বাংলাদেশে রোজই জন্ম হয় নতুন খবরের। পত্রিকার পাতা খুলে প্রায় দশটা সংবাদে চোখ বুলালে তার মধ্যে প্রায় আটটি সংবাদই হবে দু: সংবাদ। আমরা বাংলাদেশীরা অভ্যস্তও হয়ে গেছি সহিংসতার সংবাদে। যতক্ষণ পেট্রোল বোমাটি ঠিক আমারই স্বজনের গায়ে এসে না পড়ছে, ততক্ষণ আমরা স্বজন হারাবার ব্যথা অনুভব করি না, প্রতিবাদও করি না। ড. অভিজিৎ রায়ের খুনিরা খুন করে চোখের সামনে দিয়ে পালিয়ে যায়, আমরা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখি, পুলিশও দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে। আমরা কেউ খুনিদের ধরিয়ে দেই না। ওয়াশিকুর রহমান বাবুর খুনিদের ধরিয়ে দেয় তৃতীয় লিঙ্গের মানুষরা, যাদের মানুষ বলে গণ্য করে না আমাদের তথাকথিত সভ্য সমাজ। আমাদের ভোঁতা মানবতা বোধ নিয়ে আমরা কোন মতে বেঁচে থাকি প্রতিদিন। এখন বাংলাদেশে বোমা হামলা স্বাভাবিক, বুদ্ধিজীবী হত্যা স্বাভাবিক, নারী নির্যাতন স্বাভাবিক, ধর্ষণ স্বাভাবিক, সংখ্যালঘু নির্যাতন স্বাভাবিক, আদিবাসী নির্যাতন স্বাভাবিক, প্রায় সমস্ত রকমের অপরাধই স্বাভাবিক। এইভাবে ক্রমাগত কবে যে আমরা মানবতা বোধ হারিয়ে হিংস্র পশুর চেয়েও অধম জাতিতে পরিণত হয়েছি, টের কি পেয়েছি?
পহেলা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া ঘটনায় কি জাতিগত ভাবে আমরা আমাদের বীভৎসতা দেখতে পেয়েছি? আসুন কিছু প্রশ্নের মুখোমুখি হই। আপনি কি যৌন নিপীড়নকারীদের একজন? ঘটনা ঘটার সময় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখেছেন? বিবস্ত্র মেয়েটির আর্ত চিৎকার শুনে দূরে দাঁড়িয়ে হেসেছেন? মেয়েটি কেন পহেলা বৈশাখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছে, মেয়েটিরই দোষ বলে যৌন নির্যাতন কারী লম্পট গুলোর পক্ষে সাফাই গেয়েছেন? নির্যাতিত মেয়েদের শাড়ি নাভির উপরে না নীচে ছিল, ব্লাউজের হাতা কতটুকু ছিল, পিঠ দেখা যাচ্ছিল কিনা এসব বিশ্লেষণ করে অতঃপর অপরাধী নির্যাতনকারীরা নাকি নির্যাতিতা সেই রায় দিয়েছেন? পহেলা বৈশাখে যৌন নির্যাতনের ঘটনা আদৌ ঘটেছে কিনা তা নিয়ে দ্বিধান্বিত? ঘরে ফিরে আপনার স্ত্রী, বোন কিংবা কন্যার বাইরে যাবার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন? পহেলা বৈশাখকে হিন্দুয়ানী সংস্কৃতি বলে বাঙ্গালী সংস্কৃতির অবমাননা করেছেন? বাংলাদেশের সার্বজনীন উৎসবে এহেন ন্যাকারজনক ঘটনা ঘটার পরেও প্রতিবাদ না করে চুপ করে থেকেছেন? এই প্রশ্নগুলোর একটির উত্তরও যদি হ্যাঁ হয় তাহলে দয়া করে একবার আয়নার নিজের চেহারাটা দেখুন, ঐটিই একজন অমানুষের চেহারা। অমানুষরা দেখতে আপনারই মত।
যৌন সহিংসতার এই ঘটনার পরবর্তী সময়ে প্রতিবাদ আর প্রতিরোধের পরিকল্পনায় অংশ নেয়া মানুষের সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। আশার খবর হচ্ছে, প্রতিবাদীদের অধিকাংশই আসলে নারী। যে নারীদের অন্তঃপুরে বন্দী করার স্বপ্নে হেফাজতে ইসলাম নেতা আল্লামা শফী বিভোর হয়ে আছেন, সেই নারীরাই মুখর হয়ে আছেন প্রতিবাদে। আল্লামা শফী বলেছেন “পহেলা বৈশাখের দিনে ঢাকায় নারীর বস্ত্রহরণসহ শ্লীলতাহানি হয়েছে। একসঙ্গে ছেলে-মেয়ে লেখাপড়ার সুযোগে অশালীন চলাফেরার কারণে এ পরিণতি হয়েছে।” ইতিপূর্বেও তিনি দাবী করেছিলেন নারী-পুরুষ একসাথে পড়া লেখা করতে পারবে না, কাজ করতে পারবে না। নারীদের স্বামীর সংসারের জিনিসপত্র দেখ ভাল করে রাখার মত শিক্ষাগত যোগ্যতাই তিনি যথেষ্ট মনে করেন। হেফাজতে ইসলামের মত একটি বড় দলের নেতা হয়েও তিনি যৌন সহিংসতা কারী নরপশুগুলোর শাস্তি দাবী না করে আঙ্গুল তুললেন নারী পুরুষের একসাথে পড়া লেখা করার দিকে। যিনি কথায় কথায় বলেন ইসলামে নারীকে সবচেয়ে বেশী সম্মান দেয়া হয়েছে, অথচ তার বক্তব্যেই প্রতীয়মান হয় যে, নারীকে তিনি তেঁতুলের মত লালসার বস্তুর চেয়ে বেশী কিছু ভাবেন না। আজ আল্লামা শফী ও তার দলের বিরুদ্ধে নারীর প্রতি অসম্মানের যে অভিযোগ তুলছি, তার প্রমাণ দিয়েছে সাংবাদিক নাদিয়া শারমিনকে হেফাজতে ইসলাম শারীরিক ভাবে নির্যাতন করে। ইসলামের কথা বলা যে দল নারীকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে নারীর প্রতি তাদের সম্মানের নমুনা দেখায়, সেই দল পহেলা বৈশাখে নারীর উপর চালানো যৌন সহিংসতার শাস্তি চাইবে, সে আশা করাও যে বোকামি, জনগণ তা বোঝে। হেফাজতে ইসলামের মধ্যযুগীয় কুশিক্ষার জবাব দিতে এ দেশের নারী জনগোষ্ঠীই যথেষ্ট। সেই নাদিয়া শারমিন, যাকে আপনাদের দলের অমানুষগুলো পিটিয়েছিল রাস্তার উপরে, তিনি বহাল তবিয়তেই সাংবাদিকতা করছেন, সাহসী নারী হিসেবে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও পেয়েছেন যেখানে আপনারা এখনো মাদ্রাসায় বসে ছাত্রদের শেখাচ্ছেন নারীকে কিভাবে অসম্মান করতে হয়। এবারও নারী প্রতিবাদী হয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে, নারী তার মর্যাদা রক্ষায় হুজুর মৌলভী বা যৌন নিপীড়কের দয়ার উপর মোটেও নির্ভরশীল নয়।
একাত্তর টিভির সাথে সংলাপে বসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকটর বলে গেলেন, একমাত্র লিটন নন্দীর বক্তব্য ছাড়া যৌন সহিংসতার অভিযোগ তারা পান নি। পুলিশ ঘটনাস্থলে নারীর নিরাপত্তা রক্ষায় এগিয়ে আসেনি, দুজন যৌন সন্ত্রাসীকে ধরে পুলিশের কাছে দিলেও তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তোলপাড় ঘটে গেলেও পুলিশ কাউকে গ্রেপ্তার করেনি এখনও। অথচ সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে, বহু ছবিতে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে যৌন সন্ত্রাসীদের চেহারা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা শাড়ি চুড়ি হাতে নিয়ে থানা ঘেরাও করেছে। আমাদের প্রশাসনও আসলে নির্লজ্জ। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় যাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে জনগণের নিরাপত্তা রক্ষায়, তারা মূলত সন্ত্রাসীদের সেবায় নিয়োজিত। পুলিশি দায়িত্ববোধ তো পরে, মানবিক বোধেও কি প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের বাঁধে না?
পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ খুঁজে যৌন সন্ত্রাসীদের নাগাল পাচ্ছে না, অথচ একাত্তর টিভির প্রতিবেদক ফারজানা রূপা ঠিকই দেখিয়ে দিলেন কতিপয় ব্যক্তি কিভাবে সংগঠিত করেছে নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা। আর সাথে সাথে তিনি পেয়ে গেলেন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের কাছ থেকে মৃত্যুর হুমকি। ফারজানা রূপাকে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের হুমকি ইঙ্গিত করে পহেলা বৈশাখে যৌন হয়রানির ঘটনা সুপরিকল্পিত এবং এই জঙ্গি দলটি ঘটনার সাথে জড়িত। আনসারুল্লাহ বাংলা টিম যদি পরিকল্পিত ভাবে যৌন হয়রানি করে থাকে, তাদের উদ্দেশ্য কি? পহেলা বৈশাখ বাঙ্গালী জনগোষ্ঠীর উৎসব, যা কোন বিশেষ ধর্মের মানুষের জন্য সীমাবদ্ধ নয়। বাঙ্গালী নারীর শাড়ি, মেলা, ঢোলের বাদ্য মনে করিয়ে দেয় বাঙ্গালী জাতি হিসেবে আমাদের শিকড় অনেক গভীরে প্রোথিত। ইসলামী চরমপন্থি সন্ত্রাসীরা সন্ত্রাস ছড়িয়ে মুছে ফেলতে চাইছে আমাদের বাঙ্গালী হৃদয়ের সংস্কৃতিকে। এবারই প্রথম নয়, প্রথমে আমাদের সংস্কৃতির উপর আঘাত হেনেছিল বোমা হামলা করে, এইবারে করল নারীকে আঘাত করে। তারা আশা করেছিল, পরবর্তী বছর থেকে হয়ত নারী আর উৎসবের আনন্দে উচ্ছ্বসিত হয়ে রঙ্গিন প্রজাপতির মত বেরুবে না ঘর থেকে, বাঙ্গালীর উৎসব হারাবে বর্ণচ্ছটা, সঙ্গীতের সুর আর ক্রমেই জয়ী হয়ে যাবে মৌলবাদের কালো থাবা! তবে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম যা জানেনা, বাঙ্গালী নারীরা আজ অব্দি কোন কালেই পাশবিকতার কাছে হার মানে নি, সে যতই ধর্মের মোড়কে বাজারে ছাড়া হোক না কেন! একাত্তরে নারীর উপর নির্যাতন চালিয়েছে পাক বাহিনী আর রাজকার বাহিনীর পুরুষেরা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের পুরো পরিবারকে হত্যা করেছে তাদেরই মদদ-পুষ্ট পুরুষেরাই, সারাদেশে বোমা হামলা চালিয়েছিল নিষিদ্ধ ঘোষিত জেএমবির পুরুষেরাই। ড. হুমায়ুন আজাদ, রাজীব হায়দার, ড. অভিজিৎ রায়, ওয়াশিকুর রহমান বাবু এদের হত্যাকারীরাও পুরুষই। কিন্তু আজ পর্যন্ত নারী সন্ত্রাসে জড়ায়নি, সন্ত্রাসবাদকে প্রশ্রয়ও দেয় নি। ইসলামের নাম ব্যবহার করে মুসলিম পুরুষকে খুনিতে রূপান্তরিত করা সম্ভব হলেও নারীরা মানুষই আছে। আজ যখন এই নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতাকে তোমরা অস্ত্র হিসেবে বেছে নিলে, নারীরা কিভাবে তোমাদের প্রতিরোধ করে, এবার তা শুধু তোমাদের দেখবার পালা।
পহেলা বৈশাখের ঘটনাতে বাংলাদেশের সমস্ত নারীর কাছে একটা জিনিস পরিষ্কার হয়ে গেছে, নিজেদের নিরাপত্তার দায়িত্ব এবার নারীদেরই নিতে হবে। সরকার তাদের পাশে দাঁড়াবে না, পুলিশ সন্ত্রাসীদের ছেড়ে দেবে, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ঘটনা অস্বীকার করবে, দলগত ভাবে হামলায় ভাই, স্বামী, বাবাও অসহায়ের মত চেয়ে চেয়ে দেখবে। ওরা এবার কেবল তরুণী মেয়েদের নয়, মায়ের কোল থেকে শিশুকে নামিয়ে মাকে নির্যাতন করেছে, বাবার পাশ থেকে কিশোরী মেয়েকে কেড়ে নিয়ে নির্যাতন করেছে। তাই প্রতিবাদে মুখর হয়ে গেছে প্রতিটি মেয়ে। মেয়েরা আত্মরক্ষার শপথ নিচ্ছে। রান্নাঘরের যে ছুরি তারা এতদিন সবজি কাটতে ব্যবহার করেছে, যে কাঁচি এতো দিন কাপড় কাটতে ব্যবহার করেছে, যে খোঁপার কাঁটা এতদিন তারা চুল বাঁধতে ব্যবহার করেছে তাই এবার নিজেদের প্রতিরক্ষায় ব্যবহার করবে। যে মেয়েরা আজ নিজেদের প্রতিরক্ষায় নিজেরাই স্বাবলম্বী হবে বলে ঠিক করেছে, সে যেদিন মা হবে, সেদিন তার মেয়েকে গানের, নাচের, কুরানের শিক্ষকের কাছে পাঠানোর পাশাপাশি মার্শাল আর্টের স্কুলেও পাঠাবে। সমগ্র জাতির অর্ধেক যদি এইভাবে তাড়া করে যৌন সন্ত্রাসীদের, কোথায় পালাবে তোমরা? লিটন নন্দীদের মত কয়েকজন পুরুষ ছাড়া বাকিরা যদি সকলে অমানুষও হয়ে গিয়ে থাকে, তাতে নারীদের অগ্রগতি থমকে দাঁড়াবে না। এতো কাল সমাজের ঘরে ঘরে পুরুষ বুক ফুলিয়ে বলেছে নারীর নিরাপত্তার দায়িত্ব তাদের। যৌন সন্ত্রাসীরা পুরুষের সেই মিথ্যে অহমিকা এবার ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছে। আর প্রতিবাদী করে তুলেছে নারী সমাজকে। এই নারী শক্তিকে ঠেকানোর সাধ্য কার!
কবে জাগবে আমাদের মানবতা বোধ?” />
একটি প্রচণ্ড প্রতিবাদ চাই। বাংলাদেশ এভাবে মুখ বুজে সব সয়ে যাবে নাকি?
তানবীরার মন্তব্য একশভাগ ঠিক। হয় এসপার না হয় ওসপার। মধ্যেখানে থাকা ঠিক বালে মনে করিনা।
আমার দৃষ্টিতে এসপার – ওসপার হওয়া প্রয়োজন। আইদার সৌদি নইলে সেক্যুলার, মাঝে ঝুলে থাকা মডারেটের অভিনয়তো অনেক হলো। পহেলা বৈশাখের আয়োজন আর না করা হোক, বাড়ি থেকে কেউ বের হবে না। বিধর্মী ব্যাপারতো মেয়েদের একা হতে পারে না। পুরুষের ক্ষেত্রেও সেটা সমান ভাবেই প্রযোয্য।
নারী এগিয়ে যাক সমাজের বাধা অতিক্রম করে, জ্বলে উঠুক বহ্নিশিখার মত। পুড়িয়ে দিক সমাজের সব শৃং্খল তার বহ্নিশিখায়।
প্রতিবাদ চলছে, চলবে …
নারীদের ব্যাগের মধ্যে রাখতে হবে পিপার স্প্রে যা পুলিশদের দেয়া হয়েছে । শুনেছি পৃথিবীর কোন কোন উন্নত দেশের নারীরা এটি তাদের ব্যাগে রাখে ।
খুব সম্ভবত ভারতেই নারীদের ব্যাগে স্টানগান রাখার অনুমতি আছে। লিপস্টিকের মত আকৃতির ব্যাটারী যুক্ত ইলেক্ট্রোড। একটু ইলেক্ট্রিক শক দিয়ে দিলেই যৌন সন্ত্রাসীরা ছেড়ে দে মা বলে পালাবে। নারীরা ব্যাগে মেকাপ কিট রাখা বাদ দিয়ে স্টানগান রাখলে কাজে দেবে।
যে নারী আত্মরক্ষা করতে পারে, তার আত্মবিশ্বাসও আকাশ্চুম্বী। আমি নিজে আর দশটা মেয়ের চেয়ে সাহসী হওয়া স্বত্বেও ঢাকার রাস্তা একা চলতে গেলে মাথা নিচু করে চলতাম, আর সর্বক্ষণ সচেতন থাকতাম যাতে বিপদ এড়িয়ে চলতে পারি। অশোভন মন্তব্যে কখনো কখনো প্রতিবাদ করেছি বটে, কিন্তু অধিকাংশ সময় এড়িয়ে গেছি। তবে ভিড় ঠাসা বাসে কেউ গায়ে হাত দিতে আসলে প্রতিবাদ করেছি, অধিকাংশ ক্ষেত্রে কাউকে না কাউকে পেয়েছি যারা আমার সাথে সুর মিলিয়ে দুটো কথা শুনিয়ে দিয়েছে। সেই মাথা নীচু করে চলতে হয়েছে, শ্বাপদের সামনে আমি আত্মবিশ্বাসী ছিলাম না বলেই। অথচ সেই আমি, বিদেশের মাটিতে কোনদিন কোথাও আত্মবিশ্বাসহীনতায় ভুগিনি। মাথা উঁচু করে সর্বত্র নিজের উপস্থিতি জানান দিয়ে যাচ্ছি।
আমার মার্শাল আর্টের প্রশিক্ষণ থাকলে আমিও ঢাকার রাস্তায় এখনকার মত মাথা উঁচু করে চলতে পারতাম। বা স্টানগান থাকলেও বুঝিয়ে দিতাম, নীপিড়ন করলে আমিও ছেড়ে দেব না। বাংলাদেশের এক একটা স্বতঃস্ফূর্ত প্রাণকে এইভাবে কুঁকড়ে থাকতে আর দেখতে চাই না। এইবার ঘুরে দাঁড়াবার সময়।
হাস্যকর ব্যপার হলো, যদ্দুর জানি (ভুল হলে প্লিজ শুধরে দেবেন, আমি চাই যেন আমার এই ইনফরমেশন ভুল হয়!) আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের কাছে পেপার স্প্রে রাখা বেআইনি -_- ( সাউন্ডস লেজিট, মানুষজন যদি নিজেদের নিরাপত্তা নিজেরা দিতে সমর্থ হয় তাহলে যারা মানুষের ক্ষতি করে নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে তাদের কী হবে :3 )
আর আপনার সেলফ ডিফেন্স প্রশিক্ষণের বিষয়ে আমি সম্পূর্ণ একমত!
মাঝেমধ্যে মনে হয় যেন জুতমতো মার্শাল আর্ট প্রশিক্ষণটা শেষ করতে পারলে হয়তো যেটুকু ভয় নিয়ে রাস্তাঘাটে চলি, ওইটুকুও ওভারকাম করতে পারতাম।
আর মার্শাল আর্ট শিক্ষার ব্যপারে আমার একটা ছোট্ট সাজেশন ছিলো।
বেশির ভাগ স্পোর্টস লেভেল মার্শাল আর্টের জন্য (বিশেষ করে যেগুলো অলিম্পিক ইভেন্ট, যেমন : জুডো, তাইকোয়ান্ডো) কিংবা কারাতে, মোক্কাইরি – এসবের জন্য অনেক অ্যাথেলেটিক বিল্ড আর কম্পিটিশন বেইজড রুলস শিখতে হয়, যেগুলো সময়সাপেক্ষ আর জটিল হয়ে যেতে পারে।
সেই তুলনায়, ট্যাকটিক্যাল মার্শাল আর্টস (যেমন ক্রাভ মাগা) শেখানো যেতে পারে, এসব আর্ট স্পোর্টস ইভেন্ট নয় বরং একেবারে মানুষের আত্মরক্ষার নিমিত্তে বানানো হয়েছে, তুলনামূলক কম কম্পলিকেশন কিন্তু বেশি ইফেক্টিভ ^_^
একটা ছোট্ট ভিডিও শেয়ার করতে চাই, মজার কিন্তু কাজেরও বটে xD
https://www.youtube.com/watch?v=-GJsld9IVjU&feature=youtu.be
খুবই দরকারি শক্তিশালী লেখা।
কলম চলুক।
ধন্যবাদ প্রদীপ দা।
আমি ব্যক্তিগত ভাবে নারীপক্ষ নামক একটি সংগঠেনের সদস্য। আমরা নারীর আত্মরক্ষা বিষয়ক ( যদিও স্বল্প পরিসরে) প্রশিক্ষণ করিয়ে থাকি। আমাদের স্কুল প্রোগ্রামও আছে। মার্শাল আর্টের ইস্যুটি এতে অন্তর্ভূক্তির জন্য আগমী সভার আলোচ্যসূচিতে রাখব।
আর পেশাগতভাবে ইউনিসেফ এ চাকরি করি। কিশোর কিশোরীদের নিয়ে সরকারের সাথে আমাদের প্রকল্প আছে। আগামী প্রকল্পে বিষয়টি অন্তর্ভূক্তির প্রস্তাবও (সময় সাপেক্ষ ) করতে পারি।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। খুব খুশি হলাম আপনি বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গুল নিতে যাচ্ছেন শুনে। আমরা কেবল লিখতে পারি, বলতে পারি। ইচ্ছে থাকলেও সরাসরি কিছু করতে পারিনা। কেবল আশা করতে পারি, মানুষ হয়ত সচেতন হবে। আপনারা সেই বাস্তব পরিবর্তনটা ঘটাতে পারেন। আপনার জন্য শুভ কামনা রইল।
🙂
“পহেলা বৈশাখের ঘটনাতে বাংলাদেশের সমস্ত নারীর কাছে একটা জিনিস পরিষ্কার হয়ে গেছে, নিজেদের নিরাপত্তার দায়িত্ব এবার নারীদেরই নিতে হবে।”— সহমত এবং আহ্বান করছি “জাগো স্বাহা সীমন্তে রক্ত-টিকা”।
ধন্যবাদ।
মেয়েদের মার্শাল আর্টের স্কুল দরকার। আপনি তো মাঠ পর্যায়ে নারী উন্ননয়ের সাথে জড়িত। এই চিন্তাটাকে বাস্তব রূপ দেয়ার কোন পথ বেরা করা সম্ভব?
বলিষ্ঠ লেখের জন্য লেখিকাকে ধন্যবাদ। লেখিকার ৯ টি প্রশ্ন সঠিক ভাবে রেখেছেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো, কয়জন পুরুষ আছে যে ধর্মান্ধতা ও মৌলবাদীদের রক্তচক্ষুকে পাশ কাটিয়ে নারীর স্বাধীনতাকে সমর্থন করবে। মৌলবাদীরা চায় নারীকে বোখার ভিতর রেখে তাকে ভোগ করতে। নারীর অধিকারকে এরা মানেনা এবং নারীকে সম্মান দেয়না ও দিতে জানেনা। বাংলার সংস্কৃতি তাদের কাছে গৌণ। পহেলা বৈশাখএর উৎসব কোন বিশেষ ধর্মের নয়। এটা বাংগালী জাতির উৎস্ব। নারী কি ঘরের বাইরে যেতে পারবেনা? শুধু কি ঘর সাম্লাবে ? আর পুরুষের ভোগ-লালসাকেই তৃপ্ত করবে ? পুরুষ জাতির কাছে আবেদন, তারা নির্ম্ল চোখে নারীকে দেখুন এবং তাদের আধিকারের জন্য সমব্যথী হউন। নারী শক্তির আঁধার। নারীকে বাদ দিয়ে বিশ্ব শূন্য।
বাঙালি পুরুষের আসলে মানুষ হওয়া উচিত। সেটা তখনই হবে, যখন তারা নিজেদের দেখে লজ্জিত হবে। এই যে আমি এদেশের অধিকাংশ পুরুষের দিকে আঙ্গুল তুলে কথা বললাম, একটা ক্ষুদ্র অংশ ছাড়া এদেশের পুরুষদের, এই দায় এড়ানোর সাধ্য আসলে অধিকাংশ বাঙালি পুরুষের নেই।
দায় আমাদের বাবা-মায়েরও। উনারা ছেলে বড় করেন, নাহয় মেয়ের বিয়ে দেন। সন্তান বড় করার সময় কজন ভাবেন, মানুষ করা প্রয়োজন? ছেলে উপার্জন করতে পারলেই মানুষ হয় না, মানবিকবোধ যদি না থাকে তার ভেতর, বড়জোর উপার্জনক্ষম জন্তুতে পরিণত হবে ছেলেটি। ঠিক ক’জন বাবা-মা বোঝেন তা?
কন্যাকে আগলে রাখার নাম করে বন্দী করে না রেখে, তাকে শ্বাপদ সংকুল পৃথিবীতে লড়তে শেখানো উচিত।
জওশন আরা শাতিল, পুরুষ শাসিত সমাজের উপর আপনার তীব্র ক্ষোভ থাকা স্বাভাবিক, কেননা এই সমাজকে চালনা ও শাসন করে প্রত্যেকটি ধর্মের মৌলবাদীরা। তাদের জ্ঞান ধর্মের গলিতে সীমাবদ্ধ, তাদের বিজ্ঞান-ভিত্তিক জ্ঞান নেই। তারা হাজার বৎসরের পিছনের অবিজঞান-ভিত্তিক নীতি ও আনুশাসনগুলি আন্ধের মত মেনে চলে। বর্তমান উন্নত শিক্ষা ও সমাজ ব্যবস্তার সাথে নিজেদের মানিয়ে নিতে চায়না, কারন তাদের ক্তৃত শেষ হয়ে যাবে। সেইজন্য এরা ভয় দেখিয়ে সমাজের উপর ক্তৃতব করে এবং পুরুষরা নিজেদের স্বার্থে তাদের সমর্থন ক্রে। শুধু বাঙ্গালী নয়, বিশ্বের সমস্ত দেশের ও সব ধর্মাল্মবী পুরুষদের ৮০ শতাংশ ধর্মীয় অনুশাসনকে আন্ধের মত বিশ্বাস করে এবং তারা মনে করে নারীদের স্বাধীনতা দেওয়া উচিত নয়, নারী বেআবরু হয়ে স্বাধীনভাবে চলাফেরা করাকে তারা পাপ বা গুনাহ বলে। তারা মনে করে নারীকে স্বাধীনতা দিলে সমাজ উচ্ছন্নে যাবে। মৌলবাদীদের ভয় করে, ওদের ফতোয়া নিঃশব্ধে মেনে চলে। এরা ভীতু ও স্বার্থপর, নিজের স্বার্থে নারীকে অন্দরে রাখে। মৌলবাদীরা স্নগখ্যাআয় নগণ্য হয়ে বৃহৎ” সমাজকে শাসন করে এবং হাজার বৎসরের পূর্বের আনুশাস্নগুলি মানার ফতোয়া জারি করে।
আমাদের এই পুরুষদের মেরুদণ্ড ভাঙ্গা, সোজা করবার সেই পুরুষ কোথায়? এদের প্রকৃত শিকষা দিতে হবে। ব্রত্মানে মেয়েরাও পুরুষদের সাথে সমান ভাবে লেখা-পড়া ও কাজকর্মে প্রতিযোগিতা ক্রছে। সুত্রাং নারীর স্বাধীনতা দিতে হবে এবং তা মানতে হবে। সাথে সাথে বলবো, নারীকেও তার নিজের আধিকার নিজে অর্জন করতে হবে এবং পঙ্গু পুরুষগুলিকে বুঝিয়ে দিতে হবে যে, বর্তমানে নারী আর পুরুষের উপর নির্ভরশীল নয়।
অধিকার আদায়ের জন্য নারীদের এখন অস্তিত্ব রক্ষার সার্থে সংঘবদ্ধ হতেই হবে,এবং যুদ্ধ শুরু করতে হবে নিজের ঘর থেকে প্রত্যেক রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান থেকে রাষ্ট্রীয় পুরুষ মানসিকতার বিরুদ্ধে, এছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই। আমার শরীর, আমার জীবনের অধিকার শুধু আমারই, অন্য কারো নয়। এই হউক আজ সকল নারীকুলের শপথবানী।
কলম যুদ্ধের দ্বারা আমাদের জং ধরা ভোতা মাথা চুর্ন-বিচূর্ন হয়ে যাক।
(y)
আমার আসলে ভালো লাগছে, এতো মেয়েকে প্রতিবাদী কন্ঠে কথা বলতে দেখে। 🙂