পুরাকালে ভগবান শ্রীহরির অংশম্ভূত নর-নারায়ণ নাম দুই যুগল ঋষি ছিলেন। তাঁরা বহুতর কৃচ্ছ্রসাধন করে বহু বছর ধরে তপস্যা চালিয়ে যাওয়ায় স্বর্গের দেবতাদের মনেও ভয় দেখা দিল। দেবরাজ ইন্দ্র তো ভীষণ চিন্তিত হয়ে পড়েন, এবার কী তার দেবরাজের স্বর্গীয় সিংহাসনটাই চলে যাবে? এত সব ভেবে দেখে ইন্দ্র বহুভাবে এই যুগল-ঋষির তপস্যা ভঙ্গ করার চেষ্টা করলেন। কিন্তু কোনভাবেই তাদের ধ্যান ভগ্ন করা সম্ভব হচ্ছিল না। অতঃপর সিদ্ধান্ত নিলেন স্বর্গসুন্দরীদের অর্থাৎ অপ্সরাদের ধ্যান ভঙ্গ করার জন্য পাঠাবেন।

নর-নারায়ণ যুগল-ঋষির তপস্যার স্থানটি প্রকৃতিকগতভাবেই ছিল অতি মনোরম গন্ধমাদন পর্বত। সেখানে ভালবাসার দেবতা তিলোত্তমা-রম্ভার মতো কাম-সৈন্য নিয়ে উপস্থিত হলেন মুনি-যুগলের ধ্যান ভাঙাতে। অপ্সরা ও প্রকৃতির স্বভাব দেখে নর-নারায়ণের বুঝতে বাকি রইল না যে ইন্দ্র তাদের ধ্যান ভঙ্গ করার জন্য এদের পৃথিবীতে পাঠিয়েছে। কারণ অকালে বসন্তের ফুল ফুটল সেখানে, কোকিল-কুলের আলাপ শুরু হল বকুল গাছে। তবে অপ্সরাদের উপর ক্ষোভ না জন্মালেও ইন্দ্রের উপর একটু বেজারই হলেন নারায়ণ। আর মনে মনে ভাবলেন ইন্দ্র স্বর্গসুন্দরী পাঠিয়ে আমার ধ্যান ভঙ্গ করাতে চেয়েছিল। এই র্স্বগসুন্দরী থেকেও শতগুণ সুন্দরী অপ্সরা আমি তৈরি করতে পারি। এরা আর এমন কী! ঋষি নারায়ণ নিজের উরুতে চপেটাঘাত করলেন। অমনই তাঁর উরু থেকে সৃষ্টি হল এক সর্বাঙ্গসুন্দরী রমণীর। নারায়ণের উরু থেকে জন্মালেন বলেই তার নাম হল-উর্বশী। উর্বশীকে দেখে লজ্জায় স্বর্গের অপ্সরা ঋষির কাছে মাথা নত করলেন। নারায়ণ ঋষি বললেন- তোমাদের উপর আমার কোন ক্ষোভ নেই। আমি আমার এই উরুসম্ভবা উর্বশীকে দেবরাজ ইন্দ্রের সন্তোষের জন্য উপহার হিসেবে পাঠাচ্ছি। উর্বশীকে নিয়ে অপ্সরারা স্বর্গে পৌঁছালেন। নর-নারায়ণ ঋষির তপস্যার শক্তির ফল দেখে রাজা ইন্দ্র অবাক হলেন। উর্বশী হলেন স্বর্গ সুন্দরীদের প্রধান। কারণ উর্বশীর মতন আর কোন সুন্দরী স্বর্গে ছিলেন না। গুণে রূপে উর্বশী ছিলেন সবার উপরে। তবে উর্বশী স্বর্গে বাস করলেও মর্তের প্রতি এক প্রকার টান অনুভব করত। উর্বশীর চলনেই নাচন আর বলনই ছিল গান। উর্বশীর একটা ক্ষমতা ছিলন। তাহলো- তিনি আপন দূরত্ব সম্পূর্ণ বজায় রেখে পুরুষমানুষের মনের উপর তার রূপ-লাবণ্য এবং বৈদগ্ধ্যের ছায়া ফেলতে পারেন।

উর্বশী একবার গেলেন আদিত্য যজ্ঞের নেমন্তন্ন খেতে। সেখানে মিত্রা-বরুণ এসেছিলেন আদিত্য যজ্ঞের ক্রিয়াকলাপ দেখতে। কিন্তু ঝামেলা হল মিত্রা-বরুণ উর্বশীকে দেখে আর ঋক মন্ত্রের উদাত্ত-অনুদাত্ত ধ্বনি শুনতে পেলেন না। তাদের সমস্ত ইন্দ্রিয় চক্ষুতে কেন্দ্রীভূত হল এবং সে চক্ষুর আহার্য ছিল একটাই- একা উর্বশী। ক্রমেই মুগ্ধতা কামনায় রূপান্তরিত হল, মিত্রা-বরুণের তেজ স্খলিত হল-তয়োস্ত পতিতং বীর্যম্। উর্বশীর কোন দোষ ছিল না। তার একটাই দোষ তিনি তিন ভুবনের সেরা সুন্দরী। মিত্রা-বরুণ নিজের উন্মাদ কামনার কথা ভাবলেন না, শুধু শরীরে মধ্যে কেন এই অধঃপতন ঘটল, কেন জনসম্মুখে এমন লজ্জিত হলেন তার জন্য উর্বশীকে অভিশাপ দিলেন-স্বর্গে আর তোমার থাকা হবে না, সুন্দরী।

অন্যদিকে পুরূরবা রাজত্ব করতেন এখনকার ইলাহাবাদের কাছে। ‘প্রতিষ্ঠান’ নামে এক জায়গায়। পুরূরবাকে বলা হয় পাণ্ডব-কৌরব বংশের পূর্ব-পুরুষ। তবে পুরূরবা রাজার জন্মের কাহিনীটাও বেশ মজার। আর পুরূরবার জন্মকাহিনী বলতে গেলে তাঁর পিতা মাতার জন্ম কাহিনীও বলতে হয়। পুরূরবার জন্মদাতা ও মাতার নাম ছিল- বুধ ও ইলা। তাঁর পিতা মাতার জন্মের কাহিনীও বেশ ইন্টারেস্টিং।

একদা ভগবান ব্রহ্মা চন্দ্রকে সৃষ্টি করে অশেষ গ্রহ-নক্ষত্রের উপর আধিপত্য করার ক্ষমতা দান করলেন। আর এর কারণে চন্দ্র খুব অহংকারী হয়ে উঠলেন। একদিন তিনি দেবগুরু বৃহস্পতির স্ত্রী তারাকে হরণ করে নিজ ভবনে নিয়ে আসলেন। ভগবান ব্রহ্ম ও অন্যদের অনুরোধ সত্ত্বেও তিনি তারাকে ফেরত পাঠালেন না। এর কারণে বিশাল যুদ্ধই বেধে গেল। শেষে প্রৌঢ় দেবতাদের সহায়তায় তারাকে ফেলত পাঠানো হল বৃহস্পতির কাছে। কিন্তু দেখা গেল তারা তখন গর্ভবতী। বৃহস্পতি তারার এমন অবস্থান দেখে তারাকে গর্ভ-ত্যাগের কথা বললেন। তারা গর্ভ-ত্যাগ করার পর দেখা গেল বাচ্চাটি অসম্ভব সুন্দর। শিশুটির অমন সৌন্দর্য দেখে বৃহস্পতি ও চন্দ্র দুজনই পছন্দ করে ফেললেন। তখন প্রশ্ন উঠল আসলে বাচ্চাটি কার? সবার পীড়াপীড়িতে শেষ পর্যন্ত তারা বলতে বাধ্য হলেন বাচ্চাটি চন্দ্রের। ব্রহ্ম ছেলের নাম করণ করলেন বুধ। এই কাহিনী থেকে একটি বিষয় স্পষ্টত বোঝা যায়- ভারতী বর্ষে খ্রিস্টপূর্বাব্দ থেকেই মহাকাশ বা গ্রহ নক্ষত্র নিয়ে চর্চা হতো। হয়তো তাদের বর্ণনায় কল্পিত কাহিনী আশ্রয়ে গড়ে উঠত। তাদের প্রকাশের ভঙ্গি হয়তো বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ছিল না তবে অস্বীকার করার জো নেই যে তারা এসবের চর্চা করত না। এই তো গেল পুরূরবার পিতার জন্মগ্রহণের ইতিহাস। তাঁর মায়ের জন্মের ইতিহাস বেশ চমকপ্রদ। পুরূরবার মায়ের নাম ইলা। ইলা মনুর মেয়ে। তবে ইলা মৈত্রাবরুণের প্রভাবে ইলা মনুর পুত্র হয়ে উঠল। সহজ ভাষায় বলতে গেলে ইলা ছিলেন মেয়ে আবার পুরুষও হয়ে যেতে পারতেন। পুরুষ হলে তাকে সুদ্যুম্ন নামে ডাকা হতো। বর্তমানে অপারেশনের মাধ্যমে নাকি লিংঙ্গপরিবর্তন করা যায়। তবে সেই যুগে পুরাণের বর্ণনা অনুসারে অপারেশন ছাড়াই ইলার শরীরে লিঙ্গ পরিবর্তন হয়েছিল। ইলার নারী-রূপে মুগ্ধ হয়ে পড়েন বুধ। আর তাদের মিলনে জন্ম নেয় একটি পুত্র সন্তান যার নাম-পুরূরবা। পুরাণে বলে ইলা নারী হওয়ার ফলে রাজ্য পাননি পরে পুরুষ হওয়ার পর রাজ্য লাভ করেন। পুরূরবা বুধের ছেলে হওয়া স্বত্বেও ইলার ছেলে পরিচয়েই বেশি পরিচিত। এর প্রধান কারণটি তার মা। আর মায়ের কারণেই পুরূরবা বেশি বিখ্যাত হয়ে উঠেন।

পুরাণ চরিত্রের জন্ম ইতিহাসের দিকে গেলে আর প্রেমের কাহিনী বলা যাবে না। তাই আমরা এখন যাব উর্বশী ও পুরূরবার প্রেমের কাহিনীতে। রাজা পুরূরবা একদিন বেড়াতে বেরলেন তার আকাশ-রাহী রথে চড়ে। হঠাৎ দেখলেন- দানবেন্দ্র কেশী স্বর্গের সেরা সুন্দরী উর্বশী ও চিত্রলেখাকে হরণ করে নিয়ে যাচ্ছেন। তবে পুরূরবা চিত্রলেখাকে না চিনতে পারলেও উর্বশীকে চিনতেন। পুরূরবা কেশীকে বাধা দিলেন। কেশী ইন্দ্রকে হারিয়ে উর্বশীকে তুলে আনলেও পুরূরবারকে ভয় পান। কারণ পুরূরবার যেমন ছিলেন সুন্দর তেমনি ছিলেন তেজস্বী। পুরূরবার কেশীর রথ থেকে উর্বশীকে তুলে নিয়ে পৌঁছে দিলেন দেবরাজের প্রাসাদে। আর এর কারণে সকল দেবতার সাথে রাজা পুরূরবার বেশ সুসম্পর্ক হল। কারণ সকল দেবতা উর্বশীর সৌন্দর্য ও গুণের জন্য পাগল ছিল। দেবতাগণ পুরূরবাকে ইন্দ্রপুরীতে নাটক দেখার আমন্ত্রণ জানালেন। আর সেখানে অভিনয় করবে স্বয়ং উর্বশী। যথারীতি নাটক আরম্ভ হল। উর্বশী লক্ষ্মী চরিত্রে অভিনয় করছেন। উর্বশী নাচতে নাচতে শুধু পুরূরবার দিকে তাকান। আর পুরূরবার কথা ভাবেন। একসময় উর্বশী লক্ষ্মীর পার্টটাই ভুলে গেলেন। আর এই কারণে ভরত মুনি রেগে গিয়ে পুরূরবা ও উর্বশীকে অভিশাপ দিলেন যে- তোকে মর্তভূমিতে জন্মাতে হবে আর ওই পুরূরবা হবে একটা পিশাচ। এখানে মনে রাখা ভাল; পুরাণের ঋষিরা কারণে অকারণে এমনকি সামান্য ভুলের জন্য অভিশাপ দিতেন। কী আর করা উর্বশীকে মর্ত্যে যেতেই হবে। তবে উর্বশী পুরূরবাকেই আগেই নিজের প্রেমের যোগ্য বলে বিবেচনা করলেন। কারণ উর্বশী জানেন রাজার শুধু রূপ বা গুণই নেই। রাজা পুরূরবা চিন্তা-চেতনায় অনেক উদার। আর এই কারণে উর্বশী রাজা পুরূরবাকে ভালবেসে ফেললেন। শেষপর্যন্ত দুইজন মর্ত্যে নেমে এলেন। রাজা পুরূরবা উর্বশীকে নিজের করে পেতে চাইলেন। রাজার প্রার্থনায় উর্বশী লজ্জায় লাল হয়ে গেলেন। এমন রাজার প্রার্থনা কেউ কী না করতে পারে তাই উর্বশীও ফিরিয়ে দিতে পারলেন না। তবে উর্বশী রাজাকে তিনটি শর্ত দিলেন। শর্ত এক- উর্বশীর দুইটি মেষ শাবক ছিল। ঐ মেষ-শাবক গুলোকে উর্বশী পুত্রস্নেহে লালন করেন। তাই তার শর্ত অনুযায়ী; ঐ মেষ শাবকগুলোকে তার শয্যার দুই পাশে বাঁধা রাখতে হবে। এদের সরানো চলবে না। শর্ত দুই ছিলো- রাজা একমাত্র হস্তমৈথুনের সময় নগ্ন অবস্থায় উর্বশী সামনে আসতে পারবেন। অন্য কোন সময় নগ্ন-ভাবে রাজাকে উর্বশী দেখতে চান না। আর তৃতীয় শর্ত ছিল- উর্বশী শুধু ঘি খেয়ে থাকবেন। রাজা উর্বশীর শর্তে রাজি হলেন। বেশ সুখে শান্তিতেই রাজার দিন পার হতে লাগল। অন্যদিকে উর্বশীও স্বর্গের ফিরে যাওয়ার ইচ্ছাও হতো না।

অন্যদিকে উর্বশী হীন স্বর্গ দেবতাদের ভাল লাগে না। উর্বশী চলে যাওয়ার সব জায়গায় যেন শূন্যতা জেঁকে বসেছে। তাই উর্বশীকে স্বর্গের ফিরিয়ে আনার জন্য ষড়যন্ত্র হল। সকলেই জানে উর্বশী বেশ সুখেই মর্ত্যে বসবাস করছে। তাই ষড়যন্ত্রের পথ ছাড়া উর্বশীকে ফিরিয়ে আনার আর কোন পথ খোলা নেই।

একদিন গভীর রাতে গন্ধর্ব বিভাবসু অন্য গন্ধর্বদের সঙ্গে নিয়ে গোপনে রাজার অন্তঃপুরে প্রবেশ করলেন। রাজা পুরূরবা তখন উলঙ্গ অবস্থায় উর্বশীর পাশে শুয়ে আছেন। গন্ধর্বরা শয্যার পাশ থেকে একটি মেঘ-শাবককে তুলে নিয়ে চলে গেল। মেষের ডাকে উর্বশীর ঘুম ভেঙে যায়। উর্বশী চিৎকার করে বিলাপ করতে থাকেন- আমি নিশ্চয়ই অনাথ, নইলে আমার ছেলের মতো মেঘ-শাবকটিকে হরণ করবে কে। পুরূরবা সব শুনেও বিছানা ছেড়ে উঠলেন না। কারণ তিনি উলঙ্গ আর এই উলঙ্গ দৃশ্য উর্বশীকে দেখাতে পারবেন না। গন্ধর্বরা আরেকটি মেষ-শাবককে হরণ করল। উর্বশী এবার ডুকরে কেঁদে উঠলেন আর রাজাকে শুনিয়ে বলতে লাগলেন- একরত্তি ক্ষমতা নেই অথচ দেখায় যেন কত্তো ক্ষমতা। আসলে একটা নপুংসক স্বামীর সঙ্গে বিয়ে হয়েছে আমার। এই কথা শোনার পর রাজা আর শুয়ে থাকতে পারলেন না। সেই বিবস্ত্র অবস্থায় বিছানা ছেড়ে উঠে খড়গ হাতে নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন মেষ-শাবকদের ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু যেই না তিনি বেরুবেন এই সময় গন্ধর্বরা বিদ্যুতের স্ফুরণ ঘটাল আকাশে। আর উর্বশী দেখলেন রাজা উলঙ্গ। সঙ্গে সঙ্গে উর্বশী রাজবাড়ি ছেড়ে চলে গেলেন। কাজ হয়ে যাওয়ায় গন্ধর্বরা মেষগুলোকে ছেড়ে চলে যায়। রাজা মেষগুলোকে ঘরে নিয়ে এসে দেখেন উর্বশী ঘরে নেই। আর সেই বিবস্ত্র অবস্থায় রাজা উষ্মাদের মতন বেরিয়ে পড়লেন প্রিয়তমা উর্বশীর খোঁজে। একসময় পুরূরবা উর্বশীকে খুঁজেও পায়। কিন্তু উর্বশী ফেরেন নি। কারণ স্বর্গের আগ্রাসনে তার ফেরার উপায় ছিল না। কিন্তু পুরূরবা কিছুতেই শান্ত হয় না। তিনি কেঁদে কেঁদে বুক ভাসান। রাজা যখন পদ্ম সরোবরের তরী দাঁড়িয়ে বারবার উর্বশীকে ফিরে আসার অনুরোধ করেন তখন উর্বশী রাজাকে নিরাশ করেন নি। তিনি বলেন- আমার গর্ভে তোমার সন্তান। তুমি এক বছর পর এই জায়গায় আবার এসে। তখন আমি তোমার সন্তানকে তোমার কোলে দেব। এবং এক রাত্রি ধরে তোমার সাথে মিলন সঙ্গম উপভোগ করব।। এই কথা শুনে পুরূবরা খুশি হয়ে ফিরে গেলেন। আর উর্বশীর প্রস্থানে অন্য কোন নারীর প্রতি রাজা কখনো আকৃষ্ট হননি। কারণ তার হৃদয় শুধু উর্বশীর জন্য। এভাবে পাঁচ বছরে পুরূরবা পাঁচটি সন্তানের জনক হলেন। আর এতে উর্বশীর প্রতি পুরূরবার ভালোবাসা কখনো কমেনি। বরং বেড়েছে হাজার গুণ। আর পুরূরবার ভালোবাসা দেখে গন্ধর্বরা খুশি হয়ে রাজাকে বর চাইতে বলে। রাজা বর চাইলেন এবং তাদের করুণায় তিনি একাত্ম হলেন উর্বশীর সঙ্গে উবর্শীলোকে।

বলা যায় এই হল রাজা পুরূরবা ও স্বর্গ-সুন্দরী উর্বশীর প্রেম কাহিনী। রাজার বিবস্ত্র হওয়া ও সেই দৃশ্য দেখে উর্বশীর চলে যাওয়াকে পুরাবিদ পণ্ডিতরা আধুনিক দৃষ্টিতে বলেন- পুরূরবা হলেন সূর্যের প্রতীক আর উর্বশী হলেন ঊষার। উর্বশী শব্দের একটি অর্থ অবশ্য ঊষা। সূর্যের উদয় হলে শুধু যে অন্ধকার দূর হয় তাই নয় ঊষাও আর থাকে না। আলোয় আলোয় জ্বলে ওঠা নগ্ন সূর্যকে উর্বশী ঊষা ছেড়ে চলে যায়। আর সেই নগ্ন তেজের মধ্যেই লুকিয়ে থাকে তার সারাদিনের হাহাকার। অল্পক্ষণের মিলনে সে শুধু বলে- না, এত তাড়াতাড়ি যেয়ো না, তোমার সঙ্গে আমার কথা আছে কত।

[আপনাদের নিশ্চয়ই ভরত মুনির কথা মনে আছে। যিনি রেগে গিয়ে উর্বশীকে অভিশাপ দিলেন যে- তোকে মর্তভূমিতে জন্মাতে হবে!! লতা হয়ে থাকা উর্বশীকে মহাকবি কালিদাস তার কাব্যে ঠাই দেন। “বিক্রমোর্বশীয়” নাটকের অন্তভাগ উর্বশী ও পুরূরবার বুক ভাসানো বিরহ নিয়ে রচিত।]

ছবি-রাজা রবি ভারমা
কাহিনী- নৃসিংহপ্রসাদ ভাদুড়ীর বই থেকে (সংক্ষেপে)