১. শান্তির ধর্ম
শান্তির ধর্ম নামে পরিচিত ইসলাম। কিন্তু, ইসলাম শান্তির ধর্ম নয়, এই সহজ সত্যটাকে অত্যন্ত দৃঢ়ভাবে ব্যক্ত করেই আয়ান হারসি আলি তাঁর সাম্প্রতিক বই হেরেটিকে ইসলাম ধর্মের জন্য সংস্কার প্রস্তাব এনেছেন। এক সময় প্রটেস্ট্যান্টরা যেমন সংস্কার প্রস্তাব এনেছিলো ক্যাথলিক খৃস্টান ধর্মের বিরুদ্ধে, এটা অনেকটা সেরকমই।
আয়ান হারসি আলি উল্লেখ করেছেন যে, “সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে তেরো বছরেরও বেশি সময় ধরে খুব সহজ একটা সত্যকে আমি বলার চেষ্টা করছি। আমাদের রাজনৈতিক নেতারা সবসময় বলার চেষ্টা করেন যে, উগ্র মৌলবাদী মুসলমানদের কর্মকাণ্ড যে ধর্মীয় আদর্শ দ্বারা তারা অনুপ্রাণিত তার সাথে সম্পর্কযুক্ত নয়। তার বদলে আমি বলবো যে, আমাদের অবশ্যই স্বীকার করতে হবে যে, তারা এমন এক রাজনৈতিক মতাদর্শ দ্বারা পরিচালিত যা ইসলামের মধ্যেই অন্তর্নিহিত রয়েছে, যা রয়েছে পবিত্র কোরানের মধ্যে, যা রয়েছে নবী মুহাম্মদের জীবন ও শিক্ষা বলে খ্যাত হাদিসের মধ্যে। ইসলামিক সন্ত্রাস সামাজিক, অর্থনৈতিক বা রাজনৈতিক অস্থিরতা, বা ধর্মতাত্ত্বিক ভ্রান্তির মধ্যে নিহিত নয়, বরং এর শিকড় রয়ে গিয়েছে কোরানের আদি এবং অকৃত্রিম আয়াতসমুহের মধ্যে।“
আয়ান হারসি আলি যে খুব একটা ভুল বলেন নি, সেটা সাম্প্রতিককালের ঘটনা প্রবাহ যাচাই-বাছাই করলেই টের পাওয়া যায়। বিশ্বের যেখানে যতো সন্ত্রাস ঘটছে, তার সাথে কোনো না কোনভাবে শান্তির ধর্মের অনুসারী বলে দাবি করা মুসলমানরা জড়িয়ে যাচ্ছে। বিশ্ব মিডিয়াতে বার বার উঠে আসছে ইসলামের নাম। তবে, এই উঠে আসাটা শান্তির ধর্ম হিসাবে নয়, বরং এর বিপরীত সহিংস এক ধর্ম হিসাবেই আসছে।
গত বছরের এপ্রিলের চৌদ্দ তারিখে নাইজেরিয়াতে ইসলামিক সন্ত্রাসবাদী দল বোকো হারাম দুইশো ছিয়াত্তর জন স্কুল ছাত্রীকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। মে মাসের পনেরো তারিখে সুদানে মরিয়ম ইব্রাহিম নামের একজন মহিলাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়। তাঁর অপরাধ ছিলো তিনি স্বধর্ম অর্থাৎ ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করেছিলেন। জুনের ঊনত্রিশ তারিখে ইরাক এবং সিরিয়াতে আইএস তার খিলাফত ঘোষণা করে। অগাস্টের ঊনিশ তারিখে আমেরিকান সাংবাদিক জেমস ফলির শিরোচ্ছেদ করা হয়। এই শিরোচ্ছেদের ভিডিও চিত্র প্রকাশিত হয়েছে। সেপ্টেম্বরের দুই তারিখে আরেক আমেরিকান সাংবাদিক স্টিফেন সটলফকেও একই পরিণতি বহন করতে হয়। এদের দুজনেরই শিরোচ্ছেদ যে করেছে, সে বৃটিশ শিক্ষায় শিক্ষিত একজন। শুধু এরা দুজনেই নয়, এরকম প্রায় তিন থেকে চার হাজার ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের নাগরিকেরা ইরাক এবং সিরিয়াতে জিহাদে অংশ নিয়েছে। সেপ্টেম্বরের ছাব্বিশ তারিখে এলটন নোলেন নামের এক নব্য মুসলমান, ওকলাহোমার এক ফুড প্রসেসিং প্লান্টে তার সহকর্মী কলিন হাফর্ডের কল্লা নামিয়ে দেয়। অক্টোবরের বাইশ তারিখে আরেক নব্য মুসলমান মাইকেল জিহাফ-বিবো অটোয়ার ক্যাপিটল বিল্ডিং এ হামলা চালায়। এই আক্রমণে করপোরাল ন্যাথান সিরিলো গুরুতরভাবে আহত হন। ডিসেম্বরের পনেরো তারিখে ম্যান হারন মরিস সিডনির এক ক্যাফেতে আঠারো জন মানুষকে জিম্মি করে ফেলে। গোলাগুলিতে দুইজন মারা যায়। জানুয়ারি মাসের সাত তারিখে ঘটে সবচেয়ে ভয়াবহ আক্রমণ। সাইদ এবং শেরিফ কুয়াচি নামের দুই ভাই মুখোশ পরে একে-৪৭ এসল্ট রাইফেল নিয়ে ঢুকে পড়ে ফরাসি স্যাটায়ার ম্যাগাজিন শার্লি হেবদোর অফিসে। পত্রিকার সম্পাদকসহ এগারো জনকে হত্যা করে তারা। সেই সাথে আহত করে আরো এগারো জনকে। বের হবার সময় বিল্ডিং এর বাইরে তারা গুলি করে হত্যা করে একজন পুলিশ অফিসারকেও। কুয়াচি ভাইয়েরা নিজেদের ইসলামি সন্ত্রাসী গ্রুপ আল কায়েদার ইয়েমেনি শাখা বলে পরিচয় দেয়। আল কায়দার ইয়েমেনি শাখা এই হামলার দায়-দায়িত্বও স্বীকার করে নেয়। একই দিনে এর সাথে সম্পৃক্ত আরো কিছু হামলা ঘটে শহরের নানা জায়গায়। এতে আরো পাঁচ জন নিহত হয়, আহত হয় এগারো জন।
আমাদের বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম কিছু নয়। বরং এর চরমরূপ আমরা প্রত্যক্ষ করছি এখন ভয়ানক বেদনার সাথে। মাত্র দুই বছর আগে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে থাবা বাবা ওরফে স্থপতি রাজীব হায়দারকে। এই হত্যাকাণ্ডের আসামী হিসাবে পাঁচজন ছাত্রকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরা সবাই নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। গ্রেফতারকৃত আসামীরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, তারা নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের নামাজ কক্ষে নামাজ পড়তে গিয়ে একে অপরের সাথে পরিচিত ও ঘনিষ্ঠ হয়। সেই সূত্রে তারা ইসলামিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করত এবং ইন্টারনেট হতে বিভিন্ন তথ্য শেয়ার করত। তারা জানায়, তাদের গ্রুপের এক বন্ধু একসময় বাংলাদেশ ছাত্র শিবিরের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল।
থাবা বাবার স্মৃতি ফিকে হয়ে আসতে না আসতেই, এ বছরের শুরুতে চাপাতির আঘাতে নিহত হন মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা, জনপ্রিয় বিজ্ঞান লেখক এবং যুক্তিবাদী অভিজিৎ রায়। তাঁর সাথে ছিলেন তাঁর স্ত্রী রাফিদা আহমেদ বন্যা। বন্যা নিজেও একজন বিশিষ্ট লেখিকা, মুক্তমনা আন্দোলনের সামনের সারির মানুষ। তিনি এই হামলায় গুরুতরভাবে আহত হন। এক হাতের বুড়ো আঙুলও হারিয়েছেন চাপাতির আঘাতে। অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের মাত্র দুই ঘণ্টার মাথায় আনসার বাংলা সেভেন নামের একটা গোপন ইসলামিক দল অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে নিয়ে টুইট করে। অনলাইনে অভিজিৎ-কে মৃত্যু হুমকি দেওয়া ফারাবীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এই ফারবী নিজে একজন ইসলামিস্ট। অনলাইনে ব্লগারদের হুমকি দেওয়ার ক্ষেত্রে এর অবস্থান শীর্ষে।
অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডের মাত্র এক মাসের মাথায় নিহত হয় ওয়াশিকুর রহমান বাবু নামে একজন ব্লগার। বাবুর হত্যাকারীদের মধ্যে দুজনকে ধরে ফেলতে সক্ষম হন তৃতীয় লিঙ্গের কয়েকজন মানুষ। তাঁরা এদেরকে পুলিশের হাতে হস্তান্তর করেন। দেখা যায় যে, এই খুনিদের দুইজনই মাদ্রাসা পড়ুয়া ছাত্র। তারা তাদের ইমানি দায়িত্ব পালন করার জন্য বাবুকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে।
মাত্র কয়েকদিন আগে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে অত্যন্ত নৃশংসভাবে হত্যা করা হয় মুক্তমনার লেখক অনন্ত বিজয় দাশকে। খুনের অংশ নেয় চারজন ঘাতক। প্রত্যেকেই কালো মুখোশ দিয়ে মুখ ঢেকে রেখেছিলো। অভিজিৎ রায়ের মতোই অনন্ত বিজয় দাশের ক্ষেত্রেও আনসার বাংলা সেভেন থেকে টুইট করা হয়।
এ মাসের শুরুর দিকে অভিজিৎ রায়কে হত্যার দায় স্বীকার করে নেয় ভারতীয় উপমহাদেশে তৎপর আল কায়েদা সংশ্লিষ্ট জঙ্গি গ্রুপ আল কায়েদা ইন ইন্ডিয়ান সাব কন্টিনেন্ট (একিউআইএস)। বিশ্বব্যাপী চরমপন্থী সন্ত্রাসীদের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণকারী মার্কিন প্রতিষ্ঠান এসআইটিই’র (সার্চ ফর ইন্টারন্যাশনাল টেররিস্ট এনটিটিজ) উদ্ধৃতি দিয়ে এ খবর প্রকাশ করে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম।
আল কায়দা এবং আনসার বাংলার সংশ্লিষ্টতা থেকে সহজেই বোঝা যায় যে, এই সমস্ত ইসলামিক সশস্ত্র জঙ্গী বাহিনীগুলিই তালিকা তৈরি করে, একের পর এক মুক্তবুদ্ধির লোকদের হত্যা করে চলেছে। ঠিক যেমনটি করেছিলো এদেরই পুর্বসূরী পাকিস্তান বাহিনী এবং তাদের দোসর রাজাকার এবং আল বদর বাহিনী। তাদের ধর্মানুভূতি এতোই তীব্র যে সামান্যতম সমালোচনা সহ্য করার ক্ষমতাও তাদের নেই।
উপরেরগুলো খুবই সাম্প্রতিক ঘটনা। এর আগেও এরকম বহু হামলা করা হয়েছে দেশে দেশে। আর, এই হামলাগুলোর প্রতিটাই হয়েছে ইসলামের নামে। ইসলামি সৈনিকেরা ইসলামের সম্মান ও মর্যাদা রক্ষার্থে কিংবা প্রতিশোধ নিতে এই সব হামলা চালিয়েছে। ইসলামের নামে সন্ত্রাসবাদ এখন আর শুধু মধ্যপ্রাচ্য এবং উত্তর আফ্রিকাতেই সীমাবদ্ধ নেই, এর বিস্তার ঘটেছে পশ্চিম ইউরোপে, আটলান্টিক মহাসাগর পেরিয়ে উত্তর আমেরিকাতেও।
আয়ান আক্ষেপ করে বলেছেন যে, এতো কিছুর পরেও পশ্চিমা বিশ্বের রাজনৈতিক নেতারা এই সত্যটা বুঝতে অক্ষম হচ্ছেন যে, ইসলামের নামে এই চরমপন্থা বিপথগামী কিছু লোকের কাণ্ডকারখানা নয়, বরং এই চরমপন্থার কারণ গভীরভাবে প্রথিত রয়েছে এই ধর্মের অভ্যন্তরেই। শুধুমাত্র আল কায়েদা এবং আইএস এর মতো চরমপন্থী দলগুলোই তাদের সন্ত্রাসী চেহারা দেখাচ্ছে তা না, যেখানে যেখানে ইসলাম প্রচলিত রয়েছে সেখানে সেখানেই এই একই দশা বিদ্যমান। পাকিস্তানে মুহাম্মদকে সমালোচনা করলে, সেটিকে ধর্মদ্রোহিতার অপরাধ হিসাবে বিবেচিত হয় এবং এর শাস্তি হচ্ছে মৃত্যদণ্ড। সৌদি আরবে চার্চ বা বিধর্মীদের প্রার্থনাঘর বে-আইনি। বড়সড় অপরাধের জন্য শিরোচ্ছেদ বৈধ। ইরানে পাথর মেরে হত্যা করার বিধান আছে। সমকামিতার শাস্তি সেখানে মৃত্যুদণ্ড। এই আইন ব্রুনাইতেও রয়েছে। পশ্চিমা উদারপন্থীরা ইসলামি সন্ত্রাসের চেয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেবার বিষয়ে বেশি ভীত। ফলে, নাইন ইলেভেনের ঘটনা যারা ঘটিয়েছে, তাদেরকে মুসলমান সন্ত্রাসী না বলে বলা হচ্ছে শুধুমাত্র সন্ত্রাসী। এর মাধ্যমে গোপন করার চেষ্টা করা হচ্ছে যে, এরা আসলে মুসলিম সন্ত্রাসী, ইসলামের নামেই এই ভয়ংকর পৈশাচিক ঘটনা ঘটিয়েছে। এই পশ্চিমা রাজনীতিবিদদের কাছে অত্যন্ত প্রিয় হচ্ছে মডারেট মুসলমানেরা। এই মডারেটরা অন্ধের মতো যপমন্ত্র আউড়ে যাচ্ছে শুধু এই বলে যে, ইসলাম হচ্ছে শান্তির ধর্ম, ইসলাম হচ্ছে শান্তির ধর্ম। যাঁরা ইসলাম ধর্মত্যাগী, যাঁরা ইসলামের সংস্কারের পক্ষে, তাঁদেরকে সযত্নে দূরে সরিয়ে রাখছে এই সকল উদারপন্থী ধার্মিকেরা।
আয়ান পরিষ্কারভাবে বলার চেষ্টা করেছেন যে, আল-কায়েদা এবং আইএস- এর সাথে ইসলামের সংযোগ অত্যন্ত নিবিড়। তাঁর এরকম সুস্পষ্ট অবস্থানের কারণে মৃত্যুর হুমকি পেয়েছেন তিনি বহুবার। এর সাথে সাথে তুলনামূলকভাবে কম ভায়োলেন্ট সমস্যাও তাঁকে মোকাবিলা করতে হয়েছে। সিএআইআর এর মতো ইসলামিক সংগঠনগুলো বিভিন্নভাবে তাঁকে বক্তব্য দিতে বাধা দিয়েছে। তারা বলার চেষ্টা করেছে যে, আয়ান ইসলাম ধর্মে বিশেষজ্ঞ না, এমনকি এই ধর্মের অনুসারীও নয়। কাজেই, এই বিষয়ের উপর কথা বলার যোগ্যতা তাঁর নেই। ওয়েস্টার্ন লিবারেলরাও কম যায় নি। তাঁরা তাঁকে ইসলাম বিদ্বেষীর ট্যাগ দিয়ে ফেলেছে।
আয়ান হিসরির বক্তব্য সম্পর্কে বেশী কিছু জানি না। ইসলাম ঘটিত সমস্যা বলতে আমরা যা বুঝি (যা এখানের হাইলাইট) তা মূলতঃ পোষ্ট ৯১১ ইসলামের নামে চালিত নানান সন্ত্রাসী কার্যক্রম। ভাবখানা এমন যে এর আগে বিশ্বে ইসলাম ঘটিত আর কোন সমস্যা হয়নি, এবং সমস্যা কেবলই কিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসী গ্রুপের কার্যকলাপে সীমাবদ্ধ। এর বিপরীতে যা ফ্যাক্ট তা হল সমস্যাটা শুধু সন্ত্রাস গ্রাউন্ডে সীমাবদ্ধ না, বরং আরো অনেক ব্যাপক; এবং এটা হঠাতই ৯১১ এর পর থেকে শুরু হয়নি। সমস্যাটা মূলতঃ মুসলমানদের ভেতর ইসলাম ধর্মের ইন্টারপ্রেটেশন কিভাবে করা হয় সেখান থেকে, এবং এর মাত্রা মোটেও কেবল সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী ঘটনাগুলায় সীমাবদ্ধ নয়। ধর্ম এখনো বিশ্বজুড়েই বহাল তবিয়তে টিকে আছে, আছে নানান বিশ্বাসের ধর্মগুরুরাও। অন্য কোন ধর্মের লোকে গান শোনা যাবে না, ছবি তোলা যাবে না, নিজ দেশের নানান জাতীয় দিবস পালন করা যাবে না, পতাকা তোলা যাবে না এই জাতীয় ফতীয়া দেয় কেউ শুনেছেন? মূল সমস্যা হল কালচারাল ক্ল্যাশে।
সমস্যার মূল হল মুসলমানদের যেভাবে কোরান হাদীস মেনে জীবনের প্রতি পদক্ষেপ চালাতে হবে এই দর্শন মস্তিষ্কে আজন্ম প্রবেশ করানো হয় সেখান থেকে। ৭ম শতকের আরব মরুতে নাজিল হওয়া বিধিবিধানে এই যুগেও চালাতে গেলে ফলাফল যা হবার তাই হচ্ছে। চরম ক্যাওয়াজ। এই অবাস্তব দর্শনের কারনে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরা যেভাবে ধর্মকে জীবন যাপন থেকে আলাদা করতে পেরেছে মুসলমানরা সেভাবে পারছে না। কারন ইসলাম পূর্নাংগ দ্বিন মানতে গেলে ধর্মনিরপেক্ষতা মানা যায় না – যত সমস্যার রুট কজ আছে সেখানে। অন্যদিকে সভ্যতার প্রয়োযনে ধর্মের সাথে আপোষ করতেই হয়। যা মূলত ধর্মনিরপেক্ষ নীতির জয়। এমন একটা দেশও কেউ এ আমলে দেখাতে পারবেন যেখানে কোরানের সব নির্দেশ পালন করা হয় বা কোরানের সাথে সাঙ্ঘর্ষিক কোন আইন নেই? হাদীস বা নবীজির আদর্শ জীবন বাদই দিলাম। এই দুই ভাবধারার টানাপোড়েন পুরো মুসলমান বিশ্বেই ধর্মনিরপেক্ষ এবং ইসলামিষ্ট দুই গ্রুপ তৈরী করেছে। নানান দেশে সময়ে সময়ে এই দুই গ্রুপ সঙ্ঘর্ষে লিপ্ত হয়েছে, ৯১১ বা আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদের সাথে এর যোগ নেই। এ কারনেই এমন একটাও মুসলমান দেশ নেই যেখানে কোন না কোন জিহাদী গ্রুপ নাই, জিহাদী গ্রুপদের মূল লক্ষ্য ধর্মের সাথে কোন আপোষ করা যাবে না। জিহাদী হবার মূলমন্ত্র এখানেই আছে, টাকা পয়সা মার্কিন সাম্রাজ্যবাদ এসব গৌণ। ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, আফগানিস্তান এসব দেশে সহি ইসলামী সমাজ কায়েমের দাবীতে নানান জিহাদী গ্রুপ বহু আগ থেকেই আছে। এই দ্বন্দ্ব বাংলাদেশেও চরমভাবেই আছে। কালচারাল ক্ল্যাশ দিনে দিনে বাড়ছে। যারা জিহাদী গ্রুপগুলিতে সরসরি যোগ দেয় না কিন্তু ইসলাম কায়েমের স্বপ্ন দেখে তারাও এসব গ্রুপের প্রতি স্বাভাবিকভাবেই দূর্বলতা বোধ করে। ইসলামের প্রতি লোকে এতটাই মোহাবিষ্ট থাকে যে এর মান মর্যাদা রক্ষার নামে চরম সহিংস হতেও তাদের বাধে না।
মৌলবাদীরা ধানাই পানাই বোঝে না, তারা যা সত্য তাইই সরাসরি বলে। অন্যদিকে মডারেটরা দুই কূলই রক্ষা হয় এভাবে বলতে চায়। ত্রাআ এখন সহি হাদীস মানে না, কোরানের আয়াত সরাসরি মানা যাবে না, নানান সূত্রের বহিস্ত সূত্রের সাহায্যে সেগুলি যুগোপযুগি করার চেষ্টা করে, সেসবও আবার হাজার বছর ধরে প্রচলিত অথেন্টিক সোর্স হলেও হয় না, হতে হয় নিজেদের পছন্দের বর্তমান কালের ধূর্ত লোকজনের লেখা। ভাবখানা এমন যে নবীজির যুগে লোকে কোরান পড়ে বুঝতো না, বুঝতে টাইম মেশিনে ভ্রমন করে বর্তমান যুগের ভিডিও আলেমদের ব্যাখ্যা জেনে নিত। এসব মডারেটগন আপত চোখে মনে হয় বেশ সংস্কারবাদী, কিন্তু বাস্তবতার চোখে তারা আসলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হওয়া ছাড়া ভাল কিছু করেন না।
এই বিষয়ে দুটো দিক মাথায় রাখতে হয়। সমস্যা আছে আমরা সকলেই জানি। কথা হল সমস্যাটা ইসলাম ধর্মের, নাকি মুসলমানদের? এটা অবশ্যই সত্য যে ধর্মে থাক বা না থাক, নিশ্চিতই বেশীরভাগ মুসলমান এসব সমর্থন করে না। কিন্তু সত্য হল তার পরেও অবস্থার দিনে দিনেই অবনতি হচ্ছে। এর কারন কি হতে পারে?
– সরল সত্য হল যতদিন না মুসলমানরা অন্যান্য ধর্মের লোকের মত ধর্মনিরপেক্ষ নীতির দিকে না যেতে পারবে ততদিনই তারা নিজেরাও ধর্ম কেন্দ্র করে নানান সমস্যায় জ্বলবে এবং পুরো বিশ্বকেও জ্বালাবে। পশ্চীমা দেশে বাড়ছে মুসলমান জনগোষ্ঠী। নিজেদের দেশে ইসলাম বাদে সব ধর্ম বিকৃত বাতিল বললে লোকে স্বাভাবিকভাবে নেয়, কিন্তু পশ্চীমা দেশে এসব প্রচার করলে ধর্মীয় স্বাধীনতার নামে লোকে মেনে নেবে? আমি স্বল্পবুদ্ধিতে যা বুঝি তা হল সমস্যা আসলে মোটে শুরু হয়েছে, এর জের কতদুর যায় বলা যায় না।
ধর্মনিরপেক্ষতার স্বীকৃতি মুসলমানদের জন্য বিশাল মানসিক পরাজয়ের সামিল। কাজেই এর আশু সম্ভাবনা নেই। যদিও বাস্তব হল সব মুসলমান দেশই কম বেশী ধর্মনিরপেক্ষ নীতিতেই চলে। আয়ান হিসরির মত বই লিখে সংস্কার সম্ভব না।
মঞ্জুর মোর্শেদ ওপরে একটা ভাল পয়েন্ট বলেছে।
– এর সহজ এবং একমাত্র সমাধান হল ধর্মনিরপেক্ষতা। ধর্মনিরপেক্ষ নীতি থাকলে আসল ব্যাখ্যা, সহি হাদীসের সহিত্ব এসবের আদৌ প্রয়োযনই পড়বে না। লোকে কোরান হাদিস পড়বে মানসিক শান্তির জন্য। সব ধর্মেই নানান জোড়াতালি আছে। খৃষ্ট ধর্মের লোকের বাইবেল তফসির লাগে বলে শুনিনি, বা যীশূর জীবন যাপন ভিত্তিক হাদীস জাতীয় কোন সূত্রও লাগে না। কারন তারা বাইবেল ভিত্তিক সমাজ গড়তে হবে, যীশুর দাঁড়ি ছিল তাই আমরাও দাঁড়ি রাখলে বেহেশতে যাওয়া যাবে এই রকম দর্শন নিয়ে বড় হয় না।
বরাবরের মতো সুচিন্তিত মতামত। যে যুগে ইসলামের আবির্ভাব, ধর্মটি সেযুগের রাজনৈতিক এবং সামাজিক প্রয়োজনগুলো মেটানোর চেষ্টা করেছে। কিন্তু বর্তমান যুগের দাবী সম্পূর্ণ ভিন্ন; দেড় হাজার বছর আগের আরব জীবনযাত্রা, সমাজ ব্যবস্থা আর রাজনীতি কখনই বর্তমান যুগে স্থান, পাত্র নির্বিশেষে উপযোগী হতে পারে না। অথচ বহু মুসলিম এই সহজ সত্যটি বুঝতে বা মানতে চান না। তারা যুগ, কাল ইত্যাদি বিবেচনায় না নিয়ে ইসলামকে এর আদি রূপে অনুসরণ করতে চান এবং ধর্মকে কেবল ব্যক্তিগত আচরণ হিসাবে না দেখে একে সামাজিক আর রাজনৈতিক জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসাবে দেখতে চান। আপনি সমাধান হিসাবে ধর্মনিরপেক্ষতার কথা বলেছেন। এটা সত্যি যে মুসলিমদের মধ্যে ধর্মনিরপেক্ষ মনোভাব গড়ে উঠলে আপনা আপনি রাজনৈতিক ইসলাম দুর্বল হয়ে পড়বে এবং তখন আর কোরান-হাদিসের যুগোপযোগী ব্যাখ্যারও দরকার পড়বে না। তবে বড় সমস্যা এই যে বেশীরভাগ মুসলিম মানস ধর্মনিরপেক্ষতার বিপরীত মেরুতে অবস্থান করেন। আসলে কোন একটি ধর্মের অনুসারী সত্যিই কতটা ধর্মনিরপেক্ষ হতে পারেন তা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে। অন্যদিকে কোরান-হাদিসের যুগোপযোগী ব্যাখ্যার মাধ্যমে পরিবর্তনের চেষ্টা একেবারে বিফল নাও হতে পারে। প্রায়শই দেখা যায় যে জঙ্গিরা ধর্মানুরাগী কিশোর-তরুণদের টার্গেট করে। শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানে, মসজিদে বা প্রচার মাধ্যমে এই কিশোর-তরুণরা যদি জঙ্গিবাদ/সন্ত্রাস-বিরোধী আলোচনা বা মতামত শোনে এবং সমস্যাটি সম্পর্কে একটি বিকল্প ধর্মীয় দৃষ্টিভঙ্গি পায়, তাহলে হয়তো তারা জঙ্গিবাদের সহজ শিকার নাও হতে পারে। বলা ভাল, এগুলো হয়তো বাস্তবতা থেকে বেশ দূরে ওড়ানো কল্পনার ফানুস; তবুও সমস্যাটি যেহেতু বহুমাত্রিক এর সমাধানের প্রস্তাবনাও হতে হবে বহুমুখী। দেড় হাজার বছরের জমে ওঠা সমস্যার সমাধান রাতারাতি হবে না। তারচেয়েও বড় কথা কেবল সমালোচনা করে, ‘ঘৃণার চাষ’ করে এই সমস্যার সমাধান অসম্ভব। ফরিদ আহমেদকে আবারও ধন্যবাদ একটি সময়োপযোগী লেখা দেয়ার জন্য। পরবর্তী পর্বগুলোতে তাঁর বিশ্লেষণ-নির্ভর মতামত শোনার অপেক্ষায় রইলাম।
শরীয়াবাদিতা ও রাজনৈতিক ইসলামের থেকে ইসলামকে বের করে আনার কোনো বিকল্প নাই।
আয়ান হারসি আলি , আকাশ মালিক , সুসুপ্ত পাঠকের মত লেখকদের থট প্যাটার্ন একই রকম, যেটা ইসলামিক
ওয়ার্ল্ডে গ্রহণ যোগ্য হবার কথা নয়। “যে সত্য বলাহয়নি ” ইংরেজিতে অনুদিত হলে একই রকম রেসপন্স
পাওয়া যাবে।
লেখাটির জন্য ধন্যবাদ। আমি আয়ান হিরসি আলীর একটি আর্টিকেল অনুবাদে হাত দিয়েছি। সেখানে স্পষ্টভাবে পাঁচটি সংস্কারের কথা বলা আছে। খুবই যুক্তিযুক্ত পাঁচটি বিষয়। আয়ান হিরসি আলীর কাজের যাথার্থ্য নিয়ে বিরোধীদের হাতের অস্ত্র তুলে দেওয়া হয়েছে তার ডাচ ইমিগ্রেশনে মিথ্যে তথ্য দেওয়া নিয়ে, সেটা যে কারণেই হোক না কেন, এমন কী সভ্য ইউরোপীয় সমাজেও এ ধরনের মিথ্যাচারকে খুব ভালো নজরে দেখা হয়না, আর এই একিলিস হিলকেই তার বিরুদ্ধে ঢাল বানিয়ে ব্যবহার করছে মৌলবাদী আর এপোলজিস্ট গোষ্ঠী। এটা তিক্ত, হয়তো ফেয়ার জাজামেন্ট ও নয় তার মতো মানুষের জন্য, কিন্তু এটাও এক রকমের বাস্তবতা যেটা আমরা চাই বা না চাই তার বিরুদ্ধে কাজ করে। আয়ানের লেখা ভালো লাগে কারণ তার লেখা বিদ্দিষ্ট নয়, যুক্তিপূর্ণ এবং অনেকখানি নিরাবেগ।
গঠনমূলক আলোচনা। ফরিদ ভাইকে ধন্যবাদ।
হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে বলতে হয় “মাই নেম ইজ খান &আই অ্যাম নট এ টেররিস্ট ”
হায়িরে ধর্ম আমার
অনেকে দেখলাম কোরআনের, হাদিসের ব্যাখ্যা দিয়ে পড়েছে । এখানে দুট সমস্যা আছে ১/ এটি আল্লার মহান বানী হলে যে যার মতন ব্যাক্ষা করে নিতে পারবে না বা কেউ একথা বলতে পারবে না যে আমার ব্যাখ্যাই সঠিক বাকি সব ভুল । ২/ এমন কিছু আাত আর আর হাদিস আছে যা ডাইরেক্ট জঙ্গিবাদ উস্কে দেয় এইসব আয়াত নিয়ে অনেকে ছাফাই দেয় বটে তবে ঘরিয়ে ফিরিয়ে বিষয়টা একজায়গায় রাখে । যেম উদাহরন এমন সাফাই অনেক শুনা যায় তাদের সাথে যুদ্ধ কর যারা যুদ্ধ করে । মানে বিষয় এমন অযোদ্ধায় বাবরি মসজিদ হিন্দুরা ভাঙলে প্রাণ নাও বাংলাদেশের হিন্দু দের । তাই মানে বদিলেও ইসলামে শান্তি আয়ান সম্ভব হয় নি ভবিষ্যতে হবেও না । যদি কিছু বদাতেই হয় তবে মূল বদলাতে হবে ভাবনা দলাতে হবে ।
সাফাই গুলা এমন সব যুক্তি তর্কে বাতলাতে থাকে পড়ে আরো হাস্যকর পরিস্থিতির সম্মুখিন হয় কিন্তু তারা তাদের জায়গাতে একেবারে অনড়।
ভাই ইসলাম শান্তির ধর্ম না ইসলাম মাণে আত্মসমর্পণ।
হ্যা ভাই সমস্যাটা তো সেখানেই। আগে কোন রকম প্রশ্ন বা সংশয় কাটিয়ে নিজেকে অগ্নিকুন্ডে আত্মাহুতি দিতে পারলেই মুসলিম, জান্নাত কেনা হয়ে গেল। কিন্তু পড়ে এমন অনেক বিষয় সামনে আসে যা ধর্মের অসারতা চোখে আঙ্গুল খুচড়িয়ে দেখিয়ে দেয়।
বইটা নিয়ে অনেক উতফুল্লতা দেখলাম অনলাইনে। উনার সাথে আমি একমত। গোড়াতেই যদি গলদ থাকলে তবে এই মতালম্বিরা কিভাবে সন্ত্রাসবাদ কে এড়িয়ে সামনে যাবে। অসম্ভব।
আসলে এইসবের মাধ্যমে আমরা কিছু দমননীতিকে চাপা দেওয়ার কিঞ্চিৎ চেষ্টা করছি।ব্যাপারটা সুখকর নয়।হত্যা হামলাকে ঘৃনা করার পাশাপাশি আমাদের পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ আরো বাড়াতে হবে।আমাদের সবাই যদি ন্যায়-অন্যায় সম্পর্কে সঠিক বোধ রাখে তাহলেই পৃথিবী সুন্দর হবে।সবার প্রতি ভালোবাসা
একটা মানুষকে যদি ক্রমাগতভাবে অপরাধী বলে সম্বোধন করা হয় তাহলে পরে সে খুব সুস্থ স্বাভাবিক মানুষ হলেও অপরাধীর ন্যায় আচরণ করতে থাকে ……….. কত সুন্দর ছিল আগেরকার দিনগুলো ……. মানুষে মানুষে ভালবাসা, শ্রদ্ধাবোধের কমতি ছিল না কোন . তখনও তো ইসলাম ছিল দেশে …….. বর্তমান সময়ের চেয়ে আরো শক্ত পোক্তভাবেই ছিল …. ইসলামকে ক্রমাগতভাবে অন্যায় অপবাদ দেয়ার ফলশ্রুতিতেই বর্তমানে বিকৃত ইসলামিস্ট দের প্রাদুর্ভাব ঘটছে … কতিপয় নষ্ট ছেলেপুলের নষ্টামির জন্য আজকে জাহান্নামে পরিনত হয়েছে দেশটা …..
@ সাইরাস,
একটি মানুষ ক্রমাগত অপরাধ করতেই থাকলে তাকে আপনি কি বলবেন, সাধু??
আজকের আইসিস, বোকোহারাম, আলকায়দা, আনসারুল্লা…………….. এরা কতই না অবোধ শিশু। রাজিব, অভিজিৎ, ওয়াশিকুর, অনন্তের মত কতিপয় নষ্ট ছেলেপুলে এদের মাথাটা নষ্ট করে দিয়েছে, নাকি??
অবশ্যই না …………
এরা নি:সন্দেহে বিপথগামী …….. তবে এদের বিপথগমনে ইসলাম বিদ্বেষীদের ভূমিকা নেহায়েৎ নগন্য নয় …..
@ফুলবানু
সাম্প্রতিক বিতর্কের আলোকে বলা যায়, কোনো ধর্মবিশ্বাস আর বিশ্বাসীদের ক্ষতিকর কর্মকাণ্ডের সমালোচনা করে মুক্তমনায় কীভাবে লিখতে হয়, এই লেখাটা তার একটা স্টান্ডার্ড সৃষ্টি করলো। এখানে লিখতে ইচ্ছুকদের ব্যাপারটা ধরতে পারতে হবে।
” যে কেউ প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ অথবাপৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করা ছাড়া কাউকে হত্যা করে সে যেন সব মানুষকেই হত্যা করে। এবং যে কারও জীবন রক্ষা করে, সে যেন সবার জীবন রক্ষা করে।” (5:32)
এরপরো কোরান দিয়েই জংগি শুরু?
@ Rafid hasan,
তাহলে, ঠিক তার পরের আয়াতে কি লেখা আছে জেনে নেই,
সূরা ৫:৩৩- “যারা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের সাথে সংগ্রাম করে এবং দেশে হাঙ্গামা সৃষ্টি করতে সচেষ্ট হয়, তাদের শাস্তি হচ্ছে এই যে, তাদেরকে হত্যা করা হবে অথবা শূলীতে চড়ানো হবে অথবা তাদের হস্তপদসমূহ বিপরীত দিক থেকে কেটে দেয়া হবে অথরা দেশ থেকে বহিষ্কার করা হবে। এটি হল তাদের জন্য পার্থিব লাঞ্ছনা আর পরকালে তাদের জন্যে রয়েছে কঠোর শাস্তি।”
আজকের আইসিস, বোকোহারাম……………….. বুঝে শুনে ঠিক এই কাজটিই করছে।
এর পরের আয়াত “কিন্তু যারা তোমাদের গ্রেফতারের পূর্বে তওবা করে; জেনে রাখ, আল্লাহ ক্ষমাকারী, দয়ালু।” (৫:৩৪) আজকের আইসিস, বোকোহারাম………………সম্ভবত এই কাজ টি করছে না।
“যারা আল্লাহ্ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালায় এবং সর্বশক্তি দিয়ে চেষ্টা করে পৃথিবীতে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপের প্রসারের জন্য তাদের শাস্তি হচ্ছে; তাদের হত্যা করা হবে, অথবা ক্রুশবিদ্ধ করা হবে, অথবা বিপরীত দিক থেকে তাদের হাত ও পা কেটে ফেলা হবে অথবা তাদের দেশ থেকে নির্বাসিত করা হবে। পৃথিবীতে এটাই হবে তাদের লাঞ্জনা এবং পরকালে তাদের জন্য রয়েছে মহাশাস্তি।”(৫:৩৩)
সুত্রঃ এদিকে
এখানে কিন্তু ২টা কাজের কথা বলা হয়েছে। প্রথমতঃ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিশ্বাসঘাতকতা, দ্বিতীয়তঃ আল্লাহ্র সাথে বিশ্বাসঘাতকতা।
তার মানে- মুমিন বাহিনীর গ্রেফতার আতংকে অমুসলিমরা সব আগে ভাগেই আল্লা-রসুলের কাছে তোবা করে বসে থাকবে। তবেই শুধু রক্ষা।
কিন্তু ভায়া আপনার আল্লা-রসুলকে এ হেন মাতাব্বরী করার লাইসেন্স কে দিয়েছে! অমুসলিমরা কি বানের জলে ভেসে এসেছ? ধন্যবাদ।
ইসলাম শান্তির ধর্ম কিনা সেটা বুঝতে প্রচলিত ধর্মাচারকে (যেটা নিরীহ ধর্মভীরুরা পালন করেন) আলাদা রেখে পলিটিক্যাল ইসলামের দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। কেউ যদি বলেন ইসলাম শুধুই ধর্মাচার পলিটিক্স এতে আসে কীভাবে, তাহলে দৃষ্টিভঙ্গিটা সামগ্রিক হয়না। রাষ্ট্র ব্যবস্থা বদলানোর কথা ইসলামের মতো স্পষ্ট করে অন্য কোথাও বলা হয়নি। আর রাষ্ট্র ব্যবস্থা বদলাতে গেলে রাজনীতি লাগবে, এখানেই পলিটিক্যাল ইসলামের বীজ বোনা।
প্রসঙ্গ সেটা নয়। এ-তো ১৫০০ বছরের কালচার, হঠাৎ কেন আগ্রাসী হলো? শুরুর দিককার জেহাদ বাদ দিলে মাঝ বয়সে বেশ সুপ্ত ছিলো প্রায় পলিটিক্যাল ইসলাম। কিন্তু পুঁজিবাদ-সমাজতন্ত্রের দ্বন্দ্ব শেষ হবার পর সাম্রাজ্যবাদের প্রয়োজন ছিলো নতুন শত্রু। শেষেই বা বলি কীভাবে? সমাজতন্ত্রের পতনের আগেইতো দুধ-কলা দিয়ে বড়িয়ে তোলা হলো/ জাগিয়ে তোলা হলো পলিটিক্যাল ইসলামকে, সেটা যে কারণেই হোক। ফলাফল স্পষ্ট!
যে কোন ধর্মীয় সংস্কার সমাজের গতির মধ্যে ঘটতে থাকে- যদি সেটা শুধুই ধর্মাচারে আবিষ্ট থাকে। যেমনটা সমাজ বিবর্তনের পথে হিন্দুদের বেশ কিছু নগ্ন এবং বিভৎস নিয়ম উবে গিয়েছে। কিন্তু ইসলামে সেটা সুদূর পরাহতই থেকে গিয়েছে। থেকে গিয়েছে কারণ ধর্মাচারের বদলে পলিটিক্যাল ইসলাম বেশি পানি পেয়েছে, পেতে হয়েছে, পাওয়ানো হয়েছে। ফলে এখন সংস্কার কতোটুকু সম্ভব কিংবা আদৌ সম্ভব কিনা সেটা বলা মুশকিল।
বাংলাদেশে হেফাজত আছি আছি, নাই নাই করেও রাজনীতিতে ঢুকে পড়েছে প্রায়। ফলে মূল ধারার রাজনৈতিক দলগুলোকেও তোয়াজ করতে দেখা যাচ্ছে তাদের, দেখা যাচ্ছে তুষ্ট করতে। কিন্তু শেষ রক্ষা হবেনা মনে হচ্ছে, কারণ পলিটিক্যাল ইসলামের উত্তানের এই সময়ে সামাজিক সংস্কারতো এদের দিয়ে করানো যাবেই না বরং পলিটিক্যাল স্বাদ এরা পেতে শুরু করেছে। খেলাফত প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন তারা দেখতেই পারে। সেই পথে জেএমবি/ আনসারুল্লাহ/ হিজবুল তাহারী সহ আরো অনেকে সংযুক্ত হবে বহিঃবিশ্বের আর্থিক প্রনোদনার হাতছানিতো আছেই সেই সাথে আছে খিলাফত প্রতিষ্ঠার রঙ্গিন স্বপ্ন।
কিছু মনে করবেন্না। আসলে আপনার মাঝে কোথাও একটি বিরাট ঘাপলা আছে।
১। আপনি একবার বলেন- (রাষ্ট্র ব্যবস্থা বদলানোর কথা ইসলামের মতো স্পষ্ট করে অন্য কোথাও বলা হয়নি।)
২। আবার সেই আপনি বল্লেন- (সমাজতন্ত্রের পতনের আগেইতো দুধ-কলা দিয়ে বড়িয়ে তোলা হলো/ জাগিয়ে তোলা হলো পলিটিক্যাল ইসলামকে।)
৩। তারপর হাবিজাবি আরো কত কি বল্লেন- (পলিটিক্যাল ইসলাম বেশি পানি পেয়েছে, পেতে হয়েছে, পাওয়ানো হয়েছে।)
তাহলে বিষয়টি কি দাড়ালো? ইসলাম এবং ইসলাম ভক্ত মানুষ গুলো একটি যান্ত্রিক রোবট। এটিকে যে যেমন করে চাবি মেরে দেয় তেমনি নাঁচে। এখানে ইসলাম ভক্ত মুস্লিমদের করণীয় কিছু নেই।
আপনি আরেক যায়গায় বলেছেন- (১৫০০ বছরের কালচার, হঠাৎ কেন আগ্রাসী হলো? শুরুর দিককার জেহাদ বাদ দিলে মাঝ বয়সে বেশ সুপ্ত ছিলো প্রায় পলিটিক্যাল ইসলাম। কিন্তু পুঁজিবাদ-সমাজতন্ত্রের দ্বন্দ্ব শেষ হবার পর সাম্রাজ্যবাদের প্রয়োজন ছিলো নতুন শত্রু।)
তাহলে বুঝা গেল, মধ্যযুগে স্পেন উপনিবেশ, গ্রীস উপনিবেশ, ভারত দখল, আর্মেনিয়া দখলের মত নিঃবিগ্ন ডালপালা গজিয়ে ইসলাম দৈত্যের রুপ ধারন করলেই পলিটিক্যাল ইসলাম প্রসঙ্গটি হাওয়ায় মিলে যাবে? @ অকাল কুষ্মাণ্ড।
আপনার মতামতের জন্য ধন্যবাদ। ঘাপলা থাকাটা অস্বাভাবিক নয়, কারণ আমি বিশেষজ্ঞ নই, অল্প খানিকটা পড়াশুনা করে ফ্যাক্ট জানার চেষ্টায় আছি মাত্র। যা-ই হোক আপনার আলোচনায় আসি-
‘আল্লাহ প্রদত্ত’ কোরানকে যেভাবে সংবিধান হিসেবে মুসলিম বিশ্ব রাষ্ট্র পরিচালনার হাতিয়ার বনিয়েছে তাতে আশা করি আপনার প্রথম পয়েন্টের জবাব মিলে যায়।
আপনার ২ এবং ৩ নং পয়েন্ট মোটামুটি একই। আর আপনি আমার যেই বক্তব্যকে ভিত্তি ধরে পয়েন্ট আউট করেছেন সেটি আবার পড়ুন। সাথে হান্টিংটনের ‘দুই সভ্যতার দ্বন্দ্ব’ তত্ত্বটি পড়ে দেখার জন্য অনুরোধ করবো। আমার বক্তব্যের ভিত্তি বুঝতে পারবেন। সাথে একটি উক্তি কোড করছি – যেটি ১৯৯৮ সালে ওসামা বিন লাদেন এএফপি কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে করেছিলেন-
“পাকিস্তান এবং আমেরিকান অফিসারদের দ্বারা প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবকদের দিয়ে আমি পাকিস্তানে আমার প্রথম ক্যাম্প স্থাপন করি যুক্তরাষ্ট্রের পাঠানো অস্ত্র, সরঞ্জাম এবং সৌদি আরবের অর্থ দিয়ে”।
জনাব রাইহান রহমান, সাম্রাজ্যবাদ কখন কাকে কোলে তুলছে, কিভাবে খেলছে সেটা ঘটনা পরম্পরায় বুঝতে আপনার কষ্ট হবার কথা নয়। কেউই রবোট নয়। মৌলবাদ (কিংবা জঙ্গিবাদ) এবং সাম্রাজ্যবাদ গাঁট বাঁধে নিজের লক্ষ্য মাথায় রেখেই। তাই লক্ষ্য হাসিলের পর একে অন্যের বিরুদ্ধে যেতে দেরি হয়না। দুই পক্ষেরই লক্ষ্য ক্ষমতা, রাষ্ট্র কিংবা বিশ্ব শাসন। ইতালির প্রখ্যাত দার্শনিক সেনেকা যেমনটি বলেছিলেন- “Religion is regarded by the common men as true, by the wise men as false and by the rulers as useful’.
বুঝতেই পারছেন ইহুদি কিংবা মুসলিম সব ধর্মই (এই মূহুর্তে জঙ্গিপনার জন্য আলোচিত বলে এই দুইটা উল্লেখ করলাম, সুযোগ পেলে অন্য গুলোও হবে) সাম্রাজ্যবাদের জন্য প্রয়োজনীয় হয়েছে কেন।
পলিটিক্যাল ইসলাম এমনিতেই হাওয়ায় মিলাবেনা জনাব রাইহান, এটি হাওয়ায় মিলাতে গেলে আগে সংস্কার প্রস্তাব- যেটি ফরিদ ভাইয়ের আলোচনার ভিত্তি, সেটিতে মনোযোগ দিতে হবে। কেউ যদি কোরানের ভিত্তিতে দেশ চালাতে চায় অন্যজন বাইবেলের ভিত্তিতে দেশ চালাতে চাইতেই পারে (যদিও কোরানের মতো সুস্পষ্ট রাজনৈতিক রূপরেখা অন্য কোথাও নেই)। তাই সাধারণ মুসলিম যারা ধর্মাচার করতেই শুধু ভালোবাসেন তাঁদের কাছ থেকেই এই পলিটিক্যাল ইসলামের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর আওয়াজ আসতে হবে। সাথে সাম্রজ্যবাদ বা পুঁজির বিশ্বায়নের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে সবাইকে। তবেই মুক্তমনের মুক্তচিন্তার সমাজ প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে।
আবারো ধন্যবাদ আপনাকে।
হাঁ, ঠিক তাই। অল্প খানিকটা পড়াশুনা করে আপনি খুব বেশি বকবক শিখছেন। সমস্যা এখানেই।
নিজেদের মাথায় ধর্মের ভুত চাপিয়ে অন্যের ষড়যন্ত্র তালাস করা মুসলিমদের একটি মস্ত বদ অভ্যাস। দুঃখ জনক ভাবে আপনি সেটি ভাল মত রপ্ত করেছেন।
আমেরিকানরা ২৫ বছর চেষ্টা করে ভিয়েৎনামে কোন বৌদ্ধ ধর্মের জঙ্গি পয়দা করতে পারেনি। বিগত ৬০ বছর পাকিস্তানকে আগলে রেখে ভারতে হিন্দু জঙ্গি গোষ্ঠি গড়ে তুলতে পারে নি। পারেনি দক্ষিন আমেরিকা অথবা গন চীনে। আর হুমমম। আমেরিকার সব ভুত মুসলিমদের ঘাড়ে এমনি এমনি বাসা বানিয়ে ফেল্ল। ইসলামের জলবায়ুতে এমন কি মাদকতা আছে যেখানে আমেরিকার মদতে শুধু আইসিস, বোকোহারাম, আলকায়দা, আলশাহাব, আনসারউল্লা, বাংলাভাই, তেঁতুল শফী উর্বর হয়।?
এবার একটু পড়াশুনা করেন @ অকাল কূষ্মাণ্ড। ধন্যবা.
@ অকাল কূষ্মাণ্ড,
“বুঝতেই পারছেন ইহুদি কিংবা মুসলিম সব ধর্মই (এই মূহুর্তে জঙ্গিপনার জন্য আলোচিত বলে এই দুইটা উল্লেখ করলাম, সুযোগ পেলে অন্য গুলোও হবে) সাম্রাজ্যবাদের জন্য প্রয়োজনীয় হয়েছে কেন।”
একটু ঝেড়ে কাশুন দাদা। ইসলাম নিয়ে বড় গলা করতে যেয়ে গলায় কাঁটা আটকে যায় ক্যান? যা বলবেন খোলাসা করেই বলেন। ধর্মের কথাই যদি বলেন তা হলে কয়েকটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া আমরা কখনো শুনিনি ১। কোন ইহুদী গোষ্ঠি স্কুল ছাত্রী অপহরণ করে যৌনদাসী বানিয়ে বাজারে বিক্রি করে সুন্নতী সওয়াব অর্জন করেছেন। ২। কোন খ্রীষ্টান পাকিস্তানের পেশোয়ারে নির্বিচারে স্কুল ছা্ত্র খুন করেছেন। ৩। কোন ম্যাগনিফিশিয়েন্ট-১৯ হিন্দু জঙ্গি আমেরিকার টু ইন টাওয়ারে হরে কৃষ্ণ তাগবির দিয়ে যাত্রিবাহী প্লেন চালিয়ে দিয়েছেন। ৪। কোন বৌদ্ধ বৃটেনের পাতাল রেলে বোমা হামলা করেছেন। ৫। কোন শিক/মর্মন/অগ্নির্পূজক প্যারিশের শার্লি হেবদো পত্রিকা অফিসে চড়াও হয়েছেন, …………………………………. ।
কিন্তু ON A DAILY BASIS ইসলামী সন্ত্রাসের ধারাবাহিকতায় এই তো, শুধু আজকের খতিয়ান ; সৌদিআরবে সুন্নি মুসলিমদের মসজিদ বোমা হামলায় ২২ শিয়াপন্থী নিহত।
সুন্দর লেখা। অনেক কিছু জানলাম পড়ে।
নতুন শত্রু। শেষেই বা বলি কীভাবে? সমাজতন্ত্রের পতনের আগেইতো দুধ-কলা দিয়ে বড়িয়ে তোলা হলো/ জাগিয়ে তোলা হলো পলিটিক্যাল ইসলামকে, সেটা যে কারণেই হোক। ফলাফল স্পষ্ট!
যে কোন ধর্মীয় সংস্কার সমাজের গতির মধ্যে ঘটতে থাকে- যদি সেটা শুধুই ধর্মাচারে আবিষ্ট থাকে। যেমনটা সমাজ বিবর্তনের পথে হিন্দুদের বেশ কিছু নগ্ন এবং বিভৎস নিয়ম উবে গিয়েছে। কিন্তু ইসলামে সেটা সুদূর পরাহতই থেকে গিয়েছে। থেকে গিয়েছে কারণ ধর্মাচারের বদলে পলিটিক্যাল ইসলাম বেশি পানি পেয়েছে, পেতে হয়েছে, পাওয়ানো হয়েছে। ফলে এখন সংস্কার কতোটুকু সম্ভব কিংবা আদৌ সম্ভব কিনা সেটা বলা মুশকিল।
বাংলাদেশে হেফাজত আছি আছি, নাই নাই করেও রাজনীতিতে ঢুকে পড়েছে প্রায়। ফলে মূল ধারার রাজনৈতিক দলগুলোকেও তোয়াজ করতে দেখা যাচ্ছে তাদের, দেখা যাচ্ছে তুষ্ট করতে। কিন্তু শেষ রক্ষা হবেনা মনে হচ্ছে, কারণ পলিটিক্যাল ইসলামের উত্তানের এই সময়ে সামাজিক সংস্কারতো এদের দিয়ে করানো যাবেই না বরং পলিটিক্যাল স্বাদ এরা পেতে শুরু করেছে। খেলাফত প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন তারা দেখতেই পারে। সেই পথে জেএমবি/ আনসারুল্লাহ/ হিজবুল তাহারী সহ আরো অনেকে সংযুক্ত হবে বহিঃবিশ্বের আর্থিক প্রনোদনার হাতছানিতো আছেই সেই সাথে আছে খিলাফত প্রতিষ্ঠার রঙ্গিন স্বপ্ন।
লেখাটা অত্যন্ত সুখ পাঠ্য। এখানে একটা কথা উল্যেখ করছি। গতকাল প্রথম আলো তে পড়লাম –
নাম না বলার শর্তে কয়েক জন সাক্ষী দেখেছেন অনন্তর হত্যাকারীরা মুখোশধারী ছিল না।
ভালো লেখার জন্যে ধান্যবাদ লেখক ফরিদ আহমদ কে।
হা ওরা মুখোশধারী ছিলোনা,ভয়ে কেউ কিছু বলেনি
ইসলাম ধর্মকে সংস্কার! তওবা তওবা!
বোকো হারাম বা আইসিস টাইপ উগ্রপন্থী দলগুলো ইসলামের ছায়াতলে যা করে বেড়াচ্ছে তা অত্যন্ত বর্বর; শিউরে ওঠার মত বুনো, জঘন্য এবং সভ্য সমাজে অগ্রহনযোগ্য। এদের অপকর্ম, ফরিদ আহমেদ যেমনটি লিখেছে; তার চেয়ে বহু বহুগুন বেশি। প্রতি মুহুর্তে তা চক্রবৃদ্ধি হারে বেড়ে চলেছে। তবু আলোচনার জন্য ফরিদ আহমেদের দেওয়া তথ্য যথেষ্ঠ।
আয়ান হারসি আলি’র বইখানা এখনো পড়িনি, রিভিউ দেখেছি।
ইহুদি আর খৃষ্ঠানরা যদি তাদের ধর্ম গ্রন্হগুলো মুসলমানদের মত করে আক্ষরিক ভাবে আজ মেনে চলতো তা’হলে ধর্ম কারনে সারা পৃথিবীতে আরো কয়েকটি রক্ত সাগর বইতো আজ। তা কিন্তু হচ্ছে না। ইহুদি আর খৃষ্ঠানরা মুসলমানদের পেছনে ফেলে দিয়ে আধুনিক বা গ্রহনযোগ্য ভাবে তাদের ধর্ম পালন করে চলেছে ধর্মের নামে অতটা খুন খারাবি না করেই। কি ভাবে সম্ভব হয়েছে সেটা? আমি বলব ওদের ধর্মচর্চা বেশ খানিকটা কেন্দ্রিক; তাই। ইহুদি আর খৃষ্ঠানরা নানামুখী পার্টনারশিপে বিশ্বাসী; তাই। এমন কি ওদের ধর্মগ্রন্থ পর্যন্ত গোড়ার দিকটাতেও এক। অন্যদিকে মুসলমানরা এগুলোর ধার ধারছে না। বিচ্ছিন্ন ভাবে চালাচ্ছে ধর্ম চর্চা। নিজেদের মধ্যে খুনোখুনি শুরু করেছে ব্যাপক হারে। আইসিস, আল কায়েদা আর বোকো হারাম টাইপ সংগঠনের কার্য্যক্রম সেটাই দেখিয়ে চলেছে।
মুক্তমনা লেখক মনজুর মোর্শেদ’এর লেখা মন্তব্য আর বিশ্লেষণ ভালো লেগেছে। এখানকার মুক্তমনা লেখক বিপ্লব পাল’ও প্রায়’ই লিখেছে যে সব ধর্মগ্রন্হ গুলো’ই বাজে টেক্সট, এমন ফালতু বা অস্পষ্ট ভাবে লেখা যে ওগুলোকে সারাক্ষনই নানা ভাবে ব্যক্ষ্যা করবার দরকার হয়; সম্ভবও হয়। আর এই ব্যক্ষ্যা গুলোও হয় বহুরুপী। তা’ই শক্ত হয়ে কিছুই দাঁড়াতে পারে না।
যাই হোক, আয়ান হারসি আলি’র প্রস্তাবনা নিয়ে লিখে মডারেট’দের কান চুলকে কিছু যদি হয় হোক। মন্দ কি? নাই মামার চেয়ে কানা মামা ভালো।
ফরিদ আহমেদের কষ্টসাধ্য প্রকল্পটি সার্থক হোক।
ঠিক বলছেন ভাই আজ দুনিয়ার সব অপরাধের সাথে মুসলমানরা জুরে যাচ্ছে,ব্যাপারটা হাস্যকর ছাড়া আর কি?
আর যুদ্ধ,আই এস এর উত্থান এর পিছনে দায়ী কি শুধু মুসলমান না সাম্রাজ্যবাদ।
ঠিক আছে। তবে ভেবে দেখা দরকার যে হঠাৎ এই তিরিশ বছর ধরে কেন জঙ্গী ইসলামের এত বাড়বাড়ন্ত হলো। আফগানিস্তানে নাজিবুল্লা সরকারকে ফেলার জন্য আমেরিকা ওসামা বিন লাদেন-এর মতন জঙ্গীদের পাঠিয়েছিল। পাকিস্তানের মাটিতে তালিবান জঙ্গীদের ভরণপোষণ করেছিল। আজ সেই বিষবৃক্ষের ফল ফলছে। নাজিবুল্লার সময়ে আফগানিস্তান কোন জায়গায় ছিল, আর আজ কোন জায়গায় আছে, তা দেখে আমেরিকা সরকার নিজেদের একবার আয়নার সামনে দাঁড় করাক। অবশ্য পেট্রোলিয়াম লুন্ঠন আর এশিয়ায় আধিপত্য কায়েমই যাদের মূল উদ্দেশ্য ছিল, তাদের কাছ থেকে লজ্জা আশা করা বৃথা।
@ Nabarun Ghoshal,
আমেরিকার ভুল, ভ্রান্তি, অন্যায়, অবিচার নিশ্চয় ইসলামকে নিঃর্ভুল প্রমান করে না। অন্যের গিবত করে ইসলামের পঁচন ধামাচাপা দেয়া যাবে কি?? আজকের আইসিস বোকোহারাম……….. এর বিপরিতে নবীর মদীনা জীবনের কোন ফারাক আছে কি? সবার আগে সেই সত্য খুঁজে বেড় করুন। ধন্যবাদ।
মেনে নিচ্ছি সভ্যতার জাগ্রত অগ্রপথিক আম্রিকার একটু গনতন্ত্রপনার সাথে ইসলামের জঙ্গীপনার কোন সম্পর্ক নেই, ইসলাম আদতে এমনই। ওকে। গুড। এগ্রিড। তারমানে হলো, আপনার দূর্গন্ধযুক্ত পাদের সাথে আপনার খাদ্যাভাসের কোন সম্পর্ক নেই। অর্থ্যাৎ পাদ তো দূর্গন্ধযুক্ত হবেই তা সে সন্দেশ খাওয়া পাদ হোক কি গু খাওয়া পাদ হোক। এইতো আপনার থিসিস নাকি?
@ফুলবানু,
আপনি আমার মূল কথাটা ধরতে পারেন নি। আমার কথা হল, হঠাৎ এই কয়েক দশক ধরে ইসলামী সন্ত্রাসবাদের এত বাড়বাড়ন্ত হল কেন? এর কারণ তিনটে। এক, আমেরিকা আর তার তাঁবেদার পুঁজিবাদী শক্তিগুলো নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের জন্য ওসামা বিন লাদেনের মতন লোকেদের তৈরী করে এই সন্ত্রাসবাদের জন্ম দিয়েছে। দুই, তারা backfire করার পরে তাদের দমন করার নাম করে আফগানিস্তান ইরাকের ওপর আক্রমণ চালিয়ে তেলের ভান্ডার দখল করতে চেষ্টা করেছে। আর তিন, এই আক্রমণের ফলে ইসলাম আক্রান্ত হবার ধুয়ো তুলে যে নতুন সন্ত্রাসবাদীদের জন্ম হয়েছে, তাদের দ্বারা সৃষ্ট গোলমালের সুযোগ নিয়ে বিভিন্ন দেশ থেকে নানান খনিজ আর বনজ সম্পদ লুট করছে।
ইসলামের সংস্কার প্রয়োজন, এই বোধটা মুসলমানদের ভেতর থেকেই আসতে হবে। তবে কুরআনের প্রতিটি বাক্য অকাট্য্ এবং অমোচনীয় সেই সাথে মহানবী সকল সমালোচনার উরদ্ধে বলেই মুসলমানরা মনে করে। তাই এর সংস্কারের দাবী মুসলমানদের মধ্য থেকে আসাটা অলীক কল্পনা। কুরআনে প্রচুর ভালো কখা আছে। চৌদ্দশ বছর আগের বাস্তবতায় যে বিধান নিশ্চিত করা হয়েছিল তা এই বাস্তবতায় যে অচল তা কুরআন দিয়েই বোঝানোর চেষ্টা করা উচিৎ। সবকিছুকেই গতির মধ্য দিয়েই বিচার করতে হয়, এ সত্যটুকু মুসলমানদের বোঝাতে হবে।
আয়ান হারসি আলি একজন সাহসী মানুষ, যদিও বিতর্কিত। তিনি মনে করেন ইসলামের ভেতরই সন্ত্রাসবাদের বীজ পোঁতা আছে এবং এক্ষেত্রে তাঁর যুক্তিগুলো মোটেই ফেলনা নয়। তবে তিনি যেভাবে সব মুসলিমকে ঢালাওভাবে একপাল্লায় মাপার পক্ষে, আমি তা সমর্থন করি না। তাঁর বক্তব্য অনুযায়ী বেশীরভাগ মুসলিমই আইসিস, আল কায়দা বা বোকো হারামের সন্ত্রাসবাদ সমর্থন করেন। আমার মতে এটি অতিরঞ্জন হওয়ার সম্ভাবনাই বেশী; আমার জানার গণ্ডি ছোট হলেও অন্তত দেশে-বিদেশে যেসব মুসলিমকে জানি, তাদের বেশীরভাগই এই দলে পড়েন না। আমি আলির সাথে একমত যে উগ্রপন্থীরা যে ইসলাম অনুসরণ করে সেটি আর যাই হোক কোন শান্তির ধর্ম হতে পারে না। কিন্তু এদের ছাড়াও বহু মুসলিম আছেন যারা ইসলামের মূল স্তম্ভগুলো মানেন, নিজেদের মুসলিম বলে দাবী করেন অথচ সন্ত্রাসবাদ সমর্থন করেন না। এরা জেনে বা না জেনে হত্যা, ধ্বংস আর সন্ত্রাসের পথ বাদ দিয়ে নিজেদের জন্য চলনসই ইসলামের একটি ধারা গ্রহণ করেছেন। আলির বক্তব্যে এই ধরনের মুসলিমদের কথা তেমন দেখি না।
আলি ইসলামে সংস্কার চান যেটা খুবই যৌক্তিক, অন্যদিকে তাঁর দেখানো পথ কতটা কার্যকরী হবে তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তিনি চান মুসলিমরা মেনে নিক নবীজি ভুলের ঊর্ধ্বে নন এবং সেই সাথে তাঁরা আল কুরআন-র ঐশ্বরিক উৎপত্তি নিয়ে সন্দেহ করুক। কিন্তু সমস্যা হল, কেউ যদি নিজেকে মুসলিম বলে দাবী করেন তিনি এই দুটি শর্তের একটিও মেনে কিভাবে মুসলিম থাকতে পারেন! বিষয়টা অনেকটা ‘বিপুল পরিমাণ ঘিয়ের জোগাড় না হওয়ার কারণে রাধা নাচবেন না’ ধাঁচের জটিল নেতিবাচক সম্ভাবনায় পরিণত হওয়ার পথে বলেই মনে হচ্ছে।
আয়ান আলি যেভাবে চান সেভাবে বল প্রয়োগ করে বা যুদ্ধ করে ইসলামকে প্রথমে পরাজিত করে একটা নিরীহ পরিবর্তিত রূপ দেয়া আদৌ সম্ভব হবে বলে মনে হয় না। বিভিন্ন দেশে ইসলামের বিস্তৃতি, অনুসারীদের সংখ্যা, এর বিভিন্ন ধারা ইত্যাদি কারণেই যুদ্ধ করে বাইরে থেকে চাপিয়ে দিয়ে ইসলামকে পরিবর্তন করা প্রায় অসম্ভব। পরিবর্তন আসতে হবে ইসলামের ভেতর থেকেই; ইসলাম ধর্মে কেন্দ্রীয় নীতি-নির্ধারকের অভাবে এই পরিবর্তন হতে পারে তথাকথিত ‘মডারেট’ মুসলিমদের হাত ধরেই। মডারেটদের সংঘবদ্ধ হয়ে সক্রিয়ভাবে জঙ্গিবাদ বর্জনের পথ বের করতে হবে, কুরআন/হাদিসের বাণীর ব্যাখ্যা, বিশেষ করে যেগুলো এই যুগে সভ্য সমাজ গঠনে অচল সেগুলো বর্জন করে, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে নতুন ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে হবে; আর এসব করতে হবে তাদের নিজেদের স্বার্থেই। আমাদের ধর্ম ‘হাইজ্যাক’ (আমার তো মনে হয় শুরু থেকে এমনই ছিল) হয়ে গেছে বলে হাত-পা গুটিয়ে দায় এড়িয়ে গেলে চলবে না। তবে এই ধরনের ব্যবস্থাপত্র দেয়া যত সহজ, এর প্রয়োগ ততটাই জটিল; বিশেষত, সুবিধাবাদী ‘মডারেট’ মুসলিমরা যখন বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই উট পাখির মত গর্তে মুখ লুকিয়ে নিজেদের জঙ্গিবাদ থেকে যথেষ্ট দূরে রাখা গেছে ভেবে স্বস্তি বোধ করেন।
হয়তো এখানে অপ্রাসঙ্গিক তবুও একটা কথা উল্লেখ না করে পারছি না। যতদূর জানি, আয়ান আলি তাঁর ডাচ নাগরিকত্বের আবেদন পত্রে জেনেশুনে মিথ্যা তথ্য দিয়ে নাগরিকত্ব প্রায় হারাতে বসেছিলেন। যিনি ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য সত্য গোপন করতে পারেন তাঁর লেখায় যাচাই করা সম্ভব নয় এমন তথ্য থাকলে সেগুলো সতর্কতার সাথে বিবেচনায় নেয় প্রয়োজন।
আয়ান হারসি আলি সম্পর্কে আমার ধারণা মূলত তাঁর উপরে প্রকাশিত বিভিন্ন খবর আর তার লেখার আলোচনা পড়ে গড়ে উঠেছে। আশা করছি পরের পর্বগুলো হয়তো ইসলাম সম্পর্কে আয়ান হারসি আলির চিন্তাভাবনাগুলো ভালভাবে বুঝতে সাহায্য করবে। এই বিষয়টি নিয়ে লেখার জন্য ধন্যবাদ।
@ মনজুর মুরশেদ,
আপনি বলেছেন- “আমি আলির সাথে একমত যে উগ্রপন্থীরা যে ইসলাম অনুসরণ করে সেটি আর যাই হোক কোন শান্তির ধর্ম হতে পারে না। কিন্তু এদের ছাড়াও বহু মুসলিম আছেন যারা ইসলামের মূল স্তম্ভগুলো মানেন, নিজেদের মুসলিম বলে দাবী করেন অথচ সন্ত্রাসবাদ সমর্থন করেন না। এরা জেনে বা না জেনে হত্যা, ধ্বংস আর সন্ত্রাসের পথ বাদ দিয়ে নিজেদের জন্য চলনসই ইসলামের একটি ধারা গ্রহণ করেছেন।“
আপনি ইসলাম ধর্ম কে যতটা সুবোধ ভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা দেখালেন, সত্যিকার অর্থে ইসলাম মোটেও তা না। আইসিস, বোকোহারাম, তালেবান, গলাকাটা, রগকাটা, চাপাতিওলা……………. এদের কথা বাদ দিলাম।
এবার দেখা যাক আম মুসলিম’দের কি অবস্থা- আজ থেকে প্রায় ২৫ বছর আগে একটি নিরীহ বই লেখার কারনে বিদগ্ধ লেখক সালনাম রুজদীর কল্লা চেয়ে সারা বিশ্বের মুসলিমরা দাপাদাপি করেছেন। সেই একই ধারাবাহিকতায় অতি সম্প্রতি হজ্জ নিয়ে অতিসামান্য ব্যাক্তিগত মতামত প্রকাশের অপরাধে লতিফ সিদ্দিকী এখন বাংলাদেশের জেলে। জেনে রাখা ভাল, আমি দূর্নীতিবাজ লতিফ সিদ্দিকীর ফ্যান নই। তো এই যদি হয় ইসলাম আক্রান্ত মানুষগুলোর পরমত সহিষ্ণুতাবোধ তাহলে আয়ান হিরশি আলী যথার্তই বলেছেন “ডাল মে কুচ কালা হে” ……………………., এই ধর্মের সংস্কার করতে হবে। সবাই তো এক লাফে আইসিস, তালেবান হবে না। ইসলামের দূর্বল মক্কা থেকে সবল মদীনা অধ্যায়ের সময়, সুযোগ এবং শক্তি অর্জন করতে পারলে জান্নাতের খুরমা খেজুর এবং হুরপরীর লোভে এক এক করে সব মোমিন মুসলিম আইসিস, বোকোহারাম, তালেবানের খাতায় নাম লিখবেই। যেমটি লিখেছিলেন নবীর আমলে, যেমনটি লিখেছিলেন খলিফা ওমরের আমলে। ধন্যবাদ।
না, আমার মন্তব্যের এই অংশে ইসলাম বা কোন ধর্মকে বিশেষভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করা আমার উদ্দেশ্য ছিল না। আমি শুধু সেইসব মুসলিমদের কথা বলছি, যারা নিজেদের মুসলিম দাবী করেন, কিন্তু সবসময়েই সন্ত্রাসের বিরোধী। এদের মধ্যে কেউ কল্লা নামানোর চিন্তাভাবনা শুরু করলে বা সন্ত্রাসের পথে পা বাড়ালে স্বাভাবিকভাবেই তারা আর আমার উল্লেখিত দলের বলে বিবেচিত হবেন না। সংস্কার অবশ্যই প্রয়োজন, সে নিয়ে দ্বিমত নেই, কিন্তু তার পদ্ধতি কি হবে সেটাই আলোচনার বিষয়।
১) “তিনি চান মুসলিমরা মেনে নিক নবীজি ভুলের ঊর্ধ্বে নন এবং সেই সাথে তাঁরা আল কুরআন-র ঐশ্বরিক উৎপত্তি নিয়ে সন্দেহ করুক। কিন্তু সমস্যা হল, কেউ যদি নিজেকে মুসলিম বলে দাবী করেন তিনি এই দুটি শর্তের একটিও মেনে কিভাবে মুসলিম থাকতে পারেন! “
২) “মডারেটদের সংঘবদ্ধ হয়ে সক্রিয়ভাবে জঙ্গিবাদ বর্জনের পথ বের করতে হবে, কুরআন/হাদিসের বাণীর ব্যাখ্যা, বিশেষ করে যেগুলো এই যুগে সভ্য সমাজ গঠনে অচল সেগুলো বর্জন করে, যুগের সাথে তাল মিলিয়ে নতুন ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে হবে; আর এসব করতে হবে তাদের নিজেদের স্বার্থেই। “
আপনার করা উপোরক্ত বক্তব্য দুটো একটি অপরটির সাথে সাংঘর্সিক নয় কি?
‘কুরআন/হাদিসের বাণীর ব্যাখ্যা সভ্য সমাজ গঠনে অচল এবং যুগের সাথে তাল মিলিয়ে নতুন ব্যাখ্যা দাঁড় করাতে হবে’ – এই কথাগুলো আল কুরআন-র ঐশ্বরিক উৎপত্তি নিয়ে সন্দেহ না করা এবং নবীজিকে ভুলের ঊর্ধ্বে রাখা একজন লোকের পক্ষে বিশ্বাস বা অনুসরন করা কি আদৌ সম্ভব? মডারেট মুসলিমরা নিশ্চয়ই নিজদেরকে মুসলিম বলে দাবী করেন এবং আপনার ফরমুলা অনুযায়ী মডারেটদের সংঘবদ্ধ হওয়ার কি কোন অবকাশ আছে?
আয়ান হারসি আলিকে কেন মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয়েছিলো তার কোন কারন না দেখিয়ে বলা হলো ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির জন্য সত্য গোপন করেছেন। ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধিটা কি ছিলো সেটার কোন উল্লেখ নাই। জোর করে বিয়ে দেয়ার থেকে নিজকে রক্ষা করতে নেদারল্যান্ডে রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনার আবেদনে সম্ভবত ২০-২২ বৎসর বয়সের সময় এই মিথ্যের আশ্রয় নিতে হয়েছিলো।
পৃথিবীতে কোন লোকই ভুল বা দোষ ত্রুটির ঊর্ধ্বে নয় বা সবাইকে কম বেশী নিজস্ব প্রয়োজনে মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয়, অনেক সময় সেটা বৃহত্তর স্বার্থেও হতে পারে। তাঁর পরবর্তী যে কোন বক্তব্যকে যুক্তিযুক্ত মুল্যায়ন না করে সেই ঘটনার আলোকে বিচার করে খাঁটো করে দেখার প্রবনতা ঠিক নয়।
ধন্যবাদ।
ধন্যবাদ সুরাইয়া! আমি মনে করি না দু’টো বক্তব্য সাংঘর্ষিক। একজন মুসলিমের কাছে আল-কুরআন একটি অপরিবর্তনীয় ঐশ্বরিক গ্রন্থ, কিন্তু এর বিভিন্ন আয়াতের ব্যাখ্যা মানুষের করা। সে কারণে ব্যাখ্যার পরিবর্তন সম্ভব। তবে আসল সমস্যা হচ্ছে পরিবর্তনের বিষয়ে ঐকমত তৈরি করা এবং গ্রহণযোগ্য নতুন ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে তার অনুসরণ নিশ্চিত করা। যেহেতু ইসলামে কোন কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ নেই তাই একাজ কঠিন। তবে বিভিন্ন জায়গায় ছোট করে হলেও মুসলিমদের মধ্যে কিছু আত্ম-বিশ্লেষণী উদ্যোগ শুরু হয়েছে, যেগুলোর প্রচার ও প্রসার প্রয়োজন।
আপনার কথা ঠিক কেউই ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। আয়ান আলি কম বয়সে একটা ভুল করেছেন (যদিও তার পরিবারের ভেতরেই বিয়ে-সংক্রান্ত জটিলতা নিয়ে দ্বিমত আছে), সেজন্য তাঁর পরিণত বয়সের কাজ গুরুত্বহীন হয়ে যায় না। আমি তাঁর বক্তব্য যুক্তি-যুক্তভাবেই মূল্যায়ন করতে চাই, তবে সেই সাথে তাঁর লেখায় যাচাই করা সম্ভব নয় এমন তথ্য থাকলে সেগুলো সতর্কতার সাথে বিবেচনায় নিতে চাই, এটুকুই।
@ মনজুর মুরশেদ,
“একজন মুসলিমের কাছে আল-কুরআন একটি অপরিবর্তনীয় ঐশ্বরিক গ্রন্থ, কিন্তু এর বিভিন্ন আয়াতের ব্যাখ্যা মানুষের করা। সে কারণে ব্যাখ্যার পরিবর্তন সম্ভব।”
এটা কি কথা বল্লেন ভাই! সারা জাহানের মানব কল্যানে রচিত মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের একমাত্র সত্য কোরান গ্রন্থটি কি অস্পষ্ট ঘুন-অক্ষরে লিখা? এর আকাবাকা/কাটাছেড়া ভাষাগত বর্ণ মালার শব্দ চয়ন কেউ বুঝে না। যে কারনে ব্যাখ্যায় এত জটিলতা।
অথচ কোরান গ্রন্থে হাবিয়া দোজগের বর্ণনায়- পরম করুণাময় আল্লা কিভাবে মানুষকে পুড়িয়ে, উল্টে/পাল্টে, চামড়া বদলে শিক কাবাব বানাবেন তা বুঝতে কিন্তু কারো ব্যাখ্যা নিতে হয় না। এমনিতেই ভয়ে কাঁপানি জ্বর চলে আসে। তা হলে কোরান মেনে রাজ্য পরিচালনায় এত লুকচুরি কেন, এত খুনাখুনি, রক্তপাত। কি আছে ঐ কোরাণের পন্ডোরা বাক্সে? আপনি না বুঝার ভাল করলেও আয়ান হারশি আলী ঠিক ঐ জিনিসটি খুঁজে বেড় করার কথা বলেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে।
না বোঝার ভান কে করছে, আমি না আপনি? আমার প্রথম মন্তব্যটি নিজের মতো করে ব্যাখ্যা করে বললেন আমি ইসলাম ধর্মকে ‘সুবোধ ভাবে’ দেখানোর চেষ্টা করছি। সেটার উত্তর দেয়ার পর, এখন আবার কোরানের ব্যাখ্যা নিয়ে করা মন্তব্যের প্রেক্ষিতে অহেতুক দাবী করছেন আমি কোরানে কি আছে তা না বোঝার ভান করছি। আপনি একের পর এক আয়াত আউড়ে যাচ্ছেন, তার মানে নিশ্চই জানেন যে কোরানের বিভিন্ন আয়াতের ব্যাখ্যার জন্য তাফসীর আছে। তাফসীরের প্রয়োজন তখনই হয় যখন অস্পস্টতা থাকে, একই বাণীর ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যার সম্ভাবনা দেখা দেয়। আর ধর্মগ্রন্থগুলোর অস্পস্টতা আমার আবিস্কার নয়, এই মুক্তমনাতেই লেখকরা, এমনকি এই লেখায় করা কবি কাজী রহমান-র মন্তব্যেই এর উল্লেখ আছে। দয়া করে চিন্তা ভাবনা করে কি নিয়ে আলোচনা করতে চান, তা পরিস্কার করে তারপর মন্তব্য করুন, আমি সানন্দে আপনার সাথে আলোচনা করব।
@ মনজুর মুরশেদ
আপনি আমার কোন প্রশ্নের উত্তর দেন্নি। এখন আবার তফসির তফসির করেন। আশ্চর্য!!
ভাইজান, কোরাণের বিষফোঁড়া জাকির নায়েক’দের দিয়ে সহি প্রমান করা যাবে না। আল কোরাণ একটি Well Documented গ্রন্থ। এর পরতে পরতে ইহুদী বিদ্বেশ, খ্রীষ্টান বিদ্বেশ, পৌত্তলিক বিদ্বেশ, নারী বিদ্বেশ, সমকামি বিদ্বেশ…………………….. এবং সর্বপরি নবী মোহাম্মদের পংকিল মদীনা জীবন কোন তফসির টপসির দিয়ে ধামাচাপা দেয়া যাবে না। কোরাণের আসল জায়গায় কাঁচি চালাতে হবে। এবং এ কাজটি করার উদ্যগ মুসলমানদেরই নিতে হবে। আয়ান হারশি আলী সেই বাস্তবার উপর তাগিদ দিয়েছেন। অন্যথায় দাড়ি নিচে মুখ লুকিয়ে “ইসলাম শান্তির ধর্ম” আপনাদের এই ভান/ভনিতা মুসলিমদের কপালে আরো শনি ডেকে আনবে।
ধন্যবাদ।
আপনার কোন কোন প্রশ্নের উত্তর দেই নি দয়া করে উল্লেখ করুন, উত্তর দেবার চেষ্টা করব।
আপনি বার বার বুঝতে ভুল করছেন যে আল-কুরআন-র মহিমা বা ইসলামকে শান্তির ধর্ম হিসাবে তুলে ধরা আমার মন্তব্যের উদ্দেশ্য ছিল না, আর সে নিয়ে আমি চিন্তিতও নই। আপনি এখানে অপ্রাসঙ্গিক-ভাবে জাকির নায়েককে টেনে এনেছেন। আমি কখনই তার কোন বক্তব্যের সমর্থনে কিছু লিখিনি। আপনি যে ভাবে অনেক কিছুই নিজের মতো করে ধরে নিয়ে আমি যা বলি নি তা আমার মুখে পুরে দেয়ার চেষ্টা করছেন, তা কেবল আপনার মন্তব্যের যৌক্তিকতাকেই খাটো করবে।
পাঠক হিসাবে বহুদিন আমি মুক্তমনায়, তাই আপনার মন্তব্যে ইসলাম সম্পর্কে নতুন কিছু পেলাম না। এনিয়ে এখানে বহু আলোচনা হয়েছে, আমার মত অনেকেই এসব আলোচনার মাধ্যমে নিজেদের চিন্তাভাবনার বিন্যাস-পুনর্বিন্যাস ঘটিয়েছেন। আবার সেই একই আলোচনা শুরু করা মানে সময়ের অপচয় ছাড়া কিছু নয়। তাই আমার উদ্দেশ্য কেবল বর্তমানের প্রকট ইসলামী জঙ্গিবাদের বাস্তবসম্মত সমাধান খোঁজা, এনিয়ে আলোচনা করা। একমাত্রিক চিন্তাশক্তির ক্ষমতা দিয়ে এই সমস্যার সমাধান করা যাবে না বলেই মনে করি, আর তার পেছনে ব্যক্তিগত সুপ্ত বিদ্বেষ কাজ করলে তা হবে অসম্ভব।
“কুরআন একটি অপরিবর্তনীয় ঐশ্বরিক গ্রন্থ, কিন্তু এর বিভিন্ন আয়াতের ব্যাখ্যা মানুষের করা। সে কারণে ব্যাখ্যার পরিবর্তন সম্ভব। ”
অপরিবর্তনীয় ঐশ্বরিক গ্রন্থ-এর বিভিন্ন আয়াতের ব্যাখ্যা মানুষকে করতে হয় কেনো? মানুষের ব্যাখ্যা ভিন্ন ভিন্ন হতে বাধ্য, তো সেক্ষেত্রে একদিকে গ্রন্থকে অপরিবর্তনীয় ঐশ্বরিক বলা হচ্ছে আবার অন্যদিকে মানুষকে বলা হচ্ছে গ্রন্থ-এর ব্যাখ্যা দিতে, ব্যাপারটা একটু গোলমেলে মনে হচ্ছে।
ইশ্বরের অপরিবর্তনীয় বানী মানুষের পরিবর্তন ছাড়া সরাসরি মানুষের উপর প্রয়োগ করা উচিত নয় কী?
আপনার প্রশ্নের উত্তর কেবল ইশ্বরই জানেন! আমি নশ্বর মানুষ, আমার কাছে এর জবাব নেই।
ভাল থাকবেন।
সম্মানিত মডারেটর, আপনাকে ধন্যবাদ।
আয়ান হিরসি আলির বইটি নিয়ে লেখার জন্য ফরিদ আহমদকে ধন্যবাদ। মনে পড়ছে এক আড্ডায় আহমদ শরীফ স্যার বলছিলেন যে, তখন আফগানিস্তানের তালেবানরা যা করছিল তা হুবহু কুরআনকে অনুসরণ করেই। একটি মধ্যযুগীয় গ্রন্থের পূংখানুপুংখ অনুসরণ তো সেই দেড় হাজার বছর আগের সময়েই ফিরে যাওয়া। আশার কথা বিশ্বের অধিকাংশ মানুষই পেছনে ফিরে যেতে চায় না।
বইটি নিয়ে মাত্র কয়েকদিন আগেই আমার একজন শ্রদ্ধাভাজন গুরুজনের সাথে আলোচনা করছিলাম ! আজ এই বইটি নিয়ে আপনার সুচিন্তিত সুন্দর আলোচনা দেখে সত্যিই খুব ভালো লাগলো ! এই সময়ে এই প্রাসঙ্গিক আলোচনাটি আনার জন্য আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ ! লেখাটির পরের পর্বের জন্য অপেক্ষায় রইলাম ! ভালো থাকবেন |
দারুণ। বইটা বের হবার পর থেকেই মুক্তমনাতে একটা রিভিউয়ের জন্য অপেক্ষা করছিলাম । ডকিন্সকেও টুইটারে এটি নিয়ে বেশ উৎফুল্ল হতে দেখেছি। তাঁর মতে, বইয়ে উপস্থাপিত যুক্তিগুলো অকাট্য। হাতে আসলেই বইটা পড়বো। তার আগে আপনার লেখাটা পড়ে আয়েশ করে নিই।
পরের লেখাটার অপেক্ষায় রইলাম।