সুনীল দেব রক্ষনশীল ব্যক্তিত্ব। ক্রিকেটে, ব্যক্তিগত জীবনে।

মুশকিল হচ্ছে এ হেন ব্যক্তিও সদ্য সম্পন্ন ইংল্যান্ডের হাতে ছাতু হওয়া ভারতীয় দলের পরাজয়ের পেছনে “মেয়েদের” -থুরি ক্রিকেটার বান্ধবীদের বাগড়া দেখতে পাচ্ছেন। বিরাট কোহলির লিভ-ইন পার্টনার অনুস্কা একই হোটেলে বিরাটের সাথে ছিলেন। অন্যান্য ক্রিকেটার স্ত্রীদের সমান মর্যাদা পেয়েছেন। ব্যাপারটা সাম হাও ভারতের ক্রিকেট ম্যানেজার সুনীল দেবের হজম হচ্ছে না। উনার বক্তব্য যা বিদেশীদের পেটে সয়, তা ভারতীয়রা করতে গেলে ডুববে! ওই কুকুরের পেটে ঘি না সহ্য হওয়ার গপ্পো।

অদ্ভুত যুক্তি! স্ত্রীরা ক্রিকেটারদের সাথে থাকতে পারবেন! কিন্ত বান্ধবীরা থাকলেই গেল! অবিবাহিত বান্ধবীরা কি বিছানায় স্ত্রীর থেকে বেশী দাপাদাপি করে ক্রিকেটারটির ঘুমের বারোটা বাজাবেন ? না বান্ধবীদের জন্য সেক্সড্রাইভ থাকে -কিন্ত বিবাহিত স্ত্রী হলেই শামুকের মতন ভেতরে ঢুকে যায়? কি সব অদ্ভুত যুক্তি!

সত্যিই কি লিভ-ইন পরদেশী মেঘ আর সাত পাকে পাঁকে পড়া ভারতীয় সংস্কৃতি?

বিবাহ বলতে আজকের সমাজ যেটা দেখছে, জানে-সেই মন্ত্র আর আইনের কাগজপত্র খুবই আধুনিক ব্যপার স্যাপার। ঘটা করে, অনুষ্ঠান করে বিয়ে প্রাচীনকালে একমাত্র রাজা উজিরদের মধ্যেই চালু ছিল। গ্রীসে সেটাও ছিল না। নারী পুরুষ একসাথে থাকলেই সমাজ তাকে স্বীকৃতি দিত। রোমেও সাড়ম্বর বিবাহ বলতে অভিজাত শ্রেনীদের মধ্যে রাজনৈতিক পুনঃবিন্যাস। সাধারন মানুষের এত ঘটা করে বিয়ে করার কোন উপায় ছিল না। লিভ ইন করত-আর তাহাই ছিল বিবাহ। ভারতেও প্রেম করে বিবাহ হচ্ছে গান্ধর্ব্য বিবাহ। বাকী সব ফেক। রাজনীতি বা ব্যবসার কারনে কন্যাসন্তানকে ঘটা করে বেচার পোষাকি নাম ছিল বিবাহ। সেটা করত সমাজের উচুশ্রেনী। সে যুগের আমআদমীর জন্য যাহাই লিভ-ইন, তাহাই বিবাহ।

টোরা বা বাইবেলে দেখা যায় ইস্রায়েলিরা প্রথম বিয়ের ব্যাপারে কড়াকরি শুরু করে। এডাল্ট্রি বা বিবাহবর্হিভূত সেক্সের জন্য শাস্তির ধারনা একেশ্বর বাদি ধর্মগুলির আমদানি। কনস্টানটাইন-যিনি আদতে খ্রীষ্ঠান ধর্মের আসল প্রতিষ্ঠাতা, তার আমলেই প্যাগান রোমানদের বিবাহের “পবিত্রতার” প্রথম প্রকাশ। এরপরে ইসলাম এসে বিবাহের পবিত্রতার ওপর আরেক প্রস্থ পোঁচ লাগায়। ক্যাথলিক চার্চ বিবাহের পবিত্রতা রক্ষায় এবং নরনারীর এডাল্ট্রি আটকাতে অদ্ভুত অদ্ভুত সব আইন জারী করে মধ্য যুগে। নরনারীর স্বভাবসিদ্ধ আকর্ষন এবং তা হেতু আরো স্বাভাবিক লিভ-ইন সম্পর্কের ফল্গুধারা ধ্বংস করে আব্রাহামিক ধর্মগুলি।

ফলে চার্চের বন্ধন আলগা হতেই এখন ফ্রান্সের ৩০% লোক ও বিবাহিত নয়-সেখানে লিভ-ইনকেই বিবাহের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। ইউরোপের বাকী সভ্য দেশগুলিতেও আস্তে আস্তে বিবাহ প্রায় অবলুপ্তির দিকে।

সময়ের নিয়মে যে কোন সভ্য সমাজে বিবাহর অবলুপ্তি দরকার। বিয়ের পেছনে না আছে যুক্তি, না স্ফূর্তি। এক পার্টনারের সাথে সারাজীবন কাটানো যাব্জজীবন কারাদন্ড। প্রেমের সমাধি। যদি ধরে নেওয়া যায় সন্তানের কারনে সেটা দরকার, তাহলেও এটা পরিস্কার নয় কেন ঘটা করে, এত অপচয় করে বিয়ের অনুষ্ঠান করতে হবে। কেও যদি সারাজীবন এক পার্টনারের সাথে থেকে খুশী থাকে-থাকুক। কিন্ত কেও যদি সেটা না চায়, উকিলদের পকেটে পয়সা দিয়ে ডীভোর্স মামলা, খরপোশ মামলা কেন?

বিবাহ একটি অসভ্য প্রথা। জোরকরে দুই নরনারীকে চিড়িয়াখানার খাঁচায় ভরে সামাজিক তামাশা। এই বৈবাহিক অসাড়তা আমরা যত দ্রুত বুঝব, ততই মঙ্গল।