(১)
হিন্দু শব্দটা গোলমেলে, বিতর্কিত এবং বিটকেলে। তাই বিতর্ক, ধন্দ এবং ধান্দা এড়াতে প্রথমেই একটা সহজ সংজ্ঞা দিই। আমি হিন্দু ধর্ম বলতে কোন তাত্ত্বিক কথকথা, শাস্ত্র, ইতিহাস-কিছুই টানছি না এখানে। বাংলায় হিন্দুধর্ম বলতে আমি তাদের কথা বলছি-যারা মূর্তিপূজো যেমন দূর্গাপূজো, কালীপূজো করে, ঘরে দু একটি দেব দেবীর ছবি রাখে। বাপ মায়ের মৃত্যু হলে শ্রাদ্ধশ্রান্তি। বিয়েতে বামুন ডেকে মন্ত্র মার্জনা। কীর্ত্তনে, গাজন, জন্মাষ্ঠমীর বারো মাসে তেরো পার্বন। আমি সেই হিন্দু ধর্মের কথা বলছি এখানে, যা সবাই বোঝে। জানে। এর একটা দিক বৈদিক হিন্দুধর্ম -অন্যটা লোকায়েত প্যাগানিজম। ধরুন দুই এর মিশেল। ককটেল ধর্ম।
প্রশ্ন হচ্ছে এই যে বাঙালীগুলো ইদানিং নিজেদের হিন্দু হিন্দু বলে হর হর মহাদেব গাইছে সকাল বিকেল আর বিদেশী বলে মুসলিমদের তাড়াতে চাইছে-তা জানতে ইচ্ছে হয়, তাদের এই হিন্দু ধর্মটা কতটা স্বদেশী?
নিজেদের মধ্যে এদেরএই প্রকট হিন্দুত্বের ভাবটা যদি ইসলামের হাত থেকে বাঁচতে, একটা সারভাইভাল স্ট্রাট্রেজি হয়-তাহলে আমার কিছু বলার নেই । কারন সেক্ষেত্রে সেটা এক্সজিস্টেন্টিয়াল-অস্তিত্ববাদি অবস্থান- যুক্তির থেকে বাঁচার দায় বেশী। গ্রান্টেড।
কিন্ত এই সব বাঙালীরা যদি সত্য সত্যই ভেবে থাকে এই হিন্দু ধর্মটা তাদের আদি পুরুষের ধর্ম-ইসলামের মতন ইম্পোটেড মাদক না-সেটা হবে সত্যের ছয়লাপ। কারন এই “হিন্দু ধর্মের” প্রায় সবটাই বাঙালীর জীবনে বিদেশী আমদানী। একদম মুসলমানদের মতন ।
(২)
বাংলায় এই হিন্দু ধর্ম বুঝতে আমাদের একটু মহাভারত ঘাঁটতে হবে।
আচ্ছা মহাভারত যারা পড়েছেন-তারা কি দেখেছেন মহাভারতের কোন কেন্দ্রীয় চরিত্র মন্দিরে গিয়ে পূজো দিচ্ছে? মূর্তিপূজো করছে? কালীপূজো বা দূর্গাপূজো বা কোন পূজো করছে?
গোটা মহাভারতটাই ধর্ম বনাম অধর্মের যুদ্ধ। সেই যুগে ধর্ম বলতে কি বোঝাত, মহাভারতের ছত্রে ছত্রে পরিস্কার। তার জিস্ট হচ্ছে যক্ষপ্রশ্নের সংকলন । যক্ষ যখন যুধিষ্ঠিরকে প্রশ্ন করেন ধর্ম কি? যুদ্ধিষ্ঠির কোথাও কি বলেছিলেন ধর্মপালন মানে মন্দিরে গিয়ে যজ্ঞ করা? পূজো করা?
যুধিষ্ঠির উত্তর দেন বুদ্ধিমান লোকের কর্মই ধর্ম। এবং গোটা মহাভারত জুরে কোথাও মূর্তিপূজো পাওয়া যাবে না । অশ্বমেধ যজ্ঞের উল্লেখ আছে অনেকবার। কিন্ত যাগ যজ্ঞ পূজা অর্চনাকে কেও ধর্মের সাথে গোলান নি। যুষ্ঠিষ্ঠির যক্ষরাজকে যে উত্তর দিয়েছিলেন -অর্থাৎ বুদ্ধিমান লোকের মতন কর্মপালনই ধর্ম-তাই আমরা দেখবো মহাভারত জুরে। ভীষ্ম তার প্রতিজ্ঞাপালনে সুবদ্ধ-কর্ন তার দানকর্মের মগ্ন। কেও বর্ণভেদ মানছেন-কেও বর্ণভেদের বিরোধিতা করছেন কারন তা অমানবিক। সেগুলোই ছিল তাদের ধর্ম। লক্ষ্যনীয় যে মহাভারতের কথাকার “ধর্ম পালনের” প্রসঙ্গে বর্নভেদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহেও উস্কানি দিয়েছেন-আবার প্রধান চরিত্রদের বর্নভেদ মানিয়েওছেন।
কোথায় মূর্তিপূজো বা পূজো অর্চনা আছে মহাভারতে? কোথাও নেই ।
আসল সত্য হল এই মূর্তিতুলে পূজো অর্চনাটাও ভারতে ইম্পোর্টেড। বহিরাগত হুনদের কাছ থেকে শেখা (০০৭০-০০৮০) । সেটা মহাভারতের যুগের অনেক পরে এসেছে। মহেঞ্জোদারোতে যে যোগী মূর্তি পাওয়া গেছে, সেটা সম্ভবত জৈন যোগগুরুর। এবং আরেকটা ভুল ধারনা মন থেকে ভাঙা দরকার। জৈন ধর্ম ভারত কেন পৃথিবীর প্রাচীনতম ধর্ম। ঋকবেদের ও আগে এর অস্তিত্ব ছিল। এটি মোটেও হিন্দু ধর্মসংস্কার বা বৈদিক ব্রাহ্মন্য ধর্মের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ না। উৎসাহী পাঠকরা জৈন ধর্ম নিয়ে আমার আগের লেখাটা দেখতে পারেন । সুতরাং বৈদিক হিন্দু ধর্ম, ঋকবেদের ধর্ম আদি সনাতন ধর্ম -এসব ভুল ধারনা ভাঙা দরকার।
বৈদিক হিন্দু ধর্মের মূল চারযোগে। অথচ এই যোগ এবং সাধনার কোন ধারনাই ঋকবেদে নেই। ঋকবেদে শুধুই আচার অনুষ্ঠান, স্তোত্র, মন্ত্র। যোগ সাধনা নিঃসন্দেহে জৈন ধর্ম থেকে বৈদিক ধর্মে ঢুকেছে। ঠিক যেমন বৌদ্ধ পন্ডিতদের চাপে বৈদিক ধর্মের সব থেকে সুন্দর সাহিত্য উপনিষদের জন্ম হয়।
প্রায় দেখি বাংলাদেশের অনেক হিন্দু নিজেদের সনাতন ধর্মে বিশ্বাসী বলে গর্ব করেন। তা এই সনাতন ধর্ম বলতে তারা যা পালন করেন, তা কতটা দেশী আর কতটা বিদেশী মাল? যদি ধরে নিই সনাতম ধর্মের একটা রূপরেখা আমরা মহাভারতে পাই-তাহলে তারা যেসব মূর্তি তুলে পূজো অর্চনা করছেন, পালা পার্বনে অংশ নিচ্ছেন-তা কি আদৌ কোনদিন সনাতন ধর্মে ছিল?
একটু পড়াশোনা করলেই জানা যেত যে বাংলায় যেসব দেবদেবী পূজিত হয়-শিব, দূর্গা কালী ইত্যাদি-এদের অধিকাংশই শংকর প্রজাতির দেবতা। কিছুটা দেশী, কিছুটা বৈদিক পুরান-সব ঘেঁটে ঘ হয়ে এই সব দেবদেবীরা বিবর্তিত। এর সাথে মহাভারতের সনাতন ধর্মের সম্পর্ক নেই ।
(৩)
বল্লাল সেনের (1160–1179) আগে বাংলায় বৈদিক ধর্মের অস্তিত্ব ছিল না। কোন ব্রাহ্মন ক্ষত্রিয় ছিল না বাংলায়। অনেকে বলবেন প্রথম গৌড়ীয় রাজা শশাঙ্ক ছিলেন শৈব। এই ব্যপারটা গোলমেলে। এটা ঠিক শশাঙ্কের আমলের এবং তার আগের অনেক শৈব মূর্তি বাংলার মাটি খুঁড়লে এখনো ওঠে। আমি যেখানে থাকতাম সেখান থেকেও দেখতাম মাটির তলা থেকে প্রাচীন শৈব মূর্তি উদ্ধার হত। কিন্ত ইনি বৈদিক শিব নন। ঠিক যেমন মহেঞ্জোদারোর যোগী বৈদিক শিব নন। শিব আসলে উর্বরাশক্তির লিঙ্গ দেবতা এবং যোগী দেবতার শংকঢ়। জায়গায় এর নানা ভ্যারিয়েশন। পরে ইনি বৈদিক দেবতাদের মধ্যে ঢুকে যান। লিঙ্গ দেবতার ধারনা পৃথিবীর সব দেশের প্যাগানদের মধ্যে ছিল । মেসোপটেমিয়া থেকে রোম সর্বত্র লিঙ্গ দেবতার ধারনা ছিল। সুতরাং কোন লিঙ্গ দেবতা কেও পূজো করতো মানেই সে বৈদিক ধর্মের অনুসারী তা কিন্ত নয়। লিঙ্গদেবতার ধারনা সর্বব্যাপী।
বল্লাল সেনের আগে পাল রাজাদের আমলে বাংলাতে বৌদ্ধ এবং লোকায়েত অনেক ধর্মই ছিল-যার মধ্যে তান্ত্রিক, কালীভক্ত এবং নানান স্থানীয় প্যাগান সংস্কৃতিই পাওয়া যাবে। বৌদ্ধ ছিল রাজধর্ম। কিন্ত কোন জাতিভেদ পাওয়া যাবে না ।
সেন রাজারা এসে প্রথমে বাংলার সব প্রজাদের শুদ্র বানাইলেন! কনৌজ থেকে ব্রাহ্মন ধরে এনে তাদের গ্রাম দিয়ে বাংলায় ব্রাহ্মন্য ধর্ম, বৈদিক মতে পূজা অর্চনা চালু করলেন। ব্রাহ্মনদের বংশ বৃদ্ধি করতে এদেরকে অনেকগুলি গ্রাম দিলেন। কুলীন ব্রাহ্মনদের অসংখ্য বিবাহে উৎসাহ দেওয়া হল যাতে ব্রাহ্মনদের বংশ বৃদ্ধি হয়। এরাই আজকের চট্টোপাধ্যায় ( যারা চিটাগঞ্জের কাছে গ্রাম পেয়েছিলেন ) বন্দ্যোপাধ্যায় ইত্যাদি উপাধ্যায়।
এক অদ্ভুত হিন্দু যুগের সুচনা হল বাংলায়। কিছু ব্রাহ্মন। বাকী সবাই শুদ্র। বাংলাতে আজো ক্ষত্রিয় বৈশ্য নেই । বাংলার ব্যবসায়ী শ্রেনী সাহারাও শুদ্র আবার বোসের মতন রাজকরনিক শ্রেনীও শুদ্র!!
পাল রাজাদের আমলে যারা ধর্মীয় সাম্য উপভোগ করছিলেন, তারা হঠাৎ করে বর্নহিন্দুর এই শুদ্র স্টাটাসটা মানবেন কেন ? না । বাংলা কখনোই সেন রাজাদের মেনে নেয় নি। বল্লাল সেনের আমলে তার এই জোর করে ব্রাহ্মন্য হিন্দুধর্ম চাপানোর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ হয় চারিদিকে। এর মধ্যে বিখ্যাত ছিল বর্ধমানের কৃষক-জেলে বিদ্রোহ। সুন্দরবন এলাকাতে বিদ্রোহ করেন কোম্মপাল (১১৯৬) । তিনি সুন্দরবন এলাকাতে স্বাধীন রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন।
অবস্থা বেগতিক দেখে লক্ষণ সেন, বাংলার শুদ্রদের মধ্যে ২৭ টি কাস্টকে উত্তমর্ন শুদ্র স্টাটাস দিলেন ! কিন্ত তাতে কি আর শেষ রক্ষা হয়? বাংলার জনগন তখন এই বহিরাগত ব্রাহ্মন আর সেনদের প্রতি বেজায় বিক্ষুব্ধ।
ফলে মাত্র দুহাজার সৈন্য নিয়ে বখতিয়াল খিলজি যখন নবদ্বীপ আক্রমন করলেন (১২০২), লক্ষন সেনের পালানো ছাড়া আর কোন পথ ছিল না ।
এর পরবর্তীকালে বাংলায় লোকজন দলে দলে ইসলাম ধর্ম গ্রহন করতে থাকে ব্রাহ্মন্য ধর্মের প্রতি ঘৃণায়। হজরত শাহ জালালের (১৩০৬-) মতন সুফীদের প্রচারে আকৃষ্ট হয়ে বাঙালী দলে দলে ইসলাম গ্রহন করতে থাকে চোদ্দশ শতক পর্যন্ত ( শ্রী চৈতন্যদেবের জন্মের আগে পর্যন্ত)।
তবে বাঙালীর ইসলাম ও এক অদ্ভুত ধর্ম। বাঙালী মুসলমান আরবিক জানত না কোনদিন ই -বাংলাতে লেখা কোরান ছিল না এই উনবিংশ শতকেও। তারা মুসলমান হয়েছিল, নামে মাত্রই । অধিকাংশ বাংলা মুসলমান গৃহেই তাদের আদি ধর্ম এবং পার্বনের চল ছিল ষোল আনা। অনেক বাঙালী মুসলমান গৃহেই কালীপুজো হত এই সেদিন ও। আমি নিজেই দেখেছি এরূপ অদ্ভুত জিনিস গ্রামে।
না -বাঙালী মুসলমানদের কোরান হাদিসে উৎসাহ ছিল না কোনদিন ই। এর সব থেকে বড় উদাহরন আরাকানের রাজসভায় প্রথম বাঙালী মুসলমান কবি (১৫৯৭-১৬৭৩) আলাউল। আলাউল বিখ্যাত পদ্মাবতী কাব্যগ্রন্থের জন্য। তার বাকী কাব্যগ্রন্থগুলির মধ্যে বদিউজ্জামাল কাব্যগ্রন্থটি বাদ দিলে বাকীগুলি ( সতী ময়না, সপ্ত পয়কর ) সবগুলিই হিন্দু কাব্য কাহিনী থেকে নেওয়া।
আর সেই জন্যেই উনবিংশ শতাব্দি পর্যন্ত একজন ও বাঙালী মুসলমান পাওয়া গেল না যিনি কোরান বাংলায় অনুবাদ করতে উৎসাহী হবেন। বাংলায় কোরান অনুদিত হল। কিন্ত করলেন একজন ব্রাহ্ম। গিরীশ ভাই। কেশব চন্দ্র সেনের অনুরোধে। তাও তাকে যেতে হল লক্ষ্ণৌতে। কারন বাংলাতে তিনি একজন ও কোরান বিশারদ পন্ডিত পেলেন না !
অর্থাৎ বাঙালী মুসলমানরা নামেই মুসলমান ছিল-কোরানে কি আছে না আছে-এদের কেওই কোনদিন জানার চেষ্টাও করে নি। ফলে ইসলামটা অধিকাংশ বাঙালী মুসলমানদের কাছে একটা ধর্মীয় আইডেন্টির বেশী কিছু ছিল না দীর্ঘদিন।
যাইহোক চৈতন্যের জন্মের আগেই অধিকাংশ বাঙালী নমঃ নমঃ করে ইসলামে ধর্মান্তরিত হয়ে গেছে-যদিও তারা আদৌ জানত না কোরান হাদিস কি বা মহম্মদ কে ছিলেন! সবটাই যেটুকু সুফী ইসলামের ভাল ভাল গল্প উপদেশ তারা শুনতো-সেই টুকু ইসলামি লোকগাথাই ছিল তাদের ইসলাম।
(৪)
চৈতন্যদেবের (১৪৮৬-১৫৩৪) গৌড়ীয় বৈষ্ণব ধর্মই প্রথম বাঙালী হিন্দুত্বের একটা প্রথম আইডেন্টিটি। তিনি জাতিভেদ তুলে দিলেন। শুদ্রদের ডেকে নিলেন। সব হিন্দু আচার বর্জনের ডাক দিলেন। ফলে ইসলামের রথ ও আটকে গেল। যদি কেও মাটির ধর্মে সাম্য পায়, যে নিশ্চয় আরবের ধর্মে সাম্য খুঁজতে যাবে না ! সেই সময় আসলেই অনেকেই ইসলাম নিয়েছিলেন নামে মাত্রে। সেই অর্থে আরবের সাথে কোন যোগাযোগ ছিল না । ফলে এক বিপুল সংখ্যক মুসলিম আবার চৈতন্যের হরি-সংকীর্তনে হিন্দু ধর্মে ফিরে এল। চৈতন্য ভাগবতে এর উল্লেখ আছে।
গ্রামে গঞ্জে বাঙালীর হিন্দু ধর্মের ভিত্তি সেই বৈষ্ণব ধর্ম। এই সব পূজো অর্চনা চিরকালই জমিদারি শ্রেনীর অনুষ্ঠান। জমিদারদের এই পূজাপার্বনে নিম্ন বর্নের হিন্দুরা অংশ নিত ঠিকই-কিন্ত তাদের প্রানের ধর্ম ছিল হরি সংকীর্তন । এই ট্রাডিশন আজো চলছে। গ্রাম বাংলাতে অধিকাংশ লোক এখনো শ্রীচৈতন্যের বৈষ্ণব ধর্মেই আপ্লুত। রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দ বা রবীন্দ্রনাথ এরা ভীষন আরবান। এতটাই শহুরে, যে শহরের বাইরে এদের খুঁজতে আজও কষ্ট হবে।
(৫)
আমি শুধু এটুকুই লিখতে চেয়েছিলাম, বাঙালীর মধ্যে হিন্দুত্ব বা ইসলামিয়তের আইডেন্টিটি খুব গভীরে না । বরং বাঙালীর প্রাণের অনেক গভীরে তার বাউল গান, তার ভাটিয়ালি গান। কিন্ত গত ত্রিশ বছরে পেট্রোডলারে অসংখ্য মাদ্রাসা গজানোয় এবং মসজিদ তৈরী করে বাঙালী মুসলমানের মনে এবং রক্তে আরবের বর্বর ইসলামের বিশাক্ত বীজ বপন করা হয়েছে। ফলে পাশাপাশি থাকা হিন্দুদের জীবন হয়েছে বিপন্ন। পরিত্রানের আশায় তারাও এখন হিন্দু ধর্মে তাদের আইডেন্টি, পরিচয় খুঁজছে। বিজেপি, হিন্দু সংহতি ইত্যাদি সংগঠনের তলায় নিজেদের সংঘবদ্ধ করছে।
সমস্যা হচ্ছে, হিন্দু ধর্মে তারা যে আইডেন্টি খুঁজছে, তা কিন্ত তাদের নয়!
শ্রী চৈতন্য কি মুসলমানদের ঘৃণা করতে শিখিয়েছিলেন ? হরিদাস ঠাকুর (যবন হরিদাস) প্রথম জীবনে মুসলিম ছিলেন যিনি পরে বৈষ্ণব আন্দোলনের একজন শীর্ষ নেতা হবেন। চৈতন্য ভাগবতে দেখা যাচ্ছে হরিদাস ঠাকুরকে যখন ইসলাম ছাড়ার জন্য মৃত্যদন্ড দিল কাজী-উনি মোটেও ইসলামকে অসন্মান করেন নি। সেই কাজীকে একটা মুল্যবান কথা বলেছিন হরিদাস ঠাকুর। প্রকৃত ভক্তের শুধু একটাই ভগবান থাকে-আর সেই ভগবানকে ধর্মের নামে আলাদা করা যায় না ।
সুতরাং বৈষ্ণব ধর্মকে যদি বাংলার মূল হিন্দুধর্ম ধরি-তা মোটেও মুসলিমদের ঘৃণা করতে শেখায় না ! বরং চৈতন্য চরিত্রামৃত এবং চৈতন্য ভাগবতে অনেক উদাহরন পাওয়া যাবে যেখানে শ্রী চৈতন্য মুসলিমদেরও ভাই হিসাবে ডেকে নিয়ে একসাথে নামসংকীর্তন করেছেন-তারাও ক্রমে বৈষ্ণব ধর্মের কোলে ফিরে এসেছে!
আজকে যারা হিন্দু হিন্দু বলে আকাশ বাতাস মুখরিত করছেন, তারা পারবেন শ্রীচৈতন্যের মতন মুসলিমদের বুকে টেনে নিতে? তারাত শুধু ম্লেচ্ছ বলে বিষ ছড়াতেই ব্যস্ত। পারলে তাদেরকে ভারত থেকে বিদেয় করতে পারলে বাঁচে।
মুসলিম সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে এক ভয়াবহ ঘৃণাকে তারা হিন্দু ধর্ম বলে চালাতে চান। সেই ঘৃণা দেখলেও আঁতকে উঠতে হয়। এটা কোন ভবিষ্যতের পথ না । ওয়াহাবী ইসলামের কবল থেকে বাঙালী মুসলমানদের বাঁচাতে হলে, তাদেরকে চৈতন্যের প্রেমের পথই দেখাতে হবে। নইলে তারা তাদের ইসলামিক পরিচিতিটা আঁকরে ধরে আরো বেশী ওয়াহাবী মুসলমান হওয়ার চেষ্টা করবে-যার পরিনাম আরো বেশী জঙ্গী, জেহাদি ও বোমা।
[1]https://blog.mukto-mona.com/?p=28847
http://biplabbangla.blogspot.com/2014/11/blog-post_14.html
আমরা কে ? আমরা অর্থাৎ আমাদের এই বাঙ্গালী জাতীর কথা বলছি । অনেক বই পুস্তক প্রাচীন বাঙ্গালার হিস্ট্রি পড়ে যা বুঝলাম তা হোল চন্দ্র ket আমরা দ্রাবিড় । আমাদেরে সাথে মিশে আছে কিছু মঙ্গলএড আর কিছু অন্য যাতের ( Astrick, নিগ্রো ) এই সব। সিন্ধু সভ্যতা শেষ হোয়ে গেলে তারা এই সমতল বাংলা তে চলে আসে । তারা বেস শক্তি শালি ছিল । জনপদ গোড়ে তুলে । পুণ্ড্র বর্ধন , চন্দ্র কেতুগড় তার পরিচয় । পুণ্ড্র বর্ধন হোল পুণ্ড্র দের আবাস । আর এই পুণ্ড্র রায় হোল আমাদের পূর্বপুরুষ । অনার্য জাতী গোসটি । আমারা তখন বিদ্রোহ করে ছিলাম cust এর বিরুদ্ধে । তাছাড়া আরজ দের সহজে এই বাংলা তে আমরা প্রবেশ করতে দেই নি। অনেক যুদ্ধ হয়েছিল । আমার সম্প্রতি DNA টেস্ট করি আগ্রহের বশবর্তী থেকে । তা থেকে বুঝা যায় আমিও দ্রাবিড় ।
লেখাটা অনেক যুক্তি সম্মত সন্দেহ নেই, তবে যারা ধর্মে বিশ্বাসী (শুধু ধর্মে কেন?) তারা যুক্তি মানে না, মানে ভক্তি। তাই লেখাটা যদি হয় একাডেমিক কোনো কথা নেই, আর যদি ধার্মিকদের তাদের ভুল বুঝতে হয় এ লেখা – তবে প্রকাশভঙ্গী একটু অন্যরকম হলেই ভালো হয় বলে মনে হয়।
হ্যা, মহাভারতে পৌত্তলিক পূজার কথা নেই, রামায়নেও নেই। রামের অকাল বোধনে কোনো মূর্তি ছিল না। নিরোদ সি চৌধুরীর মতে ভারতে মূর্তি পূজা শুরু হয় খ্রিস্টীয় ৪ বা ৫ শতাব্দীতে – আর দেবতাগুলো বানানো হয় গ্রিক দেবতাদের অনুকরণে, গ্রিক স্থাপত্য অনুসরণ করে। তাছাড়া তিনি এটাও বলেছেন, মধ্যে এশিয়া থেকে আর্য জাতি বিভিন্ন গরূপে ভাগ হয়ে গ্রীস, ইতালী , জার্মানি, এশিয়া মাইনর, পারস্য আর ভারতে যান। যার ফলে প্রাচীন গ্রীস, ইতালী , জার্মানি, এশিয়া মাইনর, পারস্য আর ভারতের বেদতাদের মধ্যে অনেক মিল – কোথায় কাজে, কোথাও নামে , যদিও ক্ষেত্র বিশেষে দেব আর দানবেরা জায়গা বদল করেছে।
শিব সহ অনেক দেবতাই বৈদিক নন, তারা দেশীয় – পরে বৈদিক বেডটার ম্যান পেয়েছে। এ নিয়ে অতুল সুরের অনেক লেখা আছে।
হিন্দু ধর্ম আমার মনে হয় ধর্মের পশ্চিমা সংজ্ঞায় ঠিক ধর্ম নয়। খেয়াল করার বিষয়, এখানে ধর্মফল বলে কিছু নেই, আছে কর্মফল – মানে মানুষ স্বর্গে না নরকে যায় ধর্মের কারণে নয়, তার কর্মের কারণে। তাই প্রাচীন গ্রন্থে ধর্ম-অধর্ম বলতে ধর্মীয় আচার-আচরণ না বুঝিয়ে ভালো কাজ বা মন্দ কাজকে বুঝানো হয়। হয়তো তাই অনেকেই বলে কর্মই ধর্ম।
সেনদের আগে হয়তো বাংলায় ওই অর্থে হিন্দু ধর্ম ছিল না, ছিল স্থানীয় ধর্ম। ওই বট গাছ বা শ্যাওড়া গাছ পূজা, এই আর কি। এখনো তা দিব্যি রয়ে গেছে। যত দিন বাইরে থেকে আসা ধর্ম স্থানীয় ধর্ম বা রীতিনীতি পালনে বাধা সৃষ্টি না করেছে – মানুষ সুখে শান্তিতেই ছিল। এটা চৈতন্য দেবের হিন্দু ধর্মই লোক আর পীর দরবেশদের সুফী ইসলাম হোক। এখন সমস্যাটা আসলে, পেট্রোডলারে উত্তপ্ত আরব এখন তাদের ধর্মীয় রীতি-নীতি আরোপ করতে চাইছে বিভিন্ন দেশে, তা কিন্তু স্থানীয় মুসলমান সমাজ গ্রহণ করছে তা নয়, তবে ধীরে ধীরে সয়ে যাচ্ছে। এর ফলে অন্য ধর্মের প্রতি তৈরী হচ্ছে অসহিষ্ণুতা – আর তাই বাংলাদেশী হিন্দুরা, যারা কখনোই ধর্ম নিয়ে তেমন মাতামাতি করতো না, আজ আরো বেশি করে ঝুকে পড়ছে ধর্মের দিকে। এটা আইডেন্টিটি রক্ষার একটা চেষ্টা বলেই মনে হয়।
দাদা, বাবা মা মারা গেলে ধড়া গলায় দিয়ে শ্রাদ্ধ বা পারলৌকিক ক্রিয়া সম্পর্কে কি কোন লেখা আছে গীতা বা বেদে? থাকলে একটু জানাবেন আর এই বিষয়ে আপনার মতামত আশা করছি।
মন্তব্য…ইসলাম সত্য মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য করে দেখিয়েছে।
অনেক বাঙালী মুসলমান গৃহেই কালীপুজো হত এই সেদিন ও। আমি নিজেই দেখেছি এরূপ অদ্ভুত জিনিস গ্রামে। ” এসব আজগুবি জিনিস সে কিভাবে লিখল, এমন অনেক ত্রুটি এই লেখায় আছে
না দাদা। আজগুবি নয়। আমাদের এখানে আমেনার মায়ের কালিপুজো এখনো হয়। বৈশাখ মাসের ৭ তারিখ গকুলপুর বাজার, উদয়পুর, ত্রিপুরা, ভারতে প্রতিবছর এই মেলা হয়। মেলাতে কালি পুজো হয়। আমি ছোট বেলায় আপনার মত প্রশ্ন করেছিলাম মেলাটা আমেনার মায়ের কালিপুজোর মেলা কেন? উত্তর এসেছিল ওই মহিলা এই পুজো করতেন যতদিন বেচে ছিলেন।
:yes:
লেখার মূল বক্তব্যের সাথে একমত। বাংলার জনগণের ধর্মদর্শন খুজতে হলে প্রত্নতত্ত্বের আরও গভীরে যাওয়া দরকার, নৃতাত্ত্বিক বিভিন্ন লোকজ ভাবনাকেও মূল্যায়ন করা দরকার। তা কিন্তু এখনও হয়ে ওঠেনি।
বাংলা অঞ্চল বলতে চর্যাপদের সময়কালের ভূমিকে যদি বুঝি তাহলে তো দেখি একানে তান্ত্রিক গুরুদের দর্শন প্রবল ছিল (বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস-ড.মু. শহীদুল্লাহ)। মৎস্যন্দ্রনাথ, ঢেন্ডনপা, গুরুপা প্রমুখরা ছিল দার্শনিক নেতা। তাদের প্রস্তাবিত ও প্রচারিত দর্শন সারা বাংলাদেশে প্রচলিত ছিল। পরে বল্লালী বালাই সমস্যা তৈরি করে। জেলেরা ইন্ডেলজান্স কিনতে চায়নি বলে ভুমির অধিকার হারালো। বরেন্দ্রভূমিতে বাজল যুদ্ধ।
ইসলামি সাম্প্রদায়িকতা আগেও ছিল। অন্নদামঙ্গলে এর প্রমাণ আছে। বিনা কারণে ভবানন্দকে দিল্লীর বাদশা হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে আজেবাজে মন্তব্য করে।
প্রাচীন বাংলার সর্বশ্রেষ্ট কবি কাহ্নপা সোমপুর (পাহারপুর) বৌদ্ধবিহারের বারান্দায় দাড়িয়ে হিউয়েন সাংকে অনেক তান্ত্রিক তত্ত্ব সম্বলিত কবিতা শুনিয়েছিলেন। সেগুলো এখনও হয়তো চিনে রয়ে গেছে। কেউ কি আছেন সেগুলোর পাঠোদ্ধার করতে উৎসাহী হবেন?
লেখাটা ভাল হয়েছে। ধন্যবাদ । হিন্দুদের বরন প্রথা এবং পাল রাজাদের পরবর্তী কিছু হিন্দু রাজা র অপরিণামদর্শী কর্ম কান্ডের ফলে একদিকে বক্তিয়ার খিলজি সহজে দখল করেছিল বঙ্গভুমি আর অপরদিকে বিভিন্ন সুফিদের ইসলামের মাহাত্য প্রচার, এদেশের বর্ণ প্রথায় অতিষ্ট হিন্দুরা(অত্যাচারিত বৌদ্ধ রা) , দিশাহারা হয়ে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন। সে সময় তাঁরা একটা আশ্রয় খুজেছিলেন এবং গভীর বিভ্রমে নিপতিত ছিলেন ।তাঁদের ছিল না অনুসন্দিতসু মন। শুধু ছিল বরন প্রথা আর হিন্দু রাজাদের প্রতি ঘৃণা । সেন বংশ ছিল বাংলার অভিশাপ ।
@Prodip,
:guru:
@বিপ্লব পাল, আপনার লেখার সাথে ৯৯% একমত কিন্তু বাকি ১% একমত হতে পারলাম না দাদা। বৌদ্ধ ধর্ম ও দর্শন কখনই হিন্দু বা ইসলাম ধর্মের ডেটারেন্ট হতে পারেননি স্থায়ীভাবে, তার কারণ ঢালাও ভাবে এর অবাস্তব অহিংস নীতি। সেন রাজাদের আমলেই বাংলায় সর্বপ্রথম জাগরণ এসেছিল। শিল্প, সাহিত্য, শিল্প-কলা সব ক্ষেত্রেই। মহাভারত বাংলায় অনূদিত হয়েছিল, জয়দেব এর গীত গোবিন্দ রচিত হয়েছিল এসময়েই। ‘গীতগোবিন্দম্’ রচয়িতা জয়দেব, ‘পবনদূত’ রচয়িতা ধোয়ী, ‘ব্রাহ্মণসর্বস্ব’ রচয়িতা হলায়ূধ তাঁর সভাসদ ছিলেন। লক্ষ্মণ সেন নিজেও কয়েকটি শ্লোক রচনা করেছিলেন। তিনি ‘পরম বৈষ্ণব’ উপাধি ধারণ করেন। এই পরম বৈষ্ণব শেষ জীবনে এত বেশি অহিংস হয়েছিলেন যে মাত্র ২০০০ সৈন্য নিয়েই বখতিয়ার খিলজী বাংলা জয় করেছিলেন। এটাই হিন্দু ও বৌদ্ধদের পরাজয়ের কারণ। অথচ এই লক্ষ্মণ সেনই প্রথম দিকে পুরী, কাশী ও এলাহাবাদে বিজয়স্তম্ভ স্থাপন করেছিলেন। তিনি তাঁর পিতার রাজ্যসীমা অক্ষুন্ন রেখেছিলেন। লক্ষ্মণ সেন কনৌজের গাড়োয়ালবংশীয় রাজাকে পরাজিত করেছিলেন এবং গয়া অধিকার করেছিলেন। তিনি বাংলার বাইরেও একাধিক সামরিক অভিযান প্রেরণ করেছিলেন। তাঁর রাজত্বকালে বাংলা উত্তর ভারতীয় রাজনীতিতে বিশেষ গুরুত্ব অর্জন করেছিল।
বল্লাল সেন বাংলার সিংহাসনে বসেন। বল্লাল সেন মগধ ও মিথিলা জয় করেছিলেন। তাঁর রাজ্য পূর্বে পূর্ববঙ্গ থেকে পশ্চিমে মগধ, উত্তরে দিনাজপুর থেকে দক্ষিণে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত প্রসারিত ছিল। দিনাজপুরের পাথরঘড়ার বল্লালদিঘি, বিক্রমপুরের বল্লালবাড়ি আজও তাঁর স্মৃতি বহন করছে। বল্লাল সেনের রাজত্বকাল সম্পর্কে জানা যায় ‘নৈহাটি তাম্রপট্ট’, বিজয় সেনের ‘দেওপাড়া লেখ’, বল্লাল সেন রচিত ‘অদ্ভুত সাগর’ ও ‘দানসাগর’ গ্রন্থ, ও আনন্দভট্ট রচিত ‘বল্লালচরিত’ গ্রন্থ থেকে। বল্লাল সেন পাল রাজাদের উপর চূড়ান্ত আঘাত হেনেছিলেন। তাঁর রাজত্বকালে বাগড়ি অঞ্চল (সুন্দরবন ও মেদিনীপুর) সেন সাম্রাজ্যভুক্ত হয়েছিল। বল্লাল সেন চালুক্য রাজকন্যা রমাদেবীকে বিয়ে করেছিলেন।
অনেকের মতে বল্লাল সেন বাংলায় কৌলিন্য প্রথা প্রবর্তন করেছিলেন। কিন্তু আধুনিক ঐতিহাসিকেরা এই তথ্য অস্বীকার করেছেন। বল্লাল সেন ধর্ম ও সাহিত্যের প্রতি অনুরক্ত ছিলেন। বেদ, স্মৃতি ও পুরাণে তাঁর গভীর জ্ঞান ছিল। তিনি তান্ত্রিক হিন্দুধর্মেরও অনুরাগী ছিলেন। শেষ জীবনে পুত্র লক্ষ্মণ সেনের হাতে শাসনভার তুলে দিয়ে ত্রিবেণীর কাছে গঙ্গাতীরে শাস্ত্রচর্চায় শেষ জীবন অতিবাহিত করেছিলেন।
উত্তর ও মধ্য ভারতে মধ্য যুগে যে বর্ণভেদ ও অস্পস্যতাবাদ প্রবেশ করেছিল তা কেবল সেন রাজাদের আমলে ঐ এলাকা থেকে দলে দলে ব্রাহ্মণ আমদানীর কারণে হয়েছিল, এজন্য সেন রাজাদের উপর শুধু দোষ চাপালে চলবে না।
সেন রাজাদের আমলেই বাংলা ভারতের শ্রেষ্ঠ আসন প্রথম বারের মত অধিকার করে ছিল সর্বক্ষেত্রেই। বখতিয়ার খিলজীর বাংলা জয়ে সব কিছুই উল্টে যায়। নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস করেন, হত্যা ও হিংসায় ভরে যায় সারা বাংলা। আর বাংলা সাহিত্যে যে ৩০০ বছরের অন্ধকার যুগ তাও এই বখতিয়ারের সময়েই শুরু। পরে চৈতন্য আমলে আবার বাংলায় রেনেসাঁ শুরু হয় এবং তা আজ অমর্ত্য সেন পর্যন্ত স্থায়ী হয়েছে।
সেন রাজাদের আবশ্যই কিছু খারাপ দিক ছিল, কিন্তু তা এরকম নয়। শুধু ব্যালেন্স রাখার জন্য ইতিহাস এর অন্যথা করা ঠিক না। :-X
দাদা,কায়স্ত ক্ষত্রিয় কাস্ট না আমি জানি। শব্দ চয়নে ভুল ছিল নিছক। আপনার কথা শুনে ভবাছিলাম শুদ্র এবং ব্রাহ্মণ ছাড়া আর যারা বাংলায় ছিলেন , তাদের মধ্যে অন্য শ্রেণী গুলো কবে আসে ? মানে বৈশ্য এবং ক্ষত্রিয় রা। কায়স্থদের ক্ষত্রিয় হিসেবেই ধরা হয় , কারণ এরা রাজ করণিক এবং উপনয়ন যোগ্য কিন্তু ব্রাহ্মণ ধর্ম বা পেশা পালন করতে পারেনা, যতদূর আমি জানি। আর বলে রাখি , আমি স্বেচ্ছায় সব ধরণের জাতির চিহ্ন ত্যাগ করেছি, সুতরাং ভাববেন না , আমি বংশ পরিচয় জাহির করছি।
@সুমিত রায়,
কায়স্থ হচ্ছে রাজকরনিক। তারা কি যুদ্ধ করে? তাহলে ক্ষত্রিয় হবে কি করে?
বাংলায় ব্যবসায়ী সাহারা। তারাও শুদ্র-বৈশ্য না । কার্সি বল্লাল সেন-বাংলায় কোন ক্ষত্রিয় বৈশ্য নেই -হয় ব্রাহ্মন -নাহলে উত্তমর্ন শুদ্র বা নমঃশুদ্র
দাদা, একটা বিষয়ে জানার ছিল। আমার বাপ দাদা পূর্বপুরুষ সবার পৈত্রিক বাস বর্ধমানের এদিকে মানে খুলনা বাগেরহাট আর ওদিকে জলপাইগুড়ি বশিরহাট এলাকায়। তাদের পরিবার পরে বিক্রমপুর, আর ওদিকে উড়িষ্যা এবং বিহারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন। আমার ঠাকুরদার , তার ভাইয়েরা এখনও খুলনাতেই পৈত্রিক ভিটায় আছেন। আমি যতদূর জানি আমার পরিবারের রায় নামটি আমার ঠাকুরদার বাবার পাওয়া *ইংরাজ দের দেওয়া বোধয়। তার আগে আমাদের টাইটেল ছিল গাতিদার। এদের পেশা ছিল জমিজমার দেখভাল করা (জমিদারি কিনা আমি শিওর না) এবং পরে সেটা পরিবর্তন হয়েছে বিভিন্ন কারনে। আমাদের গোত্র কাশ্যপ এবং আমাদের কাস্ট কায়স্থ । আমার প্রশ্ন হচ্ছে। যেহেতু আমরা বাংলার বাইরে থেকে আসি নাই এবং আমাদের ধর্মীও আচার লোকজ এবং অবৈদিক *মানে আমরা লৌকিক দেবতার ভক্ত। তাহলে আপনি বলছেন , এখানকার মানুষ সবাই নমঃশূদ্র ছিলেন , যেহেতু আমরা এখানকার এবং বন্দ্যোপাধ্যায় চট্টোপাধ্যায় নই , তাহলে ক্ষত্রিয় বা কায়স্থ কাস্টটি কোথা থেকে পেলাম। এবিষয়ে কিছু বলতে পারবেন ?
@সুমিত রায়,
কায়স্থ কোন ক্ষত্রিয় কাস্ট না। আপনার বেসিকে গন্ডোগল। কায়স্থ মানে রাজ করনিক। বল্লাল সেনের আমলে এদের উত্তমর্ন শুদ্র বানানো হয়।
বাংলাদেশের খুলনা অঞ্চলের সাহা রা কি ধরনের শুদ্র
বিপ্লব দা, “ঠিক যেমন বৌদ্ধ পন্ডিতদের চাপে বৈদিক ধর্মের সব থেকে সুন্দর সাহিত্য উপনিষদের জন্ম হয়।” একথা ঠিক নয়। জৈন ধর্ম থেকে যোগ হিন্দু ধর্মে আসতে পারে, তবে বৌদ্ধ পন্ডিতদের চাপে বৈদিক ধর্মে উপনিষদের জন্ম হয়েছে এটা মানতে পারলাম না। ঋক ও যজুর্বেদের সাথে সম্পর্কিত কয়েকটি উপনিষদ বুদ্ধের জন্মের আগে থেকেই ছিল। উপনিষদের কয়েকজন ঋষি বুদ্ধের জন্মের আগে ও সমসাময়িক ছিল। আপনি রাহুল সাংকৃত্যায়নের দর্শন দিগদর্শন বইটিতে এ ব্যাপারে দেখে নিতে পারেন…।।
@সন্তোষ হাল্লাজ,
উপনিষদের জন্ম গোলমেলে যেহেতু তা বৈদিক উপাচারের সাথে খাপ খায় না। এটা গ্রীক প্রভাবেও আসতে পারে, বৌদ্ধ প্রভাবেও আসতে পারে। ২০০০ এর কাছাকাছি উপনিষদ আছে। কিছু উপনিষদ বুদ্ধের জন্মের আগে এটা সত্য-এগুলিকে প্রাক বৌদ্ধ উপনিষদ বলে-আত্রেয়, ছান্দোগ্য এই পর্যায়ের। কিন্ত অধিকাংশটাই পোষ্টবুদ্ধিষ্ট।
@বিপ্লব পাল, দুঃখিত যে আবার কিছুটা দ্বিমত পোষণ করতে হচ্ছে। উপনিষদ গ্রীক প্রভাবেও আসতে পারে– এটা ঠিক নয়। কারণ বেদের সংহিতা অংশে যজ্ঞের মন্ত্র ও দার্শনিক আলোচনাগুলো একসাথে মিশ্রিত অবস্থায় ছিল। পরে তা ব্রাহ্মণ ভাগ ও উপনিষদ ভাগ– এই ২ ভাগে ভাগ হয়ে যায়। যজ্ঞের বিধি ও মন্ত্র নিয়ে ব্রাহ্মণ ভাগ আর দার্শনিক আত্মতত্ত্ব নিয়ে উপনিষদ ভাগ। প্রাচীন গ্রীকে উপনিষদের অনুরূপ সাহিত্য পাওয়া যায় না, যাতে আপনি বলতে পারেন যে গ্রীক প্রভাবে উপনিষদের জন্ম হয়েছে ভারতে!!! গ্রীকদের বেদের মত গ্রন্থও ছিল না। তাদের মিথলজি ও তার দেবতাদের আলোচনায় উপনিষদের মত দার্শনিক আলোচনা পাওয়া যায় না। অনেক পরে গ্রীকে যে দার্শনিক আলোচনা পাওয়া যায় তা গ্রীক মিথলজির সাথে সম্পর্কিত নয়, বরং কিছুটা সেকুলার দার্শনিক আলোচনার সন্ধান পাওয়া যায়। সফিস্ট থেকে সক্রেটিস, অ্যারিস্তটোটল, প্লেটো সবার ক্ষেত্রেই এটা প্রযোজ্য। আসলে হিন্দুদেরকে ছোট করার কোন চেষ্টাই যবন ও মুসলমানরা বাকী রাখেননি। ওয়েবার, উইলসন সাহেবরা হিন্দুদের বিশাল অর্জনগুলো দেখে হিংসায় কাতর ছিলেন। আর প্রচার বিমূখ হিন্দুরা কখনই নিজেদের জ্ঞান-বিজ্ঞান, কৃতীগুলো প্রচার করেনি। বঙ্কিম চন্দ্র অনেক আগেই যবন ও মুসলমানদের এসব ষড়যন্ত্রমূলক লেখা খণ্ডন করে প্রকৃত সত্য তথ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বলেই সিমেটিক খ্রিস্টান, মুসলমান এর মতো রাক্ষসী মতবাদগুলো ভারতকে পুরোপুরি গিলে খেতে পারনি যেমনটা পেরেছে গ্রীক, রোমান, মেসোপটেমিয়া, ব্যাবিলন, মিশর, পারস্য এর মত মহান সভ্যতাসমূহকে গিলে খেতে!!! তাই, দাদা দয়া করে এসব যবন, মুসলমানের তাকিয়া/ষড়যন্ত্রে পা দেবেন না!!!!!!
খুবই চমকপ্রদ তথ্য, আসলেই আশ্চর্য হতে, কিভাবে আস্টেপৃষ্ঠ জড়িয়ে আছে সবাই, তবু হানাহানির শেষ নেই!
যুক্তিটি মাথার উপ্রে দিয়ে গেল! পরিত্রানের আশাতেই আইডেন্টিটি খোঁজে সবাই, তবে সে পরিত্রান ঈশ্বরের হাত থেকে পরিত্রান; জীবন বিপন্ন হলে আইডেন্টিটি সচেতন হয়ে উঠে সবাই, সে তো সত্য; কিন্তু সবচেয়ে বড় বিপন্নততা ঐশ্বরিক সুত্রে বাঁধা!
শেষে একটি সম্পুরক প্রশ্ন, বিপ্লব্দা, সুফিজমের অনুপ্রেরনা এসেছে কোথা থেকে?
@গুবরে ফড়িং,
সুফিজমে অনুপ্রেরনা এসেছে রাজনৈতিক ইসলামের প্রতি ঘৃণায়। একদল আধ্যাত্মিক মুসলিম মনে করা শুরু করে সবাই ইসলামের রাজনৈতিক এবং সামাজিক আইন নিয়ে এত ব্যস্ত কোরানের আধ্যাত্মিক বানীর প্রতি তাদের সময় কম-তাই রাজনৈতিক ইসলাম কাটিয়ে একটি আধ্যাত্মিক ইসলামের জন্ম নিতে থাকে যা সুফিবাদ নামে খ্যাত।
বৈদিক ধর্ম হিন্দু ধর্মের একটা অংশ মাত্র। আর্যদের বৈদিক ধর্ম আর দ্রাবিড় ও অস্ট্রিক জনগণের দেশী প্রথাগুলো মিলে আজকের হিন্দু ধর্ম। মুসলমানরা এদেশে শাসক হিসেবে আসলে হিন্দুরা তাদের ঘোর বর্ণভেদ অনেকটা ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। তাই হিন্দু ধর্মে জাতীয়তাবাদী জাগরণে ইসলামের ব্যাপক অবদান। ইসলামের কাছে হিন্দুরা তাদের অনেক অনুসারী হারিয়েছে বটে, তবে তা তাদের হিন্দু জাতীয়তাবাদ পোক্ত করে যেভাবে তাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলোকে তারা হাইট করেছিল, তা থেকে বরং অধিকতর লাভবান হয়েছিল। ঠিক যেমন ১৯৪৭-৭১ সময়ে বাঙ্গালীরা পাকিস্থানীদেরকে সাম্রাজ্যবাদী স্বৈরশাসক হিসেবে প্রতিপন্ন করে ইসলামী জাতীয়তাবাদ ভুলে বাঙালী জাতীয়তাবাদে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল!!!
লেখাটা দারুন হয়েছে। সময় নেই বেশী কিছু বলেতে পারছি না, তবে বলার দরকারও নেই। আপনি আসল কথা বলেই দিয়েছেন – বাংলার মননে ইসলাম বা হিন্দু ধর্ম দুই আলগা। বৈদিক ধর্ম, বা ইসলাম বাংলার প্রানের ধর্ম নয়।
বৈষ্ণব ধর্ম, সুফি ধর্ম, বাউল, লোকায়েত ও বৌদ্ধ ধর্ম এগুলির সাথে বাংলার যোগ বরং অনেক স্বাভাবিক। বাংলার সুজলা, সুফলা প্রকিতিতে ওয়াহাবি ইসলাম, বা বৈদিক হিন্দু ধর্ম বড়ই বেমানান। আমাদের দুর্ভাগ্য আমরা hypnotized। আমাদের নিজেদের সরল সিধা মাটির ধর্মে আমাদের টান নেই, শুধু আরম্ভর পূর্ণ, ভেদাভেদি বাইরের সংস্কৃতি-ধর্ম নিয়ে মারামারি করে চলেছি।
@বিপ্লব পাল,
সহমত।
আপনার এই পোস্টে তেমন কোন তথ্যসূত্র দেয়া নেই, দিলে কিঞ্চিৎ সুবিধা হয়।
সেবা প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত ওয়েস্টার্ন বইগুলোতে পড়েছি বিভিন্ন বাথানের গুরুদের পৃথক করার জন্য তাদের শরীরে গরম লোহার ছ্যাঁক দিয়ে লোগো এঁকে দেয়া হতো। বাঙ্গালী বাথানের গরুদের শরীরে যেহেতু ছ্যাকের দাগ গভীর ছিল না তাই এক পুরোন মালিক তাদের লোগো স্পষ্টতর করে দিচ্ছে আর তাঁর পূর্বের মালিক বলছে গরুগুলো আমার। ঘটনা কি তাই নাকি?
( গরু শব্দটি বইয়ের সাথে মিল রাখার জন্য রাখা)
@শিজি সেঁজুতি,
উপমাটি অসাধারন। ব্যপারটা তাই। বাঙালী নিজেদের খুব বেশী বুদ্ধিমান ভাবে-কিন্ত আদতে গরুই। নইলে এই ইসলাম আর হিন্দুত্ব নামে দুই বিদেশী ধর্মের গোলামি করে? আহাম্মকের জাত !!
Excellent!
In my view, the concept of ‘Dharma’ is not synonymous with the concept of ‘Religion.’ Dharma represents activities through which one can express his/her identity, but religion requires something more than that; religion requires one to follow certain rules and regulations. This is why – যুধিষ্ঠির উত্তর দেন বুদ্ধিমান লোকের কর্মই ধর্ম।
A teacher’s Dharma is teaching; if one carries out his/her duties (karmas) faithfully, he/she will perform dharmic-karma successfully. Dharma has no set guidelines or rules to follow, except it needs to be for the good of the human-being. Vivekananda called this Dharma as a Manusher-Dharma (Human-religion).
Pujas are nothing but recreation of certain scriptural events to commemorate some of those events. For example, Durga-puja represents the incident when Devi used to come to visit her parents’ once a year with all her children; Basanti-puja represents the incident – when Devi came to see Ramchandra when he meditated for her boon, before going to war with Ravan. Some Hindus (not all) celebrate these events with festivities. Although Puja, per se, is not a dharmic-karma, but – one can perform dharmic-karma through charitable works during these activities, which most people also do. In these occasions, everybody have fun, a lot of fun, and destitute people get free food, clothing, etc. during these events. So, no harm done to anybody.
Jiten Roy
(N.B. Excuse me for not being able to express my comments in Bengali).
বাংলার বীরভূমে বাইশ জনের মধ্যে বিশ জৈন তীর্থঙ্করের সমাধিস্থল থেকে একথা স্পষ্ট হয়ে ওঠে বাংলাদেশই জৈন ধর্মের কেন্দ্রস্থল ছিল এবং বাঙালিরা অধিকাংশই প্র্রথমত জৈন ধর্মের অনুসারী ছিল।
@জাহাঙ্গীর মোহাম্মদ,
বীরভূমে জৈন তীর্থঙ্করদের আদিবাস-এই তথ্যটা কোথা থেকে পেলেন? এটা আমার জানা ছিল না।
তবে এটা জানি বাংলাতে জৈনদের কর্মস্থল ছিল বহু আগে। সেটা প্রাক বৌদ্ধ যুগে যার কোন ঐতিহাসিক প্রমান আনা সম্ভব না।
একটা কথা না বললেই নয় হিন্দুরা সবসময়ই অন্য ধর্মকে সন্মান করে এবং মুসলমানদের ভাই বলে মেনে নিলেও মুসলিমরা মন থেকে কখনই তা মেনে নেবে না ,কারণ ইসলাম অন্য ধর্মকে ঘৃনা এবং হত্যা করতে সেখায় , হিন্দুরা আজ যা করছে তা অস্তিত্বের লড়াই।
@আস্তরীণ,
শুধু অস্তিত্বের লড়াই বললে সত্যের অপলাপ হবে। কিছুটা অস্তিত্বের লড়াই ত বটেই কারন কি বাংলাদেশ কি পশ্চিম বঙ্গে সর্বত্রই এই বর্বর এবং অসভ্য আরবের ইসলামকে মাথায় তুলে রাখা হয়েছে রাজনৈতিক কারনে যা অতীব লজ্জার। বাংলার ইসলাম যা বাংলার উপাদান দিয়ে তৈরী তার পৃষ্ঠপোষক কেও নেই! কিন্ত এই লড়াইটা বাঙালী মুসলমানদের সাথে একসাথেই ভাই ভাই হিসাবেই লড়তে হবে-আরবের ইসলামে যে পরিমান বোমা আর বোরখা আছে তাতে বিপদটা তাদের ও কম না। বরং এই আরবের ইসলামের বিপদটা মুসলমানদের মধ্যেই বেশী।
@আস্তরীণ, কোনো ধর্মই কোনো ধর্মের লোককে অসন্মান করতে শিখায় না । বরং মানুষই না বোঝে না জেনে ধর্মের উল্টা মিনিং ইউজ করে
এক কথায় অসাধারণ ,এই লেখাটা না পড়লে বাঙালি হিন্দুত্ববাদ সম্পর্কে অনেক কিছুই অজানা থেকে যেত। অনেক অনেক ধন্যবাদ (F)
চমৎকার লেখা। বেশ কিছু ভাল পয়েন্ট উঠে এসেছে লেখাটিতে। ঠিকই বলেছ – বাঙালীর মধ্যে হিন্দুত্ব বা ইসলামিয়তের আইডেন্টিটি খুব গভীরে না । বরং বাঙালীর প্রাণের অনেক গভীরে তার বাউল গান, তার ভাটিয়ালি গান। তারপরেও হিদু মুসলিমদের এই ফেক আইডেণ্টিটি নিয়ে এত কেন মাতামাতি কে জানে। আর তাছাড়া ভারতের লোকায়াত দর্শনের ইতিহাসটা খুব প্রাচীন। চার্বাকদের কথা যদি বাদও দেই – বৈদিক যুগে বা তার পরবর্তী সময়ে বৃহস্পতি, অজিত কেশ কাম্বলী, ধীষন, পরমেস্তিন, ভৃগু, কপিলা, কশ্যপমুনি, পুরন্দর, চরক, সুশ্রুত, বাৎসায়ন চিন্তাশীল মনীষীরা যুক্তিবাদের চর্চা করে গেছেন এর অসংখ্য প্রমাণ আছে।
আর আমাদের লোকায়ত সংস্কৃতির বাউলরা তো আছেনই। দ্বিজ দাসের একটা গান আছে। গানের কলিগুলো এরকম –
কেউ বলে আছে খোদা, কেউ বলে নাই
আমি বলি থাকলে আছে, না থাকিলে নাই
তারে নয়নেও দেখি নাই, শ্রবণেও শুনি নাই
দর্শন পাই না তবু করিযে প্রণাম
শোনো দ্বিজ দাসের গান….
দুদ্দু শাহ, লালনদের গান তো আছেই।
@অভিজিৎ,
আসলে মার্কেটিং এবং মার্কেট এটাই আসল। বাংলার লোকায়েত সংস্কৃতির পেছনে রাজনৈতিক শক্তি নেই-ফলে ডলার নেই। কেও প্রচার ও করে না। ইসলামিস্টদের রাজনৈতিক ঘুঁটি আছে-ফলে বাংলার লোক মুসলমান হোক বা না হোক, তাকে জোর করে তার ওপর ইসলামিক পরিচিতিগুলো চাপানো হচ্ছে। আজ থেকে ৩০ বছর আগেও বাংলায় এত ইসলাম ইসলাম বলে কোন পাকাআম ছিল না। যা কিছু ছিল সব আমের মুকুল। পেট্রোডলার রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা আমাদের লোকায়েত সংস্কৃতি ধ্বংস করে এক বিদেশী সংস্কৃতিকে বাংলার বুকে বসিয়ে দিল। সবটাই মার্কেটং করে খাওয়ানো।
@বিপ্লব পাল, একটু ভিন্ন এঙ্গেল থেকে বলি, বিগত ৩০ বছরে আরবের তেল বেচা টাকায় ইসলামের প্রচারে এই অঞ্চলের মানুষ সাম্প্রদায়িক হয়ে উঠেছে আর এর আগে সবাই উদার ধর্মীয় বিশ্বাসে বিশ্বাসী ছিলো এতটা মনে হয় প্রকৃত চিত্র নয়। লালনের গুরু সিরাজ শাঁইয়ের গান- জলের উপর পানি , না পানির উপর জল- কি রকম ধর্মের দ্বন্দ ছিল সে যুগে বুঝা যায়। বাংলার বাউলদের নিগৃহত হবার ইতিহাসও লম্বা। ছেউরিয়ার ফকির লালনের আশ্রমকে সে যুগের সাধারণ গ্রামবাসী ভাল চোখে দেখতো? ইতিহাস কি বলছে তার চেয়ে আমার কাছে প্রমাণ লালনের নিজের গান। লালনের মনে যে ক্ষত, ব্যথা তা তো ধর্মের পীড়নেই। হ্যাঁ, এটা ঠিক আজকের হিযবুর তাহরির, ইন্ডিয়ানা মুজাহিদদের মত সংগঠন তখন ছিল না। আর কথিত উদার সুফিবাদের প্রকৃত চেহারা এই মুক্তমনাতেই কিছু লেখা আছে। রাশেদ তালুকদারের একটা লেখার কথা এই মুহূর্তে মনে পড়ছে।… পুরো লেখার সঙ্গে দ্বিমত করছি না কিন্তু। এই অঞ্চলের মানুষ গান-বাজনা প্রতি আকষণ সবাই স্বীকার করবে। বহু জাতির সংস্কৃতির মিশেলে অনেক প্রথা আজো রয়ে গেছে। আজো বাঙালী মুসলমানরা এই কট্টর ওহাবী ইসলামের যুগেও ঘর, ব্যবসাপাতি, সন্তানসন্ততির বিষয়ে “লক্ষ্মি” নামক একটা সত্ত্বাকে মেনে চলে! এখন এটার উদাহরণ দেখিয়ে আজ থেকে একশ বছর পর যদি বলা হয় ২০১৪ সালে বাঙালী মুসলমানরা খুব উদার, অসাম্প্রদায়িক ছিল- তাহলে কি প্রকৃত চিত্র তুলে ধরা হবে? আসলে এই ইতহাস বয়ানে একটা বড় অসুবিধা হলো যুগের ধাপে ধাপে গ্যাপ, কখনো কোন মতবাদের প্রবল প্রতাপ, কখনো অন্য মতবাদের প্রধান্য- এসব মাথায় নিয়ে এক কথায় মন্তব্য করা নির্ভুল হবে না। যদি বলি আবহমানকাল ধরে বাংলার মানুষ চরম উদার-অস্প্রদায়িক ছিল- তাহলে পুরো সত্য বলা হবে না। আবার যদি বলা হয়- এই অঞ্চলের মানুষ বরাবরই সাম্প্রদায়িক-উগ্র ছিল- তাহলেও সত্য বলা হয় না…।
@সুষুপ্ত পাঠক,
বাংলায় সাম্প্রদায়িকতার বীজ বহু পুরাতন। চৈতন্য ভাগবতেও সাম্প্রদায়িক কথা অনেক। পলাশীর ষড়যন্ত্রে সাম্প্রদায়িকতা বিশেষ ভূমিকা রেখেছিল। কিন্ত সাধারন মানুষের মনে, গ্রামে এত সাম্প্রদায়িক বিষ ছিল না যা এই সব খারিজি মাদ্রাসার কারনে এখন মহীরূহ। অবস্থা এখন নিদারুন। কারন এইসব মাদ্রাসাগুলিতে জঙ্গি আইডিয়ার চাষবাস করা হয়।
@অভিজিৎ,
সব মানুষের মনের গভীরে যদি গানের জন্য ভালোবাসা জন্মানো যেতো তাহলে ফেক আইডেন্টিটি নিয়ে মাতামাতি ও বিদ্বেষ হানাহানি অনেকখানি কমে যেত।
হিন্দু ধর্মগ্রন্থে মূর্তিপূজা তো দূরের কথা, হিন্দু শব্দেরই কোন অস্তিত্ব নেই!, হিন্দু শব্দটি এসেছে মূলত সিন্ধু হতে। অর্থাৎ সিন্ধু নদের অববাহিকায় যারা বসবাস করে তাদেরকে হিন্দু বলে। সেই হিসাবে একজন ইন্ডিয়ান মুসলিমও হিন্দু (ভৌগলিক অর্থে)। তাই একে হিন্দু ধর্ম না বলে বৈদিক ধর্ম বলাই অধিক যুক্তিযুক্ত।
মূলকথা হচ্ছে, শুধু হিন্দু নয়; বরং ইসলাম, ইহুদী, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান এদের ধর্মগ্রন্থ গবেষণা করলে দেখা যায় যে, এরা নিজ ধর্মের ‘ধ’ও বুঝে না। বাকিটা তো অনেক পরের বিষয়………………………
@দ্য লাস্ট সামুরাই,
কথাটা সত্য। ধর্মগ্রন্থ বুঝলে বা পড়লে আর কি কেও ধার্মিক হয়?
@বিপ্লব পাল,
“ধর্মগ্রন্থ বুঝলে বা পড়লে আর কি কেও ধার্মিক হয়?”-
দু:খিত। এক্ষেত্রে আমি একমত হতে পারলাম না। আমি বুঝিয়েছিলাম যে অধিকাংশ মানুষ ধর্মগ্রন্থ না পড়ার কারণে উগ্রপন্থিতে পরিণত হয়েছে। কারণ হিন্দুরা যদি জানতো যে তাদের ধর্মগ্রন্থে মূর্তিপূজা নেই তাহলে আর মুসলিমদের সাথে মারামারি থাকতো না। কারণ তখন আল্লাহ-ভগবানের পার্থক্য থাকতো না।
পৃথিবীতে অনেক শিক্ষিত ধার্মিক লোক আছে যারা উগ্রপন্থি নয়। কারণ তারা ধর্মগ্রন্থ সম্পর্কে জানে। মূর্খ ধার্মিকরাই উগ্রপন্থি হয়ে থাকে কারণ তারা ধর্মগ্রন্থ সম্পর্কে জানে না (জানলেও খুবই সামান্য)
হিন্দু ধর্মগ্রন্থে বর্ণবাদ থাকলেও কোরআনের বিজ্ঞানভিত্তিক গবেষণায় আমি এখনো ত্রুটিপূর্ণ কিছু পাইনি।(স্পিরিচ্যুয়াল বিষয়গুলো বাদে)
@দ্য লাস্ট সামুরাই,
বিজ্ঞান মানেত পরীক্ষালদ্ধ ফল এবং তার বিশ্লেষন । তা কোরানের কোন আয়াতে বিজ্ঞান গবেষনার তথ্য বা ফলাফল পাওয়া গেল জানাবেন? আমি কিন্ত পরীক্ষাগুলো দেখতে চাইবো আগে।।
@বিপ্লব পাল,
এখানে আমি শুধু বিতর্কিত বিষয়গুলোর একটি সংক্ষেপে বর্ণনা করছি। কারণ সম্পূর্ণ বর্ণনা করলে অনেক দীর্ঘ হয়ে যাবে। সূরা নিসায় নারীকে ছোট করা হয়েছে বলে মনে করা হয়।(সম্পদের ভাগ কম, প্রহার করা ইত্যাদি…)
বিশ্লেষণ :
১।প্রকৃতিতে নারী-পুরুষ একরকম নয়। কারণ তাদের ব্রেনের গঠন একরকম নয়। ফলে তাদের শারীরিক এবং মানসিক ক্ষেত্রে পার্থক্য রয়েছে। শারিরীক পার্থক্যের মধ্যে আপনি পাবেন পুরুষদের দাড়ি, মোছ, নারীদের গর্ভধারণ করার ক্ষমতা, মাসিক ঋতু ইত্যাদি ইত্যাদি। একটি জরিপে দেখা যায় নারীরা সন্তানদের প্রতি অধিক মায়া-মমতা প্রদর্শন করে। মূলত এই কারণেই প্রাচীন-মধ্যযুগীয় বর্বরতায় দেখা যায় পুরুষরা সন্তানদের গণহারে হত্যা করতো কিন্তু নারীরা (মায়েরা) তা চাইতো না। এটা হচ্ছে মানসিক পার্থক্য।
http://www.psychologytoday.com/blog/the-scientific-fundamentalist/200803/male-brain-vs-female-brain-i
http://time.com/2859665/do-fathers-love-their-children-less-than-mothers-do/
২। সমাজে নারীদের অবদানও পুরুষদের সমান নয়। আপনি হয়তো বলবেন তারা সুযোগ পায়নি বলে। কিন্তু আপনি যদি সমান সংখ্যক পুরুষ এবং সমান সংখ্যক নারীকে একটি নির্দিষ্ট সময় কাজ করার জন্য পরীক্ষা করেন তাহলে দেখবেন পুরুষদের কাজের পরিমাণই বেশি হয়েছে। কারণ নারীরা তাদের জীবদ্দশায় যখন গর্ভধারণ করে তখন কোন কাজ করতে পারে না (বিশ্রামের প্রয়োজন হয় বলে)। কিন্তু পুরুষরা তাদের জীবনে একটানা কাজ করে যেতে পারে। তাই অর্থনৈতিক দায়িত্বশীলতার ক্ষেত্রে পুরুষরাই অধিক উপযুক্ত।
৩। আমি আমার জীবনে কখনোও কোন পুরুষকে বেশ্যাবৃত্তি করতে দেখিনি। বড়জোর বেশ্যার দালাল হতে দেখেছি। যদি নারী-পুরুষ সমানই হতো তাহলে অবশ্যই নারীদের পাশাপাশি পুরুষদেরও বেশ্যাবৃত্তি করতে দেখা যেতো। অনুরূপভাবে নারীরাই সব সমাজে কম-বেশী ধর্ষিত হয় কিন্তু পুরুষরা হয় না।
http://en.wikipedia.org/wiki/Rape_by_gender
৪। শুধুমাত্র নারীর অধিকারের কথা বিবেচনা করলে দেখা যায় যে, অন্যান্য ধর্মের তুলনায় ইসলাম ধর্ম যথেষ্ট নারীকে মর্যাদা দিয়েছে। যেমন: ‘হিজাব’ খুবই বিজ্ঞান-সম্মত। যেসব সমাজে হিজাবের প্রচলন নেই সেসব সমাজে ইভটিজিং,ধর্ষণের হারও বেশি। এমনকি অন্যান্য অপরাধের মাত্রাও বেশি। কারণ নারীদের সৌন্দর্য্য এর সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত।
সুতরাং পরীক্ষালব্ধ ফলাফল থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, কোরআনে পুরুষদের অর্থনৈতিক দায়িত্ব দেয়া অবৈজ্ঞানিক কিছু নয়। অর্থাৎ আমি যে কাজে কম উপযুক্ত সে কাজে আমাকে দায়িত্ব না দেয়াই ভাল।
@দ্য লাস্ট সামুরাই,
আপনার পড়াশোনা খুব কম। অবশ্য যারা ধর্মে বিশ্বাস করে, তাদের সবার পড়াশোনাই খুব কম। আমি
শুধু কিছু লিংক দিচ্ছি আপনার চক্ষু উন্মোচনের জন্য
(২) অর্থনৈতিক উৎপাদনশীলতা বর্তমানে কায়িক না বৌদ্ধিক শ্রম দাবী করে-সেখানে কোন স্টাডি নেই যা দাবী করে মেয়েরা পিছিয়ে আছে, বরং উল্টোটা সত্য-মহিলা শ্রমিকদের প্রোডাক্টিভিটি বেশী –এই লিংক দেখুন
(৩) পুরুষ সমান ভাবে বেশ্যা বৃত্তি করে
(৪) হিজাবের উল্লেখ কোরানে নেই-এটি সিরিয়ান পোষাক। কোরানে ভদ্রভাবে ড্রেস করতে বলা হয়েছে স্তন ঢেকে। মাথা ঢাকতে কোথাও লেখে নি। ওইটি কল্পনা। আমি অনেক ব্লগেই দেখেছি যারা মডেস্টির সাথে হিজাব গুলিয়েছে। আপনি কোরান ও ঠিক ঠাক পড়েন নি। শুধু না বুঝে কোরান আর ইসলাম নিয়ে হস্তমৈথুন করছেন আন্দাজে, যা বাকী মুসলমানরাও করে।
@বিপ্লব পাল,
২। উপরোক্ত ওয়েবসাইট লিঙ্কের গবেষণায় নারীদের মনোযোগীতা বেশী সেটা প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু তাদের প্রডাক্টিভিটি যে বেশি তার প্রমাণ পাওয়া যায়নি। একটি নির্দিষ্ট সময় কোন কাজে নারীদের বেশিক্ষণ ধৈর্য্য ধরে লেগে থাকতে দেখা গেছে কিন্তু পুরুষদের কম। হতে পারে যে কাজে পুরুষরা কম সময় ব্যয় করে সেই একই কাজে নারীরা বেশী সময় ব্যয় করে। আমি বুঝিয়েছিলাম পুরুষরা উৎপাদনশীলতার ক্ষেত্রে বেশী সময় পায়, কারণ নারীরা মানবজাতির বংশানুক্রমে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করে(সন্তান জন্মদান, স্তন্যপান করানো ইত্যাদি)। আর নারী-পুরুষ উভয় যদি উৎপাদনশীলতায় বেশী মনোযোগী হয় তখন সন্তান লালন-পালনে দায়িত্বহীনতা দেখা দেয়। ফলে চরম হতাশার মধ্যে শিশুদের বড় হওয়ার কারণে অপরাধের মাত্রাও বেড়ে যায়। পরীক্ষণে আরেকটি ফলাফল পাওয়া যায় সেটা হলো নারীদের উপস্থিতিতে পুরুষদের উৎপাদনশীলতা কমে যায়। ইসলামে সেজন্যই নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
৩। লিংকে উল্লেখ্য আছে পুরুষ বেশ্যারা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাদের কাস্টমারকে ব্ল্যাকমেইল করে থাকে। তাই এদেরকে পতিতা না বলে ধর্ষণকারী বলাই ভাল। এদের মধ্যে কিছু আছে সমকামী, হিজড়া, কিছু ধর্ষণকারী। এদের অস্তিত্ব অস্বীকার করি না, কিন্তু সমাজে এদের চাহিদা নেই বললেই চলে। যাইহোক, পতিতাবৃত্তি নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর। (লিঙ্ক অনুযায়ী)
৪। কোরআনে হিজাবের কথা উল্লেখ্য নেই?- রেফারেন্স দেখুন:
“তারা(নারীরা) যেন বক্ষদেশ মাথার কাপড় দ্বারা আবৃত করে রাখে” (সূরা নুর: ৩১)
” হে নবী, তুমি তোমার স্ত্রী, মেয়ে ও সাধারণ মুমিন নারীদের বলো, তারা যেন তাদের চাদর (থেকে কিয়দংশ) নিজেদের ওপর টেনে দেয়, এতে করে তাদের চেনা (অনেকটা) সহজ হবে এবং তাদের কোনোরকম উত্ত্যক্ত করা হবে না” (সূরা আহযাব : ৫৯)
“আর তোমরা (নারীরা) পূর্বেকার জাহেলিয়াতের যুগের (নারীদের) মতো নিজেদের সৌন্দর্য্য প্রদর্শনী করে বেড়াবে না” (সূরা আল-আহযাব :৩৩)
এরকম কোরআন-হাদিসের অনেক জায়গায় হিজাবের কথা উল্লেখ্য আছে। হিজাব বলতে মূলত দুই হাতের কব্জি এবং মুখমন্ডল ব্যতিত পুরো শরীর ঢিলেঢালা পোশাকে আবৃত করা বুঝায়।
কোন ধরনের শালীনতা সমাজের জন্য বেশী উপযোগী সেটা বুঝতে পারবেন বিভিন্ন সমাজের পরিসংখ্যান/জরিপ ইত্যাদি দেখলে। নারীদের নিরাপত্তার স্বার্থেই এ ব্যবস্থা করা হয়েছে।
@দ্য লাস্ট সামুরাই, বৈদিক ধর্ম হিন্দু ধর্মের একটা অংশ মাত্র। আর্যদের বৈদিক ধর্ম আর দ্রাবিড় ও অস্ট্রিক জনগণের দেশী প্রথাগুলো মিলে আজকের হিন্দু ধর্ম। মুসলমানরা এদেশে শাসক হিসেবে আসলে হিন্দুরা তাদের ঘোর বর্ণভেদ অনেকটা ভুলে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। তাই হিন্দু ধর্মে জাতীয়তাবাদী জাগরণে ইসলামের ব্যাপক অবদান। ইসলামের কাছে হিন্দুরা তাদের অনেক অনুসারী হারিয়েছে বটে, তবে তা তাদের হিন্দু জাতীয়তাবাদ পোক্ত করে যেভাবে তাদের অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলোকে তারা হাইট করেছিল, তা থেকে বরং অধিকতর লাভবান হয়েছিল। ঠিক যেমন ১৯৪৭-৭১ সময়ে বাঙ্গালীরা পাকিস্থানীদেরকে সাম্রাজ্যবাদী স্বৈরশাসক হিসেবে প্রতিপন্ন করে ইসলামী জাতীয়তাবাদ ভুলে বাঙালী জাতীয়তাবাদে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল!!!
@সন্তোষ খাল্লাস,
পাকিস্তানীরা স্বৈরশাসক ছিল বটে, কিন্তু তার সাথে ইসলামের কি সম্পর্ক? পাকিস্তানীরা মুসলিম ছিল বলে তার মানে এই নয় যে মুসলিমদের বিরুদ্ধে বাঙালীদের যুদ্ধ। বরং তা ছিল স্বৈরশাসকের বিরুদ্ধে বাঙালীদের যুদ্ধ। এবং স্বাধীনতার পরেও বাঙালীদের মধ্যে ইসলামী জাতীয়তাবাদ বিদ্যমান। ইসলাম ধর্মে কোন বর্ণবাদ নেই। আপনি কোরআনের উপর গবেষণা চালিয়ে দেখতে পারেন।
@দ্য লাস্ট সামুরাই, ইসলামে বর্ণবাদ নেই এটা ঠিক না। ইসলামে বর্ণবাদের চেয়েও মারাত্মক ও জঘন্য বাদ আছে, আর তা হলো– জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রবাদ। সব সিমেটিক ধর্মেই এগুলো কমবেশি আছে, তবে ইসলামে এটা সহ্য মাত্রার চেয়ে অনেক বেশী, ঠিক যে্লেওসব পানিতে আর্সেনিক থাকলেও তা যদি কোন পানিতে সহ্য ক্ষমতার চেয়ে বেশী থাকে তা ক্ষতির কারণ হয়!! আপনি কিভাবে জানলেন যে এখনও আমি কোরআন নিয়ে গবেষণা করিনি??? :good:
@সন্তোষ হাল্লাজ,
কোরআনের কোন কোন আয়াতে জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদ, সন্ত্রাসবাদ শেখানো হয় তা রেফারেন্স সহকারে জানালে আপনার প্রশ্নের উত্তর দিতে সুবিধা হতো। যারা জঙ্গিবাদ করে তা মাত্রই ধর্মগ্রন্থের ভুল বোঝা-বুঝি। যাইহোক, কোরআনে যে জঙ্গিবাদ নেই তা নিম্নোক্ত আয়াত দ্বারা প্রমাণিত।
১।(আল্লাহর) ধর্মের ব্যাপারে কোন জোর জবরদস্তি নেই, (কারণ) সত্য (এখানে) মিথ্যা থেকে পরিষ্কার হয়ে গেছে; (সূরা বাকারা : ২৫৬)
২।(হে মোহাম্মদ,) তারা যদি সন্ধির প্রতি আগ্রহ দেখায়, তাহলে তুমিও সন্ধির দিকে ঝুঁকে যাবে এবং (সর্বদা) আল্লাহর ওপরই ভরসা করবে; (সূরা আল-আনফাল : ৬১)
৩।মোশরেকদের মধ্য থেকে যদি কোনো ব্যক্তি তোমার কাছে আশ্রয় চায় তবে অবশ্যই তাকে তুমি আশ্রয় দেবে, অতপর তাকে তার (কোন) নিরাপদ জায়গায় পৌঁছে দেবে; (সূরা আত-তাওবা : ৬ )
@দ্য লাস্ট সামুরাই, আপনি হয়তো জানেননা হিন্দু ধর্মে বর্ণবাদ নেই। যা আছে তা হল বর্ণাশ্রম। এটা কর্মের ও যোগ্যতার ভিত্তিতে করা। এটা এত বেশি গ্রহণযোগ্য ও প্রয়োজনীয় যে তা আজ সারা পৃথিবীতে মেনে চলা হচ্ছে। যেমন সবাই শিক্ষক হলেও কেও প্রভাষক, কেউ সহকারী বা সহযোগী বা অধ্যাপক। এটা বয়স, যোগ্যতার ভিত্তিতে করা। বেতন মর্যাদাও আলাদা। পিয়ন কোনক্রমেই কর্মকর্তার চেয়ারে বসতে পারবেনা। এটা বিদ্বেষ নয়। যোগ্যতার প্রাপ্য মর্যাদা মাত্র। আর কোরানের বর্ণবাদ হল শিয়া সুন্নী হানাফী ইত্যাদি। তথাকথিত বর্ণবাদে ব্রাহ্মণের শুদ্রকে হত্যার বিধান না থাকলেও আপনার কোরানের বর্ণবাদে শিয়া সুন্নী হানাফীরা পরস্পরের জাতশত্রু। খুন জখম মসজিদ ধ্বংস সবই আল্যার দৃষ্টিতে জায়েজ।
আপনার অন্যান্য যুক্তি(?)গুলো পিছলামী ধর্মানুসারীদের অনেক পুরাতন পচে যাওয়া বক্তব্যমাত্র। একটু নেট ঘাটুন। সব প্রশ্নের উত্তর অনেক আগেই দেয়া হয়ে গেছে।
@এক মানুষ,
“কোরআনের বর্ণবাদ হল শিয়া, সুন্নী, হানাফী”- এ কথা কোরানের কোথায় উল্লেখ্য আছে তা আপনি উল্লেখ্য করেননি।
কোরআনের কোথাও শিয়া, সুন্নী, হান্নাফী, ব্রাক্ষ্মন, ক্ষত্রিয়, শুদ্র, হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান, ইহুদী, বৌদ্ধদেরকে আলাদা করা হয়নি বরং আপনি খেয়াল করলেই বুঝতে পারবেন যে কোরআনের প্রত্যেকটি জায়গায় “হে মানবজাতি, হে বিশ্বাসী, হে অবিশ্বাসী” বলে সম্বোধন করা হয়েছে। কোর্আনে উল্লেখ্য করা হয়েছে যে, প্রত্যেক জাতির উপরেই পথ-প্রদর্শক নবী প্রেরণ করা হয়েছিল। অবশেষে যারা তাঁদের প্রত্যাখ্যান করেছিল তারা নিজেদের প্রতিফল স্বরুপ ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। এখানে কোন জাতিকে আলাদা করা হয়নি বরং তাদেরকে বিশ্বাসী/অবিশ্বাসী বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
আমার যুক্তি পুরাতন হতে পারে। কিন্তু তাই বলে আপনি আপনার যুক্তি উপস্থাপন থেকে এড়িয়ে যাবেন কেন? আপনি কি চাননা যে নিউ জেনারেশন প্রকৃত সত্যকে জানুক? এমনও হতে পারে আপনার কাছ থেকে আমার অনেক কিছু শেখার আছে। :good:
সবার উপর মানুষ সত্য তাহার উপর কেহ নাই
@এম হক,
সারা জীবন অনেক ইতিহাস ধর্ম দর্শন বিজ্ঞান ঘেঁটে আমিও এই মর্মেই উপস্থিত যে সবার ওপর মানুষ সত্য। মানুষের ওপর ধর্ম আল্লা কমিনিউজমকে তুললে তা টিকতে পারে না। কেও যদি ভাবে আল্লা মহম্মদের কারনে মানুষের ওপর অত্যাচার করা বিধিসম্মত, তাহলে আল্লা এবং মহম্মদের ধারনা ( ধারনাই লিখছি, কারন হজরত মহম্মদ স্পাইডারম্যানের মতন সম্পূর্ন কাল্পনিক চরিত্র-এই প্রবন্ধে ডিটেলস পাবেন ) অচিরেই হারিয়ে যাবে। হিন্দু ধর্মের রীতিনীতির একটা বড় অংশ মানুষকে নীচু শুদ্র বানিয়ে-তাই হিন্দু ধর্মের বর্নবাদ এখন অন্তর্জলি যাত্রায়।
লেনিন স্টালিন মানুষের ওপর পার্টিকে বসিয়েছিলেন। ফলে আজ তারা বিপ্লবী চরিত্রর চেয়ে হিটলারের মতন যঘন্য খুনী চরিত্র হিসাবেই ইতিহাসে স্থান পাচ্ছেন।
এমন কি আমরা যুক্তিবাদিরাও যদি বিজ্ঞানের ওপরে মানুষকে স্থান দিই, যুক্তির দিয়ে মানব নিধন, যুদ্ধকে সমর্থন করি-আমাদের দর্শন ও টিকবে না।
সবার ওপর মানুষ সত্য-এ য কত গভীর দর্শন, তা একমাত্র যে দর্শন আর ইতিহাসের গভীরে গেছে সেই বোঝে। কোন ধার্মিক, এক্টিভিস্ট বা কমিনিউস্ট এটা বোঝে না। এ বোঝে সে কবি আর বাউল।