দুহাজার দুই এর দাঙ্গার পর গোটা মুসলিম দুনিয়াতে তিনি ছিলেন কষাই মোদি। বুশ জমানা তার ভিসা বাতিল করায়, মুসলিম দুনিয়াতে কষাই মোদি আরো বৈধতা পায়। ইহুদি জাতির নিকট যিনি হিটলার, মুসলিম মানসে তিনি ই মোদি ।
অহ! সেটা ছিল আগের দশক। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরে দেখা যাচ্ছে মোদি পাকিস্তান এবং বাংলাদেশে জনপ্রিয়তা পাচ্ছেন। বাংলাদেশের লোকেরা তার কাছ থেকে প্রত্যাশা করা শুরু করেছে। কারন ছিটমহল সহ বহু ইস্যু যা কংগ্রেস ঝুলিয়ে রেখেছিল, মোদি সরকার দলের বিরোধিতা স্বত্ত্বেও বাংলাদেশে দাবীগুলি গুরুত্ব দিয়ে পার্লেমেন্টে তুলেছে এবং পাশ করিয়েছে।
এবার এক ঢিলে দুই পাখি মারা যাক। প্রশ্ন হচ্ছে (১) কেন মোদি হঠাৎ করে বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানে গ্রহণযোগ্য হচ্ছেন (২) মোদিই বা কেন হঠাৎ করে বাংলাদেশের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে উঠলেন যেখানে তার দল সংখ্যালঘু নির্যাতনের জন্য বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ” মার লাথি” বিদেশ পলিশি চালাতে আগ্রহী?
পেছনের খেলাটা অবশ্যই মার্কেটের। মোদি তৈরী করেছে মিডিয়া আর সেই মিডিয়াতে টাকা ঢেলেছে গুজরাতিরা। কারন গোটা ভারতে খেলছে গুজরাতিদের টাকা এবং ইনভেস্টমেন্ট। কংগ্রেসের “নো পলিশি” – গণতন্ত্র বনাম – মার্কেটের ডাঙ্গুলি খেলায় নিরেপেক্ষ দর্শকের ভূমিকায় , কোনভাবেই গুজরাতের ব্যবসায়ী শ্রেনীটি অন্য কারুর হাতে ভারতে ক্ষমতা দিতে নারাজ ছিল। এর জন্য দরকার ছিল এমন একজন অভিনেতা যিনি দর্শকদের মন জয় করতে পারবেন। ফলে ওরা মোদির ওপর ইনভেস্ট করল-মিডিয়া মোদির জন্ম হল। যিনি স্বপ্ন দেখান বেশী-যার নীটফল বড়জোর স্বপ্নদোষ -ঘুম ভাংলে দর্শক দেখে সে ভাঙা খাটে ছেঁড়া কাঁথাতেই শুয়ে আছে।
কেন বাংলাদেশ ? হাসিনার আমলে অবাধে বাংলাদেশে ব্যবসা বাড়িয়েছে ভারতীয় ব্রান্ডগুলি যাদের অধিকাংশ মালিকানা গুজরাতের হাতে। সুতরাং হাসিনাকে টিকিয়ে রাখা ভারতের জাতীয় কর্তব্য এবং গুজরাতিদের ব্যবসায়িক ধান্দা। হাসিনার কাছ থেকে এত সুবিধা পেয়েছে ভারতীয় কোম্পানীগুলি, তার বিনিময়ে তারা যদি বাংলাদেশের দু চারটে কথা না শোনে -তাহলে কি করে চলবে?
আমি বহুদিন আগেই লিখেছিলাম, একমাত্র মার্কেট বাণিজ্যই পারে দুই দেশের সম্পর্ক ভাল করতে। ইনফ্যাক্ট সেটাই আমরা দেখছি।
কিন্ত কেন বাড়ছে মোদির গ্রহণযোগ্যতা বাংলাদেশ বা পাকিস্তানে? যেখানে মোদি ছিলেন মুসলমানদের হিটলার? এর মূল কারন বাংলাদেশের লোকজন অপশাসন এবং দুর্নীতির জন্য ফেড-আপ। মোদি যে একজন সক্ষম শাসক-সেই বার্তা তাদের মিডিয়াগুলি দিচ্ছে। সেই সব মিডিয়াও চলছে ব্যবসার বিজ্ঞাপনের টাকায়-যার রাশ ভারতের গুজরাতি শ্রেনীটির হাতে। আমি পরিস্কার ভাবেই দেখছি, বাংলাদেশের মিডিয়াগুলি মোদি নিয়ে বেশ একটা পজিটিভ ইমেজ তৈরী করেছে-নিঃসন্দেহে এর পেছনে মূল হাত বাংলাদেশে ভারতের বাণিজ্য সংস্থাগুলির যারা এখন বাংলাদেশের বিজ্ঞাপনের মূল দাতা। এতেব!!
আমি কিন্ত এসব পজিটিভলিই দেখছি। প্রায় দশ বছর ধরে ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্ক নিয়ে লেখার সময়- বারবার বলে এসেছি দুই দেশের বানিজ্যই পারে সম্পর্ক ভাল করতে। কারন বাংলাদেশের ভারত বিরোধি জাতীয়তাবাদ এবং বাংলাদেশ নিয়ে ভারতের উদাসীনতা -দুটিই মার্কেটের জন্য বাজে। তাই মার্কেটই এর ওষুধ বার করল। সেই ওষুধের নাম নরেন্দ্র মোদি।
এখনো তিস্তা আসেনি, দেখা যাক। অল্পে ভোলে না এমন বাংলাদেশিও আছে 🙂
যদিও কংগ্রেস আমলে বিজেপির বিরোধিতা ছিল, ক্ষমতায় আসার পর সীমান্ত চুক্তি বাস্তবায়নে মোদি দৃঢ়-প্রতিজ্ঞ ছিলেন বলেই তা আলোর মুখ দেখেছে। অভিন্ন নদীগুলোর পানি-বণ্টন সমস্যার সমাধানেও মোদির সদিচ্ছা নিয়ে সন্দেহ নেই; কেবল বাড়ির পাশের মমতাদি যদি বিষয়টি রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে না দেখে মানবতা, যুক্তি আর ন্যায়বিচার দিয়ে বিবেচনার চেষ্টা করেন, তবে এই সমস্যার সমাধান সম্ভব। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে যে বিশাল ভারসাম্যহীনতা তা দূর করতে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেয়া। দুই বিলিয়ন ডলারের লাইন অফ ক্রেডিট, যার পঁচাত্তর ভাগ ভারতীয় পণ্য বা সেবা ক্রয়ে ব্যয় করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে, তা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে আশানুরূপ অবদান রাখবে কিনা তা বিশেষজ্ঞরাই ভাল বলতে পারবেন। তবে মনে রাখতে হবে যে বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড়ালে দেশান্তরের হার কমে যাবে, হয়তো অনেকের ভারত-বিরোধী মনোভাবেও পরিবর্তন আসবে; সেক্ষেত্রে একদিন কাঁটাতারের বেড়াও অদরকারী মনে হতে পারে।
আপনার সাথে একমত। মিডিয়াই সৃষ্টি করে, মিডিয়াই ধ্বংস করে
ইতিহাস বলছে এই পৃথিবীতে এক সময় বড় বড় জানোয়ার , আর ডাইনোসর রাজত্ব করত, তাদের দিন শেষ হয়েছে।
মানুষ পৃথিবীতে এসেছে দশ লক্ষ বছর আগে। আমরা দেখেছি ক্ষত্রিয়ের শাষন তথা শোষন, বিপ্রের তথা বৌধিক শ্রেণীর শাষন তথা শোষন। এখন চলছে বৈশ্য শ্রেণীর শাষন তথা শোষন, সময় যাকে একদিন ইতিহাসে পরিনত করবেই।