পর্ব- ১
ঘটনার শুরু শাহবাগ আন্দোলন থেকে। ‘হেফাজতে ইসলাম’ ব্লগ দিয়ে যেসব নাস্তিক ব্লগার ইন্টারনেট চালায় তারা তাদের গ্রেফতার ও ফাঁসির দাবী করে বসল। শাহবাগ আন্দোলনের সময় প্রথম খুন হন রাজিব হায়দার। এরপর থেকে নাস্তিক ব্লগারদের নামে বিভিন্ন লিস্ট, সরকারের তরফ থেকে বিভিন্ন সর্তকবার্তা, এ নিয়ে বেশ যুদ্ধের ডামাডোল বাজতে থাকে। শাহবাগ সৃষ্টি হওয়ার ফলে কেউ বা ছবি তুলে নেতা বা উদ্দ্যোগক্তা হলেন কেউ আবার হেফাজতের উত্থানের ফলে পকেটের টুপিটা মাথায় দিলেন। হেফাজতের দাবীর মুখে সরকার কতিপয় নাস্তিক ব্লগার ধরার মিশনে নামল। এখানে বলে রাখা ভাল যে, ডিবি নাস্তিক চায় নাস্তিক্যবাদী লেখক নয়। তাই কে কী লিখেছে তা গুরুত্বপূর্ণ নয় ব্যক্তি অবিশ্বাসী হলেই চলবে।
১ এপ্রিল, রাত দশটার দিকে ডিবি পুলিশ আমাকে এক ছোট ভাইয়ের মাধ্যমে ডেকে নিয়ে হলের সামনে থেকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। প্রথমে তারা আমাকে ব্লগারদের নিরাপত্তার বিষয়ে মিটিং আছে বলে জানায়। ছোট ভাইটিও ব্লগার। ধরি তার নাম ‘ক’। গাড়িতে বিপ্লব ভাই বসে আছেন। বিপ্লব ভাইয়ের সাথে এর আগে একবার দেখা হয়েছিল। তাই আর মিটিংয়ের কথা উড়িয়েও দিলাম না। গাড়িতে ওঠার পর গাড়ী চলতে শুরু করল। ডিবি এক অফিসার ব্লগ ও কিছু ব্লগার নিয়ে কিছু কথা জিজ্ঞেস করতে শুরু করল। খেয়াল করলাম ছোট ভাইটি পেছনে ভয়ে চুপসে আছে। আমাকে ব্লগার ‘শ’ সর্ম্পকে জিজ্ঞেস করতে শুরু করল। আমি ঐ ব্লগার সর্ম্পকে যতটুকু বলা উচিত ততটুকু বললাম। তারা আমাকে গ্রেফতার করতে আসেনি। তারা ব্লগার শ’কে চায়। তাকে আমি চিনি এই কারণে আমাকে নেওয়া হয়। আমি যেন; শ’কে বাসা থেকে ডেকে আনতে পারি। কারণ তারা জানে আমি ঐ ব্লগারের সাথে আমার একটু যোগাযোগ আছে। ১ এপ্রিলের আগে অনেক ব্লগার ও অনলাইন এক্টিভিস্টরা ডিবি অফিসে নিয়মিত হাজিরা দিয়ে এসেছে। সেখানেই ব্লগার শ’কে ধরার জন্য আমার নামটি আসে। যাই হোক, আমাকে এক ব্লগারকে বাসা থেকে নামিয়ে আনতে বলা হয়। আমি তা করতে পারব না বলে জানিয়ে দিই। তারপর তারা অনেকক্ষণ ঐ বাসা সামনে কী পরামর্শ করল জানি না। তারা আমাকে গাড়িতে গিয়ে বসতে বলল। আমি গাড়িতে গিয়ে বসি । তারপর গাড়ি চলতে শুরু করল শাহবাগের দিকে। শাহবাগে ছোট ভাইটিকে নামিয়ে দিয়ে গাড়ি চলতে শুরু করল ডিবি অফিসের দিকে। আমি আর বিপ্লব ভাই চুপ করে বসে আছি। আমরা তখনও অনুমান করতে পারিনি আমরা গ্রেফতার হতে চলছি। কী হচ্ছে, কী হবে কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। ডিবি অফিসে বসিয়ে রাখার পর রাত প্রায় ২.০০ দিকে আমাদের দুই জনকে সেল এর সামনে নিয়ে যাওয়া হয়। সেল এর সামনে গিয়ে দেখি রাসেল ভাই বসে আছে। আমি রাসেল ভাইকে দেখে সত্যি অবাক হলাম। কারণ আর কিছু হোক এই মানুষটি এখানে বসে থাকার কথা না। পরে জানতে পারলাম- ডিবি ব্লগ সর্ম্পকে জানতে চায় তাই রাসেল ভাই এখানে এসেছিলেন ব্লগ সর্ম্পকে তাদের ধারণা দেবার জন্য। ডিবি অফিসে আসার সময় রাসেল ভাই’র বৌ লিপি ভাবি তাকে বারণ করেছিলেন ডিবি অফিসে না যাবার জন্য। এই বারণ করার বিপরীতে রাসেল ভাইয়ের কথা ছিল- ডিবি ব্লগ সর্ম্পকে জানতে চাচ্ছে। আর রাষ্ট্রের একজন নাগরিক হিসেবে আমার উচিত রাষ্ট্রকে সাহায্য করা। তারা যদি ব্লগ সর্ম্পকে জানতে চায় তাহলে কেন সাহায্য করব না।
বিপ্লব ভাই রাজিব হায়দার হত্যা মামলায় সাহায্য করার জন্য অনেক দিন ধরেই ডিবি অফিসে যাতায়াত করছেন। ব্লগে কী হয়, কী জন্য ক্যাচাল লাগে এ নিয়ে ডিবি জানতে চেয়েছে। বিপ্লব ভাই এ বিষয়ে বলার জন্য রাসেল ভাইকে ডিবি অফিসে আসতে বলে। কে জানত ডিবিকে সাহায্য করতে আসার কারণে তার জন্য অনেক বড় একটা পুরষ্কার অপেক্ষা করছে। রাত ১১.০০ নাকি ভাবি রাসেল ভাইকে কল করে! রাসেল ভাই ভাবিকে জানায়; ডিবি তাকে বাসায় নামিয়ে দিয়ে আসবে, চিন্তার কোন কারণ নাই। আমাকে সারা রাত সেলের সামনে একটা কম্বলের উপর বসিয়ে রাখা হয়। রাত ৩.০০টার দিকে রাসেল ভাই ও বিপ্লব ভাইকে হ্যান্ডক্যাফ পরিয়ে বাসায় নিয়ে যায় এবং বাসা থেকে কম্পিউটার, মডেম নিয়ে আসে। সকাল বেলায় আমাদের জন্য যে জিনিস অপেক্ষা করছিল তার জন্য আমরা কেউ-ই প্রস্তুত ছিলাম না। আমরা সকাল হওয়ার পরও কিছুই বুঝছিলাম না যে, আমরা আসলে কোথায় যাচ্ছি বা কেন-ই আমাদের বসিয়ে রাখা হল। সকাল এগারটার দিকে আমাদেরকে মিডিয়া সেলে নিয়ে যাওয়া হল। জনগণের সামনে আমাদের কম্পিউটার চোরের মতোন উপস্থাপনা করল। আমাদের কাছে সবচেয়ে বিব্রত বিষয় ছিল আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগটি!
ধর্মীয় উষ্কানিমূলক লেখার অভিযোগে তিন ব্লগার আটক !!!
আমরা প্রতিটি সময় ধর্মীয় উষ্কানি, সাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মীয় রাজনীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছি কিন্তু আজ রাষ্ট্র-ই আমাদের সেই অভিযোগে আটক করেছে!!! এর থেকে বেদনার আর কী হতে পারে। তারপর আমাদের সিএমএম কোর্টে নেওয়া হয় এবং আদালত সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে। সারা দিন না খাওয়া ছিলাম। আর ব্লগানোর জন্য এমন পরিস্থিতিতে কেউ পরতে পারে তা আমাদের ভাবনার বাহিরে ছিল। ঢাকা শহরে আমার তেমন কোন আপনজন নেই তার উপর আমার বাবা-মা ঢাকার তেমন কিছু চিনে না। তার উপর এমন এক পরিস্থিতি সৃষ্টি হল যে, সে সময় আমি নিজের ভাগ্যকে সময়ের হাতেই ছেড়ে দিলাম।
পর্ব- ২
ব্লগ ও ব্লগার সর্ম্পকে বেশির ভাগ সাধারণ মানুষের যা ধারণা, ডিবির ধারণাও তার থেকে উন্নত নয়। আমাদের রিমান্ডে আনায় মোটামুটি ডিবি অফিসে খুশির বাতাস বয়ে গেল। আমাকে আর বিপ্লব ভাইকে এক সেলে আর রাসেল ভাইকে অন্য একটা সেলে রাখা হয়। আমাদের সেলে প্রবেশ করার পর এক ডিবির লোক আমাদের উদ্দেশ্য করে উক্তি করে- এদের না খাইয়ে মেরে ফেলা উচিত!!! এছাড়াও আরো নানা রকম উক্তি শুনে বুঝতে পারছিলাম; সাধারণ জনগণ ও কাঠ মোল্লাদের সাথে এদের চিন্তায় ও ধ্যান-ধারণায় তেমন কোন তফাৎ নেই। সারা দিনের শ্রম ও না খাওয়ার কারণে আমরা দুই জনই ক্লান্ত হয়ে পড়ি। কিন্তু আমরা সেলে প্রবেশ করার পর থেকে অনেকেই আমাদের নিয়ে কৌতুহলি হয়ে উঠে। তারা বিভিন্ন প্রশ্ন করতে থাকে। আমরা এটা-সেটা বলে এড়িয়ে যাচ্ছিলাম। কিন্তু আমরা ততক্ষণে বুঝতে পারছিলাম সেলের সবাই বুঝে গেছে আমরা ব্লগার। একদিকে ঘুম পাচ্ছে অন্য দিকে রাসেল ভাই একা, ভাইয়ের জন্যও চিন্তা হচ্ছে। আমরা যে সেলে ছিলাম তাতে খুব বেশি হলে; স্বাভাবিক ভাবে ১২-১৫ জন থাকা যাবে। কিন্তু সেই সেলের লোক সংখ্যা ছিল ৪০ জন। বুঝতে পারছিলাম রাতে হয়তো জেগে থাকতে হবে কারণ ঘুমানোর কোন জায়গা নেই। কেউ জেগে গেলে তার জায়গাতে হয়তো ঘুমানোর সুযোগ হতে পারে। কারণ গত রাতেও দেখেছিলাম অনেকেই রাতে সেল-এ দাঁড়িয়ে থাকে। আমরা ডিবিকে যতটা না ভয় পেয়েছি তার থেকে অনেক ভয় পেয়েছি সেলের মানুষ গুলোকে। কারণ ওখানে আসিফ মহিউদ্দিনকে যারা কুপিয়েছে তারাও উপস্থিত ছিল। সুতরাং আমরা ডিবির হেফাজতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছিলাম।
সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা ঘটেছে রাসেল ভাইয়ের ক্ষেত্রে। রাসেল ভাই সেল-এ একা ছিলেন। যখন-ই সেল-এর মানুষ গুলো শুনল সে ব্লগার তখনই সবাই মিলে তাকে গালাগালি করা শুরু করে দিয়েছে। দুই জন ব্যক্তি রাগে কাঁপছিল কারণ তারা রাসেল ভাইকে মারতে পারছে না। ঐ সময়কার উপলব্ধি গুলো কখনোই অন্য কাউকে বোঝানো সম্ভব না। কতোটা বাজে পরিস্থিতি হলে ব্লগার শোনা মাত্র-ই মানুষ হত্যা করতে চায়, মারতে চায়। ব্লগার মানেই নাস্তিক। বা নাস্তিক মানেই ধর্মকে গালাগালি করা, এমন ভাবনা থেকেই এমন আচরণ। আমি আর বিপ্লব ভাই রাসেল ভাইকে নিয়ে এমন ভয়েই ছিলাম।। সব কিছু মিলিয়ে তখন মনে হচ্ছিল আমরা মনে হয় দান্তের নরকে আছি। তবে দাস্তের নরকে নিরপরাধ কেউ ছিল না কিন্তু ডিবির ঐ সেল-এর ভেতরের নরকটাতে অনেক মানুষ ছিল যারা শুধু সন্দেহের ভিত্তিতে ২০-৩০ পর্যন্ত পঁচে গলে মরছে। আমরাও তাদের সাথে যোগ দিলাম। কয়েক ঘন্টা পর বিপ্লব ভাইকে সেল থেকে নিয়ে যাওয়া হয়। আমি প্রায় ১.৩০ ঘন্টার মতন একা সেল-এ বসে ছিলাম। তখন নিজেকে যতটা অসহায় লাগছিল এমন অসহায়ত্ব কখনো ভর করেনি আমাকে। আমার সাথে কেউ একজন ছিল কিন্তু এখন আমি সর্ম্পূণ একা! পরে আমাকেও সেল থেকে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে বিস্তারিত জানতে পারলাম।
রাসেল ভাই সেলে থাকা অবস্থায় প্রেসার বেড়ে গিয়ে ঘাড় ফুলে যায় এবং তার সাথে সেল এর মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা। এই বিবেচনায় রাসেল ভাইকে অন্য একটা রুমে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু রাসেল ভাই ডিবি অফিসারকে আমাদের নিরাপত্তার খাতিরে যেন তার সাথে নিয়ে আসা হয় তার জন্য অনুরোধ করেন। তাই নিরাপত্তার খাতিরে ও রাসেল ভাইয়ের বারবার অনুরোধে আমাদের তিনজনকে এক রুমে রাখা হয়। তিনজন এক সাথে মিলিত হয়েছি তাই একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পেরেছি। জিজ্ঞাসাবাদের বিষয় না হয় নাই বললাম শুধু এতোটুকুই বলি; আমাদের ফেসবুক ও ব্লগের সকল পাসওয়ার্ড তারা নিয়ে নেয় যা আইনত বেআইনি, অপরাধ না করে যে শাস্তিটুকু আমরা পেলাম তা আমাদের জন্য কাম্য ছিল না। যতোটা পারা যায় ততটাই মানসিক ভাবে আমাদের ভেঙে চুরমার করে দেওয়া হয়। নাস্তিক মানে বিকৃত, ঘৃণ্য, কদাকার কোন মানুষ হয় এমনই ছিল তাদের ধারনা। কিন্তু কয়েকদিন আমাদের সাথে কথাবার্তা বলার পর তাদের অনেকের মধ্যে পরিবর্তন আসে। নাস্তিক বিকৃত রুচির মানুষ নয় তা তারা বুঝতে পারে। কারণ প্রথম দিকে তারা আমাদের সাথে যতোটা নেগেটিভ ছিল পরবর্তিতে অনেকটাই পজেটিভ আচরণ করে। একটা তথ্য দিয়ে রাখি, রিমান্ডে থাকা অবস্থায় লেখা কোথায় লুকিয়ে রাখসি তা বের করার জন্য সেসময় ডিবি অফিসে ডিবির (উত্তর) উপকমিশনার মশিউর রহমান ক্রসফায়ার এর হুমকি দেয়।
পর্ব-৩
১০ তারিখ আমাদের কোর্টে নিয়ে যাওয়া হবে তাই আমরা আশা করেছিলাম দশ তারিখে আমাদের জামিন হয়ে যাবে। রিমান্ডে থাকা অবস্থায় হেফাজত নামক শুয়র দলটির বর্বর ১৩ দফা শুনেছিলাম। ১৩ দফা শুনে মনে হল আমরা কী বাংলাদেশে আছি নাকি বাঙলাস্তানে আছি? সবার খুব উত্তেজিত ছিলাম ১০ তারিখ জামিন হলে হেফাজতকে নিয়ে লেখা শুরু করে দেব কিন্তু ভাগ্যের নিমর্ম পরিহাস ১০ এপ্রিল আমাদের কারাগারে পাঠানো হয়। আমাদের তিন জনের সাথে যোগ হয় আসিফ ভাই। ১০ এপ্রিল ছিল রাসেল ভাই জন্মদিন। সবাই আশা করেছিলাম; জামিন হলে ঘটা করে রাসেল ভাইয়ের জন্মদিন পালন করব। জন্মদিন আমাদের কারাগারেই উদযাপন করতে হয়। সকল নিয়ম-নীতি শেষ করে রাত প্রায় ৯টার দিকে কারাগারের ১৪ নাম্বার সেলের ১০ নাম্বার রুমে যাওয়ার সাথে সাথে সেলে থাকা অজস্র মানুষ হিংস্র জন্তুর মতন আমাদেরকে গালা গালি শুরু করে। এমন নোংরা ভাষার গালি আমরা জীবনে শুনিনি। তারা গালি দিয়ে একটা একটা বিকৃত আনন্দ পাচ্ছে তা সহজে বুঝতে পারছিলাম। আমরা ব্লগার তাই আমাদের গালি দেওয়া তাদের অধিকার। আমাদের আগামী কাল সকালে হত্যা করা হবে বলেও হুমকি দিতে থাকে। এর পাল্টা জবাবে আমরা কিছুই বলিনি। আমি রাসেল ভাইকে শুধু বললাম; মানুষকে নৈতিক শিক্ষা ও সভ্য করে তোলার জন্য শুধু ধর্মের পাশাপাশি আরো কিছু যে দরকার হয় তা এদের দেখে প্রমাণিত হয়। রাতে আমাদের পাখা বন্ধ করে দেওয়া হয়। অজস্র গালাগালির পর হিংস্র জন্তুরা এক সময় কান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পরে। কিন্তু আমার আর রাসেল ভাইয়ের চোখে ঘুম নেই কারণ দুই জনের-ই প্রচণ্ড খিদা ছিল। একজন কারারক্ষীকে বলে কিছু ভাত ও মরিচ- পেঁয়াজ সংগ্রহ করি। ভাতে পানি দিয়ে লবন, পেঁয়াজ ও মরিচ দিয়ে এক প্লেটেই খাওয়া শুরু করি আমি ও রাসেল ভাই। বিপ্লব ভাই আর আসিফ ভাই দেখি ঘুমিয়ে পড়েছে। একজনের সেলে আমরা চারজন কোন রকম দিনপার করতে থাকি।
আমরা যেহেতু সবারই শত্রু এবং আমাদের নিরাপত্ত যেহেতু খুব-ই জরুরী ছিল তাই আমাদের দশ নাম্বার সেলে; আমাদের সাথে কথা বলা ও আমরা যেন অন্য কারো সাথে কথা না বলি তা জেল কর্তৃপক্ষ বলে দেয়। তাই বেশির ভাগ সময় সেলের রুমেই আমাদের সময় কাটাতে হতো। জামিনের জন্য আমরা প্রায় সবাই অস্থির হয়ে উঠি। রাসেল ভাইয়ের সাথে কেউ দেখা করতে আসলে রাসেল ভাই শুধু একটা কথাই বলত- পিচ্চিকে তারাতারি বের করে নাও। রাসেল ভাই আমাকে পিচ্চি ডাকত। অবশ্য আমি সব দিক থেকে রাসেল ভাই অপেক্ষায় পিচ্চি। কারণ রাসেল ভাই বাঙলা ব্লগের প্রথম দিককার ব্লগার। যখন তিনি ব্লগে চার ছয় হাকাতেন তখন আমি একরান নিতেই হাঁপিয়ে উঠতাম। আর জ্ঞান ও চেতনায় এতো বেশি স্পষ্ট ও চিন্তাশীল তার তুলনায় আমাকে পিচ্চি না আরো কম কিছু বলা যেতে পারে। রাসেল ভাইয়ের শুধু একটাই কথা- পিচ্চিকে বের কর সবার আগে, ও পরীক্ষা আছে সামনে, ওর এখনো পড়ালেখা শেষ হয় নাই; ওকেই বের কর সবার আগে। এই মানুষটার দুইটা বাচ্চা আছে কিন্তু তিনি নিজে বের না হয়ে আমাকেই বের করতে বলতেন সবসময়। আমারা সৌভাগ্য আমি রাসেল ভাইয়ের সাথে ছিলাম। জানি না তিনি না থাকলে আমার কী অবস্থা হতো। কারণ ঢাকায় মোটামুটি আমি একাই একজন মানুষ বলা যেতে পারে। আমার জন্য কাজ করে যাচ্ছিল শুধু ক্যামেলিয়া। সেও অনেক কিছু বুঝে উঠতে পারেনি। তবুও সারাদিন আমার জন্য বিভিন্ন মানুষের কাছে পাগলের মতন দৌড়াচ্ছিল। যেহেতু বয়স আমাদের বেশি না, কাউকে তেমনভাবে চিনি না তাই অনেক কিছুই ক্যামেলিয়া বুঝত না। উকিল থেকে শুরু করে বিভিন্ন কিছুতে লিপি ভাবি তাকে সাহায্য করে গেছেন। তাই বন্দি অবস্থায় রাসেল ভাই ছিলেন আমার ছায়া হয়ে। আর ঐ ছায়ার তলেই আমি দিন পার করছিলাম। লিপি ভাবি আর রাসেল ভাই আমার জন্য যা করলেন তা আমার কোন আপনজন করেনি।
১৪ এপ্রিল জনকণ্ঠে আমাদের নিরাপত্তা বিষয়ে রির্পোট হওয়ার পর আমাদের নিয়ে যাওয়া হয় আরেক সেলে, শাপলা ২; প্রথমে আমাদের চারজনকে একই সেলে রাখার সিন্ধান্ত হয় কিন্তু সেল এতো ছোট যে, ওখানে দুই জনের বেশি কোন ভাবেই থাকা সম্ভব না। আমরা তাদের বলি আমাদের আগের সেলেই পাঠানো হোক কারণ ঐ সেলে কোন রকম চারজন শুধু ঘুমাতে পারতাম কিন্তু এই সেলে চারজন বসারও জায়গা নেই। পরে তারা আমাদের চারজনের জন্য দুইটি সেলের ব্যবস্থা করে দেয়। আমি আর রাসেলে ভাই এক সেলে আর আসিফ ভাই ও বিপ্লব ভাই আরেক সেলে থাকা শুরু করে। পহেলা বৈশাখে আমাদেরকে আমাদের পরিবারের কারো সাথেই দেখা করতে দেয়নি কারা কর্তৃপক্ষ।
পর্ব-৪
শাপলা সেল-এ আমরা দিন অতিবাহিত করতে থাকি। বলা যায় জামিন পাওয়ার আশা আমরা বাদ দিয়ে দিই। কারাগারে থাকা অবস্থায় সবাই কম-বেশি অসুন্থ হয়ে পড়ি। আসিফ ভাই ঘাড়ের ব্যথার জন্য একটি বালিশ ম্যানেজ করতে চার দিন ব্যয় করতে হয়েছে। আমার এবং রাসেল ভাই প্রেশার, শরীরের দূর্বলতা ও কিডনির সমস্যায় ভুগতে থাকি। আর বিপ্লব ভাই তো ডিবি অফিস থেকেই অসুস্থ। সারা দিন বিপ্লব ভাই শুয়ে থাকতেন। আমরা কারাগারে কারা কর্তৃপক্ষের একপ্রকার মাথা ব্যথা হয়ে দাঁড়াই। কারণ আমাদের নিরাপত্তার জন্য তাদের সবসময় আমাদের আশেপাশে থাকতে হতো। অবশেষে আমাদের বঙ্গবন্ধু মেডিক্যালের প্রিজন সেলে পাঠান হয়। কারা কর্তৃপক্ষ যেন হাফ ছেড়ে বাঁচল। ডাক্তারদের সহায়তায় কিছুটা সুস্থ হয়ে উঠি। ৭ মে আমার জন্ম দিন ছিল। মজার ব্যাপার হল বিপ্লব ভাই জন্মদিন ডিবি অফিসে রিমান্ড অবস্থায় ছিল, রাসেল ভাই জন্মদিনের দিন আমরা কারাগারে আসি আর আমার জন্ম দিন কাটে হাসপাতালের বিছানায়। অতঃপর ১২ মে আমার আর রাসেল ভাই জামিন হয়। হাসপাতালে আসার সুবাধে আমরা বই পড়ার সুযোগটুকু পেলাম।
পর্ব-৫
আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ- আমরা সাম্প্রদায়িক উষ্কানি দিয়েছি। যা আমাদের জন্য খুবই বিব্রতকর। একজন ব্যক্তি ঈশ্বরে বিশ্বাস করে কী করে না তা রাষ্ট্রের কাছে কখনো গুরুত্বর্পূণ না। কারণ ধর্ম একান্তই ব্যক্তিগত বিষয়। আমরা অবিশ্বাসী এটাই আমাদের সবচেয়ে বড় অপরাধ। ডিবি অফিসে রাসেল ভাইয়ের একটা কথা খুব ভাল লাগছে। কথাটা ছিল- সরকারের প্রথম আসামী নাস্তিক তবে সে দেশ প্রেমিক কিন্তু যে দিন শেষ কোন ব্লগার ধরা হবে সে হবে আস্তিক তবে সেও হবে দেশ প্রেমিক! আমি দেশ প্রেমিক কিনা জানি না তবে রাসেল ভাই দেশ প্রেমিক তা জানি কারণ সে দেশে থাকার জন্যই আমেরিকা থেকে বাঙলাদেশে চলে আসে। আর এমনই একজন মানুষের জীবনে এমন নির্মম বাস্তবতা নেমে আসে তা সত্যি দুঃখজনক। প্রতিনিয়ত নিজেকে অপরাধী মনে হতো কারণ নিজের কারণে পরিবারের মানুষের জীবন ঝুকির মধ্যে ঠেলে দিয়েছি, আমার কারণে কিছু প্রিয় মানুষ দিনের পর দিন এক দরজা থেকে আরেক দরজায় দৌড়াচ্ছে। মানসিক ভাবে এতোটাই ভেয়ে পড়েছিলাম যে কারো সাথে দেখা করতেও ইচ্ছে হতো না। বাবা, মা কে ঢাকায় আসতে নিষেধ করে দিয়েছি কারণ তারা আমার এই অবস্থা সহ্য করতে পারবে না। ক্যামেলিয়া প্রতিদিন দেখা করার জন্য আসত। টাকা দিয়ে হোক বা যেভাবেই হোক সে একবার দেখা করতে চাইত। কিন্তু সপ্তাহে এক দুইবারের বেশি দেখা করা সম্ভব ছিল না। তবে এমন ভয়ানক পরিস্থিতির মাঝেও বেঁচে ছিলাম কারণ প্রতিনিয়ত শুনতাম কিছু মানুষ আমাদের জন্য লিখে যাচ্ছে, আন্দোলন করে যাচ্ছে। হয়তো তেমন কোন ফল পাওয়া যাচ্ছে না তবুও এতো গুলো মানুষ আমাদের সাথে আছে এতেই অনেক সাহস পেতাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন সংগঠন, মিডিয়া, দেশে ও দেশের বাহিরের ব্লগার ও বড় ভাইয়া প্রতি নিয়ত লিখে যাচ্ছেন কিন্তু করার চেষ্টা করছেন এর থেকে আর বড় পাওয়া কী হতে পারে। যখন শুনতাম কেউ আমাদের জন্য লিখে যাচ্ছে তখন মনটা অনেক ভাল হয়ে যেত কারণ আমরা একা না। অনলাইন পরিবার আমাদের সাথে আছে যা আমাদের অনেক সাহস দিত, মন ভাল করে দিত। কারাগারে থাকা অবস্থায় দৈনিক জনকণ্ঠে একটা লেখা ছাপা হয় নিঃসঙ্গ ক্যামেলিয়ার শাড়ি পরা হয়নি পহেলা বৈশাখে ব্লগার বন্ধুকে মুক্ত করার লড়াই নামে। পত্রিকা যেহেতু পেতাম না সেহেতু এই লেখা পড়া হয় নি। কিন্তু ঐ দিনই কারাগারের এক বয়ষ্ক লোক আমাকে ডেকে বলে; তুমি শুভ না? তোমাকে নিয়ে একটা লেখা পড়লাম। পড়ার পর চোখে পানি ধরে রাখতে পারি নি, দাঁড়াও লেখাটা তোমাকে দেখাচ্ছি। এই বলে তিনি পত্রিকা খুঁজতে চলে গেলেন কিন্তু হতাশ হয়ে ফিরলেন কারণ তিনি জনকণ্ঠ পাননি কোথাও। কিন্তু বিকালের দিকে কারাগারে বন্দি এক মেজর পত্রিকাটা আমার জন্য পাঠায়। সমগ্র লেখাটা পড়া কষ্টকর হয়ে যাচ্ছিল কারণ আমার ভেতরে সবকিছু চুরমার হয়ে যাচ্ছিল তখন। তবুও মনটা ভাল হল; আমরা একা না আমরা এখনো হেরে যাইনি। এভাবে হাজার হাজার মানুষকে যে সাথে পাব তা কখনো ভাবি নি। কখনো ভাবি নি অনলাইন পরিবার এভাবে পাশে এসে দাঁড়াবে। অনেক হয়তো কষ্ঠ সহ্য করেছি, বিশ্ববিদ্যালয় জীবন হয়তো শেষ করতে পারিনি কিন্তু তারপরও যা পেয়েছি যা দেখেছি তার মূল্য কোন অংশে কম না। কারাগারে থাকা অবস্থায় অনেকেই বিভিন্ন ভাবে সাহায্য সহযোগিতা করতে চেয়েছে এমন কী এও শুনলাম এক গর্ভবতী মা তার সন্তানের নাম “শুভ” রাখবে। কথাটা শুনে এর বিপরীতে কী বলব আমি ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলাম না।
জেল থেকে বের হওয়ার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ম্যাডাম বলছিলেন; শুভ তুমি অনেক কম বয়সে অনেক কষ্ট করেছ আমরা কিছুই করতে পারি নি তোমার জন্য। তুমি আমাদের ক্ষমা কর। লজ্জার কারণে ম্যাডামকে বলতে পারি নি; আমি এতো কম বয়সে অনেক কষ্ট হয়তো ভোগ করেছি এটা সত্য কিন্তু এতো কম বয়সে এতো ভালোবাসা কয় জনে পায়! এতো খারাপের মাঝেও বেঁচে ছিলাম কারণ অনলাইন ও অফলাইন পরিবার আমাদের সাথে ছিল। এটাই ছিল আমাদের মানসিক ভাবে বেঁচে থাকার প্রেরণা। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ নিয়ে ডাক্তার আইজুর একটা লেখা আছে- সুব্রত শুভর মামলা-মাননীয় হাইকোর্ট আমি পুরাই হয়ে গেলাম নামে। ব্লগারদের নিয়ে অভিজিৎ দার আমাদের এ লজ্জা কোথায় রাখি? এছাড়াও অনেক লেখা হয়তো আছে যেহেতু অনলাইনে ছিলাম না সেহেতু অনেক লেখাই দেখতে পাই নি। যারা লেখা গুলো লিখেছেন তাদের কাছে হয়তো লেখাগুলোর গুরুত্ব সামান্যই কিন্তু আমাদের কাছে বিশেষ করে আমার কাছে অনেক বড় পাওয়া। কারণ কারো সাথে দেখা হলেই জিজ্ঞেস করতাম কেউ কিছু লিখছে না? কারণ কেউ কিছু লিখলেই বুঝতাম আমরা একা না। আমরা একটা পরিবার যারা বিপদে-আপদে সব সময় এগিয়ে আসে। অনলাইন এ ব্লগাররা এক হয়ে অন্যায়ের প্রতিবাদ করবে এর থেকে বড় চাওয়া আর কী হতে পারে। জামিনে মুক্ত হয়ে রাসেল ভাইয়ের এই লেখাটি পড়ে চুপ হয়ে অনেকক্ষণ বসে রইলাম–আমাদের গল্প । সময়টা আজ অতীত। সেই অতীতের যন্ত্রনা, মানসিক কষ্ট হয়তো আগের মতন নেই কিন্তু মামলার হাজিরা আজো আমাদের দিয়ে যেতে হচ্ছে। সেই অতীতের ঘটনাগুলো ভোলার মতন নয়।
কয়েকজন মানুষের কথা উল্লেখ না করলেই নয় যারা আইনি সহায়তা করেছেন-ব্যারিস্টার জ্যোর্তিময় বড়ুয়া, ও অন্যরা। এছাড়া অসংখ্য মানুষ আছেন যারা পেছনে থেকে আমাদের সাথে ছিলেন। পরিস্থিতির কারণে তাদের নাম এখন আপাদত প্রকাশ করতে চাচ্ছি না। তবে তাদের কাছে কৃতজ্ঞ।
গত বছরের রাজনৈতিক ট্রেনে ভ্রমণের অভিজ্ঞতার আলোকে কিছু কথা না বলে পারছি না। মানুষ বিভিন্ন ভাবনায় বিভিন্ন চিন্তার মধ্য দিয়ে এগিয়ে যায়। মানুষের দর্শন, একে অপরের প্রতিশ্রদ্ধার মধ্য দিয়ে মানুষ সহনশীলতার চর্চা করে। এই দেশ ইউরোপ আমেরিকার মতন উন্নত কিংবা শিক্ষিত না। আমেরিকায় এন্টিক্রুসেড ছবি রাস্তায় ঝুলিয়ে রাখে সেই চিন্তা করে যদি এই দেশেও করতে যাই তাহলে তা হিতে বিপরীত হবে। কারণ আমেরিকার সোসাইটি আর এই বাঙলার সোসাইটি এক নয়। মানুষের অনুভূতিকে বিকৃত কিংবা কুৎসিত ভাবে উপন্থাপন করে কখনো নিজের মতবাদে আনা সম্ভব না। বিকৃত কিংবা কুৎসিতভাবে উপস্থাপনায় ঘৃণা জন্ম নেয় ভালোবাসা জন্ম নেয় না। আমাদের দেশে ধর্মের সমালোচনা কিংবা ধর্মের বিপক্ষে বই তো প্রকাশিত হয়। কিন্তু উপস্থাপনার ধরণ যদি সুস্থ হয় তাহলে তেমন কোন বড় বাধা হয়তো আসে না। কোন মানুষ ধার্মীক কিংবা ঈশ্বরে বিশ্বাসী হলেই যে তিনি গোড়া হবেন তা তো নয়। ব্যক্তিজীবনে কে ধার্মীক আর কে ঈশ্বরে বিশ্বাসী তা আসলে গুরুত্বর্পূণ না বরং তিনি কতোটুকু সহনশীল অথবা কতোটুকু উদার সেটাই গুরুত্বর্পূণ। আমার বাবা-মা বিশ্বাসী মানুষ তারপরও আমার আর ক্যামেলিয়ার সর্ম্পক মেনে নিয়েছেন। জেল থেকে বের হয়ে আমার যে বন্ধুটির বাসায় থেকেছি তার পুরো পরিবার বিশ্বাসী। অথচ তারা কখনো আমাকে কোন কথা বলেননি কিংবা বুঝাতে আসেননি। আমি বলছি না আমাদের সমাজে মৌলবাদ নেই অথবা ধর্মের সুস্থ সমালোচনা করলে তেমন কোন বাঁধার সম্মুখিন হতে হয় না। যেখানে আমাদের সমাজ এতো বেশি প্রতিক্রিয়াশীল সেখানে সহনশীলতা ও সুস্থ চর্চার মধ্য নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। আমার কোন লেখায় যেন অন্য কোন মানুষের মনে ঘৃণা সৃষ্টি না হয় সেটা বিবেচনায় রাখতে হবে। মাটি ও মানুষের মধ্যে পরিবর্তন আনতে চাইলে তাদেরকে সঙ্গে নিতে হবে। মানুষকে দূরে সরিয়ে রেখে অথবা তাদেরকে নীচ জ্ঞান করে দূরে সরিয়ে রেখে কখনো পরিবর্তন আনা সম্ভব নয়। অনেকে হয়তো ভাবছেন আমি জ্ঞান দিচ্ছি। আমি বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই আমি কোন জ্ঞান দিচ্ছি না। আমি আমার নিজস্ব ভাবনাটুকু বললাম। শিক্ষার মান উন্নত না করে, মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি না হলে সমাজে পজেটিভ পরিবর্তন সম্ভব নয়। যার পেটে ভাত নেই সেই মানুষটি কাছে আস্তিক নাস্তিক কোন বিষয় ঠাঁই পায় না। অনেকে শুধু ঈশ্বরে বিশ্বাসী কিন্তু ব্যক্তিজীবনে ধর্ম তেমন ভাবে পালন করেন না। নিজেদের লাগামহীন সমালোচনার কারণে কোন ঈশ্বরে বিশ্বাসী যেন মৌলবাদীতে পরিণত না হয় সেটাও খেয়াল রাখতে হবে। অতিরিক্ত নাস্তিক্যবাদীতা সাধারণ মানুষকে মৌলবাদের দিকে ঠেলে দেয়। অনলাইনের এই বিষয়টা খুব কাছ থেকে দেখেছি। অনেকে হয়তো ভাবেন, নাস্তিকদের একহাত দিয়ে দিচ্ছি! আমার ভাবনাটুকু হল- প্রতিক্রিয়াশীল সমাজে পরিবর্তন যেহেতু আমরা চাচ্ছি সেহেতু সহনশীলতা ও সুস্থ সমালোচনার দায় সবার আগে আমাদের।
এই লেখাটি অনেকদিন আগের লেখা আজকে পোস্ট করার পূর্বে জানতে পারলাম চট্টগ্রামে দুইজন ব্লগার-ফেসবুকারকে আটক করা হয়েছে। জামাত-শিবিরের বিরুদ্ধে ও নাস্তিকতার বিষয়ক লেখার কারণে তাদের গ্রেফতার করা হয়। বঙ্গদেশের রঙ্গ আইনের বিরুদ্ধে বাঘা আইনজীবীদের নীরবতা বেশ রহস্যজনক। টক শোগুলোতে হাজারো জিনিস নিয়ে প্যাচাল মারলেও এই আইন সর্ম্পকে সবাই কেমন যেন নীরব। এই আইন যে উদ্দেশ্যে করা হোক না কেন এই আইনের মাধ্যমে নির্যাতন ও নিপীড়নের শিকার হবে সাধারণ জনগণ। আর কোন কিছু ভাবতে পারছি না, আর কোন কিছু বুঝতে চাই না। শুধু জেলের ভেতরে ছেলেগুলো কেমন আছে তাই ভাবছি। ‘ছেলেগুলোর মুক্তি চাই’ এই কথাটি ছাড়া আর কিছুই বলার নেই।
শুভ তুমি আমার সবচাইতে পছন্দের ব্লগার এই মুহূর্তে। তুমি জেলে যাবার পর থেকেই দেশ এবং বিদেশের সংগঠনগুলোর সাথে যোগাযোগ করে যতদূর পারি করতে সচেষ্ট হয়েছিলাম। তার দালিলিক কিছু প্রমাণ লিপিবদ্ধ আছে আমার ‘বিশ্বাসের ভাইরাস’ বইটিতে। তুমি যেদিন মুক্ত হয়ে ফিরে আসলে আমার চেয়ে খুশি বোধ হয় কেউ হয়নি। তুমি কারাগারে থাকাকালীন সময়ে তোমার লেখা যে কতবার পড়েছি, তার কোন ইয়ত্তা নেই।
আর বিখ্যাত ৫৭ ধারায় যে দুজন ব্লগারকে আটক করা হল, এ নিয়েই বা আর নতুন কি বলব? স্ট্যাটাসেই বলেছিলাম যা বলারঃ চিড়িয়াখানা থেকে ছারা পাওয়া ৫৭ ধারা ক্রমশ এক বিপজ্জনক জন্তুতে পরিণত হতে চলেছে। সুব্রত-রাসেল-আসিফ-বিপ্লবকে কামড়ে দিয়ে গতবছর এই জন্তুর জন্ম, আজ কামড়েছে উল্লাস আর রাহীকে। এই জন্তুর গলায় শিকল না পরালে মুক্তপথে হাঁটা চলা করাই দুরূহ হয়ে পড়বে। মুক্তপথের পথিকেরা সাবধানে হাঁটবেন।
তথাকথিত মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের দলের আমলেই এই কালাকানুনের যে ব্যবহার দেখছি, শংকিত হই বিম্পি-জামাত ক্ষমতায় গেলে এর কি ব্যবহার দেখব।
এই খাঁচার বাইরে খাঁচার জন্তুটিকে খাঁচায় পোরার উদ্যোগটা নিতে হবে সবাইকে।
@অভিজিৎ, এটা ভাবলেই হৃদয়ে একটা সুখানুভূতি জাগ্রত হয়। প্রিয় অভিজিৎ দা আমার জন্য লড়ে গেছেন। 🙂
৫৭ ধারা যেভাবে বিপজ্জনক হয়ে উঠছে আমার তো মনে হয় বর্তমানে বাপ-মা ছেলেদের অনলাইনে আসতে দিতে সবচেয়ে বেশি ভয় পায়। ব্যক্তিগত শত্রুতা কিংবা উদ্দেশ্যমূলক কারো ক্ষতি করতে চাইলে ৫৭ ধারার মতন কালো আইনের জুরি নেই। এই আইন সংস্কার বা বাতিল করতে না পারলে ভবিষ্যতে আরো ভয়াবহ অবস্থা হবে। আর এর ভিকটিম হবে সাধারণ ভাল মানুষগুলো। মজার বিষয় হল এই লেখালেখির কারণে এখন পর্যন্ত কোন জামাতকর্মী বা হিজবুতের কর্মাকে ধলা হয়নি।
@সুব্রত শুভ,
আশা করি হাজত বাসের তিক্ত স্মৃতি ব্লগারের পরিচয়কে প্রতিষ্ঠিত করতে প্রেরণা যোগাবে।
লেখাটি বাংলাদেশের ব্লগারদের জন্য ইতিহাস।
আইসিটি আইনের ৫৭ ধারা আগামীতে মুক্তচিন্তার লেখকদেরকে আরো ভোগাবে। কন্ঠরোধ করতে আসবে। দেশের হেফাজতী চাষবাস হবে খুব। জামাতীদের বাড়বাড়ন্ত…।… জানি না কেন, শুভর লেখাটা পড়ে নিজেকে শুধু অপরাধী মনে হয়েছে…। …অসাম্প্রদায়িক একটা দেশ, মানুষে মানুষে হানাহানিহীন স্বদেশ… একটা অসাম্প্রদায়িক সহনশীল রাষ্ট্র হোক- এই তো চাওয়া, তার জন্যই তো লেখালেখি। আর এই লেখালেখির অপরাধে জেলে! এখনো রোজ হুমকি-ধামকি প্রায় সব মুক্তমনা লেখকরা নিয়ম করে পেয়ে আসছেন। আজই জানলাম দুজন ব্লগারকে ৫৭ ধারায় আটক করা হয়েছে! …এটুকু শুধু জানি, যত বাধা আসবে এগিয়ে যাবার স্পৃহা তত বাড়বে। আজীবন লড়বে মুক্তচিন্তার সৈনিকরা…।
শাহবাগের ক্ষোভ মেটানোর জন্য জামাত জবাই করছে, সরকার জেলে ভরছে। মাঝে মাঝে ক্ষোভে অন্ধ হয়ে যাই কিন্তু বাংলাদেশের অনিষ্টকারী শক্তির সামনে আমরা একেকজন একেকটা ব্যক্তি স্বত্তা, সবাই এসে পাছা মেরে দিয়ে যায়।
লেখাটা পড়ে মন খারাপ হয়ে গেলো। সময়টা আমাদেরও ভালো যায়নি মোটেই। চার ব্লগার কারাগারে গ্রেফতারের পর আমি নিজে কোন জোরালো প্রতিবাদের অংশ হতে পারিনি, সেজন্য ভীষণ লজ্জিত বোধ করি সবসময়। কি করব? ছা-পোষা মানুষ আমি ব্যক্তি জীবনে। ৮৪ জনের তালিকায় নিজের নাম দেখে ভীষণ ঘাবড়ে গিয়েছিলাম, ভয় পেয়েছিলাম। সামাজিকভাবে হেনস্তা হবার ভয়, চাকরি হারানোর ভয়, পরিবারের সদস্যদের জন্য চিন্তা সব এসে ঘিরে ধরেছিল। একদিকে কিচ্ছু করতে না পারার জ্বালায় নিজের উপর অক্ষম ক্ষোভ, অন্যদিকে নিকের পেছনে থাকা মানুষটার পরিচয় ফাঁস হয়ে যাবার ভয়। আমার এপার্টমেন্টে একা থাকতাম সেসময়, দরজায় কেউ কড়া নাড়লেই চমকে উঠতাম, ওই বোধহয় কেউ এলো আমার জন্য!
এই কথাটি ছাড়া আর কিছুই বলার নেই।
শুভর অভিজ্ঞতা শুনে শুধু একটা কথাই মনে আসছে, ব্লগারদে অনেকেরই হয়তো এমন অভিজ্ঞতা হতে পারতো, অথবা হতে পারে। প্রত্যক্ষ পরোক্ষ আরো কত রকম চাপ প্রতিনিয়ত চলছেই। ৫৭ ধারার সাথে ব্লাসেমির পার্থক্য বুঝে উঠতে পারছি না।
রাহি আর উল্লাসের গ্রেফতার আসলে শুধু একটা গ্রেফতার নয়। এটা আসলে আমাদের অসহায়ত্বের প্রতি আঙ্গুল তাক করে একটা প্রশ্ন…এর পর তোমাদেরও গ্রেফতার করবো। কি করার আছে তোমাদের ? রাসেল ভাই, বিপ্লব ভাই, আসিফ ভাই, শুভ….তারপর রাহি আর উল্লাস…তারপরে…আপনি আর আমি ???
পোস্ট টা পড়ে একই সাথে লজ্জা, ক্ষোভ আর দুখের অনুভুতি পেলাম।
আপনার সেই দুঃসহ অভিজ্ঞতা আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ |
রাহি কিংবা উল্লাস এর মত কিশোর যারা দেশে থেকে অনলাইনে স্বনামে লেখালেখি করে তাদের জন্য এই লেখাটা পড়া খুবই জরুরী | কয়েক জায়গায় শেয়ারে দিলাম … ধন্যবাদ |
বোল্ডে দেখুন আপনার এই লিঙ্কটি ওপেন হয় না।
@অর্ফিউস, জনকন্ঠের লিঙ্কটাও পাচ্ছি না কি আজব!
@অর্ফিউস, আশা করি সবগুলো এখন ওপেন হবে।
সবকিছুর পরেও আপনারা দমে যাননি। বের হয়েও সেটাকে বেমালুম চেপে না গিয়ে সবার সামনে আসল চিত্রটা তুলে ধরছেন। ভয় না পেয়ে সামনে আসছেন – এজন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই।
পুরো ঘটনাটা পড়ে অনেক খারাপ লাগলো। অনেক লেখালেখি হচ্ছে, কিন্তু মানুষের মন-মানসিকতা পাল্টাচ্ছেনা। অন্তত যতটুকু পাল্টানো উচিৎ ছিলো, ততটা পাল্টাচ্ছে না। হয়তো এটাই পাল্টানোর স্বাভাবিক গতি। তাই, লেখালেখিও থামানো উচিৎ নয়। একজন একজন করেই পরিবর্তন হোক।
বিদেশে বসে শুধু মাথার চুল ছিঁড়েছি, যখন আপনারা কারাগারে ছিলেন। নিজেকে এতোটা অসহায় আর কোনোদিন মনে হয়নি। বিদেশী বন্ধুরা যখন জানতে চেয়েছে, ব্লগারদেরকে আটকানোর আসল ঘটনা কী, তখন লজ্জায় মাথা হেঁট হয়ে গেছে।
যাই হোক, শেষ পর্যন্ত কামনা শুধু এটুকুই, কলম আরো জোরদার হোক। পরিবর্তন আসবেই……
লেখাটা পড়তে পড়তে কখনো প্রচণ্ড রাগ হল, কখনো তীব্র অভিমান, কখনো চোখ ভিজে এলো। আপাতত সর্বশেষ অনুভূতি – নিজেকে চরম ভণ্ড একজন ব্লগার মনে হচ্ছে। দেশের বাইরে নিরাপদে বসে অযথাই উজির নাজির মারি। অযথাই গলাবাজি করি, অযথাই স্বপ্ন দেখি …
@চরম উদাস,
স্বপ্নের কথা বলেন বলেই তো শুভদের মত আজকের ছেলে মেয়েরা মুক্ত ভাবনা ছড়াবার অনুপ্রেরণা পায়। সেই এবং এই সব অনেক স্বপ্নবাজের স্বপ্ন পুরনের কাজে এগিয়ে যাওয়া খুব সহজ তো হবার কথা নয়। স্রোতের উল্টোদিকে চলা কঠিনই বটে।
ভাই…… মাথা নষ্ট ম্যান!!! আপনার লেখা পড়ার সময় বারংবার উত্তর কোরিয়ার কথা মনে হচ্ছে… টোটালিটারিয়ানিজম মানে কি… কিইবা সেমি/কোয়েজি টোটালিটারিয়ানিজম!!! মুক্তমনা ভালো লাগে কারণ একমাত্র এই ব্লগেই মুক্তভাবে আলোচনার পরিবেশ পাওয়া যায়… যেকোন ক্ষেত্রেই… এখন মনে হচ্ছে ভবিষ্যতে যদি কোন কারণে আমার আসল পরিচয় জনসম্মুখে প্রকাশ পায় – তাহলে আমার ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের ইতি ওখানেই হয়ে যাবে – এদেশের পরিপ্রেক্ষিতে – যদি মানসিকতা না পাল্টায় … 😛 😛
এমনি আমজনতার মাঝে একটি ধারনা – ব্লগার মাত্রই নাস্তিক – তার উপর যদি এটা প্রকাশ পায় “মুক্তমনা ব্লগিং প্ল্যাটফর্মের একজন ব্লগার” – তাহলে তো কথাই নাই – ব্যাবসা বাণিজ্য- চাকুরী যে কোন জায়গায় প্রেজুডিসের মধ্যো পরতে হবে – যদিও এ ব্লগের অনেকের সাথেই আমি একমত নই বিভিন্ন বিষয়ে :-O :-O
আসলে সরকারকে শুধু দোষ দিয়ে লাভ নেই – ব্যাপার গুলো নিয়ে মাথা ঠাণ্ডা করে ভাবতে হবে – লিবারিলিজম এর মুভমেন্ট করতে হবে… সমাজের একেবারে সাধারণ ব্যাক্তি পর্যায় থেকে। আমাদের দেশের মানুষ ধর্মের ব্যাপারে খুবই সংবেদনশীল – তবে তাঁরা ধর্মীয় গোঁড়ামিতে বিশ্বাস করেনা।
মেজাজটা খ্রাপ হয় যখন দেখি এ দেশে এসব ব্যাপারে হম্বি-তম্বি করা সমাজের গণ্যমান্য!!! ব্যক্তিরা পশ্চিমে বিশেষত আমেরিকায় যেয়ে কিংবা আমেরিকার নাগরিকদের সাথে মোলাকাতের সময় গদগদ হয়ে যখন ভন্ডামিতে লিপ্ত হয়!!! :-X
সুব্রত শুভ্রর লেখা এই প্রথম পড়লাম। উনি আমার থেকে বয়সে অনেক ছোট। প্রথম এই পিচ্চি পিচ্চি ছেলেটাকে দেখে মায়াই হয়েছিলো। দেশে কী ধরণের আইন আছে আর তার প্রয়োগ কোথায় তার এই পিচ্চি ছেলেটার কষ্ট দেখলেই বুঝা যায়। প্রথমেই আপনার কষ্ট, দুঃখের জন্যে সমব্যাথি। হ্যাঁ অবশ্যই রাসেল ভাই, আসিফ মহিউদ্দিন এবং বিল্পবদের জন্যেও।
সরকার এদেশে ডিবি, পুলিশ সহ সব বাহিনী চালায়। তাদেরকে উন্নত করার কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি এবং অদুর ভবিষ্যতে নেয়া হবেও না। আপনার লেখাতেই পরিস্কার যে দেশের ডিটেক্টিভ ব্রাঞ্চ ‘ব্লগ’ কী জিনিষ জানেনা। অথচ তাদেরকে দিয়ে ঠিকই আপনাদের ধরে আনা হয়েছে। আমি ডিবির গুনকীর্তিন গাইছিনা। একটু ভেবে দেখলে দেখবেন এদের হাত পা বাঁধা।
কেনো ডিবির সমন্ধ্যে এই কথা বলছি জানেন ভাই শুভ্র? মাত্র দুইমাসের মাথায় দেশে যেয়ে ডিবির হাতে ধরা খেয়েছি। পারিবারিক কলহের জেরে অপহরণের কেইসে ফাসানো হয়। আমি অবশ্য একদিনই ছিলাম। হারিয়েছি মুল্যবান অনেক কিছুই। তবে অবাক হলাম কুষ্টিয়ার ডিবির ব্যাবহারে। আমাকে তারা কিছুই বলেননি। যে মহিলাকে অপহরনের মামলায় আমাকে ফাঁসানো হয়েছিলো দেখা গেলো উনি আমেরিকায় চলে গেছেন। একটা মানুষ আমেরিকায় তো বাতাসে মিলিয়ে ইমিগ্রেশন ক্রস করতে পারেনা। সুতরাং নিশ্চিত তার ডেটা সরকারের কাছে অর্থাৎ ইমিগ্রেশন পুলিশের কাছে আছে। এই তথ্য ডিবি জানেনা। আমি বুঝাতে যেয়ে পাগল হয়ে গেছিলাম। অবশেষে তারা বুঝেছেন। আমি ছাড়া পেয়েছি।
সেই সময় তারা বলেছিলেন ঢাকার ডিবি কী মারাত্বক। আপনাদের কষ্ট আমি বুঝি। আমার হাত পা বাঁধা। আপনার মায়াবী মুখটা দেখলে নিজেকে বাংলাদেশী ভাবতে ঘৃণা হয়। আপনার বয়সে জার্মানীর একটি ছেলে জার্মান সরকারের টাকায় এঞ্জেলা মেয়ার্কেলকে গালি দেয়। কিচ্ছু হয়না। আর আপনি বাপের খেয়ে ব্লগ লেখে জেলে থাকেন। পাব্লিক গালি দেয়। তালি মারে। আমরা দিন দিন বুনো শুয়োরের সভ্যতার দিকে চলে যাচ্ছি।
পারলে ক্ষমা করবেন। আমার শক্তি থাকলে আমি প্রতিবাদ জানাতাম। ভাল থাকবেন। সৃষ্টিকর্তা আপনাকে আরও শক্তি দিন।
বার বার চোখ ঘোলা হয়ে আসায় অনেকক্ষণ লেগে গেল পুরোটা পড়ে শেষ করতে।
ভাবছিলাম আরেকবার পড়বো; কিন্তু সাহস করে উঠতে পারলাম না।
খুব অবাক হয়েছিলাম তখন; এসব অশিক্ষিত মানুষ গুলোকে এত পাত্তা দেয়ার কি আছে সেটা ভেবে বের করতে পারিনি। তাদের এতটা লাই দেয়ার কারন সম্ভবত ছিল তাদের হিংস্রতা।
এই লাই পেয়ে তারা কিন্তু আসলেই মাথায় উঠেছিলো; তাই দাবী করেছিল ১৩ দফার মতন নোংরা অপদাবীর।
এদের লাই দেয়া মানেই যে খাল কেটে কুমির আনা সেটা সরকার একটু দেরীতে হলেও বুঝতে পেরেছিল। কিন্তু ততদিনে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে।
হুম। কিন্তু আমি মনে করি নৈতিক অনৈতিকের মধ্যেকার পার্থক্য ধর্ম দিতে পারেনা।
ধর্ম কেবল ভেদাভেদ সৃষ্টি করে; মানুষকে মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে পারেনা।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিশ্বাসের ভাইরাস যে বিধ্বংসী সেটা আমরা সবাই জানি; তবুও মানি না।
ক্যামেলিয়া আপুর সম্পর্কে বললে অনেক কিছুই বলতে হয়। আমরা অবাক হয়ে দেখেছি কিভাবে এদিক থেকে সেদিক সারাদিন ছুটোছুটি করে বেড়িয়েছেন তিনি আপনার জামিনের জন্য।
দূর্বার একটা উক্তি এখন মনে আসলো হঠাৎ; ছবির হাটে আড্ডা দিচ্ছিলাম। আপনাদের প্রসঙ্গ উঠলো। দূর্বা বললো “শুভর জন্য ক্যামেলিয়া কত কষ্ট করছে। কত ভালোবাসা তাদের মধ্যে। অমুকেরও তো তমুক আছে; কিন্তু একদিনো তো শুনলাম অমুক কে তমুক দেখতে গিয়েছে; দৌড়াদৌড়ি তো দূরে থাক”।
আমি তখন দূর্বাকে বলেছিলাম; “সবাই তো আর সবার মতন করে ভালবাসেনা; শুভ ছেলেটা অনেক লাকি যে তার ক্যামেলিয়ার মতন একজন বন্ধু আছে। বন্ধু তো সবার থাকে; কিন্তু ক্যামেলিয়ার মতন বন্ধু কজন হয়?”।
আপনার গর্ব করা উচিৎ যে আপনার ক্যামেলিয়ার মতন একজন বন্ধু আছে; আমি আপনাকে হিংসা করি এই একটি বিষয়ে; অনেক অনেক হিংসা করি।
আপনাদের তখনকার মনের অবস্থা আমরা কখনোই কল্পনা করতে পারবনা; কিন্তু আমরা যে আপনাদের পাশেই ছিলাম সেটা আশা করি আপনি জানেন।
আমরা মুক্তমনাদের পাশে ছিলাম, আমরা আছি এবং আমরা থাকবো।
অলীক বিশ্বাস এবং ঠুনকো অনুভূতির বিলোপ হক;
মানবতার এবং মুক্তচিন্তার জয় হোক।
@এম এস নিলয়,
এই ঘটনার জন্য শুধু আমি হয়রানি হইনি, আমার পরিবার, আমার চাচাতো বোন- ভাগিনাও স্কুলে হয়রানির শিকার হয়। কারো ভাই কারো মামা নাস্তিক তাই তাদেরকেও স্কুলের শিক্ষকরা বিভিন্নভাবে হয়রানি করায়।