কয়েকদিন আগে সিলেটের সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কায়েস ডক্টর জাফর ইকবালকে ধরে এনে প্রকাশ্যে চাবুক মারার মনোবাসনা ব্যক্ত করেছেন। তিনি একজন আওয়ামীলীগ সমর্থিত সংসদ সদস্য। তার এহেন মনোবাসনার কারণ, জাফর ইকবাল আমাদের সরকারপ্রধানপুত্র জয়ের বিরুদ্ধে কটূক্তি করেছেন। সরকারপ্রধানের পুত্রের বিরুদ্ধে কটূক্তি করলে দোররা তো খেতেই হবে।
জয়ের বিরুদ্ধে কী কটূক্তি করেছেন জাফর ইকবাল?
অভিজিৎ রায় খুন হবার পর রয়টারের সাথে সাক্ষাৎকারে সরকারপ্রধানপুত্র জয় বলেছেন, অভিজিৎ তো স্বঘোষিত নাস্তিক ছিল।
তার মানে হচ্ছে, অভিজিৎ যেহেতু স্বঘোষিত নাস্তিক ছিল সেহেতু বাংলাদেশের জনবহুল ফুটপাতে তার খুন হয়ে যাওয়া ফরজে কিফায়া। এই ঘটনায় আশ্চর্য হবার কিছু নেই।
সরকারপ্রধানপুত্র জয় আরও বলেন, অভিজিৎ রায় ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ নামে বই লিখেছেন। অভিজিৎ খুন হবার পরে আমার সরকারপ্রধান মা অভিজিতের বাবা অজয় রায়কে গোপনে ফোন করে সমবেদনা জানিয়েছেন। তিনি আরো বলেন, আমারা নাস্তিক হিসেবে ট্যাগড হতে চাই না।
মানে হচ্ছে, যে মানুষ প্রকাশ্যে বিজ্ঞান দিয়ে যুক্তি দিয়ে ধর্মগুলি যে ডাহামিথ্যা সেটা প্রমাণ করে দেয় তাকে তো খুন হতেই হবে। খুন হয়ে যাওয়া মানুষের বাবাকে রাতের আঁধারে গোপনে চুপিচুপি ফোন করে একটু সমবেদনা জানিয়ে দিলেই তো যথেষ্ট। রাষ্ট্রপ্রধানের দায়দায়িত্ব খালাস। বিচারের প্রশ্নই অবান্তর। এই হত্যাকাণ্ডের বিচার করলে বা বিচারের কথা বললে সরকারও নাস্তিক হয়ে যাবে। নাস্তিক ট্যাগড হলে সরকারের সমস্যা আছে। ধর্মব্যবসা বানচাল। খৎনাকৃত ট্যাগড হলে কোনো সমস্যা নেই। ধর্মব্যবসা জমজমাট।
জাফর ইকবাল বলেছেন, জয়ের এধরনের বক্তব্য মৌলবাদীদের আরো উস্কে দিতে পারে। বিরাট অন্যায় কথা বলেছেন জাফর ইকবাল। জয় হচ্ছেন সরকারপ্রধানের পুত্র। তার বিরুদ্ধে এহেন কটূক্তি করা জাফর ইকবালের উচিত হয়নি মোটেই। দোররা তাকে খেতেই হবে।
একের পর এক নাস্তিক লেখককে দল বল নিয়ে প্রকাশ্যে লোকালয়ে এসে কুপিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে হত্যোৎসব উদযাপন করছে ইসলামিস্ট খুনিরা। মানুষ হত্যা তাদের কাছে উৎসব, মানুষ হত্যা তাদের কাছে শান্তি। তারা শান্তিপূর্ণভাবে নির্বিঘ্নে কুপিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে নিশ্চিন্তে হেঁটে চলে যাচ্ছে। এমন শান্তিময় অনুষ্ঠান পালনে বাংলাদেশে কোনো ভয়ের কারণ নেই। বিচার তো দূরের কথা, এবিষয়ে কোনো কথাই বলছেন না সরকার। নীরবে উপভোগ করছেন এই হত্যালীলা। এইরকম শান্তিপূর্ণ আনন্দঘন উৎসবে জাফর ইকবাল বিঘ্ন ঘটাতে আসেন কেন? বিচার তার হতেই হবে, চাবুক তাকে খেতেই হবে।
শান্তিকামী ইসলামিস্টরা নাস্তিক লেখকদের তালিকা তৈরি করে সরকারের হাতে দেয়, এদের ব্লাসফেমি দাবী করে। আর শান্তিকামী সরকার এদের দাবী অনুযায়ী একান্ত বাধ্য ছেলের মতো নাস্তিক লেখকদের ধরে ধরে জেলে পুরে দেশে অনাবিল শান্তি প্রতিষ্ঠা করে দেন। মৌলবাদীদের উস্কে দেয়া মানে কি? সরকার আনন্দ লাভ করে বলেই তো মৌলবাদীরা একের পর এক শান্তিপূর্ণ হত্যাযজ্ঞ ঘটিয়ে যাচ্ছে।
কিছুদিন আগে আওয়ামীলীগ সমর্থিত মন্ত্রী লতিফ সিদ্দিকী মুখ ফসকে একটা সত্য কথা বলে ফেলেছিলেন। এজন্য আওয়ামীলীগ সরকার তার মন্ত্রিত্ব কেড়ে নিয়েছেন, তাকে জেলে পুরেছেন। জাফর ইকবাল আমাদের সরকারপ্রধানপুত্রের বিরুদ্ধে কটূক্তি করেছেন ব’লেই আওয়ামীলীগের সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ কায়েস যৌক্তিকভাবে জাফর ইকবালকে দোররা মারার মনোবাসনা ব্যক্ত করেছেন। মাত্র সামান্য একটা সত্য কথা বলার অপরাধে লতিফ সিদ্দিকীর মন্ত্রিত্ব কেড়ে নেওয়া হলো, তাকে জেলে দেয়া হলো। আর মাহমুদুস সামাদ এমন চমৎকার একটা খায়েসের কথা ব্যক্ত করার জন্য কিছুই কি পাবেন না সরকারের কাছ থেকে? অন্তত একটা একুশে পদক, বা একটা জীবনানন্দ পদক কিছু তো তার প্রাপ্য।
আমেরিকার উন্নত নিশ্চিন্ত ও নিরাপদ জীবন ফেলে জাফর ইকবাল দেশে ফিরে এসেছেন দেশে ছেলেমেয়েদের মনে সুন্দরের স্বপ্ন বুনবেন ব’লে, দেশের মানুষের পাশে থেকে তাদের সুখদুঃখ অনুভব করবেন বলে। এই মানুষটি ঘুটঘুটে আঁধারে বাতি জ্বালিয়ে বসে থাকেন মানুষের মনের অন্ধত্ব দূর করতে। এই মানুষটি অকপটে কোদালকে কোদাল বলেন। যেকোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলেন, তরুণদের সাথে কণ্ঠ মিলিয়ে শাহবাগে দাঁড়িয়ে স্লোগান দেন, কাদের মোল্লার ফাঁসী চাই, গোলাম আজমের ফাঁসী চাই, সাইদির ফাঁসী চাই, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই। তেমনি এই মানুষটি নাস্তিক লেখক খুন হলে সেই খুনিদেরও বিচার চান। নাস্তিক লেখকদের বিরুদ্ধে মৌলবাদী খুনিদের উস্কে দেয়া হলে তাও অকপটে বলেন। এই মানুষটিকে দোররা মারা না হলে আর মারা হবে কাকে?
জাফর ইকবালকে অবিলম্বে দোররা মারার আয়োজন করা হোক। সাংসদ মাহমুদুস সামাদের খায়েস পূরণ করা হোক। জাফর ইকবালকে বেঁধে প্রকাশ্য দিবালোকে আপাদমস্তক চাবুক মারবে মাহমুদুস সামাদ। এই আনন্দময় উৎসব চেয়ে চেয়ে দেখুক বাংলাদেশ, দেখুক পৃথিবী।
কঠিন বাস্তব সত্য বলেছেন 🙁
হায়রে দূর্ভাগ্যের খেয়া! ঘোলা পানিতে মাছে শিকারের বিদ্যায় সরকারের যথেষ্ট পারদর্শিতা আছে জানতুম। এখন দেখছি প্রধানমন্ত্রী তার সোনার ছেলেটিকেও সেই বিদ্যার দীক্ষা ভালমতোও দিয়েছেন এবং জয় ছোকড়াও তা ভালভাবে রপ্ত করেছেন। ব্রিলিয়ান্ট ইন্জেনিয়ার বলে কথা! তাছাড়া তাদের পেছনে বর্মসুরক্ষার ঢাল হিসেবে এম.পি মন্ত্রিদের মুখের লাগোয়া উদ্ধত চাবুক তো উত্তোলিত হয়ে রয়েছেই। কেউ তাদের বিরুদ্ধে মুখ খুললেই বাজারী গুন্ডাদের মত নোংড়া ঝাড়ুর এক ঘা তার মুখ কপাটিতে বসিয়ে দেয়াকে এরা ফরজে কেফায়া জ্ঞান করে। কি আজিব ক্যারেক্টার?
বাংলাদেশে প্রফেসর জাফর ইকবালের জনপ্রিয়তা আকাশচুম্বী। সেখানে তাঁকে এত বড় অপমান করার পরে যেরকম একটা বিক্ষোভের জোয়ার আশা করেছিলাম সেরকম কিছুই হয়নি। অন্যদিকে তারেক জিয়া বা হেফাজতুল ইসলামের তেঁতুল হুজুর সম্পর্কে যদি কেউ সামান্য কিছুও বলে – প্রচন্ড বিক্ষোভ হয়। আমাদের ভালোবাসা কি তবে শুধুই বায়বীয়?
কলম চলুক নীলাঞ্জনা।
তিক্ত সত্যি
ঠিক বলেছেন।
সাম্প্রদায়িকতা,জাতিভেদ
প্রভৃতি গনতন্ত্রের সাথে সহবস্থান করছে।কারন ধড়িবাজ রাজনৈতিক নেতারা বোট এর জন্য অনেক নীচেই নামতে পারে। তাই সত লোকেরা রাজনীতি করতে চায় না , ফলে সমাজের নৈতিকতার কমে যাচ্ছে।
আমাদের মন্ত্রী-সাংসদরা তাদের পদলাভের জন্য মূলত দলের শীর্ষ নেতার আনুকূল্যের উপর নির্ভরশীল। পদ ধরে রাখতে হলে নেতার নেকনজরে থাকা অতি-গুরুত্বপূর্ণ। এজন্যই তারা এধরনের বেফাঁস কথা বলে নিজেদের মোসাহেবী দায়িত্ব পালনের নমুনা দেন। শুধু রাজনীতিকদেরই বা নিন্দা করি কেন; বুদ্ধিজীবি, রাস্ট্রের বেতনভোগী কর্মচারী, বিদ্যালয়ের শিক্ষক কে না চাটুকারিতায় সিদ্ধহস্ত। তাই “বাবু যত বলে পারিষদ দলে বলে তার শতগুন” মেনেই এই দেশে বাস করতে হবে।
ক্ষমতাসীনরা এখন পদ ধরে রাখার জন্য খুনিদের পদলেহনও করেন।