মডারেটরস নোটঃ নিচের চিঠিটা পাঠিয়েছে এইচএসসি তে পড়ুয়া কর্মোদ্যোগী এক কিশোর। বিধান চন্দ্র দাশ। ধারনা করে নিচ্ছি মুক্তমনার পাঠক সে। স্কুলের ছোটভাইদের জন্য যে বিশাল কর্মযজ্ঞে বিধান ও তার বন্ধুরা নেমেছে সেটা একই সাথে মহৎ এবং কঠিন। ইতিহাস বলে সমস্ত মহৎ কাজই এমন। আমরা জানি মুক্তমনার অগুনতি পাঠক রয়েছে যারা বিধানের এই কর্মযজ্ঞে কিছুটা করে হলেও শরীক হতে পারেন। আমরা তাদের প্রতি আহবান জানাচ্ছি বিধানের এই মহতি উদ্যোগে অল্প করে হলেও হাত বাড়িয়ে দিতে। দিন শেষে মানুষতো সেই মানুষের জন্যেই।

:line:

পৃথিবীটা অনেক সুন্দর। আবার অনেক কঠিনও বটে। অন্তত গত কয়েকদিনে আমরা খুব ভালোভাবেই বুঝেছি। আমরা বলতে, আমি আর আমার স্কুলের বন্ধু আর ছোট ভাই-বোনেরা।

আমরা উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। অসম্ভব সুন্দর একটা স্কুল আমাদের উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়। রাজধানীর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের অন্তর্গত ফুলার রোডে আমাদের এই প্রাণের স্কুলের অবস্থান। স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা আর আমরা সব শিক্ষার্থী মিলিয়ে আমরা একটা পরিবারের মতো। যেখানে হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ আমরা সব একসাথে ভাগাভাগি করে নেই। কোন সমস্যা হলে আমরা এক সাথে মোকাবেলা করি। কিন্তু অদ্ভুত সুন্দর এই পরিবারটির আজ কারো মন ভাল নেই। আর থাকবোই বা কিভাবে, আমাদের ছোট্ট দুটি ভাই যে মৃত্যুর সাথে লড়ছে!

আশরাফুল আরাফ সামী, স্কুলের চতুর্থ শ্রেণীর হাসনাহেনা শাখার একজন ছাত্র। প্রাইমারীর গন্ডি শেষ করার আগেই লড়ছে মরণব্যাধি উইলসন’স ডিজিসের সাথে। নামটাও বড্ড কঠিন! তাইনা?

প্রথমে যখন সামীর রোগের শুনেছিলাম তখন তো বুঝতেই পারিনি এটা কতো কঠিন
একটা অসুখ। তবে নাম শুনেই বুঝতে পারছিলাম খুব খারাপ কিছুই হয়েছে আমাদের সামীর। আর নামটাও কি ভয়ংকর, তাইনা?

পরে আন্টির কাছে মস্ত বড় মেডিকেল রিপোর্টটা দেখে বুঝলাম আমার ধারনাটাই সত্যি। শুনেছি এই রোগ লিভার নষ্ট করে দেয় আর ধ্বংস করে শরীরের রক্তকণিকা। বর্তমানে ভারতের হরিয়ানাতে একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছে সামী। ওর চিকিৎসার জন্য যে টাকা প্রয়োজন তা কল্পনাতীত। শুনেছি কমপক্ষে ৪০ লাখ টাকা এখনো লাগবে।
সামীর থেকেও ছোট আমাদের নাশাত। সামান আমিন নাশাত, স্কুলের তৃতীয় শ্রেণীর পদ্ম শাখার একজন ছাত্র ও। ছোট্ট এই মানুষটি লড়ছে ক্যান্সারের সাথে। ক্যান্সার, নাম শুনলেই খুব ভয় লাগে তাইনা? শুনেছি ওর খুব দ্রুত অপরেশনের প্রয়োজন। যার জন্য লাগবে ৫০ লক্ষ টাকা।

আমি শুধু ভাবছি, শত্রুর সাথে লড়তে গেলে তার সম্পর্কে ভালভাবে জানতে হয়। শত্রুর শক্তিমত্তা, দুর্বলতা সম্পর্কে ধারণা থাকতে হয়। আমাদের সামী আর নাশাত এত্তটুকুন মানুষ, ওরা তো ওদের শত্রুদের চেনেই না। ওরা লড়বে কিভাবে?

ওরা না জানুক, কিন্তু আমরা তো কিছুটা জানি, বড়রা তো জানে। তাই আমরা ঠিক করেছি যে সবাই মিলে লড়বো। একসাথে, হাতে হাত রেখে লড়বো।
এর আগেও আমাদের উদয়ন পরিবারের উপর আঘাত এসেছে। আমরা মোকাবেলা করেছি এক সাথে। আবরার রাকিন, গত বছর অষ্টম শ্রেণিতে পড়তো ও। দুষ্টু ছেলেটা হঠাৎ কেমন শান্ত হয়ে গেলো। পরে জানতে পারলাম ওর ব্লাড ক্যান্সার হয়েছে। যার জন্য অনেক অনেক টাকা প্রয়োজন। স্কুল থেকে টাকা সংগ্রহ করার পর দেখলাম যা হয়েছে তা রাকিনের চিকিৎসার জন্য কিছুই নয়। তাই বলে কি আমরা বসে থাকবো? কখনোই না। বন্ধুরা মিলে একদিন ভাবছি কি করা যায়। ভাবলাম একটা ফিল্ম শো আয়োজন করলে কেমন হয়? যেই ভাবা সেই কাজ। প্রিন্সিপাল ম্যাডামের অনুমতি নিয়ে আয়োজন করলাম একটি ফিল্ম শো। যার নাম ছিল ‘ফিল্ম শো ফর সেভিং এ লাইফ’।

শো’তে আমরা দেখিয়েছিলাম অ্যানিমেশন মুভি ‘রিও’ আর পরিচালক মোর্শেদুল ইসলাম আঙ্কেলের ‘আমার বন্ধু রাশেদ’। ৩ জুন ২০১৩ তারিখে সেই শো শুরুর আগে আমাদের সে কি চিন্তা! আমাদের প্রদর্শনীতে সবাই আসবে তো!
কিন্তু স্কুল ছুটির পর কাউন্টার খুলতেই আমাদের চোখ কপালে ওঠার যোগাড়! এত্ত লম্বা লাইন! মিনিট দশেক যেতেই আবিস্কার করলাম হাতে একটা টিকিটও নেই! চিৎকার করছিলাম, টিকিট শেষ! টিকিট শেষ!

বলা বাহুল্য, ফিল্ম শো থেকে আমরা এক লাখের মতো টাকা পাই। তুলে দেই রাকিনের আব্বু-আম্মুর হাতে। আমাদের রাকিন এখন সুস্থ। সবাই একসাথে ব্লাড ক্যান্সার নামক ওই কিটটাকে এমন ঘুষি দিয়েছি যে ও হাফ ছেড়ে পালিয়েছে! শুধু তাই নয়, গত জেএসসি

পরীক্ষায় ও গোল্ডেন এ প্লাস পেয়ে পাশ করেছে।
রাকিনকে ফিরিয়ে আনতে পারলে সামী, নাশাতকে কেন ফেরাতে পারবোনা আমরা? অবশ্যই পারবো। অন্তত আমি বিশ্বাস করি, আমরা সবাই মিলে যদি একসাথে হাতে হাত রেখে লড়তে পারি তবে এই ভয়ংকর রোগ দুটিকে আমরা এক ফুঁৎকারেই উড়িয়ে দিতে পারবো। হতে পারে এটা অনেক কঠিন, অনেক বেশীই কঠিন। কিন্তু ভয় পাইনা।
ইতিমধ্যে আমরা আমাদের কাজ শুরু করে দিয়েছে। স্কুলের ভিতরে বাহিরে কয়েকটা গ্রুপ টাকা তুলছে। আমাদের স্কুলের অনেক ছোট ভাই-বোন কাজ করছে এর জন্য। অক্লান্ত পরিশ্রম করছে ওরা। সেদিন দেখলাম একজনের পকেট ভর্তি অনুদানের খুচরা টাকা। কিন্তু প্রচণ্ড গরমে একটা কোল্ড ড্রিংকস কিনে খাচ্ছেনা, একটা আইসক্রিম কিনে খাচ্ছেনা। যদি টাকা কমে যায়! সামী, নাশাতকে ফেরাতে হবে তো! প্রতিদিন আমাদের লড়াইয়ের এমন অসংখ্য স্মৃতি যোগ হচ্ছে। যে যার স্থান থেকে কাজ করছে। আমাদের উদয়নের প্রাক্তন ভাইয়া-আপুরাও এগিয়ে এসেছে।

আর আমরা আবারও একটি ‘ফিল্ম শো’ আয়োজন করতে যাচ্ছি। এবারের ইভেন্টটির নাম ‘ফিল্ম শো ফর সেভিং লাইফ’। আসছে ২৩ সেপ্টেম্বর আমাদের স্কুল প্রাঙ্গণেই আয়োজিত হতে যাচ্ছে ফিল্ম শো’টি। এবার তো অনেক অনেক টাকা প্রয়োজন। তাই এবার দুটি নয় তিনটি ছবি দেখাবো আমরা। ইতিমধ্যে চূড়ান্ত হয়েছে বেলা ১১:৩০টায় দেখানো হবে অ্যানিমেশন মুভি ‘আপ’, এরপর দুপুর ২টায় দেখানো হবে ব্যাটম্যান: দ্যা ডার্ক নাইট এবং সবশেষে বিকাল ৪:১৫ তে দেখানো হবে বাংলা ছবি ‘চলো পাল্টাই’। আর এই প্রদর্শনীতে, আমাদের লাড়াইয়ে শরিক হয়েছে রেডিও আমার। প্রদর্শনীতে আমাদের মাঝে উপস্থিত হয়ে আমাদের সাহস যোগাবেন আরজে টুটুল ভাইয়া। এই ফিল্ম শো’তে স্কুলের শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বহিরাগত দর্শনার্থীরাও উপস্থিত থেকে সাহায্য করতে পারেন আমাদেরকে। বহরাগতদের জন্য প্রতিটি ছবি দেড়’শ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।
ছবিগুলো চূড়ান্ত করতেই অনেক ঘাম ঝরাতে হয়েছে আমাদের। কোন ছবি প্রদর্শন করলে দর্শক হবে এ ব্যাপারটাও মাথায় রাখতে হয়েছে। পরে চূড়ান্ত করার পর দেখছি ছবিগুলো থেকে একটা বার্তা পাওয়া যাচ্ছে। অ্যানিমেশন ছবি ‘আপ’ এ রয়েছে ভালবাসার কথা, ব্যাটম্যান: দা ডার্ক নাইট’ এ দেখানো হয়েছে সত্যের জয় আর ‘চলো পাল্টাই’ এ রয়েছে জীবন যুদ্ধের কথা। আর এসব তো আমাদেরই কথা, তাইনা?

‘চলো পাল্টাই’ ছবিতে শিল্পী অনুপম রায়ের খুব সুন্দর একটি গান আছে। গানের প্রত্যেকটা লাইন যেন আমাদের কথাই বলছে।
‘বাড়িয়ে দাও তোমার হাত, আমি আবার তোমার আঙ্গুল ধরতে চাই।’

এছাড়াও ওদেরকে সাহায্য করতে চাইলে:
সামান আমিন নাশাত
পিতাঃ মোঃ আমিনুল ইসলাম তালুকদার
একাউন্ট নাম্বার: ৩৪০৬৪১৭৮
সোনালি ব্যাংক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ও
আশরাফুল আরাফ সামি
পিতাঃ মোঃ আবদুর সবুর
একাউন্ট নাম্বার: ০১৩১২১০০১৬২৩৫১
এক্সিম ব্যাংক, রাজউক এভিনিউ ব্রাঞ্চ, ঢাকা।
এছাড়া বিকাশ করুন ০১৬৮১০২১২৫৫ নম্বরে।