বাক স্বাধীনতা, মুক্তচিন্তা, যুক্তিবাদ, এবং বিজ্ঞানের আলো বন্ধের নতুন কালচার শুরু হয়েছে বাংলাদেশে। একটি বিশেষ ধর্ম বিশ্বাসের উন্মাদনায় বাংলাদেশকে পেছনের দিকে ধাবিত করার অপপ্রয়াসে লিপ্ত। মেধাবী তরুণ যুক্তিবাদী, মুক্তচিন্তক, বিজ্ঞানমনস্কদেরকে একটা লিস্ট তৈরী করে চাপাতি দিয়ে মেরে ফেলা হচ্ছে। সরকার এদেরকে নাস্তিক এবং ব্লগার নামে অপাংতেয় মানুষ হিসেবে জনগনের কাছে তুলে ধরছে, যেন এরা খুন হলে দেশের জন্যই ভাল। সরকার শাহবাগের গনজাগরণকে এভাবেই নস্যাৎ করার পথ অবলম্বন করেছিল। কাজটি মৌলবাদী ধর্মান্ধরা করছে বলেই খরব বেরোচ্ছে। কিন্তু সরকারের ক্ষমতাধরদের ভাষণে, বক্তবে, এবং কর্মকান্ডে স্পষ্টতই বুঝা যাচ্ছে খুনীরা সরকারের সমর্থন পাচ্ছে। যুক্তিবাদী, মুক্তচিন্তক, বিজ্ঞানমনস্ক তরুণরা আজ পালিয়ে বেড়াচ্ছে। কাজেই আমি সেই লেখককে চিহ্নিত করে খুনীদের হাতে ঠেলে দিতে চাইনা।
viveka1
ভারতবর্ষ সাধু-সন্যাসীদের জন্য উর্বর ভূমি। এখানে ভক্তি-শ্রদ্ধা অর্জনের সহজতম পথ সাধু-সন্যাসীর বেশ ধারণ। বিবেকানন্দের এই ছবিটি দেখুন। নাদুশ-নুদুশ চেহারার উপরে সাধু-সন্যাসীর বেশ। দারূণ মানিয়েছে গুরুকে। গুরু পোজ দিতেও পারদর্শী ছিলেন বুঝাই যাচ্ছে। ভক্তকুলের হৃদয়-মনে অনন্তকাল বেঁচে থাকার জন্য যথেষ্ঠ চিন্তা-ভাবনা এবং কায়দা করেই ছবিটি তোলা হয়েছিল বলেই মনে হয়।
গুরুর এই ছবিটি আগে আমি দেখিনি। অধিকাংশ বাংগালীর মত আমিও দ্বিতীয় ছবিটি দেখে এবং তাঁর বাণী – “জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বরের” পড়েই বিবেকানন্দ প্রেমে পড়েই বড় হয়েছি। আহা কী বাণী এবং কী ছবি! দেবতা যেন হাতছানি দিয়ে ডাকছেন – “আয়, কাছে আয়, তোকে একটু আদর করে দেই।” অথচ এই বাণীতে নতুনত্ব কিছুই নেই। ‘দরিদ্র নারায়নের (সাধারণ মানুষের) সেবাই ভগবানের সেবা’ কথাটি ভারতবর্ষে অতি পুরাতণ কথা। স্বামী বিবেকানন্দ সন্যাসীর পোষাক পরিধারণ করে ছন্দাকারে বলেছন মাত্র। তাতেই বাজীমাৎ। স্বামী বিবেকানন্দের ছবি আজ বাংগালী হিন্দুর ঘরে ঘরে শোভা পাচ্ছে।
কিন্তু অভিজিৎ রায়ের “স্ববিরোধী বিবেকানন্দ” আমার বিশ্বাসকে ১৮০ ডিগ্রীতে বদলে দিয়েছে। আকর্ষণীয় চেহারা, সাধু-সন্যাসীর সাজ-পোষাক, আত্মপ্রচারে অসম্ভব পারদর্শী এবং সর্বোপরী চাপাবাজী ছাড়া আর কিছু খুঁজে পাচ্ছি না এই লোকটায়। তাঁর মস্তিষ্ক ধর্মীয় কুসংস্কার এবং কুপমন্ডুকতা পরিপূর্ণ ছিল।
vive2

রাজা রামমোহন রায় বিবেকানন্দের জন্মের প্রায় চল্লিশ বছর আগে উপলব্ধি করেছিলেন – সতীদাহ একটি বিভৎস অমানবিক প্রথা। বৃটিশ সরকারের সহায়তায় হিন্দুসমাজের শারীরিক নির্যাতন সহ্য করে, সারাজীবন সংগ্রাম করে তিনি সতীদাহ প্রথা বিলুপ্ত করতে সমর্থন হয়েছিলেন। কিন্তু স্বামী বিবেকানন্দ রাজা রামমোহনের কাছ থেকে কিছুই শিখলেন না। সতীদাহের নামে অগ্নিকুন্ডে নিক্ষিপ্ত একজন জীবিত সুস্থ নারীর নরক যন্ত্রনার কিছুই উপলব্ধি করলেন না। আমি ভেবে পাইনা কীভাবে তিনি বিলুপ্ত, বর্বর, নিষ্ঠুর এবং অমানবিক সতীদাহ প্রথাকেই আদর্শ প্রথা হিসেবে গীত গেয়ে গেলেন। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর যে সময়ে হিন্দু বিধবা বিবাহ প্রচলন আন্দোলনে ব্যস্ত স্বামী বিবেকানন্দ সবে জন্ম গ্রহন করেন। যোগ বদলায়। মানব সভ্যতার অগ্রগতি হয়। কিন্তু পশ্চাদমুখী বিবেকানন্দ হিন্দু বিধবা বিবাহ পদ্ধতির বিরোধিতা করলেন। এর মাথায় কি ঘিলু বলতে কিছুই ছিলনা? নাহ্‌, বিলাসময় জীবন-যাপনের জন্য অন্যের টাকা হাতানোয় তিনি পারদর্শী ছিলেন ষোল আনা। তাই তিনি সন্যাসীর বেশ ধরেছিলেন। সফলও হয়েছিলেন।

রেফারেন্স থেকে অভিজিৎ রায় লিখেছেন

নরেন্দ্রনাথকে বিবেকানন্দ বানিয়েছিলেন রাজস্থানের খেতরি মহারাজা অজিত সিংহ। ১৮৯৩ সালে শিকাগো যাত্রার আগে আবার তিনি সেখানে যান। মহারাজা তাকে ৩০০০ টাকা দেন যাত্রার খরচ বাবদ; শুধু তাই নয় যে পোশাক পরা বিবেকানন্দের ছবি দেখে আমরা অভ্যস্ত, সেই পোশাকও তাকে দিয়েছিলেন অজিত সিংহ, দেখিয়ে দেন কিভাবে এই পোশাক পরতে হয়। সেই সাথে তার নতুন নামকরণ করেন ‘বিবেকানন্দ’
প্রথমবার আমেরিকা ভ্রমণের আগে মা এবং ভাইদের ভরণপোষণের জন্য তিনি মহারাজকে দিয়ে একশত টাকার এক মাসিক ভাতা মঞ্জুর করতে রাজি করেন। ১৮৯১ সাল থেকে ১৯১১ সাল পর্যন্ত (অর্থাৎ যতদিন নরেন্দ্রনাথের মা ভুবনেশ্বরী দেবী বেঁচে ছিলেন) নিয়মিত এই টাকা দিয়ে এসেছেন অজিত সিংহ। শুধু তাই নয় ১৮৯৮ সালে আবার স্বামীজির অনুরোধে মহারাজ স্বামীজির ব্যক্তিগত খরচের জন্য তাঁকে আরো একশ টাকা ভাতা মঞ্জুর করেন।

অভিজিৎ রায় স্ববিরোধী বিবেকানন্দ এবং স্ববিরোধী বিবেকানন্দ – কিছু সমালোচনার জবাবে লিখেছেন ৭০ রেফারেন্সের উপর ভিত্তি করে এবং সেখান থেকেই উদ্ধৃতি ব্যবহার করেছেন। বিবেকানন্দ একই মুখে “জীবে প্রেমের” বাণী দিয়েছেন, আবার পশুবলীর পক্ষেও সাফাই গেয়েছেন। কোটেশন দেখুনঃ

“আরে একটা পাঁঠা কী, যদি মানুষ বলি দিলে যদি ভগবান পাওয়া যায়, তাই করতে আমি রাজি আছি।”

অভিজিৎ রায়ের লেখা থেকে স্বামীজীর আরও কিছু অজানা বাণীঃ

নারী বিদ্বেষী বিবেকানন্দঃ

  • ‘বাল্যবিবাহ হিন্দু জাতিকে পবিত্রতায় ভূষিত করিয়াছে’
  • “যদি কাউকে ইচ্ছেমত পতি বা পত্নীরূপে গ্রহণের স্বাধীনতা দেওয়া যায়, যদি ব্যক্তিগত সুখ এবং পাশবপ্রবৃত্তির পরিতৃপ্তির চেষ্টা সমাজে বিস্তার লাভ করে, তার ফল নিশ্চয় অশুভ হবে- দুষ্টপ্রকৃতি, অসুর ভাবের সন্তান জন্মাবে।
  • “এ বিষয়ে আমার একটিমাত্র সিদ্ধান্ত থাকিতে পারে – নিন্দা! বালক-বালিকা-যাহারাই হউক না কেন, আমি বিবাহের নাম পর্যন্ত ঘৃণা করি। তুমি কি বলিতে চাও আমি, আমি একজনের বন্ধনে সহায়তা করিব? কি আহাম্মক তুমি! যদি আমার ভাই মহিন (মহেন্দ্রনাথ) আজ বিয়ে করে, আমি তার সাথে কোন সংস্রব রাখব না। এ বিষয়ে আমি স্থির সংকল্প। ”
  • মাদ্রাজীরা অপেক্ষাকৃত চটপটে ও দৃঢ়তা সহকারে একটা বিষয়ে লাগিয়া থাকিতে পারে বটে। কিন্তু হতভাগাগুলো সকলেই বিবাহিত। বিবাহ! বিবাহ! বিবাহ! পাষণ্ডেরা যেন ঐ একটা কামেন্দ্রিয় লইয়া জন্মাইয়াছে – যোনিকীট – এদিকে আবার নিজেদের ধার্মিক এবং সনাতন পন্থাবলম্বী বলিয়া পরিচয়টুকু দেয়া আছে। অনাসক্ত গৃহস্থ হওয়া অটি উত্তম কথা, কিন্তু উহার ততটা প্রয়োজন নাই, চাই এখন অবিবাহিত জীবন! যাক, বলাই! বেশ্যালয়ে গমন করিলে লোকের মনে ইন্দ্রিয়াসক্তির যতটা বন্ধন উপস্থিত হয়, আজকালকার বিবাহ প্রথায় ছেলেদের ঐ বিষয়ে প্রায় তদ্রূপ বন্ধনই উপস্থিত হয়। এ আমি বড় শক্ত কথা বলিলাম।”
  • ‘এ দেশের (আমেরিকা) স্ত্রীদের মত স্ত্রী কোথাও দেখিনি … এরা কেমন স্বাধীন। এদের মেয়েরা কি পবিত্র। ২৫-৩০ বছরের কমে কারুর বিয়ে হয় না। আর আমরা কি করি? আমার মেয়ের ১১ বৎসরে ‘বে’ না হলে খারাপ হয়ে যাবে! আমরা কি মানুষ?
  • ওদেশে (পাশ্চাত্যে) মেয়েদের দেখে আমার অনেক সময় স্ত্রীলোক বলেই বোধ হত না – ঠিক যেন পুরুষ মানুষ। গাড়ী চালাচ্ছে, স্কুলে যাচ্ছে, প্রফেসরি করছে। একমাত্র ভারতবর্ষেই মেয়েদের লজ্জা, বিনয় প্রভৃতি দেখে চক্ষু জুড়ায়।
  • ‘হে ভারত ভুলিও না তোমার নারীজাতির আদর্শ সীতা, সাবিত্রী ও দয়মন্তি’
  • ‘আমাদের নারীগণকে আধুনিক-ভাবে গড়িয়া তুলিবার যে সকল চেষ্টা হইতেছে সেইগুলির মধ্যে যদি সীতা-চরিত্রের আদর্শ হইতে ভ্রষ্ট করিবার চেষ্টা থাকে, তবে সেগুলি বিফল হইবে। … ভারতীয় নারীগণকে সীতার পদাঙ্ক অনুসরণ করিয়া নিজেদের উন্নতি বিধানের চেষ্টা করিতে হইবে। ইহাই একমাত্র উন্নতির পথ’।
  • এই আদর্শের চরম অবস্থায় হিন্দু বিধবারা সহমরণে দগ্ধ হতেন।
  • ‘জগতের চোখে সহমরণ এত বড় প্রথা কেন – কারণ ওতে ইচ্ছাশক্তির বিকাশ হয়’।

প্রপাগান্ডায় পারদর্শী বিবেকানন্দঃ

  • হ্যাঁ, আমি ইচ্ছে করেছিলাম যে আমায় নিয়ে একটা হৈ চৈ হয়। কি জানিস, একটা হৈ চৈ না হলে তাঁর (ভগবান শ্রীরামকৃষ্ণের) নামে লোক চেতবে কি করে! … তাকে ঠিক জানলে তবে ঠিক মানুষ তৈরি হবে; আর মানুষ তৈরি হলে দুর্ভিক্ষ প্রভৃতি তাড়ানো কতক্ষণের কথা!

জাতিভেদে বিশ্বাসঃ

  • ‘জাতিভেদ আছে বলেই ত্রিশ কোটি মানুষ এখনো খাবার জন্য এক টুকরো রুটি পাচ্ছে’।

শিক্ষা নিয়ে স্বামীজির উদ্ভট চিন্তা হীরক রাজার দেশে সিনেমাটির কথা মনে করিয়ে দেয়ঃ

  • ‘যত কম পড়বে তত মঙ্গল। গীতা ও বেদান্তের উপর যে সব ভাল গ্রন্থ আছে সেগুলি পড়। কেবল এগুলি হলেই চলবে।‘
  • ‘বই পড়িয়া আমরা তোতাপাখি হই, বই পড়িয়া কেহ পণ্ডিত হওয় না’।
  • ‘ধার্মিক হইতে গেলে আপনাদিগকে প্রথমেই গ্রন্থাদি ফেলিয়া দিতে হইবে। বই যত কম পড়েন ততই ভাল।
  • যতটা জানিলে তোমার পক্ষে কল্যাণ তোমরা তাহা অপেক্ষা বেশি জান – ইহাই তোমাদের মুশকিল।

ভোগ বিলাসী বিবেকানন্দঃ

  • ‘কিছু একটা করে দেখাও। মাদ্রাজে আমার জন্য একটা গৃহ নির্মাণ করতে না পার তো আমি থাকবো কোথায়?’
  • ‘গতকাল ১৩ ডলার দিয়ে একটা মীরশ্যাম পাইপ কিনেছি। ফাদার পোপকে যেন আবার বোল না। কোটের দাম পড়বে ৩০ ডলার। আমি তো বেশ ভালই আছি। খাবার দাবার জুটছে, যথেষ্ট টাকা কড়িও। আগামী বক্তৃতাগুলো হয়ে গেলে ব্যাঙ্কে কিছু রাখতে পারব আশা করি’।

দেশপ্রেমের নমূনাঃ

  • ‘ভারতে গিয়ে ফল কি? ভারত আমার আইডিয়া শক্তিশালী করতে পারবে না। আমার আইডিয়ার প্রতি এদেশের (আমেরিকার) মানুষ সহৃদয়।‘
  • ‘আমার হৃদয় রয়েছে আমেরিকায়। আমি ভালবাসি ইয়াঙ্কি দেশকে’।

বিবেকানন্দ অতীশয় ধুরন্ধর ছিলেন। সন্যাসী মার্কা ছবি এবং অতি সাধারণ ছড়া “জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর” দ্বারাই বাংগালী হিন্দুদের মগজ ধোলাই করলেন। তিনি বাংগালীর ঘরে ঘরে এখনও পুজিত। উপরে উল্লেখিত অখাদ্য বাণী নিয়ে কারও মাথা ব্যথা নাই। মানুষের মগজ এমনি একটা জায়গা যেখানে দেবতা হিসেবে একবার স্থান দখল করতে পারলে সেটা চিরস্থায়ী হয়ে যায়। তথাকথিত একটা অশিক্ষিত গেঁয়ো ভূতও জানে লেখাপড়ার বিকল্প নেই। কিন্তু মস্তিষ্ক বিকৃত স্বামী বিবেকানন্দ হীরক রাজার মতই জ্ঞানার্জন বিরোধী ছিলেন। এতদসত্ত্বেও বাংগালী হিন্দু্র নিকট স্বামী বিবেকানন্দ একজন মহাপুরুষ।

শিকাগো শহরে তাঁর বক্তৃতাটি পড়ে আমি উল্লেখযোগ্য কিছুই পাইনি। মানুষকে প্রশংসা করা আমেরিক্যানদের একটি প্রশংসনীয় কালচার। বক্তাকে হাততালি দিয়ে সন্মান দেখাতে আমেরিক্যানদের কোন কার্পন্য নেই। অনুমান করি, শিকাগো ধর্ম মহা সম্মেলনে অন্যদের মত তিনিও প্রচুর হাত তালি এবং স্ট্যান্ডিং ওভেশন পেয়ে অভিভূত হয়ে মনে করেছিলেন যে তিনি দারূণ একটা বক্তব্য দিয়েছেন। উপরের একটি নির্দেশ থেকে সহজেই অনুমেয়, বংগদেশে শিষ্যবর্গকে নির্দেশ দিয়েছিলেন ঘটা করে স্বাগতম জানাতে। সেই প্রচারণাই ছিল মুখ্য। প্রচারণাই তাঁকে আকাশে তুলেছিল এবং এখনও তিনি আকাশেই অবস্থান করছেন।

স্বামী বিবেকানন্দ হিন্দু বাঙ্গালীর মাথার মনি – দিকপাল, ক্ষণজন্মা এক মহাপুরুষ। কিন্তু স্বামীজীর স্বল্প-শ্রুত উদ্ভট বাণীসমূহ প্রকাশ করে অভিজিৎ রায় বাঙ্গালী হিন্দুদের ধর্মানুভূতিতে আঘাত দিয়েছেন। হিন্দুদেরও বিরোদ্ধবাদীকে প্রতিহত করার ইচ্ছা আছে। কিন্তু শক্তি নাই। নতুবা ইসলামী সন্ত্রাসীরা ২৬ শে ফেব্রুয়ারী ২০১৫ তারিখে অভিজিৎ রায়কে খুজে পেত না।

মূলতঃ অভিজিৎ রায় একজন বিজ্ঞান লেখক ছিলেন। যারা ধর্মে বিজ্ঞান আছে বলে দাবী করেছেন অভিজিৎ রায় তাদের ছেড়ে কথা বলেন নি। তিনি জাকির নায়েককে প্রতিহত করেছেন। হিন্দুরা বেদে বিজ্ঞান আছে বলে দাবীর প্রতিবাদে “ব্যাদের বিজ্ঞানকেও” কটাক্ষ করেছেন। কিন্তু অভিজিৎ রায় কখনও ইসলাম ধর্মের মহাপুরুষদের নিয়ে কোন লেখা লিখেননি যেমন তিনি স্বামী বিবেকানন্দ এবং তাঁর গুরু শ্রীরাম কৃষ্ণকে নিয়ে লিখেছেন।

স্বামী বিবেকানন্দ শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের শিষ্য ছিলেন। বাপকা ব্যাটা, সিপাই কা ঘোড়ার মতই মাথামোটা ছিল শিষ্য বিবেকানন্দের। “স্ববিরোধী বিবেকানন্দ” লিখতে গিয়ে অভিজিৎ রায় শ্রীরাম কৃষ্ণের অনেক রেফারেন্সে তাঁর অনেক উদ্ভট তথ্য বা বাণী পান।

নারী বিদ্বেষী শ্রীরামকৃষ্ণঃ

  • কামিনী নরকস্য দ্বারম্‌। যত লোক স্ত্রী লোকের বশ’।
  • মেয়ে মানুষের কাছে খুব সাবধান হ’তে হয়। মেয়ে ত্রিভুবন দিলে খেয়ে।
  • আমি মেয়ে বড় ভয় করি। দেখি যেন বাঘিনী খেতে আসছে। আর অঙ্গ, প্রত্যঙ্গ, ছিদ্র সব খুব বড় বড় দেখি! সব রাক্ষসীর মত দেখি।
  • মেয়ে মানুষের শরীরে কি আছে – রক্ত, মাংস, চর্বি, নাড়ীভুঁড়ি, কৃমি, মূত্র, বিষ্ঠা এই সব। সেই শরীরের উপর ভালবাসা কেন?
  • দেখ না, মেয়ে মানুষের কি মোহিনী শক্তি, অবিদ্যারূপিনী মেয়েদের! পুরুষগুলোকে যেন বোকা অপদার্থ করে রেখে দেয়। যখনই দেখি স্ত্রী-পুরুষ এক সঙ্গে ব’সে আছে, তখন বলি, আহা! এরা গেছে।
  • হাজার ভক্ত হলেও মেয়েমানুষকে বেশীক্ষণ কাছে বসতে দেই না। একটু পরে হয় বলি – ‘ঠাকুর দেখো গে যাও’; তাতেও যদি না উঠে, তামাক খাবার নাম করে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ি।
  • যদি স্ত্রীলোক ভক্তিতে গড়াগড়ি যায়, তবুও তার কাছে যাতায়াত করবে না।
  • মেয়ে মানুষের সঙ্গে থাকলেই তাঁদের বশ হয়ে যেতে হয়।
  • মেয়ে ভক্তদের গোপাল ভাব- ‘বাৎসল্য ভাব’ বেশি ভাল নয়। ঐ ‘বাৎসল্য’ থেকেই আবার একদিন ‘তাচ্ছল্য’ হয়।
  • মেয়ে মানুষের গায়ের হাওয়া লাগাবে না; মোটা কাপড় গায়ে দিয়ে থাকবে, পাছে তাঁদের হাওয়া গায় লাগে।
  • ‘তোমার মেয়েদের আর গান শিখিও না। যার তার কাছে গাইলে লজ্জা ভেঙ্গে যায়। লজ্জা মেয়েদের বড় দরকার’।
  • স্ত্রী লোক কিরূপ জান? যেমন, আচার তেঁতুল। মনে করলে মুখে জল সরে। আচার তেঁতুল সম্মুখে আনতে হয় না। … আপনারা যতদূর পার স্ত্রীলোকের সাথে অনাসক্ত হয়ে থাকবে। মাঝে মাঝে নির্জন স্থানে গিয়ে ঈশ্বরচিন্তা করবে। সেখানে যেন ওরা কেউ না থাকে। ঈশ্বরেতে বিশ্বাস ভক্তি এলে অনেকটা অনাসক্ত হয়ে থাকতে পারবে। দু-একটি ছেলে হলে স্ত্রী-পুরুষ দুইজনে ভাইবোনের মত থাকবে। আর ঈশ্বরকে সর্বদা প্রার্থনা করবে, যাতে ইন্দ্রিয় সুখেতে মন না যায়, ছেলেপুলে আর না হয়’।

বাংলাদেশের আল্লামা শফী হুজুর গতবছর (২০১৪) একটি ওয়াজ মিছিলে নারীদের তেঁতুলের সাথে তুলনা করে সমালোচিত হয়েছিলেন। শ্রীরামকৃষ্ণ দেড়শত বছর আগেই স্ত্রীলোকদের তেঁতুলের সাথে তুলনা করেছেন। শফী হুজুর নারীদের বিদ্যা শিক্ষা সীমিত করার কথা বলেছেন। স্বামী বিবেকানন্দ অনেক আগেই একই বাণী দিয়ে মহাপুরুষ হয়েছেন।

মহাপুরুষ স্বামী বিবেকানন্দ এবং শ্রীরামকৃষ্ণদের যেমন কালো দিক আছে তেমনি অন্য অনেক মহাপুরুষদেরও কালো দিক আছে। আমরা তা জানি না। এবং জানতে চাইও না। কেঊ উদ্ঘাটন করলে আমরা ব্যথিত হই। আমরা এত অন্ধ বিশ্বাসী যে প্রতিহত করতে গিয়ে খুন করতেও দ্বিধা করিনা।

নেতাজী সুবাসকে নিয়ে কম মাতামাতি নেই আমাদের। বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে এই মহাপুরুষটি “শত্রুর শত্রু মিত্রঃ – সূত্রটি আবিষ্কার করেন। স্বীয় ভুল সিদ্ধান্তের কারনে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে তিনি সটকে পড়েন। গান্ধীজির নেতৃত্বে ভারতবর্ষে যখন স্বাধীনতা সংগ্রাম চলছে, নেতাজী তখন জার্মানীতে এমিলি শ্যংকলের সাথে প্রেমক্রীড়ায় ব্যস্ত। তিনি তাকে শাড়ী পড়া শিখাচ্ছেন। এক সন্তানের জন্ম দিয়েছেন। তারপর একদিন প্রেমে ভাটা পড়ে। গৌতম বুদ্ধের মত কন্যা এবং স্ত্রী ছেড়ে জাপানের উদ্দেশ্যে ডুবু জাহাজ ভ্রমনে বের হন।

বিবেকানবন্দের মত প্রপাগান্ডা করে বিখ্যাত হওয়ার দরকার ছিল না গৌতম বুদ্ধের। রাজ পরিবারে বিখ্যাত হওয়ার সম্ভাবনা নিয়েই তিনি জন্মেছিলেন। কিন্তু এই লোক কী করলেন? মানুষের মৃত্যু-জরা-ব্যাধি, ক্ষুধা-কষ্ট তাকে গৃহত্যাগের ডাক দিল। এক রোগ-ক্লিষ্ট বৃদ্ধ লোককে দেখলেন। রোগ অনিবার্য সত্য। মৃত্যুও অনিবার্য সত্য। এই পৃথিবীতে স্ত্রী-পুত্র, এবং রাজত্ব সবই মায়ার খেলা। তিনি রাজপ্রাসাদ ছেড়ে জংগলে আশ্রয় নিলেন। মায়া-মোহ, ভাব-আবেগ থেকে নির্বাণ লাভের পথ খুজলেন। তিনি শিষ্যাদি সহ নিরাবিল জীবন যাপন করলেন। কিন্তু তাঁর স্ত্রী হারালেন স্বামী এবং পুত্র হারাল বাবা। গৌতমের পিতা-মাতা পুত্রশোকে কাটালেন বাকী জীবন।

এমন অনেক মহাপু্রুষ আছেন যারা নিজেদের দুর্দান্ত ইচ্ছাশক্তি, ধূর্ততা, এবং ছল-ছাতুড়ি করে ঈশ্বর প্রতিষ্ঠিত করে গেছেন। সেসব অনেক বিরাটকায় মিথ্যা পৃথিবীটাকে দংশন করছে অধ্যাবধি। অনেকের চাল-চুলো ছিল না। কিন্তু বিশাল রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন। গৌতম বুদ্ধ এবং এইসব মহাপুরুষরা বিপরীত মেরুতে অবস্থান করেন।