অনেকদিন আগে এক গ্রাম্য হিন্দু মেয়ের সঙ্গে কথা বলছিলাম, আমি তখন যে এলাকায় থাকি তার নাম ছিল “পানির ট্যাঙ্কি”, মেয়েটি আমাকে জানালো সে “জলের ট্যাঙ্কি” এলাকায় একবার বেড়াতে গিয়েছিল…! আমি বললাম ওটা “জলের ট্যাঙ্কি” না, “পানির ট্যাঙ্কি”। “জলের ট্যাঙ্কি” ঠিকানায় চিঠি দিলে পিয়ন চিঠি নিয়ে ঘুরবে জায়গা মত পৌঁছাবে না…। কিন্তু মেয়েটি কিছুতে “পানির ট্যাঙ্কি” বলবে না। তার জিভ যেন জলকে পানি বলতে অপারগ!
যারা এই মেয়েটির “গ্রাম্য” পরিচয়ের উপর জোর দিতে চান তাদের বলি, খুবই উচ্চ শিক্ষিত ও কয়েক পুরুষের শহুরে এক ভদ্রলোককে একজন সম্বোধন করেছিল “আরিফদা”বলে, ভদ্রলোক আমার সামনে সম্বোধনকারীকে বলেছিলেন, শুনুন, আমাকে দাদা’ বা দা ‘এরকম কিছু বলবেন না, এসব হিন্দু কালচার আমি পছন্দ করি না…।
যে মেয়েটির কথা বললাম তার পিশতুত ভাই আমার বন্ধু। মেয়েটির নাম অপর্না। যেদিন চলে আসবো তাদের বাড়ি থেকে সে বলল, দাদা, আপনি একদম অন্যরকম, মুসলমান ছেলেদের আমি পছন্দ করি না। …মুসলমান ছেলেরা ভাল হয় না। আপনি তাদের থেকে আলাদা…।
বললাম, কি করে বুঝলে মুসলমান ছেলেরা সবাই খারাপ?
সে বলল, বুঝি দাদা, আমাদের স্কুলটা যে গ্রামে, সেটা তো মুসলমান গ্রাম, আসতে যাইতে যা শুনতে হয়…।
-বললাম, তোমার বয়েসে কোন মেয়েরই ছেলেদের সম্পর্কে ভাল ধারনা থাকার কথা না। বখাটেগুলো রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকে এসব করার জন্যই…।
-কিন্তু দাদা আমরা হিন্দু বলে জাত তুলে যা বলে তা আপনাকে বলা যাবে না! ভাবে হিন্দু তো, ওদের বললে কে কি বলতে আসবো? আমার বান্ধবীকে একটা মুসলমান ছেলে খুব জ্বালাতো, এ জন্য ও ওর বাবাকে নিয়া তখন স্কুলে যাইতো, একদিন করছে কি, ওরে ওর বাবার সামনেই গিয়া হাত ধরছে পোলাটা!
মেয়ে মাত্রই এই অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে কম-বেশি যেতে হয়।কত মেয়ে আত্মহূতি দিলো, তাদের বেশির ভাগই তো মুসলিম ঘরের। অর্পনা একচোখাভাবে ব্যাপারটা দেখছে বটে, তবে এটাও ঠিক শুধু হিন্দু হওয়ার জন্য সেরের উপর সোয়া সের হয়। হিন্দু হলে সাহসটা বেশি পাওয়া যায়। “হিন্দু অভিভাবকদের” পাত্তা না দিলেও চলে।…
পরস্পর ঘৃণাগুলো এভাবেই জন্মায়। চরম বিদ্বেষ আর অবিশ্বাস। কিন্তু আপাত শহুরে তিক্ত সাম্প্রদায়িক অভিজ্ঞতাবিহীন সমাজে গোপন, চাপা অবিশ্বাস, বিদ্বেষ, ঘৃণা তৈরি হয় কিভাবে? অখিল সাহা আর জিন্নাত আলী, এই দুইজন মুরুব্বিকে আমি ছোটবেলা থেকে দেখে আসছি। দুজন পরস্পর বাল্য বন্ধু। একই রাস্তার এপাড় ওপাড় দুজনের দোকান। অখিল সাহার দর্জির দোকান, জিন্নাত আলী এ্যালুমিনিয়ামের হাড়ি-পাতিলের। দুজনেরই অবস্থা ভাল। জিন্নাত আলী পাক্কা হাজি মানুষ। অখিল সাহাও ঠাকুরের নাম নিয়েছেন, সন্ধ্যার পর জপতপ করেন । দুজনরেই বয়স হয়েছে, তবু এখনো এক সঙ্গে বসে দুই বন্ধুতে চায়ের দোকানে হা হা করতে করতে আড্ডা মারেন। একজন আরেকজনের পাত থেকে খাবার তুলে খান। হিন্দু-মুসলমানের এমন বন্ধুত্ব অসাম্প্রদায়িকতার একটা চমৎকার নজির হয়ে ছিল আমার কাছে। সাম্প্রদায়িকতা দেখতে দেখতে যখন বিষাক্ত হয়ে যেতো মন, বিশ্বাস হারাতো মানুষের উপর, তখন এই দুই বুড়োর বন্ধুত্ব আমাকে দক্ষিণা বাতাসের পরশ দিতো মনে। এই দুজনের ছেলে আবার আমার বন্ধু। এই সুবাদে এদের কাছ থেকে দেখেছি। দুজনের ছেলেই এক সময় আমার ঘনিষ্ঠ সহচর ছিল।
অখিল সাহা আর জিন্নাত আলীর বন্ধুত্বের মার্বেল পাথরের ফলকটা মাটিতে গেঁড়ে বসেছিল গভীর আর অনেক পুরোনো স্থায়ীত্বের জন্য। এই ফলক দেখেই আমি আকৃষ্ট হয়েছিলাম। সবাই এই ফলকটাই দেখে। কিন্তু এই চকচকে ফলকটা একদিন সামান্য আলগা হতেই দেখি মাটির গভীরে অন্ধকারে লুকানো কুৎসিত পোকাগুলো কিলবিল করছে! এই সুন্দর ফলকটির অভ্যন্তরে এরা বাসা করে ছিল আপত সবার অলক্ষ্যে। কোন একদিন হয়ত এরা বেরিয়ে আসতো ফলকটি ভেঙ্গে। মনে আছে একদিন সৈকত ওদের দোকানে আমাকে বসিয়ে রেখে বাইরে গেছে, জিন্নাত কাকা আর অখিল কাকা কথা বলছিলেন। একটু পরে অখিল কাকা চলে যেতেই জিন্নাত কাকা নিচু গলায় এতক্ষণ তাদের সঙ্গে বসে থাকা তৃতীয় একজনকে বললেন, এই মালুগুলি হারামির একশেষ! আমরা মুসলমানরা তো বলদ! অরা ঠিক পয়সা চিপ দিয়া রাখে। হিন্দু কোনদিন মুসলমানের বন্ধু হইতে পারে না ভাই! জীবনে কম তো আর দেখলাম না…।
ঘটনাটা হলো, অখিল কাকার কাছ থেকে টাকা ধার চেয়েছিলেন জিন্নাত কাকা। অখিল কাকা হাতে টাকা নেই বলেও পনোরো দিনের মাথায় জানায় তিনি ইন্ডিয়া যাবেন বিশেষ দরকারে। জিন্নাত কাকার প্রশ্ন, এখন টাকা আসলো কোত্থেকে?
-মালুরা সব টাকায়-পায়সা ইন্ডিয়ায় নিয়া গিয়া রাখে। বুঝেন না এখন ইন্ডিয়ায় যাইতাছে ক্যান?
ব্যস, আমার যা বুঝার বুঝে গেলাম। আবীরের কাছেই একবার শুনেছিলাম, ওর বাবা সব সময় হিন্দুদের সঙ্গে চলতে বলতো ওকে। মুসলমান ছেলেদের সঙ্গে চলতে মানা করতো। আমার সঙ্গে চলার প্রথম দিকে ওকে জিজ্ঞেস করেছিল, ছেলেটা কেমন? ওর সাথে এত মাখামাখি করিস কেন? কোন মুসলমানকে তিনি বিশ্বাস করতেন না। একটাই ছেলে তো, ভয় পেতেন খুব…।
এত ঘৃণা, অবিশ্বাস আর সন্দেহ নিয়ে এই দুই বৃদ্ধ সারা জীবন তাহলে বন্ধুত্বের অভিনয় করে গেছেন? আমার এখনো বিশ্বাস হতে চায় না…।
কিন্তু সৈকতের বড় ভাই যখন স্থানীয় নির্বাচনে নামলেন প্রতিদ্বন্দিতা করতে আমার জীবনে সাম্প্রদায়িকতার কুসিৎত চেহারাটা আরো একবার সামনে থেকে দেখার দুর্ভাগ্য হলো। অনিচ্ছা স্বত্ত্বেও নির্বাচনে আমাকে জড়াতে হলো। বন্ধুর ভাই, সৈকতের মুখের দিকে তাকিয়ে আমাকে কথা দিতে হলো এই নির্বাচনে আমি সাধ্যমত খাটার চেষ্টা করবো।
৮০ ভাগ ভোটারই হিন্দু।হিন্দু অধ্যিষুত এলাকা, মূল যে দুজন প্রার্থীর মধ্যে লড়াই হবে তাদের একজন সৈকতের বড় ভাই খুরশিদ আলম। এই লোক যে কি পরিমাণ হিন্দু বিদ্বেষী তার সাক্ষি আমি। কিন্তু হিন্দুদের প্রতি ঘৃণা যতই থাকুক নির্বাচনে তাকে হিন্দু ভোট পেয়েই জিততে হবে। সমিকরণ খুব পরিস্কার, এখানে হিন্দুদের ভোট যে একচেটিয়া পাবে সে-ই জিতবে।খুরশিদ ভাই রানিং কমিশনার। এবার তিনি শক্ত লড়াইয়ের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন।তার মূল প্রতিদ্বন্দি একজন হিন্দু, নিতাই চন্দ্র পাল। খুরশিদ ভাই আগেভাগে স্থানীয় শীতলা মায়ের মন্দিরে মায়ের হাতে একটা রুপার পাখা বানিয়ে দিয়ে এলেন।ঘটা করে সেটা দেয়া হলো। মন্দির পুরোহিতদের সঙ্গে নমস্কার বিনিময় করলেন, খোঁজ-খবর নিলেন। আশ্বাস দিলেন, তিনি জিতলে মন্দিরের একটা অংশ দোতালা করে দিবেন…।
প্রতীক বরাদ্দের দিন বিড়াট ঝামেলা হলো। খুরশিদ ভাই আর তার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী নিতাই চন্দ্র পাল দুজনই “হাতি” প্রতীক চান। হাতি হিন্দুদের কাছে পূজনীয় প্রাণী। স্বয়ং ইন্দ্রের বাহন সে। এই আসনে পর পর চারবার নির্বাচিত হয়েছিলেন উমেষ রায় নামের একজন যিনি হাতি প্রতীক নিয়ে লড়তেন। উমেষ রায় মারা গেছেন অনেককাল আগে।খুরশিদ ভাই বললেন, হাতি পেলে আমি অর্ধেক নির্বাচন জিতে যাবো…।
আমার মাথায় আসলো না “হাতি” মার্কাটা এত গুরুত্বপূর্ণ কেন? এটা কি “পয়া” মার্কা? একজন বলল, তা তো আছেই, তবে হাতি হিন্দুদের কাছে বড় পবিত্র প্রাণী কিনা!
দুদিন পরেই চাক্ষুস দেখলাম সে দৃশ্য। খুরশিদ ভাই হাতি পাননি, আরো একাধিক প্রার্থী হাতি প্রতীক চাওয়ায় লটারীতে নিতাই চন্দ্র হাতি পেয়ে যান।প্রতীক পেয়েই তার লোকজন বিশাল এক হাতি ভাড়া করে আনে নির্বাচনী প্রচারণায়।হাতি বাড়ি বাড়ি যেয়ে সুর তুলে ভোট চায়, আর হিন্দু রমনীরা দলে দলে কুলায় করে ধান-দুব্বা আর সিদুর দিয়ে হাতিকে বরণ করে নেয়! তখন উলু ধব্নিতে মুখরিত হয়ে যায় পুরো এলাকাটা…।
দিনকে দিন খুরশিদ ভাইয়ের মেজাজ চড়তে থাকে। আসন্ন পরাজয়কে তিনি চাক্ষুস দেখতে পান। একদিন শুনি নিতাই চন্দ্রর সমর্থকদের মিছিলে হামলা হয়েছে। এই প্রথম আমার মনে হলো, যথেষ্ঠ হয়েছে! আমি জানি এরপর যে নোংরামীগুলো শুরু হবে তা সহ্য করা আমার পক্ষে সম্ভব না। সেদিনই আমাকে সেমরক একটা নোংরামী চাক্ষুস করতে হলো। আমাদের দলের একটা ছেলেকে কারা যেন মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে। সে মাথায় হাত চাপা দিয়ে দৌড়ে কেম্পে এসে আছড়ে পড়ল। আমি আর কয়েকজন চিৎকার করে বললাম, এই রিকশা ডাক, ওকে হাসপাতালে নিতে হবে…।স্বয়ং খুরশিদ ভাই ছিল সেখানে, তিনি থামিয়ে দিয়ে আগে একজন ফটোগ্রাফারকে তাড়াতাড়ি স্টুডিও থেকে ডেকে আনতে বললেন ওর রক্তত্ব ছবিগুলো ভাল মত তোলার জন্য!…
কিন্তু সবচেয়ে বড় আঘাতটা পেলাম সৈকতের কাছ থেকে। ওকে আমি এতকাল যা জেনে এসেছিলাম তা এক মুহূর্তে মিথ্যে হয়ে গেলো! ওর মনের ভেতরে এত বিষ জমা ছিল কে জানতো? সৈকত একদিন বলল, আমার ভাই এতকিছু করছে তবু শালার মালাউনগুলি একটা মালাউনরেই ভোট দিবো!…
আমি একটা চপেটাঘাত খেলাম যেন! সৈকতের মুখ দিয়ে এইরকম সাম্প্রদায়িক উক্তি বের হতে পারে আমার ধারনাই ছিল না। রাজনীতি, ক্ষমতা কি মানুষকে এতটা নিচ নামায়? নাকি খোলস থেকে বেরিয়ে আসতে সাহায্য করে?
আবীর নিয়মিত আসছিল না বলে সৈকত আবীরের প্রতি ক্ষোভ আর সন্দেহ পোষন করছিল। আমাকে বলল, ও নিতাইয়ের পক্ষে কাজ করছে! বুঝলি না, “হিন্দু হিন্দু ভাই ভাই”!
আমি হেসে বললাম, যেমন আমি তোর ভাইয়ের জন্য করছি, “মুসলমান মুসলমান ভাই ভাই”!
ভুরু কপালে তুলে সৈকত জিজ্ঞেস করলো, মানে?
এমন সময় আবীর এসে উপস্থিত হলো।
সৈকত বলল, শালা, ভোটটা তো নিতাইকেই দিবি!
আবীর অবাক হয়ে বলল, ওই শালাকে দিমু ক্যা, ওরে তো চিনিই না।আমাগো বড় ভাই থাকতে নিতাই-ফিতাইরে দিমু কোন দু:খে?
সৈকত আমার দিকে বিশেষ ভঙ্গিতে চোরা চাহনিতে হাসে। যার মানে, আহারে আমি বুঝি না তুমি কাকে ভোট দিবা…!
এই বিশ্রী পরিবেশটা আমার আর সহ্য হচ্ছিল না।আমি কোনদিন ভাবিনি আমার বন্ধুদের মধ্যে এই বিষবাস্পটা আসবে। একদিন সকালবেলা গিয়ে শুনি আবীরকে সৈকত কেম্প থেকে বের করে দিয়েছে। আবীরকে সৈকত নিতাইয়ের চর বলে মনে করে। ওদের মিটিং চলছিল, আবীর গিযে বসে থাকায় সমস্যা হচ্ছিল, সৈকত আবীরকে খুবই রুঢ়ভাবে বের হয়ে যেতে বলে…। আবীর আর সৈকতের সম্পর্কটা এভাবেই পুরোপুরি ভেঙ্গে যায়।আমিও মনে মনে বলছিলাম, “এবার ফিরাও মোরে”!ইলেকশানটা একবার শেষ হোক, আর এ মুখোই হবো না…।
খুরশিদ ভাই খুবই অল্প ভোট পেয়ে হেরে গেলেন।নিতাই যে খুব ভাল লোক তা না।খুরশিদ আর নিতাই কার্বন কপি। তবু হিন্দু বলেই হিন্দুরা তাকে বেছে নিয়েছে! খুরশিদ ভাইকে এই হিন্দুরাই সবচেয়ে বেশি ভোট দিয়ে জিতিয়ে ছিল আগেরবার। খুরশিদ ভাই বেমালুক সে কথা ভুলে গেলেন। আমাকে একজন ফোন করে বলল, হিন্দুপাড়ায় বাড়ি-ঘর আর কিছু রাখে নাই! একবার গিয়া দেখ…
তখনই দেখতে ছুটে গেলাম।দূর্গা ঠাকুরের একটা মন্দির আছে, সেখানে হামলা হয়েছে।গরীব হিন্দুদের উপরই হামলাটা হয়েছে। এসব দেখে আমার কি হবে? আমি কারুর জন্য তো কিছু করতে পারব না। কিন্তু আমিও যে এই ঘটনার একজন ভিলেন, নেপথ্য ইন্দনকারী দলের একজন, তা একটু পরেই জানতে পারলাম। চলে আসবো এমন সময় পিছন থেকে খপ্ করে আমার হাতটা কেউ চেপে ধরলো। চেয়ে দেখি আবীরের বাবা!
আমাকে টেনে আড়ালে নিয়ে গিয়ে বলল, কি করছ দেখো!আমাদের তোমরা চেনো না? আমার বাড়িতে ঢুকে যেভাবে গালাগালি করছে সেটা শিখায় না দিলে বাইরের লোক জানবো ক্যামনে? আমার পোলার লগে তোমরা চলো নাই? তার গায়ে হাত উঠলো ক্যামনে তোমাগো!…
-আমি এর কিছুই জানি না কাকা!
-কেউ-ই এখন কিছু জানে না। খুরশিদও বলে সে কিছু জানে না।… কন্ঠ ভিজে এলো অখিল কাকার।হাত ছেড়ে দিলেন আমার। ঘুরে চলে গেলেন অন্য একটা গলি ধরে।
আসলেই আমরা কেউ কিছু জানি না।এসবের শেষ কোথায়? মানুষের মানুষ হবার গল্প কবে লেখা হবে?
অখিল কাকা আর জিন্নাত কাকা এখনো চায়ের দোকানে বসে একইরকম করে আড্ডা জমান কিনা জানি না। হয়ত জমান। কিন্তু চকচকে মসৃন ফলকের নিচে অন্ধকারে লুকিয়ে থাকা কুৎসিত প্রাণীগুলো প্লেগের জীবাণুর মত হয়ত অপেক্ষায় থাকে কোন একটা উপলক্ষ্যের আশায়… স্রেফ একটা উপলক্ষ্য…
darun.
লেখাটা পড়ে কিছুটা হতাশাই জাগল…
@সৌরভ, যদিও বুঝিনি আপনার মনোভাব, তবু পড়ার জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।
ঘৃনা করবেনা নাতো কী করবে? একেবারে বাল্যকাল থেকেই মস্তিস্কের মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় ওরা মলাউন,ওরা অভিশপ্ত,ওরা জাহান্নামী,ওরা আল্লাহর কাছেই ঘৃন্য।
ওদের যা খুশী তাই করতে পার,তাতে কোন পাপ নাই।
ধর্মই অন্য জাতিকে ঘৃনা করা শিক্ষা দেয়।
তবে গল্পটা আর একটু সংখেপে হলে ভাল হত।
ধন্যবাদ শুশুপ্ত
@বাবু, ধন্যবাদ আপনাকে। ভাই আমার নামের বানানটা “সুষুপ্ত” হবে। 🙂
আপনার লেখাটি পড়ে অনেক সৃতি মনের পর্দায় ভেসে উঠলো।
প্রথমেই যে কথা মনে এলো সেটা হল স্কুল জীবনের সৃতি।
আমাদের খুলের মেয়েদের ক্লাসের ধর্ম শিক্ষক আমাদের সমাজ পড়াতেন। একদিন তিনি আমাকে বললেন “তুমি কি জানো পৃথিবীতে কোন ধর্মের মানুষ বেশী??? আমি বললাম না আমি জানিনা। সে বলল মুসলিম সবচাইতে বেশী; তারপরে হিন্দু। খৃস্টান তো শুধু আমেরিকা ছাড়া আর কোথাও নেই। সংখ্যায় খুবই নগণ্য। সেই নগণ্য খ্রিস্তানেরা কি সব অনৈতিক কাজ করে তার যে বর্ণনা তিনি সেদিন আমাকে দিয়েছিলেন সেগুলো মনে পড়লে এখনো কান দিয়ে ধুয়ো বের হয় আমার।
সেদিন আমি জানতাম না; কিন্তু আজ জানি বিশ্বে মুসলিমদের সংখ্যা একক ভাবে ক্যাথলিক খৃষ্টানদের চাইতেও কম। আর পৃথিবীর হিসেবে সংখ্যালঘু এই সম্প্রদায় কি কি করছে এবং করেছে তা স্যারকে গিয়ে বলে আসতে ইচ্ছে হয় মাঝে মাঝে।
এই জ্ঞান নিয়ে তিনি আমাদের শিক্ষক ছিলেন; লজ্জা লজ্জা।
আমাদের ধর্ম ক্লাস নিতেন আমিনুল হক স্যার; ক্লাসের হিন্দু ছেলেদের জন্য সেটা হত একটা বিভীষিকাময় ক্লাস। তিনি ক্লাসের হিন্দু ছেলেদের তার ক্লাসের সময় একদম পেছনের সিটে পাঠিয়ে দিতেন। তার আচরন দেখে মনে হত হিন্দু ছেলেদের থেকে তিনি শুয়োরের মলের গন্ধ পান।
হিন্দুদের নিয়ে এত বেশী অশ্লীল কথা তিনি কিভাবে ক্লাসে বলতেন সেটা এখন মাঝে মধ্যে চিন্তা করে অবাক হই। মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে স্যারের সাথে দেখা করে আসি; কিন্তু হয়ে ওঠে না।
তবে আমাকে তিনি বেশ সমাদর করতেন; কারণটা বেশ অদ্ভুত লাগতে পারে অনেকের কাছে।
ক্লাস ৬এ থাকতে একদিন ক্লাসে স্যার এক এক জনকে আমপারার এক এক সূরা ধরতে লাগলেন। ক্লাসে এসে তিনি প্রথমেই বলতেন “হিন্দুরা পেছনে চলে যাও (আমাদের স্কুলে হিন্দু ধর্ম ক্লাস হত না)” তাই সামনে যারা আছে তারা সবাই মুসলমান বলেই তিনি ধরে নিতেন।
আমাকে তিনি সূরা নাস বলতে বললেন।
তখন সবাই বলতে লাগলো “স্যার ও তো খৃস্টান”। কিন্তু আমি তাদের কথা উপেক্ষা করে সূরা নাস মুখস্ত বলে দিলাম। সেদিন সবাই অবাক হল; স্যার আমার প্রতি ইম্প্রেসড হলেন। সেদিন ক্লাসে জরিপ করে দেখা গেল যেখানে অন্য মুসলিম ছাত্ররা গড়ে ৫-৭ টি সূরা মুখস্ত জানে সেখানে আমি জানি ২০+ টি সূরা মুখস্ত।
তিনি আজীবন মনে করতেন আমি ইসলামের প্রতি আসক্ত; তাই আদর পেতাম অনেক বেশী।
কিন্তু স্যার আমি ইসলামে আসক্ত ছিলাম না; আসক্ত ছিলাম ধর্মের প্রতি। সকল ধর্মের প্রতি ই।
যতোটুকু জানলে আস্তিক থাকা যায় তার থেকে একটু বেশী জেনে ফেলেছিলাম দেখেই আজ আমি নাস্তিক। আপনি আজ আমা দেখলে হয়তো আমাকে ইসলাম বিদ্বেষী বলে মনে করতেন; হয়তো জবাই করতেও চাইতেন। কে জানে।
এই দুজন স্যারের কথা মনে পড়তেই এখন মনে হচ্ছে ধর্ম শিক্ষক হতে হলে জ্ঞান না থাকলেও হয়। মন ভর্তি পরধর্মবিদ্বেষ এবং বুক ভর্তি আল্লাপ্রেম থাকলে যে কেউ মাওলানা হয়ে যেতে পারে।
আমাদের স্কুলে সব যে এমন ছাগু শিক্ষক ছিল তা কিন্তু নয়। আমার পছন্দের শিক্ষক একজন ছিলেন তিনি আমাদের ইংরেজি গ্রামার পড়াতেন। সবসময় পাঞ্জাবী পায়জামা পড়তেন এবং আতর মাখতেন। নিয়মিত নামাজ পড়তেন। কিন্তু তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক। সব বিষয়ে তার জ্ঞান ছিল অসাধারণ। সমাজতন্ত্রের এবং কার্ল মার্ক্সের প্রতি ভাললাগার জন্ম তার শিক্ষাতেই। তিনি আমাদের ইংরেজির পাশাপাশি দর্শন, রাজনীতি, নৈতিক শিক্ষা সব কিছুই দিতেন।
উপরে উল্লেখিত ৩ জনই ৫ বেলা নামাজ পড়তেন; কিন্তু কত ২ টি আলাদা ধরনের দর্শনে তারা বিশ্বাসী ছিলেন। দুজন পরধর্মবিদ্বেষী মূর্খ আরেকজন মুসলিম হয়েও জ্ঞান প্রেমী।
তবুও এখন মনে হয় শরিফুল স্যারের মনের কোনাতেও হয়তো পর ধর্ম বিদ্বেষ লুকিয়ে ছিল। কারন আস্তিক হলে এবং কোরআন পড়লে পরধর্ম বিদ্বেষী না হয়ে থাকা যায় কি ???
কথাটি সকল ধর্মের বিশ্বাসীদের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
নিজ ধর্মে বিশ্বাস করা মানেই বাকী সব ধর্মকে ভুয়া বলা; নাস্তিকদের সাথে তাদের পার্থক্য তারা নিজ ধর্ম বাদে বাকী ধর্মকে ভুয়া বলেন আর নাস্তিকেরা সকল ধর্মকেই ভুয়া বলে এবং প্রমানও করে।
লিখতে লিখতে অনেক অপ্রাসঙ্গিক কথা বলে ফেললাম হয়তো; এর জন্য দুঃখিত।
কোন কিছু বলা শুরু করলে আমার আবার কোনদিকে হুঁশ থাকেনা 😛
@এম এস নিলয়, আপনার মন্তব্য পড়তে পড়তে আমার স্কুল জীবনের এইরকম স্মৃতির কথা মনে পড়ে গেলো। কি জানি সেসব লিখে ফেলবো কিনা। আপনার অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
সুষুপ্ত ভাই, ভাল লিখেছেন | (Y)
ধর্ম মানুষকে সাম্প্রদায়িক করে গড়ে তুলে আর ধর্মভিত্তিক রাজনীতি মানুষকে হিংস্র পশুতে পরিনত করে !! সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসমুক্ত দেশ গড়তে হলে মানুষকে অসাম্প্রদায়িক করার পাশাপাশি রাজনীতিকে ধর্মের প্রভাব মুক্ত করাও জরুরী| যে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে বাঙ্গালী মুক্তিযুদ্ধ করেছিল, সেই অসাম্প্রদায়িক চেতনা অর্থাৎ “মুক্তিযুদ্ধের চেতনা” কে তরুণ প্রজন্মের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়াই হতে পারে সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসমুক্ত দেশ গড়ার প্রথম পদক্ষেপ | (FF)
@তারিক,
কিন্তু খোদ যারা ফিডম ফাইটার ছিল তারাই যখন সাম্প্রদায়িক, তখন? “মুক্তিযুদ্ধের চেতনা” এই নামে “ইসলাম এন্ড কোং” -এর প্রোডাক্টও বাজারে আছে! হেফাজতও রাস্তায় নেমেছিল মাথায় জাতীয় পতাকা বেধে! জামাত মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দিয়ে আসছে আরো আগে থেকে। সেখানে মুক্তিযোদ্ধারা লাইনও দেয়। সব মিলিয়ে এখন আপনি যখন “মুক্তিযুদ্ধের চেতনা” বলতে একটা প্রগতিশীল ও মুক্তবুদ্ধির, অসাম্প্রদায়িক অবস্থানের কথা বুঝাবেন ওমনি আপনাকে জেকে ধরবে কেউ কেউ, মুক্তিযোদ্ধারা ধর্মহীনতার জন্য যুদ্ধ করেনি! আপনাকে বুঝাবো হবে, পাকিস্তান ভেঙ্গে বাংলাদেশ করা হয়েছে, ইন্ডিয়া বা সোভিয়েত ইউনিয়নের মত রাস্ট্র হবার জন্য না,একটা মুসলিম রাষ্ট্র হিসেবেই তার আত্মপ্রকাশ হবে…।
@সুষুপ্ত পাঠক,
ইন্ডিয়া হয়ত থিওরি অনুসারে ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র, কিন্তু বাস্তবে এটাকে কতখানি ধর্ম নিরপেক্ষ রাষ্ট্র বলা যেতে পারে? বাবরী মসজিদ ভাঙ্গা, গুজরাটে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা আরো কত কি!!
আর সোভিয়েট মনে হয় না খুব কল্যানকামী রাষ্ট্র ছিল, যাই হোক।
@অর্ফিউস, দুটো রাষ্ট্রের নাম করেছি কোন কল্যাণকামী রাষ্ট্র বুঝাতে নয়। যে কোন মোল্লার কাছেই এই দুটো রাষ্ট্র কাফের রাষ্ট্র, নাস্তিক, ইসলামের শত্রু। তাদের কাছে যেমন বর্তমান আওয়ামী লীগ এখনো ধর্মনিরপেক্ষ দল হয়েই আছে। তারা এভাবেই দেখে থাকে। আমার কমেন্ট তারা কি বলবে তারই একটা নমুনা দিয়েছি। আক্ষরিক অর্থে আমার বক্তব্য না। ধন্যবাদ।
@সুষুপ্ত পাঠক ভাই ,
মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হওয়া মুক্তিযোদ্ধা ছাড়াও কিছু মানুষ মুক্তিযুদ্ধ করেছে যাদের ভিন্ন উদ্দেশ্য ছিল এবং ঐ কিছু সংখ্যক মানুষই পরবর্তীতে রাজাকার/স্বাধীনতা বিরোধীদের সাথে হাত মিলায় | এদের জন্য উপযুক্ত লাইনটা হল:
এককালের রাজাকার চিরকালেই রাজাকার, কিন্তু এককালের মুক্তিযোদ্ধা চিরকালের মুক্তিযোদ্ধা না ! 🙁
এখানে কিছু কথা আছে যেমন ধরুন আমরা যদি কোন সাধারন ধর্মপ্রাণ মানুষকে প্রগতিশীলতা/অসাম্প্রদায়িকতা বলতে “ধর্মহীনতা” বুঝাই তাহলে সেই মানুষটির পক্ষে প্রগতিশীলতা/অসাম্প্রদায়িকতাকে গ্রহণ করার তো প্রশ্নই আসে না, বরং ঐসব বিষয়ের প্রতি তার ঘৃনা জন্মানোটাই স্বাভাবিক !! সেক্যুলার সমাজ গঠনে সেক্যুলারিস্টদের এইসব বিষয়ও মাথায় রাখা জরূরী |
বিশেষ করে ফেসবুকে কিছু সেলেব্রিটি আছে যারা সারাদিন ধর্ম আর লুইচ্চ্যা অবতারদের নিয়ে লেখে কিন্তু রাতে প্রগতিশীলতা/অসাম্প্রদায়িকতার নাম নিয়ে ঢেকুর তুলে ! 😕
@তারিক,
ভাই যদি কিছু মনে না করেন তবে আপনার শুভাকাঙ্খী বন্ধু হিসাবে একটা অনুরোধ করব। শব্দের ব্যবহার যদি আরেকটু সহজ হয় তাহলে মনে হয় সবার জন্যই ভাল, না হলে নিজেদেরকে ওদের লেভেলে নিয়ে যাওয়া হয় বলেই আমার মনে হয়।ধন্যবাদ জানবেন।
@অর্ফিউস ভাই, ব্লগে কারও কথাতেই মাইন্ড করি না ! 🙂
আসলে তারা যেভাবে লেখে সেভাবেই লেখতে গিয়েই “ঐ” শব্দটি ব্যবহার করেছিলাম | উক্ত শব্দটি ব্যবহারে কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি |
@সুষুপ্ত পাঠক,
মুক্তিযুদ্ধ করলেই কিন্তু একটা লোক এমনি এমনি অসাম্প্রদায়িক হয়ে যায় না, স্যেকুলার হয়ে যায় না। মুক্তিযুদ্ধ ছিল পাকিস্তানী জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে বাঙালী জাতীয়তাবাদের লড়াই। আর এই বাঙালী জাতীয়তাবাদের ইতিহাসের মধ্যেই লুকিয়ে রয়েছে এর সাম্প্রদায়িক চরিত্র। বাঙালী জাতীয়তাবাদের উৎপত্তি বাঙালী মুসলিম জাতীয়তাবাদ থেকে পৃথক হয়েই, যা কিনা শুরু হয়েছিল বাঙালী হিন্দুর থেকে নিজের স্বতন্ত্র পরিচয় বিনির্মানের জন্য আলাদা স্বদেশভূমির জন্য আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। বাঙালী জাতীয়তাবাদ বাঙালী মুসলিম জাতীয়তাবাদের সন্তান। এই বাঙালী মুসলিম জাতীয়তাবাদ থেকে মুসলিম কথাটা কলমের এক টানে কেটে বাদ দেওয়া সহজ, কিন্তু বাস্তব জীবনে স্যেকুলার জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠা অত্ত সহজ নয়।
@ফারহানা আহমেদ, কঠিন সত্য! অপ্রিয় সত্য!
সহনশীলতার ওই রকম ফলক আর আছে এখনো? আমার তো মনে হয় ওটা সম্পূর্ন ভাবেই পচে গেছে। মনে হয় ফের নতুন করে শুরু করতে হবে। আজকের শিশুদের খোলা মনে বড় করতে পারলে কিছু হতে পারে দূর ভবিষ্যতে। অবকাঠামোয় কিলবিল করছে ওই সব পোকা, অনেক অনেক। ওদের বৃদ্ধি ঠেকাতে নতুন করে শুরু করা ছাড়া সাম্ভব্য কোন বিকল্পও তো চোখে পড়ছে না :-s
:))
@কাজী রহমান,
খুব কঠিন, যদি বাংলাদেশে বসবাস করতে হয় তাহলে খুব কঠিন। স্কুলে তো পাঠাতে হবে, সেখানেই নষ্ট হয়ে যাবে!
@সুষুপ্ত পাঠক,
শিশুমন মুক্তির কাজ ঘর থেকে শুরু এবং লালন করলে হয়তো কিছু হবে। শিশুর সবচেয়ে কাছের মানুষ যারা তারাই তো নানান ধর্মভয় ভুতপেত্নি দানবের ভয় শিশুমনে ঢুকিয়ে দেয়। আধুনিক মা বাবারা এই ক্ষতিটা না করলে ভালো কিছু হতেই পারে। শিশুটি ঘরে অন্তত প্রশ্ন করবার সাহস পাবে। মা বাবা বা ঘরে বড়দের সহযোগীতায় আজকের শিশু হয়তো স্বাভাবিক মানুষ হয়ে বড় হতে পারে। এভাবে অদূর ভবিষ্যতের জনগোষ্ঠীর কিছু অংশ একটু সম্ভবত একটু ভালো হয়ে দাঁড়াতে পারবে। রাতারাতি কিছু আশা না করে দীর্ঘ মেয়াদী পদ্ধতির ভাবনা ভাবাই মনে হয় ভালো।
একদম সঠিক। এই মারাত্মক ভুলটি ধরিয়ে দেয়ার জন্য আপনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। আমি যাচাই করে দেখছি আমার সম্পাদনার সুযোগ আছে কিনা, যদি থাকে লাইনটা ঠিক করে নিবো। নিজে মানবতাবাদী ও ধর্মহীন হয়েও এরকমভাবে মানুষকে সাম্প্রদায়িকভাবে লেখায় চিহ্নিত করাটা দুঃখজনক। ভবিষ্যতে লেখায় আরো সচেতন ও সজাগ থাকবো। আপনাকে অশেষ ধন্যবাদ।
মনোজাগতিক কুৎসিত রূপের কিছু বাস্তব উদাহরণ সামনে নিয়ে এসেছেন অভিজ্ঞতার আলোকে। সমাজের অধিকাংশ মানুষই অন্যকে প্রথমে বিবেচনা করে সে হিন্দু কি মুসলিম সেই দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে। অপ্রিয় হলেও কথাটি সত্য।
যে মানুষটি প্রচলিত ধর্মাচারে আস্থা হারিয়ে নাস্তিক হিসেবে জীবন যাপন করে তাঁকেও মানুষ ট্যাগ করে হয় হিন্দু নাস্তিক নয় মুসলিম নাস্তিক হিসেবে। আমার অফিসের বস প্রায়ই তাঁর স্কুল জীবনের শিক্ষক কিংবা বাল্যবন্ধুদের নিয়ে আলাপ করেন আমার সাথে। আলাপের শুরুটা হয় এভাবে- ‘আমার এক বন্ধু ছিলো, আপনাদের ধর্মের………’ কিংবা ‘আমাদের অংক ক্লাস নিতেন আপনাদের ধর্মের অমুক স্যার, খুব ভালো পড়াতেন……।’
এটা আমাদের একটা বীভৎস অভ্যাস হয়ে দাঁড়িয়েছে। ধর্ম পরিচয় ছাড়া কাউকে আমরা ইন্ট্রোডিউজ করতে পারিনা। নিজের অজান্তেই সেটা চলে আসে যেনো! কারো সাথে পরিচিত হতে গেলে কারো কারো মন উসখুস করে জানতে সে কোন ধর্মের! কলেজ পড়া কালীন সময়ের একটা ঘটনা বলি-
বাসে করে গ্রাম থেকে শহরে আসছি। পাশে এক ভদ্রলোক অবিরাম কথা বলে যাচ্ছেন আমার সাথে। ভারত- পাকিস্তান, বাবরি মসজিদ, সংখ্যালঘু নির্যাতন নানা বিষয়ে সে তাঁর বক্তব্য দিয়ে চলেছেন। আমি আগ্রহ নিয়ে হু হ্যাঁ করে যাচ্ছি তাঁর মনোজগতটা বুঝার জন্য। একসময় সে জিজ্ঞেস করলো ‘আপনার নাম কি ভাই?’ আমি একটু বাজিয়ে দেখার জন্য বললাম ‘সাগর’। কারণ তাঁর ইতোমধ্যকার আলাপে মনে হয়েছে সে সাম্প্রদায়িক লোক,যদিও উভয় কুল রেখে উনি কথা বলছিলেন। প্রমাণ করার চেষ্টা করছিলেন উনি অসাম্প্রদায়িক। তিনি একটু থামলেন।
‘জ্বি পুরা নাম?’
আমি বুঝে গেলাম সে আসলে জানতে চায় আমি হিন্দু কি মুসলিম। বললাম- ‘সাগর চৌধুরী’।
একটু যেনো হতাশ হলেন। এবার এগুলেন টেকনিক নিয়ে। বাড়ি কোন গ্রামে জিজ্ঞেস করে বিজ্ঞের মতো জিজ্ঞেস করলেন ‘আপনার বাবার নামটা কি যেন’?
‘জ্বি আকাশ চৌধুরী।’
বেচারা পুরোপুরি হতাশ! আমি যতোই তাঁকে গল্প এগুনোর জন্য খোঁচাই, উনি এবার হ্যাঁ- হু তে চলে গেলেন। এই হচ্ছে অবস্থা।
একটু খেয়াল করবেন আপনার লেখার শুরুটা যদি এভাবে করতেন ‘অনেকদিন আগে এক গ্রাম্য মেয়ের সঙ্গে কথা বলছিলাম………’। ক্ষতি ছিলোনা। নিজের অজান্তেই হয়তো চলে এসেছে ‘এক গ্রাম্য হিন্দু মেয়ের সাথে কথা বলছিলাম’। আপনার বর্ণনা থেকেই পাঠক বুঝে নিতো মেয়েটি হিন্দু ছিলো কি মুসলিম।
বাকী সবটুকুই চমৎকার ভাবে বর্ণনা করেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে।
@দেব প্রসাদ দেবু, আমি কাউকে আমার নাম বললে শুধু নিলয় বলি; বেশী হলে এম এস নিলয় বলি। নিলয় নামটা এমন একটা নাম যেটা হিন্দু, মুসলিম, খৃস্টান যে কোনটাই হতে পারে। আমি কাউকে সেধে ধর্ম নিয়ে কিছু বলিনা। আমার পছন্দ ও নয়। সাধারণত কারো প্রশ্নের উত্তরে যদি বলি আমি নাস্তিক তবে সে বলে; “সেটা তো বুঝলাম কিন্তু তোমার আসল ধর্মটা কি”???
কি মুশকিল :/ আমার নাস্তিকতা কি তারা নকল মনে করে???
আসলে ভং ধরা আলেম পুরোহিত দেখে দেখে তারা আজীবন অভ্যস্ত; তাই নাস্তিকতাকেও তাদের কাছে ভং বলেই মনে হয়।
তারা এটা বোঝেনা যে ধর্ম সম্পর্কে কিছুই না জেনেও ভালোই পিওর আর ষ্ট্যাণ্ডার্ড মানের আস্তিক হওয়া যায় কিন্তু যতোটুকু জানলে একজন মানুষ আস্তিক থাকে তার থেকে কিছুটা বেশী না জানলে কেউ কখনোই নাস্তিক হতে পারেনা।
আমার ছেলে মেয়ের নাম আমি এমন কিছু রাখবো যার ভেতরে কেউ ধর্মের গন্ধ খুঁজে পাবেনা।
মনে মনে ২ টি নাম ঠিকও করে রেখেছি 🙂