ভেবে ভেবে দিন কেটে যাচ্ছে কিছু আসছে না মাথায়। কী বলবো , কী দিয়ে শুরু করব।
ঘটনাটা এমন, বইমেলা ২০১৫ যখন শুরু হলো আমি ছিলাম দেশের বাইরে। তবে বেড়ানো শেষ করে ফেব্রুয়ারী তেই ফিরে আসি নিজ আবাস ভূমিতে। বইমেলা চলছে। যাচ্ছি যাবো করে যাওয়া হচ্ছে না।
সে দিন ছিল ২৬ ফেব্রুয়ারি। সব ফেলে টেলে ভাবলাম আজ না গেলে তো শেষের দিকে প্রচন্ড ভীড় হবে।
তখন আরো মুশকিলে পড়বো। তো সে দিন পড়ন্ত বিকেলে রওয়ানা দিলাম। সাথে পেলাম সাথী হিসাবে মোজাফফর, আর তার স্ত্রীকে। ভালোই হোলো। মোজাফফরের বইও বের হয়েছে । দেখা যাবে।
এদিক সে দিক ঘুরলাম। মোজাফফর বেশ ব্যস্ত। আমার মন পড়ে আছে শুদ্ধস্বর প্রকাশনীতে যাবো ।
সাথে কচি বাচ্চা থাকায় শেষ পর্যন্ত বাসায় চলে আসার সিদ্ধান্ত নিলাম।
আজকাল মেলায় কেন জানিনা ভালো লাগে না।
বাসায় ফিরে এলাম। হঠাৎ টেলিভিশনে দেখলাম নিচে লিখছে আমাদের প্রিয় অভিজিতের হত্যার খবর।
চমকে উঠলাম। কী আশ্চর্য! অভিজিত এসেছে জানিনা ?
এর পর খবরের সত্যতা যাচাই করতে এখানে ওখানে ফোন। বিপ্লব রহমান ভাইকে ফোন করলাম। খবর সঠিক। টুটুল ভাইকে ফোন করলাম সঠিক। সবাই কাদছে। কাদছে হাউ –মাউ করে। স্বজন হা্রা কান্না।
আমারৎ কান্নার আওয়াজে ছুটে এলো মেয়েরা। ওর বাবা।
অভিজিত কে নিয়ে কিছু বলতে গেলে , কিছু লিখতে গেলে হাত কাঁপে, গলার স্বর ভেঙ্গে আসে।
কেনো ? কী এমন ছিল? সবাই ভাবতে পারেন। উত্তর জানা নেই। আবার জানি।
অনন্ত কে ফোন করলাম। ও নিশব্দে কেঁদে চলেছে। আমি টের পাচ্ছি। আমি বুঝতে পারছি। ।
-বন্যার কী অবস্থা?
– আপু ভালো না। আপনি কাদবেন না । আমি ঢাকা যাবো, আপনাকে খবর দিবো।
– অনন্ত ভাই, তুমি ও সাবধানে চলো।
– আপু , আমি ও বিপদ মুক্ত না। তবু চিন্তা করবেন না।
চলে গেলো অভিজিত। পরের দিন টি এস সি মিটিং এ গেলাম। সব শূণ্য লাগছে। কোথায় যেনো কি ছিল এখন হারিয়ে গেছে। অনেকেই যাচ্ছে যেখানে অভিজিত কে কুপানো হয়েছে। সে জায়গা দেখতে।
মন আমার এতো শক্ত না ওখানে যাবো। গাছের ছায়াতে কিছুক্ষণ সবার বক্তব্য শুনলাম।
ভালো লাগছে না টের পাচ্ছি। একটা কথাই মনে হচ্ছিল। যাকে হারালাম তাকে আর ফিরে পাবো না।
নাহ। কোনো মুল্যে না। শুণ্য মন, এক রাশ হাহা কার বুকে নিয়ে চলে এলাম।
অনন্ত ঢাকা এসে খবর জানাত। কখন বন্যা’কে দেখতে গেলো। দেখতে তো পেত না। বন্যার মামার কাছ থেকে খবর নিত। আর নিশব্দে কাঁদতো।
শেষ পর্যন্ত জানলাম নাহ বন্যা’কে নিয়ে যাওয়া হয়েছে আমেরিকা। হাঁপ ছেড়ে বাঁচলাম।
বন্যা বেঁচে থাকো বোন, তোমার বেঁচে থাকা খুব দরকার।
দিন তো বসে থাকে না। এমন করেই কারো চাওয়া না চাওয়ার মাঝেই গড়িয়ে দিন যেতে লাগলো।
ক্রমশঃ হতাশ হতে থাকলাম অভিজিতের হত্যার বিচার কি হবে না?
যে দিন অনন্তর সাথে কথা বললাম। সে দিন কি জানতাম ও দিনই শেষ কথা?
সে দিন ফেস বুকে ওর স্টাটাস পড়ছি। আর ভাবছি কী লেখা যায় । কী দারুণ বলেছে ছেলেটা।
ওই দিন ও কার কাছে উড়া খবর পেলাম- অনন্ত নেই-
ধুত পাগোল? ওর সাথে আমার এই তো কথা হয়েছিল। মুক্তমনা নিয়েই। কী আশ্চর্য!
মানুষের খেয়ে দেয়ে কাজ নেই মিথ্যে বলে,। আবার দূরু দূরু মন নিয়ে কাকে জিজ্ঞেস করব ভাবতে ভাবতে সময় পার হচ্ছে। শেষ পর্যন্ত হুমায়ুন আযাদের ছেলে অনন্য আযাদ কে ফোন করলাম। নিশ্চিত হয়ে কান্নার দমক আটকাতে পারলাম না।
গীতা’দিকে ফোনে জানালাম।
কী? বলে মনে হল কাঁপতে লাগলেন। আর কী। সব শেষ,
অনন্ত -ভাই এতো বড় কষ্ট দিয়ে চলে গেলে?
দেখলে না অভিজিত’কে কী করেছে ওরা। না হয় কোথাও থাকতে? এমন করে আবার বুক খালি করে দিতে আছে?
অনন্ত- তোমার কথা ভাবলেই বুকে চাপ চাপ ব্যথা পাই। তাজা তরুন রক্ত। তোমার পরিবর্তে াআমার মত একজন নিকৃষ্টৃ মানুষ যদি যেত কিচ্ছু হোত না। দুনিয়াকে তোমাদের দেবার অনেক ছিলো।
ওঠো ভাই-
আবার আমাদের মাঝে ফিরে এসো। এখন ও শেষ কথা কানে ভাসে। লিখতে পারিনা আর। কী বোর্ড ভেসে যাচ্ছে।
অনন্ত আমার অশ্রুর নাম- অনন্ত আমার হা-হাকারের নাম। অনন্ত ফিরে এসো লক্ষি ভাই।