টরোন্টোতে শুরু হয়েছে ৩৬ তম আন্তর্জাতিক লেখক উৎসব। এ বছরের উৎসবের সূচনা হয়, ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় মৌলবাদী হামলায় নিহত বাংলাদেশি-আমেরিকান লেখক অভিজিৎ রায়কে পেন কানাডার ‘Empty Chair’ হিসেবে ঘোষণা করার মাধ্যমে। অনুষ্ঠানের মঞ্চে একটি খালি চেয়ার রেখে, একজন লেখক যিনি লেখালেখির জন্য আক্রান্ত হয়েছেন বিভিন্ন পক্ষের দ্বারা তাদের সন্মান জানানো হয়। পেন কানাডার কার্যনির্বাহী পরিচালক ‘তাসলিম থর’ অভিজিৎ রায়কে সন্মাননা প্রদানের সময় বলেন- “এই খালি চেয়ারটি অভিজিৎ রায়ের মতো বিশ্বজুড়ে লেখকদের উপর অন্যায় আক্রমণের প্রতিবাদ স্মারক।”
৪২ বছর বয়স্ক অভিজিৎ রায় ছিলেন বাংলাদেশের মানবতাবাদী, ধর্মনিরপেক্ষ আন্দোলনের প্রথম সারীর একজন কর্মী। ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’, ‘অবিশ্বাসের দর্শন‘ সহ দশটি বইয়ের লেখক অভিজিৎ রায় একই সাথে ছিলেন ‘মুক্তমনা‘র প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। ২০০১ সালে মুক্তমনার প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে অভিজিৎ রায় বাংলা ভাষায় নাস্তিক, মানবতাবাদী, ধর্মনিরপেক্ষ লেখকদের জন্য প্রতিষ্ঠা করেন মুক্তচিন্তা চর্চার কেন্দ্র মুক্তমনা। ২০০৬ সালে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আটলান্টায় তার স্ত্রী বন্যা আহমেদ ও একমাত্র কন্যাকে নিয়ে বসবাস শুরু করেন।
মুক্তমনার লেখকরা বিশেষ করে অভিজিৎ রায় দীর্ঘদিন ধরেই তাদের লেখালেখির জন্য মৃত্যুর হুমকি পেয়ে আসছিলেন। ২০১৩ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় মানবতা বিরোধী অপরাধে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবীতে শাহবাগ আন্দোলনের সূচনা হলে নাস্তিক, ধর্মনিরপেক্ষ লেখকদের উপর মৌলবাদীদের আক্রোশ চূড়ান্ত রূপ ধারণ করে। লেখকদের মৌলবাদীদের হামলা থেকে রক্ষা না করে বাংলাদেশ সরকার ধর্মানুভূতিতে আঘাতের অভিযোগ এনে উলটো লেখকদের আটক, মামলা প্রদান শুরু করে। ২০১৪ সালে মৌলবাদীদের হামলার হুমকিতে নত স্বীকার করে রকমারি ডট কম নামে বাংলাদেশের অনলাইন বুক স্টোর অভিজিৎ রায়ের বই বিক্রি বন্ধ করে দেয়।
এ বছরের ২৬ শে ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় অভিজিৎ রায় ও তার স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা ঢাকা আন্তর্জাতিক বইমেলায় নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন শেষে ফিরছিলেন বাড়ির পথে। বইমেলা থেকে বেরিয়ে জনাকীর্ণ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের উলটো পাশের ফুটপাথে ইসলামি জঙ্গিরা চাপাতি দিয়ে তাদের মাথায়, ঘাড়ে, কাঁধে আক্রমণ করে। আক্রমণের স্থলে পুলিশের উপস্থিতি থাকলেও এই মর্মান্তিক হামলা চলাকালে কেউ লেখক দম্পতিকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে নি। পরে রক্তাক্ত অভিজিৎ আর বন্যাকে নিকটবর্তী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান ঘটনাস্থলে উপস্থিত একজন ফটো সাংবাদিক। হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন অভিজিৎ রায়। অভিজিত, বন্যার উপর হামলার কয়েক মাসের মধ্যেই জঙ্গি গোষ্ঠীর আক্রমণে প্রাণ হারান বাংলাদেশেই লেখক ও ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান, অনন্ত বিজয় দাশ এবং নীলয় চক্রবর্তী।
অনুষ্ঠানে পেন কানাডা মানবতাবাদী লেখকদের উপর এমন হামলার তীব্র নিন্দা প্রকাশ করে। একই সাথে উপস্থিত দর্শকদের বাংলাদেশি ধর্ম নিরপেক্ষ লেখক, ব্লগারদের উপর আক্রমণ ও তাদের রক্ষার জন্য সবাইকে এগিয়ে এসে একসাথে কাজ করার আহবান জানানো হয়।
এই পোস্টটি পেন কানাডার Avijit Roy is PEN’s Empty Chair at the International Festival of Authors প্রেস রিলিজের বাংলা অনুবাদ।
নতুন ব্লগ খুলবো কি করে?
এই লিংকে দেখুন।
আর মুক্তমনা বাংলা ব্লগের পেজের উপরের অংশে ‘সহায়িকা‘ দেখুন
স্যালুট অভিজিৎ।
লিংকটা আসেনি বোধ হয়, তাই নিচে দিলাম।
পেন কানাডার প্রেস রিলিজের লিংক
সেল্যুট,অভিদা!
অভিজিৎ রায়ের ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ বইটি গত বছর কোন ছুটির দিন গ্রামে গিয়ে সারাদিন মাঠে বসে বসে পড়েছিলাম। বইটি পড়ার পর আমি খুবই ইমপ্রেসড হয়েছিলাম। লেখার ধরন, উপস্থাপন সত্যিই অসাধারণ। যুক্তিগুলো ছিল অকাট্য, তথ্যগুলো ছিল নির্ভূল। এই বইয়ের মাধ্যমে ধর্মাবিশ্বাসীদের সামনে অভিজিৎ সত্যের আয়না তুলে ধরেছিলেন। সেই আইনায় তার তাদের কুৎসিত চেহারা দেখেছিল। সন্দেহ নেই ধর্ম বিশ্বাসীরা নিজের কুৎসিৎ চেহারা আয়নাই দেখে সহ্য করতে পারেনি। তাই সেই কুৎসিৎ চেহারা দেখানোর অপরাধেই তাকে হত্যা করা হয়েছে।
:bye: আমি চাইনা অভিজিতের সত্যাভিমুখি সেই যাত্রা থেমে যাক।
অভিজিৎ ও প্রগতিশীল লেখকদের সম্মাননা দেবার জন্য পেন কানাডা’কে ধন্যবাদ। ‘এম্পটি চেয়ার’ ব্যতিক্রমী ভাবনা। সংগঠনটির জন্য শুভেচ্ছা রইলো।
সেল্যুট অভিজিৎ! :good:
আলো হাতে যে সব আঁধারের যাত্রীরা মানুষকে আলোর পথ দেখিয়ে চলেছেন অভিজিৎ তাদেরই একজন , শুধু একজন বললে ভুল বলা হবে মশালের যাত্রীদের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন তিনি । আজ তিনি নেই কিন্তু তার চিন্তা চেতনার মশাল আছে আমাদের হাতে , সেই জ্ঞানের মশালকে আমরাই তুলে নিয়েছি পৌঁছে দেবো বলে পরবর্তী প্রজন্মের হাতে । আমরাও মরে যাবো কিন্তু এই মশালের আল জ্বলবে যুগ যুগান্তর , স্থানন্তরিত হতে থাকবে এক হাত থেকে অসংখ্য হতে ।
এমন করেই ছড়িয়ে যাক বাংলার রেনেসান্সের নায়ক অভিজিৎ পৃথিবীর সকল দেশে দেশে ……।।
অভি-অনন্তরা এভাবেই সময়ের স্রোতে প্রবাহমান যারা মানব জীবনের জয়গান গেয়েছেন।গেয়েছেন বদ্ধ চিন্তার যেন আমূল পরিবর্তন হয়।যে চিন্তা এক স্বর্নোজ্জ্বল নতুন জীবনের কথা বলে ও নতুন জীবনের পথ দেখায়।
দেহগত মৃত্যু হলেও তাদের চিন্তা-চেতনার কোন ক্ষয় নাই,ক্ষয় নাই।এভাবেই তারা এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে খরস্রোতা নদীর মতো প্রবাহমান।
কলম চলুক দূর্বার গতিতে,ছিন্নভিন্ন হউক চিন্তার জড়তা...।।