১) বিজ্ঞাপণের নারী মডেল কিংবা সিনেমার নায়িকা কি পণ্য?
আসেন আগে দেখি পণ্য কি—পণ্য একটা বস্তু মাত্র, যার স্বাধীন ইচ্ছা-অনিচ্ছা থাকার কোন প্রশ্নই ওঠে না, কেউ তা উৎপাদন করে এবং বাজারে বিক্রি করে, অন্যারা তা কিনে ব্যবহার করে। বিজ্ঞাপণের নারী মডেল কিংবা সিনেমার নায়িকা—তা তিনি যত খোলামেলাই হোন না কেন—নিজের ইচ্ছায় তা করেন। বোরকা পরবেন না বিকিনি পরবেন, সেটা যখন কারো নিজের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করে, তখন তাকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপনের কোন সুযোগ নেই। গায়ের থেকে অর্ধেক কাপড় খুলে ফেলে দিলে কিংবা কোন পুরুষের সাথে স্বেচ্ছায় রাত্রি যাপন করলে কোন মানুষ পণ্য হয় না? শাহরুখ খান এইট প্যাক প্রদর্শন করলে, বা ম্যাথিয়াস লুরিডসেন এঞ্জেললাইক ফেইস করে ক্যাটওয়াকে হেঁটে গেলে কিংবা ডলচে এনড গ্যাব্বানার আন্ডারওয়্যার মডেলদের দেখে কি আপনি ‘পুরুষজাতি পণ্য হয়ে গেল’ বলে হায়হায় করে ওঠেন? তাহলে কেন দীপিকা পাডুকোন কিংবা আমার দেশের আড়ং মডেলকে পণ্য বলে চালাতে চান? বরং যে নারী নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে টানবাজারে ভাড়া খাটছেন, নাইজেরিয়ার যে স্কুল ছাত্রীকে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে তুলে নিয়ে গিয়ে বোকো হারাম লিডারের চার নম্বর বিবি হতে বাধ্য করা হয়েছে, এমনকি আপনার বাসায় যে শিশু মেয়েটি রাত-দিন মাস গেলে কয়েক শ’ টাকার জন্য পরিশ্রম করে—-পণ্যের সংগায় তাদের ফেলা যায়। নারীর পণ্যায়নের বিরুদ্ধে কথা বলতে হলে এসব অনাচারের বিরুদ্ধে বরঞ্চ কথা বলুন, মডেল বা সিনেমার নায়িকাদের নিয়ে নয়।
২) মিডিয়ায় নারীকে পণ্য হিসাবে উপস্থাপন নিয়ে যারা বেশি উচ্চকিত তারা নিজেরাও কি নারীকে পণ্যের চেয়ে বেশি কিছু ভাবছেন?
অনেককেই দেখি সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘নারী পণ্য হয়ে গেল’ বলে মরা কান্না জুড়ে দিতে। কেন ভাই আপনার মনে হয় নারী দেহের অংশবিশেষ বা পুরোটা আপনার চোখের সামনে উন্মোচিত হলেই সে একটা ভোগ্য পণ্য বিশেষ? তার প্রদর্শণ আসলে নারীর পণ্য হয়ে ওঠার বিরোধিতার মধ্যেই নারীকে পণ্য ভাবার, পণ্য হিসেবে কল্পনা করার এবং কল্পনায় সেই পণ্য ব্যবহারের একটা মানসিকতা লুকিয়ে থাকে। যারা এই রকম হায়হায় রব করে হরদম কান্নাকাটি করে থাকেন, তারা কিন্তু শ্রমিক নারীর কোমরে শাড়ির আঁচল গুঁজে হাঁটু পর্যন্ত কাপড় তুলে মাথায় ইট বওয়ার মধ্যে বা এখনো গ্রামে অনেক মা-চাচী-দাদীদের খোলা পুকুরে গোসল করার মধ্যে নারীর পণ্যায়ন দেখেন না। ক্লাসের সুন্দরী সহপাঠি, সবথেকে স্মার্ট কলিগ, মিডিয়ার সেলিব্রিটি নায়িকা-গায়িকা-মডেলদের নিয়ে তাদের মাথাব্যথা, অর্থাৎ যে নারী তার আরাধ্য কিন্তু হাতের নাগালের বাইরে। তাকে তার স্বল্প বসনের কারণেই হোক বা সো-কল্ড চারিত্রিক ত্রুটির কারণে এই ‘পণ্যে পরিণত হচ্ছেন’ বলার মধ্য দিয়ে পুরুষটির আসলে একরকম আনন্দ লাভ হয়। সে পণ্য, কিন্তু সেই পণ্য কার ভোগ্য? পরুষ জাতির, মানে সকল পুরুষের। এই সকল পুরুষের মধ্যে আমাদের কান্নাকাটি করা ভাইটিও আছেন। অর্থাৎ হাতের নাগালের বাইরের আরাধ্য নারীটি পুরুষজাতির অংশ হিসেবে তার নিজেরও ভোগ্য—এই রকম কল্পনা করে ঈশপের সেই শিয়ালের মত একরকম সুখ পাওয়া আর কি।
৩) আমরা যা দেখতে চাইনা মিডিয়া কি জোর করে আমাদের কি তা দেখাতে পারে?
আমার ব্যক্তিগত একটা অভিজ্ঞতা দিয়েই শুরু করি। বিবিসির শার্লক সিরিজের সিজন ওয়ান এবং টু যখন অন এয়ার হলো হচ্ছিল তখন শার্লক আমার দেখার আগ্রহ হয়নি—সিজন থ্রি দেখার পরে আমি শার্লকের প্রেমে পড়ে যাই, এবং পরে সিজন ওয়ান এবং টু দেখি। এর আগে বেনেডিক্ট কাম্বারব্যাচকেও আমি কখনো খেয়াল করিনি। আশ্চর্য্য বিষয় হলো শার্লক মিনি সিরিজ শেষ করার পনের দিনের মধ্যে আমি বেনেডিক্টের আরো তিনটা ছবি দেখে ফেলি—স্টারট্রেক ইনটু ডার্কনেস, টিংকার টেইলর সোলজার স্পাই, ওয়ারহর্স, এবং তা টেলিভিশনে। ইউটিউব খুলতেই একদিন দেখি এলান ট্যুরিং-এর ছবিটার ট্রেলার। মোটামুটি যেদিকে তাকাই সেদিকে কাম্বারব্যাচ টাইপ অবস্থা। পাইরেটস বে ইউজ করি মাঝেমাঝে (আনেথিকাল কাজ, কোন সন্দেহ নেই)—পাইরেটসের থেকে কোন কিছু ডাউনলোড করতে হলে আসেপাশে কতগুলো পর্ণ সাইটের বিজ্ঞাপণ দেখতে হয়। আমি কোন দিন খেয়াল করে দেখি না—যেমনটা খেয়াল করি না অন্য যে কোন বিজ্ঞাপণ তা সে গাড়ির হোক বা শাড়ির হোক। এইসব উদাহারণ দিলাম এই কারণে যে আমরা যা দেখি, যা দেখতে চাই—আমাদের নজরে তা-ই বেশি বেশি পড়ে, অন্যগুলো এড়িয়ে যায়।
আর মিডিয়া তার বিজনেস ও কোম্পানীগুলো তাদের মার্কেটিং এর স্বার্থে আমাদের আগ্রহ, প্রবনতা ইত্যাদি ক্লোজলি মনিটর করে। হ্যাঁ, সাপ্লাই দিয়ে মার্কেট ডিমান্ড ক্রিয়েট করার কাজ মিডিয়া করে থাকে, কিন্তু সেটা অনেক শ্রমসাধ্য, ব্যয়বহুল এবং রিস্কি বিনিয়োগ। তার থেকে অনেক সহজ হলো যে জিনিসের বাজারে চাহিদা আছে তাকে ব্যবহার করে পণ্য বিক্রি করা। দুনিয়া জুড়ে মার্কেটিং রিসার্চ ফার্মগুলোর কাজই সেটা। কি ভয়ংকরভাবে ইন্টারনেটে আমাদের প্রতিটা ক্লিক মনিটরড হয় তার একতা উদাহারণ দিই। আমি গুগল খুললেই দেখি এক বিজাতীয় ভাষায় কি একটা বিজ্ঞাপণ গুগল আমাকে সবসময় দেখায়। লক্ষবার বিজ্ঞাপণটা দেখে দেখে একদিন কৌতুহল বশত বিজ্ঞাপণের লাইনটা কপি করে গুগল ট্রানস্লেটে দিলাম—প্রথমে ভাষা ডিটেক্ট হলো জার্মান—এরপর দেখি গুগল আমাকে আসলে জিজ্ঞেস করছে আমি জার্মানীতে কাজ খুঁজছি কিনা। আসলে জার্মান ফুটবল দলের খবর পাবার জন্য আমি যে প্রায়ই জার্মান ওয়েবসাইটে যাই, গুগল মামাকে সেটাই বিভ্রান্ত করেছে। ফেসবুক বা ট্যুইটারেও আমাকে ডান এবং বাম পাশে যে সব পেইজ লাইক করার জন্য সাজেশন দেখানো হয়, সেগুলো কোন না কোন বিখ্যাত ফুটবলারের। একদিন কোন কারণে আনা ইভানোভিচের পেইজটা লাইক দেবার পর থেকে টেনিস খেলোয়াড়দের পেইজও সাজেশনে আসছে।
ইন্টারনেটই শুধু নয়, আমরা টিভি খুলে কোন চ্যানেল দেখি, কোন প্রোগ্রাম দেখি সেটাও টিআরপি দেখে বের করে ফেলে, ফলে বেশি দেখা প্রোগ্রাম প্রাইম টাইমে চলে আসে, সেই প্রোগ্রামের সময় বিজ্ঞাপণের খরচ বেশি। টিভি না দেখে সিনেমা হলে যাবেন, পত্রিকা পড়বেন, বই পড়বেন?—হলের সিট বিক্রি থেকে, বইয়ের কাটতি থেকে তারা সেটাও বের করে ফেলবে আপনি কি পড়েন, কি দেখেন। সেই অনুযায়ী ঠিক হবে বিজ্ঞাপণের প্রকৃতি, তার ভাষা। কাজেই মিডিয়া আমাদের কি দেখাচ্ছে, তার দায় কিন্তু শুধু মিডিয়ার না, আমাদেরও যারা দেখি। সৌদি আরবে বিকিনির বিজ্ঞাপণ কিংবা ন্যুড বীচে বুরকার বিজ্ঞাপণ দেখিয়ে ডিমান্ড ক্রিয়েট করবে—এইরকম গাধা বিজিনেসম্যানদের এবং তাদের মার্কেটিং ডিপার্টমেন্টকে মনে করার কোন কারণ নেই। আমরা যৌনতা দেখতে চাই বলেই তারা আমাদের তাই দেখায়—যেদিন আমরা বুরকাওয়ালী দেখতে চাইব, সেদিন লাক্স সাবান মেখে বিজ্ঞাপণে বুরকাওয়ালীই হাজির হবেন।
বাংলাদেশে কিন্তু পাকিস্তানী বোরকার বিজ্ঞাপণ দেখায়, মঘা-ইউনানী চিকিৎসালয়ের বিজ্ঞাপণ দেখায়, পীর-দরবেশ, শেফা-দাওয়াখানা-সুলেমানী পাথর ইত্যাদির বিজ্ঞাপণ দেখায়—-আমাদের চোখে সেগুলো পড়ে, ঠিক মনে ধরে না বলে সেগুলো আমাদের দৃষ্টি এড়িয়ে যায়, আলোচনার বিষয়বস্তু হয়ে ওঠে না। শুধুমাত্র বিজ্ঞাপণে স্বল্পবসনা সুন্দরী নারী দেখলেই আমাদের সবকিছু নড়ে চড়ে উঠে মাথার উপর ভেঙে পড়তে চায়—কারণ ঐ রকম নারীর আবেদন আমাদের কাছে আছে, মনে মনে আমরা সবাই তাকে কুঁজিয়া বেড়াই। আড়ং-এর রিসেন্ট যে ছবিগুলো নিয়ে এত বিতর্ক হলো বা এখনো হচ্ছে (ছবিগুলোর এসথেটিক ভ্যালু জিরো এতে দ্বিমত নেই আমার, কিন্তু তন্যতন্য করে খুঁজেও যৌনতা পাইনি সেখানে), সেগুলোতে কিন্তু নারীর পাশাপাশি পুরুষও ছিল, আমরা পুরুষকে পণ্য বানানোর বিপক্ষে একটা কথাও কেউ কোথাও বললাম না, লিখলাম না। পুরুষ মডেলগুলো কি অদ্ভুতভাবে আমাদের দৃষ্টিতে উধাও হয়ে থাকল ভেবে অবাক হতে হয়……
৪) মিডিয়া কি আমাদের মনে সৌন্দর্য্যবোধের নতুন ধারণা তৈরি করছে?
আধুনিক মার্কেটিং মিডিয়া আসার আগে কি আমাদের মনে নারীর (এবং পুরুষেরও) সৌন্দর্য্যবোধের ধারণা ছিল না? ফেয়ার এন্ড লাভলীর বিজ্ঞাপণের আগে কি আমাদের দেশীয় ছেলেরা সব হুড়মুড় করে কালো মেয়ে বিয়ে করতে ঝাঁপিয়ে পড়তো? নিশ্চয়ই না। কালো মেয়ে সুন্দর না এই মতবাদ আমাদের মনের মধ্যে ছিল, আছে—ফেয়ার এন্ড লাভলী আমাদের এই চয়সের উপর ভর করে বিজনেস করছে শুধু। হ্যাঁ, এটা দায়িত্বশীল আচরণ নয় নিশ্চয়ই। কিন্তু যেখানে সমাজ দায়িত্বশীল নয়, ব্যক্তিজীবনে আমরা নিজেরাই দায়িত্বশীল নই, সেখানে ফেয়ার এন্ড লাভলীর কাছে থেকে দায়িতেশীলতা আশা করা একটু অধিক প্রত্যাশা নয় কি?
একজন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে মন্তব্য করেছেন মিডিয়ায় সুন্দর ক্ষীণকায় নারী এবং পুরুষ দেহের প্রদর্শণ মানুষের মনে তার স্বাভাবিক গড়ন স্মবন্ধে হীনম্মন্যতা তৈরি করে। ঠিকাছে, মেনে নিলাম যে বিজ্ঞাপণে সুন্দর নারী-পুরুষ দেহের ব্যবহার স্বাভাবিক গড়ন সম্বন্ধে নারী-পুরুষের মনে হীনম্মন্যতাবোধের জন্ম দিতে পারে। তা, এই একই অপরাধে কি আমাদের কবি-লেখক-ভাস্কর-চিত্রকর-শিল্পী-সাহিত্যিকদের দায়ী করা যায় না? মধ্যযুগের কবিরা নারীদেহের সৌন্দর্য্যের যেসব “ক্ষীণকোটিপীণোন্নতপয়োধরা” টাইপের রগরগে বর্ণণা দিয়েছেন, রবীন্দ্রনাথ লাবণ্য-বিনোদিনী-মৃন্ময়ী-বিজয়াদের যে টাইপের আকর্ষণীয় চিত্র এঁকেছেন, জীবনানন্দ ভালোবেসেছেন পাখির নীড়ের মত চোখ আর শ্রাবস্তীর কারুকার্যময় মুখের আকর্ষণে, সুধীন চিকুরের পাকা ধানকে, কিংবা একালের হুমায়ূন আহমেদ রূপবতী-মায়াবতীর যে স্ট্যান্ডার্ড দাঁড় করিয়েছেন—সেগুলোও কি একটা অসুন্দর মেয়েকে হীনম্মন্যতায় ফেলে দেয়ার জন্য যথেষ্ট নয়? সব যুগে সব দেশে কবি-লেখক-ভাস্কর-চিত্রকর-শিল্পী-সাহিত্যিকরা নারীর সৌন্দর্য্যের স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করেছেন—-সেটা সাধারণ নারীকে বাদ দিয়েই। নারী-পুরুষের সৌন্দর্য্য কেমন হবে তার স্ট্যান্ডার্ড সমাজে ছিলই—মডেলিং মিডিয়া সেটাকে ভিজুয়ালাইজ করেছে মাত্র।
আধুনিক মিডিয়া বরং একটা ভালো কাজ করেছে—-নারীর পাশাপাশি উপেক্ষিত পুরুষকেও নিয়ে এসেছে। আধুনিক মিডিয়াকে আমি ধন্যবাদ দিই আরো একটা কারণে—মানুষের দৈহিক সৌন্দর্য্যও যে অত্যান্ত ডাইভারসিফায়েড একটা বিষয় সেটা আমাদের সামনে তুলে আনার জন্য, আমাদের শতাব্দীপ্রাচীন “ক্ষীণকোটিপীণোন্নতপয়োধরা” ধারণায় আঘাত করার জন্য। হ্যাঁ, সেটা তার বাণিজ্যিক প্রয়োজনে। তাতে বামপন্থীদের সমস্যা থাকতে পারে, আমার নেই। পুঁজিবাদী সমাজে পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে ব্যবসা করা বা ব্যবসায়ের বিজ্ঞাপণ করার মধ্যে আমি দোষের কিছু দেখি না। এই ব্যবসা করতে গিয়ে কর্পোরেট মিডিয়া এখন ভালো করেই জানে স্লিম-ব্লন্ড-ইউরোপীয়ান সুন্দরীদের শুধু বিজ্ঞাপণে ব্যবহার করলে এশিয়া-আফ্রিকায় বাজার ধরা যাবে না—-তার বাজার সম্প্রসারণের প্রয়োজনেই তাকে সাকা-কালো-বাদামী-হলুদ সব চামড়ার লম্বা-খাটো স্থুল-ক্ষীণকায়া সকল ধরণের নারীকে (এবং পুরুষকেও) টার্গেট করতে হয়, শুধুমাত্র আরিয়ান বিউটির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে তার চলে না। মিডিয়ার দৌলতে মিশেল ওবামা যখন জরীপে পৃথিবীর সুন্দরী মেয়েদের তালিকায় স্থান পান, তখন অনেক নারীই সৌন্দর্য্যের ভিন্ন মানে খুঁজে পেতে পারেন। কিংবা পাঁচফুট এক/দুই ইঞ্চির শাকিরার দিভা হয়ে ওঠার মধ্য দিয়ে খাটো মেয়েরা তাদের উচ্চতা নিয়ে হীনম্মন্যতাবোধ কাটিয়ে উঠতে পারেন। মাধুরী দীক্ষিত যার কাছে দিভা, তার চোখে দেখি ক্যারোলিন ওজনিয়াকিকেও ভালো লাগতে শুরু করেছে—তার মানে সিনেমার নায়িকার সাথে সাথে শক্ত-পোক্ত এথলেট মেয়েকেও পুরুষ সুন্দর হিসেবে স্বীকৃতি দিতে শুরু করেছে। সৌন্দর্য্যবোধের ধারণায় এই পরিবর্তনকে আমি পজিটিভলি দেখি।
আসলে আমি নিজেকে কতটুকু সংযত রাখতে পারি?যারা সংযত রাখে তাদের অধিকাংশই এতটুকুই সংযত রাখতে পারে যে “আমি তাকে উত্তক্ত করবো না,বাজে উক্তি করবো না এবং কোন শারীরিক হস্তক্ষেপ করবো না” । কিন্তু বিপরীত লিঙ্গের আবেদনময়ী কোনো রূপ আমাকে আকর্ষণ করা অস্বাভাবিক কিছু না,বরং করাই স্বাভাবিক।কোন একটা পন্যের বিজ্ঞাপন দেওয়া হয় অবশ্যই ব্যবসার জন্যই,আর যারা বিজ্ঞাপন বানাায় তাদেরও লক্ষ্য থাকে যেভাবে বিজ্ঞাপন বানালে দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে এবং তারাও আমাদের সহজাত আকর্ষণ প্রবণতাকেই কাজে লাগায়।এক্ষেত্রে মডেলদের তো কোন দোষ নেই,এটা তাদের পেশা এবং তারা কারো ক্ষতি করতেছে না, আর কারো ক্ষতি না করে কে কিভাবে জীবিকা নির্বাহ করবে এটা তার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার এবং এটা কোন অপরাধের আওতায় পরে না। আর যদি কিছু থেকে থাকেে তা হচ্ছে যারা বিজ্ঞাপন বানায় কিংবা বিপণনের ধারনাটা যাদের,তাদের চিন্তাভাবনার সীমাবদ্ধতা।আমরা আশা করবো,তারা বিপণনের এবং প্রচারণার জন্য দ্রষ্টা আকর্ষণের এরকম সস্তা পদ্ধতি অবলম্বন না করে আরো সৃজনশীল এবং মানসম্মত কাজ করবেন।
অবশেষে ফারহানা আপু,আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ,এতো চমৎকার একটি লেখার জন্য।
@তৌসিফ, ধন্যবাদ। বিপণনের সামগ্রিক ধারণা বদল করতে হলে বিক্রেতা/বিজ্ঞাপণ নির্মাতাদের আগে ভোক্তাদেরও তাদের মানসিকতার পরিবর্তন আনতে হবে।
চরম লিখছেন। আমি আপনার সাথে সম্পূর্ণ একমত।
@ মুক্তমনা(অতিথি)
আপনার সাথে সহমত।
সহমত,
সহমত,
সহমত।
নারী বা তার পোষাক নিয়ে দু ধরণের মতামত শোনা যায়, তার একটি হল “নারী খোল খোল” আরেকটি মত হচ্ছে “নারী গেল গেল”।দু দলেই ভাল এবং ভণ্ড উভয় ধরণের মানুষ রয়েছেন।”গেল গেল” মতাবলম্বীরা (পুরুষ) নানা খোঁড়া যুক্তি দিয়ে সমাজের সমস্ত অপকর্ম রোধের জন্য নারীকে বস্তাবন্দি করতে চান, নিজেদের চরিত্রকে সংশোধন করতে চান না, বরং নিজেদের সমস্ত ভন্ডামীর দায়ভার চাপাতে চান নারীদের ওপর। কথায় কথায় দেন ধর্মের দোহাই।উচ্চারণ করেণ ধর্মের বাণী “হে নারীগণ তোমরা তোমাদের দেহকে আবৃ্ত্ত করে রাখ…” কিন্তু কখনও বলেন না যে, এ কথার আগে স্রষ্টা বলে দিয়েছেন ” হে পুরুষগণ তোমরা তোমাদের দৃষ্টিকে নত রাখ…..”।
আর “খোল খোল ” দলভূক্ত ব্যক্তিরা নারী নগ্ন হলে একে ব্যক্তি স্বাধিনতা বলে সাফাই গাওয়ার চেষ্টা করেন।কিন্তু কোন রাষ্ট্র বা কোন সমাজেই যে ব্যক্তি তার স্বাধীন মত মতো পোষাক পরতে পারেন না সে কথা বলেন না।
এমন কোন সভ্য রাষ্ট্রের কথা আমার জানা নেই যেখানে পথে, ঘাটে বা অফিসে আদালতে কোন ব্যক্তি ইচ্ছা করলে নগ্ন হয়ে ঘুরতে পারে। অফিস, আদালতে কি ধরণের পোষাক কোন ব্যক্তি পরবে তা নিজ ইচ্ছার উপর নয় বরং বেশির ভাগটাই নিভর্র করে সে প্রতিষ্ঠানের রীতিনীতি অনুযায়ী। আর রাস্তাঘাটের সর্ব নিম্ন পোষাকের জন্যও রয়েছে রাষ্ট্রীয় আইন। এসব ক্ষেত্রে আমার জানা মতে পুরুষদের জন্য সবচেয়ে কম পোষাক হচ্ছে জাঙ্গিয়া এবং মেয়েদেজন্য পেন্টি এবং বিকিনি অর্থাৎ মেয়েদেরকে পুরুষদের চেয়ে পোষাক একটু বেশি পরতে হয়।
কিন্তু সেলিব্রেটিদের বিভিন্ন শো তে দেখা যাবে পুরুষরা পরে আছেন কোর্ট, প্যন্ট, টাই আর মেয়েরা সেখানে অর্ধ উলঙ্গ হয়ে ঠাণ্ডায় কষ্ট পাচ্ছেন।
এই দলের ব্যক্তিরা কোন নারীকে হিজাব পরতে বাধ্য করলে এমনকি নিজ ইচ্ছায় হিজাব পরলেও ব্যক্তি স্বাধীণতায় হস্তক্ষেপ মনে করেন, কিণ্তু কোন কোন রাষ্ট্রে যখন হিজাব পরা বন্ধ করতে আইন পাশ করে তখন তাকে অভিনন্দন জানান।
আসলে কি নারী মডেল বা সিনেমার নায়িকারা তার ইচ্ছা মত পোষাক পরেন? বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তা নয়। এদের পোষাক নির্ধারিত হয় ভোগ্যপণ্য উৎপাদকের চাহিদা এবং পরিচালকের ইচ্ছা মাফিক।
প্রকৃতপক্ষে নারীর নগ্নতাকে নিষ্কাম নান্দনীকতা বলে যতই চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করিনা কেন বিষয়টি এতটা সহজ সরল বা নিরীহ গোছের নয়।সারা বিশ্বে এখনও সমাজ, বিশেষ করে অর্থনীতিতে পুরুষরা আধিপত্য বিস্তার করে আছে্ আর এই বিশাল আধিপত্যবাদী ভোক্তা শ্রেণীকে আকৃষ্ট করার জন্যই নারীর নগ্নতা সাথে নান্দনিকতার অফিম।
কোন দিন যদি সমাজে পরিবর্তন আসে, অর্থনীতির চালিকা শক্তি হয় নারীরা, সেদিন হয়তো সেলিব্রেটি শোতে কোর্ট, টাই পরা নারী আর অর্ধ্ উলঙ্গ পুরুষ দেখা যাবে।
@মুক্তমনা(অতিথি),
এই জ্ঞান লাভ করে ধন্য হলাম।
পুরা কমেন্ট পড়ে মনে হলো আপনার আপত্তির জায়গা আসলে এটাই, তাই নয় কি? :))
তাই নাকি? তা পরিচালক মহাশয়েরা নায়িকাদের কোন জঙ্গল থকে ধরে আনেন বা কোন বাজার থেকে কিনে আনেন?
এখনো দেখেন নাই? সত্যি? নাকি উলঙ্গ পুরুষ আপনার চোখে ধরাই পড়ে না?
[img]http://theaerogram.com/wp-content/uploads/2014/03/americanexploitationMaks.jpg[/img]
নান্দনিকতার মোড়কে নারীকে পন্য হিসেবে উপস্থাপন করার মানসিকতা বোধহয় মধ্যযুগ বা তারো আগে থেকেই। গুঢ় অর্থে ভিঞ্চির মোনালিসাও কি তাই নয়? এখন শপিং মলে দেখতে পাই, ম্যানিকুইনরা সার সার যৌন আবেদনী মুখায়ব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আর বার্বি ডলেও এখন দেওয়া হচ্ছে স্তন। কয়েক বছর আগেও ‘ভার্জিন কোলা’ নামে একটি দেশি কোমল পানীয় আঁটসাট টি-শার্ট পরিহিত টিন এজ বালিকাকে বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করে নিন্দার ঝড় তুলেছিল। আর সম্প্রতি ‘আড়ং দুধ’ এবং ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ একই বিতর্ককে উস্কে দিয়েছে।
[img]http://s3.amazonaws.com/somewherein/assets/images/thumbs/asifratul_1345131618_1-KKB2010_1268281397_1-0001.jpg[/img]
ফারহানার নোটটি পড়তে পড়তে বাণিজ্যের এইসব চাতুরি মনে পড়লো। নোটটি দরকারি, চিন্তাশীল। ইংরেজী টার্মগুলো এড়িয়ে ভাবানুবাদ করে দিলে পঠন আরো মসৃন হতো। চলুক। (Y)
@বিপ্লব রহমান, @বিপ্লব রহমান, এই তাহলে সেই কুখ্যাত আড়ং দুধের বিজ্ঞাপণ? তা, সমস্যা কি এই বিজ্ঞাপণে? একটা মেয়ে ট্রাউজার-ফুলহাতা শার্ট পরে ফুটবল খেলছে—মেয়েটার দেহভঙ্গিতেও তো আমি আপত্তিকর কিছু পেলাম না। এতেই যদি যৌনতা অনুভূত হয় তাহলে আমার বলার কিছু নেই…
@ফারহানা আহমেদ,
আড়ং দুধের বিজ্ঞাপেনে সত্যিই কোনো সমস্যা দেখি না। তবে উল্লেখিত বিজ্ঞাপনগুলো যথেষ্টই বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। আর ব্রাক কর্তৃপক্ষ আড়ং দুধের বিজ্ঞপনের বিলবোর্ডগুলো দ্রুত সরিয়ে ফেলেতে বাধ্য হয়। এটি তথ্যমাত্র।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, মোল্লাদের যৌনানুভূতি কি ধর্মানুভূতির মতোই স্পর্শকাতর? 😕
অনেক কথিত প্রগতিশীল ব্যক্তি নারী মুক্তি মানে জরায়ুর স্বাধীনতাকেও বোঝে । বাস্তবতে নারী মুক্তি ঘটবে অর্থনৈতিক মুক্তির মধ্যদিয়ে । আপনি আপনার লেখায় যেসব শ্রমজীবি দিনমুজুর নারীদের উদাহরণ দিয়েছেন তারা সহ এ সমাজের সকল নারীকে পারাধীন ও দাস করে রেখেছে এই সমাজ ব্যবস্থ । আর সমাজ ব্যবস্থা টিকেই থাকে তার অর্থব্যবস্তার উপর । তাই শঙ্কটের কথা বলে নিজের ঞ্জানকে প্রচার করার পাশা পাশি একটু সমাধানের পথ খুজলে সমাজে পরিবর্তন আসবে ।কোনটা বামের কাজ আর কোনট ডানের কাজ সেটা আগে না খুজে মানুষ হিসাবে আমার কাজ কি সেটা আগে ভাবা উচিত্ ।
@শামীম আহমেদ,
স্বাধীনতার অর্থ একেকজনের কাছে একেক রকম। কোন আপনার ভাষায় ‘কথিত’ গতিশীল ব্যক্তি যদি জরায়ুর স্বাধীনতায় নারী স্বাধীনতা খুঁজে পায়, তাতে আমি তো কোন সমস্যা দেখি না। আপনার কোন এলার্জি?
শংকটের ব্যাপারে আলোচনা করা, সমস্যা চিহ্নিত করাই সমস্যা সমাধানের প্রথম ধাপ বলে রিসার্চ মেথডলজি ক্লাসে শিখেছি। তাতে আপনার কাছে আমার ক্ষুদ্র জ্ঞান জাহির হয়ে গেলে আমার কিছুই করার নেই, ভাই।
ডান-বাম নিয়ে আমার স্পেশাল কোন আগ্রহ বা বিরক্তি কোনটাই নেই—আমার লেখায় সেরকম কিছু প্রকাশ পেয়েছে নাকি?
আর, মানুষ হিসাবে আপনার কাজ কি হতে পারে সে সম্পর্কে আমার যে ধারণা তার একটা প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত লেখার মধ্যেই আছে—-Please oil your own machine.
@ ফারহানা আহমেদ ,
আপনার ‘এলোমেলো’ ভাবনা মোটেই এলোমেলো নয়। বরং বেশ সুবিন্যস্ত । এভাবে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে ভাবতে পারা কৃতিত্বর দাবী রাখে। আপনাকে ধন্যবাদ এই লেখাটার জন্য।
আমারও কিছু ‘এলোমেলো’ ভাবনা আছে সেটা জানাচ্ছি। ভুল হলে শুধরে দেবেন শিখতে পারবো।
‘ আমরা যেমন দেখতে চাই বিজ্ঞাপন দাতারা তেমনি দেখায়’ । ঠিক কথা। আবার আমরা কি দেখতে চাই সেটা আবার নির্মাণ করা হয়। সমাজ সেটা নির্মাণ করে দেয়। লক্ষ্য করুন এখন নারী দেহের সাথে সাথে পুরুষ দেহও ব্যাবহার হোচ্ছে। কারণ এখন ক্রয় করার সিদ্ধান্ত নারীও নিতে পারছে।
স্বইচ্ছায় সিদ্ধান্ত নিলেই সেটা পণ্য নয় এটা কি সঠিক? যে বিক্রয় হয় সেই পণ্য। কোন শ্রমিক যখন তার শ্রম বিক্রয় করে তখন সে পণ্য। সেই অর্থে আমরা সবাই পণ্য।তফাৎ হোল এই যে নারী শরীর / পুরুষ শরীর যখন পণ্য হয় তখন সেটি নিন্দনীয় কারণ তার ফলাফল খারাপ। সেই শরীর দেখে নারীকে/পুরুষকে পণ্য ভাবতে শেখে এবং অন্য পণ্যর মতো ভোগের বস্তু হিসাবে ভাবতে শুরু করে।
পরিশেষে বলি যদি আমরা সত্যি সত্যি নারী দেহ দেখতে চাই তা হলে তার থেকে মুখ ঘুরিয়ে ণা থেকে তাকে মুখোমুখি গ্রহণ করাটাই সততা নয় কি?
আন্দামানের জাড়োয়া নারীরা ঊর্ধ্বাঙ্গ অনাবৃত রাখে। তেমন সাম্যবাদ প্রয়োজন আছে কিনা ভাবতে হবে ।
@অনিন্দ্য পাল,
সমাজতো আমাদের নিয়েই, তাই না? একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে দাঁড়িয়ে নিজের চোখ/মনকে যদি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারি, সমাজকে তবে বদলাব কিভাবে?
আমি তো এতে কোন সমস্যা দেখি না……
কথাটা কি ঠিক হলো? শ্রমিক যখন তার শ্রম বিক্রি করে, তখনও সে পণ্য নয়—-শ্রমটা হলো পণ্য। আপনি বা আমি কেউই পণ্য নই, যদি না আমাদেরকে হাঁটে তুলে কেনা-বেঁচা করা হয়।
নারী শরীর / পুরুষ শরীর যখন পণ্য হয় তখন সেটি নিন্দনীয়, কেন? কে নিন্দা করে? তাকে নিন্দা করার অধিকারটাই বা কে দেয়?
ফলাফল খারাপ? কেন? কীভাবে?
শরীর দেখলেই নারীকে পুরুষ এবং পুরুষকে নারী পণ্য ভাবতে শেখে? শরীর না দেখলে শেখে না?
আপনার এই প্রশ্ন বুঝি নাই।
ভাবতে থাকুন……
ভাল লাগলো যৌক্তিক বিশ্লেষণসমূহ। নারীর অবস্থানকে উন্নত করতে এমন আর্ ও লেখা প্রয়োজন।
@গীতা দাস, ধন্যবাদ।
একেবারে বুলস আই… সমস্যা হলো সবাই কম-বেশি “ভদ্দরনোকের” মুখোশ পরে থাকে তো, তাই স্বীকার করতে চায়না। দারুণ পোস্ট… :guli:
@ঔপপত্তিক ঐকপত্য, ধন্যবাদ।
দারুন। আমার মনের কথাগুলিই যেন বলেছেন। সময় নিয়ে আলোচনা করার ইচ্ছে আছে। ভাল থাকুন। আর এমনি যুক্তিপূর্ণ লেখা আরও লিখুন। 🙂
@গুবরে ফড়িং, ধন্যবাদ।
ভাল বিষয় এবং যুক্তিপূর্ন ভাবনা……পরে কিছু বলব।
@আদিল মাহমুদ, শিরোণামেই বলেছি আমার ভাবনাগুলো অনেকটা এলোমেলো। সবার অংশগ্রহণ আশা করি আমার চিন্তাকে সমৃদ্ধ করবে। আপনার মন্তব্যের অপেক্ষায় রইলাম।
ভাল লিখেছেন। (Y)
“পুঁজিবাদীরা নারীকে পন্য বানিয়ে ফেলছে”- এই ম্যাৎকার দিয়ে অনেক মানুষকে বলতে শুনলাম নারীদের বোরখা-হিজাব ছাড়া বিজ্ঞাপন কিংবা মিডিয়াতে কাজ করা অনুচিত। এমনকি জাকির নায়েকের মত ভন্ড ব্যক্তিও ঐ একই ম্যাৎকার দিয়ে প্রমান করতে চায় যে, ইসলাম নারীকে বোরখা-হিজাবে বন্দী করে তাঁদেরকে পন্য়ে পরিনত হওয়া হতে বিরত রাখছে। পুঁজিবাদী চক্রান্তের ধুয়া তুলে দিনশেষে এরা সকলেই ইসলামিস্টদের মত নারীদের ব্যক্তি-স্বাধীনতার বিরুদ্ধেই অবস্থান নিচ্ছে। :X
@তারিক, ইসলামিস্টরা নারীকে প্যাকেটবন্দী করতে চায়, কারণ তাদের কাছে নারীদেহ মানেই বিরাট ভোগের বস্তু। আর অন্য শ্রেণীটি নারীর শরীরটিকেই অস্বীকার করতে চায়। শরীরের একটা অংশ দেখা গেলেই এদের কাছে নারীকে পণ্য বলে ভ্রম হয়। এই দুই দলই নারীর সমান শত্রু।
লেখাটি পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
@ফারহানা আহমেদ, ইসলামিস্টরা নারীকে প্যাকেটবন্দী করতে চায়, কথাটার সাথে আমি একমত না। যারা নারীকে প্যাকেটবন্দী করতে চায় তারা ইসলাম ধর্ম মানে না বা জানে না। ইসলাম নারীকে স্বাধীনতা দিয়েছে, দিয়েছে মর্যাদা। ইসলামের ইতিহাস আমরা জানি না তাই আমরা ইসলাম ধর্ম নিয়ে আজে বাজে কথা বলি। সবার কাছে অনুরোধ আগে ইসলামকে জানুন পরে মন্তব্য করুন। নারীরা নিজেদের মর্যাদা নিজেরাই কমিয়েছে। হিজাব পরিহিত একজন নারীকে কেউ বিরক্ত করে না, সম্মান করে। এর মাঝেও কিছু কিছু ব্যতীক্রম হতেই পারে। আর একজন আট-সাট, খোলা-মেলা পোষাক পড়া নারীকে সবাই যৌন কামনা নিয়ে দেখে। শরীর নিয়ে যারা উদাসীন তারাই যৌন হয়রানীর শিকার হয়। আমি ভালো নারীকে শ্রদ্ধা করি, আর নোংরা নারীকে ঘৃনা করি। যারা ধর্মের নামে নারীকে ঘরে আটকে রাখতে চায় তারা আসলে ভণ্ড মুসলিম। ফারহানা আপনার পোষ্টটা সময় উপযোগী তবে সব ইসলমিস্টকে ঢালাও ভাবে ভণ্ড বলা ঠিক হবে না।
@বাঘের বাচ্চা, ভাই নোংরামির কি আছে? কে কিভাবে চলবে, কি পোশাক পরবে – এটা প্রত্যেকের ব্যক্তিগত ব্যপার। এর মধ্যে নোংরামির কি আছে? আর নোংরা হল আপনার মন, আপনার এই নিচু মানসিকতা । আর ইসলাম সম্পর্কে আপনিই -বা কতটুকু জানেন? হ্যা, অন্যান্য ধর্মের চেয়ে ইসলাম নারী -কে একটু বেশি অধিকার দিয়েছে। তবে প্যাকেট বন্দি করতে চায় – এটাও ভুল কথা না। আর স্বাধীনতার কথা বললে, ইসলাম নারীর স্বধীনতা খর্ব করেছে। কারন, ইসলাম পূর্ববর্তী সময়ে আরবে নারীরা আরও বেশি স্বাধীন ছিল। যদিও তখন কন্যা সন্তানের বলি দেওয়া হত। ইসলাম এই বলির হাত থেকে হয়তো নারীকে বাঁচিয়েছে, কিন্তু নারীর সমস্ত স্বাধীনতা খর্ব করেছে। বলা যেতে পারে বা বললে ভুল হবে না যে, ইসলাম নারীকে প্যাকেট -বন্দি করতে চায়।
হাহাহা, চমৎকার বলেছেন। সহমত।
কথা জানিনে, তবে অনেক পুরুষের মনের গহীনে যৌন কামনার পাত্রী-ভেদে নারীকুল হয়ত তিন ভাগে বিভক্ত, প্রথমত: সম্মানিত, আদরণীয় নারী, যথা: মাতা, ভগিনী, স্ত্রী, কন্যা, আত্মীয়া প্রমুখ; দ্বিতীয়ত: উপেক্ষিত নারী, যেমন: পুরুষের নিজের কাছে অনাকর্ষণীয় এবং অনাত্মীয়া, কোনরূপ গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্কহীন নারী; শেষের দলটা হল পুরুষের কাছে আকর্ষণীয়, আবেদনময়ী অনাত্মীয়া নারী। এরা হতে পারে লাল, নীল বা সাদা সিনেমার নায়িকা, পত্রিকার প্রচ্ছদকণ্যা, গুপ্ত বাবু বা “ক্রীড়া-বালক” সিরিজের কেন্দ্রীয় চরিত্র, কিংবা রাস্তায় খোলামেলা পোষাকে হেঁটে যাওয়া কোন সুন্দরী। এই তৃতীয় দলটিই মূলত: শিকার হয় “মাল” বা “পণ্য “শব্দটির কটাক্ষ আর অবমাননার। এই শব্দটার মাধ্যমে একজন নারীকে ভোগ বিলাসের বস্তু হিসাবেই তুলে ধরা হয় বৈ কি? তবে নির্দিষ্ট তথ্যসূত্র ছাড়াই এটা বলা যায় যে বাঙ্গালি সমাজে না হোক অন্য অনেক সমাজেই এই বিষয়টা নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই সত্য। ব্যক্তিগতভাবে আমাকে যদি কেউ আমার শারীরিক “সৌন্দর্যের(!)” কারণে মাল বলে সম্বোধন করে তাতে আমার খুব একটা খারাপ লাগবে না। 🙂
@কিশোর, ‘মিডিয়া ইত্যাদি নারীকে পণ্য বানিয়ে দিল’ এই বলে হাহাকার শোনা যায় যাদের মুখে, এরাও নারীকে পণ্যের বাইরে অন্য কিছু ভাবতে পারেন না—দুঃখটা লাগে এখানেই। ধন্যবাদ আপনাকে পড়ার জন্য।
অনেককে বলতে শুনি, শেভিং ক্রিমের বিজ্ঞাপনে পুরুষের পাশে নারী কেন, গাড়ির বিজ্ঞাপনে গাড়ির পাশে কম পোষাকে নারী কেন, অমুক তমুক নায়িকা কম কাপড় পরে পণ্য সাজে কেন। কখনো কাউকে বলতে শুনি না, লিপস্টিকের বিজ্ঞাপনে নারীর পাশে পুরুষ কেন, অমুক নায়ক বা অমুক পুরুষ ঊর্ধাঙ্গে কোনো কাপড় পরেনি কেন, অথবা অমুক পুরুষ তো পণ্য হয়ে গেল।
ভালো লেগেছে আপনার লেখাটি।
@তামান্না ঝুমু, আমারও একই প্রশ্ন। ধন্যবাদ।
@ফারহানা আহমেদ, আপনার প্রশ্নের উত্তর আছে নিউ লেফট মুভমেন্ট ও তার সাথে সম্পর্কিত ঘটনাগুলোর ইতিহাসে।