সুনীল দেব রক্ষনশীল ব্যক্তিত্ব। ক্রিকেটে, ব্যক্তিগত জীবনে।
মুশকিল হচ্ছে এ হেন ব্যক্তিও সদ্য সম্পন্ন ইংল্যান্ডের হাতে ছাতু হওয়া ভারতীয় দলের পরাজয়ের পেছনে “মেয়েদের” -থুরি ক্রিকেটার বান্ধবীদের বাগড়া দেখতে পাচ্ছেন। বিরাট কোহলির লিভ-ইন পার্টনার অনুস্কা একই হোটেলে বিরাটের সাথে ছিলেন। অন্যান্য ক্রিকেটার স্ত্রীদের সমান মর্যাদা পেয়েছেন। ব্যাপারটা সাম হাও ভারতের ক্রিকেট ম্যানেজার সুনীল দেবের হজম হচ্ছে না। উনার বক্তব্য যা বিদেশীদের পেটে সয়, তা ভারতীয়রা করতে গেলে ডুববে! ওই কুকুরের পেটে ঘি না সহ্য হওয়ার গপ্পো।
অদ্ভুত যুক্তি! স্ত্রীরা ক্রিকেটারদের সাথে থাকতে পারবেন! কিন্ত বান্ধবীরা থাকলেই গেল! অবিবাহিত বান্ধবীরা কি বিছানায় স্ত্রীর থেকে বেশী দাপাদাপি করে ক্রিকেটারটির ঘুমের বারোটা বাজাবেন ? না বান্ধবীদের জন্য সেক্সড্রাইভ থাকে -কিন্ত বিবাহিত স্ত্রী হলেই শামুকের মতন ভেতরে ঢুকে যায়? কি সব অদ্ভুত যুক্তি!
সত্যিই কি লিভ-ইন পরদেশী মেঘ আর সাত পাকে পাঁকে পড়া ভারতীয় সংস্কৃতি?
বিবাহ বলতে আজকের সমাজ যেটা দেখছে, জানে-সেই মন্ত্র আর আইনের কাগজপত্র খুবই আধুনিক ব্যপার স্যাপার। ঘটা করে, অনুষ্ঠান করে বিয়ে প্রাচীনকালে একমাত্র রাজা উজিরদের মধ্যেই চালু ছিল। গ্রীসে সেটাও ছিল না। নারী পুরুষ একসাথে থাকলেই সমাজ তাকে স্বীকৃতি দিত। রোমেও সাড়ম্বর বিবাহ বলতে অভিজাত শ্রেনীদের মধ্যে রাজনৈতিক পুনঃবিন্যাস। সাধারন মানুষের এত ঘটা করে বিয়ে করার কোন উপায় ছিল না। লিভ ইন করত-আর তাহাই ছিল বিবাহ। ভারতেও প্রেম করে বিবাহ হচ্ছে গান্ধর্ব্য বিবাহ। বাকী সব ফেক। রাজনীতি বা ব্যবসার কারনে কন্যাসন্তানকে ঘটা করে বেচার পোষাকি নাম ছিল বিবাহ। সেটা করত সমাজের উচুশ্রেনী। সে যুগের আমআদমীর জন্য যাহাই লিভ-ইন, তাহাই বিবাহ।
টোরা বা বাইবেলে দেখা যায় ইস্রায়েলিরা প্রথম বিয়ের ব্যাপারে কড়াকরি শুরু করে। এডাল্ট্রি বা বিবাহবর্হিভূত সেক্সের জন্য শাস্তির ধারনা একেশ্বর বাদি ধর্মগুলির আমদানি। কনস্টানটাইন-যিনি আদতে খ্রীষ্ঠান ধর্মের আসল প্রতিষ্ঠাতা, তার আমলেই প্যাগান রোমানদের বিবাহের “পবিত্রতার” প্রথম প্রকাশ। এরপরে ইসলাম এসে বিবাহের পবিত্রতার ওপর আরেক প্রস্থ পোঁচ লাগায়। ক্যাথলিক চার্চ বিবাহের পবিত্রতা রক্ষায় এবং নরনারীর এডাল্ট্রি আটকাতে অদ্ভুত অদ্ভুত সব আইন জারী করে মধ্য যুগে। নরনারীর স্বভাবসিদ্ধ আকর্ষন এবং তা হেতু আরো স্বাভাবিক লিভ-ইন সম্পর্কের ফল্গুধারা ধ্বংস করে আব্রাহামিক ধর্মগুলি।
ফলে চার্চের বন্ধন আলগা হতেই এখন ফ্রান্সের ৩০% লোক ও বিবাহিত নয়-সেখানে লিভ-ইনকেই বিবাহের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ইউরোপের বাকী সভ্য দেশগুলিতেও আস্তে আস্তে বিবাহ প্রায় অবলুপ্তির দিকে।
সময়ের নিয়মে যে কোন সভ্য সমাজে বিবাহর অবলুপ্তি দরকার। বিয়ের পেছনে না আছে যুক্তি, না স্ফূর্তি। এক পার্টনারের সাথে সারাজীবন কাটানো যাব্জজীবন কারাদন্ড। প্রেমের সমাধি। যদি ধরে নেওয়া যায় সন্তানের কারনে সেটা দরকার, তাহলেও এটা পরিস্কার নয় কেন ঘটা করে, এত অপচয় করে বিয়ের অনুষ্ঠান করতে হবে। কেও যদি সারাজীবন এক পার্টনারের সাথে থেকে খুশী থাকে-থাকুক। কিন্ত কেও যদি সেটা না চায়, উকিলদের পকেটে পয়সা দিয়ে ডীভোর্স মামলা, খরপোশ মামলা কেন?
বিবাহ একটি অসভ্য প্রথা। জোরকরে দুই নরনারীকে চিড়িয়াখানার খাঁচায় ভরে সামাজিক তামাশা। এই বৈবাহিক অসাড়তা আমরা যত দ্রুত বুঝব, ততই মঙ্গল।
@রনবীর সরকার, সমাজ প্রস্তুত নয়-এই যুক্তি দিয়ে যদি সমাজের পরিবর্তন রুখে দেয়া যেতো, তাহলে আজো আমরা সতীদাহের যুগে পড়ে থাকতাম।
আপনি যেসব সমস্যার কথা বললেন সেগুলোর সবগুলোই বর্তমান সমাজে আছে; এবং প্রকটভাবেই আছে।এদেশে বিবাহিত নারীর জীবন এমন কোনো স্বর্গীয় শয্যা নয় যে লিভ টুগেদারকে বৈধতা দিলে একেবারে অনর্থ ঘটে যাবে। আসলে আমরা “পরিবর্তন” শব্দটাকেই ভয় করি। আমরা চাই সমাজ তেমন থাকুক, যেমনটা দেখে আমরা অভ্যস্ত।
আপনার বর্ণিত সমস্যাগুলোর সমাধান দিতে পারে- আইনি সংস্কার আর তার সমান্তরালে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন এবং প্রযুক্তিগত উন্নয়ন। বিয়ে কখনোই কোনো কিছুর সমাধান নয়।
@নিরাবেগ নাবিক,
সামাজিক বিবর্তনের হাত ধরেই বিবাহ ধর্ম ইত্যাদির উৎপত্তি-এবং সেই পথেই তাদের মৃত্যুও সমাগত।
ধন্যবাদ চমৎকার একটি লেখার জন্য।
তবে আমার মনে হয় অনেক সমাজই এতটা সভ্য হয়নি যে বিবাহ মতো অসভ্য প্রথার দরকার নেই। অবশ্যই সভ্য সমাজের প্রেক্ষিতে বিবাহ একেবারেই অনর্থক একটি প্রথা।
এবার আমি আমার পয়েন্টগুলোতে আসি
১. অধিকাংশ নারীই পার্টনার পছন্দ করার ক্ষেত্রে লং টার্মের কথা চিন্তা করেই করে। কিন্তু পুরুষদের ক্ষেত্রে ব্যপারটা ভিন্ন , একটা নারীকে দেখে লং টার্ম পার্টনার হিসেবে গ্রহন করার থেকে সেক্স করে আনন্দ পাবার কথাই সে বেশি চিন্তা করবে।
এখন ধরুন একটা পুরুষ এক নারীকে প্রলুব্ধ করে সেক্স করে চলে গেল, হয় নারীকে গর্ভপাত করতে হবে, অথবা সেই ছেলের দায়-দায়িত্ব নিতে হবে।
কি করবে সেই নারীটি?
২. সন্তানের জন্মদানের পর সে যদি বাবার সাথে থাকে তাহলে মার ভালবাসা হতে বঞ্চিত হবে, আর মার সাথে থাকলে বাবার ভালবাসা হতে বঞ্চিত হবে, আর অন্য কোথাও থাকলে তো বাবা-মা উভয়ের ভালবাসা হতে বঞ্চিত হল। উপরন্তর আমাদের মতো অসভ্য সমাজে স্বাভাবিকভাবে বাবা বা মার নতুন পার্টনারের খারাপ ব্যবহার হয়তবা তার জীবনকে পুরোপুরি বিপর্যস্ত করে দেবে।
৩. পুরুষদের এখানে দায় থাকবে না কন্ট্রাসেপশন ব্যবহার করার, কারন সে সন্তানের দায়দায়িত্ব নিতে বাধ্য নাও থাকতে পারে। আর যদি এখানে আপনি আইন দিয়ে পুরুষকে বাধ্য করতে চান সন্তানের দায়িত্ব নিতে তাহলে কি আইন দিয়ে বাধ্য করবেন? আইনগুলো কি ধরনের হবে?
৪. ধরুন আপনি ২৫ বছর বয়সে সেক্স করার পর আপনার পার্টনারকে ছেড়ে দিলেন। তার একটা মেয়ে হল যে মেয়েকে আপনি দেখেনই নি। ২০ বছর পর আপনার বয়স ৪৫ আর মেয়ের ১৯-২০.
হ্যা. আপনি আপনার নতুন পার্টনার হিসেবে ভুলক্রমে আপনার মেয়েকেই নিয়ে ফেললেন। অসম্ভব ? হ্যা. বিগডেটা applied হয়ে গেলে এই ঘটনা হয়ত ঘটবে না। 🙂 কিন্তু অন্তত তার আগে ইহা অসম্ভব কোন ঘটনা না।
৫. একটি ছেলে একটি মেয়েকে ধর্ষন করল। মেয়েটি ছেলেটির বিরুদ্ধে মামলা করল। হ্যা. প্রমানিত হল যে ছেলেটি মেয়েটির সাথে সেক্স করেছে। কিন্তু এর অর্থ কি এই যে সে ধর্ষন করেছে। হয়ত ধরা পরতে পারে কিছুটা forced sex হয়েছে।
ছেলেটি বলতেই পারে তারা ভালবাসা থেকেই সেক্স করেছে। ছেলেটির বিরুদ্ধে কি এখন আমরা সত্যি কোন ব্যবস্থা নিতে পারব?
৬. অনেকে ছেলে মেয়েই আছে যারা প্রেম করতে পারে না। তাই বলে কি তাদের কখনো সেক্স করা হবে না? 🙂 অ্যারেঞ্জড মেরিজ ই তাদের অনেকক্ষেত্রে ভরসা। 🙂
হ্যা. আমি আবারও বলছি একটি সভ্য ও উন্নত সমাজে বিবাহপ্রথার একেবারেই দরকার নাই, কিন্তু সত্যি কথা বলতে কি আমাদের সমাজ আমার মনে হয় না এখনো অতদূর পৌছাতে পেরেছে। পাশ্চাত্য দেশেগুলোর সাপেক্ষে আমাদের আর্থসামাজিক অবস্থা বিবেচনা করলে এখনো আমাদের এখানে বিবাহের প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে যায় নি।
তবে তা অবশ্যই প্রচলিত খরুচে বিবাহ নয়। বিবাহ শুধু আইনত ও সামাজিক একটা প্রতিশ্রুতি হওয়া উচিত।
@রনবীর সরকার,
আসলে এর উত্তর আমি আম্মানসুরাকে অলরেডি দিয়েছি। পিতা মাতাকে ছেলে মেয়ে মানুষ করতে হচ্ছে বা হবে এটাও ভ্রান্ত প্রথা। ছেলে মেয়ে মানুষ হওয়া উচিত ক মিউনিটি সিস্টেমে। আম্মানসুরাকে লেখা আমার কমেন্টটা দেখুন। ছেলে মেয়ে বাবা মায়ের কাছে মানুষ হওটাও খুব বাজে সিস্টেম। সুতরাং ছেলে মেয়ে মানুষ করার চাপ উঠে গেলে, বিয়ে করে একসাথে থাকার চাপটাই বা কেন?
আর বাবা মা যাদের মেয়ে খুঁজে দেয়, তাদের টিকে থাকার যোগ্যতা নেই। এরেঞ্জড ম্যারেজ গ্লোরিফায়েড প্রস্টিটিউশন। এরেঞ্জ ম্যারেজ এবং বেশ্যাবৃত্তির মধ্যে পার্থক্য কম।
এই লেখা আমার বাপ-দাদার বয়সী কেউ পড়লে নিশ্চিত হার্ট এটাক হয়ে যাবে! আমাদের সমাজ আপনার চিন্তাভাবনার চাইতে অনেক পিছিয়ে আছে… :-s
@ঔপপত্তিক ঐকপত্য,
কাওকে না কাওতে ত এগিয়ে গিয়ে নতুন পথের সন্ধান করতেই হয় :-s
বিপ্লবদার একটা যুগান্তকারী লেখা! সামাজিক দুনিয়ার নরম মাটিতে নিশ্চিতভাবেই বিপুল আলোড়ন সৃষ্টি করবে! অসাধারণ বিপ্লদা, অসাধারণ! :guru: :guru: :guru:
যে কাউকে লন্ডভন্ড করে দেবে, পিলে চমকাবে, তবু আসুক না কাউন্টার যুক্তি নিয়ে! যুক্তির জয় এখানেই, লন্ডভন্ড করে দিয়েও সে দাঁড়িয়ে থাকে নিশ্চল, অভঙ্গুর!
বিপ্লবদা, অসাধারণ কাজ! :guru: :guru:
বিপ্লব দার সাথে সম্পূর্ণ একমত। আমার মনে হয় কারখানায় জন্মালে বেশ হতো। আমিতো এমনিতেই একা; অযথা এত ভালবাসার ভার, দেনা-দায়, আকাঙ্ক্ষার টানাপোড়েন কেন?
পুরপুরি একমত হতে কস্ঠ হচ্ছে,পুরুষদের বয়স বেশী হলেও সংগি পেতে অসুবিধে হয় না,কিন্তু নারী বেশী বয়সে সংগি পাওয়া প্রায় অস্মভব , এ খেত্রে বিবাহ নারীর জন্য নিরাপত্তা প্রদান করে বেচে থাকার জন্য জরুরি।আপনি কি বলেন ?
@আস্তরীন,
আজকাল সব ন্যাচারাল ট্রিটমেন্টের জোরে ৬০ বছরের বুড়িরাও ছুড়ি হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আপনি পেছনে
বন্য প্রানীর দিকে তাকাই চলুন! সবই সহজ হবে!
আপনার এই লেখার মধ্যে আরো কিছু পাবো বলে আশা করেছিলাম। যাই হোক খুব সংক্ষিপ্ত লিখেছেন। বিবাহ সংঘঠিত সম্পর্কটি টিকে থাকে অনেকটা জোর করেই। তবে অনেক চেষ্টা ও সাধানার ফলে এটি একটি স্বাভাবিক শিল্পায়িত পরিমার্জিত রূপে আনা সম্ভব। তবে স্বাভাবতই মানুষের ভিতরেই বহুগামীতার লক্ষন রয়েগেছে। এটি স্বীকার করেই সভ্য দেশ গুলো তার প্রচলন রেখেছে। সাধারণ মানুষের জন্য যা খুবই গুরুত্বপুর্ণ ও সমাজ ও সুন্দর থাকে।
@রওশন আরা,
এটাই ত সমস্যা। মানুষ প্রকৃতিতে বহুগামি। তাকে জোর করে মনোগ্যামিস্ট বানানো, এক ধরনের অসভ্যতা বলেই মনে করি।
বিপ্লব দা,
আমি একমত আপনার বক্তব্যের সাথে। ব্যপারটা সুনীল গাভাসকার এর মনোবৈকল্য নিয়ে শুরু হলেও তামাম দুনিয়ার নারী-পুরুষ নির্বিশেষে অধিকাংশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য বোধ করি। আব্রাহামিক ধর্মগুলো এমনকি সনাতনী প্রথাও পুরুষতান্ত্রিকতাকে উসকে দেয়। ঘরের আর সব আসবাব যেমন টেলিভিশন-ফ্রিজের মতোই নারীও একটা আসবাব মাত্র! মাথার নীচের বালিশ লাগে, পাশে কোলবালিশ আর উষ্ণতার জন্যে নারী। পুরুষতো ঘোড় হিংসুটে হয় সম্পত্তির জন্যে। যা তার একান্ত নিজস্ব হতে হবে। সম্পত্তির মালিকানার জন্যে দরকার দলীল, তেমনি বিবাহ হলো পুরুষের নারী সম্পত্তির মালিকানার দলিল! সেটাই হয়তো ঠিক যে কমিউনিটির উন্নয়নের সাথে সাথে চিন্তাধারার পরিবর্তন আসবে, কিছু কিছু ক্ষেত্রে তো এসেছে……..!
@কেশব কুমার অধিকারী,
বিয়ে করুক আর না করুক, পুরুষ নারী নিয়ে হিংসুটে হবেই। সেটা তার বায়োলজিক্যাল উত্তরাধিকার।
সমস্যা হচ্ছে সেই হিংসুটেপনার ওপর সমাজ ও রাষ্ট্রএর “বিবাহ” নামক সিলমোহর পড়লে :-s
পোস্টের “Excerpt” এ গাভাস্কার, আবার ভিতরে সুনীল দেব দেখা যাচ্ছে। এছাড়াও পুরো পোস্টটা “Excerpt” এ চলে গিয়েছিল, প্রথম পাতায় পুরোটা চলে আসছিলো, সেটা ঠিক করে দিলাম। সুনীল দেব-গাভাস্কারের ব্যাপারটা ঠিক করে ফেলেন 🙂 ।
@রামগড়ুড়ের ছানা, সব ঠিক করে দিলাম। আসলে বয়স হচ্ছে, অলসতা গ্রাস করছে!
আপনার লেখার সাথে একমত। কিন্তু সমস্যা হল আমাদের সমাজে নারীরা এখনো “স্বনির্ভর” হতে পারে নাই, তারা পুরুষের উপর সম্পূর্ণভাবে নির্ভরশীল। নারীরা যদি অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হতো তাহলে তাদের স্বনির্ভরতা ও আত্ব-সচেতনতা বাড়তো। তখন হয়তো নারীরা পারিবারিকভাবে আয়োজিত বিবাহ নামক কু-প্রথা/আইনগত জঞ্জাল হতে দূরে থাকতে পারতো।
বিবাহ প্রথাই মূলত সৃষ্টি হয়েছে, নারীকে পুরোপুরি যৌনদাসী হিসেবে সমাজে প্রতিষ্ঠা করা। নারী যাতে তার তথাকথিত সতীত্বকে টিকিয়ে রাখতে যত্নবান হয়, তার জন্য পুরুষতান্ত্রিক সমাজ বিবাহের ফর্মূলা তৈরি করেছে। সময়ের সাথেই বিবাহের ফর্মুলা যাদুঘরে চলে যাবে বলেই আমার মনে হয়।
@ইমরান,
আপনার ইতিহাসে একটু ভুল আছে। ব্যক্তিগত সম্পত্তির উৎপত্তির জন্যই নারী আজ যৌনদাসী। তার আগে যদ্দিন মানুষ নমাডিক বা প্যালিওলিথিক সমাজের অংশ ছিল-সেখানে বিবাহের দরকার ছিল না। শিশুরা ছিল কমিউনিটির সম্পতি। কে বাপ-তাতে কিছু যায় আসত না কারন, সম্পতির উত্তরাধিকারের বালাই ছিল না। নারী বা পুরুষের একাধিক পার্টনার ছিল। তারা একাধিক লিভ-ইন করত।
@ বিপ্লব পাল – বিষয় টি খুবই জটিল । তবু বিতর্ক টা এভাবে শুরু করছি।
১) এটা সত্যি কথা বহু মানুষ (নারী/ পুরুষ) সারা জীবন বিবাহের জন্য কয়েদ খানায় কাটাতে বাধ্য হছে। একটি ভুলের জন্য দুটি মানুষের সারা জীবন নষ্ট হচ্চে। তবু প্রশ্ন জাগে ‘ভুল’ টা আসলে কি?
২) মানুষ প্রকৃতি গত ভাবে বহুগামি। তার মধ্যে প্রকৃতি গত কারনেই পুরুষ বেশি বহুগামি।
৩) যেহেতু আমরা কেউ ‘Perfect’ নই, তাই Mr. Right অথবা Miss Right’ সারা জীবন ধরে খুঁজে বেড়ালেও পাওয়া যাবে না। কারন একটা imperfect মানুষ আর একটা perfect মানুষকে খুঁজে বেড়াচ্ছে যার কোন অস্তিত্ব নেই।
৪) তা হলে যেটা পড়ে রইল তা হল একটি মানুষ আর একটি মানুষের সাথে যে কটা দিন ভাল লাগবে সেই কটা দিন থাকুক যে মুহূর্ত থেকে ভাল লাগবেনা (বহুগামি চরিত্রের জন্য সে অন্য একটি খুঁজছে ) সে দিন থেকে তারা যে যার পথ দেখবে।
৫) সন্তানের জন্য অনেকে এক সাথে থাকতে বাধ্য হয়। কারন সন্তানকে ভাল ভাবে মানুষ করতে গেলে বাবা-মার পরিচর্যা দরকার। সেটা অবশ্য উন্নত দেশের উন্নত ব্যাবস্থায় অন্য ভাবেও করা সম্ভব।
৬) সবার আগে দরকার দুটি মানুষের অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা । যেটা উন্নতিশীল দেশে এখনো স্বপ্ন।
@অনিন্দ্য পাল,
আপনি যা বলছেন তা যুক্তিসঙ্গত। আপনি আমার ওপরের একটা কমেন্ট দেখে নিন-যেখানে আমি কমিউনিটি ভিত্তিক সন্তান পালনের জন্য সুপারিশ করেছি।
অনেক আগের একটা স্ট্যাটাস (২০১১ এর দিকের)- বিভিন্ন সময়ে নানা কিসিমের মোল্লারা আমারে নানা প্রশ্ন করে- সময় সুযোগ থাকলে জবাব দেই … বিয়া নিয়া একজন কিছু প্রশ্ন করেছিল …
বুঝেন ঠেলা …
এদের চিন্তা-ভাবনার দৌড় … 🙁
@নাস্তিকের ধর্মকথা,
এত ভাবেন ক্যান? যদি কেও ভাবতেই পারে-সে কখনো ধার্মিক হতে পারে? আধ্যত্মিক হতেই পারে মনের শান্তির সন্ধানে। কিন্ত একমাত্র গরু ছাগলের লেভেলে ব্রেইন যাদের তারাই নিজেদের হিন্দু মুসলমান বলে চিল্লায়। আর পৃথিবীর সব কিছু আবিস্কার ধর্মের দান বলে লাফায়। আমার বয়স চল্লিশ পেড়িয়েছে। আগে এসব বাঁদরদের সাথে অনেক তর্কে গেছি। এখন মনে হয় এই সব ধার্মিকদের সাথে তর্ক সময় নষ্ট ছাড়া কিছু না। অন্ধকে ও ভাবে আলো দেখানো যায় না। বাচ্চা বয়স থেকে ধার্মিক লোকদের ধর্ম নিয়ে ব্রেইন ড্যামেজ করে ছেড়েছে ওদের পরিবারের লোকজন।
এই জন্য যার সাথে প্রেম তাকে বিয়ে করতে নেই! :rotfl:
যারা ভাবে বিয়ে করার পর সেক্স করলে খুব ভাল, আর বিয়ের আগে সেক্স করলে খুব খারাপ,তারা বোধকরি নিজের পার্টনারকে নিয়ে কিছুটা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে।
অন্যকে (নর,নারী দুজনের ক্ষেত্রেই) পুরোপুরি own চাওয়ার এই প্রবণতা,একটা সময় পরে ঐ চিড়িয়াখানা সুলব সিন সিনারি সৃষ্টি করে।
@প্রাক্তন আঁধারে,
এই অধিকার বোধটা খুব খারাপ। আমার বৌ আমার সম্পত্তি এই ধরনের চিন্তা এবং ধারনা অনেক সামাজিক ব্যাধির কারন।
সরি দাদা আপনার এই পোস্টের সাথে কোন ভাবেই একমত হতে পারলাম না। কোন প্রথা কে খারাপ বলা যায় তখনি যখন ওই প্রথার ভালো ও মন্দের মধ্যে তুলনা করে মন্দের পাল্লা ভারি হয়।
যেকোন নিয়মের বা আইনের অপব্যবহার হয়। বিবাহ প্রথা উঠে গেলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে নারীরা। যেমন- আমি ভালোবেসে আমার স্বামীকে বিয়ে করলাম বা লিভটুগেদার শুরু করলাম। আমি আর আমার স্বামী দুজনেই সমবয়সী। আমরা পরিশ্রম করে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হলাম। স্বাভাবিক ভাবেই একজন ৪০ বছরের নারী আর পুরুষের মধ্যে পুরুষটি অধিক ইয়াং থাকে। এখন এই ৪০ এ এসে যদি আমার সঙ্গী আমাকে ছেড়ে যায় তাহলে সে খুব সহজেই একটা ভালো মেয়ে পাবে কিন্তু আমার সঙ্গী পেতে সমস্যা হবে। আর বাস্তব একটা উদাহরণ- হুমায়ূন আহমেদ! গুলতেকিন এর মতন নারীর সংখ্যা বাড়বে অন্যদিকে শাওনদের অভাব নেই।
এছাড়া কেও যদি অসুস্থ হয় আর তা হতেই পারে তখন বিবাহ প্রথার কারনে সঙ্গির দায়িত্ব নেয়া জরুরি। বাবা মা যদি সারাজীবন প্রেম কেই গুরুত্ব দিয়ে সঙ্গী পাল্টানোতে ব্যস্ত থাকে তাহলে সেই সন্তান ও বড় হয়ে বাবা মা কে ওল্ড হোমে পাঠাতে দ্বিধা করেনা। সমস্ত ভালোর মন্দ দিক থাকে আর মন্দেরও ভালো দিক থাকে। তবে ভালো মন্দের উভয়ের বিচারে একটা স্থিতিশীল সমাজ তৈরিতে যেই নিয়ম বেশি কার্যকরী আমরা সেটাই সমর্থন করব।
আর সমাজে সুযোগসন্ধানী মানুষ সবসময়ে বেশি থাকে তাই তাদের কথা চিন্তা করেই সিদ্ধান্ত নেয়া জরুরি।
কিছু মনে করবেন না দাদা। আপনার লেখার উপর আস্থা রাখি বলেই মন্দ লাগাটা জানিয়ে দিলাম। এই ব্লগে আসার একমাত্র কারন আপনি 🙂
@আম্মানসুরা,
তোমার স্বামী যদি অন্য নারীর হাত ধরে চলে যায়, তাহলে সেটা বিয়ে বা লিভ টুগেদার কোন ক্ষেত্রেই আটকাতে পারবে না। এটাই বাস্তব। আর ফ্রান্সে লিভ ইন এবং বিবাহের ডিভোর্স আইন একই।
ছেলে মেয়ে বাবা মার কাছে মানুষ না হওটায় সমাজের জন্য ভাল। এতে পরিবারের ট্রাডিশন, ফিউডালিজম ইত্যাদি বাজে মিথগুলি থেকে মুক্ত হয়ে অনেক মুক্ত চিন্তার নাগরিকের জন্ম হবে।
ফ্রান্সের আইনে লিভ-ইন এবং বিবাহিতে পার্থক্য নেই। দুজন নারী পুরুষ একসাথে থেকে ছেলে মেয়ে মানুষ করলে আইন ত থাকতেই হবে বাচ্চাদের স্বার্থেই। তার সাথে বিবাহ বনাম লিভ ইনকে না গোলানোই ভাল। কারন ওই আইনটা সব সময় দরকার । সেটার সাথে বিবাহকে গোলাবেন না। বিবাহ মানে এই যে এক নারী বা পুরুষের সাথেই যৌন বা মানসিক সঙ্গম বৈধ, এই ব্যাপারটা ঘোরতর পাশবিক, অমানবিক।
ছেলে মেয়েদের ও বাবা মার অধীনে মানুষ করার বিরুদ্ধে আমি। চাই কম্যুনিটি সিস্টেম যেখানে ছেলে মেয়েরা কোন পারিবারিক বায়াস ছাড়া বড় হতে পারবে। বাবা- মার কাছে ছেলে মেয়েরা যেগুলি শেখে তার সবটাই ভুলভাল পারিবারিক ট্রাডিশন। মুক্তমনের সন্তানের জন্য চাই উন্নত মানের কমিউনিটি ভিত্তিক হোস্টেল নির্ভর স্কুল যেখানে ছেলে মেয়েরা একদম কিন্ডারগার্ডেন থেকে তৈরী হবে। স্পার্টাতে এই নিয়ম চালু ছিল। আমি নিজের ১২ বছর হোস্টেলে কাটিয়েছি-এই জন্য আমার মধ্যে বাঙালী পরিবার থেকে যেসব ভাইরাস ঢোকে ( লিস্টটা লম্বা-বিবেকানন্দ, নেতাজি, একটু মুসলিমদের জন্য ঘৃণা, একটু বামপন্থী সুলভ ডায়ালোগ মেরে ঝি আসে নি বলে আফশোস, নগ্নতা সেক্স মঙ্গল গ্রহের জীবেদের জন্য ইত্যাদি ইত্যাদি ), তার থেকে নিজেকে অনেকটাই মুক্ত রাখতে পেরেছি। এটা নিয়ে পড়ে লিখব।
মোদ্দা কথা ছেলে মেয়েদের মানুষ হওয়া উচিত যৌথ কমিউনিটি ভিত্তিক সিস্টেমে। এতে নারী পুরুষের সমতা অনেক বেশী আসবে। নারী-পুরুষ জীবনে আরো অনেক কিছু করতে পারবে। বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, শিল্প, সাহিত্য, প্রেম ইত্যাদি সব ব্যাপারে আরো উৎকর্ষতা দেখাতে পারবে।
এখন আমাদের জীবনটা কেমন?
১০-১২ ঘন্টা পেশার জন্য খাটা-বাকী ৪-৫ ঘন্টা ছেলে মেয়ের পড়াশোনা, বৌ এর ফরমাস খাটা ইত্যাদি করেই দিন চলে। পুরো শুকানো কাঠ। অথচ জীবন একটাই। শুকনো কাঠ জ্বলে কাঠকয়লা হয়ে বেঁচে থেকে কি লাভ? হ্যা, ছেলে মেয়ের প্রগ্রেস দেখে, তাদের সাথে খেলা করে নিশ্চয় আলাদা আনন্দ আছে। কিন্ত সেটাও ত সেই মায়ার বন্ধন। সেটাই কি জীবন ?
“যাহা সার্টিফিকেট ছাড়া তাহা গুরত্বহীন”- এই নীতিতে আমরা চলি। আমাদের কাছে তাই সার্টিফিকেট ছাড়া প্রেম বা ভালোবাসার কোনো গুরত্ব নেই। আর সার্টিফিকেট পেতে হলে একটু খরচ করতেই হয়।
@উদাস,
তাতে কি ডিভোর্স আটকায়? আরো বাঁশ বাড়ে।
বিয়ে অপ্রয়োজনীয়-এটুকু বললেই সব বলা হয় না।
বিয়ে অত্যন্ত ক্লান্তিকর ও ক্ষতিকর একটা নষ্ট প্রথা। সে আপনাকে এই বিশ্বাস দেবে যে একজনকে আপনি সম্পূর্ণ অধিকার করেছেন। কিন্তু সংসার জীবনে পদে পদে দেখবেন, সে আলাদা একটা মানুষ। তখন ডিপ্রেশনে ভুগতে থাকবেন। আর সাথে যদি সেক্সুয়াল জেলাসির যাতনা যুক্ত হয় তাহলে তো কথাই নেই। হয় নিজে বিধ্বস্ত হবেন, অথবা সঙ্গীকে করবেন। কিংবা দু’টাই ঘটবে।
আরো বেশি ধ্বংস হবে আপনার সন্তান। জীবনের প্রতি পদে সে আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি অনুভব করবে এবং এভাবেই শেষ হয়ে যাবে। অথচ সন্তান যদি দেখে যে তার জন্মের আগেই তার পিতামাতা আলাদা হয়ে গেছে, তাতেও তার মধ্যে হতাশা আসে না (যতক্ষণ সমাজ নিজে তাকে ডিপ্রেসড্ না করে) যদি কারো শৈশবে/কৈশোরে পিতামাতার বিচ্ছেদ হয়, তখন কী ঘটবে তা নির্ভর করে নানা পরিস্থিতির উপর। কিন্তু বিয়ে কখনোই কোনো সমস্যার সমাধান নয়।
@নিরাবেগ নাবিক,
বিয়েটা বর্তমান সমাজে দরকার কিনা সেটা ভাবতে হবে। কারন বিয়ে করার ফলে অধিকাংশ নারী পুরুষের প্রোডাক্টিভিটি কমে। এটা সমাজের জন্য ভাল না। আবার সন্তানদের কিভাবে ভাল করে মানুষ করা যায়-সেটা নিয়েও গভীর ভাবে ভাবতে হবে।