মরণব্যাধির ইবোলা এখন আমেরিকায় সংক্রমন ছড়াচ্ছে। বাংলাদেশেও ছড়াতে পারে। খবর বেরিয়েছে যে আজ সকালে (অক্টোবর ১৩, ২০১৪) টেক্সাসের ডালাসে একজন নার্স আর দুপুরে ম্যাসাচুসেসের বোস্টন শহরের কাছে অন্য একজন লাইবেরিয়া ফেরৎ মানুষ আক্রান্ত হয়েছে। ডালাসের সংক্রমনটি নিশ্চিত ভাবেই হয়েছে। বোস্টনেরটিও প্রায় নিশ্চিত। ডালাসের এই নার্স ইবোলা আক্রান্ত একজন লাইবেরিয়ানকে সেবা দিয়েছিলো তার নাম টমাস এরিক ডানকান। ডালাসে পৌঁছে লাইবেরিয়ান টমাস ডানকান সাধারণ অসুস্থতার চিকিৎসা নিয়ে ঘরে ফেরৎ যায়। কিন্তু দিন খানেকের মধ্যেই ফিরে আসে হাসপাতালে। ধরা পরে তার ইবোলা সংক্রমণ। দু তিন দিন পর মারা যায়। ডানকান’কে সেবা দানকারী বেচারা নার্স নিজেই এবার আক্রান্ত হোল।

ইবোলা’র ব্যপারে যে সব জানা খুব দরকার তা এখানে ক্লিক করে দেখে নিন।

ইবোলা ধরলে উপায় নেই, সমীক্ষা বলছে যে এতে মরতে হয় শতকরা ৫০ জনকেই। হয়ত আরো বেশি। যে কজন বেঁচে যাচ্ছে তাদের জন্য যে সব ভ্যাক্সিন বা ঔষধ দেয়া হচ্ছে সেগুলো যথেষ্ঠ ভাবে পরীক্ষিত নয়, মানে আসলে সেই সব মানুষের ওপর ব্যবহার করবার অনুমতি নেই। শুধুমাত্র বিশ্বমড়ক লেগে যাবার ভয়ে এবং সেটি নিয়ন্ত্রণে রাখবার আশায় এই সব ভ্যাক্সিন বা ঔষধ বিশেষ অনুমোদনে দেয়া হচ্ছে। এগুলি মোটেও সহজলভ্য নয়।

ভয়ানক এই ইবোলা অসুখ বিসুখের খাতায় রেকর্ড করেছে। ইবোলায় মৃত প্রায় চার হাজারের বেশীর ভাগ’ই মরেছে পশ্চিম আফ্রিকার লাইবেরিয়া, সিয়েরা লিওন আর গিনিতে। ইরাক, আফগানস্তান আইসিস/আইসিল আর রাশিয়ান উৎপাত যুদ্ধটুদ্ধের চেয়ে যে গুরুত্বপূর্ন এই মড়ক ঠেকানো সেটা মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা সহ আরো বিশ্ব নেতারা বুঝতে পেরেছে আর সেজন্যই মহামারী ঠেকানোর ব্যপারে নেওয়া হচ্ছে নানা সতর্কতামূলক ব্যবস্থা।

ইবোলা অন্যদের মধ্যে সংক্রমণ হয় মূলত: আক্রান্ত ব্যক্তির শরীর থেকে বেরুনো যে কোন তরলের মাধ্যমে। মানে হ্যান্ডশেক, কোলাকুলি, গালে গাল ঘষা, চুমু খাওয়া, বা সাধারণ ভাবে স্পর্শ করলেই অন্যজন সংক্রামিত হয়ে যেতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির জামাকাপড়, ছোঁয়া বা ব্যবহার্য জিনিসপত্র যে কোন কিছু থেকেই ছড়াতে পারে এই ভয়ঙ্কর ইবোলা। এবং এভাবে এক থেকে অন্যে, খুব দ্রুত, খুব সহজে।

লাইবেরিয়া, গিনি বা সিয়েরা লিওনের মত দেশেই যে ইবোলা অসহায় মানুষ মেরে চলেছে তা নয়, এটি ছড়াচ্ছে। টেক্সাসের ডালাস আর ম্যাসাচুসেসের বোস্টন শহরের ঘটনা এর প্রমান। এটি ধরা পড়ছে কোটিকোটি ডলার খরচ করে ভ্রমনকারী আর হাসপাতালগুলোতে খুব কড়া নজর রাখবার কারনে। শুধু নজর রাখাই নয়, ওই সব দেশ থেকে যারা আমেরিকার বড় এয়ারপোর্টগুলো অতিক্রম করছে তাদের আলাদা করে পরীক্ষা করা হচ্ছে, পরবর্তী নজর রাখবারও ব্যবস্থা হচ্ছে। অন্তত তিন সপ্তাহ তো বটেই, কারণ ইবোলা সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিতে তিন সপ্তাহও লেগে যেতে পারে। এর অন্য মানে হোল, ভ্রমনকারীদের ঘাড়ে চেপে মরণ ইবোলা মহাসাগরও পেরুতে পারে। বিশ্বের অন্য যে কোন দেশে পৌঁছে যেতে পারে এই মৃত্যদূত খুব সহজে; অথবা ইতিমধ্যেই গেছে পৌঁছে। সুতরাং যারা অন্তত গত তিন সপ্তাহের মধ্যে বিদেশ ভ্রমন করেছেন, তারা সাবধান।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ইবোলা ভাইরাস এবং আক্রান্ত হলে কি করা যেতে পারে তা নিয়ে তথ্য দিয়েছে এই পাতায়।

বাংলাদেশের বিপুল সংখ্যক কারা অন্তত গত তিন সপ্তাহের মধ্যে বিদেশ ভ্রমন করেছেন এবং আফ্রিকান দেশের মানুষদের সাথে মিশেছেন বা কাছে পিঠেই ছিলেন? হ্যা, ঠিক ধরেছেন; হাজী’রা। অতএব হাজী হইতে সাবধান অথবা হাজীগণ; সাবধান।