?
এখন বুঝি…
আমরা একটা হিসাবে বারবার ভুল করি। একাত্তরে যে এক কোটি মানুষ দেশ ছেড়ে পালিয়েছিলো সেই মানুষগুলো শখ করে পালায় নাই, নিজের ভিটা-মাটি ব্যাবসা-বানিজ্য কাজ-কর্ম ছেড়ে দিয়ে অন্য দেশে ফ্রি ভুষি খাওয়ার জন্য শরণার্থী অনিশ্চিত জীবন যাপন করে নাই। সত্যটা হচ্ছে এই মানুষগুলো দেশে থাকলে ১৯৭১ সালে মৃতের সংখ্যা হতো এক কোটি তিরিশ লক্ষ। সেই শরণার্থী শিবিরে ভীতিটা এতটা মারাত্মক ছিলো যে চোখের সামনে না খেয়ে, অসুস্থ হয়ে, কলেরায়, ডাইরিয়ায়, বন্যার… লাখ লাখ শরণার্থী মৃত্যুবরণ করলেও তারা সেই মৃত্যুকে পাকিস্তানের বুলেটের চেয়ে শান্তির মৃত্যু মনে করেছিলো। এক কোটি শরণার্থীর প্রায় সাত লক্ষ মানুষ কোনদিন আর স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসে নি।
মৃত্যু একটা বাস্তব সত্য, সবাইকে একদিন মরতে হবে। মৃত্যু নিয়ে এত দুঃখ পাবার কিছু নাই। বুলেটের আঘাতে কিংবা চাপাতির কোপে যদি আপনার মৃত্যু না-ও হয় তবুও চিন্তার কিছু নাই। মৃত্যুর স্বাদ একদিন না একদিন আপনি পাবনেই। মৃত্যু নিয়ে চিন্তা করা বৃথা, চিন্তা করলেই এটা আসবে না করলেও আসবে। তবে সত্যি বলতে কি কিছু কিছু জিনিস কখনোই হারায় না-
চিন্তা মরে না,
আদর্শ মরে না,
শব্দ মরে না,
কলম মরে না,
বই মরে না…
চিন্তা বাঁচে, শব্দ বাঁচে, কালি বাঁচে, আদর্শ বাঁচে পৃথিবীর ইতিহাস বলে এরা বেঁচে থাকে; এদের মারা যায় না। নিশ্চিত ভাবে বলে দিতে পারি আজ থেকে একশ বছর পর কলেজ পড়ুয়া একটা ছেলে অভিজিৎ রায়দের গল্প পড়তে পড়তে… জাফর ইকবালদের গল্প পড়তে পড়তে… শাহাবাগের গল্প পড়তে পড়তে… আবেগে কেঁদে ফেলবে…
সেই সময় আমাদের কেউ সেই দৃশ্যটা দেখার জন্য বেঁচে থাকবে না।
তবুও নিশ্চিয় আমরা সবাই সেদিন আরও একবার বেঁচে উঠবো…
একটা মুহূর্তের জন্য হলেও…
তাতেই বা ক্ষতি কি…
পাঁচ.
শেষে একটা কথাই বলতে চাই আমার নিরপেক্ষ জনগোষ্ঠীর উদ্দেশ্যে-
ভাই আমার…
রাতে শোবার আগে ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নেবেন…
আপনার হাতে লাল রক্তের ছোপ লেগে আছে…
আপনার গায়ে আমার ভাইয়ের লাশের গন্ধ…
আরিফ, অকুণ্ঠ ধন্যবাদ। পশ্চিম বঙ্গের বাঙালি আজ ক্লীবে পরিণত। কিন্তু তাও, ওপার – এপারের সুস্থ চিন্তাধারা’র আকর যাক এই জাতির ভবিষ্যতের স্বার্থে।
প্রতিটি বক্তব্যই সুতীব্র, যুক্তিযুক্ত এবং ধারালো।
আমার মনে হয় আজকের প্রজন্মের ভাবনায় সুস্থ পরিবর্তন এলেই নিশ্চিত ভাবে আশা করবার মত ব্যপার ঘটবে যা হতে সময় লাগবে। সময় নিয়ে চাতুর্য্যের সাথে জঙ্গি ধর্মান্ধ সংগঠকরা অনেকগুলো বছর ধরে উগ্রতার মগজ ধোলাই দিয়েছে বাংলাদেশের মানুষদের, আজ তারা ফসল তুলছে সমাজের অনেককে ধর্মান্ধ বানিয়ে। এদের মুখে বুকে লাথি মেরে খেদাতে হলে প্রয়োজন সংগঠিত পরিকল্পনা এবং সময়। শুধু যুক্তি, সত্য, আবেগ অথবা মুক্ত চিন্তার বিচ্ছিন্ন বিতরন ইত্যাদি দিয়ে আলোকিত বাংলাদেশ গড়া সহজ হবে না। এখনকার এবং ভবিষ্যত প্রজন্মকে রুপকথার জগৎ থেকে যুক্তির পথে যত তাড়াতাড়ি নিয়ে আসা যায় ততই মঙ্গল।
দারুন লেখাটি উপহার দেবার জন্য ধন্যবাদ।
আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ
ডক্টর হুমায়ুন আজাদ নন, প্রথম মুক্তমনা আক্রমনের শিকার কবি দাউদ হায়দার। স্বাধীন বাংলাদেশে মুক্তমনা কিংবা মুক্তচিন্তার উপর প্রথম আঘাত আসে ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর আমলে। সেই সময় বঙ্গবন্ধুর সরকার কবি দাউদ হায়দারকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়। বাংলাদেশ সরকারও তখন চায়নি আন্তর্জাতিকভাবে মুসলিম দেশ গুলোর সমর্থন হারাতে। ১৯৭৩ সালে কবিকে নিরাপত্তা দেওয়ার কথা বলেই কাস্টডিতে নেয়া হয়। ১৯৭৪ এর ২০ মে সন্ধ্যায় তাঁকে জেল থেকে মুক্তি দেওয়া হয় এবং ২১শে মে সকালে বাংলাদেশ বিমানের একটা রেগুলার ফ্লাইটে করে তাকে কলকাতায় পাঠানো হয়। ওই ফ্লাইটে তিনি ছাড়া আর কোনো যাত্রী ছিল না। তাঁর কাছে সে সময় ছিল মাত্র ৬০ পয়সা এবং কাঁধে ঝোলানো একটা ছোট ব্যাগ (ব্যাগে ছিল কবিতার বই, দু’জোড়া শার্ট, প্যান্ট, স্লিপার আর টুথব্রাশ)। কবির ভাষায় –“আমার কোন উপায় ছিল না। মৌলবাদীরা আমাকে মেরেই ফেলত। সরকারও হয়ত আমার মৃত্যু কামনা করছিল”।কবি দাউদ হায়দারের সেই কথা সত্য প্রমাণিত হয়েছে বহু আগেই। কোন সরকারেই চান না মুক্তচিন্তার মানুষ গুলো বেঁচে থাকুক। কোন এক মনিষী বলেছেন, কোন জাতীকে ধ্বংস করতে চাইলে, আগে তাঁর শিক্ষা ধ্বংস করে দাও। ৭১ এ বুদ্ধজীবী হত্যা থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত সকল হত্যা কাণ্ডের পিছনে একটাই এজেন্ডা, বাঙ্গালী জাতীকে ধ্বংস করা। এই আগ্রাসন আমাদের রাজনীতিতে, সমাজে, শিক্ষায়, সংস্কৃতিতে সব জায়গায়। আজ মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁর বক্তব্য জঙ্গিদের অনুপ্রানিত করবে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতার কিছু অংশ এখানে তুলে ধরা হল। লেখালেখির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘লেখার ব্যাপারে একটা কথা বলব-আমরা সেক্যুলার ডেমোক্রেসিতে বিশ্বাস করি। সংবিধান প্রত্যেক ধর্মের পালনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। আমি একটা ধর্ম পালন করি। আমি আল্লাহকে মানি, নবী করিমকে (স.) মানি। আমি আমার ধর্মকে মানি। কিন্তু আমার এ ধর্মকে নিয়ে কেউ যদি বিকৃত লেখা লেখে। যদি কেউ নোংরামি করে, নোংরা লেখা লেখে। তাহলে আমার সেন্টিমেন্টে লাগবে, আপনার সেন্টিমেন্টে লাগবে। বা কোনো হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বিরুদ্ধে লিখলে তাদের লাগবে, খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের যিশুখ্রিষ্টের বিরুদ্ধে লিখলে তাদের লাগবে। কাজেই লেখালেখির বিষয়ে সতর্ক করা আর কিছু না; কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে যেন আঘাত না লাগে, এই ধরনের লেখা যেন প্রকাশ না করা হয়, কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত লাগে এই ধরনের কথা যেন বলা না হয়। আমি নিজের ধর্মকেও বিশ্বাস করি, অন্যের ধর্মকেও সম্মান করি। কারণ সেক্যুলারিজম মানে ধর্মহীনতা না। কেউ যদি ধর্ম মানতে না চায়, তাহলে সেটা তার ব্যাপার। তার সেই বিশ্বাস নিয়ে সে থাকবে। কিন্তু অন্যের ধর্মকে আঘাত দিতে পারবে না। এটাই হচ্ছে মানবিক গুণ। কিন্তু বিকৃত করে লেখা কোনো মানবিক গুণ না। এটা বিকৃত। এটা বিকৃতি লালসা চরিতার্থ করা। সেইগুলি বন্ধ করতে হবে। এটাই বলা হয়েছে। লিখতে কাউকে বন্ধ করতে বলা হয়নি। সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়নি। একটা কথা বলা হয়েছে, কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে যেন আঘাত না করা হয়।’ প্রধানমন্ত্রী নামাজ পড়েন এবং কোরআন তেলোয়াতের মাধ্যমে তাঁর দিন শুরু করেন বলেও জানান।কিন্তু তিনি কোন জঙ্গি উগ্রবাদিদের হুমকি দিলেন না, তারপর বললেন না যে যদি আমার দেশের লোকের উপর আর একটি হামলা হয় তাহলে আমি তাদের দেখে নেব।
খুব খুব ভালো বলেছেন । এরকম লেখা আরো আগে আসার দরকার ছিল ।
ধন্যবাদ।
আপনাকে অনেক ধন্যবাদ লেখাটির জন্য। অনেক ভালো লাগলো।
ভালো থাকবেন।
হত্যাকাণ্ড গুলোর চেয়েও ভয়াবহ মনে হচ্ছে আমাদের দেশের মানুষের এই নিরপেক্ষ নীরবতা।
অসাধারণ , অসাধারণ , অসাধারণ , এক কোথায় আমি এই লেখাটা পড়ে অভিভূত।