লিখেছেনঃ তাসনুভা মেহনাজ
মেয়েদের বুঝি মেয়ে হিসেবে জন্ম নেওয়াটাই বড় পাপ? কটা মেয়েকে বড় হওয়ার জন্য সুন্দর একটা পরিবেশ দেওয়া হয়? ছোটবেলা থেকেই তো কত নোংরামির অভিজ্ঞতা অর্জন করতে করতে বড় হয় একটা মেয়ে । ছোটবেলায় অনেক আত্মীয় স্বজন আদরের ছলনায় মেয়েটির অপরিণত শরীরে হাত বুলায় । মেয়েটি হয়তো বুঝে না তাদের নোংরা উদ্দেশ্য, কিন্তু অস্বস্তি আর খারাপ অনুভূতিতে তার মন ভরে উঠে । ছোটবেলাতেই এরকম অভিজ্ঞতা দিয়ে অনেক মেয়েকেই যেতে হয়। এভাবেই প্রথমে মেয়েটির উচ্ছ্বলতাকে বাধাগ্রস্ত করে এক ধরনের জড়তা নিয়ে আসা হয় তার মাঝে। বাচ্চা বয়সেই একটা মেয়েকে আতঙ্কে থাকতে হয় নিজেকে নিয়ে।
তারপর কিশোর বয়সে পা দিতে না দিতেই ঘরে বন্দি করে ফেলা হয় মেয়েটিকে । মাঠে খেলতে যাওয়া বন্ধ, যখন তখন ছাদে একা একা যাওয়া নিষেধ, বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকা বারণ। সহজে বাইরে যেতে পারে না মেয়েটি। যদিও বা কখনো যায়, তখন নোংরা , কুৎসিত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয় তাকে। বাসে, ভিড়ের মাঝে, ফুটপাতে, এমনকি রাস্তাতেও বাজে অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয়।
এই নোংরা সমাজে এসমস্ত অভিজ্ঞতাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে যখন একটা মেয়ে নিজের মতন করে স্বাধীনভাবে বাঁচতে চায় বা বাঁচার চেষ্টা করে তখনি তাকে থামিয়ে দেয় আশেপাশের মানুষ ও পরিবার। কেনো এমন করে তারা? কারণ বাইরে মেয়েরা নিরাপদ নয়। কেনো নিরাপদ নয়? কারণ বাইরে অসভ্য লোকের আনাগোনা । তারা মেয়েদের নানান ভাবে হেয় করে। কিন্তু কেনো করে? কারণ তারা মানসিক ভাবে অসুস্থ। আচ্ছা তাহলে তাদের এ অসুস্থতা কেনো?
কারণ পুরুষতান্ত্রিক সমাজে নারীরা বেশিরভাগ সময়ই ঘরে বন্দি হয়ে থাকে। তাই যখন তারা বের হয় তখন এই সমস্ত লোকদের যৌন উত্তেজনা বেড়ে যায় কিনা তাই তারা সমস্যা করে নারীদের। এখন যদি তাদের জন্য নারীদের ঘরবন্দি করে রাখা তাহলে তা তো কোন সমাধান হতে পারে না ! নারীরা যদি ঘর বন্দি থাকে তাহলে তো এরা সুস্থ হবেই না বরং দিন দিন এদের অসুস্থতা আরো বেড়ে যাবে, অর্থাৎ তাদের দাপট বেড়ে যাবে। কিন্তু সেটাই বা কয়জন বুঝে? আমরা অনেকেই বুঝি, কিন্তু আমাদের আশে পাশের মানুষরা তো আর বুঝে না।
হ্যা, এখন হয়ত অনেকে বলবেন যে মেয়েরা পর্দাপ্রথা মেনে যদি চলতো, ওয়েস্টার্ন ড্রেস যদি না প্রতো, তাহলে এ সমস্যা গুলো কিছুই হতো না। কিন্তু পর্দাপ্রথা মেনে চললেই কি তাদের মানসিকতার পরিবর্তন আনা যাবে? অবশ্যই না! আর কে কিভাবে চলবে, কি ড্রেস পরবে, সেটা আপনি আমি ঠিক করে দেওয়ার তো কেউ নই, তাই না? তাছাড়া কথায় কথায় নারীদের উপর যারা পর্দাপ্রথা চাপিয়ে দিতে চায়, তারা নারীকে শুধু দূর্বল করতে চায়, আর কিছু না। কারণ, নারীর শক্তি বেড়ে গেলে যে বড় বেশি সমস্যা! নারীকে আর তার অধিকার খর্ব করে দাসি বানিয়ে রাখা যাবে না যে!
একটা মেয়েকে ছোটবেলা থেকে বড় হতে হয় নোংরামি পূর্ণ পরিবেশে, বড় হয়ে আরও নোংরামির শিকার হতে হয়, এ প্রত্যেকটি ব্যাপারের পেছনেই কিন্তু পুরুষদের হাত আছে। পুরুষরাই নারীদের আশে পাশের পরিবেশ তাদের জন্য অনিরাপদ করেছে। আবার তারাই বলছে নারীরা পর্দাপ্রথা মেনে চলে না বলে এমনটি হচ্ছে! তার মানে কি এই, পর্দা না মেনে চললে একটা মেয়েকে ধর্ষণ করা জায়েজ?
আমাদের সমাজে একটা মেয়ে যৌন নির্যাতনের শিকার হলে মেয়েটির দিকেই আঙ্গুল তোলা হয়, আর যারা নির্যাতন করে তাদের কোন দোষ নেই! যত দোষ মেয়েটির! মেয়েটি পর্দাপ্রথা মানে নি বলে তার খেসারত তাকে এভাবে দিতে হবে? ছেলেরাও তো পর্দা মেনে চলে না। কত ছেলে হাফপ্যান্ট পরে ঘুরে বেড়ায়, তাই বলে কি মেয়েরা তাদের উপর যৌন নির্যাতন চালায়?
পুরুষরা যখন বলে, মেয়েরা পর্দাপ্রথা না মানার কারণে নির্যাতনের শিকার হচ্ছে, তখন আমার সত্যি খুব হাসি পায়। কারণ তারা এভাবে নিজেদেরই ধর্ষক হিসেবে পরিচয় দিচ্ছে। নিজেদের ধর্ষক হিসেবে প্রমান করার জন্য তাদের কি অদ্ভুত চেষ্টা !
মেয়েদের পোষাক-কে দায়ী করে কোনভাবেই এর সমাধান করা সম্ভব না।
আমাদের পুরুষদের মানসিকতা পরিবর্তন-ই এর সমাধান হতে পারে।
সবই তো বুঝলাম কিন্তু পরিবর্তনটা আনা হবে কি করে? সবার আগে প্রশ্ন হওয়া উচিত সমাজ এমনটা ভাবে কেন? কোথা থেকে সমাজ এমন ভাবনা শিখল? একটা মেয়েকে তো শুধু সমাজের পুরুষরা নয়, মেয়েরাও মেয়ে হতে শেখায়. একটা মেয়ে যদি খোলামেলা পোশাক পরে বেরয়, লেট নাইট করে তাহলে তার মা তাকে দোষে. মাও কিন্তু মেয়ে. অদ্ভুত ব্যাপার. নয়? আবার কখনো দেখা গেছে বাবা মেয়েকে সাহসী হতে দিছে. বাবা তো এক পুরুষ. তাই নয় কি?
আমার মনে হয় যে সমাজে পুরুষদের একতরফা দোষ দিলে হবে না. প্রকৃত অবস্থা বুঝতে হবে. এটা নারী পুরুষের মজ্জাগত ব্যাপার নয়. সামাজিক বিধান আর শিক্ষা এর মূল কারণ. আর এই শিক্ষা আসে ধর্ম শাস্ত্র থেকে. প্রায় সব ধর্মই নারীকে দোষ দিয়ে গেছে. এই ধর্মীয় শিক্ষা থেকে আগে মুক্ত হওয়া প্রয়োজন. আর এর উদ্যোগ নিজেকেই নিতে হবে.
তবে নারীকেও নিজের স্বাধীনতার অপব্যবহার করলে চলবে না. স্বাধীনতার নাম যথেছাচার করা উচিত নয়. স্বাধীনতার সদ্ব্যবহার করে সুস্থ সমাজ গঠন করতে হবে.
“তবে নারীকেও নিজের স্বাধীনতার অপব্যবহার করলে চলবে না. স্বাধীনতার নাম যথেছাচার করা উচিত নয়. স্বাধীনতার সদ্ব্যবহার করে সুস্থ সমাজ গঠন করতে হবে.”
যথেচ্ছাচার সামাজিক বিশৃংখলা সৃষ্টি করে তা পুরুষ বা নারী যেই করুক না কেন। আপনার সকল কথার সাথে অতি সহমত প্রকাশ করছি।
Comment…পরিবর্তন আসতেই হবে। সেজন্যই এতকিছু!
এই জন্য হুমায়ুন আজাদ স্যার বলেছেন ” নারীরা নারী হয়ে জন্মায় না তাদের কে জন্মের পর নারী করে বানানো হয়। ”
লেখা টি অনেক সুন্দর। চিন্তাশীল একটা মনের পরিচয় দিয়েছেন লেখক।
এখানে আমার কিছু কথা আছে..
আমরা প্রতিনিয়ত আমাদের চারপাশে অনেক মেয়েকে অপমানিত হতে দেখি কিন্তু নির্বাক থেকে তাকে সমর্থনই জানাই। কিন্তু দেখা যায় যে সেটা যখন নিজের বোন বা প্রিয়তমার সাথে হয় তখন কিন্তু বিপদের তোয়াক্কা না করেই জাপিয়ে পরি প্রতিবাদ করি। তাহলে এখানেই প্রকাশ পায় মৌলিক অবক্ষয়ের বিষয়টি। অন্য সকলকে মানুষই মনে করে না কেউ। এখানে হয়ত কেউ বলবেন যে আমি করি কি না? আমি করি অন্তত চেষ্টা করি। আরেকটা ব্যাপার লেখক সুন্দর ফুটিয়ে তুলেছেন যে “নারীদের প্রতি যে একটা লোভাতুর দৃষ্টি যেটা হোক সে আদের ছোট বোন,ভাগ্নি, কিংবা মামনি কাউকেই ছাড় দেয় না। তাদের মানসিকতাটা কত নিচু স্তরের সেটা কল্পনাও করা সম্ভব না।” এত ক্ষুধা কেন? কেন এত যৌনতা, এর বাইরে কি তাদের চিন্তার জগৎ শূন্য? তাদের কে কি মানসিক বিকৃত রোগি বলা যায় না? এদের কে যদি থামানো যায় তবেই বোধ করি মেয়েদের প্রতিবাদের ভিতটা গড়ে উঠবে। কারন তাদের কে প্রতিবাদের ক্ষেত্রে আপনদের কারনে কম্প্রোমাইস করতে হবে না কোন।
সাহস করে মনোভাব প্রকাশের জন্য ধন্যবাদ। আমাদের সমাজের অধিকাংশ নারীই তাদের প্রতি অতি বৈষম্যমূলক ও নগ্ন আচরণ এর ব্যাপারে বুঝেও সাহসিকতার অভাবে কিছু করতে পারে না। যেটা থেকে বেরিয়ে এসে নারীর আগে নিজেদের Human being হিসেবে প্রমাণ করা আশু প্রয়োজন। যা আপনাদের মত সবাইকে দায়িত্ব পালন করতে হবে ভীতুদের সাহসী ও আত্মবিশ্বাসী করে গড়ে তোলার। পরিবর্তন আসবেই।
মূলত আমাদের দেশে সাধারণত মেয়েরা মুক্তভাবে
চলতে গেলেই তাকে উগ্রতা হিসেবে ধরা হয়! যেমন
ধরুন ড্রেসাপের ভিত্তিতে, ছেলেদের সাথে
সমতালে মেশার ভিত্তিতে। এসব এখনো
শহরাঞ্চলগুলোতেই গ্রহণযোগ্যতা রাখে না সব
পরিবারে আর ব্যপক বিস্তৃর্ণ গ্রামাঞ্চরের কথা বাদই দিলাম।
এমন ছোট খাট বহু জিনিস আছে যেসব জোড়া লাগালে
বড় ধরণের সমস্যার দেখা দিবে/দিচ্ছে! হূমায়ূন আজাদ
একটা কথা বলেছিলো “কেউ নারী হয়ে জন্মায় না,
আমাদের সমাজ রাস্ট্র ও পরিবার আমাদের নারী হতে
বাধ্য করে ফেলে”। এটাও এক ধরণের ব্রেণ ওয়াস!
যেমন একটা মেয়েকে চোখে বুকে আঙ্গুল দিয়ে
বোঝানো হয় তুমি একটা মেয়ে, তুমি একটা নারী,
তোমার কাজ ঘর সামলানো, বাচ্চা পালা, পড়াশোনা ভালো
করলে ভালো বর জুটবে হ্যেন ত্যেন…. তেমনি
কিন্তু একটা ছেলেকে শেখাতে হয় না! সে
অটোমেটিক্যেলি বুঝে যায় তার শক্তিস্তর তার সমাজে
মূল্যায়নের কারণ! পুরুষের শিশ্ন আছে নারীর নেই
এটাই কি পার্থক্য? মেয়ে শুনে রাখো, পুরুষরা এমনি এমনি
কখনোই কিছু করে দিবে না, কিছু করতে যারা (মানুষ-পুরুষ)
সাহায্য করবে তাদের সংখ্যা অতি সামান্য। যেটা নারী
অগ্রগতির জন্য সমুদ্রে খরকুটো টাইপ। যা করার নিজেরা
নিজ উদ্রোগে করতে হবে নাহলে পাছে এরূপ কথাও
শুনতে হবে ” উচ্চ শিখরে উঠেছো এই পুরুষেরি হাত
ধরে”!