(কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করছি দি গড ডিল্যুশন অনুবাদ প্রকাশ করা যখন সম্ভব হলো, সেই খবরটা নিজ উদ্যোগে ডঃ অভিজিৎ রায় তার টাইম লাইনে শেয়ার করেছিলেন শুভকামনা দিয়ে। তাঁর এই উদারতার কারণে আমার খুব ছোট জগতের বাইরে অনেকেই জানতে পেরেছিলেন বইটির কথা। ভীষন উৎসাহিত বোধ করেছিলাম। আজ এই খবরটা পেলে সবচেয়ে খুশী হতেন তিনি, তার মুক্তমনায় আজ সেই কথাটি জানাতে এসেছি। আমরা তাঁর কাজ অব্যাহত রাখবো, জীবনের বড় অংশটা পার হয়ে আসা আমি আরো আশা করবো, তরুণরা কেউ কেউ আরো নতুন উদ্যোগ নেবেন সারা পৃথিবীর মুক্তচিন্তার মিথস্ক্রিয়ায় নিজেদের যুক্ত করে বাংলা ভাষাকে আরো সমৃদ্ধ করে তোলার জন্য। এই লেখাটি ফেসবুকে স্ট্যাটাস হিসাবে প্রকাশ করার পর কেউ কেউ হয়তো পড়েছেন। পুনরাবৃত্তি করার দায়ভার আমার একার। অনেক ধন্যবাদ।) (শিরোনামটি রুদ্র মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ’র কবিতা হারানো অাঙ্গুলের একটি পংক্তি)
(রিচার্ড ডকিন্স এর আত্মজীবনীর দ্বিতীয় খন্ডের প্রচ্ছদ, প্রকাশিতব্য)
২৭ জুলাই অফিসে এসেই ইনবক্সে একটি ইমেইল পাই – রিচার্ড ডকিন্সের ইমেইল .. মাত্র বিশ মিনিট আগে ইনবক্সে এসে বসে আছে সেটি, জি মেইলে রিচার্ড কে সেটা ভাবতেই ভাবতেই ক্লিক করি। বিস্মিত আমার চোখের সামনে তখন তার সাথে আমার যোগাযোগের প্রথম স্মারকটি। আর সেই ইমেইলটি পড়ে আমার প্রথম অনুভূতিটি হচ্ছে কৃতজ্ঞতা। দ্রুত একটি উত্তর লেখার পর পরই একাধিক ইমেইলে তিনি নিশ্চিৎ করেন, তাঁর অসাধারণ বড় আর সুন্দর মনটি আমার পরিশ্রমের উদ্দেশ্যটি বুঝতে পেরেছে।আমার পক্ষে খুবই কঠিন এই অনুভূতির স্তরগুলো ব্যাখ্যা করা কারণ তার এই ইমেইল আমার জন্য আসলেই অর্জন বলে কোন গর্ব করার কোন অবকাশ নেই। আমি হয়তো সেই অনূভূতিটাকে খানিকটা ব্যাখ্যা করতে পারবো ‘বিস্ময়কর অনূপ্রেরণায় ঋণগ্রস্ত’ হিসাবে। তাঁর পরোক্ষ অনুমতিতে এ বছর বইমেলায় দি গড ডিল্যুশন অবশেষে প্রকাশ হলেও তাঁর কাছ থেকে সরাসরি কোন যোগাযোগ আমি প্রতিষ্ঠিত করতে পারিনি বহু প্রচেষ্ঠায়। কিছুদিন আগে বইটির একটি ভালো কপি হাতে পাবার পর তার ব্যাক্তিগত সহকারীর কাছে বইটি পাঠিয়েছিলাম। এই ইমেইলটি তারই প্রত্যুত্তর। আসমা সুলতানা মিতার করা প্রচ্ছদের কাজটিও তাঁর দৃষ্টি এড়ায়নি।
আমার জীবনের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গা দখল করে আছেন রিচার্ড ডকিন্স, আর সেটি সংজ্ঞায়িত করা সম্ভব হবে কেবল আমার জীবনের শেষ দিনটিতে, কারণ তখনই কেবল মূল্যায়ন করা সম্ভব হবে আমি আমার অনুভূতিটাকে কি মর্যাদা দিতে পারলাম। কোন বিখ্যাত ব্যাক্তির পাশে দাড়িয়ে ছবি তোলা, তাঁর অটোগ্রাফ নেয়া সবকিছু ব্যক্তিগত আত্মতৃপ্তির কারণ হতে পারে ঠিকই – কিন্তু আমি মনে করি যদি তাঁর কাজকে নিজের পরিশ্রমের মাধ্যমে আরো বহু মানুষের কাছে পৌছে দেয়া যদি সম্ভব হয়, তাহলেই কেবল প্রকৃত অর্থেই সেই বিখ্যাত মানুষটি সন্মান প্রদর্শন করা যেতে পারে। সেকারণে তাঁর লেখা প্রতিটি বইয়ের অক্ষর আমি বাংলায় করে যাবো এমন একটি প্রতিজ্ঞা নিয়ে জীবনের প্রায় তিন দশক কাটিয়ে দিয়েছি। এই মুহুর্তে তাই সামান্যতম আত্মতৃপ্তিরও সুযোগ নেই, কারণ কেবল মাত্র তিনটি বই অনুবাদ করতে পেরেছি।
২০০৭ এ টরোন্টো আসার পর স্থানীয় লাইব্রেরী থেকেই দি গড ডিল্যুশন বইটি পড়ার সুযোগ হয়। এটাই তাঁর প্রথম কোন বই যা আমি কিনে পড়িনি। যারা তার আগের বইগুলো পড়েছেন, তারা দি সেলফিশ জিন থেকে তাঁর লেখার বিবর্তনটি অনুভব করতে পারবেন। ষাটের দশকে জীববিজ্ঞানে বিল হ্যামিলটন, পরে রবার্ট ট্রিভার্স এর অসাধারণ অন্তর্দৃষ্টিকে তিনি সবার জন্য বোধগম্য একটি ভাষায় আর ডারউইনীয় বিবর্তনের মূলসারটিকে বিদ্যমান সব অস্পষ্টতাকে সরিয়ে শক্ত একটি ভিত্তিতে দাড় করিয়েছিলেন দি সেলফিশ জিন বইটিকে। তাঁর নিজের প্রিয় বই দি এক্সটেন্টেড ফেনোটাইপ ছিল সেলফিশ জিনের বিরুদ্ধ সমালোচনার প্রতি আসাধারণ একটি জবাব। জীবজ্ঞিানীদের জীববিজ্ঞানী ডকিন্স এই দুটি বই তাই বিজ্ঞানের ইতিহাসে মাইলফলক হয়ে আছে।
সফটওয়্যার মোগল চার্লস সিমোনী যখন তাঁকে সুযোগ করে দিয়েছিলেন ক্রমশ বাড়তে থাকা ধর্মীয় অযৌক্তিকতা, সৃষ্টিবাদের অর্থপূষ্ট শক্তিশালী প্রভাবের বিরুদ্ধে লড়ার জন্য, তিনি বিজ্ঞানের সৌন্দর্য বর্ণনা করেছেন অভূতপূর্ব দক্ষতায়। প্রকৃতি আর বাস্তবতার কবিতা যে বিজ্ঞান সেই মঞ্চে তখন বিজ্ঞানকে গ্রাস করতে উদ্যত ধর্মীয় কুসংস্কার। এর প্রতিক্রিয়ায় তিনি লেখেন দি গড ডিল্যুশন; কোন বিজ্ঞানী এর আগে এমন কোন বই লেখেননি। শুধু একটি বইয়ের প্রতিক্রিয়ায় জন্ম হয়েছে অসংখ্য বই। ঈশ্বর সহ কোন পৃথিবী ঈশ্বরহীন কোন পৃথিবী থেকে মৌলিকভাবে ভিন্ন হবে, আর ঈশ্বর সে কারণেই একটি বৈজ্ঞানিক অনুকল্প হতে পারে, যার অস্তিত্বের বিতর্কে তাই বিজ্ঞানের কৌশল ব্যবহার করা সম্ভব – ঈশ্বরের বিবর্তন এবং সত্য অনুসন্ধানের পথে প্রতিবন্ধকতা হয়ে দাড়িয়ে থাকা ঐশী প্রত্যাদেশগুলো বিশ্বাসের খাতিরে বিশ্বাস করা শুধু বিভ্রান্তি নয়, ভয়ঙ্কর ক্ষতিকর এক বিভ্রান্তি। আর বিভ্রান্তির বিনাশের চেয়েও বরং এই বিভ্রান্তিকে তার প্রকৃতার্থে চিহ্নিত করার করাই তিনি বলেছেন, যেন আমরা এর ক্ষতিকর দিক থেকে সভ্যতার অগ্রগতিকে সুরক্ষা করতে পারি।
আর বিজ্ঞানমনস্ক হতে হলে এই যুক্তিগুলো অনুধাবন করা খুব প্রয়োজন – আর সেকারণে দি গড ডিল্যুশনকে আমি প্রথম অনুবাদের জন্য বেঁছে নিয়েছিলাম। বইটির শিরোনাম নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন করেছেন, আমি শুধু সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, রিচার্ড ডকিন্সের প্রতিটি বই তার দেয়া শিরোনামেই প্রকাশ হবে, একারণেই বইটির নাম অপরিবর্তিত। আমি মুক্ত মনের মানুষ কিনা জানিনা, দাবীও করিনা। শুধু বিচিত্র বিষয়ে আমার জানার খুব আগ্রহ আছে । সেই আগ্রহটি সত্য অনুসন্ধানের সাথে সংশ্লিষ্ট। যারা রিচার্ড ডকিন্স এর বই পড়েছেন তাদের কাছে এই সত্য অনুসন্ধানের প্রক্রিয়াটা অচেনা মনে হবে না। আর আমার কাছে মুক্ত চিন্তার সংজ্ঞা হচ্ছে সেটি।
অনেকের মতই নানা বিষয় নিয়ে লেখা শুরু করলেও যখনই নানা বিষয়ে পড়তে শুরু করেছিলাম অনুভব করেছি বাংলা ভাষায় প্রচুর পরিমানে অনুবাদের প্রয়োজন – বিজ্ঞানতো বটেই – সব বিষয়ে। নবম দশকে আল কিন্দী বাগদাদে যেমন বায়াত আল হিকমাহতে রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতায় অনুবাদের অবিশ্বাস্য বিশাল যজ্ঞ শুরু করেছিলেন, আমাদের ঠিক তেমন কিছু দরকার । লেখক প্রচুর সমস্যা শুধু পৃষ্ঠপোষকতার। আগের মত সেই নেস্টরীয় খ্রিস্টীয় যাজকরা নেই যারা গ্রীক পান্ডুলিপিগুলো সংরক্ষন করেছিলেন। অবিশ্বাস্য মাত্রায় সন্মান ছিল অনুবাদকদের সেই জগতে। তাদের পারিশ্রমিক, সামাজিক মর্যাদা তার স্বাক্ষ্য দেয়। এবং এই অনুবাদই সভ্যতাকে টিকিয়ে রেখেছিল।
রিচার্ড ডকিন্স তাঁর পুরোটা জীবন নিবেদন করেছেন সত্য অনুসন্ধানে – অপবিজ্ঞান আর কুসংষ্কারের বিরুদ্ধে লড়তে।সমাজের বুদ্ধিবৃত্তিক স্তরে মৌলিক কিছু পরিবর্তনের জন্য লড়ছে এখন তার ফাউন্ডেশন।আর তার এই কাজের ক্ষেত্র সারা পৃথিবী। তিনি আমাকে অনুমতি দিয়েছেন বাংলাভাষায় তাঁর সব বইই অনুবাদ করার জন্য, তিনি কোন সন্মানী নিতেও অস্বীকৃতি জানিয়েছেন, নিজের এজেন্টের মতামতের বিরুদ্ধে দাড়িয়ে তিনি বাংলাভাষীদের কাছে তার লেখা পৌছে দেবার অনুমতি দিয়েছেন বিনামূল্যে। এটি তাঁর বিশাল মনের পরিচয়। যে বিশ্বাসটুকু তিনি আমাকে করেছেন সেটা শুধু কৃতজ্ঞতা দিয়ে প্রকাশ করা প্রায় অসম্ভব। আর তাই আমার অসমাপ্ত কাজের তালিকা আরো দীর্ঘতর হলো। আমি কাজ দিয়ে তার এই উদারতার প্রতিদান দিতে চাই।
তিনি তাঁর বিশ্বব্যাপী মুক্ত চিন্তা প্রসারের আন্দোলনে বাংলাদেশকে যুক্ত করে নিলেন।
The God Delusion (Bengali Translation) | Richard Dawkins Foundation https://t.co/f2rgvT4ZCB
— Richard Dawkins (@RichardDawkins) July 27, 2015
” দি গড ডিল্যশন ” এর বাংলা অনুবাদ কি কোথাও কিনতে পাবো ? অনলাইন হলে ভাল হয় ।
অনেক ধন্যবাদ ।
http://books.karigor.com/ – অনলাইন
বিদিত , ৩৯ আজিজ মার্কেট শাহবাগ, ঢাকা, ফোন: ৯৬৬৩৪৭৪
পাঠশালা, ২২ আজিজ মার্কেট শাহবাগ, ঢাকা ফোন : ৯৬৬২৬০১
বাতিঘর, চট্রগ্রাম
রিচার্ড ডকিন্সের বইগুলোর বাংলা অনুবাদের যে মহৎ উদ্যোগ নিয়েছেন তার জন্য অভিনন্দন জানাই। আপনার প্রয়াস অভিজিতের মুক্তমনা মঞ্চকে একধাপ এগিয়ে নিয়ে গেল। মুক্তমনা মঞ্চ বাংলাদেশে আরও শক্ত ভিত্তিতে দাঁড়াবে। কার শক্তি আছে অভিজিৎকে ঠেকায়?
অনেক ধন্যবাদ অনুপ্রাণিত করার জন্য।
ধন্যবাদ মাহবুব ভাই আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য। অভি আপনার বইটার কয়েকটা কপি কিনে এনেছিল, আসার সময়তো আর কিছুই আনা হয়নি। আপনার এই বইটা হাতে পেয়ে যে ও কী খুশী হয়েছিল!
ডকিন্সের এন্সেস্টরস টেল বইটা আমার খুব পছন্দ। ওইটা অনুবাদ করার প্ল্যান আছে?
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। দস্তয়েভস্কি যেমন গোগোল সম্বন্ধে বলেছিলেন, আমরা সবাই গোগোলের ‘ওভারকোট’ থেকে এসেছি… আমিও মনে করি যারা আমরা মুক্তচিন্তার চর্চা করছি বলে দাবী করি তারা সবাই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অভিজিৎ রায় ও তার সমমনাদের নিয়ে সৃষ্ট মুক্তমনার কাছে ঋণী। আমি সেই প্রতিদান দেবার প্রচেষ্টা করে যাবো। বইটা কিনে তিনি আসমা সুলতানাকে ইনবক্স করেছিলেন। সত্যিকারভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম তাঁর প্রশংসায়। বইটা প্রকাশ করা নিয়ে দীর্ঘদিন যুদ্ধ করতে হয়েছে। মনের মত করে কাজটা করতেও পারিনি দেশের বাইরে থেকে, তার এই প্রশংসা আমাকে ভীষণ স্বস্তি দিয়েছিল। আমরা পরের প্রকাশনাগুলো আরো ভালো করতে পারবো সুযোগ পেলে এই প্রত্যয় অনুভব করেছিলাম। উপরন্তু দীর্ঘদিন যখন ফেসবুকে ছিলাম না, অভিজিৎ রায় আমার অনুপস্থিতির কথা জানতে চেয়েছিলেন আসমা সুলতানার কাছে, তখন আমি নিজেও সড়ক দূর্ঘটনায় আহত। তিনি আমাকে ইমেইল করেছিলেন অনুপ্রাণিত করেছিলেন – আমাদের ফেসবুকে বিজ্ঞান ও শিল্পকলার ইতিহাস নিয়ে নানা স্ট্যাটাস তিনি পছন্দ করতেন – আর উনার সেই ইমেইলের কারণেই আমি আবার ফেসবুকে ফিরে আসি… ফেসবুকের নিজের পেজটাই এখন লেখার জগৎ – আর ফেসবুকে কিংবা মুক্তমনায় তাঁর বিদগ্ধ উপস্থিতির সেই স্মৃতি প্রতিনিয়ত আমাদের তাড়া করে। রিচার্ড ডকিন্সের সব বইই অনুবাদ করার ইচ্ছা আছে… দি অ্যানসেস্টর টেল তো অবশ্যই ! ডকিন্সের এটি প্রথম বই যেটি প্রকাশের সাথে সাথেই আমি কিনতে পেরেছিলাম, তখন আমি মেলবোর্নে ছাত্র। সব বই অনুবাদ করার পরিকল্পনায় আমরা আগাচ্ছি; সময়ের অভাব অুনভব করি। চাকরীর পর পুরোটা সময় বইগুলোর পেছনে, আপাতত তিনটি শেষ করতে পেরেছি, আশাকরি সব শেষ করতে পারবো কোন না কোন এক সময়………..
আপনার সুস্বাস্থ্য ও দীর্ঘায়ু কামনা করি সব সময় । মুক্তমনার সাথে সংশ্লিষ্ট সবাই কে আমার আন্তরিক ধন্যবাদ ।
নিজের মনে খুবই আফসোস আছে। বিজ্ঞানের ছাত্র হয়েও তেমন বিজ্ঞান শেখার সুযোগ পাইনি। বাংলাদেশে বিজ্ঞান শেখা মানেই বাংলা কিংবা ইংরেজী বইয়ের মতই পড়ে মুখস্ত করা। এখানে প্রশ্ন করলেই চাপাতি হামলে পরে। যেহেতু ধার্মিক পরিবারে জন্ম তাই ধর্মের অবৈজ্ঞানিক ব্যপারগুলো নিয়েই প্রথমে প্রশ্ন জাগে। যা কিনা ব্লাশফেমি। তাই এখম প্রশ্ন করা বাদ দিয়েছি। বাংলায় ভাল বই কিংবা অনুবাদ পেলেই আজকাল তার মধ্যে উত্তর খুজি।
বিজ্ঞান শিক্ষকের অভাব আমি অনুভব করেছি জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে| আমাদের সেই সময় ছিলনা ইন্টারনেট, না ছিল ভালো বিজ্ঞানের বই – তবে বেশ কিছু পেপার ব্যাক বের করেছিল সেবা প্রকাশনী বিশেষ করে মানব বিবর্তনের ব্যাপারে… মনে আছে; সত্যিকারার্থে বিজ্ঞানের বই পড়তে শুরু করি ঢাকা আসার পর,ন বৃটিশ কাউন্সিলে বেশ কিছু বই ছিল – এখনও আছে। তবে আমাদের কৈশোরে বাংলাদেশ টেলিভিশন কার্ল সেগানের কসমস প্রামাণ্য ধারাবাহিকটি দেখিয়েছিল। আমার মনে আছে প্রথম যেদিন কসমস দেখেছিলাম – সেদিন আমি আমার প্রথম শিক্ষকের সাথে পরিচিত হই, তাঁর বই আমাকে বিজ্ঞানের বিস্ময়কর জগতে আমার আগ্রহের পথটি খুঁজে নিতে সাহায্য করেছে। আমি কিছুদিন শিক্ষকতা করেছি… আমি ক্লাসরুমে বিজ্ঞানের ইতিহাস বলে হয়তো বিরক্ত করেছি… কিন্তু একটা কথা আমি বলতাম… শিক্ষাটা কেবল শুরু হতে পারে ক্লাসরুমে, কে কোথায় সেটা শেষ করবে তা অনেকটাই ব্যক্তিনির্ভর। গুরুত্বহীন বিষয়গুলো নিয়ে ক্রমশ বাড়তে থাকা উৎসবে আমাদের সত্যিকার কৌতুহলগুলো অপুষ্টিতে ভুগছে। আমি তাই অনেকটাই আমার নিজের জন্য লিখি… ঠিক আজ থেকে আড়াই দশক আগে এক কৌতুহলী কাজী মাহবুব হাসানের জন্য। অনেক ধন্যবাদ আপনার হৃদয় নিংড়ানো কথাগুলো আমার সাথে ভাগ করে নেবার জন্য।
একজন বিশ্ববিখ্যাত মানুষ, পৃথিবীর একটা তাবৎ আদর্শিক গোষ্ঠীর অভিভাবও কতটা আন্তরিক ও অমায়িক হতে পারেন তা শিখলাম, উপভোগ করলাম রিচার্ড ডকিন্স স্যার এর ইমেইল পড়ে।
আপনার সাথে তার এই যোগাযোগ এর ঘটনা অনেক আঙ্গিক থেকেই আমার কাছে গুরুত্ববহ।
আপনার একান্ত প্রিয় এই বিষয়গুলো আমাদের সামনে তুলে ধরার জন্য, এই সুন্দর লেখাটির জন্য আপনাকে বিশেষভাবে ধন্যবাদ জানাই।
সেটাই , মানুষ বড় মনের ও মাপের হলে কত বড় হতে পারে সেটা অনুধাবন করা আমাদের মতো সংকীর্ন মানুষের পক্ষে বোঝা সম্ভব নয় । এভাবেই তাঁরা একে অন্যকে অনুপ্রেরণা প্রদানের মাধ্যমে এবং সহযোগিতার মাধ্যমে একটি আদর্শ সমাজ তথা রাষ্ট্র গঠন করেত সক্ষম হয়েছেন ; এখন একটি আদর্শ পৃথিবী গড়ার লক্ষে তাঁরা কাজ করে যাচ্ছেন …
বৃটিশরা অন্যরকমের একটি জাতি । অসম্ভব অমায়িক …
ধন্যবাদ ।
অনেক ধন্যবাদ।
প্রিয় মাহবুব ভাই,
আপনার একটি লেখায় আমি একজন লেখকের লিগ্যাসী কি হতে পারে তার সুন্দর একটা ইমেজ পেয়েছিলাম, যা আর কোন ক্রিটিকের কছে পাই নি। আমি আপনার মতই খুব দৃঢ়ভাবে আস্থাশীল- “নিজের কাজে কর্মে লিগ্যাসীর গুরুত্ব” এর ব্যাপারে, যা বর্জন করেও হয়ত খ্যাতি নাম যশ প্রতিপত্তি অনেক কিছুই অর্জন করা সম্ভব। এবং তেমন উদাহরন চারিদিকে অক্টোপাশের মত আমার চোখে দৃশ্যমান হচ্ছে বৈকি।
রিচার্ড ডকিন্সের এর জীবনী ও কাজ সম্পর্কে আমি যতটুকু জানি, তা স্মরণে রেখে, তার সাথে ডগলাম এডামস এর যে সম্বন্ধ- যাকে তিনি অনুপ্রানিত করে নিজেকে নতুনভাবে আবিষ্কার করাতে পেরেছিলেন, এবং আপনার মত একজন আন্তরিক পাঠক যিনি লেখক-অনুবাদকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হবার তাগিদ অনুভব করে আজকের এই তরুন অর্জনে তাঁর সাথে প্রথম যোগাযোগ স্থাপন করলেন, এসবেই যেন আপনার সেই কথাকেই যথাযত ও সত্য উদাহরণ হিসেবে আবির্ভূত করেছে।
এর চেয়ে অসাধারণ শিক্ষার সম্মুখীনে অভিজ্ঞায়ন আমার কখনই হয় নি।
“দ্য গড ডিল্যুশন” বইটা নিয়ে অভিজিৎ দাদার অনলাইন প্রচারণা আমারও নজর কেড়েছিল, অভিজিৎ দাদার অসাধারন একটি বৈশিষ্ট্য ছিল প্রগতিশীল মুক্তমনা ব্যক্তি গোষ্ঠীর পাশে বন্ধু-অভিভাবকের মত পাশে দাড়ানো (আক্রান্ত ও আটক ব্লগারদের নিয়ে তার সহায়তামূলক অবস্থান স্মরণ করি)। মুক্তচর্চা প্রসারে অভিজিৎ রায় এর কর্মযজ্ঞ যে শক্তিশালী মঞ্চ তৈরী করেছে, তার লেখনিতে বিজ্ঞান মানবতাবাদ যেভাবে উঠে এসেছে তা অতুলনীয় এদেশের প্রেক্ষাপটে। রিচার্ড ডকিন্সের মত তিনি এসবই করেছেন একজন প্রকৃত বিজ্ঞানমনষ্ক লেখক হিসেবে যারা চান বিজ্ঞানের স্বার্থে, সকল অন্ধতা গোড়ামী দূর করার নিমিত্তে, সর্বোপরি একটি সুন্দর উদার বাসযোগ্য মানবিক পৃথিবীর প্রত্যাশায়।
আমি নিঃসন্দেহ, আপনি যেমন রিচার্ড ডকিন্সে অনুপ্রানিত, তেমনি এ প্রজন্মের তরুনেরা অভিজিৎ রায় এর লিগ্যাসী নিজেদের কাজে কর্মে স্বতঃস্ফূর্ততার সাথে প্রকাশ ঘটাবে।
পূনর্বার অভিনন্দন। শুভ কামনা।
অনেক ধন্যবাদ, আগেও যেমন লিখেছিলাম… তোমার প্রথম বইয়ের ভূমিকা লেখার জন্য যোগ্য হবার প্রচেষ্টা করছি..
অভিজিৎ দার কথা সব সময় মনে পড়ে । তবে আজকের মনে পড়াটি ভিন্ন ; অভিজিৎদা আজ আমাদের মাঝে থাকলে অনেক খুশী হতেন । আমাদের কাজের মধ্যেই আমরা অভিজিৎ দা কে মনে রাখবো আজীবন ।
অবশ্যই
আমি জানি আপনি তার পছন্দের মানুষদের অন্যতম ছিলেন। আপনার কাজ, লেখা এবং প্রচ্ছদও তিনি ভালবাসতেন। আপনাকে প্রকৃত শুভাকাঙ্খীর মতই অনুপ্রেরণা দিতেন।
রিচার্ড ডকিন্স স্যারেরও আপনার প্রচ্ছদ বিশেষভাবে নজরে এসেছে দেখে আপ্লুত হলাম।
আমার শিল্পবোধহীন স্বল্পজ্ঞানে প্রচ্ছদটিকে এক কথায় পারফেক্ট মনে হয়েছিল। এমন কাজ আমরা আপনার কাছ থেকে প্রতিনিয়ত পাব, সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত।
শুভেচ্ছা।
ধন্যবাদ । অনুপ্রাণিত হলাম ।
যদিও স্যার রিচার্ড ডকিন্স তাঁর স্বভাব সুলভ ভদ্রতায় বইটির প্রচ্ছদের প্রশংসা করেছেন । বইটি প্রকাশের সময় আমরা সামনে থেকে প্রকাশ করতে পারলে হয়তো আরো বেশী ভুল ত্রুটি শুধরে নিতে পারতাম । এবং যথারীতি আমার নিজের কাজে কখনই আত্মতৃপ্তি আসে না । যদিও আমার প্রিয় একটি এচিং আমি ব্যবহার করেছি প্রচ্ছটির জন্য । যার শিরোনাম ‘মিরর’ । আমার হাতের আঙ্গুলের ছাপ ব্যবহার করে করা একটি বিস্ফোরণের মতো কিছু, আঙ্গুলের ছাপ আমি আইডেনটিটি বোঝাতে ব্যবহার করি । আর বিস্ফোরণটা অনেকটা মানব জন্ম মূহুর্তের একটি শক্তিময় বিস্ফোরণ । অথবা বিগ ব্যাং এর বিস্ফোরণ, পৃথিবীর জন্মের শুরু অথবা মানব সৃষ্টির শুরু; আমরা আমাদের প্রকৃত পরিচয় জানতে হলে আমাদের প্রতিনিয়ত আমাদের জন্মের উৎসে ফিরে যেতে হবে…
আমাদের আইডেনটিটি টা প্রতিষ্ঠা করবার জন্যই আমাদের এই যুদ্ধ , ধর্ম ও গোড়ামীর বিরুদ্ধে । আমাদের যুদ্ধ মুক্তচিন্তার জন্য এবং সত্য প্রতিষ্ঠার জন্য । যেটা করা সম্ভব একমাত্র আত্মপরিচয় অনুসন্ধানের মাধ্যমে….
সেটাই.. তোমার মূল কাজটার যে মেটালিক শিন ছিল সেটাই ধরা সম্ভব হয়নি..আর যদি বইয়ের আকারটা বড় করা সম্ভব হতো, কিছুটা সুবিচার করা যেত কাজটার উপর। তারপরও এর বিকল্প কোন প্রচ্ছদ ভাবা সম্ভব ছিলনা। আর ব্যাখ্যাটাও অসাধারণ.. অনেক ধন্যবাদ।
পরবর্তিতে…
অসম্ভব আনন্দিত হলাম, আমার অতি প্রিয় এই বইটির যথাযথ অনুবাদ হয়েছে জেনে। ডকিন্সকে বাংলা ভাষায় যুক্ত করার কৃতিত্ব নিঃসন্দেহে আপনার 😀
অনেক ধন্যবাদ।
খুব ভালো একটা কাজ হয়েছে ভাই। আবারো অভিনন্দন।
অনেকে ধন্যবাদ আপনাকে।
কাজী মাহবুব হাসান ভাই, বইমেলায় চর্যাপদের স্টলটা খুজেছিলাম অভিদার সাথে মিলে আপনার বইয়ের জন্য। অভিজিৎ দা বইটা নিজে তো কিনেছিলেনই আর অনেককে উপহারও দিয়েছিলেন। আমাকে বললেন, খুবই ভালো একটা কাজ হইছে। বাংলায় গড ডিল্যুশন বইটা থাকা দরকার ছিল। আপনে নিয়োগ না দিলে কী হবে এই মেলায় অভিদা ছিলো এই বইয়ের সফল মার্কেটিং এজেন্ট 🙂
ওইসময় বিবর্তনের প্রশ্নোত্তর নিয়ে করা বই ‘কাঠগড়ায় বিবর্তন’ নিয়ে কথা হচ্ছিলো। বিবর্তনের উপর একটা ইন্ট্রোডাকশন লেখা হয়েছে বইয়ের জন্য, অভিদার ওইটা পছন্দ হয় নাই। নানা উপদেশের মধ্যে কইলো আপনার সাইটে যাইতে আর যোগাযোগ করতে ইন্ট্রোডাকশনটা কিভাবে ঠিক করা যায় সেটা নিয়ে।
চোখ বন্ধ করলেই মনে হয় সেই সময়টায় চলে যাই।
এই শুভ কর্মের জন্য আপনাকে তো আগেই কৃতজ্ঞতা জানিয়েছি, এই সুযোগে মিতা আপাকেও দুর্দান্ত প্রচ্ছদটার জন্য অভিনন্দন জানালাম।
ধন্যবাদ এতো দারুন একটা পোস্ট দিয়ে আজকের এই খুশির খবর আমাদের সাথে শেয়ার করাতে। চুপচাপ কাজ করে যাচ্ছেন সেটার চেয়ে ভালো কিছুই হতে পারে না, তাও মাঝে মাঝে এখানে দেখলে ভাল্লাগবে 🙂
অনেক ধন্যবাদ রায়হান আবীর … অভিজিৎ রায়ের এই বিশ্বাসের মর্যাদা আমি একদিন দিতে পারবো সেই প্রত্যয় থাকলো।
🙂