ধর্ম একটি সুপ্রাচীন, জনপ্রিয়, পাপ-পুন্য বিচারে ভয় ও প্রাপ্তি ভিত্তিক অনুভুতিজাত দার্শনিক ধারণা। রহস্যমণ্ডিত অলৌকিক স্বত্ত্বায় বিশ্বাস, আধ্যাত্মিক চেতনা, আচার ও নির্দেশের চর্চা, অনুধাবন, অনুসরন এবং পালন প্রতিটি ধর্মেই অত্যাবশ্যকীয়। সে কারনেই সাধারন সংজ্ঞায় ধর্ম মুলত ঈশ্বরের ধারণা, ঈশ্বরে বিশ্বাস, ঈশ্বর প্রবর্তিত বিধান, বিধি ও ব্যবস্থার চর্চা, সাধনার জন্য সুনিদৃষ্ট পবিত্র স্থান, গ্রন্থ, ধর্মানুষ্ঠান, উৎসর্গ, উৎসব, সৎকার, বিবাহ, ধ্যান, প্রার্থনা, চিহ্ন, সংস্কার, ঐতিহ্য, পুরোহিত, অনুসরণকারী ইত্যাদি ইত্যাদির সমন্বয়কে বোঝায়।
ধার্মিকেরা নিজেদের সুবিধার জন্য ধর্ম শব্দটিকে শুধুমাত্র শাব্দিক অর্থে, “যা ধারন করা হয় বা ধারন করার যোগ্য” বলে সংজ্ঞায়িত করেন। তারা ধর্মকে মূল উৎসের সাথে যোগ বা সংযুক্ত করার পন্থা বলেও আখ্যায়িত করেন। সেক্ষেত্রেও এই মূল উৎস হচ্ছেন সৃষ্টিকর্তা; কাজেই সে বিচারেও ধর্ম হচ্ছে গোষ্ঠীবদ্ধ ভাবে বিধিবদ্ধ একটি সামাজিক জীবনাচরণ বা জীবন ধারণ পদ্ধতি, যার মুল লক্ষ্য স্রস্টার সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যমে পারলৌকিক শান্তির নিশ্চিত করা।
প্রতিটি সংগঠিত ধর্মই নিজেকে একটি পরিপূর্ণ জীবন ধারণ পদ্ধতি বলে দাবি করে, কারন ধর্মের মৌলিক একটি দাবি হল বিশ্বাস, যার ভিত্তিতে ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর ধর্মীয় আঙ্গিক, আধ্যাত্মিক আঙ্গিক, জ্ঞানচর্চার আঙ্গিক, সামাজিক আঙ্গিক, রাজনৈতিক আঙ্গিক ও আইনি আঙ্গিকের প্রক্ষাপট নির্দিস্ট হয়। ধর্মীয় এই বিধানগুলো পুর্ব নির্ধারিত বলেই এগুলো স্থির, বদ্ধ ও জড় চিন্তা থেকে নির্ধারিত হয়। নতুন চিন্তা, বা নতুন দৃষ্টিভঙ্গির জন্য যা উপযোগী নয়, শুধুমাত্র বিশেষ চেষ্টায় সমন্বয়বিধানের চেষ্টা করা ছাড়া।
ধর্মে বিশ্বাস করার বা ধর্মে অবিশ্বাস করার অধিকার একজন মানুষের একান্তই ব্যক্তিগত। জোর করে ধর্ম পালন ও ধর্মে বিশ্বাস করানোর চেষ্টা যেমন মানুষের অধিকার ক্ষুন্ন করে, তেমনি ধর্মে বিশ্বাসী কার ধর্ম পালনে বাধা দেয়ার চেষ্টাও অসঙ্গত। বিভিন্ন শ্রেণী-পেশা ও ধর্মের অনুসারী মানুষের মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং অন্যের অভিমত, পরামর্শ, ধ্যানধারণা ও বিশ্বাসের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে পারা, ভিন্ন মতের প্রতি সহানুভূতিপূর্ণ আচরণ ও সহনশীলতাই পরমতসহিষ্ণুতা। আধুনিক সভ্যতায় পরমত সহিষ্ণুতা, সচেতন মানসিকতা ও বিজ্ঞানমনস্কতার গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। যদিও গোষ্ঠীকেন্দ্রিকতার ক্ষুদ্র স্বার্থবাদী চিন্তায় প্রভাবিত হয়ে অনেকেই বিজ্ঞানমনস্কতার বিপরীতে ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠের অসদাচারনের গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসান।
যতক্ষণ একজন ব্যক্তির ধর্মীয় বিশ্বাস ও ধর্মচর্চা কেবলমাত্র তার ব্যক্তিগত পর্যায়ে থাকবে, ততক্ষন আমি তাঁর বিশ্বাস করার অধিকারকে শ্রদ্ধার সাথে রক্ষা করার পক্ষে দাঁড়াব। প্রয়োজনে কেউ সে অধিকার ক্ষুন্ন করতে চাইলে, তার বিরুদ্ধে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়তেও রাজী। ধর্মে বিশ্বাস করা বা না করা, নিয়ে যৌক্তিক বিতর্ক চলতেই পারে, তবে অবশ্যই তা হতে হবে বুদ্ধিবৃত্তিক, মানবিক, এবং প্রগতির স্বার্থে। যতক্ষণ ধর্মে বিশ্বাসীরা এবং ধর্মে অবিশ্বাসীরা উভয়ে পরমত সহিষ্ণুতা দেখাবে, আমি নিশ্চিত ততক্ষন কেউ কাউকে মর্মাহত করবে না।
আমার ধর্মই সবচেয়ে বড়, আমার ধর্মই শ্রেষ্ঠ আর সকলকে আমারই ছায়াতলে আসতে হবে, নয়তো শাস্তি পেতে হবে; হৃদয় ও মস্তিস্ক বন্ধক দেয়ার এই প্রবনতায় গড়ে ওঠা হিংস্র ধর্মীয় অহংবোধ যেমন নির্দ্বিধায় মানবাধিকারকে ভূলুণ্ঠিত করে প্রতিষ্ঠিত করে ধর্মীয় মৌলবাদকে, ঠিক তেমনই এই ধর্মঅহং গিলে খায় পরমত সহিষ্ণুতা, নৈতিক মূল্যবোধ ও গণতন্ত্রের আদর্শিক চর্চাকে।
কোন নির্দিষ্ট বিশ্বাসের মূলনীতিগুলোকে অন্ধত্বের সাথে, যুক্তির প্রয়োগ ছাড়াই আক্ষরিক ভাবে সত্য মানা ও পালন করার আচার হল মৌলবাদ। ঐতিহাসিকভাবে মুলত ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে সংশ্লিষ্ট ও সম্পর্কযুক্ত এই শব্দের তাৎপর্য হল, ধর্মীয় গ্রন্থে যা কিছুই লেখা আছে তার সবই গ্রহণ করতে হবে, মানতে হবে, এবং সেটা পৃথিবীর বাস্তব প্রেক্ষাপট ও মানব প্রগতির বিপরীতে হলেও। যুক্তির প্রয়োগ, ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণের কোন সুযোগ এখানে নেই, বিশ্বাসটাই প্রধান। আশৈশব দুষিত মতধারায় গড়ে উঠে ভিন্ন চিন্তার অধিকারকে ট্যাবু মনে করা, অপরাপর সম্প্রদায়ের প্রতি ঘৃণাকে ধর্মীয় বৈধতা দেয়া, সহিংসতাকে ন্যায্যতা দেয়ার যুক্তি দাঁড় করার প্রবনতা, প্রকট অতীতমুখিনতায় বর্তমানকে গৌণ করে, ইহলৌকিক ভবিষ্যতে স্বর্গরাজ্য প্রতিষ্ঠা করে পারলৌকিক কল্পনারাজ্যে বসবাস মৌলবাদের অনস্বীকার্য ও গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য।
মৌলবাদীরা ইদানিং একটি হাস্যকর শ্লোগান বেশ জোরেশোরে উচ্চারন করছে, “ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র আল্লাহর।”
এটি একটি ভয়াবহ সহিংস রাজনৈতিক শ্লোগান। এই স্লোগানটিতে রাজনীতি ধর্মকে পুরোপুরি গ্রাস করে নিয়েছে। এই স্লোগানটিতে রাজনীতি গিলে খেয়েছে সমস্ত ধর্মচিন্তা, ধর্মশিক্ষা, আধ্যাত্মিকতা, বোধ, বুদ্ধি, আচার, মনন, ও সহনশীলতার সংস্কৃতিকে। এই শ্লোগান ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহারের একটি কুৎসিত উদাহরণ।
রাজনীতি হলো সুনিদৃস্ট ও একীভূত একটি গোষ্ঠীর স্বার্থে, জনপ্রিয়তা বা গ্রহণযোগ্যতার ভিত্তিতে মনোনীত, কিছু ব্যক্তির সমন্বয়ে, সামাজিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কগুলোর উপর কতৃর্ত্বের অধিকার ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা অর্জন এবং সেই ক্ষমতার নৈতিক ব্যাপ্তি নির্ধারণের অনুশীলন। ধর্ম ও রাষ্ট্র একীভূত হয়ে পড়লে রাষ্ট্রে বসবাসকারী নাগরিকদের মধ্যে অসমতা, অমিল ও একতার অভাবকে মুখ্য করে তোলা হয়। একটি নির্দিস্ট গোষ্ঠীর মতাদর্শ ও দার্শনিক প্রবণতাকে নির্লজ্জ ভাবে অপর একটি গোষ্ঠীর উপর চাপিয়ে দেয়ার এই ভেদনীতি জন্ম দেয় সাম্প্রদায়িকতার।
কেবলমাত্র সম্প্রদায়ভুক্তির সাপেক্ষে, অযৌক্তিক ভাবে অন্ধবিশ্বাসের বলে বলিয়ান হয়ে, অপর একটি সম্প্রদায়ভুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধচারণ, এমনকি ক্ষতিসাধন করার মনোভাব হল সাম্প্রদায়িকতা । এ ক্ষেত্রে কোন ব্যক্তিবিশেষের ক্ষতিসাধন করার মানসিকতা মূল কারন; এবং সেটা সেই ব্যক্তির সাথে বিরোধিতা থেকে আসেনা, ব্যক্তি গৌণ, মুখ্য হলো সম্প্রদায়ভুক্তি ও পরিচয়। ধর্মনিষ্ঠার সাথে সম্পর্ক আছে ধর্মীয় তত্ত্ব এবং আচার বিচারের। সাম্প্রদায়িকতার যোগ আছে সম্পদায়ের সাথে। অর্থাৎ ধর্মনিষ্ঠার ক্ষেত্রে ব্যক্তির নিজের আচরণ এবং ধর্মবিশ্বাসের গুরুত্ব বেশি। সাম্প্রদায়িকতার ক্ষেত্রে নিজের ধর্মীয় সম্প্রদায়ের প্রতি বিশেষ এক জাতীয় আনুগত্যের গুরুত্ব বেশি। এ ছাড়া সত্যকার ধর্মনিষ্ঠা পরকালমুখী। পরকালেই তার সত্যকার পুরস্কারের আশা। সাম্প্রদায়িকতার মুনাফা ইহলোকে। ধর্মনিষ্ঠার জন্য অন্যের বিরুদ্ধাচরণের প্রয়োজন নেই।
মানব সমাজের দীর্ঘ সংগ্রাম, প্রতিবাদ, প্রতিরোধের মধ্য দিয়ে আধুনিক রাষ্ট্রের ধারনাটি জন্ম নিয়েছে। মানুষ ভিন্ন ভিন্ন সরকার ব্যবস্থা দেখেছে, তার কিছু গ্রহন করেছে, আর কিছু ছুঁড়ে ফেলেছে আস্তাকুঁড়ে। এই গ্রহন ও বর্জন এখনও চলছে, এবং চলবে আরও বহুদিন, মানুষের নিজেরই স্বার্থে। সময়ের বিবর্তনে, আজ, জনতার বৃহত্তর অংশের সরাসরি অংশগ্রহন ও মতামত প্রতিফলনের মধ্য দিয়ে আধুনিক রাষ্ট্রের পরিচালনার দিকটি নিশ্চিত হয়।
রাষ্ট্র একটি স্বতন্ত্র সত্ত্বা।
রাষ্ট্র একটি পরিবর্তনশীল ব্যবস্থা। রাষ্ট্র জবাবদিহিতে বাধ্য, তার নাগরিকদের কাছে, প্রতিমুহূর্তে। সময় ও মানুষের জন্য রাষ্ট্র বদলে যেতে পারে, তার শাসন ব্যবস্থা, বিচার ব্যবস্থা,ও নির্বাহী ব্যবস্থাগুলো সহ; জনতার মতামত প্রতিফলনের ভিত্তিতেই।
পক্ষান্তরে, একজন ধার্মিকের জবাবদিহিতা তার স্রষ্টার কাছে। রাষ্ট্রের কাছে নয়।
কোন স্বার্থান্বেষী মানুষের সুবিধাভোগের উদ্দেশ্যে একজন বিশ্বাসী ধর্ম পালন করেন না। তাঁর ধর্ম পালন আত্মিক সন্তুষ্টির জন্যে, নিজ বিশ্বাস থেকে।
ধর্মের ভিত্তিতে রাষ্ট্র পরিচালনা করলে, ধর্মকে রাষ্ট্রের কাছে জিম্মি করে তুললে, ধর্ম বিশ্বাসকে প্রতিটি মুহূর্তে ভয়াবহ ভাবে প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। ধর্মীয় বদ্ধ চিন্তার অসাড়তাকে দেয়া হয় আইনের আড়াল; রাষ্ট্রের পরিচালনা যারা করেন, তাদের ব্যক্তিগত অযোগ্যতাকে দেয়া হয় ধর্মের আড়াল। রাজনীতিবিদদের ব্যক্তিগত অসততাকে দেয়া হয় ধর্মের আড়াল। যার ফলশ্রুতি অমানবিক সব আইন, সম্পদের অসম বণ্টন এবং অগনতান্ত্রিক সরকার ব্যবস্থা।
বাংলাদেশের জামাত সহ আর সকল ধর্ম ভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো বা পশ্চিমা খ্রিষ্টান ও ইহুদী ধর্ম ভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলো, বা ভারতের শিবসেনা, বজ্রং এর মত দলগুলো নিদারুন কৌশল ও চাতুর্যের সাথে ধর্মকে সঙ্কীর্ণ স্বার্থে ব্যবহার করে চলেছে; ফলে ধর্ম আজ প্রবলভাবে প্রশ্নবিদ্ধ; এবং যৌক্তিক উত্তরের অভাবে একজন ধর্ম বিশ্বাসীর চোখে এই প্রশ্ন ধর্মেরই অপমান এবং তাতে আহত হয় তাদের ধর্মানুভুতি।
হে ধর্মবিশ্বাসী সজ্জন, কেন আপনি আপনার ব্যক্তিগত বিশ্বাসকে কিছু রাজনৈতিক সুবিধাভোগীর দুষ্কর্মের হাতিয়ারে পরিণীত করছেন? কেন আপনার ব্যক্তিগত বিশ্বাসকে নিয়ে খেলার সুযোগ করে দিচ্ছেন? কেন অন্যায়, অসঙ্গতি, সাম্প্রদায়িকতা ও দাঙ্গাকে উৎসাহিত করে চলেছেন? কেন ধর্ম, রাজনীতি ও রাষ্ট্রকে গুলিয়ে ফেলে মৌলবাদীদের স্বার্থ সংরক্ষণ করছেন? কেন প্রতারকদের সত্যকে মিথ্যার সাথে মিশিয়ে দেয়ার প্রবণতাকে সমর্থন করছেন?
শান্তির জন্য সমাধানের পথ একটিই; ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহার বন্ধের মধ্য দিয়ে সকলের জন্য সমান আইনি অধিকার নিশ্চিত করা। ধর্ম ও রাষ্ট্রকে বাঁচাতেই, ধর্ম ও রাষ্ট্রের পৃথকীকরণে সোচ্চার হন।
বাংলাদেশে ধর্ম ও রাষ্ট্রের পৃথকীকরণে সোচ্চার হওয়া আজ নাগরিক দায়িত্বেরই অংশ ।
পূর্ণ সহমত এবং সোচ্চারে শামিল হলাম এবং তা যেন এক নাম্বার দাবীনামাতে পরিনত হয় এমন দাবীই করছি আজ। তাছাড়া বাংলাদেশের সামনে আর কোনো খোলা রাস্তাঘাট নেই।
সহমত @আমরা অপরাজিত
চমৎকার লেখা। অনেক বিস্তৃত পরিসরে ধর্ম, রাজনীতি, আর রাজনীতিতে ধর্মের প্রভাব নিয়ে লিখেছেন। আমি একটু বিশেষায়িত ক্ষেত্রের একটা উদাহরণ দিতে চাই। আমার ভাবনা হলো ইসলাম ধর্ম ও সমসাময়িক বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট নিয়ে। ইসলাম ধর্ম অন্য প্রধান ধর্মগুলোর চেয়ে একদিক দিয়ে ভিন্ন। অন্য ধর্মগুলো যেখানে সম্প্রদায়ের জন্য নীতিমালা বেশি দিয়েছে, সেখানে ইসলাম রাজনীতিতে নিয়ম-কানুনের দিকে জোর দিয়েছে। একজন মুসলমানকে প্রকৃত মুসলমান হতে হলে রাজনৈতিকভাবেও ইসলামের বর্ণিত নিয়মনীতি মেনে নিতে হবে। এটা ছাড়া তার ধর্মপালন অসম্পূর্ণ। ঠিক এখানে গিয়েই সংঘাত এড়ানো অসম্ভব হয়ে পড়ে। গণতন্ত্র যখন ব্যক্তিকে ফ্রিডম অফ রিলিজিয়ন দিতে যায়, তখন একজন মুসলমান রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে সেই সুবিধা পাওয়ার দাবি রাখে। কিন্তু তার সম্পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা গণতন্ত্র সরিয়ে ইসলামিক রাষ্ট্র কায়েমের দাবি করে। তাকে তার ধর্মীয় স্বাধীনতা দিতে গেলে অন্যান্য নাগরিকের রাষ্ট্রীয় অধিকার খর্ব হয়। জামাত কিংবা জঙ্গীরা এই এখতিয়ার পাবে না। কিন্তু তার বাইরে বর্তমান বাংলাদেশিদের অনেকেই এই ‘স্কুল অফ থটে’ বিশ্বাস করে। এদের সাথে কম্যুনিকেট করার দরকার গণতন্ত্রের সমর্থকদের, যারা অন্য স্কুল অফ থটগুলোতে বিশ্বাস করেন। এটা যতদিন না ঘটছে, ততদিন এই ক্রাইসিস দূর হবে না।
ধন্যবাদ।
রাজনৈতিক উদ্দেশ্য চরিতার্থের জন্যে ইসলামের নামে ইসলামের ধর্মগুরুরাই প্রবর্তন করেছে এক ডান্ডাবেড়ীর, যা আজ ইসলামকে পরিণত করেছে কেবলমাত্র একটি রাজনৈতিক মতবাদে।
‘ধর্ম যার যার,রাষ্ট্র আল্লার’- হায় আল্লা, ধার্মিকগুলারে তুমি কি বিদ্যাই না শিখাইলা।
‘ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র আল্লার’। মতলববাজ আর কাকে বলে। বিচার মানি, তালগাছ আমার গোছের আর কি। আসলে রাজনীতির সমস্যা হচ্ছে, মুখে এক কাজে আরেক – এটাই ফলপ্রসূ নীতি। যদি দেশের মানুষের ভোট নেয়া হয়, ইসলাম রাষ্ট্রধর্মই থেকে যাবে। অথচ যদি এটা বলা যায়, এদেশের লোকের ধর্মপালনে স্বাধীনতা থাকবে, কেউ ধর্মপালনে বাঁধা দিতে পারবে না- তাতেও দেশের লোক সমর্থন করবে। যেটা উহ্য থাকছে, ‘যার যে ধর্ম তা পালনে বাঁধা দেয়া যাবে না’- এই নীতিটাকে জোড় দেয়া, এবং রাষ্ট্র ধর্মের ব্যাপারে শুধু এই নীতি রক্ষার্থে আইন প্রয়োগ করবে। তাহলে ধর্ম পালনে বাধ্য করতে পারছে না কেউ, এবং যারা ধর্ম পালন করে না তাদের নিরাপত্তা ও স্বাধীনতা নিশ্চিত করা সহজ হয়। আর রাষ্ট্রও দেখাতে পারে তারা ধর্মের সমর্থনে খুবই দৃঢ়। এভাবে সরকার মৌলবাদীদের বাগে আনতে পারে। কিন্তু সরকার এবং রাজনীতিবিদদের নিজেদের বিশ্বাসেই যখন গোঁজামিল তখন এমন কিছু আশা করা একটু বেশী আশা হয়ে যায়।